#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৪
আইরাত বাড়িতে গেতে না গেতেই পাকে আরেক ঝামেলা। আইরাত গিয়ে দেখে তার চাচা আর চাচি মুখ ফুলিয়ে দিয়ে বসে আছে আর তাদের মাঝে রনিত বসে আছে। আইরাত কে আসতে দেখেই রনিত ছুটে গিয়ে আইরাতের কাছে যায়। আর তখনই সবার চোখ আইরাতের দিকে যায়।
রনিত;; আইরু আপু আইরু আপু..!
আইরাত রনিত কে অনেক গুলো পাপ্পি দেয়।
রনিত;; এসেছো তুমি। জানো অনেক মিস করছিলাম তোমাকে। আমার জন্য চকোলেট আনো নি?
আইরাত;; হ্যাঁ এনেছি তো অনেক গুলো। এই যে নে।
আইরাত রনিতের হাতে দুই বক্স চকোলেট ধরিয়ে দিলো। রনিতের খুশি আর দেখে কে। তবে আইরাত রনিতের দিকে ঝুকে আস্তে করে বলে ওঠে…
আইরাত;; আচ্ছা কি হয়েছে চাচা-চাচির বল তো। এভাবে দুজনেই মুখ গোমড়া করে রেখেছে কেন?
রনিত;; আরে তুমি তো এতোদিন ছিলে না জানো না তো কি কি হয়েছে আল্লাহহহহহহহহ 😱 (ফিসফিস করে)
রনিতের এমন রিয়েকশন দেখে আইরাত ফিক করে হেসেই দেয়।
আইরাত;; কি হয়েছে বলবি?
রনিত;; আরে তোমাকে নিয়েই বেধেছে দুই জনের মাঝে।
আইরাত;; আমাকে নিয়ে মানে? আমি আবার কি করলাম?
রনিত;; তা আমি জানি না তুমি বরং গিয়েই শুনো আমি এখন বাইরে যাবো খেলতে এতোক্ষনে আমার কান পচে গেছে।
আইরাত;; চুপ বাদর একটা। আচ্ছা তুই যা
রনিত দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। আর আইরাত ধীর পায়ে হেটে ভেতরে গেলো। আইরাত কে দেখেই তার চাচা ইকবাল তার দিকে এগিয়ে গেলো। আর তখনই ষাড়ের মতো চেচিয়ে আইরাতের চাচি বলে ওঠে…
কলি;; হাহ ওইতো এসেছে বাড়ির জমিদার। চারদিনের কথা বলে আজ নিয়ে ছয়দিন লাগিয়ে দিলো।
আইরাত;; চাচি আমি সেখানে সাধে থাকি নি।
কলি;; এই রনিতের বাবা তুমি এখন সোজা সাপটা সব বলে দাও তো।
আইরাত;; চাচ্চু হয়েছে কি? আমি বাড়িতে না থাকার ফলেও যদি এই আমাকে নিয়েই ঝামেলা হয় তাহলে প্লিজ বলে দাও আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।
ইকবাল;; শোন মা আমি কখনো চাই নি যে এমন কিছু একটা হোক। যদি আমার বড়ো ভাই তোর বাবা বেচে থাকতো তাহলে হয়তো আজ আমাকে উনার নিজের ভাই হিসেবে পরিচয় দিতেও বাধতো। কেননা আমার কাছে থেকেও তোকে এই এতো কিছু সহ্য করতে হচ্ছে।
আইরাত;; আহা চাচ্চু ছাড়ো তো।
ইকবাল;; আজ একটা না একটা ব্যাবস্থা হবেই।
এই বলেই একবাল সাহেব একটা ব্যাগ এনে আইরাতের সামনে রাখলেন।
ইকবাল;; আইরাত মা এই ব্যাগে, এই ব্যাগে এক কোটি টাকা আছে। এটা তোর।
কলি;; কি তুমি, তুমি এই সব টাকা গুলো ওকে দিয়ে দিচ্ছো?
ইকবাল;; হ্যাঁ কারণ এটা আইরাতের ভাগ। ভাইজান এগুলো নিজের মেয়ের নামে রেখে গিয়েছিলেন। আর তোমার লজ্জা থাকা দরকার কেননা এতো দিন তুমি এই আইরাতের বাবার সম্পত্তিতে তেই থেকে-খেয়ে এসেছো। সেখানে আইরাত কে কিছু বলা কওয়ার অধিকার তোমার নেই বুঝলে।
আইরাত;; কিন্তু চাচ্চু এই টাকা গুলো দিয়ে আমি কি করবো। আমার দরকার নেই।
ইকবাল;; অবশ্যই দরকার আছে। টাকা গুলো তুই তোর পড়াশোনার পেছনে খরচ করতে পারবি। এগুলো তোর আমানত তোর কাছেই রাখ। আর হ্যাঁ মা যেখানে লোভী কুমিররা থাকে সেখানে এই জিনিস গুলো সামলিয়ে রাখা টাই ভালো।
ইকবাল কথা টা যে ইন্ডিরেক্টলি হলেও আইরাতের চাচি কলি কেই বলেছেন তা আর কারো বুঝতে বাকি রইলো না। আইরাত আর কিছু না বলেই নিজের ব্যাগপত্র সব নিয়ে নিজের রুমে এসে পরে। এসেই নিজের ব্যাগ টা সোফাতে ছুড়ে মারে। আর বিছানাতে গিয়ে ধপ করে শুয়ে পরে।
আইরাত;; উফফফফফফফ আল্লাহ, এতো ভেজাল আর ভালো লাগে না। এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতেও পারি না একমাত্র চাচ্চুর জন্য। আমি ডিপ্রেশনে চলে যাবো এভাবে চলতে থাকলে। কিছু তো একটা করতেই হবে।
হঠাৎ আইরাতের মাথায় একটা কথা আসে। আর আইরাত ঝট করে উঠে পরে।
আইরাত;; আচ্ছা আমি এক কাজ করি। অফিসের চাকরি টা ছেড়ে দেই। হ্যাঁ কারণ সেখানে থাকলে আমি আরো পাগল হয়ে যাবো। আব্রাহাম পাগল বানিয়ে দিবে আমায়। হুম এটাই বেস্ট হবে, আমি কালই অফিসে গিয়ে আমার রেসিগনেশন ল্যাটার টা সাবমিট করে দিবো।
আইরাত হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন বসে থাকে।
ফ্রেশ হয়ে আইরাত নিচে গেলো। ভাগ্যিস আজ তার চাচি রান্না করেছে। কোন রকমে গিয়ে খেয়ে এসে আবার নিজের রুমে যায়। সকালে অনেক যার্নি করে এসেছে যার ফলে অনেকটাই টায়ার্ড। শুয়ার সাথে সাথে চোখে ঘুম নেমে এলো।
।
।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আইরাত রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরে। আজ অন্যান্য দিন থেকে আইরাত অফিসে দশ মিনিট আগেই এসেছে। অফিস এতো শান্ত আজ। আজ এখনো আব্রাহাম আসে নি। আর আব্রাহাম আসার আগে সবাই বেশ কোলাহল করেই কাটিয়ে দেয় সময় টুকু। আব্রাহাম যখন আসে তখন সবাই যেন রোবট, একদম চুপচাপ। কিন্তু আজ এখন থেকেই সবাই অনেক চুপ। ব্যাপার টা আইরাত খেয়াল করলো। আইরাত ভেতরে যেতেই দেখলো রোদেলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছে।
আইরাত;; এই রোদেলা..!
রোদেলা;; হ্যাঁ এসেছো।
আইরাত;; হুম কিন্তু সবাই আজ এতো চুপ কেন?
রোদেলা;; আরে নিউ প্রজেক্ট নিয়ে সবাই অনেক বেশি সিরিয়াস। প্রচুর ভাগ-দৌড় করছে সবাই। এক বিন্দু কিছু ওলট-পালট হলে আব্রাহাম স্যার খুন করে ফেলবেন একদম।
আইরাত;; ঘোড়ার ডিম করবেন। মানুষ মাত্রই ভুল করে এতে এতো রাগার কি আছে।
রোদেলা;; আরে স্যার তো নিজেও পারফেক্ট আর উনার সবকিছু চাইও পারফেক্ট। (কিছু টা লজ্জা পেয়ে)
আইরাত;; তা তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেন?
রোদেলা;; আরে স্যার তো আমারও ক্রাশ।
আইরাত;; ওরে বাবা রে আচ্ছা থাক হয়েছে।
আইরাত রোদেলার সাথে কথা বলছিলো আর তখনই চোখে চশমা পরে হাতে ফোন ঘাটতে ঘাটতে আব্রাহাম অফিসের ভেতরে আসে। সবাই তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম যখন ভেতরে আসে তখন ফোন থেকে মাথা তুলে এক নজর আইরাতের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; মিস.আইরাত, কফি নিয়ে আমার কেবিনে আসুন এক্ষুনি।
আইরাত অবাক, এই প্রথম আব্রাহাম তাকে আপনি বলে সম্বোধন করলো। হয়তো এখন সবাই আছে তাই। আব্রাহাম তার কেবিনে চলে গেলো। এখন কি আর করার আইরাত কে কফি বানাতে হবে। সে তার পাশে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে রোদেলা তার দুই হাত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে হেলেদুলে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে খুশি যেন উপচে পরছে। আইরাত দেয় এক ধাক্কা।
আইরাত;; এমন করে তাকিয়ে থাকতে হবে কেন?
রোদেলা;; আব্রাহাম স্যারের দিকে না তাকালে আমার এই চোখ দুটোর সাথে বড্ড বেশি অন্যায় করা হবে।
আইরাত;; এহহহহহহহহহহ আদিক্ষেতা।
রোদেলার কাছ থেকে আইরাত এসে পরে, তারপর চলে যায় কিচেনে। গরমা গরম এক কাপ কফি বানিয়ে আইরাত আব্রাহামের কেবিনে চলে যায়। আর সাথে নিজের রেসিগনেশন ল্যাটার টাও নিয়ে যায়।
আইরাত;; ভেতরে আসবো?
আব্রাহাম;; এসো।
আইরাত গিয়ে আব্রাহামের টেবিলের সামনে কফির কাপ টা রাখে। তবে আব্রাহাম টেবিলে নেই। আইরাত তাকে আশে পাশে খুজছে। আর তখনই আব্রাহাম হুট করেই এসে আইরাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আইরাত চমকে কিছুটা চিল্লিয়ে ওঠে। আব্রাহাম তার দুই হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে নিজের নাক ডুবিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; আই মিস ইউ জানপাখি।
আইরাত;; কালই তো দেখা হয়েছিলো এইটুকু সময়ে আবার মিস করার কি আছে?
আব্রাহাম;; তা তুমি বুঝবে না। আমি বুঝি।
আইরাত;; ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; ন্যাহ ন্যাহ।
আইরাত;; আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমারও অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার আছে তোমাকে। অনেক বেশিই।
আইরাত;; জ্বি বলুন।
আব্রাহাম;; আই লাভ ইউ।
আব্রাহাম এই কথা বলেই টুক করে আইরাতের গালে কিস করে দেয়। তারপর আইরাত কে ছেড়ে দিয়ে নিজের চেয়ারে এসে বসে।
কফিতে চুমুক দিতে দিতে ফাইল গুলো দেখছে।
আব্রাহাম;; হুম হুম গুড।
আইরাত;; দেখুন সিরিয়াসলি কথা আছে আমার।
আব্রাহাম;; হুম বলো।
আইরাত;; আমার রেসিগনেশন ল্যাটার। আমি এই জব টা আর করতে চাইছি না।
আইরাতের এমন কথায় আব্রাহামের মাঝে তেমন কোন পরিবর্তন দেখা গেলো না। সে আগের মতো করেই ফাইল দেখছে আর কফি খাচ্ছে। আইরাত আব্রাহামের এতো শন্ত চেহারা দেখে কপাল কুচকায়।
আইরাত;; আমি কিছু বলছি আপনাকে, আমি জব টা ছাড়তে চাইছি।
এবার আব্রাহাম জোরে জোরে হেসেই দেয়
আব্রাহাম;; হাহাহা, হাহাহা।
আইরাত;; আপনি হাসছেন কেন?
আব্রাহাম;; যখন আমার পিএ হবার জন্য পেপারে সাইন করেছিলে তখন পেপার টা ঠিক ভাবে পড়েছিলে কি?
আইরাত;; আপনি ঠিক ঠাক ভাবে পড়তে দিয়েছিলেন কি আমায়?
আব্রাহাম;; হুম।
আব্রাহাম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
আব্রাহাম;; এক বছরের কমিটমেন্ট করা আছে তোমার সাথে। এক বছর অব্দি তুমি চাইলেও এই জব টা ছাড়তে পারবে না।
আইরাত;; কি কিন্তু কেন?
আব্রাহাম;; এটাই বলা ছিলো সেই পেপার্স গুলোতে।
আইরাত;; কিন্তু
আব্রাহাম;; এখন বলেও লাভ নেই জান।
আইরাত;; মানে এই পাগলের সাথে আরো পুরো এক বছর। আমার মাথা ঘুড়াচ্ছে (মনে মনে)
আব্রাহাম এবার আইরাতের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের দুই হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় চেপে ধরে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়। এক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় পেচিয়ে ধরে। আরে হাতের আঙুল গুলো আইরাতের গালে ছুইয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, একটা কথা মাথায় রেখো। তুমি যতো দূরে যাবে আমি ঠিক তার দ্বীগুণ হারে তোমার কাছে আসবো। So you can’t escape from me and Don’t you dare to try that ok..! বেশি ভালো হবে না তা তোমার জন্য।
আইরাত;; দেখুন আপনি…
আব্রাহাম;; আমি ভালোবাসি তোমায় আইরাত (চোখ মুখ শক্ত করে) তোমার কাছে সবসময় দুটো অপশন খোলা আছে। হয়তো আমাকে ভালোবাসবে নয়তো মরবে। কেননা আমি বেচে থাকতে তো তোমাকে অন্য কারো হতেই দিবো না। কখনোই না।
আইরাত;; লেন এমন পাগলামি গুলো করেন বলুন তো। দেখুন আপনার সাথে আমার যায় না। আমি খুব সাধারন একটা মেয়ে আর আপনি, আপনার জীবনে বিলাসিতার অভাব নেই। আব্রাহাম আকাশ আর সমুদ্র কখনো এক হয় না।
আব্রাহাম;; কিন্তু আকাশে যখন বিদুৎ চমকায় তখন প্রাকৃতিক নিয়মে সমুদ্রের পানিতে ঢেউ খেয়ায় সবার আগে। আকাশে বৃষ্টি হলে তার পানি গুলো সমুদ্রের বুকে এসেই আছড়ে পরে আগে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে এটা যে আকাশ কে কিন্তু কখনোই মানুষ একা উচ্চারণ করে না। সবসময় বলে আকাশ-জমিন। আর মনে রেখো সমুদ্রের অবস্থান কিন্তু জমিতেই।
আইরাত;; ______________
আব্রাহাম;; শুনো আমি ভালোবেসেছি তোমাকে। তোমাকেই বাসবো। আর এছাড়াও তুমি তো আমারই। তুমি চাইলেও আমার না চাইলেও আমার।
আইরাত গিয়ে নিজের কেবিনে বসে। মানে তার জায়গা তে গিয়ে বসে। তার আর আব্রাহামের কেবিন তো এক রুমেই সেট করা।
আব্রাহাম গিয়ে তার চেয়ারে বসে। হাতে একটা পেন্সিল নিয়ে ঘুড়াচ্ছে আর আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহামের এমন নজর বরাবরই আইরাতকে অস্বস্তি তে ফেলে। কি আর করার আইরাত সেভাবেই কাজ করতে থাকে। অফিসের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ বিধায় সে বিকেলের দিকেই এসে পরে। আসলে আব্রাহাম কে না বলেই এসেছে। লুকিয়ে চুরিয়ে।
আব্রাহাম তো রাগে লাল। শুধু পালাই পালাই করে ঘুড়ে বেড়ায় তার থেকে । এখন রাত বাজে ৮ টা। আব্রাহাম অফিস থেকে বের হয়ে পরে।
।
।
ওদিকে আইরাত পপকর্ন খাচ্ছে আর টিভি তে আরামছে হরর মুভি দেখছে। হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে আর এমন বিকট শব্দে ফোন বাজাতে আইরাত এমন ভাবেই চমকে গিয়েছে যে হাত থেকে পপকর্ন ছিটে পরে গেছে। আইরাত নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মেরে ফোন টা রিসিভ করে। আননোন নাম্বার। আইরাত মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে ফোন টা ধরে।
আইরাত;; কে?
আব্রাহাম;; অবশ্যই তোমার জামাই।
আইরাত;; আপনি?
আব্রাহাম;; অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি?
আইরাত;; জ্বি না।
আব্রাহাম;; নিচে আসো।
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম;; আরে মাথা মোটা আমি নিচে দাড়িয়ে আছি, নিচে আসো।
আইরাত;; এই আমি পারবো না, আমি হরর মুভি দেখছি জ্বালাবেন না তো।
আব্রাহাম;; হেই লিসেন, ঝাড়ি মারবে না আমায় একদম। তুমি নিচে নামবে নাকি আমি ওপরে আসবো?
আইরাত;; সবসময় হুমকি। যা ইচ্ছে করেন আমি নিচে যাবো না।
আব্রাহাম;; ওকে এস ইউ উইস।
আইরাত;; হ্যালো হ্যা হালো। যাহ, কেটে দিলো।
আইরাত ফোন টা রেখে দিয়ে আবার পপকর্ন খেতে বসে। তার ঠিক কয়েক সেকেন্ড পরেই নিচ থেকে চিল্লানোর আওয়াজ আসে।
আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল, সেই জান কোথায় তুমি। আইরাত বেবি। (অনেক চল্লিয়ে)
আইরাতের হাত থেকে প্রথমে পপকর্ন পরে গিয়েছিলো ফোনের শব্দে ভয় পেয়ে আর এখন আরেক বার পপকর্ন গুলো পরে গেলো আব্রাহামের এই জোর চিল্লানোর শব্দে ভয় পেয়ে। আইরাতের পপকর্নের বাটি এবার পুরোই খালি।
আইরাত;; পপকর্ন 🙂🙂।
আইরাত দ্রুত রুমের দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে পরে। দেখে ইকবাল সাহেব আর আব্রাহামের মাঝে অলরেডি লেগে গেছে এক ঘা।
ইকবাল;; এই ছেলে এই তুমি আবার আমার বাড়িতে এসেছে হ্যাঁ। কোন ভদ্রতা নেই তোমার মাঝে। এতো রাতে একজনের বাড়িতে এসে এভাবে বাড়ির মেয়ের নাম ধরে চিল্লাচ্ছো। কাহিনি কি। সকাল আর রাত নেই শুধু এসে পরে। যাও এখান থেকে।
আব্রাহাম;; ওও চাচাজান আস্তে হ্যাঁ। আমি আমার জিনিস না নিয়ে যাই না। আগে এখান থেকে ওকে নেই তারপর আপনার বলার জন্য এখানে আর বসে থাকবো না এমনিই চলে যাবো।
ইলবাল;; এই ছেলে তুমি তো আচ্ছা বেয়াদ………
আব্রাহাম;; Hay look that’s my Babygirl….
আইরাত সিড়ির ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলো। এগুলো দেখে সে দ্রুত নিচে নেমে পরে। আব্রাহাম কে রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ফেলে। আবার ইকবাল সাহেব বলে ওঠেন…
ইকবাল;; এই ছেলে যাও এখান থেকে। আর হাত ছাড় আমার মেয়ের, যাও বলছি।
ইকবালের কথা শুনে আব্রাহাম এবার আর এক মূহুর্ত দেরি না করে আইরাতকে এক টান দিয়ে সোজা তার কোলে তুলে নেয়।
আব্রাহাম;; আমার আইরাত, আমার বেবিগার্ল। যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যাবো, যা ইচ্ছে করবো আপনার কি তাতে।
আইরাত;; আপ..
আব্রাহাম;; এই চুপ।
আব্রাহাম আর একটা কথা না বলেই আইরাত কে নিয়ে বের হয়ে পরে বাসা থেকে। বাইরে গিয়ে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দেয়। আইরাত কিছু বলতে গেলেই আব্রাহাম তার দিকে এমন চোখে তাকায় যে আইরাতের আওয়াজ ওই গলা পর্যন্ত এসেই অফ তার বাইরে আর বের হয় না। আব্রাহাম গাড়িতে বসে আইরাতকে কে নিয়ে চলে যায়। কোথায় যাচ্ছে কেনোই বা যাচ্ছে জানে না।
।
।
।
।
চলবে~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৫
আইরাত আর আব্রাহাম গাড়িতে করে যাচ্ছে, তবে আইরাত বেশ রেগে আছে। রাগে একবার সামনের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক বার আব্রাহামের দিকে। কিন্তু আব্রাহাম তো আব্রাহাম ই। আব্রাহাম লাইক “প্যারা নাই চিল”। এক মনে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
আইরাত;; আপনি শুরু টা করেছেন কি হ্যাঁ? মানে এই রাতের বেলা একটা মেয়ে কে তার বাড়ি থেকে এভাবে নিয়ে এসে পরলেন। আপনি জানেন আমার চাচি আমাকে এর পরে ঠিক কি করবে? আপনি যে এতো ইজিলি ব্যাপার গুলো নিন না আসলে তা এতো ইজি না।
আব্রাহাম;; (সিটি বাজাচ্ছে)
আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন আমার রাগ লাগছে অনেক।
আব্রাহাম;; ” রাগ করে না সুন্দরি গো, রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো”।
আইরাত;; আরে ধুরু।
আব্রাহাম;; আচ্ছা এতো টেনশন নেওয়ার তো আমি কিছুই দেখছি না এখানে।
আইরাত;; অবশ্যই আছে।
আব্রাহাম;; চাচির চিন্তা করছো, তোমার চাচির দিকে তাকিয়ে উনার সামনে গিয়ে শুধু আমি একটু বসবো। তারপর উনি শেষ 😅।
আইরাত;; আপনার মতো সাইকো কে কেই না ভয় পাবে (ফিসফিস করে)
আব্রাহাম;; কিছু বললে?
আইরাত;; না।
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; দেখুন আমি বাড়ি যাবো। প্লিজ আমায় বাড়ি দিয়ে আসুন।
আব্রাহাম;; তোমাকে আমি এমনিতেই আমার কাছে পুরো রাত রাখবো না, নয়তো আমি কি থেকে কি করে বসবো নিজেই জানি না।
আইরাত;; আমরা যাচ্ছি টা কোথায়?
আব্রাহাম;; দেখি কোথায় যাওয়া যায়।
আইরাত;; অসহ্যকর।
আব্রাহাম আইরাতের দিকে পানির বোতল টা এগিয়ে দিলো। আইরাতও বোতল টা নিয়ে কিছু পানি খেয়ে নিলো। আইরাত শুধু বসে আছে, আর চিন্তায় মাথা ফাটছে। এক সময় গাড়ি থামায় আব্রাহাম। আইরাত মাথা ঘুড়িয়ে বাইরে তাকায়৷ আব্রাহাম তখন গাড়ি থেকে নেমে এসে আইরাতের পাশে গিয়ে তার গাড়ির দরজা টা খুলে দেয়। আইরাত বাইরে আসে। তবে আব্রাহাম তাকে কোথায় নিয়ে এসেছে।
আব্রাহাম;; এসো।
আইরাত;; এটা…?
আব্রাহাম;; তোমার শশুড় বা.. ওপস্ সরি তোমার জামাইয়ের বাড়ি।
আইরাত;; মানে আপনি এতো রাতে আমাকে আপনার বাসায় নিয়ে এসেছেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো? চলো।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যেতে থাকলো। এবার আইরাত নিজের আশেপাশে চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে সব দেখতে লাগলো। রাতের বেলা যেহেতু তাই বাইরে লাইট লাগানো অনেক। দুই পাশে বেশ সুন্দর বাগান আছে। আছে কিছু তীব্র সুগন্ধি যুক্ত ফুলের গাছ। যা থেকে সুবাস ছড়িয়ে চারিদিক কেমন মৌ মৌ করছে। বড়ো বড়ো গাছ আছে, সেগুলো নিপুণ ভাবে ছাটাই-বাছাই করা। ২-৩ টা ছোট ছোট সাদা স্ট্যাম্প আছে ঝরনার মতো। যেগুলো থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। আর এই নীরব রাতে সেই পানি পরার শব্দ গুলো শোনা যাচ্ছে। দুই পাশের এতো সুন্দর বাগানের ঠিক মাঝ বরাবর রয়েছে একটা বাড়ি। বাড়ি না আসলে এটাকে এক প্রকার প্যালেস বললেও বেশি একটা ভূল হবে না। আর মাঝখানে একটা সাদা সরু রাস্তা আছে। সেখান দিয়ে হেটেই বাড়ির ভেতরে যাওয়া হয়। আইরাতের মনে পরে না যে এমন বাড়ি গুলো সে কখনো টিভি ছাড়া কোথাও দেখেছে। তবে আইরাতের একটা জিনিস বেশ পছন্দ হয়েছে তা হচ্ছে বাগান। বরাবরই বাগান তার কাছে বেশ পছন্দের৷ আর আব্রাহাম তাকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। ভেতরে যেতেই সামনে পরে একটা বিশাল হলরুম।
আব্রাহাম;; এটা আমার বাসা।
আইরাত;; একটা জিনিস আজ সুস্পষ্ট হলো।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; বড়োলোকের বিরাট কারবার।
আব্রাহাম;; হুম তা তো বটেই।
আইরাত;; তো এই আলিশান বাড়িতে কি আপনি একাই থাকেন?
আব্রাহাম;; আহা, আরেকজন আছে।
আইরাত;; কে?
আব্রাহাম;; দাদিইইইইই, দাদিইই। এই কোথায় গেলে তুমি দাদি। দেখো কে এসেছে? দাদিইইই
আইরাত চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আর আব্রাহাম চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ইলা অর্থাৎ তার দাদি কে ডেকে চলেছে। আব্রাহামের ডাক শুনেই ভেতর থেকে একজন বয়স্ক মহিলা বের হয়ে এলো। বেশ মোটাসোটা, গলুমলু। মাথার সব চুল গুলোই সাদা আর প্রচুর ফর্সা। আইরাতের এতোক্ষন মেজাজ চটে থাকলেও ইলা কে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে আপনা আপনিই।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, দেয়ার সি ইজ। আমার দাদি, আমার জীবন৷
ইলা তো আইরাতকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেছে। কেননা আব্রাহাম সারাদিন আইরাতের কথায় বলে তার কাছে। আব্রাহামের রুমে গেলে আইরাতের ছবি গুলো সব জায়গায় কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ইলা আস্তে আস্তে পা ফেলে আইরাতের কাছে আসে। আব্রাহাম তখন তার দাদির কাছে গিয়ে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। ইলাও আব্রাহামের গালে নিজের এক হাত রেখে দেয়।
আব্রাহাম;; দাদি?
ইলা;; হুমমম থাক আর বলতে হবে না।
আব্রাহাম;; হুমম
ইলা আইরাতের কাছে এগিয়ে গেলো। গিয়েই আইরাতের মাথায় হাত রেখে দিলো।
ইলা;; তুমি আইরাত..!
আইরাত আসলে কি বলবে খুঁজে পায় না। একবার আব্রাহামের দিকে তো আরেকবার দাদির দিকে তাকাচ্ছে।
আইরাত;; আব..হ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আইরাত।
ইলা;; এসো।
ইলা আইরাতের হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসে পরে। আর আব্রাহাম একপাশে বসে হাত ভাজ করে তাদের কেই দেখছে।
ইলা;; জানো তোমার কথা না আব্রাহাম অনেক বলে প্রায় সারাদিনই।
আইরাত মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
ইলা;; আইরাত এটা, আইরাত ওটা। সারাদিন। আজ যে হুট করে তোমাকে বাসায় নিয়ে আসবে আমি তা জানি না, নয়তো আগে থেকেই সব রেডি করে রাখতাম।
আইরাত;; না না ঠিক আছে।
ইলা;; তুমি তো এক….
আব্রাহাম;; আচ্ছা হয়েছে তোমার এমন আস্তে ধীরে কথা পরেও বলা যাবে। এবার বেবিগার্ল চলো।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিয়ে আসে।
আইরাত;; আরে কিন্তু
আব্রাহাম;; চলো তো।
ইলা;; যাও যাও সমস্যা নেই।
আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে সিড়ি বেয়ে ওপরে একটা রুমে চলে যায়। তবে এবার আর আইরাতকে বলতে হলো না যে এটা আব্রাহামের রুম। কারণ সব কিছু সাদা-কালো জিনিস দিয়ে সাজানো। তবে অনেক শৌখিন ভাবে।
আইরাত;; এখানে কেন আসলাম?
আব্রাহাম;; কিছু দেখানোর আছে তোমাকে?
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; ওয়েট এ সেকেন্ড।
আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে তার চোখ দুটো এক হাত দিয়ে ঢেকে দিলো।
আইরাত;; আরে, আপনি করছেন কি!
আব্রাহাম;; বললাম না সারপ্রাইজ আছে। দাড়াও।
আব্রাহামের সামনে একটা নীল রঙের সিল্কি কাপড় রাখা। মানে সামনে একটা বড়ো আকৃতির ফ্রেমের মতো কিছু একটা আর তা সেই নীল কাপড়ে ঢাকা।
আব্রাহাম;; সো রেডি,, এয়ান টু এন্ড থ্রি….
এই বলেই আব্রাহাম সামনে থাকা নীল কাপড় টা সরিয়ে দিলো। আর আইরাতের চোখ থেকে নিজের হাত টা সরিয়ে নিলো।
আইরাত তার সামনে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো। এটা কি আদৌ সম্ভব। সামনে একটা ফ্রেম রাখা, অবশ্যই ফ্রেমে ছবি আছে। সবগুলো ছবিই আব্রাহামের তবে মাঝখানে ফুটে ওঠেছে আইরাতের মুখমণ্ডল। অর্থাৎ আব্রাহামের একটা একটা ছবি খুব সুন্দর ভাবে সেখানে সাজানো হয়েছে আর সেই ছবি গুলোর মাঝখানে আইরাতের চেহারা ভাসছে। ছবি আব্রাহামের কিন্তু চেহারা আইরাতের। আইরাত সত্যি বেশ অবাক। এমন টা কি করে সম্ভব। আইরাত টাস্কি খেয়ে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম তাকে ছেড়ে দিয়ে তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নিজের পকেটে হাত দিয়ে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত যেন এক ঘোরের মাঝে ডুব দিয়েছে। তাকিয়ে আছে তো আছেই। সে কখনো ভাবে নি যে আব্রাহাম তাকে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবে।
আব্রাহামের ডাকে তার হুস আসে।
আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে জানপাখি?
আইরাত ফট করে ঘুড়ে তার পেছনে তাকায়৷
আইরাত;; ইয়ে মানে আসলে আপনি, আপনি এটা কীভাবে?
আব্রাহাম;; হুমম আমার জন্য খুব সিম্পল এটা। আর তোমাকে অফিসের বেশি বেশি কাজ গুলো দিয়ে দিতাম আমি যেন আমার কাজ একটু হাল্কা হয় আর আমি বসে বসে এটা বানাতে পারি।
আইরাত;; এহ?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত আবার সেই ছবি গুলোর দিকে তাকায়। এটা আসলে অবিশ্বাস্য, অসম্ভব সুন্দর হয়েছে দেখতে।
আব্রাহাম;; আমি জানি অনেক সুন্দর হয়েছে এতো দেখো না (আইরাতকে জড়িয়ে ধরে)
আইরাত;; ঘোড়ার ডিম।
আইরাত আব্রাহাম কে ছাড়িয়ে চলে আসতে ধরে। আর আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টান দিয়ে আবার নিজের কাছে নিয়ে আসে। আইরাতকে নিজের দিকে ঘোরায়। হঠাৎ আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের গলাতে স্লাইভ করতে থাকে। গলার পাশ থেকে চুল গুলো এক সাইডে করে নেয়। আব্রাহাম যেন আরো একটু কাছে যায় আইরাতের। নিজের ডান হাত টা আইরাতের চুল গুলোর মাঝে ডুবিয়ে দেয়। তার মুখ টা খানিক উঁচু করে ধরে। তার কানের ঠিক নিচ বরাবর গাঢ় তিল টার দিকে আব্রাহামের নজর যায়। আব্রাহামের এই চাহনি বেশি একটা সুবিধের লাগছে না দেখে আইরাত আবার চলে আসতে নেয়। কিন্তু এবার আব্রাহাম এক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় হুট করেই বেশ শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে আর সাথে সাথেই আইরাতের কানের নিচে সেই তিল টার মাঝে নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয়। আইরাতের শ্বাস যেন মূহুর্তেই আটকে গেলো। বারবার চোখের পাতা গুলো পিটপিট করছে। শরীরে কেমন এক কাটা দিয়ে উঠেছে। আইরাতের বর্তমান অবস্থা টা আব্রাহাম বেশ আন্দাজ করতে পেরেছে কিন্তুব তাতে আব্রাহামের কি। সে তো এক হাতে আইরাতকে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত তার মাথার পেছনে দিয়ে গলায় ডুবে আছে। আব্রাহাম যেন এক নেশাযুক্ত কিছুতে রয়েছে, আর এই নেশাময় জিনিস টা কাটিয়ে ওঠার সাধ্য তার নেই। আর সে কাটিয়ে উঠতেও চায় না। আব্রাহাম নিজের চোখ গুলো বন্ধ করে রয়েছে।
আইরাত;; আব আব্রাহ আব্রাহাম। প্ল প্ল প্লি প্লিজ ছাড়ু….
আব্রাহাম;; আইরাত আমি পাগল হয়ে যাবো তোমাকে ছাড়া। প্লিজ কখনো ছেড়ে যেও না। আমি কিচ্ছু জানি না। তোমাকে ছাড়া আমি আর আমি থাকবো না। আমি সত্যি মরেই যাবো তুমি হীনা। আমি ভালোবাসি তোমায়।
আইরাত;; আপনি বুঝার চেষ্টা তো করুন আ….
আইরাত আর কিছু বলার সময় টুকু পেলোই না। তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দুটো মিশিয়ে দিলো। আর এবার যেন আইরাতের চোখ গুলো তার কোটর থেকে বের হয়ে পরার উপক্রম। তবে আব্রাহাম তো আইরাতকে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে নিয়েছে। দুই হাত আইরাতের গালে রেখে আইরাতে মগ্ন আব্রাহাম। আইরাত নিজের দুই হাত দিয়ে আব্রাহামের বুকে ধাকাচ্ছে কিন্তু লাভ নেই। কেন যেন আইরাতের এবার বেশ খারাপ লাগতে শুরু করেছে। আব্রাহাম তাকে ধরে রেখেছিলো তার মাঝেই সে ফুপিয়ে ওঠে। আব্রাহাম আইরাতের চোখে পানির ছাপ দেখে আস্তে করে তাকে ছেড়ে দেয়। আইরাতের কোমড়ে নিজের হাত দুটো রেখে তার মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে দেয়। আব্রাহাম চুপ চাপ থাকলেও আইরাত যেন জোরে জোরে দম ছাড়ছে। আব্রাহাম তার কপালে ছোট করে চুমু একে দেয়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমার থেকে দুরে যেও না প্লিজ। আমার ছিলে আমার কাছে আছো আর আমাতেই থেকে যাও। ভালোবাসি।
আইরাত;; ______________
আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে বের হয়ে পরে। তবে আর যাই হোক আব্রাহামের দাদি ইলা কে আইরাতের বেশ লেগেছে। আব্রাহাম কোন রকম তার দাদি কে বলে বাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। আইরাত কে নিয়ে গাড়িতে ওঠে আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ গাড়ি চলছে আপন গতিতে। তবে এবার আইরাত আরেক দফা অবাক। কেননা এটা তো তার বাড়ির রাস্তা না। বরং আব্রাহাম অনেক আগেই আইরাতের বাড়ির রাস্তা পার করে এসেছে। তাহলে আব্রাহাম তাকে এখন আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছে৷ আইরাত গাড়ির জানালা দিয়ে দেখে এটা অন্য এক রাস্তা৷
আইরাত;; ওয়েট ওয়েট আমরা যাচ্ছি কোথায়। এই আপনি আমায় আবার কোথায় নিতে যাচ্ছেন। আমার বাড়ি তো এইদিকে না।
আব্রাহাম;; আমি তা জানি জানপাখি।
আইরাত;; তাহলে কোথায় নিচ্ছেন, আরে রাত অনেক হয়েছে বাড়ি যেতে হবে তো৷
আব্রাহাম;; খুব দরকারি একটা কাজ করতে যাচ্ছি৷
আইরাত;; কি এমন কাজ?
আব্রাহাম;; গেলেই দেখতে পাবে চলো।
আইরাতের মুখে আবার চিন্তার ছাপ ফুটে ওঠে৷ আব্রাহাম তাকে নিয়ে যাচ্ছে টা কোথায়। প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর আব্রাহাম গাড়ি একটা জায়গায় এসে থামায়। আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে গাড়ির বাইরে নেমে পরে। জায়গা টাতে তেমন কোন মানুষ জন নেই। আইরাত কোন কিছুই বুঝতে না পেরে আব্রাহাম কে বলে…
আইরাত;; আমরা কোথায় আসলাম?
আব্রাহাম;; কাজী অফিসে।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা,, এই কি বললেন?
আব্রাহাম;; কানে বেশি শুনো তুমি। বলেছি কাজী অফিস।
আইরাত;; মানে কি? এই এতো রাতে কাজী অফিস কেন? এখানে কি করছি আমরা?
আইরাতের ভয়ে গলা অর্ধেক শুকিয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; বিয়ে খেতে এসেছি।
আইরাত;; কিন্তু কার?
আব্রাহাম;; তোমার চাচা আর চাচির।
আইরাত;; কিহ?
আব্রাহাম;; কাজী অফিসে কেন আসে মানুষ, অবশ্যই বিয়ে করতে।
আইরাত;; 😟😟
আব্রাহাম;; বিয়ে করবো চলো।
আব্রাহাম আইরাতকে কিছু বলতে না দিয়েই সোজা তার হাত ধরে এক টানে ভেতরে নিয়ে আসে। আব্রাহাম নিজের এক মনে সামনে হেটেই চলেছে,, আইরাত নিজের হাত ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে আর বকবক করছে। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে একদম ভেতরের রুমে চলে গেলো যেখানে বিয়ে পড়ানো হয়। আইরাত গিয়েই দেখে একজন আধবয়স্ক লোক সেখানে বসে আছে। সামনে কতোগুলো কাগজ। এগুলো দেখেই যেন আইরাতের মাথা ঘুড়ে পরে যাবার মতো অবস্থা। মানে কি আব্রাহাম কি তাহলে আগে থেকেই এগুলো রেডি করে রেখেছিলো নাকি। আব্রাহাম নিজে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরে আর আইরাত কেও হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; কাজি সাহেব দেরি কিসের বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
কাজি;; জ্বি আচ্ছা।
এবার যেন আইরাত আর ঠিকঠাক থাকতে পারলো না। আব্রাহামের হাত ছাড়িয়ে চট করে বসা থেকে উঠে পরলো।
আইরাত;; প্লিজ থামুন আব্রাহাম অনেক হয়েছে।
আব্রাহাম সরু দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকায়।
আইরাত;; আপনি বাইরে আসুন কথা আছে।
আইরাত আব্রাহাম কে এই কথা বলে নিজে আর এক মূহুর্তের জন্যও কাজী অফিসে বসে না থেকে উঠে বাইরে চলে আসে। আব্রাহামও আইরাতের পেছন পেছন আসে।
আব্রাহাম এসেই দেখে আইরাত বাইরে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আব্রাহাম;; জানপাখি কি হলো। চলো বিয়ে করতে হবে তো।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ সার্ট আপ। প্লিজ থামুন। এটা বিয়ে কোন মুখের কথা না। যে বললাম আর হয়ে গেলো। এভাবে বিয়ে হয় না। আমার বাসায় আমার পরিবার আছে তাদের রেখে আমি কীভাবে বিয়ে করবো। আপনার দাদি আছে যিনি এত্তো ভালো তাকেও আপিনি না বলেই বিয়ে করতে যাচ্ছেন। কীভাবে?
আব্রাহাম;; সেই চিন্তা তো তোমাকে করতে হবে না। পরে সবাইকে বলা যাবে।
আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন আমার কিছুটা সময় প্রয়োজন। আমি এখন বুঝতে পারছি না কি বলবো আর কি করবো৷ প্লিজ আব্রাহাম, আই নিড সাম টাইম।
এবার যেন আব্রাহাম থেমে যায়। আর কিছুটা সিরিয়াসও হয়।
আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা। এই কথা তাহলে। ওকে ফাইন যতো সময় নেবার নাও কিন্তু পরে যেন হ্যাঁ ই হয়। আর বিয়ে তো আমাদেরই হবে।
আইরাত;; হুম।
আব্রাহাম;; চলো বাসায় যাই।
আইরাত;; 🙄
আব্রাহাম;; এভাবে তাকানোর কিছুই নেই। বাসায় তো যেতেই হবে তাই না চলো।
আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে চলে গেলো। এখন রাত বাজছে ১০ টা। আব্রাহাম গাড়ি সোজা আইরাতের বাড়ির সামনে থামায়। আইরাত নেমে চলে আসে৷ তবে আবার আব্রাহামের ডাকে থেমে যায়।
আব্রাহাম;; Hay my beautiful PA…
আইরাত তার পেছন ঘুড়ে তাকায়।
আব্রাহাম;; কাল ঠিক সময়ে অফিসে এসে পরো।
এই কথা বলেই আব্রাহাম তার গাড়ি নিয়ে সাই করে চলে যায়। আইরাত আব্রাহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে সেখান থেকে পরে৷
আইরাত খুব সাবধানে বাড়ির ভেতরে আসে। এখন যদি কারো চোখে পরেছে তাহলে এখানেই ইন্না-লিল্লাহ। আইরাত তার পা থেকে জুতো গুলো খুলে হাতে নিয়ে নেয়। লং গোল জামা পরেছিলো। হাত দিয়ে জামা টা একটু উঁচু করে ধরে আরেক হাতে জুতো। তারপরই দেয় এক ভো দৌড়। সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু আইরাতের চাচা ইকবাল আইরাতকে ঠিকই দেখেছে। উনি আইরাতের অপেক্ষাতেই ছিলেন। আর যাই হোক ইকবাল সাহেব এই টুকু জানেন যে আইরাত খারাপ কিছু করবে না বা তার চাচার অবাধ্য হবে না। এই ভেবেই তিনিও তার রুমে চলে যান। আর ওদিকে আইরাতের এই ভেবে ভেবে ভয় লাগছে যে। আজ যদি সত্যি বিয়ে টা হয়েই যেতো তাহলে, তাহলে কি হতো৷ আর ভাবতে পারছে না। আব্রাহাম সত্যি পাগলেরও ওপরে। যখন যা মাথায় আসে তাই করে। আইরাতের ইচ্ছে আছে যে সে একজন Psychological Doctor Psychiatrist হবে। কিন্তু সাইকো দের সামলানো যে কি পরিমাণ মুশকিল তা এখন ডক্টর হবার আগে থেকেই সে বুঝতে পারছে আব্রাহাম সাইকো কে নিয়ে। এই আব্রাহামের চক্করে পরে ভার্সিটি তেও যাওয়া হয় না তার।
আইরাত;; কি যে হবে আমার। দিয়ার কাছ থেকে নোটসগুলো কালেক্ট করতে হবে। ধুরু এক কাজ করতে গেলে আরেক কাজ হয় না। জীবন ডা হুদ্দাই ভ্যাটকাইতে ভ্যাটকাইতে গেলো।
আইরাত ঘুমিয়ে পরে। আর ওদিকে আব্রাহাম আজ বাইরে বেশি থাকে নি বাড়িতে চলে গেছে। বাড়িতে গিয়ে তার দাদির সাথে অনেক কথা বলে এসে পরে আবার রুমে। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে কানে সাউন্ড প্রটেকটিভ হেডফোন পরে ভিডিও গেম খেলতে লাগলো। বেশকিছুক্ষন খেলার পর গেমে জিতেও গেলো। এখন আর ভালো লাগছে না। তাই হাতে একটা সোফট ড্রিংক এর ক্যান নিয়ে বাইরে চলে গেলো মানে করিডরে। আইরাতের কথা মনে পরছে প্রচন্ডভাবে।
।
।
রায়হান,, রায়হানের মনে যেন আগুন জ্বলছে ধাও ধাও করে। এখন সে তার চোখ মুখ সব লাল করে দিয়ে হাতে এলকোহলের একটা পেগ নিয়ে বসে আছে আর রাগে ফুসছে। তার এক হাতের তালুতে ব্যান্ডেজ করা। এই হাত টাতে আব্রাহামই তাকে ব্যাথা দিয়েছিলো। রায়হান এই ঘা শুকাতে দেয় না। ইচ্ছে করেই মেডিসিন দেয় না, কাচা করে রাখে। যেন এই ব্যাথা টা তাকে ক্ষণে ক্ষণে আব্রাহামের কথা মনে করাতে থাকে। আগে রায়হানের কাছে আইরাত একদিনের ভালোবাসা ছিলো কিন্তু এখন যে এটা তার জিদে পরিণত হয়েছে৷ আব্রাহাম আর আইরাতের একসাথে থাকার মূহুর্ত গুলো রায়হানের চোখে ভাসছে আর সে রাগে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছে। অবশেষে থাকতে না পেরে রায়হান তার হাত থেকে কাচের গ্লাস টা দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়।
রায়হান;; থাকতে দিবো না আমি ভালো তোদের। আইরাত কে তুই এতো সহজেই নিয়ে যাবি। আমি তা হতে দিবো না। তোদের দুইজন কে আলাদা করেই ছাড়বো আমি।
।
।
।
।
চলবে~