নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-১৮+১৯

0
1518

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৮

আব্রাহাম বাইরে এসেই সোজা আইরাতের সম্মুখীন হয়। আব্রাহাম কিছুটা চিন্তায় পরে যায় যে আইরাত কিছু দেখে নি তো। আইরাত কপাল কুচকে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আইরাত বলে ওঠে…

আইরাত;; আপনি এখানে..?

আব্রাহাম;; কাজ ছিলো কিছু।

আইরাত;; আপনাকে ভেতরে খুজছে সবাই।

আব্রাহাম;; কেন?

আইরাত;; ওইতো তখন যে ক্লাইন্ট গুলোর সাথে দেখা করার কথা ছিলো তারা।

আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা। চলো।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম মনে মনে এই ভেবে একটু স্বস্তি পায় যে আইরাত কিছু দেখে নি। আব্রাহাম আর আইরাত এসে পরে। তবে যাবার আগে আব্রাহাম আরেক বার চতুর চোখে তার পেছন ঘুড়ে দেখে তারপর চলে যায়। হোটেলের হলরুমে সবাই বসে আছে। কেউ কথা বলছে কেউ আড্ডা দিচ্ছে। আবার কেউ হাতে বিভিন্ন ড্রিংক নিয়ে বসে আছে। আব্রাহাম হোটেলে গিয়েই দেখে সবার সাথে সেখানে রায়হান নিজেও বসে আছে। আব্রাহাম তাকে টোটালি ইগ্নোর করে। আব্রাহাম কে দেখেই দুটো ভদ্র লোক এগিয়ে আসে। তারা কথা বলতে থাকে। আইরাতের তো এখানে কোন কাজ নেই তাই সে একটা সাইডে গিয়ে দাঁড়ায়। ওয়েটার কে বলে একটা কোল্ড ড্রিংকস অর্ডার দেয়। রায়হান এগুলো খুব সুক্ষ্ম ভাবে খায়েল করছিলো। আব্রাহাম তো লোক গুলোর সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত। আর আইরাত ড্রিংকস-এর শপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রায়হান শেষ এক চুমুক মদ খেয়ে হাত থেকে গ্লাস টা রেখে আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়।

রায়হান;; আহাম..আহাম… মিস.আইরাত।

আইরাত;; আরে আপনি!

রায়হান;; জ্বি আমি। আসলে একই হোটেলে আছি তো তাই বার বার দেখা হয়েই যায়।

আইরাত;; হুম।

রায়হান;; কাল সকালে একটা ফাংশন আছে এখানে।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা, আমি জানতাম না।

রায়হান;; এখন জানিয়ে দিলাম। আসলে ফরেইন কান্ট্রি থেকে বেশ কিছু মানুষ আসবে। তাদের সাথেই একটা গেট টু গেদার আছে।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।

রায়হান;; আপনি কিন্তু অবশ্যই আসবেন।

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম এতোক্ষন কথা বলছিলো। আইরাতের কথা এবার হুট করেই তার মাথায় আসে। কপাল কুচকে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে আইরাত রায়হানের সাথে কথা বলছে। আব্রাহাম একটু আগে একজন কে পরপারে পাঠিয়ে রেখে এসেছে মেজাজ এমনেই ভালো না। তবুও নিজেকে সংযোত রাখছে কিন্তু এখন এই রায়হান আবার আইরাতের পিছে। আব্রাহাম তাদের থেকে বিদায় নিয়ে জেকেটের হাতা গুটাতে গুটাতে আইরাতের কাছে আসে। এসেই রায়হানের দিকে একটা রাগি লুক নিক্ষেপ করে।

আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এখানে?

আইরাত;; না মানে উনি বলছিলেন যে কাল একটা ফাংশন আছে তো তাই…

আব্রাহাম;; কখন কি আছে না আছে তা বলার জন্যে এনাফ স্টাফ এখানে রয়েছে। আলাদা ভাবে কাউকে বলার জন্য রাখা হয় নি এখানে (রায়হানের দিকে তাকিয়ে দাত কটমট করতে করতে)

আইরাত;; কিন্তু…

আব্রাহাম;; চলো।

আব্রাহাম আইরাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে সেখান থেকে নিয়ে এসে পরে। আইরাতের বেশ ব্যাথা লাগছে জায়গা টায়। আইরাত ছাড়তে বললেও আব্রাহাম ছাড়ে না। আইরাতকে টেনে সোজা আব্রাহামের রুমে নিয়ে আসে। এসেই ধিরিম করে রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। আব্রাহাম আইরাতকে দেওয়ালের সাথে দুই হাত চেপে ধরে। রাগে লাল হয়ে তাকিয়ে আছে আব্রাহাম। আইরাত মাথা নিচু করে ফেলে।

আব্রাহাম;; একশ একবার বলেছি যে ওই রায়হানের সাথে কোন কথা বলবে না মানে বলবে না।

আইরাত;; আমি তো বলি নি উনিই এসেছিলেন।

আব্রাহাম;; সরে আসতে পারলে না তুমি। শুনো আমি বাদে তুমি অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলবে না বুঝতে পেরেছো। আজ শেষ বার বললাম। আবার যদি দেখেছি রায়হানের সাথে কথা বলতে তো সেদিন কি করে বসবো তোমার সাথে আমি তা নিজেও জানি না।

আইরাত;; 😒।

আব্রাহাম এখনো দেওয়ালের সাথে আইরাতকে চেপে ধরে আছে। আইরাত ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না। আব্রাহাম কতোক্ষন রাগে ফুসে আইরাতের মাথার সাথে তার মাথা ঠেকিয়ে দেয়৷

আব্রাহাম;; আইরাত আমার ভালো লাগে না তুমি অন্য কারো সাথে কথা বললে। বলবে না আমি না করেছি। ক্লিয়ার?

আইরাত;; হুম হুম।

আব্রাহাম;; রুমে যাও।

আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে দিতেই আইরাত যেন প্রাণে বাচে। হুমড়ি খেয়েই এক প্রকার রুমে চলে যায়।

রুমে গিয়েই দরজা লাগিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আইরাত।

আইরাত;; বাপরে বাপ কি মানুষ। সবসময় শুধু এমন করেন।

আইরাত বসে ছিলো রুমে। তখনই দরজাতে কারো কড়া নাড়ার শব্দ হয়। আইরাত গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখে রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; আরে তুমি এসো এসো।

রোদেলা;; তুমি এখানে আর আমি কতো করে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

আইরাত;; কেন কি হয়েছে?

রোদেলা;; শুনো কাল ফাংশন আছে বুঝলে। এখন অনেকেই অনেক রকম ড্রেস পরবে। আর তুমি তো ওয়েস্টার্ন পরো না আমি জানি। তো ভাবলাম কিছু একটা আলাদা নিয়ে যাই তোমার জন্য৷

আইরাত;; কি?

রোদেলা;; শাড়ি। এই দেখো।

রোদেলা আইরাতের সামনে একটা নেভি ব্লু কালারের শাড়ি রেখে দেয়। শাড়ি অনেক অনেক সুন্দর। নেভি ব্লু তার ওপর সাদা স্টোনের কাজ করা।

রোদেলা;; কেমন?

আইরাত;; অনেক সুন্দর। কিন্তু পরা আর আমার হবে না মনে হয়।

রোদেলা;; ওমা কেন?

আইরাত;; আমি পরতে পারি না।

রোদেলা;; আরে আমিও শাড়িই পরবো আর আমি পরাতেও পারি। আমি পরিয়ে দিবো নি।

আইরাত;; আচ্ছা৷

আইরাত আর রোদেলা বেশ গল্প গুজব করে। এক সময় রোদেলা চলে যায়। রাত বেশি হলে আইরাত ঘুমিয়ে পরে।

আর অন্যদিকে আব্রাহাম রাশেদ কে ফোন দেয়। রুবেলের লাশ কোন ভাবেই যেন কারো হাতে না লাগে সেই ব্যাবস্থাই করছে। যেই রুমে রুবেল কে লক করে রাখা হয়েছিলো সেখানে রাশেদ সহ আর কয়েক জন গার্ড যায়। যেই বিশ্রী ভাবে মেরেছে আব্রাহাম। তা দেখে রাশেদেরই গা কেমন গুলিয়ে যায়। এটা একটা নামি দামি হোটেল যদি এখানে লাশ পাওয়া যায় তাহলে বড়ো ধরনের ঝামেলা পেকে যাবে। তাই এই লাশকে তার ঠিকানাতে পৌঁছাতে হবে।


রাত অনেক গভীর। আব্রাহামের চোখে নেই কোন ঘুম। ভালো লাগছে না। এতো কিছু বাদ দিয়ে আব্রাহাম সোজা আইরাতের রুমে চলে যায়। নিজের এবং নিজের পিএ এর রুমের ডুপ্লিকেট চাবির ব্যাবস্থা আব্রাহাম আগে থেকেই করে নিয়েছিলো। তাই কোন সমস্যা হলো না। আব্রাহাম খুব সাবধানে আইরাতের রুমে ঢুকে পরে। গিয়ে দেখে আইরাত ঘুমের ঘরে তলিয়ে আছে। রুমে জ্বলছে একটা ধূসর রঙের লাইট। থাই গ্লাস টা খোলা। কিন্তু বাইরে বড়ো বড়ো পর্দা আছে সেগুলো বাতাসে দুলছে। কি মায়াময় লাগছে দেখতে আইরাতকে। আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাতের বিছানার পাশে বসে আইরাতের দিকে ঝুকে পরে। আইরাতের সারা মুখে নিজের চক্ষু দুটো বিচরন করে চলেছে। আব্রাহামের খুব করে ইচ্ছে করছে এই আইরাতের মাঝে এখনই ডুব দিতে। কিন্তু এখন না, এখন সঠিক সময় না। নিজের অজান্তেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছে এই মেয়েটাকে আব্রাহাম। কখনো ভাবে নি যে এই এতো রাতে নিজের ঘুম ছেড়ে সে এক মেয়ের ঘুমন্ত চেহারা দেখার জন্য বেকুল হয়ে পরবে। কিন্তু যা আব্রাহাম কখনো ভাবেই নি তা আজ তার সাথে ঘটে যাচ্ছে। আব্রাহাম আর কিছুটা ঝুকে আইরাতের কপালে এক গভীর চুমু একে দেয়৷ ঘুমের মাঝেই আইরাত কিছুটা নড়ে চড়ে উঠে। আব্রাহাম আইরাতের এক হাত নিয়ে নিজের দুই হাতের ভাজে আকড়ে ধরে। আইরাতের দিকে এক স্থীর নয়নে তাকিতে আছে আর একটু পর পর তার হাতে চুমু আকছে।

আইরাতেরও মনে হচ্ছে যে কেউ একজন ঘুমের মাঝেই তাকে খুব করে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু চোখ মেলে তাকানোর মতো সাধ্য তার হচ্ছে না। ঘুম খুব তীব্র। আব্রাহাম সারা রাত আইরাতের হাত ধরে তার পাশেই বসে ছিলো। যখন ভোরের আলো আবছা আবছা ভাবে ফুটে ওঠতে শুরু করলো তখন আব্রাহাম আরেকবার আইরাতের কপালে চুমু দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।

সকাল ৮ টা। আইরাতের ঘুম ভেঙে যায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে পরে বিছানাতে। তবে নিজের রুমে থাকা বড়ো আয়নার দিকে চোখ পরতেই আইরাত চমকে যায়। আয়নাতে সুন্দর করে লাল কালি দিয়ে লিখা “” Good morning my Babygirl “”। আইরাত কপাল কুচকে দুই হাত দিয়ে চোখ ভালো ভাবে ডলে নেয়। এই সাজ সকাল বেলা কে তার রুমে এসেছিলো। আর আয়নাতে লাল কালি দিয়ে এভাবে গুড মর্নিং উইস কে করে। আইরাত দ্রুত উঠে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে ধরে দেখে এটা কালি না বরং লাল লিপস্টিক। আইরাত বেশ অবাক হয়। আইরাতের সন্দেহ যায় সোজা আব্রাহামের ওপর। কারণ এই বেবিগার্ল ডাক টা আব্রাহামের দেওয়া। কিন্তু এত্তো সকাল বেলা কখন কীভাবে উনি রুমে এলেন।

আইরাত;; এই ছেলে আমায় পাগল বানিয়ে দিবে। রুমে কখন এলো উনি? ধুর উনার পক্ষে কোন কিছুই অসম্ভব না। যাজ্ঞে যাই হোক। একটু পরেই রোদেলা আসবে।

আইরাত উঠে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। এদিকে আব্রাহাম করিডরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গরম কফিতে চুমুক দিচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৮ টা। আইরাত অবশ্যই এখন ঘুম থেকে উঠেছে। আইরাত ওয়াসরুমে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান গাচ্ছে আর ফ্রেশ হচ্ছে মানে বাথরুম সিংগার যাকে বলে আর কি।

আইরাত;; টিপ টিপ বারছা পানি, পানি ম্যা আগ লাগায়ি। আগ লাগি দিল ম্যা তো দিল কো তেরি ইয়াদ আয়ি। উলুলুলুলুলুলুলুলুলু। ইলু ইলু লালালালালালালা।

ফ্রেশ হওয়া শেষে আইরাত একটা টাওয়াল পেচিয়ে বাইরে আসে। মাথায় একটা টাওয়াল মানে চুল গুলো প্যাচানো আর শরীরে একটা টাওয়াল হাটু অব্দি। আইরাত গুনগুন করে গান গেতে গেতে বাইরে বের হয়ে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মাথা থেকে টাওয়াল টা খুলে ফেলে চুল গুলো ঝাড়তে ঝাড়তে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আইরাত তো মনের সুখে গান গাচ্ছে। আয়নাতে তাকাতেই দেখে আব্রাহাম বিছানাতে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।

আব্রাহাম;; হাই জানপাখি..!

আইরাত;; হাই। আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া

আব্রাহাম এতোক্ষন সবকিছু দেখছিলো। আর আইরাত তো নিজের মন মতো। সে আব্রহাম কে এতোক্ষন খেয়ালই করে নি। তবে আইনাতে আব্রাহামকে দেখে আইরাতের প্রাণ পাখি যেন যায় যায়। নিজের হাত দিয়ে খামছে টাওয়াল ধরে ফেলে। টাওয়াল টা নিচের দিকে টানছে। এবার আব্রাহাম সোজা হয়ে বসে।

আব্রাহাম;; এতো টানাটানি করলে টাওয়াল টা সোজা খুলে নিচে নেমে পরবে।

আইরাত;; 😟☹️।

আব্রাহাম উঠে গিয়ে আইরাতের দিকে যেতে ধরে। আব্রাহাম তার দিকে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে আর আইরাত পেছাচ্ছে। পেছাতে পেছতে দেওয়ালের সাথে এক সময় আইরাতের পিঠ ঠেকে যায়৷ আব্রাহাম কাছে গিয়ে তার এক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় আকড়ে ধরে নিজের দিকে দেয় এক টান। এতে আইরাত উলটো ঘুড়ে যায়। আব্রাহামের বুকের সাথে তার পিঠ ঠেকে আছে। আব্রাহাম দুই হাত দিয়ে আইরাত কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা। আব্রাহাম আইরাতের ঘাড়ে নিজের নাক ঘষতে থাকে। কিন্তু এদিকে আইরাতের হাল তো বেহাল। হাত দিয়ে টাওয়াল খামছে ধরে আছে। কেমন কেপে কেপে উঠছে। আর আব্রাহাম তো আইরাতের ঘ্রাণ নিতে মত্ত।

আব্রাহাম;; তুমি কেন এভাবে আমার সামনে আসো। প্লিজ এসো না। আমি পাগল হয়ে যাবো।

আইরাত;; ছ ছা ছাড়ুন।

আব্রাহাম কিছু না বলে আইরাতের ভেজা চুলে নিজের নাক ডুবায়। আইরাত এবার লাগাতার ভাবে কাপছে।

আব্রাহাম;; একটু পরে নিচে ফাংশন আছে আছে রেডি হয়ে নুচে এসো।

আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে নেয়। আইরাত একটু দম ছাড়ে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার এসে আইরাতের ঠোঁটের কাছে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে যায়। তারপর চলে যায়। আর আইরাত তো ফাটা চোখে তাকিয়ে আছে।


তার কিছুক্ষন পর রোদেলা আসে রুমে শাড়ি নিয়ে। বেশ কিছু সময় নিয়ে আইরাতকে শাড়ি পরিয়ে দেয়। আইরাত অনেক ফর্সা। আর ফর্সার মাঝে শাড়ির কালার টা যেন ফুটে ওঠেছে। কানে ছোট ছোট দুটো সিলভার কালারের ঝুমকো পরে নেয়। আর চুল গুলো ছেড়ে দেয়।

রোদেলা;; অনেক সুন্দর লাগছে৷

আইরাত;; তাই!

রোদেলা;; হ্যাঁ। দেখো নিচে গেলে সবাই তাকিয়ে থাকবে। কারণ এটা একদম আনকোমন ড্রেসাপ।

আইরাত;; হয়েছে, তোমাকেও কিন্তু কম সুন্দর লাগছে না।

আইরাত আর রোদেলা নিচে চলে যায়। সেখানে আব্রাহাম আর বাকি সবাই আগে থেকেই ছিলো। আইরাতের আসতেই আব্রাহাম সরু দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে। আইরাত যে এমন কিছু একটা পরে আসবে আব্রাহাম তা ভাবে নি। আইরাতকে দেখে আব্রাহাম তার বুকের বা পাশে হাত রেখে দেয়। ইন ফ্যাক্ট সবাই তাকিয়েই আছে। এমন একটা পরিবেশে শাড়ি। আইরাতকে আসতে দেখে আব্রাহাম তার দিকে এগিয়ে যায়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে নিজের বাহু এগিয়ে দেয়। আইরাত কপাল কুচকে তাকায়।

আইরাত;; কি হয়েছে?

আব্রাহাম;; এখানে এমনই হয়। আমার বাহুতে হাত রেখে দাও। সবার কাপল আছে কিন্তু আমার নেই। আমার ভালো লাগছে না। হাত রাখো।

আইরাত;; তো এখানে কি? কতো শত মেয়েই তো আছে তাদের কাছে যান। আমি হাত দিবো না।

আব্রাহাম;; আইরাত বেবি হাত রাখতে বলেছি তোমাকে 🙂।

আইরাত;; এভাবে প্লিজ বলবেন না আমার ভয় লাগে কখন কি করে বসেন।

আব্রাহাম;; ভালোই ভালোই হাত রাখো।

আব্রাহামের এমন কথা শুনে আইরাত না পেরে হাত রেখেই দেয় তার বাহুতে।

এখন আব্রাহাম আর আইরাতকে একটা পারফেক্ট কাপলের মতো লাগছে৷ তবে আইরাতের দিকে আরেক টা নজর তাকিয়ে আছে। এই নজর লালসার। আইরাতের দিকে রায়হান তাকিয়ে আছে আর আব্রাহামের থেকে প্রচুর জ্বলছে। সফট একটা মিউজিক চলছে৷ সবাই পরিবেশ টা উপভোগ করছে। আর আব্রাহাম আইরাতকে জ্বালিয়ে মারছে। বেশ অনেক সময় পার হয়ে যায়। একটা ওয়েটার এসে আইরাত আর আব্রাহামের সামনে জুস রাখে। আইরাত একটা জুসের গ্লাস নিতে যাবে তখনই তার শাড়িতে জুস পরে যায়। আইরাত সাথে সাথে উঠে ঝেড়ে ফেলে। আব্রাহাম রেগে কিছু বলতে যাবে কিন্তু আইরাত থামিয়ে দেয়। আইরাত আব্রাহামকে বলে ওয়াসরুমের দিকে চলে যায়। ওয়াসরুম টাও অনেক বড়ো সড়ো। আইরাত বিরক্তি নিয়ে শাড়ি পরিষ্কার করছে। এতো পরিপাটি হয়ে রেডি হয়েছিলো গেলো এবার সব। শাড়ি ক্লিন করে আইরাত বাইরে এসে পরতে নিবে কিন্তু তখনই কেউ একজন আইরাতের হাত ধরে টেনে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে যায়। আইরাত চিৎকার করতে ধরলে সে তার মুখ চেপে ধরে।





চলবে~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৯

আব্রাহাম হোটেলের হলরুমেই ফাংশনে ছিলো। সাথে বাকি সবাই আছে। তবে তখন হোটেলের ভেতরে রাশেদ আসে। বেশ তাড়াহুড়ো তে আছে সে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রাশেদ দ্রুত পায়ে আব্রাহামের কাছে আছে। আব্রাহাম এতোক্ষন হেসে হেসে কথা বলছিলো কিন্তু রাশেদ কে এভাবে আসতে দেখে সে খানিক কপাল কুচকায়। রাশেদ আব্রাহামের পাশে এসে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠে….

রাশেদ;; স্যার ঝামেলা পেকে গেছে।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?

রাশেদ;; রুবেলের লাশ তো এখন হয়তো পচেও গেছে কিন্তু…

আব্রাহাম;; বলো..!

রাশেদ;; কিন্তু স্যার যখন আপনি রুবেল কে ওমন ভাবে মেরে ওই রুমে লক করে রেখে এসেছিলেন। তখন সেই ভাবেই কেউ রুবেলর বেশ কিছু ছবি তুলে নিয়েছে। মানে রুবেলের আধা মরা অবস্থায় কিছু ছবি।

আব্রাহাম;; হুয়াট ননসেন্স। কীভাবে সম্ভব?

রাশেদ;; জানি না স্যার। একটু আগেই আমার ফোনে ছবি গুলো সেন্ড হয়েছে। কে দিয়েছে জানি না। যেই একাউন্ট থেকে এসেছিলো সেটাও এখন ডিসএবেল দেখাচ্ছে।

আব্রাহাম;; রায়হান করেছে। (চোখ মুখ শক্ত করে)

রাশেদ;; জ্বি স্যার?

আব্রাহাম;; I am damn sure এটা রায়হানের কাজ।

রাশেদ;; কিন্তু স্যার যদি এটা রায়হান ই করে থাকে তাহলে সে কেন পুলিশ অফিসার দের ইনফর্ম করলো না বা মিডিয়ার লোকজন দের ডাকলো না?

আব্রাহাম;; রুবেল রায়হানের পিএ, আর সেই ক্ষেত্রে পুলিশরা রায়হান কেই জিজ্ঞসা বাদ বেশি করবে। অর্থাৎ ভেতর থেকে সব নাড়ি ভুড়ি একদম খুচিয়ে বের করবে। রায়হানের যে বেআইনি কাজ গুলো আছে সেগুলো তো আগে থেকেই সবার জানা তবে এবার যেহেতু মার্ডার কেস তো তাকেই জেল-হাজতের চক্কর বেশি কাটতে হবে। নিজের কাজ গুলোতে পর্দা ফালানোর জন্য রুবেলের জন্যে সে কোন স্টেপ নেয় নি।

রাসেদ;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা।

আব্রাহাম;; ছবি গুলো কোথায়?

রাশেদ;; স্যার আমার ফোনেই। (ফোন টা আব্রাহামের দিকে দিয়ে)

আব্রাহাম;; লিসেন তোমার ফোন আমার লাগবে। আর চিন্তা করো না আমি শুধু পিক গুলো নিয়ে তোমার মেমোরি তোমাকে দিয়ে দিবো। আর নিউ ফোন পেয়ে যাবে কিছুক্ষনেই মাঝেই।

রাশেদ;; জ্বি স্যার সমস্যা নেই। আপনি নিন।

রাশেদ তার ফোন টা আব্রাহামকে দিয়ে এসে পরে। আব্রাহাম ফোনের ভেতরে থাকা পিকচার গুলো ভালোভাবে খেয়াল করে। আব্রাহামের সন্দেহ হচ্ছে ওই রুমের কোথাও ক্যামেরা ছিলো না তো। কারণ আব্রাহাম যে শক্ত ভাবে গার্ড দের বলে রেখে এসেছিলো তাতে কারো ভেতরে প্রবেশ করা ইম্পসিবল। আর যদি ক্যামেরা থেকে থাকে তাহলে সেখানেই ক্যাপচার্ড হয়ে গেছে। যাই হোক এতে আব্রাহামের কোন কিছুই যায় আসবে না So let it be….

আব্রাহাম ফোন টা নিজের কাছে রেখে দেয়। তবে এতোক্ষনে আব্রাহামের মাথায় আইরাতের খেয়ল আসে। আইরাত ওয়াসরুমের কথা বলে গেছে বেশ অনেক সময় এখনো আসার নাম নেই। আব্রাহামের কপালে এবার চিন্তার ছাপ পরে। আব্রাহাম সারা হলরুমে আইরাত কে খুজতে শুরু করে। কিন্তু পায় না, আসে নি এখনো তার মানে। আব্রাহাম আর কিছু না ভেবে সোজা ওয়াসরুমের দিকে হাটা ধরে।


অন্যদিকে~~

আইরাতকে একটা অন্ধকার রুমে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একটা হাত আইরাতের মুখ চেপে ধরেছে। আইরাত ইচ্ছে মতো ছুটাছুটি করছে ছাড়া পাবার কিন্তু পাচ্ছে না। ক্রমশ তাকে একটা অন্ধকার রুমের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেতে যেতে একটা সময় আলোতে এসে পরে। আইরাতের মুখ চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে কিছুটা লাগিয়ে ধরে। এতোক্ষন সেই ব্যাক্তিটির মুখ দেখতে না পারলেও এবার আইরাত স্পষ্ট দেখতে পারছে। সে রায়হান। রায়হান কে এমন ভাবে দেখে আইরাতের চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। আইরাত কখনো ভাবেই নি যে রায়হান এমন কিছু করবে। আইরাত এবার যেন ছাড়া পাবার আরো বেশি চেষ্টা করছে কিন্তু রায়হান ছাড়ছে না। আইরাতের মুখ টা নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে।

আইরাত;; উম উমম উম।

রায়হান;; হুসসসসসসসসস। আমি, ভয় পেয়ো না।

আইরাত;; (আইরাত ইশারা দিয়ে তার মুখের ওপর থেকে হাত সরাতে বলে)

রায়হান হাত সরিয়ে নেয়।

আইরাত;; মানে কি এইসবের। আপনি কেন এখানে আনলেন আমায়?

রায়হান;; শুনো কিছু কথা…

আইরাত;; আমি আপনার কোন কথাই শুনতে চাই না।

আইরাত রেগে চলে আসতে নিলে রায়হান আবার আইরাতের হাত ধরে ফেলে। এবার আইরাতের মেজাজ চরমে পৌঁছে যাচ্ছে।

আইরাত;; সমস্যা টা কি আপনার?

রায়হান;; শুনো আমি তোমার খারাপ চাই না বুঝলে। আর এছাড়াও এতো সুন্দর একটা মানুষের খারাপ কেউ কি করে চাইতে পারে বলো।

আইরাত;; আলতু ফালতু বকা বন্ধ করুন। ছাড়ুন।

রায়হান;; এতো সহজেই কীভাবে?

আইরাত;; আব্রাহাম আপনাকে আমার সাথে দেখলে খুন করে ফেলবে আপনাকে।

রায়হান;; হয়েছে আব্রাহামের তারিফ করা। আব্রাহাম আব্রাহাম আব্রাহাম সবার মুখে এই একই কথা। তোমার যে এই সো কল্ড আব্রাহাম আছে না এর কাম কাজ জানলে এরপর থেকে ওর নাম নিজের মুখেও আনবে না।

আইরাত;; সে যাই হোক। আপনি ছাড়ুন, যেতে দিন আমায়।

রায়হান;; লিসেন পছন্দ করি আমি তোমাকে। আর তোমার যে ওই আব্রাহাম আছে না সে মানুষ খুন করে ঘুড়ে বুঝলে তুমি। আর এখানে আমি তোমাকে এনেছি ওর ব্যাপারেই কিছু বলতে।

আইরাত;; আমি শুনতে চাই না কিছু।

রায়হান;; শুনো আব্রাহাম বিজনেস ম্যানের পাশাপাশি এক বড়ো মাফিয়াও বটে বুঝলে। খুন-খারাবা তার নিত্ত দিনের কাজ। এমনকি একটু আগেও একজন কে মেরে রেখে এসেছে ও।

আইরাত;; কি বলছেন এইসব?

রায়হান;; কি বিশ্বাস হয় না তো তাই না। তাহলে এটা দেখো আমি প্রমাণ ছাড়া কিছুই বলি না।

এই বলেই রায়হান আইরাতের সামনে ফোনে একটা ভিডিও ক্লিপ রাখে। আইরাত অবাক হয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে নেয়। ভিডিও এর প্রথমেই দেখা যাচ্ছে একটা লোককে বেধে রাখা হয়েছে। তার সামনেই অন্ধকারে একটা লোক বসা ছিলো হাতে কিছু একটা নিয়ে। ভিডিও তে লোক টি আলোর কাছে আসতেই আইরাতের মুখ হা হয়ে যায়। লোকটি আব্রাহাম আর তার হাতে বড়ো ধরনের একটা রড৷ আইরাত দেখলো আব্রাহাম লোকটির সামনে গিয়ে কিছু না বলেই তার মুখ টা ওপরে তুলে হাতে থাকা রড টা একদম ঢুকিয়ে দিলো সেই লোকটার চোখে। ইশশশশশ কি ভীবৎশ দৃশ্য রে বাবা। এটা দেখার সাথে সাথে আইরাত একটা চিৎকার দিয়ে হাত থেকে ফোন টা নিচে ফেলে দেয়। আর রায়হান বাকা হাসি দেয়। আইরাতের হাত পা গুলো যেন কাপছে ভয়ে। মাত্রই কি দেখলো নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। আইরাত স্পষ্ট দেখেছে যে সেটা আব্রাহাম ছিলো।

রায়হান;; কি হলো তো এবার বিশ্বাস..!

আইরাত;; _____________

আইরাত এবার কিছু না বলেই সোজা চলে আসতে নেয় কিন্তু রায়হান আবার তার হাত ধরে থামিয়ে দেয়। এবার যেন কিছুটা অসভ্যতামোই করতে লাগলো রায়হান। আইরাত ছাড়া পাবার জন্য চিল্লাচ্ছে।

আব্রাহাম এদিক সেদিক আইরাত কে অনেক খুজেছে কিন্তু আইরাত কোথাও নেই। খুজতে খুজতে আব্রাহাম ওয়াসরুমের পাশে চলে গেলো। আরো কিছুদূর যেতেই আব্রাহামের কানে চিল্লানোর আওয়াজ ভেসে আসে কিছুটা। আব্রাহামের বুঝতে এক মিনিট দেরিও হয় না যে এটা আইরাতের গলা। আব্রাহাম সেদিকেই দৌড়ে চলে যায়। গেতেই দেখে রায়হান আইরাতের হাত ধরে আছে আর আইরাত হাত মুচড়াচ্ছে। বারুদে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে যেমন দাও দাও করে আগুন জ্বলে এখন ঠিক তেমন ভাবেই আব্রাহামের শরীরে আগুন জ্বলছে। চোখ গুলো হুট করেই লাল বর্ণ ধারণ করে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিতে দেখে আইরাতের হাতের পাশে কিছুটা কেটে গেছে চুরি দিয়ে। হাত বেশি মুচড়ানোর ফলে কেটে গেছে। আইরাত অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে। আইরাতের চোখে পানি দেখে আব্রাহামের যেন এবার রাগের বাধ ভেঙে গেলো। আব্রাহাম সোজা গিয়ে রায়হানের বুক বরাবর দেয় এক লাথি মেরে। এতে রায়হান ছিটকে গিয়ে বেশ দূরে সরে যায়। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিজের জেকেট থেকে রুমাল বের করে আগে আইরাতের কাটা স্থানে বেধে দেয়। রক্ত ঝড়ছে৷ আইরাত তো মাথা নিচু করে দিয়ে আছে৷ তবে আব্রাহাম আইরাতের হাত বাধছে আর রক্তচক্ষু নিয়ে এক মনে আইরাতের দিকেই ফাকিয়ে আছে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ছেড়ে দিলে আইরাত এক সাইডে গিয়ে দাঁড়ায়। আব্রাহাম এবার রায়হানের কাছে গিয়ে তার শার্টের কলার ধরে তাকে তুলে।

আব্রাহাম;; তোর সাহস হয় কি করে আইরাত কে টাচ করার। তোর কলিজা টা ছিরে ফেলবো আমি। জানোয়ার আর কতো মেয়ে বাজি করবি। কবে মানুষ হবি৷ আর যাই করিস না কেন আমার আইরাতের দিকে চোখ তুলে তাকালে মনে রাখিস তোর জীবনের শেষ দিন হবে।

রায়হান;; হাহ, কিছুই করতে পারবি না তুই।

আব্রাহাম রায়হানের কলার খামছে ধরে এগুলো রাগে বলছিলো। কিন্তু এই রায়হান তবুও শয়তানি হাসি দিয়ে এগুলো বলছে। মানে কি পরিমাণ নির্লজ্জ হলে মার খাবার পরও কেউ হাসে। এবার তো আব্রাহামের মাথায় রক্ত জমাট ধরে গেলো। নিজের যতো শক্তি ছিলো সব দিয়ে আব্রাহাম লাগাতার রায়হানের মুখে ঘুষি দিতে থাকে। ঘুষি দিচ্ছে তো দিচ্ছেই থামার কোন নাম গন্ধ নেই। একের পর এক ঘুষি সোজা রায়হানের মুখের ওপর পরছে৷ আইরাত ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে রুমের এক কিণারে হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুব ভয় লাগছে তার। আব্রাহাম কে হিংস্র লাগছে দেখতে। প্রচন্ড রকমের রেগে আছে। আব্রাহাম মনে হচ্ছে আজ রায়হানের মুখ টা একদম থেতলেই দিবে। ইতোমধ্যেই রায়হানের নাক-মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত পরতে শুরু করেছে। হোটেলের সব স্টাফ আর বাকি লোকজনরা ওপরের রুম থেকে বেশ চিল্লা পাল্লার আওয়াজ পেয়ে সবাই সেখানে ছুটে যায়। গিয়ে দেখে আব্রাহাম পাগলের মতো একের পর এক পাঞ্চ মেরেই যাচ্ছে রায়হান কে। সবাই দ্রুত গিয়ে আব্রাহাম কে থামায়। কিন্তু আব্রাহামের ধারে কাছেও তো কেউ ঘেষতে পারবে না। সবাই রায়হান কে ছাড়িয়ে আনে আব্রাহামের কাছ থেকে খুব কষ্টে। আব্রাহাম এবার ছেড়ে দেয়। রাগে ফুসছে সে। আব্রাহামের হাতের আঙুল গুলোর ওপরে লাল লাল একটা আভা পরে গেছে। এত্তো রেগে আছে আব্রাহাম বলার বাইরে। তবে এই রাগ টা যেন আব্রাহামের ওপর বেশ সুট করে। মানানসই।

আব্রাহাম;; আজ বেচে গেলি। এর পরেরবার থেকে না ই তোকে বাচানোর জন্য কেউ আসবে আর না ই আমি তোকে বাচিয়ে রাখবো।

এই বলেই আব্রাহাম সেখান থেকে আইরাতের হাত ধরে নিয়ে বাইরে এসে পরে। সবাই রায়হান কে ধরাধরি করে নিয়ে আসে। আব্রাহাম এখনো প্রচুর রেখে আছে৷ যেভাবে আইরাতের হাত ধরেছে আর যেই গতিতে আইরাতকে নিয়ে যাচ্ছে এতেই আব্রাহামের রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। আইরাত ভয় পেয়ে আছে অনেক। আইরাতকে হলরুমের সবার সামনে দিয়ে নিয়ে সোজা তার রুমে চলে যায় আব্রাহাম। রুমে গিয়ে আইরাতকে বিছানাতে ধপ করে বসিয়ে দেয়। তারপর নিজের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে ছুড়ে মারে। শার্টের হাতা গুলো গুটিয়ে আইরাতের সামনে বসে। চোখ মুখ বেশ শক্ত তার। পাশে থাকা ফার্স্ট এয়িড বক্স টা নিয়ে আইরাতের হাত টা টান দিয়ে ধরে নিজের কাছে আনে। রুমাল টা খুলে রেখে দেয়। বেশ খানি কেটেছে আইরাতের হাত। আব্রাহামের রুমাল টা রক্তে ভিজে গেছে। আব্রাহাম খুব রুডলি বিহেভ করছে। তা সম্পূর্ণই রাগের বশে বুঝাই যাচ্ছে। আব্রাহাম কিছু না বলেই সেভলনের শিশি টা নিয়ে তুলি তে ভরায়। তারপর তা সোজা আইরাতের হাতে চেপে ধরে। কাটা স্থানে সেভলন যেন মরিচের মতো জ্বালা পোড়া শুরু করে দিলো। আইরাত ফট করে হাত টা টান দিয়ে এনে পরে তারপর ফুপিয়ে কেদে দেয়। আইরাতের এই চোখের পানি দেখে যেন আব্রাহামের রাগ এক নিমিষেই উড়ে গেলো।

আব্রাহাম আলতো ভাবে আইরাতের হাত টা নিয়ে এবার খুব যত্নের সাথে সেভলন লাগিয়ে দিতে থাকলো সাথে আস্তে আস্তে ফু ও দিচ্ছে। আইরাত তাকিয়ে তাকিয়ে আব্রাহাম কে দেখছে। আইরাতের বিশ্বাসই হচ্ছে না যে এই সেই আব্রাহাম যে কিনা এতো ভয়ংকর ভাবে একজন কে মেরেছে। তখনই তার আরেক রুপ আর এখনই তার আরেক রুপ। আইরাত আর এভাবে চুপ করে থাকতে পারলো না।

আইরাত;; আ আপনি, আপনি রা..রায়হানের পি পিএ কে মেরে ফেলেছেন?

আইরাতের কথায় আব্রাহাম কিছুটা অবাক হয় কিন্তু আইরাতের দিকে তাকায় না। তার হাতে ব্যান্ডেজ করতে করতেই বলে ওঠে.৷

আব্রাহাম;; হ্যাঁ মেরেছি তো।

আইরাত;; কেন মারলেন?

আব্রাহাম;; তোমার জন্য।

আইরাত;; আমার জন্য মানে কি?

আব্রাহাম;; এতোকিছু তোমার ওই ছোট্ট খুলিতে ঢুকবে না। (আইরাতের দিকে তাকিয়ে)

আইরাত;; এভাবে কেউ কাউকে মারে?!

আব্রাহাম;; আমি মারি তো।

আইরাত;; দয়া-মায়া কিচ্ছু নেই আপনার মাঝে?

আব্রাহাম;; না নেই। কারণ আমি এমনই। যে অবস্থা তে আমি আছি সেখানে এইসব দয়া-মায়া থাকা নেহাত হাস্যকর।

আইরাত;; _________________

আইরাতের হাতের ব্যান্ডেজ করা শেষ। নিজের পা গুটিয়ে বিছানাতে বসে আছে। আর আব্রাহাম সোফাতে বসে বসে ফোন ঘাটছে৷

রায়হান এখন ডাক্তারের আন্ডারে। আব্রাহাম তাকে আধা মরা করে দিয়েছে। আব্রাহাম এখন বেশ বুঝতে পারছে যে সব রায়হানের কারসাজি ছিলো এগুলো। আইরাত যখন নিচে নামে ওপর থেকে রায়হান তখন থেকেই আইরাতের দিকে নিজের নজর রেখে দিয়েছিলো। আইরাত আব্রাহামের সাথেই ছিলো। অবশ্যই তা রায়হান দেখতে পারে নি তাই ওয়েটার কে সেই ডেকে নিয়ে সব শিখিয়ে দিয়েছে। আর ওয়েটার তাই করেছে। সে আইরাতের শাড়িতে ইচ্ছে করেই জুস ফেলে দিয়েছে আইরাত তা ক্লিন করার জন্য ওয়াসরুমে গিয়েছে আর রায়হান তখনই সুযোগ পেয়েছে। এটা ভেবে ভেবেই আব্রাহামের মাথা টা যেন ফেটে যাচ্ছে রাগে।। যাই হোক এবার কিছু একটা করতেই হবে। আব্রাহাম বেশ কিছুক্ষণ ভেবে দুই গ্লাস জুস অর্ডার করে। কয়েক মিনিট পর ওয়েটার এসে রুমের সামনে নক করে। আব্রাহাম গিয়ে জুস দুটো পিক করে। তবে আব্রাহাম জুসের দিকে কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম এক গ্লাস জুস নিয়ে আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আইরাত;; এটা কেন?

আব্রাহাম;; Drink this,, It’s good for your health…

আব্রাহাম আইরাতকে তা খেতে বলে৷ আইরাত কিছু না বলে খেয়েও নেয়। কিন্তু খাওয়ার পরই আইরাতের কেমন মাথা ঘোড়াতে শুরু করলো। একদম ভনভন করে ঘোড়াচ্ছে। আইরাত আবছা আবছা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাত কিছুটা শুয়েই পরে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে ঝুকে পরে

আব্রাহাম;; It’s sleeping time babygirl….

আইরাত বুঝলো যে তার ড্রিংক এ আব্রাহাম ই কিছু একটা মিশিয়ে দিয়েছে। আব্রাহাম আইরাতের কপালে একটা চুমু দেয়। আর ততক্ষণে আইরাত চোখ একদম বন্ধ করে ফেলে। আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আব্রাহাম এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে থাকে। এবার যা করতে হবে তা দ্রুত আর রাতের মাঝেই করতে হবে।





চলবে~