#প্রণয়ের_সুর২
#শেষ_পর্ব
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
মিহিরের কান্ডকারখানা শুনে হতাশার শ্বাস ছাড়লো সেতারা বেগম।আর দেরি করা ঠিক হবে না,এবার এই ছেলেটাকে বিয়ে দিতেই হবে।তিনি শাহআলম চৌধুরীর সাথে কথা বলবেন ঠিক করলেন।
মিহির তার পর থেকে একবারের জন্য ও আর ওসব বিষয়ে কথা বলেনি। সে নিজের মতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত,ছেলের মতিগতি কিছুই বুঝে আসছে না মাহমুদা বেগমের।
মাহমুদা বেগম মিহিরের ঘরে এসে দেখলেন সে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে।মাহমুদা বেগম ছেলেকে নরম সুরে ডাকলেন।
মিহির জিজ্ঞেস করলো–,, কি হয়েছে?
মাহমুদা বেগম ভনিতা ছাড়াই বললেন–,,আসলে আজকে তোর বাবার বন্ধু দাওয়াত করেছেন।তুই ও যদি সাথে আসতি তো।
মাহমুদা বেগম মনে মনে ভাবছেন না করলে কিভাবে রাজি করাবেন,তবে মিহির বললো–,,সে যাবে।
মাহমুদা বেগম খুশিতে আত্ম’হারা হয়ে বললেন–,,সত্যি!
মিহির ভ্রু কুঁচকে বললো–,, এতো খুশি হওয়ার কি আছে?সামান্য দাওয়াতেই তো যাবো।
মাহমুদা বেগম নিজেকে সামলে নিয়ে রুম থেকে চলে গেলেন।
——–
একটা রিসোর্টের সামনে এসে গাড়ি থামলো, সবাই যে যার মতো নেমে গন্তব্যের দিকে হাঁটা ধরলো।
বৃষ্টির সাথে আছে নেহা,জেরিন,নিশাত,মেহেরিন।
ছোটরা জানে কেবল তারাই এখানে এসেছে।বৃষ্টি আজ মিহির কে প্রোপোজাল দিয়ে চমকে দিবে।এটাই তাদের উদ্দেশ্য, তবে বড়রা যে তাদের থেকেও বেশি কিছু চিন্তা করে রেখেছে ওসব তাদের ধারনার ও বাহিরে।
সুন্দর মনোরম পরিবেশে ছোট ছোট কয়েকটা কটেজ, লেক,রেস্তোরাঁ নিয়ে এই রিসোর্ট।যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে এখানে।
একটা কটেজের ভেতর বসে আছে বৃষ্টি, এটাও তাদের প্ল্যানের একটা অংশ।
মিহির দের গাড়ি এসে থামলো একই জায়গায়, মিহির ভাবলো হয়তো এখানেই পার্টির আয়োজন হয়েছে।
মিহির বসে আছে, এমন সময় একজন ওয়েটার এসে জানালো তাকে ওইদিকের কটেজটায় তার মা ডাকছে।
মিহির স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে যায়।কটেজে প্রবেশ করতেই বাহির থেকে কেউ একজন দরজা লাগিয়ে দেয়।
মিহির বুঝলো কটেজ টা বেশ অন্ধকার, আবছা আলোয় বুঝলো খাটের উপর লম্বা ঘোমটা টেনে কেউ বসে আছে।
মিহির জিজ্ঞেস করলো–,,কে কে ওখানে?
বৃষ্টি জবাব না দিয়ে উঠে আসলো,মিহির বিরক্তি নিয়ে বললো–,,কে আপনি?আশ্চর্য তো কথা না বলে এগিয়ে আসছেন কেনো?মা কোথায়?
বৃষ্টি এগিয়ে আসতেই মিহির বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে গেলো।দরজা লক করা, মেজা’জ খারা”প হয়ে গেলো মিহিরের, সে দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবছে কি করবে তখনই রুমের লাইট জ্ব’লে উঠলো।মিহির পেছনে ঘুরে যা দেখলো তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি কখনো।
বৃষ্টি মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। হাতে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ!
মিহির অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই বললো–,,আমি কি স্বপ্ন দেখছি বৃষ্টি! তুমি এটা সত্যি তুমি?
বৃষ্টি নাক ফুলিয়ে বললো–,,না আমার ভু’ত।কখন থেকে এভাবে বসে আছি ফুল নিবে কি নিবে না?আর বসে থাকতে পারবো না আমি!
মিহির বলে উঠলো–,,ফুল কেনো দিচ্ছো?
–,,ভালোবাসি তাই!
মিহির খুশিতে কেঁদে ফেললো এবার ছেলেটার চোখের কোনে এসে জমা হলো আনন্দের অশ্রু।
মিহির বৃষ্টির হাত থেকে ফুল গুলো নিলো৷ বৃষ্টি সোজা হয়ে দাঁড়াতেই মিহির উদ্য’ত হলো জড়িয়ে ধরার জন্য তখনই হুড়মুড় করে প্রবেশ করলো সব ভাই বোনেরা।দুজন কে দুদিকে টেনে নিয়ে বলে উঠলো–,,বিয়ের আগে নো জড়িয়ে ধরা।
বৃষ্টি লজ্জায় মাথা নিচু করলো।মিহির তো বলে উঠলো–,,মিয়া বিবি রাজি কিয়া কারেগা কাজি।এবার দেখবো আমার বিয়ে কে ঠেকায়!
দরজা থেকে সেতারা বেগম বললো–,, তোর বিয়ে আমি ঠেকাবো হত”চ্ছাড়া। প্রেম পিরিতি তো আমাগো জামা”নায় ও আছিলো তোদের মতো তো এসব কান্ড করে বেড়াই নাই আমরা।সব গুলাতে বেশ’রম হয়েছিস!
মিহির বলে উঠলো–,,দাদী তুমি আর ভিলে’ন হইতে আইসো না তো, দেখা গেলো তোমার নাতনির আবার মত পরিবর্তন হয়ে গেছে।তখন আমার আম ছা’লা দুটোই যাবে।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। সেতারা বেগম বললো–,,সবাই বাহিরে আয় আর বৃষ্টি আমার সাথে আয় তোর নামে আজই বিচার দিবো আমি শাহআলমের কাছে!
বৃষ্টি অসহায় দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকালো, এসব কাহিনি করার বুদ্ধি তো ওরাই দিয়েছে এখন একা ফেঁসে’ছে বৃষ্টি।
বৃষ্টি সেতারা বেগমের পেছনে গেলো।বাহিরে আসতেই ছোটরা অবাক হলো বাড়ির সবাই এখানে উপস্থিত। তাদের কে হা হয়ে থাকতে দেখে মফিজুর চৌধুরী বললো–,,কিরে কেমন দিলাম,শুধু কি একা তোদের মাথায় বুদ্ধি আছে?আমাদের ও ঘটে কিছু আছে বুঝলি ।
সাজানো দেখে বুঝা গেলো এখানে বিয়ে পড়ানো হবে,এক পাশে কাজি সাহেব আছে।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে বিয়ে সম্পন্ন করা হলো।
মিহির তো বউ রেখে বাড়ি যাবে না।বিয়ে দিয়েছো এবার আমার বউ ও আমাকে দেও।
নামিরা তো এখনো বৃষ্টির কোলে বসে আছে।সে তার মামনি কে যেতে দিবে না।
নামিরা আঙুল উঁচিয়ে মিহির কে বললো–,,মামা তুমি পঁচা হয়ে গেছো, নামিরা কিন্তু তোমার সাথে আর কথা বলবে না,তুমি আমার মামনি কে এভাবে নিয়ে যেতে পারবে না।
মিহির নামিরা কে কোলে নিয়ে বললো–,,মামনি কে দিবে না আমাকে?
নামিরা দু দিকে মাথা নাড়লো।মিহির নামিরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো–,,তুমি কি জানো তোমার একটা ছোট্ট কিউট দেখতে ভাইয়া হবে!
নামিরা খুশি হয়ে বললো–,,সত্যি? কবে আসবে,আমি দেকবো তাকে।
–,,তাহলে তো মামনি কে দিবে আমার সাথে,মামনি যদি আমাদের বাড়িতে যায় তবেই তো সে আসবে তোমার সাথে খুব করে খেলবে।
নামিরা মন খারাপ করে বললো–,,তবে মামনি কি আর আসবে না?
মিহির নামিরার গাল টেনে দিয়ে বললো–,,দূর বোকা এরকম কি হয় নাকি।মামনি তো তোমার কাছে আসবেই তুমিও যাবে মামনি কে দেখতে।
–,,তাই?তাহলে নিয়ে যাও, সকালে আবার আমাকে দিয়ে দিবে।
মিহির হেসে বললো–,,আপনি যেমন বলবেন আম্মাজান।
নামিরা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।মিহির সবার কাছে নিয়ে গেলো নামিরা কে।নামিরা বললো–,,মামনি কে মামার কাছে দিয়ে দাও।
রাহা বলে উঠলো –,,তুই না একটু আগে যেতে দিবি না বললি।
–,,মামা বলেছে, আবার কালকে ফেরত দিয়ে দিবে।
–,,আরে ভাইয়া তোকে বোকা বানিয়েছে,একবার নিলে আর দিবে না।
নামিরা রাহা কে বললো–,,পঁচা মিম্মি, দিবে দিবে দিবে।
রাহা হার মেনে সরে পড়লো।সবাই বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।সেখান থেকেই বৃষ্টি কে বিদায় দিয়েছে তারা।
————–
পুলিশ স্টেশনে বসে কাজ করছে ইরফান হুট করেই নজরে আসলো সোহেলের কেইস ফাইল টা,মনে পড়ে গেলো আরুশির কথা।সেদিন বাড়ি গিয়ে শুনলো মেয়েটা চলে গেছে,কোথায় গিয়েছে সেসব কিছু বলে যায়নি।ইরফান কে তার মা বলেছে মেয়েটা তিনি থাকতে বলেছিলেন কিন্তু মেয়েটা কথাই শুনতে চায়নি।
ইরফান আরুশির আগের থাকার জায়গায় গিয়ে খোঁজ করেছিলো কিন্তু খুঁজে পায়নি।ইরফানের কেনো যেনো খারাপ লাগা কাজ করলো,মেয়েটার সাথে আর কোনো দিন দেখা হবে না?ভেবেই বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসলো।আসলেই মায়া খুব অদ্ভুত জিনিস এর নাম, কখন যে কার প্রতি জন্মে যায় মানুষ টেরই পায় না।যখন মনে পড়ে সে মানুষ আর আমাদের আশেপাশে নেই,তার সাথে আর দেখা হবে না, ডাকা হবে না কোনো প্রিয় নামে তখন আমাদের ভীষণ রকম কষ্ট হয়।মায়া এক নিদারুণ যন্ত্র’ণা দিয়ে বেড়ায় এই পৃথিবী কুলের মানুষ কে।
কিছু কিছু গল্প হয়তো শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়,অনুভূতিরা স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই উড়ে যায় প্রেমের প্রজাপতি,প্রণয় বীণা বাজার আগেই সুর হারিয়ে যায়।তবুও মানুষ বাঁচে প্রিয় মানুষের ছোট্ট ছোট্ট স্মৃতির ভাঁজে। আলো আঁধারে হাসির আড়ালে দুঃখ লুকিয়ে।
———-
আজ রাতের আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠেছে,বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই চাঁদের আলোয় গা ভাসাচ্ছে নব দম্পতি।
মিহিরের বুকের সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি, মিহির বৃষ্টি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,ভালোবাসি প্রিয়তমা।আমার ছোট্ট জীবনে তোমার আগমন বেঁচে থাকার আগ্রহ বাড়িয়ে দিলো।আমার জীবনের পরিসীমার প্রতিটি মুহুর্ত তোমাকে সাথে নিয়ে কাটাতে চাই।ভালোবেসে তোমাকে আগলে রাখতে চাই আমৃ”ত্যু।
বৃষ্টি মিহিরের দু গাল ছুঁয়ে দিলো, চোখে চোখ রেখে বললো–,,আমিও তোমাকে ভালোবেসে সারাটা জীবন তোমার পাশে ছায়া হয়ে থাকতে চাই।
মিহির মিছে রাগ দেখিয়ে বললো–,,এখন এসব বলে লাভ হবে না,তুমি আমাকে কতো কতো কষ্ট দিয়েছে ভুলিনি কিছু আমি।
বৃষ্টি মৃদু হেসে বললো–,,ওমা তাই বুঝি?এখন আমার কি শা’স্তি হওয়া উচিত বলো।
–,,সারাজীবন বেশি বেশি ভালোবাসতে হবে।
বৃষ্টি মিহিরের কপালে গভীর চুম্বন একে দিয়ে বললো–,,ভালোবাসবো।
তাদের সুন্দর মুহুর্তের স্বাক্ষী হলো রাতের আকাশ, চাঁদ, তারারা।
————-
ভোরের আলো ফুটে উঠেছে সকালে নাস্তা করে যে যার দিনকার কাজে লেগে গেলো,মেহেরিন ভার্সিটি যাবে জেরিনের সাথে,আজ নিঝুম ব্যস্ত তাই সে নিয়ে যেতে পারবে না।
সাব্বির রাস্তায় দাড়িয়ে দুপুরের পর তোহা,নিশাত কলেজ হোস্টেলে চলে যাবে,তোহার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে এনেছে সে বাসায় দিয়ে বের হলো।
জেরিন কে দেখে ডেকে উঠলো–,,এই জেরিন দাঁড়া, আমিও যাবো।
জেরিন পাত্তা না দিয়ে হেঁটে গেলো,মেহেরিন বললো–,,ভাইয়া আসুন,এক সাথে যাই।
জেরিন আগে আগে গেলো,মেহেরিন আর সাব্বির পেছনে।
সাব্বির বললো–,,ভাব দেখো মেয়ের মাটিতে পা পড়ে না।
মেহেরিন হেসে বললো–,,ভাইয়া অনেক ভালোবাসেন বুঝি আপু কে?
সাব্বির মাথা চুলকে বললো–,,হুম।কিন্তু মেডাম পাত্তাই দেয় না
মেহেরিন বললো–,,ভাইয়া আপনি আপুকে জেলা”স ফিল করান এমন করবেন যাতে আপু বলতে বাধ্য হয় সে আপনাকে ভালোবাসে।
মেহেরিন সাব্বির কে বুঝালো কিভাবে কি করতে হবে।
ভার্সিটিতে পৌঁছে সাব্বির জেরিনের পাশে বসলো না,অন্য এক মেয়ের পাশে গিয়ে বসলো।জেরিন কিছু বললো না তবে একবার তাকিয়েছে শুধু।সাব্বির পুরো ক্লাসে সবার সাথে আড্ডা দিয়েছে যখানে এই ছেলে সব সময় জেরিনের সাথে থাকতো, এটা নিয়ে আবার মজাও নিচ্ছে কেউ কেউ।জেরিন এক পর্যায়ে রেগে বেরিয়ে যায় ক্লাস থেকে।
সাব্বির যেনো দেখেও দেখলো না।ক্লাস শেষ হয়ে গেছে বাড়ির উদ্দেশ্য যাবে ওরা,জেরিন ভেবে নিয়েছে সাব্বির তো এখন আসবে,তখন এই ছেলেকে বুঝাবে মজা।একদিন কথা বলেনি দেখে অন্য মেয়ের কোলে চড়ে বসতে হবে?এই না ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিলো!
মেহেরিনের ও ক্লাস শেষ, সে দৌড়ে এসে বললো–,,জানো আপু সাব্বির ভাইয়া নাকি একটা মেয়েকে প্রোপোজ করছে আমি তো আসার সময় শুনে আসলাম।
জেরিন বসা থেকে দাড়িয়ে চেঁচিয়ে বললো–,,কি?ওর এতো বড় সাহস অন্য মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলা,বের করছি। কোথায় শয়”তান টা?
ওইতো ভার্সিটির গাছ তলায় আমাদের ডিপার্টমেন্টের ওখানে।
জেরিন ছুটলো ওই দিকে,সাব্বির কে দেখলো আশেপাশে কে আছে কে নেই তাতে ওর কিছু যায় আসে না।
গিয়েই এলোপাতাড়ি মার’তে লাগলো সাব্বির কে,সাব্বির জেরিনের দু হাত নিজের আয়ত্তে নিয়ে বললো–,,কি সমস্যা?
জেরিন বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে বললো–,, তোকে আমি বিয়ে করবো না বেয়া”দব। তুই আস্ত একটা খারা”প।
সাব্বির অবাক হয়ে বললো–,,তুই আমাকে কেনো বিয়ে করবি তুই তো আর আমাকে ভালোবাসিস না।দিদুন তো তোর বিয়ে ঠিক করেই রেখেছে।
জেরিন সাব্বির কে ধাক্কা মে’রে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে তো তুই খুশি হবি।ওই শাঁক”চুন্নি টার সাথে ঘেঁষা ঘেঁষি করে বসতে পারবি।
দিদুন কে আমি বলবো আমার বিয়ে যাতে তোর সাথে বাতিল করে দেয়।
সাব্বির ভ্রু কুঁচকে বললো–,,আমাদের বিয়ে হবে কি করে?
জেরিন বিরক্ত হয়ে বললো–,,কারন আমি বলেছিলাম দিদুন কে আমি তোকে ভালোবাসি তোর সাথে যাতে আমার বিয়ে দেয়।বিয়ে তো ঠিক ও করে রেখেছে আমাদের পরীক্ষার পরই সবাই কে বলতো আর তুই তো তার আগেই আসল রুপ দেখিয়ে দিয়েছিস।
সাব্বির জেরিন কে আবার জিজ্ঞেস করলো–,,তুই আমাকে কি?
–,,ভালোবাসি না।
জেরিন চলে যেতে নিলেই সাব্বির তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
জেরিন বলে উঠলো–,,ছাড় আমাকে ধরবি না তুই,এক সপ্তাহ হয়নি তোকে একটু ইগ’নোর করেছি আর তুই অন্য মেয়ের পাশে।
সাব্বির বলে উঠলো–,,স্যরি স্যরি স্যরি।তোর মুখ থেকে ভালোবাসি শোনার জন্যই তো এসব করেছি,আর বুদ্ধি তো তোর ভাইয়ের বউ দিয়েছে।
জেরিন সাব্বির কে আরো একটা মে”রে বললো–,, সব কথা আমাকে মুখে কেনো বলতে হবে।তোর বুঝা উচিত ছিলো।
সাব্বির জেরিন কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,ভালোবাসার কথা সব সময় গোপনে সুন্দর নয়,কখনো কখনো প্রকাশ করার মাঝেও মোহনীয়তা থাকে একে অপরের প্রতি মায়া বাড়ে।
তুই আমার এক আকাশ সম মায়া জেরিন,তোকে যদি কোনো দিন ভালোবাসা বন্ধ করে দেই তবুও তোকে ছাড়তে পারবো না কারন তোর আর আমার বন্ধন মায়ার বন্ধন। ভালোবাসার থেকেও সুন্দরতম বন্ধন বন্ধুত্বের মিষ্টি সম্পর্ক আমাদের।একটা না একটা তো আমাদের কে জুড়ে রাখবেই।চেষ্টা করে দেখতে পারিস আমাকে ছাড়তে পারবি না তুই।
জেরিন মুখ বাকিয়ে বললো–,,তোকে ছাড়তে চাই ও না আমি।তোকে ছাড়া কাউকে জ্বা”লিয়ে তেমন শান্তি পাই না তো তাই।
মেহেরিন এসে বললো–,,এই আপু তোমরা কি এখানে প্রেমই করবে নাকি বাড়িও যেতে হবে।
ওরা বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
রোহান ভার্সিটি থেকে এসেই নিশাত কে বিরক্ত করতে গেলো।
নিশাত তো বলেই বসলো–,,আমি চলে যাচ্ছি তুমি এবার শান্তিতে থেকো,জ্বা”লানোর জন্য নতুন কাউকে খুঁজে নাও।
রোহান বললো–,,সত্যি রে নিশাত তুই চলে গেলে আমার ভীষণ কষ্ট হবে,বুঝতেই তো পারছিস বাসা থেকে একজন ফ্রি ফ্রি কাজের লোক চলে যাচ্ছে কষ্ট তো হবেই।
নিশাত বালিশ ছুঁড়ে মার’লো রোহানের দিকে বলে উঠলো–,,একদম আমার সামনে আসবে না তুমি।মা মা তুমি কোথায়।
নেহা,নিখিলের সাথে রাগ করে বসে আছে।নিখিল ওর কাজ নিয়েই থাকুক না, এতো করে ফোন দিলো ধরলোই না এদিকে নিশাতের যাওয়ার সময় হয়ে আসলো।
নামিরা তো কখন থেকেই নিশাতের রুমে বসে।তার ফুপ্পি চলে যাবে সে দুঃখে মেয়েটা সকালেও তেমন কিছু খায়নি।
নিশাত বের হলো,তোহাও তাদের বাড়ির গেইট থেকে বের হলো।দুজনের চোখেই পানি,পরিবার কে ছেড়ে যাওয়া মুখের কথা নয়,এতো গুলো বছর পরিবারের সাথে থাকা,হঠাৎ করেই নতুন পরিবেশে যাচ্ছে সেখানে নিজেদের দেখবাল নিজেদেরই করতে হয়,সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে যদিও বেশি দূরে নয়,তবুও পারিবারিক দুরত্ব ছোট বড় হয় না।
সবার আড়ালে রোহান তোহার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো–,,অপেক্ষায় থাকবো তোমার।
তোহা অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো,চোখ মুছে বললো–,,আপনি ভালো থাকবেন রোহান ভাই।
রোহান মুচকি হেসে বললো–,,তোকে না দেখতে পেলে এমনিতেও ভালো থাকবো না,তাই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও দিতে পারবো না।তুই ফিরে আয় তখন এক সাথে ভালো থাকবো!
রোহান প্রস্থান করলো তোহা তাকিয়ে রইলো তার পানে।তার ছোট্ট হৃদয় আভাস পেলো নতুন অনুভূতির, টের পেলো কোথাও না কোথাও মনের গহীনে বেজে উঠলো প্রণয়ের সুর।প্রণয় লগ্ন নাকি বিদায় লগ্ন?তোহা একরাশ মন খারা”প নিয়ে গাড়িতে উঠলো,আবার মুহুর্তেই খুশির আবেশে পুলকিত হলো তার মন।চোখ বন্ধ করেই বললো–,,আমিও আপনার অপেক্ষায় থাকবো!
ভালোবাসারা ভালো থাকুক অপেক্ষায়,দূরে নয়তো খুব কাছে, আদুরে মায়ায় কিংবা নিদারুণ যন্ত্র”ণায়!
~~~~~সমাপ্ত~~~~