#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ২৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মধুজার হাতের খাবার খেয়ে অনীল চৌধুরী ও মমতা চৌধুরী দুজনেই খুব প্রশংসা করেন। অনীল চৌধুরী গর্ব করে বলেন,
‘দেখলে তো মমতা আমি কেমন মেয়ে পছন্দ করেছি। যেমন রূপবতী তেমন গুণবতী। ঘরে-বাইরে দুই দিকেই সমান ভাবে সামলায়।’
মমতা চৌধুরী মৃদু হেসে বলেন,
‘তা আর বলতে। মধুজার মতো মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। সত্যিই অনেক ভালো মনের মেয়ে ও। সবার কথা ভাবে।’
মধুজা নিজের এত প্রশংসা শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়। দূরে দাড়িয়ে অক্ষর ভাবছিল,
‘ভাগ্য ভালো আজ মধুজার খাবার বদলে দিয়েছিলাম নাহলে ও আজ এত খুশি হতো না। হয়তো খুব কষ্ট পেত।’
অক্ষর মনযোগ দিয়ে ভাবতে থাকে বিয়ের পর কতটা বদলে গেছে সে। আগে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারত না এখন মধুজার জন্য কিভাবে এত কিছু করে নিল। ভালোবাসা আসলেই মানুষকে বদলে দেয়।
মমতা চৌধুরী খাওয়া শেষ করে অক্ষরের পাশে এসে বলেন,
‘তোর প্রশংসাও কিন্তু করতে হয় অক্ষর৷ অনেক ভালো স্বামী হয়ে গেছিস তুই।’
মমতা চৌধুরী সবসময় মুখে গাম্ভীর্য নিয়ে থাকলেও এই কথাটা তিনি বেশ স্বাভাবিকভাবে বলেন। অক্ষর কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে,
‘মানে?’
‘আমি তো দেখলাম যে তুই কিভাবে রেস্টুরেন্ট থেকে মুরগীর মাংস আনলি। তারপর রান্নাঘর গিয়ে মধুজার রান্না করা মাংসের সাথে বদলে দিলি।’
অক্ষর ধরা পড়ে গিয়ে শুকনো ঢোক গিলে। মমতা চৌধুরীর সামনে অনুনয় বিনয় করে বলে,
‘তুমি প্লিজ মধুজাকে এই ব্যাপারে কিছু বলো না। ও শুনলে কষ্ট পাবে।’
মমতা চৌধুরী অক্ষরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
‘পাগল ছেলে আমার৷ তুই নিজের স্ত্রীকে খুশি করার জন্য এত কিছু করলি আর আমি মা হয়ে এসব তোর বউকে বলব। আমি তো বরং মুগ্ধ হয়ে গেছি তোর ভালোবাসা দেখে। নিজের স্ত্রীকে খুব কম পুরুষই এভাবে ভালোবাসতে পারে। আমার এখন মনে হয় তোকেই আমি শুধু ভালো ভাবে মানুষ করতে পেরেছি। বর্ণটাকে বোধহয় মানুষ করতেই পারিনি।’
শেষোক্ত কথাটা বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন মমতা চৌধুরী। অক্ষর তখন বলে,
‘তুমি কোন চিন্তা করো না আম্মু। দেখবে বর্ণও একসময় বদলে যাবে। আমি বলি তুমি আব্বুর সাথে বর্ণর বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা বলো। বিয়ের পরে দায়িত্ব ঘাড়ে পরলে ও এমনিই ঠিক হয়ে যাবে।’
‘বর্ণর মতো ছেলের জন্য কোন বাবা তার মেয়েকে দেবে? ও তো এখনো পড়াশোনাই কমপ্লিট করেনি। এসব রাজনীতির সাথে জড়িত। তার উপর গ্রেফতার পর্যন্ত হয়েছিল। এসব জানার পর কেউ কি রাজি হবে?’
‘মানুষ মাত্রই ভুল হয় আম্মু। অক্ষরও ভুল করেছে। এমনিতে তো ও খারাপ ছেলে নয়। কত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল৷ তাছাড়া ওর একাডেমিক রেজাল্টও তো খারাপ না। পড়াশোনা কমপ্লিট করলে ওর একটা ব্রাইট ফিউচার আছে।’
‘হুম বুঝলাম। আচ্ছা দেখি কি করা যায়।’
৫৩.
আরহা রোজ দিনকার মতো আজও বর্ণর সাথে দেখা করতে এসেছে। তবে তার মুখ অনেক শুকনো দেখাচ্ছে। বর্ণ এমনটা দেখে আরহাকে জিজ্ঞেস করে,
‘মুখটা এমন করে রেখেছেন কেন? এমনিই আমি অসুস্থ তার উপর আমার সামনে এমন গোমড়া মুখ করে বসে থাকার কারণে ভালো লাগছে না।’
আরহা মন খারাপ করে বলে,
‘অনেক চেষ্টা করে, অনেক গুলা ইন্টারভিউ দেওয়ার পরেও আমি কোন চাকরি পাইনি।’
‘এই সামান্য বিষয় নিয়ে এত টেনশন করার কি আছে? পান নি তো কি পেয়ে যাবেন।’
‘আমার আব্বু বলেছে আমার বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি যেহেতু কোন চাকরি পাচ্ছি না সেহেতু তার কিছু হয়ে গেলে আমি অসহায় হয়ে পড়ব। এই কারণে আব্বু আমার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে দিয়েছে।’
এই কথাটা শুনে একটুও খুশি হয়না বর্ণ। কারণ কোথাও না কোথাও সেও আরহাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।
তবে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে না বর্ণ। আরহার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,
‘ভালো তো। তাড়াতাড়ি বিয়ে করে সুন্দর করে সংসার করুন। আপনার ভবিষ্যত জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।’
আরহা অভিমানী দৃষ্টিতে বর্ণর দিকে তাকায়। কারণ সে ভেবেছিল তার বিয়ের কথা শুনে বর্ণর খারাপ আগবে। সেখানে বর্ণর এরকম নির্লিপ্ত আচরণ খুব আঘাত দেয় আরহার মনে।
আরহা কোন কিছু নেই বলে অভিমান নিয়ে বর্ণর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। বর্ণরও বেশ খারাপ লাগে আরহার এভাবে চলে যাওয়ার কারণে। মনে মনে চাপা কষ্ট অনুভব করে সে আরহার জন্য।
৫৪.
আরহা উদাসীন হয়ে হাটতে হাটতে লিফটের কাছে এসে থমকে যায়। মধুজা লিফট থেকে বেরিয়ে আরহাকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে।
‘তুই কেন এরকম পাগলামী করছিস আরহা? তুই তো বড় হয়েছিস। এমন পাগলামী তোকে মানায় না। বর্ণ যদি তোকে পছন্দ করত তাহলে তো বলত। ওর আচরণ থেকে বোঝা যায় ও তোকে পছন্দ করে না। তাই আর বর্ণর আশায় বসে না থেকে নিজের বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে নে।’
আরহা এপর্যায়ে আর নিজের কান্নাগুলোকে আটকে রাখতে পারে না। মধুজার সামনে কান্নারত অবস্থায় বলে,
‘তুই আমার অনুভূতি বুঝতে পারিস না। কেমন ফ্রেন্ড তুই? নিজে না চাইতে ভালোবাসা পেয়ে গেছিস তাই ভালোবাসার মূল্য বুঝিস না। আমার মনে কি চলছে সেটা শুধুমাত্র আমি বুঝছি। শোন কাউকে ভোলা এত সহজ নয়। মুখে ভুলে যাব বললেই কাউকে ভোলা যায়না।’
‘তুই একটু বেশি রিয়্যাক্ট করছিস আরহা। আমি সেভাবে কিছু মিন করিনি।’
‘তোকে আর কিছু বলতে হবে না। আমি সব বুঝতে পেরেছি। চিন্তা করিস না তোর দেবরকে আর জ্বালাবো না আমি। নিজে বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করে নিবো।’
কথাগুলো বলে আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে আরহা লিফটে উঠে যায়। মধুজার বেশ খারাপ লাগতে থাকে আরহার জন্য। সে না চাইতেও আজ অনেক বেশি আঘাত দিয়ে ফেলেছে আরহাকে।
✨
মধুজা ও অক্ষর মিলে বর্ণকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। বাড়িতে এসে অনেক ঝামেলা হয়ে যায়। অনীল চৌধুরী বর্ণর উপর অনেক রাগারাগি করেন। মমতা চৌধুরী সবসময় গম্ভীর থাকলেও আজ তিনিও বর্ণকে কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। বর্ণ রাগ করে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছে।
মধুজা ও অক্ষরও নিজেদের রুমে এসে বিশ্রাম নিচ্ছে। আচমকা মধুজা বলে ওঠে,
‘আচ্ছা ডাক্তার রাহেলা খানমের সাথে আব্বুকে কি মানাবে? ‘
মধুজার এহেন প্রশ্ন শুনে অক্ষরের ভ্রু কুচকে যায়।
‘হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করছ?’
‘আমি ভাবছিলাম ডাক্তার রাহেলা খানমের সাথে যদি আব্বুর বিয়ে দেওয়া যায়। কারণ উনিও তো বিধবা।’
‘উনি তো রাজি নাও হতে পারে।’
‘তুমি চিন্তা করো না পাগলা ডাক্তার আমি দুজনের থেকে অনুমতি নিয়ে তবেই যা করার করব।’
‘এই পাগলা ডাক্তারের যে এখন একটু রোম্যান্টিক ডাক্তার হতে ইচ্ছে করছে।’
মধুজা অক্ষরের ডান গালে চুম্বন করে। অক্ষর অবাক হয়ে যায়। মধুজার থেকে ইশারা পেয়ে সে মধুজাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। দুজনে মেতে ওঠে ভালোবাসায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨