#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১২
পুনম আয়াতুল কুরসি দোয়ায় ইউনুস সহ সকল দোয়া বিড়বিড় করে পড়তে পড়তে পিছনে ফিরে। পিছনে তাকিয়ে চমকে ওঠে __ কেউ নেই অবাক হয়ে পুনম
তার স্পষ্ট মনে আছে তার পিছনে কারো গরম নিঃশ্বাস পড়েছে কিন্তু এখন কেউ নেই। পুনম ভয়ে ভয়ে চারিদিকে তাকায় নাহ হালকা পাওয়ারের বাল্ব জলছে রান্নাঘরে।
হঠাৎই খচখচ শব্দে পুনম — ওরে বাবারে — বলে এক দৌড়ে ঘরে যেয়ে কম্বলের নিচে ঢুকে।।
— এই পূর্ণ এভাবে কাপছিস কেনো??
কম্বলের নিচে উকি মেরে বলল মুক্তি। — আপু ভুভুভুত রান্নাঘরে ভুত।
— কিহ
বলেই মুক্তিও পুনমের সাথে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়ে। হাতে পাস্তার বাটি,,,,,
— হ্যা আপু আমি ঘুম থেকে উঠতেই আমার অনেক খিদে পায় কিছু খাওয়ার জন্য রান্নাঘরে যেতেই পিছনে কারো আভাস পাই পরে পিছনে ফিরে কাউকে পাইনি।
পুনমের কথা শুনে মুক্তি বুঝতে পারে কে হতে পারে মুক্তি টপিক চেঞ্জ করার জন্য বলল — নে পাস্তা খা তোর জন্য বানিয়েছে
পাস্তা পেয়ে পুনম দ্রুত বাটি হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করে। খাওয়ার মাঝে মুক্তিকে সাধতেই মুক্তি বিরস মুখে না করে দেয় পুনম আর সেদিকে না ঘেটে নিজের মতো খাওয়া শুরু করে।
— আপু এতো মজার পাস্তা কবে থেকে রান্না করতে পারো অনেক মজা হয়েছে আমি তো কিছুই পারি না,,,
পুনম ঠোট উল্টে বলল। পুনমের কথা শুনে মুক্তি বিড়বিড় করে বলে — এই পাস্তা কি আমি রান্না করেছি নাকি এই পাস্তা তো তোর জন্য অন্য কেউ বানিয়েছে সাথে একটা থ্রেড ও দিয়েছে এর থেকে একপিছ ও আমার পেটে গেলে। পেটে কেটে সেই পাস্তা বের করা হবে।
— এই আপু
পুনমের ডাকে মুক্তির ধ্যান ভাঙ্গে। পুনমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল — আমি করেছি কোনো রকম ইউটিউব দেখে
— ওও
— আচ্ছা তোর খাওয়া শেষ এবার আমি যাই। তুই ঘুমা
পুনম মাথা নেড়ে হ্যা বলতেই মুক্তি চলে যায়। পুনম হাত মুখ ধুয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পরে অনেক্ষণ এপাশ ওপাশ করলেও নিদ্রা ভর করে না পুনমের দুই চোখে।
ফোন উঠায় বাবাকে ফোন করার জন্য পরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মত ঘুরায়।
এলোমেলো ভাবনা ভাবতে ভাবতে কখন যানি ঘুমিয়ে পরে টের পায়না। কয়েক মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে যেতেই পুনমের ঘরে কেউ প্রবেশ করে। কাত হয়ে শোয়া পুনমের পাশে বসে হাটু গেড়ে পুনমের মায়াবী চেহারা দেখতে থাকে।
— কি আছে এই শ্যাম পরীতে যা আমাকে এতো টানে,, মনেমনে ভেবেই মুচকি হাসে হ্যা সে তার মনের উত্তর পেয়ে গেছে।।
— আমি জানি তুই আমাকে ভয় পাস তবে তোর এই ভয়টা আমার বেশ লাগে ঘোমটা মাথায় দিয়ে নিচু মস্তকে যখন চোড়া চোখে তাকাস তখন তোকে খেয়ে ফেলতে মন চায় তবে কি করব ঐ যে কন্ট্রোল করা লাগে।
পুনমের কানে ফিসফিসিয়ে বলে চন্দ্র। ঘুমের ঘোরে পুনম নড়াচড়া করতেই চন্দ্র উঠে দাড়ায়। নিঃশব্দ পায়ে চলে যায় নিজের ঘরে।
চন্দ্রের রুমের সাথে লাগোয়া ছোট্ট রুফটপে বসে চাদেঁর দিকে তাকিয়ে আছে মস্তিষ্ক জুড়ে পুনমের ভাবনা বিচরণ। তবে টেনশন অন্য জায়গা সেটা হলো নিশা এই নিশাটাকে একটা শিক্ষা না দিতে পারলে চন্দ্রের শান্তি নেই। যেমন দিয়েছে রুপশাকে।
রুপশার কথা মনে হতেই বাকা হাসে চন্দ্র।
— আমি তোদের সাথে এরকম করতে চাইনি কিন্তু তোদের অহংকার তোদের ধ্বংসের দিকে ধাবিত করেছে। বিড়বিড় করে বলে চন্দ্র।
_______________________
কালচে পায়ে মলম লাগাচ্ছে লিমন। রুপশা সেদিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এই লোকটার ভালোবাসা বিবাহিত জীবনের তিন বছরেও বুঝতে পারনি রুপশা।
এ কেমন ভালোবাসা এতো হিংস্র কেনো এই ভালোবাসায়। এমন জীবন তো চায়নি রুপশা
— বাড়ি থেকে বের হয়েছিলে কেনো রুপশী বেগম আমি তো তোমাকে বলেছিলাম তোমাকে এই কোয়ার্টার এর বাইরে না যেতে তবুও কেনো তুমি বাইরে গেলে???
লিমনের ঠাণ্ডা স্বরে রূপশার ধ্যান ভাঙে সাথে সাথে রুহ কেপে ওঠে রূপশার এ কিভাবে জানে রুপশা কোয়ার্টার এর বাইরে গিয়েছিল। রুপশাকে কিছু বলতে না দেখে লিমন আবারও বলে — আজ তোমার শাস্তি তুমি এই পুড়ে যাওয়া পায়ে দাড়িয়ে এক থেকে পঞ্চাশ বার কান ধরে উঠবস করবে,,,,
এমন শাস্তির কথা শুনে রুপশা চমকে ওঠে সাথে সাথে কাদোকাদো চেহারা করে পায়ের দিকে তাকায়। পায়ের এই পোড়া দাগ লিমনের জন্যই হয়েছে আরো চারদিন আগে লিমনের কথা না শোনায় লিমন তাকে সারাদিন ছাদে রোদের মধ্যে দাড় করিয়ে রেখেছে।
তার দোষ সে বাবা বাড়িতে যাওয়ার আবদার করেছে। প্রথম বার বলতেই লিমন ঠাণ্ডা স্বরে না করে দেয় তবুও রুপশা জিদ করে সেই জেদের ফলাফল তার পায়ের কালচে দাগ।
— একটা কথা বলার ছিলো??
— বলনা রুপশী বেগম,, তুমি ইদানীং আমার সাথে কথা কম বলো কেনো আমি কি তোমাকে কম ভালোবাসি উহু অনেক ভালোবাসি রানীর হালে আছো তুমি তোমার সৌন্দর্যে যাতে ভাটা না পরে তাই রান্নাঘরে পযর্ন্ত যেতে দেইনা ঘরের যাবতীয় কাজের জন্য লোক রাখা আছে তবুও কেনো এতো অনিহা
— আমি এগুলো চাইনি
— আমার চোখে চোখ রেখে বলতে পারবে তুমি এগুলো চাওনি।
লিমন বাকা হেসে রূপশার চোখে চোখ রেখে বলল। রুপশা নজর নামায় হ্যা এটা সত্য লিমন তাকে যেভাবে রেখেছে এরকম বিলাসিতা জীবন রূপশা চেয়েছে তবে এই বন্দী জীবন চায়নি বছরে দুইবার বাবা মায়ের সাথে দেখা করার সুযোগ দেয় লিমন তাও একদিনের জন্য। সেখানে খুব একটা থাকতেও দেয়না। আর কিছুদিন পরেই তাদের এই বছরে রূপশার বাপের বাড়ি যাওয়ার দিন রুপশা মনে মনে ভেবে রেখেছে এবার এর একটা হেনস্থা করেই ছাড়বে।
সে মুক্ত পাখি স্বাধীনচেতা মানুষ তার এই বন্দী জীবন ভালোলাগে না।
রুপশার ধ্যান ভাঙে লিমনের বাহু বন্ধর দৃঢ় হতে। বেশ আদর দিয়ে রুপশাকে বেসামাল করে তোলে।।।লিমনের এই আদুরে ছোঁয়ায় সাড়া না দিয়ে রুপশা পারে না কেনো পারে না জানা নেই।
এই এতো যত্নে তাকে ভালোবাসছে লোকটা সবসময়ই যদি এরকম থাকতো তাহলে কতইনা ভালো হতো।
রুপশাকে অন্যমনস্ক দেখে লিমন উঠে বসে। শার্ট পেশী বহুল শরীরে গলাতে গলাতে বলল — আগের মতো তোমার বেড পার্ফরম্যান্স নেই নিজেকে ঠিক করো।
কথা শেষ করে ওয়ালেট থেকে কার্ড বের করে বেড সাইড টেবিলে রাখতে রাখতে বলল — শপিং করো যা মনে চায় কিনো তবে সন্ধ্যায় বাসায় এসে যেনো অন্যমনস্ক না দেখি আমি পাশে থাকা মানে পুরো টাইম আমার গট ইট
বলেই চলে যায় লিমন হাটতে হাটতে ব্লেজার পড়ে নেয়। এর দুই মিনিটের মাথায় সরকারি গাড়ির সাইরেন শুনতে পাওয়া যায়।
রুপশা টেবিলের কার্ডটি দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এরকম বিলাসিতা চাইলেও বন্দীনি হতে চায়নি রূপশা।
এলোমেলো শাড়ি গুছিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে বোরকা পড়ে হিজাব বাধতে বাধতে গাড়ির হর্ন শুনতে পায় তার মানে লিমন গাড়ি পাঠিয়েছে।
নিস্তেজ পায়ে হেটে বাইরে যায় লিমনের আদেশ পালনের জন্য।
রুপশা খেয়াল করল আজ নতুন ড্রাইভার। তবে সে কিছু বলার সাহস পেলো না বসে গেলো গাড়িতে গাড়ি চলতেই টের পেলো ড্রাইভার লোকটি আড়চোখে ভিউ মিরর দিয়ে তার দিকে কিছুক্ষণ পরপর তাকায়।।
রুপশা বুঝে তার সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছে লোকটি। আগুন সুন্দরী রুপশার দিকে কেউ একবার তাকালে বার বার তাকাতে বাধ্য। রুপশা তা জানে।
বিয়ের আগ পযর্ন্ত সে এই দৃষ্টি উপভোগ করেছে এখনো করত যদিনা লিমন ভয়ানক হতো।
— ম্যাম কোন মলে যাবেন??
— বসুন্ধরায় চলো,,,,
ড্রাইভার সেখানেই যায়। রুপশা নিজের মন মতো শপিং করে স্বর্ণ দামী শাড়ি থ্রি পিছ জিন্স ক্রপ টপ আরো প্রয়োজনীয় শপিং করে ফুরফুরে মেজাজে বাসায় ফেরে।।
ল্যাপটপে কাজ করছিল লিমন এই জেলার ম্যাজিসট্রেট সে। ল্যাপটপে কিছু ফাইলস চেক করছিল তখনই ফোনের নোটিফিকেশনের শব্দে সেদিকে তাকায়।
দেখে ম্যাসেজ এসেছে তার একাউন্ট থেকে প্রায় লাখ খানেক টাকায় মতো বিল দেয়া হয়েছে।
— সব ম** লোভী টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ি দেখলে এদের আর কোনো দিকে চোখ যায়না।
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৩
সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙে পুনমের। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে রান্নাঘরে উকি মেরে দেখে চাদনী বেগম রান্না করছে।।
— বড় চাচী শুভ সকাল
— শুভ সকাল শাশুড়ি আম্মা,, কাল এতো করে খেতে ডাকলাম উঠলিই না পরে না পেরে তোর খাওয়ার দায়িত্ব মুক্তিকে দিয়ে আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
— আমি শুনিনি তোমাদের ডাক,, পুনম ঠোট উল্টে বলল। তা দেখে চাদনী বেগম মুচকি হেসে বলল
— তা আম্মাজান রাতে মুক্তি কিছু খেতে দিয়েছিল??
পুনম মাথা নাড়ে মানে হ্যা দিয়েছিল। এর মধ্যে কামরুল সাহেবের আওয়াজ আসে তিনি ডাইনিং টেবিলে বসে চায়ের জন্য চিল্লাচিল্লি করছে।
— শুরু হইছে তোর চা খোর চাচার চায়ের ফরমায়েশি। এখন কিভাবে দেই আমার হাতে আটা
— আমি বানিয়ে দেই চাচী??
— দিবি দে,,,
চাদনী বেগম বলতেই পুনম চা বানানো শুরু করে।। চা হয়ে যেতেই পুনম কামরুল সাহেবের কাছে নিয়ে তার হাতে দিতে নিলে কেউ ছো মেরে চায়ের কাপটা ছিনতাই করে। পুনম কামরুল সাহেব একসঙ্গে দেখে চন্দ্র চায়ের কাপ নিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে চুমুকও দিয়ে ফেলেছে।
— চায়ের কাপ নিলে কেনো চন্দ্র ঐটা আমার,,,
— আমার এটা তুমি আম্মুকে বলো আরেকটা বানিয়ে দিতে।
— এটা আমার ছিলো
— ছিলো!! এখন আমার
দুইজনের ঝগড়ায় পুনম একবার কামরুল সাহেবের দিকে একবার চন্দ্রের দিকে তাকায়। কামরুল সাহেব আবার কিছু বলতে নিলে তাকে পুনম থামায়
— থাক চাচা আমি আপনার জন্য আরেক কাপ আনি,,;
— হ্যা সেই কর।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কামরুল সাহেব বলল। যেনো চা না খেতে পেরে তার কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
পুনম মুচকি হেসে চলে যায় রান্নাঘরে।।
মুক্তি সিড়ি দিয়ে তড়িঘড়ি করে নামছে আজ তার ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে ভার্সিটিতে।
বসেই পুনমের উদ্দেশ্যে বলল — সরি পূর্ণ আজ তোর কোচিং এ ভর্তির সময় তোর সাথে যেতে পারব নারে,,,,
— তাহলে আমি কার সাথে যাব??
অবাক হয়ে পুনম বলল।
কামরুল সাহেব বলল — চন্দ্রের সাথে যাবিরে মা,,
চন্দ্রের সাথে যাওয়ার কথা শুনে ভয়ে পুনম মুখটা চুপসে যায়। চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে চন্দ্রের কোনো হেলদোল নেই সে নিজের মতো খেয়ে চলেছে আশেপাশে তার কোনো হেলদোল নেই।
— আমি চন্দ্র ভাইয়ের সাথে যাব না,,,
পুনম বলতেই চন্দ্র সহ সবার খাওয়া থেমে যায়। পুনমের দিকে তাকায় মুক্তি চাদনী বেগম ভয়ে ভয়ে আছে চন্দ্র কখন না জানি খেপে ওঠে।
— আম্মাজান তুমি চন্দ্রের কোচিং সেন্টারেই ভর্তি হবা ওর সাথেই যাতায়াত করা লাগবে।
কামরুল সাহেবের কথায় পুনম মাথা নিচু করে কাপা স্বরে বলে — আমার গ্রামের বন্ধু উন্মেস এ ভর্তি হবে ওখানেই,,,,
আর বলতে পারে না চন্দ্র বাম পাশে থাকা পানির গ্লাসটা নিচে ছুড়ে মারে। কেপে উঠে থেমে যায় পুনম চন্দ্র হনহনিয়ে পুনমের সামনে যায় হিসহিসিয়ে বলে — আমার কথা ছাড়া একপা বাইরে ফেলবি সেই পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিব। মনে রাখবি এই চন্দ্রের নজর বন্দী তুই।
পুনম শব্দ করে কেদেঁ উঠতেই কামরুল সাহেব চন্দ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পুনমকে বুকে আগলে বলে — তোমার এরকম বিহেবিয়ার চলতে থাকলে আমি পুনমকে সরাতে বাধ্য হব চন্দ্র।
চন্দ্র আর কিছু না বলে রক্ত চক্ষু নিয়ে পুনমের দিকে একপলক তাকিয়ে গটগট পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। অর্ধেক সিড়িতে উঠে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল — দশ মিনিটের মধ্যে রেডী হতে বলবে।।।
সবাই বুঝল কাকে বলা হয়েছে। কামরুল সাহেব চাদনী বেগমকে ইশারা করে পুনমকে নিয়ে যেতে। চাদনী বেগম পুনমকে নিয়ে যেতেই মুক্তি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের গন্তব্যে চলে যায়।
কামরুল সাহেব চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। এতো ট্রিটমেন্টের পরেও কোনো মতে ছেলেটার রাগ কন্ট্রোলে আসছে না। নাকি আবার আগের বারের মতো হয়েছে।
অতীত ভেবেই কামরুল সাহেবের হাত পা ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। চন্দ্র এর মধ্যে নিচে নামে গটগট পায়ে হেটে যায় তার কিছুক্ষণ পরেই পুনমকে নিয়ে নামে চাদনী বেগম।
বাইরে বাইকের সাথে হ্যালান দিয়ে দাড়িয়ে আছে চন্দ্র। হাতে ফোন পুনম আসার আভাস পেয়েই চোখ তুলে তাকিয়ে ঢোক গিলে পুনরায় নজর নামায়।
সাদা সালোয়ার কামিজে পুনমকে বেশ লাগছে। বরাবরের মতো মাথায় ঘোমটা। কাধে ব্যাগ নিয়ে চাদনী বেগমের হাত ধরে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়।
পুনম সামনে আসতে চন্দ্র বাইকে বসে স্টার্ট দেয়। চাদনী বেগম ইশারা করে পুনমকে চন্দ্রের পিছনে বসতে বলে পুনম বসে পড়ে দূরত্ব বজায় রেখে।
— আস্তে চালিও বাইক আব্বা,,
চন্দ্র মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে সাই সাই করে চলে যায়। পুনম খামচে ধরে সীট কভার। সেটা দেখে চন্দ্রের মেজাজ একদম তুঙ্গে ওঠে তবে কিছু বলে না আজকে অনেক হয়েছে এর বেশী নিতে পারবেনা তার “” জোহরা””
সাহরান “স কোচিং সেন্টার।
এর সামনে থামতেই পুনম দ্রুত নেমে পরে।। চন্দ্র বাইক লক করে গটগট পায়ে ভিতরে যায় পুনম চন্দ্রের যাওয়ার দিকে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চন্দ্রের পিছু যায়।
চন্দ্র সব ফর্মালিটি পূরণ করে পুনমকে তার ক্লাস দেখিয়ে দেয়।
যথারীতি সময় ক্লাস শুরু হয়েছে ক্লাসে বেশ ছাত্র / ছাত্রী। যেনো এরা একটা দিনো ওয়েষ্ট করতে চায়না।
ক্লাসে উপস্থিত হয় স্যার।
— গুড মর্নিং স্টুডেন্টস
সবাই একত্রে বলে — গুড মর্নিং স্যার,,,
— ওকে স্টুডেন্টস আমি আপনাদের ইংরেজি শিক্ষক মুহিব মাহমুদ। আজ যেহুতু আপনাদের প্রথম ক্লাস তাই পরিচিতি মাধ্যমে শুরু করি।
মুহিব বলতে সবাই একে এক নিজেদের নাম পরিচয় বলতে শুরু করল। চার সাড়ির পর আসে পুনমের পালা।
— জোহরা তাবাচ্ছুম পুনম
— নাইস নেইম কোথায় থাক তুমি??
পুনম নজর একপল তুলে আবার ঝুকিয়ে বলল সে কোথায় থাকে।
— জোহরা নামের অর্থ জানো তুমি।
পুনম মাথা নাড়ে সে জানে না। পুনম মাথা নাড়তে বিরক্ত হয় মুহিব সে আরো কিছুক্ষণ ঐ কোকিল কন্ঠ শুনতে চাইছিল। তবে হাড় মানল না মুহিব আবার বলল — তোমার নামের অর্থ হলো সফল বা বিজয়ী
তখনই পিছন থেকে কারো গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনা যায়।
— আপনাকে এখানে নামের ব্যাখ্যা দিতে রাখা হয়নি মি. মুহিব। যেই কাজের জন্য রাখা হয়েছে সেটার দিকেই ধ্যান দেন আর যদি না পারেন তাহলে ইয়্যু ক্যান কুইট ইয়্যুর জব।
চাকরী ছাড়ার কথা শুনে আতকে ওঠে মুহিব। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে সে। এই কোচিং সেন্টারে চাকরী করে মোটা অংকের বেতন পায় যা দিয়ে ঢাকা শহরের মতো শহরে থাকা খাওয়া হয়েও মাস শেষে কিছু টাকা বাড়িতে পাঠায়।
মুহিব কিছু বলল না।
চন্দ্র পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — ছুটি হলে অপেক্ষা করবি একা একা বের হবি না নিয়ে যাব।
— স্যার পুনম কি আপনার চেনা??
— নিজের কাজ মনোযোগ দিয়ে করেন। বলেই চলে যায় চন্দ্র নতুন স্টুডেন্টসরা অবাক হয় তবে যারা চন্দ্র বিষয়ে জানে তারা অবাক না হয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
— ইশশ কি মারাত্মক সুদর্শন এই লোক নামেও চন্দ্র কামেও চন্দ্র একদম চাদঁমুখী,, ক্রাশ খাইলাম আবারও
পুনমের পাশে বসা মেয়েটা বলতেই পুনম বড়বড় চোখ করে তাকায় এই লোকের উপর ক্রাশ কিভাবে খায় মেয়েরা। এই লোকের উপর ক্রাশ খাওয়া মানে আইককা আলা বাশ খাওয়া।
— কি পাইছে মেয়েরা এই লোকের উপর আল্লাহ্ জানে,, বিড়বিড় করে বলে পুনম। বলার সময় নাক মুখ কুচকে নেয় যেনো কোনো তিতা করলা তার মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছে জোর জবরদস্তি।
#চলবে