প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-০৬

0
508

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 6
writer : Mohona
(do not copy please)

.

প্রান্তিক : মাবাবা চাই।
নীড় : ওকে।
প্রান্তিক : ওকে! ইয়ে… কালকেই মাবাবা নিয়ে আসবে আমাল জন্য?
নীড় : না।
প্রান্তিক : তাহলে?
নীড় : এখনই দেখাবো তোমাল মাবাবাকে।
প্রান্তিক : সত্যি?
নীড় : হ্যা সত্যি।
বলেই নীড় প্রান্তিককে কোলে তুলে নিয়ে ছাদের দিকে গেলো।
প্রান্তিক : চাচ্চু… আমাকে ছাদে নিয়ে এলে কেনো?
নীড় : এখান থেকে তোমার মাবাবা মানে আমার ভাইয়া-ভাবিকে দেখা যায়।
প্রান্তিক : আমার মাবাবা তোমাল ভাইয়া-ভাবি হয়?
নীড় : ইয়েস লাভ। তারা আমার ভাইয়া ভাবি হয়। দাদুভাই এবং দীদুর ছেলে এবং বউমা হয়।
প্রান্তিক : ওয়াও। মানে বাবা দাদুভাইয়ের আলো একটা ছেলে।
নীড় : ইয়েস লাভ।
প্রান্তিক : ছাদ থেকে মাবাবাকে দেখা যা!
নীড় : হামম।
প্রান্তিক : তাহলে কেনো যে আগে দেখলাম না।
নীড় : তুমি অনেকবার দেখেছো।
প্রান্তিক : তাই?
নীড় : হামম।
প্রান্তিক : তারা আমাকে দেখে?
নীড় : হ্যা। প্রতিদিন দেখে। প্রতিটি সময় দেখে।
প্রান্তিক : আচ্ছা আমি দেখলে আমাল মনে নেই কেনো?
নীড় : আজকের পর থেকে মনে থাকবে। ওই যে দেখো সবচেয়ে বিগ স্টার। দেখতে পাচ্ছো?
প্রান্তিক : হামম হামম।
নীড় : ওই স্টারটার সবথেকে কাছের ২টা স্টার দেখতে পাচ্ছো?
প্রান্তিক : হামম হামম।
নীড় : ওই ২টা স্টারই তোমার মাবাবা।
প্রান্তিক : কি?
নীড় : হ্যা।
প্রান্তিক : তুমি দুষ্টুমি কলছো? মানুষ কি কখনো স্টাল হয়?
নীড় : আমি একটুও দুষ্টুমি করছিনা। যারা অনেক স্পেশাল হয় তারাই স্টার হয়ে যায়। ভাইয়া-ভাবিও অনেক স্পেশাল ছিলো। ছিলো বললে ভুল হবে। তারা এখনো স্পেশাল। তাই তো স্টার হয়ে গিয়েছে।
প্রান্তিক : তালা আমাকে ছেলে স্টাল হয়ে গেলো কেনো? আমাল কাছে আসেনা কেনো? থাকেনা কেনো? কথা বলেনা কেনো? আদল কলেনা কেনো?
নীড় : যারা স্টার হয়ে যায় তারা তো আকাশ থেকে আসতে পারেনা। আকাশ অনেক অনেক দূরে।
প্রান্তিক : তাহলে আমিও মাবাবাল কাছে যা…
নীড় প্রান্তিকের মুখ চেপে ধরলো।
নীড় : না বাচ্চা… চুপ। একদম কখনো এভাবে বলবেনা। কখনো না মানে কখনো না। তুমি তো চাচ্চুর জীবন। মরেই যাবো তোমাকে ছারা।
প্রান্তিক : আচ্ছা বাবা আচ্ছা না বললাম। কিন্তু মলে যাওয়া কি?
নীড় : মরে যাওয়া মানে অনেক বেশি ব্যথা পাওয়া। অনেক বেশি ব্যথা পাওয়া। সেই ব্যথা কখনো যায়না।
প্রান্তিক : ওও… আচ্ছা আমি আল বলবোনা। কিন্তু চাচ্চু… মাবাবাকে আসতে বলোনা আমাল কাছে।
নীড় ওকে কোলে নিয়ে দোলনায় বসলো।
নীড় : ওরা তো স্টার। তাই আল্লাহ আসতে দেয়না। ওরা আকাশটাকে সাজিয়ে রেখেছে। আকাশে যতোগুলো স্টার দেখছো তারা সকলেই স্পেশাল বাবুদের স্পেশাল মাবাবা। যারা মিলে আকাশটাকে সাজিয়ে রেখেছে। আকাশে স্টার না থাকলে কি ভালো লাগে বলো?
প্রান্তিক : না ভালো লাগেনা। কিন্তু আমাল যে আমাল মাবাবাকে দেখতে ইচ্ছা কলছে। তালা সবসময় আমাকে দেখতে পালে। আমিতো পালিনা।
নীড় : তুমিও দেখতে পাবে।
বলেই নীড় মোবাইবে প্রনয়-নীলার ছবি বের করলো।
নীড় : এটা তোমার বাবা , এটা তোমার মা।
প্রান্তিক : আমাল মাবাবা…?
নীড় : ইয়েস লাভ।
প্রান্তিক : কি সুন্দল আমাল মাবাবা! মা কে দেখতে মামমামেল মতো। মায়েল হাসি মামমামেল মতো।
নীড় : হ্যা কিছুটা।
প্রান্তিক : কিন্তু মাকে দেখতে মামমামেল মতো কেনো?
নীড় : তুমি তো তোমার মাবাবার নামই জানতে চাইলে না।
প্রান্তিক : ভুলেই গিয়েছি। নাম কি আমাল মাবাবাল?
নীড় : তোমার বাবার নাম প্রনয় আহমেদ চৌধুরী এবং মায়ের নাম নীলা।

.

পরদিন…
নীড় : প্রান দুদিন ধরে ওর মাবাবা সম্পর্কে জানতে চাইছে তোমরা সেটা আমাকে জানাওনি কেনো? আড়াল কেনো করেছো? কেনো?
নিহাল-নীলিমা চুপ করে আছে।
নীড় : কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো।
নিহাল : তুমি যদি রেগে যাও তাই বলা হয়নি। আমরা ভোলানোর চেষ্টা করছিলাম।
নীড় : পেরেছো ভুলাতে? হামম? আজ না হয় দুদিন পর ওর মাথায় মাবাবা নিয়ে প্রশ্ন আসবেই। বড় হলে ওকে বোঝানো আরো কঠিন হয়ে পরবে।
নিহাল : প্রান কি তোমাকে কিছু বলেছে?
নীড় : হ্যা। কালতে রাতে ঘুম থেকে উঠে বলছিলো।
নীলিমা : কি বলেছো ওকে?
নীড় : বলেছি যে ওর মাবাবা আকাশের তারা হয়ে গিয়েছে। ভাইয়া এবং ওর মায়ের ছবি দেখিয়েছি।
নীলিমা : বললে আর মেনে নিলো!
নীড় : মানানো হয়েছে।
নীলিমা : আরেকটু বড় হয়ে যখন প্রশ্ন করবে তখন?
নীড় : তখনটা বুঝে নেয়া যাবে। যে বাচ্চাটা মরে যাওয়া মানে বোঝেনা তাকে কি বলবো তার মাবাবা মারা গিয়েছে? হামম? আরেকটু বড় হলে ওটাও বোঝানো যাবে।
নীলিমা : হামম। আমি দেখছি প্রান ঘুম থেকে উঠেছে কিনা। ১০টা বাজে প্রায়।
নীড় : দেখো।
নীলিমা ওপরে গেলো।
নিহাল : নীড়… গতকালকে আমাদের আশুলিয়ার ফ্যাক্টরীটা সীল করা হলো। কি করবে এখন?
নীড় : রবিবারের অপেক্ষা।
নিহাল : রবিবারে ফ্যাক্টরীটা ওপেন হয়ে যাবে?
নীড় : ওই ফ্যাক্টরী নিয়ে তো আমি ভাবছিই না। বরং ওই ফ্যাক্টরীর সিরাজ , আকরামকে তো চরম শাস্তি দেয়া হয়েছে।
নিহাল : কিন্তু কেনো?
নীড় : ওরা চরম গন্ডগোল করেছিলো। ওদের লোভের জন্যই ফ্যাক্টরীর বদনাম হয়েছে।
নিহাল : ওহ। ফ্যাক্টরী নিয়ে না ভাবলে রবিবারের অপেক্ষা কেনো করছো?
নীড় : রবিবারেই দেখতে পারবে। প্রানকে রেডি করে রাখতে বলো। আমি ৪টা বাজে এসে ওকে কুংফু ক্লাসে নিয়ে যাবো।
নিহাল : হামম।
নীড় বেরিয়ে গেলো।
নিহাল : রবিবারে আবার কি ঘটাবে কে জানে?

.

আজকে রবিবার। নীড় ঘড়ি দেখছে। ৮টা বাজতে চলল।
নীড় : মেরিন বন্যা খান শাওয়ার নিয়ে বের হবে। হয়েই ঝটকা খাবে।
পিটার : স্যার… তিনি যদি প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন?
নীড় : ও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে নিজের অফিস , ফ্যাক্টরী বাঁচানোর। বাসার কথা তো ভাবেইনি। ইনকাম ট্যাক্স রেইড হবে। তার ফেইসটা দেখতে হবে পিটার। তাইনা?
পিটার : স্যার… সেটার পরিবর্তে তার প্রহারও কিন্তু ভয়ংকর হবে।
নীড় : হু কেয়ারস? চলো ফিল্ম দেখা যাক।

মেরিন গোসল করে বেরিয়ে হেয়ার ড্রায়ারটা কেবল হাতে নিলো। তখন নিচ থেকে কোলাহল শুনতে পেলো। মেরিন ওটা রেখে খোপা করতে করতে নিচে নেমে গেলো।
মেরিন : কি হয়েছে দাদুভাই? এরা কারা?
শমসের : ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকে এসেছে।
অফিসার তাজ : ইটস ইনকাম ট্যাক্স রেইড।
মেরিন : কার অনুমতিতে এবং কিসের ভিত্তিতে এই রেইড সেটা জানতে পারি কি?
তাজ : সরি ম্যাম। আমরা সেসব উত্তর দিতে বাধ্য নই। অফিসারস , স্টার্ট।
মেরিন পিস্তল বের করে মেঝেতে ফাকা গুলি করলো।
মেরিন : থেমে যান।
তাজ : ম্যাম , এটা কিন্তু আইনত অপরাধ।
মেরিন : আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না। আপনারা যে ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকেই এসেছেন সেটার প্রমান কি? কেনো বিশ্বাস করবো আমরা?
তাজ : এই যে পেপার , এই যে আমাদের আই কার্ড।
মেরিন : জন…
জন কার্ড দেখলো , কাগজ দেখলো। এরপর অফিসে ফোন করে সত্যতা যাচাই করলো।
তাজ : প্রমান পেয়েছেন ম্যাম? এখন আমাদের কাজ আমাদেরকে করতে দিন।
মেরিন : জন… আইনমন্ত্রী অথবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কল করো।
জন : ইয়েস ম্যাম।
তাজ : সরি ম্যাম। আপনাদের মোবাইলফোন আমাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। রেইড টাইমে আপনাদের ফোন বন্ধ থাকবে। আপনারা কোনোকিছুতে হাত দিতে পারবেন না। আশা করি নিয়মটা জানেন। ওয়েপনস-ও দিয়ে দিতে হবে।
মেরিন : হাউ ড…
শমসের খান মেরিনের কাধে হাত রাখলো।
শমসের : দিদিভাই… কাজ করতে দাও।
মেরিন : কিন্তু দাদুভাই…
শমসের : মাথা ঠান্ডা রাখো। অফিসার , যে কাজে এসেছেন সেটা সম্পুর্ন করুন। এই নিন মোবাইল ফোন।
সকলের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়া হলো।
নীড় : আমার মোবাইলফোনও কি হ্যান্ডওভার করতে হবে?
তাজ : মিস্টার চৌধুরী আপনি এখানে?
নীড় : যাচ্ছিলাম এখান দিয়ে তাই ভাবলাম বেয়ানসাহেবার সাথে দেখা করে যাই।
তাজ : বেয়ানসাহেবা?
নীড় : ইয়েস। আপনি হয়তো জানেননা যে খানস আমাদের রিলেটিভ। এটা আমার মৃত ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি। যাইহোক , এই বাসায় অসময়ে ঢুকে পরেছি। এখন কি আমার এবং পিটারের মোবাইলফোনও দিয়ে দিতে হবে?
তাজ : না। বাট কাউকে কল করতে পারবেন না । আর না এনাদেরকে কল করতে দিবেন। চাইলে চলে যেতে পারেন।
নীড় : আত্মীয় তো। কিভাবে এনাদেরকে বিপদে ফেলে রেখে যাই। আপনারা নিজেদের কাজ করুন। বাট প্লিজ , ডোন্ট বি ক্রুল।
মেরিনের খোপা খুলে গিয়েছিলো। তাই আবার বেধে নিলো।
শমসের : দিদিভাই , তোমার চুল তো ভেজা।
মেরিন : ব্যাপার না। তোমার ছেলের বউয়ের জুয়েলারি কি সব বাসায়?
শমসের : হ্যা।
মেরিন : কি প্রয়োজন ছিলো সেগুলো বাসায় রাখার?
শমসের : কে জানতো কারো সাহসে কুলাবে খান বাড়িতে রেইড করানোর। আর তার চেয়েও বড় কথা। আছে তো কি হয়েছে? আমাদের তো অবৈধ পয়সার নয়। প্রতিটি গহনার ক্যাশমেমো আছে।
মেরিন : বাসাটা এলোমেলো হবে। অগোছালো পরিবেশ আমার পছন্দ নয়।
নীড় : সো স্যাড।
শমসের : নীড় , পিটার তোমরা বসো।
নীড় : ইটস ওকে খান… দাদু। আমরা ঠিক আছি।
মেরিনের খোপা আবারো খুলে গেলো। চুল দিয়ে এখনো পানি পরছে। পিঠ পুরো ভিজে গিয়েছো।
নীড় : খান দাদু , আপনার নাতনি মডেল হতে পারতো ভালো।
মেরিন রেগে নীড়ের দিকে তাকালো। নীড় চোখে চশমে পরে নিলো। শমসের খান নিজের গায়ের চাদরটা মেরিনের হাতে দিলো।
শমসের : দিদিভাই , ঠান্ডা লেগে যাবে। শরীরে রাখো।।
মেরিন : নট নিডেড।
শমসের : দিদিভাই…
মেরিন চাদর পেচিয়ে নিলো। অফিসাররা রেইড চালিয়ে পুরো বাড়ির জিবিসপত্র এলোমেলো করে , হিসাব নিকাশ করে, মিলিয়ে নিয়ে চলে গেলো।
নীড় : খান বাড়িটা দেখে খুব আফসোস হচ্ছে পিটার। ধ্বংসস্তূপ লাগছে।
মেরিন : এক মাঘে শীত যায়না।
নীড় : জানি আমি। কিন্তু তুমি এটা জানোনা যে তোমার মুখোমুখি এখন দারিয়ে আছে নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন। জিততে থাকা তোমার অভ্যাস হতে পারে। কিন্তু তোমার প্রতিপক্ষ এবার আমি।
মেরিন : ওয়ান্স অ্যা লুজার অলওয়েজ অ্যা লুজার।
নীড় : ইন ইউর ড্রিম। আমার পেছনে লাগতে এসোনা। ছাই হয়ে যাবে। চলো পিটার।
নীড় পিটারকে নিয়ে চলে গেলো। মেরিন হাতের মোবাইলটা আছার মারলো।
মেরিন : অনেক হয়েছে বোরের চাল। এবার রানীর চাল।

.

৩দিনপর…
পিটার : স্যার…
নীড় : বলো।
পিটার : কেউ প্রানকে কিডন্যাপ করেছে।
নীড় : কি?
পিটার : ইয়েস স্যার।
নীড় : মেরিন বন্যা খান… তোমারই কাজ এটা। ছারবোনা আমি তোমাকে।
নীড় নিজের গান লোড করে বের হলো। ওর সাথে আছে পিটার। পিটারকে ড্রাইভ করতে না দিয়ে নিজের ড্রাইভ করছে। সর্বোচ্চ বেগে গাড়ি চালাচ্ছে। মাথায় আগুন জ্বলছে ওর। প্রান্তিকের কথা মাথায় ঘুরছে ওর।
নীড় : চাচ্চু তোমাকে ওই মেরিন বন্যা খান থেকে ছিনিয়ে নিবে সোনা… ছারবোনা মেরিন বন্যা খানকে।

জন : ম্যাম ম্যাম…
মেরিন : কি হয়েছে জন? তোমাকে এমন অস্থির লাগছে কেনো? কি হয়েছে?
জন : ম্যাম… কে কিডন্যাপ করেছে।
মেরিন দারিয়ে গেলো।
মেরিন : কি বলছো কি?
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : প্রান… সব হয়েছে ওই লুজারটার জন্য। নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষমতা নেই অথচ নোংরাভাবে কাস্টডি নিয়েছে। যদি প্রানের কিছু হয় আগুন জ্বালিয়ে দিবো আমি ঢাকার বুকে। সবাইকে মেরের দিবো। সবার আগে মরবে ওই নীড়।
মেরিন জনকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হচ্ছে। জন কেবিন থেকে হলো। মেরিন বের হবে ঠিক সেই মুহূর্তে নীড় ভেতরে ঢুকে গেলো। দরজা ধপাস করে লাগিয়ে দিলো। পিটার এবং জন একে অপরকে আটকে রেখেছে। নীড় ভেতরে ঢুকে মেরিনের গলা চেপে ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো। ওই অবস্থায় ওকে টেবিলে ফেলল। তখনো ওর গলা চেপে ধরে রেখেছে। নীড় ওর কপালে পিস্তল ঠেকালো।
নীড় : প্রানকে কিডন্যাপ করিয়েছো কোন সাহসে? বলো প্রান কোথায়? বলো…
যন্ত্রণায় মেরিনের চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেলো। বহু কষ্টে মেরিন মার্শাল আর্টের কিছু টেকনিক ব্যবহার করে নীড়কে দূরে সরাতে সক্ষম হলো। নীড় নিজের ডান হাত স্বাভাবিকভাবে নারাতে পারছেনা। মেরিন জোরেজোরে কাশি দিতে লাগলো। মেরিন পানির গ্লাস নিতে নিলে নীড় বাম হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে গ্লাসে গুলি করলো। গ্লাসটা ভেঙে গেলো।
নীড় : পরের গুলিটা তোমার মাথায় লাগবে। যদি গুলি খেতে না চাও তাহলে বলে দাও যে প্রান কোথায়?
কয়েক মিনিট পর মেরিন স্বাভাবিক হলো। শ্বাসনালিতে চাপ লাগার কারনে ওর গলাতে প্রচন্ড ব্যথা করছে।
মেরিন : হ্যাভ ইউ…
ও আবারো কাশি দিতে লাগলো।
মেরিন : হ্যাভ ইউ লস্ট ইট? আমি প্রানকে কেনো কিডন্যাপ করতে যাবো? নিজের দোষ ঢাকার জন্য একদম আমাকে দোষ দিবেনা। প্রানের নিরাপত্তা দিতে পাওয়ার যোগ্যতা নেই অথচ মুখে বড়বড় কথা।
নীড় : চুপ। একদম চুপ। না হলে জানে মেরে দিবো।
মেরিন নিজের পিস্তল বের করলো।
মেরিন : আমার কাছেও গান আছে। চালাতেও জানি। নিশানাও ভালো। যদি প্রানের কিছু হয়… তাহলে সবার প্রথমে তোমার লাশ পরবে।
শেষ কথাটা মেরিন নীড়ের বুকে আঙ্গুলের টোকা দিতেদিতে বলল। এরপর গিয়ে দরজা খুলল।
জন : ম্যাম… ঠিক আছেন আপনি?
মেরিন : হ্যা। চলো।
মেরিন জনকে নিয়ে এবং নীড় পিটারকে নিয়ে বের হলো।

.

□ : প্রানযে আমাদের এখানে নীড়-মেরিন সহজেই জেনে যাবে। ঠিক পৌছে যাবে এখানে।
■ : জানি আমি। জানি বলেই তো প্রানকে এখানে এনেছি। মেরিন মনে করবে যে নীড় নিজেই কিডন্যাপ করিয়েছে প্রানকে। যেনো মেরিন ফেঁসে যায়। যেমন করে কাস্টডি নেয়ার জন্য পরিকল্পনা করেছিলো তেমন করে।
□ : হামম। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে নীড় মনে করবে মেরিন কিডন্যাপ করিয়েছে।
■ : করবেই তো।
□ : তোমার কান্ড কারখানা আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কি উদ্দেশ্যে কি করছো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
■ : বাঘ এবং মহিষের লড়াইয়ে কার জয় কখন হয় সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু বাঘ এবং মহিষের লড়াই কারন ছারা হয়না। নীড়-মেরিনের মধ্যে খন্ডযুদ্ধ হচ্ছে। যেটা আমি চাইনা। আমি বড় কিছু চাই। তবে গিয়ে আমাদের উদ্দেশ্য পূরন হবে। এখন এই স্থান ত্যাগ করতে হবে। চলো।

.

নীড় এবং মেরিন একই সময় গাড়ি নিয়ে সেখানে পৌছালো যেখানে প্রান্তিককে রাখা হয়েছে।
মেরিন মনেমনে : আমার আগে এখানে পৌছে গেলো? পৌছাবেই তো । ওই তো রেখেছে এখানে। নিশ্চয়ই আমাকে ফাঁসাতে করেছে। ওর আগে প্রান পর্যন্ত পৌছাতে হবে।
নীড় মনেমনে : ঠিক জানতাম যে ওই প্রানকে এনে রেখেছে। দ্রুত যেতে হবে।
ওরা ভেতরে গেলো। খুজতে লাগলো প্রান্তিককে। জন-পিটারও খুজছে। অবশেষে প্রান্তিককে পেয়েও গেলো। ঘুমিয়ে আছে ও। ওকে দেখে দুজনই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। এগিয়ে গেলো ওর দিকে। মেরিন ওকে ধরতে নিলে নীড় ওর হাত ধরে সরিয়ে দিলো।
নীড় : ডোন্ট টাচ। ওর কাস্টডি আমাদের। আর ওকে কিডন্যাপ করিয়ে তুমি যে নোংরা কাজ করেছো সেটার পর তো তোমাকে ওকে টাচ করতে দিবোই না।
মেরিন : তুমি কিডন্যাপ করিয়েছো।
নীড় : তুম…
প্রান্তিক : চাচ্চু… মামমাম…
দুজন থেমে গেলো।
মেরিন : বাচ্চা…
নীড় ওর পাশে বসলো।
নীড় : ঠিক আছো তুমি লাভ?
প্রান্তিক : হ্যা একদম ঠিক আছি। জানো আজকে আমি খুব মজা কলেছি। খুব খেলা কলেছি।
নীড় মেরিনের দিকে তাকালো। তাচ্ছিল্য আছে দৃষ্টিতে। ওর দৃষ্টি যেনো বলছে যে ‘জানতাম তুমিই কিডন্যাপ করেছো। তাই যত্নে ছিলো।’
মেরিন মনেমনে : এতোটুকু বাচ্চাকে আর কতোবার ব্যবহার করবে কে জানে?
নীড় : চলো বাসায় চলো।
মেরিন : প্রানসোনা… তুমি মামমামের সাথে চলো।
নীড় : পিটার… কাগজটা ম্যাডামের চোখের সামনে তুলে ধরো। চলো লাভ।
নীড় প্রান্তিককে নিয়ে চলে গেলো।
মেরিন : জন… আমাদেরকে সরাসরি নাটকের শেষ দৃশ্যে যেতে হবে। আর অপেক্ষা নয়। নীড়ের দুর্বলতা ওর রাগ। ওকে ভয়ংকরভাবে রাগাতে হবে। এমন করে রাগাতে হবে যেনো ওর নিজের ওপর ওর কোনো নিয়ন্ত্রন না থাকে। শেষের পদক্ষেপ শুরুতে ফেলতে হবে।
জন : আপনি কেবল অর্ডার করুন। বাকি কাজ আমার।

.

চলবে…