#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মধুজা অক্ষরের কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়। তাহলে কি সে ধরা পড়ে গেল! মধুজা কিছু বলতে যাবে তখন অক্ষর বলে,
‘আমি তোমার ব্যাপারে সব কিভাবে জানলাম এটাই ভাবছো তো? ব্যাপারটা এতটাও কঠিন ছিল না। আমাদের বিয়ে পড়ানোর সময় তোমার পুরো নাম শুনেছিলাম। তখন সেভাবে মনযোগ না দেওয়ায় নামটা মনে ছিল না। তারপর হঠাৎ মনে সন্দেহ হলো। তখন আমাদের বিয়ের কার্ড দেখলাম। ব্যস সিওর হয়ে গেলাম যে তুমিই সেই বিখ্যাত সাংবাদিক যে আমার নামে এসব নিউজ করেছ। এখন তুমি আমাকে বলো হানি যে, তুমি আমার সাথে এমন কেন করছ?’
মধুজা বুঝে গেছে এখন আর কোন কিছু লুকিয়ে লাভ নেই৷ তাই সরাসরি বলে দেয়,
‘হ্যা আমিই মনিরা তাবাসসুম মধুজা। আপনার নামে নিউজও আমি করেছি।’
অক্ষর নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। মধুজা যে তার শত্রু হবে সেটা সে ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারে নি। এখন সত্যটা মেনে নিতে কষ্ট হলেও তাকে মানতে হচ্ছে। অক্ষর জানতে চায়,
‘তুমি আমার নামে এসব ভিত্তিহীন নিউজ কেন করছ? কিসের শত্রুতা তোমার আমার সাথে?’
‘আপনার সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। আমি শুধু কাউকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়ার জন্য লড়ছি। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার দায়িত্ব সত্য উদঘাটন করা।’
‘তুমি যেটাকে সত্য ভাবছ সেটা সত্য নয়। আমি কোন অর্গান ট্রাফিকিং এর সাথে যুক্ত নেই।’
মধুজা এবার নিজের ফোন থেকে একটা ছবি বের করে অক্ষরকে দেখায়। ছবিটা একটা অসুস্থ মেয়ের। যে জীর্ণ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে।
‘চিনতে পারছেন এই মেয়েটাকে? ওর নাম সুমি। আপনার কাছে চিকিৎসা করাতে এসেছিল। ওর বুকে ব্যাথা ছিল। আপনি ওর রিপোর্ট দেখে বলেছিলেন ওর হার্টে সমস্যা আছে, তাই অপা’রেশন করতে হবে। আপনার কথায় ওর দরিদ্র বাবা-মা নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে ওর অপা’রেশন করার জন্য টাকা জোগাড় করে। কিন্তু অপা’রেশনের পর সুমি মা’রা যায়। পরবর্তীতে অন্য একটি হাসপাতালে ওর লাশ পোস্টমর্টেম করা হলে দেখা যায় ওর হার্টে এমন কোন সমস্যা ছিল না যে অপারেশন করতে হবে। উপরন্তু ওর লিভার বের করে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় এই নিয়ে কেইস করা হলেও সেটা বেশিদূর এগোয় নি। এরপর আরো কিছু রোগীর সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে।’
এসব কথা শুনে অক্ষর হতবাক হয়ে যায়। কারণ সে নিজে এসব ব্যাপারে কিছু জানে না। অক্ষরের কাছে কোন রোগী আসলে তো সে তাদের কিছু পরীক্ষা করতে দেয়। তারপর রিপোর্ট দেখে জানায় কি করতে হবে। অক্ষর বুঝতে পারে সে না হলেও এই হাসপাতালেই কেউ এসবের সাথে জড়িত আছে। কিন্তু এখানে দূর্ভাগ্যবশত সে ফেসে গেছে। অক্ষর বলে,
‘মধুজা তুমি আমাকে বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি। তুমি আমাকে একটু সময় দেও, আমি সব সত্য সামনে আনব।’
‘আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। একটুও না।’
৩৩.
মধুজা রুমে এসে শুয়ে পড়ে৷ অক্ষর হাসপাতালে চলে গেছে। যাওয়ার আগে মধুজাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, এসবে তার হাত নেই কিন্তু মধুজা বিশ্বাস করে নি সেই কথা। মধুজার মনে হয় অক্ষরই রয়েছে সবকিছুর পেছনে। তাই সে তার এক সহকর্মীকে ফোন করে বলে,
‘শোন আজ তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। আমরা গোপনে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাব। তুমি সব প্রস্তুতি করে নাও। লাবিব তো এখনো সুস্থ হয়নি নাহলে ওকেই বলতাম। এখন আপাতত তুমি আমাকে সাহায্য করো।’
বিপরীত দিক থেকে মধুজার সহকর্মী সিরাজ হাসান বলে,
‘কোন ব্যাপার না। আমি তোমাকে সাহায্য করব। হিডেন ক্যামেরা সাথে নিয়ে যাবো আমরা। তাহলে আর কোন অসুবিধা হবে না।’
ফোন রেখে দিয়ে মধুজা অন্য একজনকে ফোন করে। ফোনটা রিসিভ হতেই বিপরীত দিক থেকে একটি নারীকন্ঠ ভেসে আসে। নারীকন্ঠটি বলে,
‘কিভাবে সব সত্য সামনে আনা হবে সেই প্ল্যান করা হয়েছে কি?’
‘হ্যা হয়েছে। তুমি এখন কোথায় আছ?’
‘আমি হাসপাতালে আছি।’
‘ডাক্তার অক্ষর চৌধুরী একটু আগেই হাসপাতালে গেছেন। উনি পৌছে গেলেই তুমি ওনার উপর নজর রাখবা। আমি আমার এক সহকর্মীর সাথে আজ হাসপাতালে যাব।’
‘ঠিক আছে। আমি এখন রাখছি তাহলে।’
‘রাখো।’
ফোন কে’টে দিয়ে আয়নার সামনে এসে দাড়ায় মধুজা। কাবার্ড থেকে নিজের জিন্স ও টপস বের করে নেয়। সাথে একটি মাক্স আর সানগ্লাস পড়ে নেয়। রেডি হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে বলে,
‘এই লুকে তো আমাকে একদম চেনা যাচ্ছে না। এভাবেই আমাকে ওখানে যেতে হবে। তাহলে অক্ষর চৌধুরী আমাকে চিনতে পারবে না।’
মধুজা এই সাজেই বাইরে বেরিয়ে পড়ে। যাওয়ার সময় বর্ণ তাকে দেখে নেয়। মধুজাকে এরকম গেটআপে দেখে বেশ অবাক হলেও কিছু বলে না। মধুজা সোজা চলে যায় সিরাজ হাসানের সাথে দেখা করতে। দুজনেই ভিন্ন পরিচয়ে যায় হাসপাতালে। এখন তাদের উদ্দ্যেশ্য হাসপাতাল থেকে কোন গোপন তথ্য বের করে আনা।
৩৪.
অক্ষর খেয়াল করছে কেয়া অনেকক্ষণ ধরে তার আশেপাশে ঘুরছে। অক্ষর বুঝতে পারছে না কেয়া আজ কেন এভাবে তার পিছনে ঘুরছে। সামনে থেকে যাওয়ার কোন নামই নিচ্ছে না। শেষে থাকতে না পেরে অক্ষর জিজ্ঞেস করে ফেলে,
‘আপনি আজ এখানে কি করছেন ডাক্তার কেয়া? আপনার কোন পেসেন্ট নেই?’
কেয়া মৃদু হেসে বলে,
‘আজ একটু ফ্রি আছি তাই অলস সময় পার করছি।’
অক্ষর আর কিছু বলে না। নিজের মতো রোগী দেখতে যায়। কেয়ার নজর যায় অক্ষরের রুমে থাকা একটি হিডেন ক্যামেরার দিকে। কেয়া এটা দেখে বাকা হাসে।
✨
সিরাজের সাথে হাসপাতালে প্রবেশ করেছে মধুজা। সিরাজ ও সে ভাই বোন সেজে এসেছে। সিরাজ আজ রোগী সেজে এসেছে। মধুজার সাথে এসে অক্ষর চৌধুরীর চেম্বারে এসে বসে সিরাজ। আগে থেকেই তাদের এপয়েনমেন্ট নেওয়া আছে। এক এক করে অনেক রোগী চেম্বার যায়। অক্ষর তাদের চেক করে এবং কিছু পরীক্ষা করতে বলে। অবশেষে সিরাজের পালা আসে।
সিরাজের সাথে মধুজাও ভেতরে যায়। সিরাজের পকেটে একটি কলম ছিল যার ভেতরে হিডেন ক্যামেরা রয়েছে। মধুজা সিরাজকে ধরে ভেতরে নিয়ে যায়। অক্ষর মধুজাকে দেখে কিছু সময়ের জন্য চমকে যায়। মধুজাকে তার চেনা চেনা মনে হয়। কিন্তু মাক্স পড়ে থাকায় এবং অন্য গেটআপে থাকায় সে বুঝতে পারে না। তাই বলে,
‘আপনি এখন বাইরে যান। আমি ওনার থেকে সবকিছু জেনে নেবো।’
মধুজা বাইরে চলে আসে। অক্ষর সিরাজকে বলে,
‘কি সমস্যা আপনার?’
‘আসলে আমার বুকে অনেকদিন থেকে ব্যাথা অনুভূত হয়। এখন ব্যাথাটা বেড়ে গেছে।’
অক্ষর সিরাজের কিছু চেকআপ করে বলে,
‘সবকিছু তো ঠিকঠাক মনে হচ্ছে। আপনি একটা কাজ করুন এক্স রে করান। তাহলে কিছু বুঝতে পারব।’
অক্ষরের কথা অনুযায়ী সিরাজের এক্সরে করা হয়। ফলাফল আসলে দেখা যায় সবকিছু ঠিকই আছে। যার ফলে অক্ষর তাকে বলে,
‘আপনার হার্ট একদম ঠিক আছে। আমার মনে হয় আপনার গ্যাস্টিকের প্রব্লেম আছে।’
সিরাজ ও মধুজা ফিরে আসে। যাওয়ার সময় মধুজাকে ভালোভাবে খেয়াল করে অক্ষর। খুব সন্দেহ হচ্ছিল তার। তাই বর্ণকে ফোন করে। বর্ণ ফোন রিসিভ করতেই অক্ষর জিজ্ঞেস করে,
‘তুই একটু চেক করে দেখতো মধুজা রুমে আছে কিনা। ফাস্ট।’
‘ভাবি তো রুমে নেই। কয়েক ঘন্টা আগে তো দেখালাম জিনস, টপস, সানগ্লাস আর মাক্স পড়ে কোথায় যেন গেল।’
অক্ষর বাকা হেসে বলে,
‘থ্যাংকস।’
তারপর ফোন রেখে দিয়ে মধুজার পিছু নেয়। একটু এগিয়ে গিয়ে যা দেখতে পায় তা দেখে অবাক না হয়ে পারে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨