পরাণ দিয়ে ছুঁই ২ পর্ব-১৬+১৭

0
405

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১৬
#Jhorna_Islam

রাতের আকাশে তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে। চারপাশ থেকে নানা ধরনের পোকা মাকড়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। রাতের নিস্তব্ধতা বুঝিয়ে দিচ্ছে যেনো তারা। মাঝে মাঝে পেঁচার ডাক ও কানে আসছে। কেন যেনো পেঁচার ডাক টা সৌন্দর্যের ভালো লাগছে না। খুব অস্বস্তি লাগছে। শরীর টা আজ ভীষণ ক্লান্ত। এখান থেকে উঠে বাড়ি যেতে ও ইচ্ছে করছে না। এইদিকে মশা যে তাকে রাতের ডিনার বানিয়ে খেয়ে চলেছে সেইদিকে তার খেয়াল নেই।

সৌন্দর্য কে দেখে মনে হবে,,সে এখন দুনিয়ায় সব মায়া মমতা ত্যাগ করে দিয়েছে। এরমধ্যে ফোন টা খুব বিরক্ত করছে তাকে।কে বলেছে এতো সুন্দর একটা মুহূর্তে এমন ভাবে নিজের জানান দিতে? না চাইতেও ফোন টা পকেট থেকে বের করে সৌন্দর্য।

এতো রাতে ❝পরাণ❞ নামটা ফোনের স্ক্রিনে এমন ভাবে জ্বল জ্বল করবে সেটা সৌন্দর্য কল্পনা ও করেনি। ফোন রিসিভ করে সৌন্দর্য চুপ হয়ে থাকে। অপর পাশ থেকে কি বলে মূলত সেটা শোনার জন্য কিন্তু মিনিট দুয়েক শুধুই নিস্তব্ধতা তারপর হিচকি,দীর্ঘ শ্বাসের শব্দ।

কি হয়েছে পরাণ?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,

চুপ করে আছো কেনো? প্লিজ কি হয়েছে বলো।তুমি ঠিক আছো তো?

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

নূর? প্লিজ বলবে কি হয়েছে? আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে এবার।

স-স্যার!

আমি শুনছি নূর বলো তুমি, কি হয়েছে তোমার?

-‘ আ-আমার আব্বু ভালো নেই স্যার।আমি এতোদিন কেনো তার খোঁজ নেই নি। আজ বাড়িতে এসে শুনি রাস্তায় অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। আ-আমি তার সামনে যেতে পারছি না। কোন মুখে যাবো? তার উপর আমি অন্যায় করেছি চরম অন্যায়।সবকিছু আমার খোলাখুলি আলোচনা করা দরকার ছিলো।
এখন আমি কোন মুখে গিয়ে বাবার সামনে দাঁড়াবো? আমি সাহস আর শক্তি পাচ্ছি না। স্যার আপনি একটু সাহায্য করবেন আমাকে? বলে দেন প্লিজ কি করবো আমি। আমার নিজের উপর আমার খুব ঘৃণা হচ্ছে বলেই নূর শব্দ করে কেঁদে উঠে।

সৌন্দর্য চুপচাপ নূরের কথা শুনে। কিছু সময় দুই পাশই নীরব হয়ে যায়।

তুমি আগে শান্ত হও।চোখের পানি মুছে এক গ্লাস পানি পান করো।(সৌন্দর্য)

আ-আমি ঠিক আছি।(নূর)

আমি যা বলছি তা শুনো।(সৌন্দর্য)

নূর সৌন্দর্যের কথা মতো গিয়ে পানি পান করে।নিজেকে শান্ত করে ফোন কানে ধরে বসে।

লিসেন নূর উনি তোমার বাবা।বাবা মেয়ের সম্পর্কের মতো মধুর আর কিছুতে নেই। তুমি সব ভুলে কাছে গিয়ে বসে বাবা বলে ডাক দাও।তোমাকে আর কিছু করতে হবে না শুধু তুমি গিয়ে উনার হাত টা ধরে বাবা বলে ডাকো।তুমি জানো সন্তান যতোই অন্যায় করুক না কেন বাবা মায়ের সাথে বাবা মা সন্তানের মলিন মুখ দেখলে সব ভুলে যায়। তুমি তো কোনো অন্যায় করোনি সব পরিস্থিতির স্বীকার। মান অভিমান মিটিয়ে নাও নূর।এসব মান অভিমান বেশি দিন জমিয়ে রাখতে নেই। যত তারাতাড়ি এসব মিটাবে ততোই ভালো। এসব জমিয়ে রেখে পরে আফসোস করো না।

আ-আমি এখনই বাবার সাথে কথা বলবো।

-‘ এখনতো অনেক রাত নূর। আংকেল হয়তো ঘুমোচ্ছে। তুমি না বললে উনার শরীর খারাপ? তাহলে এখন ডিসটার্ব না করলেই মনে হয় ভালো।

-‘ আমি এখনই যাবো স্যার।আমি জানি আমার বাবা ঘুমায় নি।এখনও জেগে আছে।

-‘ কিন্তু?

নূরের কথা বলার মাঝখানেই রুমের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা পরে।নূর ঘাবড়ে গিয়ে দরজার দিকে তাকায়। এরমধ্যে নূরের মায়ের কন্ঠ কানে আসে নূরকে ডাকছে।

নূর এই নূর দেখ তোর বাবা কেমন করছে। নূর তূর কোথায় তোরা? তারাতাড়ি আয় দেখ কেমন করছে তোর বাবা।

নূরের মায়ের কথা শুনে নূরের কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে। হাত থেকে ফোন মেঝেতে পরে কয়েক খন্ড হয়ে গেছে। নূর দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

অপর পাশ থেকে সৌন্দর্য সবই শুনতে পায়। সে ও দেরি করে না এক মুহূর্ত তারাতাড়ি গাড়ি নিয়ে নূরদের বাড়ির দিকে ছোটে।

নূরের বাবা মাথা ধরে ছটফট করে চলেছে।কিছু বলতে পারছে না শুধু গুঙিয়ে যাচ্ছে। হাত পা কেমন ঠান্ডা। নূর তারাতাড়ি গিয়ে বাবার পাশে বসে জানতে চায় কি হয়েছে কোথায় কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। নূরের মা কাঁদছে আর হাত পা মালিশ করছে কিছুই হচ্ছে না। তূর কি করবে বুঝতে পারছে না সে যেনো হ্যাং হয়ে গেছে। নূর তারাতাড়ি পানি দিতে বলে।তূর দৌড়ে পানি এনে দেয়। নূর বাবা কে খাওয়াতে চায় কিন্তু হাত কাঁপুনিতে মুখে পানি ও তুলে দিতে পারছে না।

নূরের মায়ের আহাজারি বেড়েই চলেছে।
-‘ নূর তোর বাবা এমন করছে কেন মা? কিছু কর না নূর।

বিপদের সময় কারো মাথাই ঠিক থাকে না। এতো রাতে তিনজন মেয়ে মানুষ একা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে বেশি দেরি করা ঠিক হবে না নূর বুঝতে পেরে ফোন খুঁজতে থাকে। কিন্তু হায় ফোন কোথায় ফোন খুঁজে পাচ্ছে না। তূর এনে ফোন দেয় তূরের টা। নূর কাউকে ফোন দিতে থাকে কিন্তু ফোন তুলে না। এরমধ্যে কলিং বেল বেজে উঠে। নূর তূরকে বলে যেনো গিয়ে দেখে কে এসেছে। তূর দরজা খুলে দেখে সৌন্দর্য। তূর কিছু বলবে তার আগেই সৌন্দর্য দৌড়ে ভিতরে ঢুকে। নূরের বাবা কে একবার দেখে নিয়ে কাঁধে তুলে নেয়। নূর তোমরা দরজায় তালা মেরে তারাতাড়ি আসো ফাস্ট লেট করবা না একদম। নূর মাথা নেড়ে তূর আর মা কে নিয়ে তারাতাড়ি সৌন্দর্যের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। সৌন্দর্য যতো তারাতাড়ি সম্ভব ড্রাইভ করতে থাকে। মিনিট পনেরোর মাঝে এসে হাসপাতালে উপস্থিত হয়। সৌন্দর্যের চেনা জানা আছে এখানে তাই আগেই ফোন করে বলে রেখেছিলো। ওরা আসার সাথে সাথে নূরের বাবা কে নিয়ে পরীক্ষা করানো শুরু করে।

সৌন্দর্য সব ফরমালিটি পূরণ করছে নূর তার মাকে আর তূর কে নিয়ে বসে আছে। নূর যেনো পুরো রোবট হয়ে গেছে। একটা শব্দ ও বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে।

রাত পেরিয়ে সকাল হচ্ছে। অন্ধকার কেটে আলোকিত হচ্ছে ভূবণ। কিন্তু নূরের ভূবণ যেনো আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। একগা’দা টেস্ট করাচ্ছে তার বাবার। এখন ঘুমোচ্ছে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে ডাক্তার। সৌন্দর্য হাসপাতালেই আছে নূরের সাথে। নূরের মা কে আর বোন কে জোর করে বাড়ি পাঠিয়েছে সৌন্দর্য।

সৌন্দর্য দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে সে নূর কে দেখে চলেছে। সেই যে বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে আছে একবার একটু নড়াচড়া ও করে নি।এরমধ্যে সৌন্দর্যের কাঁধে কেউ হাত রাখে।সৌন্দর্য ব্রু কোচকে তাকিয়ে দেখে তার বড় আব্বু। দুইজন চোখের ইশারায় কিছু বলে। তারপর সৌন্দর্য ঐখান থেকে সরে পরে।

‘- নূর মা।

-‘ নূর মাথা তুলে তাকায়। মি. রূপম ওয়াহিদ কে দেখে ও কোনো পতিক্রিয়া দেখায় না।

তুমি কি জানো তোমার বাবা আর আমি খুব ভালো বন্ধু। এতোটা ভালো যে দুইজন এক প্লেটে খাবার খেতাম। একই রকম ড্রেস পরে ঘুরে বেড়াতাম। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিলো।তোমরা আমাদের সম্পর্কে জানতে ও পারো নি।এর পিছনে ও বিভিন্ন কারণ আছে। কিন্তু সবচেয়ে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তোমাদের বিয়ে নিয়ে।

তোমার বাবা কিন্তু আজ অসুস্থ না।

এরকম কথা শুনে নূর মি.রুপম ওয়াহিদের দিকে তাকায়।

-‘ হ্যা আমি যা বলছি তা সত্যি। তোমার বাবা বেশ কিছু মাস যাবত অসুস্থ। এতোদিন তোমাদের কাউকে বুঝতে দেয় নি। নিজের মধ্যে চেপে রেখেছে। আমাকেও বলতে দেয় নি। আমি যখন জোর করতাম বলতে নয়তো আমি বলি কিন্তু দিতো না। ওয়াদা করিয়ে রেখেছিলো।এখন প্রশ্ন এতোদিন ওয়াদার জন্য বলিনি তাহলে এখন কেনো বলছি। আমি তোমার বাবা কে বলতাম এসব জিনিস তো লুকিয়ে রাখা যায় না একদিন না একদিন ঠিক জানতে পারবে।তখন তোমার বাবা বলতো যখন জানতে পারবে তখন বলিস কিন্তু এখন বলিস না। ওর সব কথা মেনে নিয়েছি শুধু এজন্য যে সে নিয়মিত ঔষধ খাবে নিজের যত্ন নিবে।কিন্তু দেখো কি করলো।

বিয়ে নিয়ে অনেক প্রশ্ন না তোমার? এই অসুস্থতার কথা জানতে পেরেই তোমার বাবা পাগলের মতো হয়ে গেছে। সারাদিন শুধু বলতো আমার মেয়ে দুইটার কি হবে? কে দেখবে ওদের? আমার নূর তো বাস্তব জীবন থেকে অনেক পিছিয়ে কি হবে মেয়েটার? একা কি করে সব সামলাবে? সবচেয়ে বেশি টেনশন করতো তোমাকে নিয়ে। তোমার পাশে একজন পার্ফেক্ট জীবন সঙ্গী চাইতো। তখন আমি আমার একমাত্র ভাতিজা সৌন্দর্যের কথা বলি তোমার বাবার কাছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানো? আমার এতো ভালো বন্ধু হওয়া সত্তেও তোমার বাবা কে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি সৌন্দর্যের পিছনে গোয়েন্দা গিরি করতে। ঠিক এক সপ্তাহ পর তোমার বাবা এসে বলে,,,এই ছেলেই তার মেয়ের জামাই হবে। একজন শান্ত হলে আরেক জনকে উত্তাল ঢেউয়ের মতো হতে হয়। হ্যা মানছি আমরা ডিজিটাল যুগে এসেও বিয়ে নামক বন্ধন কে এমন ভাবে কারো উপর অনুমতি ছাড়া চাপিয়ে দিতে পারি না। কিন্তু এটাতো জানো সব বাবা মা ই চায় তার সন্তান বেস্টটা পাক।ভালো থাকুক। তোমার বাবার চাওয়ায় ও কোনো ভুল নেই। যখন নিজের সন্তান হবে তখন বুঝতে পারবে।

সৌন্দর্য জীবন সঙ্গী হিসেবে খারাপ না মা। জীবন কে একবার সুযোগ দিয়ে দেখো।আর তোমার মনে হতে পারে একটা বিবাহিত ছেলে,,,, মি. ওয়াহিদ আর কিছু বলার আগেই সৌন্দর্য এসে ওখানে উপস্থিত হয়। কিসব কাগজপত্র নিয়ে কথা আছে। মি. রুপম ওয়াহিদ নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়। নূর একই ভাবে বসে থাকে।

#চলবে,,,,

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১৭
#Jhorna_Islam

এগুলো সব ফিনিশ করো ফাস্ট বলেই নূরের পাশে এক বস্তা খাবার রাখে সৌন্দর্য। অবশ্য নূরের খাবার দেখে তাই মনে হচ্ছে। নূর খাবারের দিকে তো সৌন্দর্যের দিকে একবার তাকাচ্ছে।

আমার দিকে তাকাতে বলিনি ম্যাডাম খাবার খেতে বলেছি।আমাকে দেখার অনেক সময় পাবে এমনকি সারাজীবন আমাকে দেখে দেখে বোর ও হতে হবে। সো এখন যেটা করলে কাজে দিবে সেটা করো।খাবার গুলো ঠান্ডা হওয়ার আগেই খেয়ে নাও।

–” আ- আমি খাবো না খিদে নেই আমার।

–” সৌন্দর্য ব্রু কোচকে নূরের দিকে তাকিয়ে বলে,,, তুমি কি বললে? আবার একবার বলবে আমি আসলে শুনতে পাই নি।

–” আ-আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না স্যার আমি খাবো না।

তুমি কি চাও তোমাকে এখান থেকে চলে যেতে হোক,? নিশ্চয়ই চাও না তাই না? যদি না চাও তাহলে ফাতিহার বলা গুড গার্লের মতো খেয়ে নাও।

নূরের জোরাজোরি করতে বা কথা বলতে একটুও ইচ্ছে করছে না। সে ভিতর থেকে ভেঙে গুড়ে গেছে। না চাওয়া সত্তেও খাবার হাতে নেয় খাওয়ার জন্য।

নূর খাবার মুখে নিতে নিতে সৌন্দর্যের দিকে তাকায় সে এখন ফোন নিয়ে বিজি। শুকনো ঢুক গিলে আমতা আমতা করে বলে,, আ- আপনি কিছু খাবেন না স্যার? অনেক বেলা তো হয়ে গেছে।

আমি কফি খেয়েছি আপাতত কিছু খাবো না। খিদে লাগলে পরে খেয়ে নিবো তোমাকে আমার খাওয়া নিয়ে ভাবতে হবে না।

এ-এখানে তো অনেক খাবার আছে। আপনি এখান থেকে নিয়ে খান।

সৌন্দর্য ফোন পকেটে ঢুকিয়ে নূরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর কিছু না বলে নূরের হাত থেকে আধ খাওয়া পাউরুটি টা নিয়ে কামড় বসায়।

আরে স্যার এটাতো আমার এঁটো। ভালো টা নিয়ে খান।

এতকিছু তোমাকে ভাবতে কে বলেছে? খেতে বলেছো খেয়েছি। এবার কথা কম বলে খাওয়া শেষ করো দেন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নূর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা শুনে তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করে।

ডাক্তারের ক্যাবিনে বর্তমানে নূর আর সৌন্দর্য বসে আছে। নূর ভয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার।হাত কচলাতে কচলাতে মনে হচ্ছে চা’মড়া উঠিয়ে ফেলবে হাতের।ডাক্তার রিপোর্টে চোখ বুলাচ্ছে।

পেশেন্টের কি হোন আপনারা? ডাক্তার জিজ্ঞেস করে।

পেশেন্ট আমার,,,,, কিছু বলতে গিয়ে সৌন্দর্য নূরের দিকে তাকায়, নূরের দিকে তাকিয়েই বলে আমার শ্বশুর আই মিন বাবা হয়।

-‘ ওহ আচ্ছা। (ডাক্তার)

-‘ জ্বি। (সৌন্দর্য)

দেখুন উনার কন্ডিশন যতটুকু মনে হচ্ছে ভালো না।
ডাক্তারের কথা শোনার সাথে সাথে নূর সৌন্দর্যের হাত খামচে ধরে ভীত দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে তাকায়।

সব খুলে বলুন ডাক্তার সৌন্দর্য সোজাসাপ্টা বলে।

ডাক্তার নড়েচড়ে বসে গলা খেঁকাড়ি দিয়ে বলতে শুরু করে,, দেখুন পেশেন্টের সব রিপোর্ট দেখে যা বোঝা যাচ্ছে উনার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। আর এটা সম্পর্কে আপনাদের নিশ্চয় কম বেশি ধারণা আছে। তবুও আমি খুলে বলছি সব।

ব্রেইন টিউমার (brain tumor) বা ইনট্রাক্রানিয়াল নিওপ্লাজম এমন একটি অবস্থা যখন মানুষের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হয়।
অপারেশন করতে হবে,,, কিন্তু চান্স খুব কম। খোলাখুলি বললেই ভালো আসলে,,,

কত পার্সেন্ট ডক্টর? সৌন্দর্য জানতে চায়।

ডাক্তার নিজের চশমা ঠিক করতে করতে বলে,, ৯৫% নেগেটিভ আর ৫% পজেটিভ। ডাক্তারের কথা শুনে নূর শব্দ করে কেঁদে উঠে। সৌন্দর্য নূরের দিকে তাকিয়ে ডাক্তারকে বলে,, ডক্টর আমরা এ বিষয়ে পরে কথা বলি?

হ্যা আপনাদের ইচ্ছে।

সৌন্দর্য পরে নিজে আলাদা করে ডাক্তারের সাথে কথা বলে। ডাক্তার জানায় উনার শরীরের কন্ডিশন ততোটা ভালো না কিছুটা উন্নত হলে করাতে হবে। আর যে ডাক্তার অপারেশন করবে উনি বর্তমানে দেশের বাইরে আছে। উনি সপ্তাহখানেক পরে আসবে।সবকিছু উনি আবার পর্যবেক্ষন করে উনি ডিসিশন জানাবে।

আপাতত দুই দিন নূরের বাবা কে হাসপাতাল রেখে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।এই দুই দিন সৌন্দর্য ও হাসপাতালেই ছিলো। নূরের বাবা এখন কিছু টা ভালো আছে তবে ততোটা ও নয়। সৌন্দর্য নিজে ওদের বাড়ি পৌঁছে সবকিছু বুঝিয়ে তারপর বাড়িতে যায়। এই দুই দিন না ভালো মতো ঘুম হয়েছে আর না খাওয়া দাওয়া। সৌন্দর্য নিজেও কেমন অসুস্থ বোধ করছে।তাই ভার্সিটি থেকে এক দিনের জন্য ছুটি নিয়েছে। সিধান্ত নিয়েছে এই একদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিবে।কিন্তু নিজে ঘুম আর বিশ্রাম করার ফাঁকে ও একটু পর পর নূর কে কল দিয়ে তার বাবার খোঁজ খবর নিতে ভুলছে না।কিছু লাগবে কি না লাগলে যেনো সাথে সাথে কল করে। লজ্জা নিয়ে যেনো বসে না থাকে বা সৌন্দর্য কিছু মনে করবে কি না এই ধারণা নিয়ে যেনো বসে না থাকে। যখনই দরকার পরবে সেটা রাত দুটো হলেও যেনো তাকে ফোন করে জানানো হয় নয়তো পরে এর জন্য সৌন্দর্য দেখে নিবে বলে হু;মকি দেয়।

সৌন্দর্যের এরূপ কথায় নূর অবাক লোকটা তাদের ভালো করতে চাইছে তাও আবার হু;মকি দিয়ে।

নূর তার বাবার কাছ থেকে নড়ছেই না
।সব নিজের হাতে করছে। বাবার সাথে কতো কথা বলছে। এতোদিনের জমানো সব কথা যেনো ঢেলে দিচ্ছে। নূরের বাবা মেয়ের দিকে তাকিয়ে শুধু তার করা পাগলামি গুলো দেখছে।ভিতর থেকে শক্ত মানুষ টা ভেঙে গেছে। খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে করে কিন্তু মেয়ে আর বউয়ের সামনে একবারে কাঁদা যাবে না নয়তো ওরা ভেঙে পরবে। মেয়েদের মন ভরে দেখে নিচ্ছে। কেন যেনো মন বলছে আর দেখতে পারবে না। মেয়েদের সাথে আর হাসি খুশি মুহূর্ত ও উপভোগ করতে পারবে না।

***********
নূর রাতের খাবার শেষ করে অনেকটা সময় বাবার সাথে গল্প করে কাটিয়েছে।অবশ্য নূর একা না সাথে তূর আর তার মা ও ছিলো। রাত প্রায় এগারোটা বাজে। নূরের বাবা কে ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। ঔষধের প্রভাবে ঝিমাচ্ছে দেখে গল্পের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেয়। বাবা কে সুন্দর করে শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দুই বোনই নিজেদের রুমে এসে পরে। নূর বিছানায় শুয়ে ছটফট করে কিন্তু কেন জানি চোখের পাতায় ঘুম ধরা দেয় না। উঠে বসে বই নেয় পড়ার জন্য কিন্তু এতেও মনোযোগ বসে না। শেষে ফোন হাতে নেয়। ফোন অন করতেই দেখতে পায় সৌন্দর্যের মেসেজ। ” ফোন হাতে নিলে মেসেজ দিও কথা আছে। ”

নূর হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে সৌন্দর্য কে মেসেজ দেয়,,জ্বি স্যার বলুন কি বলবেন।
মেসেজ দিয়ে নূর ইসরাতের সাথে কথা বলতে যায়।
মিনিট দুয়েক পরই মেসেজ আসে,,,

কাল সকাল এগারোটার দিকে তৈরি হয়ে থেকো এক জায়গায় যাবো।(সৌন্দর্য)

-” কোথায় যাবো স্যার?

-” গেলেই তো দেখতে পাবে। তুমি তৈরি হয়ে থেকো আমি তোমাকে পিক করবো।

-” কিন্তু?

-” কোনো কিন্তু না।বেশি সময় লাগবে না। আর দরকার আছে বলেই তো বলছি।

নূর কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে যায়। আচ্ছা জানিয়ে ফোন রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

**********
পরের দিন যথাসময়ে নূর তৈরি হয়ে থাকলেও বাইরে না দাঁড়িয়ে বাড়িতেই থাকে। একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন যেনো আনইজি ফিল হচ্ছিল।

সৌন্দর্য নূরদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে দাঁড়ায়। মেয়ে টা কে টাইম দিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখনও আসার নাম নেই।

ঘড়ি ধরে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে সৌন্দর্য। মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে তার। সময়জ্ঞান হীন মানুষদের একদম পছন্দ না। আর এই মেয়ে টা অপছন্দের কাজগুলো ই করছে। সৌন্দর্য ফোন হাতে নিয়ে নূরের ফোনে কল দেয়।

নূর সৌন্দর্যের ফোন দেখে রিসিভ না করে মা বাবা কে বলে বের হয়।

এইদিকে কল রিসিভ না করায় সৌন্দর্য রাগে ফুঁসতে থাকে। এইদিক ওইদিকে তাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু হুট করে সামনের দিকে তাকিয়ে নিজের রাগ যেনো সব নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়, এক সাদা পরির স্নিগ্ধ মুখ দেখে।

নূর ধীর পায়ে হেঁটে এসে সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়ায়। নিচের দিকে তাকিয়েই বলে,, আসলে আমি আগেই তৈরি হয়ে ছিলাম। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার আনইজি লাগছিলো তাই আসিনি বাড়িতেই ছিলাম। আপনি কি অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছেন স্যার?

সৌন্দর্য এখনও নূরের দিকেই তাকিয়ে আছে। নূরের কথা গুলো শুনেছে কি না বোঝা গেলো না। নূর সৌন্দর্যের সারা শব্দ না পেয়ে চোখ তুলে তাকায়। তারপর সৌন্দর্য কে আবার ডাক দেয়,,,, স্যার?

নো রেসপন্স।

এইবার একটু জোরেই ডাক দেয়। সৌন্দর্য নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,হ-হ্যা?

— যাবেন না?

সৌন্দর্য মনে মনে বলে যাবো কি করে? আমিতো আঁটকে গেছি।

হুম চলো বলেই সৌন্দর্য গাড়িতে উঠে বসে। সৌন্দর্যের সাথে নূর ও গিয়ে গাড়িতে উঠে।

সৌন্দর্য নূরকে নিয়ে ফাতিহার স্কুলে যায়।ফাতিহার স্কুলে কিছু কাজ আছে আর তারমধ্যে নূরের মন টা যেনো একটু ভালো হয় তার ই চেষ্টা।

স্কুলে এসে সৌন্দর্য প্রথমেই অফিসে ঢুকে স্যার ম্যাডামদের সাথে কিছু সময় কথা বলে তারপর প্রিন্সিপাল ম্যাম একটা খাতা এগিয়ে দেয় সাইন করার জন্য। সৌন্দর্য সাইন করে নূরের দিকে খাতা এগিয়ে দেয়। তারপর আস্তে করে নূরের কানের কাছে গিয়ে বলে,, আমি ফাতিহার কাছে যাচ্ছি তুমি সাইনটা করে এসো।

নূর বুঝলোনা কি হচ্ছে সৌন্দর্যের কথা মতো সাইন করতে গিয়ে থমকে যায় ফাতিহার বাবার নামের জায়গায় মি. রূপ ওয়াহিদ নাম দেখে।

#চলবে,,,,,?