পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0
6

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩২

ঘুমের মধ‍্যে পায়ের তলায় কিছু বাজতেই ঝনঝন শব্দ হয় ভ্রু কুচকে নেয় পুনম পা সরিয়ে নেয় ফের রাখতে শব্দটা আবার হয়। এবার পুনম উঠে বসে ঘুম আজকে কেমন ছাড়া ছাড়া হচ্ছে পুনমের মনটাও খুব একটা ভালো নেই শের “এ আলী সাহেবের সাথে কথা হয়নি আজে।
পুনম উঠে বসে গায়ের পাতলা চাদর খানা সরিয়ে খাটের ঐপাশে নজর দিতেই দেখে দুই মুঠো চুলি একটা শাড়ি আর একজোড়া পায়েল। এতো রাতে এইসব দেখে অবাক পুনম এগুলো কে দিলো ভেবেই শাড়ি খানা হাতে নেয়। দেখে চুড়ির নিচে চাপা দেয়া ধূসর রঙা চিরকুট পুনম কিছুটা আন্দাজ করেই চিরকুটটা খুলে
— কাল তো নবীন বরণ উৎসব,, আমার জোহরা কি তার শের” এ আলী সাহেবের জন‍্য সাজবে??

পুনমের ঠোটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ল‍্যাভেন্ডার আর সাদা সংমিশ্রণে জামদানি শাড়ি। সাথে ল‍্যাভেন্ডার ও সাদা চুড়ি রুপার পায়ের এই পায়েলেরই ঝনঝন শব্দ পুনমের কানে গেছে ভেবেই হাসল।। পুনম দৌড়ে বারান্দায় গেলো দেখল আজ আর ডিজিটাল কবুতর মানে হেলিকপ্টার নেই।
মন খারাপ হলেও নিজেকে সামলায়। ঘরে ফিরে শাড়িতে হাত বুলায় তার বেশ পছন্দ হয়েছে শাড়ি খানা।

রাতে ঠিক মতো ঘুম না হওয়ার দারুন সকালে দশটার দিকে মিহির কলে ঘুম ভেঙেছে পুনমের। পুনমের উঠেই কোনো রকম গোসল সেড়ে মুক্তির ঘরে যায়।
— আপু আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে??

আলমারিতে কি যেনো করছিল মুক্তি। পুনমের দিকে হেসে বলল — তোর জন‍্যই শাড়ি খুজছিলাম কাল বললি না আমার শাড়ী থেকে একটা শাড়ি পরবি,,,,;,,
মুক্তির কথায় ঢোক গিলল পুনম কাল মুক্তি আপুকে বলা কথা তার মনেই নেই। এদিকে ওদিকে তাকায়। ঢোক গিলে বলে — আপু শাড়ি আমার কাছে আছে,,,,

— তুই শাড়ি কই পাইলি আর কাল শপিং এ ও গেলি না চাচী এতো করেও বলার পর।।

— ঐ ঐঐ কলেজে থাকাকালীন মিহি গিফ্ট করেছিল সেটাই আছে আমার মনে নেই সকালে মিহি ফোন দিয়ে বলল সেটাই পরতে।
মুক্তি মেনে নিল পুনমের কথা পুনমের দিকে তাকিয়ে দেখে তার ভেজা চুলে জামা ও ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে মুক্তি পুনমকে ভিতরে ঢুকায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে ভালো মতো চুল শুকিয়ে দেয়। পুনমের চুলে হাত খোপা করতে করতে বলল — এই ভেজা চুলেই তো খোপা করে হিজাব করতি পরে মাথা ব‍্যথা করতো কার,,,,
পুনমের চোখ জোড়া ছলছল করল। বসা থেকেই মুক্তিকে জড়িয়ে ধরে বলল — তুমি আছো না আমার খেয়াল রাখার জন‍্য,,,,,,,,

মুক্তি হাসে মাথায় হাত বুলাতে চট করে পুনম উঠে দাড়ায়। বলে — দাড়াও আমি শাড়ি নিয়ে আসছি,,, বলেই নিজের ঘর থেকে শাড়ি সহ প্রয়োজনীয় সব নিয়ে আসে। পুনমের কাছে ব্লাউজ নেই এখন সেই চিন্তায় দুই বোন বিভোর।
মুক্তির ব্লাউজও হবে না এই পাটকাটি শরীরে
— এই জন‍্যই বলি একটু বেশী বেশী খা। বেশী বেশী খাইলে এখন এতো চিন্তা করে লাগত না।

পুনম মুখ কুচকে উঠে আলমারির সামনে যায় ঘাটাঘাটি করতে করতে তার হাতে লাগে ফুল সোল্ডার ফুল স্লিভের একটা ক্রপ টপ যেটা পুনমের প্রায় পুরো পেট ঢাকা পরবে। আর রঙটাও সাদা পুনম বিস্তর হেসে সেটা নিয়ে মুক্তির সামনে দাড়ায়।
— গরম লাগবে না এটা শীতের দিনে ঠিক আছে,,,,

— আরে চাপ নিও না তুমি তো জানো আমার গরম কম আর বাইরে অতোটা রোদও নেই আবহওয়া বেশ ঠাণ্ডা তাই চলে যাবে।
মুক্তি মানে পুনমের কথা পুনমকে সাদা পেটিকোট দিতে সে সেগুলো নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। পরে আসতে মুক্তি শাড়ি পরানো শুরু করে।।
হাতে ল‍্যাভেন্ডার সাদা মিশ্রণে চুড়ি পরাতে পরাতে বলল — চুড়ি কই পেয়েছিস??
পুনমও সেই কথাই আওড়ায় মিহি দিয়েছে। মুক্তির কেনো জানি পুনমের কথা বিশ্বাস হলোনা তবুও কিছু বলল না। বড় বড় চোখে মোটা করে কাজল দিয়ে মুখে হালকা ফেস পাউডার দিয়ে ঠোটে হালকা লিপস্টিক দিয়েই পুনমের সাজ শেষ। এবার পুনম ল‍্যাভেন্ডার কালার হিজাব বাধল। ভাগ‍্যিস পুনমের কাছেই অনেক কালারের হিজাব ছিলো তাই রক্ষে। পুনম পায়ে নুপুর জোড়া পরে দাড়াতে দেখে মুক্তি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
পুনম ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করতে মুক্তি এগিয়ে পুনমের কপালে চুমু দিয়ে বলে — পূর্ণ বড় হয়ে গেছে শিগগিরই বিয়ে দিতে হবে। বউ বউ লাগছে
শেষে বিড়বিড়িয়ে বলে — আমার ভাইয়ের বউ,,,,

মা চাচীদের থেকে বিদায় নিয়ে পুনম বের হয় বাসা থেকে নিচের মেইন গেট পাড় হতেই দেখে অটো পুনম খুশী হলো সচরাচর এই দিকে অটো থাকে না সামনে যেতে হয় আর পুনমে এই শাড়ি পরে এতো দূর হাটা সম্ভব না।।
— এই মামা যাবেন,, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়,,,

— হ আহেন
বলেই লোকটা তাকে তুলে নিলো পুনম ভাড়ার কথা জিজ্ঞাসা করলেই বলল যেই ভাড়া আহে হেইডাই দিয়েন।।
পুনম আর কিছু বলে না। ভার্সিটির সামনে নামতেই দেখে মিহি দাড়িয়ে আছে মেরুন কালারের শাড়ি পরা ভালো সেজেছে ও। পুনমের দিকে তাকায় মিহি মুগ্ধ হয় সচরাচর যাদের সাজতে দেখা যায় না তাদের সাজলে বেশ ভালো লাগে পুনমকেও সেরকমই ভালো লাগছে।

— ও মাই গুডনেস পুনু মাশাল্লাহ্ লাগছে,,,,

— ধন‍্যবাদ
হেসে বলল পুনম। দুইজন ভিতরে চলে গেলো বেলা বারোটা বাজে অনুষ্ঠান ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে সন্ধ‍্যা পযর্ন্ত চলবে। স্টুডেন্টস এ গিজগিজ করছে ভার্সিটি।
অনুষ্ঠান শুরু হলো চন্দ্রের পরিচালনা দিয়ে। গম্ভীর স্বরে একে একে অতিথিদের অভ‍্যর্থনা জানাচ্ছে।। আবার যারা পার্ফম করবে তাদের ডাকছে,,,, স্টেজে থাকতেই কারো দিকে চোখ গেলে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে দেয় ঠোটের কোণে সূক্ষ্মভাবে হাসির রেখা দেখা দেয়।। মুখের সামনে থেকে মাইক সরিয়ে ছোটভাই রাব্বির কানে কানে কিছু বলতেই রাব্বি মাথা নাড়িয়ে স্টেজ থেকে নামে।

— আসসালামু আলাইকুম ভা,, আপু ঐদিকে চলেন সেখানেই বসার কথা বলেছে চন্দ্র ভাই,,,

— ভাইয়া আমি আপনার ছোট আপনি বলা লাগবে না,, আর আপনি কি যেনো বলতে নিয়েও থেমে গেলেন
পুনমের কথায় রাব্বি বোকা হেসে বলল — ঐ স্লিপ অব টাঙ,, আপনারা আসুন
পুনম ভীড় ঢেলে ভিতরে ঢুকতে যেয়েও কুকড়ে গেলো অশ্রুকণা ভীড় করল চোখের কোণে চন্দ্র স্টেজ থেকে পুরোটাই লক্ষ‍্য করে হাতের মুঠ শক্ত করে। এখন নামাও যাচ্ছে না
পুনম এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল — রাব্বি ভাইয়া ওয়াশরুমে যাব,,,,,

রাব্বি তাকে লেডিস ওয়ারুমের সামনে নিয়ে যায়। পুনম ভিতরে ঢুকে ছেড়ে রাখা আচল কাধে উঠিয়ে টপটা উঠাতেই পেটে তিনটে নখের আচর পায়।
ঢুকরে কেদেঁ দেয় পুনম এমন শালীনতা বজায় রেখে শাড়ি পরেছে তাও মানুষ রুপী পশুদের থাবা দেকে বাচতে পারল না। পুনমের গা ঘিনঘিন করছে হঠাৎই লাইট বন্ধ হয়ে গেলো পুনম আরো ভয় পেয়ে গেলো
— রররাব্বি ভভভাইয়া,,
বলে ডাকলেও কেউ সাড়া দিল না। হঠাৎই কেউ পিছন থেকে হালকা ভাবে ধরল পুনম চিৎকার দিতে নিলে পুরুষটি ডেকে ওঠে জোহরা “”

এই ডাকটিতে কতটা স্নেহ ছিলো পুনম জানে না তবে বর্তমানে তার কাছে এই ডাকটি দুনিয়ার সবচেয়ে স্নেহের। পুনম ডুকরে কেদেঁ উঠল চন্দ্র পুনমের কপাল ধরে তার পিছন থেকে তার বুকে মিশায় অন্ধকারের নিয়ন আলোয় ক্ষত স্থানে মলম লাগায়। পুনমের মাথার তালুতে চুমু দিয়ে বলল — পুরো দশ মিনিট তুমি কেদেছ,,, যার জন‍্যে এমন হয়েছে তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দশ মিনিট আমি তাকে উপহার দিব বলেই আবার ও তালুতে চুমু দিয়ে বেড়িয়ে যেতে নিলে শার্টির কোণা ধরে আটকায় পুনম — ককে ককরেছে আআমি জজানি না আআপনি পপ্লিজ ঝামেলা ককরবেন না,,,,

অন্ধকারাচ্ছন্ন ওয়াশরুমে চন্দ্রের রাগে জ্বলজ্বল করা চোখ দেখলে যে কেউ ভয় পাবে।। চন্দ্র পুনমের কথার জবাব না দিয়ে বলল — মিহিকে বলছি ওর সাথে বাসায় চলে যাও ওকেই আর এখন থেকে হাটতে গেলে সাবধান সচেতনতা বজায় রেখে হাটবা অনাকাঙ্খিত স্পর্শ পেলেই প্রতিবাদ স্বরুপ ঠাডিয়ে একটা চড় দিবে বাকিটা পরে দেখা যাবে। তাদের বুঝাতে হবে নো মিনস নো,,,,,

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৩ ( কিছু ট র্চার থাকবে )

শাওয়ারের নিচে বসে আছে পুনম। গা ঘিনঘিন করছে তার মানুষ রুপি হায়েনাদের থাবা বুঝি এমনই অস্বস্তিকর বেদনার। প্রায় একঘণ্টা শাওয়ারের নিচে বসে থাকার পর হঠাৎই পুনমের কিছু মনে পড়ল।
কাল রাতে শাড়ি কিভাবে দিয়ে গেলো শের “এ আলী সাহেব আর সে বাসার ভিতরে ঢুকলই বা কিভাবে। আজকে অন্ধকারে যে আওয়াজটা পুনমের শুনেছিল সেরকমই আওয়াজ পুনম আগেও শুনেছে এবং কন্ঠটা অনেকাংশে চন্দ্র ভাইয়ের সাথে মিলে কেনো?? ভেবেই আরো এলোমেলো হয় পুনম। দীর্ঘ শাওয়ার শেষে দ্রুত ভেজা কাপড় পাল্টে ঘর থেকে বের হয়।
উদ্দেশ্য চন্দ্র ভাইয়ের ঘর আজ সেখানে কিছু খুজবে তবে চন্দ্রের ঘরের দরজায় ধাক্কা দিলে বুঝতে পারে সেটা লক করা অগত‍্যা পুনম নিজের ঘরে চলে যায়।
দীর্ঘক্ষণ ভেজার কারণে শরীর কেমন ম‍্যাজম‍্যাজ করছে কান্নার কারণে মাথাটাও ভাড় হয়ে আছে। তাই কেনো কিছু না ভেবে চুপচাপ বিছানায় পিঠ এলিয়ে দেয় মুহুর্তের মধ‍্যেই নিদ্রা ভর করে পুনমের চোখে।

বিকাল পাচঁটার দিকে প্রধান অতিথি আসলে তাকে অভ‍্যর্থনা জানায় ও তার বক্তিতার মাধ‍্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। পুরো অনুষ্ঠানে চন্দ্র ছিলো নিশ্চুপ রিশানকে দায়িত্ব দিয়ে সে অন‍‍্য কাজ করেছে। তবে চোখে চোখে একজনের উপর ঠিকই নজর রেখেছে ধৈর্য্য ধারন করেছে কখন অনুষ্ঠান শেষ হবে আর কখন সে তার কাজ করবে অপেক্ষা ফল বুঝি সুমিষ্ট হয় তাইতো ঘন্টা দুইয়ের পরেই নিজের মোক্ষম সময় পেলো চন্দ্র।

পুরো ভার্সিটি খালি হলেও অনেকে এখনো আড্ডায় ব‍্যস্ত।
— দোস্ত আজকে টার্গেটটা মিস হলেও যেই মেয়েটার সাথে ধাক্কা লাগল তার গায়ের রঙ সুন্দর না হলেও ফিগার মাস্ত,, পেটটা একদম নরম তুলতুলে।
বলেই ছেলেটা হাসা শুরু করল। ওর কথা শুনে তার সাথে থাকা আরো ছেলেরাও হাসা শুরু করল একেরপর এক মেয়েলি কাঠামোতে অশ্লীল কথা বার্তা বলতে লাগল।
তাদের ধ‍্যান নেই তাদের পিছনে অন্ধকারে বসে যে তিনজন পুরুষের রক্ত টগবগ করছে। হাত নিষপিস করছে। আড্ডা অনেক্ষণ চলার পরে যে যার মতো চলে যেতে নিলে চন্দ্র লোকটিকে পিছন থেকে ডাক দেয়। লোকটি সেদিকে তাকাতে লোকটি মুখে কিছু স্প্রে করতে সেকেন্ডের মাথায় লোকটি ঢলে পরল।
— ভাই এই শা* তো আমগোর ভার্সিটির না আজকে প্রধান অতিথি আসছে ওর চ‍্যালা মুন্ডা।

— সে যেই হোক আমার অমূল্য সম্পদে হাত দিয়েছে দীর্ঘ দশ মিনিট আমার অন্তরদহনের কারণ ও ওকে ছেড়ে দেই কি করে।

চন্দ্র ইশারা করতেই রাব্বি সহ আর দুইজন জুনিয়র লোকটিকে উঠিয়ে নিল গাড়িতে। ক্র‍্যাক করে গাড়িটা সাহরান”স কোচিং সেন্টারের সামনে থামতেই রাব্বিরা লোকটি ধরাধরি করে বেজমেন্টে নিয়ে যায়। কোচিং সেন্টারের মালিকানা চন্দ্র নিজে তিতলা বিল্ডিংটা পুরোটাই চন্দ্রের তিনতলায় চন্দ্রের অফিস কক্ষ আর বাকী দুইতলায় ক্লাস রুম।

লোকটির যখন জ্ঞান ফিরে নিজেকে বাধা অবস্থায় পায় হাত পা এবং চোখটাও বাধা,,
— এই কেরে মরার পাখনা গজিয়েছে নাকি যে আমাকে ধরে এনেছিস কাকে ধরে এনেছিস জানোস তোরা??

— জানিনা কৃপা করিয়া আপনার পরিচয় বর্নণা করুন
শিহাবের ব‍্যাঙাত্বক কথায় রিশান রাব্বি সহ সবাই মিটিমিটি হাসে একা চন্দ্র নিশ্চুপ সে একদৃষ্টিতে লোকটির হাতের নখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই নখ দিয়েই তো তার জোহরার পেটে আচর কেটেছিল। তার জোহরার পেটের চামড়া ছিলে রক্ত বের হয়েছিল। সেই রক্তক্ষরন তো তার বুকেও হয়েছিল তার জোহরার অশ্রু সেই পীড়া আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।
চন্দ্রের ধ‍্যান ভাঙ্গে লোকটির থ্রেড মার্কা কথায়।
— তোর ঐ চাচা আমার বা*** ছিড়বে।
বলেই লোকটার বুক বরাবর লাথি মারে চেয়ার সহ লোকটা পরে যায় গলায় পারা দিয়ে বলে
— এই এই তুই মায়ের পেটে জন্ম নিস নাই। যেই মায়ের গর্ভে ছিলি যার বুকের দুগ্ধ খেয়ে নিজেকে পরিপুষ্ট করলি। সেও তো একজন নারী ছিল সেরকমই একজন নারীকে হেনস্থা করতে বুকটা একটুও কাপলো না। আজ তোর এই বুক চিরে দেখব সেখানে কতটা সাহস
চোখ বাধা পট্টির আড়ালে লোকটার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতেও পারছে না।
চন্দ্র তার গলা থেকে পা সরায় রাব্বি চেয়ার উঠিয়ে বসায় চন্দ্র তার সামনে বসে ঢকঢক করে পানি খায়। হাতের ইশারায় রাব্বিকে কিছু আনতে বললে রাব্বি একটা নকপ্লাস আর ব্লেড নিয়ে আসে।
চন্দ্র লোকটির হাতে ধরে স্লাইড করতে করতে মোলায়েম স্বরে বলে — এই হাত আজ ভুল জায়গাই পরেছে,, একটা নখ উঠিয়ে নিতে নিতে বলল — এই নখ আজ ভুল জায়গাই পরেছে,,
নখ উঠিয়ে নিতে লোকটি গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠল।।
— তোদের মতো স‍্যাডিস্ট যারা বড় ছোট বাচ্চা মানে তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ আজ তোকে সেই শাস্তি আমি দিব। আবার আরেকটি নখ উঠাতে উঠাতে বলল — তেরী ইয়‍্যে নাখ বহুত বাড়া গুস্তাখি কি ইয়‍্যে নখ মুঝে দে দে হারুন ইয়‍্যে নখ মুঝে দে দে,,,

বলেই পরপর দুই হাতের আঙ্গুলের নখ উঠিয়ে নিলো সেখান দিয়ে গলগল রক্ত পরছে। আর লোকটি গগনবিদারী চিৎকার দিচ্ছে তবুও যেনো চন্দ্রের থামার নাম নেই সে দাড়িয়ে লোকটার অন্ডোকোষ বরাবর লাথি মারল। পরপর দুইটা লাথি মেরে বলল — যেই পুরু*** বরাই করে চলিস সেটাই ফুলস্টপ করে দিলাম।

পকেট থেকে একটা ইনজেকশন পুশ করে দিতে লোকটা আবারও অজ্ঞান হলো। রাব্বিরা মিলে তাকে আবার ধরাধরি করে গাড়িতে উঠিয়ে আবার ভার্সিটির পিছনে ঝোপে ফেলে দিয়ে আসে।
চন্দ্রের রাগ মনে হয় এখনো কমছে না সামনের চেয়ারে আবার লাথি মারে। শিহাব রিশান এতোক্ষণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে চন্দ্রের কারসাজি দেখছিল এখন না পেরে চন্দ্রকে ধরাধরি করে বসায়।
— ঐঐ বা** কেনো যেতে দিয়েছি জানিস কারণ ও এখানে থাকলে আমার হাতে মৃত্যু নিশ্চিত ওর রক্তে নিজের হাত কলুষিত করতে চাইনি তাই ওকে ওর প্রাপ‍্য শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।

— হ‍্যা হ‍্যা এখন তুই শান্ত হো

— শান্ত হব আমার কলিজায় হাত দিয়েছে ও আর আমি শান্ত হব। আমি শান্তই আছি নাহলে ওর মৃত্যু অবধারিত ছিলো।

বলেই রিশানের আনা পানির বালতি থেকে মগ ভর্তি পানি নিয়ে ঝপঝপ করে নিজের মাথায় ঢালতে শুরু করে।।

____________________

গভীর ঘুমে পুনম মুক্তির অনবরত দরজা ধাক্কায় ঢুলতে ঢুলতে গেট খুলে
— পূর্ণ চাচী,,,,,
বলেই হাপাতে থাকে। চাচী কথাটা শুনেই পুনমের চোখের ঘুম উড়ে যায় ঢোক গিলে বলে — আম্মুর কি হয়েছে আপু??

— চাচী ব‍্যাথায় কেমন যেনো করছে বাসায় বাবা,, চাচা কেউ নেই,,
মুক্তির কথা শেষ হওয়ার আগেই পুনম দৌড় দেয় বাবা মায়ের ঘরে। যেয়ে দেখে রোজিনা বেগম ব‍্যাথায় কাতরাচ্ছে চাদনী বেগম তাকে সামলানোর চেষ্টা করছে।
— আপু চন্দ্র ভাই নাহলে রিশান,, শিহাব ভাই কাউকে ফোন করো।

— করেছি তারা কেউই ফোন ধরছে না। আব্বুর চাচার আসতে আরো সময় লাগবে তারা বেড়িয়ে পরেছে।
পুনম কাদতে কাদতে নিজের ঘরে যেয়ে রিশানের নাম্বারে কল দেয়। পরপর দুইবার কল দিলেও যখন ধরে না তখন মুক্তির থেকে চন্দ্রের নাম্বার নিয়ে চন্দ্রের নাম্বারে কল দেয়।।

মাথায় পানি ঢালছিল চন্দ্র পকেটে ফোন বাজতেই ঘোর কাটে মগ রেখে গামছা দিয়ে হাত মুছে ফোন বের করতেই দেখে পুনমের নাম্বার থেকে কল এসেছে।
ঢোক গিলল চন্দ্র এতোক্ষণের রাগটা যেনো বিলীন হলো নিমিষেই ভয় ঢুকল চন্দ্রের মনে আজ ওয়াশরুমে তার কথায় পুনম কিছু বুঝে ফেলেনি তো?? চন্দ্রের চুপসানো চেহারা দেখে শিহাব জিজ্ঞাসা করে — কে ফোন দিয়েছে??

— পুনম

চন্দ্রের কথা শুনে ভ্রু কুচকায় দুই ভাই পুনম কোনোকালে চন্দ্রকে ফোন দেয়ার মতো মেয়ে না।
রিশান কি মনে করে নিজের ফোন বের করে। দেখে পুনম তাকেও ফোন দিয়েছে পুনম মুক্তি সহ ছাব্বিশটা মিসড কল।
— চন্দ্র দ্রুত উঠা দেখ আমাকেও ফোন দিয়েছিল হয়তো কোনো বিপদ হতে পারে,,,,,

রিশানের কথায় চন্দ্র দ্রুত কল রিসিভ করে অপর পাশে থেকে পুনমের কান্নাভেজা কন্ঠ ভেসে আসে
— চন্দ্র ভাই আআম্মু কেমন জানি করছে,,,,

কোনোরকম এইটুকুই বলতে পারল। — একদম ভয় পাসনা আমি আসছি,,, বলেই ফোন কেটে দ্রুত নিজের বাইকের কাছে গেলো। তার পিছু পিছু শিহাব রিশানও বসল।
পনেরো মিনিটের রাস্তা আট মিনিটে পাড় করল। বাসায় ঢুকে দেখে রোজিনা বেগম ব‍্যাথা কাতরাচ্ছে পুনম পাশে বসে কাদছে চাদনী বেগম তাদের সামলাচ্ছে মুক্তি একটু পরপর ফোন দিচ্ছে।
— আব্বা চন্দ্র চাচীকে একটু ধর,,

— ভাই আমি আম্বুলেন্স কল করেছি আসছে,,,

চন্দ্রকে দেখে বলল চাদনী বেগম। শিহাব রিশান চন্দ্র রোজিনা বেগমকে ধরাধরি করে নামায়। ততক্ষণে অ‍্যাম্বুলেন্স এসে পরেছে।।
অ‍্যাম্বুলেন্সে সবাই উঠে বসে সাভার এনাম মেডিকেলে থামে দ্রুত গতিতে ট্রিটমেন্ট স্টার্ট করে রোজিনা বেগমের।

ওয়েটিং রুমে বসে আছে পুনম অঝোরে কাদছে তাকে মুক্তি সামলাচ্ছে পুনমের এই কান্নাও চন্দ্রের পছন্দ হলো না তবুও কিছু বলল না চাদনী বেগম মনে মনে দোয়া পরছে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসল — এখানে রোগীর সাথে কে আছেন,,,??

চন্দ্র এগিয়ে যায় — আমি

— অবস্থা ভালো নরমাল ডেলিভারী সম্ভব না দ্রুত পানি ভাঙছে সি সেকশন করাতে হবে।।

— আপনাদের যেটা করা লাগে করুন রোগীর ভালোর জন‍্য যা করা লাগে করুন আমরা দুইজনকেই সুস্থ চাই,,,

— তাহলে দ্রুত রিসিপশনে কথা বলুন বাকি প্রসেস তারাই বলবে।

রিশানকে এখানে রেখে চন্দ্র শিহাব যায় রিসিপশনে। আধঘন্টার মধ‍্যে রোজিনা বেগমের সিজারের সকল ব‍্যবস্থা করে তাকে অটিতে নিয়ে যায়।
ততক্ষণে পারভেজ সাহেব ও কামরুল সাহেব এসে পরেছে মিরাজ সাহেবদের খবর দেয়া হয়েছে তারা আসছে।
বাবার বুকে মাথা ঠেকিয়ে কাদছে পুনম। পারভেজ সাহেব অটি রুমের দিকে তাকিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলায়। পিছন থেকে রুপশা ও বাবার বুকে ঝাপিয়ে পরে চমকে ওঠে পারভেজ সাহেব পরেই বড় মেয়েকেও সামলে নেয়।।

— কি অবস্থা রিশান??

— সি সেকশন করানো লাগছে,,,

চন্দ্র রিশান সবার জন‍্য খাবার আনতে গিয়েছে।। রাত এগারোটা এখনো কারোই খাওয়া হয়নি।।
দশ মিনিট পর মহিলা ডাক্তার বের হয় হাসি মুখে কংগ্রাচুলেট করে বলল — ইটস বেবী বয়,, আলহামদুলিল্লাহ্ দুজনেই সুস্থ। বেবীকে দেখতে পারবেন একটু পরেই পরিষ্কার করে দেয়া হবে। বলেই চলে যায়। ডাক্তারের কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে
মিনিটের মাথায় সাথা কাপড়ে মুরানো ছোট্ট পাখিটাকে নিয়ে আসা হয়।
নার্স পারভেজ সাহেবের কোলে দিতে নিলে পিছন থেকে পুনম বলল — আব্বু আমি নেই,,,

মেয়ের কথায় সায় জানিয়ে সরে যায় পারভেজ। পুনম ভাইকে কোলে নেয় ধবধবে সাদা একটা ছোট্ট মুখ খানা পুনমের মনে শীতলতা বাড়িয়ে দেয়। ভাইয়ের হাত ধরে বিড়বিড় করে বলে
— শোকরিয়া খোদা তোমার কাছে শোকরিয়া তুমি আমার চাওয়া পূরণ করেছ।
রুপশা ভাইয়ের কাছে আসতে পুনম বলে — আপা দেখ বড় বড় চোখ করে সবাইকে দেখছে

পুনমের কথা শুনে সবাই একজোট হাসে। দূর থেকে চন্দ্র নিজের ভবিষ্যত ইম‍্যাজিন করে।

#চলবে

#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৪

কেটে গেছে একসপ্তাহ আজকে নতুন সদস‍্যের আকিকা করে নাম করন করা হবে। আট মাসের বাবুটা সহজেই কারো কাছে থাকতে পারে না বেশ সেন্সিটিভ।
পুরো পরিবার হাজির,, সকাল থেকে ড্রয়িং রুমে বোনেরা ব‍্যস্ত নাম ঠিক করায়। একেকজন একেক নাম বের করছে কিন্তু কারোই পছন্দ হচ্ছে না। ঝিনুক ঠিক করলে রিমির পছন্দ হচ্ছে না রিমি পছন্দ করলে রুপশার পছন্দ হচ্ছে না এরকম করেই চলছে।
পুনম ভাইকে নিয়ে ঘরে চলে গেছে এদের কাজ দেখে তার খিদে পেয়েছে তাই রোজিনা বেগমের কাছে দিয়ে আসল।
— এই পূর্ণ আপু তুমিই ঠিক করো এবার এদের দ্বারা কিচ্ছু হবে না,,,

রাইয়‍্যানের কথায় পুনম ঠোট উল্টে বলল কারো নামই তো কারো পছন্দ হচ্ছে না আমি কি ঠিক করব।
— শালী সাহেবা এবার তুমিই ঠিক করো এছাড়া আর কোনো উপায় নেই,,,
পুনম কিছুক্ষণ ভাবল ভেবে বলল — রাশমিক আহমেদ পূর্ব

— বাহ বেশ সুন্দর নাম দিয়েছ তো,,,
লিমনের কথায় সবাই হ‍্যাতে হ‍্যা মিলায়। — হ‍্যারে আম্মাজান নাম ঠিক হয়েছে মাওলানা সাহেব তো এসে পরেছে

— হ‍্যা আব্বু পূর্ণ ঠিক করেছে রাশমিক আহমেদ পূর্ব,,

— বাহ বাহ বেশ ভালো নাম। দ্বারা আমি আগে ভাইজানদের বলে আসি নামটা মাওলানা সাহেবকে বলতে হবে।
মিরাজ সাহেব মাওলানা সাহেবকে নাম বলল। সেই নাম অনুযায়ী ছাগল জবাই করা হলো পূর্বর আকিকা উদ্দেশ্যে দুইটা ছাগল আনা হয়েছে সেগুলো কাচ্চি করা হবে এক ডেগচি কাচ্চি মসজিদে দিয়ে আরেক ডেগচি থেকে নিজেদের জন‍্য রেখে বাকিটা প‍্যাকেজিং করে বিলি করা হবে।
চন্দ্র শিহাব এখন সেই কাজেই আছে রিশান কামরুল সাহেব মসজিদে গিয়েছে।।
— ভাবী বেলীটা আসল না
শিলা বেগমের আক্ষেপে চাদনী বেগম তার দিকে তাকায়।
— ভাবী আমার বোনটা একটা প্রতারকের জন‍্য এখনো কেনো অপেক্ষা করে নিজের জীবনটা নষ্ট করল সঠিক সময়ে বিয়েটা পযর্ন্ত করল না। এখানে আসতে বললেই বলে আপারে এই ভীর আমার জীবনের ব‍্যর্থতা মনে করিয়ে দেয় যে তারে আমি পাইনি,,,,

চাদনী বেগম ননদকে বুকে জড়ায়। তার যখন বিয়ে হয় তখন বেলী আট বছর বয়সী দুরন্ত কিশোরী যার শিড়ায় শিড়ায় বাচ্চামো গাছে চরা গুলাইল দিয়ে নিষানা করা এই নিয়েই দিন যেতো পড়াশোনায় ছিলো লাড্ডু। তবে মন বসেছিল পড়ায় সেই সাথে বসেছিল আরেকজনের উপরেও চৌদ্দ বছরে কারো মায়ায় পড়েছিল। তবে পূর্ণতা পেলো না। সবাই কি পূর্ণতা পায় পায়না। বেলীরে শত চেষ্টার পরেও কেউ বিয়ে দিতে পারেনি সেই যে আটকেছে কারো উপর আর বের হতে পারেনি।

— ভাবী এই বাদামবাটা ডিপে রাখব নাকি নরমালে,,;??

নিপা বেগমের কথায় চোখ মুছে দুই ননদ ভাবী। চাদনী বেগম নিপা বেগমকে জিজ্ঞাসা করলেন
— ছোট রোজিরে খেতে দিয়েছিস??

— হ‍্যা ভাবী সবার আগে মেঝ ভাবীরে দিছি। উনার জন‍্য শিং মাছের ঝোল করেছিলাম সেগুলো দিয়েই খেয়েছে।।

______________________

দূর্বল রোজিনা বেগম ঘুমিয়ে পড়েছে পাশেই পূর্ব ঘুমিয়ে একটু আগেই পুনম শুয়িয়ে দিয়ে গেলো।। পিচ্চিটা এই কয়দিনে সবচেয়ে বেশী পুনমের কাছেই থাকে বেশী। পুনম ও নাওয়া খাওয়া ছেড়ে ভাইয়ের জন‍্য হাজির থাকে পারভেজ সাহেব পূর্বের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠোঁটের কোণে হাসি হঠাৎই লাইটের জন‍্য ঘুমটা হালকা হলো রোজিনা বেগমের।

— এখনো ঘুমান নাই??

রোজিনা বেগমের কথায় তার দিকে তাকায় পারভেজ সাহেব উল্টো প্রশ্ন করে — রোজি ছেলেটা তো লাল সুন্দর হয়েছে মনে হয় গায়ের রঙ শ‍্যামলা হবে,,,

— তো কি হইছে স্বর্নের চামচ বাকাও ভালো।
ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল রোজিনা বেগম পারভেজ সাহেব বলল — তা ঠিক বলেছ স্বর্ণের চামচ বাকাও ভালো,, যার দ্বারা আমার ঘরে জান্নাত সে কালো হলেও সমস‍্যা নাই।

— কি বলছেন কিছুই বুঝলাম না

— কিছু না এই পুত্রের জন‍্যই মানুষ হাহাকার করে। ঐ যে মুরুব্বিরা বলত একটা পুত্র দেরে আল্লাহ্ একটা পুত্র দে কামাই খাওয়ার ইচ্ছা নাই মাটি দিব কে,,,

— আপনের কথার কিছুই বুঝতাছি না,,

— কিছু না বলেই শুয়ে পড়ে পারভেজ সাহেব। পূর্বের দিকে ফিরে তার কপালে চুমু খায় এই ছেলেটা তাদের থেকে তার পুনমের বেশী সাধনার প্রত‍্যেক ওয়াক্তের নামাজের মুনাজাতে পুনমের একটাই চাওয়া যেন আল্লাহ্ এবার তার মায়ের আশা পূরণ করে একটা ভাই দেয় তাদের শেষ বয়সের সম্বল দেয় অথচ সে এটা জানে না ভবিষ্যতে তার ভাই তার বাবা মাকে দেখবে কিনা। যদি সব পুত্রই সুপুত্র হতো তাহলে বৃদ্ধাশ্রম নামক বাসস্থান তৈরী হতো না।
পূর্বের গলা ফাটিয়ে কান্নায় পারভেজ সাহেবের ধ‍্যান ভাঙ্গে। আজ কেন জানি মনে মনে বেশ আজগবি ভাবনা আসতেছে যা সে চাইলেও দূর করতে পারছেনা।
রোজিনা বেগম পূর্বকে খাওয়াতে চাইলেও সে মুখে নিলো না। আরো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করল।

____________________

— সারাদিন পর মনমানবের বার্তা মিলল,,,

— উহু সারাদিন আমার মন ময়ূরী মনে ছিলো তবে সে কি জানে আমি আজ ব‍্যস্ত ছিলাম

— কিসের ব‍্যস্ততা??

— আছে

পুনম পেড খাতা হাতে বসে আছে আজ চারদিন পর শের “এ আলী সাহেবের সাথে কথা হচ্ছে। তার মনের প্রশ্ন গুলো জিজ্ঞাসা করার জন‍্য মনটা বড্ড উতলা সামনাসামনি চন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করতে যেয়েও পারেনি কি জিজ্ঞাসা করবে। চন্দ্র ভাই রাতে আমার ঘরে শাড়ি চুরি কে রেখে গেছে কেউ আমাকে চিরকুট দেয় কেউ একজন আছে যার গলাটা অনেকাংশ আপনার সাথে মিলে যদি চন্দ্র কোনো ঝামেলা করে। আর পুনমের এসব জানতে পেরে যদি শের “এ আলী সাহেবের কোনো ক্ষতি করে তাহলে পুনম কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারল না।
হঠাৎই ঘোর ভাঙে ভাইয়ের গলা ফাটিয়ে চিৎকারের ফলে। পুনম হাতে খাতা রেখে সেভাবেই উঠে যায় বাবা মায়ের ঘরের দিকে।

_________________

চন্দ্র অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন কোনো ফিরতি বার্তা আসলো দুইবার ড্রোনটা নিজের কাছে এনেছে চন্দ্র কোনো কাগজ পায়নি। পরে পূর্বের কান্নার আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বের হয়।
দেখে রোজিনা বেগম পারভেজ সাহেব সহ পুরো ফ‍্যামিলি ঘুম ছেড়ে এই পিচ্চির কান্না থামাতে ব‍্যস্ত।
খানিকক্ষণ পর পুনমের কাছে দিতেই ঠোট চটকে থেমে গেলো ড‍্যাবড‍্যাব করে পুনমের দিকে তাকিয়ে থাকল। সবাই আশ্চর্য হয়েও হেসে দিলো।
— হ‍্যারে পূর্ণ ভাইতো একদম তোর ন‍্যাওটা হয়ে গেলো এই কয়দিনে,,,

— হোক আপা আমার ভাইকে আমিই পালব আমার ভাইয়ের জন‍্য সব করব।

পুনমের কথায় সবাই আরো একজোট হেসে দিল তবে হাসতে পারল না একজন সে একবার পুনমের কোলে থাকা পূর্বের দিকে তাকায় আবার নিজ মনে বিড়বিড় করে — এই চাচাতো ভাই শালা দেখি হওয়ার পরপরই আমার প্রেমের নৌকা ডুবিয়ে দেয়ার ধান্দায় আছে।
আমার জোহরা যদি সারাদিন এর সাথেই থাকে আমার কি হবে,,,,
চন্দ্র চলে গেলো গভীর ভাবনায় সে দেখতে পারছে ভবিষ্যতে তার অন্ধকার।।
পুনম হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দোল দিতেই ঘুমিয়ে যায় পূর্ব।
ঘুমন্ত পূর্বকে রোজিনা বেগমের কোলে দিয়ে তাদের ঘুমিয়ে যেতে বলল পুনম। পারভেজ সাহেব মুচকি হেসে দুই মেয়ের কপালে চুমু খায়।

— আজকে আমার আম্মাদের সাথে কথা বার্তা হয়নি তো তাই বোনদের ভাই রাগ করেছে সেজন্য এতো রাতে বোনদের উঠিয়ে এনেছে।

— আমরা কিছু মনে করিনি আব্বু তুমি ব‍্যস্ত ছিলে।

পারভেজ সাহেব দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে দেয়। মিরাজ সাহেবকেও ঝাপটে ধরে ঝিনুক রিমি মুক্তিও কামরুল সাহেবকে ঝাপটে ধরে।

— এটা কি হলো তোদের দুই ভাইয়ের ডান বাম বুকের দুই সাইড ভরল মেয়ে দিয়ে। আমার কেনো ভরল না
মুক্তি বাবার বুকে থেকে বলল — আব্বু ভাইকে বিয়ে করিয়ে দাও ছেলের বউকে মেয়ে বানিয়ে ঘরে রেখে দিবা,,,

— বেশ বলেছেন আম্মাজান তাহলে তো পারভেজের বুকটা একসাইড খালি হয়ে যাবে,,,

কামরুল সাহেবের কথা সবাই বুঝলেও বুঝল না পুনম। সে ভ্রু কুচকে ভাবল –তার আব্বুর বুক এক সাইডে খালি হবে কেনো??

#চলবে