নীল কৃষ্ণচূড়া পর্ব-০৮

0
14

৮.

সময় প্রায় বছর খানেক এগিয়ে গেছে।অনিমা অবশ্য সময়ের সাথে তাল মেলাতে পারে নি।অনিমা তখনো কেবিনে,দু’চোখ বুজে গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন।

জাভেদা পারভীন ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে একদৃষ্টে দেয়ালের দিকে চেয়ে ছিলেন।তিনি পরিষ্কার করে কিছু দেখছিলেন না।আজকাল তার দৃষ্টির প্রখরতা কমেছে।তিনি সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা দেখেন।

প্রত্যুষ দরজা ঠেলে ভেতরে এলো।জাভেদা সেদিকে তাকালেন না।কিন্তু তিনি জানেন,এই সময়ে প্রত্যুষ বাদে আর কেউ তার ঘরে আসবে না।প্রত্যুষ এসে রোজকার মতো তার পায়ের কাছে বসলো।তার মাথা নিচের দিকে নামানো।সে ফ্লোরে কিছু একটা দেখছিলো।জাভেদা বললেন———“তোমার বাবা দুই দিন ধরে বলছে,কোথাও গিয়ে কিছুদিন ঘুরে আসবে।তুমি বলো,কবে যাবে?”

প্রত্যুষ ধীর গলায় বলল——–“আমি যাবো না।তোমরা যাও।”

——–“আশ্চর্য!তোমার জন্যই তো যাচ্ছে।তুমি না গেলে কেমন করে হবে প্রত্যুষ?”

———“আমি যেতে চাইছি না।”

———-“কেন?কি হয়েছে তোমার?”

———-“আমার ভালো লাগে না।”

প্রত্যুষ পুনরায় উঠে দাঁড়ালো।তার চোখ মুখ উদ্ভ্রান্তের ন্যায় দেখালো।জাভেদা জানতে চাইলেন—-“কোথায় যাচ্ছো?”

——–“হাসপাতালে”

——–“কেন?”

——-“এভাবেই।অনুর কাছে যেতে কোনো কারণ লাগে নাকি?”

——“প্রত্যুষ!”

অত্যন্ত দৃঢ় আর থমথমে কন্ঠস্বর।প্রত্যুষ থেমে গেল।জাভেদা পারভীন বড় বড় শ্বাস ফেলে বললেন—–“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো প্রত্যুষ?এসব কি শুরু করেছো তুমি?”

——-“আমি কি করেছি?”

——তুমি জানো না?

—-না।

জাভেদা ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেললেন।কন্ঠস্বর আগের চেয়ে মোলায়েম করে বললেন—–“দিন নেই,রাত নেই।তুমি ঐ কেবিনের সামনে গিয়ে পড়ে থাকো।এটা কোনো জীবন হলো প্রত্যুষ?এভাবে কি জীবনকে চলতে দেওয়া যায়?”

প্রত্যুষ ঠান্ডা চোখে মায়ের দিকে তাকালো।তার চেয়েও ঠান্ডা স্বরে বলল——“তোমরা যাও না অনুর কাছে?”

——“যাই।কিন্তু তোমার মতো অস্বাভাবিক আচরণ করি না।”

——“আমি অস্বাভাবিক আচরণ করি?” প্রত্যুষ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

——-“সে প্রশ্ন তুমি নিজেকে করো।”

প্রত্যুষ নিজেকে প্রশ্ন করেছে নাকি,সে খবর আর জানা গেল না।তাকে কিছুক্ষণ বাদে দেখা গেল অনিমার কেবিনের সামনে।অনিমাকে এখন একটা সুন্দর ফকফকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে।সে ঘুমাচ্ছে আরামের ঘুম।কোনো কষ্ট নেই তার।

প্রত্যুষ খুব সাবধানে দরজা ঠেলে ভেতরে আসে।তারপর অনিমার শিয়রে গিয়ে বসে।অনিমার নাক মুখ ভালো মতো দেখা যায় না।একশো রকমের যন্ত্র তার সমস্ত শরীর দখল করে রাখে।প্রত্যুষ বসে কিছুক্ষণ তাকে দেখলো।মেয়েটাকে দেখলে আজকাল মায়া লাগে।বুকে কেমন একটা দ্রিম দ্রিম শব্দ হয়।আগে হতো না।এখন হয়।মনে হয় কি যেন একটা নাই।

প্রত্যুষ তার মাথায় হাত রেখে সামান্য হাসল।
——“অনু! বেশি কষ্ট হয়?”

অনিমা সেই আগের মতো।গালের পাশে যেই সেলাই লেগেছিল,সেটা এখনও কিছুটা ফুলে আছে।সেলাইয়ের জায়গা গুলো লালচে দেখায়।ঐ লালচে স্থান দেখতে দেখতে প্রত্যুষের চোখ ঘোলা হয়,বুকে টান লাগে।কিসের টান?কে জানে!

প্রত্যুষ আবারো কালো রঙের ডায়রিটা হাতে নিলো।আগেও অনেকবার পড়েছে।এখন আবার পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।সে অবশ্য সবগুলো পাতা পড়ে না।সে পড়ে তার প্রিয় পাতা গুলো।আজকে সে তার সবচেয়ে প্রিয় পাতাটি পড়বে।তারপর একটা বড়সড় সিদ্ধান্ত নিবে।

_____

আজ জনাব প্রত্যুষের জন্মদিন।তিনি এই দিনটি খুব আনন্দ ভরে পালন করেন।তাই মণিও এই দিন সবাইকে বাড়িতে দাওয়াত করে ভালো মন্দ রান্না করে।

তার প্রিয় রং কালো।আপাতত কালো।সে প্রতি মাসেই পছন্দ পাল্টায়।গত মাসে ছিলো নেভি ব্লু।আসছে মাসে আবার সেটা আকাশী কিংবা হলুদও হয়ে যেতে পারে।বলা যায় না।

আমি খুঁজে খুঁজে একটা কালো কূর্তি বের করলাম।এটা অবশ্য আমারো পছন্দ।আমি তার জন্য অনেক গুলো কবিতা সাজিয়েছি।কিন্তু সেগুলো আমি তাকে বলবো না।আমি তার জন্য একটা ঘড়ি কিনে নিবো।অথচ তাকে আমি আস্ত মানুষ উপহার দিতে চেয়েছিলাম।

আজ তার বাড়িতে অনেক মানুষ ছিলো।মণি কাজে প্রচুর ব্যস্ত।বাড়ি গিয়ে দেখি সে নিজেও একটা কালো পাঞ্জাবি পরেছে।আমাকে দেখেই খুব আন্তরিক হয়ে হাসলো।বলল——-“এতোক্ষণে এলি।আয় আয় কেক কাটবো।”

অনেকগুলো মোমবাতি জ্বালানো হলো।তীব্র করতালির শব্দে প্রত্যুষ ভাই কেক কাটলেন।আমি জ্বলজ্বলে চোখে সেটা দেখলাম।

প্রত্যুষ ভাইয়ের ধারণা,পজেসিভনেস শুধু তার মাঝেই আছে।তাকে বলতে চাই,এটা তার ভুল ধারণা।সে যেমন করে আমাকে তার সবচেয়ে প্রিয় কাজিন বানাতে চায়,আমিও তাই।
আমি গভীর মনোযোগে তার হাব ভাব দেখছিলাম।কেক কাটার পর কাজিনদের মধ্যে তিনি সবার প্রথমে কাকে কেক খাওয়াবেন,সেটা আপাতত আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।কিন্তু আমি সিরিয়াল পেয়ে গেলাম আরো আগে।প্রত্যুষ ভাই মণিকে খাওয়ানোর পরেই আমাকে খাইয়ে দিলো।এই একটা ঘটনা আমার পুরো দিন ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।সে জানে না,সে জানবেও না যে তার একটুখানি পাত্তা পেতে আমি কি না করেছি।

যদি কেউ কোনোদিন আমার লিখা পড়েন,তবে এতোদিনে জেনে যাবেন যে আমি নিজেও তাকে ভীষণ ভীষণ পছন্দ করতাম।সেই পছন্দের একটা নামও আছে।কিন্তু আমার আর প্রত্যুষ ভাইয়ের মাঝে ঐ শব্দটা লিখতে কেমন যে অস্বস্তি হয়।

আমি তাকে পছন্দ করি।সেই পছন্দটা ন্যায় নাকি অন্যায়,সেই প্রসঙ্গে যাবো না।কিন্তু তাকে আমি আজকের এই দিনে কিছু কথা বলতে চাই।

প্রত্যুষ ভাই,
ঘড়িটা কেবল সৌজন্যের খাতিরে তোমাকে দিয়েছি।আসলে আমি পারলে তোমাকে একটা আস্ত মানুষ উপহার দিতাম।আমি পারলে তোমাকে একটা সন্ধ্যা উপহার দিতাম।
আমি পারলে তোমাকে উপহার দিতাম এক কাপ চা আর সাথে একটা মিষ্টি সংসার।
পারলে উপহার দিতাম একটা লাল শাড়ি পরা বউ,যে ইলিশ ভাঁজা আর ভাত রেঁধে তোমার জন্য অপেক্ষা করতো।
তারপর সাঁজবেলায় তুমি বাড়ি এলে দু’জন বসে গপাগপ ধোঁয়া উঠা ভাত খেতো।
আমি আর কি ই বা দিবো বলো?
আমি না হয় তোমায় একটা সংসারই দিবো।

আমি বলি না যে তোমার প্রতি আমি দুর্বল।আমি বরং বলি-
মুখের পানে চাহিনু অনিমেষে,
বাজিল বুকে সুখের মতো ব্যথা।

____

প্রত্যুষ ডায়েরি বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।অনিমার হাতটা কেমন জীর্ণ হয়ে হসপিটাল বেডের একদিকে পড়ে আছে।আঙুলে একটা ক্যানুলা।ইসিজি মনিটরে একটা আঁকাবাঁকা দাগ তার বেঁচে থাকার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে।প্রত্যুষের ইচ্ছে করে ঐ হাতটা ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে।তারপর ভারি গলায় বলতে——-“এই দেখ অনু।আমি এখানে বসে আছি।কেন বসে আছি জানিস?কারণ আমি একটা মেয়ের রান্না করা ইলিশ ভাঁজা আর ধোঁয়া উঠা গরম ভাত খেতে চাই।উঠে বয় অনু।আমার খুব খিদে পেয়েছে।”

চৈত্র মাসের কোনো এক দিন প্রত্যুষ ঐ সর্বনাশা কাজটা করেই ফেলল।সে জাভেদা কে গিয়ে জানালো,সে অনিমা কে বিয়ে করতে চায়।অনিমা যেই অবস্থায় আছে,একেবারে ঐ অবস্থায়।জাভেদা কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকে দেখলেন।তারপর তাকে ঝাঁকি মেরে বললেন———“তুই পাগল প্রত্যুষ?ঐ রকম অবস্থায় বিয়ে হয়?”

——-“কেন হয় না?”

——-“কিভাবে হবে?”

——–“আমি আছি।তুমি আছো।অনুর মা বাবা আছে।আর শহরে তো বিয়ে পড়ানোর মতো কাজিও আছে।”

জাভেদা বড় বড় শ্বাস ছেড়ে মেজাজ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করলেন।তারপরও কিছুটা গরম স্বরে বললেন———“তুমি আর হাসপাতালে যাবে না প্রত্যুষ।তোমার মাথা ঠিক নেই।”

——–“কেন আমি কি করেছি?”

——–“তুমি জানো না কি করেছো?”

——-“না।”

জাভেদা পারভীন দুই হাতে মাথা চেপে ধরে ক্লান্ত স্বরে বললেন——–“মাফ করো প্রত্যুষ।তোমার এসব আর নিতে পারছি না।অনুর স্বাস্থ্যের অবস্থা তুমিও ভালো করে জানো।এমন অবস্থায় তুমি আবার কেন বিয়ে নিয়ে পড়লে?প্লিজ।এসব করো না বাবা।ঘুমাও তুমি।পারলে কোনো এক জায়গা থেকে ঘুরে আসো।”

প্রত্যুষ হাত পা শক্ত করে মায়ের সামনে দাঁড়ায়।পর পর নিঃশ্বাস ছেড়ে জেদি গলায় বলে——–“অনুকে ছাড়া আমি কোথাও ঘুরতে যাবো না।গেলে অনুকে নিয়েই যাবো।”

______

প্রত্যুষ অবশ্য সেই যাত্রায় সফল হয়েছিল।শেষ পর্যন্ত তার জেদ এবং যুক্তির কাছে হার মেনে অনিমার সাথেই তার বিয়ে হয়েছিল।

দিনটা চৈত্রের একুশ তারিখ।বাইরে কাঠফাটা রোদ।একটু খানি বাতাসও যেন পরম সৌভাগ্যের বিষয়।এমন উত্তপ্ত,ধূ ধূ গরমের এক দিনে আহসানুল হক প্রত্যুষ হাসপাতালের কেবিনে তার সবচেয়ে পছন্দের মানুষ অনিমা আহমেদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো।সেই বিয়েকে কেউ বা নিছক পাগলামি বলে হেসে উড়ালেও প্রত্যুষের কাছে এই বিয়ে তার বহুল সাধনার বলেই মনে হলো।

নাজির সাহেব কয়েকবার তাকে আটকাতে চেয়েছিলেন।
“অনুর সাথে বিয়ে করে তুমি কেন নিজের জীবন নষ্ট করবে প্রত্যুষ?”

কথাটা কেমন স্বার্থপর শোনায়।অনিমাকে বিয়ে করলে জীবর কেন নষ্ট হবে?
প্রত্যুষ কোনো উত্তর দিলো না।সে পুরোটা সময় থম মেরে বসে একমনে অনিমাকে দেখছিলো।

আজকের দিবসটা যেন কতো?
ওহ হ্যাঁ।চৈত্র মাসের একুশ তারিখ।এই দিনটা মনে রাখা বাধ্যতামূলক।অনিমা যখন সুস্থ হবে,তখন প্রত্যুষ তাকে এই দিনের কথা বলবে।

______

প্রত্যুষ আস্তে করে অনিমার হাতটা স্পর্শ করলো।তারপর টেনে এনে সেটা নিজের গালের সাথে চেপে ধরল।কেবিন তখন ফাঁকা।কিছুক্ষণ আগে নাজির সাহেব আর কাবেরী বেরিয়ে গেছেন।কেবিনে তখন শুধু প্রজ্ঞা,প্রত্যুষ আর অনিমা।

প্রজ্ঞা দেয়ালের একপাশ ঘেঁষে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিলো।তার চোখ কিছুটা মলিন।তবুও প্রত্যুষের সাথে চোখাচোখি হতে সে মৃদু হাসার চেষ্টা করলো।প্রত্যুষ ডাকলো——-“প্রজ্ঞা!”

প্রজ্ঞা মাথা তুলে।একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে——“হু?”

———“বাড়ি যাও।”

——–“আরেকটু থাকি?”

——–“কাল না তোমার পরীক্ষা?”

প্রজ্ঞা শুধু মাথা নাড়ল।নিচু স্বরে বলল———“আমি একটু তোমার পাশে বসি?”

—–“না।”

——“তুমি কি আমার সাথে রেগে আছো?”

——“একদমই না।রাগ হবো কেন?”

প্রজ্ঞা তবুও দু’হাত এক করে আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।প্রত্যুষ বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল——-“যাও প্রজ্ঞা।কালকে তোমার পরীক্ষা।বাসায় গিয়ে মন দিয়ে পড়ো।”

——“আচ্ছা।”

প্রজ্ঞা পুতুলের মতো হেঁটে বেরিয়ে গেল।তাকে দেখতে দেখতেই প্রত্যুষ আরেক দফা শ্বাস ছাড়লো।

____

রাত বেড়েছে কিছুটা।কেবিনের দেয়ালে ঝুলতে থাকা ঘড়িটা টিক টিক করে এগিয়ে যেতে থাকে।সাথে আবার অনিমার ইসিজি মনিটর টা বড্ড জ্বালাচ্ছে আজ।কেমন ঠক ঠক আওয়াজ করছে।

প্রত্যুষ ফিচেল হাসলো।মাথা নামিয়ে বলল——-“এই দেখ।প্রজ্ঞা কে সুন্দরভাবে ফিরিয়ে দিয়েছি।আমি কিন্তু মানুষটা এতোটাও খারাপ নই অনু।”

*

আজ শ্রাবণের তিন তারিখ।আজ আমি আমার একটি উপলব্ধির কথা লিখবো।উপলব্ধি টা হলো,প্রত্যুষকে নিয়ে।
আমার মনে হয়,প্রজ্ঞা আপু প্রত্যুষ কে পছন্দ করে।

মাঝে মাঝে হয় না?সবচেয়ে অপছন্দের মানুষটিকেই একসময় আমরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে ফেলি?প্রজ্ঞা আপুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।আপু টেরই পায়নি কখন সে প্রত্যুষ ভাইয়াকে পছন্দ করে ফেলেছে।

আজকের ঘটনা।প্রত্যুষ ভাইয়া বাইক এক্সিডেন্ট করে হাত পা ছুলে ফেলেছেন।সাথে আবার কাঁধের দিকেও সেলাই লেগেছে।কি একটা বাজে অবস্থা! মণি তো কাঁদতে কাঁদতে শেষ।খবর পেয়ে আমরা কোনোরকমে ব্যাগপত্র গুছিয়ে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলাম।

মেইন গেইটের সামনে আসতেই প্রজ্ঞা আপুর সাথে দেখা হলো।আপু কোনোরকমে দৌড়ে দৌড়ে আমাদের বাড়িতে এসেছে।তার শ্বাস উঠে গলা দিয়ে অদ্ভুত শব্দ হচ্ছিল।আপু হাঁপাতে হাঁপাতে বলল——–“আমিও যাবো।”

আব্বু অবাক হয়ে বলল——“তুমি যাবে?তোমার তো পরীক্ষা প্রজ্ঞা।”

উল্লেখ্য,প্রজ্ঞা আপুর তখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলমান।আপু পড়াশোনা নিয়ে প্রচন্ড সিরিয়াস।কিন্তু প্রত্যুষ ভাইয়ের এ কথা শুনে আপু সব ফেলে ছুটে এসেছে।আমি দিনের আলোতে স্পষ্ট দেখেছি।আমি প্রজ্ঞা আপুর চোখে সর্বনাশ দেখেছি।

এরপর আপু গেল আমাদের সাথে।গিয়ে সে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ প্রত্যুষ ভাইকে দেখলো।
আমার আফসোস হলো।
প্রজ্ঞা আপুর জন্য না।কিন্তু প্রত্যুষ ভাইয়ের জন্য।সে এমন চমৎকার একটি মেয়ের ভালোবাসা বুঝতে পারে নি।
প্রজ্ঞা আপু এমন এক মেয়ে,যে মরে গেলেও মনের কথা মুখে আনবে না।আমি জানি দিন শেষে প্রজ্ঞা আপু তার এই চমৎকার হৃদয় নিয়ে হেরে যাবে।এবং তাকে আমি বলতে চাই,তার এই নির্লিপ্ত স্বত্তাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।
প্রত্যুষ ভাই!
আমার বোনকে আর কষ্ট দিবে না।প্রজ্ঞা আপুর সাথে সারাদিন ঝগড়া করবে না।আপু কিন্তু আমার দ্বিতীয় প্রিয় কাজিন।সুতরাং তার সাথে ঐভাবেই ব্যবহার করবে।

এই যে।লিখবো না লিখবো না করেও কতো কি লিখে ফেলি।দিনের শেষে আকুল হয়ে গেয়ে যাই-

ও যে মানে না মানা।
আঁখি ফিরাইলে বলে, ‘না, না, না।’
যত বলি ‘নাই রাতি– মলিন হয়েছে বাতি’
মুখপানে চেয়ে বলে, ‘না, না, না।’

চলবে-

[রিচেক নাই]