প্রণয়ের বাঁধন পর্ব-৪০

0
862

#প্রণয়ের_বাঁধন |৪০|
#লেখনীতে_মুসতারিন_মুসাররাত

নাতাশা ঝটিতি ইয়ানের দিকে ঝুঁকে পড়ে সাদা টিশার্টের বুকে মুখ গুঁজে দিল। এক হাতে শক্ত করে টিশার্ট টেনে ধরে নিজের ঠোঁটের লালচে লিপস্টিক মুছতে লাগল। উদ্দেশ্য একটাই; ইয়ান রাজি হচ্ছে না জন্য, ইয়ানের টিশার্ট ন’ষ্ট করা!

ইয়ান দুই হাতে নাতাশাকে সরানোর চেষ্টা করে, অথচ নাতাশা আরও বেশি আঁকড়ে ধরছে। তনুজা একহাত কপালে রেখে ব্যস্ত স্বরে বলল,

-” দেখি দেখি, নাতাশা সোনা, আমি দিচ্ছি। ভাইয়াকে ছেড়ে দাও।”

এর মধ্যে ইয়ান ধাক্কা দিয়ে নাতাশাকে সরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই নাতাশা ঠোঁট উল্টে গলা ফাটিয়ে কান্না শুরু করে। তনুজা একবার ছেলের দিকে, তো আরেকবার নাতাশার দিকে চেয়ে কী করবে বুঝতে পারে না! শেষমেশ, দ্রুত নাতাশাকে কোলে তুলে নিয়ে কোমল হাতে পিঠে বুলিয়ে আদুরে গলায় বলল,

-” নাতাশা সোনা, কেঁদো না। তোমার লেগেছে? কোথাও ব্যাথা পেয়েছো, আম্মু?”

নাতাশার কান্নার বেগ বাড়ল। আহ্লাদে গলা ফাটিয়ে কান্না জুড়ে দিলো। ইয়ান ভ্রু কুঁচকে চুপচাপ তাকিয়ে রইল। তন্মধ্যে ইভান ঘরে ঢোকে। দরজা পেরিয়েই নাতাশার কান্না শুনে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করে,

-” নাতাশার কী হয়েছে? কান্না করছে কেন?”

ইয়ান তখনও গম্ভীর মুখে বসে ছিল। ইভানকে দেখেই ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসির আভাস ফুটে ওঠে।

তনুজা ইভানের দিকে তাকিয়ে ফের নাতাশার পিঠে হাত বুলিয়ে কিছু বলতে নিবে; সেইসময় হাতের প্যাকেট সোফায় নামিয়ে ইভান কয়েক কদম এগিয়ে আসে। নাতাশার গালে হাত রেখে বলে,

-” ছোট্ট পরীকে, কে কাঁদালো?”

নাতাশার কান্নার শব্দ মিইয়ে আসলো। তড়িৎ ইয়ানের দিকে তাকিয়ে আঙুল তাক করে ঠোঁট উল্টে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,

-” ও।”

নাতাশার কারবার ইভানের ভালো করেই জানা। তবুও ইভান ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,

-” ইয়ান, তুমি কাঁদিয়েছো নাতাশাকে? দিস ইজ ভেরি ব্যাড।”

ইয়ান অভিযোগের সুরে বলল,

-” পাপা, ও আমার টিশার্ট নোংরা করে দিয়েছে। দ্যাখো।”

নাতাশা নাক ফুলিয়ে চোখ পিটপিট করে ইয়ানের দিকে তাকায়। তনুজা হাসতে হাসতে শর্টকাটে সবটা বলল। ইভান নাতাশাকে কোলে নিতে নিতে বলল,

-” এসো প্রিন্সেস, আমি ইয়ানকে ব’কে দিবো। এবার খুশি?”

নাতাশার মুখটা গম্ভীর হয়ে থাকল। ইভানের গলায় মুখ গুঁজে চুপচাপ রইল‌‌। এরমধ্যে ইয়ান ওর ডান হাতটা দেখিয়ে বলল,

-” মাম্মা!”

তনুজা তাকায়। নাতাশাকে ছাড়াতে গিয়ে লিপস্টিক লেগেছে ইয়ানের হাতে। ছেলের মুখের অভিব্যক্তি মূহুর্তেই পড়ে নেয় তনুজা। ইয়ান পরপর একহাত টিশার্টে ধরে কপাল কুঁচকে বলে,

-” এটা।”

ইভান ছেলের মুখের বিরক্তিভাব স্পষ্ট অনুমান করে নেয়। ইভান তনুজাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-” টিশার্ট চেঞ্জ করে দাও।”

-” হ্যা।” সূচক ঘাড় নাড়িয়ে তনুজা টিস্যু হাতে নিয়ে প্রথমে ইয়ানের হাতটা মুছতে নেয়। ইয়ান গম্ভীর মুখে বলল,

-” মাম্মা। ওয়াশরুম।”

টিস্যু দিয়ে মুছা ইয়ানের ভালো লাগল না। তনুজা বুঝে ফেলে, অতঃপর ছেলেকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ছেলে একাই ধুয়ে লিপিস্টিকের দাগ দূর করতে থাকে। ছেলেটা বেশ খুঁতখুঁতে স্বভাবের। এদিকে নাতাশার মুখ ভার। ছোট্ট একহাতে ইভানের গলা জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ গুজে আছে। ইভান নাতাশার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল,

-” নাতাশা সোনামণি! একদম রাগ করে না। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!”

নাতাশা তড়িঘড়ি করে মাথা তুলে চাইল। চোখ বড় বড় করে ইভানের দিকে তাকায়। এক মুহূর্তেই কান্নার সবকিছু ভুলে গেছে এমন। ইভান হাসিমুখে সোফার উপর থেকে প্যাকেট হাতে তুলে নেয়। একটা রঙিন চকলেট বক্স বের করে নাতাশার দিকে বাড়িয়ে বলল,

-” এই নাও, তোমার প্রিয় চকলেট!”

নাতাশার চোখ চকচক করে উঠল। নাতাশা এক মুহূর্ত দেরি না করে চকলেটের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। একহাতে বুকের সাথে চেপে ধরে। এরমধ্যে ইয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরোয়। নাতাশা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,

-” ওতে দিবে না?”

ইভান মৃদু হেসে বলল,

-” ওর জন্যও আছে। কিন্তু তুমি তো আগে কান্না থামাও! এবার হাসো।”

নাতাশা ভ্রূ-ট্রু কুঁচকে ফেলল। ইভানের গালে হাত রেখে আধো আধো বুলিতে বলল,

-” বয়ো পাপা?”

ইভান মুখটা কিঞ্চিৎ নামিয়ে নাতাশার মুখের দিকে চাইল। স্মিত হেসে বলল,

-” হ্যা, সোনা।”

গাল ফুলিয়ে বলল,

-” ও পঁতা। ওতে দিবে না।”

নাতাশার গালে চুমু খেয়ে ইভান একগাল হেসে বলল,

-” তাই?”

নাতাশা তড়িৎ মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ জবাব দেয়। এরমধ্যে তনুজা ছেলেকে আরেকটা টিশার্ট পড়িয়ে দেয়। ইভান আদুরে গলায় বলল,

-” ভাইয়াকে চকলেট না দিলে ভাইয়া কষ্ট পাবে, মামণি। আর আমি ভাইয়াকে বকে দিবো। যাতে তোমাকে আর না কাঁদায়, হ্যা।”

ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন তুলল,

-” তত্যি?”

-” হুম সত্যি।”

নাতাশা কোল থেকে নামার জন্য নড়তে থাকে। ইভান বুঝতে পেরে নামিয়ে দেয়। নাতাশা প্যাকেট দেখিয়ে ইভানের আঙুল ধরে বলল,

-” ওতা?”

ইভান হাসিমুখে প্যাকেট থেকে ইয়ানের জন্য আনা চকলেট বক্স নাতাশার হাতে দেয়। নাতাশা হাতে নিয়ে ইয়ানের দিকে এগোয়। চকলেট বক্স ইয়ানের দিকে বাড়িয়ে গম্ভীর মুখে বলল,

-” নাও। এতা টুমাল।”

ইয়ান হাতে না নিয়ে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এরমধ্যে ইভান আর তনুজা একসাথে বলে উঠল,

-” ইয়ান নাও।”

ইয়ান হাত বাড়িয়ে নিল। তনুজা বক্স থেকে চকলেট বের করে দেয়। নাতাশা খেতে থাকে। ইয়ান ধীরসুস্থে মুখে দেয়। ইভান ছেলের দিকে ঝুঁকে কপালে চুমু খেয়ে বলে,

-” গুড বয়। তাড়াতাড়ি চলে আসছি।‌ এবার হ্যাপি?”

ইয়ান ঘাড় কাত করে উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলে। অতঃপর ইভান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বাটন খুলতে থাকে। তনুজা সেদিকে চেয়ে বলল,

-” আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি কফি আনছি।”

ইভান প্রত্যুত্তরে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। তনুজাও স্মিত হাসে।

____________

দিব্য আলমারির ড্রয়ার একের পর এক টেনে খুলছিল। সাথে কপালে বিরক্তির ভাঁজ গভীর হচ্ছিল। অফিশিয়াল দরকারি ফাইলটা খুঁজে না পেয়ে মেজাজ চড়ে যায়। রাগে একের পর এক ফাইল ছু’ড়ে ফেলতে লাগল ফ্লোরে। কাগজের খসখস শব্দ ঘরের নীরবতা চিরে দিচ্ছিল। হঠাৎ একদম নিচের একটা ফাইল হাতে নিয়ে ছুড়ে মা’র’তে গিয়েই দিব্যর হাত থমকে গেল। দিব্য ভালো করে নজর বুলিয়ে দেখে এটা সেই পুরোনো এনভেলাপ। মূহুর্তেই দিব্যর ভুরু কুঁচকে গেল, নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে। দু’হাতে এনভেলপটা সামনে তুলে ধরল। একটা পুরনো স্মৃতি যেন কাগজের পাতার ফাঁক গলে দু’চোখে চিকচিক করে উঠল…

রাতের শহর কৃত্রিম আলোর রোশনাইয়ে ঝলমল করছে। জানালার পাশ ঘেঁষে থাকা কুশনে বসে দিব্য ফোনে ব্যস্ত, কাজের মেইল চেক করছে। হঠাৎ নিতি সামনে দাঁড়িয়ে হালকা কেশে দৃষ্টি আকর্ষন করে। মূহুর্তেই দিব্যর কপালে বিরক্তির ছাঁট পরে। ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকাতেই নিতির হাতে একটা ব্র্যান্ডেড এনভেলাপ, সোনালি এমবস করা লোগো “*** Medical Center” নজরে আসে। দিব্য কপাল কুঁচকে রসকষহীন গলায় শুধাল,

-” ওটা কী?”

নিতি মৃদু হাসল। বলল,

-” আরে খুলেই দ্যাখো না। তোমার জন্য একটা ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস আছে।”

ফোনটা পাশে নামিয়ে দিব্য বিরক্তিমাখা মৃদু রাগি মুখবিবরে এনভেলপটা হাতে নেয়। আলতোভাবে খুলে রিপোর্ট বের করে। চোখ চলে যায় সোনোগ্রাফ ইমেজের দিকে। নিচে ডাক্তারি রিপোর্ট “Confirmed Pregnancy” দুইহাতে রিপোর্ট ধরে নিশ্চল চাহনিতে চেয়ে রয় দিব্য। প্রথমে কিছু বুঝতে পারে না, রিপোর্টের দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়েই থাকে। চোখ স্ক্যান করে যাচ্ছে, কিন্তু মস্তিষ্ক তথ্যটা গ্রহণ করতে পারছে না। বিষয়টা ঠাহর করতে দিব্যর বেশ কয়েক সেকেন্ড বিলম্ব হয়। নিতি দু-তিন বার হবে প্রাঙ্ক করেছে, এবারে নিতি সকালে প্রেগন্যান্টের কথা মুখে বলেছিলো। কিন্তু দিব‌্যর বিশ্বাস হয়নি। ধরেই নিয়েছিলো নিতি পূর্বের ন্যায় ফা’জ’লামি করে বলছে। বাট এখন রিপোর্ট দেখে দিব্য স্তব্ধ, বিমূঢ়।‌ দিব্যকে চমকে দিবে বলে, নিতি বাড়ির কাউকে না জানিয়ে তনুজার সাথে শপিংয়ে যাওয়ার নাম করে হসটপিটালে যায়।

দিব্য স্তব্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করল,

-” ওয়েট..এটা কি? নিতি, তুই কি সিরিয়াস? এটা কি সত্যি?”

নিতি মুচকি হেসে ধীরে ধীরে বলল,

-” হ্যাঁ, মিস্টার রাগি-টু-ড্যাডি।”

দিব্য মূহুর্তেই নীরব হয়ে যায়। চোখদুটো বিস্ফোরিত হয়। নিতি পরপর দিব্যর কোলের উপর বসে দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে। নরম স্বরে ফের বলে,

-” একদম সত্যি, মাই অ্যাংরি কিং। পাপা-টু-বি। তুমি এবার শুধু ‘রাগি দিব্য’ না, ‘বাবা দিব্য’ হতে চলেছো।”

নিতির কণ্ঠস্বর মন্ত্র মুগ্ধের ন্যায় শোনালো। মূহুর্তে দিব্যর মুখের রাগি আদল বদলে যেতে থাকে। প্রথমে ভ্রু কুঁচকে অবিশ্বাস, তারপর বিস্ময় নিয়ে নিতির মুখপানে চায়। নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলার মতো একটা অনুভূতি হচ্ছে দিব্যর। দিব্য আল্ট্রাসাউন্ড রিপোর্টটা দু’হাতে ধরে আবারও দেখতে থাকে। ফিটাসের ব্রেথ, ওয়েট… এসব লেখা পড়তে গিয়ে কেমন দম বন্ধকর অনুভূতি হতে থাকে। দিব্য শক্ত করে ধরে রিপোর্টটা। সবচেয়ে দামি ট্রফি হাতে পেয়েছে এমন ফিলিংস হচ্ছে। দিব্য গভীর শ্বাস নেয়। পরপর নিতিকে এক ঝটকায় জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। দিব্য ওর অভিব্যক্তি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না! কেমন অদ্ভুত সুখময় অনুভূতি বইছে তনুমন জুড়ে। দিব্য আলগোছে নিতির পেটের উপর একটা হাত রাখে। মেদহীন মসৃন পেট উষ্ণ হাতে ছুঁয়ে দেয়। চোখদুটো বুঁজে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করার চেষ্টা করে। আনন্দে চোখে জল চিকচিক করে ওঠে। বাকরুদ্ধ দিব্যর চোখেমুখে একরাশ আবেগ আর মিষ্টি অনুভূতির ছোঁয়া। মুখে ফুটে ওঠে শান্ত হাসি। পরপর নিজেকে সামলে ঠান্ডা স্বরে বলে দিব্য,

-” দ্য মোস্ট বিউটিফুল মোমেন্ট অফ মাই লাইফ। অ্যান্ড দিস ইজ জাস্ট দ্য বিগিনিং।”

কথা শেষ করেই নিতির মুখ দুই হাতে তুলে ধরে দিব্য। নিতির সুডৌল কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে প্রগাঢ় চুম্বন আঁকে। আবেগে আপ্লুত হয়ে নিতি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দিব্যকে। আশ্লেষের উত্তাপে নিতির মৃগ আঁখিজোড়া মুদে আসে। সময়টা যেন থমকে দাঁড়ায়, রুমময় নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যায়। রুম জুড়ে শুধু বয় এক নতুন জীবনের আগমনের আনন্দ উচ্ছ্বাস।
.
.
ডিনারের পর তনুজার সাথে সবকিছু গুছিয়ে নিতি মাত্রই রুমে পা রাখে। প্রবেশ করতেই ওর চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে যায়। আতঙ্কিত কণ্ঠে চিৎকার করে ওঠে,

-” ইয়া আল্লাহ! পুরো রুমটা এলোমেলো করে কী অবস্থা করেছো? এইটা রুম নাকি গোয়ালঘর!”

নিতির কথায় দিব্যর সম্বিৎ ফিরে আসে। স্মৃতির ঘোর কা’টে। নিতির কণ্ঠে বিরক্তির ঝাঁজ স্পষ্ট। কিন্তু নিতির অসন্তোষ উপেক্ষা করেই হাতে থাকা এনভেলপটি আলমারির ড্রয়ারে সযত্নে রেখে দেয় দিব্য। নিতির দিকে তাকিয়ে বলল,

-” আমার****** নীল রঙের ফাইলটা কোথাও পাচ্ছি না। হঠাৎ কোথায় হাওয়া হয়ে গেল।”

নিতি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে আসে। একটু খুজেই একটা ফাইল হাতে ধরে জিজ্ঞেস করে,

-” এটা?”

দিব্য ফাইলটা হাতে নিতে নিতে ছোট করে বলল,

-” হুঁ।”

নিতি দাঁত কটমট করে চোয়াল শক্ত করে চাইল। দিব্য ডোন্ট কেয়ার ভঙ্গিতে সোফায় বসে ল্যাপটপ কোলের উপর তুলে কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। এদিকে নিতি ক্ষু’ব্ধ স্বরে গজগজ করতে করতে ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখতে থাকে।

__________

কয়েকদিন পর…

আর মাত্র দু’দিন পরেই ইয়ানের জন্মদিন। নিতি আর নৃত্য হঠাৎ বায়না জুড়ে বসে, এবারের জন্মদিনের আয়োজন মির্জাদের গাজিপুরের বাংলো বাড়িতে করবে। অনেকদিন কোথাও ঘুরাঘুরি হয় না। সবাই মিলে এই ফাঁকে একটু হাওয়া বদলও হবে। জন্মদিনের দু’দিন আগেই বাচ্চা পার্টিরা যাবে, হৈ-হুল্লোড় করবে। ছোটবোনদের আবদার হাসিমুখে ইভান মেনে নেয়।। বৃদ্ধা নুরজাহানকে একলা ফেলে এত আগেই আসতে রাজি হয় না শিরিন। বাচ্চারা সবাই আগে যাক আনন্দ উচ্ছ্বাস করুক। বড়রা জন্মদিনের দিন সক্কাল সক্কাল উপস্থিত হবে।

সময়টা দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ইভান ড্রাইভ করছে। বাবার পাশের সিটে ইয়ান বসে। গভীর দৃষ্টি জোড়া তার সামনে নিবদ্ধ। ব্যাক সিটে তনুজার কোলের উপর নাতাশা বসে। একবার উঠে দাঁড়াচ্ছে তো বসছে। গলা বাড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। কুটুস-কুটুস করে পাকনার মতোন প্রশ্নের ঝুলি খুলে বসেছে। তনুজা কোনো প্রকার বিরক্তি ছাড়াই সুন্দর করে উত্তর দিচ্ছে। এমন সময় পাশে বসা নৃত্য বিরক্ত হয়ে বলল,

-” অ্যাই…অ্যাই পাকনি! এবার একটু মুখটা বন্ধ রাখো। আর এত নড়াচড়া কেউ করে! ইয়া আল্লাহ! আমার ড্রেসটা ডলে একদম দলাই-মলাই করে ছাড়লে।”

এই বলে নাতাশার গাল টিপে দেয় নৃত্য। নাতাশা তৎক্ষণাৎ তনুজার দিকে তাকিয়ে অভিযোগ করল,

-” বয়ো মাম্মা! নিটটো পতা। মিরেছে।”

তনুজা হেসে বলল,

-” মা’রে’নি সোনা। খালামণি তো আদর করলো। আমাদের সোনামণিকে কেউ কখনো মা’রতে পারে। মণি তো তোমায় আদর দিলো।”

নৃত্য ফের নাতাশার গাল ছুঁইয়ে টুপ করে চুমু খায়। নাতাশা হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চুমু খাওয়া জায়গা ডলতে থাকে। ডলতে ডলতে চোখ উল্টে চেয়ে ছোট্ট নাকটা কিঞ্চিৎ ফুলিয়ে শাসানোর সুরে বলল,

-” আমাল পাপাকে বলে দিবো। টুমি পতা। আমাল মুখে তুতু দেও। পাপা টুমাকে বকবে, হুঁ।”
.
.
শহর ছেড়ে অনেকটা দূরে মফস্বলের নির্জন পরিবেশ। বিকেলের নরম আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। ইভানের কালো মার্সিডিজ গাড়িটা মেইন ফটক পেরিয়ে ধীরে ধীরে ঢুকল বাড়ির আঙিনায়। দু’পাশের ফুলের বাগান থেকে হালকা সুগন্ধ ভেসে আসছে। গাড়ির চাকার শব্দে শীতল বিকেল যেন আরও গভীর হয়ে উঠল। আলিশান ডিজাইন করা একতলা বাড়ি। বিশালাকার আঙিনা। সামান্য এগিয়ে সামনে সবুজ বাগান, দক্ষিণে বড় পুকুর। নারিকেল আর সুপারি গাছের ছায়া পড়েছে পানির ওপরে। বাতাসে গাছের পাতা দোলার মৃদু শব্দ আর পাখির কিচিরমিচির মিলেমিশে এক অদ্ভুত সুর তৈরি করেছে। বাড়ির অফ হোয়াইট রঙের দেয়ালে পড়া শেষ বিকেলের আলো বাড়িটাকে আরও সৌন্দর্যময় করে তুলেছে। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাড়ির চতুর্দিক। গাড়ি পার্ক করে ইভান প্রথমে ছেলের দিকে তাকায়। মুখে আলতো হাসি নিয়ে ছেলের কপালের চুলগুলো পিছনে ঠেলে দেয়। আদুরে স্বরে জিজ্ঞেস করল,

-” ইয়ান, বাবা! ঠিক আছো তুমি? জার্নি করে খারাপ লাগছে কী?”

ইয়ান তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়,

-” নো পাপা, আই অ্যাম গুড।”

ছেলের গাল ছুঁইয়ে ইভান বলল,

-” ভেরি গুড, মাই চাইল্ড।”

পরপর নিজের, তারপর ইয়ানের সিট বেল্ট খুলে ডোর খুলে নেমে দাঁড়ায়। ওপাশে গিয়ে ইয়ানকে নামিয়ে দেয়। অতঃপর পিছনের ডোর খুলে তনুজার কোল থেকে নাতাশাকে নামিয়ে দেয়। বাচ্চা দু’টো চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। এই প্রথম বাচ্চাদের এখানে আসা। ওপাশ দিয়ে নৃত্য নেমে ফুল গাছের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। শাড়ির কুচি একহাতে আগলে তনুজা নেমে দাঁড়ায়। বাড়ির কেয়ারটেকার এসে সালাম বিনিময় করে। সদর দরজা খুলতে ব্যস্ত হয়ে পরে। ওরা আসবে বলে লোক নিয়ে সব ধোঁয়া মুছা করে ফকফকা করে রেখেছে। একটা মেডও ঠিক করেছে। যে ক’দিন ওরা থাকবে সাহায্য করার জন্য। ইভান ছেলের হাত ধরে বলল,

-” লেটস গো।”

ইয়ান বাবার দিকে চেয়ে বলল,

-” শিওর পাপা।”

তনুজা আর নৃত্যকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-” তনুজা, নৃত্য ভেতরে চলো।”

নৃত্য এগোতে থাকে। তনুজা নাতাশার ছোট্ট তুলতুলে নরম একটা হাতটা ধরে হাঁটতে থাকে। এমন সময় নাতাশা কপাল গুটিয়ে প্রশ্ন করল,

-” মাম্মা-পাপা! আতবে না?”

-” আসবে সোনা নিশ্চয় আসবে। এইতো একটু পরেই চলে আসবে। তোমার পাপা মাম্মাকে নিয়ে এই এলো বলে।”

নিতির কলেজে আজ প্রোগ্রাম ছিলো‌। তাই ওদের সাথে আসতে পারেনি। দিব্য বলেছে ও নিতিকে কলেজ থেকে নিয়ে সোজা এখানে চলে আসবে।

___________

হাইওয়ের উপর সূর্যের আলো ঝিকমিক করছে। বাতাসে হালকা গরমের ছোঁয়া। দিব্য এক হাতে হালকা করে থ্রোটল চেপে স্পিড বাড়িয়ে দেয়। দিব্যর গায়ে সাদা টিশার্ট, ওপরে আকাশী শার্ট। শার্টের বোতাম খোলা। স্পিড বাড়ানোর দরুণ বাতাসে শার্টের কোণা পতপত করে উড়তে শুরু করে। পিছনে গম্ভীর হয়ে বসে আছে নিতি। মুখে যেন অমানিশা নেমেছে। দিব্য একবার পিছনে তাকিয়ে বলল,

-” ভালো করে ধরে বস। ত্যাড়ামি করে আছিস। তোর ত্যাড়ামির জন্য দূর্ঘটনা ঘটলে সবাই আমাকে দোষারোপ করবে।”

নিতি শুনেও না শোনার ভান করে। হাত দুটো গুটিয়ে নিজের কোলের উপর রেখে দেয়। নিতি আজ পণ করেছে কিছুতেই দিব্যকে ধরে বসবে না। মুখটা রাগে ভার হয়ে আছে, ঠোঁটদুটো শক্ত করে চেপে রেখেছে।

দিব্যর উপর নিতির মেজাজ চটে আছে। কলেজে নিতির কলিগের সামনে দিব্য ধ’ম’ক দিয়ে কথা বলেছে। শুধু তাইই নয়। লোকজনের মাঝে নিতির হাত ধরে টেনে বাইকের কাছে এনেছে। কলেজের প্রোগ্রাম শেষে গেইটের সামনে দিব্যর জন্য ওয়েট করছিলো নিতি। সেইসময় একজন ছেলে কলিগ আসতে নিয়ে আলাপ জুড়ে দেয়। নিতি ফর্মালিটিজ করতে কথা বলতে থাকে। ওদিকে কলিগের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে দিব্যর রাগ হয়। দিব্য রাস্তার পাশে বাইক ব্রেক কষে হর্ন দিতে থাকে। নিতি খেয়াল করেনি। এতে দিব্যর রাগ তড়াক সপ্তম আসমান ছোঁয়। বাইক থেকে নেমে সোজা নিতির সামনে দাঁড়িয়ে বলা নেই কওয়া নেই কব্জি ধরে টান দিয়ে বাইকে বসায়। সাথে ধ’ম’কের সুরে বলে,

-” কখন থেকে হর্ন দিচ্ছি। কান কোথায় থাকে শুনি? খেজুরে আলাপ জুড়েছিস।”

ব্যস! এই নিয়ে নিতির মনে অভিমানের পাহাড় জমে। বাইক পিচের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ নিতির কণ্ঠে অভিমান-অভিযোগ নামল,

-” ওভাবে আমার কলিগদের সামনে হাত ধরে আনলে। ইভেন স্টুডেন্টরাও আশেপাশে অনেকে ছিলো। সবাই কী ভাববে? সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দিলে তোমার আচরণ রুঢ়।”

দিব্য নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,

-” হাত ধরে না এনে তোকে কোলে তুলে আনলে বেটার হতো, তাই না? সারা দুনিয়া জানত আমি রোমান্টিক!”

দিব্যর ত্যাড়া কথাশুনে নিতির পিত্তি জ্বলে উঠল। নিতি সিদ্ধান্ত নেয় এর সাথে কথাই বলবে না, হুঁ।
.
.
বিল্ডিংয়ের ভেতরে তিনটা বেডরুম, ড্রয়িংরুমের একপাশেই ডায়নিং স্পেস। তারপর বড়সড় কিচেন। প্রতিটা বেড রুমের সাথে লাগোয়া বড়বড় ব্যালকনি। নিতিদের আসতে আসতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। নিতি এসেই গোমরা মুখে ফ্রেশ হতে যায়। সোফায় ইয়ান আর নাতাশা বসে ছিলো। দিব্যকে দেখেই মেয়ে একগাল হেসে উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলে,

-” পাপা।”

দিব্যর মুখেও হাসি ফোঁটে। দিব্য পকেট থেকে ক্যাটবেরি বের করে প্রথমে ইয়ানের দিকে বাড়িয়ে বলে,

-” চাচ্চু এটা তোমার।”

ইয়ান হাতে নিয়ে বলে,

-” থ্যাংকিউ চাচ্চু।”

ইয়ানের গাল টিপে বলল,

-” ওয়েলকাম বেটা।”

পরপর নাতাশার দিকে ক্যাটবেরি বাড়িয়ে বলল,

-” প্রিন্সেস এটা তোমার।”

নাতাশা হাতে নেয়। দুইহাত ফাঁক করে আহ্লাদি গলায় আবদারের সুরে বলে,

-” তোলে।”

দিব্য এক ঝটকায় মেয়েকে কোলে নেয়।
.
.
রাতের খাওয়া-দাওয়া পর্ব অনেকক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে। দিব্য আর ইভান সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছে আর রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে হোয়াইট টকে ব্যস্ত। এদিকে আসার পর থেকে নিতি দূরে দূরে আছে। দিব্যর দিকে তাকাচ্ছে না অবধি। দিব্যর কেমন লাগছে। সবই ঠিক আছে, তবুও মনে হচ্ছে; কিছুই যেন ঠিক নেই। মনটা কেমন কেমন করছে। দিব্য কয়েকবার কথা বলার ট্রাই করেছে বাট নিতি এড়িয়ে যাচ্ছে। তনুজা কিচেনে মেইডের সাথে থালাবাসন গুছিয়ে রাখছে। নিতি পানি ভর্তি জগ হাতে ডায়নিংয়ে আসে। নিতিকে দেখার সাথে সাথে দিব্য উঠে যায়। পানি খাওয়ার অ্যাক্টিং করে গ্লাসে পানি ঢালতে থাকে। নিতি পা বাড়াতেই হাতে টান পরল। দিব্যর একহাতে পানির জগ, অন্যহাতটা নিতির কব্জি ধরে। নিতি মিহি স্বরে বলল,

-” কী হচ্ছে কী? হাত ছাড়ো।”

দিব্য ফিসফিসিয়ে বলল,

-” সমস্যা কী তোর? এভাবে মুখে গ্রহণ লাগিয়ে রেখেছিস। কথা বলছিস না যে।”

নিতি উত্তর দেয় না। দিব্য আদেশের সুরে বলল,

-” নাতাশাকে নিয়ে দ্রুত রুমে আয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই যেন রুমে পাই।”

ঠান্ডা অথচ শাসিয়ে আদেশ স্বরুপ বলে দিব্য। নিতির হাত ছেড়ে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে এক ঢোকে গ্লাস ফাঁকা করে সোফায় গিয়ে বসে। কিচেন থেকে তনুজা আসে নৃত্যও রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তনুজাকে উদ্দেশ্য করে ইভান বলল,

-” তনুজা! ইয়ান, নাতাশা ঘুমিয়ে পড়েছে?”

-” হ্যা। নৃত্যের কাছে গল্প শুনতে শুনতে দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়েছে।”

এরমধ্যে নিতি আড়চোখে দিব্যর দিকে একপল তাকায়। তারপর তনুজার দিকে তাকিয়ে বলল,

-” ভাবিমণি নৃত্য বলছিলো, নতুন জায়গায় একলা রুমে ওর ঘুমাতে ভ’য় লাগবে। তাই বলছি, আমি নৃত্যের কাছে থাকছি। আর নাতাশা যেহেতু তোমাদের রুমেই শুয়ে পড়েছে। থাক ও। নাতাশা আজ তোমাদের কাছেই থাক। নৃত্য আর আমি একরুমে থাকছি।”

ওদিকে নৃত্য যেন এভারেস্টের চূড়া থেকে টুপ করে জমিনে পরে; এমন অবাক বনে যায়। নৃত্য ভাবে,

-” আরে আরে আরে..আমি আবার কখন এসব বললাম। ঘটনা কী? আপু যে অদ্ভুত, এটা নতুন নয়। তাই বলে একজনের নাম নিয়ে ডাহা মিথ্যা কথা বলে ফেলবে।”

নিতির কথা শুনে দিব্যর মুখটা থমথমে হয়ে যায়। অকস্মাৎ দিব্যর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,

-” আর আমি!”

সবাই দিব্যর দিকে তাকাতেই, দিব্য অপ্রস্তুত হয়। আলোর বেগে কথা ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে,

-” না মানে…বলছি আমি কোনরুমে শুবো। রাত হয়েছে, প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।”

দক্ষিণের রুম বরাবর আঙুল তাক করে নিতি। বলে,

-” ঐযে ওটা।”

সবার সামনে কিছু বলতে পারছে না দিব্য। তবে চোখ দিয়ে শাসায়। নিতি দুইহাত বুকে ভাঁজ করে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে থাকে। এরমধ্যে তনুজা হঠাৎ বলে উঠল,

-” আচ্ছা এক কাজ করলে কেমন হয়। আমরা মেয়েরা একরুমে থাকি। ওরা দুইভাই একরুমে থাকুক।”

এইশুনে ইভানের মুখটা ছোট হয়ে আসলো। মুখ দিয়ে চ শব্দ বেরোল। নিতি এক পায়ে রাজি হয়ে যায়।
.
.
মাত্রই ইভানের দু’চোখের পাতা এক হয়েছিলো। এমন সময়, হঠাৎ অনুভব করল, একটা হাত ধীরে ধীরে ওর গায়ে পড়ছে। ঘুমের ঘোরেই একটু নড়েচড়ে হাতটা সরিয়ে দিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার সেই স্পর্শ!

-” নিতি, এত নড়াচড়া করিস কেন? চুপচাপ ঘুম…”

দিব্যের অস্পষ্ট ফিসফিসানিতে ইভান চমকে উঠল। ও হাত সরিয়ে দিয়ে পাশ ফিরে শোয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু দিব্য যেন আজ বেশ নাছোড়বান্দা! আবার ওর দিকেই সরে এলো। হাত বাড়িয়ে ঘুমের মধ্যেই ওকে টেনে নিতে চাইল। ইভান এবার বেকায়দায় পরে। ধপ করে বালিশ তুলে নিয়ে উঠে পড়ল। একরাশ বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে সোফার দিকে হাঁটল। একটুখানি নিরিবিলি ঘুমের আশায় গুটিসুটি মে’রে শুয়ে পড়ল সোফায়। কিন্তু ধীরে ধীরে ইভান টের পায়, কিছু একটা ঠিকঠাক নেই। অভ্যাসবশত হাত বাড়িয়ে কাউকে জড়াতে চাইছে, কিন্তু পাশে তো কেউ নেই! তার নিজেরই অস্বস্তি লাগতে শুরু করল। ঘুম আসছে না একদম। এক ভাই অবচেতনে কাউকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছে। আরেকজন নিজের অভ্যাসের ফাঁ’দে আ’ট’কে পড়ে শুয়ে উসখুশ করতে থাকে।

#চলবে