#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব৮
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকালের মিষ্টি রোদের দুষ্টুমিতে ঘুম ছুটে গেলো তৃধার,প্রতিদিন কার মতো আড়মোড়া ভেঙে যেই না উঠতে যাবে অনুভব করলো তার কপালের কাছটায় গরম কিছু আছে,তৃধা ঘাড় কাত করে তাকালো,হায় সর্ব”নাশ এই আদাভানের বাচ্চা এতো কাছে আসলো কোন সময়?
তৃধা দ্রুত উঠতে যায় তখন আরেক দফা অবাক হয়,আদাভান দু হাতে ওর কোমর জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।
তৃধা দিক বেদিক কিছু না ভেবেই দিলো একটা চিৎকার!
আদাভান হতচকিত নয়নে তাকালো,পরিস্থিতিতে সামাল দিতে তৃধার মুখ চেপে ধরলো এক হাতে,তৃধা টাল সামলাতে না পেরে পুনরায় বালিশের উপর শুয়ে পড়লো।
তৃধার মুখ চেপে রেখেই আদাভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,, সাত সকালে চিৎকার করছো কেনো?মানুষ শুনলে কি বলবে?বেয়া”দব!
তৃধা চুপসে গেলো,এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো আশেপাশে, শরীর কেমন অসার হয়ে আসছে,কি এক দ”ম বন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতি, তৃধার হৃদপিন্ড লাফাচ্ছে উচ্চ গতিতে।
আদাভান তৃধার অস্বস্তির কারন বুঝতে পেরে হাত সরিয়ে কিছুটা উঠে আসলো।
তৃধা কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস ফেললো,ভিতরে ভিতরে অবস্থা নাজেহাল, অস’ভ্য ছেলে এখনো কাছে এসে বসে আছে,কেনো ভাই তোর বাসায় কি মা, বোন নেই নাকি!কিন্তু তৃধা তা প্রকাশ করলো না উল্টো তে’জ দেখিয়ে বললো–,,রাতের বেলা এতো ভাব নিয়ে ঘুমিয়েছেন,কতো কি শুনালেন আমাকে, আপনি নাকি নিজের সীমা কোনো দিন ক্র’সই করেননি ঘুমানোর সময়, ভদ্র সুশীল ঘুম আপনার।এখন তো দেখছি আপনার মতো আপনার ঘুম ও অস’ভ্য, বেয়া’দব।
ঘুমের মাঝে একজন অবলা নারীকে প্যা”চাইয়া ধরছে আপনার ঘুম,মানুষরে দ”ম আটকাইয়া মার’তে চায়।আরে ভাই আপনার ঘুম তো মা”র্ডার কেইসের আসা”মি!
আদাভান চোখ বড় বড় করে তাকালো,তৃধার অস্বস্তির পরিমাণ বাড়ছে কোনো রকম মোচড়ানো শুরু করে দিয়েছে।
আদাভান কিছু একটা চিন্তা করে বললো–,,আমি তো কোল”বালিশ মনে করছিলাম।তোমার মতো মেয়েরে ধরে ফেলছি, স্বজ্ঞানে হলে জীবনেও ধরতাম না। সত্যি বলছি বিশ্বাস করো আমার আবেগ কাজ করছে বিবেক কাজ করে নাই!
তৃধা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বললো–,,তওবা তওবা এই ব্যাটার তো চ’রিত্রে ও দোষ আছে,না জানি এরকম আবেগের দোহাই দিয়ে কতো মেয়েরে!
আদাভান দিলো এক রাম ধম’ক–,,এই একদম বা’জে কথা বলবে না,আমার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র!
তৃধা নিজ থেকেই এবার আদাভানের বাহু ঠেলে উঠে বসতে চাইলো,শা’লার তো মনেই নাই সে একজন মহিলার উপর এমনে ভর দিয়া বসে আছে,আবার নাকি চরি”ত্র বাঁধাই করে রাখার মতো যত্তসব!
কিন্তু আদাভান উঠলো না, তৃধার ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে দিলো আর তৃধার অবস্থা বেহাল,চোখ যেনো কোট’র থেকে বেরিয়ে আমার উপক্রম!
আদাভান চোখ ছোট ছোট করে বললো–,, ঠোঁট টা তো সুন্দর, কিন্তু মাঝখানে কালো দাগটা কিসের!
তৃধা দ্রুত উঠে বসলো খাটের শেষ মাথায় চলে গেলো, তার পর নিজের চুল গুলো বাঁধতে বাঁধতে বললো–,,ওইটা প্রথম বার সিগা”রেট খাওয়ার স্মৃতি বহন করতেছে!
আদাভান বিষ্ময়কর চোখে তাকিয়ে বললো–,,তুমি সিগা”রেট ও খাও?
তৃধা স্বাভাবিক ভাবেই বললো–,,অবাক হওয়ার কি আছে,প্রায় সময়ই তো খাই,সাথে বিভিন্ন ধরনের অ্যালকো”হল। খাঁস বাংলায় ম”দ গা””ঞ্জা সবই খাই!
আদাভান বলে উঠলো–,,চেহারা তো মাশাআল্লাহ, কাজকর্ম সব নাউজু”বিল্লাহ মার্কা!
তৃধা ঘড়িতে দেখলো সাতটা ত্রিশ বাজে,আদাভান কে পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আদাভান বিছানায় ধ”প করে বসে পড়লো –,,কোন পা’প করছিলো জীবনে যার জন্য এই রকম একটা মেয়ে কপালে জুটলো!
আদাভান নিজের কপাল নিজেই চাপড়ালো।
তৃধা কিছু সময় পর বের হলো একদম রেডি হয়ে, আদাভান শুধু দেখলো কিছু বললো না।তৃধা চুল গুলো আঁচড়ে খোঁপা করে তার উপরে সুন্দর মতো একটা কাঁধ পর্যন্ত হবে এরকম নকল চুল লাগিয়ে নিলো।
বিরক্তিতে আদাভানের চোখ মুখ কুঁচকে আসলো,এ কেমন অদ্ভুত প্রানী?সবাই কে দেখলো চুল না থাকলে এসব করে আর এর টা বুঝার সাধ্য কোনো দিন হবে না আদাভানের।
তৃধা বলে উঠলো–,,আমি জানি আমি সুন্দর ওমন করে দেখার কি আছে?বেশি দেখতে নেই বলা তো যায় না যদি প্রেমে টেমে পড়ে যান!
আদাভানের রাগ হলো ভীষণ, কেনো সে জানে না তবে রাগলো বলে উঠলো–,,এতোটাও খারা”প দিন আমার আসেনি,তোমার মতো ফাল”তু মেয়ের প্রেমে পড়বো।চেহারা আয়নায় কখনো দেখেছো ঠিক তো একটা কদুর মতো চেহারা!
আর রইলো সংসার করার কথা ওইরকম মেয়েই তুমি নও যার সাথে সারাজীবন একসাথে থাকা যায়।বখা’টে মেয়ে মানুষ একটা চ”রিত্র যে কেমন তা জানাই আছে আমার।ভার্সিটিতে সকাল সকাল গিয়ে কার রুমে বসে কি করো সবই জানা আছে,এখন এসে সাধু সন্ন্যাসী সাজো!কিছু দিন যাক ডিভো”র্স দিতে হলেও তো সময় লাগে,ওইটুকু সময় না হয় তোমার সাথে থাকলাম এর পরে দোয়া করি তোমার সাথে আমার আর দেখা না হোক!
আদাভান ফোঁস করে দ”ম ফেললো,ভাবলো তৃধা রিয়েক্ট করবো ঝ”গড়া ও করবে।কিন্তু না ওসব কিছুই হলো না উল্টো তৃধা হো হো করে হেসে উঠলো।
আদাভান থমকে তাকালো তৃধার প্রানবন্ত চমৎকার হাসির দিকে।
হাসতে হাসতে তৃধার চোখের কোনে পানি চলে আসলো,বিছানায় বসে পড়লো সে,তার পর বললো–,,আপনার আজকের কথাটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে প্রফেসর।আসলেই আমিও বিশ্বাস করি আমি খারা’প মানুষ, বা’জে মেয়ে কিন্তু আপনি প্রায় দেঢ় মাস পর বুঝলেন। আফসোস তবে ব্যপার না ধীরে ধীরে আরো ভালো করে চিনতে পারবেন।আমি তো সংসার করতে চাই না বিশ্বাস করুন আপনি যদি ডি’ভোর্স দিয়ে দেন, আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হবে না!
আদাভান বাথরুমে গিয়ে ঢুকলো ঠা’স করে দরজা বন্ধ করে দিলো।মেয়েটা কে জ”ব্দ করাই যায় না,নিজের বদ”নাম নিজেই করে বেড়ায় একে আর কি বলা যায়!
তৃধা চোখ বন্ধ করে হাসলো,আদাভান মুখের উপর তাকে চরিত্র”হীন বললো?তৃধার কলি”জায় গিয়ে লেগেছে কথাটা,তবে কথায় আছে না দুর্বলতা কাউকে দেখাতে নেই,দুঃখ কষ্ট কাউকে বলতে নেই,মানুষ বড্ড স্বার্থপর ঠিক জেনে বুঝে দুর্বলতায় আঘা”ত করে!
তৃধা রান্না ঘরের কাছে আসলো,দেখলো একজন মহিলা কাজ করছে,তৃধা হেসে বললো–,,আন্টি আমাকে দেন সাহায্য করে দেই।
মহিলা চকি”ত নয়নে তাকিয়ে বললো–,,আপনি কি স্যারের বউ?
তৃধা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো,নিলুর মা হেসে বললো–,,আপনি কেন কাজ করবেন মেডাম?আমি একলাই পারমু!
তৃধা বলে উঠলো–,,আমি তো আপনার মেয়ের বয়সী মেডাম কেন বলতেছেন আন্টি?আপনি আমাকে নাম ধরেই ডাকেন আমার নাম তৃধা!
নিলুর মা ইতস্তত করে বললো–,,না মানে, বাকি বাসার আফা গো তো মেডাম না কইলে মেলা রাগ করে!
তৃধা আটার বোল টা নিজের কাছে নিয়ে বললো–,,সবার টা বাদ দেন,আপনি আমাকে তৃধা বলে ডাকবেন আমি বেশি খুশি হবো!
তৃধা কথা বলতে বলতে রুটির জন্য আটা তৈরি করে ফেললো।
রান্না ঘরের দরজায় দাড়ালো এসে গোলজার মজুমদার, তৃধা কে হেসে হেসে কথা বলতে দেখছেন তিনি,কাজের মহিলাটির সাথে এমন ভাবে মিশেছে যেনো তার নিজের পরিবারের কেউ তিনি মুগ্ধ হলেন।
গোলজার মজুমদার ডেকে বললেন–,,নাত বউ একখান চা হইবো?
তৃধা পিছু ফিরলো দাদু কে দেখেই বললো–,,শুভ সকাল দাদু, কিন্তু চা তো হবে না!
গোলজার মজুমদার বলে উঠলো–,,কেরে রে বইন?চা ছাড়া তো আমার চলে না।
তৃধা সিরিয়াস মুখ করে বললো–,,ওইটাই তো চা শুধু হবে না, একেবারে দৌড়াবে আমার ও কিন্তু চা ছাড়া চলে না!
গোলজার হেসে উঠলেন,আদাভান এসে বসেছে সোফায়,সব কথাই তার কানে আসছে।তবুও ভাব নিয়ে থাকতে হবে এখন।
গোলবাহার আর জোছনা বেগম এসে বসলেন আদাভানের পাশের সোফায়।
তৃধা রুটি বানানো বাদ দিয়ে চা নিয়ে বের হলো,সবাই কে দিলো একে একে আদাভান কে ছাড়া।
জোছনা বেগম বললো–,,কিরে দাদু ভাই কে দিলি না যে?
তৃধা চায়ে চুমুক দিয়ে বললো–,,তোমার নাতি চা খায় না!
গোলবাহার বলে উঠলো–,,সে কি কথা?বউ সখ করে বানাইছে খাইবো না কেন?এই এরিশ তুই সত্যি খেতে চাস না?
আদাভান মুখ গোমড়া করে রাখলো,গোলজার বলে উঠলো–,,ও খাইবো লগে ওর বাপ ও খাইবো!তৃধা তোর হাতের কাপটা দে ওর হাতে।
তৃধা তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো–,,এটা থেকে তো আমি খেয়েছি এঁ’টো হয়ে গেছে দাদু, আবার বানিয়ে দিচ্ছি!
গোরবাহার যেনো পেয়ে বসলো সে বলে উঠলো–,,বউ রে আদর সোহাগ করতে পারবো,সব করতে পারবো তার খাওয়া খাবার খাইতে পারবো না এটা কেমন কথা।তৃধা চোখ বড় বড় করে তাকালো আদাভানের দিকে।
জোছনা বেগম বললো–,,ঠিকই তো তুই দে চা কাপ।
তৃধা বিরক্তি নিয়ে এগিয়ে গেলো,ওপর পাশের সোফায় আদাভান বসা বাকিদের থেকে দূরে,তৃধা আদাভানের কাছে গিয়েই পা হড়ঁকে পড়ে গেলো ফলস্বরূপ চায়ের কাপ সোফার পেছনে, তৃধা পায়ে হাত দিয়ে ব্যাথাতুর শব্দ করে উঠলো,আদাভান ব্যস্ত হয়ে বললো–,,দেখে চলতে পারো না?দেখি দেখি কোথায় লেগেছে।
তিন বৃদ্ধার চোখে মুখে উজ্জ্বলতা,খুশি হলো তিন জন।যাক অন্তত বুঝা যাচ্ছে এরা নিজেদের নিয়ে কতোটা ভাবে,একে অপরের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেয়।
কিন্তু তৃধা?আদাভান ওর দিকে ঝুঁকতেই কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো–,,আমার অপবিত্র ঠোঁট আপনাকে কখনো ছুঁয়ে দিবে না!সেটা যেভাবেই হোক না কেনো, দিলাম ফেলে চা, আপনার কষ্ট ও কমিয়ে দিলাম।আমি নিশ্চিত আপনার গা গুলি’য়ে আসে আমাকে দেখলেই সেখানে আমার এঁটো খাবার আপনার কাছে বি”ষের সমান।তৃধা যেমনই হোক কোনো দিন কারো দয়া নেয় না,না কারো কাছে ঋণী থাকে,যা করে সব কিছুই সমান সমান!
আদাভান বিষ্মিত হলো,এক লাইন বেশি বুঝা পাবলিক কেনো এই মেয়ে?আদাভান তৃধা কে অপছন্দ করে ঠিক আছে কিন্তু এতোটাও না!
তৃধা হেসে বললো–,,আমার কিছুই হয়নি,আপনি অযথা ব্যস্ত হচ্ছেন,চলুন নাস্তা করে আবার ভার্সিটি যেতে হবে!
তৃধা নিজেই উঠে রান্না ঘরে চলে গেলো।নিলুর মা এতোক্ষণে সব কাজ শেষ করে ফেলেছে।দুপুরের রান্না ও চড়িয়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যে, কথায় কথায় তৃধা জেনেছে নিলুর মা প্রায় চার টা বাসায় কাজ করে এখানেই , দ্বিতীয় বাসায় যেতে হবে এগারোটার মধ্যে!
তৃধা নিলুর মা কে খেতে বললো,নিলুর মা বললো রান্না ঘরে বসেই খাবে না হয় রান্না পু’ড়ে যাবে তার!
তৃধা হার মেনে টেবিলে এসে সবাই কে খাবার দিলো।জোছনা বেগম বললো–,,তুই খাবি কোন সময়?
তৃধা হেসে বললো–,,তুমি জানো না দাদি আমার কতো খিদে পায় রান্না ঘরেই খেয়ে ফেলেছি।আমি রেডি হয়ে আসি তোমরা খাও!
আদাভান তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো,যতটুকু খাবার মুখে দিয়েছিলো ওইটুকু কোনো রকম খেয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে বললো–,,দাদি আমাকে এখনই যেতে হবে ডিপার্টমেন্টে সকল শিক্ষকদের মি”টিং এ ডেকেছে!
গোলবাহার বললো–,,খাবার টুকু খেয়ে যা অন্তত।
আদাভান রুমে ঢুকলো দ্রুত,তৃধা ফোনে হেসে হেসে কথা বলছে,আদাভানের মেজা’জ বিগড়ে গেলো সে গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,কার সাথে কথা বলছো?
–,,প্রেমিক!
আদাভান রেগে বললো–,,আমার বাসায় থেকে এসব অস”ভ্যতা মেনে নিবো না আমি।যতদিন এখানে থাকবে ততদিন এগুলা থেকে বিরত থাকবে না হলে!
তৃধা বলে উঠলো–,,নাদিম, তুই বাসার নিচেই দাড়া আমি আসতেছি!
আদাভান নিজের দিকে তাকালো কি অবনতি হচ্ছে তার,এই মেয়েটা নাচাচ্ছে আর ও কিনা?
তৃধা বেরিয়ে গেলো দ্রুত,আজ ওরা ক্লাস করবে না,ঘুরতে যাচ্ছে সবাই মিলে,আদাভান কে বলার ইচ্ছা ওর সকালেই ম’রে গেছে।অযথা এই লোককেই বা কেনো এতো কৈফিয়ত দিতে যাবে!
—————————
তৃধা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে রাজিয়া বেগম,তৃধা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে মাকে জড়িয়ে।
তৃধার নানা ভাই নাসিরউদ্দিন বলে উঠলো–,,কেনো এমন একটা মানুষের জন্য নিজের চোখের পানি ব্যয় করছিস রাজিয়া?আমি তোর উপর রাগ করে নেই, শুধু তোকে ভালো আর খারা”পের পার্থক্যে বুঝাতে চেয়েছিলাম আমি।তুই আজাদের সাথে ভালো আছিস জেনে নিজেকে দোষারোপ করেছিলাম ,কিন্তু যখন থেকে আজাদ নিজের আসল রূপ দেখানো শুরু করলো তখন আমার ও জে”দ বাড়লো, শপথ করেছিলাম তুই যতদিন নিজ থেকে না আসবি ততদিন তোকে আমি চলে আসতে বলবো না!
রাজিয়া বেগম চোখ মুছে বললো–,,আমি ভুল করে ফেলেছি বাবা আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও!
নাসিরউদ্দিন গম্ভীর তবে বিচক্ষণ মানুষ, মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললো–,,বাবা মায়ের চোখে সন্তান কখনো খারা”প হয় না। আমি তোমাকে এখনো ঠিক আগের মতোই ভালোবাসি মন ছোট করবে না।বাবার কাছে এসেছো সম্মানের সাথে থাকবে,কতোবার বলেছি খেয়াল রাখবে নিজের আত্নসম্মানে যেনো কেউ আঘা’ত না করতে পারে!কিন্তু কি পেলে দিন শেষে যাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছো সেই তোমাকে দূরে ঠেলে দিলো,তোমার বিশ্বাস ভঙ্গ করলো!
তৃধা বলে উঠলো–,,মা তুমিও না নিজেকে দেখো এখনো কতো ইয়াং আছো,আমাদের কে দেখলে তো সবাই বলবে দোস্ত! কি বলো নানা ভাই?এখন তো সময় ঘুরা ফিরা করার,তুমিও না আজ কে রেস্ট নাও কাল থেকে আমরা দুজন মিলে শহর ঘুরবো অনেক অনেক মজা করবো।
বুঝেছো?
রাজিয়া বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো–,, তোর বাবার প্রতি তোর ভীষণ রাগ তাই না?
তৃধা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো–,,না!যার তার প্রতি রাগ পুষে নিজের জীবনে অশান্তি আনার কোনো মানেই হয় না।
তুমি ও করবে না,এই নানা ভাই তোমার মেয়েকে সামলাও তো আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে কাল একটা পরীক্ষা আছে!
তৃধা মুখে তো বলে দিয়েছে সে রাগ করেনি, ভেতর ভেতর যেনো তার আগু’ন জ্বল’ছে,তার বাবা এতোটা নিচে নেমে গেলো?তার মা কে পর্যন্ত বের করে দিলো বাড়ি থেকে!
বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়ার কথা থাকলেও তৃধা যায় নি।মায়ের ফোন পেয়ে ছুটে গিয়েছিলো নানা বাড়িতে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটছে তৃধা,মন মেজা’জ দুইটাই বিধ্ব”স্ত তার।তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠেছে ঠোঁট জুড়ে,সময় খারা’প গেলে সব খারা’প স্মৃতি গুলো এসেও মনে হা”না দেয়।
তৃধা নিজের জীবন সম্পর্কে ভাবছে,ছোট থেকে এই অব্দি,তার বাবা দায়িত্ব পালন করছি বলে শেষ,মা বাবার বাধ্যগত স্ত্রী হতে গিয়ে চুপ থাকে,আর একমাত্র বড় বোন?সে কিনা তাকে সবার চোখে খারা’প বানিয়ে দিয়ে চলে গেছে সবাই সুখে আছে শুধু তৃধা আঁটকে গেছে এই সম্পর্কের জালে!
আদাভানের কথা মনে পড়তেই আরো খানিকটা হাসলো তৃধা এই লোকটা কে নিয়ে ওর কোনো বাড়তি চিন্তা নেই।তবুও মাঝেমধ্যে কি যেনো হয়,মন চায় একটু জানলে কি হয়?করুক না মন একটু বারাবাড়ি কিছুটা সময় না হয় অবাধ্য থাকলো?একটাই তো জীবন,সব কিছু উপভোগ করেই না হয় শেষ হোক!কিন্তু মানুষ টা তাকে একফোঁটা ও পছন্দ করে না,এটাই স্বাভাবিক কোথায় আদাভান কোথায় তৃধা আজ নিজেকে বড় ছোট মনে হলো তৃধার!কোনো দিন এরকম মানুষের সাথে সে থাকা তো দূর তার মুখ ও দেখতো না,তবুও ওই মানুষ টার বাড়িতে খাচ্ছে,একই বিছানায় ঘুমাচ্ছে,কিন্তু কেনো এতো দায়বদ্ধতা? সবাই শুধু তাকে দায়িত্ব হিসেবেই গ্রহণ করলো,কারো মনে কি ভালোবাসা নামক বস্তুটা উঁকি দিতে পারে না?হয়তো তৃধা ভালোবাসা পাওয়ার অযোগ্য!
রাতের শহর, কতো শতো চিত্র, কেউ হাসছে প্রিয় মানুষের কাঁধে মাথা রেখে, কেউ বা হেসে খেলে সুখ অনুভব করছে দূ’ষিত বাতাসে।অন্যথা গুটিকয়েক মানুষ তৃধার মতো চোখ বন্ধ করে দুঃখ বিলাস করতে ব্যস্ত।ব্যস্ত শহর ব্যস্ত মানুষ কেই বা কার খোঁজ রাখে?
তৃধা কে নিতে আসার কথা ছিলো নাদিমের৷ তবে তৃধা আর ফোন করেনি আসার জন্য। সে একাই হাঁটছে বুকের ব্যাথাটা তীব্র হচ্ছে ভীষণ। নিজেকে এখন খোলা বইয়ের মতো মনে হচ্ছে।এমন সময় কারো সামনে নিজেকে নিয়ে যেতে চায় না তৃধা,সে চায় না কেউ তাকে পড়ে ফেলুক খুব সহজে।
তৃধা দু হাত ছড়িয়ে দিয়ে আকাশের দিক তাকিয়ে বললো–,,আমার দুঃখ,কষ্ট, হাহা”কার, রাগ,অভিমান, অভিযোগ সব একান্তই আমার হোক।ভালোবাসা নেই যদি কোথাও থেকে থাকে তবে তা সবার হোক!
তৃধার চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইলো,অভিযোগ করতে ইচ্ছে হলো,কেনো তার জীবনটা নিয়ে খেললো তার বাবা?সব কিছু থেকে বঞ্চিত করলো,শেষে কিনা জীবন সঙ্গীর বেলায় ও এমন একজন কে দিলো যে মানুষ টা তার ছায়ায় মারা”তে চায় না?মানুষ যতোই কঠোর হোক শক্ত প্রকৃতির হোক সে ও চায় তার একান্ত একটা মানুষ হোক,যাকে সে মন খুলে সব বলতে পারবে।কেনো এই অধিকার টুকুও তার থেকে ছিনিয়ে নিলো তার বাবা?এতোটা রাগ কেনো তৃধার প্রতি আজাদ তালুকদারদের!
তৃধার দুঃখ ভুলানোর ঔষধ! তৃধা ঠোঁট কাম’ড়ে ধরে হাসলো বলে উঠলো–,, এই নিষ্ঠু”রতম পৃথিবী চায় না আমি ভালো হই,স্যরি আমার প্রিয় বন্ধুরা আমি আমার ওয়া”দা ভঙ্গ করছি!
তৃধা নিজের লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিলো বাতাসের সাথে সাথে তা দোল খাচ্ছে,বা’রের লাল নীল বাতির সমারোহে যেনো তৃধা মুগ্ধ হলো,চেয়ারে বসেই বললো—,,ওয়েটার একটা ভালো দেখে নামি-দামি ব্রেন্ডের হুই”স্কির বোতল দেন তো!
ওয়েদার হেসে বললো–,,নতুন নাকি ম্যাম?
তৃধা হেসে বললো–,, এখানে নতুন হতে পারি,তবে খাওয়ার দিক দিয়ে বেশ পুরনো!
ওয়েটার হাসলো তৃধা কে দেখে সে ভাবলো বড়জোর বয়স ষোলো সতেরো হবে,মেয়েটার নাকি বেশ অভিজ্ঞতা, বাচ্চা গুলো দিন দিন ধ্বং”স হয়ে যাচ্ছে!
তৃধার হাতে জ্বল”ন্ত সিগারেট সে সব গুলো থেকে বেশি হলে একটা করে টা”ন মার’ছে।পরবর্তীতে পুরো সিগা’রেট হাতের সাথে পিষে ফেলছে।
টানা অর্ধেক বোতল ম”দ্য পান করে তৃধা উঠে দাঁড়ালো,এতো অল্পতে ওর জীবনেও নে”শা হয় না।প্রায় সাত মাস পর আবার খেয়েছে ভেবেই ক্রু”র হাসলো তৃধা।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো–,, এখনো অনেকটা পথ বাকি!
রাস্তায় গিয়ে দাড়ালো তৃধা, মনে হচ্ছে মাথাটা ভার হয়ে গেছে একটু ঘুমাতে পারলে ভালো হতো। এলোমেলো চোখে সামনে তাকাতেই দেখলো আদাভান দাড়িয়ে, তৃধা বললো চোখে বেশি দেখি আমি।
কিন্তু না আদাভান সত্যি এসেছে,রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে,তৃধার সামনাসামনি আসতেই তৃধা তার দিকে নিষ্পলক তাকালো।
আদাভান ঠা”স করে একটা চ”ড় বসিয়ে দিলো তৃধার গালে!
নাদিম পেছনে দাড়িয়ে আছে,চেয়েও কিছুই বলতে পারছে না।নাদিমের ফোন বে’জে উঠলো তখনই নাদিম রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে আদিব ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,,তৃধা কে পেয়েছিস?কোথায় তুই?
নাদিম অবস্থান জানাতেই আদিব কল কে”টে দিলো।
আদাভান তৃধার দু বাহু চেপে ধরে বললো–,,পাগ”ল করে ছাড়বে তুমি আমাকে?এই মেয়ে এতো রাগ কেনো তোমার?না বলে কয়ে উধাও হয়ে গেছো, তুমি জানো তোমার জন্য একজন কতোটা চিন্তায় ছিলো?এতোটা বেপরোয়া কেনো তুমি!আনসার মি?
আদাভানের ধ”মকে কেঁপে উঠলো তৃধা, নাদিম বলে উঠলো–,,স্যার,প্লিজ ওকে কিছু বলবেন না!
আদাভানের রাগ আরো বাড়লো–,,তোমাদের মতো বন্ধু থাকার চাইতে না থাকা আরো ভালো।বন্ধু যা খুশি তাই করে তোমরা তাকে বাঁধা দেওয়ার বদলে আরো উৎসাহ দেও।দিন দিন বেয়া’দব হয়ে যাচ্ছে সে দিকে খেয়াল রাখতে পারো না?সব গুলো বেয়া”দব হয়েছো।
তৃধার কন্ঠস্বর ভারী হয়ে এসেছে সে টেনে টেনে বললো–,,তো?
আদাভান তাকালো তৃধার দিকে চোখ মুখের বেহাল অবস্থা, আদাভানের নাকে এসে থামলো সেই উট”কো গন্ধটা,আদাভান রাগে দাঁত চেপে বললো–,, তুমি ড্রিং”ক করে এসেছো?এতোটা নিচে নেমে গেছো তুমি?
নাদিম বলে উঠলো –,,স্যার প্লিজ এখন ওর সাথে কথা বলবেন না,আমি আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি!
আদাভান বলে উঠলো–,,বুঝানোর মতো কিছু নেই,তৃধা যে কেমন তা আমার বুঝা হয়ে গেছে!
তৃধা হেসে ফেললো,নাদিম রাগী কন্ঠে বললো–,,তৃধা আয় এদিকে বাসায় যেতে হবে!
আদাভান বলে উঠলো–,,এরকম মাতা”ল, অস’ভ্য মেয়েকে আমি আমার সাথে নিতে পারবো না!
নাদিমের তে’জ ভরা কন্ঠ–,,আপনার বাড়ি ছাড়াও ওর থাকার জায়গা আছে, আপনি সম্মানিত মানুষ আপনি আপনার মতো থাকুন,আমার বন্ধু আমার বোন কে আমরা সামলে নিবো,আপনার কষ্ট করতে হবে না!যে মানুষ টাকে আপনি চিনেন না তার সম্পর্কে উল্টো পাল্টা বলার রাইট আপনার নেই,পার্সোনালি বলছি স্যার,বড় আব্বু আর তার পছন্দ করা পাত্র দুইটাই আমার অপছন্দ! তৃধার আপনার থেকেও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে যে অন্তত আগে তৃধা কে বুঝার চেষ্টা করতো তার পর তাকে দোষারোপ করতো!আপনি ঠিকই বলেছেন,আমরা বন্ধু নামে কল”ঙ্ক, আমাদের আগেই উচিত ছিলো ওর বিয়ে আপনার সাথে হতে না দেওয়া, আমরা পারিনি আমাদের বন্ধুর জীবনের ঘটা সব চেয়ে বড় ক্ষ’তি টা আটকাতে!
আদাভান বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে,পেছন থেকে আদিব ডেকে বললো–,,তৃধু সোনা!
তৃধা ঝড়ের বেগে ছুটে গিয়ে আদিব কে জড়িয়ে ধরে বললো–,, ভাইয়া!জানো ওই বা”জে লোকটা আমার মাকে আজ কতো কষ্ট দিয়েছে,আই হেইট হিম!
আদাভানের বুকে চিনচিনে ব্যাথার সৃষ্টি হলো,নিজের মাঝে কি রহস্য লুকিয়ে রেখেছে এই মেয়ে?
নাদিম বলে উঠলো–,,ভাইয়া চলো এখান থেকে।
আদিব বলে উঠলো–,,যাবো তো, তৃধু পাখি তোকে বারন করেছিলাম না আর কখনো এখানে আসতে?আবার ছুঁয়ে দেখেছিস এসব?ভাইয়ের কথার কোনো দাম নেই তাই তো?
তৃধা বাচ্চাদের মতে করে বললো–,,স্যরি ভাইয়া।
নাদিম জিজ্ঞেস করলো–,, আবার যাবি?
তৃধা হেসে বললো–,,যেতেও পারি।
নাদিম তেড়ে এসে বললো–,,একটা লাগাবো কানের নিচে।বড় মা কে ফোন করে শুনি তুই বেরিয়েছিস কোন দুপুরে।নোভা কে কল করলাম বললো সেখানেও যাসনি,টেন”শনে আমার হাত পা কাঁপছিলো।আমাদের মে’রে শান্তি হবি তুই!
তৃধা বলে উঠলো–,,ভাব খানা এমন আমার জন্য তোরা খুব ভাবিস!
আদিব বললো–,,তৃধা এরকম ছেলেমানুষী করতে যেনো আর না দেখি,যাও এখন স্যারের সাথে বাড়িতে!
নাদিম বলে উঠলো–,,স্যার তৃধার মতো বা”জে চরি’ত্রের মেয়েকে নিজের বাসায় নিবে না ভাইয়া।আমাদের বোন আমরাই নিয়ে যাই বরং।
আদাভান রাগের বসে বলে ফেলেছে,ভার্সিটি গিয়ে তৃধা কে না দেখেই তো চিন্তা হচ্ছিলো ওর,আর এই মেয়ে কিনা!
আদিব বলে উঠলো–,,বোনদের বিয়ে হয়ে গেলে তাদের কে নিজেদের কাছে রাখার মতো অধিকার আমরা হারিয়ে ফেলি নাদিম।বোকার মতো কথা বলবি না, ওখানে এখন দাদি আছে, হিতে বিপরীত হতে পারে বিষয়টা।আর তৃধা বড় মা ভীষণ কষ্ট পাবে যদি শোনে তুই আবার এরকম করেছিস!
তৃধা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে, আদাভান এসে বললো–,,আদিব বাড়ি যাও তোমার বোন কে আমি দেখে নিচ্ছি,সব ভুত মাথা থেকে নামিয়েই ছাড়”বো একেবারে।
তৃধা আদিবের দিকে তাকালো করুন দৃষ্টিতে, আদিব তৃধার মাথায় হাত রেখে বললো–,, ভাইয়া কে ভুল বুঝিস না প্লিজ,যা করছে তোর ভালোর জন্যই।
তৃধা গিয়ে আদাভানের গাড়িতে উঠে বসলো।নাদিম রেগে সেখান থেকে চলে গেলো,আদিব বলে উঠলো–,,নাদিম অযথা রাগ দেখাবি না!
আদিব আদাভান কে বিদায় দিয়ে নাদিমের পিছু গেলো।
তৃধা চুপচাপ গাড়ির ভিতর বসে আছে আদাভানে এসে ড্রা”ইভিং সিটে বসলো চোখ বন্ধ করে বললো–,,তৃধা তোমাকে খুঁজে না পেয়ে আমার ভেতরটা কেনো এতো এলোমেলো হয়েছিলো বলতে পারো?তুমি আমার ভীষণ অপ্রিয় হয়েও কেনো এতোটা পুড়া”ও?তোমাকে পছন্দ না আমার তবুও তোমাকে দেখতে আমার মন অবাধ্য হয়ে উঠে,তুমি সারাদিন ঝ’গড়া করে মাথা খারা’প করে ফেলো তাতেও আমার সমস্যা, আবার যদি চুপ করে থাকো তাও সহ্য হয় না,কেনো এমনটা হয়?এই মেয়ে তুমিই বলো তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার দ”ম বন্ধ কেনো লাগে?
আদাভান তাকালো তৃধার দিকে, দেখলো তৃধা ঘুমিয়ে গেছে,আদাভান তৃধার গালে আলতোভাবে ছুঁয়ে দিয়ে বললো–,,স্যরি!
চলবে…..