#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৬৩
রাত তিনটা নিশি জাগা রাত পাখির মতো জেগে আছে চন্দ্র পুনম। কাল শুক্রবার সেটার পুরো ফায়দা উঠিয়েছে চন্দ্র তবে অন্যান্য দিনের মতো আজ পুনম ছটফট করেনি উল্টো আলিঙ্গন করেছে তখন চন্দ্র অবাক হয়েছে বলেছে
— আজ এই অধমের প্রতি এতো দয়া কিভাবে?
— কিসের দয়া আমার স্বামী আমাকে এতো ভালোবাসে আমি তাকে একটু ভালোবাসতে পারব না।
ফাজিল হেসে চন্দ্র বলল — তাহলে আজ থেকে ভালোবাসার পরিমাণও বাড়াতে হয় তাহলে। আমারও তো ইচ্ছে করে জোহরা বিবির ভালোবাসা পাওয়ার।
পুনম চোখ রাঙিয়ে চন্দ্রর বুকে কিল দেয়। হাসে চন্দ্র।
ফজরের আজানের একটু আগে চন্দ্র তোয়ালে পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ট্রাউজার ও টিশার্ট পরে নিচে যায় তার জোহরা বিবির আবদার এখন তার খিদে লেগেছে। সিড়ি দিয়ে নামছে চন্দ্র কোলে পুনম।
রান্নাঘরে গিয়ে পুনমকে একটা টুলে বসিয়ে চুলা জ্বালায়। নিজের জন্য কফির পানি বসিয়ে পুনমের জন্য মিল্কসেকের ইনগ্রেডিয়েন্স রেডি করে
দুধ কলা বাদাম একে একে সব কিছু পরিমাণ মতো ঢেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে। গ্লাসে চারটা বরফ কীউব ঢেলে মিক্সারটা গ্লাসে ঢালে। পাশাপাশি নিজের কফিটাও করে ফেলে গ্লাস দুইটা ট্রেতে রেখে পুনমকে কোলে নেয়।
পুনম ট্রেটা নিজের হাতে নেয়।
আবার তারা নিজেদের ঘরে যায়। বারান্দায় ফ্লোরে বসে দুইজন কতশত কথা বলতে থাকে হঠাৎই চন্দ্রর কিছু মনে পরতে পুনমকে জিজ্ঞাসা করল — জোহরা,, থাইরয়েডের ঔষধটা খেয়েছিলে রাতে??
— হুম আপনার সামনেই না খেলাম,,
চন্দ্র নিশ্চিত হয় নাহলে কয় দিন পরে মেয়েটা ব্যাথায় আবার কাতরাতো। তাদের কথোপকথনের মাঝে আজান দিলে দুইজন ওযু করে আগে পিছে দাড়ায় আজ পুনমের আবদারে চন্দ্র ইমামতি ও করে।
আজ দুজনের মুনাজাতটাও বেশ দীর্ঘ হয় চন্দ্র চায় জোহরার সুস্থতা আর পুনম চায় তাদের ভালোবাসার পরিপূর্ণতা একটা সন্তান।
__________________________
চন্দ্রর চোখ ফাকি দিতে দিতে কেটে গেছে অনেক দিন। তবে চন্দ্রর চোখ ফাকি দিতে পুনমকে বেশ কসরত করতে হয়েছে। যেদিন যেদিন ড্রিংকস জাতীয় কিছু আনে সেদিন তখনই সেটা খায়না পুনম। সেটা রেখে রেনু অথবা মিনুকে দিয়ে বাজার থেকে সেরকমই আরেকটা আনিয়ে রাখে আর ঐ বোতল তাদের সেখানে ফেলে আসতে বলে।
দুইজনও বেশ ভালোভাবে পুনমের আদেশের পালন করে।
চন্দ্র যখন রাতে পুনমকে তার আনা ড্রিংকস খেতে দেখে তখন নিশ্চিন্ত হয়।
মুক্তির হঠাৎই ব্যাথা উঠায় কামরুল সাহেব ও পারভেজ সাহেব তাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। তাদের সাথে চাদনী বেগমও গিয়েছে। পুনম ইহানকে খবর দিয়ে দিয়েছে।
বাসার মধ্যে মায়ের ঘাড়ে মাথা রেখে পুনম বসে আছে তার মাথা কেমন ঝিমঝিম করছে পেটে চিনচিনে ব্যাথা করছে।
— খারাপ লাগছে মা,,,
পুনম মাথা নাড়ে রোজিনা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ইদানীং তার একটাই চাওয়া মেয়েটার সুস্থতা ও তার কোল আলো করে যেন একটা সন্তান আসে। রোজিনা উগলে আসা কান্নাটা গিলে ফেলে।। মেয়েটা অনেক আগে থেকেই রক্ত শূন্যতায় ভুগছে আর সে মা হয়ে কোনো খেয়ালই করতো না সেই পশ্চাতাপে রোজিনার জায়নামাযে অশ্রু ঝড়ে।
চন্দ্রর ফোন আসে — আসসালামু আলাইকুম
— ওয়ালাইকুমুস সালাম,, মুক্তিকে কোন হাসপাতালে নিয়েছে,,??
— এনাম মেডিক্যাল নিয়েছে আর হ্যা লিমন ভাইকেও একটা ফোন দিয়েন।
— আচ্ছা
ফোন রেখে দেয় পুনম আর এই অসুস্থতার খবর চন্দ্র জানে না সকাল থেকেই তার খারাপ লাগছে তবে সেটা লুকিয়ে চন্দ্রকে রেডি করিয়ে ভার্সিটি পাঠিয়েছে।
কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে মুক্তির সি সেকশন করা লাগছে পানি ভাঙ্গায় শরীর বেশী খারাপ হয়েছে গিয়েছে।
ডাক্তার এখনো অপারেশন থিয়েটারে বের হয়নি।
কথা শেষ করে রোজিনা। পাশে তাকিয়ে দেখে পূর্ব ও পুনম একসাথে ঘুম রোজিনা উঠে রান্নার জোগাড়ে লাগে।
হাসপাতালে খাবার নিয়ে যাবে তাই সেই মতোই রান্না করে সেতো আর থাকতে পারবেনা তাই চাদনী বেগম থাকবে।
পূর্ব ও পুনমকে নিয়ে রেনু মিনুকে বাসার খেয়াল রাখতে বলে রোজিনা হাসপাতালে যায়।
রিক্সা থেকে নেমে রিসিপশনে জিজ্ঞাসা করে যায় এদিকে।
ওটির থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে জানায় মুক্তির ও ছেলে হয়েছে।
— আলহামদুলিল্লাহ্
রিশান চন্দ্র একত্রে দাড়িয়ে একটু পরে বাচ্চাটা আসলে সবাই তাকে নিয়ে হুরোহুরি শুরু করে। মুক্তিকে আপাতত অবজারবেশন রুমে রাখা হয়েছে। রাতে কেবিনে শিফ্ট করবে। কারো যাওয়ার অনুমতি নেই শুধু ইহান জোর করে গিয়েছে।।
সবাই আনন্দে থাকলেও পুনমের অস্বস্তি লাগছে। পেট ব্যাথায় মনে হচ্ছে বমি চলে আসছে।
সে ওয়াশরুমে গিয়ে গরগর করে বমি করে ফেলে। চন্দ্র ছুটে যায় সেদিকে। পুনমের পিঠে মালিশ করতে থাকে পরপর চারবার বমি করে পুনম ক্লান্ত মাথা চন্দ্রের বুকে এলিয়ে দেয়।
— জোহরা তুমি এই কয়দিন থাইরয়েডের ঔষধটা খাওনি।
চন্দ্রের প্রশ্নে ঢোক গিলে পুনম। লাষ্ট দুই সপ্তাহ আগে তার সার্কেল ছিলো সেটা মিস গেছে তাই ঔষধটা খায়নি পুনম যদি সে যেটা ভাবছে তাই হয় তাহলে যদি বাচ্চাটার ক্ষতি হয়।
— জোহরা কিছু জিজ্ঞেস করছি
চন্দ্রের কথায় ভাবনা ভাঙ্গে পুনমের। কিছু বলে না চন্দ্র পুনমকে হাত মুখ ধুয়িয়ে বের হতেই রোজিনা পারভেজ সাহেব একজোট জিজ্ঞাসা করে
— পেট ব্যাথা কমেছে আম্মা
তাদের কথা শুনে অবাক চন্দ্র সে গম্ভীর স্বরে বলল — তোমার পেটেও ব্যাথা ছিলো কখন থেকে??
পুনম চুপ থাকে। চন্দ্র এবার ঝাড়ি মারে — কথা বলো না কেনো??
— ককাল রাত থেকে
— এই কাল রাত থেকে ব্যাথা আর তুই এখানো আমাকে বলিস নি আমি বারবার জিজ্ঞাসা করলেও চেপে গেছিস। চল
বলেই পুনমকে টানতে নিয়ে গেলো তার রেগুলার ডাক্তারের কাছে। গাইনি ও প্রসূতি ডা: জোহরা মুনমুন
— কি সখি কি অবস্থা??
পুনম চন্দ্রের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করল। ডাক্তার দুইজনের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রকে বলল — ভাই চন্দ্র একটু বাইরে যাও তো।।
চন্দ্র একপল পুনমকে দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
— একটু আগেই তোমার ননদের একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে দেখেছো??
— জ্বী আপু
— পুনম কি হয়েছে খুলে বলো?? ডাক্তার হিসেবে না বড় আপু হিসেবেই বলো জানো তো চন্দ্রের ভার্সিটি কলিগের বড় বোন আমি,,
পুনম কিছু পল চুপ থাকে এরপর একেএকে সব খুলে বলে। চন্দ্রের চুপি চুপি গর্ভনিধোরোক পিল খাওয়ানো সব কিছুই সেটা মিস দেয়া সবকিছুই।
পুনমের কথা শুনে ডাক্তার স্বশব্দে হেসে দিলো।
— দুই জামাই বউ ভালোই লুকোচুরি খেলেছো যাই হোক তোমার সন্দেহ ঠিক কিনা দেখি বলেই
বেল প্রেস করে কাউকে ডেকে আনায়
— প্যাথলজি বিভাগ থেকে কাউকে আসতে বলো।
মেয়েটি চলে যায়। তার কয়েক মিনিটের পরেই প্যাথলজি বিভাগ থেকে একটি মেয়ে আসে কেবিনে ঐ দিকে চন্দ্র অস্থির হয়ে এদিক ওদিক পায়চারি করছে।
তখনই পারভেজ ও রোজিনা বেগম এদিকে আসে
— চন্দ্র বাবা ডাক্তার কি বলেছে??
— কিছু বলেনি এখনো চাচ্চু,, তোমরা চলে যাও বাসায় আমি আছি আব্বু আম্মু কি এখন চলে যাবে,,
— হ্যা ভাবী আবার পরে আসবে মুক্তির শাশুড়ি আপাতত ওর কাছে আছে। আবার রুপশাও এসেছে।।
— আচ্ছা তোমরা চলে যাও,,,
পারভেজ সাহেব আরো কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। এরমধ্যে পুনমের ব্লাড ও ইউরিন নিয়েও চলে গেছে। ডাক্তারের রেফারেন্সে একঘন্টার মধ্যেই রিপোর্ট দিবে।
ডাক্তারের অ্যাসিসট্যান্ট এসে চন্দ্রকে বলল — আপনাকে ম্যাম ডাকছে,,
চন্দ্র সেকেন্ডের মাথায় কেবিনে ঢোকে।
— ধীরে সুস্থে প্রবেশ করো চন্দ্র তোমার বউ আমি খেয়ে ফেলব না।
ডাক্তারের রসিকতায় ধ্যান নেই চন্দ্রর সে পুনমকে জিজ্ঞাসা করল — পেট ব্যাথা কমেছে
— জ্বী
— আপু কি বুঝলেন?? ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল।
— ভুলটা তোমারও আছে চন্দ্র
#চলবে
#পূর্ণিমায়_বিলীন_চন্দ্র
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৬৪
— মা হওয়া একটা ব্লেসিং আমাদের নারীদের জীবনে চন্দ্র সংসার জীবনের একটা পরিপূর্ণতা। প্রত্যেকটা নারীই চায় মা হতে। তাই পুনমের এই চাওয়াটা অযৌক্তিক না চন্দ্র তুমি পুনমের বীনা অনুমতিতে ওকে সেটা থেকে বাধা দিতে পারো না।
ডক্টরের কথা শুনে চন্দ্র মাথা কয়েক সেকেন্ড থম মেরে থাকলো ফেল বলল — মানছি ভুলটা আমার ছিলো তবে ওকে আমি বুজিয়েছি অনেকবার ও আমার একটা কথা মানতে রাজী না। যেখানে ওর জন্য আমি কোনো কিছু বরদাস্ত করি না সেখানে ওর জানের বিনিময়ে সন্তান আমি চাই না।
এবার পুনম ঝরঝরিয়ে কেদেঁ দিলো এরমধ্যেই রিপোর্ট নিয়ে কেবিনে নক করল মেয়েটি
— ম্যাম রিপোর্ট এসেছে,,
রিপোর্ট খুলে চেক করল ডাক্তার। পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — ইটস পজিটিভ তুমি যা আন্দাজ করেছিলে তাই তবে থাইরয়েডের ঔষধটা মিস দিও না ঐটার সাথে আরো কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি।
চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — চন্দ্র কাল এসে বাকি টেষ্ট গুলো করিয়ে নিয়ে যেও ব্লাডের হিমোগ্লোবিন আলহামদুলিল্লাহ্ টেন আছে বাট পুরো বেড রেষ্টেই রেখো। অন্তত তিনমাস পযর্ন্ত আর কাল তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,,
পুরো কথায় চন্দ্র ছিলো নিরব। সে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী বুঝেছে কি পজিটিব এসেছে। তবে সে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। আর দেখাবে না সে বুঝেছে এই কয়দিন পুনম কেনো খাবার আনলেই বাহানা করতো। সে বুঝেছে সে অনেক আগেই ধরা পরে গিয়েছিল পুনমের কাছে তবে মেয়েটা সেটা তাকে ঘুর্নাক্ষরে টের পেতে দেয়নি।
বাসায় এসে চন্দ্র হনহন করে নিজের ঘরে চলে গেলো সঙ্গে পুনম। কাউকে কিছু বলতে দিলো না। ঘরে গিয়ে পুনমের হাত ছাড়ল। টেবিলের চেয়ার টেনে পুনমকে বসাল তার সামনে হাটু গেড়ে বসে তার হাত জোড়া আকরে শান্ত কন্ঠে বলল
— ভুল দুইজনেরই ছিলো আমি তোমাকে জানাইনি তুমি আমাকে জানাওনি শোধবোধ,,, থেমে গেলো চন্দ্র ফের বলল — কাল রিপোর্টে যদি নেগেটিভ কিছু আসে তুমি বাচ্চাটা এবোর্ট করে ফেলবে,।
চন্দ্রর কথা শুনে পুনম হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল তারপর নিনাদ কন্ঠে বলল — নাহ তা আমি কোনোদিন পারব না।
— এটাই তোমার শেষ কথা??
— হ্যা
চন্দ্র ছেড়ে দিলো পুনমের হাত পুনমের দিকে তাকিয়ে ছিলো কয়েক মিনিট সেই দৃষ্টিতে চোখ মেলানোর সাহস হয়নি পুনম নজর ঝুকাতে বাধ্য হয়।
চন্দ্র বারান্দার দিকে যাওয়ার আগে ঠাস করে লাথি মার মিনি টেবিলটাতে। ফ্লাওয়ার ভাজ সহ টেবিলটা উল্টে পরে গেলো কেপে উঠল পুনম চন্দ্রের এমন রাগ কখনও দেখেনি পুনম শান্তশীষ্ট দেখেছে সদা। পুনমের সাথে তো কোনোকালে রাগেনি চন্দ্র রাগী চন্দ্রকে দেখার ভাগ্য তার এখনো হয়নি।
চন্দ্রর ঘরের থেকে আওয়াজ আসলে সবাই দৌড়ে আসে উপরে দরজায় চাপর মেরে কামরুল সাহেব বলল — চন্দ্র এই চন্দ্র কি হয়েছে??
ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসল না। আজ প্রায় তিন বছর পর অশান্ত চন্দ্রকে দেখছে কামরুল সাহেব ও চাদনী বেগম। এবার চাদনী বেগম ডাকল ছেলেকে!! পারভেজ ও রোজিনা বেগম হতবাক দৃষ্টিতে দেখছে তাদের কেমন ভয়ে ভয়ে আছে।
পারভেজ সাহেব কামরুল সাহেবকে সামলায় তাকে বলল — থামেন ভাই কি হয়েছে হয়তো দুইজনের মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছে ঠিক হবে।
রোজিনা বেগম ও চাদনী বেগমকে বুঝায়। তবে তারা শান্ত হতে পারছে না। দুইজনকে বুঝিয়ে নিয়ে যায় পারভেজ সাহেব রোজিনা বেগম। মুক্তির কাছেও যেতে হবে ভেবে তারা আপাতত সরে যায় তবে মনের খচখচানি কমাতে পারে না।
সেই যে ঘরে ঢুকেছে দুজন একজনকেও ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। রাত আটটা বাজে চাদনী বেগম গিয়েছে হাসপাতালে কামরুল সাহেব দোকানে গিয়েছে সন্ধ্যায় পারভেজ সাহেব তো দুপুরের দিকেই চলে গেছে তাদের আসতেও দশটা পার হবে। টেনশনে পড়ে গেলো রোজিনা বেগম। মেয়েটা সেই সকাল থেকে না খাওয়া ঔষধটাও খায়নি।
আর না পেরে তিনি উঠে গেলেন চন্দ্রদের ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললেন — চন্দ্র বাবা খাবি না তোরা সেই সকাল থেকে না খাওয়া
ঘুমিয়ে গিয়েছিল চন্দ্র হঠাত শাশুড়ির কথায় ঘুম হুরমুর করে উঠে ঘরে যেয়ে দেখে পুনম গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে চন্দ্র নিজের ঘুম দেখে নিজেই অবাক রাগ কমানোর জন্য বারান্দায় এসেছিল যাতে রাগে পুনমকে কিছু না বলে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টের পায়নি। হয়তো ক্লান্তি অবসাদে ঘুম এসে গেছে।।
চন্দ্র গেট খুলে রোজিনাকে বলল — চাচী পুনম ঘুম আমিও ঘুমিয়ে ছিলাম ওকে নিয়ে আসছি খেতে দাও
চন্দ্রকে দরজা খুলে কথা বলতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে রোজিনা বেগম চন্দ্রকে বললেন
— আয় বাবা
চন্দ্র পুনমের দিকে তাকায় চোখের পানি শুকিয়ে গেছে কেদেঁছে অনেক্ষণ।
— জোহরা জোহরা,,,,
পিটপিট চোখে তাকায় পুনম চন্দ্রকে দেখে বরাবরের মতো মিষ্টি হাসি দেয়।
— উঠো সকাল থেকে না খাওয়া তুমি
— নিয়ে যান
হাত বাড়িয়ে আহ্লাদী স্বরে বলল। চন্দ্র বিনা বাক্যে নিয়ে গেলো ওয়াশরুমে একটা কথাও বলল না।
ওয়াশরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিতে দিতে তার মনে পরল দুপুরের কথা। মন খারাপ হয়ে যায় তার। আর যাই হোক সে তার সন্তানকে মারতে পারে না কোনোদিনও পারবেনা পুনম।
ফ্রেশ হয়ে বের হয় পুনম। সে বের হতেই চন্দ্র যায় তবে যাওয়ার আগে বলে যায় — নিচে যাবে না একদম আমি খাবার নিয়ে আসব।
পুনম চন্দ্রর কথা উপেক্ষা করে নিচে চলে যায়। চন্দ্র পুনমকে ঘরে না দেখে নিচে নামে শান্ত কন্ঠে বলল — আমি নামতে বারন করেছিলাম না
তখনই কামরুল সাহেব বাসায় ঢুকে। ঢুকেই ছেলের দিকে তার নজর যায় এমন শান্ত চন্দ্রকে চিনে তারা। তবে সমস্যা কোথায় সেটা বুঝতে পারছে না।।
পুনম কিছু না বললে চন্দ্রও চুপচাপ খেতে বসে খেয়ে দেয়ে কোনো রকম উঠে যায় চন্দ্র। তার খাওয়া দেখে অবাক রোজিনা এতো অল্প খাওয়া চন্দ্র কোনোদিনও খায়নি কি হয়েছে আজ
— এতো অল্প খেলি কেনো বাবা??
— অনেক্ষণ ঘুমিয়েছি চাচী এজন্য ভালো লাগছে না!!
বাইরের সাথে মিলিয়ে আজ বাড়ির পরিবেশটাও কেমন শান্ত মনে হচ্ছে ঝড় আসার পূর্বাভাস।।
কোনোরকম রাতটা কেটে গেলো সকালে চন্দ্র পুনমকে নিজের হাতে খাইয়ে হাসপাতালে গেলো আজ তার ক্লাস আছে বারোটার দিকে তাই সকালেই সকল টেস্ট করিয়ে আসবে।
মুক্তিকে দেখে মাকে নিয়ে চন্দ্র বের হয় ডাক্তারের সাথে কথা বলে সকল টেস্ট করায় চন্দ্র। বিকালে রিপোর্ট দিবে বিকালে ডাক্তার থাকে না তাই কাল রিপোর্ট দেখাবে তারা। পুনমের এতো টেষ্ট করতে দেখে চাদনী বেগম অবাক বনে যায়।। চন্দ্র তাদের নামিয়ে দিয়েই চলে যায়।
বাসায় আসতেই পুনমকে চেপে ধরে চাদনী বেগম। — কি হয়েছে পুনম এতো এতো টেস্ট করালি ক্যান আবার আল্ট্রা ও করালি,,
ঢোক গিলল পুনম সাথে লজ্জাও পেলো মাথা নিচু করে বলল — তুমি দাদী হতে চলেছো,,,
খুশীতে পুনমকে জড়িয়ে ধরে চাদনী বেগম রোজিনা বেগমও খুশী হয় মেয়েটার কাতরতা দেখে এতোদিন। আল্লাহর কাছে কত ফরিয়াদ করেছে মেয়ের সুখের জন্য তিনিও পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে তাদের দেখাদেখি পূর্ব পুনমের কোলে ঢুকে পরে হেসে দেয় তারা।
— এতো খুশীর খবর চন্দ্র জানে
চাদনী বেগমের কথায় পুনমে ঢোক গিলে বলল
— জানে কাল জেনেছে,,,,
রোজিনা বেগম অবাক স্বরে বলল — কাল জানলি আমাদের জানালি না কেনো??
— উনি রাজী না
— কিহ
দুই জা সমস্বরে বলল।
— আজ আসুক ঐ ছেলে এতো বড় খুশীর খবরে আমাদের জানালো না কেনো আবার রাজীও না কেনো??
চুপ থাকে পুনম কিছু বলে না মেয়ের চুপ থাকায় সন্দেহ হয় রোজিনার তাই সে বলল — ভাবী নিশ্চয়ই কোনো কিছু হয়েছে নাহলে
তাকে বলতে না দিয়ে বলল — তুই জানিস না ঐ ছেলে বদের হাড্ডি আজ আসুক ঐ ছেলে বলেই তিনি চলে গেলেন
রোজিনা মেয়েকে চেপে ধরেন তবুও পুনম চুপ থাকে। কিছু বলে না।।
বিকালে চন্দ্র একবারেই রিপোর্ট নিয়ে বাসায় আসে পুনম দুপুরে ফোন দিলেও রিসিভ করে না।
রিপোর্টের খাম রেখে নিজের কাপড় নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।
পুনম ঘরে ঢুকে দেখে চন্দ্র একেবারে গোসল করেই বের হয়েছে ফুল ড্রেসড। পুনম অবাক প্রতিদিন বাসায় এসেই পুনমের খোঁজ করে নিজের সকল কাজ পুনমকে দিয়ে করায় পুনম বেশ আনন্দ নিয়েই সব কাজ করে মাঝেমধ্যে রাগ দেখালেও সেটা উপরে উপরে।
— খাবার দিব
পুনমের দিকে একপল তাকিয়ে তাকে কোলে তুলে বেডে বসিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল
— বিছানা থেকে যেনো না নামা হয়,,,,
চলে গেলো চন্দ্র পুনম ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকল চন্দ্রর যাওয়ার দিকে। কাল রাত থেকে তার সাথে কথা বলে না লোকটা সকালেও নিজের মতো রেডি হয়ে চলে গেছে তবে তার রাখতেও ভুলে নাই।
____________________
ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে চন্দ্র ডাক্তার গম্ভীর মুখে রিপোর্ট দেখে বলল — চন্দ্র ভালো মন্দ সবকিছুতে আছে,,
— আপু আই ওয়ান্ট ক্লিয়ার কথা,,
#চলবে