#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৪
~” ইরফানের পুরোনো এক বন্ধুর বিবাহ বার্ষিকী সেখানে সব বন্ধু রা বড় পার্টি এরেঞ্জ করেছে, ইরফান কে স্পেশালি দাওয়াত করেছে বাসার সবাই কে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইরফান যাওয়ার জন্য মাহি, অহনা ও ফাইজা কে তৈরি হতে বলে, মাহি ও অহনার মন খুব একটা ভালো না তাই যেতে চায় না ফাহাদ এক প্রকার জ্বোর করেই রাজি করায় ওদের, তিন বোন রেডি হয়ে নিচে নেমেছে ” আজকে কেউ তেমন সাজেনি সিম্পল ভাবে রেডি হয়েছে ” . ইরফান শোফায় বসা ছিলো ওদের দেখে উঠে দাঁড়ায় ঘুরে এক নজর তাকায় মাহির দিকে , এখনো মাহির মুখটা শুকনো লাগছে। ইরফানের নজর ফোনের দিকে নিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
~” তোর মন খারাপের সকল কারণ মুছে দেবো আমি।
যেকোনো কিছুর মূল্যে হলেও আমি শুধু তোর হাঁসি মুখটা দেখতে চাই।
~” ফাহাদ এলে পাঁচ জন মিলে বেড়িয়ে পরে গাড়ি তে করে গন্তব্য স্থানে পৌঁছে গেলো, গাড়ি থেকে নামতেই ইরফান কে দেখা মাত্রই হৈচৈ বেঁধে গেছে, চারোদিকে ইরফানের ফ্রেন্ড রা সবাই এসে হ্যান্ডশেক করলো, অনেক গুলো মেয়ে ও ছিলো এগুলো সব ইরফানের স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড। কিছুক্ষণ এর মধ্যে রোহান ও সেখানে উপস্থিত হয়।
~” অনুষ্ঠান টা একটা বড় বাঙলোতে সুইমিং পুলের কাছে করা হয়েছে চারোদিকে সাজানো গোছানো রঙ বেরঙের ফুল ও নেট কাপড় দিয়ে সাজানো। মাহির রাইসা কে নিয়ে আসতে ইচ্ছে হচ্ছিল কিন্তু দুদিন পরে রিয়া আপুর বিয়ে এখন তো রাইসা বাসা থেকে বের হতে পারবে না।
— ফাহাদের মোবাইলে ফোন আসলে, ফাহাদ দইরফান কে বলে দ্রুত চলে যায় সেখান থেকে। ফাহাদের এক ছোট ভাই বাইক নিয়ে এসে ফাহাদ কে নিয়ে যায়।
হঠাৎ মাহি অবাক চোখে তাকালো রিফাত ও সাগর কে দেখে ওরা কাছে এসে ইরফান কে দেখে সালাম দিয়ে কথা শুরু করলো, ওরা এমন ভাবে কথা বলছে যেনো বহু আগে থেকে কতই না পরিচয়। কিন্তু মাহির বন্ধু দের সাথে ইরফান ভাইয়ের কি সম্পর্ক..? ফাহাদের সাথে হলে নাহয় মানা যেতো কিন্তু ইরফান এতো বছর বাইরে থেকে মাত্র কয়েক মাস হলো এসেছে তাও কলেজে রিফাত বা সাগরের সাথে খুব একটা আলাপ হয় নি তাহলে কি সম্পর্ক ওরা খুব হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। মাহি একটু কাছে গিয়ে বলে ,
কিরে তোরা এখানে কি করছিস??
~” মাহি কে দেখে ওরা আরো বড় একটা সালাম দিলো ‘ মাহি বিরক্তি নিয়ে বললো ” গাট্টা দেবো তোদের মাথায়। কথার উত্তর না দিয়ে সালাম দিচ্ছিস! ফাজিল কোথা কার বল কি করছিস..?
~” রিফাত একটু কেঁশে গলা পরিষ্কার করে বললো, ভাইয়ার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী পালন করছি..।
~” মাহি ড্যাপ ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে বললো,
~” ভাইয়া.! কার ভাইয়া..?
~’ ইরফান মাহির সামনে এসে দাঁড়ায় আর মেকি স্বরে বলে, রিফাতের বড় ভাইয়ের বিবাহ বার্ষিকী। ওর বড় ভাই আমার ফ্রেন্ড।
~” কিহ..! কি বলছেন এসব..?
রিফাত নিচু স্বরে বললো, হ্যাঁ ইরফান ভাই ঠিকি বলেছে।
~” ইরফান একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াতে সকলে ওকে ঘিরে কথা শুরু করে, মাহি রিফাত দের দিকে বিষ্ময়কর ভাবে তাকিয়ে বললো,
তোরা কি ইরফান ভাই কে আগে থেকেই চিনতি…?
~” হ্যাঁ।
~” কই আগে তো বলিস নি..?
— কেনো তোদের যে সেদিন বললাম।ইরফান ভাইয়ের ব্যাপারে সে যে কলেজে টাকা ডোনেশন করে তা নিয়ে, তাকে যদি নাই চিনতাম তো কিভাবে জানতাম তা বুঝিস নি..? ইরফান ভাই কে আমরা অনেক ছোট বেলা থেকেই চিনি। আর ফাহাদ ভাই কে ও।।
~” মাহির মনে পড়লো সেদিনের কথা ” আনমনে কিছু ভাবতে ভাবতে বলে,
— কিন্তু আগে তো কখনো এটা বলিস নি যে তোরা ইরফান ভাই কে এতো আগে থেকে চিনিস আমি যে তার চাচাতো বোন তা তো অবশ্যই জানতি। তা ছাড়া সে দেশে ফেরার পর তো তোরা তাকে দেখেছিলি তো তখন কেনো বলিস নি..?
~” ইরফান ভাই বারণ করেছিলো।
কেনো..?
~” আগে না জানতি এখন তো জানলি ধুর বাদ দে তো এসব কথা, কেমন আছিস তা বল আর রাইসা কেমন আছে দুই বান্ধবী কলেজ আসিস না কেনো কিছুদিন যাবৎ??
~” ভাইয়ার বিয়ে ছিলো এখন রাইসার আপুর বিয়ে তাই রবিবার থেকে যাবো।
-~” আচ্ছা কি খাবি বল??
~” কিছু না !
~” আরে বল..?
~” না এখন না।।
~” আচ্ছা তাহলে এখানে বস আমি আসছি, আয় সগর চল একটু ওইদিক টায় যেতে হবে ।
~” ওরা যেতেই মাহি আনমনে ভাবতে লাগলো ওরা এতোদিন নিজের পরিচয় কেনো গোপন রেখেছে তা জানতেই হবে।
~” রোহান বন্ধু দের সাথে কথা বলছে আর একটু পর পর ঘার ঘুরিয়ে অহনা কে দেখছে। মনে মনে ভাবছে শালা ইরফান টা জালিয়াতি করে হলেও একটা ভালো কাজ করেছে আমার রাগীনি টাকে এখানে রেখে দিয়ে। এখন আর কয়টা দিন কাছাকাছি দেখতে পাবো আমার রাগীনি কে ভেবেই একটা বাকা হাঁসি দিলো।
~” মাহি অহনা ও ফাইজা তিনজন বসে আছে, রিফাত ও সাগর এটা ওটা এনে সামনে দিচ্ছে মাহি অহনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো তার বন্ধু রিফাত ও সাগরের। এদের সকলের মাঝে ফাইজা নিজেকে বাচ্চা বাচ্চা ফিল করছে তাই চুপ হয়ে বসে আছে, মাঝে মাঝে সাগর ফাইজার সাথে দু একটা কথা বলছে ফাইজা হু হ্যাঁ বলে উত্তর দিচ্ছে।
~” ইরফানের একটা কল আসাতে একটু সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, তখনই কাছে আসে ইরফানের একটা মেয়ে ফ্রেন্ড ! ফ্রেন্ড বলতে জাস্ট ক্লাসে দু একটা কথা হতো ততো ফ্রেন্ডশিপ ছিলো না মেয়েটা ইরফান কে পছন্দ করতো খুব স্কুল লাইফে কিন্তু ইরফান পাত্তা দিতো না । আপাতত বিবাহিত একটা ছোট মেয়ে ও আছে, মেয়েটাকে হাসবেন্ড এর কাছে দিয়ে ইরফানের সাথে কথা বলতে ওর কাছে আসে। কাছে এসেই ইরফানের হাতে কুনুই তে হাত রেখে বলে,
~” হেই ইরফান কেমন আছো..?
~” মেয়েলি কন্ঠ শুনতেই ইরফান ঝাঁড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো এর পর ঘাড় কাত করে দেখলো, ভ্রু জোরা কুচকে বললো,
~” কে আপনি..?
~” আরে আমি জিনিয়া ।
~’ ইরফান কপালে দু আঙুল দিয়ে মনে করার চেষ্টা করে বললো, ওহ হ্যাঁ তা কি খবর..?
” ভালো! তোমার কি খবর..?
~” ভালোই..!
~” মেয়ে টা একটু ভাব নিয়ে বললো, ভুলে গেছো আগে তোমরা আমাকে ছোট করে জানু ডাকতে
~” আমি না অন্য রা ডাকতো বোধহয় জানি না।
জিনিয়া বোধহয় লজ্জা পেলো না আগের অভ্যাস ইরফানের কাছে যতই অপমানিত হতো ওর কাছে খারাপ লাগতোই না। ইরফান গিয়ে একটা সাদা বেঞ্চে বসে মেয়েটা ও ইরফানের কাছে গিয়ে বসে দূর থেকে মাহির নজরে পরতেই মাহি তেতে উঠলো, ইরফান অনেকটা দূরে গিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে বসলো।
” এখন তো দেখছি আরো হ্যান্ডসাম হয়ে গেছো। অবশ্য আগেও বেশ কিউট ছিলে।
~” জিনিয়া রসালো কথায় ইরফান অনেকটা বিরক্ত নিয়ে বলে,
৷৷৷ বিয়ে হয়নি..?
~” জিনিয়া কথা টা বলতে একটু সংকোচ করে বললো,, হ্যাঁ!
~” অন্য কারো জামাই কে তেল না মেখে নিজের জামাই কে তেল মাখো..!
~” জিনিয়া অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললো, বিয়ে করে ফেলছো..?
~” হুমমম!
~” মিথ্যা বলছো..?
— ইরফান তর্জনী আঙুল দিয়ে দূরে বসা মাহির দিকে ইশারা দিয়ে বললো, ওই যে দেখো সদা ড্রেস পরিহিতা আমার বউ ।
জিনিয়া ঘুরে তাকালো মাহির দিকে মাহিও এক নজরে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে, ইরফান মোবাইলে মনোযোগ দিলো কারো সাথে টেক্সট করছে ‘ জিনিয়া ইরফানের আরেকটু কাছে এসে বসতেই মাহি কন্ট্রোল হারাচ্ছে জিদে নাক মুখ লাল বর্ণ ধারণ করতে লাগলো নাহ আর মানা যাচ্ছে না। মাহি উঠে দাঁড়ায় অহনা কে বলে আপু তোমরা কথা বলো আমি একটু আসছি রিফাত জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছিস, মাহি হাত দিয়ে দেখায় এইতো ওইদিকে, তোরা কথা বল আমি আসছি।
_ বলেই মাহি দ্রুত পায়ে হেটে ইরফানের কাছে আসতে লাগে, নাহ আর মানা যাচ্ছে না ইরফান ভাই নাই জানুক কিন্তু মাহি তো ইরফান কে ভালোবেসে সে থাকতে অন্য কোনো মেয়ে ইরফান ভাইয়ের ধারে কাছে ঘুর ঘুর করলে তো রাগ উঠবেই। নিজের প্রিয় মানুষ কে এভাবে অন্যর কাছে ছেড়ে দেওয়া যাবে না কেড়ে নিতে শিখতে হবে।
— মাহি এসে ইরফানের কাছে দাঁড়ায় ” এরপর বিরক্ত চোখে জিনিয়ার দিকে তাকালো, ইরফান যেতে যেতে বেঞ্চের কর্ণারে এসে পরেছে অথচ জিনিয়া ওইদিকে এত্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও এসে ইরফানের কাছে বসে আছে। মাহি বড় বড় শ্বাস নিয়ে বিড়বিড় করে বললো
~” অসভ্য মেয়ে কোথাকার পারে তো কোলে উঠে বসে।
~” ইরফান ফোনের দিকে তাকিয়েই মাহি কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— কি ব্যাপার মহারানী এনি প্রবলেম..?
~” ব্যপার টায় মাহি অবাক না হলেও জিনিয়া বেশ অবাক ” ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়েই ইরফান মেয়েটার উপস্থিতি টের পেয়ে গেলো কিভাবে..? বাতাসে গন্ধ পায় নাকি..? মাহি কে দেখে জিনিয়া মাহি কে জেলাস ফিল করাতে গিয়ে শোনো ইরফান আমরা কি যেনো বলছিলাম বলে ইরফানের কাধে হাত দিতে নিলে ইরফান উঠে দাঁড়ায়, মাহির কাছে এসে বলে,
~” মেয়েটাকে দেখে মাহির সুবিধার মনে হচ্ছে না যখন তিখন ইরফান ভাইয়ের গায়ে এসে পড়বে, মাহি ইচ্ছে করেই একটু ঢং করে ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
~” জোতা টা বিরক্ত লাগছে হাটতে কষ্ট হচ্ছে..।
~” আচমকা মাহি কে কোলে তুলে নিয়ে বেঞ্চে বসায় ইরফান মাহি বিষ্ময়কর ভাবে তাকালো ইরফান এর দিক। পর পরই চোখ বোলালো চারোদিকে অহনা, ফাইজা, রিফাত , সাগরের দিকে দেখলো ওরা কিছু দেখে নি তো, অহনা সাগর ও রিফাত কথায় বেস্ত ফাইজা মাহির মোবাইলে গেম খেলছে দেখে লম্বা নিশ্বাস নিলো মাহি।
— ইরফান বসে মাহির পা টা নিজের হাটু রে রেখে জোতা গুলো খুলে ফেললো, এর পর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে আর মাহি কে জিজ্ঞেস করছে খুব ব্যাথা করছে..? কোথায় সমস্য হচ্ছে..? মাহির ঠোঁট গুলো তিরতির করে কাপছে পুরো শরীর কেঁপে উঠল ঝাকুনি দিয়ে কম্পন শুরু হলো। ইরফান উদবিগ্ন কন্ঠে আবার বললো কোথায় ব্যাথা করছে..?
— ইরফানের এতো বারাবাড়ি দেখে জিনিয়া, বিড়বিড় করে বললো, যত্তসব ঢং..!
~” মাহি কাঁপা-কাঁপা গলায় বললো, না ব্যাথা করছে না ওগুলো পরে হাটতে কষ্ট হচ্ছে..।
~’ ইরফান চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো, আগে বলিস নি কেনো..?
~” বলেই আবার মাহি কে কোলে নিতে উদ্দোত হলে মাহি বারণ করে, .
-” না প্লিজ অনেক মানুষ এখানে কেউ দেখলে খারাপ ভাববে….!
_ ‘ কে কি ভাবলো তা দেখার সময় আবরার ইরফান চৌধুরীর নেই।
~” প্লিজ.. ‘
— মাহির মিনুতি কন্ঠে ইরফান থেমে গেলো। মাহির জোতা গুলো খুলে হাতে নিয়ে অপর ডান এগিয়ে দিয়ে মাহির দিকে মাহি নিজের বাম হাত এগিয়ে ইরফানের হাত ধরলো, মাহির গা শিউরে ওঠে হাত কাপছে তবুও সড়ালো না শক্ত করে ধরে রাখলো যেনো ছেড়ে দিলেই মাহির ইরফান ভাই কোথাও পালিয়ে যাবে। ইরফান ও তার প্রেয়সীর হাত শক্ত করে ধরে বলে চলুন মহারানী।
~” মাহি উঠে ইরফানের সাথে যেতে লাগলো, এক হাতে প্রেয়সীকে নিয়ে অপর হাতে প্রেয়সীর জোতা নিয়ে হাটা শুরু করে ইরফান, পেছনে ঘুরে তাকায় মাহি, জিনিয়া নাক মুখ কুচকে তাকিয়ে আছে মাহির দিকে, মাহি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। জিনিয়া রাগে ফোসফাস করে বসে রইলো, মেয়ে কাদছে তাই ওর বর ডাকছে কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।
~” কেক কাটা হচ্ছে ইরফান ও রোহান কে ছাড়া কাটবেই না তাই ইরফান ও রোহান কাছে গিয়ে দাঁড়ায় সাথে মাহি অহনা ফাইজা দের নিতে চাইলে ওরা যেতে চায় না দূরে সুইমিং পুলের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। বড়দের মাঝে ওরা ওকয়াটফিল করবে। রিফাত ওর বন্ধু সাগর কে নিয়ে ভাই ভাবির কাছে দাঁড়ায়। কেক কাটা শেষ হলে। সবাই কে প্লেটে করে কেক দেওয়া হয়েছে জিনিয়া একটু আগ বাড়িয়ে এসে ইরফান কে কেক খাওয়াতে হাত বারিয়ে কেক এর পিস টা ইরফানের দিকে দিলো ইরফান না দেখার সরে গিয়ে নিজের হাতের কেক টা অহনা ফাইজা ও মাহি কে একটু করে খাইয়ে দিলো। মাহির গালে সামান্য ক্রিম লেগে যায় তাই ইরফান তা বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতো হাতে মুছে দিলো, । তা দেখে জিনিয়া কপাল কুচকে ফেললো এর পর মনে মনে বিড়বিড় করলো,
~” যত্তসব নেকামি।
বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে জিনিয়া আবার বলে, এ ছেলের আগেও দেমাগ ছিলো এখনো দেমাগ দেখায়! বউ নিয়ে বেশি বারাবাড়ি করে আর কি কারো বউ নেই নাকি আমার ও জামাই আছে কই আমার জামাই তো এতো তামাশা করে না। তোমার বউ কে যদি সবার সামনে নাকুনি চুবানি না খাইয়েছি তোবে আমার নাম ও জিনিয়া না। বলেই নিজের তর্জনী আঙুল দিয়ে নাকে দুটো ঘষা দেয়। এরপর আবার বলে ,, তখন দেখবো তোমার এতো Attitude কোথায় থাকে।
~” চারোদিকে লাইটিং চলছে তার সাথে গান কেউ কেউ আবার গানের সাথে দুলছে কেউ কেউ গানের সাথে সাথে দুই-চার লাইন বলছে, অহনা ফাইজা মাহি সবাই উপভোগ করছে তা, বক্সের ভলিউম বারিয়ে দিলো জ্বোরে জ্বোরে গান বাজছে,
~” চাইলে আস্কারা!! পাক বেঁচে থাকার কারণ!!
আজকে হাত ছাড়া যাক!! “ব্যাস্ততার আর বারণ,!!
লিখবো তোমার হাতে!!” আমি আমার মরণ!! ”
~” গানের সাথে সাথে মাহি নিজেকে ও ইরফান ভাই কে কল্পনা করছে! অহনা আড় চোখে রোহানের দিকে তাকায় রোহান এর দৃষ্টি অহনার দিকে, রোহান অহনা কে দেখিয়ে দূর থেকে ইশারায় হাত দিয়ে একটা লাইন দেখালো
~” লিখবো তোমার হাতে আমি আমার মরণ। বুড়ো আঙুল টা রোহানের গলায় রেখে। অহনা হেঁসে ফেললো। ইরফান দূরে ফাহাদের সাথে ইমপরটেন্ট কথা বলছে। আরেকটি মিউজিক বেজে উঠল মাহি এদিকে ইরফান কে নিয়ে কল্পনায় ডুবে আছে। এইতো ইরফান ভাই মাহির কাছে এসে মাহির হাতটা ধরে গাইছে,
_” -এক পা-দু পা করে.!!!”তুই এলি এ মনে.!!!
-শেখালি আমাকে.!!!-ভালোবাসার মানে.!!!
স্বপ্নে দেখেছি.!!!”তোকে দু-চোঁখ ভরে.!!!
~” তোর দেখা না পেলে!! হয় মন বড় চঞ্চল!!
~” মাহির কল্পনার বিঘ্ন ঘটে হঠাৎ এক বাহুডোরের আঘাতে, জিনিয়া শাড়ির আঁচল ধরে হেঁটে এসে মাহি কে ধাক্কা দেয় অবশ্য হাত দিয়ে না বাহু দিয়ে দিয়েছে অন্যমনস্ক থাকায় আচমকা এক অধ্যত্তিক ঘটনায় মাহি সামলাতে না পেরে সুইমিং পুলের পড়ে গেলো, আতংকে অহনা গলা ছেড়ে চিৎকার দিলো ” উপস্থিত সকলের মাঝে বিষ্ফোরণ এর মতো ফাটলো ব্যাপার টা, রোহান ছুটে আসতে আসতে ইরফান ঝড়ের বেগে এসে ঝাপ দিলো, সাঁতার কেঁটে মাহির কাছে এসে ডান হাত দিয়ে মাহিকে বুকের সাথে চেঁপে ধরলো ” মাহি ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে, মাহি হাকলা সাঁতার জানে কিন্তু আচমকা এমন ঘটনায় নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলো।
মাহির নাকে মুখে পানি গিয়েছে মাহি শরীরের সব টূকু ভাড় ছেড়ে দিলো ইরফানের উপর ভীষণ দূর্বল হয়ে পড়েছে। ইরফান মাহির চিকন শরীর টা আরো শক্ত করে চেঁপে ধরলো নিজের সাথে। হয়তো এই বুক টা ছিড়ে ভেতরে এই ছোট্ট শরীর টা ঢূকিয়ে রাখতে পারলে শান্তি লাগতো। উপস্থিত সকলে বিষ্ময়কর ভাবে তাকিয়ে রইলো ইরফান, মাহির দিকে । গান বন্ধ হয়ে গেলো চারোদিকে হৈচৈ বেড়ে গেলো। রোহান মিউজিক বাজানো ছেলেটার কাছে গিয়ে নিজের ফোন থেকে একটা গান সিলেক্ট করে বললো চালাও… মাহির পড়নে সাদা জামা টা শরীরের সাথে ল্যপ্টে গেছে সাদা ধপধপে ফরসা শরীরের কিছু অংশ হাললা বোঝা যাচ্ছে, ইরফান দ্রুত নিজের ব্লু কালারের ব্লেজার টা খুলে মাহি কে পড়িয়ে দেয়। এরপর মাহি কে পাজা কোলে তুলে মাহির দিকে তাকিয়ে উপরে তুলছে। আবার জ্বোরে গান বেজে উঠল,,,
~” Kya Jaane tu “!!Mere Iraade…??
” Le Jaunga !! Saansein Chura Ke,,,!!
~” Dil Keh Raha Hai. ” _”!! Gunehgaar Ban Ja.!! .
” Bada Chein Hai Inn “!! ~”Gunahoon Se Aage…!!
~” গান টা ইরফানের কানে পৌঁছাতেই ইরফান নেশালো চোখে তাকালো মাহির নিস্তেজ মুখ পানে “! একটা শুকনো ঢোক গিলে! অনাকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছে রা এসে মনের কোণে উকি দিচ্ছে। ইরফান বেসামাল হয়ে যাচ্ছে। রোহান ব্যাপার টা উপভোগ করছে ” লম্বা শ্বাস ফেলে ইরফান মাহি কে নিয়ে উপরে উঠে একটা বেঞ্চে বসায় । মাহি কথা বলতে পারছে না দু একটা কাঁশি দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। সকলে কাছে এসে ভীড় করে , অহনা, ফাইজা ও রোহান দ্রুত কাছে এলো ” অহনা মাহির হাত ধরে দাঁড়ায় জিনিয়া একটু আগ বাড়িয়ে এসে বলে,
~” ও মা দেখি দেখি কি হলো বাচ্চা মেয়েটার।
~” অহনা ঝাড়ি মেরে বললো, সরুন আপনি বজ্জাত মহিলা আপনি ইচ্ছে করেই আমার বোন কে ধাক্কা দিয়েছেন আমি দেখেছি। ইরফান তীক্ষ্ণ নজরে তাকায় জিনিয়ার দিকে ইরফানের বাজপাখির ন্যায় নজরে জিনিয়া ভয়ে বার বার ঠোঁট ভেজাচ্ছে।
~” রোহান তো তার রাগীনির রাগের উপরে আবার ও ফিদা মনে মনে বিড়বিড় করে বললো, সাব্বাশ বউ তোমার মতো সাহসী মেয়েই তো চাই যে কোনো ভনিতা ছাড়াই সবার সামনে গলা উচিয়ে কথা বলতে পারবে। কিন্তু ও মাহি কে ইচ্ছে করে কেনো ফেলে দিলো..?
~” ইরফান উঠে দাঁড়ায়, আস্তে করে জিনিয়ার দিকে এগোতে থাকে জিনিয়া এটা ওটা বলতে বোঝাতে লাগলো ” ইরফান দাত কিড়মিড় করে বললো ,
~” তুই ফেলেছিস..?
~” ইরফানের কন্ঠ স্বাভাবিক শোনা গেলো না জিনিয়া ভয়ে পেছাতে লাগলো! ইরফান আবারো উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বললো,
তুই ফেলেছিস মাহি কে..?
~” জিনিয়া আমতা আমতা করে বললো, না.. মানে আসলে…!
~” আসল নকল বুঝি না যা জিজ্ঞেস করেছি তা বল,,,
~” আ…আমি ইচ্ছে করে,,,,,
_ জিনিয়ার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই বাম গালে ঠাস করে একটা শক্ত হাতের থাপ্পড় পরতেই মেয়েটা তাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পানি তে গিয়ে পরে,,, বেশ কিছুক্ষণ নাকুনিচুবানি খাওয়ার পরে নিজেকে সামলাতে সক্ষম হয়। তবে তার শাড়ির অবস্থা বেহাল। মনে হয় না এতো মানুষের ভিড়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে।
–জিনিয়ার হাসবেন্ড মেয়ে কে কোলে নিয়ে ঘৃণ্য চোখে তাকিয়ে রইলো বউয়ের দিকে। এতোগুলা মানুষের সামনে এভাবে তার মান।সম্মান নষ্ট করবে তা বুঝে উঠতে পারে নি। জিনিয়ার হ্যাসবেন্ড অনেকক্ষণ যাবৎ খেয়াল করছিলো বউ উসপিস করছে তার মানে অবশ্যই কিছু গন্ডগোল করবে বোঝা যাচ্ছিলো কিন্তু বেচারার বড় ভুল ছিলো সে তখন তার বউ কে নিয়ে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেনি তাহলে এতো বড় অপমান হতে হতো না। সে বউয়ের ব্যাপারে বড় গলা করে কিছু বলতেও পারবে না কারণ সে জানে জিনিয়া অনেক হিংসুটে যখন কারো উপর ক্ষোপ থাকে তখন তার সাথে যা খুশি করতে পারে।
~” মাহির কন্ডিশন খুব একটা ভালো না শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে ইরফান দ্রুত এসে মাহি কে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসে। রোহান কে বলে তুই অহনা ও ফাইজা কে নিয়ে আয়।
~” ঠিক আছে তুই যা তবে সাবধানে যাস।
— মাহির তালমাতাল অবস্থা নিভু নিভু চোখে তাকাচ্ছে ইরফানের সাদা শার্টের উপরে মাহির মাথা টা ইরফানের কাধে নিয়ে এক হাত দিয়ে মাহির মাথা টা ধরে ড্রাইভ করছিল এরি মধ্যে মাহি বমি করে ইরফানের পুরো বুক ভিজিয়ে দিলো সাথে মাহির ড্রেসও নষ্ট হয়ে গেছে। ইরফান গাড়ি থামায় মাহি অনর্গল বমি করেই যাচ্ছে যা ইরফানের বুজে ঝড় তুলতে সক্ষম। দু হাত দিয়ে মাহির দু গালে আলতো করে ধরে বলে,.
~” খারাপ লাগছে খুব কোথায় খারাপ লাগছে বল আমায়।
— মাহির গাল ও ঠান্ডা হয়ে গেছে এখন কি করা উচিত ইরফান পাগলের মতো হয়ে গেলো, মাহি কে আরো শক্ত করে বুকের সাথে চেঁপে ধরলো ইরফানের উন্মাদনা বেড়েই চলেছে ইরফানের গরম নিশ্বাস মাহির ঘাড়ে পরছে।
~” রোহান অহনা ও ফাইজা কে নিয়ে রওনা দিলো, অহনা চুপচাপ ফাইজা বাচ্চাদের মতো অহনা আপু কে জরিয়ে ধরে আছে অহনা আদর করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রোহান ঘুরে ঘুরে দেখছে অহনা কে রাগী মানুষ গুলোর মন খুব ভালো থাকে এরা অল্পতেই মন খারাপ করে যেমন মাহির ব্যাপার টা অহনার মাথা থেকেই বেরোচ্ছে না। রোহান গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
~ টেনশন করো না একটু পর ঠিক হয়ে যাবে।
~” অহনা কিছু না বলে সিটে গা এলিয়ে দিলো ” কিছুক্ষণ পর মাহি স্বাভাবিক হয় হুশ হতেই নিজেকে শক্ত হাতে আবদ্ধ হিসেবে আবিষ্কার করলো “মাথা তুলে তাকাতেই প্রিয় মানুষ টার মুখ দেখতে পেলো! মাহি মাথা তুলে তাকাতেই ইরফান দ্রুত অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
~” ঠিক লাগছে এখন..,?? কোথাও কষ্ট হচ্ছে..?
~” মাহি এদিক ওদিক মাথা নেড়ে না বলে। ইরফান মাহির কপালে গলায় হাত দিয়ে দেখলো শরীর আগে থেকে অনেক টা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এসেছে। কিন্তু এই ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকলে তো আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই গাড়ি স্টার্ট দিলো ” মাহি নিজেকে দেখলো বমি তে পুরো ড্রেস নষ্ট হয়ে আছে ইরফানের ব্লেজার টা মাহির গায়ে এখনো, সাথে ইরফানের সাদা শার্ট টাও বমি তে মেখে আছে মাহি বুঝতে পারলো এটা মাহির কাজ । মাহি নিজের সিটে গিয়ে বসে , মনে মনে বিড়বিড় করে আওড়ালো,
~” ছিহ মাহি তোর কি কখনো আক্কেল হবে না বমি তো করলি করলি শেষ মেশ কিনা ইরফান ভাইয়ের গায়েই করতে হলো..!
~” কি হলো দূরে গিয়ে বসলি কেনো শরীর দূর্বল সামলাতে পারবি না! ইরফানের কোমল গলায় বলা কথায় মাহির ধ্যান ভাঙলো।
~” উহু.. ঠিক আছি এখন।
_” ইরফান একটি বড় শপিং মলে এসে মাহি কে ড্রেস কিনে দিয়ে চেঞ্জ করতে পাঠায় ” মাহি চেঞ্জ হয়ে আসে মাহি কে নিয়ে গাড়ি তে উঠতে নিলে মাহি নিরেট কন্ঠে বললো,
~” আপনি চেঞ্জ হবেন না..?
~” উহুম।
~” কিন্তু কেনো..?? শার্ট তো নষ্ট হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে কথা টা মাহি বলে।
~” ” ইরফান নিজের দিকে চোখ বুলিয়ে বলে, কোথায় নষ্ট হয়েছে সব ঠিক আছে তো।
~ মাহি আর কথা বাড়ায় না শরীরে শক্তি পাচ্ছে না মাথা টা ঝিম ধরে আছে বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দেওয়া প্রয়োজন।
_” মাহি ঘুমিয়ে আছে প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ ইরফান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে, মাহি ঘুম থেকে উঠে নিচে নামতেই অহনা মাহির কাছে এসে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
~” এখন শরীর টা কেমন লাগছে বোন।
— ভালো আপু!
~” কফি খাবি..?
~” না আপু বসো এখানে এখন একদম ফ্রেশ লাগছে।
ফাইজা এসে বসে ওদের মাঝে, জিনিয়ার পরিস্থিতির কথা বলছে আর হাসছে ওরা এরি মাঝে রাবেয়া বেগম এসে বলেন মরিয়ম আপা কর করেছিলো ,
কথা টা শুনে অহনা ও মাহি চাওয়া চাওয়ী করলো এর পর আবার রাবেয়া বেগম এর দিকে মনোযোগ দিলো,
~” আপা বললো হঠাৎ করেই একটা কারনে রিয়ার বিয়ে এই শুক্রবার ঠিক করতে হয়েছে। যদিও তার ইচ্ছে ছিলো বড় মেয়ের বিয়ে খুব ধুমধামে দেবে কিন্তু সেটা এখন সম্ভব হচ্ছে না তাই আপা মন খারাপ করেছে খুব আমাদের সবাই কে দাওয়াত দিয়েছে বিয়েতে। আমরা তো আর যেতে পারবো না পরশু দিন তোরা ভাই বোনেরা যাস।
~” রাবেয়া বেগম চলে গেলো মাহি ও অহনা মুখ মলিন করে বসে রইলো! জিসানের সাথে রিয়া আপুর বিয়ের ব্যাপার টা কিছু তেই মানা যাচ্ছে না। মাহমুদা বেগম এসে ওদের কাছে বসে বলে,
–কি হলো তোদের এমন মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেনো..? কি হয়েছে।
~” দুজনে হাসি দিয়ে বললো, কই কিছু না তো।
~” নাজিফা বেগম এসে মাহি অহনা ও ফাইজা কে চা দিয়ে গেলো “কিন্তু মাহমুদা বেগম কে গ্লাসে করে দুধ দিলো। মাহমুদা বেগম খেতে না করায় নাজিফা বেগম জ্বোর করে খাইয়ে গ্লাস নিয়ে গেলো।
–” তা দেখে অহনা, মাহি ও ফাইজা মুখ চেঁপে হেসে ফেললো।
~” রোহানের সাথে দেখা হতেই ইরফান রোহানের কলার চেপে ধরলো, শালা তুই কি করেছিস??
~” রোহান অবুঝের মতো করে বললো, কই আমি কি করছি আমি তো অহনা আর ফাইজা কে বাসায় পৌঁছে দিয়েই চলে এসেছি।
” তুই আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছিস। তখন ওই গান টা তুই চালিয়েছিলি তাই না।
–” রোহান বুঝতে পারলো ইরফানের বাজপাখির মতো নজর এরাতে বর্থ । তাই সিকার করে নিলো,
-‘ হ্যাঁ আমি তোদের মুহুর্তো টা একটু সুন্দর করার জন্যই গান টা ছেড়েছিলাম।
রোহানে কলার ছেড়ে দিয়ে ইরফান গম্ভীর কণ্ঠে বললো, তখন যদি আমি বেসামাল হয়ে নিজের উপর কন্ট্রোল হারাতাম তো কি হতো..? আমার অসুস্থ বউ টার কি হতো শুনি..?
~” রোহান বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো, কিহ..? ছিহ সমন্ধি ছিহ ছোট বোনের জামাইয়ের সামনে এসব বলতে লজ্জা লাগলো না।
~” বউয়ের বড় ভাইয়ের রোমান্টিক মুহুর্তে গান বাজিয়ে তা আবার শকুনের মতো তাকিয়ে দেখতে তোর লজ্জা হওয়া উচিত ছিল শালা।
~” রোহান ফোস করে শ্বাস নিয়ে বলে, এই দুনিয়ায় কারো ভালো করতে নেই মানবতা এখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত।
#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৫
~” আজ শুক্রবার রিয়া আপুর বিয়ে সকালে নাস্তা করে দ্রুত রেডি হতে গেলো, মাহি ‘ অহনা ও ফাইজা। সকাল থেকে প্রায় তিন-বার কল করেছে মরিয়ম বেগম ওদের যাওয়ার জন্য। ইরফান অফিস থেকে এসে নিয়ে যাবে। মাহি রুমে গিয়ে দেখলো রাইসা কল করেছে, মাহি কল রিসিভ করতেই রাইসা তারা দিলো ওদের যাওয়ার জন্য মাহি বললো, আরে তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া আর ইরফান ভাই এলেই আমরা রওনা হবো।
~” ইরফান সময় মতো বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো, বিয়ে বাড়ি যাবে তাই ইরফান আজকে সুন্দর একটা মেরুন কালারের পাঞ্জাবি পরেছে, হাতা গোটাতে গোটাতে ফাহাদ কে ডাকতে লাগলো। মাহি তো ইরফান ভাই কে দেখে পুরাই ফিদা হয়ে গেলো “বিড়বিড় করে আওড়ালো…
~” পাঞ্জাবি পড়নে আপনাকে দেখলে কেমন জামাই জামাই লাগে “মন চায় বিয়ে করে ফেলি।
~” বলেই নিজের জিভ কামড় দিলো মাহি নিজের মাথায় গাট্টা মেরে মনে মনে বিড়বিড় করলো , ছি মাহি এসব অসভ্য মার্কা কথা ভাবতে তোর লজ্জা করছে না।
~” ফাহাদ নিচে নেমে শার্টের হাতা গোটাচ্ছে ইরফান মেকি স্বরে বললো, একদিন পাঞ্জাবি পড়লে কি হতো তোর..!
” আমাকে মানায় না “!
— কে বলছে তোকে মানায় না পড়ে দেখছিস কোনো দিন..?
— না পড়লে কি আমার মনে হয়।
~” কেনো মনে হয়..? ইরফান ভাবুক স্বরে বললো ”
ফাহাদের সহজ উত্তর, কারণ আমি চিকন তাই ।
~” কথা টা শুনে মাহি ও অহনা ও ফাইজা তিনজনই মুখ চেঁপে হেঁসে ফেললো ”
~” মাহি গাড়ি থেকে নামতেই রাইসা এসে মাহি কে জরিয়ে ধরে, এরপর অহনা ও ফাইজার কেও জরিয়ে ধরে,। অহনা ব্যাগ থেকে একটা মাক্স বের করে পরে নিলো। সবাই ভেতরে চলে গেলো, একটু পর সেখানে রোহান ও সাব্বির চলে এলো, ফাহাদ মরিয়ম বেগম কে সালাম দিয়ে বাকিদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়! সবার সাথে আলাপ করে মরিয়ম বেগম রাইসা কে ডেকে সবাই কে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাতে বলে।
~” রাইসা এসে সবাই কে ওদের পুরো বাড়ির ভেতর টা দেখায়, অনেক বড় দোতলা বাড়ি ডিজাইন গুলো ইউনিক। রাইসার মামা, মামি ও তাদের দুই ছেলে চলে এসেছে। আগেই রাইসার মামি জাকিয়া বেগম, মরিয়ম বেগম কে বলে দিয়েছিলেন তারা বেশি কেউ আসবে না নিজেরা নিজেরা এসেই বউ নিয়ে যাবে কোনো অনুষ্ঠান এর প্রয়োজন নেই। তবুও মরিয়ম বেগম নিজের মতো করে নিজের আত্মীয় স্বজন দের দাওয়াত করেছে।
~” ছাদের এক কোণে ইরফান, ফাহাদ, রোহান ও সাব্বির বসে ছিলো, অন্য পাশে অহনা, মাহি, ফাইজা, ও রাইসা কথা বলছিলো ” ফাইজা অহনা কে বারবার বলছে, আপু মাক্স টা খুলে ফেলো শুধু শুধু তুমি একটা কেনো পরে আছো, মাহি ফাইজা কে বারণ করে বলে, অহনা আপুর এলার্জি বেরেছে ধূলো নাকে গেলে আরো প্রবলেম হবে তাই পরে আছে । হঠাৎ ইরফানের মোবাইলে কল আসে ইরফান রিসিভ করে কথা বলে এরপর সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,
” নিরব কল করেছে চলে আয় সবাই। বলেই ফাহাদ, রোহান কে নিয়ে নিচে চলে গেলো, সাব্বির নিজ স্থানে বসে রইলো। মাহি রাও ছাদেই রইলো। বেশ অনেকটা সময় পরে রাইসার ফুপাতো বোন এসে বলে বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে যাবে নিচে চলো সবাই। প্রথমেই সাব্বির নিচে নেমে এলো। এরপর একেক করে সবেই নেমে গেলো।
” সবার শেষে রাইসা নামতে গিয়ে শেষের সিঁড়ি পা পিছলে পড়ে যেতে নেয় ফাহাদ ধরে ফেলে, রাইসা ফাহাদের দিকে তাকালো ফাহাদ ও রাইসার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। রাইসা উঠে দাঁড়ায় ফাহাদ হাত ধরে নিচে দাঁড় করায়। তা দেখে জিহাদ রাগে কটমট করে বড় বড় চোখ করে রাইসার দিকে তাকায় কিন্তু রাইসা তো সেদিকে তাকায় ও নি। রিয়া কে নিয়ে আশা হলো, বউ বেশে বসে আছে, সাব্বির তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে আছে একটা বার রিয়া তাকাবে বলে। রিয়ার মুখ টা বড় শুকনো লাগছে দেখে মনে হচ্ছে অন্য কোনো জগতে আছে। এসব কোলাহল সব কিচ্ছু তার কানে পৌঁছাতে ব্যর্থ বোধহয়।
~” হঠাৎ রাইসা কানে কানে কিছু একটা বলে গেলো রিয়ার হুশ ফিরলো। চোখ তুলে তাকাতেই রিয়া অস্থির হয়ে উঠলো সামনের মানুষ টাকে দেখে, এর চোখের সাথে চোখাচোখি হলো দুজনের। রিয়ার সোজাসোজি বসে আছে সাব্বির তার পাশেই জিসান। সাব্বির শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো রিয়ার দিকে, পাশে তাকাতেই জিসান রিয়া কে এক চোখ মেরে একটা ডেভিল হাঁসি দেয়।
আবার তকালো বউ বেশে থাকা রিয়া সাব্বির এর চোখের দিকে কিছু একটা বলতে চাইছে রিয়ার দু-চোখ বলছে,, আপনি এখানে কেনো এসেছেন সাব্বির। আপনাকে দেখে যে আমার কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে। নাহ আপনার সামনে আমি অন্য কাউকে কবুল বলতে পারবো না। কিন্তু রিয়া মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না মাত্র কয়েক মিনিট পরে সে অন্য একজন এর বউ হয়ে যাবে এখন সাব্বির কে নিয়ে এসব চিন্তা করা যে পাপ।
সাব্বির যেন পড়তে পারছে রিয়ার চোখের নিষ্পাপ ভাষা গুলো। ইরফান, ফাহাদ, রোহান ও নিরব সাব্বির এর পাশে বসা অপর পাশেই জিসান, জিসানের পাশে জিহাদ বসা ছিলো রাইসা কে ঘরে যেতে দেখে উঠে দাঁড়ায় রাইসার পিছু নেয় জিহাদ।
~” আচমকা পেছন থেকে রাইসার হাত ধরে নেয় জিহাদ হঠাৎ এমন ঘটনায় ঘাবড়ে গিয়ে পেছনে তাকালো রাইসা,
তাকাতেই রাইসা কপাল কুচকে বললো, হাত ছাড় অসভ্য।জিহাদ রাইসার কথায় পাত্তা না দিয়ে রাইসার হাতের চুড়ি গুলো ঘরে এদিক ওদিক নাড়াতে লাগলো, রাইসা ছাড়াতে চাইছে পারছে না জিহাদ হাত টা মুষ্টি করে ধরে বললো, এই হাত টা বুকে নিয়ে আমি সারা রাত দিন পার করে দিতে পারবো ডার্লিং।
~” রাইসা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়েই জিহাদের গাল বরাবর বড়সড় একটা থাপ্পড় মারলো, রাগে ফোসফাস করে বললো, অসভ্য ছোট লোক আর কোনো দিন আমার হাত ধরার সাহস দেখিয়েছিস তোহ তোর হাত টা কেঁটে রেখে দেবো। সাথে সাথে জিহাদ রাইসার গাল চেপে ধরে দাতে দাত পিশে বলে, কু***র বাচ্ছা আমি তোর হাত ধরলে তোর গায়ে ফোসকা পরে তাই না। আর ওই ছেলেটা যে যখন তখন তোর হাত ধরে তখন ফোসকা পরে না..? তখন তো খুব মজা লাগে তাই না।
~” দ্যাট নট অফ ইউর বিজনেস ফাহাদের রাগান্বিত কন্ঠে ঘুরে তাকালো জিহাদ ও রাইসা। ফাহাদ কে দেখেই জিহাদ নিজের হাত টা নামিয়ে নিলো “! ফাহাদ জিহাদের কাছে আসতে আসতে বলে
–, কার হাত ধরলে রাইয়ের ভালো লাগে সেটা রাই কেই ভাবতে দে তুই হাত দিলে ওর ঝলসে যায় এটা বোঝার পর আপাতত তুই ওর থেকে দূরেই থাকার চেষ্টা কর।
~” জিহাদ ঘাড় কাত করে বললো, সেটা আমাদের পারসোনাল মেটার ” তুই এর মাঝে বাইরের কারো পরামর্শ প্রয়োজন নেই।
~’ ফাহাদ কথা না বাড়িয়ে এসে রাইসার হাত ধরে নিয়ে গেলো রাইসা ও ফাহাদের সাথে চলে গেলো জিহাদ দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই। কিছুক্ষণ পর রাগ কনট্রোল করে এসে আবার ভাইয়ের কাছে বসে। ফাহাদ রাইসা কে মাহি অহনা দের কাছে রেখে মাহি কে বলে তোর বন্ধবীর সাথেই থাকিস একা ছাড়িস না বলে গিয়ে আবার ইরফানের কাছে বসে।
~” রাইসা যখন ঘরের দিকে যায় ফাহাদ তখন রাইসা কেই দেখছিলো আর তখনই নজরে পরে জিহাদ রাইসার পিছু পিছু যাচ্ছে তাই তো ফাহাদ ও উঠে ওদের পিছু নেয়। তাই তো জিহাদের হাত থেকে রাইসা কে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে কিন্তু এখানে বিয়ের এতো ঝামেলার মাঝে সব সময় রাইসা কে চোখে চোখে রাখাটা কঠিন তাই মাহি অহনা রাইসা ওদের এক সাথে থাকতে বললো। জিহাদ কে বিশ্বাস নেই ও না আবার রাগের মাথায় রাইয়ের সাথে বাজে কিছু করে বসে।
~” রাইসার মামি রাইসা দের পুরো বাড়ি টায় নজর বুলিয়ে একটা পৈশাচিক হাঁসি দিয়ে মনে মনে ভাবছে, আর কিছু দিন পর এই পুরো বাড়ির মালিক হবে আমার দুই ছেলে। সাথে সিরাজ সিকদার এর সব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী আমার ছেলেরা। আর আমি হবো এই বাড়ির কর্তী। হাঁ হাঁ পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে খাবো শুধু। ওরা দুই বোন হবে আমার দাসী।
~” বিয়ে পড়ানো শুরু হলো, রিয়া সেই তখন থেকে রিয়ার দু-চোখ বেয়ে পানি পড়ছে থামবার নাম নেই। সাব্বিরের নজর যেনো রিয়ার ক্লান্ত মুখে ” সাব্বির আহত চোখে তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,
“কেদো না মেঘ কন্যা ” তোমায় কাদতে দেখলে যে আমার বুকে হাহাকার সৃষ্টি হয়।
~” কান্নারত রিয়ার দিকে তাকিয়ে জিসান বিরক্ত চোখে তাকালো, মনে মনে বিড়বিড় করলো, এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছে বজ্জাত ছেমরি ” বাসায় গেলে তোর জন্য আছোলা বাশ রেডি আছে এমন নেকামি আমার সামনে করতে আসলে সেই বাশ দিয়ে পিঠের ছাল ছাড়িয়ে নিবো।
~” মরিয়ম বেগম এসে চেয়ারে বসলেন ‘ রাইসা, মাহি, অহনা ও ফাইজা রিয়ার কাছাকাছি বসে আছে। রিয়া রাইসার হাত টা শক্ত করে ধরে আছে “বুকের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে কিন্তু কারণ টা যানা নেই রাইসা ও বোনের হাত দু হাত দিয়ে চেঁপে ধরলো।
~ ” হঠাৎ করেই উপস্তিত অনেকের মাঝে একটা কথা বিষ্ফোরনের মতো ফাটে যখন কাজী সাহেব , ছেলের নামের জায়গায় জিসান এর নাম উল্লেখ না করে সাব্বিরের নাম বলে।
~” চারোদিকে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করে, জিসান উত্তেজিত কন্ঠে বললো, কাজী সাহেব রাতে কি ঠিক মতো ঘুমাতে পারেননি ভুল ভাল বকছেন কেনো বরের নাম টা ঠিক ঠাক বলুন।
কাজী সাহেব খাতা চেক করে বললো , কই আমি তো ঠিকই বলেছি বাপ তুমি শুনতে ভুল করেছো।
~” জিসান ভ্রু কুচকে বললো, নিজের নাম শুনতে নিজে ভুল করবো আমি..?
জিহাদ উঠে দাঁড়ায় চেঁচিয়ে বলে, এই কাজী এই গাজা খেয়ে এসেছিস নাকি..?
— কাজী সাহেব কিছুটা ভয় পেয়ে চুপ করে গেলেন। মনে মনে ভাবছে এসব বখাটে ছেলেদের কিছু বলতে গেলেই আজে বাজে কথা শুরু করে দেয় অসভ্য ছেলে।
~” ফাহাদ একটু কেঁশে বলে, কাজী সাহেব ঠিকঠাক নামই বলেছেন বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। সাব্বিরের কাধে হাত রেখে বললো, বর আমাদের পাশেই আছে, ।
~” জিসান এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়, জিহাদের তো ফাহাদের উপরে এমনিতেই রাগ এখন আবার এসব কাহিনি দেখে ছূটে এসে ফাহাদের কলার টেনে ধরলো, সাথে সাথে জিহাদের মুখ বরাবর ইরফানের শক্ত পক্ত হাতের একটা পাঞ্চ পরলো, নাক থেকে ও ঠোঁট কেটে কিছুটা রক্ত বেরিয়ে এলো, জাকিয়া বেগম এসে ছেলেকে ঝাপ্টে ধরে বলে, হায় হায় গো এটা কি করলে আমার ছেলেটা কে শেষ করে দিলো গো।
ইরফান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
~” আমার সামনে আমার ভাইয়ের কলার টেনে ধরলে আমি আবরার ইরফান চৌধুরী আরো ভয়ংকর রুপ ধারণ করতে পারি। আত্মীয় মানুষ তাই ছাড় দিলাম।
~” জিসান দাত কিড়মিড় করে বললো, আত্মীয় মাই ফুট এই তোরা কে হ্যাঁ..? এখানে কেনো এসেছিস।
~” রোহান, আর নিরব এক সাথে বলে ওঠে বন্ধুর বয়েতে এসেছি..।
~” বন্ধুর বিয়ে মানে..? কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করলো জিসান।
~” রোহান সাব্বির কে দেখিয়ে বলে, এই যে বন্ধু ওর বিয়ে। ওই কে বধু সাজে থাকা আমাদের ভাবি।
— রিয়া যেনো স্তব্ধ কাঠেরপুতুলের মতো চুপচাপ বসে রইলো, কিচ্ছু বোধগম্য হচ্ছে না। তবে মা এখনো চুপচাপ বসে আছে বিষয়টি ভাবাচ্ছে রিয়া কে খুব মায়ের রিয়েকশন টা কি হবে আল্লাহ ভালো যানে।
~” মরিয়ম বেগম চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে দু হাত আড়াআড়ি ভাবে বুকে গুজে রেখে নিরব দর্শকের মতো বসে আছে ,
— জাকিয়া বেগম এসে মরিয়ম বেগম এর সামনে দাঁড়ালো এরপর গুঞ্জন করে বলতে লাগলো, তুমি কিছু বলবে না ওদের থামতে বলো মরিয়ম এ কাদের দাওয়াত দিয়েছো এরা কি বিয়ে খেতে এসেছে নাকি বিয়ের শ্রাদ্ধ করতে এসেছে।
মরিয়ম বেগম স্বাভাবিক কন্ঠে জ্ববাব দিলো, শুনতেছি ভাবি শুনতে দিন।
জাকিয়া বেগম কিছুটা নাটক করে বললো, তুমি চুপচাপ বসে আছো মরিয়ম তুমি না স্কুলের শিক্ষিকা তোমার সামনে ছেলে গুলো আমার ছেলেদের বাজে কথা বলছে আমার জিহাদ কে কি মারা টাই না মারলো তুমি তাও মুখ বুজে শুনছো। ওদের কে থামাও তারাতাড়ি বিয়ে পরানোর ব্যবস্থা করো।
~” মরিয়ম বেগম উঠে দাঁড়ায় এর পর বলে, সে ব্যবস্থাই তো করছিলাম ভাবি আপনার ছেলেরাই তো কাজী সাহেব কে আটকে দিলো। উশ্রিঙ্খলা তো আপনার ছেলেরাই শুরু করেছে।
~” এক কি বলছো বোন তোমার মেয়ের জামাই হবে একটু পর আমার ছেলে আর তুমি তাকে সম্মান করে কথা বলছো তুমি কি বলছো ভেবে বলছো তো।
— সম্পূর্ণ ঠান্ডা মাথায় শান্ত মেজাজে ভেবে বলছি ভাবি।
~” জিসান রেগে বলে, কি সমস্যা মামি আপনি মায়ের সাথে এভাবে কথা বলছেন কেনো।
~” তোমার মা বলছে আমি কিছু বলতে চাইছি না আপাতত তোমাদের।
— জাকিয়া বেগম নাকছিটকে বলে , উহহহ এতো দিন আমার ছেলের গলায় মেয়ে ঝোলানোর জন্য কতকথাই মুখ থেকে বেরোতো এখন কেন বেরোয় না হ্যাঁ…
~” রাইসা বিরক্তি নিয়ে তাকায় মামির কথা শুনে কি যাতাবলছে।
~” মরিয়ম বেগম শান্ত গলায় বললো, আমি না ভাবি আপনি আমার দুটো মেয়ে আমার খুব আদোরের ওরা কখনো আমার কাছে বেশি হয়নি যে আমি ওদের অন্য কারো গলায় ঝুলিয়ে দেবো। বরং আপনি দিনে রাতে আমার মাথা খেয়েছেন আপনার বেয়ারা ছেলেকে আমার মেয়ের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য।। আর হ্যাঁ যারা আমার মেয়ের গলায় ঝোলানোর মতো বোঝা মনে করবে সে ঘরে আমার মেয়ে বিয়ে দেবো না যারা সম্মানে আমার মেয়েদের বরণ করবে সেখানেই বিয়ে দিবো তো এখন আপনাদের আর কোনো অপশন রইলো না এখানে।
জাকিয়া বেগম অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, মানে…?
~ ” আপনার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে আমি দেবো না।
~” জিহাদ চেঁচিয়ে বলে, বিয়ে দেবেন না মানে..? আমরা কি এখানে লুডু খেলতে এসেছি নাকি।
~” মরিয়ম বেগম স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ঘরে অনেক গুলো রুম ফাকা আছে চাইলেই শুয়ে বসে লুডু খেলতে পারো আমি মানা করবো না। কেউ বিরক্ত করবে না।
~” জিসান উত্তেজিত কন্ঠে বললো, এসব নাটকি কথা না বলে, আপনার নষ্ট মেয়ে কে আমি জিসান বিয়ে করতে এসেছি তাই তো বেশি, কি মাত্রায় নষ্টামি করলে বাইরের এতোগুলো ছেলে আসে ওর বিয়ে ভাঙানি দিতে।
— সাব্বির হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, ইরফান রেগে গিয়ে কিছুএকটা বলার আগেই মরিয়ম বেগম এর রাগান্বিত কন্ঠ ভেসে আসলো,
~” জ্বীব টেনে ছিড়ে ফেলবো আমার মেয়েদের নিয়ে বাজে কথা বললে, তোমাদের মতো ছোটলোক ফ্যামিলি তে আমার মেয়ের বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিলাম সেটা তোমাদের সৌভাগ্য মনে করো।
~” জিহাদ, জিসান দুই ভাই চোখাচোখি করলো, হঠাৎ করেই এই মহিলা এতো বেঁকিয়ে বসলো কেনো কারণ টা বুঝতে পারলো না।
~” রাইসা, অহনা, মাহি, মুখ চেঁপে হাসছে ফাইজা কিছু বুঝতে পারছে না বিয়ে খেতে এসে এসব কি হচ্ছে তবে যা হচ্ছে ভালই হচ্ছে ওই বাজে ছেলেটার সাথে রিয়া আপুর বিয়ে না হলেই ভালো কিসব বাজে কথা বলছে । সাব্বির ভাইয়া অনেক ভালো মানুষ তার সাথেই রিয়া আপুর বিয়ে হোক। কিন্তু কৌতুহল রাখতে না পেরে ফাইজা মাহি কে কানে কানে জিজ্ঞেস করলো, এসব কি হচ্ছে আপু..?
~” মাহি হেঁসে ফেললো এরপর বললো, যা হচ্ছে আপাতত দেখে যা বাসায় গিয়ে সব বলবো তোকে।
~” ফাইজা মাথা নেড়ে সায় জানালো, আচ্ছা।
~” রিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে মা এসব কি বলছে রিয়া ও বুঝতে পারছে না! তবে রিয়ার খুশি লাগছে সাব্বিরের দিকে এক পলক তাকালো সাব্বির রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে এক চোখমারে রিয়া দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
~” রাইসার মামা চুপচাপ বসে আছে রাইসার মামি সব কথা বলছে বরাবরই রাইসার মামি সব কথা বলে আর তিনি বউয়ের আচলে মুখ গুজে চুপচাপ বসে থাকে। জাকিয়া বেগম কপাল কুচকে বললো,
” তুমি কি চাও মরিয়ম..?.
৷ ” আপনার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো না ভাবি। রিয়ার জন্য অন্য পাত্র ঠিক করেছি।
~” অন্য পাত্র ঠিক করেছ মানে … তাহলে আমরা এখানে কেনো এসেছি,
— এসেছেন যখন খেয়ে রেষ্ট করে তারপর চলে যান।
~” অপমান করছো মরিয়ম..?
— ভেবে নিন তাই।
৷ ~” জিসান তেরে এসে রিয়ার হাত ধরে বললো, এই তোর মা এসব কি বলছে বিয়ে দেবে না মুখের কথা হ্যাঁ এতো গুলো বছর ধরে তোকে বউ ভেবে আছি আমি।
~” সাব্বির উঠে এসে জিসানের হাত থেকে রিয়ার হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ওর হাত ধরার সাহস বা অধিকার দুটোর একটাও তোকে আমি দেই নি..।
~” সাহস দেওয়ার তুই কে হ্যাঁ… তোর কি..??
~”আমার অর্ধেক বিয়ে করা বউ..।
— মানে..?
~” দেখলি না কাজি আমার নামে অর্ধেক বিয়ে সেরে ফেলেছে বাকি টা হয়ে যেতো এতক্ষনে তোদের মতো উজভুকের দল না থাকলে।
~” রিয়া প্রশান্ত চোখে তাকালো সাব্বিরের দিকে।
— জিহাদ চেঁচামেচি শুরু করে আজে বাজে কথা বলা শুরু করে দেয়, মরিয়ম বেগম ধমকে বলে,
— ” এটা আমার বাড়ি কোনো বস্তি নয় এখানে এসব বেয়ারাপেনা চলবে না, যা করার বাইরে গিয়ে করো। যাও……।
~” জাকিয়া বেগম নাক কুচকে বললো, এবাবে বাড়ি ডেকে এনে অপমান করলি তো। আমিও অভিশাপ দিচ্ছি তোর মেয়েরা কখনো সুখী হতে পারবে না দেখিস। মুখ ভেংচি কেটে রাইসার মামা কে ঠেলে নিয়ে চলে গেলো ছেলেদের বললো চলে আয় ওদের দেমাগ বেড়েছে চলে আয় তোরা। জিহাদ বেরিয়ে গেলো মায়ের সাথে জিসান এক নজর চোখ বোলালো, অহনা মাক্স টা খুলে ফেলে জিসান কম্পিত চোখে তাকায় সেদিকে জাকিয়া বেগম এসে ছেলেকে টেনে নিয়ে গেলো।
~” এরি মাঝে সাব্বিরের বাবা এসে উপস্থিত হয় সেখানে, এসেই সালাম দিলেন মরিয়ম বেগম কে, তিনি সালামের উত্তর দেয় ইরফান পরিচয় করিয়ে দেয় তাদের দুজনের মরিয়ম বেগম বলেন, আরে ভাইজান আপনার অপেক্ষায় ছিলাম এতোক্ষণ । সাব্বিরের বাবা বিনয়ের সাথে বলে,
বেশি দেরি হয় নি তো আপা..!
~” না না ঠিক সময় এসেছেন।
~” হাঁ হাঁ হাঁ তাহলে বিয়ের কাজ শুরু হোক যত দ্রুত সম্ভব আমি আমার ঘরের লক্ষি কে ঘরে তুলতে চাই..।
~”মরিয়ম বেগম মৃদু হেঁসে বললেন, ঠিক আছে।
~” রিয়া অবিশ্বাস্য নজরে তাকিয়ে রইলো, তবে রিয়া খুব খুশি হয়েছে একদিনের পরিচয়ে কেনো জানি সাব্বির ছেলেটাকে রিয়ার খুব ভালো লেগেছিলো। তা কাউকে বলতে পারে নি কিন্তু ভাগ্য তাদের মিলিয়ে দিলো কাজী আবার প্রথম থেকে বয়ের কাজ শুরু করে, এবার সবাই খুশি মনে বিয়ে উপভোগ করছে। রাইসা চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছে আজ মা যা অপমান করেছে মনে হয় না মামা মামি বা তাদের ছেলেরা আর কোনো দিন এ বাড়ির মুখোমুখি হবে।
~” মাহি ইরফানের দিকে তাকালো খুব ফুরফুরে লাগছে তাকে, মাহি বিড়বিড় করে আওয়ালো,
~” Thanks ” ইরফান ভাই আজ আপনার জন্য রিয়া আপুর জীবন টা নষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে গেলো। কিভাবে ফাহাদ ভাইয়া কে সব আক্রমণ থেকে বাচিয়ে নেন আপনি আপনার বন্ধু দের পাশে থাকেন বিষয় টা আমার খুব ভালো লাগে ইরফান ভাই। শুধু এ বিষয় গুলো নয় আমার তো পুরা আপনি টাকেই ভালো লাগে।
~” বিয়ের প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে গেলো, রিয়া সাব্বির কে গাড়ি তে উঠিয়ে দিয়ে মরিয়ম বেগমের কাছে বিদায় নিয়ে ইরফান রা রওনা হলো যাওয়া সময় ফাহাদ বার বার রাইসার দিকে তাকাচ্ছিল রাইসা মাহি ও অহনার সাথে কথায় এতো মগ্ন ছিলো যে তা খেয়াল ও করতে পারে নি ” সাব্বিরের বাবা চলে গেলেন অন্য গাড়ি তে। রোহান নিরব বাইকে চলে যায়। ফাহাদ ড্রাইভ করছে, গাড়িতে বসে ইরফান ভাবছে কতো কিছুর পর সব স্বাভাবিক হলো এর জন্য অবশ্য অহনার ক্রেডিট অনেক দুই দিন আগে…
~” সেদিন অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে গিয়ে ফাহাদ, জিসান কে কড়া নজরে রেখেছে সব তথ্য ইরফান।ফোনের মাধ্যমে রেখেছে। এরপর ইরফান রা বাসায় ফিরে মাহি, অহনা, ফাইজা কে বাসায় রেখে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ে ইরফান । রোহান কে সাথে নিয়ে ফাহাদ ও নিরব এর কাছে চলে যায়। মাহি তখন অনেকটা দুর্বল ছিলো গায়ে হাললা জ্বর ও ছিলো হঠাৎ অবেলায় পানিতে ভিজে আবার ভেজা কাপড়ে অনেকক্ষণ থাকায় তবে ভাগ্য ভালো যে ইরফান রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মাহির ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে এনেছিলো নয়তো বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেকটা সময় যেতো মাহির অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতো।
__ ইরফান ও রোহান এসে জিসানের পাইটুপাই সব পদক্ষেপ মেপে নিলো, কখন কোথায় যায় কোন রাস্তা দিয়ে যায় কি করে দূর থেকে সব দেখে নিলো। পরেরদিন ঠিক সেই অনুযায়ী ইরফান, ফাহাদ , রোহান নিরব ও অহনা কে সাথে নিয়ে চলে গেলো সেই রাস্তায় যেখান দিয়ে জিসান প্রতিদিন বাসায় ফেরে। ইরফান রা নেমে দূরে গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে নজর রাখে অহনার কানে ব্লু-টুথ। অহনা গাড়ি তে বসে আছে তার পাশেই নিরব ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নিরব এর শার্টের কলারে বোতামের মতো মিনি সাইজ ক্যামেরা লাগানো যা স্বাভাবিক ভাবে কারো চোখে পড়ার মতো না। জিসান বাইক নিয়ে আসছে দেখে নিরব হাত দিয়ে ইশারায় অহনা কে রেডি হতে বলে অহনা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ইচ্ছে করেই জিসানের বাইকের সাথে হালকা ধাক্কা লাগালো, যাতে কোনো ক্ষতি না হয় কিন্তু জিসানের মনোযোগ পায় ঠিক তাই হলো, ধাক্কা লাগতেই জিসান বাইক থেকে নেমে এসে রাগে ফোসফাস করে বললো,
~” শালা চোখে দেখে গাড়ি চালাস না, গাড়ি টার বারোটা বাজিয়ে দিলি..।
_ অহনা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় খোলা চুল গুলো পেছনে সরিয়ে সানগ্লাস টা চোখ থেকে তুলে মাথায় গুজে বলে, ওহ সরি সরি, আর ইউ ওকে..? আআ কোথাও লাগেনি তো আপনার।
–এতো সুন্দরী একটা মেয়ে এতো কোমল কন্ঠে কথা বলছে জিসান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।
~” আপনার কোনো ক্ষতি হয় নি তো..?
জিসান বিড়বিড় করে বললো, এতো করে বলছে কিছু টাকা তো মারাই যায় এই মেয়ের থেকে সুন্দরী মেয়েদের মন বড় থাকে তিন-চার হাজার মারাই যায়।
~” জিসান একটু কেঁশে বলে , থাক মেডাম অস্থির হইয়েন না আমি বুঝতে পারছি আপনি ইচ্ছে করে করেন নি ভুল তো হতেই পারে.. কিন্তু আমার বাইক টায় একটু গড়বড় হয়েছে ধাক্কা খেয়ে ঠিক করতে আবার কতো গুলো টাকা যাবে এই আরকি..।
~” অহনা এক নজর তাকায় বাইকের দিকে এমন আহামরি ধাক্কা দেয় নি যে কিছু হবে হালকার উপরে ঘষা লাগিয়ে বাইক টা অক্ষত তবুও জিসানের লোভ দেখে হাঁসি পাচ্ছে কিন্তু হাঁসা যাবে না। অহনা দ্রুত ব্যাগ থেকে একটা বিশ হাজার টাকার বান্ডিল বের করে জিসানের হাতে দেয়। টাকাগুলো দেখে জিসানের চোখ গুলো চকচক করে জ্বলে উঠলো। সামান্য এই ব্যাপারে এতো গুলো টাকা মেয়েটা দিয়ে দিলো তা জিসানের কল্পনার ও বাইরে।
~” অহনা জিসানের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার নাম টা..?
~” জিসানের ধ্যান ভাঙলো , আ আমি জিসান.।
~” হেই হ্যান্ডসাম তুমি কিন্তু কিউট আছো.।
— জীবনের প্রথম কোনো মেয়ে জিসান কে হ্যান্ডসাম বলেছে জিসান তো সত্যিই নিজেকে হ্যান্ডসাম ভেবে নিলো এতো সুন্দরী মেয়ে বলেছে আজকে তো শুধু জিসানের অবাক হওয়ার দিন। এতো গুলো টাকা সুন্দরী মেয়ে। মেঘ না চাইতে বৃষ্টি হাজির।
— জিসান কেবলা হেঁসে বললো, আপনি ও অনেক কিউট মেডাম।
~” কি তখন থেকে মেডাম মেডাম করছো.. কল মি জারা আমাকে জারা বলে ডাকবে ওকে।
~” ওকে মেডাম না মানে ওকে জারা ”
~” রোহান তো রেগে বোম হয়ে গেলো, এতোক্ষণ যাবৎ কি কথা বলছে অহনা ওই ছলেটার সাথে, ইরফানের কান থেকে ব্লু “টুথ একটা নিজের কানে নিলো, এর পর ওদের রসালো কথায় গাছের পেছন থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
তোরা থাক আমি আমার বউ কে নিয়ে আসি বেশি বারাবাড়ি করছে এবার আমার সাথে আজ পর্যন্ত একটু নরম স্বরে কথা বলে নি আর আরেক বেডার সাথে ঢং করে কথা বলছে বলি ও বউ পাপ রে পাপ।
~” ইরফান রোহান কে টেনে নিয়ে আসে। রোহান ঝাড়ি মেরে বলে ছাড় আমাকে ছাড় আমি আমার বউয়ের কাছে যাবো।
~” ইরফান ধমকে বলে, এখন বউ বউ করে সব বরবাদ করলে তোকে কিন্তু আলু ছাড়া কাচ্চি বানাবো মানে বিয়ে দেবো ঠিক কিন্তু বউ পাবি না।
— রোহান কাদো কাদো কন্ঠে বললো, এটা আবার কেমন কথা তোর বোন কে ভালোবাসি বলে তুই সব সময় আমার সাথে এমন করবি এটা তো মানা যায় না.. আল্লাহ এই দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে আমি যাকে পছন্দ করলাম তাকেই কেন ওর বোন বানাইলা। উঠতে বসতে খালি ব্লাকমেইল করে শালা।
ইরফান গম্ভীর কণ্ঠে বললো, চুপচাপ থাক সব প্ল্যান মাফিক হচ্ছে। ফাহাদ গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, রোহান ভাইয়া তোমার কি মনে হয় আমাদের বোনের চয়েস এতো বাজে যে এই আস্ত পাঠা কে পছন্দ করবে। শুধু শুধু প্যারা নিও না তো দেখো কি হয়।
~” রোহান দাঁতে দাঁত চেঁপে দাঁড়িয়ে রইলো।
~” অহনা একটা হাঁসি দিয়ে বললো, আমার বাবার এতো টাকা সেই টাকা সামলানোর জন্য তোমার মতো কেউ নেই আমি তার এক মাত্র মেয়ে। তোমার মতো এতো কিউট হ্যান্ডসাম একজন কে পেলে কবেই বিয়ে করে বাবা কে জামাই উপহার দিতাম। আর বাবার সব কিছু তুমি সামলাতে। উফ স্বপ্ন মনে হয় স্বপ্নই রয়ে যাবে।
~” জিসান তো কল্পনায় চলে গেলো, বড়লোক বাবার এক মাত্র মেয়ে একে বিয়ে করলে সব টাকা পয়সা তো জিসানেরই। জিসান উৎকন্ঠিত হয়ে বলে,
বারণ করেছে কে বিয়ে করে ফেলো আমাকে আমি রাজি..!
~” অহনা খুশি হওয়ার নাটক করে এর পর কপাল কুচকে বললো, কিন্তু আগে বলো তুমি কি বিবাহিত..?
~” না আমি পিউর অবিবাহিত.!
জিসানের কথায় খুব হাঁসি পেলো অহনার কিন্তু হাঁসি আটকে বলে, উহুম তাহলে তো হবে না…!
~” কেনো কেনো..?
~” এক ফকির বাবা আমার বাবা কে বলেছে আমাকে যে ছেলে বিয়ে করবে তার আগেও একটা বিবাহ করতে হবে নয়তো আমার বাবার টাকা পয়সা কমে যাবে।
~” কোনো পেরা নিও না জানটুস আমি তোমার জন্য আরেকটা বিয়ে করে নিবো তার পর তোমায় বিয়ে করবো।
~” অহনা মন খারাপের নাটক করে বলে, কিন্তু তুমি আরেকটা বিয়ে করলে তোমার তো তোমার প্রথম বউয়ের প্রতি ভালো বাসা থাকবে তখন তো আমার অনেক খারাপ লাগবে। রাগে তোমায় বিয়ে নাও করতে পারি। আমার আবার অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি পছন্দ নয়। ছোট থেকে একা বড় হয়েছি তো তাই।
~” আরে না আমি বউ কে ভালো বাসবোই না শুধু তোমায় ভালো বাসবো।
~” না আমি বিশ্বাস কিভাবে করবো তোমায় তুমি যে তাকে ভালোবাসবে না তার কি গ্যারান্টি।
~” তাহলে তো তোমাকে সব সত্যি বলতেই হয়।
— কি সত্যি শুনি দেখো আমি কিন্তু মিথ্যা কথা পছন্দ করিনা যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের কে আমার বাবা মেরে মাটিচাপা দিয়ে দেয়। তাই আগেই বলছি আমায় বিয়ে করার আগে সব সত্যি বলতে হবে নয়তো পরে বিপদ। আর সত্যি কথা যতই খারাপ হোক আমার ভালো লাগে তাদের কে খুশি হয়ে আমার বাবা মোটা চেইন ব্রেচলেট উপহার দেয়।
~” জিসান শুকনো ঢোক গিলে হয়তো কিছুটা ভয় পেয়েছে, সামনের গাড়ি টার দিকে তাকালো অনেক দামি গাড়ি মেয়েটার হাতে আইফোন।এত্ত বড়লোক এগুলো পেতে হলে এই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে। চারোদিকে টাকা আর টাকা।
” কি হলো হ্যান্ডসাম কি ভাবছো..?
~” না কিছু না মেডাম না থুক্কু জারা।
~” আমার কথার উত্তর দেও সত্যি কথা বলবে কিন্তু কি বলতে চাইছিলে তা বলো।
~” এখনই বলবো..?
~” হ্যাঁ এখনই, “।
তাহলে শোনো আমার মা আমার আমার ফুপাতো বোনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিলো। না মানে আগে তো জানতাম না তোমার কথা চিনতাম না তোমায় ! আমার ফুপার অনেক বড় বাড়ি আছে সাথে অনেক সম্পদ ও আছে তো আমার মায়ের ইচ্ছে ছিলো ফুপাতো বোন কে বিয়ে করে অগুলো সব আমার নামে লিখে নিতে। আমি তো ওকে এমনিতেও ভালোবাসি না আমি শুধু মায়ের ইচ্ছে রাখতে বিয়ে করবো শোনো বিয়ের পরে সব জায়গা সম্পদ আমার নামে লিখে নিয়ে তোমায় বিয়ে করে নেবো। এরপর আমার ফুপার বিলাশ বহুল বাড়িতে আমরা দুজন বিলাশিতা করবো আর ওদের কে বাসা থেকে বের করে দিবো তোমার বাবার সব টাকা পয়সা সামলে নিবো আমি ওকে জানু ।
~” এই কথা টুকু জিসানের মুখ থেকে বের করার জন্য অহনা এতোক্ষণ যাবৎ এতো অভিনয় করে গেলো। অডিও সহ ভিডিও টি রেকর্ড হয়ে গেলো নিরবের ক্যামেরায়
~” জিসান নিজের ঘাড়ে হাতবোলাতে বোলাতে বলে, দেখো যারা এতে সাপ ও মরবে না লাঠি ও ভাংবে না। তোমার বাবা কে দেওয়া ফকির বাবার শর্ত ও রাখা হবে সাথে এত্ত বড় বাড়ির মালিক আমরা হবো আবার আমাদের বিয়েও হবে। একেই বলে এক ঢিলে তিন পাখি। বুদ্ধি ভালো না..?
~” অহনা জ্বোর পুর্বক হাঁসার চেষ্টা করে বলে, হ্যাঁ!
~” কাজ শেষ এখন আর জিসানের বকবক শুনতে ভালো লাগছে না, ইরফান ভয়েস অন করে অহনা কে চলে আসতে বলে অহনা দ্রুত চলে গাড়িতে উঠে পরে জিসান এসে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বলে কি হলো,
~” নাহ.. কিছু না.. বাবা কল করেছে যেতে হবে।
~” আরে তোমার বাসার এড্রেস দিয়ে যাও তোমায় খুজবো কিভাবে…?
~” আমার বাবার কি টাকা নাকি তুমি আমায় খুজবে কেনো আমি তোমায় খুজে নিবো.।
— ফোন নাম্বার টা অন্তত দিয়ে যাও..?
— ধুর বোকার মতো কথা বলো না, আমার বাবার কি কম টাকা নাকি শুধু তোমার ফোন নাম্বার কেনো তোমার পুরো মোবাইল হ্যাক করে আমার সামনে হাজির করবে। তুমি চিন্তা করো না দুই -দিন পরই আমাদের আবার দেখা হবে.. বাই বাই।
জিসান বিড়বিড় করে বললো, তোমার মতো মুরগী পেয়েছি সহজে হাত ছাড়া করা যাবে না। তোমার বাবার সব টাকা লুটে নিয়ে পথের ভিখারি বানিয়ে ছেড়ে দেবো সব টাকা দিয়ে আয়েস করবো আমি।
~” অহনা অনেক দূরে এসে গাড়ি থামায় ইরফান রা সেখান থেকে গাড়ি তে উঠে অহনা গাড়ি চালাতে ভালোই পারে তবে পুরোপুরি পাকা না তাই ফাহাদ ড্রাইভ করছে। অহনা ফাহাদের পাশে বসে আছে, পেছনের সিটে বসে আছে ইরফান, নিরব ও রোহান ইরফান মোবাইলে কিছু একটা করছে নিরব ক্যামেরা নিয়ে কিছু একটা করছে, কিন্তু রোহান ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আছে।
~” অহনা লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে এক নজর রোহান কে দেখলো বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে কপাল কুচকে বসে আছে, তা দেখে অহনা স্মিত হাঁসে। ফাহাদের সাথে জিসানের ব্যাপারে কথা বলছে আর ফাহাদ, অহনা দুজন মিলেই হাঁসছে। এসব দেখে রোহান আরো বেশি বিরক্ত হচ্ছে।
~” এখানকার কাজ শেষ করে ইরফান সাব্বিরের বাবার অফিসে যায়। সাব্বির আর রিয়ার ব্যাপারে সব বলে। সাব্বিরের বাবা ও চায় ঘরে একটা বউ আসুক যে তার পলন করতে না পারা সকল দায়িত্ব পালন করে তার ছেলে কে ঘরমুখো করুক। ঘরে বউ আসলে সাব্বিরের বেপরোয়া ভাব কমবে। তাই সে রাজি হয়ে যায়। ইরফান সাব্বিরের বাবা কে বলে যেনো বিয়ের ঠিক ২০ মিনিট আগে তাকে কল দেওয়া হবে সে যেনো পৌঁছে যায়,।
~” এসব কিছু ঠিক ঠাক করতে করতেই রিয়ার বিয়ের দিন চলে আসে, বাকি থাকে রাইসার মা কে রাজি করানো। রিয়ার বিয়ের ঠিক এক ঘন্টা আগে নিরব সব প্রমাণ নিয়ে রাইসা দের বাসায় আসে ইরফান রা ছাদে থেকে নেমে সেসব প্রমাণ ও ভিডিও নিয়ে মরিয়ম বেগম কে দেখায়। জিসান জালিয়াতি করে মানুষের টাকা মেরে খায়, এলাকায় নিজের চাকরির মিথ্যা গুজব ছড়িয়েছে এসব তো আছেই সাথে অহনা কে বলা কথা গুলো ভিডিও আকারে দেখে মরিয়ম বেগম হতাশ হয়ে বসে পরে এই মুহুর্তে বিয়ে ভাঙলে রিয়ার মনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে কি করবে কিচ্ছু বুঝে পায় না।
~” তখন ইরফান মরিয়ম বেগম কে সাব্বিরের কথা বলে, সাব্বিরের বায়োডেটা সব মরিয়ম বেগম কে জানায় সব কিছু জেনে শুনে তিনি একটা শর্তে রাজি হয় তার মেয়ে কে সাব্বিরের বাবা সেচ্ছায় নিজে দাঁড়িয়ে বিয়ে দিয়ে নিয়ে গেলে তার এ বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই সে রাজি। ইরফান তো সব ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছিলো তাই সবাই মরিয়ম বেগমের শর্ত কবুল করে নেয়।
~” আজ সারাদিন অহনা মাক্স পরে ছিলো যাতে জিসান শুরু তেই অহনা কে চিনতে নারে তাহলে কোনো মজাই থাকবে না। জিসান যাওয়ার সময় অহনা কে দেখে থমকে গিয়েছিল। হয়তো তখন কিছুটা আনতাজ করতে পেরেছিলো।
~” হঠাৎ ব্রেক কষাতে ইরফান ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসলো, বাসায় পৌঁছে গেছে ওরা। এতোক্ষণ গাড়ি তে বসে বসেই ফাইজা কে সব কথা বুঝিয়ে বলে মাহি ও অহনা দুজন মিলে। এতোক্ষণে ফাইজা সব জানতে পারে। ফাইজা এখন অনেকটা বড় হয়েছে দুদিন বাদে S.S.C দেবে এখন ওর সব বিষয় জানা দরকার তাই মাহি ওকে প্রায় সব কথাই বলে।
~” বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় দশ টা বেজে গিয়েছে ওরা বাসায় ফিরতেই সবাই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো, তিন গিন্নী দাঁড়িয়ে আছে কেউ ঘুমায় নি, মাঝে শোফার একজন মহিলা বসে আছে! ” মাহি ভাবতে লাগলো আরে চেনা চেনা লাগছে, এনাকে কোথাও যেনো দেখেছি।
~” অহনা ধীর কন্ঠে বললো, মাহি এটা চিনিস নাকি..?
~” উহুম, চিনি না তবে কোথায় যেনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে।
~” ইরফান অস্থির হয়ে দু আঙুল দিয়ে মাথা টা চেপে ধরলো, চোখ গুলো হঠাৎই কেমন লাল বর্ন ধারণ করেছে।
মাহি ইরফানের দিকে তাকাতেই ইরফানের রাগান্বিত মুখ টা মাহি দেখতে পেলো পরক্ষণেই মনে পরলো সেদিন রাতে এই মহিলাকেই দেখে ছিলো রাস্তায় যাকে দেখে ইরফান ভাই ভীষণ রেগে গিয়েছিল কিন্তু কে এই মহিলা। আর কেনো এসেছে..??
চলবে……..??