#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব৫
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকাল সাতটা ভার্সিটিতে এসে হাজির তৃধা ও তার বন্ধুরা।
নিশি তো ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,মনে মনে বলছে আল্লাহ আজকের মতো বাঁচাইয়া দাও মাবুদ আর কোনো আকা’ম করতে যামু না।
নোভা তো আভা কে ধাক্কা মে’রে মে’রে নিয়ে যাচ্ছে। নাদিম ফিসফিসিয়ে বলছে–,,বইন যদি ধরা পড়ি না একসাথে পাঁচ জনই হা’জতে!
তৃধা যে ভয় পাচ্ছে না এমন নয়,সে ও চিন্তায় আছে তবুও উপরে উপরে সাহস দেখিয়ে বলছে–,,আমরা কি চু’রি করতে যাচ্ছি নাকি?তুই নিজের অভিনয় টুকু ঠিক ঠাক করতে পারলেই হয়!
নাদিম বলে উঠলো–,,বড় আব্বু জানতে পারলে আমার পিঠের ছা’ল তুলে নিবে,এই নাদান বাচ্চাটার উপর একটু তো রহম কর।
তৃধা বলে উঠলো–,,ভাই দেখ মানসম্মানের বিষয়, গতকাল তো ওই মসলা ছাড়া পানসে মানুষটার সামনে ভাব নিয়েছি এখন তো নিজেকে প্রমান করতেই হবে,প্লিজ এইবারই শেষ তুই আমার ভাই না বল?শুধু তোকে আব্বুর গলা নকল করে ফোন করতে হবে,পরে বাকি কাজ আমি একাই করবো!
নোভা বলে উঠলো —,,তুই সিউর ক্লাস রুমে সিসি ক্যামেরা ছিলো?
তৃধা মাথা নাড়লো,নিশি বলে উঠলো –,,তোর বাবা কে বললেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যেত,অযথা এতো কষ্ট করা লাগতেছে।
তৃধা বিরক্ত হলো,মেয়েটা ও না সব কিছুতে বেশি বুঝে।তৃধা ধীরে সুস্থে জবাব দিলো–,,শোন নিশি, ক্ষম’তা আছে দেখেই যে তার ব্যবহার করতে হবে এমন তো নয়।আমিও জানি বাবা আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে,রুপা,নিপা আমার কাছে মা’ফ ও চাইবে,কিন্তু ধর এই কাজ গুলো ওরা অন্য কারো সাথে করেছে তখন ওরা কি করতো?ওদের তো আর বাবা এখানকার উচ্চপদস্থ ব্যক্তি না,আমরা এখানে শুধু মাত্রই স্টুডেন্ট অন্য কিছু না।এছাড়াও নিজের রক্ষ’ক নিজেকেই হতে হয়,যত সহজ সরল হয়ে মানুষের সাথে মিশবি ততোই তারা তোকে স’স্তা মনে করবে।ভালোদের কদর কম মানুষই করে,সময়ে নিজেকে কঠোর করা ও শিখতে হয়।এখন যদি আমি আব্বুর পরিচয় গোপন করে কথা বলতে চাই অথরিটি হয়তো আমাকে কথা বলার সুযোগই দিবে না।এটাই তিক্ত বাস্তবতা, তার পরেও চেষ্টা করতে ক্ষ’তি কি?যতটুকু পারি নিজেকে নিরপরাধ প্রমান করার চেষ্টা করবো আমি!
আভা বলে উঠলো –,,এই লুকিয়ে পড় কেউ মনে হয় আসতেছে।
নাদিম, নোভা,করিডরে থাকা টেবিলের পেছনে লুকিয়ে পড়লো।আভা,নিশি পিলারের পেছনে,বেচারি তৃধা মাঝখানে দাঁড়িয়ে। সিঁড়ি তে জুতোর আওয়াজ তীব্র হলো,তৃধা পিছু ফিরলো না মুখের উপর এক হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করে বাকা হয়ে দাঁড়ালো।
আদাভান এসেছে পরীক্ষার খাতা গুলো নিতে, গতদিন নিতে মনে ছিলো না, আজ আবার রেজাল্ট দিতে হবে।করিডরে কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো–,,কে?
তৃধা কপালের উপর হাত রেখেই মুখ ঘুরিয়ে তাকালো,আদাভান কে দেখে পলক বিহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।
আদাভান আশেপাশে তাকিয়ে কিছুটা কঠিন সুরে বললো–,,এতো সকালে এখানে কি করছো তুমি?পুরো ভার্সিটি ফাঁ’কা কতো বখা’টে ছেলে ঘুরে বেড়ায় ধারনা আছে তোমার?
তৃধা এবার নিজেকে ঠিক করে বললো–,, যে খুশি থাকুক তাতে আপনার কি?
আদাভান লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললো–,,আমার কিছুই না,তবে তোমার তো?কি বুঝাতে চাইছি তা বুঝার মতো বয়স তোমার হয়েছে, তাই কথা না বাড়িয়ে হোস্টেলে ফিরে যাও!
–,,যদি না যাই তো?
–,,তুমি আসলেই একটা,,
–,,বেয়া’দব! আমি জানি নতুন করে বলতে হবে না,আর আমি কোনো দিন ভদ্র হতেও চাই না স্যার,নিজের কাজে যান আমি আমার কাজ শেষ হলেই চলে যাবো!
আদাভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,, এতো সকালে এখানে কিসের কাজ তোমার?
–,,প্রেম করতে এসেছি,আর আমি ও না এতো কথা আপনাকে কেনো বলছি আজব,সামনে থেকে সরুন তো!
তৃধা আদাভানের সামনে দিয়ে উপরে চলে গেলো, আদাভান হাত ঘড়ির দিকে তাকালো, এ মেয়ে যা বি’চ্ছু একা নিশ্চয়ই আসেনি,তার নিজের কাজে যাওয়া উচিত।
তৃধা কম্পিউটার রুমের বাহিরে গিয়ে কয়েক বার পায়চারি করলো,নখ কাম’ড়ে ধরলো নিজের,নাদিম কে কল করে সব বলে ও দিয়েছে, তৃধা ম্যাসেজ দিলেই যেনো ফোন রিসিভ করে।
কম্পিউটার মনিটর করার জন্য একজন সব সময়ই থাকে।তৃধা বেশ ভাবসাব নিয়ে ভিতরে গেলো।
কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা ছেলেটির বয়স ছাব্বিশ থেকে সাতাশের ঘরে হবে।
তৃধা কে দেখে সে কিছুটা কড়া ভাষাই বললো–,,অনুমতি ছাড়া ভিতরে কেনো এসেছেন?কি চাই?
তৃধা মোটেও ভড়কালো না সে স্বাভাবিক ভাবেই গিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো,মুচকি হাসি দিয়ে বললো–,,ভাইয়া আসলে।
ছেলেটি ধম’ক দিয়ে বললো–,,কিসের ভাইয়া,বলা নেই কওয়া নেই এসে বসে পড়লেন সাহস তো কম না!
তৃধার মেজা’জ বিগড়ে গেলো,সেও ধম’ক দিয়ে বসলো, বলে উঠলো–,,আরে মিয়া কথা না শুনে চিল্লান কেন?জানেন আমি কে?
ছেলেটি তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো,হয়তো কিছু টা কাজ হয়েছে,সে বললো –,,কি চাই?
তৃধা টেবিলের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো–,,ভার্সিটির প্রধান আজাদ তালুকদার কে চিনেন আপনি?
ছেলেটি নড়েচড়ে বসলো, কিছুটা স্বর পাল্টালো নিজের বললো–,,হুম স্যার কে না চেনার কি আছে!
তৃধা মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো,যাক প্ল্যান টা কাজে দিলেই হয়।
তৃধা গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,উনি আপনার সাথে কথা বলতে চান,বিষয় টা খুবই আর্জেন্ট!
ছেলেটি বলে উঠলো–,,আপনার কাছে স্যারের নম্বর আছে?না মানে উনি তো বড় মাপের মানুষ আপনি কি করে চিনেন?
তৃধার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি,একবার নিজ মনেই বললো–,,হায়রে ক্ষমতা!
তৃধা আর অপর পাশে বসে থাকা যুবকটির কথা বার্তা না শুনতে পেলেও, তাদের একসাথে বসে থাকতে দেখে এক জোড়া চোখ থমকালো চমকালো!
তৃধার সেই মুচকি হাসি,ছেলেটার উৎসাহ ভরা চাহনি আদাভানের হৃদয়ে সুক্ষ্ম ব্যাথার সৃষ্টি করলো,তবে কি এই ছেলেটিই তৃধার প্রেমিক?বিয়ে হয়ে গেছে মেয়েটা বেমালুম ভুলে বসে আছে!আদাভান নিজের ভাবনায় ফের একবার চমকালো,বিয়ে?সে নিজেই তো বিয়েটা মানে না,সেখানে তৃধার প্রেমিক হিসেবে কাউকে মেনে নিতে এতো কেনো দ্বিধা থাকবে ওর মনে?মানুষের মন নাকি প্রহেলিকা?নিজে কি চায় তা সে নিজেই জানে না,অদ্ভুত সব সমীকরণ, জলটা পাঁকাতেই থাকে ছাড়াছাড়ির কোনো নাম গন্ধ নেই।
আদাভান তৃধার দিকে বার কয়েক রাগী চোখে তাকিয়ে প্রস্থান করলো,যত যাই হোক ওর মন মানতে নারাজ,তৃধা অন্য পুরুষের সামনে হাসতে পারবে না!
আদাভান নিজেও এটা স্বীকার করে তৃধার মুচকি হাসিটা মারা’ত্মক সুন্দর!
——
ফোন কানে নিয়ে এক নাগাড়ে হ্যাঁ স্যার, জ্বি স্যার, যেভাবে বলবেন স্যার বলেই যাচ্ছে ছেলেটি। তৃধা বহু কষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখেছে।
ছেলেটির নাম রিফাত,এই ভার্সিটি থেকেই কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছে,সরকারি চাকরির জন্য এপ্লাই করেছে,না হওয়া পর্যন্ত এখানেই কাজ করবে,এখানকার মানুষ কে তোষামোদি করলে তারই লাভ!জীবনের নিয়মটাই হয়তো এমন।
তৃধার ফোনে নিজ দায়িত্বে ফুটেজ ট্রান্স’ফার করে দিয়েছে রিফাত।শেষে বিনয়ের সাথে বললো–,,কোনো অসুবিধে হলে আমাকে বলবে কেমন?আমি যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করবো।
তৃধা ও কৃতজ্ঞতা ভরা কন্ঠে বললো–,, ধন্যবাদ ভাইয়া,অনেক বড় উপকার করলেন।
তৃধা বেরিয়ে আসলো দ্রুত,হোস্টেলে ফিরে আবার এগুলো কে কে’টে নির্দিষ্ট অংশ গুলো কে আলাদা করতে হবে।ক্লাসের ও বেশি সময় বাকি নেই।
তৃধা গিয়ে খুশিতে নোভা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,দোস্ত ফাইনালি পেয়ে গেছি!
নাদিম বলে উঠলো–,,এবার এখান থেকে ভাগ,প্রায় সারে আটটা বাজে স্টুডেন্ট আসা শুরু হবে এখনই।
পাঁচ জন মিলে দৌড় লাগালো,ফাঁ’কা ক্লাস রুম করিডর মুখরিত হলো তাদের পদধ্বনি তে।
তৃধা নিজের ফোন নাদিমের হাতে তুলে দিয়ে বললো–,,যা পারিস কর, ক্লাসের আগেই সব ঠিক ঠাক করতে হবে!
নিশি বলে উঠলো–,,কথাবার্তা স্পষ্ট শোনা যাবে তো?
নোভা বললো–,,তাও ঠিক,কিরে নাদিম তুই কি বলিস?
নাদিম আস্বস্ত করে বললো–,,আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করবো, তোরা যা রেডি হয়ে আয়।
—————
হোস্টেল রুমে এসে খাটের উপর সটান হয়ে শুয়ে পড়লো তৃধা।
নোভা পানি খেলো ঢকঢক করে, নিশি বললো–,,স্যার যে তোকে দেখে ফেলেছে, এবার যদি অন্য কিছু ভাবে?
আভা বললো–,,যা খুশি ভাবুক।আমাদের একটাই ইচ্ছে তৃধা কে যারা অপমানিত করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন হোক!
নোভার ফোন বেজে উঠলো তখনই স্ক্রিনে তৃধার মায়ের নাম্বার দেখে তৃধাকে এসে জানালো,
তৃধার নিজের মায়ের কথা মনে পড়তেই,মনে জমে থাকা অভিমানের পাল্লা ভারি হলো,তৃধা ভুলতে পারে না কিছুতেই,কি করে এতো আহাজা’রি করে বলার পরও তার মা তাকে সাহায্য করেনি,তার হয়ে দুটো কথাও বলেনি।
চুপচাপ সবটা হতে দিয়েছে,তার মা যদি তার পক্ষে কিছু বলার পরও তাকে বিয়ে দেওয়া হতো, তবে হয়তো এতোটা কষ্ট লাগতো না।আসলে সবচেয়ে বেশি প্রিয় যে মানুষ টা থাকে আমাদের জীবনে তার থেকে পাওয়া কষ্টটাও তেমন বহুগুণ বেশি পীড়া দেয়।
নোভা তৃধার কাঁধে হাত রেখে বললো–,, রিসিভ কর,তুই তো জানিসই আন্টির হাতে কিছু নেই সেও পরিস্থিতির স্বীকার!
তৃধা হেসে বললো–,,ভালোবাসার শক্তি এতো কম কেনো হয় বলতে পারিস?
মা তো সবটা দিয়ে বাবা কে ভালোবেসেছে,নিজের ইচ্ছে, সুখ,আহ্লাদ,দিনের প্রতিটা সেকেন্ড,পুরোটা জীবন তাকে দিয়ে দিয়েছে,একটা মানুষের সবটুকু নিংড়ে দেওয়া, পবিত্র ভালোবাসাটা কেনো আমার বাবার মন ছুঁতে পারলো না?
ভালোবাসা শক্তি কম নাকি যাদের আমরা ভালোবাসা উৎসর্গ করি তারাই অযোগ্য!
আভা সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বললো–,,ভালোবাসারা ভালো থাকুক, বাউণ্ডুলে ঘুড়ি হয়ে অন্যের আকাশে।
শুধু একটাই চাওয়া শেষ সময় হলেও যেনো সে একবার এসে ধরা দেয় আমার বাহুডোরে!
তৃধা তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো –,,ছে’কা খাওয়ার গন্ধ পাচ্ছি গাইস!
আভা বলে উঠলো –,,তোর মাথা খারা’প ছে’মড়ি যা তো আন্টির সাথে কথা বল।
তৃধা মোবাইল হাতে বারান্দায় গেলো।রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একটা উৎক”ন্ঠিত গলা শোনা গেলো–,,কেমন আছিস সোনা?মায়ের উপর এতো রাগ?যাওয়ার পর একটা বার ও কথা বললি না।তুই ছাড়া কে আছে আমার বল?
তৃধা নিশ্চুপ রইলো,রাজিয়া বেগম মেয়েকে বলেই চলেছেন-,,ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করিস তো?হোস্টেলের খাবার খেতে কষ্ট হলে ওসব খাওয়া লাগবে না তোর, বাহির থেকে কিনে খাবি।ফল কিনে খাবি যা মন চায় খাবি,পড়াশোনা করবি মনোযোগ দিয়ে।নিজের খেয়াল রাখবি।
তৃধা মৃদু হাসলো,ছোট করে জবাব দিলো–,, ঠিক আছে।
রাজিয়া বেগম আবার জিজ্ঞেস করলো–,,জামাইয়ের সাথে দেখা হয় তোর?একাসাথে থাকছিস না কেনো দুজন?তোর শ্বশুর বাড়ির সবাই তো চাইছে যাতে একসাথে থাকিস তোরা।
তৃধার এসব কথা শোনার ইচ্ছে এখন মোটেও নেই।সে সত্যি কথা এতো অগোচরে বলে না যা বলে সরাসরি।
সে বলে উঠলো–,,আহা মা, জোর করে বিয়ে দেওয়া হলে কোনো মানুষই চায় না এক সাথে থাকতে।তার উপর আদাভান এখানকার শিক্ষক, পারিবারিক চা’পে পড়ে বিয়ে করেছে যেমনটা আমি ও বাধ্য হয়ে করেছি।এখন এসব আশা করাটা তোমাদের ভুল,এখানে আমি আদাভানের দোষ দিবো না কারন আদাভানের আমাকে কোনো কালেই পছন্দ ছিলো না,আর না আমার ওনাকে পছন্দ তাই যেভাবে এখন থাকছি ওভাবেই থাকতে দেও।এর থেকে বেশি কিছু চাইলে অশান্তি ছাড়া কিছুই হবে না।আর রইলো সংসারের কথা এসব চিন্তা করাটাও বোকামি।
———–
ক্লাস রুমে বসে নাদিমের অপেক্ষা করে যাচ্ছে তৃধা এখনো আসছে না কেনো এই ছেলে।
স্যার আসার সময় হয়ে এসেছে প্রায়,শেষ মুহুর্তে ক্লাসে এসে পৌঁছালো নাদিম।
তৃধার পাশে গিয়ে বসে বললো–,,কি যে একটা খাটুনি গেলো মা”ইরি!এবার এটা চালাবি কি করে?
আজকে প্রেজেন্টেশন দিতে হবে ভুলে গেছিস?
আভা বলে উঠলো–,,স্যার যা রাগী, ক্লাসের পরিবেশ ন’ষ্ট করলে নিশ্চিত থাক বেইজ্জ’তির কিছু বাকি রাখবে না!
তৃধা দেখলো দরজা দিয়ে আদাভান ঢুকছে রাগে চোয়াল শক্ত হলো তার।কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো–,,নিজেকে প্রমান করার পর দরকার পড়লে এই ভার্সিটি ছেড়ে দিবো আমি,এক বছর পর আবার ভর্তি হবো,তবুও নিজের সম্মান ফিরাবোই।
তৃধা কে এতো স্বাভাবিক দেখে,রূপা মুখ বাঁকালো মেয়েটা কে এরকম বা’জে ভাবে জ’ব্দ করার পরও কি করে চুপচাপ বসে আছে তাও সবার সামনে।
তৃধার এমন ভাব আগে কিছু হয়নি তার সাথে, সে ক্লাসে বেশ মনোযোগী।
পর পর অনেকেরই প্রেজেন্টেশন দেওয়া শেষ হলো,তৃধা কে ডাকলো আদাভান সহজ ভাবেই,তৃধা গিয়ে দাঁড়ালো একপাশে, হেসে সালাম দিয়ে বললো–,,স্যার,
প্রেজেন্টেশন দেখার পর আপনি যে শা’স্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নিবো।তবে শর্ত একটাই পুরোটা শেষ না হওয়া অব্দি আপনি আমার উপর রাগ ঝাড়তে পারবেন না,ক্লাস থেকে বের হতেও বলতে পারবেন না!শর্ত বা অনুরোধ ও বলতে পারেন।
আদাভানের শান্ত দৃষ্টি এসে পড়লো তৃধার উপর,আদাভান ছোট করে বললো–,,ক্লাসের পরিবেশ ন’ষ্ট করবেন না আশা করি!
তৃধা তার সেই মন্ত্রমুগ্ধকর হাসিটা দিলো,রূপার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ’তেও ভুললো না।
প্রথমেই সাদা পর্দায় ফুটে উঠলো প্রথম দিনের ক্লাসের শেষে রূপা ও তার বন্ধুদের কথোপকথন,রূপা,নিপা,সোহা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে,এগুলো কোথা থেকে জোগাড় করেছে এই মেয়ে?একটা দু পয়”সার মেয়ের এতো সাহস!
এতোটুকু যাওয়ার পরই তৃধা ভিডিও টা থামিয়ে দিয়ে চিবি’য়ে চিবি’য়ে বললো–,,আমার প্রিয় সম্মানিত স্যার, গতকাল যা হয়েছে ওগুলো যদি আমি করে থাকি তার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখীত,তার শা’স্তি ও আপনি আমাকে দিয়েছেন,এখন যারা আপনাকে নিয়ে এতো গভীর অব্দি চিন্তা ভাবনা করেছে তাদের কি করবেন আপনি?
আদাভান গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো শুধু,তৃধা আবার বললো–,,স্যার দ্বিতীয়ত যে অভিযোগ টা আমার উপর এসেছে তার খোলাসা এবার করা যাক!
তৃধা ভিডিও টা আবার চালু করে দিলো,ভিডিও তে স্পষ্ট ফাঁকা ক্লাস রুমে সবার আগে রূপা,নিপা এসেছে।তৃধারা যেখানে বসে সব সময় সেখানেই কাগজটা চেয়ারের নিচে সুন্দর মতো সেট করে দিয়েছে।
তার পরে আরো কিছু অংশ ক্লাস চলা কালিন সময়কার,যেখানে কাগজ রাখা হয়েছিলো সেখানে তৃধা বসেনি, তাই সোহা পরীক্ষার সময় আরো একটা কাগজ তৃধার ওদিকে সন্তর্পণে রেখে দিয়েছিলো!
ভিডিও টা শেষ হতেই ক্লাস রুম জুড়ে বিভিন্ন কথাবার্তা শোনা গেলো।
আদাভান সবাই কে থামিয়ে দিয়ে বললো–,,রূপা,নিপা,সোহা,এবং তৃধা আমার সাথে ডিপার্টমেন্ট হে’ড এর কাছে চলুন!
তৃধা অনেকটা ফিসফিসিয়ে বললো–,,অপমান তো সবার সামনেই করেছেন স্যার, এবার স্যরি ও সবার সামনেই বলতে হবে!
আদাভান বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো,তৃধা পরে পেছনে রূপা কে বক’তে ব’কতে আসলো নিপা, সোহা!
নিপা বলে উঠলো–,,রূপা তোর জন্য যদি আজকে আমি ফেঁ’সে যাই তো মনে রাখিস আমাদের ফ্রেন্ডশীপ এখানেই শেষ।
রূপা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,আমি কি করে জানবো ওই মেয়েটা এতো কিছু করবে,আমি তো ভেবেছি ভয়ে আর সামনেই আসবে না!
সোহা বলে উঠলো–,,তোর এই ফাল’তু কনফিডেন্স আর দেখাতে আসবি না আমাদের,মেয়েটার পেছনে কেনো লেগেছিস তুই?প্রথম দিনই বুঝা উচিত ছিলো তোর,নিজে ফাঁ”সলি সাথে আমাদের কেও!
ডিপার্টমেন্ট হে’ডের সামনে দাড়িয়ে আছে চার জন।আদাভান এক পাশে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।
ডিপার্টমেন্ট প্রধান মারুফ হক বলে উঠলো–,,রূপা,তোমান বাবা কে বিষয় টা জানানো হয়েছে,তিনি এসেই না হয় তোমার বিচার করবেন!
রূপার পি’লে চমকে উঠলো যেনো,রূপা অনুনয় করে বললো–,,স্যার প্লিজ আব্বু কে কিছু বলবেন না,আমি মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে,আর কোনো দিন করবো না!
আদাভান বলে উঠলো–,,তোমার বাবা ভার্সিটির একজন সম্মানিত সদস্য আর তুমি আজ তার সম্মানই শেষ করে দিয়েছো।এখানে পড়াশোনা করতে এসে এগুলো কেমন ধরনের কাজ?ভুল নয় অপরা’ধ করেছো তুমি।অন্য আরেকজন স্টুডেন্ট যে কি না তোমারই সহপাঠী তার জীবন ন’ষ্ট করার অধিকার কে দিয়েছে তোমায়?আমার কাছে এ ও খবর আছে তুমি সিনিয়রদের সাথে মিলে জুনিয়রদের হে’নস্তা করে বেড়াও!
রূপা কেঁদে বলে উঠলো–,,এবারের মতো ক্ষমা করে দিন স্যার আর কখনো এমন ভুল হবে না।
মারুফ হক বললেন–,,দু সপ্তাহ হয়নি ভার্সিটি এসেছো, এখনই এরকম অধঃপতন? বাবা মা কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে, সে টাকায় প্রাইভেটে পড়ো তোমরা,আর এসে এরকম বেয়া’দবি অস’ভ্যতা করতে লজ্জা করে না?
নিপা,সোহার দিকে তাকিয়ে বললো–,,আর তোমরা ও সমান অপ”রাধী, তিন জন কে ভার্সিটি থেকে বহি’ষ্কার করে দেওয়া উচিত!
সোহা কেঁদে উঠে বললো–,,আর কোনো দিন করবো না স্যার।
আদাভান বলে উঠলো–,, ক্ষমা চাও তৃধার কাছে, তিনজনই!
তৃধা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,নিপা,সোহা আগেভাগেই স্যরি বলে দিলো,বললো–,,এবারের মতো ক্ষমা করে দাও, এরকম ভুল আর করবো না।
তৃধা তাদের আস্বস্ত করার জন্য তাদের হাতে হাত রাখলো।
রূপার অহং’কার দমবার নয়, তবুও নিজের বাবার কথা চিন্তা করে বললো–,,স্যরি!
তৃধা রূপার দিকে তাকিয়ে গাঁ জ্বা’লানো হাসিটা দিয়ে
বললো–,,ইট’স ওকে!
মারুফ হক বললেন–,,এবার যেনো আর কোনো অশান্তি না দেখি আমি,তাহলে সবার বাবা মা কেই জানাতে বাধ্য হবো!
আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,ক্লাসে যান সবাই!
চারজন বের হতেই মারুফ হক বলে উঠলো–,,ভাগনে, বউ মা কিন্তু আমাদের বেশ পরিপাটি আর গুছানো দেখতে শুনতেও মাশাআল্লাহ!
আদাভান বিরক্তি নিয়ে বললো–,,মামা!তোমাকে কে জানিয়েছে এসব?
মারুফ হক বললেন–,,কে আবার বড় আপা।তোর মা বললো যাতে তোদের একটু দেখে শুনে রাখি,তোর বউয়ের কয়েক খানা ছবি ও দিয়েছে আমায়।
আদাভান নিজের কপালে নিজেই মার’লো একটা,এবার তো তার মামা উঠতে বসতে কাহিনি করবে,জীবনে অশান্তির কি অভাব পড়েছিলো, যার জন্য তার মাকে শত্রু’তা করতে হলো তার সাথে!
মারুফ হক এবার জিজ্ঞেস করলো–,,তুই কোন বুঝে নিজের বউ কে সাপোর্ট না করে সভাপতির মেয়ে কে সাপোর্ট করেছিস?ঝগ’ড়া হয়েছে বুঝি তোদের মাঝে?
আদাভান রাগী কন্ঠে বললো–,,মামু সব জেনে বুঝে নাটক করবা না আমার সাথে।
মারুফ হক শব্দ করে হাসলেন পরক্ষণেই বললেন–,,তা যা বলেছিস, ভাগনে বউ এর সাহস আছে বলতে হবে।কিন্তু তুই একটা রামছা’গল, তৃধা ঠিকই বলেছে শিক্ষক হয়ে তুই ভে’ড়ার মতো কাজ করে বসে আছিস,এবার তুই ওর কাছে মাফ চাইবি এইটাই তোর শেষ শা’স্তি!
আদাভান বলে উঠলো–,,আশ্চর্য মামু বুঝলাম তুমি আমাকে নূন্যতম সম্মান দাও না তাই বলে ওই মেয়ের হয়ে কথা বলবে?হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ে।
–,,এখন তোর বউ, হাঁটুর বয়সী হলেও এখন ওর ক্ষম’তা তোর থেকে বেশি,তোর মামি কে দেখিস না তিন বেলা ছু’রির আগায় রেখে আমাকে ঘুরায়!
আদাভান বিরক্ত হয়ে বললো–,,তুমি আর তোমার ফালতু কথা বার্তা।ও যে আমার ওয়াইফ এই কথা ভুলেও কাউকে বলবা না,একটা ম্যানা’র্লেস মেয়ে।আমার সাথে কিছুতেই যায় না!
আদাভান রুম ত্যাগ করলো,মারুফ হক নিজের কাজে মনোযোগী হলেন, ভাগনেটা ও হয়েছে তার আস্ত একটা গোঁয়া”র। এতো সুন্দর বউ টাকে কিনা বার বার এরিয়ে যাচ্ছে।যখন বউ আবার পাত্তা দিবে না তখন বুঝবে কতো ধানে কতো চাল!
—————
ভার্সিটির ঘটনা কে’টে গেছে আজ তিন সপ্তাহ হতে চলেছে এতে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেলেও, আদাভান আর তৃধার সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি,এরা এখনো দেখা হলে দুজন দুজন কে মুখ ঝাম’টা মে’রে দুদিকে চলে যায়।
তবে বাড়ির মানুষের পীড়াপীড়ি তে একটা মিথ্যা কথা বলেছে দুজন মিলে,তৃধা অবশ্য রাজি ছিলো না,শেষে আদিবের কথা রাখতে তৃধা রাজি হয়েছে।আদিব কে বড় ভাই হিসেবে যতটা ভালোবাসে ততোটা সম্মান ও করে তৃধা তার কথা ফেলতে পারেনি,তবে সে কথা রাখতে যে এতো বড় খেসারত দিতে হবে তা কে জানতো!
তৃধা ও আদাভান মিলে বাড়িতে সবাই কে জানিয়েছে তাদের মধ্যে সব ঠিক আছে,তারা এক সাথে ও থাকে,কোনো সমস্যা নেই,এতো দু বাড়ির মানুষই শান্ত,খুশি যেনো তাদের ধরে না।তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে,কিন্তু আসল ঘটনা সম্পূর্ণই বিপরীত!
আমাদের জীবনের অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত এমন সব ঘটনা ঘটে যা আমরা কল্পনা ও করি না।তবে মানুষ যা ভেবে রাখে যা সিদ্ধান্ত নেয়, তার উপরে ও যে সৃষ্টিকর্তার একটা সিদ্ধান্ত থাকতে পারে তা আমরা ভুলে যাই।তেমনই হয়তো কিছু একটা ঘটবে তৃধা আদাভানের জীবনে, তা তাদের জীবনে কি বয়ে আনবে তা শুধু সময়ই বলতে পারবে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতি টা এরকম,তৃধা, আদাভান নিজেদের সংসার নিয়ে কতোটা সিরিয়াস তা দেখার জন্য ঢাকাতে আসছেন,তৃধার দাদী সাথে আদাভানের দাদু,দাদী!
আদাভান ফোন করেছে তৃধা কে যাতে তারা যতদিন থাকে ততদিন তৃধা তার ফ্লাটে এসে থাকে।
তৃধা সে তো রেগে বো’ম,সে তো বলেই বসেছে–,,আসলে মানুষ কে বসতে দিলে যে খাইতে চায়,খাইতে দিলে যে আবার শু”ইতে চায় তার জ্বলজ্যা’ন্ত প্রমান হচ্ছেন আপনি!
আদাভান ও কম কিসে রেগে বললো–,,একদম ফালতু কথা বলবে না বলছি,তোমার মতো মেয়ের সাথে থাকার মতো খারা’প দিন এখনো আসেনি আমার।
তৃধা দ্বিগুণ রেগে বললো–,,আমার মনে হয় পেটের ভাত হজম হচ্ছে না, আপনার সাথে থাকার জন্য। অস’ভ্য লোক আমি যাবো না মানে যাবো না।
–,,ভুলে যাচ্ছো শুধু আমার দাদা দাদী না তোমার দাদী ও আসছে।
তৃধার মুখ আর তার মুখের ভাষা দুটোই রকেটের গতিতে ছুটছে,চা’ন্দি গরম মহিলা,এখন আদাভান তার শিক্ষক না এটা একটা পারিবারিক টপিক সে ক্ষেত্রে সম্মান দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না।
তৃধা বলে উঠলো–,,শা’লার ব্যাটা নিজের ঝা’মেলা নিজে সামাল দেন,ওই বুড়ি জানে আমি কেমন, শা’লার বুড়ি আর তার পোলা মিলে জীবনের শান্তি হারা’ম করে দিছে আমার, গোষ্ঠী কিলা’ই বি’য়া সা’দির ফারদার কল করবেন না আমাকে!
আদাভান হা হয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে, কি ভাবে সম্ভব এই মেয়েকে নিয়ে এক সাথে থাকা,আদাভান জীবনের এই প্রথম বারের মতো বলে উঠলো–,,আল্লাহ দ’ড়ি ফালাও আমারে উঠাইয়া নাও!
চলবে….