পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে পর্ব-৩০+৩১

0
24

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩০

~” বিয়ে বাড়ি জমজমাট হৈহুল্লোড়ে মেতে আছে চৌধুরী বাড়ি, বহুদিন পর এই বাসায় এতো আলক সাজ্জায় মেতে উঠেছে ” ইরফান, ফাহাদ, ফাইজা সকলের নানু বাসার থেকে মেহমান এসেছে, মামাতো, খালাতো ভাই বোনেরা সবাই এসেছে, সিয়াম এর ফুপাতো ভাই বোনেরা ও এসেছে, বাড়ি ভর্তি মেহমান ছোট বাচ্চা সব মিলিয়ে বাড়িতে হইচই চলছে! আজকে বাড়ির গিন্নি রা রান্না ঘর থেকে ছাড়া পেয়েছে! বাবুচি রা রান্না করছে, তাদের হেল্প করছে, চার জন মহিলা, কাশেম চৌধুরী ও মনির চৌধুরী এক সাথে সোফায় বসে চা খাচ্ছে হঠাৎ নাজিফা বেগম এসে মনির চৌধুরী কে ডেকে বললেন,

~”মাহমুদার শরীর টা ভালো লাগছে না তুমি ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও ভাই!

–মনির চৌধুরী চিন্তিত ভঙ্গিতে নাজিফা বেগমের সাথে চলে গেলো রুমে।

, কাশেম চৌধুরী মাহির বড় মামার সাথে কথা বলছে এরি মধ্যে ইরফান নিচে নামছে, ইরফান কে দেখে কাশেম চৌধুরী গর্বিত ভাবে বলে,

~”বুঝলেন ভাই আমাদের ইরফান আসলেই বড় ভাইয়ের যোগ্য সন্তান হয়েছে..! বাহিরে এতোগুলো বছর আমাদের কোম্পানির দেখভাল করেছে দেশে ফিরে নিজের কোম্পানি করেছে! চারোদিকে তো বেশ সুনাম আছে আমার ভাইপোর।

~”মাহির বড় মামা চায়ের কাপে একটা চুমুক দিতে দিতে বলে, ওহ ব্যাবসা তো ভালই বুঝেছে মনে হচ্ছে।

–শুধু ব্যবসার দিক দিয়ে না সব দিন দিয়েই ইরফানের সাথে পেরে ওঠা তো এখন বড় ভাইজানের জন্য ও দ্বায় হয়ে ওঠেছে।

~এই সম্পূর্ণ বিয়ে বাড়ির কাজ একা হাতে সামলেছে ইরফান..!

~” ইরফান সোফায় বসতেই ফাহাদ বাইরে থেকে এসে ইরফানের পাশের সোফায় বসে পড়লো, নাজিফা বেগম এসে ইরফান ও ফাহাদ কে কফি দিয়ে ইরফান কে উদ্দেশ্য করে বললো বললো,

~” ঔষধ গুলো ঠিক মতো খাচ্ছিস তো বাবা..?

~”হ্যাঁ! মা খাচ্ছি ।

নাজিফা বেগম চলে গেলে কাশেম চৌধুরী আবার কিছু বলতে যাবে ঠিক সে সময়ে ফরহাদ চৌধুরী এসে কাশেম চৌধুরী কে বললো..!

~”চল দেখে আসি বাইরে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা মাহির মামা কে ও বলে চলেন ভাই একটু বাইরে হেটে আসি.!মাহির মামা এক চিলতে হাঁসি দিয়ে বললো, না ভাই আপনারা যান। আমি একটু ওদের সাথে গল্প করি।

— ঠিক আছে ভাই ”

~” তারা চলে গেলে মাহির মামা একটু নড়ে চড়ে বসলেন, ইরফানের দিকে তাকিয়ে বললো,

~” তা এইটুকু বয়সে ব্যাবসা তো ভালোই করছো “বেশ সুনাম ও কামিয়েছো দেখছি। তা কাজ কেমন চলছে..?

~” আপনাদের দোয়ায় ভালোই মামা “দোয়া রাখবেন সামনে আরো ভালো কিছু করতে পারি।

~” হ্যাঁ তা তো অবশ্যই দোয়া করি বাপ। তা বিয়ে করছো কবে..?

_ইরফান বিশম খেলো, ফাহাদ কফি মগ টা টেবিলে রেখে ইরফানের মাথায় ফু দিচ্ছে, ফাহাদের মামা বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো,

–ঠিক আছো..!

~”ইরফান কাশতে কাশতে বলে, হ্যাঁ ঠিক আছি।

–ইরফান স্বাভাবিক হলে ফাহাদের মামা আবার ও প্রশ করে.., তা কাউকে পছন্দ আছে নাকি!

__ ইরফান বেফাস কিছু বলে ফেলে তার আগে এবার ফাহাদ একটু আগবাড়িয়ে বললো,

~”আরে না মামা ভাইয়ার কোনো পছন্দ নেই। কিন্তু তুমি হঠাৎ এসব কথা নিয়ে পড়লে কেনো..?

~” হাতে ভালো মেয়ে আছে ” আমার বন্ধুর মেয়ে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে, আমার খালাতো ভাইয়ের মেয়ে, অনার্স প্রথম ইয়ারে পড়ে, খুব ভালো মেয়ে । আমাদের ওখানে আরও ভালো ভদ্র মেয়ে আছে একদিন আমাদের বাসায় গিয়ে দেখে এসো পছন্দ হলেও হতে পারে।

— ইরফান কফি মগ টা টেবিলে রাখতে রাখতে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে, অমুকের মেয়ে তমুকের মেয়ের কথা না বলে আপনার বোনের মেয়ের কথা বললেই হতো মামা! দেখা দেখির প্রয়োজন নেই ডিরেক্ট বিয়ে!

~” মাহির বড় মামা ভ্রু জোরা কুচকে বললো, কি..?

~” এরকম সিচুয়েশনে পড়ে ফাহাদের ফেসে যাওয়ার মতো অবস্থা, পরিস্থিতি সামাল দিতে ফাহাদ একটু হাঁসার চেষ্ট করে দ্রুত জ্ববাব দিলো,

~”আরে মামা বুঝতে পারে নি আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি “ভাইয়া বলেছে আগে আমাদের মাহির বিয়ে দেবে তারপর ভাইয়া বিয়ে করবে। ভাইয়া সব সময় এই কথাই বলে। আর বোনকে বেশি দেখা দেখি করাবে না ছেলে পছন্দ হলেই বিয়ে দিয়ে দেবে! বেশি দেখা শোনা ভালো মনে করে না ভাইয়া।

~” ইরফান একটু উঁচু স্বরে ফাহাদ কে বললো, আগে আর পড়ে কি দুজন তো এক সাথেই বিয়ে করবো

— হাঁ হাঁ হাঁ! শ্বব্দ করে হেঁসে মাহির মামা বললেন, এই ব্যাপার। চাচাতো বোনের বিয়ের দিন বিয়ে করবে??

~” ইরফান মনে মনে বিড়বিড় করে বললো, চাচাতো বোন নয় চাচাতো বউ ! কিন্তু মুখে ভেঙে কিছু বলতে পারলো না এটা সময় না।

~” পরিকল্পনা ভালোই তো করে রেখেছো বাপ “মাহি মা শশুর বাড়ি যাবে আর তোমার বউ আসবে! তা ভালো.. ভালো।

~~” ইরফান আবার না কোনো ভুলভাল বলা শুরু করে দেয় ফাহাদ ইরফান এখান থেকে সরানোর জন্য বলে, হ্যাঁ মামা ঠিক বলছো ভাইয়ার মাথায় অনেক বুদ্ধি! ভাইয়া চলো তোমাকে ডাকতে এসে বসে পড়েছিলাম , রোহান ভাইয়া তোমায় ডেকেছিলো! চলো চলো..!

__ফাহাদ ইরফান কে নিয়ে বাইরে চলে গেলো ” রাতে অনুষ্ঠান শেষ করে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় ভোর পাঁচ টার মতো বেজে গিয়েছিল ফাইজা খুব ভোরে উঠলেও মাহি, অহনা , রাইসা ও লুবা বেশ দেরিতে উঠে, সকলে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলে, রাবেয়া বেগম ওদের খেতে দেয় ।

“মাহমুদা বেগমের শরীর টা খুব একটা ভালো না, সকাল থেকে কয়েক বার কমি করেছেন! মনির চৌধুরী নাজিফা বেগম, রাবেয়া বেগম সকলে জ্বোরাজ্বোরি করেও মাহমুদা বেগম কে হসপিটাল নিতে পারে নি!

~” দুপুরে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে, সবাই সাঝতে ব্যাস্ত! আজকে পার্লারের লোকেরা সাজাতে চাইলে ও ওরা কেউ সাঝতে রাজি নয় আজ ওরা নিজেরা সিম্পল সাজবে লিসা কেই সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দিতে বলে ওরা সব রেডি হতে চলে গেলো “কিন্তু নিশি লিসার সাথে পার্লারের মেয়েদের কাছে সাজবে ” মেয়েরা তিনজন বসে পড়লো লিসা কে সাজাতে আর এক জন নিশি কে সাজানোর জন্য।

~” বারোটা নাগাদ রাবেয়া বেগম ড্রইংরুমে এসে দাঁড়াতেই ফাহাদ কে দেখে বললো মরিয়ম আপার ফোন নাম্বার তোর মোবাইলে আছে,

ফাহাদ মোবাইল হাতে নিয়ে নাম্বার চেক করে দেখে বললো, হু

একটা কল দিয়ে দে তো কথা বলি এখনো আসে নি কেনো দেখি..!

ফাহাদ মোবাইল টা মায়ের হাতে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মায়ের কাছে, হবু শাশুড়ীর সাথে কথা বলবে তা শোনার জন্য।

রাবেয়া বেগম মরিয়ম বেগম কে ফোন দিলো, কল রিসিভ হলে রাবেয়া বেগম সালাম দিলে মরিয়ম বেগম সালামের উত্তর দিয়ে বললো,

~”কেমন আছেন আপা..? আমি মাহির মা বলছি চিনতে পেরেছেন..?

–জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, হ্যাঁ চিনবো না কেনো আপা! আপনি কেমম আছেন বাসার সবাই ভালো আছে..?

–জ্বি আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো!

~”রাইসা কোথায় খুব জ্বালাতন করছে আপনাদের..?

~–“ছি ছি কি বলছেন আপা রাইসা তো আমার আরেক মেয়ে তা ছাড়া রাইসা যে ভদ্র মেয়ে ওর মতো মেয়ে কে যে আমরা এক দিনের জন্য হলেও এতো কাছে পেয়েছি এতো আমাদের সৌভাগ্য। সম্ভব হলে আমি আমার কাছেই ওকে রেখে দিতাম!

–মায়ের এরুপ কথা শুনে ফাহাদ আবেগপ্লুত হয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বললো, চিন্ত করো না মা, রাই কে সারাজীবনের জন্য তোমার ঘরের বউ করে আনবো! নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হাসি দিয়ে আবার আওড়ালো, তখন ও সব সময় তোমার কাছেই থাকবে।

–“রাবেয়া বেগম এর কথায় মরিয়ম বেগম প্রানবন্ত হাঁসি দিলো।

~”রাবেয়া বেগম জিজ্ঞেস করলেন,দুপুর হয়ে এলো কখন আসছেন আপা..?

~”খুবই দুঃখিত আপা আমি যেতে পারছি না! আমার আম্মার শরীর টা অনেক দিন যাবৎ খারাপ যায়.!বয়স হয়েছে তো আজ শুক্রবার স্কুল বন্ধ তাই রাইসার নানু বাসায় এসেছি।

~”একি বলছেন আপা তাই বলে আসবেন না তা কি করে হয় “রিয়া মা কোথায়..?

~” রিয়া কে বাসায় রেখে এসেছি “বলেছিলাম চলে যেতে, বোধহয় যাবে না “এই মেয়েটা হয়েছে এক ঘরমুখো কোথাও যেতেই চায় না।

~” না তা বললে কি করে হবে “আমি ফাহাদ কে পাঠাচ্ছি ও গিয়ে রিয়া কে নিয়ে আসবে।

~” না আপা তার প্রয়োজন নেই,!

~” এ কথা বললে আমি ভীষণ কষ্ট পাবো আপা “আপনি ফোন করে রিয়া মা কে তৈতৈরি হতে বলুন ফাহাদ যাচ্ছে। এখন রাখছি তাহলে আল্লাহ হাফেজ।

~” বলেই কল কেটে দিলো রাবেয়া বেগম “ফাহাদ চলে গেলো রিয়া কে আনার জন্য ” রিয়া ফাহাদের চাইতে অনেক ছোট কিন্তু রাইসার বড় বোন তাই ফাহাদ দোটানায় পড়ে যায় রিয়া কে আপু ডাকবে না নাম ধরে ডাকবে ” তা নিয়ে অনেক কনফিউজড।

রিয়া স্টাডি করলে এবার ভার্সিটির প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষার কাছাকাছি থাকতো , কিন্তু H.S.C এক্সামে ভালো নাম্বার নিয়ে পাশ করার পড়েও ভার্সিটি তে ভর্তি হয় নি। হয় নি বললে ভুল হবে হতে পারে নি, মরিয়ম বেগমের মেয়েকে পড়ানোর খুব ইচ্ছা ছিলো কিন্তু রাইসার যে মামাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয় সে রাজি হয়নি ভার্সিটি তে ভর্তি হতে। রাইসার মামা মামি মরিয়ম বেগম কে এটা ওটা বোঝায় সব শেষে রাইসার আম্মু চিন্তা ভাবনা করে দেখলো যেহেতু কিছুদিন পর ওই বাড়ির বউ হবে তাই তাদের অনুমতি ছাড়া তো আর ভর্তি করা যায় না। সেখানেই লেখা পড়া বন্ধ হয়ে গেলো রিয়ার।

~”রাইসা কল দিয়ে আপু কে অনেক বোঝালো, অনেক চেষ্টার পর রিয়া বিয়েতে আসতে রাজি হয়! ফাহাদ নিয়ে আসে। রিয়া আসতেই ফাহাদের মা কাকি রা সবাই অনেক আপ্যায়ন করে “রিয়া খুব চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে! অনেক দিন হয়েছে কোথাও ঘুরতে যেতে চায় না বেড়াতে যেতে চায় না ” সারাদিন ঘরে পরে থাকে। আজ অনেক দিন পরে এতো মানুষ দেখে ভালো লাগলেও একটু Uncomfortable লাগছে। বিষয় টা কাউকে বুঝতে না দিয়ে সবার সাথে মুখে হাঁসি নিয়ে কথা বলছে রিয়া।

—মাহি, রাইসা দুজনেই এসে রিয়া আপুর সাথে কথা বলে আবার রেডি হতে চলে গেছে “ওরা এখনো তৈরি হতে পারে নি। অহনা ও পরিচয় দিয়ে একটু আলাপ করে গেছে! রিয়া অহনা দুজনেই একি বয়সের তাই অহনা রিয়ার সাথে বন্ধু সুলভ কথা বলছে! অহনা রিয়া কে ওদের সাথে যেতে বললে রিয়া স্মিত হাঁসি দিয়ে বললো তোমরা ফ্রেশ হয়ে আসো আমি এখানে ওয়েট করছি।

–” অসস্থি দূর করতে রিয়া হাটতে হাটতে বাইরে বেড়িয়ে আসলো, বাইরে অনেক সুন্দর হাওয়া বইছে তার উপরে এতো সুন্দর করে নানা ফুলে সাজানো স্টেজ টা বেশ রোমাঞ্চকর মুহুর্ত মনে হচ্ছে!চারোদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে রিয়া, হাওয়ায় রিয়ার ওড়না টা একপাশে একটু বেশি নেমেছে তাই মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, হঠাৎ গলায় হেচকা টান অনুভব করার সাথে সাথে একটু ব্যথা অনুভব হতেই রিয়ার মুখ ফুটে আওয়াজ বেড়োলো.,

~” উফফ!

~”পেছনে তাকাতে দেখতে পেলো একটা ছেলে অন্য দিক ঘুরে সিগারেট টানছে!

~” সাব্বির প্রতি ঘন্টায় একটা করে সিগারেট খায় কিন্তু ইরফান দের বাসায়র মানুষ দের সামনে তো আর খেতে পারে না ভদ্রতার একটা ব্যাপার আছে! তাই যখন সুযোগ পায় তখন এদিক ওদিক সাইডে কি খায় “এখনো তাই করছিলো স্টেজের পেছনে গিয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো ওমন সময় রিয়ার ওড়নায় পাড়া পরেছে কিন্তু সাব্বির খেয়াল করতে পারে নি!

~” রিয়া নমনিয় কন্ঠে ডাকছে, এই যে শুনছেন।

~”সাব্বিরের কানে মেয়লি স্বরে কথা টা গেলো কিন্তু সাব্বির তাকালো না কথা টা গায়ে ও মাখলো না, মেয়েদের প্রতি কনো Interest নেই।

~”এবার রিয়া এরেকটু কোমল গলায় বললো, এই যে আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন..?

~” সাব্বির একটু গম্ভীর কণ্ঠে জ্ববাব দিলো, জ্বি অবশ্যই আমি মেয়েদের কথা শুনতে পাই ঠিকি কিন্তু বুঝতে পাড়ি না! মেয়েদের বিশ্বাস নেই কখন আবার নিশ্বাস নিয়ে খেলা শুরু করে।

~” সিগারেট এর বাজে গন্ধ নাকে আসাতে রিয়া হালকা কেঁশে বলে মুখ চেপে ধরে বললো , অনুগ্রহ করে আপনি পা টা সড়িয়ে ওড়না টা ছাড়ুন নয়তো আমি শ্বাস আটকে মারা যাবো।

__কথা টা সাব্বিরের কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই সাব্বির নিজ পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো রিয়ার ওড়না কিছু অংশ সাব্বির এর শো -জোতার নিচে পা সড়িয়ে নিয়ে এক পেছন ফিরে তাকালো সাব্বির, সিগারেট এর বিশ্রি স্মেল টা আরও বেশি অনুভব হওয়ায় রিয়া নাক মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো।

~”সাব্বির আধ খাওয়া সিগারেট টা ফেলে পায়ে পিষে হাত দিয়ে ধোঁয়া গুলো সড়িয়ে দিলো! মেয়েদের সামনে সিগারেট খাওয়া অসভ্যতামি বলা যায় সেই মারাত্মক ভুল টা সাব্বির কখই করে না! তাই সাব্বির মেয়েদের থেকে সড়ে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খায়! রিয়ার মুখ টা সাব্বির এর চোখে পড়লো! সাব্বির এর পায়ের নিচ থেকে রিয়ার ওড়না টা ছাড়া পেয়েছে উপলব্ধি হতেই রিয়া সে খান থেকে চলে গেলো! এখানে রিয়ার জায়গায় অন্য যে কোনো মেয়ে হলে সাব্বির কে দু চার কথা অবশ্যই শুনিয়ে যেতো কিন্তু রিয়া এতো নরম স্বরে কথা গুলো বলেছে তা সাব্বির এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না , সাব্বির অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললো,কে এই মেয়ে এতো মায়া মাখা কোমল গলা ঠিক যেনো … মেঘকন্যা।

— হঠাৎ রিয়ার মোবাইলে কল আসলে রিয়া আতঙ্কিত হয়ে ওঠে দাঁড়ায়, আশে পাশে নজর বুলিয়ে দেখলো অনেক লোকজন তাই বেরিয়ে গেলো, বাইরে এসে কল রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠে ধমকের স্বরে বললো,

~” এই পর্যন্ত তিন টা কল দিয়েছি “কানে তালা লাগিয়ে নিয়ে ঘুরিস নাকি ??

~” জিসানের ধমকে রিয়া বেশ শান্ত গলায় বললো আমি বিয়ে বাড়িতে আছি! ফালতু কথা বলার সময় বা ইচ্ছে দুটোই নেই।

_জিসান হলো রিয়ার মামাতো ভাই যার সাথে রিয়ার বিয়ে ঠিক আছে, ছেলেটা অভিনয়ে পাক্কা ফুপির সামনে ভালো সাজ বেশ ভালোই নিতে পারে অথচ রিয়ার সামনে ঠিক তার উল্টো! কথায় কথায় ধমক দেয় সাথে গালিগালাজ ! রিয়ার ঘরমুখো হওয়ার প্রধাণ কারণ টাই জিসান! জিসান রা দুই ভাই ছোট ভাইয়ের নাম জিহাদ।

জিসান রেগে মেগে দাত কিড়মিড় করে বললো, কোথায় গিয়েছিস আমার অনুমতি নিয়েছিস হ্যাঁ! কাকে বলে গিয়েছিস তুই? ! বল কই তুই..?

__ রাইসার বেষ্ট ফ্রেন্ড মাহি দের বাসায় অনুষ্ঠান! মা কে বলে এসেছি আর কাউকে বলার প্রয়োজন মনে করি নি!

~”বেশি গলা বেড়েছে তাই না! না বলে বিয়ে বাড়ি চলে গেলি! কেন রে নষ্টামি করতে গিয়েছিস হ্যাঁ।

~” নিজের কানে আঙুল দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো রিয়া , এই কারণে রিয়া কোথাও বের হতে চায় না পড়ে অনেক কথা শুনতে হয় জিসানের।

~” বিয়ের পর্ব মোটামুটি শেষ পর্যায়ে আয়না দেখা পর্ব শুরু হলো, সিয়াম লিসা দুজনকে পাশাপাশি বসিয়ে একটি ফ্রেমে বাঁধানো আয়না দুজনের সামনে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করা হলো, আয়না তে কাকে দেখছো… উচ্চস্বরে সিয়াম বলে ওঠে, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পূর্ণতার প্রতিচ্ছবি।

সকলে উল্লাসে চেচিয়ে উঠে , লিসা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেলে!

~” সকলে খেতে বসে এক টেবিলে ” রিয়া সকলের সাথে এক সাথে বসতে চায় নি, মাহি ফাহাদ অহনা সকলের রিকুয়েষ্টে অসস্থি নিয়েই বসে পড়লো! জিসান জানতে পারলে আরো কতোগুলো কথা শুনিয়ে দেবে।

~” সকলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেও ইরফানের নজর শুধু মাহির দিয়ে সিমাব্ধ আছে, চোখে পলক ফেলছে না “মাহির ডান পাশে বসে আছে অহনা রাইসা! বাম দিকে নিশি ফাইজা ও লুবা “।

~” রোহান খাওয়ার মাঝে মাঝে অহনার দিকে তাকাচ্ছে অহনা তাকালে চোখে চোখ পড়তেই রোহান চোখ মারে অহনা লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়। সাব্বির আর রিয়া পাশা পাশি বসাতে রিয়ার আরো বেশি অস্থির লাগছে সাব্বির রিয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো,

এতো সুন্দর মুখ টা এমন করে রাখে কেনো একটু হাসতে পারে না! মেঘে ঢাকা আকাশে মতো হাঁসি টাও আড়াল করে রাখে কেন! এই মেঘকন্যার মনে কিসের এতো ব্যাথা হাঁসি তে ও কৃপণতা।

একেক করে সবাই উঠে চলে গেলো, মাহি উঠতে পারছে না কারণ মাহি পুরো খাবার টা খেতে পারেনি ইরফান ভাই বসে আছে এখন উঠলে অবশ্যই বকা খাবে, তার থেকে ভালো বসে থেকে ইরফান উঠে পড়লে চুপচাপ মাহি উঠে চলে যাবে। বসে বসে মাহি সেই সুযোগের আশা খুজছে..!

~” ইরফান তাকিয়ে মাহির অতিভক্তি বোঝার চেষ্টা করলো এরপর মাহিকে সুন্দর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো মাহির খোলা চুল বাতাসে উড়ছে, চিকন পাতলা ঠোঁটের উপরে হাল রেড কালারের লিপস্টিক গুলো রক্তজবার ন্যায় গভীর সচ্ছ লাগছে ! চোখের কাজলে সমুদ্রের কিনারার বেড়িবাঁধ এর কাছে গিয়ে মাহির চোখে ডুব দিয়ে সাতার কাটতে ইচ্ছে করছে।

~”নিশির উঠে যাবে এমন সময় ইরফানের নিষ্পলক নজর মাহির মুখ পানে নিবদ্ধ দেখে নিশির গা জ্বলে আগুন হয়ে গেলো! আজ নিশি এতো সুন্দর করে সেজেছে শুধু মাত্র ইরফানের নজর কারার জন্য কিন্তু ইরফানের নজর শুধু মাহিতে আবদ্ধ নিশি মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,

~” ইচ্ছে করছে এই মাহির মুখে দশ কেজি কালি মেখে দেই..!

~” হাতে মাংসের ঝোল নিয়ে নিশি টেবিল থেকে উঠতে যাবে এমন সময় ইচ্ছে করেই মাহির দিকে পরে যাওয়ার নাটক করে মাহির মুখে মাংসের ঝোল লাগিয়ে দিয়ে বললো সরি সরি মাহি! এক্সট্রেমলি সরি। আমি খেয়াল করতে পারি নি। বলে লুকিয়ে একটা শয়তানি মিটিমিটি হাঁসলো।

~”মাহি উঠে দাঁড়ায়, অনুনয় কন্ঠে বললো, নো প্রবলেম আই আন্ডারস্ট্যান্ড।

~” ইরফান উঠে এসে মাহির কাছে গিয়ে একটি টিস্যু দিয়ে মাহির গাল ভর্তি ঝোল মুছতে মুছতে বললো, আই আন্ডারস্টুড মোর হোয়াট ইউ ওয়ান্ট টু ডু..!

–বলেই ইরফান এক বাটি ভর্তি মাংস সহ পুরো ঝোল ঢেলে দিলো নিশির মাথায়।

~” ইরফানের এইরকম কর্মকান্ডে মাহি অবাক, নিশি দ্রুত পায়ে হেটে চলে গেলো, মাহি ভীতু গলায় বললো,

~” এটা কি করলেন ইরফান ভাই, নিশি আপু তো এটা ইচ্ছে করে করেনি না বুঝে একটু ভুল হয়ে গেছে তাই বলে…!উনি আমাদের বাসার মেহমান এটা কি ঠিক হলো..?

— মেহমান তো তাই একটু আপ্যায়ন করলাম তুই চাইলে আরেকটু আপ্যায়ন করে দিতে পারি! কি বলিস যাবো নাকি আরেকটু মেহমান দারি করে দিয়ে আসবো..?

~”উহুহ “বলেই মাহি চলে গেলো, বলা যায় না বেশি কথা বললে কখন আবার মাহির মাথায় ঢেলে দেয় তখন আবার মান সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।

__নিশি বেশি উত্তেজিত হয়ে মাহি কে ঝোল মাখালো ঠিকি কিন্তু ইরফানের দৃষ্টি যে মাহির দিকে সেটা দেখেও এটা বুঝতে পারলো না মাহির দিকে কেউ বাজে হাত বাড়ালে ইরফান কোন পর্যায়ে যেতে পারে। হোক সেটা কোনো ছেলে অথবা মেয়ে।

~” বিকেল।গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসছে এমন মুহুর্তে জিসান তার ছোট ভাইকে পাঠিয়েছে রিয়া কে বিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাথে রাইসা কে ও। রাইসার মামি অনেক লোভী মানুষ লোভে পড়েই রিয়ার সাথে তার বড় ছেলে জিসানের বিয়ে ঠিক করেন।তিনি “রাইসা বাবা সিরাজ সিকদারের অনেক সায় সম্পদ আছে সাথে আছে এক বিলাসবহুল বড় দোতলা বাড়ি রাইসা যেহেতু দুই বোন তাই ওদের সব সম্পত্তির মালিক হবে ওদের জামাই রা তাই তিনি চালাকি করে রিয়ার সাথে জিসানের বিয়ে ঠিক করে রাখে ! তার সাথে সাথে ছোট ছেলে কেও রাইসার পেছনে লেলিয়ে দেন যাতে পটিয়ে বিয়ে করতে পাড়লেই তার পরিকল্পনা সার্থক। সিরাজ সিকদারের সব সম্পত্তি হবে তার দুই ছেলের।

_জিহাদ এসে দেখলো রিয়া ও রাইসা সাথে ফাইজা বাইরে দাঁড়িয়ে কিছু একটা দেখছে, জিহাদ কে দেখা মাত্রই রাইসা রিয়া কে বলে আপু তুই ভেতরে যা৷ আমি দেখছি রিয়া রাইসা কে একা রেখে যেতে চায় না কিন্তু রাইসা একটু জ্বোর করেই রিয়া কে ফাইজার সাথে ভেতরে পাঠিয়ে দেয় ব্যাপার টা দূর থেকে ফাহাদ লক্ষ্য করে মনোযোগ সহকারে তাকালো রাইসার দিকে,

~” জিহাদ এসে রাইসার সম্মুক্ষে দাঁড়িয়ে বললো, ভাবি কে নিয়ে বাসায় চল..!

~” তোর ভাইয়ের সাথে এখনো বিয়ে হয়নি আপু তাই ভাবি ভাবি বলা বন্ধ কর.

_আজ নাহয় কাল হবে তো..? ডাকলে সমস্যা কি।..?

~” তুই আর তোর ভাই আস্ত একটা সমস্যা আমাদের জীবনে।

___ জিহাদ সাপের মতো ফোঁসফোঁস করে বললো , রাইসা! ভালো হচ্ছে না কিন্তু মাথা চোড়ে আছে ” বেশি কথা বললে এক দুই ঘা দিয়ে দেবো কিন্তু..!

~”নেশা করে আসছিস নাকি ? বিয়ে করে বউ কে এসব ডায়লক শুনাস গিয়ে..!

~”তোকে বউ বানাবো তার পর এসব ডায়লগ না কাজে করে দেখাবো..!

ফাহাদ দূর থেকে ওদের দুজনের কথা শুনছে আর ওদের অভিভক্তি বোঝার চেষ্টা করছে।

~” রাইসা একটা তাচ্ছিল্যের হাঁসি দিয়ে বললো, তোদের থেকে কুকুরের ব্যবহার ভালো মরে যাবো তবু তোকে বিয়ে করবো না আর আপুর সাথে ও তোর ভাইয়ের বিয়ে হতে দেবো না।

জিহাদ তেড়ে এসে রাইসার দু গাল চেপে ধরলো , কি বললি আমাদের কুকুরের সাথে তুলনা করলি।

~” ব্যথায় রাইসার কাতরে উঠলো ফরসা গাল লাল রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে মনে হচ্ছে গাল বেয়ে এক্ষুনি রক্ত বেড়োবে!

~” ফাহাদ এসে এক ঝটকায় রাইসা কে ছাড়িয়ে নিয়ে, জিহাদ কে এক থাপ্পড়ে মাটিতে ফেলে দিলো “চিকন-চাকন সিমাসাম দেহের এক থাপ্পড়ে যে জিহাদের মতো স্বাস্থ্যবান ছেলে টা এভাবে গড়াগড়ি খাবে ব্যাপার টা রাইসার কাছে বেশ অস্বাভাবিক লাগলো ” রাইসা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো! তালপাতার সেপাই এর হাতে এতো শক্তি ভাবা যায়..!

চলবে……………..?

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩১

~” বিয়ে বাড়ি মানুষ জন এদিক ওদিক ছাড়ানো ছিটানো, কেউ কেউ উকি দিয়ে রাইসা দের দিকে কৌতুহল নজরে তাকাচ্ছে বার বার, জিহাদ উঠে দাঁড়ায়, ফাহাদ দু হাত টান করে আঙুল ফুটিয়ে জিহাদের কাধে হাত দিয়ে কলার ঠিক করতে করতে বললো, শোন বাসায় বিয়ে হচ্ছে তাই আজ কিছু বললাম না তবে এর পর যদি এরকম কিছু দেখি তাহলে….!

জিহাদ দাঁত কিলবিল করে বলে, তাহলে কি হ্যাঁ..? কে রে তুই আমাদের মাঝে কেনো আসছিস..?

~” ফাহাদ এক হাত পকেটে গুজে ঘাড় কাত করে বললো, আরফান ফাহাদ চৌধুরী “এই বাড়ির ছোট ছেলে..! কিন্তু তুই বল ,, তোকে দাওয়াত দিয়েছি..?? উহুম দেই নি! তাহলে তুই এখানে কি করছিস..? নাকি বিনা দাওয়াতে বিয়ে বাড়ি যাওয়ার অসভ্যস আছে.! দিস হ্যাবিট ইজ ভেরি ব্যাড ব্রো !

~” চতুর জিহাদ বুঝতে পারলো এখানে ফাহাদের সাথে বাড়াবাড়ি করলে সমস্যা হবে বিয়ে বাড়ি অনেক লোকজন তাই জিহাদ কথা না বাড়িয়ে ফাহাদ কে ডেঙিয়ে সামনে এসে রাইসার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে বললো,

ভাইয়া পাঠিয়েছে আমায়,ভুলে যাস না তোর আপুর সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে ঠিক, কিছুদিন পরে বিয়ে, তোর আপু কে ডাক, বাসায় চল রাইসা নয়তো..?

~” রাইসা এবার রাগান্বিত কন্ঠে বললো, নয়তো কি হুম, বেশি বাড়াবাড়ি করছিস তোরা! মা কে যদি সব কিছু বলে দেই তাহলে মা তোদের বুঝিয়ে দিবে তোরা কিসের যোগ্য!

~”জিহাদ রাইসার কথায় পাত্তা না দিয়ে রাইসার হাত শক্ত করে ধরলো, রাইসা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু জিহাদের হাতির মতো দেহের কাছে রাইসা নিতান্তই পিপড়ে!

~”ফাহাদ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো, ঘাড়ের রগ গুলো ফুলে উঠেছে, চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো এরপর কাছে এসে জিহাদের হাত থেকে রাইসার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে জিহাদের হাত টা ঘুরিয়ে পেছনে নিয়ে মোচড় দিলো, জিহাদের কানের কাছে মুখ নিয়ে হেস্কি স্বরে বললো…

~” রাই আমার সাথে এসেছে আমার সাথেই যাবে..! ওদের আমি আমার দায়িত্বে এনেছি আবার নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দেবো,, তুই বাসায় গিয়ে ঘুম দে, রাইয়ের জন্য আমি আছি।

~” এরপর জিহাদের হাত টা ছেড়ে দিয়ে দুটো ছেলে কে ডেকে বললো, এই নর্দমা থেকে উঠে আসা পাঠা কে বাইরে ফেলে দিয়ে আয় তো..!

~” রাইসা ঠোঁট কামড়ে হেঁসে ফেললো, ফাহাদ রাইসা কে নিয়ে ঘরে চলে গেলো, ছেলে গুলো জিহাদ কে বাইরে বের করে দিলো।

~” ইরফানের কাছে এতো জঘন্য ভাবে অপমানিত হওয়ার পরে নিশি এ বাড়িতে ইরফানের মুখোমুখি হাওয়ার সাহস নেই ” বিয়ের নিয়ম কানুন শেষ হলে লিসার মামা মানে নিশির বাবা যেতে চাইলে নিশি ও যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে নেয়, লিসা, অহনা, খুব করে জ্বোর করলো নিশি কে রাখার জন্য কিন্তু নিশি চলেই যাবে, কিছুক্ষণ পর মাহি এসে নিশি কে বলে,

~” নিশি আপু তুমি যেও না প্লিজ ইরফান ভাইয়ের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি প্লিজ থেকে যাও।

__মাহি যদি জানতে পারতো তার এক মাত্র ভালোলাগা মাহির ড্রিম বয়ের দিকে নিশি হাত বারিয়েছিলো তাহলে হয়তো মাহি কখনোই নিশির সাথে এতো ভালো করে কথা বলতো না ” মাহির কথা শুনে নিশি মনে মনে ভাবছে,

–যার জন্য এ বাড়িতে আসা সেই মানুষ টাই তো তোমার কাছে বন্দি মাহি! এখন আর এখানে এক মুহুর্ত থাকার ইচ্ছে নেই!

— সবাই কে বিদায় জানিয়ে নিশি বাবার সাথে চলে গেলো, সন্ধ্যা নেমে এলো ” রাইসা ও তার আপু বাসায় চলে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে বিদায় জানালো। রাবেয়া বেগম ও নাজিফা বেগম ওদের রাখার জন্য জ্বোরাজ্বোরি করলো, ওরা থাকলো না মাহমুদা বেগম এখানে উপস্থিত থাকলে হয়তো রেখেই দিতো মাহমুদা বেগমের সাথে রাইসার আবার খুব ভাব আছে! কিন্তু মাহমুদা বেগমের শরীর ভালো না থাকায় ঘুমে ছিলো..!

~” ফাহাদ গিয়ে গাড়িতে বসলো, বাইরে এসে রাইসা খেয়াল করলো নিজের ফোনটা রেখে এসেছে হয়তো মাহির রুমে কারণ রাইসা আসার পর থেকে মাহির রুমেই বেশি ছিলো, তাই মাহি কে সাথে নিয়ে রাইসা ভেতরে গেলো ফোন আনার জন্য, রিয়া বাইরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো, গধুলী সন্ধ্যায় আকাশে সাদা মেঘেরা ভেসে যাচ্ছে, চাঁদের আলো মিটিমিটি জ্বলছে, আবার মেঘের পেছনে আড়াল হয়ে যাচ্ছে! রিয়া সেদিক তাকিয়ে আছে রিয়ার রাতের আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে বরাবরই খুব ভালো লাগে, হঠাৎ কারো উপস্তিতি টের পেয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো, সাব্বির দাঁড়িয়ে আছে ,রিয়া আবার মনযোগ দিলো বহুদূর আকাশে!

~” এই মেয়ে একটু কি হাসা যায় না..?

—মন খারাপ লুকিয়ে হাসা টা অনেক কঠিন ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় আমি এতো বুদ্ধিমতি নই!

~” সাব্বিরের প্রশ্নে রিয়ার সহজ শিকারক্তি! সাব্বির একটু ভাবুক স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

~” মন খারাপের কারণ..?

~” অপরিচিত লোকের সাথে নিজের মনের কথা বলা টাও এক ধরনের বোকামি আমি এতোটাও বোকা নই।

~” পরিচিত হতে কতোক্ষণ ..?

~” ক্ষানিক এর পরিচয়ে কি লাভ..? চলে যাবো এক্ষুনি রাতে এই বিষয় নিয়ে একটু চিন্তা করে ঘুমিয়ে যাবো সকালে উঠে ভুলে যাবো কে আপনি কি আপনার পরিচয়, ” শুধু শুধু এই আলাপের মানে হয় না।

— প্রতিটি কথা রিয়া একদম স্বাভাবিক কন্ঠে বললো। রিয়ার তিক্ত কথায় সাব্বির একটা বড় নিশ্বাস ফেলে জবাব দিলো,

~” তুমি মেয়ে ভীষণ চালাক, কি সুন্দর ঘুড়িয়ে প্যাচিয়ে কঠিন কথা গুলো কতো সহজ ভাবে বলে দিলে,

~” উহুম ! কঠিন নয় তবে কিছুটা অপ্রিয় সত্যি কথা।

— রাইসা ও মাহি চলে এসেছে, রিয়া রাইসা দুজন গিয়ে গাড়িতে বসলে মাহি ওদের বিদায় জানালো “ফাহাদ স্ট্রেয়ারিং ঘুড়িয়ে গাড়ি সার্ট দিলো, ফাহাদ লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে এক পলক রাইসা কে দেখলো, রাইসা জানালা খুলে বাইরের দিকে মাথা নিয়ে তাকিয়ে আছে খোলা চুল গুলো হাওয়ায় উরছে। তখনই রিয়ার ফোনে কল এলো জিসান কল করেছে অবশ্যই এখন নানা কথা শুনিয়ে দেবে সেই সম্ভাবনায় রিয়া ফোন রিসিভ করলো না, পর পর ছয় বার বেজে ফোন স্ক্রিন বিন্ধ হয়েছে মাত্র আবার সাত নাম্বার কল বাজা শুরু করেছে ” রাইসা ঘুরে তাকিয়ে একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,

~” আপু তোকে কতোবার বলেছি এই বদমাশ লোকটা কে ব্লক করার জন্য।

–আমি তো করতেই চাই কিন্তু মায়ের কথা ভেবে করতে পারি না..!

~ ” তুই শুধু এক বার বল আমি মা কে সব বুঝিয়ে বলবো দেখবি মা সব বুঝতে পারবে..।

_” পরে যদি কোনো প্রবলেম হয়… তুই তো জানিস ওরা দুই ভাই কেমন, পরে যদি কিছু ঝামেলা করে..তাই।

_ ফাহাদ ড্রাইভ করতে করতে ওদের দু বোনের কথাকোপন শুনছে, রাইসা উদাস মনে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিয়া মন মরা হয়ে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।

~” ফাহাদ মনে মনে ভাবছে, রিয়া ওর ফিয়ান্সি মানে জিসান কে একদমি পছন্দ করে না তাহলে বিয়ে করতে রাজি কেন হয়েছে?? ফাহাদের মনে খটকা লাগছে বিষয় টা জানতে হবে।

_” রাত আট টা নাগাদ ইরফান কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস লাগবে বলে বাসা থেকে বের হয় ইরফান একা চয়েস করে কেনাকাটা করতে পারবে না চয়েস করার জন্য মাহি কে নিয়ে যায় আসলে ইরফান নিজেই আনতে পারতো কিন্তু ইরফান মাহি কে নিয়ে একটু একা টাইম ইন্সপেন করতে চাইছিলো “ইরফানের অসুস্থতার পর থেকে মাহি কে খুব কাছে দেখে বেশিক্ষণ দেখা খুব কম সময়ই পেয়েছে এর পর বিয়ের হৈহুল্লোড়ে তো আরো কম দেখা মিলেছে । মাহি কে নিয়ে প্রথমে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ইরফান জিজ্ঞেস করলো,

–কি খাবি…?

~” মাহির ক্ষিদে নেই দুপুরে ইরফানের ভয়ে অনেক গুলো খেয়েছে তেমন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু ইরফান ভাই নিয়ে আসছে কিছু তো খাওয়া লাগবেই তাই আস্তে করে বললো,

— ” আইসক্রিম ”

~” হুম ” আর..?

~” আর কিছু না..!

~” পিজ্জা, বার্গার ?

~” উহু,

” ফুচকা..?

~” ফুচকার কথা শুনে মাহি তো না করতে পারে না তাই ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো ” ইরফান ওয়েটার কে ডেকে বলে, একটা স্পেশাল ফুচকা সাথে আইসক্রিম ও একটা হট কফি..!

~” মাহি ফুচকা মুখে তুলে চোখ বন্ধ করে ফুচকার স্বাদ নিচ্ছে ইরফান কফি হাতে নিয়ে নির্বাক দৃষ্টি তে দেখে তা উপভোগ করছে ইরফান তৃপ্তির হাসি দিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে আওড়ালো,

” If I could, I would stop time right here for
this beautiful moment of yours. My weakness

~” মাহির আইসক্রিম খাওয়া শেষ হলে বিল দিয়ে বেরিয়ে গেলো মাহিকে নিয়ে এর পর টুকটাক কিছু কেনাকাটা করে মার্কেট থেকে বের হতেই এক মধ্যে বয়সি ভদ্র মহিলা ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় ” মহিলাটি বেশ পরিপাটি খুব সুন্দর করে কাপড়ের কুচি গুলো পড়ে আছে রুপ তার বয়স কে হার মানায়। মহিলাটি ইরফানের মুখোমুখি এসে ইরফানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

_” কেমন আছো বাবা..??

—ইরফান বিরক্তি তে নাক মুখ কুচকে ফেললো ” মহিলাটি ইরফানের কাছাকাছি এসে হাত বারিয়ে ইরফানের গালে হাত রাখতে চাইলে ইরফান সরে দাঁড়ায় পাশ কাটিয়ে মহিলাকে ডেঙিয়ে চলে গিয়ে বাইকে বসে মহিলা টি ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে সেদিকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তার গাল দিয়ে মাহি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো কিছু না বুঝতে পেরে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে, মহিলাটিকে পর্যবেক্ষণ করছে মাহি “তাকে আগে কোথাও দেখি নি মাহি কিন্তু তবুও চেহেরাটা যেনো চেনা চেনা লাগছে! মাহি মনে মনে ভাবছে,

” আচ্ছা উনি কি ইরফান ভাই কে চেনে? দেখে তো তাই মন হচ্ছে! কিন্তু উনি সামনে আসতেই ইরফান ভাই এমন গোমড়া মুখে চলে গেলো কিন্তু কেনো?

~” ভদ্র মহিলা এবার চোখ মুছে মাহির কাছে এসে মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, কি নাম তোমার মা..?

~” মাহি অবাক চোখে তাকালো এর পর আস্তে করে বললো,

~” মেহরিন নূর মাহি।

~” ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই নাকি..?

~” বাইক স্টার্ট দিতে দিতে কথা গুলো বলে ইরফান! ইরফানের ঝাজালো কন্ঠে চেঁচিয়ে বলা কথায় আৎকে উঠে মাহি “হঠাৎ ইরফান ভাইয়ের কি হলো তার কন্ঠস্বর এতো ভয়ংকর শোনা গেলো কেনো?? মাহি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

~” এইতো আসছি..!

__ বলেই ছুটে গিয়ে বাইকে বসে ইরফান নিচে পড়ে থাকা মাহির ওড়নার কিছু অংশ তুলে নিয়ে বাইকে টান দিলো, মাহি পেছনে তাকিয়ে এক ঝলক তাকালো ভদ্র মহিলার দিকে, মহিলাটি এখনো তাকিয়ে আছে ওদের দিকে, চোখের পলকের মধ্যে তাকে আর দেখা গেলো না ইরফান এতো স্পিডে চালিয়েছে যে এক মুহুর্তের মধ্যে অনেক দূর চলে এসেছে! সারা রাস্তায় এক বারো মাহি জিজ্ঞেস করতে পারলো না ওই কে ওই ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করার সাহস নেই! ইরফানের রাগান্বিত মুখ দেখেই মাহি ভয়ে শিথিল হয়ে গেলো। রাস্তায় আর কোথাও বাইক থামালো না সোজা বাসায় ফিরলো ইরফান!

~” মাহি কে নিয়া ঘরে এসে জিনিসপত্র গুলো টেবিলে রেখে শোফায় বসে শার্টের হাতা গুটিয়ে কলার টেনে গা এলিয়ে দিলো সোফায় ভীষণ বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে ইরফান কে ! ইরফানের অস্থিরতা অনুভব করে ফাহাদ জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে ভাইয়া..?

~” কিছু না ”

_ বলেই সোজা উপরে উঠে নিজের রুমের দিকে হাটা ঠেকালো, ফাহাদ ইরফানের পিছু পিছু চলে গেলো ” মাহির অবাক চোখে তাকিয়েই রইলো “হঠাৎ করে ইরফান ভাইয়ের এই মুড সুয়িং এর কারণ টাই বুঝে উঠতে পারছে না। বেচারা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অহনা আপুর কাছে এসে বসলো।

~” নিচের রুমে বাসর সাজাচ্ছে, রোহান ” সাব্বির ও নিরব ” ফাহাদ ও ওদের সাথে সাজাচ্ছিলো একটা কল আসাতে একটু বের হয় আর ইরফান কে এমন অস্থির দেখে ওর কাছে চলে গেলো।

_” রুম সাজানো গোছানো শেষ ” বাসরের দরজা লক করা খুলতে পঞ্চাশ হাজার লাগবে! পঞ্চাশ হাজার টাকা না নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হলো না বাধ্য হয়ে সিয়াম বেচারা নতুন বউয়ের দিকে তাকিয়ে পুরো টাকা দিয়ে রুমে প্রবেশ করে।

~” গভীর রাত চারোদিকে শূন শান নিরব ‘হঠাৎ মধ্যে রাতে ঘুম ভাঙে মাহির আর ঘুম।আসছে না কিছুতেই ” এদিক ওদিক ছটফট করছে উঠে বসে পড়লো “মাহির মাথায় শুধু আসছে সেই মহিলার কথা কে ছিলেন ওই মহিলা ইরফান ভাই কে কিভাবে চেনে ইরফান ভাই কেনই বা তাকে এড়িয়ে গেলো। চিন্তায় মাহির অস্থির লাগছে! গলা টা শুকিয়ে আসছে একটু পানি খাওয়া প্রয়োজন! উঠে এসে দাঁড়াতেই মাহি দেখতে পেলো রুমের জগ খালি ‘আজ হয়তো মা পানি রাখতে ভুলে গেছে তাই মাহি পানি খেতে বের হয় ইরফানের রুমের দিকে চোখ পড়তেই মাহির পা থেমে গেলো।

__ইরফানের রুমের দরজা টা খোলা আলো জ্বলছে তাহলে কি ইরফান ভাই এখনো ঘুমায়নি..? একটু গিয়ে দেখবো? না আগে একটু পানি খাওয়া প্রয়োজন তাই মাহি নিচে নামলো পানি খেয়ে নিজেকে সতেজ করে উপরে উঠে ইরফানের রুমে একটু উকি দিলো মাহির চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো, ইরফান ঘুমিয়ে আছে নাজিফা বেগমের কোলে মাথা রেখে, ঠিক যেনো ছোট বাচ্চারা মায়ের কোলে ঘুমায় তেমন! কি নিষ্পাপ লাগছে সন্ধ্যার সেই রাগি চেহেরার ছিটেফোঁটা নেই কেউ বলবেই না এই ছেলের এতো রাগ। নাজিফা বেগম হাত দিয়ে ছেলের মাথায় চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

~” কৌতূহল মেটাতে মাহি দরজার বাইরে থেকেই জিজ্ঞেস করে ফেললো, বড় আম্মু তুমি এখনো ঘুমাও নি..??

__” ” হিশশশশ!

~” ইশারায় নাজিফা বেগম ঠোঁটে আঙুল দিয়ে মাহি কে চুপ করতে বলে এর পর ছেলের মাথা টা বালিশে রেখে সুন্দর করে শুইয়ে দিয়ে বাইরে এসে মাহি কে বললো ” এই আধাঘন্টা যাবৎ ছলেটা ঘুমালো “কি হয়েছে কে জানে কেমন উদাস লাগলো আমার ইরফান কে! আমি রুমে আসাতে কেমন বাচ্চাদের মতো বায়না করে বললো, মা তোমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমাই..?

~” মাহি শান্ত চোখে তাকালো নাজিফা বেগম এবার চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো, তুই এখনো ঘুমাস নি কেনো রে মা..? কি হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে নাকি..?

~” না ..না বড় আম্মু আমি ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ ঘুম ভাঙলো পানি পিপাসা লেগেছে রুমে পানি ছিলো না তাই নিচে নেমেছিলাম ” তুমি এবার ঘুমাও গিয়া অনেক রাত হয়েছে!

~” নাজিফা বেগম নিচে নেমে গেলেন মাহি দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়ির কাছে, মাহি কে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়তে বলে নাজিফা বেগম নিজের রুমের দিকে যেতে নিয়ে হঠাৎ থেমে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে মাহি কে বলে,

~” দেখ তো মা ইরফানের রুমের লাইট অফ করে আসিনি মনে হয়? আলো জ্বললে ও ভালো ভাবে ঘুমাতে পারে না একটু পড়েই আবার উঠে যাবে ছেলেটা। তুই গিয়ে একটু অফ করে দিয়ে আসবি..? ।

~” আচ্ছা বড় আম্মু তুমি যাও আমি অফ করে দিয়ে আসছি..!

~” ঠিক আছে।

—ইরফানের রুমে এসে মাহি থমকে গেলো, কি অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি “মাহি মনে মনে ভাবছে,

~” আচ্ছা শুনেছি মেয়েরা ঘুমালে নাকি সুন্দর লাগে ” কিন্তু ছেলেদের ঘুম জড়ানো চেহেরায় এতো টা মায়া থাকে তা তো কেউ বলেনা!

~” মাহি একটু একটু করে ঘুমন্ত ইরফানের কাছে আসতে লাগলো, অনেক টা কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে পড়লো ” ইরফানের গা থেকে আসা পারফিউমের শুভ্র ঘ্রাণ মাহির নাকে এলো “কাঁপা কাঁপা হাতে ইরফানের মাথায় আলতো হাতে চুল গুলো নাড়াচাড়া করছে ” মাহির শরীরে শিহরণ বইতে শুরু করেছে, কি অদ্ভুত অনুভূতি হৃদয়ে তান্ডব শুরু করেছে ” এটাই বুঝি ভালোবাসা?

~” ইরফানের ভাড়ি নিশ্বাস মাহির হাতে লাগছে “মাহির পুরো শরীর বিদুৎ এর ঝল্কার মতো কেঁপে উঠল ” মাহি ইরফানের কানের কাছে মুখ নিয়ে কম্পিত কণ্ঠে নেশালো গলায় হিসহিসিয়ে বললো, জানেন,

~” ইরফান ভাই আপনি আমার অবেলায় কারেন্টে

—-~” শক খাওয়ার মতো অনুভূতির কারণ,,,,,!

মাহির হৃদয়ের কম্পন বারছে “দ্রুত হাত সরিয়ে দূরে এসে দাঁড়ায়! লাইট এর সুইচ অফ করে দরজা টা চাপিয়ে বেড়িয়ে গেলো মাহি নিজের রুমে এসে দরজার বন্ধ করে খাটের ওপর শুয়ে পড়লো নিজের হাতের দিকে দিকে তাকিয়ে আছে ” এই হাতে এখনো ইরফান ভাইয়ের গায়ে থাকা ঝাজালো পারফিউম এর ঘ্রাণ মিশে আছে। এই হাতে সে আজ ইরফান ভাইয়ের চুল স্পর্শ করেছে ” মাহি হাত টা নাকের কাছে নিয়ে ইরফানের শরীরের ঘ্রাণ অনুভব করার চেষ্টা করলো এর পর দু হাত দিয়ে নিজের মুখ লুকালো।

★★★★★_________________________★★★★★

—– সকালে উঠে সকলেই হাঁসি খুশি আছে ” আজ সকাল সকাল ফরহাদ চৌধুরী ও কাশেম চৌধুরী দুই ভাই অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নাস্তা সেরে রওনা দিলো, ইরফান অফিসে যাবে কিন্তু আজকে একটু দেরি করে যাবে! সিয়াম ও লিসার বিয়ের তিনদিন পুরোন হয়েছে দু এক দিনের মধ্যে ওরা ও চলে যাবে সিয়াম দের বাসায়!গতকাল রাতে লিসার বাবা জামসেদ শেখ লুবা কে নিয়ে USA ফিরেছে তাই ফাইজার মন খারাপ তার প্রিয় বান্ধবী চলে গিয়েছে তবে একটা সুখর পাওয়ার পরে ফাইজা উল্লাসে চেচিয়ে উঠে ।

~” ইরফান ও ফাহাদ সকাল সকাল এক গাদা মিষ্টি নিয়ে বাসায় এসেছে ” তা দেখে সকলের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গেলো ” মাহি “অহনা শোফায় বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে কিছুক্ষণ পর পর উল্লাসে শব্দ করে হেঁসে উঠছে। আজ চৌধুরী বাড়িতে সকলের খুশির প্রধান কারণ হচ্ছে মাহমুদা বেগম ” রাতে সবাই জানতে পেরেছে মাহমুদা বেগম প্রেগন্যান্ট! এ নিউজ টা পাওয়ার পরে পুরো পরিবারের খুশির বন্যা বয়ে, গেলো।

~ ” মাহি ” অহনা “ফাইজা ” ও লিসা এরা তো বেবির জন্য কি কি কিনে রাখবে কি নাম রাখবে তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

— রাবেয়া বেগম ডেকে নিয়ে ” ওদের সবাই কে খেতে দিয়ে চলে গেলো রান্না ঘরের দিকে নাজিফা বেগম দুপুরের রান্না বসিয়ে দিচ্ছে! সিয়াম, ফাহাদ ও ইরফান এক পাশে বসেছে, অহনা, মাহি ফাইজা ও লিসা অন্য পাশে! সিয়াম প্লেটে বেগুন ভাজা নেওয়ায় লিসা বারণের স্বরে বলে,

~”তোমার তো বেগুনে এলার্জি বেগুন ভাজা খেলে তুমি কাশবে ওটা খেও না..!

~” বলেই লিসা নিজের খাওয়ায় মনযোগ দিলো! ইরফান সিয়ামের কাছাকাছি এসে আস্তে করে বললো,

~”ভাইয়া তুমি কি এমন করলে? যে আমার বান্ধবী মাত্র তিনদিনের মধ্যে তুই থেকে তুমি তে চলে এসেছে.!

~” সিয়াম গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

~” তোর বড় ভাই লাগি ভুলে যাস না..।

~” আরে ধুর ভাই পরে আগে বান্ধবীর বর।

~” ফাহাদ ঠোঁট কামড়ে হেঁসে ফেললো ~

~” সিয়াম কপালে হাত দিয়ে বললো ” তোদের মতো ভাই থাকলে দুষমন লাগে কিসে..? সময়ের পরিবর্তনে ভাইকে বান্ধবীর বর বানিয়ে দিলি। কি কপাল আমার!

~” এবার ফাহাদ ও ইরফান দুজনেই শব্দ করে হেসে ফেললো!

~” মাহি অহনা, লিসাও ফাইজা ড্যাপড্যাপ করে ওদের দিকে তাকিয়ে হাসির কারণ বোঝার চেষ্টা করলো “কিন্তু বুঝতে পারলো না।

~” মনির চৌধুরীর আজ বিকেলে সিলেটে ব্যাক করার কথা ছিলো কিন্তু সে বাবা হতে চলেছে এ কথা জানার পর সে আরো দুদিনের ছুটি বারিয়ে নেয় কল করে। বিকেলে মাহবুদা বেগম কে নিয়ে চেক আপ করাতে গেলেন তিনি ” মাঝে এতো বছরের গ্যাপ থাকায় ডক্টর মাহমুদা বেগম কে একটু বেশি কেয়ারফুল থাকতে বলে!

চলবে………?