#প্রণয়ের_বাঁধন |২১|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত
রিয়ার ভিউ মিররে ইভানের দৃষ্টি থমকায়। স্পষ্ট দেখা যায়, একটা কারের সাথে কালো রঙের বাইকের ধাক্কা লাগে; বাইকার ব্যালান্স সামলাতে না পেরে ছিটকে খানিকটা দূরে বাইকসহ উল্টে পরে। আচমকা ইভানের বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠল। অস্থিরতার সৃষ্টি হলো। ইভান ঘনঘন দুইবার পলক ফেলে ভালো করে নজর দেয়, মাথায় হেলমেট থাকলেও ইভানের মনমস্তিষ্ক বাহ্যিক অবয়ব আর বাইক দেখে দুই সেকেন্ডেই স্থির করে ওটা দিব্য। ইভান ফাস্ট গাড়ি ব্রেক কষে। আকস্মিক ব্রেক চাপায় তনুজা সামনের দিকে অনেকটা ঝুঁকে যায়। পরপর নিজেকে সামলে হতভম্ব হয়ে ইভানের দিকে তাকায়। ইভান ত্রস্ত হাতে সিটবেল্ট, ডোর খোলে ছুটে যায়। তনুজা ভ্যাবাচ্যাকা খায়। চেঁচিয়ে শুধায়,
-” ইভান, কী হয়েছে?”
ইভানের মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে; কোন কথা তার কর্ণগোচর হয় না। ইভান রাস্তার মাঝখান দিয়ে ছোট-বড় গাড়ি এড়িয়ে উদ্ভ্রান্তের মতোন ছুটছে। তনুজা চিন্তিত হয়ে ত্রস্ত নেমে ইভানকে অনুসরণ করে। মূহুর্তেই লোকজন জমা হয়। পিচের রাস্তায় টুকরো টুকরো হয়ে আছে বাইকের আয়নার কাঁচ। লোকজন ধা’ক্কা দেওয়া কারকে আটকে দিয়েছে। দিব্য পিচের রাস্তায় পরে। একহাত রাস্তায় ঠেস দিয়ে সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করে; বড়বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে অন্যহাতে হেলমেট খোলার চেষ্টা করতে থাকে। এরমধ্যে পথচারী কেউ একজন বাইকটা টান দিয়ে সোজা করে। অতঃপর ইভান ছুটে এসে অস্থির চিত্তে দিব্যর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। এতমাসে মনের কোণে জমে থাকা রাগ-ক্ষোভ, অভিযোগ, অভিমানের পাহাড়সম বরফ সবটা যেন নিমিষেই কর্পূরের মতো উবে যায়। সেখানে দখল করে নেয় ছোটভাইয়ের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা। ভাইয়ের বিপদে অস্থির, উৎকন্ঠায় হৃদয় নাড়া দেয়। কণ্ঠে ঝরল একরাশ উদ্বিগ্নতা,
-” দিব্য! দিব্য তুই ঠিক আছিস? তোর কোথাও লাগেনি তো।”
দিব্যর মাথাটা ঝিমঝিম করছিল। চারপাশ কেমন ঘোলাটে দেখছিল। আচমকা দুর্ঘটনায় হাত-পা রীতিমতো কাঁপছিলো। এমন মূহুর্তে ইভানের উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বর শুনে, এতগুলো মাস পর ইভানের থেকে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ পেয়ে দিব্যর ভেতরটা মুষড়ে উঠল। ইভান হেলমেট খুলে দেয়। পরপর অস্থির নজরজোড়া বুলায় দিব্যর শরীরে। তনুজা এতক্ষণে পাশে এসে দাঁড়ায়। বিষয়টা ঠাহর করতেই আঁতকে ওঠে। কোথাও একটা জড়তা থাকায় তনুজা কিছুই বলতে পারল না। তবে ব্যথিত হয়ে শুধু নির্বাক চেয়ে রইল। দিব্যর দুইহাতের কনুই ছিলে গিয়ে র”ক্ত বেরুচ্ছে। রঙচটা আকাশী কালারের জিন্সের পায়ের দিকে লাল তরলে ভিজে যাচ্ছে। এটা দেখে ইভান চক্ষুজোড়া বন্ধ করে নেয়। দম ফেলে পরপর নিজ হাতে দিব্যর পায়ের দিকের জিন্সটা তুলতে থাকে। ডাবল স্ট্যান্ডের পাশে থাকা ছোট্ট রডটা গোড়ালি থেকে প্রায় দশ ইঞ্চি উপরে বিঁধে ক্ষ’তের সৃষ্টি করেছে। সেই ক্ষ’ত থেকে গলগল করে র-ক্ত বেরুচ্ছে। দেখে ইভানের বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠল। দু’চোখ টলটল করে ওঠে ওর। বাম পকেট থেকে ব্যস্তহাতে রুমাল বের করে দিব্যর পায়ে বেঁধে দেয়। দিব্যর টলমল চাউনি। ঝাপসা চাউনিতে উদ্বিগ্ন, অস্থির ইভানকে দেখছে। ব্যাথা অনুভব হচ্ছে সেটা যেন বেমালুম ভুলে গেল দিব্য। আবেগে আপ্লুত হয়ে ইভানকে জড়িয়ে ধরার প্রচন্ড সাধ জাগে দিব্যর। সৃষ্টিকর্তাও বোধহয় এমনটিই চেয়েছিলেন; তাই তো বলতে হলো না, ওর সেই সাধটা মূহুর্তেই পূর্ণ করে ইভান দিব্য কে বুকে টেনে নিল। চোখে টলমলে নোনতা জল নিয়ে বলল,
-” দিব্য! আর কোথায় কোথায় লেগেছে? বল আমায়? চল এক্ষুনি ডক্টরের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। কিচ্ছু হবে না।”
দিব্য ব্যাথায় কপাল কুঁচকে ফেলে। থেমে থেমে বলে,
-” আমি ঠিক আছি। চিন্তার কিচ্ছু নেই, তেমন লাগেনি।”
ইভান দিব্যকে ধরে দাঁড় করায়। এরমধ্যে শোরগোল শুরু হয়। কেউ প্রশ্ন করছে, “কী করে এ’ক্সি’ডে’ন্ট হলো?” কেউ তো ড্রাইভারকে ইঙ্গিত করে কড়া কিছু বলছে। কারের ড্রাইভার ভীতু সন্ত্রস্ত হয়ে থরথর করে কাঁপছিল। এ’ক্সি’ডে’ন্টের দৃশ্য চোখে ভাসতেই; পরপর ড্রাইভারকে দেখে ইভানের মেজাজ বা’রুদের মত দপ করে জ্ব’লে উঠল। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে দিব্যকে ছেড়ে; একপাশে দাঁড়ানো ড্রাইভারের কলার চেপে ধরে ইভান। চোখদুটো রাগে লাল টকটক করছে। ক্রুদ্ধ রাগি উচ্চস্বরে বলল,
-” শা’লা কার নিয়ে রাস্তায় শো অফ করছিস। স্পষ্ট দেখেছি পাস হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ছিলো। তারপরও ধা’ক্কা লাগলো কী করে? তোদের অদক্ষতার জন্য নীরিহ মানুষের প্রাণ যায়, প-ঙ্গু হয়।”
বলতে বলতে ইভান কলার থেকে একহাত ছাড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ করে কষিয়ে ঘু-ষি মা’রে। মূহুর্তেই হ্যাংলা, পাতলা স্বল্প বয়সী ছেলেটার ঠোঁট কেটে র’ক্ত বেরোয়। হঠাৎ ইভানের রাগি মূর্তি ধারণ দেখে তনুজা ভড়কায়। সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকলেও এতটা রাগ আছে তা তনুজার তেমন জানা ছিলো না। তনুজা আচমকা ইভানের বাহু ধরে আটকায়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,
-” ইভান ওকে ছাড়ুন। ট্রাফিক পুলিশ আসছে; ওনারা দেখে নিবে ওকে। এখন এসব জরুরী নয়। দিব্যর পা থেকে প্রচুর ব্লেডিং হচ্ছে, ওকে ইমিডিয়েট হস্টপিটালে নেওয়া জরুরী। এখন প্লীজ মাথা ঠান্ডা রাখুন।”
তনুজার কথায় সম্বিত ফেরে। পরপর কলার ছেড়ে মাত্র আসা ট্রাফিক পুলিশকে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,
-” ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কীনা চেক করুন। আর এভাবে ফা’উ’ল করার জন্য, যথাযথ ব্যবস্থা নিন। আমি পরে শুনব। কোনভাবেই যেন প্যানিশমেন্ট ছাড়া না ছাড়া পায়।”
____________
পাশের একটা ক্লিনিকে দিব্যকে আনা হয়। হাতে আর পায়ে ছাড়া আপাতত আর ইনজুরি হয়নি। ভাগ্য সহায় ছিলো বিধায় অল্পের উপর দিয়ে যায়। বাড়িতে ফোন করে জানাতে চাইলে দিব্য বাঁধ সাধে। বাড়িতে সবাই টেনশন করবে, আবার ছুট্টে চলে আসবে তাই ইভানও আর কল করে জানায় না। পায়ের ক্ষ’তে তিনটে সেলাই পড়েছে। পুরোটা সময় ইভান দিব্যর পাশে ছিলো। ক্লিনিকের ডিউটিরত ডক্টর দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন করা হয়। বর্তমানে গ্রাউন্ডফ্লোরের ওয়েটিং চেয়ারে গা এলিয়ে পা টান করে দিব্য বসে। ইভান তনুজাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” তনুজা।”
-” হ্যা।”
-” তুমি দিব্যর পাশে থাকো। আমি এক্ষুনি মেডিসিন গুলো নিয়ে আসছি। আর রিসিপশন থেকে ফর্মালিটিজ পূরণ করে আসছি।”
-” ঠিক আছে।”
চেয়ারে কাঁধ ঠেকিয়ে চোখদুটো বুজে আছে দিব্য। তনুজা জড়সড় হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ করে রেখেছে। এরমধ্যে মেয়েলি রিনরিনে সুর আসলো,
-” তনু? তুই এখানে?”
পাঁচ-ছ’মাসের বাচ্চা কোলে একটা মেয়ে। একগাল হেসে এগিয়ে আসলো। তনুজা চোখ তুলে ওর এক বান্ধবী রিয়াকে দেখতে পায়। তনুজা উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল,
-” তা তুই এখানে? কেউ অসুস্থ নাকি!”
রিয়া মুখটা ম্লান করল। তেমনি ভারী স্বরে বলল,
-” হ্যা রে মেয়েটা অসুস্থ। কয়েকদিন ধরে খুব ঠান্ডা লেগেছে। এন্টিবায়োটিক চলছে তাও কিচ্ছুতেই সর্দি কাশি যাচ্ছে না। আজকে শিশু ডক্টর দেখাতে এনেছি। সিরিয়াল আসতে এখনো বেশ দেরি। মেয়েটা ওখানে কিছুতেই থাকছিলো না, কান্না করছিলো। তাই হাঁটতে হাঁটতে এদিকটায় আসলাম। তা তুই কী জন্য আসছিস? সবাই সুস্থ আছে তো?”
তনুজা বাচ্চা মেয়েটার গালে আদূরে হাত রাখে। রিয়ার প্রশ্নের জবাবে বলতে নেয়,
-” আসলে হঠাৎ করে একটা দূ’র্ঘটনা ঘটেছে__”
তনুজার কথার মাঝেই রিয়ার নজর পরে দিব্যর দিকে। দিব্যকে দেখে কিছু মনে পড়ার ভঙিতে শুধোয়,
-” তনু! এটা তোর প্রেমিক সেই দিব্য না?”
তনুজা অপ্রস্তুত হয়। এহেন প্রশ্নে কী জবাব দেবে তা ওর কাছে আজ বড্ড অজানা! পরপর কথাটা দিব্যর কানে পৌঁছাতেই সটান চোখ মেলে চায়। সকাল বেলা ধোঁয়া ওঠা দুধচায়ের সাথে; নিউজ পেপারের গরম গরম টাটকা নিউজ যেমন চমকপ্রদ হয়। ঠিক তেমনি তনুজার বান্ধবী মহলে রমরমা খবর হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছিল; সাদা সিধে, ছাপোষা তনুজা শহরের এক অতি সুদর্শন ছেলের প্রেমে পড়েছে। যদিও ছেলেটা দীর্ঘদিন তনুজার পিছুপিছু ঘুরঘুর করেছে। যতটা না দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিলো, তার থেকে বান্ধবী মহলে মুখরোচক আলোচনার বিষয় ছিলো তনুজার প্রেমে পরার কাহিনী। কেউ কেউ তো বলতো,
-” তনু ছেলেটা তোর সাথে চিট করবে। ছেলেটাকে দেখলেই বোঝা যায় খুব বড়লোকের ছেলে। তারপর ছেলেটা খুবই হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং। দেখে নিস কিছুদিন টাইমপাস করে চলে যাবে। নিশ্চয় বাজে মতলবে তোর সাথে রিলেশন করেছে।”
দিব্যর সাথে দাদির বাটনফোনটা দিয়ে তনুজার মাঝে মাঝে কথা হতো। মাঝে মধ্যে কলেজে যাওয়ার পথে বাচ্চাদের দিয়ে ফুল পাঠাত। ব্যাস! এতটুকুই ছিলো। তারপরও বান্ধবী মহলের ক্লোজ কয়েকজন তনুজাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরত ওর প্রেমের গল্প শোনার জন্য। সাথে কেউ কেউ সাবধানী বাণী আওড়াতো। রিয়া চোখদুটো রসগোল্লার সাইজ করে বলল,
-” এইরে ভুলেই গিয়েছিলাম। বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে বেশ কিছুদিন কলেজে যাওয়া হয় না। তাই কারো সাথে তেমন কথা হয় না। একদিন শপিংয়ে রুপার সাথে দেখা হয়েছিলো বলল তোর নাকি বিয়ে হয়েছে। যাজ্ঞে ভালোই হয়েছে।”
উচ্ছ্বসিত হয়ে ফের বলে উঠল,
-” আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না, তোর প্রেমিকের সাথেই তোর বিয়ে হয়েছে। যাক বাবা তোর প্রেম সার্থক হয়েছে তাহলে।”
মিনিটেই তনুজা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিরক্তি অস্বস্তি নিয়ে কিছু বলতে যাবে সেইসময় তনুজার গোটা পৃথিবী থমকায়। পায়ের তলার থেকে যেন জমিন সরে যায়। অল্প দূরত্বে ইভান দাঁড়িয়ে। তনুজার হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছে। তনুজার অবচেতন মন ভাবে, ”ইভান সবটা শুনে নিয়েছে কী?” ওদিকে রাগে দিব্যর কপালের রগগুলো দপদপ করছে। মুড়িভাজার মতো একনাগাড়ে গড়গড় করে কথা বলেই যাচ্ছে, বাঁচাল মেয়ে। ইচ্ছে করছে …
-” না না, আজকে সম্ভব নয়। আপনি মিটিং ক্যান্সেল করুন।”
-” স্যার! এখনো তো তিনটে বাজতে টেন মিনিটস সময় বাকী আছে। যদি_”
খুবই নরম স্বর ফোনের ওপাশ থেকে আসলো। একহাতে ফোনটা কানে চেপে ধরে ইভান। হাতঘড়িতে সময় দেখতে দেখতে ফোনের ওপাশের ব্যক্তিকে রুঢ় গলায় বলল,
-” বললাম তো আজকে সম্ভব নয়। টেন মিনিটস কেনো? আজকে কোনো মিটিংয়েই এটেন্ড করা ইম্পসিবল। তাই আপনি এক্ষুনি ক্যান্সেল করুন।”
তনুজার হাত-পা কাঁপছে। ইভানকে এগোতে দেখে তনুজার গলা শুকিয়ে মরুভূমির ন্যায় খাঁ খাঁ করে উঠল। ইভানের মুখাবয়ব স্বাভাবিক দেখে এক টুকরো মরীচিকা দেখল তনুজা। জিভ দিয়ে গলাটা ভেজানোর চেষ্টা করে ইভানকে দেখিয়ে জোরেশোরে বলল,
-” রিয়া ওই-যে আমার বর। চল পরিচয় করিয়ে দেই।”
ইভান কপাল কুঁচকে তাকায়। ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত থাকায় রিয়ার কথাগুলো তখন ভালো করে শুনতে পারেনি, মস্তিষ্ক কাঁচ করেনি। তনুজার কথা শুনে রিয়ার ঠোঁট দুটো কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে যায়। বেক্কেলের মতো দিব্যকে ইশারা করে দেখিয়ে বলে উঠল,
-” অ্যা, ওনার সাথে তোর বিয়ে হয়নি!”
উফ্! তনুজার মাথায় এবার গোটা আকাশ কাঁচ ভাঙার মত টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ল। এই মেয়ে কোন কালের শত্রু ছিলো তা আল্লাহ মালুম! এভাবে ফাঁসানোর জন্য আটঘাট বেঁধে নেমেছে নাকি আশ্চর্য! দিব্য রাগে ফুঁসছে। দিব্যর ইচ্ছে করছে এই মেয়ের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দিতে। ব’লদ একটা! কোনই কমনসেন্স নেই; বলছে ওটা আমার বর! তারপরও ওর সাথে তোর বিয়ে হয়নি! উফ্!
ইভানের কপালে ভাঁজ পরে। মেয়েটির কথাশুনে অবাক হয়। -“ওনার সাথে মানে? ওনার সাথে বিয়ে হওয়ার কোন কথা ছিলো নাকি?” না চাইতেও ইভানের মনে প্রশ্নের উদ্ভব হয়। চিন্তায় তনুজার কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে। ফের হাত দিয়ে ইভানকে দেখিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
-” উনি ইফতিয়ার ইভান মির্জা; আমার বর।”
কথাটা বলতে বলতে চোখেচোখে তনুজা কিছু ইশারায় বোঝায়। রিয়া কতটা বুঝল কে জানে। তবে নির্বোধের মতন ফ্যালফ্যাল করে চাইল। এরমধ্যে বাচ্চা মেয়েটা শব্দ করে কান্না জুড়ে দিলো। এদিকে ইভানের মনকেও অন্যদিকে ঘুরাতে দিব্য নিখুঁত অ্যাক্টিং করল। পা টা ইচ্ছে করে সরাতে গিয়ে চেয়ারের সাথে গুঁতা লাগায়। ব্যাথায় মুখাবয়ব টানটান হয়ে যায়। সেকেন্ডেই অন্যদিক থেকে ইভানের ভাবনার সুতো ছিঁ’ড়ে যায়। দিব্যর দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেয়।
-” আমি আসি রে তনু। মেয়েটা আবার কান্না শুরু করলো।”
রিয়া প্রস্থান করতেই তনুজা একহাত বুকে রেখে চোখদুটো বুজে নিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তবে তনুজা মনেমনে কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলো, ও ইভানকে সবটা বলবে। খুব শীঘ্রই বলবে। এতটা ভয়ে আতংকে বাঁচা যাচ্ছে না। যখন থেকে দু’জন দু’জনের প্রতি দূর্বল হলো, তখন থেকেই তনুজাকে একটা ভ’য়-আতংক সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। বিয়ের প্রথম প্রথম বিষয়টা নিয়ে তেমন না ভাবলেও ইদানিং ভ’য়টা তটস্থ করে রাখছে তনুজাকে।
___________
বিকেলের একফালি নরম রোদ জানালার কাঁচ গলিয়ে রুমময় লুটোপুটি খাচ্ছে। বিছানায় হাত দু’টো ঠেস দিয়ে গাল টমেটোর মত ফুলিয়ে বসে আছে নিতি। তামান্না কাবার্ড থেকে অলিভ কালারের গর্জিয়াস গাউন বের করে বিছানায় নামালেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে চাইলেন। কণ্ঠে নামল আদেশের সুর,
-” ফাস্ট এটা পরে রেডি হয়ে নাও। ছয়টার আগেই ___কফিশপে যাবে। আর একটাও বাহানা আমি শুনব না। অনেক হয়েছে তোমার বাহানা। এখন নয় পরে, পড়াশোনা পরীক্ষার অজুহাত একদম দেখাবে না।”
নিতির সহজে রাগ হয় না। যখন হয়, তখন ভীষণ কান্না পায়। এইযে রাগে নিতির ভীষণ কান্না পাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে ধরে কোন রকমে কান্নাটা গিলে নেয় ও। মায়ের দিকে অসহায় চোখে চাইল। কণ্ঠে ঝরল তীব্র অসহায়ত্ব,
-” মাম্মা আজকে দেখা করতে যাওয়াটা কী খুব জরুরী?”
তামান্না কড়া চোখে চাইলেন। নিতি গলার স্বর নিচু করে ফের বলল,
-” বাড়িতে আজকে একটা দূর্ঘটনা ঘটল। এরমধ্যে আজকে দেখা করতে যেতেই হবে। আজ না গিয়ে অন্যদিন গেলেও তো হয়।”
-” বাড়িতে আরো অনেকে আছে, তাই তোমাকে এত ভাবতে হবে না। আর এমন বেশি কিছু হয়নি। ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে, ডক্টর দেখানো হয়েছে মেডিসিন দিয়েছে; ঠিক হয়ে যাবে। আর নীরবের সাথে তুমি আজকে দেখা করতে যাচ্ছ এই ডেট আরো দু’দিন আগে থেকেই ঠিক করা। তাই আমি ফোন করে শুধু শুধু ডেট পেছাতে চাইছি না। আর হ্যা একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো; এমন কোন আচরণ করবে না যাতে করে ছেলেটি তোমার সম্পর্কে নেগেটিভ মন্তব্য করে। নীরব তোমার সাথে কথা বলে ফ্যামেলিকে ওর ডিসিশন জানাতে চায়। পজিটিভ কিছু বললেই ওর বাবা-মা পাকা কথা বলতে আসবেন।”
নিতি দাঁতে দাঁত চেপে কান্না সংবরণ করে যাচ্ছে। তামান্না রেডি হতে তাগাদা দিয়ে প্রস্থান করেন। আঁটকে রাখা কান্নারা এবার বাঁধ হারা হয়। নিতি ঝরঝরিয়ে কেঁদে উঠল। খানিকক্ষণ কান্না করে নিজেকে একটু হালকা লাগতেই কিছু ভেবে গুটিগুটি পা ফেলে বাইরে বেরোয়।
কাংখিত রুমের সামনে এসে দরজায় ঠুকা দিয়ে মিহি স্বরে বলল,
-” ভেতরে আসবো।”
ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ আসলো না। মিনিট দুয়েক ওভাবে দাড়িয়ে বি’র’ক্ত হয়ে অনুমতির তোয়াক্কা না করে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে নিতি। দিব্য বিছানার হেডে হেলান দিয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রল করছে। আহত পায়ের তলায় একটা বালিশ রাখা। পরনে ছাইরঙা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, গায়ে সাদা টিশার্ট। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট হওয়ার দরুণ পায়ের লোমগুলো দৃশ্যমান। ফর্সা পায়ে সাদা ব্যান্ডেজ করা অংশটা দেখে নিতির মলিন মুখটা আরো মলিন হয়ে আসে। দিব্য ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে নিতির দিকে চায়। নিতি ওড়নার কোণা আঙুলে পেচাতে পেচাতে নিচু কণ্ঠে বলল,
-” আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে। জানি এই সময় বলাটা উচিত না। তারপরও বলতে হচ্ছে।”
মূহুর্তেই দিব্য কপালে বিরক্তির ছাঁট ফেলে। কর্কশ স্বরে বলল,
-” কী বলবি ফাস্ট বলে এখান থেকে যা। আমি ভীষণ টায়ার্ড, এখন লম্বা একটা ঘুম দিবো।”
-” খা’টাশ একটা। ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছিল। আর আমাকে দেখে এখন ওর রাজ্যের ঘুম পাচ্ছে।”
বিড়বিড় করে বলে নিতি। গলা খাঁকারি দিয়ে মুখে বলল,
-” পাপার পছন্দের কোন এক ডক্টর-টক্টরের সাথে মাম্মা আমাকে কফিশপে দেখা করতে যেতে বলছে। বলতে পারো এক প্রকার ফোর্স..”
নিতির কথা সম্পূর্ণ না শুনেই দিব্য চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” তুই কী এখন আমাকে বলতে চাইছিস তোর সেই ডক্টরের সাথে দেখা করার জন্য; আমি এই পা নিয়েই তোকে কফিশপে ড্রপ করে আসি।”
নিতি বি’রক্ত হলো,
-” আরে নাহ! ধূর পুরো কথাটা তো শুনবে। না শুনেই।”
দিব্য স্বভাবসুলভ রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে হাত নাড়িয়ে বলল,
-” এখন আমি ঘুমাবো। তোর কোন কথাটথা শোনার ইচ্ছে এন্ড আগ্রহ কোনটাই নেই আমার। তাই তুই এখন যেতে পারিস। আর শোন; যাওয়ার সময় দরজাটা টেনে দিয়ে যাবি। গো..”
নিতি নাকমুখ ফুলিয়ে চাইল। দিব্য রুঢ় গলায় বলল,
-” গেট লস্ট।”
নিতির ধৈর্য্যর বাঁধ ভাঙল। চোয়াল ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-” অ্যাই তুমি এমন কেনো বলো তো? তোমার জন্মের সময় মধুটধু কিছু মুখে দেয়নি নাকি! আশ্চর্য! আমার দীর্ঘ এত বছরের জীবনে তোমার মুখ থেকে একটাও মিষ্টি কথা শুনলাম না। সবসময় মুলোর মত দাঁত বের করে কেমন খিটখিট করো। একটু ভালো মুখে কথা বলতে তোমার প্রবলেম কোথায় শুনি?”
-” আমার মুলোর মতো দাঁত? পা ভালো থাকলে উঠে গিয়ে তোর সব কটা দাঁত ফেলে দিতাম। ফা’জিল একটা। আজ তোর কপাল ভালো পায়ে আর অহেতুক ব্যাথা দিতে চাইছি না।”
নিতি মুখ ভেঙিয়ে বলল,
-” উমম! তোমার দাঁতগুলো ভারী সুন্দর! ঝকঝকে একদম পাটিপাটি। বাট খিটখিটে মেজাজ জন্য রাগ করে অমনটা বলেছি। তবে আমি জোরসে গলায় বলতে পারব তোমার জিহ্বা খুব তেতো। তাইতো মুখ দিয়ে মিষ্টি কথা বেরোয় না। মাঝে মধ্যে তো একটু-আধটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারো।”
-” তুই কী আমার বউ যে তোর সাথে আমার মিষ্টি করে কথা বলতেই হবে! না হলে আমার কপালে ভাত জুটবে না। মিষ্টি কথা না বললে, কফির মগে থুতুও পড়তে পারে।”
নিতি ভাব নিয়ে বলল,
-” ভবিষ্যতে পড়তেও তো পারে।”
এরমধ্যে নৃত্যর গলা আসলো। চকিতে পিছন ঘুরে তাকায় নিতি। দরজার দারগোড়ায় দাঁড়িয়ে নৃত্য,
-” আপু তুমি এখানে? এদিকে আমি তোমাকে খুঁজে হয়রান হচ্ছি।”
-” কেনো কী হয়েছে? আমাকে এত খোঁজার কারন কী? আমি কী অলিম্পিক জয় করেছি; যে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করার জন্য খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছিস!”
-” বাররে! আমার আর কোন কাজ নেয় তোমাকে খুঁজতে যাওয়ার। মাম্মা বললো, দ্যাখ তো নিতি রেডি হয়েছে কী না? তাই তোমার রুমে গিয়েছিলাম। সেখানে না পেয়ে খুঁজে এখানে পেলাম।”
ধ্যাত! দিব্য কে বলতে এসেও বলা হয়ে উঠলো না। একে তো এই রাগি, বদমেজাজি দিব্যটা আস্ত একটা খা’টা’শ! তারপর তার ফুপিটা হয়েছে রিনা খান। নিতি হাত পা ছুড়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে এসব বিড়বিড় করতে করতেই প্রস্থান করে।
__________
গোধূলি লগ্ন। নামিদামি কফিশপের নিরিবিলি একটা টেবিলে কফির মগ থেকে ধোঁয়া উঠছে। নিতি মুখটা অমাবস্যার মতো অন্ধকার করে দৃষ্টি নুইয়ে আছে। সামনের চেয়ারে অতি ডিসেন্ট খুব সুদর্শন এক পুরুষ বসে। বলার অপেক্ষা রাখে না ছেলেটাকে দেখে বিনা বাক্যব্যয়ে যে কেউ পছন্দ করবে; নো ডাউট। ছেলেটির দৃষ্টি সামনে বসা নিতির দিকে। এই তো মিনিট খানেক হবে নিতি এসেছে। ডক্টর নীরব মাহমুদ প্রায় আধাঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় ছিলো। এইযে নিতি লেট করে এসেছে, তারজন্য কেউ এতটা সময় বসে ছিলো; এতে নিতির ভেতর বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হচ্ছে না। বরং পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে ও। ব্যাটার এত বিয়ে করার শখ জাগছে কেন? এইজন্য হলেও এই আধাঘণ্টা একা বসিয়ে রাখা জায়েজ আছে; এটা নিতি মনে করে। নিতি একবারের জন্য সৌজন্যমূলক স্যরিও বলেনি। ভদ্রতা সুলভ সালাম দিয়েছে, ব্যস! কফির মগে আলতো করে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নীরব শুধাল,
-” মিস নিতি! আর ইউ ওকে?”
-” ইয়া আল্লাহ! ডক্টরটা আমাকেও রুগী মনে করেছে নাকী? ঠিক আছি কী নেই এসব শুনে প্রেসক্রিপশন লিখবে নাকি!”
নিতি এসব আ’জ’গু’বি কথা স্তুপ আকারে মনের কোণে ঠেসে মুখে বলল,
-” ইয়াহ!”
নীরব ভ্রু কুঁচকে নিতিকে পরখ করল। পরপর বলে উঠল,
-” আমার মনেহয় আপনি বোর হচ্ছেন! আপনার চোখমুখ বলছে আপনি মন থেকে এখানে আসেননি!”
-” বাহবা! এতো দেখছি জব্বর ডক্টর! রুগীর সিমটম দেখে শরীরের অসুখ কতটা ধরে তা জানি না। তবে আমার মনের অসুখ যে ধরে ফেলে তা ঢের বুঝতে পারছি।” এসব মনেমনে ভাবে। কিছু কথা বলতে গিয়েও মায়ের কড়া শাসন মনে পরল। নিতি মুখে বলল,
-” না আসলে তেমন নয়।”
-” পড়াশোনা শেষে আপনার প্ল্যান কী? কী করতে চান? সংসার? জব? নাকি একসাথে দুটোই।”
নিতির এসকল কথা অসয্য ঠেকছে। এড়িয়ে যেতে এককথায় প্রত্যুত্তর দেয়,
-” এসব নিয়ে তেমন ভাবিনি কখনো।”
-” যেমন ভেবেছেন তেমনই বলুন।”
‘মহামুশকিল তো। ইয়া মাবুদ! ব্যাটা নাছোড়বান্দার মত কথা বলছে দেখছি।’ নিতি কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফেলে বলল,
-” যেমনও ভাবিনি।”
শান্ত স্বভাবের জেন্টেলম্যান নীরব নিতির কথাশুনে মজা পেল। কিছুপল পর ইশারা করে বলল,
-” কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
নিতি এবার ছোট করে চুমুক বসায়। নীরব শান্ত গলায় বলল,
-” আমিই শুধু প্রশ্ন করে যাচ্ছি। মিস আফরিন করিম নিতি; নাউ ইউর টার্ন। নির্দ্বিধায় জিজ্ঞাসা করতে পারেন।”
নিতি সোজাসাপ্টা উত্তর দেয়,
-” স্যরি। আমার কোন প্রশ্ন নেই।”
নীরব ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হাতঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে বলল,
-” মিস নিতি এবার আমাকে উঠতে হচ্ছে। সাতটায় আমার চেম্বার আছে। এখন অলরেডি পৌনে সাতটা বেজে গিয়েছে। জলদি ফিফটিন মিনিটেসের মধ্যে পৌঁছাতে হবে।”
নিতি মনে মনে ভাবে,-” ও মাই গড! থ্যাংকস! বাঁচলাম। ওনার কথার ধরন শুনে মনে হলো, আমি বোধহয় আঁচলে বেঁধে, আঁটকে রেখেছিলাম। যত্তসব!”
পরপর বিল পে করে কফিশপ থেকে বেরুয় ওরা। নীরব রিকশা ডেকে ভাড়া মেটাতে নেয়। নিতি বাধা দিয়ে বলল,
-” না না ঠিক আছে আমি ভাড়া দিয়ে দিবো। আপনি প্লিজ দিবেন না।”
নীরব মেপে স্বল্প হাসল। বলল,
-” ব্যাপার না। আপনি যেহেতু আমার সাথে দেখা করতে আসছেন। এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে। আমার আরো দায়িত্ব ছিলো, আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া। বাট হসটপিটালে পেশেন্ট বসে থাকবে; তাই সম্ভব হলো না।”
নিতি বুঝল এ বান্দা শুনবে না। তাই নিতি চুপচাপ রিকশায় চেপে বসল। নীরব একহাতে চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে শান্ত শীতল গলায় বলল,
-” দেখেশুনে যাবেন। টেইক কেয়ার। মিস নিতি খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে।”
শেষের কথাটা শুনে নিতির তীব্র মন খারাপ হলো। সন্ধ্যার আকাশের দিকে তাকিয়ে এক সমুদ্দুর মন খারাপ নিয়ে নিতির বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরুয়।
” আমার মেয়ে আমার মুখ রাখবে।”
এই একটিমাত্র বাক্যের কাছে হার মানতে হয় অনেক মেয়েকে। নিতিকেও কী এই বাক্যটি হারিয়ে দিবে? হেরেই তো আছে সে, তার হৃদয়ের গহীনে লুকিয়ে রাখা এক তরফা ভালোবাসায় প্রতিনিয়ত দগ্ধ হচ্ছে সে। দিব্যকে পাওয়া, নিজের এক তরফা ভালোবাসায় পূর্ণতা পাওয়া যেন; ঘোর অমাবস্যায় পূর্ণিমা।
__________
দু’তিনদিন পর….
সময়টা সন্ধ্যার দিকে। কৃত্রিম আলোয় চারিপাশটা ঝকঝকা ফকফকা। ইভান অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলো। হঠাৎ ফুলের দোকানের দিকে নজর যায়। কিছু ভেবে গাড়ি সাইড করে নেমে পরপর তনুজার জন্য হলুদ গোলাপের তোড়া নেয়। ফুটপাতে মানুষের ঢল। এই সময়টায় সবাই ঘরে ফিরতে ব্যস্ত থাকে। তাই ভিড়টা একটু বেশিই। হঠাৎ রাস্তায় নামতেই আচমকা কারো সাথে ধা’ক্কা লাগে ইভানের। ধা’ক্কা লাগার ফলে হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিচে পরে যায়। জায়গাটায় পানি ছিলো। ধুলোবালি আর পানি মিলেমিশে কাঁদা হয়ে আছে। তার উপর ফুলের তোড়াটা পড়তে দেখেই ইভানের উৎফুল্ল ফুরফুরে মেজাজটা চট করে বিষন্ন হয়। ভদ্রতা বজায় রাখতে পরপর মাথা তুলতে তুলতে ইভান বলল,
-” স্যরি..স্য_”
কথাটা বলতে বলতে ইভান থেমে যায়। সামনে দাঁড়ানো রমণীকে দেখে ইভানের মেজাজ খা’রা’প হয়। চোয়াল শক্ত হয়ে আসে, কপালের শিরা উপশিরা ফুলে ওঠে। দাঁত কটমট করে রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
-” ইউ?”
#চলবে