নুন ঝালের সংসার পর্ব-০৭

0
26

#নুন_ঝালের_সংসার
(৭ম পর্ব)

শাশুড়ি আসলে তাপসীর এমনিতেই কোন খারাপ লাগা নেই। মুরব্বি মানুষ বাসায় থাকা ভালো। তাপসী বরং রান্না করে খাওয়ায়, টুকটাক এটা ওটা কিনে দেয়। এমনকি ডাক্তার দেখাতেও তাপসীই নিয়ে যায়। সুমন সময় পায় না আবার শাশুড়ি তাপসীর সাথেই যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

কিন্তু উনার সমস্যা হলো সব বিষয়ে উনি কথা বলেন। আর সেই কথা হয় তাপসীকে খোঁচা দিয়ে। এই যেমন এবার এসেই তাপসীর হাতের আংটির দিকেই উনার আগে নজর গেলো। তাপসী একবার ভেবেছিলো খুলে রাখবে। কিন্তু মাত্রই পরা আংটিটা কিছুতেই খুলতে মন চাইলো না৷

– সুমনের তো আয় ইনকাম ভালোই মনে হইতাছে। তা খালি আমাগোর দেবার সময় অর টাকা কম পড়ে যায়! কইলাম তোর বোনের মাইয়ার লাইগা একটা চেইন দিমু। কয় আম্মা আমার হাতে এখন এতোডা টাকা নাই। টাকাডা যে কই যায় সেডা তো দেখতাছি।

তাপসীর খুব কষ্ট লাগে। তাপসী তো কোনো কিছু চায় নি। একবারও সুমনকে বলেনি ওর আংটি লাগবে কিংবা অন্য কিছু।

– আম্মা, আপনি কথাটা আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেই পারেন।

খুব আস্তে করে বলে তাপসী। ওর শাশুড়ি আর কিছু বলে না। মুখ গম্ভীর করে বসে থাকে। উনার প্রতিবেলায় গরম খাবার দিতে হবে, সেটাতে তাপসীর সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হলো কতটুকু চালের ভাত বসানো হলো, কতটা রুটি বানানো হলো খুব খেয়াল করে।

– এখনো এত্তোগুলান ভাত পইড়া আছে। এই বাসি ভাত খাবে কেডায়? পাইছো তো দেদারছে নষ্ট করো!

– আম্মা আমি এখনো খাই নি। আর রাইছা ঘুম থেকে উঠলে ওকেও আরেকটু ভাত দেবো। তখন বেশি খায় নি।

– মাইয়ারে এতো খাওয়াইয়া পেটুক বানাইয়ো না কইলাম। ছুডু থেইকায় অভ্যাস না করলে পরে ব্যাবাক ঝামেলা হইবে।

উফ এবার মনে হয় উনি তাপসীকে সাইজ করতেই এসেছেন। অন্যবার এতোটা করে না। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে তাপসীকে কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দেবে না!

তাপসীর বুয়া পর্যন্ত চুপিচুপি বলছে, আফা আপনের শাশুড়ি এতো কঞ্জুস ক্যান?

এক সপ্তাহ তাপসী চুপচাপ সহ্য করে কিন্তু ওর ধৈর্যের বাঁধা ভাঙে যখন শাশুড়ি ছেলের খেলনা নিয়ে কথা বলে। উনার মতে ছেলেকে বেশি খেলনা কিনে দিয়ে বাচ্চাটাকে নষ্ট করছে৷ তাপসীর রাগ হয় ভীষণ রাগ।

– আম্মা সুমন কি আপনার আপন ছেলে না? শাফিন কি আপনার আপন নাতি না? আপনি আমাদের খাওয়া চলাফেরা কোন কিছুই সহ্য করতে পারেন না কেন?

তাপসীর এই কথায় ওর শাশুড়ি কান্নাকাটি করে অবস্থা খারাপ। দুপুরে ভাত খায় না। সুমন ঘরে ফেরার সাথে সাথেই চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে

– তর বাসায় আর আইতাম না। আমি নাকি তর আপনা মা না। তোগোর খাওয়া পরা দেখবার পারি না। আমারে পাঠায় দে। মাইনষে পোলার বাড়ি থাকে আর আমি পোলার বাড়ি আইস্যা আরো মান হারাই।

সুমনের সেদিন অফিসে আরেকটা ঝামেলা বেঁধেছিলো। রাজন শয়তানি করে ওর নামে উপরে লাগিয়েছে। ওর বস ওয়ার্নিং দিয়েছে, আগামীতে অফিসে এমন গ্রুপিং এর ঝামেলা হলে সবাইকেই অন্যত্র পোস্টিং দিয়ে দেবে। মাথায় নানান ঝামেলা নিয়ে বাসায় ঢুকতেই এমন হাইকাউ। সুমন ওর মায়ের স্বভাব জানে। এর পেছনে মূল কলকাঠি নাড়ে ওর ছোটবোন। বোনেরা যে এমন চুষে খেতে পারে তা ওর বোনকে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। বাপের বাড়িতেই থাকে। সুমনের আর ভাই নেই। ওদের বড় বোন আছে একজন। উনি নিরীহ ধরণের মানুষ। নিজের সংসার নিয়েই ব্যস্ত। বাপের বাড়িতেও খুব একটা আসে না। কিন্তু ছোট বোনটা শাশুড়ি ভালো না বলে আর মা’কে দেখার নাম করে বাপের বাড়িতেই আছে। ওর বরটাও বাউন্ডুলে। ঠিকমতো কোন কাজ করে না। কিছুদিন পর পর সুমনের কাছে ব্যবসার নাম করে টাকা ধার চায়। আর সেই টাকা কখনোই শোধ করে না।

সুমন সব বোঝে। কিন্তু নিজের আপন জন, আপন রক্ত। কার বিরুদ্ধে কার কাছে বলবে? এজন্য চুপচাপ থাকে। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন। ওর মাথা এমনিতেই উতপ্ত। তার উপরে ঘরে ঢুকেই এমন কথা শুনে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।

– তাপসী, আমি তো তোমাকে যথেষ্ট ছাড় দিই। রান্না নিয়ে বা আর কিছু নিয়েই তোমাকে প্রেসার দিই না। অনেকের বউ তো বাচ্চা সামলে চাকরিও করে। আর তুমি সংসার চালাতেই হিমশিম খাও। মা কয়েকদিনের জন্য এসেছে। সেটুকুও সামলে নিতে পারছো না? এক কাজ করো, তোমরাই থাকো। আমি পোস্টিং নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাই। আমার আর সহ্য হয় না।

তাপসী কিছুই বলে না। সুমন ওর কাছে একটাবার অন্তত: জিজ্ঞাসা পারতো যে ব্যাপারটা কি! কিন্তু কিছু না শুনেই এতো কথা বললো! আর হঠাৎ চাকরি করার কথাই বা আসে কেন? চাকরি যে করবে এই বাচ্চাদের সামলাবে কে? তাপসী তো বাসায় এক মিনিটও বসে থাকে না।

সেদিন রাতে কেউই খেলো না – না সুমন না তাপসী। সুমনের মা ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার নাম করে খেয়ে নিলো। রাতে উনার মনে হলো কিছুটা বাড়াবাড়িই হয়েছে মনে হয়! সকালেই চলে যাওয়ার চিন্তা করলেন। কিন্তু যে আগুন লাগলো এটা কবে কিভাবে নিভবে সেটা কেউ জানে না।

(চলবে)