#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩২
~” অনেকক্ষণ যাবৎ কল করে কোনো রেসপন্স না পেয়ে বাসায় চলে এলো রোহান, ইরফানের রুমে উকি দিয়ে দেখলো ইরফান নেই “নিশ্চয়ই বেলকুনিতে আছে গিয়ে দেখলো তাও নেই এরি মাঝে ইরফান সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় ” ইরফান কে দেখা মাত্রই রোহান একটু কেঁশে বলে ওঠে,
__কিরে শালা..?
~” তোর কোন জন্মের শালা লাগি….? তোর না হওয়া বউয়ের বড় ভাই আমি.?
~” আরে শালা নাহয় সমন্ধি একটা তো হবি! সেই একি কথা ভিন্ন ভাষা। তা তুই এই অসময়ে গোসল করলি কেন হ্যাঁ তাও বিবাহিত হলে না হয় মানা যেতো..!
~” ভন্ডামি বাদ দিয়ে কি বলতে আসছিস তা বল..?
— এক জায়গায় যেতে হবে তুই ফ্রেশ হয়ে বেরহ আমি নিচে আছি..!
~” আচ্ছা ”
~” ইরফানের রুম থেকে বেরিয়ে রোহান নিচে যাবে তখন দেখতে পেলো তার রাগীনি হেটে হেটে ছাদে উঠেছে, বেনুনি করা চুল গুলো কোমরের সাথে দুলছে, রোহান একটু এগোতেই শাড়ি পড়া লিসা আচল সামলাতে সামলাতে রোহানের সামনে এসে সামনে দাঁড়ালো,
~” কিরে কখন এসেছিস..?
~” লিসা কে দেখা মাত্রই রোহান লম্বা এক সালাম ঠুকলো,, একটু সরিকতার স্বরে বললো,
~” কেমন আছেন ভাবি..?
~” রোহানের মুখে ভাবি ডাক শুনে লিসার ভিষণ হাঁসি পাচ্ছে, কন্ট্রোল করতে না পেরে মুখ চেপে হেঁসে ফেললো লিসা! ইরফানের সাথে সাথে রোহান, ও লিসা কে তুই করেই বলতো লিসা ও সবাই কে তুই করে বলতো রোহান আর ইরফান সিয়াম কে শুধু ভাই বলে সম্মোধন করতো যেহেতু সিয়াম ওদের বড় ভাই তাই! কিন্তু লিসা সিয়াম কেও তুই বলতো “বিয়ের পড়ে বড়দের সামনে জামাই কে তুই বললে খারাপ দেখাবে তাই সিয়াম কে তুই বলা বাদ দিয়েছে লিসা। লিসা দুই হাত সামনে ভাজ করে বললো,
~” তুই ভালো হবি কবে রোহান রোহান..?
— বউ পেলে ভালো হয়ে যাবো..?
~” লিসা আবার ও হেঁসে ফেললো রোহানের কথায় ” দুজনের কথা কোপন চলতে চলতে ইরফান ফ্রেশ হয়ে চলে আসে “এরপর ইরফান ও রোহান নিচে নেমে যায় ” নামার সময় রোহান ঘুরে ঘুরে ছাদের চিলেকোঠার দিকে তাকাচ্ছিল আরেকটা বার যদি তার দেখা মিলে কিন্তু না দেখা পেলো না! ইরফান ফাহাদ কে কল করে সেখানে আসতে বলে দুজন দুটো বাইক নিয়ে চলে গেলো। ছাদের থেকে অহনা রোহান কে যেতে দেখে একটু উকি দিলো গেইট ছাড়িয়ে চলে গেলে আর দেখতে পেলো না, দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অহনা লাজুক হাঁসে।
~” কিছুদিন যাবৎ রাইসা ও রিয়ার ব্যাপার টা ফাহাদ কে খুব ভাবাচ্ছে বিশেষ করে রিয়ার বিয়ের ব্যাপার টা বেশি কৌতূহল সৃষ্টি করছে ফাহাদের মনে! ফাহাদ সেদিন স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে রিয়ার এ বিয়েতে সম্মতি নেই রাইসা তো ওদের দেখতেই পারে না তাহলে এই বিয়ের কারণ টা কি জানা দরকার ” মাহির রুমে গেলো ফাহাদকে দেখে মাহি এক ঝলক হাঁসি দিয়ে বললো,
~”ভাইয়া তুমি….কিছু বলবে নাকি..?
_” বোনের সামনে এভাবে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে ফাহাদের একটু বিব্রতকর লাগছে, তাই একটু আমতা আমতা করে বললো, আচ্ছা বোন তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি..?
~’ এভাবে বলছো কেনো ভাইয়া একটা কেনো দশ টা জিজ্ঞেস করো সমস্যা কি..!
_” তোর বেষ্ট ফ্রেন্ডদের কি সমস্যা…?
_” মানে রাইসার আবার কি হয়েছে..? কি সমস্যার কথা বলছো ভাইয়া বুঝতেছি না..!
~” ওই দিন একটা ছেলে এসেছিলো ওর ভাইয়ের সাথে নাকি তোর বান্ধবীর বোনের বিয়ে?
_মাহি একটু ভাবুক স্বরে বলে ওঠে ওও ওই ফাজিল জিহাদ টা এসেছিলো বোধহয় .. তুমি দেখেছিলে ভাইয়া??
~ হুম দেখেছি! কিন্তু তুই জানলি কিভাবে ওটা ফাজিল?
” আমি সব জানি।
~” কি কি জানিস বল আমাকে…!
এবার মাহি এক মনে বলতে থাকে তুমি জানো না ভাইয়া ওরা কি মাত্রায় ফাজিল “রাইসার মামা মামি এক প্রকার জ্বোর করেই এই বিয়ে তে রাজি করিয়েছেন আন্টি কে প্রথমে তো আন্টি রাজি ছিলেন এই না কতো কথা এইটা সেইটা বলে অতিষ্ট হয়ে আন্টি রাজি হয় কিন্তু রিয়া আপু মন থেকে এটা মানতে পারে না মায়ের মুখে কিছু বলতে পারছে না তাই এখনো সে বলতে পারে না সে যে এই বিয়েতে রাজি নয়! আর জিসান মানে যার সাথে রিয়া আপুর বিয়ে ঠিক হইছে সে তো হাতির পাঁচ পা দেখে নিয়েছে এখন থেকে আপুর সাথে যে ভাবে কথা বলে বিশ্রি ভাষায় কথা বলে ” রাইসা আন্টি কে বুঝিয়ে সব বলতে চায় কিন্তু যদি কোনো অশান্তি সৃষ্টি হয় তাই রিয়া আপু কিছু বলতে বারণ করে। বড় ভাইয়ের সাথে সাথে এখন তো ছোট ভাই টাও এখন আবার রাইসার পেছনে লেগেছে সুযোগ পেলেই রাইসা কে বিরক্ত করে। ওদের জিবন অতিষ্ট করে তুলছে ওরা দুই ভাই!
__” ফাহাদ একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে , এতো কথা আগে কেনো বলিস নি আমায়..?
~” বলেই বা কি কিছু তো করার নেই ভাইয়া।
__কে বলেছে কিছু করার নেই সব কিছুরই কিছু না কিছু সমাধান আছে ওদের সমস্যার ও সমাধান মিলবে!
~” সত্যি বলছো ভাইয়া তুমি ওদের সাহায্য করবে…?
~” হুম ওর সাথে বিয়ে ভেঙে দেবো ” কিন্তু তাতে তোর আর তোর বান্ধবীর ও হেল্প লাগতে পারে..!
— যা লাগবে আমায় বলো আমি সব প্রকার হেল্প করতে রাজি তুমি শুধু রিয়া আপুর বিয়ে টা ভাঙার ব্যাবস্থা করো ওই ছেলেটার সাথে বিয়ে হলে তার জীবন টা শেষ হয়ে যাবে।
~’ আজকে সন্ধ্যায় ফাহাদ ইরফান রোহান ও নিরব ওরা সকলে জানতে পেরেছে সাব্বির সেদিন রিয়া কে দেখে টাস্কি খেয়ে প্রেমে পড়ে বসে আছে ” কথা শুনে ইরফান, রোহান, নিরব সবাই খুশি হলেও ফাহাদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো, কারণ জানতে চাইলে ফাহাদ সবাই কে বলে দিলো, রিয়ার বিয়ে ঠিক থাকার ব্যাপার টা সাথে এটাও বলে রিয়া আপু বোধহয় এই বিয়েতে রাজি নয় রাই তো এই বিয়ের বিরুদ্ধে আছে বলেই বুঝতে পেরেছে ” সব কথা শুনে ইরফান ফাহাদ কে বলে মাহির কাছ থেকে সব কিছু জানার জন্য। সব কিছু শুনে ফাহাদ তো এখন পুরো শিউর যে পুরো বিয়েতে রিয়া রাইসা দুজনেই অমত। দ্রুত ইরফান কে সব টা জানায় ফাহাদ।
— রিয়ার বিয়ে ভাঙার জন্য একটি ফুল প্ল্যান করতে হবে কিন্তু সবার আগে রিয়া ও সাব্বির কে আরেকবার দেখা করানো দরকার। তার জন্য রাইসার হেল্প প্রয়োজন কিন্তু রিয়া তো এভাবে দেখা করতে রাজি হবে না তাহলে কি করা যায়.? কিছুক্ষণ ভেবে ইরফান ফাহাদ কে নিয়ে মাহির রুমের দিকে গেলো ! রাত তখন নয়টা তেতাল্লিশ, মাহি ও অহনা বসে বসে রিয়ার ব্যাপারেই কথা বলছে! , এরি মধ্যে ইরফান ও ফাহাদ মাহির রুমে প্রবেশ করে ” দুজন কে এক সাথে দেখে মাহি কিছুটা বিস্ময়কর ভাবে তাকালো, ফাহাদ মাহির কাছে এসে বলে ” রিয়া আপুর বিয়ে ভাঙার জন্য ইরফান ভাই আমাদের সাহায্য করবে এ কথা শুনে মাহির চোখ দুটো আনন্দে চিকচিক করে ওঠে অহনা ও বেশ খুশি! অহনা এতোক্ষণ মাহির কাছে জিসান ও জিহাদ দের বাজে বিহেভিয়ারের কথাই শুনছিলো তাই অহনা ও চায় রিয়ার সাথে জিসানের বিয়ে টা না হোক! সেদিন রিয়ার সাথে অহনার একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েগিয়েছিল ।
__’ ইরফান মাহি কে বলে রাইসা কে সব টা জানানো প্রয়োজন এর পর রাইসা রাজি থাকলে প্ল্যান আগাতে হবে সাথে রাইসার হেল্প ও প্রয়োজন! মাহি ভ্যবলার মতো মুখ করে ঠোঁট উল্টে প্রশ্ন করে,
~ আমি রাইসা কি কিভাবে বলবো কি বলবো…?
~” ইরফান বুঝলো এই বাচ্চা মেয়েটাকে বোঝাতে গেলে সে নিজেই পাগল হয়ে যাবে ! আবার ফাহাদ কল দিলে ও তার প্রিয় মানুষের কাছে আবেগি হয়ে আবার ভুল ভাল বলে ফেলতে পারে “তাই মাহির কাছ থেকে
নাম্বার নিয়ে ইরফান নিজেই কল দিলো রাইসার ফোনে ”
__’ অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসাতে রাইসা কল রিসিভ করে সালাম দিয়েই জিজ্ঞাস্য স্বরে বলে,
~” কে…?
~” ইরফান সালামের উত্তর দিতেই রাইসা কন্ঠ চিনে ফেলে বলে,
~” ইরফান ভাই…???
~” হ্যাঁ..! তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো! তুমি কি ফ্রী আছো..? .।”
-‘ জ্বি বলুন ভাইয়া..?
–ইরফান একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো , তুমি কি চাও তোমার তোমার আপুর বিয়ে তোমার মামাতো ভাইয়ের সাথেই হোক। রাইসা চুপ করে থাকে, অপর পাশে নিরাবতা দেখে ইরফান আবার বলে ওঠে,
~” দেখো রাইসা তুমি তোমার মনের কথা আমাকে নির্দিধায় বলতে পারো..।
~” আমি চাই না…, আমি চাইনা ওর সাথে আপুর বিয়ের হোক ।কিন্তু আমার কি করার আছে আমি তো কোনো সল্যুশন পাচ্ছি না।
_’ সল্যুশনস আমার কাছে আছে.. যদি তুমি রাজি হও আমি এই বিয়ে টা ভেঙে দিতে পারি। তোমার সাহায্য প্রয়োজন।
~” আমি রাজি যা যা করা লাগে আমি আছি শুধু আপনি বিয়ে টা ভাঙার ব্যাবস্থা করুন প্লিজ ইরফান ভাই।
__ ইরফান সাব্বিরের ব্যপারে রাইসা কে বলে “রাইসার বিশ্বাস আছে ইরফান ও , ফাহাদ দুজনের উপরে এরা অন্তত রাইসা দের খারাপ চাইবে না তা ছাড়া সাব্বির যেহেতু ইরফানের ফ্রেন্ড তো ভালোই হবে। রাইসা রাজি হয়ে যায় কিন্তু রাইসা রাজি হলে তো হবে না রিয়া কে রাজি করাতে হবে সে জন্য ইরফান রাইসা কে বলে কাল ইরফান রা সকলে ঘুরতে যাবে সেখানে রাইসা যেনো কনো ভাবেই রিয়া কে রাজি করিয়ে আনে ফাহাদ গিয়ে ওদের নিয়ে আসবে । সাব্বিরের সাথে রিয়ার আরেকটু পরিচিত হওয়া ইমপর্টেন্ট রাইসা ও সম্মতি জানালো । কল কেটে দিলে রাইসা মনে মনে ভাবে যেকোনো মুল্যে এই বিয়ে টা আটকাতে হবে নাহলে আপুর জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে।
~” সাব্বির রিয়া কে পছন্দ করে কথা টা শুনে মাহি ও অহনার মাথায় বিস্ফোরণ ঘটে, মাহি তো আরো অবাক চোখে তাকায় ফাহাদের দিকে ” ফাহাদ বোনের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। সকলের নিরবতা ভেঙে অহনা বলে ওঠে,
~” কাল নাহয় রিয়ার সাথে সাব্বির ভাইয়ার দেখা হলো কিন্তু বিয়ে কিভাবে ভাঙা হবে…?
—ইরফান দু আঙুল কপালে ঘেঁষে বলে, হুম ” তার জন্য মাস্টার প্ল্যান করতে হবে..!
_” সাব্বির ভীষণ ভালো ছেলে একটু বেপরোয়া টাইপের আর বাজে নেশা বলতে শুধু সিগারেট টা আছে সেটা চলে যাবে বলে আশা করা যায় যদি কেউ স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে এটা ছাড়াতে পারে! রিয়ার জীবন টা যেরকম রঙিন করা প্রয়োজন তেমনি সাব্বিরের জীবনে ও একটু যত্ন প্রয়োজন। সাব্বিরের মা মারা যায় তখন সাব্বিরের বয়স সাত মাস চলে , বাবা বড় বিজনেস ম্যান। টাকা পয়সার কনো অভাব নেই! বড়লোক বাবার এক মাত্র সন্তান সাব্বির কিন্তু তার বাবার টাকা কামানোর নেশায় সে ছেলের প্রতি দায়িত্বশীল হতে পারে নি ছেলের ভালো খারাপ খেয়াল রাখতে পারে নি তাই সাব্বির একটু বেপোরোয়া ভাবে চলাফেরা করে কিন্তু ছেলে হিসেবে অনেক ভালো। মেয়েদের থেকে সব সময় দূরে থাকার চেষ্টা করতো সাব্বির মনে করতো মেয়ে মানুষ মানেই সমস্যা! একটু ভালোবাসা পেলে সাব্বির পুরো টা চেঞ্জ হয়ে যাবে। তার জন্য সাব্বিরের জীবনে রিয়ার মতো একটা মেয়ের প্রয়োজন। সাব্বির যেহেতু রিয়া কেই পছন্দ করেছে আর রিয়া ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে অসভ্য একটা ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে তাই সাব্বির আর রিয়ার বিয়ে দিলেই দুজনের সমস্যার সমাধান হবে।
_’ সকালে ইরফান বাসায় সবাই কে বলে, সিয়াম ভাইয়া ও লিসার বিয়ে উপলক্ষে ছোটদের সবাই কে আজ আমি ঘুরতে নিয়ে যাবো। দুপুরে আমরা বাইরে খাবো। সিয়াম ও লিসা কে ও রেডি হয়ে নিতে বলে “!
~” রাইসা অনেক চেষ্টা করেও রিয়া কে রাজি করাতে পারছিলো না, রিয়া ভয়ে থাকে কোথাও ঘুরতে যাবে সেটা জিসানের কানে গেলো অনেক গুলো বাজে কথা শুনিয়ে দেবে সেগুলো রিয়ার ভালো লাগে না! কিন্তু রাইসা নাছরবান্দা হয়ে লেগে থাকলো রিয়া কে রাজি করাতে ব্যার্থ হয়ে শেষে কান্না জুড়ে দিলো বোনের কান্না দেখে রিয়ার রাখাপ লাগলো রাইসার দু গালে আলতো হাত রেখে কোমল গলায় বললো,
~” কি হয়েছে বোন তুই তো এমন করিস না হঠাৎ এমন পাগলামি করছিস কেনো..?
_”সব সময় করি না বলেই তো আজ বলছি যেতে একটু গেলে কি হয় আপু ” আমি কি তোকে রোজ রোজ জ্বালাতন করি..?
~” তুই তো জানিস আমার ভালো লাগে না যেতে বাসাতেই ভালো থাকি৷
~” রাইসা কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো, আজ একটা দিন আমার সাথে গেলে কি এমন ক্ষতি হবে তোর? থাক তুই না গেলে আমিও যাবো না।
_” রিয়া মনে মনে ভাবছে, ঠিকি তো ওতো আমার কাছে কখনো এভাবে কিছু আবদার করে না আজ এতো মন খারাপ করে ফেলেছে যাওয়া উচিত পরে যা হবে দেখা যাবে! এমনিতেও জিসানের কথা শুনতে শুনতে গায়ে সয়ে গেছে এখন আর আগের মতো এতো খারাপ লাগে না।
~” রিয়া বোনের চোখ মুছে দিয়ে বললো, আচ্ছা ঠিক আছে যাবো আমি তোর সাথে,
~” সত্যি..?
_’ তিন সত্যি ”
— রাইসা এক গাল হেঁসে , আপু কে জরিয়ে ধরে মনে মনে বলে, আপু তোর জীবনের সমস্ত অন্ধকার মুছে দেবো আমি তুই ও আমাদের মতো হাসি খুশি থাকবি ঘুরে বেড়াবি।
__ ‘ বাসা থেকে অনেকটা দূরে একটি পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে আসে ওরা সেখানে বেশ একটা গ্রামের ফিল আছে, চারোদিকে গাছ পালা ছোট ছোট ঘর বাড়ি সাথে উপভোগ করার মতো নানা দৃশ্য ভরা জায়গা টা বিশাল।
ছোট ছোট আঁকা -বাঁকা সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে ওঠা যায় পাশে সুন্দর একটি বড় মাঠে গাড়ি থামালো ” সিয়াম লিসা কে নিয়ে হারিয়ে গেলো মাঠের এক প্রান্তে এতো বড় মাঠ সাথে আবার ঘন ঘন লম্বা একেক টা গাছপালা এপাশ থেকে ওপাশ লক্ষ্য করার উপায় নেই ! সাব্বির, গিয়ে বসে রিয়া, অহনা ও রাইসার কাছাকাছি রাইসা ও অহনা বাহানা দিয়ে সরে গেলো ” ওরা দুজন চলে যাওয়ায় রিয়া একটু সংকচ বোধ করছে কিন্তু তা বুঝতে না দিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বসে রইলো,
~” সাব্বির কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু কথা টা গলায় আটকে যাচ্ছে বারবার সিগারেটে একটা টান দিলে হয়তো গলা টা সেরে যেতো, মেয়েদের সামনে তো সাব্বির সিগারেট খায় না তাই রিয়ার কাছে অনুমতি নিয়ে বলে, গলা খুশ খুশ করছে একটু ক্লিয়ার করে আসি একটু বস তুমি যেও না কিন্তু কথা আছে…. বলেই সাব্বির কিছুটা দূরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরায় একটা লম্বা টান দিলো..
~” দূর থেকে ফাহাদ, রোহান ও নিরব তা দেখে নিজেদের কপাল চাপড়াতে লাগলো “এই সময়ে কেউ সিগারেট খায় ” এখন না রিয়া আবার উল্টো ক্ষেপে যায়..?
~” রিয়া বসে রইলো নিরব ভঙ্গিতে সাব্বির দুটো টান দিয়ে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে গন্ধ দূর করার জন্য একটা পকেট পারফিউম বের করে গায়ে মেখে সেন্টারফুট চিবোতে চিবোতে রিয়ার কাছে গিয়ে বসে পড়ে মাঠের এক কোনে..! আস্তে করে বললো,
~” এই নিয়ে দুদিন দেখা এবার তো পরিচিত হতে পারি ভবিষ্যতে আরও দেখা হতেও পারে বলা যায় না,,, বাই দ্যা ওয়ে আমি সাব্বির…. সাব্বির তালুকদার।
~” রিয়া ছোট্ট করে বললো, আমি.. রিয়া..,
~” জানি..!
~” সাব্বিরের সহজ সরল জ্ববাবে অবাক হলো না রিয়া,, কারো নাম জানাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাব্বির নরম স্বরে সোজাসাপটা বললো,
~” তোমায় খুব ভালো লেগেছে..!মানে ভালোবেসে ফেলেছি।খুব মনে লাগছে, রাতের আকাশে তোমায় দেখতে পাই, ঘুমাতে গেলে চোখের সামনে তোমার মুখ টা ভেসে ওঠে, তুমি কি ভোরের স্বপ্নের মতো সত্যি হয়ে আসবে আমার জীবনে..?
~” দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যান এসব।
~” এই কদিনে তোমায় নিয়ে অনেক দূর চলে এসেছি এখন ফেরা অসম্ভব!
~” রিয়া নিরেট কন্ঠে বললো, I am Committed
~” আমি জানি..!
~” সাব্বিরের মুখের দিকে অবাক দৃষ্টি টে তাকায় রিয়া এমন একটা কথা জানার পরেও লোকটা কি না বলছে রিয়া কে ভালোবাসে..?
~” যেনে শুনে কেনো এসবের মধ্যে নিজেকে জরাচ্ছেন .?
~ সাব্বির নেশাক্ত গলায় বললো, আমাকে বিয়ে করবে…?
~” মা যার সাথে দেবে তাকেই করবো..!
~” তোমার মা যদি আমার সাথে দেয় তো..?
~” মা যার সাথেই দিক আপত্তি নেই..!
~” তাহলে বলছো আমায় বিয়ে করতে সমস্যা নেই.?
~” আপনি ভুল রাস্তায় হাটছেন, মিস্টার সাব্বির..,
~” বামন হয়ে চাঁদে হাত বারিয়েছি হয়তো ” তাই সাবধান করছো..!
~” উহুম “! ভুল ট্রেনে ওঠার আগেও বার বার সতর্ক বার্তা দেওয়া হয় ধরে নিন তাই দিচ্ছি।
~” বলেই রিয়া উঠে জায়গা ত্যাগ করলো ” সাব্বির বাঁকা হেঁসে ঘাসের উপর গা এলিয়ে দিলো,
দুপুর দুইটা ত্রিশ বাজে পাশেই এক রেস্তোরাঁয় খাবার খেয়ে নিয়ে , পাহাড়ে ওঠে উঁচু থেকে নিচের পরিবেশ টা বেশ উপভোগ করছে সবাই ‘ সবাই বলতে ইরফান, রোহান, সিয়াম, নিরব “মাহি, অহনা, লিসা ও ফাইজা!
~” ফাহাদ, সাব্বির, রাইসা ও রিয়া পাহাড়ে ওঠে নি রাইসা বসে বসে আপু কে সাব্বিরের নামে প্রশংসা করতে ব্যাস্ত আর ফাহাদ সাব্বির কে রাইসার মা ও রাইসার ফ্যামিলি সম্পর্কে সব কিছু জানাচ্ছে যেহেতু ফাহাদ ওদের ছোট থেকেই চেনে তার উপর রাইসার সম্পর্কে ফাহাদ একটু বেশিই খোজ খবর রাখে তাই ওদের ফ্যামিলি সম্পর্কে সবটাই ফাহাদ জানে,।
উচু ঢিবি থেকে রোহান বার বার তৃষ্ণাত্ত চোখে তাকাচ্ছে, দুদিন পড়ে আর তার প্রেয়সী কে দেখতে পাবে না ভেবেই বুকের ভেতর টা হু হু করে উঠলো, এতোদিন একা পুড়েছে কিন্তু এখন রোহান জানে অহনা ও তাকে ভালোবাসে, সেদিন রাতে অহনার জেলাসি তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে!
~” অহনা আড় চোখে তাকাতেই রোহান এর চোখে চোখ পড়লো,,,রোহান চোখের ইশারা দিলে অহনা সবার থেকে একটু সরে দাঁড়ায়, রোহান কাছে এসে অহনার দিকে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে বললো,
~” কষ্ট হচ্ছে না…?
— কেনো..?
~” চলে যাবে যে আর তো দেখা হবে না..!
~” আপনার সাথে দেখা না হলেই ভালো,, এতে খারাপ লাগার কি আছে..?
~” মন থেকে বলছো..?
~” কথা তো কথাই আবার মন থেকে নাকি ব্রেইন থেকে এটা আবার কেমন কুয়েশ্চন…?
” ভেবে দেখো এতোদূর চলে যাবে তখন কিন্তু চাইলেও রোজ দেখা মিলবে না..!
আরোও দূরে একটি পাহাড়ের দিকে নিস্পলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অহনা বলে, যে খোজার সে ঠিক খুজে নিবে.. হয়তো বাতাসে নয়তো নির্জন কোনো এক আকাশে।
— রোহান কথা না বাড়িয়ে পকেট থেকে একটি পায়েল বের করে হাত বাড়িয়ে অহনার দিকে দিয়ে বললো, না করো না প্লিজ অনেক শখ করে কিনেছি ! বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে রোহান বলে , ফেরত দিলে এখানে লাগবে। অহনা কোনো ভণিতা না করে পায়েল টি হাতে তুলে নিলো এর পর চলে গেলো।
“রোহান তৃপ্তির হাঁসি দিয়ে নিচে তাকিয়ে রইলো, কিছুটা সময় পরে সকলেই নিচে চলে যাচ্ছে, এতো গুলো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে সবার অবস্থা নাজেহাল আবার আবার নামতে হবে ভেবেই সকলের নাক মুখ কুচকে এলো, কিন্তু নামতে তো হবেই ” এক পা দু পা করে সকলেই নামতে লাগলো, এতো গুলো সিঁড়ি তাই মেয়েরা একা সামলাতে পারবে না পাছে কোনো সমস্যা না হয় তাই একটা করে ছেলে পাশে থাকতে হবে আবার সিঁড়ির আকারে এতো ছোট যে এক সাথে দুজনের বেশি নামাটাও রিস্ক আছে তাই ইরফান সিয়াম লিসা কে আগে পাঠিয়ে, এর পর নিরব কে দিয়ে, ফাইজা কে পাঠায়, রোহান কে অহনার সাথে দেয় ইরফান মাহি কে নিয়ে সব শেষে নামে। ওঠার সময় ও এভাবেই উঠেছে শুধু তখন ইরফান ফাইজা কে নিয়ে উঠেছিল আর মাহি নিরবের সাথে। ফাইজা সবার থেকে ছোট যদি না বুঝে বিপদ ঘটায় তাই প্রথম বার রিস্ক না নিয়ে ইরফান সাথে করে ফাইজা কে নিয়ে পাহাড়ে উঠে “এবার তো ফাইজার ও অভিজ্ঞতা হয়েছে তাই এবার ইরফান নিজের প্রনয়ণসিনি কে নিয়ে নিচে নামবে।
~” একে একে সকলে নামা হলে ইরফান মাহি কে নিয়ে নামতে শুরু করে “একশো চল্লিশ টা সিঁড়ি সবে মাত্র বিশ টা সিঁড়ি নেমেই মাহি ক্লান্ত হয়ে পড়ে এতো কষ্ট করে উঠেছে মাত্র আধাঘন্টা যাবৎ আবার নামতে হচ্ছে.. আর পারছে না পায়ে খুব ব্যাথা করছে “ক্লান্ত হয়ে মাহি একশো উনিশ নাম্বার সিঁড়ি তে বসে পড়লো ” ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করে মাহি কে একটু আগের প্রানবন্ত চমৎকার চেহেরাটা কেমন ম্লান লাগছে ইরফান শুস্ক কন্ঠে বললো,
~” উঠে দাড়া…!
~” ক্লান্ত মাহি অন্যমনস্ক হয়ে বলে, হু,, হ্যাঁ..?
~” ওঠ যেতে হবে তো..!
~” আরেকটু বসি ..?
~” উহুম! দেরি হচ্ছে..!
–” মাহি অলস ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায়, সাথে সাথে ইরফান মাহি কে পাজা কোলে তুলে নিয়ে মাহির পা থেকে জোতা জোরা খুলে নিজের হাতে তুলে নেয়, ‘আকস্মিক এ ঘটনায় মাহি বিষ্ময়কর ভাবে তাকায় এর পর চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
~” এই কি করছেন আপনি পড়ে যাবো তো.. নামান আমাকে,,, ছাড়ুন..!
~”, পড়ে যাবি মানে..? তোকে এমন ভাবে ধরেছি আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারো সাধ্যি নেই আমার থেকে ছাড়ানোর আর তুই কিনা বলছিস পড়ে যাবি! বললেই হলো.??
~” ইরফানের এসব রোমাঞ্চকর কথা ও মাহির ভালো লাগছে না এখন এতো উপরে থেকে পড়লে দু’জনের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না “বেঁচে থাকা তো বিলাশিতা “মাহি ইরফান কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে আবারো বলে, দেখুন এখান থেকে পড়লে আমাদের হাড়গোড় কিছু আস্ত থাকবে না ছাড়ুন বলছি আমায় নিচে নামান , আমার পায়ে ব্যথা কমে গেছে আমি হেটেই যেতে পাড়বো।
—-মাহির কথায় জ্ববাব না দিয়েই ইরফান হাটা শুরু করে, মাহি ভয়ে শিউরে ওঠে, ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় ” শক্ত করে ইরফানের শার্ট খামচে ধরে রেখেছে, ইরফানের শরীরের ঘ্রাণে মাহির শরীর আরো শীতল করে তোলে পাতলা চিকন ঠোঁট জোড়া হালকা কাপছে ” ইরফান মাহির সুন্দর ফরসা উজ্জ্বল মুখশ্রী তে তাকিয়ে এক পা দু পা করে নিচে নামছে ” শুধু একশো উনিশ টা সিঁড়ি কেনো আরো কয়েকশো সিঁড়ি ও যেনো ইরফানের কাছে কম মনে হবে এখন ইরফানের একটি গানের দুই-চার টা লাইন মনে পড়ছে, গলা ছেড়ে গাইতে না পাড়লেও মনে মনে বিড়বিড় করে গেয়ে উঠলো…….
‘ চল বলে ফেলি…..!”
কতো কথা কলি…
‘ জন্মেছে বলতে তোমায়…
তোমাকে চাই……।
ঝলসানো রাতে…
এ পোড়া বারাতে……!”
তুমি আমার অন্ধকার….
আর রোশনাই…।
চলবে ……………?
#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৩
~” সন্ধ্যায় ইরফানের অফিস রুমে বসে আছে রোহান , দূরে করিডোরে দাঁড়িয়ে সাব্বির সিগারেটে টান দিয়েছে, ইরফান একটু জ্বোরে জ্বোরে সাব্বির কে শুনিয়ে বলতে লাগলো,
~” জানিস তো রোহান, ভদ্র মেয়ে রা সব থেকে বেশি অপছন্দ করে সিগারেট খাওয়া ছেলেদের।
রোহান ও উচু স্বরে জ্ববাব দিলো, জানি বলেই তো খাই না.।
–কথা গুলো সাব্বিরের কর্ণকোহলে খুব ভালো করেই পৌঁছালো, হাতের সিগারেটের দিকে একবার তাকায় এরপর আরেকটা টান দেওয়ার আগে সাব্বিরের চোখে ভেসে ওঠে রিয়ার সুন্দর মুখ খানা প্রথম যখন রিয়ার সাথে সাব্বিরের দেখা হলো এই সিগারেটের গন্ধে রিয়া মুখ চেপে ধরেছিলো ” কিন্তু সিগারেট না খেলে যে শান্তি লাগে না অনেক দিনের অভ্যাস , কিন্তু রিয়া যদি এই সিগারেট এর জন্য সাব্বির কে অপছন্দ করে ,,
“সিগারেট ফেলে দিয়ে এসে ইরফান ও রোহানের পাশে বসলো ‘
‘ রোহান গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, দেখ ভাই এতোদিন যা করছিস তো করছিস কিন্তু এখন জীবনে একজন কে পাওয়ার চেষ্টায় আছিস তাই তাকে নিয়ে কিভাবে ভালো থাকবি সে চেষ্টা কর।
-‘ এতো বছরের অভ্যাস এতো সহজে কিভাবে ছাড়বো..? নেশা হয়ে গেছে ভাই.. ছাড়তে সময় লাগবে।
_’ ইরফান গম্ভীর কণ্ঠে বললো, নেশা বলতে কিছু না তুই যেটাকে যেভাবে নিবি সেটা সেভাবেই হবে! এতোদিন তোর কাধে হাত রেখে সান্তনা দেওয়ার কেউ ছিলো না তাই তুই সিগারেট কে বেছে নিয়েছিস, এখন তোর জীবনে একটা মেয়ে আসবে তাই সিগারেট বাদ দিয়ে এখন রিয়া কেই নেশা হিসেবে নিবি।
~” তুই মাহি কে নেশা হিসেবে নিয়েছিস..? সাব্বিরের এহেন প্রশ্নে ইরফান ঠোঁট বাকিয়ে হেঁসে ফেললো ধীর কন্ঠে জ্ববাব দিলো,
~” মাহি কে আমার নেশা আমার পেশা সব কিছুর উর্ধে গিয়ে ভালোবেসেছি ” ও আমার মস্তিষ্কে মিশে আছে , সব কিছু থেকে ও নয়টা বছর ওর অভাবে আমি অভাবি ছিলাম এই আবরার ইরফান চৌধুরী অভাব ফিল করেছে, ভাবতে পারছিস ও আমার হৃদয়ে ঠিক কতোটা বিচরণ করে।
She is my weakness. She is my personal addiction.
~” ফাহাদ ও নিরব রুমে আসতেই, ইরফান জিজ্ঞেস করলো,
~” খোজ পেয়েছিস..?
নিরব জ্ববাব দেয় ” হুমম”
” ফাহাদ এবার সব বিশ্লেষণ করে বলে,
” মা আর বড় ছেলে দুজনই লোভি টাইপের বাপ টা মায়ের মুখের উপর কথা বলতে পারে না, বউয়ের পিছে পিছে ঘোরা ছাড়া তেমন কোনো কাজ করে না। রাইয়ের নানার জমানো কিছু টাকা ছিলো তা দিয়ে এই পর্যন্ত এসেছে, এলাকায় খোজ নিয়ে দেখেছি জিসান নাকি কোন কোম্পানিতে জব করে ভালো করে খোজ নিয়ে দেখলাম তা মিথ্যা গুজব ছড়িয়েছে এলাকায় । দূরে দূরে গিয়ে দালালি করে মানুষের টাকা মেরে খায়।চরিত্রে হালকা গরবর আছে,, তবে জিহাদ একটু ঘারত্যাড়া এক রোখা হলেও চরিত্র ভালো আছে মদ গাজা খায় । ছেলেদের থেকে শুনলাম ওর মা ওকে ইচ্ছে করে রাইয়ের পিছে লাগিয়ে দিলেও লোভে পরে নয় জিহাদ নাকি রাইকে মন থেকেই ..!
–কথা শেষ করার আগেই থেমে যায় ফাহাদ “ওর প্রিয় মানুষ কে অন্য কেও পছন্দ করে ভেবেই ঘারের রগ গুলো সব ফুলে উঠে, বুকে অসহ্যকর যন্ত্রণা শুরু করে ”
~” ফাহাদের অনুভূতি বুঝতে পেরে ইরফান উঠে এসে ফাহাদের কাধে হাত রেখে বলে,
~” শুধু রগ চটা আর ত্যাড়ামি করলেই ভালোবাসা হয় না তার মধ্যে কমোলতা প্রয়োজন আর মেয়েরা সেখানেই আটকায় যেখানে তারা মায়ের মতো ভালোবাসা পায় বাবার মতো আগলে রাখার ভরসা পায় ও ফুলের মতো যত্ন পায়।
” So relax, don’t stress.
— ফাহাদ উপর নিচ মাথা নাড়লো, এর পর বলে,
~” তো এখন বিয়ের ব্যাপারে কি ভেবেছো..?
‘ জিহাদের দুর্বল পয়েন্ট টা কাজে লাগাতে হবে এর পর সমস্ত প্রমাণ যোগাড় করতে হবে অবশ্যই রাইসার মামি রাইসার আম্মু কে এটা সেটা হাতি ঘোড়া মিথ্যা কথা বলেছে ছেলের ব্যাপারে।
“হ্যাঁ রাই এর মা ভিষণ ভালো মানুষ সাথে তবে যে কোনো কাজ ভীষণ চিন্তা ভাবনা করেই করেন তাকে যেহেতু রাজি করিয়েছেন তো ভীষণ ছলচাতুরী করতে হয়েছে জিসান ও তার মায়ের।
~” হবু শাশুড়ী কে বেশ ভালোই চিনেহিস দেখছি …!
ইরফানের কথায় উপস্থিত সকলেই হেঁসে ফেললো ফাহাদ একটু লজ্জা পেলো, মাথা চুলকিয়ে মুচকি হেঁসে নিচে তাকালো।
~” সিয়াম ভাইয়া রা কালকে চলে যাবে ফুপি কে বলে কোনো ভাবে ম্যানেজ করে অহনাকে আর কিছু দিন রাখতে হবে! ইরফানের কথায় রোহান চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি হলো উৎফুল্ল হয়ে বলে ওঠে,
~” ভাই তুই আমার কথা মাথায় রেখেছিস বাহ সমন্ধি বাহ তুই না থাকলে আমি বউ ছাড়া এতিম হয়ে যেতাম তোর মতো সমন্ধি প্রতিটা ছেলের দরকার।
” ইরফান গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, হয়েছে ভাই পুরো কথা টা শেষ করতে দে..
“সবাই মনোযোগী হলো _
_ ~” অহনা কে দিয়ে টোপ ফেলে জিসানের মুখশ রাইসার মায়ের সামনে আনতে হবে….
বিষ্ময়কর ভাবে তাকিয়ে রইলো উপস্থিত চার জনই রোহান ভ্রু জোরা কিঞ্চিৎ কুচকে বললো
” মানে…..?
~” মানে টা খুব সোজা জিসানের মেয়েলি সমস্যা আছে সাথে টাকার প্রতি লোভ তাই অহনা কে কোটিপতি বাবার এক মাত্র মেয়ে হিসেবে জিসানের সামনে উপস্থিত করালেই প্ল্যান ফুলফিট..।’
~” কিহ..?
~” রোহানের আতংকিত চিৎকারে পুরো রুম বেজে উঠল ।
” ইরফান চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বললো ”
“হুমম ‘
” রোহান একটু তেজ দেখিয়ে বলে, হুমম মানে কি হ্যাঁ..? তোর বউ থাকতে তুই আমার বউ টাকে নিয়ে পড়লি কেন? তুই আমার বউ টাকেই কেন আরেক বেডার সামনে পাঠাবি.? না আমি কিছুতেই এটা মেনে নেবো না।
” তোর বউ হওয়ার আগে ও আমার বোন ভুলে যাস না।
~! ” রোহান কাদো কাদো মুখ করে বলে, তাই বলে তুই আমার মুরগির মতো বউ টাকে আস্ত শিয়ালের মুখে ঠেলে দিবি..? তোর বউ কে পাঠা না করছে কে।
~” রোহান বোঝার চেষ্টা কর মাহি রাইসার বেষ্ট ফ্রেন্ড রাইসা দের বাসায় মাহির যাতায়াত ভালোই সে হিসেবে মাহি কে চিনে ফেলার সম্ভাবনা আছে “তাই অহনা কেই এ কাজ টা করতে হবে।
~” ফাহাদ একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো ”
“ভাইয়া ব্যাপার টা একটু রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না..?
~” উহুম! অহনা কে প্রোটেক্ট করার জন্য আমি তুই আর নিরব ওর কাছা কাছি থাকবো তবে রোহান কে তার আশে পাশে ভুলেও রাখা যাবে না!
” কেন হ্যাঁ? আমি থাকলে সমস্যা কি.?? রাগে কটমট করে রোহান কথা টা বললো!
~” তুই শালা আবেগে পরে সব গরবর করে দিবি শেষে গিয়ে সব মাটি হবে তার চেয়ে ভালো দূরে থাকবি।
~” তোকে বিশ্বাস নেই শেষে তুই না আমার বউ টাকে আরেক বেডার সাথে বিয়ে দিয়ে দিস। আমি অহনার কাছেই থাকবো।
~” তোকে রাখবো কি রাখবো না সেটা নিয়ে পরে চিন্তা ভাবনা করবো। আগে কোথা থেকে কিভাবে শুরু করবো তা ভেবে নেই।
—ফাহাদের ফোনে কল আসলে ওদের আলোচনায় বিঘ্ন ঘটে ফোন স্ক্রিনে তাকাতেই ফাহাদ মৃদু হেঁসে কল রিসিভ করে বললো,
~” হ্যালো ”
— ” অপর পাশ থেকে কোনো রেস্পন্স পেলো না তবে ফোপানির আওয়াজ পেলো “মুহুর্তেই ফাহাদের হাঁসি মুখ টা মেঘে ঢাকা আকাশের মতো কালো হয়ে গেলো ” চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো, রাই.. ” এনি প্রবলেম..?
~” ফাহাদের গলা শুনে রাইসা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে ”
~” ফাহাদ অস্থির হয়ে উঠে নিশ্বাস ভাড়ি হয়ে গেলো, ভাড়ি কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে রাই..? ওই জিহাদ আবার কিছু বলেছে..? বলো না কেনো তুমি না বললে কি ভাবে বুঝবো আমি! বলো কি হয়েছে কাদছো কেনো..?
— উপস্থিত সকলে চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে প্রচন্ডভাবে উত্তেজিত ফাহাদের দিকে,
” রাইসা নাক টেনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে ভাঙা গলায় বললো, রিয়া আপুর বিয়ের ডেট ঠিক করতে এসেছে ওরা সামনে শুক্রবার ফিক্স করেছে।
~ ” ফাহাদ উত্তেজিত হয়ে জ্ববাব দিলো , মানে..?
~” হ্যাঁ..!
— চলে গেছে..?
~” না ”
” কে কে এসেছে..?
~” মামি আর জিহাদ…!
— জিহাদের নাম শুনতেই ফাহাদ রেগে গেলো তবে মুখে কিছু বললো না! এর মাঝেই রাইসার দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে রাইসা ভাবে হয়তো মা এসেছে তাই চোখ মুছে রাইসা একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খোলেই জিহাদ কে দেখে রাইসা চোখে বিরক্তি নিয়ে তাকায়,
~” দরজার পাশে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জিহাদ বিশ্রি নজরে রাইসার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরখ করে নিয়ে বললো তৈরি থেকো পাখি ভাইয়ার বিয়ের পড়ে তোমার আর আমার পালা তোমাকে নিজের খাচায় বন্দী না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।
~” রাইসা কিছু না বলেই জিহাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে মোবাইল টা টেবিলে রেখে খাটের উপর শুয়ে পড়লো, অথচ রাইসা ভুলেই গেলো সে ফাহাদের কল কাটেনি, ফাহাদ ও এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলো জিহাদের প্রতি টা কথায় ফাহাদের শরীরে আগুন এর মতো জ্বলছিলো! মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু করেছে ইচ্ছে তো করছে এক্ষুনি গিয়ে জিহাদের গলার ঢোর টা টেনে ছিরে ফেলতে। ইরফানের ডাকে ফাহাদ ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে,
–ওরা বারাবাড়ি শুরু করেছে ভাইয়া..!
” কি হয়েছে..?
” ওর মা আর ছোট ভাই এসে আজ বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে..!
~” হোয়াট..?
‘ হ্যাঁ! সামনের শুক্রবার।
–সাব্বির উত্তেজিত হয়ে গেলো ‘ হাসফাস করে বললো, মানে কি হঠাৎ এতো হুরমার করে ডেট ঠিক করার মানে কি.?
–‘ জানি না..!
~” ইরফান লম্বা শ্বাস ফেলে বলে, হয়তো ওরা কিছু আনতাজ করতে পারছে বা সন্দেহ করছে।
~” সাব্বিরের চেহেরাটা কেমন জানি দেখাচ্ছে ” উঠে চলে গিয়ে একটি সিগারেট ধরায় এরপর জ্বোরে জ্বোরে টানতে লাগলো, চেহেরাটা কেমন মলিন লাগছে ” একটু আগে সিগারেট ফেলে আসা ছেলেটা এখন কেমন পাগলের মতো সিগারেট টানতে লাগলো।
~” রোহান শুকনো ঢোক গিলে বলে, এখন উপায়..?
~” ইরফান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সবাই কে আশ্বাস দিয়ে বললো, চিন্তা করিস না! আমি আছি তো দেখছি কি করা যায়।
” ইরফান ও ফাহাদ দুই ভাই আজ একটু দেরি করেই বাসায় ফিরলো, কিন্তু বাসায় এখনো কেউ ঘুমায় নি কারণ ফরিনা বেগম গোছগাছ সেরেছে মাত্র কিছুক্ষণ হলো! কাল চলে যাবে তাই রাতেই সব গুছিয়ে রেখেছে। ইরফান বাসায় এসে দেখলো বড়রা সকলে এক সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু মাহি ও অহনা দূরে বসে আছে মন মরা হয়ে। ওদের মন খারাপের কারণ বুঝতে বেশি সময় লাগলো না ইরফানের। এতোক্ষণে মাহি অবশ্যই জেনে গিয়েছে রিয়ার বিয়ের ব্যাপারে।
–ইরফানের বুকে হাহাকার সৃষ্টি হলো, বন্ধুর এমন পাগলাটে চেহেরা প্রেয়সীর এমন ফ্যাকাসে মুখ যেনো বুকে চাপা কষ্ট সৃষ্টি করছে।
ইরফান সকলের সামনে এসে দাঁড়ায় এরপর গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, অহনা আর কিছুদিন থাক ‘
~” সকালে অবাক চোখে তাকালো ইরফানের দিকে, কালকে ওরা চলে যাবে এখন ইরফান এ কথা বলছে কিন্তু কেনো..?
~” ফরিনা বেগম এসে ইরফানের সামনে দাঁড়ালো,
~” না বাবা চলে যাচ্ছি কাল ও কে রেখে যাবো কি ভাবে..?
— পরে আমি গিয়ে দিয়ে আসবো এখন থাক ”
~” অহনা বড় বড় চোখ করে তাকালো, ইরফান ভাই এসব কি বলছে অহনা কেনো থাকবে..?
— মাহি ও ইরফানের সাথে তাল মেলালো..
” হ্যাঁ ফুপি থাক না অহনা আপু আর কিছুটা দিন আমার সাথে..! সাথে ফাইজা ও বলে হ্যাঁ অহনা আপু থেকে যাও প্লিজ।
~” এমনিতেই মাহির মন খারাপ আবার অহনা চলে গেলে মাহির আরো খারাপ লাগবে তাই মাহি ও বাচ্চাদের মতো ফুপির কাছে বায়না শুরু করে সাথে ফাইজা ও সকলের কথায় ফরিনা বেগম রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু অহনা কি একা থাকতে রাজি হবে তাই ভেবে ফরিনা বেগম মেয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ তুমি কি থাকবে..?
~” তোমার ইচ্ছা..!
! সবাই এতো করে বলছে তাহলে থেকে যাও।
~’ আচ্ছা ”
~” ইরফান সোজা সিয়াম এর রুমে চলে গেলো ‘ সিয়াম মোবাইল দেখছিলো, সেখানে ইরফান সিয়ামের সাথে কিছু কথা বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
~’ রাত বারোটা পয়তাল্লিশ বাজে মাহির ঘুম আসছে না রিয়ার বিয়ের কথা শোনার পর থেকে মাহি অস্থির হয়ে আছে, বিষয় টা দ্রুত ভাইয়া আর ইরফান ভাই কে জানানো দরকার! তাই মাহি রুম থেকে বেরিয়ে ইরফানের রুমের কড়া নাড়তেই দেখলো দরজা খুলে গেলো,
” কি ব্যাপার ইরফান ভাই আজকে দরজা বন্ধ করে ঘুমায়নি ভাবতে ভাবতে রুমে উকি দিলো পুরো রুম অন্ধকার একটু ভেতরে এসে ভয়ে ভয়ে লাইট অন করে মাহি শক খেয়ে গেলো, বিছানায় কেউ নেই তাহলে কি বেলকনিতে আছে দ্রুত গিয়ে দেখলো সেখানে ও নেই ওয়াশ রুমে উকি দিয়ে দেখলো ফাকা এসে ইরফানের খাটে বসে পড়লো মাহি, এতো রাতে কোথায় গেলেন উনি..? হয়তো কোনো কাজে গিয়েছে যাক বসে থাকলে হবে না ভাইয়া কে জানাতে হবে ভেবেই মাহি ইরফানের রুম থেকে বেরিয়ে লাইট অফ করে দরজা টা চাপিয়ে ফাহাদের রুমের দিকে গেলো ।
~” ফাহাদের রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা টা খুলে গেলো মাহি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো ভাইয়ার রুমের দরজা ও খোলা রুমে এসে লাইট অন করতেই দেখলো ফাহাদ ও রুমে নেই, চারোদিকে খুজলো কোথাও নেই ‘ তাহলে কি এরা দুজন ছাদে..? মাথায় আসতেই মাহি ছাদের দিকে হাটা শুরু করে কিন্তু মাহির অনুমান ভুল হলো ছাদেও নেই এতো রাতে দুই ভাই মিলে কোথায় গেলো, মাহির মনে চিন্তা রা এসে জ্বরো হলো, মাথায় কিছুই ঢুকছে না ‘ নিচে নেমে দেখলো সদর দরজা খোলা , মাহি নিজের রুমে এসে পায়চারী করছে আর ভাবছে এরা কোথায় যেতে পারে..? একটা কি কল দেবো..? না থাক কিছুক্ষণ দেখি হয়তো কোনো ইমার্জেন্সি ছিলো তাই বেরিয়েছে।
— আচমকা ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো রিয়ার , ঘুমের মাঝে কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে আস্তে করে বলছে,
” ঘুমাসনি..?
” রাইসার এমন কথায় রিয়া একটু বিরক্ত হলো এতো রাতে ঘুম ভাঙিয়ে বলে কিনা ঘুমাস নি.! কিন্তু রাইসা হঠাৎ ফোন দিতে গেলো কেনো ভেবেই বোন কে তারাতারি জিজ্ঞেস করলো,
” কি হয়েছে তোর.? আর কল এইবা দিলি কেনো রুমে এসে ডাকলেই তো হতো।
” একটা কথা বলতাম..!.
~” কি বল….
” ভয় লাগছে যদি বকা দিস..!
~” ধুর বকবো কেনো আচ্ছা আমি দরজা খুলি তুই রুমে আয় এখান থেকে এখানে ফোনে কথা বলতে ভালো লাগছে না।
~” রিয়া দরজা খুলতেই দেখলো রাইসা রিয়ার দরজার সামনেই মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে , রিয়া কাছে এসে বোনের গালে হাত দিয়ে বলে কি হয়েছে বোন আমার তোকে এমন লাগছে কেনো..?
~” আপু আমার শখের নুপুর টা হারিয়ে ফেলেছি।
” এতে মন খারাপের কি আছে বোকা আরেকটা বানিয়ে নিবি।
~” রাইসা ঠোঁট জোড়া হালকা ফুলিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বললো, না আপু আমার ওইটাই লাগবে।
” যেটা হারিয়ে গেছে সেটা কোথায় পাবি তুই..?
— আমার মনে হচ্ছে বিকেলে ওইটা বাইরে কাঠগোলাপ গাছের নিচে পড়েছে.” ওখানে তখন আলাপ পেয়েছিলাম তবে আমি বুঝি নি এখন পায়ে হাত দিতে মনে পড়লো।
” রিয়া খুশি মনে বলে, তাহলে তো ভালো কথা সকালে উঠে খুজে নিস এখন ঘুমা গিয়ে।
” না আপু এখন যাবো নয়তো চোরে নিয়ে যাবে তখন আর পাবো না….
রিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, চোর..? কিন্তু বাড়ির ভেতর চোর কোথা থেকে আসবে শুনি..? গেইট লাগানো তাহলে চোর পেলি কই যা ঘুমা।
‘ না আপু তুই জানিস না চোর দেওয়াল টোপকে চলে আসতে পারে আরো কতো ভাবেই আসতে পারে..!আমি এখুনি যাবো।
~” কিহ এখন এতো রাতে তুই নুপুর খুজতে বাইরে যাবি …?
“হ্যাঁ! শুধু আমি না তুই ও যাবি আমার সাথে..!
~” রাইসা.. এতো রাতে বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না।
” রিয়ার কোনো কথায় পাত্তা না দিয়ে রাইসা রিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চললো, নিচে নেমে আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো দু বোন! কাঠগোলাপ গাছের নিচে এসে রাইসা রিয়া কে বলে, আপু তুই এদিক টায় খোজ আমি পেছন দিকে একটু দেখে আসছি ,
” একা যাস না ভয় পাবি আমি আসছি দাঁড়া..
~” না তুই এদিকে খোজ আমি এই যাবো এই আসবো ভয় পাওয়ার কি আছে “তুই ভীতু তাই আমায় বলছিস।
~” রিয়া অনেকটা অবাক হয়ে বলে।, ঠিক আছে বাবা তুই যা তবে ভয় পেয়ে আবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকিস না..,! এদিকে লাইটের হালকা আলো জ্বলছে কিন্তু পেছনে লাইট নেই পুরো অন্ধকার তাই রাইসা কে যেতে বারণ করছিলো রিয়া
— রিয়া নিজের ফোনের টর্চ অন করে এদিক ওদিক ঘাসের উপর খুজতে লাগলো,
এই মেয়ে সবুজ ঘাসে কি খোজো তুমি এতো রাতে..?
পুরুষালী এক কন্ঠে রিয়া উঠে দাঁড়ায় পেছন ফিরে তাকাতেই, চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো ” মনে মনে ভাবছে এতো রাতে এই লোক এখানে কি করে।
~” রাইসা পেছন দিকে গিয়ে রিয়া আর সাব্বিরের দিকে উকি দিয়ে দেখছে হঠাৎ পেছনে কারো উপস্তিতি টের পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে আবছা কিছু দেখে চিৎকার দেওয়ার আগেই রাইসার মুখে হাত দিয়ে ফাহাদ বলতে থাকে, আরে রাই চিৎকার দিও না আমি ” পুরুষালী কন্ঠে রাই নাম টা শুনে রাইসা শান্ত হয়ে দাঁড়ায় এই নামে কেবল একজন মানুষ এই ডাকে তাই রাইসার সামনের মানুষ টাকে চিনতে সময় লাগলো না ! ফাহাদ নিজের হাত সরিয়ে নেয়।
~” আরেকটু হলেই তো আমি চিৎকার দিয়ে সব প্ল্যান বরবাদ করে দিতাম।
~” ফাহাদ ধীর কন্ঠে বললো, তুমি এতো ভীতু কেনো রাই..?
” রাইসা আস্তে করে বললো, আমি কিভাবে জানবো আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন।
~” তুমি কিভাবে ভাবলে আমি তোমায় এতো রাতে এখানে একা দাঁড় করিয়ে রাখবো।
— ফাহাদ ও রাইসা একে অপরের মুখে তাকায় কিন্তু অন্ধকারে চেহেরা দেখা যাচ্ছে না এ পাশ একটু আলো নেই পুরো টা অন্ধকার।
আসলে এই পুরো টা ছিলো ইরফানের প্ল্যান সাব্বিরের সাথে রিয়ার কথা বলানোর জন্য রিয়া তো ফোনে কথা বলতে রাজি হবে না ‘ তাই রাইসা কে কল দিয়ে নুপুর হারানোর প্ল্যান টা সাজায়। রাইসা গেইট খুলে দিয়ে গিয়ে রিয়া কে কল করে।
” সাব্বির রিয়ার একটু সামনে এসে দাঁড়ায় এর পর মৃদু স্বরে বললো ” কেমন আছো ..?
~” আপনি এখানে কিভাবে এসেছেন আর কেনই বা এসেছেন এতো রাতে..?
” তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো আর তুমি তো আসতে দাওয়াত করে বলবে না তাই আমি নিজেই চলে এলাম।
~” রিয়া শান্ত চোখে সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁ অবশ্যই দাওয়াত দেবো ! এই শুক্রবার আমার বিয়ে আপনার দাওয়াত রইলো ‘ বাসার সবাই কে নিয়ে আসবেন।
_” সাব্বির নিরবে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো রিয়ার মুখ পানে ” এই মেয়েটা এতো টা নির্দয় কেনো একটা মানুষের মুখের উপর এই কথা টা না বললে হতো না..? মনে মনে কথা গুলো ভেবে সাব্বির ভাঙা গলায় বললো,
~” সেচ্ছায় বিয়েতে রাজি নাকি চাপে পরে ..?
~” বলেছিলাম তো মায়ের ইচ্ছেই আমার ইচ্ছে।
~” জিসান ছেলেটা ভালো না তোমায় ভালো রাখতে পারবে না রিয়া..!
~” আমি জানি জিসান ভালো না আমি ওকে মন থেকে মেনে নিতে পারবো কি না তাও জানি না তবে বাবা মায়ের সম্মানের কাছে আমার সুখ কিছুই না! মায়ের কথা রাখতে আমি সব করতে রাজি আর তো অপছন্দের কাউকে বিয়ে এটা তো সামান্য বিষয় তা আমি আস্তে আস্তে ঠিক মানিয়ে নিবো আপনি টেনশন করবেন না প্লিজ।
~” বরাবরের মতোই রিয়া কঠিন ও শান্ত কন্ঠে বলার চেষ্টা করে কিন্তু রিয়ার কথা গুলো আজ বড্ড এলোমেলো শোনা গেলো রিয়া চোখ থেকে দু ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরে রিয়া তা হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছে বলে, চলে যান প্লিজ আর কোনোদিন আমার সামনে আসবেন না। আমার মতো মেয়ের পেছনে ঘুরে কেনো নিজের মুল্যবান সময় নষ্ট করছেন আপনি। আমি চাই না আপনার সাথে আমার আর দেখা হোক।
~” বলেই রিয়া ঘরের দিকে ছুটে চলে গেলো, তা দেখে রাইসা ও আপুর পেছনে ছূটলো,
” সাব্বির বড় বড় পায়ে হেটে রাস্তায় চলে আসে ” এ কদিনে সাব্বির রিয়ার প্রতি এতোটা দুর্বল হয়ে পরেছে তা রিয়া কে বোঝাতে ব্যর্থ সাব্বির! তবে রিয়া এ বিয়ে তে শুধু মাত্র তার মায়ের কথা রাখার জন্য রাজি মন থেকে রিয়ার মন অন্য কিছু চায়। সব বুঝতে পেরেও সাব্বিরের কষ্ট হচ্ছে ভীষণ এই প্রথম রিয়ার চোখে পানি দেখেছে সাব্বির ” পকেটে সিগারেট খুজতে লাগলো পাচ্ছেনা তাই প্যন্টের পকেটে খুজলো তাও পেলো না
” কেমন অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে সাব্বির হাটু গেড়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠলো,
~” এক মুঠো স্বপ্ন চেয়ে হাত বাড়িয়ে ছিলাম..!
জীবন ছিলো বড় বেরঙ শুধু হারিয়ে ছিলাম।
আলোর দিশা হয়ে তুমি এলে আমি….
বদলে গেলাম…..!
” কতো রাত জাগা কতো দিন গুনা
~ সেই নতুন ভোরের আশায়……!
~ ” ফাহাদ ইরফান ও রোহান কে কল করে আসতে বলে ওরা কাছেই ছিলো, ফাহাদ ও দ্রুত সাব্বিরের কাছে এসে দাঁড়ায় ” সাব্বির এখনো বসে আছে সেখানে ছন্নছাড়া হয়ে ” ফাহাদ রোহান জ্বোর করে তোলে সেখান থেকে
, নিজের রুমের বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে এসব দেখে ডুকরে কেঁদে উঠে রিয়া ” রাইসা রিয়ার দরজার পাশে বসে বার বার দরজা খোলার জন্য অনুরোধ করছে ” রিয়া বেলকনিতেই বসে পড়লো সাব্বিরের এ অবস্থার জন্য রিয়া নিজেকেই দ্বায়ী করছে।
~” প্রায় দুইটা নাগাদ ইরফান ও ফাহাদ বাসায় ফিরলো এসেই মাহি কে শোফায় বসে থাকতে দেখে দুজন অবাক চোখে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ী করলো ইরফান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
~ ” এতো রাতে এখানে কি করছিস মাহি..?
~” মাহি অলস কন্ঠে জ্ববাব দিলো, কোথায় ছিলেন দুইভাই আপনাদের জন্য টেনশন করতে করতে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেলো।
~” ফাহাদ অবাক চোখে তাকিয়ে জ্ববাব দিলো, কিন্তু বোন টেনশন করতে করতে মাথা ব্যাথা হয় জানতাম কিন্তু পা ব্যাথা হয় আজ প্রথম শুনলাম।
~” মাহি ফাহাদের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলে, আরে ভাইয়া তোমাদের নিয়ে টেনশন করতে করতে আমি এদিক ওদিক হাটছিলাম তাই তো আমার পা ব্যাথা হয়ে গেলো।
~” মাহির কথা শুনে ইরফান ঠোঁট কামড়ে হেঁসে ফেললো, ফাহাদেরও হাঁসি পাচ্ছে কিন্তু হাঁসা যাবে না বোন কষ্ট পেয়ে যাবে তাই ফাহাদ হাঁসি লুকিয়ে বললো,
~” আমরা একটু দরকারি কাজে গিয়েছিলাম কিন্তু তুই এতো রাতে আমাদের জন্য বসে আছিস কেনো..?
~” তোমাদের সাথে কথা আছে রিয়া আপুর বিয়ের ব্যাপারে আপুর বিয়ে নাকি এই শুক্রবার।
” ফাহাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে “জানি!
~” জানো…? তাহলে কিছু করছো না কেনো..?
~” দেখছি কি করা যায় ।
~” ইরফান এবার রাগী স্বরে বললো, এসবের জন্য আমরা আছি মাহি রাত জেগে তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না গিয়ে ঘুমা।
” মাহি মাথা নিচু করে চলে যায় রুমে।
চলবে।