প্রণয়ের সুর ২ পর্ব-২৩

0
953

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব২৩
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
প্রায় সন্ধ্যা হতে চলেছে,সেই সময়কার পর থেকে সাব্বির আর জেরিন কে দেখছে না,মেয়েটা কি খুশি হয়েছে,নাকি অবাক হয়েছে।যদি জেরিন সাব্বির কে শুধু বন্ধু মনে করে তবে তো তার রাগ করার কথা ছিলো, মেয়েটা এভাবে কিছু না বলে চলে যাওয়ায় এখন সাব্বিরের চিন্তা যেনো আরো বাড়ছে।

পুরো অনুষ্ঠানে আর জেরিন উপস্থিত হলো না।সবাই নিজেদের মতো আনন্দ করছে,শুধু হাসি নেই নিঝুমের মুখে, নিজের ভেতর টা কেমন যেনো করছে তার।মেহেরিন কে বিয়ে করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে ও নিশ্চয়ই মেয়েটার অসম্মান হয়েছে,সে তো এমনটা চায়নি,যেমনই হোক কোনো মেয়েকে অসম্মান নিঝুম আজ অব্দি করেনি।নিজের ভাবনায় বার বার শুধু বিরক্ত হচ্ছে সে।

——–
নামিরা সুন্দর একটা নীল গাউন পরে হাজির তার পেছনে নেহা, নেহা গোল্ডেন পাড়ের নীল শাড়ি পড়েছে।
বিয়েতে যাবে তারা,নিখিল সব তদারকি করছে,নিঝুম কে তৈরি তো করেছে সবাই মিলে কিন্তু সে ঘেমে নেয়ে একাকার, তার শুধু একটাই চিন্তা মেয়েটা কেমন হবে?দিদুন কে ঠিক বিশ্বাস করা যায় না।

বৃষ্টি সিঁড়ি পেরিয়ে গেইটের কাছে আসছে তখনই মিহির সেখানে এসে দাড়িয়ে বললো–,,এই বৃষ্টি শোনো।

বৃষ্টি বললো–,,কি বলার আছে তাড়াতাড়ি বলুন তো।

মিহির রেগে বললো–,,এতো ভাব দেখাচ্ছিস কেনো?তোর পেছনে পড়ে আছি তার মানে এই না সব সময় অপমান করবি।ভালোবাসি বলে তোকে সম্মান করি আর আজীবন করবো,কিন্তু তোর কোনো অধিকার নেই আমার ভালোবাসা কে অপমান করার!

বৃষ্টি হা করে তাকিয়ে, আরে এই ছেলে কি থেকে কি বলছে।বৃষ্টি যদি এখন গিয়ে সিট দখল না করে তো ওই পে’ত্নী নিশাত গিয়ে বসে পড়বে।

বৃষ্টি ছুটে গাড়ির দিক এগিয়ে বললো–,,আচ্ছা ঠিক আছে,আমার ও এতো সখ জাগেনি আপনার ভালোবাসা কে অপমান করার।নিজের মতো ভালো থাকুন।

মিহির বেশ ক্ষে’পে গেলো আর পাত্তা দিবে না ও এই মেয়েকে,পেয়ে বসেছে যেনো।একটু কষ্ট তো তোমাকে এবার পেতেই হবে মেঘবালিকা।এবার না হয় প্রমান হয়ে যাক আমার ধারনা ঠিক নাকি তোমার মুখের কথা!আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো এবার শুধু তোমাকে দিয়ে বলানোর পালা।

সাব্বির সুযোগ খুঁজছে কখন জেরিন আসবে আর ওকে কিছু জিজ্ঞেস করবে,সারা রাত ঘুম হয়নি ওর।কি মেয়েরে বাবা দিনে ও জ্বা’লায় এখন তো রাতেও।কেনো যে ওর মন এই জ”ল্লাদ মেয়েটা কে এতো ভালোবেসে বসলো।অদৃশ্য কপাল চাপড়ালো সাব্বির।

তখনই দেখা মিললো জেরিনের,তাও তার সাথে নিজের বাবাকে দেখে মুখ বাকালো সাব্বির।
বুড়ো টা তার প্রেমে বাঁধা দিচ্ছে আজই মায়ের কাছে নালিশ করতে হবে।

নিঝুমের পাশে বসলো সাব্বির,অপর পাশে বৃষ্টি বসতে আসলো সাব্বির বললো–,,তুই অন্য কোথাও গিয়ে বস বইন,ঘসেটিবেগম কে এখানে বসতে দে।

জেরিন যেনো স্বাভাবিক, সে এসে বললো–,,তোর সাথে যাবো না, আমি অন্য টা তে যাচ্ছি।
সাব্বির জেরিনের হাত টেনে ভিতরে বসিয়ে বললো–,,কেনো রে আমার গায়ে কি ময়লা লেগে আছে যে বসতে পারবি না।তুই কি করে বুঝবি কতো মেয়ে আমার সাথে বসার জন্য পাগ’ল।

জেরিন নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বললো–,,তবে তাদের সাথে গিয়ে বস, আমাকে টানছিস কেনো।

সাব্বির গাড়ির দরজা লক করে দিয়ে বললো–,,চুপ যা তো এমনেতেই রাতে ঘুমাতে পারিনি,তার উপর তোর ননস্টপ বক বক।তুই এখানে বসে থাক আমি যেতে যেতে একটু ঘুমাবো।

–,,তুই ঘুমা না ভাই,আমি কি ধরে রেখেছি।আমাকে কেনো জ্বা’লাচ্ছিস?

সাব্বির একবার নিঝুম কে দেখলো সে বেচারা গভীর চিন্তায় মগ্ন।
সাব্বির জেরিনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রেখে জিজ্ঞেস করলো–,,কাল উত্তর না দিয়ে চলে গিয়েছিস কেনো?

জেরিন অবাক হয়ে বললো–,,কিসের উত্তর, কোনো পরীক্ষা চলছিলো নাকি?

সাব্বির হেসে ফেললো এবার,এই মেয়েকে ও হাড়ে হাড়ে চিনে,প্রশ্নটা শুনতেই কেমন হাত কচলা’কচলি শুরু করেছে।

জেরনি দরজা খুলে ডেকে উঠলো–,,বৃষ্টি এদিকে আয়, আমি ওটাতে যাবো,তুই সাব্বিরের সাথে যা।

সাব্বির হুট করে জেরিনের কোমর জড়িয়ে ধরে বসলো।জেরিন যেনো আকাশ থেকে পড়লো, চাপা রাগী কন্ঠে বললো–,,কি করছিস এসব?

সাব্বির সামনে তাকিয়ে থেকেই ধীর কন্ঠে বললো–,,তুই যদি আবার যাওয়ার চেষ্টা করিস তো, এর পরে চুমু খাবো নিজের ভালো চাইলে এখানেই থাক।

জেরিন ফিসফিসিয়ে আবার বলে উঠলো–,,মাথা গেছে তোর কাল থেকে কি উল্টো পাল্টা বসছি”স!

সাব্বির নিরুত্তর, তাদের পেছনে বসলো নিশাত, রোহান, তোহা।
ড্রাইভারের সাথে বসলো শাহআলম চৌধুরী।

জেরিন এবার কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে বললো–,,প্লিজ এমন করিস না সাব্বির দেখ সামনে আব্বু।

সাব্বির নিজের হাত সরিয়ে ফেললো নির্দিষ্ট দুরত্ব রেখে বসে বললো–,,আবার যদি যাওয়ার কথা বলিস তো ভালো হবে না,আর উত্তর জানাবি একদিনের ভেতর।হ্যাঁ অথবা না তুই যেটা বলবি ওটাই হবে,যদি না হয় কোনো দিনও এ কথা তোর সামনে মুখেও আনবো না!

জেরিন কিছু পল তাকিয়ে থেকে মাথা নিচু করে ফেললো।জানালার বাতাস উড়িয়ে দিলো তার এলোমেলো চুল।জেরিন এমন নয় সাব্বির কে পছন্দ করে না।সে নিজেও জানে সাব্বির কতোটা ভালো মানুষ, তাকে কতোটা সম্মান করে।সে তো এরকম কাউকেই জীবন সঙ্গী বানাতে চেয়েছে।তবে কেনো যেনো আজ সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছে,তার মন অনুভূতি চিনতে বুঝতে দেরি করছে।
জেরিন উদাস হয়ে মাথা ঠেকালো জানালায়।

সাব্বির চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,জেরিনের উদাস চাহনি কেনো যেনো তার মন সায় দিলো না, সে ভেবেই বসলো এই আকাশের চাঁদ তার নয়,সে নিতান্তই আকাশে মানায়,যাকে ধরা যায় না ছোঁয়া ও যায় না,যে থেকে যায় সব সময় অধরা।তবে সে তো জানে না তাকে পাওয়ার ইচ্ছা, ছুঁয়ে দিতে চাওয়ার নিষিদ্ধ আকাঙ্ক্ষা কতোটা তীব্র। কতোটা ধারা’লো এই অনুভূতি যা মুহুর্তেই মানুষের ভিতরটা ছিন্ন”ভিন্ন করে দিতে সক্ষম!

———-
মেহেরিন থ মে’রে বসে আছে,কিছু সময় পূর্বেই তাকে বউ সাজিয়ে বসিয়ে রেখে গেছে কয়েক জন।
তার পাশে সোহানা বসে আছে চুপচাপ। মেহেরিন চোখ বন্ধ করতেই নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা জল।
মেহেরিন অবশ্য জানে তার বিয়ে নিঝুমের সাথেই হচ্ছে।তার মানে ওই লোকটাই জিতে যাচ্ছে,সে মেহেরিন কে বিয়ে করেই নিবে অবশেষে। মেহেরিন নিজের কথা বলে উল্টো সবার চোখ খারা”প হলো।তার পছন্দ অপছন্দ তো দূর সে এটাও বুঝে গেছে সে একটা পরগাছা!
নিঝুম যে তাকে পছন্দ করে বিয়ে করছে না এটা নিশ্চিত, সে মানুষ টা তো তাকে জে”দের বশে বিয়ে করছে।নিজের পরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবার কোনো ইচ্ছেই নেই মেহেরিনের।সে নিজের হার,নিজের অসম্মান, নিজের মূল্যহীন জীবন নিয়ে ভাবছে।যেখানে তার নিজের মা তাকে এতো কিছু বলতে পারে বাকিরা তো পর!
মায়ের প্রতি অনেকটা অভিমান জমে গেলো মেহেরিনের।যে মানুষ টা ছোট থেকে শুধু ভালোবাসাই দিলো, তার থেকে পাওয়া এই ছোট্ট আঘা’ত টাও মেহেরিনের কাছে বিশাল আকৃতির,এখনো এটা থেকে বের হতেই পারছে না!
———
বৃষ্টি, মিহির,রাহা নিঝুমের নানা বাড়ির কিছু কাজিন সাথে নামিরা গেলো এক সাথে।
নামিরা তো বৃষ্টির গলায় ঝুলে বসে।
রাহা কে বার বার বলছে শুধু–,,পঁচা মিম্মি তুমি।বৃষ্টি খুব ভালো।আমাকে আদল করে অনেক।

রাহা রাগ দেখিয়ে বললো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি তো,যখন তোমার কেউ ছিলো না তখন ছিলাম আমি।এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি!

নামিরা মুখ বাকিয়ে বললো–,,মিম্মি হিং’তুতে।

বৃষ্টি বলে উঠলো–,,এভাবে বলে না সোনা, তোমার মিম্মি তো তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে।

নামিরা বলে উঠলো–,,না, একতু ও ভালোবাসে না। শুধু ব”কা দেয়।এই নামিরা ওটা করবি না, ওটা খাবি না।ওখানে যাবি না,হুহ্!

গাড়িতে থাকা বাকিরা এদের ঝ”গড়া দেখে হাসছে।
,,,,,,,,
বড়রা যাওয়ার পর বাকি রইলো শুধু নিখিল আর নেহা।

নেহা বললো–,,আপনি চলে যান আমি যাবো না।

নিখিল একবার তাকালো নেহার দিকে জিজ্ঞেস করলো–,,কেনো যাবে না?

–,,ইচ্ছে করছে না।

নিখিল গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে নিশ্চয়ই ইচ্ছে করতো।তো ঠিক আছে তুমি গাড়ি করে যাও, আমিই আলাদা আসছি।

নেহা বাড়ির ভেতর যেতে নিলো।নিখিল ওর হাত চেপে ধরে বললো–,,সব সময় এতো রাগ করো কেনো বলোতো, সামান্য একটা কথায় এভাবে রাগলে হবে?

নেহা কিছু বললো না।নিখিল নেহাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো–,,ভালোবাসি!

নেহা মুচকি হাসলো তার পর নিখিল কে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,আমি বাসি না।শুধু আমার মেয়ের বাবা আপনি, আপনার সাথে থাকলে আমার মেয়ে খুশি থাকবে তাই থাকছি,অন্য কোনো কারন নেই।

নিখিল পকেটে দু হাত গুঁজে বললো–,,তাই?তবে ঠিক আছে যদি আমি আর না থাকি তাতেই তো তোমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।তুমি মেয়েকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবে, আমার মতো মানুষের মুখ ও দেখা লাগবে না।আর আমিও তোমার প্রত্যাখান, ঘৃ’ণা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না।যদি ভালোবাসতে না পারবে তবে আমার মৃ’ত্যু কামনা করো।যদি চাও তোমার ভালোবাসা বেঁচে থাকুক তবে তাকে ভালোবাসো, সম্পূর্ণ ভাবে ভালোবাসো নামিরার আম্মু। তুমি তো জানো একটু আধটু ভালোবাসায় নিখিল মেহমেত চৌধুরীর পো’ষায় না!

চাইলে পুরোপুরি চাও নয়তো মৃ’ত্যুদন্ড দাও!
চলবে?