প্রণয়ের মহাকাব্য পর্ব-৩০ এবং শেষ পর্ব

0
27

#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
(৩০, প্রথমাংশ)

কেটে গেছে আরো কিছু মাস,এখন হিয়ার সাত মাস চলছে।পেটটা সুন্দর গোল হয়ে উঠেছে, মনে হয় যেন ছোট্ট একটা জগৎ সে বয়ে বেড়াচ্ছে সে, চেহারায় এসেছে নাদুস নুদুস একটা ভাব, ছিমছাম গড়নের কিশোরী হিয়াকে এখন মাতৃত্বের এই রূপে যেনো পূর্ণাঙ্গ নারী মনে হয়,এই ক’মাসে হিয়া বদলে গেছে, চঞ্চলতায় এখন এসেছে অনেকটা ধীরতা, আর চোখে মুখে যেন একটা মাতৃত্বের দীপ্তি, যেটা শুধু মায়েরাই ধারণ করতে পারে।সামীও বদলে গেছে, বেড়ে গেছে হিয়ার প্রতি তাঁর সীমাহীন ভালোবাসা, রাতে ঘুম আসে না হিয়ার, শুধু ছটফট করে, মাঝে মাঝে পেইন উঠলে এমন অবস্থা হয় যে চোখ মুখ লাল হয়ে যায়, ব্যথায় সামী কে জড়িয়ে ধরে কুকাতে থাকে, এই দিকে হিয়ার এমন অবস্থা দেখলে সামী পাগল হয়ে যায়, শ্যাম বর্ণের মুখ খানী লাল হয়ে যায় পুরুষ মানুষ বলে হয়তো কাঁদে না, মাঝে মাঝে এমন ও হয় সারা রাত হিয়া ঘুমায় না তখন সামী ও হিয়ার সাথে রাত জাগে,মাথায় হাত রেখে গল্প বলে, হিয়ার গোল হয়ে আসা পেটে মাথা রেখে কথা বলে এসব দেখে হিয়া খিলখিলিয়ে হাসে।
——
এরই মধ্যে হয়ে গেছে হিয়াদের ভর্তি পরীক্ষা, আট মাসের ভরা পেট টা নিয়ে হিয়া ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে, হিয়া অবশ্য অনেক চেষ্টা করেছে কোনো ভাবে সামিকে পটিয়েপাটিয়ে যদি পড়াশোনার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ,তবে এই ব্যাপারে সামী বড্ড কঠিন, পড়াশোনা নিয়ে সে কোনো প্রকার আপোস করবে না অজ্ঞতা এই শরীর নিয়ে ও হিয়াকে ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হয়েছিলো। আশানুরূপ সোহানার চান্স হয় ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ। আর ইরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিতে, ভাগ্যবশত নীরব ,প্রীতি, সোহান আর হিয়া তিতুমিরে একসাথে চান্স পায়,যদিও নীরব জগন্নাথে চান্স পেয়েছিল তবে সাবজেক্ট ভালো হয়নি বলে, তিতুমিরেই সিট কনফ্রিম করে। একই কলেজে চান্স পেলেও নীরব আর প্রীতি ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে ,সোহান রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর হিয়া অর্থনীতিতে। বন্ধুমহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সোহানা আর ইরার আক্ষেপের শেষ নেই,তাদের এক কথা ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন হলেও ওরা চারটে একসাথে তো আছে।
রাত বাজে তিনটা পেটের ব্যথায় ছটফট করছে হিয়া, শুধু পেট না হাত পা ও ভীষণ ব্যথা পানি নেমে গেছে হাতপায়ে , সামীর বুকে মুখ গুজে আকুল হয়ে কাদঁছে সে, হিয়ার এমন অবস্থা দেখে সামী ও অস্থির হয়, হিয়া কে বুকে নিয়ে বার বার চুমু খায় তাঁর মাথায় সমানে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাথায়, পিঠে যদি তাঁর ফুলের একটু কষ্ট কম হয়! সামীর অমন অস্থিরতায় হিয়া নিজেকে দমাতে চায়, সামলে নেয় নিজেকে, প্রেগন্যান্সির এই সময়টা তে সে খুব ভালো করে বুঝেছে তার শিকদার সাহেব তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে , ঠিক কতটা ভালোবাসলে এইভাবে তাকে আগলে রাখে!একটু আরাম পেয়ে যখনই হিয়া ঘুমাতে যাবে তখনই হুট করে চিৎকার করে উঠে,,
– আহ!
সামী ভয় পেয়ে যায় শুধায়,
– কি হলো হিয়া! এই!
ব্যথায় হিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে, এক হাতে আঁকড়ে ধরে সামিকে পেটের দিকে ইশারা করে চোখ ভর্তি পানি নিয়ে ও হেসে বলে,,
– বাবু কিক মেরেছে,
বলেই হিয়া সামীর এক হাত টেনে তার পেটের উপর রাখে আশ্চর্যজনক ভাবে ঠিক তখনই আবারও বাবু কিক করে সামী স্পষ্ট সেই ছোট্ট প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করলো, তবে হিয়ার চিৎকারে সে অসহায় হয়ে গেলো নিচু হয়ে পেটে চুমু খেয়ে বলে,,
– আমার বাবা মাকে এতো কষ্ট দিতে আছে? সে বাবার রাজরাণী বাবার ছোট্ট একটা ফুল তাঁর এতো কষ্ট যে বাবার সহ্য হয়না, তুমি বাবার সোনা বাচ্চা না? মাকে একদম জ্বালাবে বুঝলে?
হিয়া টের পায় তাঁর পেটে তরল কিছুর আভাস, তবে কি তার ব্যথায় শিকদার সাহেব কাদছেন? হিয়া দ্রুত সামী কে পেটের উপর থেকে তুলে সামীর চোখের কোনে জল চিকচিক করছে, পাগলের মতো হিয়াকে চুমু খায়, বলে,,
– তোর কষ্টের ভাগ যদি আমি নিতে পারতাম ফুল বিশ্বাস কর আমার সবটা দিয়ে সুসে নিতাম তোর সব কষ্টগুলো।
——-
আজ অনেক গুলো দিন পড়ে বন্ধু মহলের সবাই মিলে আড্ডায় বসেছে, যেহেতু হিয়া অসুস্থ তাই সবাই প্লান করে শিকদার নিবাসেই আড্ডা জমিয়েছে আর কয়েকদিন পরেই তাদের নবীন বরন তাই নিয়ে কথা চলছে, এর মাঝেই হুট করে সোহানার ফোন বেজে উঠলে সবাই তাকায় সোহানার দিকে, সবার এমন চাহনী দেখে সোহানা লজ্জায় হাসফাঁস করে, ইরা দুষ্ট হেসে বলে,,
– যা যা বান্ধবী কথা বলে আয়,, তোদেরই তো দিন আমরা বাল সিঙ্গেল আছি সিঙ্গেল ই মরমু!
– বাজে কথা বলবি না, তুই সিঙ্গেল? রোহান ভাইয়া জানে?
– রোহান? ওইডা আবার কে? কোন গ্রহের প্রাণী? মঙ্গলে থাকে বুঝি?
– ঐটা না হয় রোহান ভাইয়াকেই জিজ্ঞেস করিস
সোহানা উঠে চলে যায়, সোহানা যাওয়ার পর তাঁরা আবারও আলোচনায় মন দেয়, গল্পের মাঝেই হিয়া নড়ে চড়ে বসে, পিঠের নীচে থাকা বালিশটা ঠিক করে আবারও বসে নাহ! শান্তি পাচ্ছে না, প্রথমে হলকা ব্যথা হলেও ধীরে ধীরে টা তীব্র হয় । তিব্র ব্যথায় গুঙিয়ে উঠে হিয়া হাতে থাকা ফল ভর্তি প্লেট টা পড়ে যায় বিছানার উপর, হুট করে হিয়ার এমন অবস্থা দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়, ইরা প্রীতি জড়িয়ে ধরে হিয়া কে ওদের চেঁচামেচি তে শাহানা,সোহানা দৌড়ে আসে, সোহান ফোন লাগায় সামিকে, সামীর সাথে কথা বলে সবাই মিলে হিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে,, সারা রাস্তা হিয়ার চিৎকারে সবাই শুধু আল্লাহ কে ডাকছে,, জাহানারা বেগম, আর শাহানা হিয়ার মাথায় হাত বুলায়, কিন্তু ব্যথা তো কমে না,
এইদিকে হিয়ার খবর শুনে সামী দ্রুত তাঁর বাবা কে খবর জানায়, ছুটে গিয়ে ওটির ব্যবস্থা করে, ইতিমধ্যে জসীম শিকদার আর তাসাউফ মীর ডেলিভারি ডাক্তার এর সাথে কথা বলে সব রেডি করে রেখেছেন, সামীর সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। আতঙ্কে হাত পা কাপছে, হিয়া কে নিয়ে হাসপাতালে আসতেই তাকে কোলে নিয়ে দিকপিছ না তাঁকিয়ে সামী ছুটেছে।
——
হসপিটালের করিডোরে নিস্তব্দ হয়ে বসে আছে সামী, তার চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না, হিয়ার সকাল থেকেই পানি ভাঙ্গা শুরু হয়েছে তবে সে বুঝতে পারে নি ,, তাছাড়া রাস্তায় ও অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে জেমের কারণে যার জন্য হিয়ার অবস্থা ভালো না, তাই যখন ডাক্তার এসে জানালো হিয়ার অবস্থা ভালো না, এই মুহুর্তে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়, সি সেকশনে ও প্রবলেম হতে পারে,সামী হুংকার ছাড়ে,
– প্রবলেম মানে কি? ক্লিয়ার করে বলুন! মা বাচ্চা যেকোনো একজন? হ্যাঁ? তাহলে আমার ফুল কে চাই! চাই মানে চাই, বুঝেছেন আমার কথা?
তাসাউফ মীর অবাক চোখে দেখে সামী কে গম্ভীর ব্যক্তিত্বের সমীকে এতটা ভঙ্গুর শুধু তাঁর মেয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তিনি এগিয়ে আসেন সামীর কাঁদে হাত রাখেন সান্তনা দিতে, তবে তাকে অবাক করে দিয়ে সামী তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে, তাসাউফ মীর চমকান সাথে চমকায় উপস্থিত সকলে, হসপিটালের স্টাফরাও তাদের এমন গম্ভীর স্যার কে কান্নায় ভেংগে পড়তে দেখে চমকায়, প্রথম বারের মতো তাসাউফ মীর কে জড়িয়ে ধরে সামী কেঁদে বলে,,
– পারলাম না আপনার মেয়েকে আমি ভালো রাখতে,, আমি একজন ব্যার্থ স্বামী, ব্যার্থ বাবা! যে নিজের স্ত্রী সন্তানের ,,
সামী কে শেষ করতে দেয় না তাসাউফ মীর তাঁর পিঠে হাত রেখে বলে,,
– তোমার থেকে যোগ্য স্বামী আমার মেয়ের জন্য আর পেতাম না, এতো ভেঙ্গে পড়লে চলে? শক্ত হও হিয়াই প্রথম মেয়ে না সন্তান জন্ম দিতে প্রতিটি মেয়েরই এমন যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। আল্লাহ্ কে ডাকো!
জরুরি ভিত্তিতে হিয়াকে সি সেকশনে নেওয়া হয়েছে,, বেশ সময় পর ওটি রুম থেকে ভেসে আসে সদ্য জন্মানো বাচ্চার কান্নার আওয়াজ, ততক্ষণে হাসপাতালে তামিম আর আয়েশা মীর এসে হাজির। রাস্তা ভর কেঁদে কেটে অবস্থা খারাপ ওনার,সোহানা এসে তাকে ধরে বসায়, তামিম গিয়ে দাঁড়ায় ওটির সামনে সেও সামীর মতো নির্বাক এক দৃষ্টিতে চেয়ে ওটি রুমের জ্বলন্ত লাল লাইটটার দিকে,তার কিছুক্ষণ পরেই দুজন নার্স সাদা তোয়ালে জড়িয়ে একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে বের হয়, সবাই এগিয়ে যায়, সামী নড়ে না তাসাউফ মীরের ইশারায় নার্স বাচ্চা টা কে নিয়ে সামীর কাছে আসে, সামী তখনও স্তব্ধ প্রতিক্রিয়াহীন, জিগ্গেস করে হিয়ার কথা। এমন গুরুগম্ভীর স্যার যে তাদের এমন পাগল স্বামী আজকের দিন টা না এলে বুঝতই না। নার্স দুইজন আকিঅপরের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হাসে,
– ম্যাম সুস্থ আছে স্যার, ওনার সেলাই চলছে,, দেখুন আপনার ছেলেটা কি মিষ্টি হয়েছে!
এতক্ষণে যেনো সামী নিজের ধরে রাখা শ্বাস টা ফেলল, ভরাট চোখে তাকালো নিজের সদ্মজন্মান ছেলের দিকে কাপা হাত গুলো তুলে কোলে নেয় ছেলে কে , বাবার শরীরেরওম পেয়ে বাচ্চা টা নড়ে চড়ে কেঁদে ওঠে সামী বুকের সাথে চেপে ধরে ছেলেকে, এই তো সে পেয়ে গেছে তাঁর অংশ কে, তাঁর সেই ছোট্ট ফুল জীবনের সাথে লড়াই করে তাকে বাবা বানিয়ে দিল ভাবা যায়। বাবা হওয়ার সুখে আনন্দে সামীর চোখের একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।
——–
প্রায় দুই ঘন্টা পর হিয়াকে নরমাল বেডে সিফ্ট করা হয়, সব ঠিকই ছিলো তবে সেলাই শেষ হওয়ার পরপরই হিয়ার সারা শরীরে খিঁচুনি দিয়ে উঠে, অবস্থা বেগতিক হয়, বাচ্চার আনন্দ ভুলে সবাই আবারও হিয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠে তাসাউফ মীর নিজে চলে যায় মেয়েকে দেখতে যতই ডাক্তারদের মন শক্ত হক দিন শেষে তো তিনি একজন বাবা, বাবার মন কি মানে? এইদিকে এতো টেনশন নিতে না পেরে সামীর প্যানিক অ্যাটাক করে বসে, হিয়ার আবারো শরীর খারাপ করেছে শুনে সে কিছু না বলেই উঠে ওটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তামিম পাশেই ছিলো সামীর দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে, অস্থির হয়ে তাঁকিয়ে আছে ওটির বন্ধ দরজার দিকে, সামীর অমন অবস্থা দেখে তামিম ধরতে গেলে কিন্তু তাঁর আগেই সামী ঢলে পড়লো তামীমের উপর, ছেলের অমন অবস্থা দেখে শাহানা চিৎকার করে উঠলো, জসীম শিকদার দ্রুত পাশের কেবিনে নিয়ে ছেলের ট্রিটমেন্ট শুরু করলেন। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন ছেলেকে। হিয়া যখন একটু সুস্থ হয় তখন তাসাউফ মীর ওটি রুম থেকে বেরিয়ে দেখেন সামীর এই অবস্থা, এই ছেলেটা আজকে তাকে শুধু অবাকই করে যাচ্ছে। এতো ভালোবাসা বুঝি তাঁর মেয়ের কোপালে ছিলো?
——
একে একে সবাই যখন হিয়ার সাথে দেখা করে চলে যায়, হিয়া চাতক পাখির মতো তাঁর শিকদার সাহেব কে খুঁজে, রূমে তখন শাহানা আর আয়েশা নাতি কে নিয়ে ব্যস্ত, হিয়ার কাচুমাচু করে লজ্জা লাগে সামীর কথা জিজ্ঞেস করতে, আয়েশা মেয়ের অস্থিরতা খেয়াল করে, উঠে এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় শুধায়,,
– পাগল টা খুঁজছিস? হিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়, আয়েশা মুচকি হেসে বলে, সে তো পাশের রূমে ঘুমিয়ে আছে!
হিয়ার বিশ্বাস হয় না তাঁর শিকদার সাহেব তাকে এই অবস্থায় রেখে ঘুমিয়ে আছে, হিয়ার চোখ মুখ দেখে আয়েশা বুঝেনিলেন মেয়ের মনের অবস্থা তিনি সমীর অসুস্থতা টা লুকিয়ে রেখে বলে,,
– জসীম ভাই ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন, পাগল ছেলে জানিসই তো, চিন্তা করিস না আরেকটু পর ই উঠে যাবে,
হিয়ার জানি মনে কেমন করে উঠলো, আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো,এই লোক টা! নিশ্চই খুব পাগলামো করেছে না হলে কি আর এভাবে শান্ত করা লাগতো??
কপালে উষ্ণ নরম স্পর্শে চোখ খোলে হিয়া, সামনে তাঁর এলোমেলো সামী দাঁড়িয়ে মলিন হাসে হিয়া দুর্বল হাত টা উঠিয়ে ছুঁতে চায় সামীর মুখ, ব্যাপার টা বুঝে সামী হিয়ার হাত ধরে নিজের গালে ছোঁয়ায় হাতের উলটো পিঠে চুমু খায়, হিয়া মৃদু হেসে বলে,,
– কি করেছন নিজের? আমার শিকদার সাহেব তো এমন অগোছালো নয়!
– তুই ছাড়া আমার পুড়ো জীবন টাই অগোছালো, পুড়ো আমি টাই যে তোকে ছাড়া নিঃস্ব ধ্বংস!
তখনই নাতিকে কোলে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে আয়েশা হিয়া আর সামীর মাঝে, ছোট্ট সায়ান কে রেখে বেড়িয়ে যান। ছেলের মুখ দেখে হিয়া তাকিয়েই থাকে বলে,,
– সবাই বলছে একদম আপনার মতো হয়েছে, আমার একটু ও পায়নি! শুনুন পড়ের বার বাবু হলে আমার মত হবে তো? না মানে আমি এতো কষ্ট করে দুনিয়ায় অনলাম আমার মতো ও তো একটা হওয়ার দরকার আছে! আপনি তো রোবট মানব, দেখতে যেহেতু অপনার মতো হয়েছে স্বভাব ও নিশ্চই আপনার মতো হবে বাচ্চা হতে হবে প্রাণ খোলা এমন রোবট বাপ বাচ্চা নিয়ে আমি থাকবো কি ভাবে?
সামী মুচকি হেসে হিয়া আর ছোট্ট সায়ানের মাথায় চুমু খায়, শুরু হয়ে গেছে তাঁর তোতাপাখির কথা এই সময় এত কথা বলতে আছে নাকি? সামী হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,
– আরও? এই একটার সময়ই আমি একটুর জন্য কিছু মিছু হয়ে মরে যায়নি, আমার আর চাই না তোর এত কষ্ট আমার সহ্য হয়না ফুল,,
– বললেই হলো ?
– হ্যা হলো, এবার চুপ করে রেস্ট নে,, নো মোর টক!
#চলবে,,,

#প্রণয়ের_মহাকাব্য
#সামিয়া_আক্তার
#অন্তিম_পর্ব (৩০, দ্বিতীয়াংশ)
কেটে গেছে দীর্ঘ একটা সময়, অনেক অপেক্ষা ধৈর্যের পর আজ তানিম আর সোহানার গায়ে হলুদ , তামীমের মুখ থেকে যেনো হাসি সরছেই না। এই নিয়ে কাজিন মহল অবশ্য কম মজা করছে না, কিন্তু তামীমের এতে কিছুই যায় আসে না, আজ তার মহা আনন্দের দিন আর মাত্র একদিন তার পরেই তাঁর সোহাপাখি তার। এইদিকে সন্ধ্যা পড়ে যাচ্ছে আরেকটু পরেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে তামীম আর সোহানা কে যেই স্টেজে হলুদ দেয়া হবে তার কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি তাই নিয়ে রাগারাগি করে সেখানে সব কিছুর তদারকি করছে সামী প্রাণ প্রিয় বন্ধু আর একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা কোথাও যেন কোনো কমতি না থাকে তাই সে নিজে দাড়িয়ে সব কিছু দেখছে, বিয়ে বাড়ীতে এমনি কাজের কোনো শেষ নেই তাঁর উপর উভয়পক্ষের বিয়ের কাজ একি জায়গায় তাতে যেনো আরো কাজ বেড়ে গেছে, যার দরুন এতো ছুটাছুটি করে এই শীতের মাঝে ও ঘেমে নেয়ে একাকার সামী। তখনই কোথ থেকে ছোট্ট একটা ছেলে দৌড়ে এসে সামীর পা জড়িয়ে ধরে, সামী ঘাড় ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাকায়, ছেলেকে দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে, নিচু হয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নেয়, ছোট্ট সায়ান বাবার কোলে উঠে কাঁধে ডান গাল ঠেকিয়ে পড়ে থাকে একটু সময় নিয়ে ডাকে,,
– আব্বুহ,,,
সামী প্রশান্তিতে চোখ বুজে নেয়, ছেলেটা যখনই এমন শান্ত হয়ে ডাকে, তখন যেনো তাঁর পুড়ো দুনিয়াটা শান্তি শান্তি হয়ে যায়, এই যেমন এখন এতো কাজের পর ছেলেটার এক ডাকেই তাঁর সব ক্লান্তিই যেনো দূর হয়ে গেলো, সামী চওড়া হাসে ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে উত্তর করে,,
– জী বাবা,,
ছোট্ট সায়ান তার আধো আধো বুলিতে একটু ধীরবলে,,
– আম্মু দেকেছে,, খুউব দরুড়ি দেতে হুবে এক্ষুনি!
– আচ্ছা, তোমার আম্মু কোথায়?
– পুপির কাছে!
বলেই নেমে গেলো সায়ান ধীরে সুস্থে এগিয়ে গেল দুরে যেখানে বাচ্চারা খেলা করছে, সামী শান্ত চোখে দেখলো হিয়া ঠিকই বলেছিল ছেলেটা তাঁর আসলেই তাঁর মতো হয়েছে, তবে সে এতো ছোটো থাকতে এতো শান্ত ছিলো না, ছেলে তাঁর থেকেও দুই কাঠি উপরে, এসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামী বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় কটেজের ডান দিকের রুম গুলোর দিকে যেখানে কনে পক্ষ রয়েছে।
…..
মেয়েদের হাসি তে মুখরিত পরিবেশ তাঁর মাঝে গোল হয়ে বসে সোহানা তাকে পার্লার থেকে আসা মেয়েরা সাজাচ্ছে। আর প্রীতি, ইরা, হিয়া সহ আরো কাজিন মহল তাকে ঘিরে বসে কেও কেও গল্প করছে তো কেও কেও তৈরী হচ্ছে। তখনই ছোট্ট তিহান কে কোলে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো তানিয়া, হিয়ার চোখেই আগে পড়লো একে একে সবাই যখন খেয়াল করলো সবাই কিছু ক্ষণের জন্য চুপ করে গেলো ,সোহানার মুখ টাও কেমন গম্ভীর হয়ে গেলো, তানিয়া নিশ্চুপে দেখলো সে আশা মাত্রই সবার আনন্দ শেষ হয়ে গেল, তাই সে কোনো মতে একটু হেসে আবারো উল্টো ঘুরে বাহিরে যেতে নিলে হিয়া আটকায় তানিয়ার কাছে এসে তানিয়ার কোল থেকে তিহান কে কোলে নিয়ে বলে,,
– কিরে কই যাস? আর মাত্র আসার সময় হলো? এতই পর হয়ে গেছি?
তানিয়ার চোখের কোনে চিকচিক করে উঠে মিনমিন করে বলে
– তিহানের আব্বু আজকেই আসতে চায়নি,
তখনই হিয়ার কোলে থাকা ছোট্ট তিহান কেঁদে ওঠে মায়ের কোলে যাওয়ার জন্য তানিয়া হাত বাড়িয়ে কোলে নেয় বাচ্চাটাকে আবারো উল্টো ঘুরে বাহিরে যেতে যেতে বলে,,
– আমার বোধ হয় এইদিকে আশা উচিত হয় নি আমি দুঃখিত
হিয়া দাঁড়িয়ে বোনের প্রস্থান দেখে হতাশার শ্বাস ফেলে চোখের কোনে ভেসে ওঠা পানি টুকু মুছে পিছন ফিরে প্রীতিদের বলে,,
– তোরা একটু এইদিক টা দেখ আমি একটু আসছি,,
বলেই দ্রুত তানিয়ার পিছু নেয় তানিয়া কটেজের বাম পাশের পুকুর পড়ে যায় এতক্ষণের জমাট বাঁধা কান্না গুলো মুক্তর ন্যায় ঝরে তবে কোনো শব্দ করে না,, হিয়া পিছন থেকে তানিয়ার কাঁধে হাত রাখলো তানিয়া পেছন ফিরে হিয়া কে দেখে ছেলেদুহাতে জড়িয়ে হিয়ার কাঁধে মুখ গুঁজে ডুকরে উঠে, হিয়া বোনকে সামলে নেয় এইদিকে তানিয়াকে কান্না করতে দেখে তুহিন ও চিৎকার করে উঠে, ছেলের কান্না দেখে তানিয়া নিজেকে সামলে নেয়, হিয়া তানিয়ার চোখ মুখ মুছে দেয় শান্ত চোখে তাঁকিয়ে বলে,,,
– যা হওয়ার তো হয়েই গেছে এখনো ঐসব ভেবে কষ্ট পেতে আছে? তাছাড়া এখন তোর সংসার হয়েছে এক বাচ্চার মা হয়েছিস এখনো ওকে মনে রাখলে চলবে?
একটু থেমে শুধায়,,
– তুই মায়ানের সাথে ভালো আছিস তো তানি? ও কি এখনো আগের মতো,,
হিয়া কে শেষ করতে না দিয়ে তানিয়া নিজেই বলে
– না আপু উনি আর আগের মতো নেই বিশ্বাস করো উনি আমার অনেক খেয়াল রাখে, কিন্তু ,,
তখনই পেছন থেকে কেও ডাক দেয় তানিয়া, হিয়া পিছন ফিরে মায়ান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ,তানিয়াকে দুর থেকে কান্না করতে দেখে এসে দাঁড়িয়েছে হিয়া মায়ান কে দেখে নিজেও বিব্রত হয় এই লোকের সাথে তাঁর অতীত খুবই কুৎসিত তবে ভাগ্য দোষে এখন সে তাঁর বোনের স্বামী। হিয়া তানিয়া কে বুঝিয়ে চলে যায়, হিয়া যেতেই মায়ান এগিয়ে যায় তানিয়ার কাছে তুহিন কে কোলে নিয়ে তানিয়াকেও এক হাতে জড়িয়ে ধরে তানিয়া মায়াননের বুকে মুখ গুজে,
– আপনি জানেন ওরা সবাই আমাকে দেখে চুপ করে গিয়েছিল, আমার মনে হয় এখানে আসাই ঠিক হয়নি,
– কতো দিন আর নিজের আপন জনদের থেকে দূরে দূরে থাকবে? এক দিন না একদিন তো সবার মুখোমুখি হতেই হবে তাই না? তাহলে শুধু শুধু দূরে থেকে লাভ আছে? আমার নিজেকে বড়ো অপরাধী মনে হয় তানিয়া আমার এক ভুলে তোমার জীবন নষ্ট করে দিলাম আমি আজো খুউব অনুতপ্ত,
বলেই মায়ন হতাশার শ্বাস ফেলে, দূর থেকে দাঁড়িয়ে হিয়া সবটাই দেখলো শুনলো ও
….
মানুষের চরিত্র এমন একটা জিনিস যেখানে একবার দাগ লেগে গেলো তা আর সহজে তুলা যায় না সে তুমি যতই ভালো হও মানুষ তোমার অতীত টানবেই, একটু উনিশ থেকে বিশ হলেই অতীত নিয়ে ঠিকই টান দিবে পরবর্তীতে আর তোমার দোষ গুণ বিচার করা ছাড়াই রায় শুনিয়ে দিবে তুমি আসামী,, এসএসসি পরীক্ষার পর বিশাল বন্ধ বলে তানিয়া ঢাকা থেকে গিয়ে তাইয়েভার শশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল,, তখন এক রাতে হুট করে এক কাজে গিয়ে বৃষ্টিতে আটকা পড়ে মায়ান গিয়েছিলো তাদের বাড়ি,, রাত তখন গভির ছিলো, সে কি ঝড়ের রাতে গিয়ে উঠেছিল, দৌড় খুলেছিল তাদের কাজের মেয়েটা রাত গভীর থাকায় কেও টের পায়নি মায়ানের উপস্থিতি, মায়ানের বৃষ্টির পানি একদম সহ্য হতো না যেহেতু অনেক ভিজেছে রাস্তায়ই ভেজা অবস্থায় জ্বর ঊঠে যায় যায় সে কোনো মতে গেষ্ট রুমে গিয়ে এগিয়ে যায় জ্বরের ঘোরে এতোই টলছিল যে সে খেয়ালই করলো না অন্ধকার ঘরে বিছানায় কেও ছিল ভেজা কাপড় সহই সুয়ে পড়ে তানিয়ার পাশে,, তানিয়াও ঘুমালে হুস থাকে না, সকালে যখন ঘুম থেকে উঠে পাশে কাওকে দেখে ভয়ে মেয়ে টা চিৎকার করে উঠে, মায়ান তখনও জ্বরের ঘোরে শুয়ে শরীরে তার ভেজা কাপড় তানিয়ার চিৎকার তায়েভা ওর শাশুড়ি ছুটে আসে,, মূহুর্তেই সারা বাড়ি ছড়িয়ে যায় মায়ান সুযোগ বুঝে তানিয়ার সাথে রাত কাটিয়েছে, সবাই তো জানেনই মায়ান ভালো না হিয়ার সাথে অসভ্যতামো করার পর আর ও বেশি তাঁরা মায়ান কে দেখতে পারে না, দু জন অবিবাহিত ছেলে মেয়ে একি বিছানায় রাত কাটিয়েছে এর পর আর কেও শুনলো না তাদের পরিস্থিতি, জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিলো তাদের,, এইদিকে তানিয়ার বিয়ের খবর পেয়ে সোহান কেমন পাগল হয়ে যায়, হিয়ার পায়ে পড়ে কান্নায় ভেংগে পরে তার তানি কে তাঁর রাণী বানিয়ে দিতে,, কিন্তু ততক্ষণে তানিয়া আরেক পূরুষের বিয়ে করা বউ,, হিয়া কিছুই করতে পারল না শুধু সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া, কয়েক দিন সোহান পাগলামো করলো জসীম শিকদার পর্যন্ত খবর চলে গেল, ছেলে কে তিনি খুব করে বুঝলেন, সব শেষে সামী নিজে ভাইকে বুঝালো ধীরে ধীরে সোহান পাথর হয়ে যায়, করো সামনে আর পাগলামো করে না, সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় হাসিখুশি সোহান কেমন গম্ভীর হয়ে যায় । সব শেষে দেশ ছাড়ে পালিয়ে যায় নিজের অনুভূতি থেকে চার বছর হয়ে গেলো এখনো ফিরলো না না তো করো সাথে তেমন যোগাযোগ রাখে,,,
……….
– এখানে কি করছিস?
কারো ডাকে হিয়ার ধ্যান ভাঙ্গে,, রাতের আধারে তখন পুরো কটেজ জুড়ে লাল নীল ফেইরি লাইটের ঝলকানি , সামী বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে হিয়াকে নিজের দিকে ঘোড়ায়, হিয়ার চোখের কোনে তখন জল চিকচিক করছে চারদিকের আলোর ঝলকানিতে সামী স্পস্ট দেখলো তা , হিয়ার চোখে পানি দেখে সামী অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,,
– কি হয়েছে ফুল? কাদছিস কেন? কিছু হয়েছে? বল! কিরে কথা বল
হিয়া ঝট করে সামীর বুকে মুখ গুঁজে দিল ফুঁফিয়ে বলে,,
– সোহান কে এনে দিন, কতো গুলো বছর হয় ওকে দেখি না, আমার সোহান তো এমন না কি হয়ে গেলো? কালকে সোহার বিয়ে অথছ ও নেই , ও থাকলে কতো আনন্দ হতো বলুন আমার তো কিছুই ভালো লাগে না,ঐ দিকে তানিয়া টাও এখনো কষ্ট পায় কাঁদে,,
সামী মন দিয়ে শুনলো হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়েমাথায় চুলের ওপর একটা চুমু খেয়ে বলে,,
– দেখছি, তুই কাদিস না।
…….
– কিরে আমাকে ছাড়াই বিয়ে করে নিবি?
সোহানার ঠিক কবুল বলার সময় স্টেজের সামনে এসে হাজির হয় কেও, পরিচিত কন্ঠ শুনে সোহানা মাথা উচু করে চোখের সামনে সোহান কে দেখে লাফ দিয়ে উঠে ভারী লেগেঙ্গার উঁচু করে ধরে দৌড়ে গিয়ে সোহান কে জড়িয়ে ধরে, শুধু সোহানা ই না বন্ধু মহলের সবাই দৌড়ে আসে সোহানার উপর হিয়া, প্রীতি, ইরা আর পেছন দিক থেকে নীরব জড়িয়ে ধরে, ওদের কাণ্ডে সোহান হাসে,,
– ওড়ে বাপরে মেরে ফেলবি নাকি, ছাড় ছাড় নাহলে সোহা পাগলনির সাজ ঘেঁটে যাবে, আরে বইনেরা তোগো জামাই ঐদিকে,, যা হুস
সোহানের কথায় সবাই ওকে ছেড়ে দেয় সোহান হেসে সোহানার হাত ধরে স্টেজে নিয়ে বসায়, তামীমের দিকে তাকিয়ে সোহানাকে বলে,,
– আরে ছেমরি বিয়া কইরা তারপর উঠ, বেচারা তামিন ভাই আর কত অপেক্ষা করবে?
সোহানের কথায় তামিম পাত্তা না দিয়ে ঊঠে নিজেই ওকে জড়িয়ে ধরে,,
– আরে আরে করছো কি বউ থাকতে বউয়ের ভাইকে কেন? তোমার বউ ওই দিকে,
সোহানের কথায় পাত্তা না দিয়ে তানিম হেসে বলে,,
– অবশেষে এলি?
– জমজ বোনের বিয়ে বলে কথা না আসলে হয়? দুলাভাইয়ের পকেট মারার ও তো একটা ব্যাপার সেপার আছে,
তানিম হেসে সোহানের পিঠে চাপড় মারলো
– তুই আর ভালো হবি না
– না গো ,
সোহান হেসে বিয়ে পড়াতে বললে কাজী সাহেব আবারও বিয়ে পড়ানো শুরু করেন,, তামিম কবুল বলেদিয়েছে অনেক আগেই এখন শুধু সোহানার পালা একটু সময় নিয়ে সোহানা ও কবুল বলতেই সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে,,ততক্ষণে ছেলে আসার খবর পেয়ে শাহানা ছুটে এসেছেন, সোহান হেসে মাকে আগলে ধরে, জাহানারা বেগম এখন বয়সের ভারে আরও অচল হয়ে গেছে তবুও নাতি আসার খবরে পেয়ে উঠে এসেছে, সোহান একে একে সবার সাথে কথা বলল,, হুট করেই চোখ গেলো স্টেজের বাম পাশে ছোট্ট ছেলে কে নিয়ে মায়ান কিছু একটা বলছে আর তানিয়া বাবুর মুখে ফিডার দিতে চাইছে । দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে সোহনের বুকটা যেনো মোচড় দিয়ে ওঠে, চোখের কোনে জল জমা হতে শুরু করলে সোহান দ্রুত আসছি বলে সরে দাঁড়ায়, যাওয়ার আগে একবার নিজের বোনের দিকে তাকায় বোন টা অন্তত পূর্ণতা পেয়েছে, আরেকবার তানিয়ার দিকে তাঁকিয়ে আওড়ায়,,
– তুমি সুখে থেকো তানি আমি নাহয় অপূর্ণতাকেই সঙ্গী করবো ।
*******
সোহানার বিদায়ের সময় হিয়াই বেঁকে বসেছে সে তাঁর বান্ধবীকে কিছুতেই যেতে দিবে না , শাহানার থেকেও হিয়ার অবস্থা খারাপ ।সে আর সোহানা কেঁদে কেটে একদম ভাসিয়ে ফেলছে, তামিম অসহায় চোখে বোনের দিকে তাকায় বলে,,
– তাহলে তুই ও চল তোর ই বাড়ী থাকবি ওর সাথে
সামী বলে,,
– পাগল নাকি, ও কেনো যেতে যাবে, তারপর হিয়াকে টেনে নিজের সাথে ধরে, তামিম সুযোগ পেয়ে সোহানাকে কোলে নিয়ে গাড়ির দিকে যেতে যেতে আফসোসের সুরে বলে,,
– শেষ মেষ বোন টা আমার হিটলার গিরি শুরু করেছে এতো সাধনার বউ নাকি আমি রেখে যাবো ।

*******
কটেজের বাম পাশের ঐ পুকুর পড়েই দাঁড়িয়ে আছে সোহান বাম হাতে তাঁর চার বছর আগে তানিয়া কে কিনে দেয়া সেই বাটন ফোন খানা, এখানে আসার পথেই এতো বছর পর তানিয়ার সাথে তাঁর সামনাসামনি দেখা হয়েছিলো, তবে কিছু বলার আগেই কোথ থেকে যেনো মায়ান এসে হাজির হয় বলে,,
– তুমি এখানে তুহিন কাদঁছে চলো
সোহান নীরবে তাকায় মায়ণের চোখে মুখে অস্থিরতা বউ যদি তাঁর প্রক্তনের সামনাসামনি দাঁড়ায় বেচারা তো অস্থির হবেই, তানিয়াও স্বামী কে দেখে আর কিছু বলল না শুধু ফোন খানা বারিয়ে দিয়ে বলল,,
– আপনার ছিলো ,, ভালো থাকবেন,
বলেই তানিয়া মায়ানের সাথে চলে যায়, সোহানের হাসি পায়, মানুষ কিভাবে ভালো থাকা কেড়ে আবার ভালো থাকতে বলে? সোহান হাতের মুঠোয় ফোন টা ধরে তাঁর আর তানিয়ার ভালোবাসার একমাত্র সাক্ষী তো এই ফোন টাই, সোহান ফোন টা পকেটে পুরে পুকুর পাড়ে ঘাসের উপর বসে, বাম পকেট থেকে সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে ধরে ঠোঁটের ভাঁজে, এইটা তাঁর এখন নিত্য সঙ্গী।
– এখন তাহলে এইসব ও খাস?
হিয়ার গলা পেয়ে সোহান দ্রুত সিগারেট টা পুকুরে ছুরে মারে, হিয়া এসে বসে
– কিরে? তুই তো এমন ছিলি না
– হতে কতক্ষন? হুট করেই এইটা জীবনের নিত্য সঙ্গী হয়ে গেল
– তুই এখনো কেন মুব অন করছিস না? আর কতো দিন দেবদাস হয়ে থাকবি? ও তো সব ভুলে সংসার করছে, তুই কেনো এখনো,,
হিয়াকে বলতে না দিয়ে সোহান বলে,
– তোর কি মনে হলো আমি তোর বোনের জন্য চিরোকুমার হয়ে থাকবো? না রে একটু ভুলতে পারলেই আরেক মাইয়্যা সিওর বিয়া কইরা ফেলমু
– এখনো পর্যন্ত পেরেছিস? চার বছর কি কম সময়?
– কম ই তো তারে আমি জীবন থাকতে ভুলতে পারমু নাকি সন্ধেহ
সোহান একটু হেসে বলে
– সবার ভালোবাসায় যে পূর্ণতা পাবে বেপার টা এমন নয়, তেমনই সবাই মুভ অন করতে পারবে এমন ও নয় কেও কেও অপূর্ণতায় ও সুখী আছে, আমি ভালো আছি ইয়ার ডোন্ট চিন্তা।
হিয়া তাঁকিয়ে রইলো সোহানের দিকে চোখ জোরা তার ছলছল, সোহান হেসে বলে,,
– আরে গাধী কাদিস কেন? আচ্ছা যা তুই নিজের জন্য একটা ঝা খুজ ভালো লাগলে বিয়া ডান!
– যদি পছন্দ না হয়?
– তাহলে আবার খুঁজবি,
কথার মাঝে সোহান দেখে সামী সায়ান কে কোলে নিয়ে এই দিকেই আসছে সোহান হেসে বলে,,
– ভাইয়্যা আসছে থাক তাহলে বলেই উঠে দাঁড়ায় এগিয়ে গিয়ে সামীর কোল থেকে সায়ান কে হাত বারিয়ে বলে,,
– কিরে ব্যাটা, চাচার কোলে ও আয়
সায়ান আসে না, দেখে সোহান টেনে নিয়ে বলে,,
– আরে আয় না বাপ, অনেক চকলেট দিবো
সায়ান মৃদু স্বরে বলে,,
– লাগবে না
– ওরে আমার হিটলার ভাইয়ের হিটলারপোলা, আয় চাচার সাথে গাড়ী দিবো এইটা চলবে?
গাড়ির কথা শুনে সায়ান রাজি হয় তাঁর সব চেয়ে প্রিয় খেলনা বলে কথা, সায়ান রাজি হলে সোহান নিয়ে চলে যায়, সামী সোহানের প্রস্থান দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হিয়ার দিকে এগিয়ে যায়, হিয়া এখনো ওখানেই বসে, সামিও গিয়ে বসলো হিয়ার পাশে , হিয়া পাশ ফিরে সামী কে দেখে একটু হেলে সামীর কাঁদে মাথা রাখলো, সামী হিয়ার পেছন দিয়ে হাত দিয়ে হিয়াকে আগলে নেয়,, শুধায়
– মন খারাপ?
হিয়া সামীর কাঁধে মাথা রেখেই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়, সামী জানে তাঁর কারণ তাই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
– ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই, আবার অপূর্ণতা পেলেই যে সবাই মুভ অন করতে পারবে এমন কোনো কথা নেই, আমাদের উচিত সোহান কে ওর মতো ছেড়ে দেয়া কারণ জোর করে আর জাই হোক ঘর হয় না, আর এখনই এতো চাপ দেয়ার দরকার নেই এখন ওর পড়াশোনার বয়স ক্যারিয়ার গড়ার সময় এখন অন্তত আর এইসব এ না জড়ানোই ভালো , সব কিছুরই একটা পজেটিভ দিক থাকে, তাই আমাদের উচিত ভালো সময়ের অপেক্ষা করা বুঝেছিস?
হিয়া এইবারও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় মুখে কিছু বলে না, রাত গভীর হচ্চে সাথে শীতের পরিমাণ ও হিয়ার পড়নে শুধু শাড়ি সামী হিয়া কে ধাক্কা দিয়ে বলে চল রূমে চল ঠান্ডা বাড়ছে , হিয়া নড়ে না উল্টো সামীর দিকে আরেকটু চেপে বসে, সামী ভ্রূ কুচকে তাঁকিয়ে হিয়া জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায় চার পাশের শীতল পরিবেশে নজর বুলিয়ে বলে,,
– একটু থাকি? ভালো লাগছে! আচ্ছা সায়ান কোথায়?
– সোহানের কাছে,
– তাহলে আরেকটু থাকি? সামী শীতল চোখে তাকায় তার ফুলের দিকে মুচকি হেসে বলে,,
– আচ্ছা, হিয়া সামীর বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে রাখে এমনি এক শীতের সকালে এই লোক কে সে পাওয়ার জন্য দিবাস্বপ্ন দেখেছিল, লোকে বলে দিবাস্বপ্ন নাকি ফলে না, অথছ ভাগ্য গুণে সে পেয়ে গেছে,, ভেবেই হিয়া মুচকি হাসে চোখ খুলে মুখ তুলে আবদারের সুরে বলল,,
– একটা গান শুনান তো শিকদার সাহেব, একটু রাতের শীত বিলাস করি,
সামী হিয়ার কথায় মুচকি হেসে হিয়ার মাথায় চুমু খায় ডান হাতে হিয়ার কোমরে রেখে টেনে আরও ঘনিষ্ট করে নিজের সাথে বসায় কাঁধ হাত রেখে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে গেয়ে ওঠে,,
– তোমার নামের রোদ্দুরে ,
– আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে ,
– জানি না যাবো ক দূরে এখনো..
– আমার পোড়া কপালে ,
– আর আমার সন্ধেহ সকালে ,
– তুমি কেন এলে জানিনা এখনো ..
– ফন্দি আঁটে মন পালাবার,
– বন্দি আছে কাছে সে তোমার,
– যদি সত্যি জানতে চাও ..
– তোমাকে চাই, তোমাকে চাই !
– যদি মিথ্যে জানতে চাও ..
– তোমাকেই চাই!
(সমাপ্ত)
(আসসাামুআলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? জানি খুউব অগোছালো হয়েছে, শেষ করতে চেয়েছিলাম এক ভাবে তবে শেষ করলাম আরেক ভাবে,, খুব অসুস্থ আমি তাই এভাবেই শেষ করতে হলো। সুস্থ হয়ে খুব জলদি ফিরবো ইনশাহ আল্লাহ )