প্রণয়ডোর পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
426

#প্রণয়ডোর
পর্ব-২৭
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা

তখনই কলটা রিসিভ হলো। সার্ভেন্টের গোঙানোর আওয়াজ শোনা গেলো। তাসবির আধো আধো বলা কথাটাও শুভ্রার কানে এলো। ‘এদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ! আর আমায় এভাবে মেরে কেনো ইঞ্জেকশন পুশ করছো ??’

শুভ্রা দ্রুত কল কাটলো। ফোনটা তড়িঘড়ি করে ব্যাগে রেখে এক পা এগিয়ে ফারিহা আপুর হাত ধরে দ্রুত পায়ে লিফটে উঠে গেলো। উদ্দেশ্য গ্রাউন্ড ফ্লোর। দ্রুতই তাকে তাসবির কাছে যেতে হবে। যে করেই হোক ওকে বাঁচাতে হবে। মানুষটা সদ্য সুস্থতা পেয়েছে। তার মধ্যে আবারো? তাসবি কে মারা হয়েছে আর ইঞ্জেকশন ও পুশ করেছে সেখানকার লোকেরা। ভাবতেই বুকটা ছেঁত করে উঠলো শুভ্রার। এদিকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে ফারিহা। কোনো উত্তর দিচ্ছে না শুভ্রা। আপাতত স্বামী কে সেইফ করতে হবে। প্রাণপণে আল্লাহ কে ডাকতে শুরু করলো।

খুলে গেলো লিফটের দরজা । গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসেছে তারা। ফারিহার হাত ছাড়ে নি সে। হাত ধরেই সে আগে আগে হেঁটে চলেছে। পার্কিং লটে এসে গাড়ির দিকে পরখ করে। কাঙ্খিত গাড়িটা বোধহয় চোখের নাগালে এলো না ।

-“আপু ! তোমার গাড়ি কোথায় ?”

শুভ্রার এতো দ্রুততার সাথে কথা বলায় খানিকটা চিন্তিত হলো ফারিহা। এই মেয়েটার প্যানিক এট্যাক শুরুর লক্ষণ এটাই। নির্ঘাত ভয়ের কিছু হয়েছে , সেজন্যই গুছিয়ে কিছু বলছে না। এই ভেবেই কিছু বলবে এর আগেই শুভ্রা বলে ওঠে ,

-“আপু , লেইট করছো কেনো ? তোমার ভাইয়ের প্রাণ বিপন্নে ! প্লিজ , নিয়ে চলো গাড়ির কাছে।”

অবিশ্বাস্য কন্ঠস্বরে ফারিয়া বলে ওঠলো,
-“ক,কীহ!”
কাঁপাকাঁপা কন্ঠস্বর ফারিহার। হাতের বাঁধন আলগা করে নেয় সে। আশেপাশে তাকিয়ে সিকিউরিটি গার্ডের দেখা পায়। দ্রুত পায়ে সেখানকার টেবিলে রাখা জগ থেকে গ্রাসে পানি ঢেলে নিজে পান করে আর আরেকটা গ্লাসে পানি নিয়ে শুভ্রা কে এগিয়ে দেয়। আপুর কাজে সে অবাক। মাথা ঝাড়া মারে মুহূর্তেই । চোখ বুঁজে বড় একটা নিশ্বাস নেয় সে। আপুর দেওয়া পানি এক চুমুকেই শেষ করে ফেলে ।

হাতে খালি গ্লাস টা নিয়েই আপুকে শোধায় ,
-“আমি তাহলে ভুল কিছু করতে যাচ্ছিলাম ?”
-“তা নয়তো কি?”
-“কি ভুল?”
-“তাসবিকে বাঁচাতে যাওয়ার ভুল।”

তখনই কল আসে শুভ্রার ফোনে। ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে মিসেস মির্জার নাম্বার শো করে। বড় একটা শ্বাস ফেলে কলটা রিসিভ করে । ওপাশ থেকে শোনা যায়,
-“মা তুমি কোথায়? ”
মিসেস মির্জার এমন প্রশ্নে খানিক সেকেন্ড চুপ থেকে স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
-“এইতো আন্টি আমি গ্রাউন্ড ফ্লোরে আছি। ”
-“আমরা ডিনার করতে যাচ্ছি এখন। তুমি আসো, তোমাকে নিয়েই যাবো।”

তখনই ফারিহা শুভ্রাকে জিজ্ঞাসা করলো,
-“কি বলছে রে ?”

আপুর কথা শুনে ফোনটা কান থেকে সরিয়ে খানিকটা দূরে রেখে ফিসফিসিয়ে বলে,
-“আমি তোমায় বললাম না যে ওদের সাথে এসেছি এই মলে ? বাসায় আজ রান্না হবেনা , তাই এখানেই ডিনার করে যাবো। কিন্তু আমি এখন যেতে তো পারবো না। তাস..।”

এটুকু বলেই ফোনটা কানে ঠেকিয়ে মিসেস মির্জার উদ্দেশ্যে বলে,
-“আন্টি এতোক্ষণ এখানকার আওয়াজে শুনতে পাইনি। আপনি আবার বলবেন প্লিজ ?”

মিসেস মির্জা বোধহয় খানিক হাঁসলেন। যেমনটা একজন মা মেয়ের প্রতিত্তুরে হাঁসে। আর বললেন,
-“ঠিক আছে মা। আমি আবারোও বলছি। বলছিলাম যে , আমাদের সব কেনাকাটা তো শেষ , ডিনারে যাবে সবাই। তোমার শেষ হয়নি ? না হলেও এখন চলে আসো ! পরে খেয়ে আবার করবে নে ?”

মিসেস মির্জার প্রতিত্তুরে বললেন,
-“আমার মার্কেট করা তো শেষ। কিন্তু..”
-“কিন্তু কি?”
-“আ,,আন্টি আস…!”

তখনই ফারিহা শুভ্রার কান থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো । আর বললো,
-“আন্টি! আমি শুভ্রার বান্ধবী বলছিলাম। মলেই ওর সাথে দেখা। তো আমাদের আর পাঁচ মিনিট লাগবে। আপনি লোকেশন টা ওকে পাঠিয়ে দিন। ও আসছে। আর এটা বলতেই ইতস্তত বোধ করছে ও।”
-“আচ্ছা। ঠিক আছে। বেশি দেরি করো না কিন্তু।”
-“অবশ্যই।”

কল কেটে গেলো । শুভ্রা বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে কোমড়ে দুই হাত ঠেকিয়ে ফারিহার দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রাকে দেখে এবার ওর বান্ধবী মাখা আচরণের আভাস আন্দাজ করলো। আর সেটাই হলো। তুই সম্বোধন করে ডেকেই ফেললো ফারিহা কে ।
-“আরে বইন ! তোর ভাই মরণের মুখে। কেনো ভুলে যাচ্ছিস ? ওনার শেষবার বলা কথা আমি শুনেছি। তাই তোর ভয় লাগছে না। কিন্তু আমার লাগছে । ”

মুচকি হাঁসলো ফারিহা। এতে রাগ লাগলো শুভ্রার। তা দেখে ফারিহা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
-“ভুলে গিয়েছিস কিছু?”
-“কী?”
-“তোর হাজবেন্ড কি?”
ফারিহার এমন প্রশ্ন শুনে হাবলার মতোই উত্তর দিলো শুভ্রা।
-“মানুষ!”
-“আরে পেশায় কে ওনি?”
-“ড… ডক্টর !”

এইটুকু বলেই শুভ্রা সেখানেই এক লাফ দিয়ে ‘ইয়েএএ” বলে উঠে। খুশিতে টুপ করে নিকাবের উপর দিলেই গালে চুমু খায় শুভ্রা। ফারিহা ও জড়িয়ে ধরে ওকে।

#চলবে?

#প্রণয়ডোর
l২৮l
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা

-“তোর হাজবেন্ড কি?”
ফারিহার এমন প্রশ্ন শুনে হাবলার মতোই উত্তর দিলো শুভ্রা।
-“মানুষ!”
-“আরে পেশায় কে ওনি?”
-“ড… ডক্টর !”

এইটুকু বলেই শুভ্রা সেখানেই এক লাফ দিয়ে ‘ইয়েএএ” বলে উঠে। খুশিতে টুপ করে নিকাবের উপর দিলেই গালে চুমু খায় শুভ্রা। ফারিহা ও জড়িয়ে ধরে ওকে।
টুং করে শুভ্রার ফোনে মেসেজের নোটিফিকেশন এসেছে। আপুকে ছেড়ে দেয় সে। ফোনের ওয়ালপেপারে সেট করা অন্ধকার ছবিটায় আন্টির মেসেজ এসছে। তিনি লোকেশন পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাহলে তারা এখন রওনা দিবে। স্বস্তির শ্বাস ফেলে ফোনের সেটিং এ গিয়ে একটা সিম অফ করে দেয়। ক্লিক করে লোকেশনে। লোকেশন টা তার থেকে ১৫ মিনিট দূরত্বে দেখাচ্ছে। ফোনটা রেখে দেয় ব্যাগে।

লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে আপুকে শোধায়,
-“তাড়াহুড়োয় কি অকাজ টাই না করতে যাচ্ছিলাম !”
-“এটাকেই বলে ভালোবাসা।”
-“ভাগ্যিস তুমি তখন আমার বলে দেওয়া টেকনিক কাজে লাগালে নয়তো সে সময়ে তো কথা টাও বলতাম না।”

শুভ্রার কথায় মুচকি হাঁসে ফারিহা। নিকাব থাকায় মুখের হাঁসি টা বোঝা না গেলেও চোখ জোড়া খানিক সংকুচিত হলো। শুভ্রার গালে হাত ঠেকিয়ে তাকে শোধায়,
-“আমি তো চিনি তোকে। তুই তো জানিস ই ! আমার সন্দেহ ক্ষমতা কতখানি তা তা তো তুই জানিস ই।”

উত্তরে শুধু সে বলে,
-“হুম।”

শুভ্রা আর ফারিহা দুজন দু ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নারী। বলা যায় দুজন ই প্রতিভাবান। শুভ্রা যেকোনো সূক্ষ্ম জিনিস ধরতে পারে আর ফারিহা কোনো ঘটনার একটু খানি শুনেই বলতে পারে এর সত্যতা কতটুকু। শুভ্রা তার প্রিয় মানুষদের বিপদের বেলায় নির্বাক হয়ে যায়। মাথায় শুধু যেকোনো একটা কথাই ঘুরবে। সমাধান খুঁজে পাবে না কিংবা সমাধান বের ও করতে পারবে না। এটা ওর প্যানিক এট্যাক এর ফলাফল। শুধু তাই নয় প্যানিক এট্যাকে সে তখন কথা বলাও বন্ধ করে দেয়। তখন তাকে বোঝানো বড্ড দ্বায় হয়ে দাঁড়ায়। উন্মাদের মতো একপ্রকার আচরণ করে ফেলে সে। তাই সেই পরিস্থিতি তে তাকে কৌশলে দমিয়ে দেওয়ার জন্য একটা পন্থা হচ্ছে সেসময় শুভ্রা কে থামিয়ে পানি পান করানো। এতে কিছুটা ডাইভার্ট করানো যায় সে মনযোগ থেকে। তাই তো ফারিহা নিজের প্রতিভার সাহায্য নিয়ে শুভ্রা কে দমিয়ে দেয়।

ফের শুভ্রা জিজ্ঞাসা করে আপুকে,
-“তুমি এতো কম সময়ে কীভাবে বুজলে?”
-“ইটস্ অ্যা টেলেন্ট ব্রো!”
-“আরে বলো না?”
-“আমার ভাইয়ের বলা শেষ কথাটা আমি শুনতে পেয়েছিলাম। ভাই বলছিলো যে , ‘আমায় মেরে কিসের ইনজেকশন পুশ করছো কেনো?’। তাই না ?”
-“হু!”
-“একটু আগে তোকে যা জিজ্ঞাসা করলাম সেটা শুনে তুই আমায় জড়িয়ে ধরলি কেনো?”
-“তাসবি একজন সফল ডাক্তার। কীসের ইনজেকশন ওকে পুশ করা হয়েছে সেটা ও ভালো করেই জানবে। তার সমাধান সে নিজেই বের করে নেবে। কারন সকল প্রকার পয়জনের এন্টিডোট অনেক আগেই বিডিতে আনিয়েছি। সেটা তাসবি কে প্রথম দিন থেকেই জানিয়ে রেখেছিলাম।”

এটুকু বলে দম নেয় সে। এবার একটু ভাব দেখিয়ে বলে,
-“তাছাড়াও আমার জামাই বলে কথা! বোকা সোকা তো অবশ্যই না। সেদিন এন্টিডোট আনার কারন না বললেও আজ নিজের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সেগুলো আনার পেছনের কারন জানার সাথে সাথে নিজেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আমার প্যানিক এট্যাক এ সব গিলে ফেলেছিলাম। ভাগ্যিস…”
-“উহু। তোকে অনেকক্ষণ ধরেই ভাগ্যিস ভাগ্যিস কথা বলতে দেখছে। এটা বলা পাপ রে। ভাগ্যিস বলতে কিছু হয়না। আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আমায় উছিলা করে সময়ের কাজ সময়ে করিয়েছেন। শুকরিয়া করলে ওনার কাছেই কর।”
-“আচ্ছা! বুঝলাম। এবার তোমার কথা কমপ্লিট করো।”

গলা ঝেড়ে আবারো বলতে থাকে,
-“ভাইয়ের কথা বলাটা মূলত তোকে এখানে থেকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। নাহলে নিজে ডাক্তার হয়ে কীসের ইনজেকশন ওর বডিতে ইনজেক্ট করছে সেটা সে বুঝবে না? তারপর সেকেন্ড পয়েন্ট হচ্ছে ভাইয়ের কল আসার সাথে সাথেই আরাফের মায়ের কল আসে। কল না আসা অব্দি নিজের চিন্তাধারা নিয়ে খানিকটা কনফিউশনে থাকলেও কল আসার পর পুরোপুরি শিউর হই। আসলেই সেই শুভ্রা আর তুই শুভ্রা এক কীনা সেটা যাচাই করার একটা প্রি প্ল্যান ছিলো। নাহলে তাসবির কলের খানিক পরেই আন্টির কল আসতো না। এতো কম টাইমের ডিফারেন্স কোনো কুয়েন্সিডেন্স হতে পারে না। আমার মনে হয়েছিলো সেই আন্টির ফোন থেকে আসা কলটা মিস্টার মির্জা করিয়েছিলেন। তোকে ডিনারের নাম করে তাদের এখানে ফিরে যেতে যে বলেছিলেন সেটা আন্টি বলেনি। তখনই হয়তো মিস্টার মির্জা ডিনারে যাওয়ার কথা বলে দ্রুত তোকে আন্টিকে দিইয়ে কল দিয়েছে। যেহেতু তিনি দেবেন না। আর কোনো মেয়ের কাছে স্বামীকে বিপদের থেকে রক্ষা করার থেকে আগে কিছুই হতে পারে না। আমি না থাকলে কোনো একটা বাহানায় তুই আসতে পারবি না বলে দিতি কিন্তু তোর বাবা শিউর হয়ে যেতো যে তুই আর সে একজন ই। ব্যক্তিত্ব আলাদা , জীবন-যাপন আলাদা কিন্তু মানুষ একজন ই। পরিস্থিতি ভেদে ভিন্ন। তাই তখন ওভাবে ফোন টা কেড়ে নিয়ে তোর একটু লেইটে যাওয়ার কথা বললাম। আর আন্টি তো আমার ভয়েস চেনেন। সুতারাং সন্দেহ করবে না। আর আমি টেক্সট করে অলরেডি গার্ড পাঠিয়েছি , তুই ভাইয়ের সেইফটি নিয়ে ভাবিস না । কিছুটা দায়িত্ব আমাকেও নিতে দে। সবার দায়িত্ব নিতে নিতে ঘাঢ না বাকিয়ে বসিস ! আর যা বলছিলাম, আন্টিও ভেজালহীন মানুষ , অবশ্যই মিস্টার মির্জা কে সত্য টা বলতে পারবেন। আর তোর বাবা প্রথম স্ত্রীর নিকট যাই করুক না কেনো ইউ নো না ? এই নারীর প্রতি কতটা লয়াল ?! যার জন্য দ্বিতীয় বউকেও মেরে ফেলেছে ! মেরে ফেলা বললেও মেরে ফেলা কে অপমান করা হবে। কেননা সে তো দিয়েছে জীবন্ত কবর।”

এটুকু বলে শুভ্রার হাতে থাকা গ্লাসটা নিয়ে সে এগিয়ে গিয়ে একগ্লাস পানি পান করে । গার্ড কে ধন্যবাদের সাথে মিষ্টি হাঁসু উপহার দিয়ে গ্লাস টা রেখে ফিরে আসে আগের জায়গায়। যদিও হাঁসির কিঞ্চিৎ পরিমাণ অবলোকন করার সুযোগ নেই দারোয়ানের।

চোখ আটকালো শুভ্রার দিকে। ওর স্থীর চোখ বলে দিচ্ছে সে অভিভূত। এবার ‘অভিভূত’ বলে মেয়েটা তাকে জড়িয়ে না ধরলেই হলো। যেই বলা সেই কাজ।

তৎক্ষণাৎ , ওমা ! মেয়েটা মৃদ্যু আওয়াজে ‘অভীভূত’ বলে দিব্যি ওকে জড়িয়ে ধরেছে। হেঁসে উঠলো ফারিহা। মহেশ বাবুর একটা একশন মুভির একাংশ স্মরণে আসলো৷ যেই মুভিতে মহেশ বাবুর তীক্ষ্ণ প্রতিভা দেখে রিশমিকা ‘অভিভূত’ বলে মহেশ বাবুকে জড়িয়ে ধরেছিলো ।

কিছু সময় পর নিজ থেকেই ছেড়ে দিলো। অলস কন্ঠে বোনকে শোধালো,
-“গোয়েন্দায় তোমার যোগ দেওয়া দরকার। এতো উপস্থিত টেলেন্ট নিয়ে ঘুমোয় কীভাবে ? হুম ?”
-“ইটস্ অ্যা সিক্রেট বেইবি !”

ভেংচি কাটে শুভ্রা। বুঝতে পেরেই হেঁসে ফেলে ফারিহা। এগিয়ে এসে ওর হাতে শক্ত করে ধরে বললো,
-“তাহলে যাওয়া যাক?”

শুভ্রার ছোট্ট উত্তর,
-“হুম, অইশ্যই ! ”

_______
-“আন্টি? আপনার মেয়ে না আপনাকে মান্য করে ? পাঁচ মিনিট তো লেইট হয়ে গেলো। এখনও আসছে না যে ?”

এলিজার এমন কথা শুনে মিসেস মির্জা হাঁসফাঁস করতে শুরু করলেন। কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। শুভ্রার জন্যই সবাইকে ওয়েট করতে বলেছিলেন আর এদিকে শুভ্রার আসার নাম গন্ধ নেই। এতোক্ষণ এটা সেটা বলে থামিয়ে রাখলেও এবার এলিজা এটা বলেই বসে।
এলিজা ফের বলে,
-“আমার তো মনে হচ্ছে ও আপনার মেয়েই না। নিশ্চয়ই কিছু লুকোচ্ছেন আমাদের থেকে ? আর আরাফ ?”

আরাফের দিকে তাকায় এলিজা। আরাফ কিছু বলবে তার আগেই শুভ্রার গলা পাওয়া যায়। গম্ভীর কন্ঠস্বরের আওয়াজ আসলো,
-“ফ্যামিলি তে কিছু সিক্রেট থাকেই। তাই বলে সবাই কে সেটা বলে বেড়াতে হবে নাকি এলিজা ? আর বয়স সম্পর্ক উভয় দিক থেকেই কিন্তু আমি তোমার বড়। সুতারাং সম্মানের সহিত কথা বলবে।”

এলিজা কপাল খানিক কুঁচকিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
-“জাস্ট…। ওকে সরি। কিন্তু তুমি তোমার মাকে আন্টি কেনো বলো ?”

এলিজার প্রশ্নে ফারিহার হাত থেকে নিজের হাত আলগা করে নেয় । নরম কন্ঠে শোধায়,
-“এতোদিন পর যেহেতু ওনাদের ফিরে পেয়েছি সুতারাং এডজাস্টম্যান্টে সময় লাগবেই। আর নিজের শাশুড়ি মায়ের সাথে ম্যানারসের সাথে কথা বলবে।”

বিরক্তি তে ‘চ’ সূচক শব্দ বেরিয়ে আসে মিস্টার মির্জার থেকে।
-“সবাই থামো ! কি থার্ড ক্লাসেদের আচরণ করছো শুভ্রা?”

এই প্রথম বাবার মুখ থেকে বুঝ হওয়ার পর এহেন ডাক শুনলো। দু’পা পেছাতে চেয়েও পেছালো না। কারন এক বাড়িয়ে , সেই এক পা পেছনে নেওয়ার অভ্যেস ওর নেই। গলায় কাঠিন্যতা এনে মিসেস মির্জা কে শোধায়,
-“আন্টি রাস্তায় জ্যাম ছিলো। তার মাঝে আমি আইসক্রিম খেয়েছিলাম সেজন্য দেরি হয়েছে। দুঃখিত আমি! ”

মুচকি হেঁসে মিসেস মির্জা উত্তরে বলেন,
-“ব্যাপার নাহ ! বসে পড়ো !”

শুভ্রা ছোট্ট করে ‘হুম’ বলে ফারিহা আপুর দিকে এক পলক তাকালো। কন্ঠ খানিকটা উঁচু করে বললো,
-“আমার ফ্রেন্ড আমার সাথে এসছে। আমাদের সাথে ডিনার করলে কি কারো সমস্যা হবে?”

#চলবে

#প্রণয়ডোর
l২৯l
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা

-“আন্টি রাস্তায় জ্যাম ছিলো। তার মাঝে আমি আইসক্রিম খেয়েছিলাম সেজন্য দেরি হয়েছে। দুঃখিত আমি! ”

মুচকি হেঁসে মিসেস মির্জা উত্তরে বলেন,
-“ব্যাপার নাহ ! বসে পড়ো !”

শুভ্রা ছোট্ট করে ‘হুম’ বলে ফারিহা আপুর দিকে এক পলক তাকালো। কন্ঠ খানিকটা উঁচু করে বললো,
-“আমার ফ্রেন্ড আমার সাথে এসছে। আমাদের সাথে ডিনার করলে কি কারো সমস্যা হবে?”

মিসেস মির্জা খানিকটা কেশে উত্তর দিলেন,
-“তোমার বান্ধবী আমার আরেক মেয়ে । সুতারাং কারোর কোনো সমস্যা নেই।”

অতঃপর ফারিহার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে নরম কন্ঠে বলে উঠেন,
-“বসো মা।”

শুভ্রা এগিয়ে গিয়ে বাবার পাশটায় বসে পড়লো। আজ তার মধ্যে কোনো বিরক্তির দেখা মিললো না। বরঞ্চ খানিকটা খুশি। হয়তো বা বাবার পতনের আগ মুহূর্ত টা খানিক স্মৃতি তে রাখতে চায় সে। সেই শেষ কবে বাবার সাথে খাবার খেয়েছিলো কে জানে !

-“ ‘ফারিহা’ বোস ।”

শুভ্রার কন্ঠে ‘ফারিহা’ নামটা শুনেই পিলে চমকে উঠলো আরাফের। এতোক্ষণ নুঁয়ে রাখা মাথা সোজা করে শুভ্রার দৃষ্টি অনুসরণ করলো। বাকীদের চেনা গেলেও বোরকা দিয়ে আবৃত মেয়েটিকে সে চিনলো না। শুভ্রার মতোই সে বোরকা পড়েছে। নিকাবের কারনে দেখা যাচ্ছেনা। ‘ফারিহা’ নাম টা বোধহয় এই মেয়েটার ই। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরখ করলো কিছু সেকেন্ড। শুভ্রার হাত ধরে মেয়েটি বসলো। কানে আসলো মেয়েটির কন্ঠস্বর ,

-“না আন্টি , আমি বেশি কিছু খাবো না। যেটা বললাম সেটাতেই হবে।”
-“কিন্তু ডিনারে কেউ স্যান্ডউইচ খায়?”
-“আন্টি, আমি খাই।”

ফারিহার সোজাসাপটা উত্তর। মিসেস মির্জা আর কিছু বললেন না। সকলেই নিজেদের মতো খাবার অর্ডার করলো। তবে ফ্যামিলি ডিনারের কোনো একজন সদস্যের হৃদপিন্ড ধীরে ধীরে চলতে লাগলো। দম আটকে এলো তার। এতোবছর পর সে অতীতের সম্মুখে। অতীতে বলা মেয়েলি কন্ঠের একটা বাণী স্মরণে এলো তার।
-“হুটহাট রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে থেমে যাবেন না। কারন যে অতীত আপনি ফেলে এসছেন সে অতীতের ভার আপনি বহন করতে পারবেন না।”

দ্রুত গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে গিললো। ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় যন্ত্রনা ভুলে সুন্দর সু-শ্রী মুখটায় মুহুর্তেই হিংস্রতা জায়গা করে নিলো। রক্তচক্ষু নিয়ে শুভ্রার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো । এই মেয়েটা তাহলে ফারিহা কে এখানে এনেছে। এখন যদি বাবা এটা জানতে পারে। তবে নির্ঘাত ফারিহা কে শেষ করে দেবে।

ভাবতেই দম আটকে এলো আরাফের। প্রিয় মানুষ টা পাশে না থাকলেও অন্তত বেঁচে থাক। এটাই যথেষ্ট। খাবার এলো তখনই। সার্ভ করা হলো একেকজনের সামনে।

______

-“তর সাহস কীভাবে হয় ফারু?”
-“কীসের সাহস আর এইভাবে চেপে ধরেছেন কেনো?”
-“আগে আমায় উত্তর দে।”
-“আদুরে গলায় ডেকে তুই তুকারি করছেন?”
-“হ্যাঁ করছি।”
-“ছা,ছাড়ুন। পরনারীকে এইভাবে চেপে ধরতে বিবেকে বাঁধে না?উফফ। ছাড়ুন , প্লিজ। ”
-“ফারুউউ।”
-“একদম চিল্লাবেন না। অস্বস্তি হচ্ছে আমার। ছেড়ে দিন।”

আরফ ফারিহার দুইহাত চেপে ধরেছিলো। স্যান্ডউইচ নেওয়াতে তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়া শেষ হয় ওর। তাই ওয়াশরুমের কথা বলে চলে আসে। এর দু’মিনিট পরেই আরাফ একই বাহানায় চলে আসে। এসেই ফারিহার দুহাত চেপে ধরে সে। আর তারপর ই উপরোক্ত ঘটনাটি ঘটে। শেষোক্ত কথাটি বলতেই ছিটকে দূরে সরে আসে সে। মাথার চুলগুলো হাতে ঝাড়া মারে। জোড়ে একটা শ্বাস নিয়ে ফারিহা কে শোধায়।

-“এখান থেকে চলে যাও ফারু। প্লিজ।”

আরাফের এমন কথার মানেটা তো ফারিহা জানেনা। তাই উলটো কিছু ভাবলো। তাচ্ছিল্যের হাঁসি হাঁসলো সে। ভাবলো , আরাফ বোধহয় ভেবেছে সে তার বিয়ে ভাংতে এসছে।
গলা ঝেড়ে নিলো সে। খানিকক্ষণ পর দম নিয়ে বললো,

-“এমন পূর্ণতা তোমাকে পেতে দেবো যা পেয়েও তুমি আফসোস করবে। প্রতিনিয়ত ধুঁকে ধুঁকে মরবে। নিজের এককালীন ভালোবাসা কে স্ত্রী রূপে পেয়েও তুমি আমাকে না পাওয়ার আফসোস করবে।”

_____

-“সব রেডি করো। আমি আসছি।”
-“ওকে স্যার।”

কল কেটে ব্যক্তিটি ফোনটা পকেটে রেখে দিলো। টেবিলের উপরে রাখা ক্যাপ টা মাথায় ঠেকিয়ে এগিয়ে দাঁড়ায় আয়নায়। মাস্ক পড়ে নিলো মুখে। নিজেকে দেখে হেঁসে নিলো একবার। এখন আর কেউ বুঝবে না এটা ইয়ানাত তাসবি…..।

#চলবে