#পুষ্প_কন্যার_প্রেম_পাবক
#পর্ব১২ (১৮+ এলার্ট)
#রাউফুন
কে ওঁ? ঝাপসা চোখে তীর্থ তাকালো। একি! এ যে ঝুমুর! গোল জামা ছেড়ে দেখি থ্রী পিস পরা শুরু করেছে। বেশ লাগছে তো। লম্বা চুল গুলো কি বিচ্ছিরি ভাবে এলোমেলো হয়ে আছে ওর মুখের চারিপাশে। তবুও ওঁকে ভোরের ফোটা স্নিগ্ধ গোলাপের মতো লাগছে।
‘ঝুমুর সোনা, তুমি ওঁরেহ চিনো?’
‘হ্যাঁ নানি, ওঁ আমাদের তীর্থ ভাই। আমার চাচার এক মাত্র ছেলে।’
সবাই লজ্জায় নুইয়ে গেলো। এরপর ঝুমুরের মামারা সবাই একে একে ক্ষমা চাইছিলো তীর্থর কাছে। এরপর আর কেউ-ই সামনে আসেনি লজ্জায়। ঝুমুরের নানিও না। ঝুমুর তীর্থর হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে এলো। ঝুমুর বললো,
‘ওমন কালি ঝুলি মেখে এখানে কি করছো তুমি? ও বুঝেছি, চিলেকোঠার ঘরে ছিলে তাই এই অবস্থা। আসো পানি দিচ্ছি হাত মুখ ধুয়ে নাও।’
বলা বাহুল্য ‘আমি চোর নই,!’ এই কথা উচ্চারণের পর একটাও কথা তীর্থ মুখ থেকে বের করেনি। হাত মুখ ধুয়া হলে তীর্থর হাত ধরে টেনেটুনে ঝুমুর তার ঘরে নিয়ে গেলো। শান্ত কণ্ঠে বললো, ‘ভাগ্যিস শোরগোল শুনে ঘুম থেকে উঠে ছাদে গেছিলাম, না হলে কি হতো?’
তীর্থ তখনও চুপ৷ ঝুমুর তার সঙ্গে কথা বলছে এই খুশি সে কোথায় রাখবে? একদিকে খুশি হচ্ছে আবার অন্য দিকে গতকাল সন্ধ্যার ঘটনা মনে পরতেই গা শিউরে উঠছে। সে কেঁপে উঠলে ঝুমুর আবার বললো, ‘ইশ কি বাজে ভাবে মে’রেছে তোমায়। তুমি কাথা মুড়িয়ে শুয়ে পরো আমি দেখি এখন ভাত আছে কিনা!’
তীর্থ কথা বাড়ালো না। শুয়ে পরলো৷ এখন যদি বাড়িতে ফোন দিয়ে ঝুমুর বলে দেই সে এখানে আছে, তখন? কি হবে তখন? না তাকে পালাতে হবে। কিন্তু এতো কিছুর মধ্যে তীর্থর তুখোড় জ্বর উঠে গেলো। সে চাইলেও উঠে দাঁড়াতে পারলো না। ওভাবেই পরে রইলো জীর্ণশীর্ণ হয়ে বিছানায়।
ঝুমুর ভাত হাতে নিয়ে এসে দেখলো তীর্থ কাঁথা গায়েও ভীষণ বাজে ভাবে কাঁপছে। কোনো কিছু না ভেবে তীর্থর কপালে দিয়ে চমকে গেলো। তীর্থের তখন তেমন হুশ নেই৷ তারপরও লাল টকটকে হয়ে যাওয়া চোখ গুলো খুলে বলল,
‘তোর মামাদের গায়ের জোর তো বেশ-রে কালি, দেখলি আমার কেমন হাড় কাঁপানো জ্বর এলো।’
‘উফফ কথা বলো না তো। এমনিতেই জ্বর তার এমন কাঁপুনি। ভাত খাও, দেখি উঠো এরপর ওষুধ দিবো।’
‘মাথাটা একটু নিচু কর তো দেখি!’
‘কেন?’ প্রশ্ন করলেও সাথে সাথে ঝুমুর মাথা নিচু করেছিলো। কপালে হাত দিলো তীর্থ। মাথাটা একটু পিছিয়ে নিলো ঝুমুর। তীর্থর এহেনকান্ডের মানে বুঝলো না সে। সে মাথা সরিয়ে নিলেও তীর্থ আরেকটু কাছে টেনে নিলো। কপালের চুল সরিয়ে ডান পাশের কপালের অমসৃণ দাগ দেখতে পেলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো, ‘দাগ টা এখনো যায়নি। খুব গভীর ক্ষত হয়েছিলো তো যাবে কিভাবে!’
‘এর আগে তুমি দেখো নি দাগ টা?’ আস্তে আস্তে শুধাই ঝুমুর।
‘নাহ, তোর দিকে তাকানোর সময় কোথায় ছিলো আমার!’
‘ওও এখন বুঝি সময় হয়েছো?’
আর কিছু বললো না। জ্বর এলে তার নানান বা’জে চিন্তা মাথায় ভর করে। এই যে এখন, এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে ঝুমুর তার বউ। তাদের সদ্য বিয়ে হয়েছে। কল্পনায় দেখলো ঝুমুর লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরিধান করে তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসছে। তার বউকে সে নিজের কাছে টানবে এটাই তো স্বাভাবিক। জ্বরের ঘোরে কখন যে ঝুমুরকে কাছে টেনেছে বুঝলো না।
‘তীর্থ ভাই কি করতেছো ছাড়ো আমারে! কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে!’
তীর্থ ঝুমুরের কথা শুনলো কি না কে জানে। শুধু বিড়বিড় করে বলল,
‘এই বউ কোথায় যাচ্ছো? আসো, তোমাকে জড়িয়ে ধরলে আমার আর ঠান্ডা লাগবে না। আদর করো দেখি!’
ঝুমুর জানে তীর্থর জ্বরের ঘোরে উল্টো পালটা কথা বলার স্বভাব আছে। কিন্তু এই ধরনের কথা বলবে সে সম্পর্কে সে একটুও অবগত নয়। এদিকে ঝুমুরকে ঐভাবে তীর্থর স্পর্শ করাটা ছিলো অবাঞ্চিত। তার সর্বাঙ্গে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে।
দরজার একটা পাল্লা শুধু ভেজানো ছিলো। জ্বরের ঘোরে তীর্থ ঝুমুরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এদিকে ঝুমুর বাঁকহারা। সে প্রাণপণে ছুটার চেষ্টা করছে। সে এই মুহুর্তে চিৎকার করছে না তীর্থর কথা ভেবে। যখনই ছাড়াতে চাইছে তখনই শক্ত করে ধরে ফেলছে তীর্থ তার শুকনো শরীর খানা। ভয়ে সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে তার।
তার মামাদের বাড়ির সবচেয়ে সুন্দর আর ভালো রুমটাই তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। এই রুমটা সাউন্ড প্রুফ। তার ছোট মামার রুম এটা। তিনতলার এই বিশেষ রুমটাতে ঝুমুরকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। রুমটার দরজা কেউ আটকে দিলো মনে হলো। চকিতে চাইলো ঝুমুর। মাথা ঘুরিয়ে দেখলো সম্পুর্ন বন্ধ হয়ে যাওয়া রুম টা। সে হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো তীর্থকে। দরজা কে আটকালো? সে তীর্থর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারলো না কিছুতেই। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই তীর্থ ওঁকে ধরে কাছে নিয়ে এলো। চোখ খুলে নেশাক্ত গলায় বললো, ‘তোমাকে লাল শাড়ীতে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে বউ। আজ তোমাকে আদর করতে মন চাইছে!’
ঝুমুর এবারে কেঁদে দিলো। দু হাতে তীর্থর বুকে শক্ত করে ছাড়াতে চেয়েও পুরুষালি শক্তির কাছে পারলো না। তীর্থ আবার বললো
‘এই বউ আবার পালাচ্ছো? এতো পালায় পালায় করো কেন?’
ঝুমুর ভয়ে চিৎকার করলো গলা ফাটিয়ে। কিন্তু তার কথা বাইরে অব্দি পৌঁছালো না। কে’টে গেলো দশ মিনিট, পনেরো মিনিট। তারপর? তারপর সব শেষ। ঝুমুর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও তীর্থর সঙ্গে শক্তি পারেনি। সর্বনাশ যা হওয়ার হয়েই গেছে। সে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তীর্থর হুশ নেই। সে জ্বরের ঘোরে কি করেছে না করেছে সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে এখন ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমের ঘোরেও এটা সেটা বলে চলেছে সে। এদিকে ঝুমুর বাধ ভাঙা কান্নায় ভেঙে পরলো। তীর্থ ভাই তার সঙ্গে এটা কি করে করতে পারলো? কি করে? এখন সে ভয় পেয়ে আর রুমে যেতে চাইছে না। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পর বুঝলো তার ব্লি’ডিং হচ্ছে।
এটা দেখে সে আরও ঘাবড়ে গেলো। সে কোনো রকমে গোসল করে বেরিয়ে এসে ন্যাপকিন ইউস করলো। ব্যথায় ঠিক করে হাঁটতে পারলো না সে।
এদিকে সে তাকিয়ে দেখলো, তীর্থর অবস্থা খারাপ এই মুহুর্তে। যদি কেউ আসে তখন সবাই তীর্থকে খারাপ ভাববে। সে উপায় না পেয়ে ‘তীর্থর জামা কাপড় আবার পরিয়ে দিলো। হঠাৎ চমকপ্রদ হয়ে দেখলো বিছানার চাঁদরে র’ক্ত। সে নিজের দুর্বল শক্তি দিয়ে তীর্থর নিচে থেকে চাঁদর খানা বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। চাঁদর ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দিলো।
তীর্থর তখনও হুশ নেই। হইতো ঘুমাচ্ছে না হলে অজ্ঞান। তীর্থর ছোট বেলা যখন জ্বর হতো কোনো একটা কারণে সে অজ্ঞান হয়ে যেতো। ডক্টর দেখাতে হতো সেই সময়। এই মুহুর্তে তীর্থকে ঘেন্না হচ্ছে ঝুমুরের। সে ঐভাবেই বসে রইলো। বেলা তখন গরিয়ে এগারোটা ছুঁই ছুঁই। সে সময় দরজা খোলার শব্দ পেলো সে। নড়েচড়ে উঠলো মুহুর্তের মধ্যে। ঝাপসা চোখে দেখলো তার নানি তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে অবচেতন স্বরে বলল,
‘নানি, ত-তু-মি ভুল ভাবতাছো! আমি তো সোফায়…!’
‘আরে কি কও ঝুমুর সোনা? আমি তো তোমারে ডাকবার আইলাম। এখানে ভুল বুঝার কি হইলো? ও তুমি ভাবতাছো তোমার চাচাতো ভাই আর তোমারে এক ঘরে দেইখা ভুল ভাল ভাবমু? আরে পা’গ’লি মাইয়া, আমি তোমারে চিনি, বুঝছো? তাছাড়া পোলাডাও তো ভালা দেখলাম। বদ নজর নাই!’
নিজের মুখের বিষাদ, মলিন, বিষন্নতায় ঘেরা চেহারাটা লুকিয়ে বলল,
‘ঘরের দরজা কে আটকালো? আমি কত বেরোতে চাইলাম পারলাম না। বাইরে থেকে কেউ লাগিয়ে দিয়েছে।’
‘হো তাই তো, কে এই কাম করলো? আমি একটু নিচে গিয়া ঘুমাইছিলাম। বাকিরাও ঘুমাইছে। এরপর ঘুম ভাঙলে ভাবলাম নাতী ছেড়াডার লগে কথা কইয়া আসি! আইসা দেহি দরজা বাইরে থেইক্কা আটকানো!’
‘নানি, আমি আজকে চলে যাবো বাড়িতে।’
‘আচ্ছা, পরে দেখা যাইবো। আসো নিচে। তোমার চাচাতো ভাইরে ডাইকা তুলে খাইতে আসো দেখি!’
ঝুমুর মাথা নাড়লো। তখনো মাথাটা ঝিমঝিম করছিলো তার। সর্বাঙ্গে ব্যথা অনুভব করলো সে। তীর্থ তাকে কষ্ট দেইনি, আঘাতও করেনি। শুধু বউ, বউ করছিলো। তবুও কয়েক ঘন্টা আগের কথা মনে হতেই ঝুমুর ঘেন্নায় তীর্থকে ডাকলো না পর্যন্ত। ত্রস্ত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
#চলবে