#প্রণয়ডোর
#পর্ব_একুশ
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম
আরাফ আর এলিজার এংগেইজমেন্টের ডেইট ফিক্সড হয়েছে আগামী শুক্রবার। এটুকু শুনেই নিজের রুমে চলে আসে শুভ্রা । অন্য কেউ তাকে কিছু বলেনি। মিস্টার মির্জার মতে মেয়েটার একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার। সকাল থেকেই বেশ খাটা খাটুনি সে খেটেছে। এসি রিমোট হাতে নিয়ে পাওয়ার খানিকটা বাড়িয়ে কমিয়ে শরীরের ওড়না টা বিছানার দিকে ছুড়ে দেয়। তবে রাগের বশে না। অতিরিক্ত ক্লান্তি তে। সাথে সাথে বসে পড়লো বিছানায়। চোখ বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। হিসেব করে দেখলো তার হাতে সময় আছে ৪ দিন। এটুকু ভাবতেই সে কাজের প্রতি একটু খেয়াল করলো। তার হিসেব মতো প্রায় সকল কিছুর প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে ।
ভাবনার ইতি টেনে মোবাইলের টাইম টায় চোখ বুলালো। তারপর আবারো তাকালো দেয়াল ঘড়িতে। সংসার বোধহয় এমন ই। কখন যে সময় পেরিয়ে যায় সেটা বোঝা বড্ড দায়। ছোট্ট বেলায় তো তার মা আর সে ছিলো। সংসার কেমন হয় সেটার ধারণা তো তার জীবনে খুব কমই ছিল তার মায়ের সংসার টা। এই ভেবেই ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সে। মনে মনে আওড়ালো বোধহয় এখন বেজে গিয়েছে বিকেল ৪ টা। স্বামীর খবর নেওয়াটা জরুরি মনে হলো । তাই ফোন টা হাতে নিয়ে কল করলো কাঙ্খিত ব্যক্তিটিকে। ফোন স্ক্রিনে ‘মাষ্টার’ নামে সেভ করা নাম্বার শো করছে। ‘মাষ্টার’ নামটা পড়ে নিজে নিজেই হেঁসে নিলো সে। এই নামের অবশ্য রয়েছে ছোট্ট এক ইতিহাস। যেটা এখনো তাসবি জানেনা। তবে দেখে ফেললে নির্ঘাত বলেই বসবে ,
— মেয়ে ! তলে তলে ভালোবাসো প্রকাশ করো না ?
তখন শুভ্রাকে লজ্জার সম্মুখীন হতে হতো , যদিও সে লজ্জা আটকাতে তাকে তখন অনেক যুদ্ধ করতে হতো। এই ভাবতে ভাবতে অপরপাশের ব্যক্তিটি কল রিসিভ করে ফেলে। ভেসে আসে তাসবির কন্ঠস্বর ,
— আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
— ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। কেমন আছেন ?
— হুম , আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
তাসবির খানিকটা মিইয়ে যাওয়া কন্ঠ শুনে কেমন জেনো অনুভব হলো তার। মানুষটার কি এমন হয় যে মনমরা হয়ে যায়। প্রিয় পুরুষের এমন কন্ঠ যে সহ্য করতে পারেনা সে। এর একটা বিহিত করতেই কড়া কন্ঠে তাকে শোধালো ,
— আচ্ছা ! আপনার কি এমন হয় বলুন তো ?
— কি হবে ?
তাসবির সংকোচহীন উত্তরে খানিকটা ভ্রু কুচকে ফেললো। সহজে রেগে যাওয়ার মেয়ে সে নয়। তাই শান্ত কন্ঠে এবার বললো,
— এই যে আপনি সবসময় মনমরা হয়ে থাকেন।
— ওও! এই ব্যাপার। আসলে আমার একটা জিনিসের অনেক অভাব। কয়েকদিন আগেও নিজেকে অভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছি কিন্তু এখন আর পারছি না। আচ্ছা আপনিই বলুন , অভাবে থাকতে আছে ?
তাসবির এমন বাচ্চামো টাইপের কথাগুলোও মানে বুঝলো না। তবুও স্বামীকে সঙ্গ দিতে কথার কথায় উত্তর দিলো ,
— না না , অভাবে থাকতে আছে নাকি। অভাবে তো স্বভাব নষ্ট হয় !
— তাহলে তোমার অভাবে কেন আমার স্বভাব নষ্ট হলো না ?
প্রিয় পুরুষের এমন কথায় কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলো না। তাই চুপ রয়ে গেলো। আর এদিকে প্রিয় নারীর নিরবতা কে উপেক্ষা করে মনে চোখ জোড়ায় অশ্রু পরিপূর্ণ হলো। যেকোনো সময় গাল বেয়ে ভূমি স্পর্শ করবে। পুনরায় তাসবি বললো ,
— এড়িয়ে যাচ্ছো ? জিজ্ঞাসা করবে না আমার কীসের অভাব ? এতো টা পাষাণ কেনো তুমি ?
বলেই চুপ হয়ে গেলো সে। শুভ্রার দিক থেকে আবারোও কোনো উত্তর আসলো না। এবার পুরুষদের ক্ষেত্রে হওয়া সবচেয়ে কঠিন কাজ টা করে ফেললো তাসবি। শব্দ করে কেঁদে উঠলো সে। এবার শুভ্রার কলিজায় গিয়ে ঠেকলো ব্যাপার টা। এতোক্ষণ নীরব থেকে সহ্য করলেও এবারের টা পারলো না। প্রিয় পুরুষ টি ধরা গলায় কিছু বলতে নেবে তার আগেই শুভ্রা নিজের মুখ খুলে।
— শুনুন ! আমি এক কথার মেয়ে। আপনি কান্না করে কেন মরে গেলেও আমার সিদ্ধান্তে আমি অটল থাকবো। মেনে নেবো না আমি আপনাকে। আর আগে নিজে ভালো থাকুন। তারপর অন্যকে ভালো রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন। আশা করি বুঝাতে পেরেছি।
সেকেন্ড কয়েক নিরবতা বিরাজ করলো তাদের মাঝে। নিরবতা ভঙ্গ করে তাসবি বলে উঠলো,
— আমার অসুখ করেছে। অসুখের নাম শুভ্রা। যতক্ষণ না আমি তাকে পাচ্ছি ততক্ষণ সুস্থ হবো না। আমি কি কোনো সুযোগ পেতে পারি না ?
— বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারা ই যথেষ্ট।
এটুকু বলেই খট করে ফোনটা কেটে দেয় শুভ্রা। শেষের কথাগুলো সে কঠিন স্বরে বললেও এবার তার কষ্ট হচ্ছে। নিজের ভাগ্যের জন্য। ভালোবাসা কে চেয়েও নিজের কাছে রাখতে পারবে না। কারন শত্রু বেশ কায়দা করে তাসবির শরীরে মাইক্রো ক্যাম সেট করেছিলো। সেটাই তো শুভ্রা তাসবির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেটাকে…!
আর ভাবতে পারলো না সে। টুংটাং মেসেজের শব্দে নজর দিলো ফোনে। ফারিহা আপু মেসেজ করেছে।
— শুভ্রা। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে তুমি বাড়িতে কিছু না কিছু ভুল করে ফেলেছো। যার কারনে ইতোমধ্যে তুমি নেওয়াজ এর সন্দেহের তালিকায় চলে গিয়েছো। যতটা সহজ ভেবে থেমেছিলে সেটা কিন্তু কঠিন হয়ে যেতে শুরু করেছে। দ্রুত ভুল টা শুধরে দাও !!
ফারিহা আপুর মেসেজ পেয়ে দ্রুত রিপ্লাই করে সে,
— কে বলেছে যে আমি ওনার সন্দেহের তালিকায় আছি ?
— আর কে বলবে ! ওদের গ্রুপের যার সাথে আমার…! তবে মনে করে দেখো আজ কালের মধ্যে তোমায় দেখে নেওয়াজের কোনো আচরণ একটু ভিন্ন লেগেছে কিনা।
— ওকে! রিলাক্স।
~~
কেটে গিয়েছে একদিন। আজ সকাল সকাল ড্রয়িংরুমে সবাইকে ডাকা হয়েছে। ডেকেছেন মিস্টার নেওয়াজ মির্জা। কিছুক্ষণ আগেই সে ফ্রেশ হয়ে বসেছে। আর তখনই একজন সার্ভেন্ট এসে তাকে বলে যায়। নেওয়াজ মির্জা যেহেতু ডেকেছে তবে কিছুটা স্পেশ্যাল হবেই হবে, তাই অতিবিলম্ব না করে উঠে বিছানায় ফেলে রাখা ওড়না টা গাঁয়ে দিয়ে এগিয়ে গেলো ড্রয়িংরুমের উদ্দেশ্যে । যাওয়ার পথেই তার পাশের রুম অতিক্রম করার সাথে সাথেই কেউ তাকে টেনে নিলো সে ঘরটায় ।
#চলবে
#প্রণয়ডোর
#পর্ব- বাইশ
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম
আচমকা এভাবে কেউ টেনে নিয়ে যাওয়ায় তার ভয় না হলেও মনের ভিতর আতঙ্ক সৃষ্টি হল। কেননা বাড়িটা নেওয়াজ মির্জার। সুতরাং তিনি চাইলে যা কিছু করতে পারেন। নিজের মেয়ে বলে ও কোন ছাড় দেবেন না। তার উপর তাকে সিকিউরিটি দেওয়ার প্রটোকলকে সে সরিয়ে দিয়েছে। তার কিছু হয়ে গেলে কেউ কিছু জানতেই পারবে না। সব চিন্তা ঝেড়ে সামনে থাকা ব্যক্তি কে নিয়ে ভাবতে বসলো। ব্যক্তিটি তার এক হাত ধরেছিল। ব্যক্তিটি যেকেউ হতে পারে ভেবে তৎক্ষনাৎ হাত ঝাড়া মেরে হাত ছাড়িয়ে নিল। অনেকক্ষণ অন্ধকার এ থাকার কারনে কিছুটা অবলোকন করতে সক্ষম হলো। বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারছে যে তাকে ধরে থাকা ব্যক্তিকে একজন পুরুষ। তবে ব্যক্তিটির নড়াচড়া বুঝতে না পেরে খানিকটা অবাক হলো। তবে পাশে তাকিয়ে দরজা টা বুঝে আসলো। বাহিরের আলো যার ফাড়াক দিয়ে রুমে প্রবেশ করছে। এক পা এগিয়ে ভাবলো দরজা দিয়ে পালিয়ে যাবে। কিন্তু সেটা করতে গিয়েও করলো না। আগে তাকে জানতে হবে ব্যক্তিটি কে। মনে সাহস জুগিয়ে জিজ্ঞাসা করে ,
— কে আপনি? কার এত বড় সাহস যে আমাকে এভাবে টেনে আনে ? তাও আবার এখন চোরের মত নীরবতা দিয়ে উপস্থিত থাকে।
শুভ্রার এমন কথা শুনে ব্যক্তিটি রেগে যায়। জোরে সোড়ে সেখানকার কোনো একটা জিনিসে একটা লাথি মারে। ফলস্বরুপ আংশিক শব্দ হয়। পিছিয়ে যায় শুভ্রা। খানিকটা আন্দাজ করতে পারলো যে ব্যক্তিটি হয়তো আরাফ। কেননা এই অন্ধকারে যেভাবে একটা জিনিসের গাঁয়ে লাথি মারলো এতে বোঝাই যায় যে ব্যক্তিটি এই ঘরটাকে বেশ ভালো ভাবেই চেনে। এই ভেবেই ঠোঁট কামড়ে হেঁসে ফেলে শুভ্রা। যার খানিকটা আওয়াজ ও হয়। এভাবে হেঁসেছে মানে লোকটির থেকে কোনো উত্তর বা কথা শোনার বাহানা। কিন্তু তবুও প্রতিত্তর আসলো না। শব্দ হলো চেয়ার টানার। মনে হলো যেন কেউ একটা চেয়ার টেনে বসেছে।
শুভ্রা খুব তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের মেয়ে। সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ণতর জিনিস তার মাথায় আগে আসে। তাই আর আজ তাকে চিন্তা বাড়াতে হলো না। তখনই রুমের লাইট অন হয়। দৃশ্যমান হয় অজ্ঞাত ব্যক্তিটির মুখ। ব্যক্তিটি আরাফ। শুভ্রার ধারণা ই সঠিক। লাইট টা সেই জ্বালিয়েছে। এবার শুভ্রার ভ্রু কুচকে আসে। যেন সে প্রচন্ড বিরক্ত হলো।
— তুই ?
শুভ্রার মুখে তুই কথাটা শুনে বোধহয় অবাক হলো আরাফ। বিস্মিত মুখখানা নিয়েই জিজ্ঞাসা করে,
— হোয়াট ননসেন্স ? আমি আর তুই ?
— তো..? আপনি বা তুমি করে ডাকবো নাকি ?
— অবশ্যই !
— এই শোন ! ভুলে যাস না তুই আমার ছোট।
— আসলে কার কেরেক্টার কি রকম সেটা তো তার ব্যবহারই বোঝা যায়।
— হুউম! একদম ঠিক বলেছিস । এ যেমন তুই !
— কি বোঝাতে চাচ্ছিস তুই ?
— আমাকে এবার তুমি থেকে ডিরেক্ট তুই তে কনভার্ট করে ফেলেছিস ? বাহ ! কি দ্রুত নিজের ইমপ্রুভ করছিস রে তুই !
— আচ্ছা তুই আসলে কি চাস ? বাবার কথা মতে তুই আমার বোন। মানে সৎ বোন। কিন্তু কিভাবে পসিবল! তুই আমাকে বল বি ? আর কিভাবে এবার তুই আমার বাবার ডিএনএ এর সাথে নিজের ডিএনএ ম্যাচ করালি ??
— শোন তোর এসব না জানলেও চলবে। সামনে তোর বিয়ে না ? বিয়েতে ফোকাস কর। অনেক সুন্দর একটা গিফট আমি তোকে দিব। প্রমিস।
— শোন ! আর যাই করিস , ফারিহা কে তুই আমার জীবনে আনবি না। যাকে একবার ছেড়ে দিয়েছি তাকে আমি দ্বিতীয়বার গ্রহণ করিনা। আমি জানিনা তুই আমার সত্যিকারের বোন কিনা। তবে এতটুকু বলব যা করবি বুঝে শুনে করবি। কারণ বাবা কিন্তু আমার পক্ষে। আর এটাতো স্পষ্ট যে তুই সম্পত্তির লোভে এ বাড়িতে এসেছিস।
— গ্রেট জব ! এত সহজে বুঝে গেলি ? যাই হোক তোর মাথায় তো অন্তত বুদ্ধি-শুদ্ধি হল। আমার বাবার এত এত সম্পত্তি কি তুই একাই উপভোগ করবি ? আমি কেন নই ? তাইতো সম্পত্তির ভাগাভাগির আগে চলে আসতাম আমার ভাগটা নিতে। আর আগের সম্পর্কটা ভুলে যা। বর্তমানে আমি তোর বোন সেটাই মাথায় রাখ। সেটাই বেটার হবে তোর জন্য। আশা করি আমার দিকটা আমি ক্লিয়ার করে দিতে পেরেছি। এবার আমাকে যেতে দে।
— হুম যা !
আরাফ কথাটা বলার আগে শুকরা সেই জায়গা থেকে প্রস্তান ঘটায় তোমরা ভালোভাবে গিয়েছে কিনা তা লক্ষ্য করে পুনরায় নিজের জায়গায় এসে বসে পড়েছে পকেট থেকে ফোনটা বের করে নে টেক্সট করে বাবার নাম্বারে।
— বাবা আমি তোমার দেওয়া কাজে সাকসেসফুল হলাম। ওর সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি যে ওর মূলত সম্পত্তির লোভেই তোমার কাছে এসেছে। আর আগে আমি ওকে আমার এক্সের সাথে দেখতাম। মেয়েটাকে অত ভালো করে না চিনলেও একটু আধটু চিনি। যার কারণে এটা স্পষ্ট যে আমাদের জায়গায় অন্তত এই মেয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না । আর বাবা ! সে তো এসেছে কেবল সম্পত্তি নিতে। তুমি বরং তোমার বিশাল সম্পত্তি থেকে এখনো ওকে দান করে দাও। দান সদকা কিন্তু ভালো বাবা ! সওয়াব কিন্তু তোমারই হবে।
এটুকু মেসেজ লিখেই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে আরাফ । বাবার সে কত ভালো না তাদের পাপের সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে। এ অব্দি কেউ তাদের থামাতে পারেনি। যারা এসেছে তাদের কেই তারা দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়ে দিয়েছে। এমন যদি হয় যে এই মেয়ে টাও যদি তাদের রাস্তার কাটা হয় তবে তাকেও উপরে ফেলে দেতি দ্বিধা কাজ করবে না তার ।
~~
— শোন মা ! আজ বিকালে কিন্তু আমরা শপিং করতে যাব বিয়ের । মেয়ে পক্ষরাও থাকবে। আর শপিং করতে করতে মনে হয় রাত হয়ে যাবে তাই আমরা ডিনারটা বাহিরে করবো ভাবছি। তোর কি কোন সমস্যা আছে ?
ভদ্র মহিলার এটুকু কথা শুনেই তার চোখে চোখ তুলে তাকিয়েছে শুভ্রা। বেশ খানিকক্ষণ আগেই সে ড্রয়িং রুমে এসেছে। ভদ্রমহিলা এতক্ষণ কারো সাথে কলে কথা বলছিলেন। শুভ্রাকে দেখে ভদ্র মহিলা আঙুলে ইশারায় বসতে বলে । যার কারনে শুভ্রা সেখানে চুপচাপ বসে রয়। কিছু একটা ভাবছে সে। আর কল কেটেই এমন কথা বলে ফেলেন ভদ্র মহিলা। শুভ্রা খানিকটা বেখেয়ালি থাকায় কথাটা আচমকা লেগেছে। তাই দ্রুত গতিতে চোখ তুলে তাকায়। শুভ্রার এমন চাহনীতে ভদ্র মহিলা মুচকি গেঁসে ফের বলেন ,
— না মানে আমি বলতে চাচ্ছি অনেক কেই তো বাহিরের খাবার খেতে পারে না। তো তোর কি রকম কোন সমস্যা আছে থাকলে বল আমি খাবার রান্না করে ফেলব।
#চলবে
#প্রণয়ডোর
#পর্ব–তেইশ
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম
মিসেস মির্জার কথা শুনে শুভ্রা মুচকি হেসে উত্তরে বলে ,
– না না আন্টি , আমার কোন প্রবলেম নেই। তাহলে আমি কখন যাচ্ছি ?
– এই ধরো সাড়ে পাঁচটার দিকে বের হব আমরা।
– ঠিক আছে।
অতঃপর তাদের কথার ইতি এখানেই ঘটে। নিজের রুমে যাবার আগে রান্নাঘরে গিয়ে দায়িত্ব নিয়ে নিজের খাবারটা বেড়ে রুমে চলে আসে। খেতে খেতে সে ভাবতে থাকলো। এ বাড়িতে তিনজন সদস্য থাকে মিসেস মির্জা , মিস্টার নেওয়াজ মির্জা আর আরাফ। এদের মধ্যে মিস্টার মির্জা আর আরাফ দাগি ক্রিমিনাল কিন্তু মিসেস মির্জার সমীকরণটা কোন ভাবেই মিলাতে পারছে না। মহিলাকে তার বাবা পেল কোথায় ? তার জানামতে তো তার বাবার ফুপাতো বোনের সাথে অ্যাফেয়ার ছিল। আর সেই মেয়েটাকেও তো সে চেনে। কিন্তু এই মহিলা কে? আর কেনই বা তার সাথে এত ভালো ব্যবহার ? না সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। ইনভেস্টিগেশন আবার শুরু করতে হবে। কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না। এগুলো ভাবতে ভাবতে খাবার শেষ করে ফেলে সে।
~~
খাওয়া শেষ করে প্লেট যথাযথ স্থানে রেখে আবার চলে আসে নিজের রুমে । দরজা সব আটকে দিয়ে জানালার পর্দা গুলো মেলে দেয়। ল্যাপটপ খুলে নিজের বাবার বিরুদ্ধে সব কু কাজের প্রমাণগুলো উল্টাপাল্টা দেখছে । ডকুমেন্ট গুলোতে বার কয়েক চোখ বুলালেও তার কেন জানি মনে হচ্ছে যে ডকুমেন্টগুলোতে এমন কিছু একটা রয়েছে যা তার চক্ষুগোচড় হচ্ছেই না। ল্যাপটপটা কোল থেকে সরিয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল। মাথার চুল গুলোতে শক্ত করে ধরে চোখ বুজে ফেলে। ভাবতে থাকে যে সে এই ইনভেস্টিগেশনের সম্পর্কে কিছুই জানেনা। আর এই মন মানসিকতা নিয়ে এসে আবারো চোখগুলোতে লাগল ডকুমেন্টে। ডকুমেন্টের প্রত্যেকটা লেখা সে মনোযোগ দিয়ে বিন্যাস করতে লাগলো। অর্ধেক পৃষ্ঠায় যেতে হঠাৎ একটা নাম চোখে পড়লো। আঁতকে উঠলো সে।
ল্যাপটপে চোখ রেখে পাশে থাকা ফোনটা নিয়ে দ্রুত কল করে ফারিহা আপুর নাম্বারে। প্রথম দুবার করে কলটা রিসিভ হয় না কিন্তু মিনিট কয়েক পরেই কলটা রিসিভ হয়। সাথে সাথে শুভ্রা বলতে শুরু করে ,
– বাবার বিরুদ্ধে তাকা সকল প্রমাণের যেটা সফট কপি তোমাকে দিয়েছিলাম সেটা তুমি ভালোভাবে চেক করেছিলে তো ?
কল রিসিভ করার সাথে সাথে এমন একটা প্রশ্ন হঠাৎ শুনে হকচকিয়ে যায় ফারিহা। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তরে বলে ,
– হ্যাঁ তো ! আমি তো খুব ভালোভাবে চেক করেছিলাম। কিন্তু কোনো ভিন্ন কিছু তো আমার চোখে পড়েনি। কি হয়েছে বলো তো ?
– আপু ! ওখানটায় বাবার সেই ফুফাতো বোনের নাম পেয়েছি। বাবার সিক্রেট এসিস্ট্যান্ট ছিলেন ওনি।
– ওমা ! কি বলো ? কই আমি তো পাইনি !
ফারিহার কথা শুনে সাথে সাথেই একটা ছবি পাঠিয়ে দেয়। যেখানে মার্ক করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে ওই নামটা তার বাবার ফুফাতো বোনের। ছবিটায় মার্ক করা নামটা দেখেই ফারিহা বলে ,
– আর ইউ ক্রেজি শুভ্রা ? হোয়াট এ কুইন্সিডেন্স !
ফারিহার গলায় আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। যার ফলে শুভ্রা খানিকটা বিচলিত হয়ে পড়ে। সেভাবেই বলে ,
– কেনো ? কি হয়েছে ?
শুভ্রার এমন প্রশ্নে দ্রুত ঢকঢক করে পানি পান করে সে। অতঃপর বলে উঠে ,
– ট্রাস্ট মি ভাই ! আমি এই সেইম নামের একটা আইডেন্টিটি কার্ড আমার মায়ের কাছে দেখেছিলাম।
– হোয়াট ?
বলার সাথে সাথে বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে যায় শুভ্রা। হাত পা কাঁপছে তার। তার খালার রুপে যদি ওই মহিলা থেকে থাকে তবে তো সব সত্যি জেনে গিয়েছে আর ও জেনে যাবে মানে নেওয়াজ কে সে অবশ্যই জানাবে । যেহেতু সে সিক্রেট এসিস্ট্যান্ট। না গোলমাল একটা আছেই আছে।
এতটুকু ভাবতেই হাতটা মুখে চেপে ধরে সে। বার কয়েক জোরে জোরে শ্বাস ফেলে ফারিহা কে জিজ্ঞাসা করে ,
– আমাকে সবটা খুলে বলোতো ?
– ঐদিন মা তোকে কল করেছিলো না ? তখন তুই যে একটা কড়া উত্তর দিয়েছিলে ভাইকে নিয়ে । সেদিন কেন জানি মায়ের মুখশ্রী দেখে মনে হয়েছিল ওই এক্সিডেন্টটা হোক মা এমনটাই চেয়েছিলো। আর সেদিনের পর আমি রান্নাঘরে প্রায় দিনই বিভিন্ন রকম খালি বোতল পাই , অবশ্যই মেডিসিন এর। কিন্তু মা তো সেরম কোনো ওষুধ নেয়না। আর মা গতকাল যখন গোসলে গিয়েছিলো তখন আমি মায়ের ঘরে গিয়ে সেইম নামের আইডি কার্ড টা বিছানার এক কোনে দেখতে পাই ।
– এতোকিছু হলো আর এতোদিন জানাও নি কেনো ?
– আরেহ এই কয়দিন আশেপাশে মা খুব ভালোভাবে নজরে নজরে রাখছিলো। যার কারণে আমি তোকে কিছু বলতে পারিনি। আর অবাক করা বিষয় যে মা তোর সাথে কথা বলার পর আর আমার সাথে কথা বলেনি। ভাবটা এমন যেন গলার স্বর যেনো না শুনতে পাই আমি।
বড় বড় শ্বাস নিয়ে ফের প্রশ্ন করলো শুভ্রা ,
– টেক্সট তো করতে পারতি !
– আমার ফোন ট্র্যাস করা হচ্ছিলো। শুধু আমার দিক থেকেই। ধর আমি কাউকে কল বা টেক্সট যাই করবো না কেনো অপরপক্ষ সেটা জেনে যাবে। কিন্তু অন্য কেউ দিলে সেটা টের পাবে না। ওয়ান সাইডেড ট্র্যাস যাকে বলে। (এই ট্র্যাসের ব্যাপারটা আমি নিজের মতো লিখেছি সুতারাং প্যাঁচ না করার অনুরোধ ।)
– হুম বুঝলাম ! শুনো আপু , আমার মনে হচ্ছে খালামনি কে সরিয়ে দিয়ে আমাদের দ্বিতীয় প্রতিপক্ষ সে জায়গা টা নিয়ে আমাদের ব্যাপারে জানতে চাইছে। আর বাবার ফুফাতো বোন কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছে। বাবা নিজেই ওকে মেরেছে। সুতারাং এবার খালামনি কে খুঁজে বের করতে হবে।
– আচ্ছা তুমি তো জানো যে ফুফাতো বোন মারা গিয়েছে তাহলে ডকুমেন্টে নাম দেখে আমায় ওভাবে জিজ্ঞেস করলে কেনো ? আঁতকেই বা উঠেছিলো কেনো ?
– সব কিন্তুর উত্তর হয়না আপু। সময়মতো দিয়ে দেবো। এখন যেটা বলছি সেটা একটু করো।
– ঠিক আছে। কিন্তু তৃতীয় প্রতিপক্ষ টা কে ?
– আমাদের মায়েদের তৃতীয় রূপ !
বলার সাথে সাথে কল কেটে দেয় শুভ্রা। শব্দ করে হেঁসে ফেলে সে। সে জানতো তার সব কথা ফারিহার অপর পক্ষ শুনছে। কারন ওয়ান সাইডেড ট্র্যাস বলতে কিছু হয়না। ফারিহাপু খানিকটা বোকা সেজন্যই তো বোকা বানিয়ে ফেলেছে। তবে এবার অপরপক্ষ এইসব কথা শুনে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। হাতে সময় দুদিন। এরপর সব পাপীদের খেলা শেষ হবে।
#চলবে