#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্ব_২২ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
আলিশা আমার সাথে বাইরে একটু দেখা করবে? তোমার সময় সুযোগ মতেই আমিও সময় করে নিব। ইনডোর নাকি আউটডোর? কিভাবে দেখা করতে চাও জানাও।
আলিশা হকচকিয়ে গেল। এতসময়ের আবেশে বিবশ হয়ে লেপ্টে থাকা অনুভূতিরা দফ করেই নিভে গেল তেল ফুরিয়ে আসা প্রদ্বীপের ন্যায়। ইনডোর আউটডোরের মিনিং আমি যেটা বুঝি। সেটাই কি স্যার মিন করলো? ভেবেই আলিশা চুপ মেরে আছে। কি রিপ্লাই দিবে ভেবে পাচ্ছেনা।
আবার মেসেজ এলো শুভর আইডি থেকে।
” কি ঘাবড়ে গেলে? ”
” হুম ” এক শব্দের জবাব দিল আলিশা ।
শুভ অট্রহাসির ইমুজি আর লাভ ইমুজি যোগে রিপ্লাই দিল,
” ইনডোর বলতে মিন করেছি কোন কফিশপ বা ক্যাফেটেরিয়া এ জাতীয় কিছু। যদি তোমাকে আমার সাথে বাইরে কেউ দেখে যায় তাই। আর তাতে আমার নয় সমস্যা তোমারই হবে বেশী। বুঝলে। আর আউটডোর বলতে মিন করেছি কোন লেকের পাড় বা ফুটপাতে চায়ের দোকানে। অর্থাৎ খোলা আকাশের নিচে৷ হাঃহাঃহাঃ ”
” আপনি একটা ইমপসিবল ম্যান। যা ভয় পাইয়ে দিয়েছেন আমাকে। রাখি। শুভরাত্রি। বাই।”
শুভ রোমাঞ্চিত হাসি দিয়ে অফ লাইন হয়ে গেল। আলিশাও। দুজন দু’প্রান্তে দুজনকে ভেবে বিভোর৷ উম্মাদ। অমোঘ সুখে ধরাশায়ী শুভ ও আলিশা নামের দুটো হৃদয়।
গতরাতেও পিয়াসা শ্বাশুড়ির সাথে ঘুমিয়েছে পায়ের ব্যথার অজুহাত দেখিয়ে। সকালে পা টিপে টিপে সন্তপর্ণে নিজেদের রুমে ঢুকল। সূর্যের মিষ্টি তেজ হামলে পড়ল জানালার ফাঁক গলিয়ে। পর্দা আরেকটু সরিয়ে দিল পিয়াসা। পিয়াসার কানে গানের আওয়াজ এলো।
” ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলে ও আমি বাসি।”
মাথা উঁচিয়ে দেখল আয়মান কাত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মোবাইলে তার পাশে গানটা বেজেই চলছে।
পিয়াসা আয়মানের পিঠের উপর দিয়ে হালকা ঝুঁকে গান বন্ধ করে দিল।
দাঁত খিঁচিয়ে বলল,
ইসসস! বইয়ের ভাঁজে এই লিখা পেল বলে আমাকে মারল। আর এখন নিজেই শুনছে। লাগবেনা শোনা৷ নাকি নতুন কেশবতীর দেখা মিলেছে।
আয়মান চোখ বন্ধ রেখেই এক হাত মেলে পিয়াসাকে ভিড়িয়ে নিল নিজের শরীরের সাথে।
পিয়াসা চমক খেল। ওরে আল্লাহ! আপনি না ঘুমাচ্ছেন?
হ ঘুমাচ্ছিতো। কেশবতীর কেশের গন্ধ আমাকে জাগিয়ে দিল। বলল উঠ প্রেমিক। এসেছে তোমার প্রণয়ীনি। বন্দী করো তাকে। মেটাও তোমার সকল পিয়াসা।
আলসেমি ভঙ্গিতে হাই দিতে দিতে বলল আয়মান। পিয়াসাকে নিজের পাশে শুইয়ে দিল। তার গায়ের উপর এক পা উঠিয়ে দিল। নাকের সাথে নাক ঠেস দিয়ে ধরে বলল, তুমিই আমার কেশবতী। যার প্রেমে আমি বারবার নতুন করে মোহাবিষ্ট হয়ে উঠি। মোহাচ্ছন্ন হয়ে যায় আমার সমস্ত ইন্দ্রিয়।
ছাড়ুন না। আমার কাজ আছে রান্নাঘরে। কি করছেন এসব? গদগদ সুরে বলল পিয়াসা।
কিছুই করিনি এখনো। সবি যে বাকির খাতায় পড়ে রইলো কামাঙ্গিনী আমার । বলে পিয়াসার ঘাড়ে চুলের ভিতর নাক মুখ ডুবিয়ে দিল। পিয়াসা বিডালের মতো লাল আদুরে পিটপিট চোখে আয়মানের চোখে চাইলো । জোর খাটিয়েও আয়মানের বলিষ্ঠ বাহু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছেনা।
আয়মান তার হাত পায়ের বন্ধন আরো দৃঢ় করলো।
পিয়াসা আলতো করে কামড়ে ধরলো আয়মানের বুড়ো আঙুলের নখের উপরে। আয়মান পুলক অনুভব করলো এতে। একে একে বাকি চার আঙুলের মাথার অংশ পিয়াসার দাঁতের ফাঁকে ঢুকিয়ে দিল। বলল, মজা পেয়েছি এভাবে কামড় দিতে থাক দেবী।
পিয়াসা কপাল খিঁচিয়ে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল,ব্যথা না পেয়ে মজা পায় কেউ এতে?
দেখাচ্ছি ব্যথা না মজা। বলে পিয়াসার পাঁচ আঙ্গুল একটা একটা করে নিজের মুখের ভিতর নিয়ে হালকা চুষে নিল। পিয়াসার অনুভূতি উপলব্ধি করার জন্য অবিকল চেয়ে রইলো আঁখিপানে। পিয়াসা নড়েচড়ে উঠছে বারবার। বলছে ছাড়ুন দরজা খোলা। নিলজ্জ্ব কামুক পুরুষ কোথাকার।
আয়মান ছেড়ে দিল পিয়াসাকে। বলল। যাও পাখি। উড়াল দাও। পিয়াসা চাপা হাসি বিলিয়ে দিল আয়মানের মুখের উপর। বিছানা থেকে নেমে গেল। পিছন দিয়েই আয়মান পিয়াসার শাড়ির আঁচল ধরে টান দিল৷ পিয়াসার বুকের উপর থেকে শাড়ি খসে পড়ল মাটিতে।
আপনি এত ফাজিল কেন? এমনিতেই আমার পা এখনো পুরোপুরি সেরে উঠেনি।
আয়মান পিয়াসার বুকে এক পলক তাকালো চোরা চোখে। বলল, ওরে পা রে পা। এক পা দেখিয়ে আর কত ফাঁকি দিবে? আচ্ছা নাকি তুমি ইচ্ছে করে সেদিন ওয়াশরুমে পড়ে গেলে?
কিইই? আমি এমন?
নাহ। আছেনা কিছু মানুষ এমন। নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার তালে৷ তুমি এমন কিনা কে জানে?
আপনার সাথে আড়ি আড়ি আড়ি।
আচ্ছা নিও আড়ি। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। দেখি পার কিনা তুমি।
শুনছি বলেন। বুকের উপর আঁচল প্রসারিত করে দিতে দিতে বলল পিয়াসা।
এমন কোন তরল খাদ্য দ্রব্য রয়েছে তার ভিতরেই পাঁচটি উপাদান বিদ্যমান? ইংরেজিতে আনসার ডিক্লাইন হবে। আমরা বাঙালি। সুতরাং বাংলায় উত্তর দিতে হবে।
পিয়াসা কটমট দৃষ্টিতে বলল,
এমন উওর দিতে আমি অপারগ। নেটের হেল্প নেন।
এটা আমি জানিনা? তোমার শিখিয়ে দিতে হবে?
আমার থেকে শুনে কি লাভ আপনার?
নাহ। মনে হলো এই ভিটামিনগুলো আমার পান করা অতিব জরুরী।
তো আমার কাছে কি? ফ্রিজে আছে। জ্বাল দিয়ে দিব। যত ইচ্ছে পান করবেন। পিয়াসা তিন লাফে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আয়মান পিয়াসাকে ছুঁতে গিয়েও পারলোনা। অভুক্ত প্রাণীর মতো পড়ে রইলো বিছানার বুকে৷ গোপন কামুকতা থেকে বের হয়ে এলো আয়মান। ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নিল। নাস্তা খেয়ে কলেজে চলে গেল।
পিয়াসা শাশুড়ীর সাথে আজ রাতেও ঘুমাতে গেল। তিনি কিঞ্চিৎ মনঃক্ষুন্ন হলেন পিয়াসার উপরে।
মোটা গলায় বললেন,
আমার সাথে ঘুমানো লাগবেনা। তোমার যায়গায় গিয়ে ঘুমাও৷ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
স্বামী স্ত্রী অকারণে আলাদা বিছানায় রাত্রি যাপন করা গুনাহ। এতে রাতভর স্ত্রীলোককে সত্তর হাজার ফেরেশতা নালত দিতে থাকে।
বিয়েটা কি মাটির খেলনা নাকি? মন চাইলো খেলবে। মন চাইলো ভেঙ্গে ফেলবে। এমন হেয়ালামো করবেনা আর দাম্পত্য জীবন নিয়ে। কিছুদিন পর আমি দিদা হতে চাই।
পিয়াসা লজ্জায় পালিয়ে এলো শাশুড়ীর সামনে থেকে। শ্বাশুড়িও এক হাত দিতে পেরেছে বলে আপন মনে হেসে ফেলল।
আলিশার রুমের দরজায় টান পড়তেই,
কে? ভাবি? এসো?এনি সমস্যা?
তোমার সাথে ঘুমাব আজ।
তুমি না আম্মুর সাথে ঘুমাও এই কয়দিন? আজ কি হলো?
মা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বলছে তোমার সাথে ঘুমাতে।
সিরিয়াসলি বেইবি? আম্মুকে গিয়ে আস্ক করিই?
নাহ প্লিজ।
তাহলে তোমার বরাদ্দকৃত স্থানে যাও৷ আমার প্রেমলীলায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে দুশমন হয়োনা।
তোমার লীলা তুমি করো। আমি একপাশে ঘুমিয়ে থাকব।
না ভাবি প্লিজ। বিরক্ত করোনা।
ন্যাকামি। যত্তসব। আমি হলে কোলেই বসে থাকতাম স্বামীর। আর মাখামাখি করতাম। উহু! আহ! যাওতো। নয়তো তোমার পেয়ারের লাভার এসে তোমাকে কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে যাবে।
পিয়াসা গাল ভেংচি দিয়ে চলে গেল। আস্তে করে দরজা ঠেলে ভিতরে গেল। আয়মান পিয়াসার নিঃশব্দ গতি আঁচ করতে পারল। ঘুমের ভান করে মরার মতো বিছানার মাঝ বরাবর পড়ে আছে।
পিয়াসা নিরবে বিছানার উপরে উঠে একপাশ হয়ে শুয়ে রইলো। ভিতরে শংকা কাজ করছে৷ আয়মান চোখ বন্ধ করে পিয়াসার পায়ের সাথে নিজের পা লাগিয়ে নিল। পিয়াসা পাতলা কম্বলের ভিতরে হাত দিয়ে নিজের শাড়ি টেনে দিচ্ছে পায়ের পাতার দিকে। আয়মান গুনগুনিয়ে গাইলো,
” আইজ পাশা খেলবোরে সাম…
/একেলা পাইয়াছি হেথা/পালাইয়া যাবে কোথা এই নির্জন রাতেএএ…?”
পিয়াসা নিজের ফোনের নোটপ্যাডে কিছু একটা লিখল। আয়মানের হাতে দিল। ”
পিরিয়ড চলছে। সো বুঝেন কিন্তু।
কতদিন হলো? আয়মান মুখে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো।
পিয়াসা মুখ নামিয়ে বলল আজ শুরু। চলবে সপ্তাহব্যাপী।
এটা কি পিরিয়ড মেলা নাকি। সপ্তাহব্যাপী চলবে? আমার বিলিভ হয়না। লাইভ দেখতে চাই। আয়মান পিয়াসার কাপড়ের কুচিতে হাত দিতে গেলেই পিয়াসা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে। আয়মান নারভাস হয়ে অন্যদিকে ফিরে ঘুমিয়ে যায়।
শীত বিদায় নিচ্ছে। প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনী বার্তা। উদাম বৃক্ষ শাখায় নব পল্লব গজিয়ে উঠার অকুন্ঠ আশীর্বাদ। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।
একটি নিরিবিলি কফিশপে গিয়ে ঢুকলো শুভ। হাতে এক গুচ্ছ রক্ত গোলাপ৷ একটু পর আলিশাও এলো। বসল শুভর পাশে মিষ্টি চাহনি দিয়ে ফুলের সুরভীর মতো । ভিতরে ভিতরে নুয়েও যাচ্ছে লজ্জাবতী পাতার মতো।
শুভ আলিশার হাতের দিকে গোলাপ গুচ্ছটি বাড়িয়ে ধরলো। মুখে বলল ভালোবাসি আলিশামনিকে। আলিশা গোলাপগুলোকে ছোট্ট হাঁসের ছানার মতো যত্ন করে ধরলো। ফুলের কোমল পাপড়িতে নিজের গালের আদুরে স্পর্শ দিল। মুখে কিছুই বলছেনা।
শুভ দুটো কফির অর্ডার করলো। নিবেদিত চোখে আলিশার মুখপানে চাইল। জিজ্ঞেস করলো অন্যকিছু খাবে?
স্তিমিত কন্ঠে আলিশা জানাল, নাহ।
শুভ বলল, অবশ্য এসব কফিশপে জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতিরা আসে প্রেম আর আলিঙ্গনের জন্যই। কিছু অর্ডার করতে হয়। তাই করা। এক গ্লাস কফি খায় তিরিশ মিনিট ধরে। নয়তো শেষ হয়ে গেলে বয়রা এসে বলবে, স্যার মেম আরেকটা কফি দিব?
।
বাব্বাহ! আপনি তলে তলে এত কিছু জানেন স্যার?
আবার জিগায় বালিকা। প্রেম নিজে না করলে কি হবে। বন্ধুদের করতে দেখেছি না?
দুটো কফি চলে এলো। তারা দুজন একটু খেয়ে কফি গ্লাস চেঞ্জ করলো দুজন দুজনের টা। আলিশার কপালে ঝুঁকে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিল আয়মান বলল,
শুন সামনে তোমার ইন্টার ফাইনাল পরিক্ষা। সো ফোকাস হবে বেশী প্রণয়ে নয় স্টাডিতে। লেখিকা রেহানা পুতুল।
বাসায় লিখে লিখে বোবার মতো এতকিছু বলা যায়ন। তাই তোমাকে ঢেকে আনলাম বাইরে। আমি ছিলাম। আমি আছি। আমি রবো। সো নো চিন্তা ডু ফূর্তি।
কফি খাওয়া শেষ হলে শুভ এদিক এদিক চেয়ে, চুপিচুপি আলিশার মিলানো দুই ঠোঁটের উপর নিজের তপ্ত দুঠোঁট বসিয়ে দিলো। গাঢ় চুমুতে ভরিয়ে দিল আলিশার সরু গোলাপি আভার অধরযুগল। আলিশা অবোধ শিশুর ন্যায় চুপটি হয়ে রইলো। তার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। শুভর এই স্পর্শর জন্য সে পাগল হয়েছিল এতদিন। এই অপার্থিব সুখ সে এই মুহুর্তে আরো চায়। শুভর হাত খামচি দিয়ে ধরল। শুভ টের পেয়ে নিজের ঠোঁট আলগা করে নিল। তার পর উঠে যায় দুজনে। একটি রিকসায় করে দুজনে বেশ কিছু সময় ঘোরাঘুরি করে।
সারাক্ষণ রিকসায় পাশে বসা থেকে আলিশা শুভর এক হাত পেঁচিয়ে ধরে রাখে নিজের শরীরের দিকে টেনে। আলিশাকে পছন্দের এটা ওটা খাওয়াল শুভ। দুজন দুজন থেকে বিদায় নিল। শুভ আলিশার গালে মৃদু টোকা দিয়ে,
আবেগকে একটু সামলাতে শিখ প্লিজ। এতে তুমিই উপকৃত হবে আদুরী আমার।
আলিশা ঠোঁটের বারান্দায় পুলকিত হাসি ছড়িয়ে দিল। মাথা নামিয়ে আচ্ছা বলে বাসায় চলে এলো উড়ুউড়ু মন নিয়ে।
আয়মান গুনে গুনে সাতদিন অপেক্ষা করলো। তার পরে এক রাতে একান্তে পেতে চাইলে,
পিয়াসা খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করালো। বলল আরো একমাস পর। প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হলে।
আয়মান খুব রেগে গেল। উত্তেজিত গলায় পিয়াসাকে বলল,
নিজেকে আর কত সংরক্ষিত আসনের কৌটায় করে রাখবে?
আর কখনোই চাইবনা তোমাকে। নেভার এভার। আমার সাথে ঘুমাতে হবেনা। চলে যাও বলছি।
পিয়াসা আলিশার রুমে চলে গেল।
সকালে আয়মানের মা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ছেলের রুমে এলো।
আম্মু কি হয়েছে? কোন দুঃসংবাদ আমাদের কারোর?
বাবা আমরা সবাই গ্রামে যেতে হবে এক্ষুনি। কলেজে ফোন দিয়ে দুইদিনের ছুটি নিয়ে নে।
চলবেঃ ২২
#প্রণয়ের_জলসাঘরে
#পর্বঃ২৩ #লেখিকা_রেহানা_পুতুল
গ্রামে যাবো অবশ্যই। কিন্তু কারণটা কি আম্মু? বিচলিত কন্ঠে জানতে চাইলো আয়মান।
তোর দাদী নেই বাবা। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল আয়মানের মা।
ওহ নো! কি বল? আয়মান ব্যস্তসমেত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। বলল,আমি আমার দিক দেখছি। তোমরা সবাই কাপড়চোপড় গুছিয়ে নাও। তিনদিন তো আমাদের থাকতেই হবে। তাইনা?
আয়মানের মা হ্যাঁ, বলেই চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো। পিয়াসা কই জানতে চাইলো। আয়মান বলল কি জানি দেখ। পিয়াসা যে রাতে আয়মানের সাথে ঘুমায়নি এটা মাকে বললনা। চিন্তা করলো, ঘর পোড়ার ভিতর আলু পোড়ার খবর বলা অহেতুক।
আয়মানের মা, আলিশা ও পিয়াসাকে তাড়া দিল তিনদিনের হিসেবে সব গুছিয়ে নিতে। আলিশা দাদীর জন্য খুব কাঁদল। পিয়াসার ও বেশ মন খারাপ হলো। তারা গ্রামেই গেলেই মৃতের দাফন সম্পন্ন হবে।
এক ঘন্টার ভিতরেই সবাই গোসল সেরে হালকা নাস্তা খেয়ে রওনা দিল। সায়েদাবাদ পৌঁছে গেল সিএনজি করে। বাসের টিকিট কেটে উঠে পড়ল। যথাসময়ে তারা তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে গেল।
সারাবাড়িজুডে থমথমে শোকাতুর পরিবেশ। থেমে থেমে স্বজনদের মাতম চলছে। উঠানের একপাশে খাটিয়াতে লাশ রাখা আছে। আগেই গোসল করিয়ে সাজানো হয়ে গিয়েছে৷ আয়মানের মাকে কাছে পেয়েই বিলাপ জুডে দিল তার চাচাতো ভাই ও ননদেরা। সেও অঝোরে কাঁদলো চাচাতো শাশুড়ীর সাথে নানা স্মৃতি বিজড়িত মুহুর্তকে স্মরণ করে৷
আয়মান ঢাকা থেকে আসতেই কালো জিন্সের সাথে সাদা টুপি ও সাদা পাঞ্জাবি পরে এসেছে। এসেই জায়নামাজে শরীক হলো। আয়মানকে দেখতে বেশ স্নিগ্ধ ও নির্মল লাগছে। পিয়াসা আয়মানের দিকে একবার চেয়েই বিমুগ্ধ হয়ে গেল। সাদা পাঞ্জাবি সাদা টুপিতে এর আগে দেখেনি সে। ঢাকা প্রতি শুক্রবারে বা কোন অনুষ্ঠানে আয়মান কালারফুল পাঞ্জাবি পরে আর টুমি ও অন্য ব্রাউন কালারের পরে৷
দাফন শেষে হয়ে গেলে মাটিতে বিছানা পেতে বসে কয়েকজন নারী ও মেয়ে কোরান তেলওয়াত করতে লাগল সমস্বরে ।
পিয়াসার বাবার কথা মনে পড়ে গেল প্রবলভাবে। নিজের অজান্তেই বাবার জন্য দুচোখ জুড়ে কান্নারা নামল দল বেঁধে। বুকটা খাঁ খাঁ করছে তার। চারপাশ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। তবুও বুকের পিঞ্জরে একটা চিনচিন ব্যথা অনুভব করে প্রায়। একান্ত প্রিয়জনরা নেই বলে শূন্যতারা তাকে পিষে মারে মাঝে মাঝেই।
পিয়াসা শাশুড়ীর অনুমতিক্রমে তাদের সাথে শরিক হলো। তার শ্বাশুড়ি কোরান শরীফ আর রেহেল চেয়ে নিয়ে দিল ভাতিজা বউয়ের কাছ থেকে। একটু দূরে থেকেও পিয়াসার মিহি স্বরে কোরান তেলওয়াত এই প্রথম শুনল আয়মান। বাসায় তাকে নামাজ পড়তে দেখে। কিন্তু কোরান পড়তে দেখেনি। আয়মানের বুকের ভিতর অনাবিল প্রশান্তি বিরাজ করল। মনে মনে বলল, মাশাল্লাহ পিয়াসার তেলওয়াত এত সুমধুর! এত মিষ্টি! যেন কোকিলের কুহুতান।
আয়মানরা সবাই সেই চাচার ঘরেই আছে। দাদীর অতি প্রিয়জনদের বিহবল দশা। বাড়ির একপাশে দাদীর পরিবারের সবাইর জন্ন্য রান্না হচ্ছে আয়মানরা সহ।
আয়মান আলিশাকে খুঁজে বের করে আদেশ দিল,
কিরে তোর ভাবি কোরান তেলওয়াত করছে। তুই এদিক ওদিক ঘুরছিস কেন? যা ওযু করে ওদের সাথে গিয়ে তুই ও পড়।
আয়মানের মা পাশ থেকে মেয়েকে বলল,
কিরে হ্যাবলার মতো আমার গালের দিকে কি দেখছিস? ভাই কি তোকে মরতে বলছে? যা বলছি। এ দুনিয়ার রঙ তামাসা দুইদিনের। সব মিথ্যা। সব ফাঁকিবাজি। আসল রঙ তামাসা মাটির নিচে গেলেই দেখবি।
আলিশা বলল, আমি পড়লে সহী হবে এখন?
কেন সহী হবেনা। তোকে কোরান পড়া শিখাইনি বাসায় মসজিদের হুজুর রেখে?
আমার সেলোয়ার চেঞ্জ করতে হবে। সেটা বলছি আম্মু। এসে বাথরুমে যাইনি? বলি একটা বুঝ আরেকটা। বেজার মুখে বলল আলিশা।
তো চেঞ্জ করে নে । ড্রেস না চারটা আনলি তুই?
আলিশা তেমন আগ্রহ না থাকা সত্বেও অযু করে কোরান তেলওয়াতের মজলিসে যোগ দিল। পড়তে লাগল কোরান শরীফ যোগাড় করে।
আয়মান চলে গেল কাচারিঘরের সামনের উঠানে । চেয়ারে বসলো চাচা জেঠাদের পাশে। সেখানে যে যা পেরেছে চেয়ার পেতে রেখেছে পুরুষদের জন্য। নানান আলাপ আলোচনা করছে সবার সাথে। শহরের যান্ত্রিক জীবনে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। তাই কারো সাথেই কারো মুখোমুখি দেখা হয়না। এক মুঠোফোনে হায় হ্যালো হয় তাও কালে ভদ্রে টুকটাক।
আয়মানের এই দাদী তাদের বাড়ির জীবিতদের মধ্যে সবার মুরুব্বি। গ্রামের ভাষায় গাছবুড়া বলে যাকে। তাই ঢাকা থেকে সম্ভবপর অনেকেই এলো উনার জায়নামাজে শরীক হওয়ার জন্য। কবরে এক মুঠো মাটি দেওয়ার জন্য। উনাকে নিয়ে যার যেমন স্মৃতি রয়েছে তা মনে করে আফসোসের মাত্রা দীর্ঘ করতে লাগলো উপস্থিত সবাই।
তিনদিনের কুলখানির আগের রাতে সবাই কাজে হাত লাগালো। সারারাত তেমন কেউই ঘুমালোনা। কেউ পেয়াজ, কেউ রসুন, কেউ আদার খোসা ছাড়ালো। কেউ মসলা পিষে নিলো। এমন বড় আয়োজনগুলোতে যতই কাজ করার লোক থাকুক, তবুও নিজেদের মেয়েছেলেরা কাজে হাত লাগাতেই হয়। আর এমন কাজগুলো সবাই বেশ আনন্দ নিয়েই করে। কোন ক্লান্তি আসেনা। মুরুব্বিরা বলে এসময় খোদায় ক্লান্তি দূর করে দেয়। খাওয়াতেও বরকত দেয়। যতই মিসকিন খাওয়াক। শেষ হয়না।
আয়মানের মা ঝিমুনি ধরলে ঘুমিয়ে যায়। পিয়াসা উঠে গিয়ে খাটের নিচ থেকে আরো পেয়াজ আনতে গেলে রুমে আয়মানের বুকের সাথে ধাক্কা খায়। আয়মান চোখ মেলে চাইলো পিয়াসাকে অচেনার মতো। পিয়াসা আয়মানের এই অপরিচিত চাহনি দেখে কিছুটা ভড়কে গেল। কি হলো উনার। মরা বাড়িতে ভূতে ধরলো নাকি। নাকি সেই রাগ পুষে রেখেছে মনের মধ্যে।
তিনদিনের কুলখানি শেষ করে আয়মানরা ফিরে এলো ঢাকায় নিজ গন্তব্যে। আয়মান এই ভিতরে পিয়াসার সাথে কোন কথাই বলেনি। গ্রামে নানান দৌড়ঝাঁপে কথা বলার সময় ও মানসিকতা হয়নি আয়মানের। আর কিছুটা রাগ ও আছে পিয়াসার উপরে।
কিছু সময় ও পরিস্থিতি মানুষকে বিপুলভাবে বদলে দেয়। চেতনাশক্তি হয় অনেক সচেতন ও বাস্তবধর্মী। নিজের মাঝে ধারণ করে ভারিক্কিভাব। চিন্তা ভাবনায় হয়ে উঠে আরো ব্যক্তিত্বময়, পরিপূর্ণ, ও পরিপক্ক।
পিয়াসা মাগরিবের আযান শেষে নামাজের বিছানায় বসে নিজে নিজেই গভীর ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। নিজের ভিতরে অপরাধবোধ হলো। চিন্তা করল মনে মনে , আমরা মুসলমান। নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে একদিন সবাইকেই যেতে হবে। আমি এক নগন্য বান্দা৷ গুনাহ যে কত কামাচ্ছি।
স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য হক আদায় না করলে স্বামী যদি অসন্তুষ্ট থাকে। তাহলেও ফেরেশতারা নালত দিতে থাকে। আয়মান মনে হয় আমার উপরে ক্ষুদ্ধ। এটা অতি স্বাভাবিক। আর কত রাত অপেক্ষা করবে। অযথাই হেলামী করে নানা চালছুতোয় আয়মানকে এতদিন বঞ্চিত করেছি। আর নিজের পাপের বোঝা ভারী করেছি।
অথচ আমি কোথায় ছিলাম। কোথায় থাকতাম। এখন এলাম কোন স্বর্গ ভুবনে। আয়মানের মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে কি মহিমান্বিত জীবন উপহার দিল। নয়তো রাস্তার মানুষরূপী কুকুরেরা আমাকে ছিঁড়ে পুড়ে খেত। আমি হতাম শত পুরুষের ভোগের বস্তু। আর এখন কত মযার্দার সাথে আছি। কত ভালো মানুষ এরা সবাই। বিভেদের পৃথিবীতে এদের মতো মহান মানুষেরা আছে বলেই জগৎ আজো এতো সুন্দর। হে আল্লাহ। এই নগন্য বান্দাকে ক্ষমা করুন বলে পিয়াসা নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগল।
আয়মান এতক্ষণ দরজার বাইরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে খেয়াল করলো পিয়াসাকে। হালকা কাশি দিয়ে ভিতরে গেল। পিয়াসা সালাম দিল স্বামীকে। উঠে গেল মোনাজাতের শেষে। আয়মান ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে আলতো হাসি দিল।
খাটের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,
বহুসময় ধরে দেখলাম মোনাজাতে ছিলে। দুইহাত তুলে কি চাইলে রবের কাছে?
মোনাজাতে স্রস্টার নিকট কি প্রার্থনা করে মানুষ?
অনেক কিছুইতো বলে।
আমিও অনেক কিছুই বলছি।
কি কি বললে শুনি? দুষ্টমির ছলে আয়মান জানতে চাইলো।
বলা যাবেনা। টপ সিক্রেট।
আয়মান বলল,
দেখলে? মানুষ তার পরিবেশ দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়? গ্রাম থেকে আসার পর তুমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছ। এটা যেন অব্যাহত থাকে আমার কেশবতী।
দোয়া করবেন আমার জন্য । আপনার কেশবতী হয়েই বাঁচতে চাই আমি। জীবনের শেষ নিঃস্বাসটুকু যেন আপনার বুকেই ফেলতে পারি।
আমিন। এমনওতো হতে পারে,তোমার আগে আমিই তোমাকে ছেড়ে চলে যাব।
পিয়াসা হেলে পড়ল আয়মানের বুকে। মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরলো। প্লিজ অমন অলুক্ষনে কথা ভুলেও কর্ণ গোচর করতে চাইনা আমি। ভুলেও না।
আচ্ছা আচ্ছা। তাই হবে। আয়মান পিয়াসার পিঠের উপর হাত দিয়ে জড়িয়ে নিল তার মায়াময় বাহুডোরে। পিয়াসার হাতের পিঠে কয়েকটি চুমু খেল। বলল তোমার হাতের স্পেশাল চা বানিয়ে নিয়ে আস। কফি মগে এনো। বেশীই খাব।
চায়ের সাথে টা আনব?
নো নিড। টা তোমার মাঝেই আছে।
আস্ত একটা বদমাইস বলে পিয়াসা চলে গেল চা বানাতে৷
আয়মান তার কাজে মন দিল আনন্দভরা চিত্ত নিয়ে।
পিয়াসা চা বানিয়ে শ্বাশুড়ি,ননদকে দিল। শুভ পড়াতে আসবে একটু পরে। তারজন্য ও রাখল। শুভকে রোজ নাস্তা আলিশাই নিয়ে দেয়। তার আম্মু ভিতর থেকে ট্রেতে সব রেডি করে দেয়।
পিয়াসা আয়মানকে কফি মগে করেই চা নিয়ে দিল। এই চা গ্রম। চা গ্রম চলে এলো। লাগবে স্যার? লাগবে? মজা মজা।
আয়মান বলল,
এইই মেয়ে, তুমি হকার হলে ভালো জমাতে পারতে। ট্রেন থামলে জানালার পাশে এসে ডিম, ডাব,বাদাম,চানাচুরওয়ালারা সেইম এভাবেই হাঁক দিয়ে ডাকে৷ ভালই তো রপ্ত করলে। ট্রেনে করে যেতে নাকি গ্রামে?
পিয়াসা হোঃহোঃহোঃ হিঃহিঃহিঃ করে উচ্চস্বরে হেসে গড়াগড়ি খেল। পিয়াসার চুড়ি ভাঙা হাসিতে আয়মান আত্মহারা হয়ে গেল।
পিয়াসা বলল,এই কর্তা বাবু চা জুডিয়ে জল হচ্ছে যে। খান। আর বাস ভাড়া বেশী বলে ট্রেনেই করেই আমরা গ্রামে যেতাম।
বুঝলাম। আসো খাই দুজনে।
আমি পরে খাব। ইচ্ছে করছেনা এখন।
তোমার জন্য বানাওনি? দুধ নেই?
আছে। বানিয়েছি সবার জন্যই। পরে খাব।
আমি এত চা খাই? এখানে দুকাপ হবে।
হুম হবে। আপনি না বললেন মগে করে চা দিতে?
বলছি এজন্য। দুজন একসাথে খাব বলে।
এটাও কি আপনার প্রণরের রোমান্টিসিজমের অংশবিশেষ?
অফকোর্স মধুবালা। তুমি এক চুমুক খাবে দেন আমি এক চুমুক খাবো। এভাবে চুমুকে চুমুকে আমরা আমাদের প্রেমকে মহান করে তুলব। স্মৃতিময় হয়ে এগুলো স্মৃতির সিন্দুকে জমা পড়ে রইবে আদি থেকে অনাদিকাল পর্যন্ত। আমরা যখন বুড়ো-বুড়ি হব। আমাদের দাম্পত্যের এসব টুকিটাকি রোমান্স ও প্রেম যাপনের সময়গুলো মনে করে করেই ভালো থাকব আমরা ।
পিয়াসাকে আয়মান তার কোলে বসিয়ে নিল দু পা নামিয়ে দিয়ে। পিয়াসাও স্বামীর আবদার মেটাতে সদা প্রস্তত। সমভাগে দুজন চা খেয়ে শেষ করলো।
পিয়াসা কোলে বসা থেকেই আয়মানের গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির উপর পাঁচ আঙুল বুলিয়ে নিল। বলল, আমি মরে যাই আপনার প্রেম দেখলে আমার প্রতি। ভালোবাসাকে জিইয়ে রাখতে আপনার কত শত মুগ্ধকর আয়োজন।
ভালোবাসি আপনাকে। পিয়াসার মুখ দিয়ে শব্দ দুটো বের হতেই,
আয়মানের শিরশির অনুভূতিরা দাপাদাপি শুরু করলো। এই কি বললে যেন শুনতে পাইনি?
পিয়াসা আয়মানের কান বরাবর নিজের দুঠোঁট চেপে ধরলো। ফিসফিসিয়ে বলল, ওরে বয়রা স্বামী আমার। বলছি আপনাকে আমি ভালোবাসিইইই।
আয়মান পিয়াসার শুষ্ক অধর ভিজিয়ে দিয়ে বলল,
তাহলে আজ রাতে প্রমান দিও৷ মুখের কথার কি গ্যারান্টি। আমি আবার কাজে বিশ্বাসী ।
পিয়াসা কোল থেকে উঠে গিয়ে বলল। হ হ। প্রমাণ দিব রজনীতে। আমার দাঁত কিন্তু অতিশয় ধারালো ও নিখুঁত। ওয়ে ওয়ে.. ওওও….। দুষ্ট মিষ্ট হাসি আর চোখ পাকিয়ে পিয়াসা চলে গেল বাসার অন্য কাজে।
শুভ পড়াতে এল। এই তিনদিন আসেনি। ফোন করে মানা করে দিয়েছে গ্রামে যাওয়ার সময় আলিশা। শুভ আলিশার থেকে তার দাদীর ও তাদের গ্রামের খোঁজ খবর নিল।
তাদের প্রেমের কোন ইশারা ইঙ্গিত ও ঠোকাঠুকি হলনা আজ দুজনের দিক থেকে। বাক্য বিনিময় হলনা বোবা ভাষায়। সব সময় পরিবেশ বুঝে প্রেম রোমান্স ভিতর থেকে আসেওনা। জীবনের মানে শুধু এই নয় ভালোবাসাবাসি।
একটা আস্ত জীবনে একজন মানুষকে সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়েও চলতে হয়। কেননা একটা জীবনের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে আরো অনেকগুলো জীবন। অনেককিছুই মেইনটেইন করে চলতে হয় একজন মানুষকে। আলিশা উঠে গিয়ে চা নাস্তা এনে দিলে শুভ খেয়ে চলে গেল।
রাত হলো। পিয়াসা রান্নাঘরের সব কাজ সেরে ঘুমাতে গেল। আয়মান আগেই ঘুমিয়ে গেল নিত্যরাতের মতো। নিয়মমাফিক তার সকালে উঠে কলেজে যেতে হয়। পুরো সংসার তার একার আয়ে নির্ভরশীল। দায়িত্বের জায়গায় সে বদ্ধ পরিকর। পিয়াসার সান্নিধ্য আয়মান ঘুমের মাঝেও টের পেল। তবুও সে কোন নড়চড় করলনা।
পিয়াসা আদুরে বিড়ালছানার মতো আলুথালু হয়ে আয়মানের বুকের ওমে ঢুকে গেল। আয়মানের প্রতি এক দরিয়া ভালোবাসা নিয়ে মিশে গেল নিবিড়ভাবে।
চলবেঃ ২৩