প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব-১৮+১৯

0
386

#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ১৮ #লেখনীতে_রেহানা_পুতুল

” ফুলের বনে দারুন খরা, চাই অনেক বৃষ্টি।
শুদ্ধ জলে চাই ভিজাতে কামনারই দৃষ্টি। ”

পিয়াসা আপ্লুত স্বরে ধীর গলায় জানতে চাইলো আয়মানের কাছে ,

এত প্রেম , এত অনুরাগ, এত নিবেদন,এত আরাধনা, হৃদয় কুঠিরে পুঞ্জীভূত রেখে এতদিন কিভাবে ছিলেন আপনি ?

আয়মান কামুক চাহনিতে পিয়াসার চোখে অপলক চেয়ে রইলো। পিয়াসা দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই আয়মান পিয়াসার দুগালে হাত দিয়ে তার দিকে তাক করে ধরলো।
বলল,
দেখি কতসময় ধরে তুমি স্থির চোখে আমার চোখে চোখ রাখতে পারো। চোখের পাতা পড়ে গেলেই খেলায় হেরে যাবে। দুজনের যে জিতে যাবে অর্থাৎ যার চোখের পাতা পরে নড়ে উঠবে। সে যা চাইবে এই বাসর রাতে তাই হবে।

দূর! আমি ঘুমাব। পারবোনা। কিভাবে চেয়ে থাকব। কেমন যেন লাগছে। আহ্লাদী ভঙ্গিতে বলল পিয়াসা।

তার মানে পরাজয় মেনে নিলে?

আমি খেলা বয়কট করলাম। গণতন্ত্র বলে কিছু আছে দেশে।

ওরে বাহানারে। গণতন্ত্র নাই এখন দেশে। একনায়কতন্ত্রেই দেশ চলে। সো আমিও এখন একনায়কতন্ত্রগিরি ফলাব।

খবরদার ভালো হবেনা বলছি স্যার। অধিকারের সাথে বলল পিয়াসা।

স্যারের খেতা পুড়ি। হালকা শীতে এই ঘোর নিশিতে আজ ডাকাত হবো আমি । শীত চলে যাচ্ছে। গ্রীষ্মে ডাকাতি করে এই সময়ের মতো মজা পাওয়া যাবেনা। এত ভয় কেন? তুমি না এই ডাকাতের কাছে স্বেচ্ছায় লুটপাট হতে চাও?

কই একদম নাতো। ঠোঁট উল্টিয়ে বলল পিয়াসা।

এমন পবিত্র মধুময় রাতে মিথ্যা বলতে নেই। জিহবা খসে পড়বে। শুন বলে, আয়মান পিয়াসার কোল থেকে মাথা সরিয়ে নিল। বালিশে মাথা রাখল। সিরিয়াস মুডে বলল,
এবার তোমার শুরুতে করা প্রশ্নের আনসার শুনো,
এই দুটি বছর জাস্ট তোমাকে মিস করতে হতো প্রতিটিমুহুর্তে। অনুভবে খুব চাইতাম তোমাকে । পেতাম ও। তখন তোমাকে খেয়ালমতে মিশে ফেলতাম আমার মানসপটের নরম গালিচায়।

উঁহু! আর শুনতে চাইনা। বলে পিয়াসা আয়মানের মুখ চেপে ধরলো হাতের তালু দিয়ে। আয়মান হাত সরিয়ে দিল পিয়াসার।

তপ্ত স্বাস ছেড়ে বলল,
” মানুষ হওয়ার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হলো কাউকে কিছু বলতে চেয়েও না বলতে পারা। ”

এই দহন ভারী ভয়ানক পিয়াসা। আচ্ছা বেশ রাত হয়ে গেল। আসো ঘুমাই। শাড়ি গহনা চেঞ্জ করো। নয়তো তুমিই আরাম পাবেনা। পিয়াসা হুম বলে বিছানা থেকে নামতে যাচ্ছে। আয়মান বাধা দিল। নামতে হবেনা বউ। বিছানার উপরেই চেঞ্জ করো।

পিয়াসা রাগী চোখে চাইতেই,
আয়মান হ্যাঁচকা টানে পিয়াসাকে তার পাশে শুইয়ে দিল।

আজব! কি সমস্যা আপনার?

সমস্যা গুরুতর। চুপ বলছি। একদম চুপ। আমিই সব খুলে নিচ্ছি একে একে।

আয়মানের পেশীশক্তির কাছে পিয়াসা হেরে গেল। ছোট্ট অবোধ শিশুর মতো একপাশ হয়ে চুপটি করে শুয়ে রইলো। আয়মান যত্ন করে পিয়াসার কানের দুল জোড়া খুলে নিল। গলা থেকে নেকলেস খুলে নিল। হাত থেকে বালা গুলো খুলে নিল। মাথা থেকে বিয়ের লাল ওড়নাটি সরিয়ে নিল। খোঁপা থেকে চুলের কাঁটাগুলো খুলে চুলকে পিয়াসার সারা পিঠে ছড়িয়ে দিল। চুলের ভাঁজে নাক ডুবিয়ে দিল।

মনে মনে, আহ! কি সোঁদা গন্ধ। মুখ ফিরানো দায়। আমার প্রেমিক হৃদয়ে ঝড় তুলতে এমন কেশবতীর কেশই যথেষ্ট। চুল সরিয়ে পিয়াসার ঘাড়ে নাক মুখ ঘষতে লাগল। পিয়াসা কেঁপে উঠলো। আয়মান টের পেল কিছু। পিয়াসার শাড়ি খুলে একপাশে রেখে দিল। কম্বলের নিচে পিয়াসাকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। পিয়াসার দুই হাতের আঙ্গুলের ভিতর নিজের দুই হাতের সব আঙ্গুল ঢুকিয়ে পেরেকের মতো আটকে ফেলল।

পিয়াসা আস্তে করে বলল,
এমন করছেন কেন? কি করবেন?

তেমন কিছুইনা। জাস্ট চোরের মতন অল্পস্বল্প কিছু নিব। ডাকাতের মতো লুটপাট করবো যেদিন স্বইচ্ছায় তুমি ধরা দিবে। ঠিক সেদিন। হাত ছেড়ে দিল আয়মান। পিয়াসার কোমরে হাত দিয়ে খামচি দিয়ে ধরল। পিয়াসা কুঁকিয়ে উঠল। আঃ লাগছেতো। রাক্ষস নাকি আপনি?

হ্যাঁ ঠিক তাই। যা মন চায় বল। কোন রক্ষা তাই।

প্লিজ আমি ঘুমাব। আপনিও ঘুমান না। আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি?

হারাতে দিবনা কভু তোমায়। তুমি আমার আরাধ্য। তুমি আমার ঘোর লাগা ভোর। তুমি আমার নেশা।

তুমি ঘুমাও পিয়াসা। আমি একটু ভালোবাসার সুরা পান করেই ঘুমিয়ে যাব। এর অতিরিক্ত কিছুই আজ হবেনা। প্রমিজ কেশবতী আমার।

আচ্ছা তাই যেন হয়। পিয়াসা অবসাদগ্রস্ত শরীর এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে খানিক বাদেই । আয়মান নেশাতুর চোখে চোরের মতো পিয়াসাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। তার প্রচন্ডভাবে মন চাচ্ছে পিয়াসার পা দুটো দেখা। গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে থাকা পিয়াসার উদাম পায়ের কথা মনে হলো তার। দুষ্ট দুষ্ট মন নিয়ে বিড়াল পায়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

দেখল পিয়াসা গভীর তন্দ্রায় নিমগ্ন হয়ে আছে। আয়মান পিয়াসার পায়ের কাছে গিয়ে অতি সন্তপর্ণে কম্বল সরিয়ে নিল। লাল পেটিকোটটি হাঁটু অবধি তুলে নিল। সুবহানাল্লাহ! এত মোহনীয় হয় নারীর পা*যুগল। আমিতো খুন হয়ে গেলাম।
লেখিকা রেহানা পুতুল এর সাথেই যুক্ত হবেন দারুণ স্বাদের সব গল্প পেতে। আয়মান পিয়াসার ফর্সা ধবধবে পায়ের পাতায় ও আঙ্গুলগুলোতে অজস্র চুমু খেল। মোলায়েল করে চুমু খেতে খেতে হাঁটু অবধি ঠোঁট নিয়ে গেল। পিয়াসা নড়েচড়ে উঠলে আয়মান তার পা ঢেকে দিয়ে সরে গেল।

আয়মানের পিপাসায় গলা শুকিয়ে চৈত্রের মাঠ হয়ে গেল। টেবিল থাকা মগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে নিল। গলা উঁচিয়ে ঢকঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নিল। বারান্দায় চলে গেল। পরপর দুটো সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে নিজেকে নেশা থেকে মুক্ত করলো। বেশ সময় পার হয়ে গেলে পিয়াসার পাশে এসে ঘুমিয়ে পড়ল।

আলো ফোটা ভোরেই পিয়াসা জেগে গেল। দেখল আয়মান ঘুমিয়ে আছে। মিষ্টি হাসি দিয়ে নেমে গেল লাজুক লাজুক মুখে। ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে একটি জামদানি শাড়ি পরে নিল। কারণ তার শাশুড়ী আগেই বলে দিয়েছে বিয়ের পর কিছুদিন যেন বাসায় শাড়িই পরে। নতুন বউ শাড়ি পরা দেখতেই আকর্ষণীয় লাগে। তাছাড়া বাঙালী মেয়েদের শাড়িতেই বেশ মানায়।

পিয়াসা রুম থেকে বের হয়ে গেল। শাশুড়ীকে পা ধরে সালাম দিল। বিয়ে উপলক্ষে বাসায় নিকটাত্মীয় মুরুব্বি যারা ছিল,
তাদের ও পা ধরে সালাম দিল।

আলিশা সামনে এসেই,
গুড় মনিং হানি। শুভ বিবাহ আনন্দময় হউক।

মনিং কাল ননদী।

কি বললা আমি কাল ননদী? দেখলে আম্মু তোমার পেয়ারের পুত্রবধূ দিন না গড়াতেই আমাকে বিষ নজরে দেখছে।

ভালো হইছে দেখছে। ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ আয় নাস্তা খেতে।

তুমিও পটে গেলে বউর তালে? এই বলে আলিশা পিয়াসাকে এক পাশে টেনে নিয়ে,

এই ভাবি গোসল করেছ? চুল দেখি?

খুব পেকে গিয়েছো । কোন দুঃখে এই সাতসকালে গোসল করব আমি। দুষ্ট হাসি দিয়ে আলিশার চিবুক নেড়ে বলল পিয়াসা।

আমার যে কবে বিয়ে হবে?

সময় হলেই হবে। আগে পড়াশোনা। ক্যারিয়ার। দেন বিয়েসাদি।

শ্বাশুড়ির আদেশে পিয়াসা নাস্তার ট্রে নিয়ে নিজেদের রুমে গেল। আয়মান ঘুমিয়ে আছে। পিয়াসা হাতে করে পানি এনে আয়মানের মুখে ছিটিয়ে দিল। আয়মান গড়িমসি করে জেগে গেল। পিয়াসা চোখের পাতা তুলে ইশারায় নাস্তার ট্রে দেখাল।

ওয়াও! মাইন্ডব্লোয়িং পিয়াসা। শাড়িতে তোমাকে ইন্ডিয়ান নায়িকার মতো লাগছে। পেট দেখা যাচ্ছে কেন। এত পাতলা শাড়ি বেশী সময় পরবেনা। পরে পর পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি যাবে আমার বউয়ের দিকে।

পিয়াসা নাক কুঁচকে। ইসসরে! পেয়েছে এক সম্পত্তি।

হুম ঠিক তাই। আয়মান উঠে ফ্রেস হয়ে পিয়াসা সহ নাস্তা খেয়ে নিল।

পিয়াসাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিল বেশ খানিকটা নাস্তা। নিজেও খেতে চাইলো পিয়াসার হাতে। পিয়াসা খেতে চাইলনা। খাওয়ালোওনা আয়মানকে। বলল আমার কারো হাতে খেতে ভালো লাগেনা। আবার খাওয়াতেও ভালো লাগেনা।

আয়মান মাইন্ড করলো শুনে। চুপচাপ উঠে গেল নাস্তা খেয়ে।

শুভ পড়াতে এলো বিকেলে। আলিশা অংক করছে আর মনে মনে অনুযোগের সুরে বলছে,

রোবট নাকি। রসকষহীন একটা মানব। একটু দুষ্টমি করলে কি হয়।

অংকের খাতার শেষে এক পৃষ্ঠায় আলিশা ,
‘ স্যার আপনাকে খুব লাইক করিই।’

শুভ রিপ্লায় দিলো,
‘ তা আমি ইতঃপূর্বেই জেনেছি। ‘

‘ তাহলে আপনিও কি আমাকে…? ‘
খাতা ঠেলে দিল শুভ’র সামনে।

‘ হুম আমিও লাইক করি একজনকে। ‘

‘ তার নাম স্যার? ‘

‘ কলাবতী তার নাম ‘ অংক কাটাছেঁড়া করতে করতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল শুভ।

‘ সেই মেয়ে কি সারাদিন কলা খায়? কলাবতী নাম যে?,

জানিনা। মনে হয় খায়। অংক করো বলছি আলিশা।

‘ না করবোনা। সেই কলাবতী কি আমিই স্যার? ‘

‘ তুমি কি সারাদিন কলা খাও? ‘ চোখের কোণে হাসির আবরণ ছড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো শুভ।

‘ নাতো। তেমন খাইনা। ‘

‘তাহলে তুমি কিভাবে আমার কলাবতী হও? ‘

আলিশার মন বেজায় ভার হয়ে গেলো। এভাবে খাতায় ও কলমের ভাষায় ব্যাক্য বিনিময়ের মাধ্যমেই আলিশা ও শুভ’র প্রণয়ের সূচনা পর্ব শুরু হওয়ার দিগন্তে এগিয়ে যেতে লাগল।

বিয়ের দ্বিতীয় রাতে আয়মান মন খারাপ করে শুয়ে আছে। তার আগে পিয়াসার মোবাইল হাতে নিল ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে। নেড়েচেড়ে দেখল বেশ কিছুক্ষণ ।

এর আগে পিয়াসার মোবাইল চেক করার মতো সিচুয়েশন হয়নি। তাই বহুবার তার ইচ্ছে হলেও বাদ দিতে হয়েছে। পিয়াসার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ঢুকলো। দেখলো একাধিক ছেলের প্রেমের প্রপোজাল পিয়াসাকে। গান, কবিতাও পেল কিছু।

পিয়াসা রুমে ঢুকেই বুঝলো কোন এক অজ্ঞাত কারণে পরিস্থিতি বেগতিক। অমাবস্যা নেমেছে কারো মৌনাকাশে।

কন্ঠে মায়া ঢেলে জানতে চাইলো,
কোন কারণে স্যারের মুড অফ মনে হচ্ছে। কি আমি রুমে আসতে দেরী করাতে?

আয়মান তেজী কণ্ঠে বলল,
যার জন্য চারদিকে হাজারো প্রেমিকের ঢল । আর তারা প্রেমের ঢালি সাজিয়ে অপেক্ষা করে কারো জন্য। তার আমাকে না হলেও চলবে!

শুনে পিয়াসা স্তব্দ হয়ে গেল। দুচোখ ভিজে গেল প্রবল অশ্রুবর্ষণে।

চলবে ঃ ১৮

#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ১৯ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
আয়মান তেজী কণ্ঠে বলল, যার জন্য চারদিকে হাজারো প্রেমিক প্রেমের ঢালি সাজিয়ে অপেক্ষা করে। তার আমাকে না হলেও চলবে!

শুনে পিয়াসা স্তব্দ হয়ে গেল। দুচোখ ভিজে গেল প্রবল অশ্রুবর্ষণে।

হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দু চোখের কোণ ঢলে মুছে নিল। আদ্র কন্ঠে দৃঢ়তার সাথে বলল,
এই হলো পুরুষ মানুষের স্বভাব। কোন কিছু পাওয়ার আগে এক দরিয়া প্রেম। আর পেয়ে গেলে সন্দেহ, ভুল বোঝা, অনাদর শুরু হয়।

আয়মান পিয়াসার মুখের দিকে চেয়ে বলল,
আমি বানিয়ে কিছুই বলিনি। তোমার মেসেঞ্জার দেখলাম মাত্র।

পিয়াসার কলিজা ধক করে উঠল। বুঝল অনেক ছেলের মেসেজ রয়েছে তার মেসেঞ্জারে । তা দেখে গেল আয়মান। কিন্তু পাপ না শরীরে যমেরে কিসের ভয়, বাক্যটি নিজ মনে একবার আওড়ে নিল। আয়মানের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিল। পাশে বসে দেখালো। কোন রিপ্লাই আছে? চোখের পাতা উল্টিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

আয়মান রুষ্ট কন্ঠে বলল, তা থাকলে কি এতক্ষণ তুমি আস্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারতে?

পিয়াসা আয়মানের পাশ থেকে নিজের বালিশ নিয়ে নিল।

আয়মান বালিশ টেনে ধরলো। বালিশ নিচ্ছ কেন?

আমি আলাদা ঘুমাব। কোন ভুল বোঝা মানুষের সাথে আমি ঘুমাইনা।

আয়মান নিজের উপর বিরক্ত হলো বেশ। চিন্তা করলো,
কেন যে পিয়াসার সাথে শুরু থেকেই উল্টো কাহিনী ঘটে। চেয়েছিলাম মেসেঞ্জারের প্রসঙ্গ তুলে একটু জব্দ করতে পারলে লাভবান হবো। আমাকে মানাতে আসবে। আর সেই সুযোগে সৎ ব্যবহার করে বসবো। নিজ থেকে উদার হস্তে কিছু হিরে জহরত দান করতে বলব আমাকে। এখন দেখি দূরেই চলে চেতে যাচ্ছে৷ কিসের হিরে কিসের ডায়মন্ড। হাহ! আফসোসের তবে তপ্ত নিঃস্বাস ছাড়লো আয়মান।

আজ বিয়ের দ্বিতীয় নিশি। বাসর তো হলোইনা মোদের। কি করে আলাদা ঘুমাবে তুমি?

পিয়াসা চনচনিয়ে উঠল। তাহলে আমায় ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করতে হবে,
কখনো উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া অহেতুক ভুল বুঝা যাবেনা আমাকে। আমি একদম সহ্য করতে পারিনা এসব।

ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করতে হলেতো আমার কাছে আসতে হবে।

পিয়াসা বালিশ ছেড়ে দিল হাত ধরা থেকে। খাটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। আয়মান নিজের পা দুটোকে খাট থেকে নামিয়ে দিয়ে বসল। পিয়াসাকে এক টানেই নিজের কোলের উপর বসিয়ে নিল। পাতলা শাড়ির নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিল। কোমরের দুপাশ দুহাত দিয়ে চেপে ধরলো। পিয়াসার কানের লতিকে আলতো করে কামড়ে ধরলো। পিয়াসা উঃ করে উঠলে, কামড় সরিয়ে নিল আয়মান ।

কন্ঠে দুষ্টমির ছাপ এনে বলল, এই তোমার পেট ছুঁয়ে বলছি, কান ছুঁয়ে বলছি, গাল ছুঁয়ে বলছি,তোমার রঙচটা শাড়িটা ছুঁয়ে বলছি। আর ভুল করেও ভুল বুঝবনা। লেখিকা রেহানা পুতুল।

পিয়াসা ত্যাড়ামো সুরে,
এটা কি নমুনার প্রতিজ্ঞা হলো? ভালো লাগেনি শুনতে।

আয়মান পিয়াসাকে কোল থেকে সরিয়ে দিল। নিজে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। পিয়াসার কাঁধে হাত দিয়ে বারান্দায় নিয়ে গেল। গ্রীলের ফাঁক দিয়ে বাইরে আকাশ দেখতে বলল আবদারের সুরে।

পিয়াসা মুখ তুলে আকাশের দিকে চাইলো একবার। আয়মানকে চাইলো একবার।

আয়মান উদাসী পথিকের ন্যায় আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলল,
এই রাতের নির্জনতার নামে শপথ করে বলছি। ওই দূর আকাশের তারাদের নামে শপথ করে বলছি। খলবল করে হেসে উঠা নিষ্পাপ শিশুটির নামে শপথ করে বলছি। মৌন পাহাড়ের নামে শপথ করে বলছি। কোনদিন তোমাকে আর ভুল বুঝবোনা। বকাও দিবনা পিয়াসা। কতটা ভালোবেসেছি, কতটা ভালোবাসি আর কতটা ভালোবেসে যাবো জনমভর। তা শুধু আমি জানি আর আমার রব জানে।

আয়মান দরদ মেশা কন্ঠে আরও বলল,
তুমি ছাড়া আমি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। তুমি ছাড়া আমি একলা নিঃশ্ব পাখিটির মতো। তুমি ছাড়া আমি শূন্য বিরানভূমি। বলতে বলতে আয়মানের গলা ধরে এলো। পিয়াসা ঘাড় তুলে আয়মানের চোখে তাকালো। আয়মান সজল দুটি চোখে পিয়াসার দিকে চেয়ে আছে অসহায়ের মতো।

আয়মানের নিবেদিত স্বরে ভালোবাসার কথাগুলো শোনার পর, পিয়াসার হৃদয় পাড়ে একটা শীতল শ্রোত বয়ে গেল সর্পিল গতিতে । অফুরন্ত ভালোলাগায় ভরে গেল তার আকুলিবিকুলি করা অন্তরখানি।

একি! আপনার চোখে পানি কেন? বলে পিয়াসা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে আয়মানের দুচোখ মুছে দিল। আমি কি কম ভালোবাসি নাকি আপনাকে?

আয়মান অভিমান নিয়ে বলল, সেটা কি আজো বুঝিয়েছ ঠিক আমারি মতো?

পিয়াসা বলল,লজ্জা নারীর ভূষণ। জানেন না?

” আর কত ঠকাবে, এভাবে আমাকে।
আরো বেশী ঠকালে উড়াল দিব আকাশে।”

গানের চরণ দুটি গানের মতো করেই গুনগুনিয়ে গাইল আয়মান।

পিয়াসা নিঃশব্দে হেসে ফেলল। বলল, শুনতে ভালোই লাগছে। আরেকটা বলেন শুনি।

আয়মান পিয়াসার চিবুক ধরে,

” নায়ায়া…যেওনা সজনী, রজনী এখনো বাকিইই..।
বলে রাতজাগা পাখি, আরো কিছু দিতে বাকীইই..। ”

আপনি যে এতটা রোমান্টিক উপর দিয়ে দেখলে আন্দাজ করাই যায়না। চলুন ঘুমাব। ঠাণ্ডা লাগছে।

দুজন ভিতরে চলে গেল। বিছানায় শুয়ে গেল। আয়মান পিয়াসাকে বলল,
বুকে আসো পাখি। উষ্ণতা দিই।

পিয়াসা লাজুক হেসে দিল।

ওহ হো! বলে আয়মান বেড সাইড টেবিলের ড্র‍য়ার টেনে একটি ছোট কাগজের প্যাকেট বের করে আনল।

কিইই এখানে?

ধরো। বিকেলেই এনেছি তোমার জন্য। কিন্তু তোমাকেতো পাইনি দেওয়ার জন্য।

পিয়াসা চিনিগুড়া হাসি দিয়ে, আমি বাদাম পছন্দ করি কিভাবে জানলেন?

প্রেমিকের সব খবর রাখতে হয় প্রেমিকার। তুমি স্কুলে, কলেজে যে মাঝে মাঝে বাদাম খেতে বন্ধুরাসহ তা আমি দেখেছি। তখনই বুঝলাম বাদাম তোমার পছন্দ।

থ্যাংক ইউ স্যার। তার মানে আমার পিছনে গোয়েন্দাগিরি চলছে সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই?

জি মহারানী আমার। তোমাকে যেদিন বেত দিয়ে মেরেছি তার আগে থেকেই তোমাকে আমার ভালোলাগতো। পরে তোমার বিভিন্ন সময়ের আচার আচরণ,ব্যক্তিত্ব, আত্মসম্মানবোধ আমার নজর কাড়ে। এবং তার ফলশ্রুতি হিসেবে আমার ভালোলাগা শাণিত হয়ে একক প্রেমে রূপ নেয়। প্রণয়ের জলসাঘরে তোমাকে যে কত রূপে, কত ঢঙে দেখেছি। পান করেছি তোমার আকন্ঠ সুধা।

হইছে থামেন। স্মৃতিচারণ করতে হবেনা। বলল পিয়াসা।
পিয়াসা বিট লবন দিয়ে কুটকুট করে বাদাম খেয়েই যাচ্ছে।

শুধুই নিজেই খাবে। আর কেউ নেই সামনে খাওয়ার? বলল আয়মান।

ওহ সরি! বলে পিয়াসা নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। মনে মনে, কি বেকুব আমি। শুধু নিজেই খেয়ে যাচ্ছি। একবার সাধলাম ও না।

নেন। খোসা ছাড়িয়ে খান। আমি নিজে খাচ্ছিনা?

আমি পারবোনা। খাইয়ে দাও।

পিয়াসা কয়েকটি বাদাম খোসা ছাড়িয়ে বিট লবন মিশিয়ে হাতের তালুতে রাখল। আয়মানের ঠোঁটের সামনে হাতের তালুটি তুলে ধরল।

আয়মান সুখ চিত্তে পিয়াসার হাতটি ধরলো। তালুতে থাকা সব বাদাম মাথা ঝুঁকিয়ে নিজের মুখে তুলে নিল। তালুতে লেগে থাকা বিট লবন জিভ দিয়ে চেটে খেয়ে নিল। বাদাম খাওয়া শেষে আয়মান বালিশের নিচ থেকে একটা চুইংগাম বের করলো।

আবার চুইংগাম ও। এটা তেমন লাইক করিনা। এক্কেবারে স্বামী হয়ে উঠলেন যে। আমার এক খালার কাছে শুনেছি, আগে গ্রামে মেয়েদের বিয়ে হলে স্বামী নাকি সন্ধ্যায় ঘরে ফিরতে এটা ওটা লুকিয়ে বউর জন্য আনতো। রাতে বউ বিছানায় গেলে একটা একটা করে বের করতো আর দুজন গল্প করতে করতে খেত। বলল পিয়াসা।

তুমি ঠিক শুনছ। নাও চুইংগাম খাও। ব্যানানা ও ম্যাংগো ফ্লেবারের আছে। কোনটা খাবে?

এখন খাবনা। এমনিতেই বাদাম বেশী খেয়ে ফেলছি। পরে পেট ব্যথা করবে। নাকি নাকি সুরে ঢং করে বলল পিয়াসা।

প্লিজ খাও বাবু । করবেনা। আর করলে আমি আছি। তোমার সকল ব্যথা উপশম করবে এই বান্দা। একটা রোমান্স করার উদ্দেশ্য নিয়েই চুইংগাম এনেছি।

পিয়াসা পিটপিট চোখে চেয়ে সেটা আবার কেমন?

দেখাচ্ছি বলে আয়মান ম্যাংগো ফ্লেবারের চুইংগামটা প্যাকেট ছিঁড়ে উম্মুক্ত করল। পিয়াসার দুই অধরের ফাঁকে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,
একটু মুখের ভিতরে নাও প্লিজ। দেখবে কত মজা লাগছে।

পিয়াসা নাক কুঁচকে অর্ধেক চুইংগাম কামড়ে নিল মুখের ভিতরে। আয়মান পিয়াসার ঠোঁটের কাছে গিয়ে বের হয়ে থাকা বাকি অর্ধেক চুইংগাম নিজের ঠোঁটের ভিতর পুরে নিল। দুজনের চুইংগাম শেষ হয়ে এলে দুজোড়া ঠোঁট মিশে এক হয়ে গেল। আয়মান ঠোঁট ডুবিয়ে দিল পিয়াসার দুই ঠোঁটের ভিতরে। এভাবে বেশ সময় পার হয়ে গেলে পিয়াসা ঠোঁট ছাড়িয়ে নেয়। এই প্রথম আয়মান অন্যরকম স্বর্গসুখে মেতে উঠলো।

পিয়াসা দুই ঠোঁটের উপর হাত দিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । দেখে রক্ত লাল হয়ে গেল তার তুলতুলে দুটি ঠোঁট।

আয়মানের সামনে গিয়ে লাজুক কন্ঠে দৃষ্টি অন্য দিকে দিয়ে বলল,

সকালে যদি মা আর আলিশা আমাকে জিজ্ঞেস করে,
তোমার ঠোঁট এত লাল কেন? কি বলব? বেশরম পুরুষ কোথাকার।

যাহা সত্য তাহাই বলিবে। বলিবে আপনার ছেলে আমার অধর করেছে রাঙা।

অসভ্য আপনি। বলে পিয়াসা আয়মানের চুল টেনে ধরলো খামচি দিয়ে।

আয়মান গুড়িগুড়ি হেসে বলল, ওহ বেশ আরামদায়ক তো বিষয়টা।
টানো বউ আরো টানো, যত পারো চুল টানো।

পিয়াসা মুহুর্তেই চুল টানা ছেড়ে দিয়ে কম্বলের নিচে লুকিয়ে গেল। আয়মান ও কম্বল দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলল।
পিয়াসার মাথা টেনে নিজের বাহুর উপর শোয়ালো। পিয়াসা বিড়াল ছানার মতো আয়মানের বুকে মুখ ঘষতে লাগলো।

আয়মান বলল,আচ্ছা আমরা ফাইনাল ম্যাচ কবে খেলব? আমি স্বেচ্ছাচারী হতে চাইনা। প্রণয়ের গভীর আবেশে হারিয়ে গিয়ে উম্মাতাল সুখে ভেসে চাই তোমার পূর্ণ সাড়া পেলেই। বলনা কবে দিবে?

পিয়াসা আয়মানের মুখ চেপে ধরলো। বলল রাত এখন গভীর। তন্দ্রাঘোরে ডুবে যাব দুজন। আর পটপট করবেন না প্লিজ।

আয়মান মুখে আর কিছুই বললনা। পিয়াসার পিঠের উপর হাত বুলাতে বুলাতে এক পা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো তাকে । নিজের বুকের সাথে লেপ্টে নিল যতটা সম্ভব। আয়মানের ভারী নিঃশ্বাসের উষ্ণতা পিয়াসার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে। পিয়াসার সমস্ত অনুভূতি তিরতির করে দুলতে লাগল গাছের কচি শাখার মতো। একসময় দুজনে ঘুমিয়ে পড়লো অঙ্গে অঙ্গে জড়াজড়ি করে।

বিকেলে শুভ পড়াতে এলো। আলিশা আজ আর কোন কিছুই খাতায় লিখলনা৷ মুখেও কিছুই বললনা। চুপচাপ শান্ত বালিকাটি হয়ে অংক করা শেষে শুভ’ র সামনে খাতা ঠেলে দিল।

শুভ রোজকার অভ্যেসের মতো লুকানো চোখে আলিশার লেখা খুঁজল। হঠাৎ ব্যত্যয় ঘটল বলে কিঞ্চিৎ অবাক হলো। আলিশা রোজ তার সাথে কলমের ভাষায় হৃদয়ের আদান-প্রদান করতো। ছোট ছোট কালো কালির শব্দে ফুটিয়ে তুলতো তার অব্যক্ত প্রণয়ের পংক্তিমালা।

শুভ’র অনিচ্ছাকৃতভাবে তা পড়তে পড়তে অভ্যাসে পরিণত হলো। এ অভ্যাস আর আলিশার গাল ভরা দুষ্টমি এক সময় তার ভিতরে ভালোলাগা সঞ্চিত করল। কিন্তু আজ আলিশাকে কেমন মনমরা দেখাচ্ছে। আনমনা দেখাচ্ছে। যেন শান্ত দিঘির গভীর জল। আলিশা স্বভাবে দুরন্ত। চপল হরিনীর মতো। কিন্তু আজ কেমন যেন আঁধার রাতের চিরবিরহী ডাহুকীর মতো দেখাচ্ছে আলিশাকে।

শুভ তৃতীয় নয়নে আলিশাকে পরখ করে দেখল। আলিশা তা টের পেয়েও না পারার ভান করে রইলো। শুভ ও কম যায়না। কিছুই জিজ্ঞেস করলোনা আলিশাকে। পড়ানো শেষ হলে বরাবরের মতো নাস্তা খেয়ে উঠে চলে গেল। আলিশা দাঁড়কাকের ন্যায় বসা থেকে শুভর চলে যাওয়া দেখল।

শুভর নাস্তা কিছুটা রয়ে গেল। আলিশা নেড়েচেড়ে রেখে দিল নাস্তা। দুধে ভেজা লাচ্ছা সেমাই রয়ে গিয়েছে। আর মিক্সড ফ্রুটস সালাদ ও রয়ে গিয়েছে কিছুটা।

অন্যদিন হলে শুভর খেয়ে থেকে যাওয়া নাস্তা আলিশা খেয়ে নিতো টুপ করেই। আজ খেলনা। যদিও এই নাস্তা খাওয়া ও আলিশার ভারী অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তবুও খেলনা। প্রচন্ড আক্রোশে ফুঁসে উঠছে সে শুভর উপর।

রাতে আলিশার ফোনে টুং করে আওয়াজ হলো। শুভ’র নাম্বার থেকে মেসেজ এলো।

‘” তুমি চাইলে আমার কলাবতীকে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি। ইচ্ছে আছে কলাবতীকেই বিয়ে করব। টাকা পয়সা কম খরচ হবে তাকে বিয়ে করলে। কারণ সে বেশিরভাগ সময় নাস্তা সেরে নেয় পাকা কলা দিয়ে। আর কাঁচা কলার বিভিন্ন রেসিপি দিয়ে লাঞ্চ ডিনার সেরে নেয়। ”
আলিশা খুক করে হেসে ফেলল শুভ’র কলাবতীকে চিনে ফেলায়।

চলবে ঃ ১৯