#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বিয়ে সম্পন্ন হতে না হতেই নেহাকে তার তিন মা মানে হামিদা বেগম,সাহারা বেগম,তাহমিদা বেগম মিলে টেনে নিয়ে গেলো রুমে।
নেহা তিনজনের দিক তাকিয়ে বললো–,,কি হলো টা কি তোমাদের আমাকে এভাবে নিয়ে আসলে কেনো?
তিন জা তে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন মেয়েকে এখন স্বামী সংসার নিয়ে বুঝাতে হবে!লজ্জায় পড়লেন বেশ,হামিদা বেগম আমতা আমতা করলেন কিছুক্ষণ। তাহমিদা বেগম হতাশার শ্বাস ছাড়লেন।
সাহারা বেগম দুজন কে বের করে দিয়ে নেহার কাছে গিয়ে বসলো। নেহা মনোযোগ দিলো অনেকটা,মনে হলো বিষয় টা বুঝতে হবে তার না হয় তিনজন তাকে এভাবে আনতো না।
সাহারা বেগম নেহাকে স্বামী নিয়ে বেশ কিছু কথা বললো,তার সব কথা শুনতে হয়,তাকে সম্মান করবি।আদর,যত্ন করবি,কখন খাবে কখন বের হবে খেয়াল রাখবি।দ্রুত আসতে বলবি,কোথাও গেলে জিজ্ঞেস করবি,তার শরীর স্বাস্থ্যর প্রতি যত্নশীল হবি।
নেহা সাহারা বেগম কে থামিয়ে দিয়ে বললো–,,থামো থামো এতো কাজ!
সাহারা বেগম মৃদু ধম’কের সুরে বললো–,,দূর বোকা এগুলো কাজ নয়,দায়িত্ব! একে অপরের দায়িত্ব নিতে হয়।বিয়ে মানে দুজন মানুষ কে শুধু একসাথে জুড়ে দেওয়া না।বিয়ে মানে একজন মানুষ অন্য জন মানুষের সুখ দুঃখের ভাগ নেওয়া,সুখে দুঃখে পাশে থাকা।দুজন দুজনের সব কিছুর খেয়াল রাখা।পছন্দ অপছন্দ সব কিছু জানা।একে অপর কে বিশ্বাস করা,আগলে রাখা ভালোবাসা! বুঝেছিস?আর স্বামীর আদর বুঝি….!
নেহা দু কান চেপে ধরে বললো–,,ছি!ছি!মেজো মা আর বলো না তো লজ্জা লাগে না নাকি আমার।
সাহারা বেগম হো হো করে হেসে বললো–,,আচ্ছা বাবা আর বলবো না,কাল থেকে নিখিলের সব দায়িত্ব তোর বুঝেছিস যা তো নিজের জামাই নিজে বুঝে নে বাপু।ছেলেটাকে আর সামলানো যাচ্ছে না!আঁচলে বেঁধে রাখ তুই!
নেহা নাক ফুলিয়ে বললো–,,তোমার যা ছেলে আঁচলে বাঁধতে গেলে উল্টো আমায় ধরে আ”ছাড় মা”রবে দেখো!
নেহা কে নিয়ে বের হলো সাহারা বেগম।বাহিরে দাঁড়িয়ে হামিদা বেগম।সাহারা বেগম জিজ্ঞেস করলো –,,আপা তাহমিদা কোথায়?
–,,সবার জন্য হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করতে গেছে।যা তুই নেহাকে জেরিনের কাছে দিয়ে আয়,ওকে বলবি নেহাকে নিখিলের ঘরে বসিয়ে রেখে আসতে।
নেহা বলে উঠলো–,,আমাকে না দিয়ে খেয়ে ফেলবে নাকি তোমরা।রাতে ও খাইনি ক্ষুধা লাগছে তো আমার।
বৃষ্টি এসে বললো–,,এই তোর না মাত্ররো বিয়ে হলো,এখনই খাই খাই শুরু করেছিস।
নেহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,ধুর।বিয়ের সাথে খাওয়ার কি সম্পর্ক?
নিঝুম এসে বললো–,,তাই তো কি সম্পর্ক নেহা তুই বেশি করে খা বুঝলি।যা একখান চেহারা তোর পাতিল উপুড় করে খেলেও মোটা হবি না!
নেহা মুখ ফুলিয়ে বললো–,,খাবোই না তোমরাই খাও।ঘুমাতে চলে গেলাম আমি।
সাহারা বেগম বললো–,,আরে রাতের বেলা কি শুরু করলি তোরা।এই নিঝুম যা তো গিয়ে ঘুমা মেয়েটাকে জ্বা’লাতে চলে এসেছিস এখানে।
নেহা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।নিখিল দেখলো শুধু।
বড়দের কথাবার্তা চললো অনেক সময়।নেহা কে নিখিলের রুমে বসিয়ে গেছে কখন না খাবার দিয়ে গেলো না কেউ আসলো।নেহা পেটে হাত দিয়েই গোছানো বিছানাটার মাঝখানে শুয়ে পড়লো। নেহার মনে হলো বিছানা টা বেশ আরামদায়ক ওরটাও ভালো তবে এটা একটু অন্যরকম কেমন সুন্দর গ্রান ভেসে আসছে রুম জুড়ে।ফুলের রুম স্প্রে দেয় নাকি লোকটা?নেহার সব আজগুবি চিন্তা সাথে তার বিখ্যাত ঘুম ঠিক এসে হা’না দিলো যেনো।নেহা ঘুমিয়ে পড়লো তখনই।
নিখিল আসলো শেষ রাতের দিক তখন ঘড়িতে সারে তিনটে বাজবে হয়তো।রুমটায় প্রবেশ করতেই সর্ব প্রথম নজরে এলো বিছানায় গুটিয়ে শুয়ে থাকা অগোছালো নেহাকে।ফিক করে হেসে ফেললো নিখিল!মুখ ভর্তি হাসি তার,প্রিয় মানুষ, সখের নারী,নাকি প্রথম ও শেষবারের জন্য যেখানে তার অস্তিত্ব থমকে গেছে তা,কি বলে আখ্যায়িত করবে নিখিল!আবেগের বয়স পার হওয়ার পর প্রথম ভালোলাগা এই মেয়েটি, তার ভালোবাসার সূচনা নেহা, সে চায় তার পূর্ণতায় ঘেরা উপসংহারেও নেহা থাকুক,নেহা থেকে যাক শুধু তার হয়ে।ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখতে চায় সে প্রেয়সীকে।নেহা শুধু নিখিলের কথাটা ভেবেই নিখিলের মন পুলকিত হলো স্নিগ্ধ ভালোলাগায়!
———
নেহা ঘুম থেকে উঠেই দেখলো সে কোথাও আটকা পরে আছে,ভালো করে পর্যবেক্ষন করার পর যা বুঝলো তাতে তার চক্ষু চড়কগাছ!সে নিখিলের বুকে,নেহা দিলো এক চিৎকার, নিখিল চোখ মেলেই আগে নেহার মুখ চে’পে ধরলো।মেয়েটা সকাল সকাল মানসম্মান সব শেষ করবে দেখা যাচ্ছে।
নেহা চোখ বড় বড় করে তাকালো, নিখিল চোখ পাকিয়ে তাকালো বললো–,,কি করছিস টা কি?কি সমস্যা!
নেহা ইশারা করলো মুখ থেকে হাত সরাতে।নিখিল হাত সরাতেই,নেহা বলে উঠলো–,,আরে ভাই এভাবে চেপে ধরে ঘুমিয়েছেন তো চিৎকার করবো না?কেউ দেখলে কি বলবে!
নিখিল ঠোঁট কাম’ড়ে হেসে উঠলো।নেহা তাকিয়ে রইলো অপলক, সে তার প্রশ্নের উত্তর পায়নি এখনো।নিখিল নেহাকে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,আমার বউকে আমি ধরেছি তাতে তোর কি?
নেহার কাল রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় নুইয়ে পড়লো।নিখিল আবারো ডেকে উঠলো–,,বউ!
নেহা এবার আরো বেশি লজ্জা পেলো আরো মিশে গেলো নিখিলের বুকের সাথে।
নিখিল বলে উঠলো–,,উত্তর পেয়েছিস?নাকি এখনও চিল্লাবি তুই?
নেহা কথা বলতে পারলো না,রাজ্যের লজ্জারা যেনো ঘীরে ধরলো তাকে।
———-
নিখিল নেহার মধ্যে সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিলো, মাঝেমধ্যে টুকটাক ঝগ’ড়া হলে তা আবার মিটিয়ে ও নিতো দুজনে।দুটোর এসব কাহিনিতে সবাই অভ্যস্ত ছিলো,সবাই ভেবেই নিয়েছে নতুন নতুন তাই একটু আকটু এরকম হবেই সময়ের সাথে সব মানিয়ে নিতে পারবে দুজনে।
কিন্তু সমস্যা টা শুরু হলো তখন,বিয়ের ছয়মাস পর,নেহা তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে।নিখিল বেশি ব্যস্ত রাজনীতি তে ভার্সিটির চাপ কম তাই সুযোগটাও বেশ পাচ্ছে,তবে সে ভুলেই বসতো তার জন্য কেউ অপেক্ষা করে বসে থাকে,কেউ একজন তার অনুপস্থিতিতে ছট’ফট করে, ওই একটা মানুষকে ফোন দেওয়ার সময় টুকুও যেনো তার হয় না।অনেকবার কল করার পর একবার রিসিভ করে,বেশি কল করলে কন্ঠে বিরক্তির সুর স্পষ্ট বুঝতে পারে নেহা।মেয়েটা ভিতরে ভিতরে তিব্র একাকিত্বে ভুগে,সে বুঝতে পারে কোথায় যেনো তার গুরুত্ব টা আর নেই।
নেহা ভাবে নিখিলের সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে তাকে।নেহা কি নিখিল কে বেশিই বিরক্ত করে নাকি?নেহার কোনো গুরত্বই নিখিলের কাছে নেই।
বেশ রাত করেই ফিরলো নিখিল,অন্য সময় নেহা ঘুমিয়ে পড়লেও আজ সে সজাগ জবাব চাই তার।
নিখিল আসলো,দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার মেজাজ খারা”প।নেহা নিখিল কে দেখলো একবার,নিখিল কে বিছানার কাছে চলে যেতে দেখেই নেহা বলে উঠলো–,,তোমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলা যাবে?
নিখিল বললো—,,কাল সকালে বল,এখন না।
নেহা বললো–,,সকালে তো তুমি ঘুমিয়ে থাকো, ডাকলে বিরক্ত হও।আমি আবার কলেজে যাবো।
নিখিল লম্বা শ্বাস টেনে বললো–,, বল কি বলবি?
–,,তোমার আমাকে কি মনে হয় বলোতো?মানে আমি কি তোমাকে বেশিই বিরক্ত করি?আমাকে কি তুমি নিজের জীবনে বোজা মনে করো?
নিখিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,রাতের বেলা এই ফালতু প্রশ্ন করার কি মানে নেহা?এতোগুলা ফোন দিয়েছিস একবার বলেছি ফোন দিবি না কাজে থাকি আমি।আজকে বড় একটা মিটিং হচ্ছিলো পার্টি অফিসে আর তুই কি করলি!
–,,তোমার কাছে পার্টি অফিসই সব তাই না।তাহলে আমাকে কেনো জড়িয়েছো নিজের জীবনের সাথে? আমাকে তো তুমি গণনায় ও ধরো না।
নিখিল রেগে বললো–,,ভুল হয়েছে আমার,তোর মতো একটা ইম”ম্যাচিউওর বাচ্চা মেয়ে কে বিয়ে করা ভুল হয়েছে আমার।তুই বুঝিস কম চিল্লাস বেশি,সবাই আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছে তোকে যা খুশি করিস।ওটা আমার কাজ নেহা,কেনো বুঝিস না তুই?এইযে তুই সারাদিন আমার পেছনে লেগে থাকিস কি পাস বলতো,উল্টো আমি বিরক্ত হই।কোথায় যাই,কি করি সব সময় গোয়েন্দার মতো লেগে থাকিস কেনো বলতো?তুই কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারিস না?আমি তো শুধু তোকেই ভালোবাসি।স্বাভাবিক ভাবে থাকতে পারিস না?যে যা বলে তাই কেনো শুনতে হবে তোর?
–,,আচ্ছা আর বিরক্ত করবো না তোমায়!বিয়ে করে যেহেতু ভুল হয়েছে,তাহলে ছেড়ে দাও আমাকে,তোমার পছন্দের শিলাকে বিয়ে করে নাও।এমনিতেও আমি তোমার যোগ্য না।একটা বাচ্চামো করা পাগ”লের ভোজ মাথার উপর আর রাখা লাগবে না!
–,,নেহা!বেশি কথা শিখেছিস আজকাল।শিলা শিলা, ও আমার কিচ্ছু না , পার্টি অফিসের সুবাধে ওর ভাইয়ের কাছে যাওয়া হয়,ওদের বাসায় ও দেখা হয়ও না সব সময়। আর তুই সব সময় শুধু সন্দেহই করিস।এভাবে কিন্তু কিছুই ঠিক হবে না আর।
—,,তুমি আসলে আমাকে ভালোবাসাই না তোমার খনিকের মোহ ছিলাম আমি,মোহ কে’টে গেছে এখন আর আমাকে মনেও পড়ে না তোমার।ম’রে গেলাম নাকি বেঁচে আছি কিচ্ছু যায় আসে না তোমার।যখন খুশি কাছে টানবে ছুঁয়ে দিবে ভালোবাসবে, আবার যখন খুশি দূরে সরিয়ে দিবে কেনো?বলোতো কেনো এমন করো,আমাকে কি মানুষ মনে হয় না তোমার,আমার কোনো অনুভূতি নেই?ভালো লাগা মন্দ লাগা নেই আমার?আমি তোমাকে জোর করি তা নিয়ে তোমার সমস্যা, জোর না করলে তো তুমি আমাকেই ভুলে যাও,বিরক্ত করা ছেড়ে দিলে যদি ভালো থাকতে পারো তো আর বিরক্ত করবো না।
নিখিল নেহার কথা গুলো শুনতে চাইলো না আর,তার বেশ গায়ে লাগলো নেহাকে ছুঁয়েছে বলে নেহা এভাবে কথা শুনাবে তাকে?নিখিল নেহার দু বাহু চেপে ধরে বললো–,,তোকে ছুঁয়ে দেওয়া তে এতো সমস্যা? আর ছুঁয়ে দিবো না যা নিজে ভালো থাক, আমাকে ও থাকতে দে।শান্তি চাই আমার,তুই তিন বেলা জবাবদিহি করতে করতে আমাকে এমন ফিল করাস যেনো আমি জেল বন্দি কোনো কয়ে’দি,এসব আর ভালো লাগছে না আমার নেহা। তোকে নিয়ে কোথাও যেতে পারি না আমি,একটু নিজেকে বদলাতে পারিস না?কবে বড় হবি,বয়স হয়েছে এখনো শুধু বাচ্চামো কেনো করিস কেনো?যা তো সামনে থেকে যা তোকে এখন অস”হ্য লাগছে আমার!
নেহা তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।ওর রুমটা এখন তালাবদ্ধ, কোথাও যাওয়ার জায়গা পেলো না যেনো,ভালোবাসায় যে এতোটা বিষাদ আগে কেনো বুঝেনি নেহা?বুঝাপড়া করা যে এতোটা কঠিন।প্রিয় মানুষটার এতো কঠোর রূপ সহ্য করা যায় বুঝি?ভালোবাসায় পরিপূর্ণ তনু মন ভেঙ্গে যায় বার বার কতোবার জোড়া লাগানো যায় তাকে!
হামিদা বেগম নিখিলের চিল্লানোর আওয়াজ শুনেছে তার পর নেহাকে ছাদের সিঁড়ির দিক যেতে দেখলো,তার কথাটাই ঠিক হলো,ছেলে মেয়ে দুটো নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি,একজন ক্যারিয়ারের পেছন ছুটছে, আরেকজনের মন মানতে চায় না এসব,সে তো আবেগী!আহ্লাদী মেয়েটা কতোটা কষ্টে আছে,কি করে ঠিক করবেন এসব।আগেই বলেছিলো সময় টা কাটিয়ে উঠুক দুজনই বড় হোক না, দুই ভাই বেশি বুঝলো,নিখিল নাকি ঘরমুখো হবে বিয়ে করলে মাঝখান থেকে মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে,ছেলেটাও তো গোঁয়ার হয়েছে বংশের এক চুলও বাদ রাখেনি নিজের মধ্যে ধারন করতে।
হামিদা বেগম নেহার মাথায় হাত রাখলো সিঁড়িতে বসে আছে মেয়েটা হাঁটুতে মুখ গুঁজে, হামিদা বেগম কে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
কাঁদতে কাঁদতে বললো–,,বড় মা,তোমার ছেলেটা এমন কেনো বলোতো।সব সময় শুধু কষ্ট দেয়!
হামিদা বেগম নেহাকে কাঁদতে দিলেন মনটা যদি একটু হালকা হয়।নেহার কান্না কিছুটা কমে আসতেই তিনি বললেন–,,কাঁদে না বোকা মেয়ে, নিখিল রেগে ছিলো,তাই এমন করেছে।তুই আর ওই ছা’গলটার জন্য এতো ভাববি না,নিজের জীবন গুছিয়ে নে মা।পড়াশোনায় মনোযোগী হ অনেক বড় হবি, দুজনই বুঝতে পারবি সব কিছু,পৃথিবীতে কোনো কিছুই কারন ছাড়া হয় না,হয়তো এগুলো ভালোর জন্যই হচ্ছে।যখন তুই আর একটু বড় হবি বুঝতে শিখবি তখন দেখবি তোদের মাঝে আর কোনো সমস্যাই থাকবে না সব ঠিক হয় যাবে।তুই ওকে ওর মতো ছেড়ে দে,দেখবি আবার তো কাছেই ফিরে আসবে।
নেহাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বৃষ্টির ঘরে দিয়ে আসলেন হামিদা বেগম।কি যে করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না।বিয়ে তো কোনো ছেলেখেলা না চাইলাম আর ভেঙ্গে দিলাম আবার কিছু দিন পর জুড়ে দিলাম!
———–
নিখিল সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্বভাব বসত নেহাকে খুঁজলো, নেই।রাতের কথা ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো, মাথা টা যে কেনো গরম হয় ওর,ও তো জানে নেহা ছেলেমানুষী করে তার পরেও,ঘড়িতে সময় দেখলো এগারোটা, নেহা তো ততক্ষণে কলেজে চলে গেছে।নিখিল ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো,খেতে ইচ্ছে হলো না আর।বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
বৃষ্টি আর নেহা হাঁটছে রাস্তা দিয়ে, বৃষ্টি অনেক কথা বলছে শুধু নেহা চুপচাপ।
বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো–,,আমারে রুমে আসলি যে রাতে?
–,,তোর ভাইয়া আসেনি, একা ঘুমাতে বিরক্ত লাগছিলো তাই তোর রুমে গিয়েছিলাম।আচ্ছা শোন সামনে তো পরীক্ষা আমার এখনো অনেক পড়া বাকি কিছু হেল্প করিস তো।
দুজনই বাড়ি ফিরলো রোদ মাথায় নিয়ে।
,,,,,,,
সব কিছুই স্বাভাবিক থাকলো,শুধু দিন দিন হাহাকার জমলো নেহার মনে,মাঝেমধ্যে নিখিলের ছোটখাটো কেয়ার গুলোতে মেয়েটা খুশিতে ফে’টে পড়ে।আবার কখনো কখনো অবহেলা গুলো যেনো বেশিই প্রাধান্য পেয়ে বসে!
নেহা নিখিলের সাথেই থাকে, নিখিল এখন রাগ কম করে নেহা দুষ্টুমি কমায়নি করে তবে কম কম।নিখিলও মানিয়ে নিচ্ছে,নেহাও।নেহা অল্পতেই সব ভুলে যেতো, নিখিলে অল্প আদরে, যত্নেই গলে জল হয়ে যেতো,ভালোবাসায় হয়তো মানুষ এমনিই হয়,সব টুকু দিয়ে ভালোবাসলে প্রিয় মানুষটার দেওয়া শত কষ্টও ভুলে যাওয়া যায় নিমেষেই!
——-
নেহার পরীক্ষা শেষ হলো কিছুদিন, নিখিল ইদানীং বেশ ব্যস্ত সাব্বির ও মাঝেমধ্যে আসে তার থেকেই খবর পায় নেহা,সাব্বিরের বাবার বিপক্ষে নাকি দাঁড়াবে সোহেল!এ কথা শোনার পর নিখিল বেশিই চিন্তিত।এদিকে এতোদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।আবার সাব্বিরের বাবা রবিকুর রহমানের দলের লোক সে।রাজনীতির মার””পেঁচে একবার আটকে গেলে আর নিস্তার নেই যেনো!
——-
নেহা আজ সকাল থেকেই খুশি,বেশ আনন্দে আছে মেয়েটা,সকাল থেকেই অনেক তোড়জোড় করে রান্না করেছে,পারেনা তাও যা পেরেছে নিখিলের পছন্দ মতো রান্না করে টেবিলে রেখে সবাইকে থ্রে’ট দিয়ে বলে গেছে–,,কেউ এই খাবারে হাত দিবে না একদম!
কিন্তু নিখিলের আসার খবর নেই,নেহা দুপুরে খেয়ে নিয়েছে,নিখিল আসলেই তাকে খেতে দিবে।এতো বেশি খুশি হওয়ার কারন ও কাউকে বলেনি,সবাইকে বলেছে এমনি আজ খুশি খুশি লাগছে,তোমরা শুধু প্রশ্ন করো কেন?আমি কি একটু হাসতেও পারবো না নাকি!
নিখিলের অপেক্ষায় মেয়েটা দুপুরে বারান্দার দোলনায় বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
নেহার ঘুম ভাঙ্গলো পর পর আসা নোটিফিকেশনের আওয়াজে,কতোবারই নিখিল কে নিয়ে কতো কথা শুনেছে নেহা,প্রমান দেখাতে আসলেও বিশ্বাস করতো না,নিখিলকেই বেশি বিশ্বাস করে মেয়েটা। কারো কথায় কান দিতো না তবুও প্রেমিকা মন শুধু খচখচই করতো।নিজেকে কতোবার ধমকেছে সে,তার উপর আবার নিখিল থাকে দূরে দূরে তাকে পাওয়াই যায় না।নেহার তো মাঝে মধ্যে বলতে ইচ্ছে হয় তোমার এমন ভালোবাসা জাদুঘরে বাঁধাই করে রাখার মতো নিখিল মেহমেত চৌধুরী!
নেহা নোটিফিকেশনে ক্লিক করলো,হোয়াটসঅ্যাপে কতো গুলো ছবি আর ভিডিও এসেছে।কয়েকটা দেখেই হাত থেকে মোবাইল টা ছিটকে নিচে পড়ে গেলো।নিজেই কয়েকবার বলে উঠলো–,,এটা নিখিল হতেই পারে না।তার নিখিল এমন না এ সব কিছু মিথ্যা সব কিছু ভুল!
নেহার ফোনটা তখনই বেজে উঠলো, কাঁপা হাতে মোবাইলটা নিলো ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠলো–,,নেহা আমি শিলা!যা যা পাঠিয়েছি সব কিছুই সত্যি। বিশ্বাস করো, কোনো মেয়ে তার সম্মান নিজে থেকে নষ্ট করবে না এটা তো তুমি জানো নিশ্চয়ই? নিখিলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে আর তা কতোটা গভীর এগুলো দেখলেই তুমি বুঝতে পারবে আশা করি!
যদি বিশ্বাস না হয় নিখিলের থেকে জেনে নিও!
নেহা বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।কান্না আসছে না তার,নিখিল সব বলবে মানে?তার মানে কি সব সত্যি?বিশ্বাস করতে পারছে না নেহা।সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগছে তার কাছে,নিখিল তাকে ঠকালো!এভাবে?না না এসব কিছু মিথ্যা নিখিল বলবে এসব মিথ্যা কিছুই আসল নয়।
নেহা মোবাইল হাতে নিয়ে নিখিল কে কল করলো।বেশ কয়েকবার করলো। না ধরলো না ফোনটা ধরলোই না!
নেহা ছ’টফট করতেই থাকলো, নিখিলের অপেক্ষায় সে।
সেই কাঙ্ক্ষিত মুহুর্ত আসলো নিখিল বাড়ি আসলো, নিখিল রুমে ঢুকতেই নেহা মোবাইলটা আগে বাড়িয়ে দিয়ে বললো–,,এগুলো কি সত্যি?
নিখিল মোবাইল টা দেখে তার মাথা যেনো আরো গরম হলো সে বলে উঠলো—,,তুই এগুলো বিশ্বাস করেছিস?এই তোর বিশ্বাস এই তোর ভালোবাসা!
নেহা আজ রাগলো রাগ দেখিয়েই বললো–,,সত্যি টা জানতে চেয়েছি আমি,জবাব দেও,সব সময়ের মতো এরিয়ে যেতে পারবে না, আমার অধিকার আছে জানার,তোমাকে আমি সন্দেহ করিনি কারন তোমাকে আমি নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি,কিন্তু আর কতোদিন? অন্য ছেলেদের নিয়ে তো কোনো মেয়ে কথা বলতে যায় না,শুধু তোমাকে নিয়েই কেনো বলে সব কিছুই কি কাকতালীয়? তোমার ভার্সিটির বাকি সবাই জানে শিলার সাথে তোমার সম্পর্ক আছে,এটাও ভুল।সবাই ভুল শুধু নিখিল ঠিক তাই না।আজকে তো প্রমান ও পেয়ে গেলাম না চাইতেও,এমন কিছু দেখতে হবে জানলে কোনো দিন ও প্রমান দেখতাম না আমি।তুমি ওই মেয়েটার সাথে অন্ত”রঙ্গ হয়ে বসে থাকবে,ওই মেয়েটাকে ছি!ছি!এসব করার আগে আমাকে বলে দিলে না কেনো তোমাকে পুরোপুরি যেতে দিতাম,লুকিয়ে করার কি ছিলো?
নিখিল নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না,নেহার গালে কষি’য়ে এক চ’ড় বসিয়ে দিলো।নেহা কাঁদলো না নিখিলের দিক তাকিয়ে রইলো শুধু।
নেহা আবার জিজ্ঞেস করলো–,,সব সত্যি তাই না?
নেহার মনে হলো তার কলি’জায় কেউ আঘা’ত করছে বার বার,প্রশ্ন টা করতে বার বার গলায় আটকে যাচ্ছিলো।নিখিল কি সত্যি এসব করেছে?এখনই না করবে বলবে না এসব করিনি আমি, সব মিথ্যা।
নিখিল নেহার দিক তাকিয়ে বললো–,,হ্যাঁ সব সত্যি, তুই আমাকে যা ভাবিস তাই সত্যি যেহেতু তুই এসব কিছু সত্যি ভেবে নিয়েছিস তোর বিশ্বাস এখানেই সীমাবদ্ধ তাহলে সব সত্যি। আর কিছু জানতে চাস?
নেহা বিমুঢ় হয়ে চেয়ে রইলো,নেহার হৃদয়ের তীব্র যন্ত্র’ণা টা কি তার প্রিয় মানুষ টা বুঝলো না?বুঝলে কি এই নির্মম কথাটা এতো সহজে বলতে পারতো?পারতো!হয়তো পারতো না।
নেহা নিখিল কে ডেকে বলে উঠলো–,,চলে যাচ্ছো?নাকি পালাচ্ছো?তোমার সাথে আমার আর কোনো দিন দেখা না হোক নিখিল,তোমাকে আরেক বার দেখলে হয়তো আমি এসব আর মেনে নিতে পারবো না সহ্য করতে পারবো না।তোমার সকল যাতনা সহ্য করেছি সব অবহেলা মেনে নিয়েছি তার মানে এই না ছলনাও মেনে নিবো।নেহা যদি তোমাকে এক সমুদ্রের গভীরতার থেকেও বেশি গভীর ভাবে ভালোবাসতে পারে তবে মনে রেখো এক আকাশ সমান ঘৃ”ণা ও তোমার জন্য পুষতে পারবে!
আজকে তোমাকে আটকাবো না চলে যাও,তুমি চলে যাও আর ফিরে এসো না প্লিজ!
নিখিল পিছু ফিরে তাকালো না সে চলে গেলো।যদি ফিরে চাইতো তাহলে হয়তো দেখতে পেতো তার প্রিয় মানুষ টার হৃদয়টা সে কতো যত্ন সহকারে ভেঙ্গেছে,ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মানুষটা যত্নে আদরে গড়ে তোলা বিশ্বাসের ভিত!
রুমে তখনই আসলো তাহমিদা বেগম সব কিছুই সে
শুনেছে দেখেছে।নিজের মেয়েকে দেখে মায়ের মনটা কেঁদে উঠলো মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তিনি।
শহিদুল চৌধুরী বাড়ি ফিরলো রাত আটটা তাহমিদা বেগম বসে আছে ঘরে, তার সাথে নেহা,রাহা।
নেহা চুপচাপ এককোনে বসে আছে,বিধ্ব’স্ত অবস্থা তার।
শহিদুল চৌধুরী কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তাহমিদা বেগম বললো–,,তুমি কি নেহা আর নিখিলের ডিভো,র্স করাতে সাহায্য করবে?
শহিদুল চৌধুরী অবাক হয়ে বললো–,,কি বলছো এসব?
তাহমিদা শান্ত কন্ঠে বললো–,,নিখিল আমার মেয়ের জন্য ঠিক নয় তাই বলছি। নেহা নিখিল আলাদা হলে আমরাও এখান থেকে চলে যাবো,যেখানে আমার মেয়ে কষ্টে থাকবে সেখানে কিছুতেই ওকে রাখবো না আমি।তোমার কথায় সিদ্ধান্তে বিয়ে দিয়েছি কি লাভ হলো তাতে?উল্টো প্রতিটা দিন আমার মেয়ে কষ্টে থাকে মা হয়ে এসব মেনে নিতে পারবো না আমি।
–,,পাগ’ল হয়েছো তাহমিদা?মেয়ের সংসার আমাদের পরিবার ভাঙ্গার কথা বলছো তুমি?মেয়েকে বুঝাও মেনে নিতে বলো নিখিল ভালো ছেলে, নেহা তো খারা’প নেই ভালোই তো আছে।
–,,তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো না?নেহা ভালো থাকলে কি ওকে আমি দূরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতাম?আচ্ছা আমার মুখের কথা বিশ্বাস করতে হবে না, নেহা কে জিজ্ঞেস করো নেহা কি চায়!
নেহা বলে উঠলো–,,আমি এখানে থাকতে চাই না বাবা।আমি নিখিলের সাথেও থাকতে চাই না।আমি শান্তি চাই!
শহিদুল চৌধুরী বলে উঠলো–,,নেহা বাচ্চাদের মতো কথা বলবে না,নিখিলের সাথে থাকতে চাও না মানে?সংসার কি চাইলেই ভাঙ্গা যায়?উল্টো পাল্টা কথা বলবে না, নিখিল একটু রাগী তাই বলে কি তুমি মানিয়ে নিতে চাইবে না চেষ্টা টুকু করবে না?পরিবার ভাঙ্গার কথা বলছো তুমি?বলবেই তো সবাই তোমাকে আদর দিয়েছে বেশি, সখ আহ্লাদ কি পুরন করেনি তোমার, এখন তুমি ওই পরিবার টাকেই ভাঙ্গতে চাচ্ছো কেনো?
তাহমিদা বেগম চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,তোমার পরিবার? কে কারা তোমার পরিবার আমাদের চোখে পড়ছে না তোমার?আমরা তোমার কেউ নই?আমাদের প্রতি দায়িত্ব নেই?মেয়েকে মানিয়ে নিতে বলছো?কারন ছেলেটা তোমার ভাইপো?অন্য ছেলে তোমার মেয়ের সাথে খারা’প কিছু করলে মেনে নিতে?তোমার বোনের সাথে করলে মানতে?পারবে কেনো?তোমাকে আমার চেনা আছে ভীতুর ডিম একটা,তোমাকে দরকার নেই আমার মেয়েকে আমি একাই সামলে নিবো তুমি থাকো তোমার পরিবার নিয়ে!
–,,না বুঝে কথা বলবে না একদম।কখন বললাম তোমরা কেউ না,শুধু বলেছি পরিবারের বাকিদের সাথে মানিয়ে নিতে তোমার মেয়েকে তো কিছু শিখাও নি, হয়েছে একটা এখন সংসার করতে চায় না তুমিও তার সাথে তাল মিলাচ্ছো,পারলে গিয়ে দেখাও অন্য কোথাও!কখনো তো বাহিরের জগৎ দেখোনি তোমরা,যাও দুনিয়া চিনে আসো আটকাবো না!
তাহমিদা বেগম স্বামীর দিক চেয়ে রইলো এভাবে বলতে পারলো?নেহা বলে উঠলো–,,মানুষ চিনতে পেরে গেছি বাবা দুনিয়া ও চিনে নিবো!
নেহা বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে,তাহমিদা বেগম সাথে রাহাও!
খাওয়া দাওয়া হয়নি এখনো কারোও যে যার রুমে কাজে ব্যস্ত তাহমিদা বেগম দুই মেয়ের হাত ধরে বললো–,,আমার সাথে যাবি দুজন?না চাইলে এখানে থাকতে পারিস,যে মানুষ টার জন্য এখানে এতোদিন থাকলাম সে আজ আমাকে বেছে নেয়নি,আমার কথাটার গুরুত্ব দেয়নি, সন্তানের বিপদে যে বাবার মন কাঁদেনি সে বাবার কাছে তোদের রেখে যেতে চাই না আমি,যদি চাস থাকতে পারিস!আমার সাথে আয় খেতে দিতে না পারি কথা দিচ্ছি কষ্টে রাখবো না।
নেহা,রাহা কে নিয়ে বেরিয়ে এক কাপড়ে,এতোদিনের মায়া একদিনে কাটিয়ে তোলার মতো শক্তি হয়তো একজন মায়ের শক্তির কাছে ফিকে পড়ে যায়।
———–
নিখিল বসে আছে রাহাত,মিহির,সাহিল তার সামনে বসা।নিখিলের থেকে সব কথা শুনে মিহির বিরক্ত হয়ে বললো–,,তুই আসলে একটা রামছা’গল।কি করে এসেছিস এসব,নেহার জায়গায় যদি তুই থাকতি ওর এরকম কোনো ছবি দেখতি কি বলতি তুই তখন,তুই মেয়েটাকে বুঝানোর বদলে উল্টো বলে এসেছিস সব সত্যি। তুই আসলেই ওর কদর করতে পারিসনি,সহজে পেয়ে গেছিস ভেবেছিস যা খুশি করবি,মেয়েটার উপর দিয়ে কি গেলো একবার ভেবেছিস?এই যে তুই ওকে ইগনোর করিস,যা খুশি করিস ও কেনো এসব মেনে নেয় কারন ও তোকে ভালোবাসে।তুই কি যেনো বলিস তুই নেহা কে ভালোবাসিস?আমার মনে হয় তুই ওকে ভালোবাসা তো দূর মানুষই মনে করিস না।
রাহাত বলে উঠলো–,,আরে থাম না ভাই।সমাধান করবি কিভাবে ওইটা ভাব।
সাহিল বলে উঠলো–,,কি ছাই পাশ সমাধান করবে,নেহা ওকে আর বিশ্বাস করবে নাকি?দুই দিন পর পর শুধু ঝা’মেলা করে মেয়েটার সাথে, থাকতে মূল্য দে না হয় হারিয়ে গেলে বুঝবি তুই!
নিখিল বলে উঠলো–,,আমার ভুল হয়ে গেছে।মাথা গরম ছিলো আর ওগুলো তো এডিট করা ছবি!ও কি করে ভাবলো সত্যি।
মিহির বললো–,,তুই হলে কি ভাবতি?
নিখিল চুপ হয়ে গেলো নেহাকে আজ ও চ’ড় মেরে’ছে মেয়েটা কতোটা কষ্ট পেয়েছে,ও সব সময় শুধু নেহাকে কষ্টই দিয়েছে না চাইতেও!নিখিল নিজের চুল টেনে ধরলো দু হাতে।নিজেকে খুব অস”হ্য লাগছে এখন।পরবর্তীতে নিজেকে বুঝ দিয়ে বললো–,,না না আমার নেহা আমাকে বুঝবে ওর কাছে আজই ক্ষমা চাইতে হবে!
নিখিল উঠে দাঁড়ালো রাহাত বললো–,, কই যাস?
–,,বাড়িতে নেহার কাছে মাফ চাইতে!
তিনজন আর ওকে আটকালো না নিখিল বাড়ি ফিরলো দ্রুত সব জায়গায় নেহাকে খুঁজলো,বসার ঘরে সবাইকে বসে থাকতে দেখে সেখানে গিয়েও জিজ্ঞেস করলো, জবাব দিলো না কেউ, এর মধ্যই শাহআলম চৌধুরী এসে নিখিলের গালে একটা থাপ্প’ড় বসিয়ে দিলো, পর পর তিন চারটা মার’লো আজ কেউ আটকালোও না!
নিখিল সবার মুখের দিক তাকিয়ে আছে।নিখিল জিজ্ঞেস করলো–,,নেহা কোথায়?
হামিদা বেগম বললো–,, বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে!
নিখিল জিজ্ঞেস করলো–,,কোথায় গেছে!
শহিদুল চৌধুরী বলে উঠলো–,,রাগ হয়েছে চলে গেছে আবার রাগ কমলে চলে আসবে,মেয়েটা একটু বেশি বুঝে নিখিল কে কেউ কিছু বলবে না।আর তাহমিদাও মেয়ের হয়ে কথা বললো।ওদের খোঁজ করবে না আর কেউ!
হামিদা বেগম বললো–,,কি বলছেন এসব ভাই।রাতের বেলা কোথায় গেলো তিনজন?চিন্তার বিষয় তো।
নিখিল বলে উঠলো–,,নেহার কোনো দোষ নেই সেজো আব্বু সব দোষ আমার।আমি ওর গায়ে হাত তুলেছি!
হামিদা বেগম তেতে উঠে বললেন–,,ছি!তোর মতো ছেলে কে কি করে পে’টে ধরেছি আমি,জন্মের আগে ম’রে গেলি না কেন তুই,ওই ফুলের মতো মেয়েটাকে মারা’র আগে হাত কাঁপলো না তোর!আমাকে কোনো দিন আর মা ডাকবি না তুই।
——————-
_________________বর্তমান__________________
জেরিন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো–,,তার পর বাড়িতে অশান্তি হলো,ভাইয়া রাজনীতি ছেড়ে দিলো।নেহাকে খুঁজলো সব জায়গায়,নেহা মামার কাছে টানা দুই বছর গিয়েছে নেহা কোথায় তা জানার জন্য লোকটি বললো না।তিনি জানতো তার পরও বলেনি,ভাইয়া কে নেহার শূন্যতা রোজ রোজ কুঁড়ে কুঁড়ে খে’তো,ভাইয়া নেহার জন্য কতোটা ছ’টফ’ট করেছে তা আমরা দেখেছি।ভাইয়া নেহা থাকতে তাকে মূল্য দেয়নি,হারিয়ে যাওয়ার পর বুঝেছে কি হারিয়েছে সে।যে পরিবার ভাঙ্গার ভয়ে ওইদিন সেজো আব্বু সেজো মায়ের কথার গুরুত্ব দেয়নি দেখ আমাদের সেই পরিবার আজও ভাঙ্গা শুধু তিন জন মানুষের অনুপস্থিতিতে!
দোষটা আসলে একপক্ষের না দুজনেরই,নেহা ও অবুঝ ছিলো তবে ভাইয়ার দোষটা বেশি এখানে, তাকে মেয়েটা বুঝতে চাইলেও ভাইয়া বুঝতেই চায়নি নেহাকে।তাই আজ এতো কিছু হচ্ছে।জানি না এসব কবে ঠিক হবে!
বাকি ভাই বোনরাও চুপসে গেলো পিনপতন নীরবতা চললো বেশ কিছুক্ষণ ফজরের আজান পড়লো বলে,আবারো সবাই নতুন এক সকালের অপেক্ষায়!
চলবে……