প্রণয়ডোর পর্ব-১৯+২০

0
444

#প্রণয়ডোর
#পর্ব_উনিশ
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম

তাসবির মাথায় হাত বুলিয়ে নিজেও পিঠে একটা বালিশ ঠেকিয়ে হেলান দেয়। মেয়েটা আর কেউ না। স্বয়ং শুভ্রা। ক্লান্তি তে ভরা তার মুখখানা আলোর অভাবে বোঝা যাচ্ছে না , তবে ক্লান্তিকর ভাবটা বেশ নিজের মধ্যে হানা দিচ্ছে। নেত্রপল্লব বন্ধ করে ফেলে। সারাদিনের হুরোহুরি শেষে অবশেষে প্রিয় মানুষের কাছে তো সে আসতে পারলো, এই ভেবে মুখে মুচকি হাঁসির রেখা টানে সে। শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহ পাকের নিকট। সন্ধ্যায় নিজের ব্যক্তিগত কিছু কাজ করে একটা প্ল্যান শিডিউল করেই মিসেস মির্জা কে বান্ধবী ফারিহার বাসায় যাবে বলে চলে আসে সে। হুট করে তার ইচ্ছে হলো আজকের রাত টা তার প্রিয় পুরুষের লাছে যাক। তবে অজান্তে। তাই তো এই বাসায় বেশ খানিকক্ষণ এসেও সামনে আসেনি তাসবির। অপেক্ষা করেছে তার ঘুমানোর। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর তা শেষ হলো। আর আসতে পারলো তাসবির কাছে। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে হঠাৎই শুভ্রা খেয়াল করল যে তাসবির কপালে অসম্ভব গরম হয়ে আছে। দ্রুত হাত সরায় সে। ভেবেছিলো সে বাহির থেকে আসায় হয়তো তার শরীর ঠান্ডা আর তুলনামূলক তাসবির শরীর গরম তাই তখন ব্যাপার টা পাত্তা দেয়নি। তবে এখন সে বুঝতে পারছে যে, সেই তাপমাত্রার টা ধীরে ধীরে বেড়ে এই অব্দি এসেছে। বুকটা ছেৎ করে উঠলো তার। দ্রুত কপাল থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ঘরটা শুভ্রার ই ছিলো একসময়। তাই তাকে আর ঝামেলা করতে হয়নি লাইট অন করার জন্য। তাও আবার বেশ খানিকক্ষণ অন্ধকারে থাকার ফলে কিছুটা আন্দাজ করতেই পারছে। তাই যথার্থ সাবধানতার সাথে এগিয়ে গিয়ে লাইট অন করে দেয়। সাথে সাথে সে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাসবির দিকে। এক কাত হয়ে শুয়ে আছে মানুষ টা। চোখে চশমা পড়াতে তাকে দেখতে আরো অসুবিধা হলো না। শ্যাম বর্ণের মুখখানা আরোও ফ্যাকাসে হয়েছে আগের তুলনায়। তীব্র জ্বরের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে মায়াবী মুখমন্ডলে। পুরো মুখমণ্ডলে যেনো টান টান একটা ভাব এসেছে। ঠোঁট গুলো শুকিয়ে গিয়েছে। জ্বরের কথা মাথায় আসতেই আবারো ছুটে এসে তাসবির কপালে হাত দেয় সে। জ্বরের তীব্রতায় এতটুকু বুঝলো যে আজ তাকে পুরো রাতটা স্বামী সেবা করতে হবে। তাসবি সাধারণত অসুখের কবলে পড়ে না। কিন্তু যখন পড়ে তখন সে অসুখ সারানো দায় হয়ে পড়ে। এর আগেও তো এমন হয়েছিলো। সেবার তো পাক্কা দুদিন জ্বরের ঠেলায় চোখ মেলেই তাকাতে পারেনি। তবে জ্বরের ঘুরে একটা নির্লজ্জামো কাজ তো হয়েছিলো। বিছানার কোন থেকে টিস্যু পেপার নিতে গিয়ে ঝুঁকতে হয় তাকে। তাসবির মাথাটা ওপাশেই ছিলো। টিস্যু নিতে গিয়ে ঠিক হতে হতেই তাসবি উলটো হয়ে শুঁতে নিতেই সে একদম কাছাকাছি চলে গিয়েছিলো। উঠতে গিয়ে লক্ষ্য করে তাসবির হাত ওকে শক্ত করে ধরেছে। ফলে তাসবি জ্বরের ঘোরেই ওকে চুমু দিয়ে দেয় গালের শেষপ্রান্তে । লজ্জায় হাসফাঁস করতে করতে কোনোমতে সেদিন ছুঁটে আসে সে। সেদিনের ঘটনা তাসবি কে ঘুণাক্ষরেও সে টের পেতে দেয়নি। দেবেই কিভাবে। ওটা বলার জিনিস নাকি ! ওটা ছিলো তাসবির দেওয়া প্রথম ভালোবাসা।

এসব ভাবতে ভাবতেই আন্টিকে কল করে দেয় সে। বাবার স্ত্রী হলেও মা ডাকটা ডাকে না সে। সে চায়না নিজের মা থাকতে অন্যকাউকে মা ডাকতে। তাই তো আন্টি বলেই ডাকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রিসিভ হয় ফোন। সালাম দিয়ে বলে,

— আন্টি ফারিহার তো খুব বেশি জ্বর সেজন্য আমি চাইছি আজকে রাতটা ওর বাসাতেই থাকতে। আমি চেষ্টা করবো সকালের মধ্যে চলে আসার। আর এ ব্যাপারে কাউকে বলার দরকার নেই। কারন বলার দরকার মনে করছিনা। আপনি আমার মায়ের মতো। আর সন্তান কোথাও গেলে মা কেই সব জানায়। যদিও এ অভ্যাস টা আমার ছিলো না আগে, তবে আপনি যেমন আমার মনে হয়েছে আপনি চিন্তা করবেন। তাই জানিয়ে দিলাম। আর কাউকে বলার দরকার নেই মানে আই মিন মিস্টার মির্জাকে বলার দরকার নেই। তবে আপনার যদি খুব বেশি সমস্যা হয় তাহলে বলে দিয়েন, আমার কোন সমস্যা নেই।

— এভাবে কেনো বলছো মা ?

— আসলে আন্টি আপনি তো জানেনই উনি আমার বাবা হলে কতটা পছন্দ করি তাই আমি জানিনা আমার কোন পারসোনাল ম্যাটারে ওনি কিছু জানুক বা শুনুক। এতোবছর একা কাটিয়েছি এখনোও পারবো। তবে মনে হয়েছে বাবার বাড়ি যাওয়া দরকার তাই খুঁজে খুঁজে বাবাকে বের করে নিজের বাড়ি গেলাম।

শুভ্রার কথা শুনে ভদ্র মহিলা বুঝি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এরমটাই বুঝলো শুভ্রা। তবে দেরি না করে সে ফের বললো,

— ফোন রাখি তাহলে ?

ভদ্রমহিলা খানিকটা অবাক হন। এই তো কিছুক্ষণ আগে মেয়েটা তাকে কত কিছু বলে ফেললো এক দমে। সেই মেয়েই কিনা এখন আবার কল রাখাদ অনুমতি চাচ্ছে। বড় অদ্ভুত মেয়েটা। এই ভেবে খানিকটা মুচকি হেঁসে শুভ্রাকে তিনি উত্তর দিলেন ,

— ঠিক আছে !

ফোন রেখে দিয়ে দ্রুত ওয়াশরুম থেকে বালতি আর একটা পট্টি এনে রাখে। আগে মাথায় পানি ঢেলে ধুঁয়ে দেবে তারপর জলপট্টি দেবে। আর সে তার এ অব্দি মেডিক্যাল জীবনে টুকটাক অনেককিছু ই শিখেছে। আশা করছে যে তাসবি এতেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মনের একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। রাতের মধ্যে যদি মানুষটা সুস্থ না হয় তাহলে সকালে সে যাবে কিভাবে। আর সকালে না খেলে সেখানকার অনেক নাটক মিস হয়ে যাবে। আগামীকাল তো আসবে বড় টুইস্ট। বিদেশীনি রা আসবে আরাফের বিয়ের ডেট ফিক্সড করার জন্য। তবে এতো সেইফে রাখার পরেও কীভাবে জ্বর আসে তাসবির ? গার্ড রা তো তাকে সব আপডেট দিয়েছে। আচ্ছা ! এ অসুখ মনের অসুখ না তো ? তাকে দেখার অসুখ !
কথাগুলো শুভ্রার দম আটকানো পথ মনে হলো। নিজের মাথায় নিজেই চাপড় দিলো আলতো। নিজের মেয়েলি শক্তির গুণে তাসবি কে বিছানার একপাশে শুইয়ে দিয়ে বালিশের উপর মোটা পলি দিয়ে সেখানে শুইয়ে দিয়ে ক্রমাগত পানি ঢালতে শুরু করে। পানির ঢালার এক পর্যায়ে তাসবি কাঁপতে শুরু করে। আর এ অবস্থায় দ্রুত কম্বল জড়িয়ে দেয় গাঁয়ে। তাসবি কম্বল পেয়ে সেটা বেশ ভালোভাবে আকঁড়ে ধরলো ওই ঘুমের মধ্যেই। তীব্র জ্বরে হুশটুকুও এলো না। আর এতো চিন্তার মাঝে সে বেমালুম ভুলে বসেছিলো যে প্রথমে তাসবির শরীরে কম্বল দরকার। তারপর পানির কাজ। নিজের ভুলে জিভে কামড় দিলো সে। বড্ড আনমনে হয়ে গিয়েছিলো আগামীকালের উত্তেজনায়। তবে স্বামীর খাতির যত্নে তো তার ভুল হওয়া চাইনা ! স্বামী নামক এক শব্দের ব্যাখ্যা তার কাছে অবর্ণনীয় ! এসব ভাবতে ভাবতে মনোযোগী হয় পরবর্তী ধাপের। অর্থাৎ মাথা টা ধুঁয়ে দেবে। শ্যাম্পু টাও আনে নি বেখেয়ালি তে। তাই আবারো নিজের উপর বিরক্ত হয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ করে সেটা এনে আলতো হাতে চুলে মাখাতে লাগলো। তখনই তাসবি বিরবির করে কিছু বলার চেষ্টা করে। তা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শুভ্রা লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে সেগুলো শোনার চেষ্টা করে। আধো আধো বুলিতে ছোট বাচ্চাদের মতো কান্নামাখা স্বরে শুধু এটুকুই শুনলো ,

❝ প্রণয় তো হলো তবে কি প্রণয়ের বাহুডোরে আবদ্ধ হবে না ? ❞

ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো শুভ্রা। তাসবির এটুকু বলতে বেশ খানিকক্ষণ লেগেছে। তবে সবটা বাক্য বুঝি এইটুকুই ঠেকে। এটাই তো বুঝলো সে। তবে আদোও তাসবি এটা বলেছে ? নাকি তার মনের ভুল ? তবে তাসবি যেহেতু আধো আধো বুলিয়ে বলেছে সুতারাং তার ট্রান্সলেশনে ভুল হতেই পারে। তবে মস্তিষ্ক কে এটা বুঝিয়ে শুকনো এক খানা ডোক গিলে নিজের কাজে মনযোগী হওয়ার চেষ্টা চালালো পুরো দমে। তবুও মন সায় দিচ্ছে না। মস্তিষ্ক কে যা তা বলে মানানো গেলেও মনকে তো আর পারা যায়না। এটা মাথায় আনতেই অজানা এক অনুভূতির সাথে পরিচয় হলো তার। আচ্ছা অসুস্থ স্বামীর অসুস্থতায় স্ত্রীর যত্নে নতুন কোনো অনুভূতির জন্ম নেয় বুঝি ?

#চলবে

#প্রণয়ডোর
#পর্ব_বিশ
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম

ফজরের নামাজ আদায় করেই নিজ বাড়িতে চলে এসেছে শুভ্রা। তাসবি অবশ্য সেটা টের পায়নি। আল্লাহর অশেষ রহমতে তুলনামূলক খানিকটা দ্রুতই তার শরীর সুস্থতার নাগাল পেয়েছে । তবুও সার্ভেন্ট কে বলে , তবেই এসেছে। সার্ভেন্ট তাকে সকল আপডেট জানাবে বলেছে । সেজন্যই প্রায় খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়েই আরাফের বিয়ের ডেট ফিক্সিংয়ে ড্রইংরুমে এসেছে। ঘড়িতে এখন দুইটা ত্রিশ। সে বাড়িতে এসেছিল সকাল সাতটার দিকে। আর সেই থেকে বাড়ির বাধ্য মেয়ের মতো মিসেস মির্জার সাথে টুকটাক কথা বলে কাজ করে বাসার৷ সেই সাথে রান্নার ক্ষেত্রেও বেশ অবদান রেখেছে সে । অবশেষে মিসেস মির্জার মন সন্তুষ্ট হচ্ছিলো না এতো কিছুর পরও।

তাই শুভ্রা নিজে দায়িত্ব নিয়ে পুরো ঘর এক এক করে নিজের মন মতো গুছিয়েছে। বলা যায় শেষের ৩ ঘন্টা বড়সড় এক যুদ্ধ করে তবেই তার আন্টির মন সে জয় করেছে। শুভ্রা নিজের আচরণে নিজেই অবাক। হঠাৎ এই কেন সে আন্টির মন জয় করতে উঠে পড়ে লাগলো ! কোন সঠিক উত্তর আসলো না তার পক্ষ থেকে তবে এইটুকু বুঝলো যে তার জীবনে ঘটা ঘটনায় আন্টির কোন দোষ নেই।

কিন্তু আন্টির যদি দোষ না থাকে তাহলে আর আরাফ কিভাবে …! তবে একজন খারাপ বলে তো সবাই খারাপ হয়না। কিন্তু একটু খারাপের ছোঁয়া পেলেই তো সব খারাপ হয়ে যায় যেমন টা এক গ্লাস পানিতে এক চিমটি পরিমাণ বালি পড়লে পুরো পানি টাই নষ্ট হয়ে যায় তেমন, কিন্তু সেখানে এই মহিলা কীভাবে এতো শুদ্ধ হয় ! শুভ্রার মন একবার ভদ্র মহিলাকে বিশ্বাস করতে বলছে তো একবার না করছে। একদম দো’টানায় পড়ে গেল সে।

তবে ঘর গোছ গাছ করে টুকটাক সে এই বাড়ি সম্পর্কে বেশ খানিকটা ধারণা পেয়ে গেছে। বাকি আছে এ বাড়ির স্টোর রুম। সে নিশ্চিত স্টোর রুমে গেলে অবশ্যই কিছু না কিছু পাবে। যেটা কিনা তাকে আর একটু সাহায্য করবে। যদি সে তার মায়ের সম্পর্কে কিছু না কিছু ক্লু পেয়ে যায় তবে তো সে বিয়ের দিন ই সব রহস্য উদঘাটন করে পাপীদের শাস্তি দিতে পারবে। সে মনে মনে চায় পাপীরা আর বাইরে না থাকুক। দ্রুতই তারা তাদের সাথে পাক।

আপাতত সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে মনযোগ দিলো সামনে। আরাফের হবু শশুড় বাড়ি থেকে লোক এসেছে পাঁচজন। এলিনা, তার বাবা, মা, বোন এলিজা , দাদি। সকলের পোশাক-আশাকেই এক রকম বিদেশিনী বিদেশিনী একটা ভাব রয়েছে। তাদের হাতের দিকে নজর দিলো সে। জুসের গ্লাস। শুভ্রা নিজে হাতে এই জুস বানিয়েছদ। সকলে এসেছে কিছুক্ষণ আগে। আর তাদের আগমনের সাথে সাথেই সেখানে চলে যান মিসেস মির্জা। তার ছেলের আত্মীয় বলে কথা। দু’দণ্ড কথা বলতে তো হবে। তারপর না হয় আপ্যায়ন। আর সেই ফাঁকেই সে সবার জন্য জুস এনে দিয়েছে।

শুভ্রার এমন স্বাভাবিক আচরনে খানিকটা চিন্তিত হন মিস্টার নেওয়াজ মির্জা। তিনি ভাবতে পারছেন না তিনি কি করবেন। বারবার তিনি কনফিউজ হয়ে যাচ্ছেন। তার গুপ্তচরদের বলা শুভ্রা একরকম আর তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্রা ই আরেক রকম। এই শুভ্রা কে দেখলে মনে হবে যেন সে কিছুই জানে না বোঝে না এবং তার মাথায় কোন বাজে চিন্তা আসতেই পারে না এমন একটা ভাব ।

অথচ তার তিলে তিলে গড়ে তোলা পাপের সাম্রাজ্য আর এই নেওয়াজকে ধ্বংস করতে চায় শুভ্রা নামের কেউ। তার কি এই মেয়েকে বিশ্বাস করা উচিত নাকি সেই মেয়েকে বিশ্বাস করবে। কিন্তু বিশ্বাসের কথাটা আসছে কোথা থেকে। যেখানে শুভ্রা নামের কেউ তার ক্ষতি চায়। এত বছরে তার গড়ে তোলা প্রাসাদ তো এক নিমিষে ধ্বংস হতে দিতে পারবে না সে। তাই নিশ্চিত হয়ে একটু ভাবতে হবে। আপাততো আরাফের বিয়েটা পেরিয়ে যাক। তবে যদি এই মেয়েটাই সেই শুভ্রা হয় তাহলে তার মধ্যে কোন না কোন পরিবর্তন দেখা যাবে কিন্তু সেটা তো কয়দিনে দেখা যায়নি, ফুটেজ তো সেই চ্যাট করেছে কোথাও তো কিছু খটকা লাগেনি। বরং তার আচরণে প্রকাশ পেয়েছে যেন সে কত বছর ধরে এই বাড়িতে আছে। এসব ভাবতে ভাবতে নেওয়াজ মির্জার টনক নড়লো অতিথিদের কথায় ।

— আচ্ছা এই জুসটা কি আপনি বানিয়েছেন নাকি বাজার থেকে কিনে এনেছেন ?

এলিজার দাদী মিসেস মির্জা কে উদ্দেশ্য করে উক্ত প্রশ্নটি করলেন। তার কথায় সকলেই একে একে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো । আরাফ ও জুসটা মুখে নিয়েছে। এক ঢোক খেতেই তার মনে হয়েছে অমৃত খাচ্ছে। তার মনেও কৌতুহল জন্মালো যে এই জুসটা কে বানিয়েছে। তাই প্রশ্নের উত্তরে সকলেই তাদের কাঙ্খিত উত্তরের আশায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল মিসেস মির্জার দিকে । মিসেস মির্জা সকলের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলো। কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্রার একটা হাত ধরে টেনে তার কাছে আনলো। মেয়েটার কাঁধে হাত রেখে মুখে প্রশান্তির হাঁসি এসে তিনি বলেন ,

— জি না আমি করিনি। আজকে ম্যাক্সিমাম কাজ আমার মেয়ে আই মিন শুভ্রা করেছে। আর এই জুসটা ওর স্পেশাল করে বানানো।

মিসেস মির্জার উত্তরে যেন খানিকটা অবাক হলেন। অবাক হওয়াটা মূলত মেয়ে বলার কারনে। এবার প্রশ্নের আঙুল তুলল আরাফের দিকে ,

— আরাফ বাবা তোমার যে বোন আছে কই তুমি তো সেটা আমাদেরকে বলনি !

নিজের হবু শাশুড়ি এমন প্রশ্নে খানিকটা নড়েচড়ে বসে আরাফ। কি উত্তর দেবে সেটা ভাবতে ভাবতেই মিস্টার নেওয়াজ মির্জা উত্তরে বলেন,

— আরে আপনারা বিব্রত হবেন না প্লিজ। আসলে আমরা আমাদের মেয়েকে ছোট বেলাতেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। আর এতোদিনে মেয়েটাকে আমরা খুঁজে পেয়েছি। তো সেজন্য আর..! ভেবেছিলাম আরাফ ব্যাপার টা নরমাললি নেবে, আর আপনাদের সবাইকে বলবে। ও নর্মাললি ব্যাপারটা নিয়েছে কিন্তু আপনাদের কে বলতে হয়তো ভুলে গিয়েছে। তবে আমার জন্মদিন ও অন্য একটা বিষয় নিয়ে মেন্টাললি ডিস্টার্ব। হয়তোবা সেজন্য ! কিন্তু এটা সত্যি যে ও আমাদেরই মেয়ে ।

মিস্টার নেওয়াজ মির্জার এমন কথায় সকলে স্বাভাবিক হলেও আরাফ হলো না। এ অব্দি মেয়েটার সাথে তার কথা বলা হয়নি। আসলে মেয়েটা চায় কি ! সেটাই সে জানত্র চায়। সেই সাথে সেদিন তাকে মারা চড়ের ও প্রতিশোধ নেবে সে। নেবেই নেবে।

#চলবে