প্রণয়ের সুর ২ পর্ব-১৫+১৬

0
1098

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১৫
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
গাড়ি ছুটিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে নেহা,মায়ের মন যেনো মানতেই পারছে না তার সন্তান কষ্ট পাচ্ছে এভাবে।কখন গিয়ে নিজের কলি’জাটা কে জড়িয়ে ধরবে সে চিন্তায় বিভোর নেহা।আজ যেনো এই অল্প সীমার পথ টুকু ও বেশ বড় মনে হচ্ছে তার কাছে।সে কিছুতেই ভুলতে পারে না সেই ছোট্ট নামিরার কথা,এই ছোট্ট প্রাণটি তাকে আশার আলো দেখিয়েছে,বুঝিয়েছে মানুষ বাঁচে, জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারিয়ে গেলেও মানুষ বাঁচে, সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য যা কিছু রাখেন তা সত্যি ভীষণ রকম সুন্দর! নেহার কাছে আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে সুন্দর কল্যানকর নেয়ামত তার মেয়ে তার নামিরা।

নেহা গাড়ি থেকে নামলো,সে একবারের জন্য ও খেয়াল করলো না তার পেছনে কেউ এসেছে।
নিখিল একা এসেছে, রাহাত,সাহিল জোর করলেও তাদের সাথে আনেনি নিখিল।
নেহা কে এতো রাতে ভাড়া বাড়িতে আসতে দেখে অবাক হয় সে,কি এমন দরকার পড়লো সেজো মা অসুস্থ নাকি রাহা?কি জন্য ছুটে আসলো এমন করে।

নেহা কলিং বেল চাপলো,নিখিল নেহার থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে।
নেহা কলিং বেল বাজাতে দেরি দরজা খুলতে দেরি হলো না।দরজা টা রাহা খুলে দিয়েছে ঠিকই রাহার পাশ থেকে ছুটে এসেছে নামিরা।মাকে দেখতে চাওয়ার ভীষণ তাড়া তার,আকুল সেই ছোট্ট চঞ্চল চোখজোড়া,অভিমানী পাখিটা মাকে দেখেই যেনো শান্ত হয়ে গেলো।

নেহা দরজার বাহিরে দাড়িয়ে নামিরা এসে জড়িয়ে ধরে বললো–,,মাম্মা!

নেহা মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে, কোলে উঠিয়ে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো–,,কোথায় লেগেছে আমার মায়ের?বেশি কষ্ট হয়েছে বুঝি?মাম্মা আর কখনো নামিরা কে একা রেখে যাবে না তো,স্যরি পাখি আমার।

নামিরা ফিক করে হেসে বললো–,,মিম্মি মিথ্যা বলেছে নামিরার তো কিচ্ছু হয়নি!মাম্মা আসেনি তাই নামিরার মন খালা’প করছিলো তো।

নেহা রাহার দিক চোখ পাকিয়ে তাকালো, এদিকে ওর জা’ন বেরিয়ে যাচ্ছিলো আর দুই ব’দ মিলে ওর সাথে মজা নিয়েছে।

নেহা নামিরার কপালে চুমু খেয়ে কন্ঠে আদর মিশিয়ে বললো–,, তুমি আর তোমার মিম্মি দিন দিন দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো,মাম্মা কিন্তু অনেক রেগে যাবো।এরকম আর করবে?

নামিরা হাসি মুখে দু দিকে মাথা নাড়লো।তার পর আবার মন খারা’প করে বললো–,,মাম্মা আর যাবে না বলো?প্রমিজ করতে হবে,না হয় নামিরা কিন্তু কান্না করে দিবে।

নেহা বলে উঠলো–,,আর যাবো না তো মা।মায়ের ভুল হয়ে গেছে,এখন থেকে মাম্মা যেখানে নামিরাও সেখানে!

নিখিল হতবাক হয়ে তাকিয়ে, চোখ দুটি স্থির হয়ে গেছে যেনো,হাত পা কেমন অসার হয়ে আসলো তার।ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লো।এতো বড় সত্যি কথাটা নেহা তার থেকে লুকিয়ে রাখলো,এতো বড় একটা শা’স্তি কি করে দিলো নেহা?এতোটা নিষ্ঠু’র হতে পারলো কি করে মেয়েটা!একবারের জন্য ও বললো না নিখিল তোমার একটা মেয়ে আছে,আমাদের একটা সন্তান আছে।নেহা কেনো তার থেকে লুকিয়ে রাখলো এই প্রশ্নের উত্তর তো নেহা কে দিতেই হবে।সন্তানের বাবা হিসেবে এতটুকু অধিকার নিশ্চয়ই নিখিলের আছে।এই ছোট্ট চাঁদ টাকে এতোটা দিন দূরে সরিয়ে রেখেছে আর নয়।দরকার পড়লে নিখিল নেহার পায়ে পড়ে মাফ চাইবে তবুও তাদের আর দূরে যেতে দিবে না।
নিখিলের এবার রাগ লাগলো বেশি,তার মেয়েকে তার থেকে দূরে রাখা,দেখাচ্ছি মজা।নিখিল ও দেখবে কি করে আর মেয়েকে লুকিয়ে রাখে।সে আড়াল থেকে বেরিয়ে নেহার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো,রাহা তাকে দেখলো আগে,রাহা কিছু বলার আগেই নিখিল বলে উঠলো—,,
নামিরা আর নামিরার মাম্মা কি নামিরার পাপাকে সাথে রাখবে না?

নেহা চমকালো,পিছু ঘুরে তাকালো তখনই,নামিরা নিখিল কে দেখে হেসে বললো–,,তুমি?আইসক্রিম আংকেল!

নিখিল নেহার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বললো–,,মেয়েকে এসব শিখিয়েছিস তুই?বাপকে এখন চাচা ডাকছে মেয়ে!

নামিরা কে নেহা কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললো–,,মা ভিতরে যাও মিম্মির কাছে।

নিখিল নামিরার হাত ধরে বললো–,,মা আসো পাপার কাছে!

নামিরা অদ্ভুত চোখে তাকালো, নিখিলের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো–,,নামিরা হেইট পাপা!

দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো তৎক্ষনাৎ! নিখিল কষ্ট পেলো,তার মেয়েটাও তাকে ঘৃ’ণা করে?হৃদয়ে গিয়ে লাগলো এই প্রত্যাখ্যান,তবুও সে হাসলো নেহাকে আচমকা জড়িয়ে ধরে বললো–,,এতো সুন্দর সারপ্রাইজ পাবো কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি।তোকে থ্যাংকস দিলেও তো কম পড়ে যাবে জানিস,আমার জীবনের দ্বিতীয় সেরা উপহার আমার মেয়ে,যা তুই আমাকে দিয়েছিস।আমি তোর প্রতি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকতে চাই নেহা,তোর সুন্দরতম ভালোবাসাই আমার মতো নির্বোধ কে সুন্দর রাখে।তুই হারিয়ে গেলে আমার জীবনের প্রতিটি কোনা অমাবস্যায় ছেয়ে যায়।প্লিজ থেকে যা আমার জীবনের পূর্ণিমা হয়ে আমাদের চাঁদ কে সাথে নিয়ে!

নেহা চুপ রইলো,কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না যেনো,নিখিল কতোটা খুশি তার হৃৎস্পন্দনই সে কথার জানান দিচ্ছে, নেহার কোথাও একটা খারা’প লাগা কাজ করলো।মানুষ টা কি সত্যি কষ্টে আছে তাকে ছাড়া?

নেহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললো–,,নামিরা আপনার মেয়ে না!

নিখিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল নামিরা আমার মেয়ে না।

নেহা বিরক্ত হয়ে বললো–,,আপনি এখান থেকে যান তো,বললাম না আপনার মেয়ে না।

–,, তাহলে কার মেয়ে?

–,,আমার মেয়ে।

–,,বাবা কে?

–,,আপনাকে বলবো কেনো?যে খুশি হোক কিন্তু আপনি না!

নিখিল এবার হেসে বললো–,,আচ্ছা তুই থাক তোর ফালতু কথা নিয়ে,আল্লাহই জানে আমার মেয়েকে তুই আমার নামে কি কি মিথ্যা বলেছিস যার জন্য আমাকে পছন্দ করছে না।যাই ওর সাথে গিয়ে ভাব করে আসি!

নেহা এবার রাগ নিয়ে বললো–,, আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকবেন বলছি,বেশি ভালো হবে না কিন্তু!

–,,তোর ভালো খারা’প তুই তোর নিজের কাছে রাখ তো সব আমাদের মাঝখানে আসবি না,তুই তো হিং’সুটে পরে আবার জ্ব’লেপু’ড়ে যাবি আমাদের বাবা মেয়েকে দেখে!

নেহা নিখিলের পেছনে গিয়ে বললো–,,আপনি একটা যা তা।নিজের বাড়িতে যান বলছি।

নিখিল বসার ঘরে গিয়ে দেখলো নামিরা তাহমিদা বেগমের কোলে বসে আছে।রাহা নিজের রুমে,নিখিল গিয়ে বললো–,,নামিরা পাখি আসো পাপার কাছে।

নামিরা গাল ফুলিয়ে বললো–,,না!তুমি পঁ’চা এতোদিন আসোনি কেনো?মাম্মা শুধু বলতো আসবে কিন্তু তুমি আতো’নি কেনো?নামিরা রাগ করেছে!

নিখিল নেহার দিক তাকিয়ে বললো–,,মাম্মা তোমাকে আগে পাপার কথা বলেনি?পাপা তো কাজে ব্যস্ত ছিলো মা,তাই দেরি হয়ে গেছে।এবার থেকে তো সে নামিরার সাথেই থাকবে!

নামিরা নেহার দিক তাকালো,মা ভক্ত মেয়ে কিনা।মায়ের অনুমতি চাইছে নেহা বেশ বুঝতে পারলো,মেয়ে বাবা পেয়ে খুশি।

তাহমিদা বেগম নেহার মনোভাব বুঝে হাসলো,মেয়ে তার ফেঁ’সে গেছে।না মেয়েকে কষ্ট দিতে পারবে আর না এখন নিখিল কে তাড়াতে পারবে!

নেহা নিজের ঘরে যাওয়ার আগে নামিরা কে বললো–,,যাও পাপার কাছে।তবে দশ মিনিটের ভিতর ঘরে আসবে ঘুমাতে হবে তোমাকে!

নিখিল মুখ টিপে হাসলো,তাহমিদা বেগমও।
তাহমিদা বেগম বললো–,,কিরে কি বুঝছিস?

নিখিল আরো একটু গা এলিয়ে বসে বললো–,, তোমার মেয়েকে সামলানো কি চারটে খানে কথা?তার উপর তুমি তার মা,এখন যোগ দিয়েছে তোমার নাতনি।আমার মায়ের কথা না ই বা বললাম।

নামিরা বললো–,,তুমি আমার পাপা হও?প্রমান দাও!

নিখিল মেয়ের দিক তাকিয়ে বললো–,,মায়ের মতো তো হয়েছিস,আমার মতো তো আর না প্রমান দিবো কি করে?

নামিরা নাক ফুলিয়ে বললো–,,আমার মাম্মা কে কিছু বলবে না পঁ”চা পাপা!

নিখিল উল্টো ভাব নিয়ে বললো–,,একশো বার বলবো।

নামিরা ঠোঁট উল্টে বললো–,,ঝগ”লুটে!

নিখিল বললো-,,ঝগড়ুটে টু!

নামিরা কেঁদে বলে উঠলো–,,মাম্মা,মাম্মা!পাপা ব’কা দিয়েছে।

নামিরার পেছন পেছন গেলো নিখিল।যে কেউ বলবে এটা মায়ের কপি”কেট, মায়ের মতোই হয়েছে ছিচ কাঁদুনে!

নিখিল পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে আর বলছে–,,ভুল হয়ে গেছে মা।পাপা স্যরি বলছে তো।

নামিরা গিয়ে থামলো নেহার কাছে।নিখিল পেছনে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,নেহা এই মুহুর্তে ভীষণ হাসি পেলো,সে হাসলো না উল্টো রাগ দেখিয়ে বললো–,,কি বলেছেন ওকে?একটা বাচ্চাকে ও কাঁদিয়ে ছাড়লেন আপনি।এটাই ভালো পারেন শুধু।

নিখিল কাঁদো কাঁদো ফেইস বানিয়ে বললো–,,আরেকটা সুযোগ আর ঝ’গড়া করবো না।

নামিরা নেহার আঁচলের পেছন থেকে মুখ বের করে হাসছে,নিখিল ব’কা খাচ্ছে।নিখিল নেহার কথায় মনোযোগ না দিয়ে নামিরার দিক তাকিয়ে মেয়েটাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরা বাকি,তার অস্তিত্ব তার রক্ত তার সন্তান!

নেহা নামিরা কে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।নিখিল গিয়ে বিছানার পাশে দাড়িয়ে।
নেহা আবার উঠতে যাবে নিখিল তখনই বলে উঠলো–,,আপনি নামবেন না মহারানী আপনার সেবক এখানে আছে শুধু হুকুম করুন সে সব করে দিবে।

নেহা তাচ্ছিল্য করে বললো–,,এই সেবকই একদিন বিন্দু মাত্র মূল্য না দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চেয়েছিল।

–,,ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম।আরেকটা সুযোগ দেন প্লিজ,অভিযোগ করার মতো কিছু করবো না।

নেহা এবার বলে উঠলো –,,নিখিল আপনি একটু চুপ থাকুন তো মাথা ব্যাথা করছে আমার।

নিখিল এক লাফে খাটে উঠে বললো–,,মাথা টিপে দিচ্ছি আমি তুমি ঘুমাও।

নেহা এবার বলে উঠলো–,, বাচ্চাদের মতো করছেন কেনো?

নিখিল নেহার দিক তাকিয়ে বললো–,,তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস তাই।নামিরা মাম্মার পাশে শুয়ে পড়ো গুড গার্ল না তুমি?

নেহা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো–,,বাপের মতো হইছে একবারে রাতের বেলা একদম ঘুমাতে চায় না।

নিখিল হো হো করে হেসে বললো–,,বাপ কা বেটি!

নেহা বললো–,, কচু শাক এর বাটি।

নেহা জোরে জোরে ডাকলো –,,মা মা তুমি কোথায় ঘরের ভিতর থেকে আবর্জনা টা কে সরাও বলছি।

নিখিল নেহাকে বালিশে শুয়িয়ে দিয়ে বললো–,,আর কথা বলবো না তুমি ঘুমাও।এই নামিরা আমার সাথে যাবি?

নামিরা ও উল্টো ভাব নিয়ে বললো–,,ভেবে দেখছি।

নিখিল কপাল চাপড়ালো,এমপি হয়েও এতো ভাব নেয়নি যত ভাব তার মেয়ে এক বেলাতে নিচ্ছে।

নিখিল হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো–,,চল ফ্রেন্ডশিপ করি!

–,,তুমি আগে বলো,আবার কাজ করার নাম দিয়ে পালিয়ে যাবে না তো?

–,,সত্যি যাবো না।এখন আয় গল্প বলি!

নামিরা নিখিলের কোল ঘেঁষে এসে বসলো,নিখিলের পাঞ্জাবির বোতামে হাত রেখে বললো–,,সবার পাপা ঘুরতে নিয়ে যায় তুমি কেনো দেরিতে এসেছো পাপা?

নিখিলের কলি’জায় লাগলো যেনো,তার মেয়েটা তাকে এতোটা মিস করেছে,শুধু মাত্র নিজের ভুলের জন্যই তার চাঁদ এতোটা কষ্ট পেয়েছে।
নিখিল নামিরা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,স্যরি চাঁদ। কাল থেকে নামিরা আর পাপা অনেক ঘুরবে।এখন ঘুমাতে হবে তো মাম্মা না হয় দুজন কে ব’কা দিবে!
———————-
সকালে মিষ্টি রোদ এসে ভিড় জমালো নেহার বারান্দায়, জানালা ছেড়ে সে রোদ হাতছানি দিলো নেহার চোখে।ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো যথানিয়মে,চোখ খুলেই নজরে এলো তার প্রিয় দুজন মানুষের মুখ।নেহা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো অপলক।
নিখিল খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে,তার কোলে গুটিশুটি মে’রে ঘুমিয়ে আছে নামিরা।নেহা তো এটাই চেয়েছিলো,তার ছোট্ট একটা সংসার হবে।তারা তিন জন মিলে এক সাথে থাকবে,সব সুখ দুঃখ ভাগ করে নিবে।

নেহার ঠোঁটে আপনাআপনিই হাসি ফুটে উঠলো মেয়েটা তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে,তার ভাবনা ভাঙ্গলো নিখিলের কন্ঠে–,,আমাদের দিকে অমন করে তাকিয়ে কি দেখছো?নজর লেগে যাবে তো।

নেহা উঠে দাড়িয়ে বললো–,,আপনাকে দেখার এতো ইচ্ছে নেই আমার।রাত হয়েছিলো তাই থাকতে দিয়েছি এবার কে’টে পড়ুন তো।

নিখিল হেসে বললো–,,নামিরা বললে চলে যাবো।

নেহা ভাব নিয়ে বললো–,,আমার মেয়ে আমার কথাই শুনবে।

–,,দেখা যাবে, তুমি এক কাজ করো সেজো মা কে বলো আমার ক্ষুধা লেগেছে খাবো।স্বামী এসেছে কই একটু খাতির যত্ন করবে তা না দূর দূর করে তারিয়ে দিচ্ছো!

নেহা নিখিলের দিক বালিশ ছুঁড়ে মার’তে যাবে নিখিল নামিরার দিক ইশারা করে,নেহা রাগে ফুঁ’সতে ফুঁ’সতে চলে যায়,বিরক্তিকর মানুষ একটা।

——————-
নিঝুম ভাই অবশেষে তোমার উইকেট পতন হচ্ছেই।নিঝুম সাব্বির কে জোরে একটা লাগিয়ে বললো–,,ব্যাটা খোঁচা মা’রছিস কেন।যখন তোর ঘাড়ে কোনো পে’ত্নী চড়ে বসবে না তখন বুঝবি!

সাব্বির হেসে বললো–,,ভাবি দেখতে যাবে কখন?আমিও কিন্তু যাচ্ছি।

নিঝুম বললো–,,তুই তো যাবিই আমার বোনটার পিছনে তো আঠার মতো চিপকে থাকিস,দুজন তো সারা দিন ঝ’গড়াই করিস, তাহলে একসাথে থেকে কি লাভ?

সাব্বির বললো–,,ঝ’গড়া সাইডে রাখো তো বন্ধুত্বটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেটা তোমাদের চোখেই পরে না।অবশ্য দোষ ঘসেটিবেগমের ও আগে ঝ’গড়া শুরু করে,আমি তো নেহাৎই বাচ্চা ভোলাভালা মানুষ।

জেরিন পেছন থেকে বলে উঠলো–,,ওরে বাপরে কি আমার ভালা মানুষ, তুই বাচ্চা?দুইদিন পর বিয়া করলো তিন বাচ্চার বাপ হইয়া যাবি এখানে এসে ভাব মারা’য় আমি বাচ্চা!

সাব্বির আঙুল উঁচিয়ে বললো–,,দেখ দেখ জেরিন,ঝা’মেলা পাকাবি না বলে রাখছি।

রোহান,বৃষ্টি এসে বললো–,,তোমরা থামো তো।নেহা আর নিখিল ভাই দুজনই মাঝ রাতে উধাও তার উপরে ছোট চাচ্চু সকাল সকাল এসে বললো–,,ভাইয়ার বন্ধু সাহিল নাকি ভোর সকালে বিয়ে সেরে ফেলেছে!

জেরিন বলে উঠলো–,,কিহ্!

সাব্বির বলে উঠলো–,,এই তুই এমনে লাফাইয়া উঠলি কেন?ভাইয়ার বন্ধুর লগে কি তোর কোনো কানেকশন আছিলো নাকি?

জেরিন রাগী চোখে তাকিয়ে বললো–,,দেখ সাব্বিরা ফালতু কথা বলবি না। সাহিল ভাইয়া তো মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকতো তাই বললাম আর কি!

নিশাত এসে বললো–,,মেয়ে তো ভাইয়ার ওখানে কাজ করতো কি নাম যেনো বললো হ্যাঁ হ্যাঁ সোহানা!

সাব্বির বলে উঠলো–,,এ জীবন আর রাখবো কেনো?সবাই বিয়ে করে ফেলছে একা সিঙ্গেল আমি পড়ে আছি, আমার ভাইটা ও বিয়ে করছে না আমার ও বিয়ে করা হচ্ছে না।

রোহান বলে উঠলো–,,তুমি গিয়ে মুড়ি খাও তো সাব্বির ভাইয়া।এদিকে একটা প্রেম করতে পারলাম না ভার্সিটিতে উঠে গেলাম!

নিঝুম ধম’ক দিয়ে বললো–,,চুপ থাক সব কয়টায়,আমি বাঁচি না আমার জ্বালা’য়,আমার বিয়ে ভাঙ্গতে পারলে তোদের ও সেটিং হয়ে যাবে দোয়া করে দিলাম!

জেরিন বলে উঠলো –,,না না ভাবি চাই আমাদের।তোমার দোয়া লাগবে না আমি সিঙ্গেল থাকতে চাই!

সেতারা বেগম এসে বললো–,,আরে কি সমস্যা তোদের যখন দেখি সব গুলাতে জটলা পাকাইয়া থাকোস,এই নিঝুম তুই পোলা গো যে পার্লার থাকে ওইখানে যাছ নাই এখনো?মাইয়া যদি তোরে পছন্দ না করে আমার কি মান সম্মান থাকবো কিছু?এই সাব্বির তুই এটার সাথে যাবি ঠিক ঠাক সব করছে কিনা জানাবি আজ বাদে কাল মাইয়া দেখতে যামু,এখনও কোনো কিছুই হইলো না। বড় বউমা ও বড় বউমা!

সেতারা বেগম বিদায় নিলো।নিশাত বলে উঠলো–,,অপমান’স ভাইয়াকে কিনা মেয়ে রিজেক্ট করে দিবে সে ভয়ে আবার ফেসিয়াল করতে যাবে।

সবাই হো হা করে হাসছে,রোহান বলে উঠলো–,, আরে নিখিল ভাইয়া আর নেহা আপু কি রাত বিরাতে হানিমুনে চলে গেছে নাকি?

বৃষ্টি বললো–,,বা’জে কথা রাখ ভাইয়া শুনলে তুই সারা জীবনের জন্য চিরকুমার থাকবি।

ভাই বোনরা মিলে আরো আড্ডা দিতে লাগলো।

এদিকে,,,
চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে আরুশি কে,মেয়েটা ছ’টফট করছে ছোটার জন্য, পাশ থেকেই চিরপরিচিত কন্ঠস্বর শুনতে পেলো,কন্ঠটা কেমন কাঁপছে বহু কষ্টে সে ডেকে উঠলো–,,আরুশি!

আরুশি তড়িৎ বেগে বললো–,,ছোট মিয়া!তুমি এখানে?

রনি বলে উঠলো–,,এরা অনেক খারা’প লোক বোন,তুই পালিয়ে যা!

–,, কিভাবে যাবো বলোতো,ওদের হাতে ধরা পরেই গেলাম,আর ওই পুলিশ টা আমাকে বিশ্বাসই করলো না।দুনিয়ায় গরিব মাইনসের কথার কেউ দামই দেয় না!
কি আর করার হায়াত থাকলে বাঁচবো না থাকলে নাই,যেখানে বাপ মাই জন্মের পর ফালাইয়া চইলা গেছে সেখানে অন্য মানুষের থেকে কিছু আশা করাও বোকামি!

রনি কাতর কন্ঠে বললো–,,এই পা”পীরা কি কোনো দিন শাস্তি পাইবো না বইন?

আরুশি তে’জি কন্ঠে বললো–,,পাপ তার বাপরেও ছাড়ে না।আমরা পারি নাই তো কি হইছে অন্য কেউ হলেও এদের শা’স্তি দিবো!

————-
ইরফান হন্তদন্ত হয়ে খুঁজলো আশেপাশে, আরুশি যেখানে থাকতো সেখানের ঠিকানায় ও গিয়েছিলো মেয়েটা রাতারাতি উধাও হয়ে গেলো কি করে!ওই ক্রি”মিন্যালদের হাতে পরে যায় নি তো আবার?তথ্য প্রমান জোগাড় হয়েছে কিন্তু পালের গোদা টা কে সেটা জানা যায়নি তার উপরে উপর মহলের কথা শোনানো তো আছেই,বিরক্তিতে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো ইরফান!
—-
হসপিটালের এ,প্রোন জড়ানো এখনো সাহিলের পড়নে তার পেছনে সাদামাটা থ্রি পিস পড়া সোহানা, তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রৌফ,তার ভাই বিয়ে সেরে এসেছে!

এদিকে সাহিলের মা অগ্নি”মূর্তি হয়ে আছে,দিন বাধে ননদের মেয়েটাকে দেখতে আসবে এর আগে ছেলেটা এমন কান্ড বাঁধালো? মেয়েটার বিয়েটা না ভেঙ্গে যায়!কোথা থেকে কোন মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে কে জানে।

মেহেরিন অশ্রু টলমলে চোখে তাকালো প্রিয় মানুষ টার দিকে,যে মানুষ টার প্রতি তার আকাশ সম অনুভূতি তিলে তিলে জমিয়েছে সে সব অনুভূতি আজ এক ঝটকায় দুঃস্বপ্নে পরিনত করেছে,নিজের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনেও এতো কষ্ট পায়নি মেয়েটা,ভেবেছিলো নিজের অনুভূতির কথা সে জানাবে কিন্তু তার আগেই প্রিয় মানুষ টা অন্য কারো নামে লিপিবদ্ধ হয়ে গেলো,এ কষ্ট কি করে সইবে মেহেরিন?একতরফা ভালোবাসা নাকি নিজের জন্য নিদারুণ এক দুঃখ পুষেছিল সেই কৈশোর থেকে!

(রিচেক করা হয়নি ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
চলবে?

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব১৬
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সাহিলের পেছনে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোহানা,মেয়েটা এখনো যেনো ভ্র’ম থেকেই বের হতে পারছে না,কি থেকে কি হয়ে গেলো তার সাথে!
ভোর রাতের সেই ঘটনা মনে পড়তেই কেমন গা বিষি”য়ে উঠলো।

তখন রাত সারে তিনটে, পরের দিন সকালে সোহানা কে হসপিটাল থেকে ছাড়া হবে,সে তো বেশ চিন্তায়ই ছিলো হসপিটালের বিল দেওয়া লাগবে এসব ভেবে,কিন্তু সাহিল এসে জানালো যেহেতু সে হসপিটালের একজন কর্মকর্তা তাই তাকে ফ্রি তে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে হসপিটাল কতৃপক্ষ থেকে সব কিছু দেওয়া হয়েছে,সোহানা যেনো হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলো,যেখানে প্রাইভেট হসপিটালে একদিন থাকলেই প্রায় বিশ হাজারের মতো খরচ হয় সেখানে সে তো সপ্তাহ খানেক থাকছে তার কতো টাকা আসবে ধারনা করা যায়!

একজন নার্স এসে সোহানা কে চেক”আপ করে গেলো।সাহিল এসেছিলো এর মধ্যে একবার, তার আজও নাইট ডিউটি পড়েছে।সোহানা সাহিল কে যতোটা রাগী কঠোর মনে করতো মানুষ টা ততোটাও কঠোর না।রোগীদের ক্ষেত্রে সে একটু বেশিই যত্নশীল!

নিয়মমাফিক সোহানাকে শেষ রাতে দেখতে আসলো সাহিল,সোহানা বিষয় টাকে তেমন খারা’প ভাবে নেয়নি।সাহিলের ক্ষেত্রে ও তাই,সাহিল এসেই সোহানার সাথে টুকটাক কথা বললো,সাথে ইরফানের কথাও জানালো, ওই ডক্টর পলাতক হসপিটালের এমডি তার বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে,পুলিশ ও তাকে ছাড়বে না।

এরই মধ্যে হঠাৎ করে সোহানার কিছুটা মাথা ঘুরে উঠলো,সাহিল তাকে সাহায্য করার জন্য তার দিকে ঝুঁ’কেছে ফলস্বরূপ তাল সামলাতে না পেরে দুজনই বেডের উপর পড়ে যায়,সে মুহুর্তেই বি”শ্রি ঘটনাটা ঘটায় অন্য একজন ডক্টর,সাহিলের সম্মান পরিচিতি ন’ষ্ট করার জন্য নার্সের সাহায্য পুরো হসপিটালে র’টিয়ে দেয় সাহিল তার পেসে”ন্টের সাথে হসপিটালে বসেই অসা”মাজিক কর্মকান্ড করছে!

বিষয়টা প্রমান করার জন্য সে সেই মুহুর্তের কিছু ছবিও তুলে নেয়।সোহানার সম্মানের কথা চিন্তা করে বিয়ে টা করতে বাধ্য হয়েছিলো সাহিল!
সোহানা অবশ্য সবার সামনে বলেছিলো তাদের মধ্যে এমন কোনো রকম সম্পর্ক নেই,স্যার আমার সাহায্য করতে চাইছিলো শুধু!কিন্তু মানুষের মুখ বন্ধ করা বড় কষ্টের ব্যাপার,তিলকে তাল বানানো তাদের স্বভাব।

যদিও বিয়েটা না করলো সাহিলের তেমন কোনো ক্ষ”তি হতো না।হসপিটালের মালিক পক্ষ খুব সহজেই বিষয় টা ধামা’চাপা দিতে পারতেন,ভালো ডক্টর কে হসপিটাল থেকে তারিয়ে কেউই নিজের লস করতে চাইবে না কখনো।কিন্তু সাহিল একজন সাধারণ মেয়ের ইজ্জ’তের মান র”ক্ষা করতেই বিয়েটা করলো। সে জানে না পরবর্তীতে কি হবে তার সাথে,তার মা যে সহজে মানবে না এসব কিছু মাথায় ছিলো তার!

রোজিনা বেগম বিরক্তি ভরা কন্ঠে বললো–,,কি করে এসেছো সাহিল?তোমার যদি বিয়ে করারই হতো আমাকে বলতে পারতে,এতোদিন যখন বিয়ে করো বিয়ে করো বলে বলে তোমার কান ধরিয়ে ফেলছিলাম তখন তো একবারের জন্য ও রাজি করাতে পারিনি তোমাকে,আর আজ বলা নেই কওয়া নেই বিয়ে করে নিয়ে এসেছো,কিভাবে মুখ দেখাবো এখন আমি সমাজে!

রোজিনা বেগম সোহানার কাছে এসে ওর হাত টেনে ধরে বললো–,,এই মেয়ে কে তুমি?আমার ছেলেকেই পেয়েছিলে শুধু ফাঁসা’নোর জন্য? বাবা মা কোথায় তোমার কেমন শিক্ষা দিয়েছে,তাদের ছাড়াই একটা ছেলের হাত ধরে বিয়ে করতে চলে এসেছো লজ্জা করে না তোমার!

সোহানা শুকনো ঢোক গিললো,অপমান গুলোর জবাব কেনো যেনো চেয়েও দিতে পারছে না! বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে,তার মা থাকলে হয়তো সব কিছু সামলে নিতো,সামলাতো তাকেও।মানুষ কতোটা অসহায় অনুভব করে নিজেকে যখন তার আশেপাশে কেউই তার পরিচিত না হয়,কাউকেই ভরসা করার মতো না পায়,কেউ একজন থাকে না পাশে বলার মতো এইতো আমি তোমার সাথে আছি,ভয় পাচ্ছো কেনো?বাবা মা’রা যাওয়ার পর পৃথিবীটা কতোটা ভয়ান’ক হতে পারে সোহানা জানে,তবে আজ সে অসহায় নিরুপায়,রাগ লাগছে ভীষণ সাহিলের উপর তাকে আর কে চিনতো?সে তো অন্য কোথাও একটা গিয়ে থেকে যেতো সাধারণ মানুষ কে কেই বা মনে রাখে,কে বলেছিলো সাহিল কে এতোটা মহান হতে?তার দিকে তো আর কেউ আঙুল তুলেনি তবে কেনো?সোহানার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো জল।মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো শুধু!

সাহিল নিজের মায়ের উদ্দেশ্য বললো–,,আম্মু বুঝার চেষ্টা করো পরিস্থিতির স্বীকার আমরা দুজন,না উনার দোষ আছে না আমার!

রোজিনা বেগম বললো–,,দুজন দুজনকে চিনো না পছন্দ করো না,তাহলে বিয়ে করেছো কেনো?সংসার করবে কি করে তোমরা,বিয়ে টা কি ছেলেখেলা? খেলতে মন চাইল, খেললাম না মন চাইলে অন্য খেলা খেলবো!দেখো সাহিল যাকে তাকে ধরে এনে আমার বউমা বলে দিলেই তো আর আমি মেনে নিবো না!তোমাদের এই বিয়ে আমি মানতে পারছি না।এই মেয়েকে নিয়ে তুমি চলে যাও।

রৌফ নিজের মায়ের বিষয়ে অবগত রাগ উঠলে তিনি নিয়’ন্ত্রণ হারান।আবার রাগের সময় কি কি বলেন তা পরে আর মনে থাকে না,নিজেকে কঠোর রাখেন কিন্তু আদোতেও তেমন না।এখন না তার ভাইটা মায়ের উপর রাগ করে চলে যায়,সোহানা মেয়েটা কেমন হবে কে জানে,একদিনে তো আর মানুষ চেনা যায় না!

সাহিলের বাবা সজল শেখ স্ত্রীর বিরো’ধীতা করে বললো–,,থামো রোজিনা!সব সময় তোমার সব সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে ভাবলে ভুল ভাবছো,তোমার ছেলে মেয়েটা কে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে সেখানে মেয়েটাকে কথা শোনাচ্ছো কেনো তুমি?ও কি জোর করে তোমার ছেলের ঘাড়ে চড়ে বসেছে?বিয়ে যখন হয়ে গেছে এই মেয়ে এখন থেকে এই বাড়ির বউ,আমার পুত্র বধু আমার বাড়িতেই থাকবে আর আমার ছেলেও, যাও ওদের ঘরে নিয়ে যাও।
রোজিনা বেগম রাগ দেখিয়ে ভিতরে চলে গেলেন।সজল দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজের বোনকে বললেন ওদের ভিতরে নিয়ে যেতে।

মেহেরিন পাশেই মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে কেনো যেনো মেয়েটার জন্য মায়া হচ্ছে ওর,এই মেয়েটা তার ভালোবাসার মানুষ কে না চাইতেও পেয়ে গেলো!সে এতো করে চেয়েও পেলো না আর এই মেয়েটি ভুল করে পেয়ে গেলো।
রৌফ মেহেরিন কে বললো–,,মেহেরিন সোহানা ভাবী কে ভাইয়ার রুমে দিয়ে আয় যা!

মেহেরিনের কানে কথাটা কয়েকবার বাজলো!সাহিলের বউ সোহানা,যে ঘরে সে ছোট্ট সংসার সাজানোর কথা ভেবেছিলো সে ঘরে আজ অন্য কাউকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কিনা তার উপরই পড়লো,কি নির্মম ভাগ্য তার?না পারা যায় সহ্য করা না পারা যায় চিৎকার করে করে দুঃখ প্রকাশ করা,এই বোবা কষ্ট, বোবা কান্নার দায়ভার তো শুধু মানুষের একার নিজের একান্ত ব্যক্তিগত!
মানুষ এক তরফা ভালোবাসে হয়তো এরকম দুঃখের ভোজার ভাগিদার হতে!

মেহেরিনের শ্বাস আটকে আসতে চাইলো শেষ বারের মতো তাকালো সাহিলের সাজানো গুছানো ঘরটার দিকে যেটা সে প্রায়ই গুছিয়ে দিতো মন মতো, আজ থেকে চিরতরে সে অধিকার হারিয়েছে সে,যদিও অধিকার বোধ কোনো কালেই ছিলো না!

মেহেরিন ফ্যাকাশে মুখে মিলন হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলো–,,বাড়িতে কে আছে আপনার?সাহিল কে কি করে চিনেন?যদি বলতে ইচ্ছে হয় বলতে পারেন জোর করবো না!

সোহানা ছলছল চোখে তাকালো মেহেরিনের কাছে মেয়েটার চোখ জোড়া বড় অসহায় ঠেকলো।সোহানা কাঁপা কন্ঠে বললো–,,শুধু মা আছে,সে ছাড়া পৃথিবী তে কেউ নেই আমার!

মেহেরিন নিজেকে অনুভব করলো সোহানার জায়গায়,হুট করেই নিজের মামির কথা ভাবলো, মেহেরিন ও তো এতিম বাবা নেই তাকে কি কখনো মেনে নিতো নিজের ছেলের বউ হিসেবে?সোহানা কেও তো মেনে নিচ্ছে না!সে কি বামুন হয়ে চাঁদ ধরতে চেয়েছিলো?তার তো কৃতজ্ঞ থাকা উচিত যদি মামা মামি না থাকতো তবে মেহেরিনের জীবন ও তো সোহানার মতোই হতো অতি সাধারণ! তখন কি সে সাহিল কে ভালোবাসার মতো দুঃসাহস দেখাতো?হয়তো না!যারা মেহেরিন কে দেখতে আসবে তারাও কি তাকে তার বাবা নেই দেখে অপছন্দ করবে?করতেই পারে স্বাভাবি, মামার ভোজ হয়ে আছে তারা যদিও কখনো সে রকম মনে হয়নি তার পরও নিজের ভিতরেই নিজেকে পরগাছা লাগে আজকাল।কথা বলতে আর ইচ্ছে হলো না মেহেরিনের নিজের ঘরে চলে গেলো সে!
————
এদিকে নেহা রেগে মে’গে বাড়িতে এসে হাজির কারন একটাই নিখিল তাকে না বলেই নামিরা কে নিয়ে বাড়ি চলে এসেছে,অন্য দিকে মেয়েকে না দেখে নেহার জা”ন যায় যায় অবস্থা!

নেহা এসে দেখলো নামিরা কে নিয়ে বাড়িতে উৎসব লেগে গেছে পুরোপুরি! নেহাকে দেখতে পেয়েই সবাই নেহার দিকে অভিমান নিয়ে তাকালো,নেহা কে দেখেই নামিরা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো–,,মাম্মা তুমিও এসেছো?পাপা বলেছে পাপার সাথে আসলে একটু পরে তুমিও চলে আসবে!

নেহা রাগ দেখিয়ে বললো–,,তোমার সাথে মাম্মা রাগ করেছে তুমি তাকে না বলেই চলে এসেছো তাই!

নামিরা কান ধরে বললো–,,আর হবে না মা।পাপা বললো তো তাই!

নেহার নামিরার কথার মাঝেই সেতারা বেগম বলে উঠলো–,,আমার নাতির ঘরে পু’তিরে তুই লুকাইয়া রাখছিলি তোর সাহস তো কম না!

সাহারা বেগম ও অভিমান করে বললো–,,আমাদের কে একবার জানালে কি এমন হতো?বড় আপা ভাইজান ও কিছু বললো না,যদি নিখিল না জানতো তাহলে কি তুই আমাদের কখনো জানাতি না?এতো রাগ আমাদের প্রতি?

জেরিন, নিঝুম এসে বললো–,,কাজ টা কি ঠিক করেছিস নেহা বইন?

নামিরা সবাইকে ধ’মক দিয়ে বললো–,,তু”প!চুপ!আমার মাম্মাকে কেউ বক’বে না বলে দিলাম!

সেতারা বেগম বললো–,,দেখছিস পুঁচকে টা কয় কি?

নামিরা দু হাত কোমরে রেখে বললো–,,তুমি কে?আমার মাম্মা কে কিছু বললে কিন্তু আমরা চলে যাবো!
শুধু দাদু ভাই দিদি ভাই ভালো তোমরা সবাই পঁ”চা,পঁ’চাদের সাথে নামিরা কথা বলে না।

সবাই মিট মিট করে হাসলো,নিখিল নেহা কে দেখে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো–,,আমি ঠিক জানতাম কান টানলে মাথা আসে,এবার দেখবো কি করে দূরে গিয়ে থাকিস তুই!

নেহা বিরক্তি নিয়ে তাকালো, লোকটার হাড়ে হাড়ে শয়”তানি।মেয়েটাকে ঠিক হাত করে ফেলেছে, তার মেয়েটাও হয়েছে একেবারে বাপ বাপ করে করে মাথা খারা’প করে দেয়!

নিখিল ডেকে বললো–,,নামিরা বাবা আসো পাপার কাছে।

নামিরা হাসতে হাসতে চলে গেলো,নেহা সেদিকে তাকিয়ে দেখলো শুধু কিন্তু নিখিল সে তো নেহা কে ভেংচি কে”টে চলে গেলো!

নেহা গাল ফুলিয়ে বসে পড়লো সোফায়,ডেকে বলে উঠলো–,,বড় মা তোমার ছেলেকে বলো আমার মেয়েকে দিয়ে দিতে না হয় বেশি ভালো হবে না কিন্তু!

নিখিল উপর থেকে বলে উঠলো–,,এই এমন ভাব করছিস মেয়ে কি তোর একার?হ্যাঁ হ্যাঁ একা একা কি তোর পেটে চলে এসেছিলো নাকি!

নেহা কানে হাত দিয়ে বললো–,,চুপ করুন অসভ্য লোক!বড় আব্বু তুমি কোথায় তোমার ছেলেকে কিছু বলো বলছি আমার কি রাগ উঠে যাচ্ছে এখন!

বাড়ির সবাই অনেক দিন পর নেহা নিখিল কে ঝগ’ড়া করতে দেখছে তাদের কাছে চক্ষু শীতল কারী ব্যাপার!

নেহা সোফার কুশন হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মার’লো নিখিলের দিক, পরে পেছন পেছন দৌড়ে গেলো নিখিল নামিরা কে কোলে নিয়ে রুমের দিক দৌড়ালো।সেতারা বেগম বললো–,,এরা শুরু হয়ে গেলো আবার!
———-
দুপুর হয়েছে রাহা,অথবা নেহা এসেছে ভেবেই দ্রুত দরজা খুললো তাহমিদা বেগম।
দরজায় দাঁড়ানো ব্যক্তিকে দেখে হাতে থাকা প্লেটটা শব্দ করে পড়ে গেলো নিচে।
শহিদুল চৌধুরী এসেছে,কতোদিন পর মানুষটার মুখোমুখি হলো তাহমিদা অভিমান গুলো যেনো এতোবছর পর আবার মাথা চাঁ’ড়া দিয়ে উঠলো!

শহিদুল চৌধুরী ডেকে উঠলো–,,তাহমিদা!
তাহমিদা বেগম কথা বলতে পারলেন না,দরজা ছেড়ে হেঁটে চলে গেলেন ভিতরে।

চলবে?