#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনীতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ২৭
“রাইসা কে বাসায় পৌছে দিয়ে মাহি ফাইজা ও ইরফান কে নিয়ে বাসায় ফিরলো, যদিও ডাক্তার বলেছিলো ইরফানকে ৩ দিন হসপিটালে ভর্তি রাখা দরকার ” যে ডেঞ্জারেস ভাবে ইঞ্জুয়েরেড হয়েছে তা ঠিক হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে, কিন্তু ইরফান ভর্তি থাকতে নারাজ, রোহান, সাব্বির, নিরব, ও ফাহাদ অনেক জোরাজোরি করেও ইরফান কে হসপিটালে রাখতে পারে নি “তাই বাধ্য হয়ে ফাহাদ ইরফান কে বাসায় নিয়ে আসতে রাজি হয়। তাছাড়া এখানো বাসায় তেমন কিছু জানানো হয়নি।
” বাসার সবার কাছে মাহির কিডন্যাপ হওয়ার কথা টা এড়িয়ে গেলো, ইরফান কে দেখে সবাই অবাক সাথে ইরফানের এই অবস্থা দেখে বাসায় সবার কান্নার চোট পড়লো, নাজিফা বেগম কান্নার চোটে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন “তাকে সামলানো দ্বায় হয়ে পড়লো। মাহির শরীল টা এখনো অনেক দুর্বল তাই ফাইজা সকলের চোখের আড়ালে মাহি কে নিয়ে মাহির রুমে চলে যায়, সকলে ইরফানের এই অবস্থার কারণ জানতে চাইলে ইরফান সবাই কে বলে,
” ছোট একটা এক্সিডেন তেমন কিছু না , কিন্তু ইরফান সকালে ইন্ডিয়া গিয়েছিল কিছুদিন পড়ে ফিরবে বলে তাহলে এতো তারাতাড়ি দেশে ফিরলো কিভাবে, আর কেনই বা ফিরেছে বাবা কাকা রা বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করছে একের পর এক ইরফান ফাহাদ কে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই এটা ও ওটা বলে সামলে নিলো।
~”নিজের রুমে গিয়ে ইরফান শুয়ে পড়ে, পুরো শরীর ব্যথায় টনটন করছে! কিন্তু ইরফানের ভঙ্গিমায় কেউ বুঝতে পারবে না যে ইরফানের ব্যথা নামক কিছু আছে কিনা “সবাই এসে ভীড় জমালো ইরফানের রুমে! নাজিফা বেগম তার একমাত্র ছেলের এই অবস্থার ধাক্কা টা সামলাতে পারলো না, ইরফান তাকে ইরফানের পাশে বসায় এর পর তাকে বোঝানোর জন্য নানা কথা বলে কিন্তু সে কান্না করতেই আছে! এমনিতেই নাজিফা বেগমের হার্টের সমস্যা আছে তার উপরে এভাবে কান্না করলে তো প্রবলেম হতে পারে তাই ইরফান এবার গম্ভীর কণ্ঠে মাকে বলে,
–নিজের ভালো তো তুমি কখনোই বুঝো না! তুমি জানো তো মা।কান্না এতো অস্থির হলে তোমার শরীর খারাপ করবে। তবু্ও তুমি তখন থেকে কান্না করেই যাচ্ছো। তুমি যেহেতু কান্না থামাবেই না বলে ডিসিশন নিয়েছো তো কালকেই আমি চলে যাবো বাড়ি ছেড়ে আর আসবো না ।
~নাজিফা বেগম আৎকে উঠে বলে না না বাবা একি বললি তুই! এতো বছর পর তোকে আমরা আবার কাছে পেয়েছি ” তুই চলে গেলে আমি কিভাবে থাকবো সেটা চিন্তা করলি না।
~”তাহলে তুমি কান্না থামাও ! তোমাকে কান্না করতে দেখলে আমার কলিজা ছিড়ে যায় মা তুমি এটা বোঝ না।
–ছেলের এমন কথায় নাজিফা বেগমের মনে আত্তায় প্রশান্তি বয়ে গেলো ” শত কষ্টের মাঝে ও এক চিলতে হাঁসি দিয়ে বললো..,
–ঠিক আছে আর কাদবো না!
–ইরফান একটা সস্থির হাঁসি দিয়ে মায়ের চোখ থেকে পড়া পানি টুকু নিজের হাতের বুরো আঙুল দিয়ে মুছে দিয়ে মাকে জরিয়ে ধরলো। এর পর মাহমুদা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বললো..,
~”কাকি আম্মু মাকে রুমে নিয়ে ওষুধ খাইয়ে শুইয়ে দেও। নাহলে একটু পড়ে আবার মায়ের হার্টপেইন শুরু হবে।
–মাহমুদা বেগম ও রাবেয়া বেগম দুজন মিলে নাজিফা বেগম কে রুমে নিয়ে গেলো।
–সবাই একেক করে চলে গেলো গেলো ইরফানের রুমে শুধু ফাহাদ বসে রইলো।
~”মাহির শরীর এখন কেমন গিয়ে দেখে আয় তো..!
ফাহাদ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইরফানের দিকে ইরফান সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে, ফাহাদ ইরফানের দিকে তাকিয়ে ভাবলো একটা মানুষ আরেকটা মানুষের প্রতি কতোটা ভালোবাসা থাকলে নিজের এই অবস্থায় ও নিজেকে নিয়ে না ভেবে তাকে নিয়ে চিন্তা করতে পারে।
–একটু গলা খাঁকারি দিয়ে ফাহাদ বলে, বনের কাছে ফাইজা আছে। তুমি চিন্তা করো না।
“ফাইজা ছোট মানুষ ভালো মন্দ বেশি কিছু বুঝবে না তুই গিয়ে দেখে আয় !
” আচ্ছা..!
–ফাহাদ বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরফান বালিশে গা এলিয়ে দিলো, চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো হসপিটালের ঘটনা গুলো…….
★ মাহি হতে মুখে পানি দিয়ে এসেছে কেবিনের সিটে বসে পড়লো রাইসা পাশে আছে। ফাইজা ফাহাদ কে মাহির খবর টা দিতে গিয়েছে।
_মাহির মাথা টা এখনো খুব ঘুরছে মাহির পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে আছে। দু হাত দিয়ে মাথা টা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করলো সাথে সাথে মাহির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর কথা গুলো মনে পড়ে গেলো, মাহি কে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল এর পর হাত পা বেধে এক অন্ধকার ঘরে রাখা হয়েছে সেগুলো ঝাপসা হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠলো মাহির। ঘুমের ওষুধের প্রভাব এতো বেশি ছিলো যে মাহির টাল টাল অবস্থা কিন্তু সব হালকা দেখতে পাচ্ছিলো, ইরফানের চেহেরাটা মাহি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলো এর পর আর কিছু মনে নেই।
চোখ খুলে মাহি চারোদিকে তাকালো এতোক্ষণ মাহি বেখেয়ালি থাকলে ও এখন ভালো করে খেয়াল করছে সব! বিচলিত হয়ে রাইসা কে জিজ্ঞেস করলো,
~”তু.. তুই এখানে কিভাবে আসলি রে আর কখন এই বা এলি। আমি তো ওই অন্ধকার ঘরে বন্দী ছিলাম তাহলে আমি।এখানে কিভাবে আসলাম! আর ইরফান ভাই কোথায় আমি যে দেখলাম ওই ঘরে ইরফান ভাই কে দেখেছিলাম “আমি কি সত্যিই তাকে দেখেছিলাম ” নাকি সপ্নে সে কি দেশে ফেরত এসেছে সত্যি..?
“~এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে মাহি, মাহি কে সামলাতে রাইসা শান্ত কন্ঠে বললো, আরে তুই থাম, তখন থেকে বলেই যাচ্ছিস বলার সুযোগ তো দে। তুই নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে ইরফান ভাই দেশে ফিরে আসে। আর..
–পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই ফাইজা এসে বলে, রাইসা আপু ফাহাদ ভাইয়া তো ইরফান ভাইয়ার কেবিনে নেই…! আর ইরফান ভাইয়ার এখনো জ্ঞান ফেরেনি কেনো..?
~” মাহির বুকে মাঝে ছ্যাতঁ করে ওঠে ইরফান ভাইয়ের জ্ঞান ফেরেনি মানে কি হয়েছে তার বলে উত্তেজিত কন্ঠে বললো মাহি।
একটু পরই কান্না ভেজা গলায় মাহি বলতে লাগলো, আ..আমাকে নিয়ে চল ইরফান ভাইয়ের কাছে নিয়ে চল প্লিজ আমি যাবো তার কাছে সে কোথায় আছে আমি দেখবো তাকে দেখবো আমি প্লিজ নিয়ে চল।
রাইসা মাহি কে সামাল দিতে পারছে না ফাইজা মনে মনে নিজেকে হাজারো বকা দিচ্ছে। কোথায় কখন কি বলতে হবে কি বলা যাবে না তা এখনো বুঝতে পারে না সে নিয়ে নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মারছে!
-মাহি কে সামলাতে না পেরে রাইসা মাহি কে ইরফানের কেবিনে নিয়ে চলে “কেবিন রুমে এসে ইরফান কে দেখে মাহি দুকরে কেঁদে উঠে, ইরফানের মাথায় ও হাতে ব্যান্ডেজ গুলো দেখে মাহির বুক ফেটে কান্না আসছে অন্তস্থল জলে পুড়ে ঝলসে যাচ্ছে। ইরফানের কাছে এসে বসে পড়লো মাহি ইরফানের বাম হাত টা ধরলো এই প্রথম মাহি নিজ ইচ্ছায় ইরফানের হাত ধরলো! মাহির বুক কাঁপছে..! অন্য সব অনুভূতি রা এসে বাধা বেধেছে মাহির মনে । সব থেকে বেশি খারাপ লাগছে মাহি ইরফান দেশে ফেরার পর যতবার আঘাত পেয়েছে শুধু মাত্র মাহির জন্য তাই নিজেকে অপরাধী মনে করছে মাহি ।
— ইরফানের শক্ত পক্ত হাত খানা মাহির ছোট্ট নরম দু হাতের মাঝে, মাহির হাত কাঁপছে সাথে ইরফানের হাত টাও মাহির শরীরের কম্পনের সাথে সাথে দুলছে! মাহি কান্না করতে করতে অভিমানী স্বরে বললো,
আপনি খুব বাজে আমায় না বলে চলে গেলেন এখন এসেও কথা বলছেন না, কেনো শুনি কি দোষ করেছি আমি।অভিমান করে থাকার কথা আমার অথচ আপনি চুপ করে আছেন কিন্তু কেনো ইরফান ভাই কেনো।
~” মাহি দু হাত দিয়ে ইরফানের হাত টা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ছোটো বাচ্চাদের মতো হাত টা ছেড়ে দিলেই যেনো হাড়িয়ে যাবে। যাকে হৃদয়ে জায়গা দিয়েছে যাকে প্রথম ভালোলেগেছে সেই মানুষ টা এমন অবস্থায় বেডে শুয়ে আছে মাহির শরীর শিউরে ওঠে, মাহি এবার কেঁদে কেঁদে বলে,
~” উঠুন ইরফান ভাই একবার তাকান দেখেন আপনি কিন্তু যাওয়ার সময় ও আমার সাথে কথা বলেন নি আমি কিন্তু খুব কষ্ট পেয়েছি এখন যদি কথা না বলেন আমি আর কখনো আপনার সাথে কথা বলবো না।
“-একটু কান্না করে আবার বলতে লাগলো মাহি,
সব আমার জন্য হয়েছে আমার জন্যই সব সব আমার জন্য হয়েছে ” আমাকে কেনো ওখান থেকে বাঁচতে গেলেন মরে যেতাম আমি তাও ভালো ছিলো,
–রাইসা এসে মাহি কে ঝাপটে ধরে দাঁড়ায়, মাহির কম্পিত হাতের মধ্যে থাকা ইরফানের হাতের তর্জনী আঙুল টা হালকা নড়ে ওঠে কিন্তু কান্নারত অবস্থায় মাহি সেটা টের পেলো না পেলো না, একটু একটু করে চোখ মেলছে ইরফান চোখ খুলতে তার প্রাণ প্রিয় প্রণয়িনি কে দেখতে পেলো এক দৃষ্টে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মাহির ক্লান্ত মুখশ্রীর দিকে, চেহেরাটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে তবুও যেনো মহুময়ি রুপ তার। কান্না করা অবস্থায় তাকে অদ্ভুত এক সুন্দর লাগছে কিন্তু ইরফান মাহির এই সৌন্দর্য্য টা দেখতে চায় না ইরফান চায় মাহি সব সময় হাঁসি খুশি থাকবে!
“ফাইজা চিৎকার দিয়ে বললো, ইরফান ভাইয়া চোখ মেলেছে! রাইসা মাহি দুজনেই তাকালো ইরফানের মুখের দিকে, মাহির গালে এখনো অশ্রুসিক্ত জল লেগে আছে ইরফানের সহ্য হলো না তা ইরফান চেষ্টা করলো মাহির চোখের পানি টুকু মুছে দেওয়ার কিন্তু পরক্ষণেই ইরফানের বোধগম্য হলো ইরফানের এক হাতে ব্যান্ডেজ মোড়ানো।অন্য হাত টি পুরোপুরি মাহির দখলে,
” মাহি নরম দু হাত দিয়ে আলতো করে ধরে আছে ইরফানের হাত টি, মাহি নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“এখন কেমন লাগছে আপনার খুব খারাপ লাগছে, মাথায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে..? !
__ইরফান মুখে কোনো শব্দ না করে না সূচক মাথা নাড়লো। আবেগি কন্ঠে মাহিকে প্রশ্ন করে, তুই কেমন আছিস, কোথাও খারাপ লাগছে.?? বল আমায়, ওরা কিছু করেছে তোর সাথে মেরেছে.?? ব্যথা দিয়েছে..?
” মাহি কিঞ্চিৎ বাকা চোখে তাকালো এই মানুষ টা নিজের এমন অবস্থা তেও মাহির কথা ভাবছে ভেবে মাহির চিত্ত প্রফুল্ল হয়ে গেলো আসতে করে বললো,
–” না ওরা শুধু আমায় ওই অন্ধকার ঘরে আটকে রেখেছে আর কি যেনো একটা স্প্রে করেছে নাকের সামনে মাথা ঘুরছিলো সব কিছু ঝাপসা দেখছিলাম তখন আপনাকে দেখতে পাই পড়ে আর কিছু মনে করতে পাচ্ছি না। ~”ইরফান এক লম্বা শ্বাস নিলো দেখে মনে হলো অনেক ক্ষন যথাবৎ ইরফানের নিশ্বাস টা হয়তো বন্ধ ছিলো।
–ফাহাদ ও রোহান কেবিন রুমে এসে দেখতে পেলো ইরফানের জ্ঞান ফিরেছে মাহি এখানে আছে মাহির ঘুমের রেস ও কেটে গেছে ।
–মাহি ফাহাদ কে দেখতে পেয়ে দ্রুত ইরফানের হাত ছেড়ে দিয়ে একটু সরে দাঁড়ায়! ইরফান এক পলক মাহির দিকে তাকায়।
–দীর্ঘ অনেক সময় পড় বোন কে সজাগ দেখে ফাহাদ ছূটে এসে বোন কে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বোলায়। উত্তেজিত কন্ঠে ইরফান কে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাইয়া ঠিক আছো তুমি..?
“হুম এখন ঠিক লাগছে চল বাড়ি চল।
~” এখন বাসায় কিভাবে যাবা ডাক্তার তোমার ভর্তি রাখবে,!
“ইরফান ভাড়ী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, বাসায় কি বলেছিস..?
” বাসায় কাউকে এখনো কিছু জানানো হয়নি এখন জানাবো ভেবেছি।
-“কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই.. এখন বাসায় চল।
“~রোহান রাগী স্বরে বললো, তুই বললেই সব হবে ডাক্তার দের তো একটা নিয়ম আছে নাকি তোর কন্ডিশন খুব একটা ভালো না দু -চার দিন ভর্তি থাকা লাগবেই সেখানে নাহয় কমিয়ে টমিয়ে এক -দুদিন বানানো যাবে তবে এখন ভর্তি থাকা লাগবেই।
–আরে ধুর হসপিটালে ভর্তি থাকার থেকে জেলে গিয়ে থাকা অনেক ভালো। জেলে ও এতো রুলস থাকে না হসপিটালে যতটা থাকে। বাসায় নিয়ে যাবি..? নাহয় একাই যেতে পারবো এখনো গায়ে শক্তি আছে।
,– রোহান, ফাহাদ হতাশ চোখে তাকিয়ে রইলো, ভাইয়া দের সামনে কিছু বলা সাহসে কুলালো না মাহির তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। ফাইজা ও রাইসা ও চুপচাপ ওদের কথা শুনছে। সাব্বির নিরব এসে অনেক বোঝালো তবুও কাজ হলো না ইরফানকে হসপিটালে ভর্তি থাকতে রাজি করানো যায় নি! তাই ফাহাদ রাইসা কে বাসায় দিয়ে এসে ওদের কে বাসায় নিয়ে আসে।
★ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে ইরফান নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো এই হাত টা মাহি ধরে ছিলো। হাত টা বুকের বা পাশে নিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,
” কয়েক ঘন্টা আগে যেভাবে এই হাত টা ধরে ছিলি সেভাবে ধরে রাখতে পারবি তো মাহি কিন্তু শর্ত একটাই তখন এর মতো ছেড়ে দিতে পাড়বি না। একবার এই হাত ধরলে সারাজীবনের জন্য ধরতে হবে কখনো কারো ভয়ে ছেড়ে দিতে পাড়বি না। কখনো না।
~”–ফাইজা খাবার নিয়ে এসেছে, কিন্তু মাহি না খেয়ে বসে আছে ইরফানের এই অবস্থার জন্য মাহি নিজেকেই দ্বায়ী করছে , ফাহাদ এসে অনেক বোঝাচ্ছে বোন কে..
“দেখ বোন ভাইয়ার এই অবস্থা বাড়িতে সকলের মন খারাপ ” তোর কিডন্যাপ হওয়ার ঘটনা টা কেউ যানে না সেটা জানলে বাসার পরিবেশ আরো খারাপ হয়ে যেতো। তোর শরীর এখনো দুর্বল ওষুধের প্রভাব পুরোপুরি কমে নি হয়তো ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়েছে সেগুলো খেতে হবে এখন এভাবে মন খারাপ করে বসে থাকিস না প্লিজ লক্ষি বোন আমার।
–মাহির কোনো হেলদোল নেই চুপচাপ বসে আছে, ফাহাদ মাথা টা নিচু করে ধীর কন্ঠে বললো,
“~ওরা আমার সামনে থেকে তোকে নিয়ে গেলো অথচ আমি ভাই হয়ে তোকে আগলে রাখতে পারলাম না রে ব্যার্থ আমি আমাকে খমা করে দিস বোন।
–মাহি চোখ তুলে ফাহাদের দিকে তাকালো ফাহাদের দু হাত ধরে মাহি অস্থির হয়ে বলে, ছি ভাইয়া তুমি এসব কি বলছো ওরা যেভাবে আমার মুখ চেপে চারোদিকে লোক নিয়ে গিয়েছিলো দেখে কেউ হয়তো বুঝতেই পারে নি যে কাউকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! সেখানে তুমি এতো দূর থেকে কিভাবে বুঝবে? আমার জন্য আরো তোমরা কতই না ঝামেলায় পড়েছো।
~” কিন্তু আমি তো তোর ভাই তাহলে কেনো বুঝলাম না আমি বল।
–ভাইয়া বাদ দেও তো আর কখনো এভাবে বলবে না। আর যা হয়েছে তা ভুলে যাও।
~”ঠিক আছে আর বলবো না! কিন্তু..
“ভাবুক স্বরে জিজ্ঞেস করলো মাহি, কিন্তু কি..?
–কিন্তু এখন তোর খাবার টা খেতে হবে।
“-ইচ্ছে করছে না..!
আমি খাইয়ে দেবো..?
“দেবে..?
“! হুম।
–ফাহাদ মাহি কে খাইয়ে দিচ্ছে সাথে ফাইজা কে ও ফাইজা মাহির চিন্তায় চিন্তায় সারাদিন কিচ্ছু খায় নি।
“! এক মাত্র বোনের বায়নার ছোট বেলায় মাহি কে অনেক বেলাই ফাহাদের খাইয়ে দেওয়া লাগতো কয়েক বছর হলো ফাহাদের হাতে খুব একটা খাওয়া হয় না। আজ ফাহাদ নিজের ইচ্ছায় খাইয়ে দিতে চাওয়ায় মাহি মলিন চেহেরাটায় ও সারাদিন পর একটু হাঁসির রেখা দেখা গেলো।
” ~মাহি কে খাইয়ে দিতে দিতে ফাহাদ মেকি স্বরে বললো , তুই ভাগ্যবতী বোন রাইসার মতো বান্ধবী তোর আছে। মেয়েদের বন্ধুত্ব এতোটা প্রখর হয় তা এই প্রথম দেখলাম।
~”রাইসা মাহি কে অনেক ভালোবাসে মাহি ও রাইসা কে ভীষণ ভালো ভালোসে তবে রুমে আসার পড়ে ফাইজার কাছে সব শুনেছে মাহি “ওকে তুলে নিয়া যাওয়ার পর যা যা হয়েছে সব বলেছে ফাইজা রাইসার কথা ও শুনেছে । একটু হাসি দিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বললো মাহি ”
সত্যিই জানু, You are my best friend. You always have been.[তুই আমার সব থেকে ভালো বন্ধু। আছিস থাকবি]
” মাহি কে ওষুধ খাইয়ে ফাহাদ ইরফানের কাছে গেলো! যাওয়া মাত্রই ইরফান খুটিয়ে খুটিয়ে মাহির কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। মাহির শরীর এখন কেমন, কি করছে..?খেয়েছে কিনা. ঘুমিয়েছে কিনা..? সব তথ্য জানা হলে ইরফান শান্ত হয় “নাজিফা বেগম এসে ইরফানকে জোর করে সামান্য একটু খাবার খাওয়াতে পারে ।তারপর ইরফানের ওষুধ গুলো খাইয়ে দেয়। ইরফান মেকি স্বরে মাকে বলে,
” তুমি এই শরীর নিয়ে উপরে কেনো এসেছো মা..?
–আমি না আসলে যে তুই না খেয়ে শুয়ে পড়তি তা আমি জানি বাবা “এখন শরীর টা ভালোই লাগছে।
” অনেক রাত হয়েছে তুমি গিয়ে ঘুমাও!
-না বাবা আমার ঘুম আসবে না বরং আমি তোর কাছে থাকি।
“ফাহাদ বলে, বড় আম্মু তুমি চিন্তা করো না আমি ভাইয়ার সাথে আছি তুমি না ঘুমালে পড়ে তোমার শরীর খারাপ করবে।
–রাবেয়া বেগম এসে নাজিফা বেগম কে নিয়ে গিয়ে রুমে দিয়ে আসে।
–” শান্ত গলায় ইরফান বললো, তুই গিয়ে ঘুমা..!
~”ফাহাদ জেদ নিয়ে বলে, হসপিটালে কথা না শুনে বাসায় এসেছো এখন আর জেদ করবা না ভাইয়া। সব সময় তোমার কথা মেনে চলি কিন্তু এখন এ বিষয়ে একদম কিছু শুনতে চাই না। আমি এখানেই থাকবো আজ তুমি চুপচাপ ঘুমাও তো।
“ইরফান বুঝে গেলো পাগল খেপেছে এখন আর কথা শুনবে না তাই চুপ করে গেলো।
ফাহাদ গিয়ে বেলকুনি তে দাঁড়ালো, বাইরে টুপুরটুপুর বৃষ্টি পড়ছে ঠান্ডা হাওয়া বইছে ফাহাদ রাতের অন্ধকারে ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশের পানে তাকিয়ে আছে , ফোনের রিংটোন বাজলে ফাহাদ প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই চোখ দুটো জলজল করে উঠলো, হৃদয়ে দমকা হাওয়া বয়ে গেলো কল টা রিসিভ করলে ওপর পাশ থেকে সামাল দিলো ফাহাদ সালামের উত্তর দিয়ে বললো
” ঘুমাও নি এখনো..?
রাইসা ভীতু গলায় বললো, না আসলে ঘুম আসছে না, মাহির শরীর টা এখন কেমন খুব জানতে ইচ্ছে করছিল “মাহি ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা তা ভেবে আপনাকে কল দিলাম।
” বোন এখন ভালো আছে।
“~ ও কি কিছু খেয়েছিলো ..?
-” হুম “এখন ঘুমাচ্ছে।
-” ওও আচ্ছা।
“তুমি খেয়েছো..?
হ্যাঁ..! আপনি..?
-” হুম।
-” মা বকেছিলো..?
“মানে..?
-” মানে তোমার মা তোমাকে বকা দিয়েছিলো দেরি হয়েছে যে তাই বল্লাম।
-“ওও না বকা দেয়নি।
“ওহ
~” যাই হোক আজ রাখি তাহলে আল্লাহ হাফেজ।
-“ওকে আল্লাহ হাফেজ।
“কল কাটলে ফাহাদ ফোন টা পকেটে রেখে আবার আকাশের পানে তাকায় অন্ধকার রাতের আধারে রাইসার মুখ খানা বার বার ফাহাদের চোখ
#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে.
#লেখনীতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ২৮
“চৌধুরী বাড়ির আনাচে কানাচে আলো জ্বলছে বিশাল বড় বাড়িটা আলোয় রাঙা ঝলমল করছে ইরফানের কথায় পুরো বাড়ি সাজিয়ে ফেলা হয়েছে! ইরফান চায় সিয়াম আর লিসার বিয়ের চার থেকে পাঁচ দিন আগে থেকে বাড়ি সাজানো হবে বাসার সবাই আনন্দ করবে! ইরফানের কথা মতো ফাহাদ চলে গেছে লিসা কে নিয়ে আসার জন্য!
সিয়াম দেশে ফিরেছে ঈদের পড়ের দিন প্রায় দু দিন হলো মাহি ইরফানের শরীর আগের থেকে এখন একটু ভালো তবে মাথায় এখনো ব্যথা হয় হাতের অবস্থা ও খুব একটা ভালো না।
~”সিয়াম দেশে ফেরার পর এই প্রথম চৌধুরী বাড়ি তে আসছে বাসার সবাই কে নিয়ে কারণ বিয়ে টা চৌধুরী বাড়িতেই হবে। ইরফান ফোন করে লিসার বাবা কে রাজি করিয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশে লিসার মামা মামি ছাড়া আর তেমন কেউ নেই তাই লিসার বাবা ও ইরফানের কোথায় রাজি হয়! ইরফানের সাথে লিসার বাবা জামসেদ শেখের ব্যবসার দিক থেকে ও সুসম্পর্ক আছে। লিসার মা নেই আছে শুধু বাবা আর একটা ছোট বোন লুবা পুরো নাম লুবাবা সবাই লুবা বলেই ডাকে।
“~ফাহাদ গিয়ে লিসা কে বাসায় নিয়ে আসে আর লিসার মামা মামি কে দাওয়াত দিয়ে আসে লিসা ও সিয়ামের বিয়ের । আসা মাত্রই মাহি ও ফাইজা ছুটে এসে লিসা কে জরিয়ে ধরে তিন জন এক সাথে শোফার বসে গল্প শুরু করে দেয়। যেহেতু ছেলে, মেয়ে দুজন এর বিয়ে একই বাড়িতে হবে তাই সব ব্যবস্থা তেমন করেই করতে হবে, পুরো বিয়ের দ্বায়িত্ব ইরফান নিজের কাধেই নিয়েছেন, ফরহাদ চৌধুরী ছেলে কে বলেন.,
” তোমার শরীরের কন্ডিশন খুব একটা ভালো না তুমি কি সব টা সামাল দিতে পারবে…?
“ইরফান ঠান্ডা গলায় বলে, হ্যাঁ বাবা পারবো!
” বুঝো কিন্তু চৌধুরী পরিবারে অনেক দিন পড়ে এতো বড় একটা অনুষ্ঠান হবে, সব ঠিক ঠাক হওয়া চাই ! কোনো কিছুর কমতি যাতে না হয়।
“আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন, আমি আর ফাহাদ সব টা সামলে নেবো।
~” ইরফান একেক করে রোহান, নিরব, সাব্বির সবাই কে ফোন করে বলে দেয়, ফাহাদ একা পুরো বিয়ে বাড়ির কাজ সামলাতে পারবে না বিয়ের এ কদিন তোরা এ বাসায় বেশি থাকবি।
— রোহান ব্যাপার টা একটু এরিয়ে যেতে চায়, আপাতত রোহান অহনার বিরক্তির কারণ হতে চায় না অহনা এ বাসায় এসে রোহান কে দেখে অসস্থি বোধ করবে সেটা রোহান চাচ্ছে না। রোহানের ভালোবাসা খাটি হলে একদিন ঠিকই অহনার মন জয় করতে পারবে এটা রোহান এর বিশ্বাস কিন্তু বিয়ে বাড়ি তে অহনার অসস্থি নিয়ে কাটাবে বা ওর মন খারাপ থাকবে সেটা রোহান চায় না।
“-কিন্তু ইরফানের চাপে বাধ্য হয় যাওয়ার জন্য!
” ~ইরফান অসুস্থ হওয়ার পর থেকে নাজিফা বেগম ইরফানের পিছু ছাড়ে না ছেলে কখন কি খাবে, কি খেলে শরীরে রক্ত হবে ওষুধ কোন কোন টাইমে খাবে সব নাজিফা বেগম নিজে তদারকি করছেন। সাথে রাবেয়া বেগম মাহমুদা বেগম ও অনেক খেয়াল রাখছেন! এ কদিনে মাহি ইরফানের সাথে আলাদা করে কথা বলার সুযোগ ও পায় নি, দুজনে দেখা হয় চোখাচোখি হয় কিন্তু কথা হয়ে ওঠে না। ইরফানের আশে পাশে কেউ না কেউ থাকেই।
— ফাহাদ আর রোহান মিলে পুরো এরিয়া দাওয়াত দিয়েছে কিন্তু রাইসা দের বাসায় যেতে ফাহাদের একটু ইতস্তত করে তাই মাহি কে নিয়ে যায় দাওয়াত দিতে। মাহি ফাহাদ কে নিয়ে রাইসা দের বাসার ভেতরে প্রবেশ করেই রাইসা কে দেখতে পেলো,
রাইসা দের বিশাল বড় ড্রয়িং রুম সেখানে এক কর্ণারের শোফায় বসে বাদাম খাচ্ছে আর টিভিতে কার্টুন দেখছে রাইসা, খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে কালো গাউন টায় ফরসা ধপধপে চেহারায় নিদারুন উজ্জ্বলতা দেখা যাচ্ছে, কার্টুন দেখে হাঁসছে রাইসা, ফাহাদ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মনে মনে ভাবছে,
~”সবসময়ের শান্ত ও চুপচাপ থাকা মেয়েটার এই বাচ্চাদের মতো অভ্যাস টা এই মিষ্টি হাঁসির মুহুর্ত টা যে কতোটা সুন্দর তা না দেখলে বলা যাবে না!
–মাহি ফাহাদের মাতাল চেহেরার দিকে এক বার তাকায় এরপর গিয়ে রাইসার কাছাকাছি দাঁড়ায় মাহি কে দেখতে পেয়ে রাইসা ছুটে জড়িয়ে ধরে মাহি ও রাইসা কে শক্ত করে ধরে রাখে ! সেইদিনের ঘটনার পর আজকেই প্রথম দেখা মাহি ও রাইসার তাই দুজনেই আবেগি হয়ে পরে “!
~” রাইসার মা মরিয়ম বেগম এসে মাহি ও ফাহাদের জন্য নানা রকমের নাস্তা এনে টেবিল সাজায়, রাইসার বাবা বাসায় মেহমান আসলে পারলে পুরো বাজার তুলে আনার চেষ্টা করতেন, রাইসার মায়ের সে স্বভাব টা এখনো চলমান বাসায় মেহমান আসলে আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রাখেন না। মাহি ও ফাহাদ কে ছোট বেলা থেকেই চেনেন তিনি। রাইসার মায়ের কাছে মাহি খুব মিষ্টি ও ভদ্র একটি মেয়ে আর ফাহাদ কে নিসন্দেহে ভদ্র ছেলে বলতে পারেন তিনি! তার চোখে কোনো দিন ফাহাদের কোনো বাজে স্বভাব বা অভ্যাস কোনো টাই পড়েনি। তবে মাহি মাঝে মাঝে রাইসা দের বাসায় আসলে ও ফাহাদ খুব কমই বাসার ভেতরে ঢুকে, সব সময় বাইরে থেকেই হয় রাইসা কে দিতে আসে নাহয় মাহি কে নিতে আসে।
~”রাইসার মা ফাহাদের সাথে টুকি টাকি কথা বলছে, মাহি ও রাইসা একটু দূরে বসে গল্প করছে “!-রাইসা মা বেশির ভাগ কথাতেই ফাহাদ কে বাবা বলে সম্মোধন করছে। তা খেয়াল করে রাইসা মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,
~” মা যে এখন এই তালপাতার সেপাই কে বাবা বলে সম্মোধন করছে মা যদি ঈদের আগের দিন রাতের ঘটনা জানতে পারতো তাহলে বদমাশ বলে সম্মোধন করতো।
“মাহি রাইসার মুখের সামনে হাত নেড়ে বলে , কিরে কি বিড়বিড় করছিস..?
” রাইসা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে বলে, ক..কই কিছু না তো।
~”ফাহাদ মরিয়ম বেগম কে দাওয়াত দিলে মরিয়ম বেগম তা গ্রহণ করেন! তিনি বলেন হলুদে তারা উপস্থিত না থাকলে ও বিয়ে তে তারা যাবেন।
“কিন্তু হলুদে তো মাহির রাইসা কে চাই! রাইসার আম্মু অনেক Stiff সে হলুদের রাতে ও রাইসা কে থাকতে দিতে রাজি হতে চাইবে না। মাহি মন খারাপ করে মরিয়ম বেগম কে রিকোয়েস্ট করে বলে.,
” আন্টি প্লিজ হলুদের একটা দিন থাকবে রাইসা আমার সাথে প্লিজ প্লিজ..! ও আমার সাথে থাকবে আমার সাথে ঘুমাবে আমি নিজ দায়িত্বে ওকে দেখে রাখবো অক্ষত অবস্থায় আপনার মেয়ে কে আপনার কাছে পৌঁছে দিয়ে যাবো প্লিজ আন্টি আপনি অনুমতি দিন।
~”মরিয়ম বেগম বিব্রতবোধ করলেন এখন কি সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি, ঘরের মেয়েরা বাহিরে রাত কাটানো তার একদমই পছন্দ না “ভদ্রঘরের মেয়ে ছিলেন তিনি আবার স্বামী ছিলেন ভদ্রলোক আদর্শবান, কিন্তু মাহি ও তার পরিবার খুবই ভালো সেখানে তার মেয়ে নিরাপদে থাকে এ ভরসা আছে, এখন তার কি বলা উচিত বড় দোটানায় পড়ে গেলেন।
~” ফাহাদ একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, আন্টি আপনার কোনো আপত্তি না থাকলে আমি নিজে এসে নিয়ে যাবো ওকে আমি দেখে রাখবো! আমার ওপরে ভরসা করতে পারেন “ওর কোনো অসুভিদা হবে না আমি খেয়াল রাখবো।
–ফাহাদের কথায় আসস্ত হলেন মরিয়ম বেগম, ফাহাদ যথেষ্ট ভালো ছেলে ওকে কে ভরসা করাই যায়! তা ছাড়া এখন না বললে মাহির মন টা ছোট হয়ে যাবে মন খারাপ করে চলে যাবে এটা মরিয়ম বেগমের ও ভালো লাগবে না মাহি কে সে নিজের মেয়ের চোখেই দেখেন! ওকে কষ্ট দিতে চায় না তাই মরিয়ম বেগম একটু হেঁসে বললেন,
~” আচ্ছা ঠিক আছে ওকে হলুদে পাঠাবো কিন্তু আমার মেয়ের বিয়ে তে ও তোমাদের সবাই কে আসতে হবে কিন্তু! আর হলুদে ও তো রাইসার মাহি কে চাই নাহলে আবার রাইসার মন খারাপ করবে তো! আর রাইসা তো আমায় আগেই বলে দিয়েছে ওরা দুজন সেম সেম ড্রেস পড়বে আর সেম সাজবে।
“~ফাহাদের বুকে যেনো চাপ খেলো ! রাইসার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ধীর কন্ঠে বললো, মেয়ের বিয়ের মানে এতো ছোট বয়সে কেনো আন্টি..?
মরিয়ম বেগম এক চিলতে হাঁসি দিয়ে বললো, ছোট বলেই তো এতো দিন দেই নি অনেক আগে থেকেই বিয়ে ঠিক আছে, এখন বিয়ের যোগ্য হয়েছে তাই ভাবছি কিছুদিন পড়েই বিয়ে দেবো।
” ~ফাহাদের মস্তিষ্কে বিস্ফোরণ ঘটে গেলো বুকের চাপ টা বেড়ে গেলো, পেইন শুরু হয়েছে, গলার আওয়াজ টা থেমে গেলো, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো, টেবিল থেকে গ্লাস টা তুলে ঢক ঢক করে পানি খেলো!
~”মরিয়ম বেগম আবার ও বলে, আসবে কিন্তু কথা দেও বাবা! ফাহাদ মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বিদায় নিয়ে বাইরে চলে এলো “মাহি রাইসা কে বলে, ভাইয়া এসে তোকে নিয়ে যাবে তুই রেডি হয়ে থাকিস! এর পর মরিয়ম বেগম কে জরিয়ে ধরে আহ্লাদী গলায় বললো,
“-Thank you আমার মিষ্টি আন্টি! যাই তাহলে..।
~” মরিয়ম বেগম মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললো, সাবধানে যেও মা!
ফাহাদের মাথা ঠিক নেই “হাত কাঁপছে ” অমনোযোগী হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে! মাহি জিজ্ঞাসুক কন্ঠে বললো,
“ভাইয়া তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে ” এমন লাগছে কেন তোমায়!
~”ফাহাদ মুখে কিছু না বলে, না সূচক মাথা নাড়ায়! বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে “এরপর নিরবতা ভেঙে ফাহাদ মাহি কে জিজ্ঞেস করলো, তোর বান্ধবীর বিয়ে কার সাথে..?
_আমার কোন বান্ধবীর বিয়ে…??
–হেয়ালি করিস না বোন ভালো লাগছে না, কার সাথে বললে কি হয়..?
~” ধুর আমার বান্ধবীর বিয়ে আমি জানি না তুমি কিভাবে জানলে শুনি..?
ফাহাদ ভাঙা গলায় বললো “তোর সামনেই তো বললো আন্টি আগে থেকে নাকি বিয়ে ঠিক কেনো তোকে আগে বলে নি কেমোন বান্ধবী তোর..!
~” এভাবে কেনো বললে ভাইয়া ও আমার অনেক ভালো বান্ধবী আর আমি তো আরো অনেক আগেই জানি। ওর বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পড়েই ওর মামা -মামি ওর মামাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল।
~”আগে কখনো বলিস নি তো..!
-“আগে বলার কি আছে “বিয়ের সময় তো জানতেই পারতে।
–ফাহাদ গাড়ির স্ট্র্যারিং ঘোরাতে ঘোরাতে মনে মনে ভাবছে, আচ্ছা শুনেছি মেয়েরা নাকি চোখের ভাষা বুঝতে পাড়ে তুমি কি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারোনি রাই..? না আমি বেঁচে থাকতে তোমায় অন্য কারো হতে দেবো না।হয় তুমি আমায় গ্রহণ করবে নয়তো আমি মৃত্যুকে গ্রহণ করবো! আমার এতো বছরের ভালোবাসা আমি চোখের সামনে অন্য কারো হতে দেবো না!
” হঠাৎ গাড়ির পিপিপ আওয়াজে ফাহাদ জোরে ব্রেক করলো ঘুরে তাকিয়ে দেখলো অন্য একটি গাড়ি সামনে এসে গেছে ” মাহির দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার গাড়ি চালানো তে মনোযোগ দিলো ফাহাদ।
~”তোর বান্ধবী রাজি এ বিয়েতে..?
-“ও রাজি হয়ে কি করবে..? রিয়া আপু রাজি হলেই হয়!
“~মানে বিয়ে ওর বিয়ে তে ওর মতামত জানতে চাইবে না ..?
” তোমাকে কে বলেছে রাইসার বিয়ে, বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তো রাইসার বড় বোন রিয়া আপুর !
~”কিহ..!
~”হ্যাঁ..। তবে রিয়া আপু বেশি না রাইসার এক বছর ছয় মাসের বড় তুমি তো দেখেছো আগে কতবার। আংকেল মারা যাওয়ার কিছুদিন পড় থেকে ওর মামি পাগল হয়ে যায় রিয়া আপুর সাথে তার বড় ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য! প্রথম প্রথম আন্টি রাজি ছিলেন না এর পর রাইসার মামা মামি এটা ওটা বলে বিয়ের জন্য রাজি করায়।
~”ফাহাদ এতোক্ষণে লম্বা এক নিশ্বাস ফেলে যে সকল উল্টো পাল্টা ভাবনা রা মাথায় উকি দিচ্ছিল নিমিষেই সব চলে গেলো আবেগপুলক কন্ঠে বলে, আগে বলিস নি কেনো তুই..?
-“আগে জিজ্ঞেস করোনি তাই বলিনি তাছাড়া তুমি এসব কথা জেনে কি করবা..?!
~” ফাহাদ যেনো নতুন জীবন ফিরে পেলো ” মৃদু হেঁসে বললো এমনি! আইসক্রিম খাবি চল..!
ফাহাদ একটা দোকান এর কাছে থেমে দৌড়ে গিয়ে অনেক গুলো আইসক্রিম চিপস চকলেট এনে দিলো
মাহি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো ফাহাদের মুখের পানে একটু আগের ফ্যাকাসে মুখ খানা হঠাৎ করে জ্বলজ্বল করে ওঠে ।
–” সিয়াম, ফরিনা বেগম, অহনা সবাই চলে এসেছে চৌধুরী বাড়ি তে শুধু সিয়াম এর বাবা আসতে পারে নি একটু দরকারী কাজে তাকে সিলেট যেতে হয়েছে সে বিয়ের দিন সকালে আসবে! ফরিনা বেগম আসতেই লিসা এসে সালাম দিয়ে ফরিনা বেগম ছুয়ে সালাম করতে যায় সাথে সাথে ফরিনা বেগম লিসা কে ধরে জরিয়ে ধরে, অহনার সাথে অনেক কথা হলো কিন্তু এতোদিন পড়ে সিয়াম কে এতো কাছা কাছি দেখে লিসা অনেক টা লজ্জা নিয়ে মাথা নুয়িয়ে রাখলো “সিয়াম এই প্রথম লিসার এমন লজ্জা মাখা মুখ দেখলো! আগে পড়ে লিসা কে এতো লজ্জা পেতে দেখেনি!
~” মাহি ও ফাইজা কাছে এসে সালাম দিলো ফুপি কে ও সিয়াম ভাইয়া কে “ওরা দুজনের কাছে সিয়াম ভাইয়া নতুন লিসা আপুর ফোনে ছাড়া এই প্রথম সিয়াম ভাইয়া কে বাস্তবে দেখছে আগের কথা মনে।নেই।
—লিসা অহনা ও মাহির সাথে চলে ছাদে ” এতোদিন পড়ে লিসা কে কাছ থেকে দেখে সিয়াম এরও ইচ্ছে করছে ওর সাথে একটু কথা বলতে কিন্তু ও তো নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাচ্ছে। সিয়াম ও ছাদে উঠেছে সিয়াম কে দেখে মাহি অহনা নিচে নেমে গেলো সাথে লিসা নামতে নিলে সিয়াম হাত ধরে টেনে নিয়ে আবেগমশ্রিত কন্ঠে বললো,
~”বাচ্চাদের সাথে থাকতে থাকতে বাচ্চাদের মতো লজ্জা পাওয়া শুরু করেছো দেখছি!
~”লিসা মুখভেংচি কেটে বললো “মোটেও না।
~” তাহলে আমায় দেখে পালাচ্ছো কেনো হুম ”
~”তোকে দেখে পালানোর কি আছে ভাই ” তুই কোথাকার কোন সাহেব ভাই আমি তোকে দেখে ভয় পাবো.??
~”দুদিন পড়ে বউ হবে আমার “এখন এসব ভাই টাই বাদ দেও বুঝছো ” জামাই কে সম্মান দিতে শিখো নাহলে…
“-নাহলে কি..?
–উহুম এখন বলবো না বিয়ের পড়ে বোঝাবো!
~” এক সাথে পড়া লেখা শেষ করেছে সিয়াম ও লিসা বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা জন্মেছে দুজনের খুনশুটি ভরা প্রেম এখন বিয়েতে রুপান্তরিত হচ্ছে। সরা জীবনের জন্য এক সূত্রে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে।
★★★★————————————★★★★
–” আগামিকাল লিসা ও সিয়ামের গায়ে হলুদ জামশেদ শেখ তার ছোট মেয়ে কে নিয়ে দেশে চলে এসেছে কিন্তু লিসার বাবা হবু বেয়াই বাড়ি তে থাকতে রাজি নয় সে ইরফানদের বাসার কাছেই এক বড় হোটেলে উঠেছে “লিসা বাবা কে বলে কয়ে লুবা কে ইরফান দের বাসায় আনতে রাজি করিয়েছে ” ইরফান রোহান কে কল দিয়ে বলে দিয়েছে অফিস থেকে আসার সময় লুবা কে নিয়ে আসার জন্য।
~”রোহান গিয়ে লুবা কে নিয়ে আসে লুবা কে দেখে ফাইজা খুব খুশি হয় লুবা ফাইজার বয়সি!দুজনের বেশ ভাব জমে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই, লুবা ও ঠিক ওর বোনের মতো অনেক মিশুক। ফাইজার খুশি দেখে মাহি ওনেক খুশি বিয়ে এই কদিনের জন্য ফাইজা বাসায় একজন সঙ্গি পেয়ে গেলো।
~” অহনা খেয়াল করলো এবাসায় আসার পড় থেকে এবার রোহান আর অহনার পিছু নিচ্ছে না, বিরক্ত করছে না! জ্বালাতন করছে না,।
“ফাহাদ, রোহান আর সাব্বির স্টেজের কাছে দাঁড়িয়ে যারা স্টেজ সাজাচ্ছে তাদের দেখিয়ে দিচ্ছে কি কিভাবে করবে তা সব! অহনা ইচ্ছে করেই একটা ট্রে ভর্তি নাস্তা নিয়ে রোহান দের কাছে নিয়ে যায়। অহনা কে এক পলক দেখে রোহান চোখ নামিয়ে নিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে সাইডে চলে গেলো।এই প্রথম অহনা রাগি ভঙ্গিতে না তাকিয়ে অবাক ভঙ্গিতে রোহানের দিকে তাকালো একবার এর পর একটা চেয়ারে ট্রে টা রাখলো।
~” ফাহাদ একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে অহনা কে বলে, বস বোন।
~”না ভাইয়া তোমরা বসো মাহি আমাকে খুজছে বধহয় আমি যাই।
~”এ কদিনের মধ্যে আজকেই প্রথম ইরফান বাইরে বেড়িয়েছে তাও আবার শপিং করতে! সাথে নিরব কে নিয়ে গেলো! মাহি, ফাইজা, অহনা, লুবা ও রাইসার জন্য! কেনাকাটা করে বাসায় ফিরলো। লিসা বিয়ের শপিংয়ে যাওয়ার আগে ওদের সবাই কে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মাহি ও অহনা মিলে সিয়ামের সাথে লিসা কে একা পছন্দ মতো শপিং করার সুযোগ দিয়ে নিজেরা নানা অজুহাত দেখিয়ে বাসায় থেকে যায় ফাইজা ও লুবা কেও রেখে দেয়!
–” ফাইজা এসে মাহি কে বলে,
~”আপু তোমাকে ডাকছে ভাইয়া।
~”ভাইয়া মানে কোন ভাইয়া..?
_” ইরফান ভাইয়া..!
~” ইরফান ভাইয়া শুনতেই মাহির মনে পড়ে গেলো, প্রথম যেদিন ইরফান মাহি কে ভাইয়া ডাকতে বারণ করেছিলো, মাহি একটু হেয়ালি করে হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে গম্ভীর স্বরে বলতে লাগলো,
~”এই ভাবে ভাইয়া ভাইয়া করে চেঁচাবি নাতো কানে লাগে ”
“~ফাইজা অবাক হয়ে বলে, ভাইয়া কে ভাইয়া ডাকবো না তো কি ডাকবো শুনি..?
-” মাহি মুখে হাত চেপে মুচকি হেঁসে বলে, সব ভাইয়া কে ভাইয়া বলবি শুধু ওনাকে ইরফান ভাই ডাকবি বুঝলি..!?
~”এসব কি হচ্ছে শুনি ” পুরুষালি এক চিরোচেনা গম্ভীর কন্ঠে চমকে গেলো মাহি..! হৃদস্পন্দন লাফা লাফি করতে লাগলো “ভয়ে ভয়ে মাহি ইরফানের মুখ পানে তাকায় ”
~”ইরফান ফাইজা কে বললো, মাকে একটু কফি করে দিতে বল তো..!
~”ফাইজা দ্রুত নিচে নেমে গেলো বড় আম্মু কে বলার জন্য “ইরফান মাহির দিকে একটু একটু করে পা বাড়িয়ে আগাতে আগাতে ভ্রু জোরা কিঞ্চিৎ বাকা করে জিজ্ঞেস করলো,
” এসব কি মাহি..?
~”মাহির অধর জোরা কাপতে লাগলো ” পেছনে যেতে যেতে কাপা কাপা গলায় বললো, না.. মানে আসলে।
~”একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে ইরফান আবার বললো, আমাকে কপি করার সাহস কোথা থেকে পেলি।
~”মাহি চুপ করে আছে কথা বলার জন্য যে সাহস দরকার তা পাচ্ছে না “ইরফানের সামনে একদম চুপসে গেছে ” গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, একটু পানি খেতে পারলে ভালো হতো! মাহি নিষ্পলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে ইরফানের দিকে ”
~” ইরফান নেশাক্ত চোখে মাহির মুখ পানে তাকিয়ে কাছে আসতে আসতে মাহির কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে বললো , তোর মধ্যে আমাকে দেখে আমি বেসামাল হয়ে গেলে আমাকে সামলানোর ক্ষমতা আছে তো..?
মাহি পেছনে যেতে যেতে দেওয়াল এর সাথে ধাক্কা খাওয়ার আগেই ইরফান মাহির হাট ধরে টেনে নিয়ে আসে, মাহি ভয়ে শিথিল হয়ে চোখ বন্ধ করে ইরফানের ডান হাত খামচে ধরলো ” ইরফানের হাতের ক্ষতস্থান থেকে কিছুটা রক্ত গড়িয়ে পড়ে। আলতো হেঁসে ইরফান চলে যেতে নিলে মাহি চোখ মেলে তাকায় ইরফান পেছনে ঘুরে দাঁড়ালো মাহি কে এক পলক দেখে বলে,
ফাইজার রুমে সবার জন্য কেনা জিনিস পত্র আছে তুই সবার টা সবাই কে বুঝিয়ে দিস! সবার প্যাকেট আলাদা করে নাম লিখা আছে! বলেই চলে গেলো ইরফান।
~”মাহি নিশ্বাস ফেলে নিচে তাকাতেই দেখলো ফ্লোরে কয়েকফোটা তাজা রক্ত পড়ে আছে নিজের হাতের দিকে তাকালো আঙুলে কিছুটা রক্ত লেগে আছে। নিজের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে মাহি বিড়বিড় করে বললো,
“না চাইতে ও বার-বার আমার জন্যই ইরফান ভাই কে ব্যাথা পেতে হয়। এর পর ফাইজার রুমে গিয়ে সবার শপিং সবাই কে বুঝিয়ে দিলো আর রাইসার টা নিজের কাছে রেখে দিলো কাল রাইসা কে নিয়ে এ বাসায় নিয়ে আসা হবে তখন দিয়ে দেবে।
চলবে…….?
#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনীতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ২৯
~”হলুদের জন্য ফলের ডেকোরেশন করছে মাহি , ফাইজা, অহনা, রাইসা, লুবা ও নিশি “নিশি হচ্ছে লিসার মামাতো বোন আজকে বিকেলেই লিসার মামা নিশি কে নিয়ে এ বাড়িতে এসেছে। বিকেলে ফাহাদ গিয়ে রাইসা কে নিয়ে এসেছিল । এখন সবাই মিলে সুন্দর করে ফল কেটে সাজাচ্ছে, সাজানো গোছানো শেষ হলে ওরা সকলে রেডি হতে যাবে। ইরফান বাসার সব মেয়েদের জন্য হলুদের আউট ফিট কিনে দিয়েছিলো।
~” অহনা, মাহি ও রাইসা ওদের তিনজনের জন্য সেম লেহেঙ্গা কিনেছে ফাইজা ও লুবা ওদের দুজনের জন্য সেম লেহেঙ্গা কিনেছে।
~–পার্লার থেকে লোক এসেছে লিসা কে সাজানো হচ্ছে । মাহি, অহনা, রাইসা, ফাইজা ও লুবা কে ও সাজিয়ে দেবে! ওরা নিজেদের কাজ সেরে ফ্রেশ হয়ে সাজতে চলে গেলো। নিশি বাসা থেকেই সেজে এসেছে। এদিকে ওদিকে দেখছে নিশি কাউকে খুজছে বোধহয়।
~”ইরফান, রোহান, সাব্বির, নিরব সকলেই একরকম পাঞ্জাবি পরেছে কিন্তু ফাহাদ কে জোর করেও পড়ানো যায় নি, ফাহাদের ধারণা এই চিকন শরীরে পাঞ্জাবি মানাবে না পরে আবার বাশের মধ্যে পতাকা ঝুলে আছে এরকম দেখালে মান ইজ্জতের প্রশ্ন নিয়ে টানা টানি হবে। ফাহাদ ওদের পাঞ্জাবির কালারের সাথে ম্যাচিং করে একটা শার্ট পড়লো! সাব্বির, রোহান গেইট এর কাছে চলে গেলো ফাহাদ আর নিরব স্টেজ এর কাছে গিয়ে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা তা দেখতে। ইরফান পাজামা টা একটু গুটিয়ে নিয়ে সিয়াম এর খোজ নিতে গেলো।
–রুমে গিয়ে সিয়াম কে না দেখে রুম থেকে বের হতে নিলেই নিশি এসে সামনে এসে ইচ্ছা করেই ধাক্কা দিতে চাইলো কিন্তু ইরফান বুঝতে পেরে সরে যেতেই দরজার সামনে নিশি ধপাস করে পড়ে গেলো,লজ্জায় নিশির সুন্দর মুখ খানা লাল হয়ে গেলো ইরফানের সামনে এভাবে পড়ে গিয়ে নিজের মান সম্মানের ১২ টা বাজলো সেই ভেবে রাগে দুঃখে কান্না পাচ্ছে নিশির, ইরফান সাইড দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
ইরফান নিশি কে আজকেই প্রথম দেখেছে “কিন্তু নিশি এর আগেও একবার দেখেছিলো ইরফান কে ঈদের আগে যখন ইরফান লিসার জন্য শপিং করে লিসার মামা বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো তখনই ইরফান কে দেখে নিশি ইরফানের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে ফেলেছে। লিসার মামার হলুদে আসার ইচ্ছে ছিলো না ভেবেছিলো একেবারে বিয়ের দিন আসবে কিন্তু নিশির পাগলামি তে আসতে হলো। নিশি আসার পর থেকে ইরফান কে ইমপ্রেস করার চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু ইরফানের কাছে পাত্তা না পেয়ে বেচারার মন টা বার বার ভেঙে যাচ্ছে।
~” সিয়াম কে নিয়ে ইরফান বাইরে এসে দাঁড়ায় “সিয়াম বাসন্তি রঙের পাঞ্জাবি পরে রেডি বউ এর হলুদের শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সিয়াম এর পাঞ্জাবি কেনা হয়েছে! বাকি দের সকলের থিম কালার পার্পেল ইরফান, সাব্বির, নিরব ও রোহান পার্পেল কালারের পাঞ্জাবি ও ফাহাদ পার্পেল কালারের শার্ট ” ~”অহনা, মাহি, রাইসা, ওদের পার্পেল কালারের লেহেঙ্গা ফাইজা ও লুবার ও তাই শুধু ডিজাইন ভিন্ন।
~”সিয়াম কে স্টেজে বসিয়ে ইরফান এসে চেয়ারে বসে “তৎক্ষণাৎ নিশি এসে ইরফানের কাছে চেয়ার নিয়ে বসে পড়লো। ইরফান ফোনে কথা বলছে নিশি একটু করে চেয়ার এগিয়ে নিচ্ছে ইরফানের দিকে! এগোতে এগোতে ইরফানের গা ঘেঁষে বসতে নিলে ইরফান উঠে চলে গেলো!
~” ওহ শিট! বলে চেয়ারে বারো সরো একটা লাথি মারলো নিশি।
~”যথেষ্ট সুন্দরী মেয়ে নিশি, ভার্সিটির অনেক ছেলেরই ক্রাশ। ছেলেদের নিজের পেছনে ঘুরিয়ে বেশ মজা পায়! এলাকায় অনেক ছেলেই বাড়ির কাছে ঘুরঘুর করে! ফরসা গায়ের রঙ! ব্রাউন কালার করা চুলগুলো ঘাড় পর্যন্ত হেয়ার কার্ট করা। হালকা গুলুমুলু আর একটু শট! তবুও হাজার ছেলের ক্রাশ বলা যায়।
~”এই প্রথম নিশি কোনো ছেলের জন্য এতো টা পাগলামি করছে! নিশির জন্য পাগলামি করা ছেলে অনেক আছে তবুও নিশির ইরফান কে অনেক পছন্দ হয়েছে! যেকোনো মুল্যে ইরফান কে লাগবেই। ইরফানের কাছে পাত্তা না পেয়ে নিশি ওর ফুপাতো বোন লিসার কাছে চলে গেলো! লিসার সাজা শেষ জুয়েলারি পড়াচ্ছে এমন সময় নিশি গিয়ে লিসা কে বলে নিশি শাড়ি পড়বে! মামাতো বোনের আবদার মেটাতে লিসা নিজের একটি শাড়ি বের করে দিলো নিশি কে। পার্লারের মেয়েরা নিশি কে সুন্দর করে শাড়ি টা পাড়িয়ে দিলো।
একটু পরে গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম শুরু হবে ” ইরফান নিজের হাতের ও মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছে অনেক আগেই, হঠাৎ করে মাথা চিন চিন ব্যাথা অনুভব হতেই ইরফানের মনে পড়লো দুপুরের ওষুধ খাওয়া হয়নি ইরফান তখন নিজের রুমে ছিলো নাজিফা বেগম নিয়ে এসে হাতে তুলে দিয়েছিলো কিন্তু ইরফান খাবে বলে হাতে নিয়েও খাওয়া হয় নি! অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে ওষুধ টা খেয়ে নেওয়াই উত্তম পরে বেশি যন্ত্রণা শুরু হলে ঝামেলা হবে তাই ভেবে ইরফান নিজের রুমে গিয়ে দেখলো ওষুধ টা এখনো টেবিলে পরে আছে!
~”ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো চার্জ শেষ তাই ফোন টা চার্জে লাগিয়ে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে তাকিয়ে নিশি কে দেখেই ইরফানের মাথা গরম হয়ে গেলো, রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
এই মেয়ে এখানে কি করছো হুম, আমার রুমে পারমিশন ছাড়া ঢোকার সাহস কিভাবে হলো??
~”নিশি শাড়ির আচল টা একটু উপরে তুলে নিজের পেটের অংশ টুকু হালকা বের করে নিজের ছোট ছোট চুল গুলো হাত দিয়ে গোছাতে গোছাতে বললো, সরি আমি বুঝতে পারি নি আপনার রুমে প্রবেশ করতে পারমিশন নেওয়া লাগে, এখন রুমে এসেই যখন পরেছি তো আর কি করার আজীবনের জন্য পারমিশন টা দিয়েই দিন!
~”ইরফানের সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, আসার পর থেকেই নিশির হাবভাব ভালো লাগছে না ইরফানের নিশির গায়ে পড়া ভাব টা বেশ বিরক্তিকর লেগেছে, বিকেল থেকে যেভাবে বার বার ইরফানের পেছনে আঠার মতো লেগে আছে ব্যাপার টায় ইরফান বিরক্ত বোধ করলেও এতোক্ষণ মুখে কিছুই বলে নি লিসার মামাতো বোন ওকে কিছু বললে লিসার কাছে খারাপ লাগবে তা ভেবে কিন্তু এবার ইরফান রেগে গিয়ে ধমকের সুরে বললো,
~”বাইরের কাউকে আমার রুমে প্রবেশ করার পারমিশন আমি দেই না..! কোনো প্রয়োজন না থাকলে এবার যেতে পারো..!
~”নজর কারা এই লুকে নিশি কে দেখে ফিট হয়ে পড়ে না গিয়ে ইরফান রাগান্বিত কন্ঠে কথা বলছে দেখে নিশি বেশ উত্তেজিত হয়ে মনে মনে ভাবছে ” এই ছেলের এতো দেমাগ নিশি কে পাত্তা দিচ্ছে না..?তোমাকে তো আমি পাগল করেই ছাড়বো.!
~” এবার নিশি শাড়ির আচল টা আরো উপরে তুলে নিজের ফরসা সাদা ধপধপে পেটের সম্পুর্ন অংশ টুকু উন্মুক্ত করে দিয়ে হেস্কি স্বরে বললো, চোখের সামনে সাজানো বিরিয়ানির প্লেট দেখলে সবারই একটু ছুয়ে দেখতে ইচ্ছা হয় মিস্টার।
–ইরফান চোখ বন্ধ করে পেছনে ঘুরে দাঁড়িয়েই জ্ববাব দিলো,
~”শুনো অসভ্য মেয়ে এই আবরার ইরফান চৌধুরী
তোমার মতো নোংরা আবর্জনা হাত দিয়ে ছোয়া তো
দূরের কথা আমার এই দেহে প্রাণ থাকতে আমার এই
দু চোখ দিয়ে ও দেখবে না! তাতে এই চোখ এই দেহ সব
অপবিত্র হয়ে যাবে সেই অপবিত্র দেহ নিয়ে আমি আমার
প্রেয়সীর কাছে যেতে পারবো না “।
~” আগেই বলে রাখলাম আমার থেকে দূরে থাকো আমার এই শক্ত হাতের থাপ্পড় খাওয়ার আগে সাবধান হয়ে যাও! নয়তো আমি ভুলে যাবো তুমি লিসার মামাতো বোন ! একটা থাপ্পড় খেয়ে এক সপ্তাহ হসপিটালে ভর্তি থাকলেই সব আবেগ কমে যাবে!
~”সরাসরি এতো গুলো অপমান জনক কথা শুনে নিশি হন হন করে বেড়িয়ে গেলো ইরফানের রুম থেকে!
~” অহনা, রাইসা ও মাহি এক সঙ্গে নিচে নামছে বেশ ভাড়ী লেহেঙ্গা সামলাতে গিয়ে তিনজনই হিমশিম খাচ্ছে, ইরফান মাত্রই নিচে নেমে সিঁড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো, মাহি কে এতো সুন্দর সাজে দেখে ইরফান অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো ইরফানের ইচ্ছে করছে সব কিছু বাদ দিয়ে মাহি কে নিয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে!
~”মাহির ঘন কালো খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে, চোখ গুলো হালকা সাজানো এই চোখে তাকিয়ে ইরফানের সাতার কাটতে ইচ্ছে করছে!
“~প্রথমে অহনা ও রাইসা নেমে গেলো মাহি মাঝের সিঁড়ি তে আসতেই লেহেঙ্গায় পা লেগে হোচট খেয়ে পড়তে নিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়, একটুর জন্য বেচে গেলো,!
ইরফান দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে মাহির এক হাত শক্ত করে ধরে নিচে নামাতে লাগলো আর বলতে লাগলো দেখে চলবেন তো! এক্ষুনি একটা অঘটন ঘটলে কি হতো শুনি?
” মাহি বিস্ময়কর ভাবে তাকিয়ে আছে ইরফান ভাইয়ের দিকে! মাহি মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,
এখন আর আমি কোনো অঘটন কেই ভয় পাই না ইরফান ভাই কারণ আমি জানি যাই হয়ে যাক না
কেনো আপনি আমায় ঠিক বাঁচিয়ে নিবেন “!
~” মাহি এক হাত দিয়ে লেহেঙ্গা ধরে আছে! অন্য হাত ইরফান ধরে আছে এভাবে দুজন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে, বিষয় টা নিশির নজরে পড়তেই ” নিশির গা জ্বলে উঠলো! এতো ক্ষণ যাবৎ নিশি ইরফানের পিছু ঘুরেও এটেনশন পেলো না ওর দিকে তাকালো পর্যন্ত না তাহলে এই মেয়েটার মধ্যে কি এমন দেখেছে যে হাত ধরে নিচে নামাচ্ছে “!ক্রোধে বাইরে চলে গেলো নিশি।
~” বাইরের নানা রঙের আলোয় সাজসজ্জা রাতের আধারে বেশ রোমাঞ্চকর একটা পরিবেশ লাগছে! ফরিনা বেগম অহনা কে বলে ইরফান কে ডাকার জন্য অহনা ইরফান ভাই কে খুজতে গেইট এর কাছে যেতেই রোহান কে দেখতে পেলো, একটা ডেগরেটর ছেলে কে কিছু একটা বুঝিয়ে দিচ্ছে, অহনা এক মনে তাকিয়ে আছে রোহানের দিকে, হঠাৎ এই একটা মেয়ে এসে রোহানের সাথে ধাক্কা খেলে রোহান ঘাড় কাত করে দেখেতে যাবে, তার আগেই অহনা তেরে এসে রাগি ভঙ্গিতে মেয়েটাকে বললো,
~”এই মেয়ে দেখে চলতে পারো না হ্যাঁ!
~”রোহান বিস্ময়কর ভাবে অহনার দিকে তাকিয়ে থেকে একটু মুচকি হেঁসে মনে মনে ভাবছে অহনার সাথে প্রথম দেখাটাও এমন ভাবেই হয়েছিলো।
~”মেয়েটা ভীতু কন্ঠে বললো, সরি আমি খেয়াল করতে পারি নি ” বলেই চলে গেলো।
~”অহনা দাত কিড়মিড় করে বললো “কানার সাথে কানারই দেখা হয়!
–রোহান একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, শোনো মেয়ে তুমি কিন্তু আমায় অপমান করছো!
~” ও মা আপনার সেটা আছে বুঝি..?
~ ” কি..?
–“অপমান বোধ।
~”নেই বলছো..??
_”উহুম ! থাকার তো কথা না ” মেয়ে মানুষ দেখলেই তো গা ঘেঁষাঘেঁষি করতে ইচ্ছে হয়।
~”তাতে তোমার কি..?
— চোখ তুলে নেবো অন্য মেয়ের দিকে তাকালে..!
— “Are you jealous? (তুমি কি জেলাস…?)
–“বয়েই গেছে হুহ!
~” অহনা হনহনিয়ে চলে গেলো ” রোহান অহনার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেঁসে দিলো! অহনার অপ্রকাশিত ভালোবাসার হালকা বহিঃপ্রকাশ ঘটে গেলো ! রোহান সেটা বুঝতে পেরে সস্থির হাঁসি দিলো, না আর ছাড় দেওয়া যাবে না। এতোদিন অহনা কে এড়িয়ে চলতে রোহানের খুব কষ্ট হয়েছে তবুও আজ মনে প্রশান্তির হাওয়া বইছে ।
রোহান মনে মনে ভাবছে, অহনার মন গলাতে সক্ষম হয়েছে সেই খুশি তে আজকে আবার একটু অহনার পেছনে ঘুরে ছ্যাচড়ামো করা যাক! ভেবেই অহনার পেছনে ছুটে গেলো।
~” প্রোগ্রাম শুরু হলে সবাই একেক করে হলুদ ছোয়ালো ,হলুদের প্রোগ্রাম শেষ হলে বাড়ির বড় রা ভেতরে চলে যায়। এখন বাচ্চারা নাচ গান করবে তাই তাদের চিল করতে দিয়ে বড় রা চলে গেছে। এর পড় শুরু হলো নাচের প্রোগ্রাম, সবাই নাচতে ব্যস্ত! এক পর্যায়ে স্টেজে উঠে অহনা, মাহি, ও রাইসা । তিন জনের অবাক করা পারফরম্যান্সে । হা হয়ে তাকিয়ে থাকে ইরফান, ফাহাদ ও রোহান।
~”ইরফানের অন্তরের অন্তস্তলে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গেলো, প্রেয়সীর এতো সুন্দর ডান্স পারফরম্যান্স এই প্রথম নিজ চোখে দেখছে!
~”তিন টা গানে পর পর সাত মিনিট নাচ করার পড়ে ওরা তিনজন নেমে গেলো “এর পড় ফাইজা ও লুবা নাচ করলো! সকলে মিলে নিশি কে নাচ করতে বললে নিশি করলো না! নিশির রাগ এখনো কমে নি ইরফানের রাগ টুকু মাহির প্রতি বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করতে চাচ্ছে। নিশি বুঝতে পেরে গেছে ইরফান মাহি কে পছন্দ করে!
~” নাচের প্রোগ্রাম শেষ হলে ফাহাদ একটি গিটার নিয়ে ইরফানের হাতে দেয় “সকলে উল্লাসে চেচিয়ে উঠে আশে পাশে সকালে ইরফানের নাম বলতে থেকে ” ইরফান গান গাইতে রাজি হয় না সকলে রিকুয়েষ্ট করে সকলের সাথে সাথে মাহি ও রিকুয়েষ্ট করে বলে, প্লিজ ইরফান ভাই একটা গান প্লিজ..
~”ফাহাদ ইরফানের কানের কাছে গিয়ে বলে, বোনের জন্য গিটার ছেড়েছিলে আজ বোন তোমাকে রিকুয়েষ্ট করছে তুমি ওর কথা রাখবে না..!
~”এক পলক মাহি কে দেখে গিটার টা হাতে তুলে নেয় ইরফান গলা খাঁকারি দিয়ে মাহির চোখে চোখ রেখে গিটারে সুর তুলে গেয়ে উঠলো,
~”যখন খোলা চুলে হয়তো মনের ভুলে,
_তাকাত সে অবহেলে দু ‘চোখ মেলে!
–হাজার কবিতা বেকার সবই তা,
~হাজার কবিতা বেকার সবই তা!
–তার কথা কেউ বলে না………
~”সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা..!
~”পরপর শিস বেজে উঠলো অনেক গুলো, কেউ কেউ হাত তালি দিচ্ছে চারোদিকে হৈ-হুল্লোড় পড়ে গেলো কিন্তু মাহির ধ্যান নেই কিছুতে মাহি হারিয়ে গিয়েছে ইরফান ভাইয়ের গভীর স্বরে, মধুময় কন্ঠে আরেক টি গান শোনার ইচ্ছায় এ মন ছটফট করে উঠলো! ইরফান এক দৃষ্টে চেয়ে রইলো মাহির দিকে সবাই ইরফান কে উদ্দেশ্য করে বললো আরো একটি গান সবার মাঝে উপস্থাপন করার জন্য…!
~”ইরফান নিষ্পলক দৃষ্টি তে মাহির দিকে এক টানা তাকিয়ে থেকে, আবার সুর তুলে গাইলো..
Main Tera Hii.. Diwaana Hoon… Teri Baatein kabhi main.
Bhool na paon…. Tuhi mera Dil Hai… Tuhi meri jaan.. Tuhi mera
Dil Hai.. Tuhi meri jaan…. Kabhi Toh pass mere aao… kabhi Toh
Nazrey mujhse Milaw… Kabhi Toh Dil se Dil ko Milaw… OH jana…
Meri Jaan palke yun Na Jukana… Meri Jaan Mujhse Dur Na Jana..
Meri Jaan MujhkO Bhul Na Jana.. O Jana…. Mujhe Lauta de.. wo Mera
Peyaar… Mujhe Lauta de… wo mera peyaar…..!
চলবে…………?