প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
444

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 36
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নামিরা : অবশ্যই মেরিন।
নামিরা খাবার সার্ভ করে দিলো।
নিহাল : মামনি তুমিও বসো না। একসাথে খেয়ে নিবে।
নামিরা : হ্যা আংকেল।
সবাই বসে খাবার খেতে শুরু করলো।
নিহাল : চমৎকার হয়েছে মামনি।
নামিরা : থ্যাংকস আংকেল।
নীলিমা : তুই এমন রান্না কিভাবে শিখলি বলতো?
নামিরা : আম্মুর কাছ থেকে। প্রান… কেমন হয়েছে?
প্রান্তিক : মজা।
নামিরা : শুধু মজা! ইয়াম্মি ইয়াম্মি বললেনা যে? ইয়াম্মি ইয়াম্মি হয়নি বুঝি?
প্রান্তিক : ইয়াম্মি ইয়াম্মি তো কেবল মামমামেরটা হয়।
মেরিন : বাচ্চা…
প্রান্তিক : সরি মামমাম।।আমি তো মজাই বলেছিলাম। ফুপ্পিই তো জিজ্ঞেস করলো।
নামিরা : থাকনা মেরিন। ও তো ছোটমানুষ। তোমার কেমন লাগলো রান্না?
মেরিন : আমার ভালো লাগার জন্য তো রান্না করোনি ননদিনী।
নামিরা : মমানে?
মেরিন : মজা করছিলাম। ননদ ভাবির তো মজারই সম্পর্ক। রান্না খুব ভালো হয়েছে। সিরিয়ালের কুটকাচালি করে তোমার রান্নায় এক্সট্রা লবণ অ্যাড করা উচিত ছিলো। লবণটা একটু কম হয়েছে।
নীড়ের হাসি পাচ্ছে।
মেরিন : কাবাবটা দাও।
নামিরা এগিয়ে দিলো।
মেরিন : থ্যাংকস। তোমাকে দেখে তো মনেহয় যে তুমি ভয়ংকর ডায়েট করো। এমন রিচফুড খাওয়া দেখে আমি অবাকই হলাম। এখন বলোনা যে ডায়েট করোনা।
নামিরা : মাঝেমধ্যে খেলে কিছু হয়না।
মেরিন : তা ঠিক। নীড় তুমি কিছু বললেনা যে? তোমার বোন এতো কষ্ট করে খাবার বানিয়েছে।
নীড় : হ্যাভ ইউর ফুড।
নামিরা : প্রানের কথায় কিন্তু আমি খুব এক্সাইটেড মেরিন তোমার হাতের রান্না খেতে।
প্রান্তিক : গ্রেট। মামমাম তুমি রান্না করোনা। কালকেই রান্না করবে তুমি।
মেরিন : মামমাম ব্যস্ত বাচ্চা।
প্রান্তিক : মামমাম… এমন করছো কেনো? প্লিজ প্লিজ প্লিজ…
নিহাল : মেরিন… কালকে শুক্রবার। দেখিয়ে দাওনা মামনিকে।
মেরিন : তোমার মামনিকে দেখিয়ে দিলে তো তোমারই কষ্ট হবে। মামনিরও কষ্ট হবে। তাইনা সাসুমম?
নীলিমা : কষ্টের কি আছে বলো তো মা? ও আমার ভাগনি তুমি আমার ছেলের বউ । সম্পর্কই আলাদা।
মেরিন : ইন্টরেস্টিং।
নামিরা মনেমনে : মেরিনের মুখ দেখে তো বোঝার উপায় নেই যে ও কি ভাবছে? জেলাস হয়েছে কি হয়নি? উফফ… এই মেয়েটার অনুভূতি কেনো প্রকাশ পায়না?
নীড় মনেমনে : চোখেমুখে বিরক্তি তো স্পষ্ট মেরিনের। জেলাসি থেকে?

.

নীড় : তোমার কারো সাথে প্রতিযোগিতা করার প্রয়োজন নেই। তোমাকে রান্না করতে হবেনা।
মেরিন : আমি রান্না করলে নামিরা হেরে যেতে পারে ভেবে না করছো কি? ভয় নেই। আমি ওর সাথে প্রতিযোগিতার জন্য রান্না করবোনা। প্রান বলেছে তাই রান্না করবো।
নীড় মেরিনের গাল চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরালো। এরপর এক আঙ্গুল ওর চিবুকে রেখে ওপরে তুলল।
নীড় : এই কথা তোমার জেলাসি বলছে মনেহচ্ছে।
মেরিন : জেলাসি মাই ফুট।
নীড় হেসে বলল : তুমি নিজের অনুভূতি আড়ালে সুনিপুনা। কিন্তু আমিও তো আমি। প্রেমিকার অনুভূতি না বুঝলে কেমন প্রেমী আমি?
মেরিন নীড়ের আঙ্গুল সরিয়ে দিলো।
মেরিন : না তুমি প্রেমী আর না আমি তোমার প্রেমিকা।
নীড় মেরিনের বাহু শক্ত করে ধরে নিজের কাছে আনলো।
নীড় : আমার প্রেম আমার কাছে সত্য। সেটা তুমি নাই মানতে পারো। তবে অসত্য বলতে পারোনা। সেই অধিকার তোমার নেই।
মেরিন : তোমার লিমিট যেমন তুমি সেট করো তেমন আমার অধিকার আমি সেট করি।

.

পরদিন…
সারাবাড়ি রান্নার ঘ্রাণে ভরে গিয়েছে।
প্রান্তিক : চাচ্চু চাচ্চু… ওঠোনা… ও চাচ্চু…
নীড়ের ঘুম ভেঙে গেলো।
নীড় : কি হলো লাভ?
প্রান্তিক : ওঠো চলো নিচে চলো। দেখো মামমাম কি সু্ন্দর সুন্দর খাবার রান্না করছে। আসো না আসো।
নীড় : দারাও দারাও। পরে যাবে তো তুমি।
প্রান্তিক : পরবোনা পরবোনা। চলো।
প্রান্তিক নীড়কে টেনে নিয়ে গেলো রান্নাঘরে। গিয়ে দেখে মেরিন রান্না করছে। সকালে খাবার বানানো শেষ। দুপুরের খাবার প্রস্তুত করে রাখছে। নজর গেলো নীড়ের দিকে। দরজায় পা রেখে ওকে দেখছে।
মেরিন : ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসো।
নীড় এগিয়ে এলো।
নীড় : ব্রেকফাস্টে দেশি-বিদেশি দুই রকমেরই আছে। লাঞ্চ-ডিনারেও থাকবে চমক। রোজরোজ এমন খেলে তো ওয়েট চাঁদে চলে যাবে।
মেরিন : আজকে রান্না খাবে সেটাও কেবল প্রানের দরুন।
নীড় : সূর্যের আলো সকলের ওপরেই পরে। প্রানের কথায় রান্না করছো। কিন্তু এটা আমাদের সকলেরই আহার হবে।
মেরিন : ফ্রেশ হয়ে হাসো প্রিয় স্বামী। আমি খাবার লাগাচ্ছি।
নীড় : আমি ব্যকুল হয়ে আছি।
নীড় ফ্রেশ হয়ে এলো। সকলে খাবার খেলো। সকলে মেরিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নিহাল মেরিনকে গহনা উপহার দিলো।
মেরিন : সরি বাবা। কিন্তু আমি এটা নিতে পারবোনা।
নিহাল : বাবাও বলছো আবার নিতে পারবেনাও বলছো? নট ডান। নিতে হবে এবং পরতে হবে। নীড় মেরিনকে এটা পরিয়ে দাও।
নীড় এসে হারটা হাতে নিয়ে মেরিনের গলায় পরিয়ে দিলো। প্রান্তিক তালি বাজালো।
নামিরা : আমার ভাবি ডিজিটাল ভাবি হতে পারে। কিন্তু পারফেক্ট ভাবি।
মেরিন ওপরে চলে গেলো।
নামিরা মনেমনে : ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে কে জানে?
নীড় মনেমনে : তোমার কাছে কোনো অস্বাভাবিক কল তো আসেনি। কিন্তু তোমার কাজকর্ম এবং দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিক নয়। কালই এই বাসায় তোমার শেষ দিন হবে নামিরা। আমার এবং মেরিনের মধ্যে যথেষ্ট ঝামেলা রয়েছে। ঝামেলা আর বারাতে চাইনা।
নীড় ঘরে গেলো। মেরিন বিছানায় বসে আছে । বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে অন্যমনস্ক হয়ে। ও এগিয়ে যাচ্ছে মেরিনের দিকে। তখন পায়ের মধ্যে কিছু লাগলো। তাকিয়ে দেখে হারটা। ও হাতে তুলে নিলো। বুঝতে পারলো যে মেরিন রেগে সেটা গলা থেকে খুলে ছুরে মেরেছে। নীড় গিয়ে মেরিনের গলায় পরাতে নিলো। মেরিন উঠে দারালো।
মেরিন : এটা ঘর…
নীড় : আর আমি তোমার বর। দেখি পরাতে দাও। তোমাকে খুব মানিয়েছে।
মেরিন নীড়ের হাত ধরলো।
মেরিন : নীড়… আমাদের সম্পর্কের বাস্তবতাটা ভুলে যেওনা।
নীড় : আমাদের সম্পর্কের বাস্তবতাটা এটাই যে তুমি আমার আর আমি তোমার।
মেরিন : আমি কিন্তু এবার ডিভোর্সের আবেদন করবো।
নীড় মেরিনের গালে হাত রাখলো।
নীড় : সম্পর্কে তৈরি হয় ওপর থেকে। সেটাকে ভাঙা গড়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। আর আমি তোমাকে হারাতে পারবোনা। তুমি আমাতেই বন্দি হয়ে থাকবে।
মেরিন নীড়কে ধাক্কা দিয়ে সরালো।
মেরিন : সে গুড়ে বালি।
নীড় : ভালোবাসায় কেনো এতো অরুচি তোমার?
মেরিন : ভালোবাসায়ও অরুচি। আর তারচেয়ে বেশি অরুচি তোমাতে। তোমার এই পরিবারে।
নীড় : আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কেনো অতীত টানছো? কেনো তোমার বোন এবং আমার ভাইয়াকে আনছো?
মেরিন : কারন তুমি এবং তোমার পরিবারের জন্য সব বরবাদ হয়ে গিয়েছে।
নীড় : এমন ভাবে বলছো যেনো তোমার পরিবারের সাথে তোমার খুব ভাব ছিলো। যেনো জান ছিলো তোমার।
মেরিন : আমার পরিবারের সাথে আমার ইস্যু ছিলো ব্যক্তিগত। কারো রাইট নেই সেই বিষয়ে কথা বলার। না কাউকে অধিকার দিয়েছি আমার পরিবারের দিকে চোখ তুলে তাকানোর। আমার আপুর জীবন শেষ করে দিয়েছো।
নীড় : তোমার আপুর জীবন আমি বা আমরা বরবাদ করিনি। বরং তোমার বোন আমাদের পরিবারকে বরবাদ করেছে। আমার ভাইয়াকে মেরে ফেলেছে
মেরিন : আমার আপু তোমার ভাইয়াকে মারেনি। আর তোমার ভাইয়ারা চেহারা নিয়ে যে মরেছে সেটা তোমার ভাইয়াও ছিলোনা। সেটা ডুপ্লিকেট ছিলো।
নীড় : প্লিজ শাট আপ। আর কোনো কথা নয়।
মেরিন : তোমাকে শুনতে হবে। শুনতে বাধ্য তুমি।
নীড় : মিথ্যা কথা বলে তুমি তোমার খুনী বোনের নাম বাঁচাতে পারবেনা। তোমার বোন ধোকাবাজ এবং খুনী।
মেরিন : আমার বোন খুনীও নয় আর ধোকাবাজও নয়। তোমার ভাইয়া ছিলো ধোকাবাজ। ভালোবাসার নাটক সাজিয়ে আমার আপুকে ফাঁসিয়েছিলো।
নীড় : ইনাফ। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক। যদি তোমাকে ভালো না বাসতাম তাহলে এমন স্পর্ধার জন্য তোমার জান নিয়ে নিতাম।
মেরিন : আর আমি কি তোমাকে ছেরে দিতাম?
নীড় : আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাইনা।
মেরিন : আমি বলতে চাই।
নীড় : কি বলতে চাও তুমি? হামম? কি শুনতে হবে আমাকে? কি বিশ্বাস করতে হবে আমাকে? হামম?
মেরিন : আমার ওপর বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই। এটা ফ্যাক্ট। এটাই সত্যি। প্রমান করে দিবো আমি।
নীড় : কিচ্ছু প্রমান করতে পারবেনা তুমি। কারন এই কথায় কোনো সত্যি নেই।
মেরিন : আর যদি থাকে? যদি আমি প্রমান করে দেই তাহলে? হামম?
নীড় : পারবেনা।
মেরিন : যদিই পারি তাহলে?
নীড় : তাহলে সেটাই হবে যেটা তুমি বলবে। এক মিনিট , এর মানে এটা নয় যে কোনো নকল প্রমান আনবে।
মেরিন : আনবোনা আনবোনা। সঠিক প্রমানই আনবো। তখন নিজের কথায় অটল থাকবে তো?
নীড় : দেখে নিও।
বলেই নীড় গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। মেরিন বিছানায় পরে থাকা হারটা হাতে নিলো।
মেরিন : কিছু হারে আসলেই জিত থাকে। আজকে সেটা দেখেও নিলাম। নাইস। তুমি জানোনা নীড় তুমি কি বলে গেলে। তুমি ভাবতেও পারছোনা যে আমি তোমার থেকে কি আদায় করতে চলেছি। কি চাইবো আমি? এবার তুমি নিজের হাতে প্রানকে আমায় তুলে দিবে। উফফ উফফফ… আমি আর ধৈর্য্য ধরতে পারছিনা।
নামিরা এলো। বাহিরে থেকে দেখলো মেরিন অনেক খুশি।
নামিরা মনেমনে : এতো খুশি কেনো মেরিন? কি হয়েছে?
মেরিন : ননদিনী…
নামিরা চমকে উঠলো। মেরিন হেসে দিলো।
মেরিন : চিল ডার্লিং। এটা আমি। মেরিন। মানে তোমার ভাবি।
নামিরা : হঠাৎ করে ডাক দিলে তো তাই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
মেরিন : তুমি এখানে দারিয়ে আছো কেনো? ভেতরে গেলেই তো পারতে।
নামিরা : না মানে ইয়ে মানে…
মেরিন : নজর রাখছিলে বুঝি? হামম।
নামিরা : কি যে বলছো ভাবি…
মেরিন : মজা করছি। হিহি। এসো ভেতরে এসো।
নামিরা : আসলে জরুরী কথা আছে।
মেরিন : চিল না… খেয়ে ফেলবোনা তোমাকে। কাম কাম কাম।

.

নীড় ড্রাইভ করছে আর মেরিনের বলা কথাগুলো ভাবছে।
নীড় : কে জানে মেরিন কি মিথ্যা প্রমান দার করাবে? আমাকে সজাগ থাকতে হবে। ওকে হয়তো কেউ ভুল পথে চালাচ্ছে। উফফ… এই প্রতিশোধ খুব খারাপ বিষয়। তার থেকেও খারাপ এই প্রনয়। না বাঁচা যায় না মরা যায়। না মেরে ফেলা সম্ভব না এভাবে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। উফফ উফফ… আমি মেরিনকে নিয়ে , প্রানকে ভালো থাকতে চাই।
নীড় গাড়ির স্টিয়ারিং এ ঘুষি মারলো।
নীড় : আচ্ছা… মেরিনের কথাটাতে কি সত্যিই কোনো সত্যতা আছে? না না না এটা হতে পারেনা। আমি আমার ভাইয়াকে চিনবোনা? আমি আমার মতো ইনভেস্টিগেট করবো। মেরিনকে বোঝাবো যে ও ভুল পথে আছে। মেরিনকে আমি হারাতে পারবোনা। খুব ভালোবাসি ওকে। কিন্তু পুরো ইউনিভার্স লেগে আছে আমাদেরকে আলাদা করতে। আমি এটা হতে দিবোনা। যেভাবেই হোক আমি সবটা সমাধান করবো। মেরিনের ভালো লাগাটা কে ছিলো সেটাই জানা হলো এসব চক্করে। এটা আমার প্রধান মিশন। ভালো লাগাটা কোথায় ছিলো? বাংলাদেশে , ভারতে নাকি ফিনল্যান্ডে?

.

পরদিন…
লিওকে আইসিইউ থেকে শিফ্ট করা হয়েছে। টাইগার-প্যান্থার ভেতরে ঢুকলো ওকে দেখতে।
টাইগার : ঠিক আছেন আপনি স্যার?
লিও : গার্ডেনে আছি। তাই ভালো আছি।
টাইগার : সরি স্যার।
লিও উঠে বসতে নিলো। নার্স বাধা দিলো।
লিও : এতো সাহস হামম? আমাকে বাধা দেয়া?
প্যান্থার : স্যার স্যার… আপনি উত্তেজিত হবেননা। প্লিজ প্লিজ।
লিও : নীড়মেরিন বেঁচে আছে তো?
প্যান্থার : জী স্যার।
লিও : গুড। ইমপ্রেসিভ। ওদের গায়ে যেনো ফুলের টোকাও না লাগে।
প্যান্থার : ওকে স্যার।
লিও : বের হবো কবে হসপিটাল থেকে?
নার্স : কমসে কম ৭দিন পর।
লিও : আপনাকে কে জিজ্ঞেস করেছে? আমি কাল পরশুর মধ্যেই বের হবো।
প্যান্থার : বস , আপনাকে সুস্থ হতে হবে নীড়মেরিনের মোকাবিলা করার জন্য। অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে আপনার।
লিও : তুমি এখন আমার মুখের ওপর কথা বলবে? হামম?
প্যান্থার : সরি বস। কিন্তু আমি যা করছি আপনার জন্যই করছি। প্লিজ স্যার।

.

নামিরা : কারা তোমরা? আমাকে কেনো তুলে এনেছো? কি ক্ষতি করেছি আমি তোমাদের?
নীড় : চিল চিল চিল খালাতো বোন।
নামিরা : নীড় তুমি?
নীড় : হ্যা আমি। কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?
নামিরা : আমাকে কেনো তুলে এনেছো?
নীড় : সেটা তুমিও জানো আর আমিও জানি। তাই না জানার ভান করে সময় নষ্ট করোনা প্লিজ।
নামিরা : ভুল করেছো নীড়। আমাকে আনা ঠিক হয়নি।
নীড় : জানি জানি। মাইক্রোচিপ আছে তোমার মধ্যে। আই মিন ছিলো।
নামিরা : ছিলো মানে?
নীড় : ছিলো মানে এই যে আমি এটাকে ধ্বংস করে ফেলেছি। এখন ভালো ভাবে বলো কে পাঠিয়েছে তোমাকে? লিও নাকি কিবরিয়া?
নামিরা : কে লিও? কে কিবরিয়া?
নীড় : লিজা…
লিজা এসে থাপ্পর মারলো নামিরাকে।
নীড় : তোমাকে আমি টাচ করতে চাইনা। না মানে না। আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিলে এমন করে খেতেই থাকবে থাপ্পর। ধীরেধীরে অবশ্য শাস্তিটা বৃদ্ধি পাবে। তাই প্লিজ বলে দাও।
নীড় বহু চেষ্টা করেও নামিরার কাছ থেকে কিছু জানতে পারলোনা। কারন ও তো আসলেই কিবরিয়া এবং লিও সম্পর্কে জানেনা। কিবরিয়া ওকে কিছু বলেইনি।
নীড় : লিজা… ও এখন তোমার। ওর মুখ থেকে কথা বের করার দায়িত্ব তোমার।
লিজা : ইয়েস স্যার।
নীড় বেরিয়ে গেলো।
নীড় : কিবরিয়া। আমি ড্যাম সিওর যে এই কাজ কিবরিয়ারই। কিবরিয়ার ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে। স্যাম্পল জোগার করতে হবে।
তখন ওর ফোনটা বেজে উঠলো।
নীড় : হ্যা পিটার… পৌছে গিয়েছো ইন্ডিয়াতে?
পিটার : ইয়েস স্যার।
নীড় : আমরা যে ভার্সিটিতে পড়েছি সেখানে কয়েকমাস মেরিনও ছিলো। দেখো কোনো ভালো লাগা পাও কিনা?
পিটার : ওকে স্যার।
নীড় : রাখছি।
নীড় রেখে দিলো।
নীড় : জানিনা পিটার সফল হবে কিনা? মনেহয়না হবে। মেরিন মনের কথা প্রকাশ করার মতো মেয়ে তো নয়।

.

রাত ১২টা…
মেরিন : কালকে বাসা থেকে বের হয়েছে এখনো ফেরেনি। হারের খোজ পেয়েছে। হ্যাহ… মরে টরে যায়নিতো? গেলে যাবে আমার কি? তবে সম্পুর্নভাবে হারানোর আগে মরবে কেনো? ফোন দিবো? না না ফোন দিবো কেনো? কিন্তু কোথায় গেলো? কোনো ষড়যন্ত্র করছেনা তো? পিটারও তো দেশে নেই। কিভাবে খোঁজ নেই? ও আবার ডাবল মিনিং করবেনা তো? ধ্যাত ভালো লাগেনা। আমি ওকে নিয়ে ভাবছি কেনো?

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 37
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : আমি ওকে নিয়ে ভাবছি কেনো? মেঘ ডাকছে। প্রান… প্রান তো তাদের দুজনের কাছে আছে। আচ্ছা নামিরা হঠাৎ করে গায়েব হয়ে গেলো কেনো?
বাহিরে বৃষ্টি শুরু হলো।
মেরিন : বৃষ্টির বেগ তো অনেক বেশি। আমার শত্রুর শেষ আমার হাতেই হওয়া উচিত । বরবাদ না হয়ে আমার শত্রুর শেষ কিভাবে হবে? কেনো হবে? আমি এসব ভাবছি কেনো? কাজ শেষ। ঘুমিয়ে পরি।
মেরিন শুয়ে তো পরলো কিন্তু ঘুম আসার নাম নেই। ও উঠে বসলো। মোবাইলের দিকে তাকালো।
মেরিন : কল করবো? গাড়ি থামার শব্দ পেলাম…
মেরিন ছুটে নিচে নামলো। নীড় চাবি দিয়ে দরজা খুলতে নিলে দরজা খুলে গেলো। তাকিয়ে দেখে মেরিন দারিয়ে আছে। নীড় একটু অবাক হলো।
নীড় : অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলে বুঝি আমার?
মেরিন : অতোটা জরুরী নও তুমি। আমি বাহিরে যাচ্ছি।
নীড় : এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে যাচ্ছো?
মেরিন : হ্যা। তোমার সমস্যা?
মেরিন নীড়কে ক্রস করে যেতে নিলে নীড় ওর হাত ধরলো।
মেরিন : কি হলো?
নীড় : যাচ্ছো?
মেরিন : হ্যা। একদম বাধা দিবেনা।
নীড় : না না বাধা দিবোনা। তবে গাড়ির চাবি তো নিয়ে যাও।
মেরিন : তোমার গাড়ির চাবি কেনো নিবো আমি?
নীড় : আমার গাড়ির চাবি নিতে বলিনি। নিজের গাড়ির চাবি তো নিয়ে যাবে। এই বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি ছারা তো আর বের হবেনা তাইনা?
মেরিন : জন আসবে। সরো।
নীড় : এতো রাত করে আমি তোমাকে জনের সাথেও যেতে দিবোনা। আর ও তো আসবেও না। কেনো মিথ্যা বলছো? চলো ঘরে চলো।
মেরিন : তুম…
নীড় মেরিনকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের দিকে পা বারালো।
মেরিন : নীড় তুমি আমার সব কাজে বাধা দাও। ছারো আমাকে। নামাও আমাকে।
নীড় ঘরে নিয়ে গিয়ে মেরিনকে নামালো।
নীড় : ধন্যবাদ তোমাকে… আমার জন্য অপেক্ষা করার জন্য।
মেরিন : তুম…
নীড় : প্লিজ আর মিথ্যা বলোনা। সবসময় মিথ্যা চলেনা। প্রান ঘুমিয়েছে?
মেরিন : গিয়ে দেখে আসো।
নীড় : ডিনার করেছে?
মেরিন : না খাইয়ে রেখেছি।
নীড় : তোমরা সকলে ডিনার করেছো?
মেরিন : না।
নীড় : ভালো। মাঝেমধ্যে রাতে না খাওয়া যেতেই পারে। ফ্রেশ হয়ে আসছি।
নীড় ফ্রেশ হতে গেলো।
মেরিন : এতো ঠান্ডা গলায় কথা বলছে কেনো? বলুক আমার কি?
মেরিন শুয়ে পরলো। নীড় ফ্রেশ হয়ে এলো। নিচে থেকে খাবার নিয়ে এলো দুজনের জন্য।
নীড় : জান ওঠো…
মেরিন : কি আশ্চর্য্য! কি হলো?
নীড় : ওঠো। খাবার খাবে। আমিও খাবো।
মেরিন : তোমাকে খেতে না করেছে কে? তুমি খাও।
নীড় : ওঠো একসাথে খাবো।
মেরিন : খাবোনা। খাও তুমি।
নীড় মেরিনকে টেনে তুলল।
মেরিন : আহ… এমন করে কেউ হাত ধরে টেনে তোলে? ব্যথা পেলাম তো।
নীড় : রিকুয়েস্ট করেছি শোনোনি। তাই এমনটা করতে হলো। হা করো।
মেরিন : খেয়েছি। খাবোনা।
নীড় কোনো কথা না বলে ওর হাতে জোরা বেধে দিলো যেনো হাত দিয়ে ওকে বাধা না দিতে পারে। ওর গাল চেপে ধরে মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলো।
নীড় : খাবার ফেলবেনা।
নীড় নিজেও খাচ্ছে মেরিনকেও খাইয়ে দিচ্ছে।
নীড় : তুমি কি জানো যে তোমার চোখ ২টা খুবই সুন্দর। রেগে গেলে তোমার চোখ আগ্নেয়গিরির মতো ভয়ংকর সুন্দর দেখায়।
মেরিন : জানি আমি।
নীড় : দারাও হাত ধুয়ে আসছি। গিফ্ট আছে।
মেরিন : হাত খুলে দাও।
নীড় : এক মিনিট অপেক্ষা করো।
নীড় হাত ধুয়ে এলো। হাতে একটি গিফ্ট বক্স। মেরিন হাতের বাধন খুলে ফেলেছে।
নীড় : এই না হলে আমার বউ? ধরো তোমার উপহার।
মেরিন : চাইনা তোমার দেয়া গিফ্ট।
নীড় : খোলো না। ট্রাস্ট মি পছন্দ হবে তোমার।
মেরিন : খুলবোনা । আর নিবোও না।
নীড় : তুমি যতোক্ষন না গিফ্ট খুলবে ততোক্ষন এভাবে বসে থাকতে হবে। ঘুম আর হবেনা। সো ওপেন ইট।
মেরিন : তুমি এমন কেনো?
নীড় : ভালোবাসলে তুমিও এমন হয়ে যাবে। ওপেন ইট।
মেরিন বিরক্ত হয়ে বক্সটা খুলল। খুলে দেখে যে একটি নতুন পিস্তল এবং একটি লাল গোলাপ। মেরিন একটু অবাক হলো। নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় : পিস্তল হাতে নিতে আমার খুল ভালো লাগে। তবে তারচেয়েও ভালো লাগে তোমার হাত ধরতে। আমি জানি তোমারও পিস্তল বলো গান বলো প্রিয়। আমার হাত ধরতে হয়তো তোমার ভালো লাগেনা। গোলাপ তো ভালো লাগবে বা লাগে। জানিনা বাকিরা নিজেদের প্রেমিকাকে , ভালোবাসাকে বা স্ত্রীকে ফুল বা গোলাপ কেনো ডাকে? কিন্তু আমার কাছে তুমি পরিপূর্ন লাল গোলাপ। গোলাপকে সহজে জয় করা যায়না। ঠিক যেমন তোমাকে। গোলাপকে জয় করতে গেলে কাটা নামক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। তোমার ক্ষেত্রেও সেইম। রাগ , জেদ , অভিমান এবং প্রতিশোধ নামক কাটা আছে আমার জন্য প্রতিবন্ধকতা। এখন কথা হচ্ছে লাল গোলাপই কেনো? কালো নয় কেনো, হলুদ নয় কেনো , সাদা নয় কেনো , নীল নয় কেনো।কালো গোলাপ তো রেয়ার তুমি সেটা না হয়ে আমার কাছে তুমি লাল গোলাপ কেনো? লাল রঙের মধ্যে অনেক কিছু আছে। লাল রঙ ভালোবাসার রঙ , লাল রঙ ঘৃণার রঙ , লাল রঙ রক্তের রঙ , লাল রঙ আগুনের রঙ , লাল রঙ প্রতিশোধের রঙ , লাল রঙ প্রনয়ের রঙ। প্রতিটা বৈশিষ্ট্যই তোমার মধ্যে আছে এবং আমাদের সম্পর্কের সত্যতাও সবগুলোই। তাই তুমি আমার লালগোলাপ। যে স্নিগ্ধতা দেয় , অনুপ্রেরনা দেয়। আমার স্বস্তি এবং শাস্তি তুমি। এটা আমার ভালোবাসার প্রথম উপহার।।
মেরিন : অগ্রাহ্য হলো তোমার প্রথম প্রেমের প্রথম উপহার। আর কি ভরসা আছে এই উপহারে? এই গোলাপের সুবাসে বিষাক্ততা নেই সেটার কোনো নিশ্চয়তা কি? এই পিস্তল যে সঠিক সময়ে চলবে সেটারও কি নিশ্চয়তা আছে?
নীড় : এখনো অবিশ্বাস আমার ভালোবাসায়?
মেরিন : যেখানে ভালোবাসাতেই বিশ্বাস নেই সেখানে নাকি আবার তোমার ভালোবাসায় বিশ্বাস করবো? শুনতেই হাস্যকর লাগছে।
নীড় : মেরিন… রেইপ কেইস তুমি সাজিয়েছিলে সেটার সমাধান আমি করে ফেলেছি। ওই ডক্টর তিথি তোমার প্ল্যানড ছিলো। সেদিন আমাকে উত্তেজিত করানোটাও তোমার প্ল্যানিং ছিলো। আমার বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়েট করছিলে। আমি বের হতেই আমাকে ফলো করো। আমার মুখোমুখি হও। আমার সাথে কথা কাটাকাটি করার সময় সম্ভবত জন আমার ক্যানে কিছু অ্যাড করে। আমি আরো রাগান্বিত হই। কি টাইপের কথা হয়েছিলো সেটা তো আমার মনে নেই। হয়তো এমন কোনো কথা বলেছিলে এবং ক্যানে এমন কিছু অ্যাড করেছিলে যেটার জন্য আমি তোমাকে ওভাবে টেনে হোটেলে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি নিশ্চিত সেখানে তোমার সাথে কোনো অন্যায় আমি করিনি। বাব তুমি নিজের সাথে অন্যায় হতে দাওনি। কোনো না কোনোভাবে আমাকে হারিয়ে দাও। তুমি নিজেকে নিজে আঘাত করেছিলে।। আমার নখে তোমার স্কিন থাকাও তোমার পরিকল্পনার অংশ। তবে সকালে তুমি সত্যিই অজ্ঞান ছিলে। সেটাও তোমার পরিকল্পনার অংশ। তোমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে তিথিকে দিয়েই ধর্ষনের গল্প রচনা করতো।কিন্তু তুমি ততোটা কঠোর নও যতোটা দেখানোর চেষ্টা করো। তুমি ভেবেছিলে তিথির সাথে যদিই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আর যদি নাও ঘটে তবুও এতো বড় বদনামী নিয়ে তিথিকে বাঁচতে হবে। সেটা তুমি কিভাবে করতে? তাই বদনাম তুমি নিজেরই করেছো। যাইহোক , ওই তিথির পরিবারকে তুমি জিম্মি করে রেখেছিলে। ও নিজেও জানতোনা যে তুমি কাজটা করিয়েছো। চাইলে শেষ করতে পারি আমি তিথিকে। কিন্তু করিনি এবং করার ইচ্ছাও নেই। ষড়যন্ত্র, অভিনয় এবং প্রতিশোধের খেলায় আমি তোমাকে পেয়েছি। সেটাই যথেষ্ট।
মেরিন : যুদ্ধ ছেরে , বিজনেস ছেরে পিস্তল নামিয়ে কলম হাতে গল্প-কবিতা লেখার ইচ্ছা আছে?
নীড় : তুমি যার স্ত্রী তাকে তো বন্দুকও ধরতে হবে আবার কবিতা লেখার জন্য কলমও।
নীড় গোলাপটা হাতে নিয়ে মেরিনের দিকে এগিয়ে ধরলো। মেরিন পিস্তলটা হাতে নিলো।
মেরিন : ধরতে তো ভালোই লাগছে। চালিয়ে দেখা উচিত নয় কি?
বলেই নীড়ের মাথায় পিস্তল ঠেকালো।
নীড় : চালাতেই পারো। তবে শর্ত একটাই। ঘৃণা নয় ভালোবেসে চালাতে হবে। তুমি যতোক্ষন না ভালোবেসে গুলি চালাবে ততোক্ষন আমি গুলি গ্রহন করবো না।
মেরিন : গুলি কারো ইচ্ছা মতো চলেনা।
নীড় : জানি। কিন্তু বন্দুকের মাথা ঘুরিয়ে দেয়া যায়।
মেরিন : অনেক হয়েছে উপহার উপহার খেলা। এখন আমি ঘুমাবো।
নীড় : যুদ্ধ মাঝপথে বন্ধ করা যায়না।
মেরিন : সূর্যাস্তের পর যুদ্ধ হয়না। কূটনীতি হয়।
মেরিন শুয়ে পরলো। নীড় আলো নিভিয়ে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালো। ঘুম তো মেরিনও আসেনি। কল্পনা করছে সেদিন রাতের কথা।

[
মেরিন : জন… চলো। নীড় বাসা থেকে বেরিয়ে পরেছে।আজকে কাজ সম্পন্ন হবে।
জন : তিথিকে আনার ব্যবস্থা করছি।
মেরিন : না।
জন : না? তাহলে সবটা হবে কিভাবে?
মেরিন : তিথি নয়। আমিই যাবো। বদনামও আমারই হবে।
জন : মানে?
মেরিন : হ্যা। নীড় যেমন মানুষ যদিই ও তিথির সাথে বারাবারি করে ফেলে?
জন : আমরা বাঁচিয়ে নিবো।
মেরিন : যদিই না পারি? আর তার চেয়ে বড় কথা। ওর সাথে বারাবারি কিছু না হলেও বদনাম তো হবে। আমি আমার উদ্দেশ্যের জন্য তিথিকে ব্যবহার করেছি। কিন্তু সমাজ বড় খারাপ। এমন বদনাম নিয়ে তিথি বাঁচতে পারবেনা এই সমাজে। তিথি তো নির্দোষ। ওকে মৃত্যুর দিকে আমি ঠেলে দিতে পারিনা।
জন : কিন্তু আপনার তো বদনাম হয়ে যাবে।
মেরিন : হোক। আর কবে কোথায় আমার কি সুনাম আছে বলো তো? চলো।
দুজন বের হলো।

.

মেরিন নিজের পরিকল্পনা মতোই কাজ করলো। কথা বলে নীড়কে ব্যস্ত করে ফেলল। জন সুযোগ বুঝে নীড়ের ক্যানে ড্রাগস মিশিয়ে দিলো। নীড় খাচ্ছিলো এবং মেরিনের সাথে বাকযুদ্ধ করছিলো। মেরিন নিজের কথা দিয়ে নীড়ের ইগো যথেষ্ট হার্ট করেছিলো। তবে ও ভাবতেও পারেনি যে নীড় ওকে টেনে হোটেলে নিয়ে যাবে। তখন ও খানিকটা ভয়ও পেয়ে যায়। নীড় মেরিনকে নিয়ে হোটেল রুমে প্রবেশ করলো। জন খুজে পাচ্ছিলোনা যে নীড় মেরিনকে নিয়ে কোথায় গিয়েছে।
মেরিন ঘাবরে গিয়েছিলো প্রচুর।
মেরিন : এখানে নিয়ে এলো কেনো আমাকে? তুমি আসলেই কাওয়ার্ড।
নীড় : তুমি নিজের শব্দ দিয়ে নিজের বিপদ নিজে ডেকে এনেছো মেরিন বন্যা খান।
নীড় সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মেরিনের হাত ধরলো।
মেরিন : হাত ছারো নীড়। ছারো…
মেরিন নিজের হাত ছারানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ।
নীড় : তুমি আমার হাতে বন্দি। তোমার ক্ষমতা নেই নিজেকে ছারিয়ে নেয়ার।
নীড় মেরিনকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলল। চেপে ধরলো বিছানার সাথে। মেরিন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করলো নিজেকে বাঁচানোর। কিন্তু ও ব্যর্থ। নীড় হাহা করে হাসতে লাগলো।
নীড় : হার মেনে নাও। কেউ নেই তোমাকে বাঁচানোর।
মেরিন : এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে।
নীড় : ফল ভোগের ধার আমি ধারিনা। এই মুহূর্তে তোমার রূপ এবং তোমার দম্ভ মাটির সাথে মিশাতে পারি। তুমি ছটফট করবে। অসহায়ের মতো অশ্রু বিসর্জন দিবে। পৈশাচিক আনন্দ হবে আমার মধ্যকার পুরুষের।
কয়েক সেকেন্ড পর মেরিন অনুভব করলো যে ও এখনো নীড়ের হাতে বন্দি। কিন্তু ও একটু দূরে আছে।
নীড় : অবাক হলে? হামম? তোমার এই চেহারাটা এবং তুমি আমার মনে প্রথম প্রেম জাগিয়েছিলে। ঘৃণা করি প্রচুর। কিন্তু কষ্ট দিতে পারবোনা। এই চোখে পানিও দেখতে পারবোনা। হিংস্রতাও করা সম্ভব নয়।
নীড় মেরিনকে ছেরে দিয়ে উঠে দারালো। নীড় দেরু
নীড় : চলে যাও।
নীড় উল্টো দিকে ঘুরে বোতলে চুমুক দিলো। মেরিন যথেষ্ট অবাক হলো। দেখছে নীড়কে। চলে যেতে নিলো মেরিন। আবার দারালো।
মেরিন মনেমনে : না মেরিন না। এতোদূর এসে ফিরে যাওয়া যাবেনা। এগুলো ও বলছেনা। ও মাতাল হয়ে আছে। তাই এসব বলছে।
মেরিন নীড়কে অজ্ঞান করে এরপর জনকে খবর দেয়। ছদ্মবেশে আসতে বলে। অবশেষে নিজের পরিকল্পনাকে পরিনাম দেয়।
]

মেরিন উঠে বসলো।
নীড় : ঘুম আসোনি এখনো?
মেরিন : ভোর হয়ে গিয়েছে। এখন আর ঘুমানোর সময় নেই। এখন ঘুম দিলে ৯টার মধ্যে নাও উঠতে পারি।
নীড় : না উঠতে পারলে উঠবেনা। একটু ঘুম না এলে শরীর খারাপ লাগবে। তাই ঘুমাবে। আমার বুকের মধ্যিখানে চুপটি করে ঘুমাবে।
মেরিন : তোমার স্বপ্নে।
নীড় : স্বপ্নকে বাস্তব করতে শিখে গিয়েছি আমি।
নীড় ওকে বুকের সাথে মিশিয়ে শুয়ে রইলো। মেরিন কিছুক্ষন ছটফট করে স্থির হয়ে গেলো। নীড় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মেরিন ঘুমিয়ে পরলো। নীড়ও ঘুমিয়ে পরলো।

.

পরদিন…
জন : ম্যাম… ল্যাটেক্স মাস্ক প্রস্তুত। আর মডেলও।
মেরিনের কানে জনের কথা যেনো ঢোকেইনি।
জন : ম্যাম…
মেরিন : কিছু বলছিলে?
জন : ম্যাম… ল্যাটেক্স মাস্ক আর মডেল।
মেরিন : হামম। পরাও মাস্ক।
জন পরিয়ে দিলো।
মেরিন : ওর নাম?
জন : জিনিয়া।
মেরিন : হিপনোটাইজ করিয়েছো?
জন : ইয়েস ম্যাম। চেক করে দেখুন।
মেরিন এগিয়ে গেলো।
মেরিন : তোমার নাম কি?
জিনিয়া : নীলা…
মেরিন : মিথ্যা কথা। তোমার নাম নীলা হতেই পারেনা। নীলা মারা গিয়েছে।
জিনিয়া : না না। আমাকে কিবরিয়া বন্দি করে রেখেছিলো।
মেরিন : যাও আরাম করবে।
জন নিয়ে গেলো জিনিয়াকে। আবার ফিরে এলো।
জন : ম্যাম… একটা কথা বুঝতে পারলাম না ওর মাথায় কিবরিয়ার নাম কেনো ঢুকানো হলো?
মেরিন : লিওর কান পর্যন্ত যদি কিবরিয়ার নাম পৌছায় তাহলে ও পাতাল থেকে হলেও কিবরিয়াকে খুজে বের করবে। লিওর বুদ্ধিমত্তার ওপর ভরসা আছে আমার।
জন : ম্যাম… লিও এবং কিবরিয়া যদি একজনই হয় তাহলে?
মেরিন : লিওই প্রনয় কিনা সেটা নিয়ে আমার একটু হলেও সন্দেহ আছে। কিন্তু লিও যে কিবরিয়া নয় সেটা নিয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত।
জন : হামম। যদি লিও এবং কিবরিয়া কানেক্টেড থাকে তাহলে?
মেরিন : রিস্ক তো একটা নিতেই হবে।
জন : হ্যা তাও ঠিক। ম্যাম একটা কথা বলি?
মেরিন : বলো।
জন : আপনি কি ঠিক আছেন? না মানে আপনাকে অন্যমনস্ক লাগছিলো তাই বললাম।
মেরিনের চোখের সামনে নীড়ের চেহারাটা ভেসে উঠলো।
মেরিন : ঠিক আছি আমি। তাহমিদ হোসেনের প্লাস্টিক সার্জারি কোথায় হয়েছিলো জানতে পারলে?
জন : কলোম্বিয়া , অস্ট্রেলিয়া , নেদারল্যান্ড , আয়ারল্যান্ড , ডেনমার্ক এবং আর্জেন্টিনা-এই ৬টি দেশের একটিতে সার্জারি হয়েছে।
মেরিন : এই ৬টা দেশ হাতের তালু নয় জন। কিছু তো গন্ডগোল আছে। অভিজান চালিয়ে যাও।
জন : ইয়েস ম্যাম।

.

নীড় অনেক সাবধানে আন্ডারগ্রাউন্ডে ঢুকলো। ঢুকে দেখে নীলিমা প্রনয়ের ছোটবেলার গেইম বুকে হাত বুলাচ্ছে। নীড়ের কপালে ভাঁজ পরলো।
নীলিমা : ননীড়… তুমি এখানে?
নীড় : আসা কি নিষেধ?
নীলিমা : না তা কেনো হবে? এসো।
নীড় চারিদিকটা গভীরভাবে দেখছে।
নীলিমা : তোমার মনে আছে এই জায়গাটার কথা?
নীড় : একদম মনে আছে।
নীলিমা : প্রনয়ের বড্ড প্রিয় জায়গা ছিলো।
নীড় : তুমি এখানে কি করছো?
নীলিমা : স্মৃতির পাতা উল্টানো ছারা আর কিই বা করার আছে?
নীড় : স্মৃতিকে আগলে রাখা ভালো। তবে অধিক স্মৃতি বিচরণ ভালো নয়।
নীলিমা : এখন কি আমার এখানে আসা নিয়েও সমস্যা? হামম?
নীড় : চলো।
নীলিমা রেগে বেরিয়ে গেলো। নীড় চারদিকে চোখ বুলিয়ে বেরিয়ে গেলো। নীলিমা মন খারাপ করে ঘরের দিকে চলে গেলো।
নিহাল : নীড়… নীলির কি হয়েছে?
নীড় : সেটাই তো লাখ টাকার প্রশ্ন… মামনির কি হয়েছে? নাকি যা হবার আগেই হয়েছে আমরা বুঝতে পারিনি।
নিহাল : কি সব বলছো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
নীড় : প্রান কোথায়?
নিহাল : ঘুম।
নীড় : হামম।
নীড় বের হয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলো। কিছু একটা ভেবে বেরিয়ে গেলো।

.

২দিনপর…
নেহারিকা : নামক এক ভদ্র মহিলার গাড়ির সামনে জিনিয়া পরলো। যার চেহারা নীলার মতো।
জিনিয়া : বাঁচান আমাকে ওরা আ…
জিনিয়া জ্ঞান হারালো।
নেহারিকা : এই শুনছেন কে আপনি? এই যে হ্যালো…
নেহারিরা জিনিয়াকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।
জন : হ্যালো ম্যাম… ফার্স্ট স্টেপ ডান।

.

নীড় : ঠিক আন্দাজ করেছি যে ওটা আজমল কিবরিয়া নয়। ডুপ্লিকেট। আজমল কিবরিয়া ক্লোন বানালে বেঁচে যেতে তুমি। কিন্তু ডুপ্লিকেট কাউকে এনেছো তুমি। পাতাল থেকে হলেও তোমাকে খুজে বের করবো। সবকিছুর মূলে কেবল আর কেবল তুমিই আছো কিবরিয়া। শেষ করে ফেলবো।
তখন পিটার ওকে কল করলো।
নীড় : কি আপডেট পেলে?
পিটার : সরি স্যার এখনো এমন কাউকে পাইনি যে ম্যামের অনুভূতি জানে।
নীড় : আরো একদিন চেষ্টা করো।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 38
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : আরো একদিন চেষ্টা করো।
পিটার : ইয়েস স্যার। এরপর কি ফিনল্যান্ড যাবো?
নীড় : না প্রয়োজন নেই। ওখানেই একদিন দেখে ফিরে এসো। যদিও ফলাফল আমি জানি। পাবেনা কারো কাছে খোঁজ। কারন মেরিন অমন মেয়েই নয় যে নিজের মনের কথা শেয়ার করবে। একদিন দেখে চলে এসো।
পিটার : ওকে স্যার।
নীড় রেখে দিলো। রাখতে না রাখতেই ফোনটা আবার বেজে উঠলো। মেরিনের নাম ভেসে উঠলো।
নীড় : হ্যালো জান।
মেরিন : কোথায় আছো?
নীড় : হঠাৎ আমার প্রতি এতো মায়া?
মেরিন : প্রান জানতে চাইছে। কি কথা যেনো আছে তোমার সাথে।
নীড় : ইয়াহ ইয়াহ।
মেরিন : কোথায় আছো?
নীড় : ফ্যাক্টরী সাইটে।
মেরিন : তুম…
তখন ফোনে ব্লাস্টের শব্দ পেলো। ডিজকানেক্ট হয়ে গেলো।
মেরিন : নীড়… হ্যালো নীড়।
প্রান্তিক : কি হলো মামমাম?
মেরিন : ককিছুনা।আসছি।
মেরিন বেরিয়ে গেলো।
মেরিন : ড্যাম ইট… এতো জ্যাম কেনো? কিসের ব্লাস্ট হলো? কি হলো ওখানে?
মেরিন যে কিভাবে ড্রাইভ করে নীড়দের ফ্যাক্টরী সাইটে পৌছালো সেটা ও নিজেও জানেনা।
মেরিন : এখানে তো দেখে মনেহচ্ছে না যে কোনো ব্লাস্ট হয়েছে। সবকিছুই তো স্বাভাবিক। তাহলে কিসের শব্দ হলো? নীড়ই বা কোথায়? কে ব্লাস্ট করালো?

নীড় : তুইনা আমাকে ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলি।
বর্ষা : ভয় পাওয়ানোর জন্যই তো করা। এতো সাহসী হয়ে ভয় পাওয়া কি জায়েজ?
নীড় : যে পরিস্থিতিতে আছি সেখানে যেকোনো দিক দিয়ে বিপদ আসতে পারে।
বর্ষা : তোদের ফ্যাক্টরী ঘুরে ভালোই লাগলো।
নীড় : ফ্যাক্টরী ঘুরে দেখার ইচ্ছা দেখে আমি অবাক হলাম।
বর্ষা : কি আর করার বল? তোর উপস্থিতি এখানে। তাই এখানে এসেই তোকে চমকে দিতে হলো। এলামই যখন তখন ঘুরতেও ইচ্ছা হলো। এবার বের হওয়া যাক।

নীড়কে খুজতে খুজতে পেয়েও গেলো মেরিন। পাশে বর্ষাকে দেখতে পেলো বর্ষাকে ও চেনে । বর্ষা নীড় , আকাশ , ইমানের খুবই ভালো বন্ধু। নীড় বর্ষা একে অপরের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে। বর্ষা কথা বলতেবলতে নীড়ের গায়ে হাতও দিচ্ছে। ও চিন্তায় পরে গিয়েছিলো ব্লাস্টের শব্দে। তাই দ্রুত ছুটে এলো।
নীড়ের চোখ মেরিনের দিকে পরলো।
নীড় : মেরিন…
বর্ষা : কোথায়?
নীড় : ওই তো। আয়।
নীড় বর্ষাকে নিয়ে এগিয়ে এলো।
নীড় : মেরিন মি…
মেরিন নীড়কে থাপ্পর মেরে চলে গেলো। এক সেকেন্ডও দেরি করলোনা। এখানে উপস্থিত নীড়ের সকল কর্মচারী , কর্মকর্তারা তাকিয়ে রইলো। সকলে অবাক। বর্ষাও অবাক। সবচেয়ে বেশি নীড় অবাক। যথেষ্ট অপমানবোধও করলো। চারদিকে তাকালো। ওর তাকানো দেখে ভয়ে সকলে নিজনিজ কাজে লেগে পরলো।
বর্ষা নীড়ের কাধে হাত রেখে বলল : নীড়… কি চল এখান থেকে।
নীড় কাধ থেকে বর্ষার হাত সরিয়ে বেরিয়ে গেলো।
বর্ষা : মেরিন এখনো আগের মতোই আছে। সেই অহংকার… তাহলে নীড় কেনো ওকে বিয়ে করলো?

.

শমসের : হঠাৎ তুমি এলে?
মেরিন : আমার কি এখানে আসা নিষিদ্ধ?
শমসের : তা কেনো হবে দিদিভাই?
মেরিন : তাই যদি না হয় তাহলে এতো জিজ্ঞাসাবাদ কেনো?
শমসের : আমি তো কেবল একটা প্রশ্নই করলাম।
মেরিন : করবে কেনো?
শমসের মনেমনে : ওরা আজকে মূর্তি রূপে এখানে এসেছো। মেরিনও এক্ষনই এলো। মেরিন যদি জানতে পারে তাহলে যে কি হবে?

■ : মেরিন এসেছে। এখন কি হবে?
□ : শান্ত থাকো। মেরিন ভয়ের ঘ্রাণে ধরে ফেলবে। শমসের খান সামলে নিবে।
■ : সেই ভরসা আছে আমার।
□ : তোমার আছে। কিন্তু আমার নেই। কারন মেরিন তার অতিপ্রিয়। সে মেরিনের জন্য সব করতে পারে। তাইতো তাকে বলিনি।

শমসের : আমি তোমার পছন্দের খাবার রান্না করতে বলছি।
মেরিন : কোনো প্রয়োজন নেই। আমি এখনই চলে যাবো।
শমসের : কেনো ? না খেয়ে কেনো যাবে?
মেরিন : আমার ইচ্ছা তাই।
মেরিন বেরিয়ে গেলো।

.

মেরিনের গাড়ির সামনে নীড় নিজের দার করিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এলো।
নীড় : নামো।
মেরিন : আমার পথ ছেরে দারাও। আমি যাবো।
নীড় গাড়ির দরজা খুলে মেরিনকে টেনে নামালো। ওর হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
মেরিন : নীড় আমার হাত ছারো।
নীড় কোনো কথা না শুনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মেরিন নিজের হাত ছারিয়ে নিলো।
মেরিন : সবসময় তোমার জবরদস্তি চলবে না। জবরদস্তি পতিতালয়ের কোনো মেয়ের সাথে গিয়ে করো। মেরিন বন্যা খানকে নয়।
বলেই মেরিন চলে যেতে নিলো। নীড় ওর হাত শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘুরালো।
নীড় : জবরদস্তি তো কখনো করিইনি। আজকে করবো। আজকে তুমি দেখবে জবরদস্তি কাকে বলে মেরিন বন্যা খান।
মেরিন : আমার হাত ছারো নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন। এটা কোনো শান্ত বর্ষা মৌসুমের হাত নয়। এটা অশান্ত বন্যার হাত।
নীড় : আমিও প্রলয়ংকরী বর্ষন সেটা মনে রেখো। তোমার ক্ষন্ড তান্ডবে আমার ভয় নেই।
মেরিন : আমি কোনো ঘূর্নিঝড় নই যে ক্ষন্ড তান্ডব চালাবো। আমি বন্যা। আমার তান্ডব দীর্ঘদিনের হয়। হাত ছারো।
মেরিন আবারো হাত ছারিয়ে নিলো।
মেরিন : আই রিপিট.. কোনো শান্ত বর্ষার হাত ধরো।
নীড় আর এক সেকেন্ড দেরি না করে মেরিনকে কাধে তুলে নিলো। গাড়িতে তুলে নিয়ে গেলো নিজেদের বাগান বাড়িতে। ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো বাড়ির।
মেরিন : আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এলে?
নীড় : বিয়ে পর থেকে নিজের ভালোবাসা উপলব্ধি করার আগ পর্যন্ত আমি কি তোমার আমার কর্মচারী-কর্মকর্তা এবং আমাদের পরিবারের সামনে কখনো কোনো অপমান করেছি?
মেরিন : তোমার স্ত্রী হওয়াটাই আমার জন্য সবথেকে বড় আপমান।
নীড় : এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়। আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
মেরিন : আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।
বলেই মেরিন দরজার দিকে পা বারালো। নীড় ওর জামার পেছনের দিকটা ছিরে দিলো। মেরিন দরজার সাথে পিঠ ঠেকালো। নীড় ওর দুই পাশে হাত রাখলো। বন্দি বানিয়ে নিলো মেরিনকে।
নীড় : তোমাকে বারবার সাবধান করেছি মেরিন এমন কিছু করোনা যেটার জন্য আমার ভালোবাসার পথে ইগো চলে আসে। তুমি আমার কথা শুনলেনা। তুমি আমার কর্মচারীদের সামনে বিনাকারনে আমাকে অপমান করেছো। বিনাকারনে থাপ্পর মেরেছো আমাকে । আজকে আমি তোমার সাথে নূন্যতম তর্কও করিনি। তবুও তুমি কাজটা করলে। আজকে তুমি বুঝবে জবরদস্তি বিষয়টা কি।
মেরিন : সরে দারাও নীড়। আমি যাবো…
নীড় : আজকে না। আজকে তুমি আমাকে অনেক বেশি রাগিয়ে দিয়েছো। তাই এর পরিনামও তোমাকে ভোগ করতে হবে।
নীড় ওকে টেনে বেডরুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। নিজের কোটটা ছুরে ফেলল। মেরিন নিজের পিস্তলটা বের করলো। নীড়ের দিকে ধরলো।
মেরিন : তুমি যদি আর এক পা আগে বারাও তাহলে আমি তোমাকে শ্যুট করে দিবো।
নীড় শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে এগিয়ে যাচ্ছে।
নীড় : শ্যুট মি… করো শ্যুট আমাকে।
মেরিন : আমি কিন্তু সত্যিই শ্যুট করে দিবো।
নীড় : বললামই তো শ্যুট করো।
মেরিন ফাঁকা গুলি করলো।
মেরিন : দারাও নীড়।
নীড় : ফাঁকাগুলি কেনো? করো আমাকে শ্যুট।
মেরিন আরো একটা গুলি করলো। সেটা নীড় ডানহাত স্পর্শ করে গেলো। রক্ত বের হচ্ছে নীড়ের বাহু থেকে। কিন্তু নীড়ের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ও এগিয়ে এলো। মেরিনে হাত থেকে পিস্তল নিয়ে নিলো।
নীড় : যার হৃদয়ে রক্তক্ষরন হয় তার কাছে এতোটুকু ক্ষত কিছুই নয়। আর মরার ভয় আমি পাইনা।
বলেই নীড় পিস্তলটা ছুরে ফেলে মেরিনকে বিছানায় ফেলল। 😒😒😒

.

নিহাল : নীড়-মেরিন কেউই কল রিসিভ করছেনা। পিটারও নেই দেশে। কি করবো এখন?
নীলিমা : ফোনে পেলে নীড়মেরিনকে?
নিহাল : কেউ কল রিসিভ করছেনা।
নীলিমা : প্রান অস্থির হয়ে গিয়েছে মেরিনের জন্য। নীড়ের সাথে কথা বলছিলো। হঠাৎ বেরিয়ে গেলো। মেরিনের ওভাবে যাওয়া দেখে ও অস্থির হয়ে পরেছে। কোনো বিপদ হলো না তো?
নিহাল : বুঝতে পারছিনা। কি বিপদ হলো?
বর্ষা : বিপদ নয় অপমান।
নীলিমা : বর্ষা মা তুমি?
বর্ষা : হ্যা আন্টি আমি। ভালো আছো তোমরা?
নীলিমা : হ্যা ভালো আছি। তুমি কবে এলে।
বর্ষা : আজই।
নিহাল : কিসের অপমানের কথা বলছিলে তুমি?
বর্ষা সবটা বলল।
নীলিমা : এ কি ঘটনা? এই মেয়েটা এমন কেনো?
নিহাল : নীলি… এটা ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
নীলিমা : এটা আমার ছেলের সম্মানের ব্যাপার।
নিহাল : জানি। ওদেরটা ওদেরকেই বুঝতে দাও।
বর্ষা : কিন্তু আংকেল নীড় অনেক রেগে বেরিয়ে গিয়েছিলো। তাই ভয় পেয়ে আমি এলাম।
নিহাল : তোমার আমাদেরকে এগুলো বলা ঠিক হয়নি।
নীলিমা : ও না বললেও কি আমরা জানতে পারতাম না?
নিহাল : সেটা আলাদা ব্যাপার।

.

নীড় : গুলি করার ইচ্ছা হলে বারান্দায় এসে করে যেও। আমি ওখানেই আছি। এই ব্যাগটাতে ড্রেস আছে তোমার জন্য।
বলেই নীড় বারান্দায় গেলো। সিগারেট ধরালো।
মেরিন পিস্তলটা হাতে নিলো। লোড করে শ্যুট করলো। গুলির শব্দ পেয়ে নীড় ভয় পেয়ে ভেতরে ছুটে এলো। মেরিন নিজেকে শ্যুট করে দেয়নি তো! এসে দেখে মেরিনের হাত থেকে রক্ত ঝরছে।
নীড় : মেরিন…
মেরিন : কি ভেবেছিলে নিজেকে শ্যুট করেছি?
নীড় চুপ করে রইলো। মেরিন হাতের রক্তাত্ব স্থানে ওরনা পেচাতে পেচাতে
বলল : নিজের জান নিয়ে নেয়ার মতো বোকা আমি নই। আমি বরাবরাই সকলের কাছে তিরষ্কার পেয়েছি। সকলের অপ্রিয় আমি। না আমার কোনো বন্ধু আছে। কিন্তু শত্রু অনেক বানিয়েছি। সেগুলো নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। কবির ফয়সাল খান এবং তার স্ত্রী এবং তার কন্যার মৃত্যু নিয়েও আমার মাথাব্যথা থাকতোনা। তুমি জরিত থাকা নিয়ে মাথাব্যথা থাকতোনা। আটকে গিয়েছি প্রানে। তিনবছর আমার কাছে ছিলো ও। বড় করেছি ওকে। একমাত্র দুর্বলতা হয়ে গিয়েছে ও আমার। সকলের ঊর্ধ্বে প্রান। তাই এই খেলা শুরু করেছি আমি। প্রানের জন্যই তোমাদের সকলের প্রান আছে। না হলে তোমাদেরকে আমি উড়িয়ে দিতাম। আর রইলে পরে তুমি…
মেরিন নীড়ের দিকে তাকালো।
মেরিন : যে বরাবরই ঘৃণার পাত্র তাকে নতুন করে আর কি ঘৃণা করবো বলো তো?
নীড় : তোমার ভালোবাসা হয়তো কখনোই আমি পাবোনা। তাই ঘৃণাতেই তুষ্ট থাকার চেষ্টা করবো। মাবাবা , ভাইয়া সকলের ভালোবাসা তো পেয়েছিই। ভালোবাসার থেকে না হয় ঘৃণাই পাবো।
মেরিন : ঘৃণাতেই যদি তুষ্ট হও তাহলে তোমাকে ঘৃণাও করবোনা। না তুমি ভালোবাসার না তুমি ঘৃণার।
বলেই মেরিন নিজের পিস্তল নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
নীড় : যা ঘটার সেটাতো ঘটেই গিয়েছে। কিন্তু মেরিন আজকে কাজটা করলো কেনো? জেলাসি? বর্ষাকে নিয়ে জেলাসি থেকে কাজটা করলো? নামিরা ওকে জেলাস ফিল করানোর অনেক চেষ্টা করেছে। হলেও সেটা ও প্রকাশ করেনি। তাহলে বর্ষাকে নিয়ে জেলাস কেনো হবে?

.

নীলিমা : নীড় কোথায়?
মেরিন : ছেলেকে কল করে জেনে নাও।
নীলিমা : থাপ্পর মেরেছো কেনো আমার ছেলেকে? কতো অপমানিত হয়েছে আমার ছেলে সেটা ভেবে দেখেছো?
নীড় : মামনি… ওটা আমাদের পার্সোনাল ইস্যু। এটার থেকে বাহিরে থাকলেই খুশি হবো।
নীলিমা : বেশ থাকলাম বাহিরে। কিন্তু ওর ওভাবে বের হয়ে যাওয়া নিয়ে এবং তোদের কল রিসিভ হয়নি বলে প্রান অনেক ঘাবরে গিয়েছে। প্রচুর কান্নাকাটি করেছে। কান্না করতে করতে একটু আগে ঘুম দিয়েছে।
মেরিন : প্রান তো… প্রানকে সামলে নিবো।
মেরিন প্রান্তিকের কাছে গেলো।
নীড় : কে খবর দিলো তোমাদেরকে?
বর্ষা : আমি।
নীড় : তুই এই বাসায়?
নিহাল : ও বাংলাদেশে এলে এখানেই থাকে নীড়। সেটা নতুন নয়।
নীড় : বাবা… মামনি কি কম ছিলো আমার সম্পর্কে দেয়াল সৃষ্টি করার জন্য? তুমি কেনো যুক্ত হলে?
নিহাল : কিসের মধ্যে কি বলছো? আমি ভুল কি বললাম? বর্ষা তো আগেও আসতো।
নীড় : তখন আর এখনের মধ্যে পার্থক্য আছে। তখন আমার স্ত্রী ছিলোনা কিন্তু এখন আছে । আমি মেরিনকে কোনো অস্বস্তিতে ফেলতে চাইনা। ইনসিকিওর করতে চাইনা।
বর্ষা : নীড় তুই আমার বন্ধু। তুই , ইমান , আকাশ আমার বন্ধু। ভালোবাসি তোদেরকে আমি। বন্ধু হিসেবে। এর বেশি কিছু ভাবার হলে আরো আগেই ভাবতে পারতাম। প্রেমের ইচ্ছা থাকলে সেটা প্রকাশ করতাম। এতোদিন যখন করিনি তাহলে এখনও তো করবোনা। এটাই ফ্যাক্ট। আর এই ফ্যাক্টটাই মেরিনকেও বুঝতে হবে তোর স্ত্রী হিসেবে। ভরসা করতে হবে তোর ওপর। কিন্তু মেরিন তোর ওপর ভরসা করেনা। ভরসা তো অনেক দূরের কথা। ও তো তোকে ভালোইবাসেনা। ও আজও সেই দাম্ভিক মেরিনই আছে। যার মনে ভালোবাসা নেই।
নীড় : ওর মনে কি আছে কি নেই সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা। আমি বুঝে নিবো। সেটা আমাদের দুজনের ব্যাপার। আর কি যেনো বললি? দাম্ভিক… আমার জীবনসাথীর দম্ভ হবেনা তো কি অন্য কারো হবে? দম্ভ করা ওর অধিকার।

.

পরদিন…
পিটার : কেনো আমাকে আজই ফিরে আসতে বললেন স্যার?
নীড় : কারন আমি অনুভব করেছি যে আমি তোমাকে একটি ভিত্তিহীন কাজের জন্য পাঠিয়েছি। মেরিনের কোনো মিত্র নেই যে ওর মনের কথা জানবে।
পিটার : হয়তো ঠিকই বলেছেন স্যার। তেমন কোনো তথ্য পাইনি। তবে…
নীড় : তবে?
পিটার : তবে কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছি।
নীড় : কোনো তথ্যই অপ্রয়োজনীয় হয়না। কারন সবকিছুর পেছনেই ঘটনা থাকে এবং একটি ঘটনা অন্য ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। বলো।
পিটার : ম্যাম ওখানে কোনো আহতকে রক্তদান করেছিলেন। তার শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত না থাকাতে ডক্টর রক্ত নিতে চায়নি । কিন্তু তার আতঙ্কে ডক্টর বাধ্য হয় রক্ত নিতে। সে অসু্স্থ হয়ে পরেছিলো। রোগীর নামটা জানতে পারিনি। আরো একটু সময় পেলে জানতে পারতাম।
নীড় হসপিটালের নাম জানতে চাইলে পিটার বলল। তারিখও বলল। নীড় হাসলো।
পিটার : হাসছেন যে স্যার?
নীড় : কারন ওই আহত ব্যক্তি আমিই ছিলাম।
পিটার : ওহ।
নীড় : আর কি তথ্য পেলে?
পিটার : ম্যাম শমসের খানের সাথে যতোদিন ইন্ডিয়াতে ছিলেন নিজেদের ফ্ল্যাটেই থাকতেন। ম্যামের কোনো ফ্রেন্ডও নেই। তবুও একদিন রাতে গার্লস হোস্টেলে গিয়েছিলেন। রাতে থেকেছিলেনও। কোনো এক ক্লাসমেটের বার্থডে সেলিব্রেট করতে।
নীড় : তারিখ?
পিটার : মে মাসের ২২ তারিখ।
নীড় : হামম।
পিটারের ফোনটা বেজে উঠলো
পিটার : হ্যালো…

পিটার : বলো।

পিটার : কি?

পিটার : তুমি নিশ্চিত?

পিটার : রাখছি।
পিটার রেখে দিলো।
নীড় : কি হলো পিটার? চমকে উঠলে মনে হচ্ছে?
পিটার : চমকে ওঠার মতোই খবর স্যার।
নীড় : খবরটা কি?
পিটার : নীলা খান জীবীত। হসপিটালে অ্যাডমিট। নেহারিকা নামের এক ভদ্রমহিলা তাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে।
নীড় : পিটার… তুমি কি বলছো সেটা নিজে জানো?
পিটার : ইয়েস স্যার। তবে কতোটা সত্য সেটা তো গিয়েই দেখা যাবে।
নীড় : চলো দেখে আসি এটা আবার কোন নাটক এবং কার নাটক?

.

লিও : কি যা তা বলছো তুমি?
টাইগার : যা তা নয় বস। সত্যি বলছি। ওটা নীলা খান। মানে নীলা চৌধুরীই।
লিও : এটা হতেই পারেনা। প্যান্থার কোথায়? প্যান্থার.. প্যান্থার…
প্যান্থার ছুটে এলো।
প্যান্থার : ইয়েস বস?
লিও : এই টাইগার কি বলছে এসব? নীলা বেঁচে আছে?
প্যান্থার : ইয়েস বস। আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি।
লিও : অসম্ভব। এটা হতেই পারেনা। ষড়যন্ত্র… নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্র। নীড়-মেরিনের প্রতিক্রিয়া কি?
প্যান্থার : ওদের পর্যন্ত খবরটা পৌছেছে কিনা সেটা জানিনা।

.

কিবরিয়া : কি সব বলছো? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?
রকি : নো বস। আমি একদম সত্যি বলছি।
কিবরিয়া : নিজের চোখে দেখেছো?
রকি : দেখিনি। তবে গুপ্তচর খবর দিয়েছে। তাই হলেও হতে পারে।
কিবরিয়া : হতে পারে বলে কিছু নেই। তুমি নিজে গিয়ে দেখো।
রকি : ওকে স্যার।
কিবরিয়া : নামিরার খবর পেলে?
রকি : না স্যার। সম্ভবত কেউ তুলে নিয়েছে। আপনার নাম বলে দিলে?
কিবরিয়া : নামিরা কি আর আমার নাম জানে? যাইহোক , নীলার কাহিনি গিয়ে দেখো।

.

□ : এটা কি করে হতে পারে?
■ : আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
□ : মেরিনের কোনো পরিকল্পনা নয় তো?
■ : এর উত্তর মেরিনই জানে। তবে নীড়েরও তো হতে পারে বা অন্য কারো।
□ : অন্য কারো পর্যন্ত পৌছানোর তো অপশন নেই। তবে মেরিন পর্যন্ত আছে। শমসের খানের কাছ থেকে জানা যেতে পারে।
■ : দেখোনা খোজ নিয়ে।
□ : খোজ তো নিতেই হবে। যেভাবেই হোকনা কেনো। নীলা ফিরে এলে খেলাই ঘুরে যাবে। কিন্তু কোন দিকে ঘুরবে?

.

মেরিন : জন… সময় এসেছে হসপিটালে যাওয়ার। নাটকে প্রবেশ করার।
জন : চলুন ম্যাম।
মেরিন : চলো…
মেরিন চলতে গিয়ে পরে যেতে নমলে জন ধরে ফেলল ওকে। বুঝলো মেরিনের শরীরে জ্বর।
জন : ম্যাম… আপনার শরীরে তো জ্বর।
মেরিন : ব্যাপার না। চলো।
জন : কিন্তু ম্যাম…
মেরিন : চলো জন।

.

চলবে…