#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব২২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নিঝুম বাড়িতে এসে আগে ঢুকলো ওর দিদুনের ঘরে,ওনার বলা শান্ত মেয়েটা যে একটা অভ’দ্র অস’ভ্য তা বুঝতে আর বাকি নেই তার,ভোলা ভালা চেহারা দেখিয়ে সবাইকে বুঝ দিতে পারলেও নিঝুম কে দিতে পারবে না।সে নিজে বিয়ে ক্যা’ন্সেল করবে,তখন এই মেয়ের উচিত শিক্ষা হবে।
বাড়ি বয়ে গিয়েছে বলে ভাব বেড়ে গেছে, এমন করছে যেনো তাকে বিয়ে করার জন্য নিঝুম তিন বেলা অনশন করছে।
সেতারা বেগমের মুখের উপর সাফ সাফ বলে দিলো–,,দিদুন ওই মেয়েকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না,ভদ্রতার লে’স মাত্ররো নেই!তোমার কথায় রাজি হয়েছি কিন্তু আর না, এটা কে জীবনে জড়িয়ে নিজের জীবন শে’ষ করতে পারবো না।তুমি ফোন করে না করে দাও না হয় আমিই বলে দিচ্ছি।
নিঝুম কে রেগে যেতে দেখে সব ভাই বোনের মাথায় হাত।
মেহেরিন কে ডেকে আনা যে এতো কিছু বয়ে আনবে কে জানতো।
মেহেরিন ও ভীষণ রেগে আছে,দৌড়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো।তখনই তার মা তাকে ডেকে বললো–,, কি রকম অভদ্রতা মেহেরিন,কাকে বলে বেরিয়ে ছিলে তুমি?আজ বাদে কাল বিয়ে হবে এখন এতো ঘুরাঘুরি কিসের!
মেহেরিন রেগে বললো–,,বিয়ে,বিয়ে,বিয়ে।আর কিছু বলতে পারো না তোমরা,করবো না আমি বিয়ে,তোমরা যখন যা বলেছো চুপচাপ সব শুনেছি মেনে নিয়েছি,তাই বলে কি আমার সখ আহ্লাদ পছন্দ কিচ্ছু থাকতে পারবে না?পুতুলের মতো নাচিয়ে গেলে এতো গুলো বছর,আর কতো?এবার তো শান্তি দেও, নিঝুম কে বিয়ে করবো না আমি, ওই লোকটা কে একদম পছন্দ না আমার।বিয়ে করবো না বুঝেছো না করে দাও ওদের!
মেহেরিন থামতেই তার মা তার গালে স্ব জড়ো একটা চ’ড় বসিয়ে দেয়।
মেহেরিন গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে পড়ে।রোজিনা বেগম বলে উঠে–,,কি করছিস জামিলা।এতো বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলছিস কেনো?
জামিলা কেঁদে বললো–,,আর কি করতাম ভাবি আমি।আমার মেয়েটা যে দিন দিন এতোটা স্বার্থ’পর আর বেয়া’দব হয়ে গেছে মা হয়ে বুঝতেই পারিনি আমি।ওর বাবা কে আমি কথা দিয়েছিলাম তার মেয়েকে আমি মানুষের মতো মানুষ করবো।কিন্তু আজ সে কি রকম ব্যবহার করছে,বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমাদের সবার মান ইজ্জত ডুবিয়ে দিতে চাচ্ছে।নির্ল’জ্জ মেয়ে বিয়ে ভাঙ্গার কথা বললো কোন সাহসে।
জামিলা বেগম আবার তেড়ে আসতে চাইলেন তাকে আটকালো সোহানা,জামিলা বেগম আঁচলে চোখ মুছে বলতে লাগলেন–,,তুই তোর মামা মামির কথা একবার ভাবলি না,তোকে এতো দিন ধরে লালন পালন করলো,তোর যে বাবা নেই সে কথা তুই ভুলে গেছিস?যদি আমার ভাই ভাবি না থাকতো আজ তোর অবস্থান কেমন হতো ভুলে গেছিস তুই?যাবিই তো তোকে তো আর মানুষ করতে পারিনি,যা খুশি কর তুই, যা আজ থেকে আর আমাকে মা বলে ডাকবি না,তোর মা ম’রে গেছে, যে মেয়ে আমার সম্মানের কথা ভাবে না তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই!
মেহেরিন মুর্তি”র ন্যায় দাড়িয়ে কথা শুনছে,তার বুঝ হওয়ার পর এই প্রথম হয়তো সে উচ্চবাক্য করেছে,নিজের মনের কথাটা ইচ্ছাটা সবাই কে জানিয়েছে,আর কি হলো!
যতদিন সে বাকি সবার স্বা’থের কথা ভেবেছে ততোদিন সে ভালো, এখন নিজেরটা বলায় মনে করিয়ে দিলো সে আসলে কে,তার ভিত্তিটাই যে নড়বড়ে!
মেহেরিন ধীরে পায়ে হেঁটে উপরে চলে গেলো।
——-
সেতারা বেগম খাওয়া নাওয়া বন্ধ করে বসে আছেন,তার নাতি তার সাথে এমন টা করবে তিনি ভাবতেও পারছেন না।কি করে বলবেন তিনি নিঝুম বিয়ে করতে চায় না।ওইদিকে তো সবাই কে দাওয়াত ও দিয়ে ফেলা হয়েছে , বাড়ির বউ রা যাবে কেনাকাটা করতে এই মুহুর্তে!
সেতারা বেগম নিজের ঘরে গিয়ে খিল আটকালেন, বিয়ে করবি না মানে কিভাবে করাতে হয় তা খুব ভালো করেই জানা আছে সেতারা বেগমের।
তিনি ফোন করলেন রোজিনা বেগম কে।রোজিনা বেগম ফোন রিসিভ করলেন ইতস্তত ভাবে বললো কিছুক্ষণ আগের সব ঘটনা,সেতারা বেগম ও সব বলে দেন।দুজন মিলে কিছু একটা ঠিক করে হাসি মুখে ফোন রাখেন।
তখন রাতের খাবারের সময় হয়েছে সেতারা বেগম আগে এসে খেতে বসলেন,সবাই একটু অবাক হলো বটে,সেতারা বেগম তো এতো সহজে মেনে নেওয়ার পাত্রী নয় তবে?
নিঝুম নিজের দিদুনের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করলো,না সে চুপচাপ খেয়েই যাচ্ছে।
সবার খাওয়া প্রায় শেষের দিকে,নিঝুম উঠতে নিলো তখনই সেতারা বেগম ডেকে বললো–,,নিঝুম দাঁড়া কথা আছে।
নিঝুম আবার চেয়ার টেনে বসলো,সেতারা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,তুই মেহেরিন কে বিয়ে করবি না এটা আমি এক শর্তে মেনে নিবো!
নিঝুম একবার সবার দিকে তাকালো সবাই তাদের দিকেই তাকিয়ে, নিঝুম ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,,কি শর্ত?
সেতারা বেগম ভনিতা ছাড়াই বললেন–,, মেহেরিনের বদলে অন্য কেউ বউ হবে,সেই মেয়ে কে ও আমি ঠিক করেছি,বিয়ের আগে মেয়েকে দেখতে পারবে না তুমি,তবে বিয়ে একই দিনে হবে।তোমার কথা রাখতে বাড়ির সম্মান নষ্ট করতে পারবো না আমি,তাই ওই দিনেই বিয়ে টা হবে।যদি তুমি রাজি থাকো তো!
নিঝুম কিছুটা চিন্তিত হলো, দিদুনের যা পছন্দ না জানি কোন মেয়ে ধরে আনে,তার চেয়ে তো ওই মেহেরিনই ভালো ছিলো,অন্তত দেখতে তো পেয়েছে,এতো সাস”পেন্স করে বিয়ে করার কি দরকার!
নিঝুম নিজের ভাব বজায় রাখতে বললো–,,তোমার শর্তে আমি রাজি।
বলেই হনহনিয়ে চলে গেলো,সাহারা বেগম ছেলের সিদ্ধান্তে হতাশ হলেন।মেহেরিন কে তার বেশ মনে ধরেছে মেয়েটা কি মিষ্টি দেখতে।
সেতারা বেগম সবার উদ্দেশ্য বললো–,,যাও নিজেদের কাজে মন দাও।বিয়েতে যেনো সব কিছু ঠিক ঠাক হয়।
নেহা নামিরা কে ঘুম পারিয়ে তখনই নিচে নামলো সবাই কে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো –,,কি হয়েছে?
নিশাত,রোহান সব কিছু বলে দিলো।নেহা নিখিল কে খুঁজলো আশেপাশে।নেতা না একটা জল”জ্যান্ত ভুলভু’লাইয়া।কখন কোথায় যে যায় কে জানে।
সাব্বির আসলো সাথে তোহা,কিছুক্ষণ পর আসলো শিশির,তার পেছনে নিখিল,মিহির।
মিহিরের পড়নে এখনো এ’প্রোন যার মানে তাকে এখনই নিখিল ল্যা’ব থেকে তুলে এনেছে।
সাব্বির বলে উঠলো–,, এই আমাদের বর মশাই কোথায়,দাদী তাকে কি শু’লে চড়িয়ে নাকি গর্দা’ন নিয়েছে কোনটা?
জেরিন হাই তুলে বললো–,,তোর জেনে কি কাজ বাপু,তুই বরং একটা কাজ কর তোর যে এসাইনমেন্টের পিডিএ’ফ টা আছে ওটা আমাতে সেন্ড করে দে, আমার এখনো করা হয়নি ভাই তোর টা দিয়ে কাজ চালিয়ে নিবো!
সাব্বির অবাক হয়ে বললো–,, তুই এখন ও বানাসনি,আরে আমি তো ভেবেছি তোর টা নিয়ে দিয়ে দিবো।
জেরিন বিরক্ত হয়ে বললো–,,কাম চো’র একটা।
সাব্বির জেরিনের মাথায় একটা মে’রে বললো–,,তুই কি হ্যাঁ?
তোহা বলে উঠলো–,,ভাইয়া তুমি বললে তোমরা মিলে আড্ডা দিবে তাই এসেছি, আর এসে এখন পড়াশোনায় ঢু’কে পড়লে এটা কিন্তু ঠিক না।
নিশাত বলে উঠলো–,,কোন দিকে আজ সূর্য উঠেছেরে?পড়ুয়া অন্য কাউকে পড়তে দেখে বিরক্ত হচ্ছে।
রোহান বললো–,,এটা তো হওয়ারই ছিলো, তোরা জানিস না পড়ুয়া বিল্ডিং গুলা কতো হিংসু’টে হয়,মানুষ কে পড়তে কেনো দিবে।
তোহা বলে উঠলো–,,একদম ফালতু কথা বলবে না রোহান ভাইয়া,আমি কি আপুদের ক্লাসের যে তাদের হিং’সে করবো?
নেহা বলে উঠলো–,,এই থামবে তোমরা।যাও তো যে যার কাজে যাও।
নিখিল বলে উঠলো–,,নিঝুম ব্যা’টা কে ধরে নিয়ে আয় যা ওর ক্লাস নিতে হবে।
মিহির বললো–,,ভাই আগে আমার বিয়েটা ঠিক কর,বয়স তো রকেটের গতিতে বাড়ছে।
শিশির বলে উঠলো–,,তোর বিয়ের পাত্রী রাজি তো?
মিহির মন খারাপ করে বললো–,,তোমার কু’ফা টা লেগেছে শিশির ভাই আমার উপর,তুমি বিয়ে করছো না তাই আমাদের টা যাতে না হয় সে জন্য দোয়া করছো মনে মনে।
সাব্বির লাফিয়ে উঠে বললো–,,ঠিক কথা বলেছো মিহির ভাই।
শিশির বলে উঠলো–,,কো’চ তো শারা’ম কার কামি’নে!
সাব্বির বলে উঠলো–,,তোমার এসব হিন্দি শুনেই তোমার প্রেমিকা ব্রেকআপ করেছে আমি একশো পার্সেন্ট শিউর!
শিশির তেঁতে উঠে বললো–,, একদম ওকে নিয়ে কিছু বলবি না!
মিহির বলে উঠলো–,,আহা কি প্রেম কি প্রেম!
এদের মধ্যে বসে থাকা বৃষ্টি, রাহা চুপ।কিছু সময় পর নিঝুম আসলো,তাকে এক প্রকার টেনে আনলো নিশাত।
নিঝুম আগে ভাগেই বলে উঠলো–,, মেহেরিন নামক মেয়েটা কে নিয়ে কিছু বলবে না বলে রাখছি,ওই বিষয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।
নিখিল নিঝুমের কান টেনে ধরে বললো–,,এ্যাহ এসেছে,কিছু বলবো না।এই কি সমস্যা রে তোদের মেয়েটা কি এমন করেছে তোকে যার জন্য এভাবে রিয়েক্ট করেছিস।বিয়ে করবে না বলছে,তুই বিয়ে করবি সাথে তোর দাদাও করবে।
নিঝুম বলে উঠলো–,,দাদা ভাই করলে করুক আমি করবো না।
মিহির বলে উঠলো–,,হ্যাঁ করিস না ভাই, তোর বিয়ের দিন আমি বিয়ে করে নিবো,এমনিতেও তোর বয়স বেশি না।
বৃষ্টি এবার বলে উঠলো–,,মিহির ভাই আপনি এতো বিয়ে পাগ’ল কেনো?মামি জানে তো তার সুপুত্র দিনে পাঁচশো বার বিয়ে করবো বিয়ে করবো বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে।
জেরিন এবার বলে উঠলো–,,এই তোমরা থাকো তো,এই সাব্বিরা আয় আমার সাথে এসাইনমেন্ট টা শেষ করি।
সাব্বির না মুখ কুঁচকে বললো–,,নো পড়াশোনা, তুই গিয়ে কর,এই বাকিরা চলো আড্ডা দিবো।নিঝুম ভাইয়ের বিয়ের আগে একটু আলোচনা করা যাক।
সবাই বক বক করতে করতে ছাদে উঠে গেলো।
————–
দেখতে দেখতে নিঝুমের গায়ে হলুদের দিন চলেই আসলো,কিন্তু বেচারা এখনো জানেই না তার বউ কে।
অনুষ্ঠান জমজমাট হয়ে উঠেছে বিকেলে বাড়ির সব ছোটরা মিলে নাচ গানের আয়োজন করেছে।
প্রথমেই পারফর’ম্যান্স করবে জেরিন আর সাব্বির।
তারা দুজনেই স্টেজে উঠে পড়লো।
সাব্বির প্রথমেই বলে উঠলো–,, জানতাম তুই সেই পে’ত্নী সেজেই আসবি।
জেরিন মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো–,, এতো সময় ধরে সেজেছি একদম বা’জে কথা বলবি না।
ওদের কথার মাঝেই গান বেজে উঠলো—,,হোনা থা পেয়ার হোয়া মেরে ইয়ার!
গানের তালে তালে সব স্টেপ করতে লাগলো ওরা,জেরিন একবার দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বললো–,, কিরে গান পরিবর্তন হয়ে গেলো কেনো?এটা তো কথা ছিলো না।
সাব্বির হেসে বললো–,,গান টা শোন বাকি কিছু তোর বুঝতে হবে না।
এক সময় নাচ শেষ হলো শেষ স্টেপে দুজন একসাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে।
দাড়িয়ে হাসছে দুজন,তখনই সাব্বির ডেকে উঠলো–,,জেরিন।
জেরিন বললো–,,হুম!
সাব্বির বললো–,,ভালোবাসি তোকে!ভালোবাসবি আমায়?হবি আমার কল্পনার চন্দ্রিমা?
তোকে ভালোবেসে ডাকবো আমি আমার পূর্নিমা!
জেরিন ফট করে সরে দাড়ালো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সাব্বিরের হাস্য উজ্জ্বল মুখের দিকে।
তাকিয়ে থেকেই দৌড়ে নিচে নেমে গেলো,একবার পিছু ফিরলো অবশ্য দেখলো সাব্বির এখনো তার দিকে তাকিয়ে তার সেই সুন্দর চোখ জোড়া দিয়ে,যে চোখে বার বার হারাতে চেয়েও নিজেকে দমিয়ে রেখেছে জেরিন।এখন কেনো যেনো তার কাছে সব কিছু অদ্ভুত মনে হচ্ছে,বড্ড এলোমেলো অগোছালো!কি নাম দিবে এই অনুভূতির?
চলবে?