#নীলাবতী
[সূচনা পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
নিজের স্বামীকে হত্যা করে ফ্রিজের ভিতরে তালাবদ্ধ করে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে আসলো নীলা। নীলা এতো বড় একটা কাজ করলো কিন্তু তার মনে কোনো ভয়ডর কাজ করছেনা। তার মাঝে কোনোরকম খারাপ লাগাও কাজ করছেনা। নীলা বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিয়ে নদীর পড়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আরো একটা মেয়ে আসলো।
— নীলা কাজ শেষ?
— হুম, মেরে ফ্রিজের ভিতরে রেখে চলে আসছি কেউ খোঁজ পাবেনা। পেলেও অনেক দেরি হয়ে যাবে।
— যদি কেউ জেনে যায় তখন কি হবে? যদি পুলিশ খোঁজ পেয়ে যায় তাহলে তো তোর ফাঁ*সি হয়ে যাবে।
নীলা একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল — এসব আমি ভয় পাইনা, এখনও আমার অনেক কাজ বাকি।
— মানে? আর কি কাজ বাকি তোর?
— সেটা দেখতেই পাবি। এখন আমার সাথে চল।
নীলা মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেলো। দেখতে দেখতে তিন দিন পার হয়ে গেলো। নীলার হাসবেন্ড এর কোনো খোঁজ না পেয়ে তার মা-বাবা নিলয়কে খুজতে বাসায় চলে আসে।
(নিলয় নীলার হাসবেন্ড)
নিলয়ের আম্মু ফ্রিজের সামনে যেতেই চিৎকার দিয়ে উঠে। কারণ ফ্রিজের ভিতর থেকে নিলয়ের রক্ত বেরিয়ে পুরো ফ্রিজ লালা হয়ে গেছে৷
নিলয়ের বাবা বলল — কি হয়েছে তোমার? চিৎকার করছো কেন?
— ফ্রিজের ভিতরে কি আছে দেখো একটু।
— আরে কি থাকবে আর? হয়তো মাংস রাখা আছে৷
— তুমি খুলে দেখো প্লিজ৷ এতো রক্ত! আমার ভয় করছে খুব৷
এবার নিলয়ের আব্বু ফ্রিজ খুলতে গিয়ে দেখে ফ্রিজ লোক করা। আসলে এতো রক্ত দেখে উনিও ঘাবড়ে যায়। রুমের সব এলোমেলো হয়ে আছে।
এবার তালা ভেঙে ফ্রিজ খুলেই চমকে উঠলেন। নিলয়ের লাশ ফ্রিজের ভিতরে রাখা। নিজের ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে নিলয়ের বাবা মিরাজ সাহেব নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
— কি হলো তোমার?
এবার নিলয়ের আম্মু ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। ইতিমধ্যে বাসায় অনেক লোকজন চলে আসে। আর ফ্রিজের ভিতর থেকে নিলয়ের লাশ বের করে। পুলিশ লাশ নিয়ে চলে গেলো। পুলিশ পুরো বাসা তল্লাশি চালিয়ে তেমন কিছুই পায়নি। কিন্তু নীলার কোনো খোঁজ নেই। নীলার ফোন ও বন্ধ, তাই নিলয়ের বাবা নীলাকে সন্দেহ করে মামলা করে। পুলিশ নীলাদের আশেপাশের বাসার মানুষকে জিজ্ঞেস করে তাদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল। সবাই একি কথা বলছে যে নীলা আর নিলয় কখনও ঝগড়া ও করেনি। পুলিশ বুঝতে পারছেনা ওদের সম্পর্ক এতো ভালো হলে নীলা তো হত্যা করতে পারেনা। তাহলে নীলা কেন এখান থেকে মিসিং!
পুলিশ নিলয়ের পুরো শরীর চেক করতে শুরু করে। একটা সময় নিলয়ের পকেটে একটা কাগজ দেখতে পায়। পুলিশ সাথে সাথে কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করে।
“আমি জানি নিলয়ের লাশ পুলিশ পেয়ে যাবে। নিলয়কে আমি আমার নিজ হাতে হত্যা করেছি। আমাকে খোজাখুজি করে আপনাদের সময় নষ্ট করবেন না। আমার আরো কিছু কাজ বাকি আছে। সে গুলো শেষ করে আমি নিজেই চলে আসবো।”
পুলিশ বুঝতে পারে এই লেখা নীলার। এবার পুলিশ নীলাকে খুজতে বেরিয়ে পড়ে।
অন্য দিকে নীলা তার সেই মেয়ে ফ্রেন্ড নিয়ে একটা বাসায় চলে গেলো। রুমের ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর চারো দিকে মাকড়সার জাল।
— নীলা তুই এখানে আমাকে নিয়ে আসলি কেন? আর এখানে আসার কারণ কি?
— কারণ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে৷
— কি সারপ্রাইজ আমার জন্য?
— আমার সাথে গেলেই বুঝতে পারবি।
এবার নীলা মেয়েটাকে নিয়ে একটা রুমে চলে গেলো। রুমের ভিতরে গিয়ে নীলার ফ্রেন্ড মারিয়া হতবাক হয়ে গেলো। কারণ তাদের সামনে একটা ছেলেকে মুখে কালো কাপড় দিয়ে বেধে রেখেছে। ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছেনা।
মারিয়া নীলাকে বলল — নীলা এটা কে?
— তুই গিয়ে দেখ, আমি কি বলব?
মারিয়া এবার ছেলেটার মুখ থেকে কাপড় সরাতেই মারিয়া অবাক হয়ে যায়।
— পিয়াস তুমি এখানে কেন?
— মারিয়া আমাকে তুমি বাঁচাও প্লিজ।
— আরে তোমার কিছু হবেনা আমি তো আছি এখানে।
মারিয়া এবার নীলার কাছে গিয়ে বলল — নীলা তুই পিয়াসকে এই ভাবে ধরে আনলি কেন?
— সেটা তোকে আমি একটু পরে বলছি। আগে এই কু*ত্তা*র বাচ্চাকে আমি শেষ করে আসি।
— মানে কি নীলা? তুই কি জানিস না পিয়াস আমার বয়ফ্রেন্ড? আর ও কি এমন করছে?
— মারিয়া তোকে আমি পরে সব বলব বলছিনা। তুই আমার সামনে থেকে সরে যাহ।
এই কথা বলে নীলা একটা চাকু বের করে পিয়াসের দিকে চলে গেলো। নীলা আর দেরি না করে মারিয়ার চোখের সামনে তার বয়ফ্রেন্ড এর গলায় চাকু দিয়ে একটা টান মারে। সাথে সাথে গলা কাটা মুরগির মতো লাফাতে থাকে পিয়াস। কিছুক্ষণের মধ্যেই পিয়াস মারা যায়। পিয়াসের এমন অবস্থা দেখে মারিয়া কান্না করে দিলো। পিয়াস মারা যাওয়ার পরে নীলা তার হাতের চাকু দিয়ে পিয়াসের কপালে একটা ‘N’ লিখে দিল।
এটা দেখে মারিয়া বলল — নীলা তুই কি আসলেই পাগল হয়ে গেলি নাকি? তুই কেন পিয়াসের সাথে এমন করলি?
— আমি যা করছি সব ঠিক করছি। তুই আমার সাথে আয়।
মারিয়া নীলার পিছনে চলে গেলো। অন্য একটা রুমে। সেখানে একটা মেয়ে অসহায় ভাবে বসে আছে।
মারিয়া নীলাকে বলল — নীলা এই মেয়েটা আবার কে?
— তুই জানিস না কে এই মেয়ে?
— না, আর এই মেয়েকে তো আমি আজ প্রথম দেখলাম।
নীলা একটা হাসি দিয়ে বলল — এই মেয়েটা তোর সতীন।
— মানে?
— মানে তো খুব সহজ। পিয়াস এই মেয়ের সাথেও ভালোবাসার অভিনয় করছে। তোর সাথে যেমন অভিনয় করছে তেমন।
— পিয়াস আমার সাথে অভিনয় করছে?
— হ্যাঁ।
এবার মেয়েটা কান্না করতে করতে বলল — আপু বিশ্বাস করেন আমিও জানতাম না পিয়াস এমন একটা ছেলে। পিয়াস শুধু আমাদের না আরো অনেক মেয়ের সাথে অভিনয় করেছে। আর সব থেকে বড় কথা পিয়াস বিবাহিত।
মেয়েটার কথা শুনে মারিয়া কান্না করে দিলো।
নীলা মারিয়ার কাছে গিয়ে বলল — কিরে তুই তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়েছিস তো এবার?
মারিয়া কান্না করেই যাচ্ছেই। নীলা মারিয়াকে বলল — তোর জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে আমার সাথে আয়।
এই কথা বলতেই নীলার ফোন বেজে উঠলো।
— হ্যালো,
— আপু অনেক বড় একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
— কি সমস্যা হয়েছে?
— পুলিশ নিলয়ের লাশ পেয়ে গেছে। আর তোমার নামে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ সব যায়গায় তোমার খোঁজ করছে। তুমি একটু সাবধানে থেকো।
— সমস্যা নাই, আমি যতক্ষণ না পুলিশের সামনে যাচ্ছি পুলিশ কখনও আমাকে খুঁজে পাবে না। আর তুমি সব কিছুর উপরে ভালো ভাবে নজর রাখবে। আর একটা কথা পুরোনো বাড়িটায় একটা লাশ রাখা আছে ওটা তুমি আজ রাতে রাস্তায় রেখে আসবে। কেউ যেনো ভুল করেও তোমাকে দেখতে না পায়। মাথায় রাখবে।
— ঠিক আছে আপু।
এই কথা বলে ফোন কেটে দেয়। মারিয়া বলল — নীলা কে ফোন দিলো?
— সেসব বাদ দে, আর শোন পুলিশ নিলয়ের লাশ পেয়ে গেছে। হয়তো কাগজ টাও তাদের হাতে চলে হেছে।
— কাগজ মানে কিসের কাগজ!
— আমি নিলয়ের পকেটে একটা চিরকুট রেখে আসলাম।
— নীলা আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছিনা, তুই কি জন্য নিলয়কে হত্যা করলি? নিলয় তো খুব ভালো ছেলে। আর তোকে খুব ভালোবাসতো।
— পরে সব জানতে পারবি। এখন না হয় এসব কথা থাক! আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাইছিনা এখন।
— নীলা তোর কি একটুও খারাপ লাগছেনা?
— না। এখন কথা বাড়াবিনা।
— ঠিক আছে তোর ইচ্ছে। তুই না বললি আর কি দেখাবি?
— সহ্য করতে পারবি তো?
— তুই দেখা আমাকে।
এবার নীলা মারিয়াকে সাথে নিয়ে আরেকটা রুমে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে মারিয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। মারিয়ার সামনে তার আপন ভাইকে বেধে রাখা হয়েছে। তার শরীরের অনেক যায়গা থেকে রক্ত বে*র হচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার উপরে অত্যাচার করা হয়েছে। মারিয়া তার ভাইকে দেখে তার দিকে এগিয়ে চলে গেলো।
চলবে?