নুন ঝালের সংসার পর্ব-০১

0
26

#নুন_ঝালের_সংসার

(১ম পর্ব)

সুমন আজ অফিসে বসের ঝাড়ি খেয়েছে। প্রেজেন্টেশন ভালো হয় নি। কয়েকদিন খুব খেটেখুটে প্রেজেন্টেশনটা দাঁড় করানো। কিন্তু কেন যে বসের মনপুত হলো না বুঝতে পারে না। অফিস থেকে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে জ্যামের মধ্যে পড়লো। ভাবলো একটা রিকশা নেবে, কাছেই বাসা। কিন্তু তাতে জ্যামে কতক্ষণ বসে থাকতে হয় কে জানে?

এজন্য হাঁটা শুরু করলো। বউ মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়েছিলো, দেখার সময় হয় নি। এখন আর দেখতে ইচ্ছে করছে না, নিশ্চয় এটা ওটা আনার লিস্ট। বিয়ের কিছুদিন পরেই পুরুষ হয়ে যায় কর্মচারী। ম্যাসেজ লিস্টে খালি বাজারের ফর্দ।

ঘেমে একদম গোসল হয়ে বাসায় আসে। দরজা খুলতেই দেখে তাপসী মুখ গোমড়া করে বসে আছে। চুল এলোমেলো, আলুথালু গায়ের জামা। তার মানে আজ ঝগড়া হবে। কিন্তু সুমনের ঝগড়া করার এনার্জি নেই। ওদের দুই বাচ্চা – এক ছেলে আর এক মেয়ে। বয়সের গ্যাপ একদমই কম। দেড় বছরের। ছেলে শাফিনের বছর ৫ বছর আর মেয়ে রাইছার সাড়ে তিন৷ মারামারি হুড়োহুড়ি লেগেই থাকে। বাসায় সব সময় কুরুক্ষেত্র। ছেলেকে স্কুলে দিয়েছে, যতোক্ষণ স্কুলে থাকে ততক্ষণ একটু শান্তি৷

সুমন ঘরে ঢুকে বাসার ড্রেস নিয়ে বাথরুমে ঢোকে। সময় নিয়ে গোসল করে৷ অফিসের কলিগ রাজন নিশ্চয় মুখ টিপে হাসছে। এই ছেলেটা কেন যেন সুমনকে সহ্যই করতে পারে না। সুযোগ পেলেই খোঁচা দেয় আর শত্রুতা করে। অফিস পলিটিক্স খুব খারাপ জিনিস। এসব ভাবতে ভাবতে সুমনের ঘাড় ব্যথা করে। বের হয়ে এক কাপ চা খেতে হবে – মনে মনে ভাবে সুমন।

গোসল সেরে ড্রইং রুমে সোফায় বসে। সোফার অবস্থা বেহাল, তেমনি অবস্থা ঘরের দেওয়ালের। ভাগ্যিস বাড়িওয়ালা এখানে থাকে না। দেখতে পেলে ওদের টাকায় রঙ করে নেবে!

– এক কাপ চা দাও না তাপসী।

– বুয়া আসে নাই, চায়ের পাতিল ধোয়া নেই।

সুমনের রাগ হয় কিন্ত কিছু বলে না। বাচ্চা দুটো আসলেই ভীষণ দুষ্টু ওদের সামলাতেই তাপসীকে হিমশিম খেতে হয়। মেয়েটা ওদের অপ্রত্যাশিত। যাইহোক আল্লাহর ইচ্ছা!

– তাহলে রাতের খাবার হলে দিয়ে দাও, ক্ষুধা লেগেছে৷

প্রেজেন্টেশন এর টেনশনে দুপুরে আসলে সুমনের খাওয়াই হয় নি। এখন গোসল করে ক্ষুধায় পেট যেন চো চো করছে।

– রান্না হয় নি।

কিছুটা রাগ আর ক্ষোভের সাথে বলে তাপসী৷

– কেন? রান্না হয় নি কেন? এটলিস্ট আলু ভর্তা ভাত তো করতে পারতে?

তাপসী কোন কথা বলে না। সুমনেরও মন হয় আর কথা না বাড়ানোই ভালো। একটা বক্স হাতড়ে দুই পিচ পাউরুটি পায়, বাচ্চাদের জন্য ঘরে সব সময় কলা থাকে। সেখান থেকেই দুইটা কলা খেয়ে নেয়। ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসে৷ বাচ্চা দুইটা অন্য ঘরে ছবি আঁকছিলো। হৈ হৈ করে এই ঘরে চলে আসে৷

– বাবা আজ তোমাদের কি জানি ডে। মাম মাম বললো বাইরে যাবো। বাইরেই খাওয়া হবে।

ছেলেটা বলে।

সুমনের যেন শক লাগে। আজ ওদের বিবাহ বার্ষিকী। ৬ বছর হলো। প্রতি বছর এই দিনে ওরা বাইরে যায়, ঘোরে, খাওয়া দাওয়া করে। আজ একদম ভুলে গিয়েছে। গিফটও একটা কিনে অফিসে ওর ডেস্কে রেখে দিয়েছে৷ এজন্যই তাপসীর এমন মূর্তি – এতোক্ষণে বুঝতে পারে সুমন।

(চলবে)