পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-১৮+১৯

0
8

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৮

— পুনম তুমি এই দুই দিন ক্লাসে আসোনি কেনো??

উদ্বিগ্ন কন্ঠ মুহিবের। পুনম মাথার ঘোমটা আরেকটু টেনে নজর উঠিয়ে মুহিবের দিকে তাকিয়ে বলল — স‍্যার গ্রাম থেকে আমার আব্বু আম্মু এসেছে তাদের সাথে সময় কাটাতে গিয়ে আসতে পারিনি।

— লেইম এক্সকিউজ দিয়ে কখনও ক্লাস বন্ধ করবেন না মিস পুনম
তুমি থেকে আপনিতে গেলে ভরকে গেলো পুনম মুহিব স‍্যারের কন্ঠস্বর কেমন রূঢ় ঠেকল তার কাছে। তবুও পুনম কিছু বলল না মাথা নাড়াল।

ইশারায় বসতে বলে বোর্ডে লিখতে শুরু করে। বিরক্তিতে মার্কার চেপে ধরে মুহিব।। তার এই কাজল কালো চোখের অধিকারী শ‍্যামবর্না মায়াবী মেয়েটা যে তার অনেক্ষানি দখল করে ফেলেছে সেটা কি এই বোকা মেয়েটা জানে উহু জানে না।
মনে মনে মুহিব কিছু ঠিক করে ফেলল।

চন্দ্র ভ্রু কুচকে সিসিটিভি ক‍্যামেরা চেক করছে। এই কোচিং সেন্টারের মালিক চন্দ্র এখানে আই এল টি এস সহ ভর্তি কোচিং ও করানো হয়। আই এল টি এস এর গ্রুপ ক্লাসের রিডিং ক্লাসটা চন্দ্র নিজে নেয় আজ স্কেজুউতে চন্দ্রের ক্লাস নেই তাই সে নিজের অফিস রুমে বসে বসে নতুন ভর্তি স্টুডেন্টদের ফ্রম দেখছিল তখনই তার পুনমের ক্লাসের সিসিটিভি ক‍্যামেরাতে নজর পড়ে সে ত‍ৎক্ষণাত উঠে দাড়ায়।
গটগট পায়ে পুনমের ক্লাসের সামনে দাড়ায়।
ক্লাস করাচ্ছিল মুহিব সাথে কোণাচোখে পুনমকেও দেখছিল মেয়েটার মাথা নিচু করে নিজের মতো লিখছে।
এর সুশ্রি চেহারায় তাকালে মুহিবের মনটা শীতল হয়। চন্দ্র মুহিবের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাতেই দেখতে পায় তৃতীয় সাড়িতে শেষের দিকে বসেছে পুনম মাথা নিচু করে লিখছে।

— মি. মুহিব
চন্দ্র বেশ জোরেই ডাক দিল। ক্লাসের সবার নজর চন্দ্রের দিকে যায়। মুহিব হচকচিয়ে চন্দ্রের দিকে তাকায়।
— জজ্বী স‍্যার,,,

— কাম টু মাই কেবিন আফটার ক্লাস,,,

— হোয়াই স‍্যার??

মুহিবের কথায় চন্দ্র রাগী চোখে তাকাতেই মুহিব নজর ঝুকাতে বাধ‍্যা হয় পুনমের দিকে তাকিয়ে বলে — মিসেস পুনম আজ আমার দেরী হবে আমার জন‍্য ওয়েট করবেন আমার অফিস রুমে,,,

পুনম হতবাক হয়ে তাকিয়ে রয় চন্দ্রের দিকে। মুহিব বিস্ফোরিত চোখে পুনমের দিকে তাকায় এই মেয়ে বিবাহিত। কই বিবাহিতদের মতো কোনো লক্ষণ তো তার নজরে পরে না। মুহিব চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে চন্দ্র আবার গটগট পায়ে চলে যায়। রেখে যায় দুইজন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা মানুষকে।
প্রথমজন মুহিব যে ভাবছে এই মেয়েটা কি সত‍্যি বিবাহিত
অন‍্যজন পুনম যে ভাবছে সে বিবাহিত সে নিজেই জানে না।

।।

ক্লাস শেষে মুহিব চন্দ্রের কক্ষে নক করে — আসব স‍্যার,,,

— আপনার ট্রান্সফার হয়েছে কাল থেকে আপনি উত্তরার ব্রাঞ্চে ক্লাস করাবেন।

— কিন্তু কেনো স‍্যার?? আমার অপরাধ

মুহিবের কথায় চন্দ্র চোখ তুলে তাকায়। আবার কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখে গম্ভীর স্বরে বলল — আপনার কাজে গাফিলতি হচ্ছে নজর অন‍্যদিকে সরে যাচ্ছে। যেটা আমার পছন্দ না আপনার দিকটা বিবেচনা করে আমি আপনাকে বরখাস্ত করিনি যাষ্ট ট্রান্মফার করেছি।। আই হোপ নেক্সট টাইমে নিজের কাজ মনোযোগ দিয়ে করবেন।

মুহিবকে আর কিছু বলতে না দিতে যাওয়ার ইশারা করে চন্দ্র। মুহিব চলে যেতেই চন্দ্র চেয়ারে হ‍্যালান দিয়ে বসে বিড়বিড় করে বলে — আপনার নজর পরেছে আমার জোহরার উপর তা আমি কি করে সহ‍্য করে শুধু ঐ চোখে খারাপ কিছু পাইনি বলে ছেড়ে দিয়েছি নাহলে ঐ চোখ তুলে নিতে দুই মিনিট ভাবতাম না।

_____________

দুপুরে দুইটা পুনম চন্দ্রের অফিস রুমে বসে আছে। চন্দ্র নেই সেখানে সে তার স্টুডিওতে আছে। পুনম তাকায় চারিদিকে সিলভার প্লে বাটন চারটা গোল্ডেন প্লে বাটন দুইটা আরো কিছু সার্টিফিকেট। ফ্রেম করে সাজানো হয়েছে। একপাশের দেয়া আয়াতুল কুরসি ক‍্যালিগ্রাফি ঝুলছে যেটা পুনমের নিজস্ব তৈরী দেখেই পুনম খুব সহজে চিনতে পেরেছে।

এই ক‍্যালিগ্রাফিটা তাকে দিয়ে মুক্তি তৈরী করিয়েছিল নিজের ঘরের জন‍্য তবে সেটা এখানে কেনো,???
পুনম নিজের প্রশ্নের উত্তরের জন‍্য চন্দ্রের খোঁজ করে পাশের রুমে উকি দিয়ে দেখে চন্দ্র বসে আছে সিঙ্গেল সোফায়।

পডকাষ্টের মতো করে সিঙ্গেল সোফায় বসে সামনে স্ট‍্যান্ডিং মাইক। গম্ভীর চেহারায় একের পর এক গ্র‍্যামার ইংলিশ এবং এডভান্স ইংলিশ বলে চলেছে চন্দ্র।
পুনম খুটিয়ে লোকটাকে দেখে নামের মতোই সুন্দর লোকটা এইযে মুখের গাম্ভীর্য মনে হয় চেহারায় মানানসই। এককথায় আগুন সুন্দর।। কিন্তু আগুন সুন্দরী তো মেয়েদের ক্ষেত্রে বলা হয় এই লোক এতো সুন্দর হবে কেনো আর হবিই যখন একটু কম সুন্দর হতি বেডা তাহলে তার ক্লাসের মেয়েরা তার মাথাটা একটু কম খেতো।
মেয়েরা যে কি পাইছে এই গাম্ভীর্য রসকসহীন লোকটার মধ‍্যে একদম তিতা করলা। মনে মনে ভেবেই ভেংচি কাটে পুনম।

প্রায় বিশ মিনিট পর চন্দ্রের কাজ শেষ হলো সে স্টুডিও রুম থেকে বের হয় দেখে পুনম টেবিলে মাথা রেখে আছে খাবার পাশেই ঢাকা দেয়া।
— খাসনি কেনো??

চন্দ্রের কথায় ধরফর করে উঠে পুনম। বড় বড় নিঃশ্বাস নেয় পুনম কলিজাটা মনে হয় বের হয়ে যাবে। চন্দ্র এগিয়ে আসে পুনমের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে — টেক অ‍্যা ব্রেথ ড‍্যামেইড,, পানিটা খা,,

পুনম পানি খেয়ে আরো কয়েকটি শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করে।।
— এমন করে কেউ ওঠে,,

— আআমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তাই ভয় পেয়েছি,,

চন্দ্র কিছু বলে না। কাউকে কলে করে গেটে নক হতেই একটুখানি দরজা খুলে টেবিলে রাখা খাবারের থালাটা দিয়ে বলল — গরম করে দাও আর আমার খাবারটাও পাঠিয়ে দাও,,,

কিছুক্ষণ পরে খাবার আসতেই চন্দ্র তা নিয়ে পুনমের সামনে রাখে। প্লেট রেখে আসার সময় পুনমের মাথার ঘোমটা নামায় পুনম ছটফট করে উঠতেই চন্দ্র তাকে বসিয়ে ভেজা চুলের খোপাটা খুলে দেয়।
ঝরঝরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে মেঘ কালো চুল।।
— চুল খুললেন কেনো চন্দ্র ভাই,,,,

— চুলটা ভেজা গর্ধপ একটু পরেই তো মাথা ব‍্যাথায় কাহিল হবি তাই খুলে দিয়েছি,,,,

পুনম চন্দ্রের সাথে কথা বাড়ায় না ওড়না নিয়ে মাথায় দেয়। চন্দ্র নিজের খাওয়া শুরু করতে করতে বলে — দ্রুত খা তোকে বাসায় দিয়ে আমার ভার্সিটিতে যেতে হবে,,

— তাহলে আমি একাই যাই,, আমি রিক্সা করে চলে যেতে পারব।

— রাস্তাঘাট কতটুকু চিনোস তুই একা একা যাবি,, যাওয়া লাগবে না আমি দিয়ে আসব,,

— আমাকে তো একাই চলাফেরা করতে হবে,,

— সেটাও করিস যখন আমি থাকব না,,,

আমি থাকব না ” কথাটা শুনে বেশ খারাপ লাগল পুনমের। তবে কিছু বলল না চুপচাপ খাওয়া শুরু করল। চন্দ্র খেতে খেতে পুনমকে দেখল স্নিগ্ধ আদলখানি দেখলে চন্দ্রের উত্তপ্ত বুকখানা শান্ত হয় যেনো সেখানে একবালতি বরফ ঢালা হয়েছে।

____________________

পুনম বাসায় পৌঁছে দেখে তাদের ঢাকায় নিজেদের বাসায় যাওয়ার জন‍্য সবকিছু রেডি করছে কামরুল সাহেব। পুনমরা বেশী দূরে যাবে না চন্দ্রদের বাসার পিছনে যে ছয়তলা বিল্ডিংটা সেখানেই তারা উঠবে। কাল তারা সেখানেই উঠবে। কাল আবার রুপশাও আসবে পারভেজ সাহেব বলতে লিমন মানা করেনি।
তখনও রুপশা হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আজ যেনো তার একেরপর এক ঝটকা খাওয়ার দিন ছিলো।।

ট্রাক দিয়ে আসবাব পত্র আনিয়েছে কামরুল সাহেব তিনটা খাট আলমারি সোকেজ সোফা সহ যাবতীয় আসবাব পত্র। আজ লোক দিয়ে সেগুলো সেটআপ করিয়ে কাল তারা যাবে পুনম অবশ‍্য ভেবেছে কাল তো কোচিং নেই তাই সেই সব গোছগাছ করবে।
কিছু পেইন্টিং ও করেছে দেয়ালে সেট করার জন‍্য কাল রাত জেগে সেগুলো করেছে।

বিকাল পাচঁটা ক‍্যাম্পাসে বসে আছে চন্দ্র রিশান শিহাব তারা আলোচনা করছে আর কিছুদিন পরেই তাদের প্রথম সেমিস্টার তাই সেই বিষয়ে আলোচনা করছে।
— এই চন্দ্র পূর্ণ যদি মেডিক্যালে চান্স পাইতো কতই না ভালো হইতো,,

— কেনো

— আরে মেঝ মামির অহংকার পানিতে চুবানি খাইত।

— ওনার অহংকার সেদিনের পর এমনিতে পানিতে চুবানি খাইছে,, তার আদরের কন‍্যার ব‍‍্যবহার শুনে তার তাচ্ছিল্য শুনে।।

— তবে চন্দ্র দেখ নিশাটার একটু খোঁজ নেয়া দরকার,,

শিহাবের কথায় চন্দ্র মাথা নাড়িয়ে বলল — খোঁজ খবর প্রতিদিনই রাখছি হোষ্টেল আমার শশুর আব্বাই লোক দিয়ে ঠিক করেছে। সে এখন নিজের জীবনে আনন্দেই আছে।।

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৯

নতুন বাসায় এসেছে পুনমরা। রোজিনা বেগম পুনম অবাক চোখে চারিদিকে তাকিয়ে দেখছে বেশ বিলাস বহুল ফ্ল‍‍্যাট। হাউজিং এরিয়ায় এরকম ফ্ল‍্যাট অবাকের বিষয় না তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ফ্ল‍্যাটটা ডুপ্লেক্স।

— হ‍্যা গো রুপশার আব্বু এতো বড় ফ্ল‍্যাট ভাড়াও তো অনেক বেশী হবে তাইনা এখন এতো বড় ফ্ল‍্যাট নেয়ার কি দরকার।

রোজিনা বেগমের কথায় পারভেজ সাহেব তার দিকে তাকায়। উদ্বিগ্নতা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে এতো টাকা তার স্বামী কোথা থেকে পাবে। তবে পারভেজ সাহেব কিছু বলল না হাসল শুধু।
— আব্বু তুমি ফ্ল‍‍্যাটটা ছেড়ে দাও আমরা মানুষ তিনজন ছোট্ট একটা ফ্ল‍্যাটেই হয়ে যাবে শুধু শুধু এতো টাকা খরচ করার কি দরকার।

পারভেজ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তার স্ত্রী সন্তানের কাছে কথাটা লুকাতে হচ্ছে। সে চাইলে রোজিনাকে সত‍্যি কথাটা বলে দিতে পারে যে এই ফ্ল‍্যাট পুরোটাই আমাদের তোমার স্বামীর কষ্টের অর্জিত টাকায় করা তবে রোজিনা কতটুকু ঠিক হয়েছে সে জানে না। তাই বলতেও দ্বিধা কাজ করছে।
পারভেজ সাহেবের ভাবনার মধ‍্যেই রোজিনা বেগমের কল আসে। রোজিনা বেগম কল লিষ্ট দেখে তার বোন রুবি ফোন দিয়েছে রোজিনা কল রিসিভ করতেই রুবি গমগমে স্বরে বলল
— এগুলো কি শুনছি আপা কথা গুলো কি সত‍্যি??

রোজিনা ভয় পায় আমতা করে কিছু বলতে নিলে বলতে দেয় না রুবি — তোমরা এই বয়সে এই কাজগুলা কিভাবে করতে পারলা। মান সম্মানের ভয় নাই তোমাগো হ‍্যা। ভাই তো বেশ রেগে আছে তোমার উপর। ভাগ‍্যিস গ্রামের লোক কেউ জানে না আমি তো নিশার থেকে শুনলাম।

— আমার কথাটা তো শুন রুবি,,,,

— কি শুনব হ‍্যা তুমি আর আমাকে ফোন দিবা না বুইড়া বয়সে এখন বাপ হওয়ার শখ জাগছে।
আরো অনেক কথা শুনিয়ে ফোন কাটল রুবি। রোজিনা বেগম শুধু অশ্রুসিক্ত চোখে কানে শুনে গেলো কিছু বলল না। পারভেজ সাহেব ও এবার কোনো জবাব দিলো না তবে ফোনের অপাশে কথাগুলো কতটা তিক্ত হতে পারে তা আন্দাজ করে নিলো। পুনম বাবার দিকে তাকায় মায়ের কাছে যেতে চায় তবে পারভেজ সাহেব আটকায়। এর মধ‍্যে কলিং বেল বেজে ওঠে।
পারভেজ সাহেব পুনমকে ইশারা করে দরজা খুলে দিতে।
পুনম দরজা খুলে দেখে চন্দ্র বাদে বড় চাচারা সবাই এসেছে হাতে খাবারের বক্স।
— কিরে নিজের বাসায় উঠেই দেখছি আমাদের ভুলে গেছিস,,,
ঘরের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল কামরুল সাহেব।
তবে ভিতরে ঢুকে রোজিনা বেগমকে কাদতে দেখে ভরকে গেলো।
— কি হয়েছে পারভেজ ভাই এভাবে কাদছে কেনো রোজিনা,,,
চাদনী বেগম দৌড়ে রোজিনা বেগমের সামনে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে রোজিনা বেগমের ও মনে হয় অনেকক্ষণ ধরে এরকম একটা আশ্রয়ের দরকার ছিল তাই তো তাকে ঝাপটে ধরে।
— এতোদিন আমি এতকিছু কাদের জন‍্য করেছি ভাবী বলতে পারো। বাবা মা মারা যাওয়ার পর ভাই বোনকে আকড়ে ধরে ছিলাম আজ তারাই আমাকে পর করেদিল।

এর বিপরীতে কি বলবেন ভেবে পেলো না চাদনী বেগম তবে চুপচাপ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। কামরুল সাহেবের থেকে খাবারের বক্স নিয়ে মুক্তি ও পুনম খাবার সাজিয়ে ডাকে সবাইকে
— চল খেতে চল এই অবস্থায় ঠিক সময় খাওয়া দাওয়া খুব জরুরি

— খাব না ভাবী

— তা বললে তো হবে না রোজিনা তবে জানিস আমরা বিপদে পড়েই আপন পরের তফাৎ করতে পারি কে আমাদের বিপদের সঙ্গী তা সহজেই চিনতে পারি তাই ভেঙে না পরে শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে উচিৎ।

চাদনী বেগমের কথা কাজে দিলো রোজিনা বেগম চোখ মুখ মুছে চাদনী বেগমের সাথে খাওয়ার টেবিলের দিকে যায়।
— বড় চাচা আব্বুকে বল না এতো বড় ফ্ল‍্যাটের আমাদের দরকার নেই,,,

পুনমের কথা শুনে কামরুল সাহেব পারভেজ সাহেবের দিকে তাকাতেই সে মাথা নাড়ে এবং ইশারা করে বলে যে কিছু না বলতে। কামরুল সাহেব সম্মতি জানিয়ে পুনমকে বলল — কেনো আম্মা এই বাসায় ভালো লাগছে না আমাদের বাসায় পরের বাড়িতে আছো প্রতিদিন আমার আম্মার হাতে এককাপ চা খাওয়া যাবে,,

— ভালো তবে বড় চাচা ভাড়াটা বেশী হবে মনে হয়।
পুনমের সাথে তাল মিলিয়ে রোজিনা বেগমও বললেন — পুনম ঠিক বলছে ভাইজান এতো টাকা খরচ করার কোনো মানে হয়,,,

— যদি বলি একটাকাও তোমাদের দিতে হবে না তাহলে??

কামরুল সাহেবের কথা শুনে পুনম রোজিনা অবাক চোখে তার দিকে তাকায়।
কামরুল সাহেব সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল — খাওয়া শেষ কর সব বলব

কেউ আর কোনো কথা বলে না তবে পারভেজ সাহেব বড় ভাইকে চোখের ইশারায় না করে কিছু বলতে। কামরুল সাহেব তো ঘাড় ত‍্যাড়া চন্দ্রের বাপ সে বুঝি কোনো কথা শুনে।।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোফায় বসে কামরুল সাহেব তার পাশে পারভেজ সাহেব সামনের ডাবল সোফায় বাকী চারজন।
— পুনম মা এদিকে আয়,,,,

পুনম উঠে যেতেই দুই ভাই দুইপাশে সরে পুনমকে মাঝখানে বসার জায়গা করে দিল। পুনম সেখানে বসলে কামরুল সাহেব পুনমের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল — তোমার মনে আছে তোমার আব্বু তোমাদের তিনবোনের জন‍্য তিনটা দোকানের টাকা দিয়ে ফিক্স ডিপোজিট করে রেখেছে

পুনম মাথা নাড়ায়। কামরুল সাহেব আবারও বলল — মনে আছে রুপশার বিয়ের পর তোমাদের আব্বু বলেছিল ব‍্যবসায় একটু লস খেয়েছে। সেটা পুষিয়ে নেয়ার জন‍্য টাকার প্রয়োজন।

— হ‍্যা তখন আমি আমার ফিক্স ডিপোজিট ভেঙ্গে আব্বুকে টাকা দিয়েছিলাম,,

কামরুল সাহেব হেসে বলে — এটা সেই টাকার জায়গা। অনেক দিন ধরেই আমি নিজের একটা বাসস্থান করার চিন্তা ভাবনা করছিলাম। তাই আরো দুই বছর আগে আমাদের বাড়ির জায়গাটা কিনি। তখন তোমার আব্বুকে বললে সেও রাজী হয়ে যায় বেশ সস্তা দামেই কিনেছিলাম জায়গা গুলো ভাবিনি এতো দ্রুত এর দাম বেড়ে যাবে। আর এটা হাউজিং এরিয়ায় পরিনত হবে। তবে আমরা বাড়ির কাজটাও একসাথেই শুরু করি সেটা পারভেজের একটু একটু জমানো টাকায়। দোকানের টাকা দিয়েই ওর সংসার চলে যেতো তবে উপরের রুমের ভাড়া গুলো জমানো ছিলো বেশ দীর্ঘ দিনের আর বাকিটা লোন নিয়ে করেছে।

— এতো টাকার লোন কিভাবে দিবে সেই চিন্তা করেছ তুমি??

— ভয় নেই রোজিনা উপরের দুইটা ফ্ল‍্যাটের ভাড়া নিচের দুইটা ফ্ল‍্যাটের ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লোনের টাকা শোধ হবে।। আর পারভেজ ব‍্যাবসায়ী মানুষ কাপড়ের ব‍্যবসাটা নাহয় ঢাকায় আবার শুরু করল। গ্রামে বিশ্বস্ত লোক আমিই ঠিক করে দিব।

কামরুল সাহেবের কথায় আর কেউ কিছু বলল না। কেউ জিজ্ঞাসা ও করল না বাড়িটা কার নামে। পারভেজ সাহেব যেনো এই প্রশ্ন না করায় সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। সবাই এবার অন‍্য কথায় চলে গেলো পুনমকে নিয়ে মুক্তি চলে গেলো ওর ঘর দেখতে।।

___________________

পুরো ভার্সিটি জুড়ে আজ হলুদের সমারহ বসন্তবরণ উৎসবে মেতে আছে ভার্সিটি। নাচ গান হইহুল্লোরে মেতে আছে সবাই এর মধ‍্যে ভরা ক‍্যাম্পাসের মাঝখানে দাড়িয়ে চন্দ্রের দিকে ফুল বাড়িয়ে হাটু গেড়ে বসে একটা অনিন্দ‍্য রূপশী কন‍্যা।
চারিদিক থেকে বিভিন্ন ক্রেজ আসতেছে। শিহাব রিশান ও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে কি বলে চন্দ্র সেটা শোনার জন‍্য।

— আজকে এই বসন্তের দিনের একমুঠো ভালোবাসার বিনিময়ে তুমি কি আমাকে একমুঠো ভালোবাসা ফেরত দিবে,,,??

— আপনার ভালোবাসা নেওয়ারই প্রয়োজন নাই আরতো ফেরত দেয়া দূরের কথা

চন্দ্রের কথা শুনে পুরো ভার্সিটি জুড়ে হাসির রোল পরে গেলো মেয়েটা মনে খারাপ করেও নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলল — আমি তোমাকে ভালোবাসি,,

— কারেকশন মিস ইটস আপনি হবে,, একজন অচেনা অজানা তারউপর নিজের থেকে ছোট মেয়ের থেকে অন্তত তুমি ডাকটা শুনতে ইচ্ছুক না।
এরপর ভার্সিটির সবার দিকে তাকিয়ে বলে — আমি বিবাহিত এবং আমার বউটা আমাকে নিয়ে অভার পজেসিভ। সে আমার পাশে কোনো মেয়ে সহ‍্য করতে পারে না এবং কেউ এই ভিডিওটি অনলাইনে ছেড়ে আমার সংসারে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করবেন না বুঝেনই তো নারী জাতি কখন না জানি কি করে বসে। আদুরে বউকে কিছু বলতেও পারব না,,,,,

চন্দ্রের কথায় নিমিষেই সবাই মোবাইল নামিয়ে নেয় সেই সাথে চলতে থাকে হাসির রোল।। সবার মধ‍্যমনি চন্দ্র হনহন করে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। তার পিছু পিছু শিহাব রিশান ও যায়।
একটা টুলে বসতেই কোথা থেকে চন্দ্রের সামনে এক বালতি পানি নিয়ে হাজির হয় ছোট ভাই রাব্বি। চন্দ্র মাথা নিচু করতেই মগ ভর্তি পানি চন্দ্রের মাথায় ঢালতে শুরু করে।

শিহাব রিশান কিছু বলতে নিলে মাথা নিচু অবস্থায় চন্দ্র জবাব দেয় — নো মোর ওয়ার্ডস,, মাথা গরম আছে ঠাণ্ডা করতে দে।

চন্দ্রের কথা শুনে আর কেউ কিছু বলে না এর মধ‍্যে পুনমের কল আসে রিশানের ফোনে। ফোন বাজতে বাজতে কেটে যায়। পূনরায় বেজে ওঠে
— ফোনটা ধর বা**ল কানটা ঝাঝড়া করে ফেলল,, কে এমন পাগল হয়ে ফোন দিয়েছে??

চন্দ্রের প্রশ্নে শিহাব শয়তানি হাসল। রিশান অনুনয় করল চন্দ্রকে কিছু না বলতে তবে শিহাবকি তা শোনে এর আগে বহুবার চন্দ্রের থেকে মার খাওয়াইছে চন্দ্ররে দিয়ে আজ আমার পালা। ভেবেই গলা খাকারি দিয়ে শিহাব বলল
— চন্দ্র রিশানের ফোনে পুনম কল দিয়েছে,,,,,

#চলবে