প্রণয়ের সুর ২ পর্ব-২৪

0
824

#প্রণয়ের_সুর২
#পর্ব২৪
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নিঝুম বউ নিয়ে আসলো তখন প্রায় রাত।সন্ধ্যার আধো আলোতে মেহেরিনের মলিন মুখ খানা দেখে হৃদয়ের কোথাও সুপ্ত খারাপ লাগা অনুভব করলো নিঝুম।
মেয়েটা কে না জেনে বুঝে না জানি কতোটা কষ্ট দিয়েছে সে,নিঝুমের এতটুকুতে ভালো লাগছে যে সে অন্তত কাউকে বিয়ে করবে না বলে অসম্মান করেনি।দিদুনের প্রতি কৃতজ্ঞ সে।

বধূ বরণ করা হলো,বাড়িতে সবাই খুব হাসি খুশি।ছোটরা মেতে উঠেছে হাসি আড্ডায়।কাছের আত্মীয়রা যে যার মতো গল্প করছে,সোফায় বসে আছে সব কাজিনরা।

এরই মধ্যে একজন বলে উঠলো–,,তা আপা মেয়ে বিয়ে দিবেন কবে?মেয়ে দুটো তো হয়েছে মাশাআল্লাহ পরীর মতো।

মহিলার কথা শুনে আর কারো কিছু হোক বা না হোক সাব্বির আর মিহিরের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ওদের চাহনি দেখে হো হো করে হেসে ফেললো বাকিরা।

হামিদা বেগম ইতস্তত করে বললো–,,মেয়েরা পড়ছে এখনো, বাড়ির ছেলের বিয়ে হলো এখন কিছুদিন পর এসব নিয়ে ভাববো আমরা।

মহিলা হেসে বললো–,,পড়ছে, পড়বে তাতে কি বিয়ে করলে তো আর পড়া বন্ধ হয়ে যায় না।তা আপনার মেয়ে বৃষ্টি কে তো আমার ছেলের বেশ মনে ধরেছে!

মিহির কট’মট দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে তাকালো,মনে মনে বললো–,,এতো সেজেগুজে যাওয়ার কি আছে,একবার হাতের কাছে পাই। সাজগোজ একদম বের করে দিবো বেয়া”দব মেয়ে!

বৃষ্টি বিনিময়ে মুখ ভেংচি কাটলো একটা।

হামিদা বেগম কিছু বলার আগে সেতারা বেগম বলে উঠলো–,,কি আর কই তোমারে নাজমা।আজকাল যুগ তো ভালা না,মাইয়া যখন আছে বিয়া তো দিতেই হইবো, এর লাইগা আমরা মাইয়াগো বিয়া আগে থাইকাই ঠিক কইরা রাখছি।বৃষ্টি, জেরিন দুজনেরই বিয়ে ঠিক হইয়া আছে, ভাবছি পরে সবাইরে জানামু তুমি যেহেতু তোমার পোলার কথা কইলা তাই এখনই বইলা দিলাম।

সেতারা বেগমের কথা শুনে পানি মুখে একত্রে খুক খুক করে কেঁশে উঠলো জেরিন আর নেহা।
বৃষ্টি এখনো মুচকি মুচকি হাসছে, মিহির রেগেমেগে বেরিয়ে গেলো।
রোহান বলে উঠলো–,,ডাক্তার সাহেব তো চেই’তা গেলো কেউ একটু বরফ আন।

নেহা হেসে বললো–,,পো’ড়া পো”ড়া গন্ধ পাচ্ছি কোথা থেকে যেনো আসছে।এই সাব্বির ভাইয়া তোমার এখান থেকে মনে হয়।

তোহা, শিশির হেসে বললো–,,হতেও পারে।

নিশাত বলে উঠলো–,,এই দেখো তোমরা আমার ভাইয়া কে নিয়ে মজা করবে না।

রোহান নিশাতের মাথায় মে’রে বললো–,,কি দরদ কি দরদ।

জেরিন আড় চোখে একবার সাব্বিরের দিকে তাকালো।

জেরিন কে সাহারা বেগম ডেকে বললো–,,মেহেরিন কে নিঝুমের ঘরে দিয়ে আয় তো মা।

জেরিন সাথে সোহানা গেলো মেহেরিন কে নিয়ে।
নেহা গেলো ওদের পেছনে নামিরা ঘুমাচ্ছে রুমে দেখে ও আসবে এই সুযোগে।

নেহা রুমে যেতেই নিখিল কে গম্ভীর হয়ে বসে থাকতে দেখলো।
নেহা দেখলো নামিরা গভীর ঘুমে।সে গেলো কাপড় চেঞ্জ করতে।
নিখিল এখন ও চুপচাপ বসে আছে।শান্ত পরিবেশ যেনো ঝড়ের পূর্বাভাস!

নেহা একটা থ্রি পিস পড়ে বের হলো এখন যেনো শান্তি লাগছে,মুখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে,সে দেখলো নিখিল কে এখনো একই ভাবে বসে।নেহা ও কথা বললো না থাকুক যেভাবে খুশি।

নেহা পেছন ঘুরে চিরুনি খুঁজলো সে মুহুর্তেই হেঁচকা টানে নিখিল নেহা কে নিজের কাছে নিয়ে গেলো,কোলের উপর বসিয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলো।

নেহা ফ্রিজ হয়ে গেলো যেনো।কিছু সময়ের মধ্যেই মোচড়ানো শুরু করলো,নেহা বলে উঠলো–,,ছাড়ুন বলছি একদম অসভ্য’তা করবেন না।

নিখিল এবার কাম”ড় বসিয়ে দিলো নেহার ঘাড়ে, নেহা মৃদু আর্ত’নাদ করে ছোটার চেষ্টা করলো।কাজ হলো না কিছু,নিখিল পর পর নেহার ঘাড়ে চুমু দিলো,নেহা সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলো–,,নিখিল এবার কিন্তু বারাবারি হচ্ছে।

নিখিল হেসে বললো–,,আমি করলে বারাবারি আর তুই যখন যা খুশি করতে পারবি তাই তো।

নেহা কাঁপা কন্ঠে বললো–,,যা বলার দূরে সরে বলুন।

নিখিল আরো একটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো–,,না এভাবেই বলবো যা বলার।

নেহা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসে রইলো,এই লোকটা একটা পা”গল।
নেহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,কি সমস্যা আপনার।

–,,তুই বড় সমস্যা আবার তুই সমাধান।

–,,ছাড়ুন।

–,,তখন কি যেনো বলছিলি,আমার সাথে শুধু মেয়ের জন্য থাকছিস?আমার প্রতি ভালোবাসা অনুভূতি সব ম’রে গেছে?সবাইকে দেখানোর জন্য আমাদের এই সংসার?যেভাবে মানুষ মানিয়ে নেয় তুই ও তাই করছিস?

–,,হুম বলেছি, আর যা বলেছি স,,,

নিখিল নেহার ঘাড়ে আবারো চুমু খেলো নেহার কথা বন্ধ হয়ে গেলো।নেহার দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে এই লোক।

নিখিল এবার নেহার চুল গুলো আরো কিছুটা সরাতে নিলেই নেহা তড়িঘড়ি করে বললো–,,নিখিল ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।

নিখিল ও ত্যাড়ামি করে বললো–,,তোর ভালো খারা”প তুই তোর কাছেই রাখ।আমি ও আজকে দেখবো তোর কতো তে’জ!

নেহা নিখিল কে যতো সরাতে চাচ্ছে নিখিল ততোই অন্ত’রঙ্গ হচ্ছে।

নিখিল নেহাকে আবার জিজ্ঞেস করলো সেই আগের প্রশ্ন গুলো বললো-,,বল তুই আমাকে ভালোবাসিস কি না?

নেহার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,তবুও কাঁপা কন্ঠে বললো–,,ভালোবাসি ন,,,!

নিখিল নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো–,,ভেবে বল,না হয় আরো বেশি কিছু করবো।

নেহা বাধ্য হয়ে বললো–,,ভালোবাসি।

নিখিল নেহা কে ছেড়ে দিলো,নেহা ছাড়া পেতেই তেড়ে আসলো নিখিলের দিকে,শার্টের কলার চেপে ধরে বললো–,,অভদ্র,নির্ল’জ্জ কোথাকার।কি মনে করেন নিজেকে হ্যাঁ।

নিখিল নেহার গলার জড়িয়ে ধরে বললো–,,আপাতত তোর জামাই।আর এভাবে বলছিস কেনো?অন্য মেয়ের কাছে গেছি কখনো নির্ল’জ্জ তো শুধু তোর সামনেই।
এসব বাদ দে তো তোর এইরকম রণ’চণ্ডী রূপ দেখে আমি জাস্ট ফিদা হয়ে গেছি এখন কিছু করার নেই জান আমার ভীষণ প্রেম প্রেম পাচ্ছে,চল প্রেম করি।

নেহা দূরে সরে গিয়ে বললো–,,বিরক্তিকর লোক একটা,মন তো চায়,,,।

নিখিল উঠে এসে বললো–,,হ্যাঁ আমার ও চায়।

নেহা চোখ মুখ বাকিয়ে বললো–,,কি?

নিখিল চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে বললো–,,জানতে চাস?তুই চাইলে দেখাতেও পারি!

নেহা চলে যেতে নিলো,এরে বিশ্বাস নেই কোনো।কিন্তু নিখিল সে তো ছাড়বার পাত্র নয়,নেহাকে এক টানে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করালো,চমৎকার মুচকি হাসি হেসে নেহার গাল টেনে দিলো।নেহার বুঝতে বাকি নেই এই ব’দ লোক এখন কি করতে চাচ্ছে।
নিখিল মুখ এগিয়ে নিতেই নেহা মুখ ঘুরিয়ে ফেললো,ফলস্বরূপ নিখিলের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো নেহার গাল।নিখিল নেহার গালে গভীর চুমু একে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো–,,রমনী তুমি যতই বাঁধ সাধো না কেনো,আমি তো জানি তুমি আমার ছোঁয়ায় সিক্ত হও আবেশে হারাও বার বার, বারং বার, আজীবন!

নেহা এবার হেসে ফেললো। নিখিল নেহা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,সত্যি বলছি তো ভালোবাসি, আরেকবার বিশ্বাস করে দেখো না প্রেয়সী!

নেহা নিখিলের দিক তাকিয়ে বললো–,, এই দেখো নামিরা উঠে গেছে।
নিখিল দ্রুত সরে গিয়ে বিছানায় তাকালো নেহা নিখিল কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।নিখিল পেছন থেকে বললো–,,রাতে তো আবার আসতেই হবে তখন বুঝাবো মজা।

————-
মেহেরিনের সাথে রৌফ,সাহিল,সোহানা এসেছে।
ছাদের উপর এক প্রকার সলাপরামর্শ করতে বসেছে সব গুলাতে সাথে নতুন বর বউ কেউ বাদ দেয়নি।
বেশি রেগে আছে মিহির।বেচারা এতোদিন ধরে যার অপেক্ষায় বসে তার কিনা বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, এসব কি মানা যায়?

মেহেরিন,সোহানা,রৌফ এদের আড্ডায় নতুন।তারা চুপচাপ বসে আছে,মেহেরিন তো ভাবছে এদের চরিত্র গুলো আসলে কেমন, অদ্ভুত নাকি অন্যরকম?

শিশির বলে উঠলো–,,আরে ভাই আমি সবার বড় আমার কথা তোদের শোনা উচিত।

সাব্বির বলে উঠলো–,,তোমার মতো ছে’কা খেয়ে নিজেদের ঠিক রাখতে পারার মতো মানুষ আমরা না।

বৃষ্টি বলে উঠলো –,,তুমি ছে’কা খেতে যাবে কেনো সাব্বির ভাইয়া,তোমার প্রেমিকার ও কি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে নাকি?

শিশির থামিয়ে দিয়ে বললো-,,দূর ছাই তোরা চুপ যা তো।
নিঝুমের আজকে বাসর রাত ভুলে যাচ্ছিস কেনো?ওদের কে রুমে না পেলে দাদী সব কটার পিঠের ছাল তুলে নিবে!

রোহান বলে উঠলো–,, কাঁচা খেলোয়াড় নই বড় ভাই, ভাইয়ার রুম তো ভেতর থেকে লক করে এসেছি কেউ বুঝতেই পারবে না।

জেরিন বলে উঠলো–,,বুদ্ধির ঢেঁকি চুপ কর তো।

সোহানা সাহিলের পাশে কাচুমাচু হয়ে বসে।

মিহির নিখিল কে চেপে ধরে বললো–,,শা’লা নিজের বোনের সাথে আমার বিয়ে দিবি বলে সান্ত্বনা দিয়েছিস,এখন তোর দিদুন কিনা আমার বউয়ের বিয়ে আরেক ব্যাটার সাথে দিয়ে দিচ্ছে ভালো হবে না বলে রাখছি,এবার কিন্তু আমি এক বালতি পানিতে ডুবে ম”রে যাবো।

মেহেরিন এই কথা শুনে শব্দ বিহীন হাসলো,হাসি আটকাতে ঠোঁট কাম’ড়ে ধরলো,ঘটনা পুরোটাই দেখলো নিঝুম।যাক এখানে এসে অন্তত মেয়েটা হেসেছে,রুমে থাকলে এখন দুজনই অস্ব”স্তিতে ভুগতো।

নিখিল বলে উঠলো–,,আমি কি করে জানবো, দিদুন এরকম কান্ড ঘটাবে।

নেহা বৃষ্টির হাত চেপে ধরে বললো–,,এই তুই না বলেছিলি তোর বিয়ে দিদুন মিহির ভাইয়ার সাথে দিবে?

বৃষ্টি নেহার মুখ চেপে ধরে চাপা সুরে বললো–,,হুম,কিন্তু এই গা’ধা টাকে এখন বলা যাবে না।জানতে পারলে একদম মাথায় চ’ড়ে বসবে।

নেহা বলে উঠলো–,,ভাইয়া তোর পেছনে কতো বছর ধরে ঘুরছে তার তো জানার অধিকার আছে।

বৃষ্টি চোখ পাকিয়ে তাকালো নেহার দিকে।নেহা মুখ বাকালো।দুজন কে ফুসুরফাসুর করতে দেখে জেরিন বলে উঠলো–,,এই তোরা দুটোতে কি বলা বলি করছিস?

বৃষ্টি বললো–,,এই তো আমার হবু জামাই কে নিয়ে কথা বলছি।

সাব্বির বলে উঠলো–,,কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনা”শ!

মিহির বলে উঠলো–,,এই নির্ল”জ্জ মহিলা,বড় ভাইদের সামনে জামাই জামাই করছো লজ্জা করে না।কি করে বিয়ে হয় আমিও দেখবো।

রোহান বলে উঠলো-,,তোমরা বিয়ে করে লাইন ক্লিয়ার করো,আমার পথটাও একটু সহজ হবে।

সাব্বির রোহান কে মে’রে বললো–,,চুপ থাক তো তুই।

রাহা কম কথা বলে সব সময়,সে এবার বলে উঠলো–,, তোমরা কি এই মাঝ রাতে বসে এসব আলোচনাই করবে?করলে করো আমি গিয়ে ঘুমাই,এসব বিয়ে সাদিতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।

রৌফ বলে উঠলো–,,তা অবশ্য ঠিক তোমাকে দেখলেই বুঝা যায় তুমি একটা!

রাহা তেড়ে এসে বললো–,,কি হ্যাঁ?আপনি কিন্তু বেশি কথা বলেন,মেহমান হয়ে এসেছেন মেহমানের মতো থাকেন।একটা অস’হ্যকর মানুষ শুধু আমার সামনেই পড়ে।

তোহা আর নিশাত একসাথে বলে উঠলো–,,শান্তি শান্তি!

জেরিন কপাল চাপড়ালো, মিহির বলে উঠলো-,,মানি না মানবো না,আমার বিয়ে না হলে তোদের কারোর টা হতে দিবো না আমি।

নিখিল, সাহিল মিহির কে শান্ত করে বললো–,,তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি অপেক্ষা কর।

নিচ থেকে তখনই মফিজুর চৌধুরী এসে বললো–,,তোরা এখানে? যে যার রুমে যা দ্রুত মা আসছে, কিভাবে যেনো বুঝে গেছে তোরা সবাই এখানে।

নিখিল বলে উঠলো–,,ছোট আব্বু তুমি,,

মফিজুর চৌধুরী নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো–,,আব্বু ডেকে কেনো বয়স টা বাড়িয়ে দিচ্ছিস বলতো।

নিশাত দরজায় উঁকি দিয়ে এসে বললো–,,দিদুন সিঁড়ি তে উঠছে নিঝুম ভাইয়া আর ভাবিকে লুকাও না হয় সবাই মা’রা পড়বে।

এক প্রকার দৌড়াদৌড়ি চললো ছাদের উপর।যে যেভাবে পেড়েছে টবের পেছনে গাছের পেছনে পিলারের পেছনে লুকিয়ে পড়েছে।

সাব্বির পেছাতে পেছাতে ধাক্কা খেলো জেরিনের সাথে।

জেরিন চেঁচিয়ে বললো–,,সাব্বিরের বাচ্চা আমার পা।

সাব্বির জেরিনের মুখ চেপে ধরে বললো–,,চেঁচাচ্ছিস কেনো ঘষেটিবেগম।
জেরিন মৃদু কন্ঠে বললো–,,পায়ের উপর দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করছিস?

সাব্বির পিছিয়ে গিয়ে নিচে বসলো জেরিন সামনে তাকিয়ে পায়ে কারো হাতের ছোঁয়া পেতেই নড়েচড়ে উঠলো।সাব্বির স্বযত্নে জেরিনের পা নিজের হাতের তালুতে রাখলো।জেরিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,,কি করছিস পা”গল উঠ।

জেরিন কে অবাক করে দিয়ে সাব্বির সবচেয়ে ভয়া”নক কাজটা যেনো করলো,জেরিনের পা নিজের হাঁটুর উপর রেখে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো সাব্বির।জেরিন এতোটাই অবাক হয়েছে যে এখনো টা’স্কি খেয়ে তাকিয়ে আছে।

সবাই লুকাতে পারলেও শেষে ছাদের মাঝে দাড়িয়ে পড়লো দুজন সাহিল আর সোহানা,তাদের দুজনের আর পালানোর পথ নেই।তাদের কি হবে সেটা দেখতে যে যেখানে লুকিয়েছে সেখান থেকে উঁকি মার”ছে।

সেতারা বেগম ছাদের দরজার কাছে এসে চেঁচিয়ে বললো–,,রাইতের বেলা এখানে কি করছিস হত’চ্ছাড়ার দল!

সোহানা এবার ভয়ে সাহিল কে জড়িয়ে ধরলো।সাহিল টাল সামলাতে না পেরে সোহানা কে আঁকড়ে ধরলো।দুজন দুজন কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে,সেই মুহুর্তে সেতারা বেগম ছাদে পা রাখলে। সোহানা সাহিলের ঠিক পেছনে পিলারের আড়ালে মেহেরিন আর নিঝুম, দুজনের পড়নে বিয়ের সাজসজ্জা।
মেহেরিন তো নিঝুমের পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরে আছে, অন্ধকারে ভয় পাচ্ছে সে না পারছে বলতে না পারছে এখান থেকে যেতে।

নিঝুম মেহেরিন কে বললো–,,আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?

মেহেরিন কাঁপা কন্ঠে বললো–,,কই না তো!

নিঝুম মুচকি হাসলো,প্রথমে ইতস্তত করলেও কিছু মুহূর্তের মধ্যেই মেহেরিন কে নিজের হাতের ভাঁজে আঁকড়ে ধরলো।

সেতারা বেগম ধম”ক দিয়ে বললো–,,এতো রাতে এখানে কি করছিস?

সাহিল সোহানা কে ফিসফিস করে বললো–,,সোহানা সরে দাঁড়াও।

সোহানা ভয়ে ভয়ে বললো–,,না। আমাকে ছেড়ে দিবেন না প্লিজ।

সাহিল আড় চোখে তাকাচ্ছে সেতারা বেগমের দিকে।
সেতারা বেগম বলে উঠলো–,,আর কে কে আছে বল।

সাহিল বললো–,,আছে না দাদি বলো ছিলো,সবাই তো সেই কখন চলে গেছে।শুধু আমি আর সোহানা গল্প করছিলাম।

সেতারা বেগম তেঁতো কন্ঠে বললো–,,গল্প করার জায়গা পাস না আর যা ঘরে যা।
এই মাইয়া আমার সামনে ও সো”য়ামিরে জড়াইয়া ধইরা রাখছো বলি লজ্জা শরম কি সব বেই’চ্চা দিছো।

সোহানা তড়িৎ গতিতে ছেড়ে দিলো সাহিল কে লজ্জায় গিয়ে লুকালো সাহিলের পেছনে।

সেতারা বেগম শা’সিয়ে বলে গেলেন তাড়াতাড়ি ঘরে যেতে।
সেতারা বেগম চলে যেতেই সবাই একে একে বের হলো।সোহানা মিন মিন করে বললো–,,স্যরি।

সবাই নিচে নেমে গেলো একে একে।
—————
মেহেরিন রুমে গিয়ে লজ্জায় পড়লো যেনো,ফুল সজ্জিত খাটের উপর এক গুচ্ছ লাল গোলাপ রাখা। নিঝুম এগিয়ে গিয়ে বললো–,,ফ্রেশ হয়ে আসুন ভালো লাগবে।

মেহেরিন দেখলো এক পাশে তার ড্রেস বের করে দিলো নিঝুম।মেহেরিন তা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।নিঝুম রুমেই টি-শার্ট পড়ে শান্তির নিঃশ্বাস নিলো।

মনে পড়লো বিকেলের কথা যখন প্রথম বারের মতো বউয়ের মুখ দেখেছিলো সে।
মেহেরিন কে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলো মেয়েটা কান্না করতে দেখে।যখন সবাই মিলে বলছিলো দুজন দুজনের দিকে তাকাও তখন মেহেরিন অশ্রু টলমলে চোখে তাকিয়ে ছিলো,নিঝুম তার দিকে তাকাতেই তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়েছিলো এক ফোঁটা জল।নিঝুমের মনের মধ্যে গেঁথে গেলো সেই অবিস্মরণীয় স্মৃতি। মেয়েটা কে কি সুন্দর লাগছিলো।মায়াবী, অবশেষে সে কিনা এমন কারো প্রেমে পড়লো যাকে কয়েক দিন আগে পর্যন্ত সহ্য করতে পারছিলো না।নিঝুম চোখ বন্ধ করেই নিঃশব্দে হাসলো।

মেহেরিন বেরিয়ে এসেছে কিছু সময় হলো,হাতে তোয়ালে নিয়ে দাড়িয়ে আছে,নিঝুমের দিকে একটু পর পর আড় চোখে তাকাচ্ছে।

নিঝুম চোখ খোলতেই মেহেরিন কে দেখতে পেলো। সময় ব্যয় না করেই বলে উঠলো–,,স্যরি!

মেহেরিন প্রশ্ন সিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে।নিঝুম হেসে বললো–,,দাড়িয়ে আছেন কেনো বসুন।চলুন সব কিছু ভুলে নিজেদের কে নতুন করে জানি গল্প করি।সম্পর্কের শুরু টা বন্ধুত্ব দিয়ে করি!

মেহেরিন হেসে বললো–,,আপনি আমাকে কেনো বিয়ে করেছেন?

নিঝুম হেসে বললো–,,সত্যি টা তেঁতো তবে বিয়ের পর মনে হচ্ছে আমি একজন ভাগ্যবান।

মেহেরিন উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো–,, কেনো?

নিঝুম খাটের উপর উঠে বসলো মেহেরিন অন্য পাশে চেপে গেলো।নিঝুম রসিকতা করে বললো–,,এই যে মেডাম, আমি কিন্তু মোটেও ওরকম ছেলে না।ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

মেহেরিন মাথা নিচু করে রইলো, কানে গুঁজে দিলো তার অগোছালো চুল গুলো।

—————–
সোহানা সাহিলের হাত আলতো চেপে ধরে বললো–,,স্যরি বলছি তো সাহিল, আমি আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই তখন ওভাবে!

সাহিল মৃদু ধম’কের সুরে বললো–,,এই তোমাকে আমি কিছু বলেছি?তাহলে এমন করছো কেনো।

সোহানা এবার কেঁদে ফেললো সাহিল জিজ্ঞেস করলো–,,আবার কি হলো কাঁদছো কেনো?আমি বললাম তো কিছু মনে করিনি।

সাহিল সোহানা বুকে টেনে নিয়ে বললো–,,হুশ!একদম চুপ কান্না কাটি করবে না বলে রাখছি।আরে বাবা কিছু মনে করতে কেনো যাবো?তুমি তো আমার ওয়াইফ পাগ’লী রাগ করবো কেনো?এভাবে কান্না করলে কিন্তু এবার সত্যি সত্যি রাগ করবো আমি।

সোহানা চোখ মুছে বললো–,,আপনি একটা পঁচা লোক
ভালো করে কথাও বলতে পারেন না।

সাহিল সোহানার দু গাল ধরে বললো–,,তাই?

সোহানা বাচ্চাদের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বললো হুম।

সোহানা তাকিয়ে দেখলো সাহিল তার দিকে মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
–,,ওমন করে কি দেখছেন?

–,,দেখছি আমার বউকে কান্না করলে কত্তো কিউট লাগে।একদম গুলু”মুলু টমেটো, মন চায় তো খে,য়ে ফেলি!

সোহানা চোখ বড় বড় করে তাকায়। সাহিল বলে উঠলো–,, কিছু না করেও বার বার খারা”প উপাধি শুনতে ভালো লাগে না বুঝলে। ভাবছি এবার খারা”প কিছু করবো।

সোহানা কাঁপা কন্ঠে বললো–,,কি করবেন?

সাহিল সোহানার ওড়না টেনে ধরে বললো–,,তুমি যা ভাবছো তাই,আমি ওতোটাও ভালো সাধু পুরুষ নই,এতো সুন্দর বউ থাকতেও কিছু করবো না।

সোহানা পেছাতে পেছাতে খাটের উপর ধপাস করে পড়লো।সাহিল সোহানার দিকে ঝুঁকে বললো–,,তা মেডাম পরিপূর্ণ আমার হবেন তো?

সোহানা দু হাতে মুখ ডেকে বললো–,,ধূর নির্ল”জ্জ পুরুষ আমার কি লজ্জা করে না নাকি।

সাহিল হেসে বললো–,,লজ্জাবতী লাজ আজ আমার হোক!

সোহানা লজ্জায় মুখ লুকালো সাহিলের বক্ষপিঞ্জিরায়!
———–
বেশ কিছুদিন কাটলো সময়ের ব্যবধানে কে”টে গেছে মাস।

মিহির রাগারাগি করছে সেই কখন থেকে,সে কিছুতেই মেয়ে দেখতে যাবে না।ছাফ ছাফ জানিয়ে দিয়েছে সে বিয়ে করলে বৃষ্টিকেই করবে।

মাহমুদা বেগম ছেলেকে ধম”ক দিয়ে বললো–,, যা খুশি কর আমার সম্মান যদি তুই না রাখিস তবে আর মা ডাকবি না।
মিহির রেগে টেবিলের উপর থেকে গ্লাস উঠিয়ে নিজের হাতে চেপে ধরলো মুহুর্তেই গ্লাস টা ফে’টে শব্দ করে উঠলো।রক্তের শ্রোত বয়ে গেলো ফ্লোরে।মাহমুদা বেগম আঁ”তকে উঠলেন ছেলের হাত থেকে কাঁচের টুকরো সরিয়ে শাড়ির আঁচলে চেপে ধরে জোরে চেঁচিয়ে সবাই কে ডাকলেন।
চলবে,,,,