#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
হামিদা বেগম বলে উঠলো–,,কি সব কথা বলছো তুমি নিখিলের বাবা?নেহার বয়সই কতটুকু এদের কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি!
শাহআলম চৌধুরী আগের মতোই গম্ভীর সে বললো–,,এ বিষয়ে তোমাদের কোনো মত নিতে চাই নি আমরা।আমাদের দুই ভাইয়ের সিদ্ধান্ত আজকেই বিয়ে হবে!
তাহমিদা বেগম বলে উঠলো–,,কিন্তু ভাইজান দুজনই ছোট বিয়ে সংসারের কি বুঝবে!
শহিদুল চৌধুরী বললো–,,বিয়ে হলেই বুঝবে!সংসার কিভাবে করতে হয় সেটা বুঝবে না কিন্তু প্রেম করতে পারবে?
নিখিল রাশভারী কন্ঠে বলে উঠলো–,,আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই সেজো আব্বু, নেহা কে নিয়ে একটাও বা’জে মন্তব্য করবে না।ওর এসবে কোনো দো’ষ নেই!
শাহআলম চৌধুরী বলে উঠলো—,,এক হাতে তালি বাজে না নিখিল।
নিখিল বেশ বিরক্ত হলো–,,বাবা প্লিজ!বিয়ে করতে চাইছি তার মানে এই না আমাদের মাঝে প্রেম গঠিত কোনো সম্পর্ক ছিলো।আমি নেহা কে পছন্দ করি ভালোবাসি এটা সম্পূর্ণ টাই আমার দিক থেকে এখানে ওকে কেউ টানবে না।এটা মেনে নিতে পারবো না আমি!
সেতারা বেগম বললো–,,রাত বারোটার সময় কাজি পাবি কোন’খানে?
তখনই রুমের দরজা দিয়ে ভিতরে আসলো রাহাত,সাথে ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে মিহির।
রাহাত বললো–,,কাজি মানে হুজুর কে পাশের ফ্লাট থেকে ডেকে এনেছি দাদি!
মিহির হাই তুলে বললো–,,এটা কে ডেকে আনা বলে না ভাই,বল চেংদো”লা করে তুলে নিয়ে আসা!
নিখিল অবাক হয়ে বললো–,,তোরা!
মিহির বললো–,,ফুফা ডাকলো তাই আসতেই হলো।
নিখিল শাহআলম চৌধুরীর দিক তাকিয়ে মিহির কে জিজ্ঞেস করলো–,,কতোক্ষণ আগে ডেকেছে তোদের?
রাহাত বললো–,,প্রায় এক ঘন্টা আগে,মিহির শা’লার ঘুমের জন্য দেরি হলো।
নিখিল এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,তার মানে এ সব তোমাদের পূর্ব পরিকল্পনা?
এবার শাহআলম চৌধুরী, শহিদুল চৌধুরী একসাথে হেসে উঠলো। মাহফুজ চৌধুরী এসে বললো–,,ভাইজান আমি বর পক্ষের স্বাক্ষী!
সেতারা বেগম বললো–,,কনের টা কে হবে?
শহিদুল চৌধুরী বললো–,,কে আবার অলসের সাক্ষী আরেক অলস মানে আমাদের মফিজুর।
সেতারা বেগম কপাল চাপড়ে বললো–,,আর মানুষ পেলি না,হত’চ্ছাড়া টা তো নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
হামিদা বেগম করুন কন্ঠে বললো–,,আম্মা আপনিও এ বিয়েতে মত দিচ্ছেন?নিখিলের কথা বাদ দেন নেহা তো অবুঝ। বয়স ও তো কম!
সেতারা বেগম নাকচ করে বললো–,,আহা বউ মা।নেহার বয়সে তিন বাচ্চার মা হয়েছিলাম আমি!
হামিদা বেগম চুপসে গেলেন,তাহমিদা বেগম বললো–,,আম্মা নেহা কে তো চিনেন আপনি!
সেতারা বেগম এবার বিরক্ত হয়ে হাত উচিয়ে তাহমিদা বেগম সহ সবাইকে থামিয়ে দিলেন বলে উঠলেন–,,আর কোনো কথা নয়,আমার দাদু ভাই নেহাকে পছন্দ করে যেহেতু তাদের বিয়েটা এখনই হবে,নেহা কে তোমরা বুঝাবে,একবার বিয়ে হলে সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে ধীরে ধীরে! সব কিছুতেই সময় দিতে হয়।
সাহারা বেগম হামিদা বেগম ও তাহমিদা বেগম কে সাথে করে নিয়ে বাহিরে গেলেন।
সাহারা বেগম দুজনকেই বুঝালেন কিছুক্ষণ যেহেতু তাদের শাশুড়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন আর কিছু করার নেই। উনারা মনে হয় নেহা নিখিলের বিয়ে আগে থেকেই দিতে চাচ্ছিলেন!দুই মায়ের মনই মানতে চাইলো না কথাটা,আরো সময় নিলে ভালো হতো এতো তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্ত যদি ভুল হয়,দুটি জীবনের প্রশ্ন কেনো যে বাকিরা বুঝতে চাইছে না কে জানে!
———–
এতো শব্দের মাঝে নেহার ঘুম ভাঙ্গেনি,মেয়েটা শুনলোও না তার বিয়ে নিয়ে কত ত’র্ক বিত’র্ক চলছিলো এতোক্ষণ।
জেরিন আর বৃষ্টির ডাকে ধর’ফরি’য়ে উঠে বসলো মেয়েটা।চোখ কচলে বলে উঠলো–,,কে মর’ছে আপু!দিদুন?
সেতারা বেগম তেঁতো কন্ঠে বলে উঠলো–,,ছে’মড়ি কয় কি তোর বাচ্চা কাচ্চার বিয়া না খাইয়া মর’তাছি না আমি। এখনো দেখোস না কতো জো’য়ান আছি!
নেহা হাই তুলে বললো–,,ওহ!বুড়ি তুমি ম’রো নাই আমি তো ভাবলাম তুমি পট’ল তুলেছো।
সেতারা বেগম জেরিন কে বললো–,,এই গা’ধী টারে তাড়াতাড়ি শাড়ি পড়া তো।না হয় আমারে জি’ন্দাই মাই’রা ফালাইবো এই মাইয়া!
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,আহা দিদুন তুমি ও না ওর কথা কানে নিও না তো।এই নেহা তুই রেডি হ তাড়াতাড়ি একটু পর তোর বিয়ে!
নেহা আনমনা ছিলো বিয়ের কথা শুনেই বললো–,,কার বিয়ে?
জেরিন বলে উঠলো–,,তোর আর ভাইয়ার!
নেহা চেঁচিয়ে বললো–,,না…..!তোমার ওই গু’ন্ডা ভাইকে আমি বিয়ে করবো না আপু।
নিখিল দরজায় দাড়িয়েই ছিলো এবার সে বলে উঠলো–,,তুই বিয়ে করবি না?ভেবে বলছিস তো!তুই বিয়ে করলেও আজকে আমার বিয়ে হবে তুই না করলে অন্য কারো সাথে হলেও হবে।বিয়ে তো হবেই!ভেবে দেখ কি করবি সময় পাঁচ মিনিট।
নেহা অন্য কারো নাম শুনেই বলে উঠলো–,,আমি বিয়ে করবো তো,একটু মজা করছিলাম!
জেরিন সহ নিখিলি ও হেসে ফেললো।সেতারা বেগম বললো–,,পাগ’লী একটা, কবে যে বুদ্ধি শুদ্ধি হবে এটার।
বৃষ্টি বললো–,,নেহা চল শাড়ি পড়বি।
নেহা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,আরে ভাই পড়ে কি লাভ হবে নিচে যেতে যেতেই তো খুলে যাবে, আমি এমনেই বিয়ে করে ফেলবো।বিয়ে করতে কি শাড়ি লাগে নাকি!
নিখিল একবার তাকালো নেহার দিক,এই অগোছালো নেহাকে সে কি করে ভালোবেসে ফেললো!
নিখিল গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো—,,এটাকে এভাবেই নিয়ে আয় নিচে,সাজগোজ জীবনে হবে না এর দ্বারা।
নিখিল নিচে চলে গেলো,নেহা নাক ফুলিয়ে বললো–,,সব সময় এমন করে তোমার ভাই আপু,এটাকে বিয়ে করবো না আমি,ধ’মক দেয় শুধু ভালো করে কথাও বলে না আমার সাথে।
বৃষ্টি নেহাকে বললো–,,তাহলে বিয়ে করিছ না।এমনিতেও এসব বিয়ে প্রেম,ভালোবাসা ফাল’তু জিনিস!
জেরিন বৃষ্টির মাথায় একটা মে’রে বললো–,,সব সময় এমন কথা বলিস কেন?বয়সই বা কতটুকু হয়েছে তোর কি বুঝিছ?এই নেহা যা তো হাত মুখ ধুয়ে আয়।দিদুনের সামনে আবার কিছু বলতে যাস না,মাত্ররোই গেলো,আবার কিন্তু রাগ করবে।বড়রা যা করছে তোর ভালোর জন্যই করছে,বেশি ভাবিস না তো যা।
নেহা কিছু একটা ভাবলো,বিয়ে!তার বিয়ে হয়ে যাবে তাও নিখিলের সাথে?এটা তো সে স্বপ্নেও কোনো দিন ভাবেনি।আর নিখিল নিজে বলেছে সে নেহাকে ভালোবাসে,বিয়ে করতে চায়।
বেসিনের কল ছেড়ে দিয়েই মেয়েটা খুশিতে হেসে উঠলো, কি মুগ্ধতায় ভরা সে হাসি।এতো এতো স্নিগ্ধতা মেয়েটার মুখ জুড়ে। প্রিয় মানুষ কে পাওয়ার মতো সুখ হয়তো দ্বিতীয় টা নেই,মানুষের মনে বয়স, চঞ্চলতা, রূপ,গুন বিচার করে ভালোবাসা আসে না,ভালোবাসা ভালোলাগার অনুভূতি সুন্দর, পবিত্র কখন কার প্রতি জন্মে যায়,কিভাবে হয় তা কারোই বোধগম্য করার শক্তি নেই।
পানি যে ছেড়ে রেখেছে এটা খেয়ালই ছিলো না নেহার। টপ টপ করে পানি গুলোর ছিটায় ভিজে গেলো খানিকটা।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেলো,নিজেকে সাজানোর তাড়া নেই, সাধারণ অতি সাধারণ নেহা,সব কিছুতেই মেয়েটা কেমন অগোছালো নিজের বেলায়ও অযত্নশীল বিয়ে নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই ওর, ও জানে শুধু নিখিল ওর হয়ে যাক।বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন যে বন্ধন দুজন মানুষ কে নিজেদের সাথে সারাজীবনের জন্য জুড়ে দেয়,নেহা শুধু জানে নিখিল তার হোক সেটা যেভাবে খুমি হোক,মেয়েটা প্রেমে অন্ধ!অনুভূতির ছলাক’লায় পড়েছে হয়তো। নিখিল তার ধ্যান জ্ঞান হয়ে গেছে কখন বুঝতেই পারেনি।
একটা মানুষ এই একটা মানুষে কি আছে নেহার জানা নেই,সে বুঝে হাসি মানে নিখিল,বসন্তের বাতাসের গ্রানের সুভাস যেনো নিখিলে বিদ্যমান, মানুষটা এতোটা মুগ্ধ করেছে নেহা কে।নেহার সপ্তদশী মন প্রেমে পড়েছে ভালোবাসা কি বুঝেছে,শুধু একজনেরই মাঝে সে সব কিছু খুঁজে পেয়েছে,যখন সে বুঝেছে নিখিল কে সে ভালোবাসে,এটা তার কোনো ভালোলাগা নয় তখনই মেয়েটা কখনো আর অন্য কারো দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায়নি অন্য কারো দিকে অন্য নজরে দেখেনি।
হয়তো ভালোবাসা এমনি, মানুষকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয় অন্য একটা নিদিষ্ট ব্যক্তিত্বে!
নেহা বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলো,মুখে তার খুশি যেনো লেগেই আছে।মুচকি হাসিটা নজর কারা,রোগা পাতলা গড়নের নেহা,পড়নে একটা স্কার্ট আর টপস।
বৃষ্টি মোবাইলে দৃষ্টি রেখেই বললো–,,তাহলে কি ঠিক করলি বিয়ে করবিই?তাহলে শাড়ি না পড় অন্তত একটা থ্রি পিস পড়।
নেহা ড্রয়ার খুলে থ্রি পিস বের করে দুজনের দিক একবার তাকালো।হালকা গোলাপি রঙের থ্রি পিস টা।নেহা টুপ করে চেঞ্জ করে নিলো।চুল গুলো কে দু হাতে একটু চেপে দিয়ে বললো –,,এই চলো চলো বিয়ের জন্য রেডি আমি!
সেতারা বেগম এসে বললো–,,তোরে কি সাধে আমি গা’ধী বলি ছেম’ড়ি, আমাগোর সময় বিয়ার কথা হইলে মাইয়ারা লজ্জায় কারো সামনে যাইতেই পারতো না।আর তুই নাচতে নাচতে বলতেছিস বিয়ের জন্য রেডি,বাপু লজ্জা শরমের মাথা খাই’ছিস নাকি?
নেহা দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো–,,তুমি বুড়ি আদিম যুগের মানুষ আমি অতো লজ্জা ট’জ্জা পাই না।যাও তো এতো রাতে ঘুম বিস’র্জন দিয়ে যে বিয়ে করছি এটাই অনেক।
সেতারা বেগম কপাল চাপ’ড়ালেন নাতনিটা যে কি হলো।নাতিটার কপালে যে কি আছে কে জানে।নাতির পছন্দ ফেলতেও তো পারবে না।শেষে না পেরে বললেন–,,এই এটাকে অন্তত ঘোমটা দিয়ে নিয়ে আয়।
——-
অবশেষে নেহা কে নিয়ে আসা হলো,নিখিল টি শার্ট আর ট্রাও’জার পড়ে বসে আছে।নেহা ঘোমটা কে আঁকড়ে ধরে এসে সোফায় বসলো। হামিদা বেগম তাহমিদা বেগম দুজনই চিন্তিত।এমন নয় তাড়া বিয়েতে অখুশি,কিন্তু দুজনই ছেলে মানুষ, কেনো যে এসব হচ্ছে কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তাদের।
কাজি সাহেবের চোখে বেশ ঘুম।লোকটা তো’পের মুখে পড়ে চোখ জোড়া খুলে রেখেছে বুঝাই যাচ্ছে।ইতিমধ্যে ঘুম থেকে উঠে এসেছে বাড়ির বাকি সদস্যরাও।
কাজি সাহেব হাই তুলে বললো–,,সাইন করার বিষয় টা মানে কাবিন!
মফিজুর চৌধুরী বললো–,,আরে বাবা আর কতোক্ষণ ঘুম পেয়েছে আমার।
সেতারা বেগম বললো–,,চুপ আলসের ধারী!
শাহআলম চৌধুরী বললো–,,ওটা নেহার আঠারো বছর হলে বানাবো।আপনি ইসলামিক শরি’য়ত মোতা’বেক বিয়ে পড়ান হুজুর সাহেব!
নেহা নিশ্চিন্তে বসে আছে, নিখিল তার দিকেই তাকিয়ে কখন থেকে।হঠাই দুজনের ভাবনার ছে’দ ঘটলো যেনো।
কবুল বলতে বলা হলো নেহা কে,নেহা প্রথমে বুঝতে না পেরে বলে উঠলো–,,কি?
হুজুর আবার কাঙ্ক্ষিত বাক্যটি বললো–,,বিয়েতে সম্মত থাকলে বলুন মা কবুল!
নেহা দেরি করলো না এক মুহুর্তও না ফটাফট বলে উঠলো–,,কবুল,কবুল,কবুল!
নিখিল মুচকি হাসলো।কতোটা উতলা আর বাচ্চামো বৃদ্ধমান থাকলে একটা মেয়ে কবুল বলার সময় এতোটা তাড়াহুড়ো করতে পারে তার জানা নেই। নিখিলের পালা আসলে সে ধীরে সুস্থে কবুল বললো।সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠতেই হুজুর বললেন–,,বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে, আজ থেকে নেহা নিখিল দুজন স্বামী স্ত্রী!
নেহা থমকে গেলো কিছুক্ষণ, স্বামী!নিখিল তার স্বামী কথাটা কানে লাগলো যেনো। নতুন অনুভূতি টা ঠিক ঠাও”র করে উঠতে পারলো না মুহুর্তেই!
চলবে,,,,,