#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব২১(প্রথমাংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
ইরফান কে অস্থির হয়ে ফোন দিয়েই চলেছে নিখিল,তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে যেনো।ওইদিকে নেহা কে সামলাতে পারছে না কেউই।চিন্তায় চিন্তায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সবার মস্তি’ষ্ক।
টানা ত্রিশ টা ফোন কলের পর রিসিভ করলো ইরফান,সে ও উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো–,,কি হয়েছে এমপি সাহেব।আমি তো এখন সোহলের বাড়ি ঘিরে ফেলেছি যে কোনো মুহুর্তে তাকে ধরে ফেলবো!আপনি এমন সময় কেনো ফোন দিচ্ছেন?
নিখিল বলে উঠলো–,,সোহেল কে ধরতে যাবে না কেউ।ওর কাছে আমার মেয়ে আছে,আমার মেয়ের ক্ষ’তি করে ফেলবে শয়”তানটা!
ইরফান সতর্ক হয়ে বললো–,,কি হয়েছে নিখিল? আপনি আমাকে খুলে বলুন।
এরই মধ্যে ইরফান বাকি পুলিশদের সরে পড়তে বললো।
নিখিল ইরফান কে সব বললো।ইরফান বললো–,,ভেবে চিন্তে নতুন প্ল্যান বানাতে হবে, আপনি আমার সাথে এখনই দেখা করুন।না হয় অপরাধী হাতের নাগালের বাহিরে চলে যাবে!
———–
তাহমিদা বেগমের জ্ঞান ফিরেছে, তার সামনে বসে শহিদুল চৌধুরী কিছুটা দূরে রৌফ দাড়িয়ে আছে,মূলত রৌফই তাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে।
তাহমিদা বেগম সাতপাঁচ না ভেবে শহিদুল চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
–,,আমার নাতনি টাকে আমার সামনে থেকে এভাবে উঠিয়ে নিয়ে গেলো শহিদুল আমি কিছুই করতে পারলাম না।আমার মেয়েকে কি জবাব দিবো আমি।আমার মেয়ে যে ম”রে যাবে শহিদুল, তার বাঁচার সম্বল তুমি তাকে ফিরিয়ে এনে দাও।
শহিদুল চৌধুরী তাহমিদা বেগমের মাথায় হাত রেখে বললো–,,শান্ত হও তুমি।এভাবে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে,নিখিল খোঁজ করছে নামিরার খুব তাড়াতাড়িই পেয়ে যাবো আমরা,বিশ্বাস রাখো ওর কিচ্ছু হবে না দেখো।
তাহমিদা বেগম বললো–,,নেহা কোথায় ও কি জানে সব কিছু।
–,,নেহা এই পর্যন্ত তিন বার জ্ঞান হারিয়েছে।মেয়েটা কাঁদছে আর নামিরা বলে বলে চিৎকার করছে,তুমি ও এখানে কে সামলাবে ওকে।
তাহমিদা বেগম চোখ মুছে বললো–,, এই বাড়ি চলো আমি একদম ঠিক আছি,আমার মেয়ে কে দেখতে হবে আমাকে চলো।
রৌফ এবার পেছন থেকে বলে উঠলো–,,আন্টি উত্তে”জিত হবেন না আপনি বাড়িতে তো সবাই আছে,আপনি রেস্ট নিন মাথায় আঘা’ত লেগেছে আপনার।
তাহমিদা বেগম উঠে গিয়ে বললো–,,কিছু হয়নি আমার, এখনই নিয়ে চলো না হয় তোমরা থাকো আমি নিজেই যাবো।
তাহমিদা বেগম হেঁটে চলে গেলেন তার পেছনে শহিদুল চৌধুরী আর রৌফ।
———–
না পেরে নেহা কে শেষে ঘুমের ইনজে’কশন দিয়েছে ডক্টর।নিখিল অসহায় হয়ে পড়েছে একদিকে মেয়ে তো আরেক দিকে তার স্ত্রী। নেহা তো পাগ”লের মতো ব’কেই চলেছে।
নেহা যে রাগের ব’শে এসব বলেছে তা নিখিল জানে,তার পর ও দোষ টা আসলে তারই।এই রাজনীতি তার জীবনের সব সুখ কে”ড়ে নিচ্ছে।সে আসলেই ব্যর্থ বাবা,নিখিল গিয়ে পৌঁছালো থানায়।
নিখিল আসার পরেই ইরফানের সাথে ভিতরে গেলো।
এর কিছু সময় পর একজন কনস্টেবল এসে জানালো কেউ একজন তাদের সাথে দেখা করতে এসেছে।
ইরফান নাকচ করলেও নিখিল বললো যাতে আসতে দেয়।এরই মধ্যে ভিতরে প্রবেশ করলো বোরখায় আবৃত একজন মহিলা।
মহিলার মুখ উন্মোচিত হতেই নিখিল বলে উঠলো–,,আপনি!
মহিলা কিছুটা ইতস্তত করে বললো–,,আমি আপনাদের সাহায্য করতে চাই!
ইরফান কে নিখিলের কিছু বলা লাগলো না,মহিলা নিজেই সব কিছু বললো,ইরফান তার কথা প্রথম প্রথম বিশ্বাস না করলেও পরবর্তীতে বিশ্বাস করলো।তাকেও তাদের প্ল্যানে সংযুক্ত করলো।
—————
আরুশি বসে আছে বারান্দায়, বাড়িটা ইরফানের আরুশি এই পর্যন্ত কতোবার যে বলেছে আমি চলে যেতে চাই,মানুষটা এতো নাছোড়বান্দা যেতেই দিলো না উল্টো বলে দিলো এটা তার দায়িত্ব তাই সে করছে সুস্থ হওয়ার পর আর আটকাবে না।পুলিশের সহায়তা করার পরিবর্তে তাকে তারা সাহায্য করছে অন্য কিছুই না।
আরুশি ও এতো দিন রুম থেকে বের হয়নি এই বাড়িতে আর কেউ আছে কিনা তাও সে জানে না।
তবে মাঝেমধ্যে একটা মহিলা কে চিল্লাতে শুনেছে।
আরুশির ভাবনার মাঝেই সেখানে এসে হাজির হয় একজন অপরিচিত নারী, আরুশি তাকে চিনে না,না কখনো দেখেছে বাড়িতে কি করে ঢুকলো তাও বুঝলো না।
মধ্য বয়স্ক মহিলা এসেই আরুশির গালে একটা চ”ড় বসিয়ে দিলো।আরুশি বোকার মতো গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।
মহিলা কর্ক’ষ কন্ঠে বললো–,,এই নির্লজ্জ বেহা’য়া মেয়ে,বিয়ে না করে একজন ছেলের সাথে একই রুমে থাকছো লজ্জা করে না?কেমন মেয়ে মানুষ তুমি!
আরুশি অবাকের শেষ সীমানায় বলে কি এই মহিলা,কোন ছেলের সাথে আবার সে রাতে থাকলো!
মহিলা আবার বলে উঠলো—,, আমার ছেলের সাথে কি সম্পর্ক তোমার?কেনো আমার বাড়িতে পড়ে আছো?এই বাড়িতে কি বাবা মা নেই, কিছু শিখায়নি তোমাকে,বেহা”য়া কোথাকার।কেমন বাপ মা তোমার মেয়ে কোথায় থাকে কি করে খোঁজ রাখে না।বের হও আমার বাড়ি থেকে আমার সহজ সরল ছেলেটাকে পটিয়ে বাড়ি এসে উঠেছো কেনো!
আরুশি অবাকের শেষ চূড়ায়, তবে কি এই মহিলা ওই পুলিশ অফিসারের মা?যেমন ছেলে তেমনই মা কি ব্যবহার বাবা।
আরুশির জবাব দেওয়ার ইচ্ছে হলো না সে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।কোথায় যে আছে কিচ্ছু জানে না,সে যেখানে থাকতো সে জায়গা এখান থেকে কতদূরে কে জানে!
তাও রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলো ও কাউকে জিজ্ঞেস করলে কিছু তো বলে দিবে ঠিক পৌঁছে যাবে। এসব ফালতু মানুষের কথা অযথা কেনো শুনতে যাবে,সে তো কোনো খারা”প কিছু করেনি, মহিলা শুধু শুধু তাকে আজে’বাজে কথা শুনিয়ে দিলো।
———–
সোহেল, শিলা পরের দিন রাতে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে,এখস পর্যন্ত নিখিল কে চুপ থাকতে দেখে তারাও ভেবেছে ভয় পেয়ে গেছে নিখিল, সুযোগে পালাতে পারবে।
সে নিজের রুমে গিয়ে দেখলো নিখিলের মেয়ে তার ছেলেকে চুল টেনে ধরেছে!
সোহেলের মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে গেলো–,,যেমন বাপ তেমন মেয়ে,এখনই কেমন মারা”মারি করছে!
সোহেল ধম”ক দিয়ে বললো–,,কি হচ্ছে এখানে,এই মেয়ে সাহস তো কম না!
নামিরা চোখের পলক ফেললো দুই তিন বার তার পর বললো–,,চুপ,পঁচা আংকেল।তুমি পঁচা এই ভাইয়াটাও পঁচা। আন্টি বলেছে ওর সাথে খেলার জন্য আর ভাইয়া টা আমাকে ব’কা দিয়েছে।
সোহেল আবার বললো–,,বেশ করেছে বকা দিয়েছে।
সোহেলের ছেলে মানান বলে উঠলো–,,বাবা ওকে ব’কা দিচ্ছো কেনো?
সোহেলে রেগে বললো–,,ব’কা দিচ্ছো কেনো?ওরে বাবা কি দরদ এতো দরদ কিসের রে ওর জন্য, কে হয় তোর!
মানান বলে উঠলো–,,মা বলেছে ছোট বোন হয় ও আমার।
–,,তোর মা বললেই হলো, যাকে তাকে বোন বানিয়ে দিচ্ছে।
নামিরা আঙুল উঁচিয়ে বললো–,,এই যাকে তাকে বলছো কেনো?আমার নাম নামিরা তুমি জানো না?বোকা আংকেল।
সোহেল তেড়ে এসে কিছু বলতে যাবে মিনা এসে বললো–,,কি করছো কি সোহেল,তুমি না বললে ও তোমার বন্ধুর মেয়ে তাহলে তো মানানের বোনই হয়। এমন করছো কেনো?
সোহেল আর কিছু বললো না রেগে সেখান থেকে চলে গেলো।
নামিরা মিনা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,তুমি অনেক ভালো।আমাকে মাম্মার কাছে নিয়ে চলো।
মিনার বুকের ভিতর চিন চিনে ব্যাথা অনুভব করলো,তার সন্তান কে যদি কেউ তার থেকে কে’ড়ে নিতো এতো সময় নিজের সন্তান কে না দেখে তার মায়ের যে কি অবস্থা হচ্ছে আল্লাহই ভালো জানেন।মিনা নামিরা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,নিয়ে যাবো তো মা,আমি যাবো তোমার মানান ভাইয়া ও যাবে আমাদের সাথে,কালই যাবো আজকে তো আন্টির কাজ আছে।
নামিরার হাসিখুশি মুখটা মলিন হয়ে গেলো সে ছুটে বিছানার উপর উঠে বসে পড়লো,ছোট বাচ্চাটার চোখে জল টলমল করতে লাগলো।কিছু সময়ের ব্যবধানেই সেই মাম্মা বলে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
মানান তার মায়ের দিক তাকিয়ে বললো–,,মা ওর মা কোথায়?ওকে এখানে কেনো রেখে গেছে!
মিনা কি জবাব দিবে বুঝে উঠতে পারলো না, না পারলো কান্নারত মেয়েটার কান্না থামাতে।সে ও তো মা কি করে সহ্য করবে একটা বাচ্চার আহা’জারি!
——–
চৌধুরী বাড়িতে এসে হাজির হলো সাহিলদের বাড়ির সবাই,নিখিলের মামা বাড়ির সবাই।সাব্বির, শিশির তাদের পরিবার ও এখানেই আছে।
সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারোর।নেহার কষ্ট যেনো কেউই সহ্য করতে পারছে না।নিখিল তাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।আর বার বার তাকে বলছে–,,নিখিল আমার মেয়েকে এনে দাও তুমি যা বলবে তাই শুনবো আমি, কোনো দিন অবা’ধ্য হবো না। প্লিজ এনে দাও আমার মেয়ে ছাড়া আমি বাঁচ’বো না।
চলবে….
#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব২১(শেষাংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
হন্তদন্ত হয়ে রুমে আসলো সোহেল।যদি তার ধারনা সঠিক হয় তো সে আর ভাবতে পারছে না,রুমে দরজা জোরে জোরে কয়েকবার ধাক্কা দিলো, পৃথিবীর সব মানুষই তার ভালোবাসার মানুষের কাছে দুর্বল ঠিক তেমনই সোহেল।মানুষ সব সহ্য করতে পারলেও নিজের একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটার সাথে কাউকে কখনো কল্পনা ও করতে পারে না।
সোহেল অধৈর্য হলো জোরে আরেকবার ধাক্কা দিতেই দরজা টা খুলে গেলো।
দরজা খুলে যা দেখলো তাতে সোহেলের পায়ের তলার মাটি সরে গেলো যেনো।মিনা এমন টা করতে পারলো তার সাথে?
সোহেল জোরে চেঁ’চিয়ে ডাকলো–,,মিনা!
মিনা ঠিক আগের ভঙ্গিতেই সোহেলের দিকে তাকিয়ে তার পাশে বসা ছেলেটা শুধু হাসলো।
সোহেল তেড়ে এসে ছেলেটির কলার চেপে ধরলো।মিনার দিকে তাকিয়ে বললো–,,আমার সাথে এমনটা কেনো করলে মিনা?আমি কি তোমাকে কম ভালোবেসেছিলাম!
মিনা আলতো হেসে বললো–,,প্রশ্ন টা তো আমার করা উচিত সোহেল!বলো তোমাকে কি আমি কম ভালোবেসেছি?তাহলে কেনো আমাকে ধোঁ’কা দিলে,দিনের পর দিন শুধু মিথ্যা বললে?কেনো সোহেল?আমার কাছে নিজের সব অপক’র্মের কথা তুমি গোপন করলে,জানো না সত্যি কোনো দিন চাপা থাকে না!তোমাকে আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি যার জন্য এভাবে ঠকিয়েছো আমাকে?আমার ভালোবাসার এই প্রতি’দান দিলে তুমি,ধোঁ’কা, বিশ্বাস’ঘাতকতা,এতো ভালোমানুষ সেজে ছল’না না করলেও পারতে সোহেল।তুমি এটা একবার ভাবলে না তোমার কা’লো সত্যি জানার পর তোমার ভালোবাসা কতোটা কষ্ট পাবে?আর তোমার সন্তান তার কথা ভাবোনি তুমি?তোমার কাছে তো আমি ভালোবাসা ছাড়া আর কিচ্ছু চাইনি তবে?এতো সম্পদ এতো ঐশ্বর্য কোনো দিন চেয়েছি আমি?সাধারণ জীবন একটা সুন্দর সংসার চেয়েছি শুধু আমি। আর তুমি কিনা লো’ভ লাল”সায় সব কিছু ধ্বং’স করে দিয়েছো?এখন তোমার ভালোবাসার কথা মনে পড়লো, যখন আমাকে আর আমার ছেলে কে এখানে রেখে চলে যাওয়ার প্ল্যান তৈরি করেছিলে তখন মনে ছিলো না তুমি কাউকে ভালোবাসা, কেউ তোমার জন্য অপেক্ষা করে তোমাকে বিশ্বাস করে?আমি যদি জানতাম যে সোহেল কে আমি ভালোবেসেছি সে সোহেল এতোটা নির্দ”য়,যার মানুষ কে খু”ন করতে হাত পর্যন্ত কাঁপে না, যার অন্যের ক্ষ’তি করে শান্তি মিলে বিশ্বাস করো তাকে ভালোবাসা তো দূর তার দিকে চোখ তুলেও দেখতাম না।তোমাকে শুধু ঘৃ’ণা করি বললে ভুল হবে তোমাকে ঘৃ’ণা করতেও আমার লজ্জা লাগছে!
সোহেল মাথা নত করে থাকলো মিনার দিকে এগিয়ে এসে তার দু বাহু আলতো হাতে ছুঁয়ে বললো–,,আমি মানুষের অনেক ক্ষ’তি করেছি, আমি অনেক খারা”প একটা মানুষ, তবে বিশ্বাস করো কাউকে খু”ন করিনি।আমি আমার ভুল স্বীকার করবো আইন যা শা’স্তি দিবে মাথা পেতে নিবো তবুও তোমার প্রত্যাখান সহ্য করতে পারবো না প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও!
মিনা দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো–,,একটা মানুষের জীবন যে কে”ড়ে নিতে পারে তার কথা বিশ্বাস করতে পারি না আমি।তোমাকে পুলিশের হাতে দিয়ে আমি এখান থেকে চলে যাবো, তোমার সাথে এই আমার শেষ দেখা,জানি না কি হবে তোমার সাথে তবে আমি চাই না আমার ছেলে তার বাবার মতো হোক,যে বাবাকে আমার ছেলে নিজের আই’ডল মনে করতো সে না জানুক তার বাবা কতোটা কু’খ্যাত। আমি চাই না আমার সন্তানের দিকে মানুষ আঙুল দিয়ে বলুক ওই যে সন্ত্রা’সীর ছেলে যায়!
শিলা এক হাতে মানান আরেক হাতে নামিরার হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে বললো–,,চুপ করো ভাবি তোমার এসব জ্ঞান নিতে বসে নেই আমরা।যদি নিজের ভালো চাও তো আমাদের কে চুপচাপ যেতে দিবে আর না হয় তোমার ছেলে আর এই নিখিলের মেয়েকে এক সাথে শেষ করবো!
সোহেল বলে উঠলো–,,শিলা তুই এসবের মাঝখানে আসবি না যা এখান থেকে।
শিলা রেগে বললো–,,ভাইয়া তোমার এসব প্রেম ভালোবাসার কথা আগে মনে ছিলো না?এখন এতো আবেগের সময় নেই,আমাদের যেতে হবে পুলিশ আসার আগেই।
তখনই ইরফান বলে উঠলো–,,পুলিশ তো এসে গেছে মেডাম!
শিলা আসেপাশে তাকালো,মিনা বললো–,,এতো তাকিয়ে লাভ নেই,ইরফানই পুলিশ আর তোমাদের পালানোর পথ নেই,তোমরা এখন পুলিশের আওতায় আছো!
শিলা নিজের পকেট থেকে একটা পিস্ত’ল বের করে ধরলো মানানের দিকে,আরেকবার নামিরার দিকে,বাচ্চা দুটো ভয়ে কেঁদে উঠলো।
সোহেল বলে উঠলো–,,পাগ’ল হয়ে গেছিস শিলা ভুলে যাস না মানান তোর ভাইয়ের ছেলে।
শিলা পেছাতে পেছাতে বললো–,,এসব সম্পর্ক মনে রাখার সময় এখন না, তুমি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও আমি করবো না।
পেছন থেকে এসে শিলার হাত থেকে পি’স্তল কে’ড়ে নিলো নিখিল, সুযোগ বুঝে শিলাকে ধাক্কা দিলো নেহা।
শিলা পড়ে যেতেই ওকে ধরে ফেললো কয়েক জন পুলিশ।
নামিরা নিজের মাকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো–,,মাম্মা তুমি এসেছো, নামিরার অনেক ভয় লেগেছে।
নেহার উষ্ক’খুষ্ক চুল মলিন চেহারা ফুলা চোখ তবুও মুখে হাসি, তার মেয়েটা তো ঠিক আছে আর কিছু চাই না তার।
মেয়ে কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। চুমুতে ভরিয়ে দিলো পুরো মুখ।আদুরে কন্ঠে বললো–,,অনেক কষ্ট হয়েছে না মা,মাম্মা স্যরি বলছে তো আর কখনো তোমাকে একা ছাড়বে না।
নামিরা নেহার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো–,,আন্টি ভালো তো নামিরা কে আদর করেছে, নামিরা শুধু মাম্মা কে অনেক মিস করেছে।
নিখিল পাশ থেকে অভিমানী কন্ঠে বললো–,,আর পাপা কে মনে পড়েনি তাই তো।
নামিরা নেহা কে ছেড়ে এক ছুটে নিখিলের কোলে উঠে গেলো জড়িয়ে ধরে বললো–,,নামিরা পাপা কে ও মিস করেছে, অনেক বেশি।
নিখিল নামিরার কপালে চুমু একে দিয়ে বললো–,,পাপাও এত্তোগুলা মিস করেছে,জানিস তো তোর মা না আমাকে অনেক ব’কেছে।
নেহা রাগী চোখে তাকালো কি বজ্জা’ত লোক মেয়ের কাছে তার নামে বিচার দিচ্ছে!
নামিরা বাবার পক্ষ নিয়ে বললো–,,মাম্মা পাপাকে কেনো ব’কেছো,স্যরি বলে দাও।
নেহা আলতো হেসে বললো–,,স্যরি।
নিখিল নেহা কে একটু ধাক্কা মে’রে বললো–,,অবশেষে মেয়ের কথায় জীবনে নিজ থেকে একটা স্যরি তো বললি।
নেহা মুখ ভেংচি কাট’লো।
শিলা কে নিয়ে যাওয়া হলো,সোহেল মিনার দিকে আকুল হয়ে তাকিয়ে একটা সুযোগের আশায়,মিনার মন গলবে কিনা জানা নেই,তবুও ভালোবাসা তো পবিত্র,ভালোবাসায় তো সা”ত খু”ন ও মাফ ধরা হয়,সোহেল কি ক্ষ’মা চাইতে পারে না তার প্রিয় মানুষের কাছে।হ্যাঁ পারে তাই তো তার আকুল আবেদন প্রেয়সীর নিকট আর একটি বার ভালোবাসো বিশ্বাস করো ঠকা’বো না!
————
নামিরা কে নিয়ে বাড়িতে খুশির ছড়াছড়ি, নামিরার সুবাদে মান অভিমান শেষে তাহমিদা বেগম রাহা ও বাড়িতে চলে এসেছে।
বড় একটা বিপ’দ কা’টলো মাথার উপর থেকে।দুপুরে এক সাথে খাওয়া দাওয়া হলো,নামিরার চিন্তায় সবাই তো ভুলেই বসে ছিলো বাড়িতে কারো বিয়ে।
যদিও সাহিল রা বলেছে তারিখ পিছিয়ে দিবে সমস্যা নেই তার পরও সবাই কে জানিয়েছে তাই আগের তারিখেই বিয়ে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
আর বাকি চারদিন,তাতেও কতো কাজ গায়ে হলুদ করতে হবে। এখনো কেনাকাটা শেষ হয়নি, আত্মীয়দের মধ্যে সবাই কে বলা হয়নি।বাড়ি সাজাতে হবে, এমপির ভাইয়ের বিয়ে আত্মীয় ছাড়া বাহিরের মানুষ ও অনেক দাওয়াত দেওয়া লাগবে। নিরাপত্তার দিক খেয়াল রাখতে হবে, এ যেনো সব কাজ মাথার উপর ঘুরছে।
কাজে লেগে গেলো সবাই। শপিং করতে ছুটলো ছোটরা, নিখিল, মিহির গেলো ওদের সাথে।
রোহান,নিশাত,সাব্বির মিলে রৌফ কে ফোন করলো,যেভাবেই হোক মেহেরিন কে নিয়ে আসতে,এক সাথে নিঝুম আর মেহেরিন কিছু সময় কাটাতে পারবে ওদের মধ্যে বন্ডিং একটু ভালো হবে।
রৌফ পড়েছে জ্বা’লায় মেহেরিন কে সত্যি বললে কিছুতেই যাবে না, এমনিতেই ওর লজ্জায় যায় যায় অবস্থা এখন যদি বলে তোকে শপিং এ ডেকেছে নিঝুম ভাই, মেহেরিন তো আলু প’টল যা সামনে পাবে তাই ছু’ড়ে মা’রবে তার উপর।
রৌফ গেলো সোহানার কাছে, এক মাত্র সোহানার কথা যদি একটু শুনে মেয়েটা।
রৌফ সোহানা কে বলেছে–,,তারা তিন জন মিলে একটু শপিং করতে যাবে,মেহেরিনের বিয়ে উপলক্ষে তো মা ফুপ্পি মিলে কিনবেই, এর বাহিরে ওরা ও কিছু নিলো নিজের পছন্দ মতো।
সোহানা কতক্ষণ গড়িমসি করলো সে যাবে না।কিন্তু রৌফ যাবে না তাকে ছাড়া,সোহানা সাহিল কে না বলে যেতেও চাচ্ছে না।
সোহানা মোবাইল হাতে নিয়ে কয়েকবার রেখে দিয়েছে ফোন দিতে গিয়েও দেয়নি, কোথাও একটা সংকোচ যেনো থেকেই যাচ্ছে।
সাহস জুগিয়ে কল করেই ফেললো,তাও আঙুল কাম’ড়ে ধরে রেখেছে নিজের, কেমন অস্তি’ত্ব ফিল হচ্ছে।রিসিভ হওয়ার পর কিছু সময় চুপ রইল সোহানা,ওপর পাশ থেকে সাহিল হ্যালো বলতেই সোহানা বলে উঠলো –,,রৌফ ভাইয়া বলছিলো তাদের সাথে শপিং এ যেতে আমি কি যাবো।
সাহিল প্রথমে দেখেই নি কে ফোন করেছে, সোহানার কন্ঠ শুনে হেসে উঠলো তার পরে বললো–,,আমার অনুমতি নিচ্ছো যে?তুমি তো চাইলেই যেতে পারো!
সোহানা কি বলবে বুঝতে পারলো না,আসলেই তো সে কেনো সাহিলের অনুমতি নিতে গেলো।সোহানা কল কে’টে দিলো।
সাহিল ম্যাসেজ পাঠালো–,,ঠিক আছে যাও সাবধানে যাবে কেমন।আর যা যা পছন্দ হয় সব নিবে,আমার যা আছে তা দুজন মিলে খেয় দেয়ে, ঘুরে ফিরে উড়িয়ে দিবো,এতো টাকার চিন্তা করবে না।যদি করেছো মাই”র লাগাবো তোমায়!
সাথে দুটো স্মাইলি ইমুজি।ম্যাসেজ দেখে সোহানা নিজেও হেসে ফেললো।
——
শপিং মলে এসে মেহেরিন কে রৌফ ওখানেই পাঠালো যেখানে আগে থেকে নিঝুম দাড়িয়ে।
ওরা সব গুলো বাহিরে আড়ি পেতেছে, দেখার জন্য কি প্রতিক্রিয়া দেয় দুজন।
তাদের ধারনাই ঠিক, যেই নিঝুম ঘুরেছে ওমনি লাগলো দুজনের ধাক্কা।নিঝুম সামনের ব্যক্তি কে বাঁচাতে তাকে আঁকড়ে ধরলো।মেহেরিন চোখ খুলে নিঝুম কে দেখে আরো জোরে দিলো চিৎকার।
আশেপাশের লোকজন আসলো এগিয়ে,মেহেরিন নিঝুম কে বলে উঠলো —,,আপনি?মেয়েদের কে ধাক্কা দিয়ে সাহায্য করার নাম করে ছি!ছি!
মানুষ জন আছে ভালোই একজন তো বলেই ফেলেছে–,, আপা কোনো সমস্যা?
নিঝুম ও কম কিসে, এ মেয়ে যে হাড়ে বজ্জা”ত বুঝতে বাকি নেই ওর, সে ও বলে উঠলো–,,না না ভাই কোনো সমস্যা না,আমার বউ রাগ করেছে তাই এখন এমন করছে আমার সাথে।
আরেক জন বলে উঠলো –,,মিয়া নিজেগো সমস্যা বাড়িত গিয়া মিটিয়ে নেন,রাস্তা ঘাটে এসব করছেন কেনো?আপা আপনি ও না নিজের স্বামী কে সবার সামনে অপ’মান করছেন!
মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,আমি আপনার কোন জন্মের বউ।
নিঝুম কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো–,,এই জন্মের।
–,,বিয়ে করবো না আমি।
নিঝুম হেসে বললো–,, পারলে আটকে দেখান!
চলবে…