#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(১৩)
” তুই কি এতক্ষণ ভাইয়ার সাথে ছিলি?”
সোহানার প্রশ্নে খানিকটা অবাক হয় হিয়া, হাত থামিয়ে চোখ তুলে তাকায় সোহানার দিকে,সোহানার দুষ্টু চোখের ভাষা ঠোঁটের কোণে ঝুলছে মুচকি হাসি,হিয়া লুকাতে চায় সামীর ব্যাপার টা হিয়া চোখের দৃষ্টি এলোমেলো হয় সোহানা মুচকি হেসে বলে,,
– লুকিয়ে লাভ নেই দেখে ফেলেছি ,,
– দেখেছিস মানে, কি? কি দেখেছিস তুই?
সোহানা মাথা ঝুকে, হিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচু গলায় খানিকটা সোহানের মতো করে বলে,,,
– তুমার গলার কাছের ওড়নাটা সরে গেছে বান্ধবী,, উপস সরি ভাবী আমার ভাইয়ের দেওয়া লাভ বাইট টা কিন্তু জ্বল জ্বল করছে,, তাড়াতাড়ি ঢাক আমি দেখেছি দেখেছি,, সোহান দেখলে কিন্তু রক্ষে নেই তাছাড়া বাড়ী ভর্তি লোক,,,
আর বলতে পারলো না সোহানা তাঁর আগেই হিয়া সোহানার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,,
– আল্লাহর দোহাই লাগে সোহা তুই চুপ কর,, তুই কবে থেকে তোর ভাইদের মত এমন ঠোঁট কাটা হয়ে গেলি একটু তো লজ্জা কর তোর বড় ভাই হয়, তোরা লজ্জা না পেলেও আমার লজ্জা বলে কিছু একটা আছে,
বলেই হিয়া উঠে দাড়ালো, সোহানা মিটিমিটি হেসে হিয়ার হাত ধরে বলে,,
– আরে আরে,, যাচ্ছিস কই? ডিজাইনটা শেষ তো করে যা!
হিয়া চোখ রাঙিয়ে বলে,,
– পারবো না সর এখান থেকে তোর ভাইকে গিয়ে বল,,
সোহানা হাসতে হাসতে ভ্রু নাচিয়ে বলে,,
– কি বলবো, আবার তোর কাছে যেতে?
হিয়া আর এক মুহূর্তও দাড়ায় না হনহনিয়ে ছাদ থেকে নিচে চলে যায়,, পেছন থেকে তাইয়্যেবা,তানজিলা , তাসনিয়া সবাই ডাকলো কিন্তু হিয়া শুনলো না , তাইয়্যেবা সোহানাকে বলল,,
– কি হলো, ও অমন ভাবে চলে গেলো কেনো? মেহেন্দি নিয়ে ওই তো সবচেয়ে বেশি এক্সছাইটেড ছিলো এলো ও লেট করে আবার মেহেদী না দিয়েই চলে গেলো?
সোহানা খানিকটা হেসে বলল
– কিছু হয়নি আপু , ওর একটু খারাপ লাগছিল তাই চলে গেছে, দেখো না আমার হাত অর্ধেক মেহেদী দিয়েই চলে গেলো!
*************
সোজা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো হিয়া, লজ্জায় রাগে তার মেজাজ পুরোই খারাপ হয়ে গেছে কত সুন্দর ভেবে ছিলো আজকে কত আনন্দ করবে তার কিছুই হলো না সামীর জন্য, হিয়া এগিয়ে যায় ড্রেসিং টেবিলের কাছে, গলায় পেঁচিয়ে রাখা ওড়নাটা খুলে তাকায় আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে সোহানা ঠিকই বলেছে ঘাড়ের বা পাশে স্পষ্ট একটা কামড়ের চিহ্ন, হিয়া ডান হাতে জায়গাটায় স্পর্শ করে মূহুর্তেই লজ্জায় গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে। পরক্ষনেই তখন কার কথা ভেবে হেসে উঠলো বেচারা সামীর মুখটা দেখার মতো ছিল,, হিয়ার চোখে ভেসে ওঠে সামীর তখনকার পাগলামিটুকু,,
সামী যখন ওর দিকে এগিয়ে বলল,,,
– আই ক্যান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ ফ্লাওয়ার,, সরি,,
সামীহ এগিয়ে যায় এক হাতে হিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে এক হাত গলিয়ে দেয় হিয়ার মাথার পেছনে ,সামী মুখ এগিয়ে আনে যেই না ঠোঁট ছুবেহিয়া চোখ বড় বড় করে তাকায় সামীহ আরেকটু এগিয়ে গেলে ওর বুকে দু হাতে ঠেলে বলে,,
– ছি! এই লোক এই দূরে স্বরুন এইসব আমার ঘেন্না লাগে, ওয়াক মানুষ কিভাবে একজন আরেক জনের ঠোঁটে চুমু খায়? ইইইই আমার তো ভাবতেই ঘেন্না লাগে বাই এনি চান্স যদি চুমু খেতে গিয়ে মুখে থুতু এসে যায়,, আল্লাহ আমার তো ভেবেই কেমন বমি বমি লাগছে!!
হিয়ার কথায় সামী অবাকের চরমপর্যায় , কেমন করে যেনো তাকিয়ে থাকলো,, বেচারা খুব বড় সক খেয়েছে। তার রোমান্টিক মুডের বারো টা বাজিয়ে হিয়া নাক মুখ কুঁচকে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে, সামী কে ওভাবে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে হিয়া ছটফটিয়ে উঠে নিজেকে সামীর হাতের বাঁধন থেকে ছড়ানোর চেষ্টা করে বলে,,,
– এইযে কিহলো ছাড়ছেন না কেনো? ঐ দিকে তো মেহেন্দি প্রোগ্রাম শেষ হয়ে যাবে।
সামীর যেনো হুস ফিরে, সে হিয়াকে ছেরে দেওয়ার বদলে আরও শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে, মৃদু হেসে বলে,,
– যা তোর কথাই শুনলাম বউ,, খেলাম না তোর ঠোঁটে চুমু
– তাহলে ছাড়ুন, আমার লেট হচ্ছে,,, ঐ দিকে,,,
আর কিছু বলতে পারলো না হিয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামী এক টানে ওর গলা থেকে ওড়নাটা সরিয়ে মুখ গুজে দেয় ওর গলায়, হিয়ার সাড়া শরীর কাটা দিয়ে উঠে,, খামচে ধরে সামীর মাথার এক গুচ্ছ ছিল্কি চুল ,, এতে যেনো সামী আরও গভীর ভাবে ছুঁয়ে গেল হিয়ার গলদেশ,, নেশক্ত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে,,
– ইটস নট বেড বেইব,,কি মেখে রেখছিস এখনে? আমি তো,,,
সামী শেষ করার আগেই হিয়া কাপাকাপা কন্ঠে বলে,,
– স,,সরুন প্লিজ ,, আমাকে যেতে হবে লেট হচ্ছে,, কেও এসে পড়বে,,
সামী বিরক্ত হয় প্রচুর বিরক্ত হয়ে হিয়ার গলার ভাজে জোরে এক কামড় দিয়ে বসে ,, মুখ তুলে রাগী চোখে তাকিয়ে শাসিয়ে বলে,,
– এইটা আমাকে ডিস্টার্ব করা, আর আমার মুডের বারো টা বাজিয়ে দেওয়ার জন্য ,, এর পর এমন ডিস্টার্ব করলে খবর আছে বলে দিলাম,,
বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো,,
হিয়ার ধ্যান ভাঙ্গে দরজার খট খট আওয়াজে,, হিয়া আবারও দ্রুত ওড়নাটা তুলে গলায় জড়িয়ে নেয়,, দরজার কাছে গিয়ে খুলতেই সোহানা আর সোহান হুরমুরিয়ে ঘরে প্রবেশ করে, সোহানা গিয়ে বেডে বসে বলে,,,
– তোর এক মাত্র জামাইয়ের আদেশ , তার একমাত্র বউয়ের হাতে যেনো তার নামে মেহেদিতে রাঙ্গিয়ে দেই, তুই তো এখনই অন্যান্য ভাবীদের মত শুরু করেছিস হিয়া! তুই তো আর আমার হাতে মেহেদী দিয়ে দিলি না আমাকে সেই অন্য কারো হাতেই দিতে হলো
হিয়া রাগী চোখে তাকাতেই সোহানা চুপ করে গেলো,, উঠে এসে হিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে বেডে বসে বলে,
– মজা করছিলাম,, তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো?
————
মীর ম্যানসনের সকলের আজকের ব্যস্ততা অন্যরকম, আজ তাইয়েবার হলুদ সন্ধ্যা কাছের আত্মীয় থেকে শুরু করে দূরের আত্মীয় প্রায় যারা বাকি ছিল সবাই একে একে এসে বিয়ে বাড়ির আমেজটাই বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাড়ির পুরুষদের ব্যস্ততার শেষ নেই তাদের সাথে যোগ হয়েছে শিকদার বাড়ীর তিন পুরুষ ও, উঠোনের এক কোণে দাঁড়িয়ে তদারকি করছিল সামী , বাকি সবাই ও বিভিন্ন কাজে বেস্ত একজন যদি দাড়িয়ে তদারকী না করে তাহলেই কাজে ঢিল ছেড়ে দেয় লোকগুলো তাই তৌফিক মীর তাকে এইদিক টা দেখে রাখতে বলে গেছে, বিয়ে বাড়ির লোক সমাগমে শীতের দুপুরের মিষ্টি রোদটাও যেনো সামীর কাছে গ্রীষ্মের কাঠ ফাটা রোদের ন্যায় ঠেকলো। গরমে অসস্তিতে ঘেমে সামীর শরীরে থাকা টিশার্ট টা গায়ের সাথে লেগে গেলো, সামী বা হাতের বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে কপালে জমা ঘাম গুলো মুছে গম্ভীর কন্ঠে খানিকটা দূরে দাড়িয়ে থাকা সোহানকে ডাক দিলো দেখলো কাজ করে বেচারার অবস্থা ও বেশ খারাপ, সোহান এগিয়ে এলো, সামীর কাছে এসে একটু নিচু হয়ে দু হাঁটুতে দু হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বলে,,,
– আচ্ছা ভাই আমরা কি এখনে দাওয়াত খেতে এসেছি নাকি বিনে পয়সায় কামলা দিতে আমি বুঝতে পারছি না!
সামী চোখ রাঙ্গিয়ে চায় সোহানের দিকে গম্ভীর কণ্ঠে কিছু বলবে তাঁর আগেই পেছন থেকে কেও বলে উঠে,,,
– আপনার মতো কাজ চোরকে কাজ করতে বলেছে কে ? তাছাড়া আমরা ফ্রিতে কোনো নিকাম্মা কে খাওয়ায় না।
তানিয়ার কথায় সোহান বেলাজের মতো হেসে বলে,,
– সে তো দেখতেই পাচ্ছি মিস ঝগড়ুটে,, নরম সরম মানুষ পেয়ে গাধার খাটুনি খাটাচ্ছেন।
– নরম সরম তাও আপনি? হাসলেন,,
– হাসালাম তাহলে হাসেন, আপনার মুখের ওই ডাইনি মার্কা হাসি আমি বড় ভালবাসি
সোহানের কথা তানিয়া গায়ে মাখে না ব্যঙ্গ হেসে বলে,,
– খুবই সস্তা ফ্লাট ছিলো,
– তাই? দামী গুলো করবো? নিতে পারবেন তো?
সোহানের এরূপ কথায় সামী কেশে উঠে, সামীর কাশির শব্দে সোহান জীহ্বে কামড় বসায় সে তো ভুলেই গিয়েছিল সামী এখানে উপস্থিত। সোহান হেহেহে করে হেসে বলে,,
– বেয়ানের সাথে ওই একটু মজা করছিলাম আরকি,,
সামী তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো, সামী যেতেই তানিয়া তেড়ে গিয়ে বলে,,
– এই আপনি আবারো আমাকে বেয়ান বলছেন কেনো? মাথার তার একটা ছেঁড়া নাকি?
সোহান মাথা নেড়ে না বোঝায় তানিয়ার দিকে ঝুকে বলে,,
– একটা টপ সিক্রেট শুনবেন?
তানিয়া প্রশ্নবোধক চোখে তাকায়, সোহান চার পাশে একবার নজর বুলিয়ে আবারো তানিয়ার দিকে ঝুকে বলে,,
– আমার হিয়া বেইব আছে না ওরে চুপিচুপি তুলে নিয়ে গিয়ে আমার ভাইয়ের বউ বানিয়ে ফেলেছি,, আপনি কিন্তু ভুলেও কাওকে বলবেন না বুঝলেন তো সেই হিসেবে তো আপনি আমার বেয়ানই হোন তাই না?
তানিয়া একটু কেমন করে যেনো তাকায় পরমুহুর্তেই মুখ ঝামটা মেরে বলে,,
– আবোল তাবোল বলার আর জায়গা পান না ? যত্ত সব তারকাটা লোক সরুন সামনে থেকে হুদাই সময় নষ্ট!
বলেই তানিয়াও বাড়ির ভেতরে চলে গেলো,, সোহান হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,,
– যাহ ,, বিশ্বাস করলো না?
************
সামী সোজা ড্রয়িংরুমে এসে বসে সোফায়,, তখনই পাশ দিয়ে হিয়া যাচ্ছিলো রান্না ঘরে আয়েশার দের কাছে সামী হিয়াকে দেখে ডাক দেয় হিয়া সামীর ক্লান্ত মুখ খানা দেখে আর রাগ দেখাতে পারলো না,, গতকালের রাতের পর আর সামীর সাথে তার কথা হয়নি,, হিয়া এগিয়ে যেতেই সামী গম্ভীর কণ্ঠে বলে,,
– আম্মু কে একটু ডেকে দিবি?
হিয়া শান্ত চোখে তাকায় মৃদু কন্ঠে বলে,,,
– কিছু প্রয়োজন? আমাকে বলতে পারেন,
সামী মাথা নেড়ে গম্ভীর কণ্ঠেই বলে,,
– এক কাপ ব্ল্যাক কফি হলে ভালো হয় মাথাটা ধরেছে
– ঠিক আছে আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি,,
বলেই হিয়া রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়,, মনে মনে সামী কে বকতে বকতে বলে,,
– উহ্ ভাবটা দেখো,, রাক্ষসের মতো কামড়ে এখন আবার আমাকেই এটিটিউট দেখাচ্ছে,
হুট করেই হিয়ার মাথায় কিছু একটা চিন্তা আসে সে ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলে,,
– আমাকে রাগ দেখানো? এবার বুঝাবো মজা হাহ হা!!
#চলবে,,,
#প্রয়নের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(১৪)
বিয়ে বাড়ি মানেই যেমন আনন্দ, উৎসব মুখর পরিবেশ তেমনই আবার কাজে ব্যস্ততায় ভরা সেই কখন ঘুম থেকে উঠে শুরু হয়েছে আরেকটু পর তায়েবাকে হলুদের জন্য স্টেজে তোলা হবে কিন্তু এখনো কাজ যেনো শেষই হচ্ছে না, একটা শেষ করলে আরেকটা এসে হাজির তামিম হাতের কাজ টুকু শেষ করে সবে মাত্র বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে গায়ে থাকা শার্টের টপ দুটো বোতাম খুলে সামনের দিকে টেনে ফু দিতে দিতে সোফায় গিয়ে বসে,, তখনই হুট করে তার চোখ যায় দোতলার সিঁড়ির দিকে সেখান দিয়ে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে একদম সেজে গুজে তৈরী হয়ে শাড়ির কুচি সামলে ধীরে ধীরে নীচে নামছে সোহানা, তামিম মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে থাকে, সোহানা চোখ তুলে তাকালে চোখাচোখি হয় দুজনের সোহানা তামিমের চোখে যেনো কিছু দেখলো, কি দেখলো সে? তামিম কি মোহগ্রস্থ হয়ে তাঁকিয়ে আছে তাঁর দিক? নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেল, সোহানা চোখ নামিয়ে দোতলার সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামে ।সোহানার আশে পাশে লোকের অভাব নেই তবুও তামিম এক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে, সোহানার একটু অসস্তি অনুভব হলো, সে কোনো উপায় না পেয়ে নীচে যেখানে তায়েবাকে রাখা হয়েছে সেখানে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তামিম সবার সামনেই তাঁর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,,
– সোহা আম্মুকে বল তো এক কাপ ব্ল্যাক কফি দিতে,, মাথাটা ধরেছে,,
সোহানা পেছন ফিরে না তাকিয়েই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালে তামিম ও উঠে দাড়ায় সোহানার পেছন ডেকে বলে,,
– আম্মু হয়তো বিজী আছে,, একটু কষ্ট করে আমার রূমে এক কাপ ব্ল্যাক কফি করে নিয়ে আয় তো ,,, জলদি,,
বলেই তামিম সিঁড়ি ধরে উপরে চলে যায় ,,সোহানা একটু বিপাকে পড়ে গেলো এমনিতেই আজ প্রথম শাড়ি পড়েছে, হাঁটতে গেলে মনে হয় এই বুঝি উষ্টা খেয়ে শাড়ী পেঁচিয়ে পড়ে যাবে। তাঁর উপর তামিম বলে গেলো তার জন্য কফি করে নিয়ে যেতে এই অবস্থায় কেমনে কি?
———
সোহানা রান্না ঘরে যেতেই দেখলো হিয়া এই ঠান্ডার মধ্যে ও ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খাচ্ছে, বিয়ে বাড়ির জামেলা সব মীর ম্যানসনের বাহিরের রান্না ঘরে হওয়ায় বাড়ির ভেতরের টায় কেও নেই, সোহানা হিয়ার দিকে এগিয়ে যায়,, হিয়ার পরনে লং গোল জামা ওড়নাটা কোমরে পেঁচানো এই শীতের রাতে ও মেয়েটার মুখে গলায় বিন্দু বিন্দু ঘাম, সোহানাকে দেখে হিয়া পানি খাওয়া ছেড়ে মুখ ভর্তি পানি নিয়ে বড় বড় চোখ করে তাঁকিয়ে থাকে, সোহানা হিয়ার রিয়েকশনে হালকা হেসে সাবধানে ওর কাছে এসে কাঁধে হালকা হাতে মেরে বলে,,
– কি ?এইভাবে তাঁকিয়ে আছিস কেন? আর তুই এখনো তৈরী হোসনি কেনো? কোন মহাকাজ্য করে এমন ঘেমে নেয়ে একাকার হয়েছিস?
এতো প্রশ্ন শুনে হিয়া মুখে থাকা পানিটুকু গিলে কোমরে পেঁচানো ওড়নাটা খুলে এক হাতে ভর দেয় সোহানার কাঁধে আরেক হাতে ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে,,
– আরে বাস, ননোদিনী তোকে তো সেই লাগছেরে! দেখিস আবার বিয়ে বাড়ীতে বেড়াতে এসে নিজের জন্য বিয়ের প্রপোজাল না পেয়ে বসিস ,, লাস্টে দেখা যাবে আমার ভাইয়ের কপাল পুড়বে। তা বন্ধুপি কবে জানাবে ভাইয়াকে তোমার মনের খবর?
সোহানা কাধ নিচু করে হিয়াকে ছাড়িয়ে বলে,,
– যত্ত সব আজাইরা কথা তোর আর সোহানের মুখে,, তাঁর আগে তুই বল তুই এখনো তৈরী হোসনি কেনো? একটু পরই তো আপুকে স্টেজে তোলা হবে ,
– মজা না সোহা আমার তো কপাল ভালো বলে তোর ভাই অন্য বেডির দিক তাকায়নি, পড়ে আবার যেনো দেরি হয়ে না যায়,, একটু ভেবে দেখিস সে যাই হোক এখন তুই বলতো সেজে গুজে পুতুল সেজে রান্না ঘরে কি করছিস?
এতক্ষণে সোহানার টনক নড়ে,সোহানা দ্রুত চুলার ধারে গিয়ে হিয়াকে বলে,,
– ইসসসস , দেখলি তোর সাথে কথা বলতে বলতে আমি একদমই ভুলে গিয়েছিলাম কফি কররা কথা, এখন একটু কফি পাউডার এগুলো কোথায় একটু আমাকে খুজে দে তো
হিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকায়, বলে,,
– তোর এই সময় হটাৎ কফি খেতে ইচ্ছে করলো? থাক তোর আর এভাবে কফি করতে হবে না সর আমিই করে দিচ্ছি
সোহানা বেস্ত কন্ঠে বলে,,
– না, না আমিই করে নিবো তুই বরং আমাকে একটু জিনিস গুলো বের করে দে,,
হিয়া যেনো কেমন করে চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে রইল, এতে সোহানা খানিকটা অসস্তি বোধ করলো লজ্জাও পেল বৈ কি সোহানা মাথা নিচু করে মৃদু কন্ঠে বলল,,
– তামিম ভাইয়ের মাথা ধরেছে,, আমাকে বলল কফি করে নিয়ে যেতে, তুই একটু জিনিস গুলো এগিয়ে দে কফিটা আমিই করব ।
হিয়ার মুখে যেনো বিজয়ের হাসি,,সোহানার দিকে এগিয়ে গিয়ে সোহানার পীঠ চাপড়ে সাবাসী দিয়ে বলল,,
– বাহ, বাহ। এই না হলে আমার ভাইয়ের বউ, এখন থেকেই দেখছি আমার ভাইয়ের খেয়াল রাখা শুরু করে দিয়েছিস,
সোহানা খানিকটা লজ্জা পেল তবে কিছু বলল না এখন কিছু বললে হিয়া তাকে আরও লজ্জায় ফেলে দিবে।
————-
সন্ধ্যা পেরিয়েছে সেই কখনই ধরণীতে এখন আধারের রাজত্ব, তবে সেই অন্ধকার ঘুচিয়ে জ্বল জ্বল করে উঠলো লাল নীল হরেক রকমের ফেইরি লাইটের ঝলকানি, মীর ম্যানসনের ছাদ থেকে শুরু করে উঠোন, পুড়ো বাড়ী পেরিয়ে যত দূর চোখ যায় লাইটিং করিয়েছে মিররা, বাড়ী ভর্তি মেহমানে গিজ গিজ করছে, সবার শরীরে শাল চাদর জড়ানো কারো বা জ্যাকেট, তায়েবা কে একটু পরই স্টেজে উঠাবে তারই প্রস্তুতি চলছে ,বাড়ির পুরুষেরা সব বেস্ত সাথে তাদের সঙ্গ দিচ্ছে শিকদার বাড়ির তিন পুরুষ সাথে কাছের আত্মীয় স্বজনরাও , তাসাউফ মীর হাত ঘড়িতে সময় দেখে দূরে খাবারের ওখানে তদারকি করা সোহানকে ডাকলো,, সোহান তার কাছে আসতেই তিনি বলেন,,
– তামিম কোথায় সোহান?
– ভাইয়া তো একটু আগেও এই দিকেই ছিলো, মনে হয় তৈরী হতে বাড়ির ভেতরে গেছে, কোনো দরকার ছিলো আংকেল?
তাসাউফ মীর হালকা হেসে সোহানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,,
– না, এখন তোমরা গিয়ে তৈরী হও, এইটা বলতেই ডাকলাম, অনেক করেছো এইবার তোমরা গিয়ে একটু আনন্দ কর ।
বলেই তাসাউফ মীর গেটের দিকে চলে গেলেন এখনো অনেক স্পেশাল গেস্ট আসা বাকি তাদেরও তো অভ্যর্থনা জানাতে হবে!
তাসাউফ মীর যেতেই সামী দু হাতে টিশার্ট টা কাধ থেকে তুলে গাঁ আলগা করে যাতে একটু বাতাস যায় এখন সামীর মনে হচ্ছে সোহান ঠিকই বলেছিল,, তারা কি এখনে দাওয়াত খেতে এসেছি নাকি বিনে পয়সায় কামলা দিতে , হিটলার শশুরটা কি কোনোভাবে বিয়ের খবর জেনে তার গুষ্টি শুদ্ধু এমন খাটান খাটাচ্ছে? সামী নিজের ভাবনায় নিজেই ভ্রূ কুঁচকায় সোহানের কাছে গিয়ে গম্ভির কন্ঠে বলে,,
– ঐ তাসাউফ মীর তোর সাথে হেসে হেসে কি বলে গেলরে?
সোহান হেসে বলে,
– তোমার শশুর হয় ভাই,, মানছি তোমার সাথে হাসি মুখে কথা বলে না, তাই বলে নাম ধরে ডাকবে? ভেরি বেড! চলো চলো গিয়ে তৈরী হই তাই তো বলে গেলো ,,
– তোর মুখ ইদানিং খুব বেশি চলছে সোহান,, সামলে কথা বলিস!
সোহান তাও বেলাজের মতো হাসে, এইসব কথা থোরাই না তাঁর গায়ে লাগে!
———–
হাতে গরম ধোঁয়া ওঠা এক কাপ ব্ল্যাক কফি নিয়ে ধীরে ধীরে শাড়ীর কুচি সামলে তামিমের ঘরের সামনে এসে দাড়ালো সোহানা, একটু ইতস্তত বোধ করলো তবুও ভেজানো দরজায় নরম হাতে কড়া নারে কিছু বলার আগেই ভেতর থেকে তামিম চেঁচিয়ে বলে,,
– সোহা এলি?
সোহানা মৃদু কন্ঠে বলে,, হুম
– কাম, দরজা খোলাই আছে ,
অনুমতি পেয়েই সোহানা দরজা ঠেলে ভেতরে যায়,, তামিম তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে তাঁর চুল গুলো সেট করছে, পরনে তার বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি যার কলার ও বুকের বা পাশে সুতোয় গাঁথা কারুকার্য। সোহানার চোখ আটকে যায় প্রিয় পুরুষের প্রতিবিম্বে ঠিক সেই মুহূর্তে তামিম ও চোখ তুলে তাকায় তার সামনে থাকা আয়নায় মূহুর্তেই হলো দৃষ্টি বিনিময় সোহানা চোখ নামিয়ে নেয় তবে তামিম দৃষ্টি নামায় না উল্টো পেছন ঘুরে মুগ্ধ চোখে দেখে প্রিয় নারীকে তামিমের এইটাই ভাবতে খারাপ লাগে সে কবে থেকে সামীর মত পাগল হয়ে গেলো? সে কিভাবে সোহানার প্রেমে মজলো? নিজের চিন্তায় নিজেই হাসলো তামিম এগিয়ে গিয়ে বেডে বসে সোহানার উদ্দেশ্যে বলে,,
– কফিটা নিয়ে কি দাড়িয়েই থাকবি? একে তো এতো দেরি করে এলি, তার উপর দাড়িয়েই আছিস ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো!
সোহানা জবাব দেয় না এগিয়ে এসে তামিমের দিকে কাপ টা এগিয়ে দেয়, পরপরই উল্টো ঘুরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তামিম বলে,,
– আমি কি একবারও যেতে বলেছি, ঘরে আসার সময় অনুমতি নিলি যাওয়ার সময় নিবি না?
সোহানা পেছন ঘুরে না ওভাবেই দাড়িয়ে থেকে মৃদু কন্ঠে বলে,,
– আমি তাহলে যাই? আপুকে হয়তো স্টেজে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে!
– হুম? যাবি? যা তাহলে
অনুমতি পেতেই সোহানা পা বাড়ায় তামিম আবারও পেছন ডেকে বলে,,
– শোন ,
সোহানা আবারও ওভাবেই দাড়ায়,, তামিম হাতে থাকা কফির এক চুমুক খেয়ে বলে,,
– শাড়ী পড়েছিস? সুন্দর লাগছে, বিয়ে বাড়ি অনেক লোক সাবধানে থাকিস কোনো ছেলে বা ছেলের মায়ের মত মহিলাদের থেকে দূরে দূরে থাকবি, কেও কিছু বললে আমাকে বা সামী কে জানাবি মনে থাকবে?
সোহানা কথা বলে না শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়,, তামিমকে চুপ থাকতে দেখে আবারও পা বাড়ায় যাওয়ার জন্য কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে তামিম আবারও পেছন ডাকে,,
– শোন,,
সোহানা এবার পেছন ঘুরে তামিমের দিকে চোখ তুলে তাকায়, তামিম বুকের বা পাশে হাত চেপে ধরে বলে,,
– দিলি তো! দিলি তো বেসামাল করে? এখন আমার কি হবে? বল এর দায় কে নিবে? শুনতে বলেছি ঘুরতে তো বলিনি?
সোহানা তামিমের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায়, তামিম ততক্ষণে সোহানার সামনে এসে দাড়িয়ে হুট করেই সোহানার ডান হাত খপ করে ধরে বুকের বা পাশে রেখে বলে,,
– দেখ এখানে কিভাবে তোলপাড় হচ্ছে, বলতো এর দায় কার, যদি আমাকে জিজ্ঞেস করিস তো বলবো এর দায় একান্তই তোর, কই সাড়া দিন তো বাড়ীতে কত মেয়ে সামনে পেছনে ঘুর ঘুর করলো তখন তো এমন হয়নি, তোকে দেখার পরই দেখ ভেতরে কেমন আন্দোলন হচ্ছে, এখন কি করি উপায় বলতো?
সোহানা কথা বলে না অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে তামিমের দিকে চোখ গুলো তাঁর জ্বল জ্বল করে উঠলো, সে যা ভাবছে তা কি সত্যি? হিয়ার মত তার ভাগ্য ও কি তার সাথ দিচ্ছে? সে ও কি না চাইতেই আপন করে পাবে তার অব্যক্ত ভালোবাসা? সোহানার ভাবনাকে ভেঙ্গে দেয় তামিমের পাগলামো,, তামিম সোহানার হাত ছেড়ে দু হাতে সোহানার মাথা ধরে বুকের সাথে ঠেকিয়ে বলে,,
– কবে থেকে ভালবাসি জানি না, তবে ভালোবাসার অনুভূতি বলতে আমি তোকেই বুঝি, সোহা আমি এক অব্যক্ত প্রেমিক পুরুষ প্রেমিকার চোখের ভাষা আমি বুঝি, জানি ঠিক নয় তবুও যদি আমার অনুমান ঠিক হয় যদি সত্যিই তুই আমাকে ভালোবেসে থাকিস তাহলে একবার শুধু একবার আমায় আঁকড়ে ধর, তোর এই রূপে যে আমি ছাই হয়ে যাচ্ছি,
তামিম বলতে দেরি সোহানা আঁকড়ে ধরতে দেরী হয় না, সোহানা মুখ ফুটে কিছু বলে না , তবে তাঁর এই ছোঁয়া নিঃশব্দে তামিম কে বুঝিয়ে দেয়,,
– তার প্রেমিক চোখ ভূল দেখেনি, তাঁর প্রেমিকা সত্যিই তাঁকে ভালোবাসে।
#চলবে,,,
#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(১৫) (প্রথমাংশ)
তো অজকের হলুদ সন্ধ্যার বিশেষ চমক হিসেবে স্টেজে জুটি বেঁধে নাচ করতে আসছে অমাদের তুহিন এবং হিয়া!
তানজিলা মাইকে ঘোষণা দিয়েই স্টেজ থেকে নেমে দাড়ালো, সঙ্গে সঙ্গে সবাই হাতে তালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানালো, হিয়াদের নাচ দেখার জন্য সবাই মুখিয়ে কারণ আর কিছু যেমন তেমন হিয়ার নাচের আলাদা এক জাদু আছে যা সবাইকে মুগ্ধ করে, তবে স্বল্পভাষী তুহিন আর চঞ্চল হিয়া জুটির নাচ কেমন হয় তাই দেখার বিষয়,, অথচ কথা টা কানে যেতেই যেনো ধপ করে আগুন জ্বলে গেলো সামীর শরীরে, পাশেই তার তামিম দাঁড়ানো ছিলো তানজিলার ঘোষণা শোনা মাত্রই ঘাড় ঘুরিয়ে তাঁকালো সামীর দিক, ততক্ষণে ব্যাক স্টেজের সাউন্ড বক্স এ বেজে উঠে sharara গানের সুর ,, আর গানের তালে তাল মেলাতে থাকলো তুহিন আর হিয়া , আর তাদের সাথে তাল মিলিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো কাজিন মহল সবাই উরাধুরা নাচ করতে শুরু করেছে সব, তাদের সাথে যোগ দিয়েছে সোহানও কখনও নাচছে তো কখন ও শিশ দিচ্ছে, এসব দেখে আরো রেগে গেলো সামী রাগে হাত হলো মুষ্ঠি বদ্ধ ফুলে ফেঁপে উঠলো মুষ্ঠি বদ্ধ হাতের শিরা উপশিরা সামী এগিয়ে স্টেজের কাছে যাবে তাঁর আগেই তামিম দুহাতে তাকে জাপটে ধরে, সামী তেজী কন্ঠে বলে,,
– এই শালা ছাড় তুই আমাকে আমি ওর নাচ করা দেখাইতাছি,,
– আমি তোর সমন্ধি হই শালা না,,
– মজা করিস আমার সাথে? জলদি ছাড়!
তামিম শুকনো ঢোক গিলে আসে পাশে তাকিয়ে দেখে বড়রা কেও আছে কি না , যদিও বড়রা সবাই হলুদ ছুয়িয়েই তাদের ভাই বোনদের আনন্দ করতে দিয়ে চলে গেছে,, এখন শুধু তাদের কাজিন আর দূরের আত্মীয়দের সাথে আসা ছোটরাই আছে তবুও এখন সামী হিয়াকে কিছু বললে সবার কানে কথা গুলো ঠিক যাবে তাই তামিম সামী কে আটকিয়ে বলে,,,
– ভাই আমার বোনের হয়ে আমি মাফ চাই,, কিছু বলিস না,, এখানে আমদের কাজিন সহ আরো অনেকে আছে, তাছাড়া তুহিন তো আমাদের ভাই হয় ওর সাথে একটু নাচলে কি আর হবে?
– তুই আমাকে ছাড় তারপর বলছি কি হবে,, আমার বউ নিয়ে তোর ঐ লুজ ক্যারেক্টার ভাই তাতা থৈথৈ করবে আর আমি কি চেয়ে চেয়ে দেখবো নাকি?
– এইই, ক্যারেক্টার নিয়ে প্রশ্ন তুলবি না, মীরদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র,, আমার ভাই যথেষ্ট ভালো সভ্য শান্ত!
– আমার চুল ভালো তোর ঐ ভাই, তোর তো চোখ আন্ধা তাই কিছু দেখিস না তোর ঐ ভাই আমার বউয়ের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায়,,
কথাটা বলতে বলতে সামী আবারও তাকায় স্টেজে নাচতে থাকা হিয়ার দিকে ঠিক তখনই হিয়াগানের সাথে তাল মিলিয়ে লিপসিং করতে করতে এক হাতের সাহায্যে সামীর দিকে এক আঙুল তাক করে ,
Ho mere Deewano,
Baat ko samjho ,,
Door Se Dekho,
Mera yeh nazara,,,
ব্যাস এইটুকুই যথেষ্ট ছিল সামীহ শিকদার কে ভয়ংকর রাগিয়ে দেওয়ার জন্য, সামী এক হাতে তামিমের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বলে,,
– দুই মিনিট! ঠিক দুই মিনিট টাইম দিলাম হিয়ার রূমে অপেক্ষা করছি ওকে এক্ষুনি ধরে রূমে নিয়ে আয়, কীভাবে কি করবি তুই জানিস না হলে আমি যাব আর তুই খুব ভালো করেই জানিস কে কি বলবে আই ডোন্ট কেয়ার,তারপর ওকে বুঝাচ্ছি কে কোত্থেকে দেখবে !
বলেই সামী চলে যায়,
এই দিকে তামিম পড়েছে মহাবিপদে এমন ভরা মঞ্চ থেকে বোনকে বন্ধুর কাছে পাঠানোটা একটু লজ্জা জনক, তার মাঝে সময় ও কম কখন যানী সামী রেগে মেগে হিয়া কে সবার সামনে দিয়েই টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। তামীম এক মুহুর্ত ভেবে ছুটলো স্টেজের সামনে সোহানা তানজিলাদের সাথে বসে , তামিম কোনো ভনিতা ছাড়াই সোহানাকে ডেকে উঠে, সোহানা একটু আগের কথা ভেবে লজ্জা পায় ভাবে তামীম হয়তো দুষ্টুমি করতে ডাকছে তাই সে তামিমের ডাক না শোনার ভান ধরে তানজিলাদের সাথে বসে থাকে , তামীমের ধৈর্যে কুলোয় না সে আর না ডেকে সোজা সোহানার সামনে এসে ওর হাত ধরে টেনে তুলে বলে,,
– সোহা হিয়াকে স্টেজ থেকে তাড়াতাড়ি নামিয়ে আন তো জলদি ,
সোহানা সহ তানজিলারা অবাক চোখে তাকায় সোহানার আগে তানজিলাই বলে,,
– কেনো !কেনো?আপুর তো এখনও শেষ হয়নি ভাইয়া,
এখনও তো,,
তানজিলা কে থামিয়ে দেয় তামীম গম্ভির কন্ঠে সোহানাকে বলে,,
– ওড়ে এক্ষুনি নামিয়ে আন যা , আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না,
তামিমের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে কেও আর কিচ্ছু বলার সাহস পেলো না, শত হোক তামিম মীর বাড়ির বড় ছেলে, তামিমের কথা মতো সোহানা যেতে নিবে তখনই তামিম পেছন ডেকে বলল,,
– শোন
সোহানা থেমে পিছন ফিরলে তামিম এগিয়ে গিয়ে নিচু গলায় বলে,,
– আজ রাতে তানজিলাদের সাথে ঘুমাস,
সোহানা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাতেই তামীম আরও গম্ভীর হয়ে বলে,,
– বুঝিস নি?
সোহানা না বোধক মাথা নাড়ায়, তামীম হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,,
– তোর ভাই আমার বোনের জম হয়ে ওর রূমে বসে আছে, তোর ভাইয়ের তো সরম নেই তাই আমাকে বলল আমার বোনকে যেনো তার কাছে দিয়ে আসি, আমি নির্লজ্জ তবে ওর মতো নয়, তাই,,
আর কিছু বলার আগেই সোহানা রেগে বলে,,
– খবরদার যদি আমার ভাইয়ের নামে উল্টা পাল্টা কিছু বলবেন তো, আমার ভাই মোটেও ওমন নয়,
তামীম হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,,
– জানতাম, বিশ্বাস করবি না শালা সবার সামনে যেই ভন্ডামি করে ,, সে যাই হোক আমার বোনকে নিয়ে দিয়ে আয় নাহলে তোর ভাই এসে সবার সামনে থেকে নিয়ে যাবে, আর শোন হিয়া তোর ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি ও বাড়িতেই নেই কোথায় যেনো গেছে,
– যদি হিয়া জিগ্গেস করে, ওকে কেনো এখন এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি,
– কিছু একটা বলে দিস, তবে এখন ওরে ধরে আন বইন তোর ভাই আমারে দুই মিনিট সময় দিয়েছে আর তোকে বোঝাতে বোঝাতে আমার দুই দিন পার হয়ে যাচ্ছে!
—————-
ওয়াসরুমের বেছিনে ঝুঁকে ওয়াক ওয়াক করে বমি করার চেষ্টা করছে হিয়া তবে তাঁর বেঈমান বমী তাঁকে ধরা দিচ্ছে না, সে কল ছেড়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দেয় পেছন ফিরে দেখে সামী এখনও অগ্নি দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে, হিয়া যে নাটক করছে সামী তা বেস বুঝতে পারলো রাশভারী কন্ঠে বলে,,
– এখনো বমি হয় নি? আয় কাছে আয় তোর যেনো গড়গড়িয়ে বমি আসে সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি!
হিয়া ছলছল চোখে সামীর দিকে তাকিয়ে বলে,,
– আপনি খুব খারাপ ,দেখুন ঠোঁট দুটোর কি অবস্থা করেছেন ! এখন আবারও চাচ্ছেন? ঠোঁট হলেও কি ওরা মানুষ না? রক্ত বের করে দিয়েছেন একেবারে, আমার তো ভাবলেই গা গুলিয়ে আসছে ওয়াক থু আপনার থুতু বুঝি রক্তের সাথ পেটে গিয়েছে আমার,
– ভীষন রেগে আছি হিয়া আর রাগিয়ে দিস না, এইসব নাটক রেখে কাছে আয়,,
হিয়া ভয় পায় সামী কে একটু মজা করে তুহিনের সাথে নাচার জন্য সামী এমন করবে জানলে এই জিবনে সে নাচতো না, সামনের আয়নায় নিজের দিকে তাকায় হিয়া সুন্দর করে বাঁধা লম্বাচুলগুলো এখন এলোমেলো, গলার ভাজে স্পস্ট জ্বল জ্বল করছে দুটো রক্তলাল দাগ, আর তাঁর ঠোঁট দুটোর অবস্থা তো পুরোই নাজেহাল করে ছেড়েছে সামী, হিয়া মনে মনে সোহানাকে ইচ্ছে মত গালি দেয়,, তাকে এই জমের মুখে ফেলে দিয়ে যাওয়ার জন্য,, ততক্ষণে সামী এসে হুট করেই হিয়ার হাত টেনে ওয়াসরুম থেকে বের করে, হিয়া হাত ছাড়াতে নিলে সামী হিয়ার হাত মুচড়ে পেছন দিকে হাত চেপে ধরে হিয়ার পিঠ গিয়ে ঠেকে সামীর বুকে হিয়া ব্যথায় আহ করে উঠে, সামী দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
– সাহস হয় কি করে অন্য ছেলের সাথে তুই,,
সামী শেষ করার আগেই হিয়া ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে,,
– তুহিন ভাইয়া আমার ভাই হয়, আপনি এমন করেছেন কেনো? এই আপনাকে আমি চিনতে পারছি না , প্লিজ হাতটা ছেড়ে দিন আমি খুব ব্যথা পাচ্ছি,
– লাগুক আমার ও তোকে অন্য ছেলের সাথে দেখে ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার থেকেও বেশি রাগ হচ্ছে, আমি কি করবো ফুল? আমার যে কিছুতেই রাগ কমছে না!
#চলবে,,
#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(১৫)(দ্বিতীয়াংশ)
– সাহস হয় কি করে অন্য ছেলের সাথে তুই,,
সামী শেষ করার আগেই হিয়া ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে,,
– তুহিন ভাইয়া আমার ভাই হয়, আপনি এমন করেছেন কেনো? এই আপনাকে আমি চিনতে পারছি না , প্লিজ হাতটা ছেড়ে দিন আমি খুব ব্যথা পাচ্ছি,
– লাগুক আমার ও তোকে অন্য ছেলের সাথে দেখে ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার থেকেও বেশি রাগ হচ্ছে, আমি কি করবো ফুল? আমার যে কিছুতেই রাগ কমছে না,
– আপনি পাগলামো করেছেন শিকদার সাহেব,আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি ছাড়ুন প্লিজ,
ব্যাথাতুর কন্ঠে বলল হিয়া, হিয়ার ব্যাথাতুর কন্ঠ শুনে এই পর্যায়ে সামী একটু নরম হয়ে আসে, ডিল হয়ে আসে মুচড়ে ধরা হাতের মুষ্ঠি তবে সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয় না উল্টো হাস্কি টোন বলে,,
– ছাড়তে পারি তবে এক শর্তে, এতে ছেড়ে ও দিবো, সাথে আমার রাগ ও কমে যাবে,
সামীর হটাৎ শীতল কন্ঠে হিয়া ডান পাশে মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে তাকায় সাথে সাথে হিয়ার নাকের ডগা স্পর্শ করে সামীর ঠোঁট, সামী হিয়ার নাকের ডগায় ছোট্ট চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,
– i want a deep kiss on your lips right now,,
বিস্ময়ে হিয়ার চোখ বড় বড় হয়,, অবাক কন্ঠে বলে,,
– চুমু চান মানে? আমার দিকে একবার তাকান দেখুন ঠোঁট দুটোর কি অবস্থা করেছেন? রাক্ষসের মতো অত্যাচার করে ও আশ মিটেনি?
সামী হিয়ার কাধে থুতনি ঠেকায় এবারও সেই ঘন সুরে বলে,,
– রাগিয়ে দিয়েছিস কেনো তাই তো এতো রাফ হয়েছি, but this time I will be soft flower!
– আমি পারবো না,
– কেনো?
হিয়া হাত ছড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে,,
– ঠোঁটে চুমু খেতে আমার ঘেন্না লাগে! বমি বমি,,
হিয়া শেষ করার আগেই সামী হিয়ার কাঁধ থেকে মুখ সরিয়ে মুহূর্তে নিজের দিকে ঘোড়ায় হিয়ার মুখ টা দুহাতের আজলায় ধরে দৃষ্টি ফেলে হিয়ার ফুলে ফেঁপে ওঠা ক্ষতপূর্ণ ঠোটে,, হিয়া সামীর দৃষ্টি দেখে ভরকে যায় এর আগে হিয়া সামীর এমন দৃষ্টি দেখে নি, এই দৃষ্টি যে তাকে আবারও ঘায়েল করার হিয়া বুঝল ছটফটিয়ে উঠলো ছাড়া পাবার জন্য, সামী হিয়ার দিকে মুখ এগিয়ে নিয়ে ধীর সরে বলে,,
– সমস্যা নেই খুব শীগ্রই অভ্যাস হয়ে যাবে, now don’t disturb me My little flower!
হিয়া আটকাতে পারলো না তার শিকদার সাহেব কে সে কিছু বলার আগেই যে তাঁর মুখ বন্ধ করে দিয়েছে সামী!
——————–
আজকের সকালটা মীর বাড়ীতে অন্যরকম সুন্দর জাঁকজমক ও কোলাহলপূর্ণ, বাড়ির বড় থেকে ছোট প্রায় সবাই সকাল সকালই উঠে গেছে,বাড়ির বিশাল উঠোনের এক পাশে বাবুর্চিরা বিয়ে বাড়ির রান্না- বান্নার কাজে নিয়জিত, কাজ চলছে সেই রাত চারটার পর থেকেই, শীত কালের ছোটো দিন না হলে আর সময় পাওয়া যাবে না, সেখান দাঁড়িয়ে তদারকী করেছেন তাসাউফ মীর ও তুহিন, গৃহিণীরা বাড়ির বাহিরের রান্না ঘরে বেস্ত সকালের নাস্তা বানাতে যদিও সবার জন্য বাবুর্চি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করানো হচ্ছে, তবে কে কি খায় বলা তো যায় না তাই তারা অন্য ব্যবস্থাও রাখছেন, তাদের সাথে যোগ দিয়েছে সোহানা ও সে ব্রেডে জেম মাখাচ্ছে ছুরির সাহায্যে, কাজের ফাঁকে আয়েশা মীর সোহানাকে প্রশ্ন করলেন,,
– তোর সাথের টা কই? তুই মেহমান হয়ে কাজে হাত লাগাতে পারলি অথচ সেই মহারানী কই? তার কি এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি? আসার সময় কান ধরে তুলে আনতে পারলি না?
সোহানা বেচারি কি বলবে বুঝতে পারলো না, কারণ সে তো হিয়ার খবর জানে না, সে তো তামিমের কথা মতো গতরাতে তানজিলাদের সাথেই ঘুমিয়েছে, তাই সোহানা টুপ করে সেই মিথ্যা টাই আয়েশা কে বলল যা গত রাত থেকে সবাই কে বলে আসছে,,
– আসলে হয়েছে কি মামুনি গতরাতে নাচ, গানের উচ্চ আওয়াজে হিয়ার হুট করেই প্রচুর মাথা ব্যাথা হচ্ছিল তাই ও রুমের গিয়ে আগে আগেই শুয়ে পড়েছিল, আমি ডাকলে কষ্ট হবে ভেবে আর ওকে বিরক্ত করিনি তাই তানজিলাদের সাথেই ঘুমিয়েছি, সকালেও তাই আর ডাকিনী।
তখনই রান্না ঘরে প্রবেশ করলো সোহান হিয়া অসুস্থ শুনে সোহানাকে বলল,,
– আমার বেইব অসুস্থ আগে কইবি না? যাই গিয়ে দেখে আসি কি হয়েছে,,
বলেই সোহান পেছন ঘুরে যেতে নিবে সোহানা সোহানকে পিছু ডাকে,, ফলের ঝুড়ি থেকে তিনটে আপেল নিয়ে ওর সাথে যেতে যেতে বলে,,
– চল আমিও যাবো,,
সোহানা সামনে আসতেই সোহান একটা আপেল ওর হাত থেকে নিয়ে বলে,,
– আমার জন্যই তো আনছিলি তাই না?
– তুই কবে ভালো হবি বল তো
সোহানা বিরক্ত হয়ে বলে। সোহান দাঁত কেলিয়ে হাসে হাতে থাকা আপেলে কামড় বসিয়ে চিবাতে চিবাতে বলে,,
– লাল শুক্রবারে,,
হিয়ার রুমের বন্ধ দরজার সামনে এসে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সোহানা, নিজেও টোকা দিচ্ছে না সোহানকে ও টোকা দিতে দিচ্ছে না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি যেনো ভাবছে আর হাতে থাকা আপেল টা সাবার করছে, সোহান সোহানার কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হলো প্রচুর বিরক্ত হয়ে বলল,,
– সামনে থেকে সর বাল বেটি, আইফেল টাওয়ারের মতো খারায় আছিস কে? সর আমি হিয়ারে ডাকি
সোহান এগিয়ে যায় দরজায় দাবাং থাবড়া মারবে তার আগেই সোহানা সোহানকে টেনে ধরে,, এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচু গলায় চিৎকার করে বলে,,
– এইই কি করছিস, ভেতরে ভাইয়া আছে!
– ভাইয়া আছে মানে?
সোহান অবাক হয়ে শুধায়,, হিয়া চঞ্চল দৃষ্টিতে আসে-পাশে তাকিয়ে বলে,,
– গতকাল রাতে হিয়া তুহিন ভাইয়ের সাথে নেচে ছিলো বলে ভাইয়া তো সেই ক্ষেপেছে পড়ে তামিম ভাইকে বলেছে ওকে তখনই স্টেজ থেকে নামিয়ে ভাইয়ার কাছে দিয়ে যেতে, তামিম ভাই লজ্জা পাচ্ছিল তাই আমাকে বলেছে পড়ে আমি এসে মিথ্যে বলে ওকে ভাইয়ার কাছে দিয়ে গেছি,,
সোহান চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে বলে,,
– বলিস কি, এতো বড় ঘটনা আর তুই আমাকে এখন বলছিস? ভাইয়া কি এখনো ভেতরে? থাকলে তো এখনই বের হওয়ার দরকার এখন লোকজন কম আছে ,পড়ে বের হওয়ার সময় যদি কেও দেখে ফেলে তাহলে তো কেলেংকারী একটা বাঁধবে!
সোহানা সম্মতি জনক মাথা নাড়িয়ে বলে,,
– তাহলে ডাক দেই বল?
সোহান ইশারায় সম্মতি জানায়, সম্মতি পেয়ে সোহানা ধীরে দরজায় নরম হাতে কড়া নারে, সোহানার কাণ্ড দেখে সোহান বিরক্ত হয়ে বলে,,
– তুই সর তো বইন, এমন আদর করে দরজায় বারি দিচ্ছিস যে আমার কানেই আওয়াজ আসছে না , ভাইয়েরা কি ছাতার মাথা শুনবো?
বলেই যেই দরজায় হাত দিয়ে জোরে এক বাড়ি দিতেই দরজা হাট করে খুলে যায়, সোহান আর সোহানা দুজনেই বেশ অবাক হয়, সোহান অবাক হয়ে বলে,
– কী ব্যাপার দরজা দেখি খোলা
– হয়তো ভাইয়া সুযোগ বুঝে বেরিয়ে গেছে, যাক ভালোই হয়েছে আয় এবার হিয়াকে গিয়ে উঠাই
সোহান সম্মতি জানিয়ে রূমে প্রবেশ করে, সকাল এখন সাত টা, গ্রাম হওয়ায় এখনো চার পাশে কুয়াশায় অন্ধকারাচ্ছন্ন তাঁর উপর জানালার পর্দা টানা ঘরটা বেশ অন্ধকার সোহানা গিয়ে লাইট অন করলো,, সারা ঘর আলোয় ঝলমল করে উঠল সোহান সোহানা পুড়ো রুম জুড়ে হিয়া কে খুঁজলো , এমনকি ওয়াশরুমে ও খুঁজলো কিন্তু হিয়া কোথাও নেই। সোহান সোহানাকে বলে,,
– হিয়া কই সোহা?
– আমি কি জানি?
কাধ উঁচিয়ে জবাব দেয় সোহানা
– কি জানিস মানে? তুই ই তো বললি ভাইয়ার কাছে এই রূমে রেখে গিয়েছিস তাহলে ওরা গেলো কই? সত্যি করে বল
সোহানের সন্ধেহ জনক চাহনি,সোহানা দু দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,,
– আমি সত্যিই জানি না বিশ্বাস কর,, আমি হিয়াকে রাতে এই রূমে রেখেই চলে গেছি পড়ে আর আসিনি , আমি সত্যিই জানি না ওরা গেলো কোথায়! সোহানা একটু থেমে ভেবে বলে,, তামিম ভাইকে কল লাগা তো সোহান আমার মন বলছে উনি জানেন ওড়া কোথায়,
সোহান সম্মতি জানিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কল লাগায় তামিমের ফোনে, তাদের হতাশায় ফেলে, দেখা দেয় নেটওয়ার্ক প্রবলেম, সোহানা তাঁকে আবারও চেষ্টা করতে বলে,, পর পর পাঁচ বার চেষ্টা করার পর কল ডুকে, দু বার বজতেই রিসিভ হয় ওপাশ থেকে তামিম বলে,,
– হ্যায় বল,,
তামিমের ঘুমন্ত কণ্ঠ, সোহান কিছু বলার আগেই সোহানা ওর থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলে,,
– ভাইয়া আপনি কই? হিয়াকে তো রূমে খুঁজে পাচ্ছি না,
– তার আগে তুই বল ভবিষ্যৎ জামাইরে কে ভাইয়া ডাকে?
– তো কি সাইয়া ডাকবো?
সোহানার মেজাজ গরম হয়, কোথায় তাঁর ভাই ভাইয়ের বউয়ের খোঁজ নেই এই লোক আছে ফালতু কথা নিয়ে,,
– না মানে চাইলে ডাকতেই পারিস , তবে একান্ত আড়ালে সবার সামনে এই নামে ডাকলে ব্যাপার টা লজ্জা জনক !
– সকাল সকাল কি ডেট ওভার কিছু খেয়েছেন?কোথায় আপনার বোনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না আপনি চিন্তা করবেন, তা না করে আপনি এইসব নিয়ে
ফাও আলাপ করছেন?
সোহানা খুব রেগে যাচ্ছে বুঝে তামীম হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,,
– কি? হয়েছে কি? আমার বোনের?
– কি হয়েছে মানে, আপনি কি শুনতে পান নি কি বললাম এতক্ষণ? হিয়াকে খুজে পাচ্ছি না ও ওর ঘরে নেই আর না বাহিরে বের হয়েছে,
তামিম গাড়ীর ব্যাক সিট থেকে উঠে বসে এতক্ষণ শুয়ে ছিল কাচ নামিয়ে মাথা বের করে দূরে হেঁটে যাওয়া এক জোড়া চড়ুই কে দেখে আবারও হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,,
– চিন্তা করিস না, তোর ভাই আর ভাবী একদম ঠিক আছে, তোর ভাই শালা নির্লজ্জ আমারই সামনে, আমাকেই পাহারাদার বানিয়ে ,আমারই বোন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে রোমান্স করছে, এমন নির্লজ্জ লোকের বন্ধু হয়ে বড় ভাই হয়েও বোনের লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করার পাহারাদার হতে হলো! এই শীতের ভোর রাত থেকে সকাল করলাম তোর ভাই ভাবীরে পাহারা দিয়ে!
#চলবে,,,,