প্রণয়ের সুর ২ পর্ব-১৩+১৪

0
1096

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১৩
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নেহা কে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে গেলেন তাহমিদা বেগম।হামিদা বেগম নিরুপায় হয়ে ছিলেন, যেখানে মেয়েটাই তার বাড়িতে যেতে চায় না সেখানে কোন মুখে বলবেন বাড়ি চল।

হামিদা বেগম বাড়ি ফেরার পর সবাই অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,নেহা কেমন আছে?তুমি সকাল সকাল এসে পড়লে কেনো?

হামিদা বেগম যেনো এখনো শ’ক থেকে বের হতে পারলেন না।কি থেকে কি হলো তার একটা নাতনি আছে এ কথা সে কিনা এতোদিন পর জানলো!সবাইকে কি ভাবে এই সত্যি জানাবেন তিনি, আগে তো ছেলেকে বলতে হবে।
তিনি ছোট করে সবাইকে বললো–,,নেহা তাহমিদার সাথে ওদের বাসায় চলে গেছে।

কথাটি বলেই তিনি রুমে চলে গেলেন।শাহআলম চৌধুরী স্ত্রীর মনোভাব কিছুটা আচ করতে পারলেন।

শেষ রাতে সব ভাইবোন রা আর বাড়ি ফিরেনি,সব গুলোতে সাব্বিরদের বাড়িতে ঘুমাচ্ছে।সাহারা বেগম একা হাতে নাস্তা বানাতে ব্যস্ত হলেন।হামিদা বেগম সারা রাত জেগে ছিলো তাকেও তো বলা যায় না,তার উপর তাকে কেমন অন্য মনস্ক লাগছে।সেতারা বেগম রান্না ঘরের বাহিরে দাড়িয়ে বলে উঠলো–,, সাহারা সব পারবি তো আমি আসবো?

সাহারা বেগম ব্যস্ত কন্ঠে বললো–,, না না আম্মা।কলি আপা আছে তো, সব কিছু রান্না তো প্রায় শেষ আপনি গিয়ে বিশ্রাম নিন।

ঘড়িতে সকাল দশটা হাই তুলতে তুলতে বাসায় ঢুকলো সব গুলোতে।মিলি বেগম রুমে গিয়েই আবার ছুটে আসলেন রান্না ঘরের দিকে।গিয়েই সাহারা বেগম কে বললো–,,স্যরি স্যরি মেজো আপা ভোরে ঘুমিয়েছি তো সজাগ পাইনি।

সাহারা বেগম একটু রাগ দেখিয়ে বললো–,,আপা ডাকিস আবার স্যরি ও বলিস ভালোই তো।যা গিয়ে বস খাবার দিতেছি সব গুলোকে,বড় আপার যে কি হলো খেতেও আসলো না, তোরা বস আমি গিয়ে দেখছি।

মিলি বেগম হেসে গেলো সবাই কে খাবার দিতে।

শাহআলম চৌধুরী কখন থেকে হামিদা বেগম কে দেখছে।কখন থেকে সে বারান্দায় বসে আছে।

এবার অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,বলবে কি হয়েছে তোমার?

হামিদা বেগম তাকালেন একবার।শাহআলম চৌধুরী এসে পাশে বসে বললো–,,অফিসে তো যাইনি এখনো,যদি মুখ এমন ভার করে রাখো তবে কি করে যাই বলোতো?

হামিদা বেগম শাহআলম চৌধুরী কে আরো অবাক করে দিয়ে হেসে বললো–,,চলো নাতনিকে দেখে আসি!

শাহআলম চৌধুরী অবাক হয়ে বললো–,,নাতনি?কার নাতনি দেখতে যাবে শুনি।

–,,কার আবার আমাদের নাতনি,নিখিলের মেয়ে যাবে কিনা বলো?

শাহআলম চৌধুরী হতবাক হয়ে চেয়ে রইলেন।কিছু সময় পরই বললো–,,চলো যাই।

হামিদা বেগম বললো–,,প্রশ্ন করলে না যে?

–,,সব প্রশ্ন করতে হয় না হামিদা,তোমাকে এতোবছরে কম চিনি নি আমি।নেহারা কোথায় থাকে এখন জানো তুমি?

–,, জানি চলো।
—————-
সোহানা সুস্থ হলো জ্ঞান ফিরলো মেয়েটার।জ্ঞান ফিরেই চোখের সামনে পুলিশ দেখে মেয়েটা বেশ ভয় পেলো।

সোহানা কে ভয় পেতে দেখে দ্রুতই ইরফান বলে
উঠলো–,, ম্যাম ভয় পাবেন না!দুই দিন ধরে আপনি অসুস্থ বিষয় টা গুরুতর না হয় এভাবে আসতাম না।

সাহিল তখন কেবিনে আসলো,পেছনে আরুশি।

আরুশি কে ইরফান ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখলো।আজকেও চুল গুলো এলোমেলো। অদ্ভুত মেয়ে একটা।

সাহিল ভিতরে এসেই প্রথমে জিজ্ঞেস করলো–,,সোহানা আপনি ঠিক আছেন?

সোহানা মাথা নাড়লো।ইরফান সাহিলের দিক তাকিয়ে বললো–,,সাহিল আপনি প্রশ্ন গুলো করেন,একজন ডক্টর হিসেবে আপনিই ভালো বুঝবেন।আমি সব নোট করছি।

সোহানা জিজ্ঞেস করলো–,,কি প্রশ্ন? আর আমার কি হয়েছিল!

সাহিল বেডের পাশে চেয়ারে বসলো সোহানার দিকে তাকিয়ে বললো–,,তুমি পাশের হসপিটালে কোন ডক্টর দেখাচ্ছিলে?আর কেনো?

সোহানা ইতস্তত করলো কিছুক্ষণ, বিষয় টা সাহিলের নজর এরালো না সে সোহানা কে আস্বস্ত করে বললো–,, গাইনে”কোলজিস্ট?

সোহানা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

–,,কোন ডক্টর? আর কতো দিন ধরে ঔষধ নিচ্ছো তুমি?

সোহানা ভেবে বললো–,,ডক্টর শেলি জামান।আর আমি তো প্রায় ছয়মাস ধরে ঔষধ খাচ্ছি।

সোহানা ঔষধের নাম ও বললো তা শুনে সাহিলের কপালে ভাজ পড়লো।এ ঔষধ তো ড্রা’গ ডক্টর হয়ে এমন কাজ!

ইরফান সাহিলের সাথে বাহিরে গেলো দুজনের মধ্যে কথা হলো কিছুক্ষণ।
সাহিল সোহানার কাছে গেলো গিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,তোমার বাড়ির কেউ কি আছে?হসপিটালে আছো কেউ আসলো না পর্যন্ত!

সোহানা লম্বা শ্বাস টেনে বললো–,,মা গ্রামে থাকে, তাকে জানানোর দরকার নেই অযথাই চিন্তা করবে।

সাহিল সোহানা কে এখনই সব কিছু বলতে চাইলো তার পরে কি ভেবে যেনো বাহিরে চলে গেলো।

সোহানা ভাবলো হসপিটালে ছিলো এতোদিন, না জানি কতো বিল দিতে হয় আবার।কি ভাবে সব ম্যানেজ করবে।

ইরফান হসপিটালে আরুশি খুঁজলো মেয়েটা যেনো চোখের পলকেই হাওয়া হয়ে গেছে,সোহানার কেবিনেও তো নেই।আসলো আবার গেলো কই!
———-
নিখিল বাড়ি আসলো,বাড়িতে এসে দেখলো সবাই বসে আছে বসার ঘরে বিকেল তখন।

নিখিল সবার দিকে একবার তাকালো জিজ্ঞেস করলো-,, মা বাবা কে দেখছি না যে?

সেতারা বেগম বললো–,,জানি না কই যেনো গেলো দুজন
শাহআলম তো আজকে অফিসেও গেলো না।

নিখিল জানে নেহা হসপিটাল থেকে চলে গেছে,এতো জে’দি এ মেয়ে।হসপিটালে আর একদিন থাকলে কি এমন হতো,নিখিল আজকেই যাবে ধরে বেঁধে যেভাবে পারে বাসায় নিয়ে আসবেই।পাখা গজে,ছে একদম কে’টে ঘরে বসিয়ে রেখে দেওয়া উচিত।

নিখিল হনহনিয়ে বাসা থেকে আবার বের হয়ে গেলো সেতারা বেগম বললো–,,আবার কই যাস সারা দিন তো বাড়ির বাহিরেই থাকিস, একবেলাও তো খাস না কি শুরু করেছিস বলতো।

নিখিল গম্ভীর হয়ে বললো–,,তোমার নাতনী কে আনতে যাচ্ছি।সে যদি বাড়ি থাকে আমিও থাকবো,বলে রাখছি যদি এবার বারাবারি করে না তোমার নাতনীর খবর আছে!

সেতারা বেগম কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেলো নিখিল।

——
বসার ঘরে সোফায় বসে আছে শাহআলম চৌধুরী তার কোলে বসে নামিরা চকলেট খাচ্ছে।

নেহা অপর পাশে বসে আছে, শাহআলম চৌধুরী করুন কন্ঠে বললো–,, কেনো এতো টা নির্দ’য় হলি মা?আমার আগের নেহা মায়েতে মায়ায় ভরপুর ছিলো, এই বুড়োটার উপর একটু দয়া দেখাতে পারলি না?আমার থেকেও লুকাবি আমার একটা বোন আছে?কাজ টা কি ঠিক করেছিস তুই?

তাহমিদা বেগম এক পাশে দাড়িয়ে শাহআলম চৌধুরী তার দিকে তাকিয়ে বললো–,,তাহমিদা তুমি ও বললে না?নেহা তো ছেলেমানুষ!

তাহমিদা ধীর কন্ঠে বললো–,,কি করতে পারি আমি ভাইজান,মেয়ের মা ই তো তার কথা কাউকে জানাতে চায়নি!আমিও আমার মেয়ের সিদ্ধান্ত কে সম্মান করেছি।

নামিরা ডেকে উঠলো–,,দাদু ভাই।

শাহআলম চৌধুরী প্রসন্ন হয়ে হাসলেন।নেহা কোনো কথারই উত্তর দিলো না কাউকে।
——-
রাত নয়টা লাগাতার কলিং বেলের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে দরজা খুললো নেহা,দরজা খুলেই বলে উঠলো–,,কি সমস্যা রাহা,একটু অপেক্ষা করতে পারিস না নাকি?

নিখিল দু পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে, এমন একটা ভাব সে কিছুই করেনি। নেহা নিখিলকে দেখে আরো বিরক্ত হলো, সে ও অচেনা মানুষ ভেবে জিজ্ঞেস করলো–,,কাকে চাই?

নিখিল হেসে বললো–,,আপনাকে মেডাম!

–,,আমি আপনাকে চিনি না ভাই,আসতে পারেন।

নেহা মুখের উপর দরজা বন্ধ করতে চাইলো,নিখিল পা দিয়ে আটকে দিলো।ভিতর থেকে তাহমিদা বেগম জিজ্ঞেস করলো–,,কে এসেছে রে নেহা?

নেহার আগেই নিখিল বলে উঠলো–,,আমি সেজো মা।তোমার মেয়ের এক মাত্ররো জামাই!

তাহমিদা বেগম বললো–,,ভিতরে আয় নিখিল,নেহা ওকে আসতে দে!

নেহা অবাকের চরম পর্যায় তার মা কি করতে চাইছে কি?নেহা চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো–,, মা!

নিখিল ততক্ষণে ভিতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়েছে।

নেহা বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে, তাহমিদা বেগম তাকে ইশারায় ডাকলো।নেহা রাগে ফুঁ’সছে।

নেহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,, কি করতে চাইছো তুমি মা?নিখিল কে কেনো ভিতরে আসতে দিলে?যদি এখন নামিরা আর রাহা নিচ থেকে চলে আসে তো?

তাহমিদা বেগমের গা ছাড়া জবাব–,,আসলে আসবে!

নেহা কটমট করে তাকালো,নিশ্চিত বড় মার সাথে মিলে কোনো খিচুড়ি পাকিয়েছে।

নেহা বসার ঘরে গিয়ে বললো–,,কি চাই? কেনো এসেছেন?

নিখিল আয়েশ করে বসে বললো–,,আমার সাথে যাবি? যেতেই হবে, তুই যাবি না হয় আমি থাকবো কোনটা করবি ভেবে দেখ!

–,,আপনি কিন্তু বারাবাড়ি করছেন,না আমি আপনার সাথে যাবো,না আপনাকে এখানে থাকতে দিবো।

তাহমিদা বেগম এসে নেহার হাতে একটা লাগেজ গুঁজে দিয়ে বললো–,,যা নেহা শ্বশুর বাড়ি ফিরে যা!

–,,মা কি বলছো তুমি,ভেবে বলছো তো!আমি গেলে কি করে হবে।
নেহার বিচলিত কন্ঠ স্বরে নিখিল সন্দিহান চোখে তাকালো।

তাহমিদা বেগম বললো–,, তুই বুঝ এখন না গেলে কি হবে?আমি ভালোর জন্য বলছি যা!

নেহা বুঝলো কেনো এমন টা করছে, সে ও লাগেজ নিয়ে বললো–,, চলুন!

নিখিল আরো বেশি অবাক এক বার বলাতে যেতে রাজি হয়ে গেলো!কি এমন হবে এখানে নিখিল থাকলে যার জন্য নেহা যেতে চাইছে,রহস্য তো উদঘাটন করতেই হবে নিখিল,নেহা ও কেমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে!

নেহাই আগে আগে বের হয়ে গেলো,রাহাকে ম্যাসেজ দিয়ে বললো–,,দশ মিনিট পর আসবি,নিখিল এসেছে!

নেহা বেরিয়ে গেলো,নিখিলের সাথে গাড়িতে উঠে বসে চুপচাপ রইলো।

চলবে…..

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১৪
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
রাহা বাসায় এসেই তাহমিদা বেগমের উপর বেশ রাগলো।তাহমিদা বেগম বললো–,,কি হয়েছে বলবি তো নাকি, এসেই কেমন ফোঁস ফোঁস করছিস!

নামিরা পাশ থেকে বলে উঠলো–,,ঠিক ঠিক মিম্মি তাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে!

রাহা নামিরার দিক চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সে ফিক করে হেসে দিলো,দৌড়ে গিয়ে লুকালো তাহমিদা বেগমের আঁচলের ভাঁজে।

রাহা নামিরা কে ডেকে বললো–,,চল বি’চ্ছু ঘুমাবি এখন।তোর মাম্মাম ঘুমাচ্ছে বিরক্তি করবি গিয়ে?নাকি আমার সাথে ঘুমাবি।

নামিরা বের হয়ে এসে রাহার সামনে দাঁড়ালো,পরে হাত দুটি দুপাশে দোলাতে দোলাতে বললো–,,তুমি কি আমাকে কাতু”ন দেখতে দিবে?

রাহা ভাব দেখিয়ে বললো–,,কখনো না।যা তোকে ঘুমাতে হবে না।

নামিরা গাল ফুলিয়ে বললো–,,তুমি না আমার মিম্মি হও,মিম্মি মানে মা হয় জানো না তুমি?মা হয়ে একতু কাতু’ন দেখতে দিতে চাও না তোমার সাথে তল,বো না আর।

তাহমিদা বেগম বললো–,, কে বলেছে আমার বোন কে কার্টুন দেখতে দিবে না।কার ঘাড়ে কটা মাথা শুনি,এই রাহা মোবাইল দে বলছি!না হয় শা’স্তি হিসেবে তুই তিন দিন মোবাইল ছাড়া থাকবি।

রাহা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো–,, দুই নানি নাতিনের যন্ত্র”ণায় আর বাঁচি না বাপু।এই ভদ্রলোক নে মোবাইল আর চল ঘুমাতে যাই।

রাহা নামিরা কে নিয়ে ঘরে গেলো।আধঘন্টা পর আবার ফিরেও আসলো,এসেই বসলো তাহমিদা বেগমের পাশে।

থমথমে কন্ঠে বললো–,,আপু কে কেনো যেতে দিলে ভাইয়ার সাথে?বুঝলাম আপু ভাইয়ার মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে তাই আপু ভাইয়া কে ছেড়ে দিয়েছে,কিন্তু এটাই কি আসল কারন মা?আপুর আর কতো মানিয়ে নিতো বলতে পারো?ভাইয়া আগের বার কি করেছিলো মনে নেই তোমার?আপু তো তখনও মেনে নিয়েছিলো,তার পর ও বাবা বললো আপু বাচ্চা মানুষ বেশি বুঝে মানিয়ে নিতে পারছে না।পুরুষ মানুষ ভুল করলে ওটা ভুলের কাতারে পড়ে না, নারীরা কিছু করলেই ভুল, তাদের সব কিছুতেই শুধু ভুল আর ভুল।তারাই মানিয়ে নিবে সব সময় কেনো?তুমিও শেষ মেষ ওদের দলেই যাচ্ছো!

তাহমিদা বেগম এবার ধীর কন্ঠে বললো–,,আমার যদি ওদের দলে যাওয়ার ইচ্ছেই থাকতো তবে তোদের নিয়ে এক কাপড়ে ঘর ছাড়তাম না।নেহা চায় না নামিরার কথা নিখিল জানুক তাই যেতে দিয়েছি।
আমি কখনো চাইবো না এমন কারো সাথে আমার মেয়ে নিজেকে মানিয়ে নেক যে মানুষ টা তাকে সম্মান করে না,বিশ্বাস করে না!তবে একটা কথা কি জানিস রাহা একজন সন্তানের জন্য বাবা মা উভয়ের ভালোবাসাই প্রয়োজন।তুই দেখছিস না নামিরা কতো কষ্ট পাচ্ছে,প্রায় সময় তো অশান্তের মতো পাপা পাপা খুঁজে, ও তো বড় হচ্ছে কতো দিন লুকাবো ওর থেকে সব কিছু?নিখিল যদি নেহাকে নিজের জীবনে নিতে পারে, নেহা যদি ইচ্ছে করে আবার সংসার করতে চায় তো আমি আটকাবো না।আমি চাই আমার মেয়ে নাতনি ভালো থাকুক।

রাহা চুপ করে থাকলো,তার মনে হয় না নিখিল ভাই কখনো অনুতপ্ত হবে।শুধু ভালোবাসা দিয়েই জীবন চলে না।কি হবে ওই রকম ভালোবাসা দিয়ে যে ভালোবাসায় মানুষ বুঝতেই পারে না তার ভালোবাসার মানুষ ভালো আছে নাকি মন্দ আছে?ভালোবাসা মানে তো ভালো থাকা ভালো রাখা!
তবে কেনো নিখিল ভাই তার ভালোবাসার যত্ন নিলো না!নিজে সলতে হয়ে মোমবাতির ন্যায় নেহাকে পুড়া’লো?

————-
সকাল বেলা বসার ঘরে বড়রা সবাই কি নিয়ে যেনো কথা বলছে,হাসাহাসি ও চলছে পাল্লা দিয়ে।ছোটরা সব তখন ও ঘুমে আজ ছুটির দিন কিনা।

নেহা সিঁড়ি বেয়ে নামলো আগে,নেহাকে দেখে হামিদা বেগম এগিয়ে গিয়ে বললো –,,কখন এসেছিস মা?

নেহা স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর করলো–,,রাতে, তোমরা আসার কিছুক্ষণ পরে।

হামিদা বেগম আবার বললো–,,নামিরা কে কি কখনো নিয়ে আসবি না?

নেহা মুচকি হেসে বললো–,,কেনো আনবো না।মেয়ে তার নিজের বাড়ি আসবে আমি বাঁধা দেওয়ার কে।

হামিদা বেগম এবার হেসে বললো–,,তুই না বললে তোর মা ভক্ত মেয়ে কিছুতেই আসবে না।এক চুল নড়বেও না।

নেহা আর হামিদা বেগমের কথার মাঝেই বৃষ্টি পেছন থেকে বলে উঠলো–,,নেহা তার মানে নামিরা আমারই মেয়ে,কথাটা তুই আমার থেকেও লুকালি?আমি কতোবার করে জিজ্ঞেস করতাম তোকে,তার উপর পাখিটা পুরো তোর মতো দেখতে।আমি তো তোর কথা কাউকে কিছু বলিনি তার পরও আমার থেকে লুকিয়েছিস কথা বলবি না আর!

নেহা বৃষ্টির দিক তাকিয়ে বললো–,,আরে রাগ করছিস কেনো?শোন আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গেছে। তোর মেয়েকে তোকে দিয়ে দিবো একবারে তাও গাল ফুলিয়ে রাখিস না বইন!

তখনই সেতারা বেগম সবাই কে ডেকে বললো–,,এই সবাই এদিকে আয়,এই বৃষ্টি যা বাকি বজ্জা’ত গুলাতে ডেকে নিয়ে আয়।

নেহা এগিয়ে গিয়ে সোফার পাশে দাড়ালো।বাকিরাও ইতিমধ্যে চলে আসলো।যে যার মতো সোফায় বসলো,নেহা একবার তাকালো ওর দাড়িয়ে থাকা জায়গার পাশের সোফাটায়,নিখিল কালো রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে চুল গুলো সুন্দর মতো গুছানো, এখানে আসার পর আজ একটু গোছানো মনে হলো মানুষ টাকে। নেহা চোখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকালো,নিখিল মোবাইল হাতে নিয়ে মুচকি হাসলো।

নেহা মোবাইলে তাকালো নোটিফিকেশনের আওয়াজে।ম্যাসেজ টা নিখিলের নাম্বারের থেকে এসেছে।

নেহা বিরক্তি নিয়ে ম্যাসেজ টা দেখলো–,,আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে মেডাম!

নেহা ফটাফট লিখে দিলো–,,আপনার সারপ্রাইজ ধুয়ে আপনি পানি খান,যত্তসব!

নিখিল আবারও হাসলো,চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো–,,তোকে যে এতোটা কাঁদিয়েছে, তুই ভাবলি কি করে তাকে এমনি এমনি আমি ছেড়ে দিবো?আমি একবার ভুল করেছি তাই বলে তুই এটা কিছুতেই বলতে পারিস না নেহা আমার ভালোবাসা মিথ্যা ছিলো।নিখিল তোকে কতোটা ভালোবাসে তা এবার প্রমান করার পালা।

সেতারা বেগম এবার বলে উঠলো–,,নিঝুম দাদু ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করেছি আমি।
সবে চা মুখে পুড়’ছিলো নিঝুম কাশতে কাশতে সব ফেলে দিলো মেঝেতে!ছেলের অবস্থা দেখে হেসে ফেললেন সাহারা বেগম।

নিঝুম ভয়ার্ত কন্ঠে বললো–,,কার বিয়ে?

সেতারা বেগম বললো–,,কার আবার তোর।বয়স হয়েছে নাতি নাতনি দেখলাম এবার সময় হয়েছে তাদের বিয়ে দিয়ে তাদের সন্তান দেখার!

নিঝুমের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। নিঝুম চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,না আমি কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না!মেয়ে মানুষ কে পছন্দ না আমার।

সেতারা বেগম নাম মুখ কুঁচকে বললো–,,তবে কি তুই পোলা বিয়া করবি হারাম”জাদা! বিয়ার বয়স হইলে পোলারা বিয়া করতে লাফালাফি করে আর তুই করতে চাস না।

নিঝুম এবার বলে উঠলো–,,আগে বোন দের বিয়ে দিতে হয়,তোমরা আমাকে ছেড়ে জেরিন আর বৃষ্টি কে বিয়ে দিয়ে দাও।

মাহফুজ চৌধুরী বললো–,,নিঝুম তোমার কোনো কথা শুনবো না আমি।মেয়ে দেখে এসেছি আমরা আগেই এবার তোমাকে নিয়ে যাবো একেবারে আংটি পড়িয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করে আসবো।

–,,আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তোমরা বিয়ে দিতে পারো না।বিয়ে করবো না এখন।

সাহারা বেগম বললো–,,আম্মা আপনার নাতিকে বলে দেন বউমা লাগবে আমার,ও যদি মেয়ে দেখতে না যায় তো খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিবো আমি!

নিশাত কপাল চাপড়ে বললো–,,কি ফিল্মি ডায়লগ দিয়েছো মা, সেরা সেরা!

নিঝুম বলে উঠলো–,,লাগাবো এক চ’ড় কানের নিচে।

নিশাত কেঁদে দিয়ে বললো–,,বিয়ে করবে না তুমি, আর রাগ ঝাড়ছো আমার উপর,তোমাদের কথা বলার মাঝে আর আসবোই না আমি।

নিশাত চলে গেলো সেখান থেকে ছোটরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।নেহা কিছু একটা বলতে গিয়েও বললো না।

নিখিল জিজ্ঞেস করলো–,, মেয়েটা কে?কবেই বা দেখে আসলে।

শাহআলম চৌধুরী বললো–,,সাহিলের ফুফা তো আমাদের ভালো বন্ধু ছিলো,সে হঠাৎ করেই মা’রা গেলো তারই বড় মেয়ে মেহেরিন!ওদের বাড়িতে যখন গেলাম তখনই মেয়েটাকে বেশ মনে ধরেছে সবার,নম্র ভদ্র মিষ্টি মেয়ে!

–,,নিঝুম তো বিয়ে করতে চাচ্ছে না জোর করে!

মিলি বেগম বললো–,, মেয়ে দেখতে তো বাঁধা নেই,নিঝুমের পছন্দ না হলে বিয়ে হবে না।

নিঝুম রেগে বললো–,,মেয়ে ও দেখবো না বিয়ে তো অনেক দূরের কথা।
কথাটি বলেই হনহনিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো সে।

———-
ইরফান ফোন করলো নিখিল কে
–,,এমপি সাহেব অপ’রাধী হাতের নাগালে প্রায়।প্রমান ঠিক ঠাক মিলে গেলেই আর ঝা’মেলা হবে না!

নিখিল ইরফান কে ধন্যবাদ জানিয়ে বললো–,,অফিসার চিন্তা করবেন না।আমিও সাহায্য করবে আপনাকে,তবে অপ”রাধী কে যে ভাবেই হোক ধরতে হবে।মানুষ জন স্বস্তি পেলেই আমার শান্তি।

ইরফান আবার বললো –,,আপনার বন্ধুর সাথেও দেখা হলো,একটা কেই’সের বিষয়ে, কেনো যেনো মনে হচ্ছে ওইটার সাথে এটাও সম্পৃক্ত। নিশ্চিত না হয়ে আবার বলাও যাচ্ছে না!

নিখিল কথা বলা শেষ করেই দেখলো নেহা পেছনে দাঁড়িয়ে।

নিখিল আচমকা নেহা কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো কোমড়ে এক হাত রেখে মুখোমুখি হলো।নেহা নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হলো না।তবে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো।

নিখিল এবার বলে উঠলো–,, ঘৃ’ণা করতে পারবি না জানিস তাও বৃথা চেষ্টা কেনো করিস বলতো?

নেহা উত্তর করলো না, নেহা কে আরো কিছুটা কাছে টেনে নিলো নিখিল,মেয়েটা শাড়ি পড়েছে আজও।এভাবে সব ভুল গুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যেনো।

নিখিল নেহা কে কতো কি না বলতো তার পোশাক নিয়ে,চুল নিয়ে,বাচ্চামো নিয়ে।যখন নেহা ছিলো না তখন সে কি না ওই সব কিছু মিস করলো!এতোটাই মনে পড়তো নিজেকে পা’গল পা’গল মনে হতো।

আজ নেহা পূর্ণাঙ্গ নারী,পড়নে শাড়ি,খোঁপা ভর্তি চুল।যা যা নিখিল একদিন রেগে নেহাকে বলেছিলো ওই সব কিছু মেয়েটার মাঝে আছে আজ!তবে সে মেয়েটা আজ আর নিখিলের নয়,মেয়েটা আর সে ভালোবাসা পূর্ন দৃষ্টিতে তাকায় না,ছেলেমানুষীর ছলে সত্যি কথা বলে না, অভিমান গুলো মুখের উপর বলে দেয় না।কতোদিন হয়ে গেলো মেয়েটা তাকে ভালোবাসি বলে না,এর থেকে বেশি কিছু কি দরকার হৃদয় কে ছিন্ন”ভিন্ন করতে?
ভালোবাসার মানুষের তিরস্কার মেনে নিতে পারে কোন মানুষ? নেহা ও কি মেনে নিতে পারেনি?নিখিল কতোটা বোকা ছিলো যার জন্য সে একটা স্বচ্ছ মন কে পড়তে পারেনি,আজ যখন পুরোটাই ঘোলাটে তখন সে পড়তে চাওয়ার বৃথা চেষ্টা করছে নিজেকে কি বলে আখ্যায়িত করবে নিখিল নির্বোধ নাকি ব্যর্থ প্রেমিক, ব্যর্থ স্বামী!

নিখিলের হঠাৎ চোখ যায় নেহার কোমড়ের কাছটায়,শাড়ি কিছুটা সরে পেট দৃশ্যমান হয়েছে।

নিখিল বিচলিত কন্ঠে বলে উঠে–,,নেহা তোর পেটে কিসের দাগ ওটা?কে’টেছে কিভাবে!

নেহা সম্বিত ফিরে তাকালো নিখিলের দিকে,প্রথমে বুঝতে না পারলেও এবার সে তড়িঘড়ি করে বললো–,,কই কিছু না তো।আপনি সরুন বাসায় চলে যাবো এখন আমি!

নিখিল নেহাকে ছাড়লো না,উল্টো হাতের সাহায্য শাড়ি সরিয়ে ফেললো পেট উন্মুক্ত হতেই নেহা অন্য দিকে ঘুরে গেলো।
নেহা বিরক্তি ভরা কন্ঠে বললো–,,আপনি কিন্তু বারাবাড়ি করছেন,আমাকে ছোঁয়ার কোনো অধিকার আপনার নেই!

নিখিল নেহাকে নিজের দিক ঘুরিয়ে গাল ছুঁয়ে দিলো পুরো মুখে হাতের পরশ দিলো গলায় ছুঁয়ে দিলো জড়িয়ে ধরে বললো–,,অধিকার তুলে নেওয়ার তুই কে?আমৃত্যু তোকে ছুঁয়ে দেওয়ার অধিকার শুধু নিখিলেরই থাকবে, এই কথাটা যেমন তুই জানিস তেমনি আমিও জানি।

নেহা ছোটবার জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করলো,নিখিল আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো–,,আমি জানি এমন কিছু আমার থেকে লুকিয়েছিস যা আমাকে ক্ষ,ত বিক্ষ,ত করতে সক্ষম! তবে শুনে রাখ যতই যাতনা দিস না কেনো,নিখিল আর কখনো তোকে ছেড়ে দিবে না,হারাতে দিবে না,দরকার পড়লে বাকিটা জীবন সে তার বউয়ের পায়ে ধরে বসে থাকবে তবুও ছেড়ে যেতে দিবে না!

নেহা নিখিল কে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো–,,আপনার মাথা করেন বসে বসে,বাসায় যাবো মানে যাবোই দেখবো কিভাবে আটকান আমাকে!

নিখিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,, পারলে এক পা বাড়িয়ে দেখা।

নেহা বলে উঠলো–,,অসহ্য লোক একটা!
————
দুদিন হলো নেহা এসেছে,নিখিল তাকে রুমে এক প্রকার আটকে রেখে দিয়েছে,রাগে দুঃখে নেহার কাঁদতে মন চাচ্ছে,ওইদিকে তার মেয়ে কষ্টে আছে,নেহা পাড়লে সব ছেড়ে ছুঁড়ে মেয়ের কাছে ছুটে যায়।কিন্তু নিখিল আঠার মতো চিপকে আছে।

নিঝুমের বউ দেখতে যাওয়ার কথা পরের দিন সকালে,নেহা রুমে বসে আছে রাত তখন প্রায় বারোটার কাছাকাছি, নেহার মোবাইলে ফোন আসলো,রাতের বেলা রাহার ফোন পেয়ে নেহা চিন্তিত হল, নামিরার কিছু হলো না তো?

দ্রুত ফোন রিসিভ করেই বললো–,,কি হয়েছে রাহা?নামিরা ঠিক আছে তো!

রাহা অপর পাশ থেকে বললো–,,নামিরা খাট থেকে পড়ে গেছে ব্যাথা পেয়েছে।
রাহা আর কিছু বলতে পারলো না,নেহা ফোন ফেলেই দৌড়ে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো।গেইট পেরিয়ে গাড়িতে উঠালো।
নিখিল বাড়ি ফিরলো তখনই সাথে তার মিহির,সাহিল, রাহাত।
নেহা কারো দিক তাকালো না গাড়ি স্ট্রার্ট দিয়ে দিলো,নিখিল, মিহির তাকিয়ে রইলো কতোক্ষণ।

নিখিল আবার গাড়ি তে উঠে বসলো বাকিরাও উঠলো,মিহির বলে উঠলো—,,নেহার পেছন পেছন যাওয়াটা কি ঠিক হবে?

নিখিল বলে উঠলো —,,রাতের বেলা কোথায় যায় জানতেই হবে আমাকে।

চলবে….