প্রণয়ী পর্ব-০৫

0
124

#প্রণয়ী
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
|০৫.|
(লেখা কপি করা নিষেধ)

…………
‘একটা আস্ত জ ন্তু জা নো য়া র জন্ম দিয়েছি। ছিঃ আমার ঘৃণা হয় নিজের উপর এমন ছেলে জন্ম দেওয়াতে।’
রমিজউদ্দিন কথাগুলো বলে কটমট চোখে জাইনের দিকে তাকায়। মিসেস পারুল এসে জাইনকে জিজ্ঞেস করে,’কিরে আবার কি করেছিস?’

রমিজউদ্দিন জবাব দেয়,’এলাকায় সে গুন্ডামি করে বেড়ায়। আজকে এক ছেলে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। লোকজন আমাকে ধরে ধরে জিজ্ঞেস করতেছে আমি কি ওরে শাসন করি কিনা। চিন্তা করতে পারো আজকে ওর কারণে আমার মান সম্মান সব ডুবলো।’

জাইন এতক্ষণে মুখ খোলে,’ওকে শুধু মেরেছি শুকরিয়া করো হাড় ভাঙিনি।’

জাইনের কথা শুনে রমিজউদ্দিন আরো ক্ষেপে যায়।
‘বাপের মুখে মুখে তর্ক করিস বেয়াদব। টাকা দেওয়া বন্ধ করলে দেখবো কীভাবে চলিস। মানুষ খেটে মরে আর সে বাপের টাকায় সমাজ সেবা করে বেড়ায়।’

মিসেস পারুল বলে,’আগে শুনি ঘটনা কি।’
রমিজউদ্দিনের মোটেও আগ্রহ নেই জাইনের কথা শোনার। সে হনহনিয়ে জাইনের কক্ষ হতে প্রস্থান করে। মিসেস পারুল তাকে আটকানোর চেষ্টা করলো জাইন বাঁধা দেয়।

রমিজউদ্দিন যেতেই জাইন বলে,’আমি কি করি কেনো করি এতো কিছু বললেও বাবা বুঝবে না। এর থেকে ভালো সে নিজেই উপলব্ধি করুক। আমার বিশ্বাস সে একদিন ঠিক বুঝতে পারবে।’

ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মিসেস পারুল বলে,’তোর উপর আমার পূর্ণ ভরসা আছে। তোর বাবা মান সম্মান যাবে এমন কিছু তুই করবি না।’
মায়ের কথা শুনে জাইন মুচকি হাসে। ছেলেকে বুঝিয়ে মিসেস পারুল কক্ষ হতে বেরিয়ে যায়। মিসেস পারুল যেতেই জাইন পাঞ্জাবী খুলে চেয়ারে রাখে এরপর উন্মুক্ত শরীরে বিছানায় ধপ করে উপুড় হয়ে শোয়। এখনো তার মস্তিষ্কে ছাদের ঘটনাটা ঘুরছে। প্রিয়তাকে এতো কাছ থেকে দেখবে ভাবেনি সে। আচ্ছা প্রিয়তা কি কাল আবার ছাদে আসবে? নাকি তাকে ভুল বুঝে আসবে না? জাইনের মস্তিষ্ক দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। এক পক্ষ বলছে প্রিয়তা কেনো আসবে? প্রিয়তা তো তাকে অপছন্দ করে। আরেক পক্ষ বলছে প্রিয়তা নিশ্চয়ই আসবে। নানান রকম জল্পনা কল্পনা শুরু করে দেয় জাইন।

…..

প্রিয়তা নিজের পড়ার টেবিলে বসে আছে। আজকে দোকানের চাবিটা না পেলে বাসার মধ্যে তুমুল ঝামেলা লাগতো এটা সে নিশ্চিত।
সন্ধ্যার কথা তার মনে পড়ে যখন সে জাইনের কাছ থেকে চাবিটা নিয়ে ছাদ থেকে নেমে ঘরে আসে। তখনো তার মা ঘরে আসেনি। সে আসে আরো আধা ঘন্টা পর। ততক্ষণে তার বাবাও ফিরে আসে। সব কিছু ঠিকই ছিলো তার ভাই তুহিন ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার আগ পর্যন্ত।
তুহিন বাসায় ফিরতেই আসার ঘরে হৈচৈ পড়ে যায়। তার গলা পেয়ে প্রিয়তা মাথায় ওড়না টেনে নিজের কক্ষ হতে বের হয়।
‘এখন তোমার দোকান ছাড়াতে আমাকে টাকা দিতে হবে? দেখতেছো তো মাস শেষে কয়টা টাকা পাই। তারপরও কীভাবে আমাকে টাকার কথা বলো?’

বেল্লাল হোসেন বলে,’আমার কথাটা একটু শোন।’

‘কি শুনবো? এখন এই দোকান কীভাবে ছাড়াবা?’
তুহিনের কথা শুনে বেল্লাল হোসেন মাথা নিচু করে ফেলে।
মিসেস মাসুমা বলে,’দেখ বাপ শত হলেও উনি তোর বাবা হয়। রাগ না করে তুই দেখ টাকার ব্যবস্থা করতে পারিস কিনা।’

প্রিয়তা বাবার এ অবস্থা দেখে সহ্য করতে পারে না। এগিয়ে যায় বাবা আর ভাইয়ের মাঝে।
‘বাবা তুমি ভাইয়াকে বলনি চাবি ফেরত পেয়েছো দোকানের?’
প্রিয়তার কথা শুনে বেল্লাল হোসেন তাকায়। প্রিয়তা কি বলছে সে বুঝতে পারেনা।
তুহিন জিজ্ঞেস করে,’কীসের চাবি? কি হয়েছে খুলে বল।’

প্রিয়তা জবাব দেয়,’বাবাকে দোকানের চাবি ফেরত দিয়েছে। বাবা এটাই বলতে চাচ্ছিলো।’

তুহিন মিসেস মাসুমার দিকে তাকিয়ে বলে,’কিন্তু মা যে বললো ওরা চাবি নিয়ে গেছে। দুরু মা শুধু শুধু না জেনে আমাকে দিয়ে চিল্লাপাল্লা করালা। জানে মন মেজাজ খারাপ থাকে তবুও এসব করো। এখন ভাত বাড় খেতে বসবো।’

তুহিন নিজের কক্ষের দিকে যেতেই মিসেস মাসুমা রান্নাঘরে ছুটে খাবার আনতে। এই ফাঁকে প্রিয়তা তার বাবাকে চাবিটা দেয়। বেল্লাল হোসেন চাবির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বিষয়টা এড়িয়ে যায়। চাবি পাওয়ার পর বেল্লাল হোসেনের চোখেমুখে স্বস্তির নিঃশ্বাস দেখে প্রিয়তার প্রাণ জুড়ায়। মনে মনে জাইনকে ধন্যবাদ দেয়।
______________

ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে তিন বান্ধবী মিলে হাসি ঠাট্টা করতে করতে যাচ্ছিলো। রিমি ঘটনা বলছে আর তা শুনে হৈমন্তী আর প্রিয়তা হেসে চলেছে। হঠাৎ রিমির নজর যায় রাস্তায় বাইকে বসা মারুফের দিকে।
রিমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,’আজকে সরি বলিয়েই ছাড়বো। এই তোরা দাঁড়া আমি আসছি।’

টঙের সামনে বাইক থামিয়ে চা আর সিগারেট খাচ্ছিলো মারুফ। ইতিমধ্যে তাকে শাকিল বারবার কল দিচ্ছে যাওয়ার জন্য কিন্তু কল না ধরে আরামসে চা-সিগারেট খাচ্ছল। অবশ্য এখন না খেয়ে গেলে পরে কখন সিগারেটের দেখা পাবে জানে না সে। তাই আগে নিজের ইচ্ছে পূরণ করছে এতে শাকিলের গালি খেলেও তার সমস্যা নেই।

‘এই যে মিস্টার আপনি দেখি অভদ্র।’
মেয়ের গলা পেয়ে মারুফ পাশ ফিরে তাকায়। হৈমন্তী আর প্রিয়তা বুঝতে পারছে না রিমি কি করতে চাইছে। প্রিয়তা মারুকে দেখে চিনে ফেলে। জাইনের সাথে সবসময় মারুফকে দেখে তাই। সে চুপ করে আছে কারণ যদি বলে মারুফকে সে চিনে তাহলে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।

মারুফ জবাব দেয়,’জি মিস আপনি আমাকে কিছু বলছেন?’

রিমির চক্ষুদ্বয় বড় বড় হয়ে যায় মারুফের প্রশ্নে।
‘এই যে হ্যালো নাটক করতে হবে না। সেদিন মেলায় ধাক্কা দিয়েছিলেন তারপর সরিও বলেননি। এখন সরি বলুন।’

সিগারেটে টান দিয়ে মারুফ বলে,’ও আপনি! আপনি তো সেই মেন্টাল কেস মহিলা।’

মারুফের কথা শুনে রিমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
‘কিহ আমি মেন্টাল কেস? আবার মহিলা? আপনি চরম অভদ্র।’
মারুফ রিমির কথায় কান না দিয়ে বাইকে চড়ে বসে। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে রিমির পায়ের কাছে ফেলে।

‘থ্যাংকিউ আমি এটা জানি। এখন চায়ের আর সিগারেটের দাম পরিশোধ করুন। ওকে বায় মেন্টাল কেস।’
কথাগুলো শেষ করে বাইক টান দেয়। শো শো করে বাইকটা স্থান ত্যাগ করে। রিমির মন চায় হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে। ছেলেটাকে অপমান করতে এসে নিজেই অপমানিত হলো তার উপরে চা সিগারেটের বিল দেওয়া লাগবে। হৈমন্তী আর প্রিয়তা এসব দূর থেকে দেখে মুখ চেপে হাসে। তারা শুধু পারছে না রাস্তায় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে। রিমি তাদের দিকে তাকাতেই তারা এমন ভান করে যেনো কিছুই করেনি। দু’জনে এগিয়ে এসে রিমিকে শান্তনা দেয়। বিল মিটিয়ে বাসার পথে রওনা দেয় তিনজনে। মনে মনে রিমি প্রতিজ্ঞা করে আবার দেখা হলে এর শোধ নিবে।

……

সন্ধ্যা বেলা টিউশন শেষে বাড়ি ফিরে আসে প্রিয়তা। বাহির থেকে আসার পর বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। এরপর পড়ার টেবিলের কাছে আসে পড়তে বসার জন্য। আজকে বেশ কিছু পড়া আর এসাইনমেন্ট বাকি। চিন্তা করে সবগুলো শেষ করার। কক্ষের জানালার পাশেই তার পড়ার টেবিল। পর্দাটা এক পাশে সরিয়ে বই বের করে মেলে। কিছুক্ষণ পড়ার পর তার মনোযোগ ভাঙে বাইকের শব্দে।

অনেকক্ষণ ধরে বাইকের শো শো শব্দ হচ্ছে। বিরক্তি নিয়ে জানালার বাহিরে প্রিয়তা দৃষ্টি রাখে। দেখতে পায় একটা বাইক গোল গোল ঘুরছে। একটু পর বাইকটা থামলে দেখে তাতে রফিক বসা। রফিক আশেপাশে তাকিয়ে এরপর তার দিকে তাকায়। আঙুল উঁচিয়ে ছাদের দিকে ইশারা করে। এতক্ষণে প্রিয়তার মনে পড়ে ছাদের কথা। ঘড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে চিন্তা করে যাবে কিনা। গত কালকের উপকারের জন্য জাইনকে এখনো ধন্যবাদ জায়নায়নি সে। চিন্তা করে গিয়ে ধন্যবাদ জানাবে আর নিষেধ করবে ছাদে আসতে। চিন্তা মাফিক চেয়ার ছেড়ে উঠে নিজ কক্ষ হতে বের হয়।
মিসেস মাসুমা পাশের ফ্ল্যাটের টিভিতে সিরিয়াল দেখতে গেছে। তাদের বাসার টিভি নষ্ট তাই। উনি প্রচুর গল্প প্রিয় আর সিরিয়াল প্রেমি। প্রিয়তা গল্প করতে তেমন পছন্দ করে না তার উপর কথা বলে কম তাই মিসেস মাসুমা পাশের ফ্ল্যাটে চলে যান।

প্রিয়তা নিজের কক্ষের দরজা আর ফ্ল্যাটের দরজা টেনে ছাদের দিকে পা বাড়ায়। তার দুরুদুরু বুক কাঁপছে। কেউ দেখে নিলে কেলেঙ্কারি হবে।

ছাদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রিয়তা শেষবার চিন্তা করে ভেতরে যাবে কিনা। সকল ভাবনা পাশে রেখে ছাদে প্রবেশ করে সে। ছাদে আসতেই পাশের ছাদে চোখ বুলায়। পা ঝুলিয়ে কেউ ছাদের কিনারায় বসে আছে। এভাবে বসে থাকাটা বেশ সাহসের কাজ। গভীর রাতে এভাবে কাউকে বসে থাকতে দেখলে মানুষটা অক্কা পাবে। আজগুবি ভাবনা বাদ দিয়ে প্রিয়তা কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। চলে যাবে নাকি জাইনের অপেক্ষা করবে দোটানায় পড়ে যায় সে।

‘একচল্লিশ মিনিট ধরে আমি তোমার অপেক্ষা করছি।’
জাইনের কন্ঠ পেয়ে প্রিয়তা কিনারায় বসে থাকা মানুষটার দিকে তাকায়। অন্ধকারে বসে থাকায় চেহারা অস্পষ্ট। তাই তো বুঝেনি এটা জাইন। এখন প্রিয়তা কি বলবে খুঁজে পায় না। ছেলেটা এতক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করছিলো? কিন্তু কেনো? সে কি কিছু বলবে? একটু পর জাইন সেখান থেকে উঠে ছাদের কিনারায় এসে দাঁড়ায়। ছাদটায় রেলিং নেই তাই তো সহজেই এই ছাদে আসা যাওয়া করা যায়।

‘প্রিয়।’
হঠাৎ জাইনের গলায় প্রিয় ডাকটা শুনে প্রিয়তা থমকে যায়। দ্বিতীয়বারের মতো জাইনের মুখে এ ডাকটা শুনলো সে। চোখ তুলে পাশের ছাদে তাকায়। আবছা আলোতে পুরুষালী অবয়ব স্পষ্ট। জাইনের পরনে পাঞ্জাবী আর জিন্স তবে তার উপর কটি পরা। দু হাত জিন্সের পকেটে গুঁজে রেখেছে সে।

জাইন আবারো শুধায়,’কিছু বলছো না কেনো?’

প্রিয়তা নিজেকে সামলে বলে,’আমি আপনার সাথে দেখা করতে আসিনি। এমনিতেই এসেছি ছাদে ঘুরতে সাথে আকাশ-বাতাস দেখতে।’
শেষের কথাটা বলে প্রিয়তা জিহ্বে কামড় বসায়। ইশ কি বলতে কি বলে ফেলেছে সে!
প্রিয়তা মনে মনে বলে,’লজ্জা! লজ্জা! আজকে তোর মাথা কাটা যাবে প্রিয়তা।’

প্রিয়তার কথা শুনে জাইন বেশ মজা পায়।
‘তো কেমন লাগছে রাতের এই আকাশ-বাতাস দেখতে?’

‘যেমনই লাগুক আপনাকে কেনো বলবো?’

প্রিয়তার ত্যাড়া কথা জাইন গায়ে মাখে না।
‘বলতে হবে না শুধু এটা বলো আকাশে চাঁদ টাকে দেখতে পাচ্ছি না। আচ্ছা চাঁদ কোথায় লুকিয়ে আছে সেটার খোঁজ করতে এসেছো?’

জাইনের কথা শুনে প্রিয়তা কি বলবে খুঁজে পায় না।
‘চাঁদ নিয়ে গবেষণা করবো নাকি আকাশ নিয়ে তা আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করি না। আপনি আপনার কাজ করুন আমি আমার কাজ করি।’
কথাগুলো বলে ছাদের রেলিং এর কাছে গিয়ে দাঁড়ায় প্রিয়তা। মৃদু হেসে জাইন ও তার বরাবর দাঁড়ায়। প্রিয়তা আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়।

‘এতো রাতে মেঘলা আকাশ দেখতে এসেছো?’
কথার জবাব দেয় না প্রিয়তা।
নিরবতায় পেরিয়ে যায় অনেকক্ষণ। কেউ কোনো কথা বলে না। জাইন বারবার প্রিয়তার দিকে তাকায় এই আশায় যে সে কিছু বলবে। শেষে সে হার মানে।
‘তোমার কি কিছু বলার নেই?’

জাইনের প্রশ্ন শুনে প্রিয়তা তার দিকে তাকায়।জাইনের হাবভাব দেখে প্রিয়তার মনে হয় সে কিছু বলতে চায়।
‘আপনার বলার আছে?’

‘আছে কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছি না।’

‘ইচ্ছে হলে বলে ফেলুন নইলে ভেতরের কথা ভেতরেই রাখুন।’

প্রিয়তার কথা শুনে জাইন একটু সাহস পায়। এতো সাহসী পুরুষ যে কি না এক নারীর সামনে আসলে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।

‘আমরা কি বন্ধু হতে পারি?’

‘হঠাৎ আর তাছাড়া আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি এখনো।’

প্রিয়তার কথা শুনে জাইনের মুখ চুপসে যায়।
‘কারণ খুঁজতে হলে তো তোমাকে আমার সাথে সময় কাটাতে হবে। রোজ এক ঘন্টা আমার সাথে কাটাও তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিও কি করবা।’

‘আপনি আমার বাবার অনেক বড় একটা উপকার করেছেন সেইজন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ কিন্তু তাই বলে আপনার এসব আবদার মেনে নিবো যদি ভেবে থাকেন তাহলে ভুল ভাবছেন। এমনিতেও আপনার মতো গুন্ডাকে আমার অপছন্দ। শুধু উপকার করেছেন বলে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ফারদার আপনাকে যেনো এখানে না দেখি। আপনার মান সম্মান না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে।’

প্রিয়তার কথায় ব্যথিত হয় জাইন। তার প্রিয় তাকে কি ছেছড়া ছেলে ভাবলো? সে কি ভেবেছে জাইন বাকি ছেলেদের মতো তার পিছন পিছন ঘুরছে? বিষয়টা ভেবেই জাইনের কেমন লাগে।

জাইনের কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে প্রিয়তা গলা ঝেরে বলে,’যাইহোক গতকালকের জন্য ধন্যবাদ। আপনার কাছ থেকে উপকার পাবো আশা করিনি। ভালো থাকবেন,আসি।’

কথাগুলো বলে প্রিয়তা হাঁটা দেয়।

‘তোমার কথা রাখবো তার আগে যদি তুমি আমার একটা কথা রাখো।’

জাইনের কথা শুনে প্রিয়তা পিছনে ঘুরে তাকায়।

জাইনের নিঃসংকোচে আবদার,’তোমার সাথে এক কাপ চা পান করতে চাই প্রিয়।’

‘ভেবে দেখবো আর আপনি আমাকে এই নামে ডাকবেন না। আমার বিরক্ত লাগে’

প্রিয়তার কথা শুনে জাইন হাসে। আবছা আলোতে তার হাসি মুখ চমৎকার লাগছে। প্রিয়তা চোখ সরিয়ে ফেলে। এভাবে তাকিয়ে থাকলে সে নির্ঘাত জাইনের চোখের গভীরে ডুবে যাবে।

‘লাগুক তবুও ডাকবো প্রিয় প্রিয়তা।’
জাইনের কথা শুনে প্রিয়তা জাইনের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলায়। প্রিয়তা মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে,’জাইনের প্রিয় ডাকটা এতো মধুর কেনো? তার তো বেহায়ার মতো বারবার শুনতে ইচ্ছে করে।’

আচমকা জাইন ডেকে ওঠে,’প্রিয়..’
প্রিয়তা চমকায়। ইশ! জাইন কি তার মনের কথা শুনতে পেলো?

………..
(চলবে..)