নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-০২

0
12

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকালেই চিৎকার চেঁচামেচি তে মুখরিত হলো তালুকদার বাড়ি।বাড়ির কাজের লোক,গলা ফা”টিয়ে বলে চলছে–,,বর, কনে পালাইছে গো পালাইছে!

বাড়ির সবাই বসার ঘরে জড়ো হয়।এরিশের সাথে থেকে যাওয়া তার কাজিন রা ও সেখানে উপস্থিত হলো।

জোছনা বেগম কাজের মেয়েটিকে ধম”ক দিয়ে বললো–,,এই ছে”মড়ি সক্কা’ল স’ক্কাল কি শুরু করলি।বর, কনে পালাইতে যাইবো কে’ন?

কাজের মেয়ে ললিতা লম্বা শ্বাস টেনে বললো–,,খালাআম্মা সত্যি কইতাছি,ওই স্নিগ্ধা আপা মনি আর মেহমান আপা মনিরা যখন হাসাহাসি কইরা কইতাছিলো,বিয়ে করবে না করবে না বলে,এখনও রুম থেকেই বের হচ্ছে না দুজন মনে হয় সব ঝা”মেলা মিটে যাবে।
আমিও তাই ভাবছিলাম খালাআম্মা, কিন্তু এর কতক্ষণ পরেই আমি বাকি ঘর গুলা ঝাড়ু দিয়া যখন তৃধা আপামনির ঘরের কাছে গেলাম,তখন হাত লাগতেই দরজা খুইলা গেলো,আমি উঁকি মাই’রা দেখলাম কেউ নাই।না নতুন জামাই না আপা মনি কেউই নাই,আপনেরা যেমনে চাই”পা ধইরা বিয়া দিলেন আমার তো মনে হয় দুজনই দুইদিকে ভাগ’ছে!

রাজিয়া বেগম বললো–,,তুমি চুপ থাকো তো ললিতা,ওরা পালা’তে কেনো যাবে?বিয়ে তো হয়েই গেছে বিয়ের আগে হলেও একটা কথা ছিলো।

ললিতা মুখ জামটা মে’রে বললো–,,গরিবের কথা বাসি হইলেও হা’ছা হয়!

এলিজা একটু আড়ালে গিয়ে ফোন করলো বাড়িতে।এরিশ নেই শুনেই ফুঁসে উঠলেন গোলজার মজুমদার। স্ত্রী কে শাসি’য়ে বলে উঠলেন–,,সব দো’ষ তোমার গোলবাহার!

গোল বাহার বেগম দ্বিগুণ রেগে বললেন–,,দেখো বুড়ো আমার নামে উল্টা পাল্টা কথা কইবা না।বেশি ভালা হইবো না কইলাম! নাতির অমতে বিয়ে কি আমি দিছিলাম নাকি?

গোলজার মজুমদার বলে উঠলেন–,,তোমাকে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছে,একটা নাতি সামলাতে পারো না!

—,,বেশি কথা কইয়ো না তো, তুমি কি হ্যাঁ আমার নাতি টারে তো জোর কইরা বিয়া দিলা,মাইয়া পছন্দ হয় নাই ভাগছে সমস্যা কি?

–,,এই বুুড়ি শেষ বয়সে কূটনা’মি?ছেড়ে কথা বলবো না বলে দিলাম,শিগগির বলো তোমার নাতি কোথায়।বেয়াই বাড়িতে মান সম্মান আর রইলো না,বাসর রাতেই বউ রেখে বর উদাও তাও কিনা এই মজুমদার বাড়ির ছেলে। হায় হায় কি দিন দেখা লাগতেছে।

–,,চশমা টা খুইলা ফালাও কষ্ট কইরা দেখা লাগবো না।

গোলজার মজুমদার হাঁক ছেড়ে বললো–,,বড় বউ মা, মেজো বউ মা তোমাদের মা কে থামতে বলো বলে দিচ্ছি।তোমাদের ছেলে যে নাক কা’টিয়েছে তাতে তো কারো কিছু যায় আসে না,তার উপর এই হিট’লার বংশের মহিলা কে সহ্য করতে হচ্ছে!
বিয়ের রাতেই বউ রেখে পালিয়েছে,কেমন পুরুষ তোমার নাতি?সুন্দর বউ খানা রাইখা গেলো কেমনে নাই নাই দয়া মায়া কিচ্ছু নাই!একবারে তোমার বংশের জি’ন পাইছে!

গোলবাহার বেগম তেঁতে উঠে বললেন–,, এই কি বললা তুমি আমার বংশ জি”নে ধরা?করবো না তোমার সংসার, থাকবো না তোমার বাড়ি।আমার বাড়ির মানুষ কে জি”নে ধরা বলা,এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি কিচ্ছুটি মুখে তুলবো না!

শ্বশুর শাশুড়ীর ঝ”গড়া দেখে হতাশ তিন বউ,তার উপর ছেলে নাকি শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়েছে। কিভাবে মুখ দেখাবেন এখন,না জানি মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছে!

গোলজার মজুমদার বুঝানোর ভঙ্গিতে বললো–,,এই জি”ন সেই জি’ন না তুমি ভুল বুঝতেছো গোলবানু।

–,,সারা জাহানে জি”ন একই রকম তুমি শাঁক দিয়া মাছ ঢাকতে চাইয়ো না বুড়ো,আজ আসুক ছেলেরা।

আমিনা বেগম বললো–,,আম্মা আগে আপনার নাতির চিন্তা করুন,না জানি ওইদিকে কি অবস্থা আমাদের তো একবার যাওয়া উচিত যতই হোক আমাদের ছেলে অন্যা’য় করেছে!

কিছু সময় অতিবাহিত হতেই বাড়িতে আসলো আশরাফ মজুমদার। ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে বললো–,,তৃধা, এরিশ দুইজনই বাড়ি থেকে পালি”য়েছে!

সবাই এক সাথে বলে উঠলো–,,কিহ্!

গোলবাহার বলে উঠলো–,,ওই মাইয়ার কি কারো লগে সম্পর্ক আছিলো নাকি?

আশরাফ বিরক্ত হয়ে বললো–,,আম্মা তৃধা ভদ্র মেয়ে,ওর কথা ছাড়ো তোমার নাতি কোন মেয়ের সাথে গেছে ওইটা নিয়ে ভাবো, তৃধা তো আর একা যায় নি,দুজনই গিয়েছে দোষটাও সমান, তৃধা মেয়ে দেখে ওকে নিয়ে বা”জে কথা বলা সহজ।তোমার নাতি তো আর ধোঁয়া তুলসি পাতা না,নিশ্চিত মেয়েটাকে ধম”ক দিয়ে দিয়ে পালাতে বাধ্য করেছে গোঁয়া”র টা!

আমিনা বেগম বললো–,,এমন কেনো করবে?আমার ছেলে ওতোটাও খারা”প না।এরিশের উপর আমার বিশ্বাস আছে।

আশরাফ বিরক্ত হয়ে বললেন–,,রাখো তোমার বিশ্বাস। মুখে তো মধুর বদলে করলা দিয়েছিলে ছেলের, কথা দিয়ে মানুষ মা”রার ক্ষমতা রাখে তোমার ছেলে, আমি নিশ্চিত সব দোষ তোমার ছেলের।

পারিবারিক তর্ক বিতর্ক শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না।
তালুকদার বাড়িতেও একই অবস্থা, আজাদ তালুকদার রেগে আগু’ন এই মেয়েকে একবার হাতের কাছে পেলে তিনি নিজ হাতে খু”ন করে পানিতে ভাসিয়ে দিবেন।বাড়ির সম্মান কিচ্ছু রাখলো না,যদি এতোই কাউকে পছন্দ থাকতো বিয়ের আগে কেনো চলে গেলো না।এবার কি জবাব দিবেন নিজের বন্ধু কে তিনি।

রাজিয়া বেগম আজাদ কে সান্ত্বনা দিয়ে বললো–,,শান্ত হোন আপনি,তৃধা হয়তো আশেপাশেই আছে জানেনই তো কতোটা ছেলেমানুষ ও, এতোটা রাগ করবেন না।এরিশ ও তো নেই মনে হয় দুজন মিলে কোথাও ঘুরতে গেছে!

জোছনা বেগম তেঁতো কন্ঠে বললো–,,এমন করে বলছো বউমা যেনো এরিশ তোমার মেয়ের আশি’ক আছিলো যার সাথে সে ঘুরবার যাইবো!

রাজিয়া বেগম থতমত খেলেন সত্যিই তো মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিয়েছেন, এখন বলা তো যায় না, মেয়ে কি করে।তার উপর মৃধাও তো,,আর ভাবতে পারলেন না রাজিয়া বেগম সেখান থেকে ছুটে গেলেন নিচের ঘরে,পুরনো স্মৃতি গুলো হৃদয় ক্ষ’ত-বিক্ষ’ত করার জন্যই হয়তো বার বার মস্তিষ্কে হা”না দেয়!
———————–
হোস্টেল থেকে এক প্রকার দৌড়াতে দৌড়াতে বেরিয়েছে তৃধা।কোনো রকম পোশাক পরিবর্তন করেছে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দৌড়াচ্ছে,পাঁচ তলা থেকে মনে হয় উড়ে এসেছে নিচে।
এরই মধ্যে ফোন বেজে উঠলো,ধরবে না ভেবেও ধরলো, আগের সিম কে পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে এসেছে আসার পথে।এবার কল করলে তা নিশ্চিত নাদিম,নয়তো নোভা।
নাম্বার না দেখেই তৃধা মোবাইল কানে ধরে বললো–,,বল কি হয়েছে?আমি এই তো দশ মিনিটে আসতেছি রিকশায় উঠবো।তুই কোথায়?

নাদিম বলে উঠলো –,,আরে বইন একটু দ’ম নে,এক সাথে এতো কথা কেমন ক’স তুই?আমি ভার্সিটির গেইটে,আর শোন ওই আমাদের প্রথম ক্লাস যে নিবে ওই শা”লা নাকি হেব্বি কড়া,আভা, নোভা এসেই খবর নিয়ে ফেলেছে,ওরা বর্তমানে ক্লাসে বসে আছে।আমি ও যাচ্ছি সোজা ক্লাসে আসবি প্রথম ভবনের দ্বিতীয় তলার এক নম্বর রুম বুঝছছ?

তৃধা হাই তুলে বললো–,,তুই রাখ টিচার তোর পকেটে, ব্যাটা সারা রাত না ঘুমাইয়া দৌড়াইয়া আসলাম।এখন যদি ক্লাসে ঢুকতে না দেয় ওই টিচারের মাথা আমি বেলের মতো ফাটা”মু।আর কিসের এক পাঁচ তলা শুরু করতাছছ,গুগল লোকেশন পাঠা।

নাদিম বলে উঠলো–,, তুমি কি এখানে শপিং মল পেয়েছো?আইছে গুগল লোকেশন পাঠা,এই ভাই তুই আইলে আয় না আইলে মুড়ি খা।প্রথম দিনই ওই আদাভান স্যারের বেসুরা গিটার বাজানো শুনতে চাই না। মাফ কর পারলে তাড়াতাড়ি আয়!

নাদিম ফট করে কল কে’টে দিলো, তৃধা মুখ বাকালো,আরে ভাই এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষক তৃধা কে ব’কা দেয়নি।সবাই কতো পছন্দ করতো,হ্যাঁ মানছে ও একটু বেশি কথা বলে দুষ্টুমি করে কিন্তু বেয়াদ’বি তো করে না।টিচার কি করলা লাভার নাকি হুদাই চে”তবো কেন?

তৃধার জীবনের সুনা’মি ডেকে আনতে সিগনা’লের পর সিগ’নাল,সাথে ফ্রিতে পাওয়া জ্যামই যেনো যথেষ্ট।

ভার্সিটি গেইটে আসতেই ঘড়িতে দশটা বেজে পনেরো মিনিট!তৃধা কপাল চাপড়ে বললো–,,হায় সর্বনা’শ!

দৌড়াতে দৌড়াতে নাদিমের বলা জায়গায় পৌঁছাতে পারলো তৃধা।ক্লাস রুমে যাওয়ার আগে দরজায় ধরে লম্বা শ্বাস নিলো সে,মাথা উচিয়ে বললো–,,মে আই কাম ইন স্যার?

তৃধা কন্ঠস্বর শুনেই থেমে গেলো পুরুষালি কন্ঠস্বর টি।পুরো ক্লাস জুড়ে আগে থেকেই পিনপতন নীরবতা। এখন যেনো আরো গভীর হলো,প্রফেসরের রূপে মানুষ টিকে দেখে তৃধার চোখ কো’টর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম!
দুইবার নিজের চোখ ঢ’লে দেখলো, না এটা সত্যি সত্যিই তো এরিশ!
এরিশ নিজেও যে অবাক হয়েছে তা তার চাহনিতেই স্পষ্ট।
তৃধা তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো–,,ন’ট কাম ইন,নেভার এবার কাম ইন।আমি জীবনেও এই ক্লাসে আসতে চাই না!
তৃধা দ্রুত উল্টো ঘুরে গেলো,হনহনিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে!

তৃধার উল্টো পাল্টা কথা শুনে ভেতরে অনেকেই হাসাহাসি শুরু করেছে।

আভা তো নোভা কে গুঁতো মে’রে বললো–,,এই নোভার বাচ্চা, তৃধা তো এবার শেষ।

এরই মধ্যে এরিশের গম্ভীর কন্ঠ শুনতে পাওয়া গেলো–,,ক্লাসে মনোযোগ দিন সবাই!আশেপাশে অনেক অদ্ভুত প্রানীই ঘুরবে ওসবে নজর না দেওয়াই ভালো।তা যা বলছিলাম, আজ আপনাদের প্রথম ক্লাস তাই বেশি কিছু পড়াইনি।যতটুকু পড়িয়েছি তার উপর কাল সকাল আটটায় ল্যা’ব ক্লাস করানো হবে।মনে রাখবেন সকাল আটটা যেনো আটটাই হয়,নিয়মানুবর্তিতা জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ!
মুখস্থ করার চাইতে বেশি কাজে দিবে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস গুলো,আপনাদের কে দু সপ্তাহ অন্তর অন্তর পরীক্ষা নেওয়া হবে,প্রেজন্টেশন ওয়াইজ কে কতটুকু স্মার্ট, কতটুকু যোগ্য সেটাও দেখা হবে,সবাই তৈরি থাকবেন!

ক্লাস রুম ত্যাগ করলো আদাভান ।এরই মধ্যে মেয়েরা গুন”ঞ্জন শুরু হলো,যা হয় আর কি শিক্ষক কে বেশি সুন্দর হতে নেই!
একেক জনের একেক রকম কৌতূহল, কারো প্রশ্ন উ’ফ স্যার টা কি কিউ”ট!উনি কি বিবাহিত?দেখে তো ওতোটাও বয়স্ক মনে হয় না,একবার যদি পটাতে পারতাম!

নাদিম,নোভা,আভা দ্রুত পায়ে বের হচ্ছিলো ভাগ্য ক্রমে মেয়েগুলোর কথাও কানে আসলো।

আভা তো বলেই ফেলেছে–,,বিবাহিত পুরুষের দিকে নজর দিলে আল্লা’হ পা’প দিবে পা’প!শিক্ষক না বাপে”র সমান নি”র্লজ্জ কোথাকার।

নোভা আভার মুখ চেপে ধরে বের হলো,নাদিম তো আভার মাথায় মে’রে দিয়েছে ইতিমধ্যে এই মেয়ের মুখ বন্ধ থাকতে পারে না নাকি!মুখের উপর উচিত কথা বলে নিজে ফাঁ’সে সাথে অন্য কে ও ফাঁ”সায়।

মেয়ে তিনটে তো রেগে বো”ম।একজন তো তেড়েও আসছিলো,বড়লোক বাবার মেয়ে বলে কথা,কারো কথা গায়ে মাখবে কেনো?

তৃধা গাছ তলায় বসে সে তো এরিশ কে নামতে দেখেই গাছের দিক মুখ করে ব্যাগ দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছ,যেনো মুখ দেখলেই অ’নর্থ হয়ে যাবে।

আভা কে বক’তে ব’কতে নিচে আসলো নাদিম নোভা।
তৃধা কে দেখেই তিন জন তার কাছে গিয়ে বসলো।

তৃধা নাদিমের গলা চে’পে ধরে বললো–,,শা”লা তুই বলবি না এই ব্যাটা ওই এলি”য়েন টা।কি যেনো নাম বললি আদাভান নাকি কি জানি এখন তো দেখি যেই লাউ হেই কদু। ইয়া মাবুদ যার থেকে পালাতে চাইলাম তাকে এখন প্রতিদিন দেখতে হবে।কেনো এগুলো শুধু আমার সাথেই হয়।

আভা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো–,,কাঁদিস না সোনা,স্যারের পুরা নাম তো আদাভান এরিশ,এখানে সবাই স্যার কে আদাভান নামেই চিনে!যাই বলিস জিজু দেখতে অতোটাও খারা’প না।জানিস ক্লাসের বে”ডি গুলা স্যারের দিকে কিভাবে তাকাচ্ছিলো।তওবা তওবা কি মুখের ভাষা!

নোভা বলে উঠলো–,, এই আভা তুই আর আমি না এক সাথে পেটের মধ্যে ছিলাম?তাহলে তুই আমার একেবারে বিপরীত কেমনে হইলি।

নাদিম ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললো–,,তোরা দুইটায় যে জমজ এটা তো আমার ও বিশ্বাস হয় না।চেহারা মিললেও বাকি সব কিছুতে একজন বিসমি’ল্লাহ আরেক জন্য নাউজু’বিল্লাহ!

তৃধা মাথা চেপে ধরে বললো–,,আমি ওই লোকের ক্লাস কিছুতেই করবো না।

আভা নিজের চশমা ঠেলে বললো–,,ল্যাব ক্লাস আছে সকাল আটটায়,তোর জামাই টার একদম দয়া মায়া নাই রে,চেহারা চেরি টমেটোর মতো কিন্তু স্বাদ কালা বেগুনের মতো!

তৃধা বিরক্ত হয়ে বললো–,,অস’হ্য কে কার জামাই?মনে কর কালকের বিকেল থেকে রাত সবটাই দুঃস্বপ্ন!

নোভা কিছু বলতে যাবে পেছন থেকে একজন বলে উঠলো–,,এই তোমরা ফাস্ট ইয়ার?

তৃধা তেঁতো কন্ঠে বললো–,, তা জেনে আপনার কি ভাই?নিজের জ্বালা”য় বাঁচি না আরেকজন এসেছে রঙ্গ করতে!

নাদিম তৃধা কে থামিয়ে দিয়ে বললো–,,হ্যাঁ বলুন কি দরকার?

ছেলেটা আঙুল উঁচিয়ে বললো–,,ওইদিকে চতুর্থ বর্ষের ভাইয়ারা তোমাদের সবাই কে ডাকছে।

তৃধা যাবে না বলে দিয়েছে,নাদিম বললো-,,আয় দেখি কি বলে।

চার জন মিলে গেলো,সেখানে ক্লাস রুমের মেয়ে গুলোকে দেখে তো আভা মুখ বাকালো,তৃধা আভা কে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো –,, কাহিনি কি?

আভার মুখে সব শুনে তৃধার চোয়াল শক্ত হলো,টপিকের চাইতে, বেশি বিরক্ত লাগার কারন তার বন্ধু কে কেউ কিছু বলেছে।
তৃধা সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।নিপা,রুপা,সোহা তাদের সাথে চারজন সিনিয়র, একজন মেয়ে বাকি তিনজন ছেলে।

রুপা মেয়েটা বেশি করছে বলে মনে হলো তৃধার।
তাদের সামনেই দাঁড়িয়ে কাঁদছে একটা মেয়ে,রুপা মেয়েটা কে ধাক্কা মে’রে বললো–,,এই তোর সাহস তো কম না আমার কথা অমা”ন্য করিস,ফ’কিন্নি কোথাকার।তোকে দুইদিনের মধ্যে ভার্সিটি থেকে বের করতে পারি। এখনই কান ধরে ওঠবস কর বলছি!

তৃধা বিরক্ত হলো,মেয়েটাও এতো ভিতু হলে চলে, এই মহিলা ছা”গ’ল টার কথা কেনো শুনছে বুঝে আসছে না ওর।

মেয়েটা সত্যি সত্যি কান ধরে ফেললো,তৃধা এগিয়ে গিয়ে তার হাত টেনে ধরে পেছনে নিয়ে গিয়ে বললো–,,এই মেয়ে, ওতো বোকা কেনো তুমি?
মেয়েটা ছলছল চোখে তাকালো, নাদিম বলে উঠলো–,,তৃধা ঝামে”লা পাকাবি না একদম।

রুপা বলে উঠলো–,,এই তুই আবার কে রে ক্লাসে তো দেখিনি।তোর সাহস কি করে হয় আমার সামনে থেকে ওকে টেনে নেওয়ার।

তৃধা রুপার সাথে দাঁড়ানো মেয়েটি টেনে আবার পেছনে ধাক্কা দিয়ে বললো–,,এভাবে,মানে আমার কিউট সি”উট হাত দিয়ে!

রুপা রেগে বললো–,,এই মেয়ে।

তৃধা রুপার আঙুল বাকিয়ে দিয়ে বললো–,,ডেই’ট ফে”ইল গাঁ’জা খেয়ে মাতলা’মি অন্য কোথাও গিয়ে করবি,আর মানুষ কে ফ”কিন্নি বলছিস কোন অধিকারে,তোর বাপের টাকা যদি থাকে তা তো তোর পকেটেই থাকে,ও কি তোর বাপের টা খায় নাকি মাথায় দেয়?যত্তসব ভার্সিটি এসে পাখ”না গজা”ইয়া গেছে!

রুপা তো রেগে আগু”ন চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,ভার্সিটির সভাপতি আমার মামা।

নোভা এসে বললো–,,তাতে আমাদের কি? ঝা”মেলা কেনো করছো?আমরা তো ক্লাসমেইট বন্ধু হয়ে থাকাটাই বেটার।

রুপা,নিপার,পাশে থাকা অন্য ছেলেটি বলে উঠলো–,,তোমরা আবার হবে ওদের বন্ধু?বন্ধুত্ব করতে হলে ও একটা স্ট্যাটাস লাগে,নূন্যতম যোগ্যতা আছে তোমাদের আমার বোনের সাথে মিশার!

তৃধা বলে উঠলো–,,ইউ আর রাইট!

সিনিয়র মেয়েটি তৃধার গাল আলতো চাপড়ে বললো–,, এই তো বুঝে গেছে গুড গার্ল!

তৃধা আভার হাত থেকে পানির বোতল টা ছিনিয়ে নিয়ে মুখ পানি দিতে দিতে বললো–,,উই ডিজার্ভ বেটার!

তৃধা সামনে হাঁটা ধরলো, টিস্যু দিয়ে ঘঁষে ঘঁষে গাল পরিষ্কার করে বললো–,,মুডের চিরতা রেসিপি বানিয়ে দিলো শা”লারা!

পেছনে থেকে ফুঁ”সে উঠলো বাকিরা, মেয়েটা কি ভাবে অপমান করে চলে গেলো!
——–
কিছু দূরে দাড়িয়ে এসব কান্ড দেখছিলো আদাভান।বাড়ি থেকে ফোন করেছিলো এলিজা,দাদা ভাই ভীষণ রেগে আছেন কোনো প্রকার হু হা করে ফোন কে’টেছে আদাভান।এরিশ নামটা বাড়ির লোক ছাড়া কারোর মুখে শুনাটা পছন্দ না আদাভানের, কিছু কিছু ডাকনাম ও কখনো কখনো অধীক ভারি কিছু বহন করে, যা মানুষ চাইলেও তার ভার সহ্য করতে পারে না!স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি বন্ধুমহলে সে এরিশ নামেই পরিচিত, হঠাৎ করেই এই পরিচিতি টা তাকে এলোমেলো করে দিলো,ধীরে ধীরে সে হয়ে উঠলো কঠোর নির্দ”য় আদাভান!
এর দায় ভার সম্পূর্ণ তার নিজের,সম্পর্কের বেড়াজালে আর আঁটকাতে চায় না সে কিছুতেই না!

ফোন কা”টার পরেই স্টুডেন্টদের হট্টগোল কানে আসলো,তৃধা কে দেখে আর আগায়নি তবে কি হচ্ছে জানার জন্য দাঁড়ালো, সত্যি মেয়েটার মুখের ভাষা বাঁধাই করে রাখার মতো।তার দাদার কাছে এই মেয়ে কে এতো ভদ্র লাগলো কি করে বুঝে আসে না!

একটা চলা ফেলা করতে পারা জল’জ্যান্ত আপ’দ এই মেয়ে!
চলবে….