প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-১০+১১

0
518

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 10
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : একদম না।
শমসের : নীড়… কি শুরু করেছো কি?
নীড় : আমি কিছু শুরু করিনি। আপনারা করেছেন। আপনার এই নাতনি করেছে। নিজের মাবাবাকে মেরে ফেলার নোংরা নাটক সাজিয়েছে । যেটা আমি ধরে ফেলেছি।
মেরিন : পাঁচ সেকেন্ড সময় দিলাম। দফা হও চোখের সামনে থেকে।
নীড় : নো হানি। দফা করবো তোমাকে আমি। নোংরা খেলাটা খেলার জন্য।
মেরিন : নোংরাতে এখনো পুরোপুরি ভাবে নামিনি। নামলে তোমাকেও হারাবো। নাউ গেট আউট।
বলেই মেরিন চলে যেতে নিলে নীড় ওর হাত ধরলো।
নীড় : লজ্জা করলোনা? লজ্জা করছেনা?
শমসের : তুমি বিষয়টা ক্লিয়ারলি বলো।
নীড় : ক্লিয়ারলিই বলেছি। কিন্তু আপনারা বুঝতে চাইছেন না। কবির ফয়সাল খান এবং কনিকা খান মারা যায়নি। তাদের মৃত্যুর মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন আপনারা। মাস্টারমাইন্ড এই মেরিন বন্যা খান।
শমসের : তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। বিনাকারনে দোষারোপ করছো মেরিনকে।।আর মৃত্যু নিয়ে কেনো এতোবড় খেলা খেলবো বলোতো?
নীড় : প্রানের জন্য। কাস্টডি নেয়ার জন্য।
শমসের : রাবিশ কথাবার্তা বলো না তো। ওরা মারা গেলে প্রানের কাস্টডি আমরা কিভাবে পাবো বলো তো?
মেরিন : এক মিনিট দাদুভাই। মিস্টার লুজার চৌধুরী কিসের ভিত্তিতে তুমি এসব বলছো? প্রমান দিতে পারবে?
নীড় : নীড় আহমেদ চৌধুরী আমি। প্রমান ছারা , ভিত্তি ছারা কথা বলবো? নট অ্যাট অল। বন্দি বানিয়ে রেখেছি তাদেরকে।
মেরিন শমসেরের দিকে এবং শমসের মেরিনের দিকে তাকালো।
শনসের : ততুমি সত্যি বলছো! আমার ছেলে , বউমা বেঁচে আছে…
নীড় : একদম ড্রামা করবেন না।
মেরিন : ড্রামা তো তুমি করছো। মিথ্যা বলছো। দেখাও আমাকে আমারই মাবাবাকে।
নীড় : দেন লেটস গো বেবি।
মেরিন : তোমাকে ভরসা করে তোমার সাথে যাবো সেটা তুমি ভাবলে কি করে?
নীড় : তোমার কাছে কোনো অপশন নেই।
মেরিন : অপশন মাই ফুট। তোমার কথা নিয়ে ভাবে কে? তুম…
শমসের : দিদিভাই… গিয়ে দেখিনা চলো। যদিই সত্যি হয়?
মেরিন : দাদুভাই… ডোন্ট বি ইমোশনাল। হি ইজ লাইয়িং। আর এটা বিশ্বাস করে তোমার চোখে পানিও চলে এসেছে।
শমসের : হ্যা এসেছে। কবির আমার ছেলে। বাবা হয়ে ছেলেকে হারানো অনেক যন্ত্রণার। তোমাকে যেতে হবেনা। আমি যাচ্ছি। নীড়ের কোনো চাল হলে তুুমি আমাকে বাঁচাতে পারবে।
মেরিন : তোমাকে আমি একা যেতে দিবোনা। আমিও যাবো।
নীড় : উফফ… কি ড্রামা। পিটার ড্রামা দেখে কান্না পাচ্ছেনা। অরগ্যানিক নয়।
মেরিন : চলো লুজার চৌধুরী। এক মিনিট… যদি তুমি ভুল হও তাহলে কি হবে? কি করবে?
নীড় : কি উত্তর পেলে তুমি খুশি হবে বলো তো? যদি বলি যে প্রানের কাস্টডি দিবো তাহলে খুশি হবে? হামম?
বলেই নীড় হাসতে লাগলো।
নীড় : এতো খুশি তোমাকে দিতে পারবোনা। শতভাগ নিশ্চিত আমি। তোমার জেতার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
মেরিন : যদিই ০.০০০১% সম্ভাবনা থাকে। যদিই সত্যি হয়? তো? রিস্ক নিয়ে তোমার সাথে যাবো এমনি এমনি?
নীড় : বিরুলিয়ার ফ্যাক্টরী তোমার নামে।
মেরিন হাহা করে হাসতে লাগলো।
মেরিন : মেরিন বন্যা খান তোমার কাছ থেকে কি নিবে? কিচ্ছু চাইনা। ভিখারি নই আমি। আল্লাহর রহমতে খান্দানী জমিদার আমরা। চলো যাওয়া যাক।

.

একঘন্টা পর…
নীড় মেরিন-শমসের খানকে নিয়ে পৌছালো। জন-পিটারও পৌছালো। দুজন বসে আছে।। কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা।
নীড় : পিটার… পর্দা তোলা হোক।
পিটার : অফকোর্স স্যার।
পিটার গিয়ে দুজনের মুখ থেকে কাপড় তুলল। কবির-কনিকার মুখে দেখতে পেলো। মেরিনের পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেলো। শমসের আবেগী হয়ে গেলো। যেতে নিলো দুজনের কাছে। মেরিন তার হাত ধরলো।
শমসের : দিদিভাই… আম…
মেরিন : শসস… দারাও এখানে। দেখতে দাও আমাকে। জন দাদুভাইকে দেখো।
মেরিন এগিয়ে গেলো। দুজনের চারদিকে ঘুরলো। ২-৩বার ঘুরে দুজনকে গভীরভাবে দেখলো। দেখে বাঁকা হাসি দিলো।
মেরিন : লুজার চৌধুরী… আমাকে কি নিজের মতো লুজার মনেহয়? হামম?
নীড় : কথার জাল বোনা এখন ভিত্তিহীন।
মেরিন : মেরিন বন্যা খানের সাথে খেলার জন্য আরো বুদ্ধি প্রয়োগ করা উচিত ছিলো। কনিকা খান ল্যাভেন্ডিও পারফিউম ভিন্ন অন্য কোনো পারফিউম ইউজ করতেন না।
বলেই দুজনের মুখ থেকে মাস্ক টান দিয়ে খুলে ফেলল। সকলে অবাক। সবচেয়ে বেশি অবাক হলো নীড়।
মেরিন : ল্যাটেক্স মাস্ক দিয়ে গেইম প্ল্যান!
মেরিন মাস্ক ২টা নীড়ের পায়ের কাছে ছুরে মারলো।
মেরিন : নিজে নাটক সাজিয়ে আমাকে ফাঁসানোর ধান্দা ছিলো? তাইনা? নাকি এই নকল কবির ফয়সাল খান এবং কনিকা খানকে দিয়ে খানদের সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্য ছিলো বুঝি?
নীড় : মেরিন বন্যা খান…
মেরিন : গলা নামিয়ে কথা বলো।
শমসের : আবেগ নিয়ে খেলাটা ঠিক হয়নি নীড়।
মেরিন এসে শমসের খানের কাধে হাত রাখলো।
মেরিন : চলো দাদুভাই। বাসায় চলো। জায়গাটা রিস্কি। এক মিনিট… জন।
জন : ইয়েস ম্যাম?
মেরিন : তুলে নাও দুজনকে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
নীড় : ওরা কেনো যাবে? ওদের খবর তো করবো আমি। তোমার ইশারায় আমাকে ফাঁসিয়েছে।
মেরিন : এক্সকিউজ মি… নিজের দোষ অন্যদের ঘাড়ে চাপানো একটা মানসিক রোগ। আর এমনিতেও তোমার ১০০% ভরসা হেরে গিয়েছে । আমার ০.০০০১% ভরসা জিতে গিয়েছে। তাই আমি নিয়ে যাবো।
নীড় ওদের বুকের দিকে গুলি করলো। ওরা মাটিতে লুটিয়ে পরলো।
মেরিন : স্বাক্ষী শেষ করে দিলে?
নীড় : শাস্তি দিলাম। তোমার কথায় হোক অথবা অন্যকোনো কারনে হোক… ধোকা তো দিয়েছে আমাকে। আমাকে ধোকা দিবে আর শাস্তি পাবেনা?
মেরিন : লাশের সাথেও কথা বলা যায়। জন… লাশ নেয়ার ব্যবস্থা করো। পরিবার পরিজন পর্যন্ত পৌছাতে হবে। কিছু হলেও জানা তো যাবে।
জন : ইয়েস ম্যাম আমি বলে দিচ্ছি।
শমসের : দিদিভাই… আমার আর ভালো লাগছেনা। দম বন্ধ হয়ে আসছে।
মেরিন : হ্যা চলো। লুজার চৌধুরী , দোয়া করো যেনো আমার দাদুভাই সুস্থ থাকে। তা না হলে তোমার মাবাবাও ওপরে চলে যাবে।
মেরিনরা চলে গেলো।

.

□ : হাহাহা।
■ : এই বিপদের মধ্যে পাগলের মতো হাসছো কেনো?
□ : হাসিরই তো কথা।
■ : বিপদ ভুলে গেলে?
□ : বিপদ? কোথায় বিপদ? কোনো বিপদ নেই। আনন্দই আনন্দ।
■ : তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
□ : আজকে কবির-কনিকা নিয়ে চরম নাটক হয়েছে।
■ : মানে?
□ : মানে এই যে কবির-কনিকার চেহারার ওপরে ছিলো ল্যাটেক্স মাস্ক।
■ : ভনিতা করোনা।
□ : নীড় কবির-কনিকাকে পেয়েছিলো। ওরা তো নকল। কবির-কনিকা তো মরে গিয়েছে। নয় কি? যাইহোক, নীড় নিজের সন্দেহের জন্য সাংঘাতিক বোকা হয়ে গেলো। হাহাহা।
■ : প্ল্যানটা কার ছিলো? তোমার?
□ : অতোদূর পর্যন্ত আমি ভাবতে পারিনা। পাকা মাথার বুদ্ধি। মাস্টারমাইন্ডের বুদ্ধি।
■ : ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।
□ : অন্যায়ের জয় হয় ক্ষনিকের। সারাজীবনের জন্য নয়।

.

মেরিন : আমি কিছু জানিনা। ৭দিন সময় দিলাম। ফাইনাল রেজাল্ট চাই। চাই মানে চাই। তা না হলে তুমি আমার হাতে খুন হয়ে যাবে।
আরিফ : ম্যাম… আমরা আমাদের যথাসম্ভব চেষ্টা করছি।
মেরিন : আমি চেষ্টা বুঝিনা। আমি কেবল রেজাল্ট চাই। সাতদিনের মধ্যে মানে সাত দিনের মধ্যে। না হলে পরিনাম কতোটা ভয়ংকর হবে সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।
বলেই মেরিন মোবাইলটা আছার মারলো।
আরিফ : হ্যালো ম্যাম… হ্যালো হ্যালো। রেখে দিয়েছে। উফফ… কি মুসিব্বতে যে আমি পরলাম! এই সাইকো তো আমার গুষ্ঠি শুদ্ধ শেষ করে দিবে। আল্লাহ রক্ষা করো।

মেরিন : এতো বড় অপবাদ! এতোবড়… আমারই ভুল হয়েছে। ওর কপাল বরাবর শ্যুট করা উচিত ছিলো। হায়নাকে হায়নার ভাষাতেই বোঝাতে হয়। হায়না কি আর সিংহের ভাষা বোঝে? যদি ৭দিনের মধ্যে কাজ না হয় তাহলে ওই লুজার চৌধুরী এবং ওর মাবাবাকে আমি শেষ করে দিবো। তাহলে এমনিই প্রানকে আমরা পেয়ে যাবো।

.

পিটার : সরি স্যার। আমার জন্য আপনাকে এভাবে অপমানিত হতে হলো।
নীড় : পিটার দোষ তোমার নয়। দোষ আমার। আমি এতোটা বোকামি কিভাবে করতে পারি? আমি এতো নিবিরভাবে দুজনকে দেখলাম অথচ বুঝতেই পারলাম না যে মাস্ক পরে আছে। মাস্কটার মার্ক পর্যন্ত দেখতে পারলাম না। শেইম অন মি।
পিটার : স্যার, মেরিন বন্যা খানও হয়তো বুঝতে পারতোনা যদি না পারফিউমের স্মেলটা চিনতে পারতো। হয়তো পারফিউম ভিন্ন হওয়ার কারনে দেখছিলো যে কোনো সূত্র পায় কিনা।
নিহাল এলো তখন।
নিহাল : কি হলো? ওরা কি সত্যিই বেঁচে আছে?
নীড় : না।
নিহাল : তাহলে?
পিটার সবটা বলল।
নিহাল : কি সাংঘাতিক ঘটনা! এমনটা নয় তো যে মেরিন প্রানের কাস্টডি নেয়ার জন্য এই নাটক সাজিয়েছিলো…
পিটার : এটাতো ভেবেই দেখিনি। এমনটাই হবে হয়তো।
নীড় : এমনটা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
নিহাল : এটা কিসের ভিত্তিতে বলছো শুনি?
নীড় : ঘৃণা করে নিজের মাবাবাকে।
নিহাল : তুমি কিভাবে জানলে?
নীড় : শি ইজ হার্টলেস। ওর মনে ঘৃণা ভিন্ন কিছু নেই।
নিহাল : কি একটা অবস্থা! আচ্ছা… প্রানকে নিয়ে দেশের বাহিরে চলে যাবো কি?
নীড় : কেনো? ভয় কিসের?
নিহাল : মেরিন কিছু করে ফেললে?
নীড় : করার ক্ষমতা থাকলে করে ফেলতো। ও জিরো ভিন্ন আর কিছুইনা। কখনো কি শুনেছো বাঘ-সিংহ একে অপরের শিকার করে? বাঘ-সিংহ নিজের চেয়ে দুর্বল প্রানীর শিকার করে। প্রতিটি প্রানীই নিজের চেয়ে দুর্বল প্রানীর শিকার করে। মেরিন পারে নিজের চেয়ে দুর্বলদের সাথে। এবার ওর সামনে দারিয়ে আছি আমি। আমার সাথে পেরে ওঠা ওর কাছে কেবলই কল্পনা। প্রান আমাদের। ওর ওপর কেবল আর কেবল আমাদের অধিকার। প্রানকে ওরা নিজেদের সম্পত্তি ভাবে। প্রান ওদের জেদ কিন্তু আমাদের জীবন।

.

পরদিন…
তিথি কিচেনে নিজের জন্য কফি বানাচ্ছে।
নীলিমা : কি করছো তুমি এখানে?
তিথি : কফি বানাচ্ছি।
নীলিমা : কাউকে বলে দিলেই তো হতো।
তিথি : আমি নিজের কফি নিজেই বানাতে পছন্দ করি। খাবেন আপনি? করে দিবো?
নীলিমা : না না। আমি ব্ল্যাক কফি খাইনা।
তিথি : মিল্ক কফি করে দিবো?
নীলিমা : না লাগবেনা। ধন্যবাদ।
তিথি নিজের কফি বানিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
নীলিমা : মেয়েটা ভালোই আছে। ব্যবহারও ভালো। প্রানতো তিথির সাথে অনেক মিশে গিয়েছে। মেরিনের কথা মনেই করেনা। এরচেয়ে ভালো আর কি হতে পারে? ওই মেয়ে আমাদের প্রানের থেকে দূরে থাকাই ভালো। দেখতে শুনতেও ভালোই। আমি এভাবে ভাবছি যেনো তিথিকে নিজের ছেলের বউ বানাচ্ছি… ছেলের বউ… মেয়েটা তো ভালোই। বানানো যেতেই পারে। না বাবা না। নীড় তো ওকে সহ্যই করতে পারেনা। তিথিও নীড়কে অপছন্দ করে।

নীড় অফিস থেকে ফিরলো। দেখে তিথি প্রান্তিকের সাথে খেলছে। প্রান্তিককে দেখে মনেহচ্ছে যেনো ও কি যেনো মহামূল্যবান কিছু পেয়েছে। প্রান্তিক খিলখিল করে হাসছে। নীড় ওর কলিজার টুকরোর হাসি দেখছে।
নীড় মনেমনে : এই হাসি দেখার জন্য তো আমি সবকিছু ত্যাগ করতে পারি। আমার অস্থির জীবনের একমাত্র স্থিরতা তুই প্রান।
নীলিমা ওপরের করিডোর থেকে দেখছে। তার ওখান থেকে প্রান্তিককে দেখা যাচ্ছেনা।
নীলিমা মনেমনে : এ কি দেখছি আমি? নীড় তিথির দিকে তাকিয়ে আছে! এক ধ্যানে দেখছে ওকে! আমার ছেলে কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তাও তিথির দিকে। না না না… এটা একটা ভালো খবর। আনন্দের খবর। ধন্যবাদ আল্লাহ এমন একটা ইঙ্গিত দেয়ার জন্য। আমার চোখের সামনেই ছিলো সমাধান। অথচ আমি খেয়ালই করিনি।
নিহাল : কি দেখে এতো আনন্দিত হচ্ছো?
নীলিমা চমকে উঠলো।
নিহাল : চিল… আমি তো।
নীলিমা : হামম হামম।
নিহাল : এতোটা উচ্ছ্বসিত কেনো?
নীলিমা : নীড়ের বউ পেয়ে গিয়েছি।
নিহাল : উফফ… এই টপিক ভিন্ন কি তোমার কাছে আর কোনো টপিক নেই?
নীলিমা : না নেই। তিথি কেমন আমাদের নীড়ের জন্য?
নিহাল : তিথি! নীড়ের সাথে তিথিকে ভাবছো?
নীলিমা : হ্যা।
নিহাল : তুমি পুরোপুরি পাগল হয়ে গিয়েছো।
নীলিমা : না। একদম না। তুমি জানোনা আমি এখন কি মারাত্মক সিন দেখলাম।
নিহাল : কি দেখলে?
নীলিমা : নীড় এক ধ্যানে তিথিকে দেখছিলো।
নিহাল : আজকাল তোমার চোখে সমস্যা হয়েছে হয়তো।
নীলিমা : আরে না। আমি একদম ঠিক আছি। সত্যি বলছি আমি।
নিহাল : এটা হতেই পারেনা।
নীলিমা : আমি নিজের চোখে দেখেছি।
নিহাল : আমার সামনে বলেছো বলেছো। কিন্তু ভুলেও নীড়ের সামনে বলোনা।
নীলিমা : আরে কিন্তু…
নিহাল : কোনো কথা না।

.

পরদিন বিকালে…
নীড় প্রান্তিকের ক্যারাটে প্র্যাক্টিস করাচ্ছে। দেখছে যে ও কতোটা শিখেছে। হঠাৎ নীড়ের মাসল স্ট্রেইন করলো।
প্রান্তিক : কি হলো চাচ্চু?
নীড় : মাসল স্ট্রেইন করেছে বাচ্চা।
প্রান্তিক : ওইটা আবাল কি?
নীড় : একটা ব্যথা পেয়েছে বাচ্চা।
প্রান্তিক : ব্যথা… মানে অসুস্থ অসুস্থ…
নীড় মুচকি হেসে বলল : ইয়েস লাভ।
প্রান্তিক : মানে ডক্টল লাগবে।
বলেই ও ছুটে ভেতরের দিকে গেলো।
নীড় : কোথায় যাচ্ছো প্রান? দারাও…
প্রান্তিক : দালাও দালাও। আসছি আমি।
নীড় : এই ছেলেটাও না… উফফ… বাম বাহুটা তো একটুও মুভ করতে পারছিনা।
তখন প্রান্তিক তিথিকে টেনে নীড়ের সামনে নিয়ে এলো।
প্রান্তিক : এসোনা এসো… দেখো না ডক্টল আন্টি , চাচ্চু ব্যথা পেয়েছে। তাই ডক্টল লাগবে।
তিথি নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় : প্রান… তোমার ডক্টর আন্টি বাচ্চাদের ডক্টর। তাই ডক্টর আন্টি আমার ট্রিটমেন্ট করতে পারবেনা।
তিথি : শুনুন আমি একজন ডক্টর। তাই প্রাথমিকভাবে যেকোনো রোগের চিকিৎসা করতে পারি। কোথায় ব্যথা করছে? শোল্ডারে?
নীড় : বাম হাত সম্পুর্নটাই ব্যথা করছে।
তিথি : আমাকে ফলো করুন। আমার হাতের মুভমেন্টগুলো খেয়াল করুন।
তিথি দেখাতে লাগলো। নীড় স্থির হয়ে আছে।
তিথি : কি হলো? আপনি আমাকে ফলো করছেন না কেনো?
নীড় : কি করে করবো? আমি হাতটা একটুও মুভ করতে পারছিনা।
তিথি : ওহ। সেটা আগে বলবেন তো।
নীড় : তুমি কি জিজ্ঞেস করেছো?
তিথি : উফফ… দেখি আপনার হাত দেখি।
নীড় : কি বললাম সেটা শুনতে পাওনি?
তিথি : সরি সরি। আপনাকে…
নীড় : কি হলো? থেমে গেলে কেনো?
তিথি : আপনার জগিং স্যুটটা খুলতে হবে।
নীড় : কি?
তিথি : হ্যা। আমি হেল্প করছে আপনার।
তিথি নীড়ের হাতটা মাসাজ করছে। এরপর কাধের দিকে গেলো। নীলিমা নিজের ঘরের বারান্দা থেকে দেখতে পেলো।
নীলিমা : একি মনোরম দৃশ্য! নীড়ের রোম্যান্স চলছে ওই মেয়ের সাথে। নিহালকে বললে বিশ্বাস করবেনা। ভিডিও করি।
নীলিমা ভিডিও করতে লাগলো। তিথি পরে যেতে নিলে নীড় ধরে ফেলল।
নীলিমা : আল্লাহ আল্লাহ… এতো দেখি চমৎকার। না না না। মা হয়ে আর এসব দেখা চলেনা। যা হয়েছে তাই যথেষ্ট।
নীলিমা রেকর্ডিং ওই পর্যন্ত করেই চলে গেলো। নীলিমার খুশির যেনো আর সীমা নেই।
নীড় : ঠিকভাবে দাড়াতে পারোনা? সমস্যাটা কি? উদ্দেশ্যটা কি?
তিথি : আপনি আসলেই মানুষ না। আপনার হেল্প করছিলাম আর আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন?
নীড় : আমি কি বলেছি আমার হেল্প করতে?
তিথি : আপনি আসলেই একজন অকৃতজ্ঞ।
বলেই তিথি রেগে ভেতরে চলে গেলো।
নীড় : পাগল মহিলা। আমার বাইসেপ্সের প্রেমে পরে গিয়েছিলো হয়তো।

.

বিকালে…
জন : ম্যাম…
মেরিন : ইয়েস জন।
জন : অ্যাবাউট টু সাকসেসফুল।
মেরিন : খুশি করার জন্য বলছো নাকি সত্যিসত্যি বলছো?
জন : ম্যাম… আপনাকে কি মিথ্যা বলবো?
মেরিন : না তা বলবেনা। এখন বলো যে কেনো বললে?
জন : নীলিমা আহমেদ চৌধুরী ডক্টর তিথিকে অনেক পছন্দ করে ফেলেছে।
মেরিন : নীলিমা আহমেদ চৌধুরী! আমি তো ভেবেছিলাম নিহাল আহমেদ চৌধুরী পটে যাবে।
জন : সেটাতো হলোনা। তবে একজন তো ফেসেছে। আর এমনিতেও মিসেস চৌধুরী ছেলের বিয়ের জন্য একেবারে মুখিয়ে ছিলেন। তারওপর তিথি ছক্কা মেরে দিয়েছে।
মেরিন : ছক্কা মারবে বলেই তো ওকে সিলেক্ট করা হয়েছে। আর ওকে তো কাজটা করতেই হতো। নিহাল আহমেদ চৌধুরীকেও ফাঁসতে হবে।
জন : হয়ে যাবে মনেহয়। ৭দিন সময় দিয়েছিলেন। ৭দিনের তৃতীয় দিন আজকে। বাকি ৪দিনে ঠিক হয়ে যাবে।
মেরিন : সেটাই মঙ্গলময়।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 11
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : সেটাই মঙ্গলময়।
জন : ম্যাম… ভিডিও আছে। নীলিমা চৌধুরীর ফোনে করা ভিডিও।
মেরিন : তার ফোনের ভিডিও কোথায় পেলে?
জন : তিথি ম্যানেজ করেছে।
মেরিন : শো মি।
মেরিন ভিডিও দেখছে। একসাইড থেকে ভিডিও করা। মনেহচ্ছে যে তিথি নীড়কে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে আছে। নীড় বসে আছে। তিথি সম্ভবত নীড়ের ঘাড়ে চুমুও দিচ্ছে। দেখতে এমনটাই লাগছে। নীড় আবার ওর কোমড় জরিয়ে ধরলো।
মেরিন : ওহ মাই মাই। কি দারুন সিন। উফফ… রোম্যান্টিক সিন। নজর না লাগুক। হাহাহা। লুজার চৌধুরী চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। হাহাহা।
জন : আসলে ম্যাম… এই ঘটনার পেছনে কাহিনি আছে।
মেরিন : কি সেই কাহিনি?
জন ঘটনাটা বলল। মেরিন হাসতে লাগলো।
মেরিন : মেয়েটি আসলেই ছক্কা মেরেছে। ভাগ্য সাপোর্ট করছে আমাদের। তাইতো মাসল স্ট্রেইনটাও সময়মতো হয়েছে।
জন : তবে মূল অবদানটা প্রানের।
মেরিন: ওইতো এই প্রতিশোধের গল্পের হিরো। কালকে ওকে দেখতে ওর স্কুলে যাবো।
জন : জী ম্যাম।

.

তিথি মনেমনে : কে জানে আমার ভাগ্যে কি আছে? মিশন সাকসেসফুল না হলে আরিফ আমার পরিবারকে আগে শেষ করবে। পরে আমাকে। আর যদি নীড় চৌধুরীর কাছে ধরে পরে যাই তাহলেও আমি শেষ। আল্লাহ… কি করবো আমি? এই আরিফ লোকটা এমন কেনো করছে? আমাকে যে করেই হোক সফল হতেই হবে। ধরা না পরে সফল হতে হবে। নাহলে আমি শেষ। সকালে ভাগ্যিস নীলিমা চৌধুরী আসতে পারে বা দেখতে পারে সেই কথাটা মাথায় এসেছিলো। লাকিলি চলেও এলো। সরাসরি না এলেও বারান্দায় এসেছিলো। ভিডিও করেছে। অ্যাঙ্গেলটাও ভালো ছিলো। আল্লাহ সহায় আছে। আমি ভালো খারাপ যাই করছি নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য করছি। নীলিমা চৌধুরীতো পটে গিয়েছে। এখন বাকি নিহাল আহমেদ চৌধুরী। তাকে কিভাবে মানাবো? কি করা যায়? যা করার এই চারদিনের মধ্যেই করতে হবে। সময়সীমা ওই পর্যন্তই।

.

নীলিমার ধারন করা ভিডিও দেখে নিহাল তো অবাক।
নীলিমা : এখন বিশ্বাস হলো তো আমার কথা?
নিহাল : বিশ্বাস তো করা উচিত। কারন আছে যথেষ্ট। কিন্তু আমার তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না।
নীলিমা : তবুও করতে হবে বিশ্বাস। আর নীড় যখন একবার কাবু হয়েছে বা হচ্ছে তখন দেরি করা যাবেনা। দ্রুতই বিয়ের কথা বলতে হবে।
নিহাল : প্রলয় আসবে।আরেকটু দেখি।
নীলিমা : লোহা গরম থাকা অবস্থায় মারা উচিত।
নিহাল : আর তোমার ছেলের ক্রোধ?
নীলিমা : ক্রোধ হবেনা।
নিহাল : এখন ঘুমাতে দাও। মাথা কাজ করছেনা।
নিহাল শুয়ে পরলো।
নীলিমা মনেমনে : উফফ… এই মানুষটা আমার কোনো কথাই শুনতে চায়না। প্রান… প্রানই আছে যে আমার হেল্প করবে। প্রানের তো এমনিতেও তিথি অনেক প্রিয়। তিথি এলে প্রান মেরিনকে পুরোপুরি ভুলে যাবে।

.

পরদিন…
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন : বাচ্চা…
প্রান্তিক : তুমি এতোদিন পলে এলে কেনো?
মেরিন : কারন তোমার তো আমার কথা মনেই পরেনা।
প্রান্তিক : পলে তো।
মেরিন : মিথ্যা কথা।
প্রান্তিক : সত্যি কথা। জানো ,আমি আল দীদু একটা মিশন শুলু কলবো।
মেরিন : মিশন! কিসের মিশন?
প্রান্তিক : চাচ্চুল বিয়েল মিশন। দীদু বলেছে তিথি আন্টিল সাথে চাচ্চুল বিয়ে হবে।
মেরিন : তিথি আন্টি কে?
মনেমনে : ক্লাইম্যাক্সের দিকেই যাচ্ছি তবে। আরে… কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে। লুজার চৌধুরী। নাইস…
প্রনয় : তিথি আন্টি হলো আমাল ডক্টল আন্টি। চাচ্চু এনেছে আমাল জন্য। প্লতিদিন আসে। আমাকে এতোগুলো আদল কলে।
মেরিন : মামমামের চেয়েও বেশি আদর করে বুঝি? তাই বুঝি মামমামের কথা মনে পরেনা। হামম?
প্রনয় : তুমি কি লাগ কললে মামমাম?
মেরিন প্রান্তিককে বুকে জরিয়ে নিলো।
মেরিন : তোমার ওপর রাগ করতে পারবোনা সোনা। কিন্তু তোমাকে কারো সাথে শেয়ারও করতে পারবোনা। তোমার ওই ডক্টর আন্টির সাথেও না। তাকে তো আমি…
মেরিন থেমে গেলো।
প্রান্তিক : তাকে তো তুমি কি মামমাম?
মেরিন : তাকে তো আমি বকে দিবো কারন তার জন্য তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছো।
প্রান্তিক : না মামমাম… আন্টিকে বকোনা। প্লিজ।
মেরিন : আচ্ছা বকবোনা।
নীড় মনেমনে : এই মেরিন বন্যা খান সত্যিসত্যি তিথির সাথে হিংসা করছে? নাকি আমাকে দেখে নিয়েছে বলে এভাবে কথা বলছে? না তো আমি এই মেরিনকে বিশ্বাস করি আর না ওই তিথিকে। সত্যিই কি কোনো কানেকশন নেই! কোথাও কোনো লিংক পেলাম না।
নীড় এগিয়ে গেলো।
নীড় : প্রান…
প্রান্তিক : চাচ্চু…
নীড় : কাম লাভ।
মেরিন : গো।
প্রান্তিক নীড়ের দিকে চলে গেলো। নীড় ওকে কোলে তুলে নিলো। নীড় চশমাটা চোখে দিয়ে মেরিনকে কয়েক সেকেন্ড দেখে চলে গেলো।
মেরিন মনেমনে : আমাকে যতোই সন্দেহ করো লাভ নেই। কানেকশন আমার সাথে পাবেনা। পাবে কিভাবে? থাকলে তো পাবে। ভাবতে থাকো ভাবতে থাকো। তুমি আমার মৃত বোনের চরিত্রকে নিলামে তুলেছো , আমার মৃত মাবাবাকে নিয়েও তামাশা করেছো। সেই তোমাকে আমি কোনো দুর্বল পরিকল্পনা দিয়ে ঘায়েল কিভাবে করবো? তুমি তিথির সাথে আমার যোগাযোগ খুজেই যাবে , তিথির উদ্দেশ্য জানার চেষ্টাই করে যাবে। এতোটুকু সময়ে হেরে বসে থাকবে।

পিটার ড্রাইভ করছে। প্রান্তিক ঘুমিয়ে পরেছে।
নীড় মনেমনে : কি করলে কোথায় থেকে খোঁজ পাবো? তিথির বাসায় যাবো। খোঁজ নিবো। কিন্তু ওর পরিবারের রিপোর্টও তো পিটার জোগাড় করে এনেছে। ও আমার সবচেয়ে ভরসামান ব্যক্তি।
পিটার : স্যার… আপনি কি কিছু ভাবছেন?
নীড় : তিথির কথা। ওকে দিয়ে কেউ তো খেলছে। আমার প্রবল বিশ্বাস মেরিন খেলছে। কিন্তু… লিংক তো পাচ্ছিনা।
পিটার : স্যার… আমার মনেহয় তিথিকে বের করে দিলেই ভালো হয়।
নীড় : হামম সেটাই ভালো। সাতটা দিন দেখবো। শেষ চেষ্টা তো করতেই হবে।

.

বিকালে…
নীড় : তোমার কথা শুনে আমি খাবার খাবো?
তিথি : আমি একজন ডক্টর। কালকে আমার সামনে আপনার মাসলস্ট্রেইন হয়েছিলো। আমি আপনার হেল্প করেছিলাম। তাই ২-৩দিন আপনার খাবারের প্রতি আমি খেয়াল রাখবো। এটা এখন আমার এক প্রকার দায়িত্ব।
নীড় : নীড় আহমেদ চৌধুরী কারো অর্ডার ফলো করেনা।
তিথি : আপনাকে অর্ডার করবো অতোটা বোকা এখন আর আমি নই। পাওয়ার আছে আপনার । যাইহোক ,আমার অনুরোধের জন্য নয়। প্রানের জন্য আপনি কথাটা শুনে চললে ভালো হয়।
নীড় মনেমনে : কি চমৎকার অভিনয়। ইচ্ছা করছে যে শেষ করে দেই। কিন্তু এর মৃত্যুও এর ভুলের সঠিক শাস্তি নয়। রেগে তো দেখলাম। একটু নরম হয়ে দেখি। একটু বিপরীত পথে হেটে দেখি। গিরগিটি ধরতে ছলনা তো করতেই হয়।
নীড় তিথির বলা খাবারই খেলো। এরপর থ্যাংকস বলে চলে গেলো। এই ঘটনা নিহালও দেখলো।
নিহাল : এসব কি দেখলাম আমি? নীড় তিথির কথা মেনে নিলো! আবার থ্যাংকসও বলল। প্রানের কথা বলেছে দেখেই হয়তো এমনটা করলো। কিন্তু প্রানের কথা বলেও তো আমরা কোনো কাজ নীড়কে দিয়ে করাতে পারিনি। তাহলে কি নীলির কথাই সঠিক?
নীলিমা : একদম।
নিহাল : তুমি কোথায় থেকে প্রকট হলে?
নীলিমা : তোমার পেছন থেকে।
নিহাল : উফফ…
নীলিমা : তুমিই তো বলেছিলে ০নীড়ের জন্য ওর সমানসমান কাউকে চাই। তিথিকে তো শুরু থেকেই তোমার তেমনটাই মনে হয়েছিলো।
নিহাল : হামম।
নীলিমা : বিয়ের কথা বলতে হবে। প্রানকে দিয়ে বলাবো।
নিহাল : বিয়ের কথা বলাটা তাড়াহুরা হয়ে যাবে তো।
নীলিমা : তুমি কি তোমার ছেলেকে চিনোনা? মন ঘুরে গেলে?
নিহাল : বিয়ের পর মন ঘুরে গেলে?
নীলিমা : ঘুরবেনা।
নিহাল : জানিনা। আমার মাথা কাজ করছেনা।

.

পরদিন…
সবাই একসাথে রাতের খাবার খাচ্ছে।
প্রান্তিক : চাচ্চু…
নীড় : ইয়েস লাভ।
প্রান্তিক : আমি চাই তিথি আন্টি সবসময় আমাদেল সাথে থাকুক।
নীড় : প্রতিদিনই তো আসছে।
প্রান্তিক : উহু উহু… আমি প্লতিদিন আসাল কথা বলিনি। আমি সবসময় থাকতে বলেছি। সবসময় আমাদেল সাথে থাকুক সেটা বলেছি।
নীড় : ওকে। কালকে থেকে তিথি আন্টি আমাদের বাসাতেই শিফ্ট হবে। কোথাও যাবেনা। হ্যাপি?
প্রান্তিক : লাতেও থাকবে?
নীড় : হামম রাতেও থাকবে। খুশি?
প্রান্তিক : হামম হামম।
খাওয়া শেষ করে নীড় ওপরে চলে গেলো। কিছু কাজ আছে।

নীলিমা : এটা কি হলো? আমি যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনটা তো হলোনা।
নিহাল : সেটা কিভাবে হবে শুনি? প্রান যদি নীড়কে বলে তিথিকে সবসময়ের জন্য রাখার কথা তাহলে তো নীড় এমনটাই বলবে। তাইনা বলো দাদুভাই?
প্রান্তিক : হামম হামম। চাচ্চু তো আমার সব কথা শোনে।
নীলিমা : তাহলে কি হবে!
নিহাল : দাদুভাই…
প্রান্তিক : হামম?
নিহাল : তিথি আন্টিকে তোমার পছন্দ?
প্রান্তিক : খুব বেশি পছন্দ।
নিহাল : তিথি আন্টিকে কাকিমা হিসেবে পেলে হ্যাপি হবে?
প্রান্তিক : কাকিমা কি?
নিহাল : চাচ্চুর ওয়াইফ হলো কাকিমা। কাকিমা আম্মুর মতো হয়।
প্রান্তিক : ওয়াও! তাই?
নিহাল : হামম। হ্যাপি হবে কাকিমা হিসেবে পেলে?
প্রান্তিক : কাকিমা হলে কি সবসময় সাথে থাকবে?
নিহাল : হ্যা থাকবে।
প্রান্তিক : এখনের মতো করে খেলবে?
নিহাল : হ্যা অবশ্যই।
প্রান্তিক : তাহলে তো আমি অনেক অনেক অনেক হ্যাপি।আমাল তো তিথি আন্টিকে চাইই চাই।
নিহাল : গ্রেট। তাহলে শোনো…
নিহাল প্রান্তিককে কিছু শিখিয়ে দিলো। সাড় ১০টা বাজতেই নীড় প্রান্তিককে ঘুম পারাতে নিয়ে গেলো।

নীড় খেলছে প্রান্তিকের সাথে। প্রান্তিক খিলখিল করে হাসছে।
নীড় : এখন ঘুমানো যাক।
প্রান্তিক : আমাল আলো একটা কিছু লাগছে।
নীড় : কি লাগবে?
প্রান্তিক : কাকিমা লাগবে…
নীড়ের কপালে ভাঁজ পরলো।
নীড় : কি লাগবে?
প্রান্তিক : কাকিমা লাগবে কাকিমা। তিথি আন্টিকে আমাল কাকিমা বানিয়ে দাও না।
নীড়ের মেজাজ বিগরে গেলো। প্রান্তিকের সামনে রাগটা ঠান্ডা করে রাখার চেষ্টা করলো।
নীড় : দুষ্টু ছেলে… এই দুষ্টুমিটা মাথায় কে ঢুকিয়ে দিলো শুনি? হামম?
প্রান্তিক : কেউ ঢুকায়নি। সবাল মামনি আছে বাবা আছে। আমাল তো নেই। তুমি আছো। তাই এখন আমাল একটা কাকিমাও লাগবে। দাদুভাই বলেছে কাকিমা মায়েল মতো হয়। তাই আমাল কাকিমা লাগবে লাগবে লাগবে। তিথি আন্টিকেই কাকিমা বানাতে হবে। তিথি আন্টি অনেক ভালো।
নীড় : আচ্ছা বাচ্চা এখন ঘুমাও। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
প্রান্তিক : দিবে বলো।
নীড় : লাভ… চাচ্চু সব কথা শুনি রাইট? তাহলে এখন এই কথাটা শুনো। ঘুম দাও।
প্রান্তিক : তাহলে কি আমাকে কাকিমা দিবেনা?
নীড় : এটা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠার পর কথা হবে। এবার ঘুম দাও।
প্রান্তিক : দিবে বলো…
নীড় : বললামই তো কালকে সকালে কথা হবে। এবার গুড বয়ের মতো ঘুম দাও।
প্রান্তিক : তাহলে স্টোরি শোনাও।
নীড় : অবশ্যই শোনাবো।
নীড় প্রান্তিককে গল্প শোনাতে লাগলো। প্রান্তিক ঘুমিয়ে পরলো। ও ঘুমানোর পরই নিচে চলে গেলো। গিয়ে নিহাল-নীলিমাকে ডাকতে লাগলো। নীড়ের ডাক শুনে নিহাল-নীলিমার আতঙ্ক শুরু হয়ে গেলো।
নীলিমা : এখন কি হবে?
নিহাল : জানিনা। এখন ভয় পাচ্ছো কেনো? তোমার ইচ্ছা মতোই তো হলো।
নীলিমা : বর্তমান প্ল্যানিংটা তো তোমার।
নিহাল : তোমার চাবি দেয়ার জন্যই এসব ঘটেছে। এখন বোঝো মজা।
নীলিমা : তুমি ওর বাবা। ও তোমার ছেলে। ও তোমাকে ভয় পাবে। তুমি না।
নিহাল : এই চুপ থাকো তো।

নীড় : কি হলো? ডাকছি তো দুজনকে। মামনি… বাবা…
নিহাল-নীলিমা নিচে নেমে এলো।
নীড় : তোমাদের সমস্যাটা কোথায়? হামম? প্রানের মাথায় এসব কেনো ঢুকানো হয়েছে?
নীলিমা : কি ঢুকানো হয়েছে?
নীড় : কেনো নাটক করছো? তিথিকে কাকিমা বানানোর কথাটা কেনো ওর মাথায় ঢুকানো হয়েছে?
নিহাল : কেউ ওর মাথায় কিছু ঢুকায়নি। ও নিজে থেকেই এসব বলে চলেছে।
নীড় : মিথ্যা কথা বলার মানে কি? হামম? তোমরাই ওর মাথাতে কথাটা ঢুকিয়েছো। যেকারনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলে। তাই আমি ডাকার পর আসছিলেনা। এতো দেরি করে এলে।
নিহাল : তুমি আমাদেরকেই সন্দেহ করবে বলেই আমরা আসছিলাম না। তোমাকে হাজার বোঝালেও তুমি বুঝবে না। বিশ্বাস করবেও না।
নীড় : বিশ্বাস করবোনা কারন বিশ্বাসের যোগ্য কথা এটা নয়। যে ভূত প্রানের মাথায় ঢুকিয়েছো সেটা সুন্দর করে বের করে ফেলবে।
নিহাল : আমরা এই কথাটা ঢুকাইনি। তাই এটা বের করতে পারবো কি না সেটার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারবোনা। তুমি যখন বলেছো তখন বোঝানোর চেষ্টা করবো।
নীড় : চেষ্টা বুঝিনা। আমি আউটপুট চাই।
নিহাল : ব্যবহার ঠিক করো। তুমি নিজের মাবাবার সাথে কথা বলছো।
নীড় : একটা লিমিট সেট করা আছে। সেটা তোমরাও প্লিজ ক্রস করোনা।
নিহাল : বর্তমানে তুমিই আমার একমাত্র ছেলে। কিছু আবদার থাকতেই পারে তোমার কাছে। ছেলে হিসেবে কি তোমার কর্তব্য নয় আমাদের কিছু ইচ্ছা পূরন করা?
নীড় : তোমাদের কোন ইচ্ছা বা আবদার অপূর্ন রাখা হয়েছে?
নিহাল : তোমার কাছে প্রানকে চাওয়া ভিন্ন কোনো আবদার করা হয়নি।
নীড় : যেটা আবদার করেছো সেটা পূরন করবোনা।।
নিহাল : বিয়ে করা , সংসার করা জীবনের একটি অংশ।
নীড় : আমি মনে করিনা। এই বিষয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাইনা।
বলেই নীড় ঘরে চলে গেলো।

.

২দিনপর…
জন : ম্যাম…
মেরিন : বলো।
জন : তিথির সাথে নিহাল আহমেদ চৌধুরী কথা বলেছে। ওর পরিবারের সাথে কথা বলতে চেয়েছে। সম্ভবত বিয়ের বিষয়েই কথা বলবে। নীলিমা চৌধুরী জানতে চেয়েছে যে ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা।
মেরিন : ক্লাইম্যাক্সের সময় চলে এসেছে। ফাইনাল টাচের সময় হয়ে গেলো।
জন : ইয়েস ম্যাম। কিন্তু নীড় চৌধুরী সত্যিসত্যি ট্রিগার হবে তো?
মেরিন : হবে হবে। বিয়েতে বড্ড অ্যালার্জী তার । ভালোবাসার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। এন্ড থ্যাংকস টু মি।
জন : মানে ম্যাম?
মেরিন : লং স্টোরি। অন্য কোনোদিন বলবো।
জন : ওকে ম্যাম।
মেরিন : আচ্ছা এখন বাসায় যেতে হবে। দাদুভাইয়ের রেগ্যুলার চেকআপের তারিখ আজকে।
জন : ইয়েস ম্যাম চলুন।
জন এবং মেরিন অফিস থেকে বের হলো।

.

প্রান্তিক কাকিমা কাকিমা গান বন্ধ করেনি। নীড়ের মেজাজও বিগরে গিয়েছে।
নিহাল : স্টপ ইট নীড়। অনেক হয়েছে। তিথি মেয়ে হিসেবে ভালো। সাহসও আছে , যোগ্যতাও আছে। দেখতেও ভালো। মানলাম তিথিকে করবেনা বিয়ে। কাউকে না কাউকে তো করবে।
নীড় : আমি কাউকেই করবোনা।
নিহাল : প্রানকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেয়ার জন্য একজন মায়ের মতো কাউকে প্রয়োজন। আমাদের জন্য না হোক ওর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বিয়ে তোমাকে করতেই হবে।
নীড় : না।
নিহাল : তাহলে কি ধরে নিবো যে প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার কারনে মেয়ে , প্রেম এবং ভালোবাসা থেকে নিজেকে দূরে রাখো? হামম?
নিহালের কথায় নীড়ের মেরিনের ঘটনা মনে পরে গেলো। ও হাতের মোবাইলটা আছার মারলো।
নীড় : আমার কথা কি বোঝোনা? নীড় আহমেদ চৌধুরী কাউকে কৈফিয়ত দেয়না। বুঝেছো?
নিহাল : না বুঝিনি। আর এভাবে কথা বলা বন্ধ করো। তুমি আমার ছেলে। এসব কিছু তোমার আর্ন করা না। তোমার পাওয়ার কেবল তোমার জন্য না। যতোই পাওয়ারফুল হয়ে যাওনা কেনো তোমাকে সবাই আমার ছেলেই বলবে। আমাকে কৈফিয়ত দিতে তুমি বাধ্য। আজ না হয় দুদিন পর বিয়ে করতেও তুমি বাধ্য।
নীড় : আমি বাধ্য নই। করবোনা। যা পারার করে নাও।
বলেই নীড় গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। এক কেস বিয়ার কিনলো। ড্রিংকস করছে এবং মেরিনের সাথের ঘটনাগুলো কল্পনা করতে লাগলো। মাতাল হয়ে গেলো।

.

সকালে…
নীড়ের ঘুম ভাঙলো। মাথায় অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে। নিভুনিভু চোখে তাকিয়ে দেখে যে সাদা রঙে সাজানো একটি রুম। শরীরে শার্ট নেই। ব্ল্যাংকেটটা কোমড় পর্যন্ত। আড়মোরা ভাঙার সময় হাতে কিছু লাগলো। পাশ ফিরে দেখে কেউ পরে আছে। চুল দিয়ে চেহারা ঢাকা। নীড়ের কপালে ভাঁজ পরলো।
নীড় : হেই… কে তুমি? এখানে কেনো?

.

চলবে…