#নীলাবতী
[২য় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
মারিয়া তার আপন ভাইকে র*ক্তা*ক্ত অবস্থায় দেখে এক দৌড়ে তার কাছে চলে গেলো।
— ভাই তুই এখানে কেন?
মারিয়ার ভাইয়ের এমন অবস্থা হইছে যে তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা। এটা দেখে মারিয়া নীলার কাছে ছুটে গেলো।
— নীলা আমার ভাই এখানে কেন? আর ওর এই অবস্থা কে করছে?
— আমি করছি। আর তোর ভাইকে তুই নিজের হাতে মারবি।
— মানে? তুই কি পাগল হয়ে গেলি? আমি আমার ভাইকে কেন মারবো? আর কি করছে আমার ভাই?
— তোর ভাই অনেক মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা করছে। মেয়েদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছে। অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন করে তাদের ঠকিয়েছে।
— না আমার ভাই এমন কাজ করতে পারেনা। তুই আমার ভাইকে ছেড়ে দে।
এই কথা বলে মারিয়া তার ভাইয়ের কাছে চলে গেলো। মারিয়া নীলার কাছে তার ভাইয়ের জীবন ভিক্ষা চাইতে থাকে। কিন্তু নীলা মারিয়ার কথা গুলো কানেও তুলছে না।
— নীলা প্লিজ আমার ভাইকে তুই এই বারের জন্য ক্ষমা করে দে। আমার ভাই ভালো হয়ে যাবে। আমি কথা দিচ্ছি।
— মারিয়া তুই কি সব ভুলে গেলি? আমাদের রুলস কি ছিলো! এসব আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। তুই সরে যা।
নীলা এবার তার কোমর থেকে একটা পিস্তল বের করে মারিয়ার ভাইয়ের দিকে তাক করে ধরে।
— নীলা প্লিজ আমার ভাইকে মারিস না। প্লিজ নীলা।
এতক্ষণে নীলার পিস্তল থেকে গুলি বের হয়ে মারিয়ার ভাইয়ের কপাল ফুটু হয়ে গিয়েছে। আর সেখানেই সাথে সাথে মারা যায়। মারিয়া প্রচুর কান্না করতে থাকে।
— মারিয়া এই ভাবে কান্না করলে হবে!
মারিয়া কোনো কথা না বলে এখান থেকে চলে গেলো। নীলা বুঝতে পারে মারিয়া কষ্ট পাইছে। কিন্তু তার কিছু করার নাই। দেখতে দেখতে দুই দিন পার হয়ে গেলো। মারিয়ার কোনো খোঁজ নেই। নীলা এবার মারিয়ার নাম্বারে ফোন দেয়। মারিয়া সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে।
— কিরে তুই কোথায়? তোর কোনো খোঁজ খবর নেই।
— আমি বাসায় আছি।
— তুই কি এখনও মন খারাপ করে আছিস?
— আরেনা। তুই ঠিকি করছিস। আমি সব খোঁজ খবর নিয়েছি আমার ভাইয়ের ব্যপারে।
মারিয়ার কথা শুনে নীলার মন একটু হালকা হলো। নীলা মারিয়াকে বলল — মারিয়া আজ রাতে তুই পুরোনো বাড়িটায় চলে আসবি। আজকে রাতে একটা মিশন আছে আমাদের। আমি সবাইকে সব বলে দিয়েছি।
— ঠিক আছে আমি সময় মতো পৌছে যাবো। এখন রাখি।
এই কথা বলে মারিয়া ফোন কেটে দিলো। নীলা একটা চেয়ারের উপরে বসে থাকে। আর সে তার হাসবেন্ড এর সাথে কাটানো সময় গুলোর কথা ভাবছে। কতই না সুন্দর ছিল তাদের সংসার। কিন্তু হুট করে সব কি ভাবে এলোমেলো হয়ে গেলো! এসব ভাবছে এমন সময় নীলার ফোন বেজে ওঠে।
— হ্যালো রাসেল বলো।
— আপু আজকে রাতেই মিশনের জন্য আমি সব কিছু রেডি করে নিয়েছি।
— তুমি সবাইকে নিয়ে ওখানে চলে যাবে। আমি আর মারিয়া পরে আসবো। আর নজর রাখবে ওদের উপরে।
— ঠিক আছে আপু। আপনি সাবধানে থাকবেন।
— আমাকে নিয়ে চিন্তা করার কিছু নাই।
দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। নীলা মারিয়ার অপেক্ষায় বসে রইলো। কিন্তু মারিয়ার কোনো খোঁজ নেই। নীলা মারিয়ার নাম্বারে ফোন দিতেই মারিয়া রিসিভ করে বলল আর একটু অপেক্ষা করতে সে চলে আসছে।
কিছুক্ষণ পরে মারিয়া চলে আসে। মারিয়াকে দেখে নীলা বলল — কিরে তোর এতো সময় লাগলো কেন?
— বাসায় একটু কাজ ছিল। এখন চল।
নীলা সামনের দিকে পা বাড়াতেই চারদিক থেকে পুলিশ নীলাকে ঘিরে ধরে। নীলা হতবাক হয়ে গেলো। নীলা মারিয়ার দিকে তাকাতেই মারিয়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে পুলিশকে বলল — নিয়ে যান আপনাদের আসামীকে। যাকে আপনারা খোঁজ করছেন। এই সেই মেয়ে।
নীলা কোনো কথা বলল না শুধুই মারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এবার পুলিশ নীলাকে গ্রেফতার করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। নীলাকে জেলখানার একটা রুমের ভিতরে রেখে দেয়। পরের দিন সকালে কেউ নীলার সাথে দেখা করতে আসে। সেটা নীলাকে বলা হয়। নীলা বুঝতে পারেনা কে তার সাথে দেখা করতে আসতে পারে?
নীলা একটু সামনে যেতেই দেখে রাসেল এখানে চলে আসছে নীলার সাথে দেখা করার জন্য।
— রাসেল তুমি এখানে কেন আসলে?
— আপু আমি কাল অনেক রাত অব্দি আপনার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম। কিন্তু আপনি আর আসলেন না। আবার আপনার ফোন ও অফ। তারপর আমি মারিয়া আপুকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম আপনি থানায়। কি ভাবে হলো এমন আপু?
নীলা মনে মনে ভাবতে থাকে রাসেল হয়তো সব জানেনা। জানলে সে এতক্ষণে মারিয়ার ক্ষতি করে দিত। নীলাও মারিয়ার কথা বললনা।
— রাসেল আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেনা। আমি এখান থেকে অবশ্যই বের হবো। আর পুলিশ আমাকে এখানে আঁটকে রাখতে পারবেনা। আমি ফিরে আসা অব্দি সব কাজ আপাতত অফ রাখো। আমি ফিরে আসবো ভিন্ন রূপে।
— ঠিক আছে আপু এখন তাহলে আমি আসছি। নিজের খেয়াল রাখবেন।
রাসেল চলে গেলো। একজন পুলিশ নীলার কাছে আসলো।
— নীলা তুমি যদি সব কিছু ঠিকভাবে উত্তর দাও তাহলে তোমার সাজা কম হবে।
— আমাকে এখানে ধরে আনা কেন হয়েছে আমি তো সেটাই জানিনা।
— তোমার উপরে তিনটি খু*নের অভিযোগ আছে। আর তোমাকে এই জন্য ধরে নিয়ে আসা হলো।
নীলা একটা হাসি দিয়ে বলল — অভিযোগ আছে সেই জন্য আমাকে নিয়ে আসলেন? কোনো প্রমাণ কি আছে? প্রমাণ ছাড়া আমাকে এখানে আঁটকে রাখতে পারেন না।
— প্রমাণ তো হবে তোমার জবানবন্দি নিয়ে। এখন তুমি সত্যিটা শিকার করো।
— আমি তো কিছুই করিনি তাহলে আমি কি শিকার করব?
— কি ভাবে সত্যিটা বের করতে হয় আমরাও খুব ভালো ভাবে জানি।
এই কথা বলে পুলিশ অফিসার বের হয়ে চলে আসে। আর নীলাকে দুই দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়।
এই দুদিন ধরে নীলার উপর অনেক টর্চার করা হয়। কিন্তু নীলার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করতে পারেনি। পুলিশ অফিসার এবার ইন্সপেক্টর নিহানকে বলল — স্যার এই মেয়ের মুখ থেকে একটা কথা ও বের করতে পারলাম না। মেয়েটা একটা কথাও বলছেনা। আপনি দেখুন কিছু বের করতে পারেন কিনা! আমি আর পারছিনা।
এই কথা বলে পুলিশ অফিসার বেরিয়ে চলে গেলেন।
নিহান নীলার দিকে তাকিয়ে দেখে নীলার মুখে এখনও হাসি। একটা মেয়ে হয়ে কি ভাবে সহ্য করতে পারে এসব? নিহান এবার পুলিশ অফিসারকে বাহিরে চলে যেতে বলল। পুলিশ অফিসার বাহিরে চলে গেলো। এবার নিহান একটা চেয়ার টেনে নীলার সামনে বসল। নিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল — নীলা আমি ইন্সপেক্টর নিহান। আমার নাম হয়তো তুমি শুনেছ! আমাকে এখানে শুধুই এই ক্যাচ এর জন্য আনা হয়েছে। আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা। আমি চাই তুমি সত্যি কথা বলো আমার কাছে।
নীলা এবার নিহানের দিকে একবার তাকিয়ে সে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। নিহান নীলাকে চেয়ার থেকে নামিয়ে ফ্লোরের উপরে শুইয়ে দেয়। আর তাড়াতাড়ি করে গাড়ি বের করতে বলে। নীলাকে ইমারজেন্সী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।
চলবে?