পরাণ দিয়ে ছুঁই ২ পর্ব-৮+৯

0
299

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৮
#Jhorna_Islam

এক্সাম শেষ হওয়ার পর অবসর সময় কাটছে নূরের। অবশ্য অবসর বললে ভুল হবে বইয়ের ভিতর মুখ গুজেই কাটিয়ে দেয় বেশির ভাগ সময়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে বিকেলের দিকে একটু ছাদে গিয়ে বসে।ছাদ বাগানে সময় কাঁটায়। যদিও বা নূর এই বাগান করেনি করেছে নূরের বোন তূর।তার আবার বাগান করার সখ অনেক।

মাঝে মাঝে ইসরাত এসে দেখা করে যায়। নূর বাবা মার সাথে এখনো ভালো করে কথা বলে না। দশটা জিজ্ঞেস করলে একটা উত্তর দেয়। বিশেষ করে বাবার উপর বেশি অভিমান হয়েছে। বাবা যতক্ষন বাড়িতে থাকে নূর রুম থেকে বেরই হয় না। আজ শুক্রবার বাবার অফিস ছুটির দিন। নূর ঘুম থেকে সেই সকাল ৬ টায় উঠেছে, এখন বাজে ৯:৩০। নূর এখনো রুম থেকে বের হয় নি। এতো সকালে ঘুম থেকে উঠায় প্রচুর খিদে লেগেছে। বাড়িতে শুক্রবার দিন সকলে এক সাথে সকালের নাস্তা করে ৯:৩০ এ। তূর এসে একবার ডাক দিয়ে গেছে খাওয়ার জন্য কিন্তু নূর বলে দিয়েছে তোরা খেয়ে নে। আমার খিদে লাগেনি খিদে লাগলে খেয়ে নেবো।

তূর আরো কয়েকবার জোরাজোরি করে নূরের সাথে না পেরে চলে যায়। নূর একটা উপন্যাসের বই নিয়ে বৃথা মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা চালায়, কিন্তু পেটে খিদে থাকলে কিছুই ভালো লাগে না। নূরের ও এখন পড়তে ইচ্ছে করে না।

এরমধ্যে আবার দরজায় টো’কা পরে। নূর তূরের উপর বেশ বিরক্ত হয়।এই মেয়ে টা কি কিছু বুঝে না নাকি।

উফফফ তূর একদম বিরক্ত করবি না বলে দিচ্ছি। আমার ভালো লাগছে না। খিদে লাগলে খেয়ে নিবো তোকে কয়বার বলতে হবে?

ওপর পাশ থেকে কিছু সময় নীরবতায় কেটে যায় কোনো সারা শব্দ পাওয়া যায় না। নূর ভেবেছে হয়তো চলে গেছে কিন্তু এর মাঝেই কানে এসে লাগে কারো কন্ঠ স্বর,,,,

নূররর?

নূরের বাবার ডাক শুনে সোজা হয়ে বসে নূর,কিন্তু বাবার দিকে তাকায় না।

নূর বাবা ডাকছি মা শুনতে পাচ্ছিস না?
,,,,,,,,,,,,,,

আম্মা? এই আম্মা!

এরকম ডাকে কি চুপ থাকা যায়? অন্তত বাবার এইরকম ডাক নূর কখনো উপেক্ষা করতে পারবে না আর না কখনো করেছে।

বাবার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকায়। নূরের বাবা এসে নূরের পাশে বসে।মাথায় হাত রেখে বলে,, খাবি চল আম্মা।

নূর অন্য দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের পানি লোকানোর চেষ্টা করে বলে,,তোমরা খেয়ে উঠো আমার খিদে নেই।

বাবার সাথে মিথ্যা কথা বলা শিখে গেছিস আম্মা? সেই সকালে ঘুম থেকে উঠছিস আর বলছিস খিদে নেই? আমি কি জানিনা সকালে ঘুম থেকে উঠলে যে তোর খিদে লাগে?

নূর চুপ করে রয়।কোনো উত্তর দেয় না।

নূরের বাবা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়।মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া ঘুম কিছুই করছেন না যে মেয়ে তা খুব ভালো করেই জানে। নূরের বাবা নূরের মাথায় হাত রেখে বলে বাবার উপর খুব অভিমান হয়েছে তাই না আম্মা?

আমার কিছু ভালো লাগছে না বাবা প্লিজ।

বাবার উপর সব সময়ের মতো একটু ভরসা রাখ না আম্মা।

ভরসার ফল তুমি আমাকে দিয়েছো বাবা। আমি এখনও তোমাকে ভরসা করি,বিশ্বাস করি আর সব সময় করবো। কিন্তু মনের ভিতর যে দাগ সৃষ্টি হয়েছে সেটা কিছুতেই মুছতে পারছি না আমি। আমার মনে হচ্ছে আমার সব শেষ সব। আমার লাইফটা ধ্বংস হয়ে গেছে। হুট করে একটা লোকের সাথে কি করে কি বাবা? আমার ইচ্ছে অনিচ্ছার কি কিছু দাম আছে? সারাজীবন তুমি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে এসেছো।যখন যা চেয়েছি সব পেয়েছি তুমি কোনো অভাব রাখোনি,সব সময় পাশে ছিলে।কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় ডিসিশন টা তুমি এভাবে দিয়ে দিলে? আমাকে তুমি একটা ব’দরা’গী যে কি না প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে পারলে আমাকে অপমান করে। নিচু করে তার সাথে? আর কেউ কি ছিলো না পৃথিবীতে? সবচেয়ে বড় কথা ফাতিহা? লোকটা আগে থেকেই বি,,,, নূর আর কিছু বলার আগেই তার বাবার ফোনে কল আসে। গুরুত্বপূর্ণ কল হয়তো নূরের বাবা তারাতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে যায়।

নূর বাবার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রয়। রাগে অভিমানে হুঁশ হারিয়ে ফেলেছে নূর। এতো সময় ধরে কি বলেছে কি করেছে নিজেও বুঝতে পারে নি। মাথায় এখন খেলে গেলো এটা ঠিক হয়নি একদম ঠিক হয়নি। যে বাবার সাথে জীবনে কোনোদিন গলা উঁচু করে কথা বলেনি সে বাবা কে আজ কতোগুলো কথা বলেছে। বাবা নিশ্চয় অনেক কষ্ট পেয়েছে। এ আমি কি করলাম? বলেই নূর নিজের মাথার চুল ধরে টেনে শব্দ করে কেঁদে উঠে। অনেক সময় নিয়ে কাঁদতে থাকে, কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে নূর ঘুমিয়ে যায়।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

এক্সামের পর কয়েকদিন অফ ছিলো নূরদের ভার্সিটির ক্লাস। এখন আবার শুরু হয়েছে। বাবার সাথে ঐদিন ঐভাবে কথা বলার পর নূর আরো কেমন জানি নিজের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। বাবার কাছে ঐভাবে কথা বলার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিৎ কিন্তু কোন মুখে চাইবে? অনুশোচনায় সামনে ও যেতে বাঁধছে। দুই দিন ধরে বাবা কে দেখছে না নূর।তূর কে অবশ্য জিজ্ঞেস করেছে এ নিয়ে, তূর বলেছে বাবার শরীর টা তেমন ভালো না আর অফিসে কাজের অনেক প্রেসার যাচ্ছে।

নূর মনে মনে ঠিক করে নেয় আজ ভার্সিটি থেকে এসেই আগে বাবার সাথে কথা বলবে।সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিবে।

নূর আর ইসরাত যথাসময়ে ভার্সিটিতে উপস্থিত হয়। ক্লাস শুরু হওয়ার জন্য সব ছাত্র ছাত্রী বসে আছে। ক্লাসের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে আরো দশ মিনিট চলে গেলেও স্যার আসার কোনো নাম নেই।

ইসরাতের এমনিতেও ভালো লাগছিলো না ক্লাস করতে। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে আর কিছু সময় দেখেই নূর কে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে যাবে। এরমধ্যে পিওন এসে জানায় আজ প্রথম ক্লাস হবে না। অফিসে জরুরি মিটিং চলছে,তবে অন্যান্য ক্লাসগুলো যথা সময়ে হবে।

ইসরাত বেশ খুশি হয়। এই নূর চল বাইরে থেকে হাটাহাটি করে আসি আর কিছু খেয়ে আসি।

নূরের ও খুব খিদে লেগেছে তাই না করেনি,এমনিতেও কিছু খেয়ে আসা হয়নি সকালে। দুই বান্ধবী তাই বেরিয়ে পরলো। ক্যানটিনে গিয়েই ইসরাত ফুচকা অর্ডার দেয়।নূর প্রথমে ভেবেছিলো অন্য কিছু খাবে কিন্তু ইসরাতের ফুচকা খাওয়া দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। নিজেও বেশি করে ঝাল দিয়ে ফুচকা অর্ডার দিয়ে দেয়।

দুই বান্ধবী তৃপ্তি নিয়ে মজা করে তিন প্লেট করে খেয়ে নেয়।ঝালে একেকটার অবস্থা কা’হিল।মুখ আর কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বের হয়। এরমধ্যে ইসরাতের ঝাল কমে গেলেও নূরের মুখ থেকে ঝাল কমছে না।পানি খেতে খেতে শেষ। ২য় ক্লাসের সময় ও হয়ে গেছে। নূরদের ক্লাস ২য় ফ্লোরে, ঐখানে উঠে নূর ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো আর হাতের বোতলের পানি ও শেষ। এইদিকে ক্লাসের সময় ও হয়ে গেছে তাই নূর ইসরাত কে বলল ক্লাসে যেতে নূর ওয়াশরুম থেকে আসছে।অবশ্য ইসরাত সাথে যেতে চেয়েছিলো নূর বারণ করলো। স্যার যা বলে তা নোটস করে রাখতে বলল।

নূর ওয়াশরুমে ঢুকে যায় এইদিকে ক্লাসে স্যার ও ঢুকে পরে।নূর জানতেও পারলো না আজকে তাদের সেকেন্ড ক্লাস টা এতোদিন যেই টিচার করতো আজ উনি করবেন না। মি.সৌন্দর্য ওয়াহিদ করবে।

সৌন্দর্য ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথে সবাই দাঁড়িয়ে যায়,আর কানা ঘোষা করতে থাকে এই স্যার আজ হঠাৎ।

সিট সৌন্দর্য গম্ভীর গলায় বলে। সৌন্দর্যের কথায় সকলেই বসে। কিন্তু স্টুডেন্টদের কথার সাউন্ড সৌন্দর্যের কানে এসে লাগে।

কিপ কোয়াইট!! জোরে বলে সৌন্দর্য। পুরো ক্লাসে এক নজর চোখ বুলিয়ে বলে,,আমি আমার ক্লাসে একটা অপ্রয়োজনীয় সাউন্ড ও শুনতে চাই না। খাতা কলম ছাড়া আর কোনো কিছুর আওয়াজ যেনো আমার কানে এসে না লাগে। অন্যথায় যে কথা বলবে তাকে এসে ক্লাস নিতে হবে।

সৌন্দর্যের কথায় সকলেই চুপসে যায়। এমন সুদর্শন স্যারের এমন কথা কারোই হ’জম হচ্ছে না। সকলের মুখই চুপসে আছে। সৌন্দর্য কে দেখে তাদের এখন প্রবাদ মনে আসছে,, উপর দিয়ে ভালো ভিতর দিয়ে কালো। কোথায় প্রথম দিন ক্লাসে এসেছে সকলের সাথে হাসি মুখে কথা বলবে।পরিচিত হবে নিজের পরিচয় দিবে তা না।

সৌন্দর্য বই বের করে পড়ানো শুরু করে। মার্কার নিয়ে বোর্ডে লিখতে থাকে। সকল স্টুডেন্ট চুপ।

সৌন্দর্য আজ ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছে। সব কথা ইংরেজিতেই বলছে।কয়েকজনের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সৌন্দর্যের ইংরেজি। ইসরাত কিছুতেই ক্লাসে মন দিতে পারছে না। এই নূর এখনও আসছে না কেন। এইদিকে নড়তে ও ভয় করছে সৌন্দর্য স্যার যেই হুমকি দিয়েছে।

নূর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ছোট ছোট কদমে ক্লাসের দিকে এগুতে থাকে। হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। পেট ব্যাথায় নড়তে ও ইচ্ছে করছে না। কোনো মতে ক্লাসের সামনে এসে দাঁড়ায়। ক্লাসে সৌন্দর্য কে দেখে বেশ অবাক হয়। ইতস্ততবোধ করছে খুব।
তবুও কিছু করার নেই ক্লাসে ঢুকতে হবে, আর বসতে হবে নয়তো নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারবে বলে মনে হয় না।

মে-মে আই কা-কামিং স্যার?
সকলের দৃষ্টি এখন নূরের দিকে সীমাবদ্ধ। সৌন্দর্য বোর্ডে মার্কার ঘুরাতে ঘুরাতে না তাকিয়েই আনসার দেয় নো।
নিজের লিখা শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নূরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

অলরেডি ফিফটিন মিনিটস লেইট। আর আসার দরকার নেই। বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকুন আর হাওয়া খান।

স্যা-স্যার আ-আসলে,,,,,,(নূর)

নো মোর এক্সকিউজ। বলে সৌন্দর্য আবার ক্লাসে মন দেয়।

এইদিকে নূর আর সহ্য করতে পারছে না। পেট ব্যাথায় অবস্থা খারাপ। চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি ঝড়ছে। ক্লাস রুমের দেয়াল ঘেঁষে মেঝেতেই পেট ধরে বসে পরে।

নূরের নিশ্বাস কেমন বন্ধ হয়ে আসছে পেট ব্যাথায়। কিছু বলার শক্তি ও হারিয়ে ফেলে। হাত পা ছেড়ে মাথা দেয়ালে হেলিয়ে দেয়।

#চলবে,,,,,,

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam

নূরের পেট ব্যাথার পরিমাণ সময়ের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে। কি বড় ভুল করেছে এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। খালি পেটে মোটেও এতো ঝাল দিয়ে ফুচকা খাওয়া ঠিক হয় নি। এমনিতেই এসব বাইরের খাবার খেলে নূরের কেমন অস্বস্তি হয়।

সৌন্দর্য মন দিয়ে ক্লাস করছে।এইদিকে ইসরাত কিছুতেই ক্লাসে মন বসাতে পারছে না। নূরের জন্য চিন্তা হচ্ছে।
বার বার বাইরের দিকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে নূর কি করছে। মেয়েটার এমনিতেই নাজুক স্বভাব হয়তো সৌন্দর্য স্যারের এমন বিহেভের জন্য মনে মনে বেশ কষ্ট পেয়েছে। কান্না করছে কিনা কে জানে।

সৌন্দর্য বোর্ডে লিখতে লিখতে আড় চোখে বাইরের দিকে তাকায়।কিন্তু কোথাও নূর কে দেখতে পায় না। সকাল থেকেই আজ সৌন্দর্যের মোড ভালো নেই।তার উপর অফিসে একটা বিষয় নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। মেয়েটার সাথে একটুতেই বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছে। জিগ্যেস করা দরকার ছিলো আগে কোথায় গিয়েছিলো এতো সময় কেন লাগলো তা না করে।

এরমধ্যে ইসরাতের বাম পাশে বসা তিন্নি ইসরাতের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,,কিরে কি শুরু করলি? স্যার দেখছিস না কি রকম শাস্তি দিচ্ছে?

আরে তুই চুপ থাক আমি তো নূর কে দেখার চেষ্টা করছি।(ইসরাত)

নূর কে এখন স্যার কিছুতেই ক্লাসে ঢুকতে দিবে না।তুই শুধু শুধু কেন নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনছিস? এখন কি তুই পারবি ইংরেজিতে ক্লাস করতে? চুপচাপ বসে থাক।(তিন্নি)

আমিতো একটু লুকিয়ে তাকাচ্ছি। আর তুই তো সাউন্ড করছিস কথা বলে,তোর জন্য ঠিক স্যার বুঝে ফেলবে তুই চুপ থাক। (ইসরাত)

হেই ইউ থার্ড বেঞ্চের থার্ড পার্সন স্ট্যান্ড আপ।(সৌন্দর্য)

ইসরাত বুঝতেই পারেনি তাকে বলেছে। সে দেখার চেষ্টা করছে কাকে দাঁড়াতে বলছে, ব’লির পা’ঠা কে হয়েছে।

রেড ড্রেস আপনাকেই বলছি।(সৌন্দর্য)

তিন্নি ইসরাত কে খোঁচা দিয়ে বলে,,কি অন্য দিকে তাকাচ্ছিস তুই? আজ কে ক্লাসে তুই ছাড়া কেউ রেড পরেনি। আর থার্ড বেঞ্চের থার্ড পার্সন তুই নিজেই।

ইসরাত শুকনো একটা ঢুক গিলে। মনে মনে তিন্নির গুষ্টি উদ্ধার করতে ভুলে না।

জ্বি – জ্বি স্যার।( ইসরাত)

কাম! এন্ড ক্লাসটা কমপ্লিট করেন। (সৌন্দর্য)

স-স্যার আ-আসলে,,,,(ইসরাত)

আমি আসলে নকলে শুনতে চাই নি মিস। এসে বাকি ক্লাসটুকু আপনি করান।

””””””””””””””””””””

কি হলো? আসুন।

স-সরি স্যার। ইসরাত বলেই মাথা নিচু করে ফেলে।
এসব দেখে ক্লাসের সকলে আরো গুটিয়ে যায়৷ সাবধান হয়ে যায় নয়তো নূর আর ইসরাতের মতো এরকম অবস্থায় পরতে হবে।

গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস। (সৌন্দর্য)

স-রি স্যার। (ইসরাত)

আমি আর আমার কথা রিপিট করবো না। ক্লাসের সময় নষ্ট হচ্ছে। (সৌন্দর্য)

ইসরাত আর কিছু বলেনি।বুঝতে পারছে বলেও কিছু লাভ হবে না। ব’দরা’গী লোক একটা বলে বেরিয়ে যায়। মনে মনে অবশ্য বেশ খুশি হয়েছে বের করে দেওয়ায়। নূর একা একা কিজানি করছে। ঐখানে গিয়ে দুইজন চুপিচুপি ফিসফিস করে গল্প করতে পারবে।

চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবেন।আশা করি গল্পের আসর জমাবেন না গিয়ে। নয়তো কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবো।

সৌন্দর্যের এহেম কথায় ইসরাতের চলন্ত পা থেমে যায়। মনে মনে ভাবছে বান্ধবীর বজ্জাত জামাই টা কি করে মনের সব কথা বুঝতে পারে। নিজের বৌয়ের প্রতি ও একটু মায়া নাই। কি করে এতোগুলা মানুষের সামনে ভিতরে ঢুকতে দিলো না। ধূর বলেই ইসরাত বেরিয়ে যায়।

নূর পেট ধরে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে চোখ বন্ধ করে। ব্যাথার পরিমাণ ভেবেছে ধীরে ধীরে কমে যাবে কিন্তু তা কমার বদলে বেড়েই চলেছে।

ইসরাত ক্লাসের বাইরে এসে নূর কে খুঁজতে গিয়ে এভাবে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে আসে।

এই নূর কি হয়েছে দোস্ত, এমন ভাবে বসে আছিস কেন?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

নূর?

নূর চোখ মেলতেই চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি পরতে থাকে।

কি হয়েছে তোর বল আমায় বলেই ইসরাত অস্থির হয়ে যায় জানার জন্য কি হয়েছে নূরের।

প-পেট,, আমার প-পেট,,,

হুম দোস্ত তোর পেট কি? কি হয়েছে পেটে?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

পেট ব্যাথা?

নূর উপর নিচ মাথা নাড়ায়।

আল্লাহ তুই এই পেট ব্যাথা নিয়ে এখানে বসে আছিস? আগে বলবি না তোর যে পেট ব্যাথা। অবশ্য বলতে দিলো কই তোর জামাই। উঠ দোস্ত বলেই ইসরাত নূর কে ধরে উঠাতে যাবে এমন সময় ঐখানে নাহিদ স্যার এসে উপস্থিত হয়।

কি করছো তোমরা এখানে ক্লাস রেখে? (নাহিদ স্যার)

ইসরাত নূর কে ধরে বলে,,স্যার ও একটু অসুস্থ তাই নিয়ে যাচ্ছি।

কি হয়েছে?

স্যার আসলে পেট ব্যাথা।(ইসরাত)

আচ্ছা আচ্ছা দেখে মনে হচ্ছে সিরিয়াস ওকে নিয়ে চলো। আমি যাচ্ছি তোমাদের সাথে।

ইসরাত নূর কে একটু মাত্র উঠিয়েছে এর মধ্যে নূর তার হাত পায়ের ভ’র নিজের পুরো শরীরই ছেড়ে দেয়। ইসরাত নূরকে ধরে রাখতে না পেরে জোরে চিল্লিয়ে উঠে নূর বলে।

নাহিদ স্যার এসে ধরতে নিবে এর আগেই কেউ একজন নূরকে ধরে পড়ে যাওয়া থেকে আঁটকে নেয়।

ইসরাত খুব ভয় পেয়েছিলো নূরকে এভাবে পরে যেতে দেখে। নাহিদ স্যার এগিয়ে এসেও কয়েক কদম পিছিয়ে তাকিয়ে রয় সৌন্দর্য ও নূরের দিকে। সৌন্দর্য মাত্র ক্লাস শেষ করে বের হতে নিয়েছে। এদের সব কথাই কানে এসেছে। নূর কে নিজের সাথে আরেকটু মিশিয়ে নিয়ে গালে চা’পড় মেরে কয়েকবার ডাক দেয় সৌন্দর্য। কিন্তু নূরের কোনো সারা শব্দ নেই। সৌন্দর্য ইসরাত কে বলে,পানি আনার জন্য। ইসরাত দৌড়ে গিয়ে পানি এনে দেয়। নূরের কোনো সারা শব্দ নেই তাতেও।

সৌন্দর্য কিছু না বলে নূর কে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। কোলে তুলে হাঁটা দেয়। ইসরাত ও সৌন্দর্যের পিছনে পিছনে ছোটে। নাহিদ স্যার পিছন থেকে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সৌন্দর্য খুব দ্রুত নিচে নেমে পার্কিং লটে আসে। নূর কে আস্তে করে গাড়ির সামনে বসিয়ে দেয়। নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে। ইসরাত বুঝতে পারে সৌন্দর্য ওকে রেখেই চলে যাবে তাই তারাতাড়ি গিয়ে গাড়ির পিছনে উঠে বসে।

সৌন্দর্য নূর কে সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট দেয়। গাড়ির ঝাঁকুনিতে নূরের মাথা হেলে পরে যেতে নেয়। সৌন্দর্য এক হাত দিয়ে আগলে ধরে তারপর নূরের মাথাটা নিজের কাঁধের উপর রাখে।

ইসরাত দেখে বলে,,স্যার নূর কে পিছনে দিয়ে দিন না আমি ধরে বসি না হয়।এমনিতে তো আপনার ও সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।

নো ঠিক আছে। খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে সৌন্দর্য নূর কে হসপিটাল নিয়ে আসে। কোলে করেই ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার দেখে তারাতাড়ি বেডে শোয়াতে বলে। সৌন্দর্য নূর কে শুইয়ে দিলে ডাক্তার বলে সবাই কে বের হয়ে যেতে ডাক্তার দেখছে বিষয় টা।

আমি বের হচ্ছি না যা করার আমার সামনে করুন বলেই সৌন্দর্য বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে।

কিন্তু?

কোনো কিন্তু না যা করার তারাতাড়ি করেন।

ডাক্তার বলেও সৌন্দর্য কে ক্যাবিন থেকে সরাতে পারে না। ডাক্তার এবার ইসরাতের দিকে তাকায়। ডাক্তারের সাথে সাথে সৌন্দর্য ও তাকায় ইসরাতের দিকে।

ইসরাত ওদের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যায়।

নূরের বাড়িতে এখনও খবর দেওয়া হয় নি। ইসরাত দোটানায় আছে জানাবে নাকি জানাবে না। এখানকার পরিস্থিতি বুঝে তারপরই জানাবে বলে ঠিক করে নেয়। নয়তো ওরা শুধু শুধু টেনশন করবে।এখানে তো সৌন্দর্য আছেই তাই আর ইসরাত নূরের বাড়িতে ফোন দেয় না।

ডাক্তার সব দেখে নূর কে স্যালাইন দেয়। সৌন্দর্য কে জানায় ঘন্টা দুয়েকের মাঝে জ্ঞান ফিরে আসবে। ফুড পয়জনিং হয়ে গেছে তাই এমন হয়েছে। আর শরীর বেশ দূর্বল। নিজের উপর মনে হয় বেশ প্রেসার দেয়।খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না। অতিরিক্ত রাত জাগে চোখ মুখ দেখেই বোঝা যায়। সৌন্দর্য কে আলাদা ভাবে যত্ন নেওয়ার জন্য বলে কিছু ঔষধ লিখে দেয়।

ঘন্টা দুয়েক পর নূরের জ্ঞান ফিরে আসে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই কারো গরম নিশ্বাস মুখে এসে বারি খায়। নূর চোখ বন্ধ করে আবার ধীরে ধীরে খুলে। চোখ খোলাই যেনো নূরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সৌন্দর্য রাগী দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে ফোসফাস করছে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। হিসহিসিয়ে বলে,,, সবকিছু এই বিয়ের জন্য তাই না? সবকিছু এই বিয়ে কে কেন্দ্র করে।

ডু ইউ ওয়ান্ট ডিভোর্স????

#চলবে,,,?