#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫৬
আজকের সকালের নাস্তা হবে গরুর কলিজা দিয়ে খিচুড়ি তাই বাড়ির মহিলাদের রান্নার কোনো ভেজাল নেই। রেনু মিনুও আনন্দে উল্লাসে আছে পুরো বাড়ির সকলেই এখন মুক্তির হলুদ গোসলের আয়োজনে ব্যস্ত
গোসলে নেয়ার পর থেকেই মুক্তি সমানে কেদেঁ চলেছে তার কান্না দেখে চাদনী বেগমও আড়ালে কাদেন কামরুল সাহেবকেও দেখে মনে হচ্ছে অনেক কষ্টে সে কান্না আটকে রেখেছে।
গোসল করে দুই রাকাত নফল নামাজ পরেই মুক্তি বউ সাজার জন্য চলে গেলো । চন্দ্র এবারও বাসায় লোক আনিয়েছে সাজানোর জন্য। বিয়েটা বাড়ি থেকে হওয়ায় একটু বেশী কাজ ছেলেদের। পিছনে লনে প্যান্ডেল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
যোহরের নামাজের পরপরই বরপক্ষ এসে হাজির গেট ধরেছে পুনম ঝিনুক রিমি ও চন্দ্রের মামাতো বোন।
— শালিকা গন কত চাই??
— লিমন ভাই সবাই কি দরদাম করার জন্য আপনারেই পায় নাকি??
— আর বলিও না শালিকা পূর্ণ,, সবার কথা আমি ম্যাজিস্ট্রেট মানুষ বাজার দর ভালোই জানা তাই সবাই আমাকেই পায়
বলেই লিমন দীর্ঘস্বাস ছাড়ল। রুপশা লিমনের পেটে গুতা দিয়ে বলল — হইছে তাড়াতাড়ি করো খবরদার বেশী বার্গেনিং করবা না
রুপশার থ্রেড শুনে লিমন ইহানের দিকে তাকিয়ে বলল — ভাই তোর টাকার স্রাধ্য হচ্ছে আজ
ইহান মুচকি হেসে বলল — সমস্যা নাই ভাই আমার শালিকারাই তো নিবে
পিছন থেকে রেনু মিনু মাথা বের করে বলল
— আমরাও আছি দুলাভাই,,,,
ওদের কান্ড সবাই হেসে উঠল ইহান কোনো কথা ছাড়া ওদের দাবী পূরণ করল। সবাই হইহই করে কেচি দিলো ফিতা কাটতে।।
খাওয়া দাওয়া শেষে বিয়ের কার্যক্রম শুরু হলো।
বিয়ের কার্যক্রম শেষে সবাই হাসি ঠাট্টার মধ্যে আয়না দেখা ও মালা বদলের আয়োজন শেষ করল। মুক্তি কাদতে কাদতে কাহিল বাবার বুকে তার দেখাদেখি রূপশা ও পুনমও বাবা বুকে মুখ গুজে কাদছে দূর থেকে নিশা বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার কাছে এইসব কেমন ন্যাকা লাগছে।। পারভেজ সাহেব হাজার ডেকেও মেয়েকে কাছে টানতে পারেনি।।
কন্যা বিদায় কতটা কষ্টের তা মেয়ের বাবাই জানে।।
কামরুল সাহেব ও চাদনী বেগম কেমন মুর্ছা গেছে তাদের সামলে রাত আটটায় ঘরে ঢুকল পুনম চন্দ্র কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে সারাদিনের ক্লান্তিতে সবাই নিজের ঘরে রেষ্ট নিচ্ছে। কাল আবার দুই জুটির রিসিপশন হবে কমিউনিটি সেন্টারে তাই সকলেই রাতের খাবার সেরে রেষ্ট নিতে চলে গেছেন।
পুনম চন্দ্রর মাথায় হাত বুলায় চন্দ্র পুনমের পেটে মুখ গুজে
— যাওয়া মানেই আমাদের মেয়েদের জীবন আমি এসেছি রুপশা আপু গেছে মুক্তি আপুও গেছে এটাই আমাদের নারীদের জীবন তাদের নিজস্ব স্থায়ী কোনো বাড়ি নেই।
— আমি যদি আমার জোহরার জন্য তার নিজস্ব ছোট্ট একটা বাড়ি করি কোনো সমস্যা হবে
— সত্যিই!! আচ্ছা আমরাদের বাড়ির নাম আলীহরা
— এটা আবার কেমন নাম,,??
— আপনি আমাকে কি নামে ডাকেন
— কেনো জোহরা,,
— আমি ডাকি শের “এ আলী। আলীর আলী”” আর জোহরার “” হরা তাহলে হলো না আলীহরা!!
— তবে জোহরা বিবি আমিতো ঐ বাড়িটা তোমার জন্য দিতে চাই
— উহু দুইজনের নামেই থাকবে আমরা একে অপরের পরিপূরক না,,,
পুনমের কথায় চন্দ্রর ঠোটে বিতৃত হাসি ছড়িয়ে পড়ল। সে যেনো জানতো এরকম একটা উত্তরই পাবে সে তার জোহরার থেকে। এভাবেই চলতে থাকে তাদের কথোপকথন কখন পড়াশোনা কখনও ভবিষ্যতের অপার স্বপ্ন।।
____________________
রিসিপশনটা রাতে হওয়ার জন্য সকাল সকাল কোনো ভেজাল হয়নি ঘরের মেয়েরা মিলে আজ নাশতা বানায় চাদনী বেগম অসুস্থ হয়ে গেছে রোজিনা বেগম পূর্বকে নিয়ে খুব একটা করতে পারবে না তাই আজ ঝিনুক শিলা বেলা রিমি ও পুনম মিলে সবার জন্য নাশতা বানায়।
আগের দিনের গরুর গোশত গরম করে রাখে সাথে ভিমের অমলেট আর গরম গরম পরোটা।
নাশতা সেরে চন্দ্ররা মিলে যায় কমিউনিটি সেন্টারের দিকে দুইটা রিসিপশন একসাথে হওয়ায় বেশ লোকজনের দাওয়াত পরেছে।। আবার চন্দ্রর ইউনিভার্সিটির থেকে বেশ কয়েকজন টিচারকে দাওয়াত করা হয়েছে তাদের আপ্যায়নে যাতে কমতি না থাকে তাই চন্দ্র শিহাব ও রিশানকে দায়িত্ব দিয়েছে যাতে তাদের কোনো সমস্যা না হয়।
রয়েল ব্লু ব্লেজার ও নীল শার্ট রয়েল ব্লু প্যান্ট সব মিলিয়ে ধবধবে ফর্সা চন্দ্রকে বেশ ভালোই মানিয়েছে। চন্দ্রর সাথে মিশিয়ে পুনম শাড়ি পরেছে রয়েল ব্লু সিল্কের কাজ করা ভাড়ি শাড়ি।।
চন্দ্ররা সেন্টারে পৌঁছে দেখে ইহানরা অলরেডি পৌঁছে গেছে অনেক গেষ্টদের সাথেও পরিচিতি হচ্ছে। ইহানের কলিগদের সাথে মুক্তি কথা বলছে।
— আপু
পুনমের ডাকে মুক্তি ফিরলে পুনম দৌড়ে তাকে ঝাপটে ধরে। — এই আস্তে পরে যাবি তো
চন্দ্র মুক্তি একসাথেই বলল। ইহান পুনম হেসে ফেলল
— আই মিসড ইয়্যু আপু
মুক্তি আড়চোখে ইহানের দিকে তাকায় কাল এই ব্যাটার সাথে এই নিয়ে একদফা ঝগড়াও করেছে সে। সেই ঝগড়ার সরি স্বরুপ মুক্তির কপালে জুটেছে লোকটার পাগল করা ভালোবাসা আদর।
এর মধ্যে ঝিনুক রিমি আসে চারজন একসাথে কথা বলতে থাকে যেনো কতদিন পর দেখা হয়েছে তাদের। কিছুক্ষণ পরে রুপশাও এসে যোগ দেয়। লিমন ইহান গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে চন্দ্রর সেদিকে খেয়াল নেই সে জোহরার পাশে বসে আশে পাশে সবার দিকে নজর রাখতে ব্যস্ত।
— ইহান মন খারাপ করিস না এরা বোনেরা একটা আরেকটাকে পেলে আমাদের ভুলে যায়।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইহান। চন্দ্রর হঠাৎই নজর যায় কাইফির দিকে যে পুনমের দিকে একটু পরপর তাকাচ্ছে। বিরক্ত লাগল চন্দ্রর তবে বিরক্তি চেপে পুনমের দিকে আরেকটু চেপে যায়। পুনম কথা বাদ দিয়ে চন্দ্রর দিকে তাকায় ফিসফিসিয়ে বলে
— আসেন বসেন একেবারে কোলেই বসেন,,
— সেটা তো বসবে তবে আমি না তুমি বসবে।। বলেই বাকা হাসল চন্দ্র পুনম চন্দ্রর কথার মানে বুঝে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আবার কথায় মন দেয়।
অন্যদিকে,,,,,,,,
নাওয়াজ শেখ এসেছে গেটে শিহাব তাকে অভ্যর্থনা জানায় পিছন থেকে মিহি উচ্ছসিত হয়ে বলে — স্যার আপনি এসেছেন,,,?? দাড়ান আমি এখনই পুনমকে ডেকে আনছি
মিহি পুনমের কানে কানে স্যারের কথা বললে পুনম খুশী হয় মিহিকে কানে কানে বলে তার ছোট ফুপী বেলাকে ডেকে দিতে বলে।
নাওয়াজ শেখ এসে চন্দ্র ও পুনমের সাথে কথা হয় বর্তমানে নাওয়াজ শেখ ও চন্দ্র কলিগ তাই সেই হিসেবে পুনমকে ট্রিট করে। স্যারের মতো অতটা গম্ভীর হয়। তাদের কথার মাঝখানে পিছন থেকে বেলা শাড়ি সামলাতে সামলাতে এসে বলল
— কিরে আম্মা ডেকেছিলি??
স্থির হয়ে গেলো নাওয়াজ শেখ আজ প্রায় বিশবছর পর সেই মধুর কন্ঠ শুনলো তবে ব্যক্তিটাকে চিনতে তার একটুও ভুল হয়নি। হবেই বা কেনো এই ব্যক্তির কন্ঠই তো তার নিত্যদিনের সঙ্গী ছিলো।
— হ্যা ফুপি একটু দরকার ছিলো দেখো আমাদের ইউনিভার্সিটির স্যার
পুনমের দেখানো ব্যক্তির দিকে তাকাতে থমকে গেলো বেলা চোখের পলক পড়তেও থেমে গেলো গুনে গুনে একুশ বছর চারমাস আটাশ দিন আঠারো ঘন্টা তেত্রিশ মিনিট পর দেখলো লোকটাকে। আগের মতো লোকটা আর নেই সেই তাগড়া লোকটা একটু শুকিয়ে গেছে দুই কানের পাশে সাদা কালো চুলও বেড়িয়েছে বয়স পয়তাল্লিশের লোকটা এখন সেই চব্বিশ বছরের যুবক নেই। বেলার ধ্যান ভাঙল পুনমের কথায় পুনম নাওয়াজ শেখকে জিজ্ঞাসা করল
— স্যার আপনার ফ্যামিলির কেউকে আনেননি
— এক বৃদ্ধ মা ছাড়া আর কেউ নেই আমার। আর বুঝোই তো বয়স হয়েছে কোথাও যেতে চায়না।।
নাওয়াজ শেখের কথা শুনে যারপরনাই অবাক বেলা কি বলছে লোকটা তবে যার জন্য তাকে ছেড়ে চলে গেলো যাকে চেয়ে তাকে ফেলে গেলো সে কই,???
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫৭
— আস্তে আস্তে নামো
ছেলেটি ধরে নামায় তার মাকে। তার মা এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে বলল — হ্যারে নাওয়াজ পাখি আসেনি আমাদের নিতে,,,,,
নাওয়াজ মায়ের কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে এদিক ওদিক তাকায় পাখি নামক কোনো মেয়েকে না দেখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল — এই জন্যই আমি গ্রামে আসতে চাইনি এই অজপাড়া গায়ে ঢাকা শহরের মতো ফ্যাসিলিটি তুমি পাবে আম্মা।
— কি করব বল বাপ তোর বাবার মৃত্যুর পর তো সেখানে আর মন টিকেনা তাই তো স্বামীর ভিটেয় আসার জন্য মনটা আকুল হয়ে আছে ।
নাওয়াজ কিছু বলে না মায়ের হাত ধরে এগিয়ে আসতেই কোথা থেকে একটা বিশ বছর বয়সী ছেলে তাদের সামনে দাড়িয়ে হাপাতে হাপাতে বলল — মাফ করবেন খালাম্মা দেরী হয়ে গেলো ঐ গরুরে হাল চড়াইতে নিয়ে গেছিলাম তো,,,
— তো কিরে পাখি তোর আক্কেল কোনো দিন হবে না এখন বেলা বারোটা এখন যদি তুই গোয়াল ঘর থেকে গরু বের করলি
পাখি মাথা চুলকে হাসতে হাসতে নাওয়াজের হাত থেকে ব্যাগ নেয়।
— আম্মা এর নাম পাখি??
— হ্যা কেনো বাপ
মাথা নাড়ে নাওয়াজ শেখ সে ভেবেছিল পাখি কোনো মেয়ের নাম এখন দেখি পাখি একটা বিশ বছর বয়সী ছেলে।
আর কোনো কথা না বলে তারা ভ্যানে উঠে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। পাখি ধীরে ধীরে ভ্যান চালিয়ে এগোয়।
______________________
কামরুল পারভেজ শিলা রমিজ মিরাজ সকলে একত্রে বসে আছে তাদের সামনেই বসে আছে রানিবানু। কামরুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে রানিবানু বলল — এই মেনি বিড়ালের লগে আমি আমার মাইয়ার বিয়েই দিতে চাইনি তাও মাইয়ার জেদের কাছে হার মাইনা এই মেনি বিড়ালের লগে বিয়া দিতে হইল যাউগ্গা বেলা আম্মা কই আমি ঠিক করছি ওরে আমার আনিসের লইগ্গা নিমু।
তখনই কোথা থেকে চন্দ্র এসে নানির কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। তার পিছন পিছন বেলা আসে
— ভালো আছো খালাম্মা
বলেই তাকে জড়িয়ে ধরে। রানিবানু তাকে আগলে নেয় মৃত বান্ধবীর রেখে যাওয়া শেষ অংশটুকুকে সে বেশ ভালোবাসে।।
— আম্মাজান আপনের যে সামনেই মেট্রিক পরীক্ষা সেটা খেয়াল আছে।
— জ্বী খালাম্মা তাই তো মেঝো ভাই আমাকে স্কুলের কোচিং এ দিয়েছে
এভাবেই চলতে থাকে তাদের কথোপকথন এরমধ্যে পারভেজ সাহেবের বিয়ের কথাও উঠে। বিয়ের প্রতি উদাসীন পারভেজ সাহেব ভাইবোনদের কথা উপেক্ষা করতে না পেরে বিয়ের জন্য রাজী হয়েছে এইতো সামনের সপ্তাহে তার বিয়ে। বিনা অনুষ্ঠানে তাদের বিয়ে হবে মসজিদে আপাতত পারভেজ সাহেব এতো খরচা করতে রাজি না কামরুল সাহেব ও পারভেজ সাহেবের কোনো রকম ইনকামের টাকায় সংসার চলে এর মধ্যে আবার উপরি ঝামেলা মনে হয় তার বিয়েকে।
বলতে বলতে বিয়ের দিন এগিয়ে আসে। বাদ জুম্মা মসজিদে বিয়ে হয় রোজিনা ও পারভেজ সাহেবের ছয় বছর বয়সী চন্দ্র আর ষোড়শী বেলা সবচেয়ে বেশী হইহুল্লোর করে।
ভাইপোকে নিয়ে নাচতে নাচতে মেঠোপথে চলেছে বেলা তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেলো বেলা একা পড়ল না সাথে চন্দ্র ও যার সাথে ধাক্কা খেলো সেও পড়েছে। নিজের ব্যাথা দেখে কিছু বলল না তবে ভাইপো চন্দ্রর ব্যাথায় মটকা গরম হয় বেলার
— এই এই মহিলা আপনি চোখে দেখেন না আপনার জন্য আমার চাদঁ ব্যাথা পেলো।
আঙ্গুল তুলে ভদ্র মহিলার দিকে তেড়ে গেলো। মহিলাটি ভরকে গেলো তবুও বলল — চুপ বেয়াদব মেয়ে আমি তোমাদের ধাক্কা দেইনি তুমিই নাচতে নাচতে আমার উপরে পড়েছ
— আমি প্রতিদিন এভাবেই যাই কই কারো সাথে তো ধাক্কা খাই না
এভাবেই এককথায় দুইকথায় বেশ তর্ক লেগে গেলো তাদের মধ্যে তখনই সেখানে পাখি কোথা থেকে দৌড়ে এলো — বেলা বেলা থাম বইন থাম
— তুমি আমাকে থামতে বলছ পাখি ভাই এনার জন্য আমার চাদঁ ব্যাথা পেয়েছে দেখো কিভাবে কাদছে,,,,,
বলেই চন্দ্রের মাথা উচু করে দেখায় নিজের কাধ থেকে। পাখিরও বেশ খারাপ লাগে চন্দ্রর মুখ দেখে সে এও জানে বেলা একটু চঞ্চল হলেও বেয়াদব না তবে তার এই মালকিন নায়লা শেখ সে একজন একরোখা মহিলা তার জন্য সে যা বলবে তাই ঠিক।
পাখি বেলাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। নায়লার দিকে তাকিয়ে বেলার হয়ে মাফ চাইলো নায়লা বেলা সহ পাখিকে বকতে বকতে চলে গেলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
মাকে গজগজ করতে করতে বাড়িতে ঢুকতে দেখে নাওয়াজ এগিয়ে আসল। উঠোনে পিড়িতে বসে ছিলো সে পাশে হেরিকেন হাতে বই।
— কি হয়েছে আম্মা
মায়ের দিকে এগিয়ে জিজ্ঞাসা করে নাওয়াজ শেখ। নায়লা শেখ গজগজ করতে করতে বললেন
— আর বলিস না খোকা একটা বেয়াদব মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলাম মেয়েটা নিজে ধাক্কা মেরে আমাকেই দোষারোপ করে,,
নাওয়াজ শেখ মাকে শান্ত করে ঘরে পাঠিয়ে পিছনে কাচুমাচু হয়ে থাকা পাখি কে জিজ্ঞাসা করে — কি হয়েছে পাখি??
— ভাইজান বেলা মেয়েটা ভালো একটু চঞ্চল হলেও বেয়াদব না ও ভাইয়ের ছেলেটা ব্যাথা পাইছে তো তাই রেগে গেছিলো।
–হুম বলে পাখিকে বিদায় করে আবার বিড়বিড় করে বলে — বেলা কে এই মেয়ে??
__________________
স্কুলের ওড়না গায়ে চাপিয়ে ঘোমটা দিয়ে বই নিয়ে বের হয় বেলা সাইকেলের পিছনে বই রেখে তা সাইকেলের ক্লিপ আটকে প্যাডেল চালাতে চালাতে চিল্লিয়ে বলল — ভাবী আমি আসছি,,,,
— এই এই থাম থাম
রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এলো চাদনী বেগম হাতে টাকা গুজে দিয়ে বলল — খাবি কিন্তু জমিয়ে রাখবি না,,
বেলা বিস্তর হেসে মাথা নাড়ে টাকা পেয়ে সে বেশ খুশী হয় তার কাছে জমানো অনেক টাকা আছে সেগুলো সহ আজ বাজারে যাবে নতুন ভাবী জন্য সন্দেশ আনবে,,,
সাইকেল মাঠের এককোনে রেখে গাছের সাথে বেধে চলল ক্লাসের উদ্দেশ্যে। ক্লাসে সহপাঠীর পাশে বসতেই নাজমা বলল — জানিস আজকে আমাদের নতুন অংক স্যার আসব
— নতুন আর পুরাতন সেই পড়াবেতো ঐ বীজ গনিত আর উপপাদ্য
— আরে এ যে সে না আমার ভাই শহুরে মাষ্টার
— কিরে তোর ভাইতো ছোট সে আবার মাষ্টার হলো কবে??
— সেতো আমার জেঠাতো ভাই
— ওওও
তাদের কথার মধ্যেই প্রবেশ করে নাওয়াজ শেখ।
নাওয়াজ শেখ প্রবেশ করতেই সেদিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল বেলা এরকম সুদর্শন তার ভাইরা ছাড়া এই গ্রামে আর নেই।।
পরোক্ষনেই বেলার মনে পড়ল এই লোক তার মেঝো ভাইয়ের মতোই সুদর্শন বেশ রাগ লাগল বেলার সে ভেংচি কেটে নিজের পড়ায় মনোযোগ দিলো।
ক্লাসে প্রবেশ করে ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলতে বলতে দেখলো একটা পিচ্চি তার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ ফের ভেংচি কাটল “কেনো ” এটা ভেবেই বেশ কৌতুহলবশত মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায়।
— এই মেয়ে দাড়াও
বেলা এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের দিকে আঙ্গুল তুলে বলল — আমি
— হ্যা তুমি সবাই নিজের পরিচয় দিয়েছে তুমি বলো তোমার নাম কি??
— বেলা
— বেলা শুধু বেলা
— হ্যা
নাওয়াজ শেখ বেলাকে ইশারায় বসতে বলে আজকে মতো ক্লাস নেয়া শুরু করে।। ক্লাসের ফাকে ফাকে খেয়াল করল মেয়েটা তাকে একটু পরপর ভেংচি কাটছে।
ছুটির পর জিজ্ঞাসা করবে ভেবে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়।
ক্লাস শেষে জিজ্ঞাসা করার কথা থাকলেও তার পারল না নাওয়াজ শেখ বেলা ক্লাস করে কোচিং এ চলে গেলো। আর নাওয়াজ শেখ অফিস রুমে।।
এভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুদিন রাস্তায় নায়লা বেগমের সাথে দেখা হলেই কোনো কিছু নিয়ে তাদের তুলকালাম বেধে যেতো আর ক্লাসে নাওয়াজ শেখকে ভেংচি কাটা সব মিলিয়ে বেলার দিন ভালোই চলছিল তবে থমকে গেলো বড় আপুদের বিদায় অনুষ্ঠানে কালো কালারের পাঞ্জাবী পরিহিত নাওয়াজ শেখকে দেখে সেদিন সারা অনুষ্ঠানে বেলা নাওয়াজ শেখকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। কেনো জানি তার দেখতে ভালোই লাগল।।
এভাবেই কেটে গেলো ছয়মাস ক্লাসের সময় ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা কোচিং এ চুমু ছুড়ে মারা চলতে থাকল প্রথম প্রথম নাওয়াজ শেখ অবাক হলেও পরে ভাবে মেয়েটিকে সাবধান করতে হবে।
সেই ভেবে ক্লাস ছেড়ে চলে গেলো নাওয়াজ চলে যেতেই মুচকি হাসল বেলা। বের হয়ে গেলো আজ নাজমা আসে নাই তাই একাই গেলো সাইকেল বের করে কাচা সড়কে আসতেই পিছন থেকে পরিচিত কন্ঠস্বর শুনতে পেলো পিছনে তাকিয়ে সত্যিই দেখলো তার প্রান পুরুষ নাওয়াজ শেখ মোটর সাইকেল নিয়ে এগিয়ে আসল। গম্ভীর স্বরে বলল — কথা আছে তোমার সাথে,,,
বেলা খুশী হয় নাওয়াজ শেখ চিরচারিত গম্ভীর স্বরে বলল — দেখো মেয়ে ছোট্ট একটা পিচ্চি তুমি তোমার ভাইদের তোমাকে নিয়ে অনেক আশা তাদের নিরাশা না করে পড়াশোনায় মনোযোগ দাও
বেলা বত্রিশ পাটি বের করে বলল — আমি পড়া লেখা করিতো মাষ্টার মশাই দেখলেন না অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষায় ক্লাসে সবার থেকে বেশী নাম্বার পেলাম।
নাওয়াজ শেখ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল কি বলবে ভেবে না পেয়ে দাত কিড়মিড় করে সেখান থেকে চলে গেলো। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৫৮
বেলা আর নাওয়াজ শেখ দুজন দুদিকে চলে গেলো। তাদের যাওয়ার দিকে শাণিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একজন সেটা কেউ টের পেলো না।
নাওয়াজ শেখ বাসায় ফুরফুরে মেজাজে ঢুকল। মায়ের ঘরে উকি দিলো নায়লা বেগম আসরের নামাজ পরতেছিল সালাম ফিরাতেই ছেলের উকি দেখতে পায়
— ভেতরে আয় খোকা
মায়ের কাছে ধরা পড়ে নাওয়াজ শেখ মাথা চুলকে ঘরে ঢুকে। জায়নামাজ বসা অবস্থায় মায়ের কোলে শুয়ে পড়ে ইস্তত করে বলে — আম্মা তুমি না আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে অনেক আগে,,,
— হ্যা খোকা তবে তুমিই তো মাষ্টার্স শেষ না করে বিয়ে করতে চাওনি।
— এখন চাইছি
ছেলের কথায় অবাক হয় নায়লা শেখ বুঝতে পারে নিশ্চয়ই কোনো ঘাবলা আছে তবে শান্ত স্বরে বলল — মেয়েটা কে আব্বা??
মায়ের কথা শুনে বিস্তর হাসল নাওয়াজ মায়ের হাতে চুমু খেয়ে বলল — দ্যাটস হোয়াই আই লাভ ইয়্যু সো মাচ,, মেয়েটার নাম বেলা!! আমি এখন যেই স্কুলে পড়াই সেখানে পড়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী।
নায়লা চুপচাপ ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ছেলের কথা শুনছে আর ক্লাসে করা বেলার পাগলামির কথা শুনে হাসছে। সে মনে মনে ভেবেও নিয়েছে পাখিকে নিয়ে মেয়েটার বাড়িতে যাবে সব ঠিক থাকলে মেয়ের মেট্রিক পরীক্ষার পরেই বিয়ে দিয়ে দিবে।
__________________
সকাল সকাল পাখি গরুদের নিয়ে বের হতেই পিছন থেকে ডাকল নায়লা শেখ — পাখি শোন
পাখি গরুদের বাশের আড়ার সাথে বেধে নায়লার সামনে আসল — জে খালাম্মা
— এই গ্রামে বেলা নামের মেয়ে আছে কোন বাড়ির মেয়ে সে
— খালাম্মা বেলা নামের মাইয়া আছে দুই তিনজন তয় আপনে কারে খুজেন
— খোকার স্কুলে পড়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে মেয়েটা মেয়েটার ভাইরা মনে হয় বড় বাজারে কাপড়ের দোকানে চাকরী করে,,,??
পাখি এবার বুঝল কার কথা বলছে নায়লা শেখ সে ঢোক গিলে বলল — সেদিক যেই মাইয়াডার লগে আপনের ঝগড়া হইল এই সেই
থমকে গেলেন নায়লা শেখ সেই বেয়াদব মেয়েটাকে সে কোনো মতেই নিজের ছেলের বউ করতে পারবেন না। নায়লা শেখ চতুর বুদ্ধিমতি মহিলা সে কোথাও না যেয়ে পাশেই দেওরের ঘরে গেলেন দেওরের বড় মেয়ে নাজমার সাথে বিয়ে ঠিক করে আসলেন যার ঘুর্ণাক্ষরেও কেউ টের পেলো না সাথে বলে দিলেন একথা যেনো নাওয়াজ শেখ না জানে।
আজ ফুরফুরে মেজাজেই স্কুলে এসেছে নাওয়াজ শেখ। আজও বেলার পাগলামি দেখেছে তবে অন্যান্য দিনের মতো চোখ না রাঙিয়ে মুচকি হেসে প্রশ্রয় দিলো। ইশারায় বলল স্কুল শেষে অপেক্ষা করতে কালকের সেই জায়গায়।
প্রেমিকে সাড়া পেয়ে বেলার প্রেমিকা সত্তা ছটফটিয়ে ওঠে গুনতে শুরু করে কখন ক্লাস ও কোচিং শেষ হবে।
— আজ মাষ্টার মহাশয়ের এই অধমার প্রতি এতো দরদ
বেলার কথা শুনে মুচকি হাসে নাওয়াজ শেখ। বেলার দিকে ঝুকে বেলার চোখে চোখ রেখে বলল
— যতই হোক পুরুষ মানুষ তো একজন পাগলাটে রমনীর আকাঙ্খা ফিরিয়ে দিতে পারিনি,,,
বেলা নাওয়াজ শেখের ঐ চোখে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না নজর ঝুকাতে বাধ্য হয়। তা দেখে দুষ্টু হাসে নাওয়াজ শেখ ফিসফিসিয়ে বলে — কেনো বেলারানি এতোদিনের সাহস কোথায় গেলো??
— আআপনি তো এতোদিন এমন দৃষ্টিতে তাকাননি তাই নজর সরানোর প্রয়োজন পরেনি,,
— কেমন দৃষ্টি??
— অন্তরে ঝড় তুলার মতো দৃষ্টি হৃদয় সত্তা কাপিয়ে তোলার দৃষ্টি
বলেই বেলার সাইকেল নিয়ে দৌড়ে চলে যায়। নাওয়াজ শেখ সেদিকে তাকিয়ে বিস্তর হাসে এই মেয়েটাকে যত দ্রুত সম্ভব নিজের কাছে নিয়ে আসা দরকার।
মায়ের হাতে তেল মালিশে আরামে চোখ মুদে আসছে নাওয়াজ শেখের নায়লা বুঝল ছেলে ঘুমের ঘোরে তাই কথাটা উঠালো।
— মেয়ে তারা মেট্রিক পাশের আগে দিবে না খোকা তুমি কি বলো??
— মেট্রিক পাশের পরই সই
— তাহলে বিয়ের কথা পাকা করে মেট্রিকের পড়ে একটা ডেট দেই কি বলো খোকা
— দাও বলেই ঘুমের ঘোরে টলতে টলতে নিজের ঘরে চলে গেলো। নায়লা বেগম জানে ছেলের মুখ থেকে যখন একবার কথা বের করেছে তখন ছেলে কখনও কথার বরখেলাপ করবে না।
একমাস পর
কিছুদিন পরে বেলার মেট্রিক পরীক্ষা তাই সে খুব ব্যস্ত তবে এই ব্যস্ততার মাঝেও প্রণয় পুরুষের দিকে তাকাতে ভুলে না নাওয়াজ শেখও তাই। দুইজনের মধ্যে বেশ ভালো একটা বন্ধন তৈরী হয়েছে নাওয়াজ শেখ আছে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আশায়।
আজ বেলার প্রথম পরীক্ষা ভাগ্যগুনে নাওয়াজ শেখের আজ বেলাদের সাথে যাবার কথা উঠেছে। প্রথম পরীক্ষায় স্যাররা হল পযর্ন্ত পৌঁছে দেয় সেটাই নাওয়াজ শেখের ভাগ্যে পড়েছে। নাওয়াজ শেখও খুশী মনে পালন করেছে । বেলাকে হলে পৌঁছে দিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যেতেই সামনে একটা লোককে দাড়ানো দেখে ভরকে যায় নাওয়াজ শেখ।
মাথা উঠিয়ে দেখে লোকটাকে — কিছু বলবেন
লোকটা বলল না করল মুঠো শক্ত করে নাওয়াজ শেখের নাক বরাবর মারল এক ঘুষি। নাওয়াজ শেখ নাকে হাত দিয়ে দুই কদম পিছনে চলে গেলো।
— হোয়াট দ্য হেক,,, মারলেন কেনো??
— আমার বোনকে আপনি ডিস্টার্ব করছেন কেন??
— হোয়াট কে আপনার বোন??
নাওয়াজ শেখের কথা শেষ হতে না হতে পরপর আরো কয়েকটা ঘুষি পড়ল নাওয়াজ শেখের নাকে এবার নাওয়াজও হাত চালালো দুইপক্ষই সমানে সমানে দিয়ে চলেছে। তখনই কামরুল সাহেব কোথা থেকে এসে পারভেজ সাহেবকে টেনে নিয়ে গেলো পারভেজ যাওয়ার আগে নাওয়াজ শেখকে শাষিয়ে গেলো তার বোন থেকে দূরে থাকে যেনো নাহলে জবাই করে ফেলবে।।
নাওয়াজ শেখ লোকটার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে সে কার বোনের সাথে এমন কথা বলল সে শুধু বেলা ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলে না তাহলে এই লোকটা কি বলে গেলো। ভাবনায় পড়ে গেলো
তবে পাখির কারণে তা স্থগিত রাখা হলো।
— আহহ মা জ্বলছে
নায়লা শেখ গম্ভীর চোখে একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে ফের তুলায় ডেটল ভরে ক্ষত পরিষ্কার করতে লাগলেন।। মাঝে মাঝে ফু দিথে ভুললেন না
ছেলেকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে পাখিকে ডেকে পাঠালেন।
পাখি আসলে তার কাছে গম্ভীর স্বরে আজকের ঘটনা জানতে চাইলেন।
পাখি নিজের জানাটুকুই বলল সাথে বলল পারভেজ বেলার ভাই। সব শুনে নায়লা শেখ চুপ থাকলেন বুঝতে পারলেন ছেলে বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে মেয়েটার সাথে একটু বেশী ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
বলতে বলতে পরীক্ষা শেষ হয়েছে বেলার। পরীক্ষা দিয়ে বেলা হাফ ছেড়ে বাচল তবে খেয়াল করল কয়েকদিন ধরে বাড়ির পরিবেশ গুমোট থাকলেও আজ নেই। বেশী চিন্তা না করে দিলো এক লম্বা ঘুম।
হইচইয়ের শব্দে ঘুম ভাঙে বেলার উঠোনে আসতেই বড় বুবুকে দেখে দৌড়ে তার কাছে যায়। কতশত কথা হয় দুই বোনের মধ্যে।
— এই বেলা যা তো শিমুলের কাছে যেয়ে ব্লাউজের মাপ দিয়ে আয়।
— কেনো ভাবী??
চাদনী বেগমের কথায় বেলা জিজ্ঞাসা করল। তখনই রোজিনা বেগম বলল — ও কি ননদীনি শাড়ি পড়তে হলে ব্লাউজ তো লাগবেই।। শাড়ি ছাড়া বিয়ে হবে নাকি??
মেঝো ভাবীর কথায় অবাক হয় বেলা — বিয়ে কার বিয়ে
— তোর বিয়ে কেনরে বেলা হবি না আমার ভাইয়ের বউ??
চাদনী বেগমের কথায় অবাক হয়। হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ভাবীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
_________________
প্রতিদিনের দেখা করার স্থানে দাড়িয়ে আছে নাওয়াজ শেখ তবে আজ বেলা আসেনি ছটফটায় নাওয়াজ শেখ। মাগরিবের আজান দিতেই আর না পেরে বেলার বাড়ির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মোটর বাইক চালিয়ে দশ মিনিটের মাথায় বেলাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়। সেখানের পরিস্থিতি দেখে তার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে।
কোনো রকম টলতে টলতে বাইকে বসে বাইক টান দেয়। বাড়ির সামনে এসে হনহন করে মায়ের যায়
— আম্মা আজ আমার বেলার বিয়ে তুমি যদি বিয়ে ঠিক করে থাকো তাহলে আমাদের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন নেই কেনো??
নায়লা শেখ হাতে বইখানা বন্ধ করে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল — আমি কখন বললাম যে তোমার বিয়ে আমি বেলার সাথে ঠিক করেছি,,
— মানেহহ
— তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে নাজমার সাথে পাচঁ দিন পরেই তোমার বিয়ে প্রস্তুতি নাও,,
— আম্মাহ কি বলছো তুমি আমি নাজমাকে কোনো সময় ছোট বোন ছাড়া অন্য নজরে দেখিনি,,
— বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নাওয়াজ শেখ মায়ের পায়ের কাছে বসে পড়ল। পা ধরে আকুতি মিনতি করে বলল — এমন করো না আম্মা ঐ ষোড়শী মেয়েটা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে
চুপ থাকে নায়লা শেখ তারপর বলল — আমি নাজমার বাবা মাকে কথা দিয়ে ফেলেছি তুমি কি চাও আমার কথার বরখেলাপ হোক??,
— আম্মা এমন করোনা আম্মা
তাদের কথার মাঝে পাখি আসল দরজায় করাঘাত করে বলল — খালাম্মা বেলা এসেছে নাওয়াজ ভাইয়ের লগে কথা কইতে চায়,,
পাখির কথায় দুজনেই তার দিকে তাকায়। পাখি ইস্তত করে আবার বলল — মেয়েটা অনেক জোড় করেতাছিল আবার কনতাছিল তাইইই
নাওয়াজ শেখ দৌড়ে যেতে নিলে পিছন থেকে নায়লা শেখ গমগমে স্বরে বলল — মনে রেখো এই বাড়ির চৌকাঠ পেরোলে আমার মৃত মুখটাও দেখার ভাগ্য তোমার হবে না।
থেমে গেলো নাওয়াজ শেখ পিছিয়ে নায়লা শেখের পায়ের কথা বসে বলল — তুমি আমার মা তোমার বদদোয়া নিয়ে ওকে নিয়ে সুখে থাকতে পারব না তাই আজ ঐ ষোড়শীর উম্মাদনা তার আবেগ সবই তোমার পায়ে ঠেলে দিলাম আম্মা তবে একটা কথা মনে রেখো ঐ ষোড়শীর উম্মাদনা সচোখ্যে থাকলেও আমার উম্মাদনা অলক্ষ্যে
নাওয়াজ শেখের শেষের কথাটা বুঝতে পারল না নায়লা বেগম তবে খুব একটা চিন্তাও করল না নাওয়াজ মা পাগল ছেলে। পর সবই ঠিক হয়ে যাবে।
ক্রন্দন মুখে নাওয়াজ শেখের সামনে দাড়িয়ে বেলা নাওয়াজ শেখকে দেখে তাকে ঝাপটে ধরতেই ঝাড়া দিয়ে হাত ছুটায় নাওয়াজ শেখ গমগমে স্বরে বলল — এখানে কেনো এসেছো??
— মাষ্টার মহাশয় আজ আমার বিয়ে প্লিজ আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলুন আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি
বেলার কথা শুনে নাওয়াজ শেখ একপলক তাকায় তার দিকে শান্ত স্বরে বলল — আম সরি বেলা তোমার সাথে এতোদিন আমার যাই ছিলো সবটাই নিছক মজা ছিলো। আমি সিরিয়াস ছিলাম না আর আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে নাজমার সঙ্গে।
বলেই চিল্লিয়ে নাজমাকে ডাকল নাজমা আসতেই তার হাত ধরে বলল — নাজমা বংশীয় মেয়ে নম্র ভদ্র ওর সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,,,
নাওয়াজ শেখের কথা শুনে বেলা দুই কদম পিছিয়ে যায়। ফের এগিয়ে নাওয়াজ শেখের হাত ধরতে গেলে নাওয়াজ শেখ এমন ভাবে ঝাড়া দেয় যেনো কোনো আর্বজনা।
— আআমাকে এতো বড় শাস্তি দিবেন না মাষ্টার মহাশয়। আমি বুঝতে পেরেছি সেদিন আমার মেঝো ভাই আপনাকে মেরেছে তাই অভিমানে এমন বলছেন তাই না আআমার ভাই আপনার কাছে মাফ চাইবে সে আমাকে অনেক ভালোবাসে। বলছি মাফ চাইবে
— তোমাদের মাফ কে চায় ইডিয়েট। এমনিতেও ছোটলোকদের কাছে আর কি আশা করা যায়। যাই হোক পাচঁ দিন পরে বিয়ে অবশ্যই আসবে কিন্ত,,
বলেই নাজমার হাত ধরে ভিতরে চলে গেলো। ভিতরে গিয়েই নাজমার হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো। ঐ দিকে বেলা চিল্লিয়ে বলছে — আমাকে এতো বড় শাস্তি দিবেন না মাষ্টার মহাশয় আমি নিঃশেষ হয় যাব এতো বড় শাস্তি দিবেন না।
বেলার কান্নায় পাখির ও খারাপ লাগে তবে কিছু বলার নাই সে এই বাড়ির কাজের লোক। বেলার মাথায় হাত বুলাতে বেলা মাথা তুলতেই বলল — এইখানে থাইকো না বইন চইলা যাও এরা বড়লোক দয়া মায়াহীন।
বেলা উঠে দাড়ায় এলোমেলো ভঙ্গিতে হাটতে হাটতে বলল — ধোকাবাজ সবাই ধোকাবাজ,,
হোচট খেয়ে ধান খেতের চিপায় গড়িয়ে পরল।।
#চলবে