#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 42
writer : Mohona
(do not copy please)
.
লিও মনেমনে : ভালো লাগলো। লিও তো সবার মধ্যে এই আতঙ্কটাই দেখতে চায়। আজকে ওয়ার্নিং ছিলো। দ্বিতীয়াবার আর থাকবেনা। সামনে দারিয়ে আছি অথচ ধরতেও পারছোনা।
নীড় : কল করে কেনো আনলে এখানে?
পিটার : আমি তো আপনাকে কল করিনি।
নীড় : তোমার কন্ঠ ছিলো।
পিটার : স্যার সত্যিই আমি কল করিনি। আমি আপনাকে কল করতেই পারিনা। কারন আমার সিমকার্ড হুট করে অফ হয়ে গিয়েছে।কোম্পানিতে গিয়ে জানতে পারলাম যে কেউ সিমকার্ডসহ ফোন চুরি হয়েছে বলে কমপ্লেইন করেছে। সিম উঠিয়েছে। তো স্বাভাবিকভাবেই আমার হাতের সিম অফ হয়ে গিয়েছে।
মেরিন : তাহলে আরাফাতেরটাও সেইম হবে।
নীড় : এমন তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং ক্ষমতা একজনেরই আছে। সে হলো লিও।
মেরিন : কিবরিয়া নয় কেনো?
নীড় : এই পর্যন্ত সবকিছুতে তুমি লিওকে সন্দেহ করেছো। আর আজকে বলছো কিবরিয়া নয় কেনো?
মেরিন : তুমি তীক্ষ্ণবুদ্ধির কথা বললে বলে কিবরিয়ার নাম বললাম। ক্ষমতার দিক দিয়ে অবশ্যই লিও এগিয়ে। চলো যাওয়া যাক। আই থিংক ওকে বাসায় নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে।
নীড় : ভুলে গেলে প্রান আছে বাসায়?
মেরিন : ওহ ইয়েস। এই মেয়েটা এখানেই থাক। চলো।
নীড়-মেরিন চলে যাচ্ছে। হঠাৎ নীড় দারালো। ছদ্মবেশ নেয়া লিওর সামনে দারালো।
মেরিন : কি হলো?
নীড় গভীরভাবে দেখছে।
লিও : এনি প্রবলেম স্যার?
নীড় : আপনার উপস্থিতিই আমার কাছে সমস্যার মনেহচ্ছে। দৃষ্টি থাকবে আপনার ওপর।
লিও : ওকে স্যার। কিন্তু আমার অপরাধ?
নীড় : আমার ক্ষেত্রে আমার আশেপাশের অপরাধীদের অপরাধটা কি সেটা সময় বিচার করে। আর শাস্তি আমি নির্ণয় করি। চলো জান।
নীড় মেরিনকে নিয়ে গেলো।
লিও মনেমনে : জান… তোমার জানের জান নিয়ে নিবো। এরপর তোমার।
.
মেরিন : রাত দেড়টা বাজে। আর তুমি দাবা নিয়ে বসলে। এটা কি নাটক?
নীড়: নাটক নয়। দাবা আমার সমস্যার সমাধান করে। একেকটা চাল একেকটা উত্তর দেয়।
মেরিন : নিজের সাথেই নিজে খেলছো। নিজের প্রতিটি চাল নিজের ভালো ভাবেই জানা হয়ে যায়।
নীড় : বসো । হারিয়ে দাও আমায়।
মেরিন : যে নিজেকে নিজেই এমন জালে জরায় তার সাথে আমি খেলিনা।
নীড় : কি জালে জরিয়েছি নিজেকে?
মেরিন একটা গুটি দিয়ে নীড়কে মাত দিয়ে দিলো।
মেরিন : চেকমেট। ভেবে দেখো।
আরাফাত কল করলো।
মেরিন : এবারও কি মেয়েটার গায়েব হওয়ার খবর দিবে?
আরাফাত : শি ইজ মিসিং ম্যাম।
মেরিন : কিন্তু বাঘ সত্যিসত্যি দ্বিতীয়বারেই এলো নাকি এবারও নাটক?
আরাফাত : সত্যিই কিডন্যাপড।
মেরিন : আমি আসছি।
নীড় : এই রাতে কোথায় যাচ্ছো?
মেরিন : হসপিটালের মেয়েটি কিডন্যাপড।
নীড় : আমিও যাচ্ছি চলো।
দুজন পৌছালো হসপিটালে। নীলা মিসিং।
নীড় : ওই ডক্টরটি কোথায়?
ডক্টর : কোন ডক্টর?
নীড় : তখন যার সাথে কথা বলে গেলাম।
ডক্টর : জানিনা।
নীড় : লিও… ড্যাম সিওর যে ওটা লিও ছিলো।
মেরিন : এতোই যখন সিওর তখন ধরলেনা কেনো?
নীড় : আরে বাবা এখন মেয়েটি কিডন্যাপ হওয়াতে নিশ্চিত হলাম।
মেরিন : শত্রুকে ধরার জন্য সন্দেহের অস্ত্রই যথেষ্ট। বুঝলে?
নীড় : প্লিজ চুপ। ওটা কি?
মেরিন : লিওর লোগো ।
নীড় : চিঠি রাখা।
‘নীড় , তোমার জানের জান নিয়ে নিবো। মেরিন , তোমার দুর্বলতার দুর্বলতাকে শেষ করবো। দুজনের নাকের নিচ থেকে নিয়ে গেলাম।’
নীড় : ধ্যাত তেরিকি।
মেরিন মনেমনে : প্ল্যান সাকসেসফুল। লিও… এবার তুমি না। আমি সফল হয়েছি। এখন বুঝতে পারবো যে তুমি আমার পেয়ারের জিজু নাকি নও।
নীড় : পিটার… তোমার সুরক্ষা বলয় ছিলো। হতাশ করলে আমাকে।
পিটার : সরি স্যার।
মেরিন : আমার মনেহয় ওটা ডুপ্লিকেট ছিলো। যেই ডিএনএ টেস্ট করতে দেয়া হলো ওমনিই গায়েব। মনেহয়না কিডন্যাপ করেছে।
নীড় : লিওর লোগো এখানে।
মেরিন : লিও যে আমাদের শত্রু সেটা সবাই জানে। তাই যে কেউই সুযোগ নিতে পারে। চলো বাসায় চলো।
.
পরদিন…
মেরিন : কি খবর জন?
জন : পজিটিভ ম্যাম।
মেরিন : নাইস। এখানেও পজিটিভ।
জন : লিও-ই কি করেছে কাজটা?
মেরিন : হ্যা। তুমি প্রমান নিয়ে ফিরলে বুঝতে পারবো নীড় আহমেদ চৌধুরীর কথার দাম কতো। না হলে আমার পিস্তল তো আছেই।
জন : ম্যাম… সবকিছুর মূলে তো আছে কিবরিয়া।
মেরিন : নীড়কে হারিয়ে দেই। এরপর কিবরিয়াকে ধরবো। আর লিও যদি জানে বা বোঝে যে জিনিয়ার পেছনে কিবরিয়া আছে অথবা নীলাকে মানে জিনিয়াকে কিবরিয়া আটক করে রেখেছিলো তাহলে কিবরিয়াকে পাতাল থেকে বের করবে।
জন : হামম। তবে ম্যাম , মনেহচ্ছে আমাদের ভাবনার অগোচরে , আমাদের জানার বাহিরে অনেককিছু আছে।
মেরিন : হামম।
জন রেখে দিলো। মেরিনের দৃষ্টি পরলো হাতের আংটির ওপর। যেটা নীড় পরিয়েছিলো। আংটি দেখেই বর্ষার কথা মনে পরলো। বর্ষা বলেছিলো মাঝখানের ৫-৬বছর কিকি ঘটেছিলো সেটা মেরিন জানেনা।
মেরিন : এই আংটি আমি এক্ষনি নীড়কে ফিরিয়ে দিবো।
মেরিন অফিস থেকে বের হয়ে নীড়ের অফিসে পৌছালো। কিন্তু নীড় সেখানে নেই। ম্যানেজার ওকে বসতে বললেও ও এক সেকেন্ডও দেরি না করে বেরিয়ে গেলো।
মেরিন : কোথায় আছে নীড়? বর্ষা যেখানে নীড় সেখানে। আজকে হাতে নাতে ধরবো। আজকে দেখি কি মিথ্যা সাজায়। হ্যালো আরাফাত…
আরাফাত : ইয়েস ম্যাম…
মেরিন : নীড়ের ফোনের লোকেশন দেখো।দেখে জানাও। দ্রুত।
আরাফাত : ওকে ম্যাম।
মেরিন রেখে দিলো।১০মিনিট পর আরাফাত লোকেশন পাঠালো।
মেরিন: এই অ্যাড্রেস তো…
মেরিন দেরি না করে পৌছালো। কিন্তু নীড়ের গাড়ি দেখা যাচ্ছেনা।
মেরিন : নীড় কি বেরিয়ে গিয়েছে? হ্যালো আরাফাত।
আরাফাত : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : নীড় এখন কোথায় আছে?
আরাফাত : সেখানেই আছে যে লোকেশন দিয়েছি।
মেরিন : নীড়ের গাড়ি নেই এখানে।
আরাফাত : কিন্তু সিগন্যাল তো ওখানেই দেখাচ্ছে।
মেরিন : রাখছি।
আরাফাত রেখে দিলো।
মেরিন : গাড়ি নেই এখানে। কিন্তু ফোনের সিগন্যাল আছে। এক মিনিট , কালকে বাসার পেছনে নীড়কে শুরুতে খুজে পাচ্ছিলামনা। পরে খোঁজ পেলাম। এখানেও তাই হবে। ওই দিকটাতে যাই।
মেরিন খুজতে লাগলো।
মেরিন : কেউ আমাকে দেখে না ফেলে বাসার ভেতরে ঢুকলে। আরে ওই পাশে ওটা কি!
মেরিন এগিয়ে গেলো। সুড়ঙ্গের মতো পেলো।
মেরিন : টানেল! দেখতে হয়তো।
মেরিন ধীরপায়ে যাচ্ছে। আজকেও গান লোড করে নিয়ে আগে বারছে। এদিক সেদিক খুজছে। হঠাৎ গুলি চলার শব্দ পেলো।
মেরিন : গুলির শব্দ!
মেরিন ছুটে গেলো। গিয়ে যা দেখলো সেটা বিশ্বাস করতে পারলোনা।
নীড় : মেরিন তুমি!
মেরিন : তুমি কিডন্যাপ করিয়েছো এই মেয়েটাকে?
নীড় : নো নো। এটা হসপিটালের ওই মেয়েটা নয়।
মেরিন : শাট আপ। জাস্ট শাট আপ।
নীলা : উফফ… মেরিন সবসময় এতো শাউট করিস কেনো?
মেরিন : ইউ শাট আপ। ই…
নীলা : অ্যা হ্যা হ্যা… আমাকে বকলো। আমি প্রনয়কে বিচার দিবো। আমাকে তুই বকতে পারিস! বল…
মেরিনের কপালে ভাঁজ পরলো।
মেরিন মনেমনে : এমন করে কথা বলছে কেনো? জিনিয়াতো এমন করে বলেনা। জিনিয়ার চেয়ে শুকনো শুকনো লাগছে।
নীড় : এটা হসপিটালের ওই মেয়েটি নয়। এটা…
মেরিন : এটা আমার আপু। তাইতো বলবে? তুমি ভাবলে কিভাবে যে আমি তোমার কথা বিশ্বাস করে নিবো? এটা হসপিটালের ওই মেয়েটাই । তুমি ওকে বন্দি করে রেখেছো।
নীড় : মোটেও নয়। আমি বন্দি করে রাখলে ওকে শেকলমুক্তি করার জন্য গুলি কেনো চালাবো?
মেরিন : তুমি কি ভেবেছো তোমার কথা আমি বিশ্বাস করে নিবো?
নীড় : ট্রাস্ট মি মেরিন। কিভাবে তোমাকে বোঝাবো?
নীলা : উফফ… খালি ঝগড়া আর ঝগড়া। মেরিন… তোর নাম যন্ত্রণা রাখা উচিত ছিলো।
মেরিন নীলার দিকে তাকালো। নীলা প্রায়ই এই কথাটা বলতো।
মেরিন : তুম…
নীড় ওর মুখের ওপর হাত রাখলো।
নীড় : শসস… কেউ আসছে। আড়াল হতে হবে।
মেরিন : আমি কোথাও যাচ্ছিনা।
নীড় মেরিনের মুখ চেপে ধরে নিয়ে গেলো।
নীলা : এই তোমরা কোথায় যাচ্ছো? এই আমার বোনকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? দারাও দারাও…
☆ : হৈচৈ করছিস কেনো?
নীলা : আর তুমি আমাকে বকতে পারবেনা।
☆ : তোকে আমার বকার , মাইরের হাত থেকে কে বাঁচাবে এখানে? এখানে আমি ভিন্ন কেউ নেই। এটা আমার বন্দি শালা। কেউ বাঁচাতে আসবেনা।
নীলা : ওরা বাঁচাবে । কারন ওরা এসেছিলো।
☆ : কারা এসেছিলো?
মেরিন : আমরা সাসুমম…
নীলিমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। পিছে ঘুরলো।
মেরিন : তোমার বন্দিশালায় স্বাগতম জানাবেনা?
নীলিমা : তোমাকে আমি মেরে মুক্ত করবো।
নীলা : হাহাহা… তুমি কাউকে মারতে পারোনা মামনি। হিহিহি।
নীলিমা ছুরি নিয়ে এক পা মেরিনের দিকে এগিয়ে যেতেই নীড় ওর হাতের দিকে গুলি করলো। নীলিমার হাত থেকে ছুরি পরে গেলো। নীড় প্রকাশ্যে এলো।
নীলিমা : ননীড়…
নীড় : খুব চেষ্টা করেছিলো যেনো আমি না পৌছাতে পারি তুমি পর্যন্ত। বাসার আন্ডারগ্রাউন্ড তো কেবল একটি ধোকা ছিলো। নানুর বাসার পেছনের পরিত্যক্ত স্থানে তুমি নিজের বন্দিশালা বানিয়ে রেখেছো? টর্চার করেছো এই মেয়েটির ওপর?
নীলিমা : বেশ করেছি। বেশ করেছি যে এই নীলাকে আমি বন্দি বানিয়ে রেখেছে , ওকে টর্চার করেছি। আমার ছেলেকে মেরেছে ও। আমার প্রনয়কে আমার কোল থেকে কেরে নিয়েছে।
নীড় : এটা নীলা খান?
নীলিমা : হ্যা হ্যা এটা নীলা খান।
নীড় : অসম্ভব। নীলা খান তো মরে গিয়েছে
নীলিমা : যায়নি। ওই ব্লাস্টে নীলা মরেনি। ওকে আমি বাঁচিয়ে রেখেছি তিলে তিলে মেরে ফেলার জন্য।
মেরিনের মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। কি হচ্ছে এসব?
মেরিন মনেমনে : এটা আপু হতে পারেনা। অসম্ভব। আপু তো মারা গিয়েছে। আপু বেঁচে থাকতে পারেনা। আমি যেমন জিনিয়াকে আপু সাজিয়েছি লিওকে ট্র্যাপে ফেলার জন্য তেমন করে হয়তো নীড়ও এসব পরিকল্পনা করেছে আমাকে ট্র্যাপে ফেলার জন্য। হয়তো এরা লিওর সাথে জড়িত। হয়তো এরা জানে যে লিওই প্রনয়। তাই এতো প্রচেষ্টা। আমি জয়ী হতে দিবোনা নীড়কে। কোনোক্রমেই না।এটা আমার আপু নয়। হতেই পারেনা। আমি কোনো আবেগে ফাঁদে পা দিবোনা। আমি মেরিন বন্যা খান।
মেরিন জ্ঞান হারালো।
নীলা : মেরিন…
নীড় : জান…
নীলা : হাহাহা… মেরিন পরে গিয়েছে। মেরিন মরে গিয়েছে। হাহাহাহা। কি মজা কি মজা।
নীলিমা নীলাকে মারলো।
.
মেরিনের জ্ঞান ফিরলো। চোখ মেলেই নীড়কে দেখতে পেলো। ওর হাত নিজের মুঠোয় রেখেছে।
নীড় : জান তুমি ঠিক আছো?
মেরিন নিজের হাত ছারিয়ে নিয়ে ঠাস করে থাপ্পর মারলো নীড়কে।
মেরিন : কি মনে করো তুমি নিজেকে? হামম? মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবে? সবকিছুতে সফল হও বলে এটাতেও হবে? আমি কোনো ইমোশনাল ফুল নই মিস্টার নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন। যেখান থেকে যেকোনো মেয়েকে তুলে নিয়ে আসবে আর আমি আবেগে ভেসে গিয়ে তাকে বোন মেনে নিয়ে দু ফোটা চোখের পানি ফেলবো। আমি মেরিন বন্যা খান।
নীড় : চৌধুরী। মেরিন বন্যা চৌধুরী। তুমি আমার ওয়াইফ তাই তুমি চৌধুরী । মেরিন বন্যা চৌধুরী।
মেরিন : মানিনা এই বিয়ে। মানিনা নিজেকে তোমার স্ত্রী। মানিনা তোমাকে নিজের স্বামী।
নীড় : মানা না মানাতে কিছু যায় আসেনা। আমরা হাজবেন্ড-ওয়াইফ এটাই সত্যি। সবদিক দিয়ে সত্যি।
মেরিন : যদি কাগজে কলমের জোরেই এমন দাবি করতে পারো তাহলে কাগজে কলমেই সব শেষ হবে। আজকেই হবে।
মেরিন উঠে দারালো। নীড় ওর সামনে দেয়াল হয়ে দারালো।
নীড় : এগুলোর কিছুই আমার প্ল্যানড নয়। মামনির যে বন্দিশালা ছিলো সেটা আমি জানতামই না। বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়। সেই সন্দেহের জোরেই আমি ওই পর্যন্ত গিয়েছি। আর ওই মেয়েটা কোনো ডুপ্লিকেট নয়। ওটা তোমার নিজের বোন। তোমার আপু নীলা খান।
মেরিন : শাট আপ। ওটা আমার আপু নয়।
নীড় : আমি বলছি ওটাই তোমার আপু। বুঝেছো?
মেরিন : এই বললে যে তুমি এই বিষয়ে জানতেনা আমার গ্যারান্টিও দিচ্ছো যে ওটা আমার আপু।
নীড় : হ্যা দিচ্ছি। কারন চিনতে পারার ক্ষমতা আমার আছে। আমার দৃষ্টি অতোটা দুর্বল নয়।
মেরিন : রিয়েলি? এই কারনে গ্যারান্টি দিচ্ছো নাকি নিজেই এতো বছর বন্দি করে রেখেছো বলে গ্যারান্টি দিচ্ছো? নাকি এতোবছর ধরে ভোগ করেছো বলে গ্যারান্টি দিচ্ছো?
নীড় : মেরিন…📢
নীড় ঠাস করে মেরিনকে একটা থাপ্পর দিলো।
মেরিন : কষ্ট লাগলো? হামম? যে কাজটা আমরা করি সেটা চোখের সামনে সত্য হিসেবে তুলে ধরলেই এমন করে রাগ হয়। কারন আমরা জানি আমরা এটা করেছি। আর যদি মিথ্যাটাকে সত্যি মনে করে এভাবে বলা হয় তাহলে এমন রাগ হয়না। কারন আমরা জানি যে আমরা সেটা করিনি।
নীড় : তুমি এই কথাটা এই কারনে বলছো তো কারন আমি তোমার চরিত্র নিয়ে শুরুতে যা নয় তাই বলেছি।
মেরিন : আমি কথাটা বলেছি কারন আমাদের সম্পর্কটা ভরসার নয়। আর না আমরা একে অপরের জন্য ভরসারযোগ্য। আর রইলো পরে বন্দিশালার ওই মেয়েটার কথা… সেটাতে জেনেই নিবো যে ওইটা আমার আপু কি না।
নীড় : আমিও বলে দিলাম যে ওইটা নীলা খান। তুমি নিজে ল্যাটেক্স মাস্ক বানিয়ে জিনিয়া নামের মেয়েটির মুখে সেট করে নীলা খান সাজিয়ে এনেছো বলে মনে করছো যে আমিও সেই একই কাজ করেছি।
নীড়ের কথা শুনে মেরিন অবাক হলো।
নীড় : জানি আমি সবটা। লিওকে সামনে আনার জন্য সবটা করেছো সেটাও জানি। জানি বলেই তোমার সাপোর্ট করে গিয়েছি। এটা সত্যিই তোমার বোন। আর আমি নীড়… আমার আলিঙ্গনে কেবল আর কেবল তুমিই এসেছো। বিশ্বাস মন থেকে আসে। সেটা জোর করে করানো যায়না । নিজের মনকে জিজ্ঞেস করো তাহলে উত্তর পেয়ে যাবে।
মেরিন : আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা। ভালোওবাসিনা।
বলেই মেরিন বেরিয়ে গেলো।
.
নীড় : কেনো এমনটা করেছো মামনি? কেনো করেছো?
নীলিমা : হঠাৎ নীলার জন্য এতো মায়া? এতো দরদ?
নীড় : নীলা খানকে নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই। তুমি আমার মেরিনের ওপর হামলা করেছো। ছুরিতে বিষ মিশিয়ে সেটা দিয়ে মেরিনকে আঘাত করেছিলে। সেটাতে আমার সমস্যা। ও আমার জান।
নীলিমা : তোর জান তোর জান নিয়ে নিবে। যেমন করে নীলা নিয়েছিলো প্রনয়ের জান। প্রনয়ও তোর মতো প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। জান জান করতো।
নিহাল : প্রেমে অন্ধ প্রনয় হয়নি। প্রেমে অন্ধ হয়েছিলো নীলা। তাই প্রনয়ের মিথ্যা ভালোবাসাকে সত্যি মনে করেছিলো। নিজের পরিবারকে ত্যাগ করে এখানে এসেছিলো। ভালোবাসার বদলে ধোকা পেয়েছিলো।
নীলিমা : তোমরা দুই বাবা ছেলে খান মেয়েদের এতো গুনগান কেনো গাও? খান তোমাদের শত্রু নিহাল। ভুলে গেলে?
নিহাল : কিছুই ভুলে যাইনি। শত্রুতা আছে। যথেষ্ট শত্রুতা আছে। কিন্তু এরমানে এটা নয় যে সাদাকে কালো এবং কালোকে সাদা বলবো। প্রনয় নীলাকে ফাঁসিয়েছিলো। শুরুতে ভালোবাসেনি। পরে বেসেছিলো।
নীলিমা : ওহ… তো এটা বলতে চাইছো যে আমার প্রনয় খারাপ ছিলো। যে নীলাকে ধোকা দিয়েছিলো। তাই নীলা প্রনয়কে মেরে ভালো কাজ করেছে।
নিহাল : আমি সেটা বলছিনা। তুমি নীলাকে অনেক ভালোবেসেছো। অনেক স্নেহ দিয়েছো। তুমি আমার চেয়ে বেশি চেনো নীলাকে। নিজেকে প্রশ্ন করো। বোঝার চেষ্টা করো।
নীলিমা : আমি কিছু বুঝতে চাইনা। আমি কেবল এটা জানি নীলা আমার বড় ছেলের খুনী। সুযোগ পেলে মেরিনও ওই একই কাজ করবে। তাই নীলাকেও মরতে হবে এবং মেরিনকেও।
নীড় : মেরিন পর্যন্ত পৌছাতে হলে তোমাকে আমি পর্যন্ত পৌছাতে হবে। ওকে খুন করা তো দূরের কথা ওর দিকে চোখ তুলে তাকানোর কথা মাথাতেও আনবেনা। মেরিন আমাকে খুন করুক বাঁচিয়ে রাখুক সেটা ওর এবং আমার ব্যাপার। তোমরা কিছু বলবেনা।
নীলিমা : নীলাকে আমি ছারবোনা।
নিহাল : এতো ক্রোধ তোমার যে মেয়েটাকে পাগল বানিয়ে রেখেছো?
নীলিমা : আমি ওকে পাগল বানাইনি।
নীড় : যার মানসিক ভারসাম্য নেই তাকে টর্চার করেছো। মামনি , শক্তিশালীরা কখনো দুর্বলের ওপর প্রহার করেনা।
নীলিমা : আমি কোনো নিয়মনীতি বুঝিনা আর বুঝতেও চাইনা। আমি যা করেছি বেশ করেছি। আমার কোনো আফসোস নেই।
বলেই নীলিমা স্থান ত্যাগ করলো।
নিহাল : শত্রুতা যে এমন ভয়ংকর পরিনতি দেয় সেটা জানতাম না। জানো নীড়… স্টুডেন্ট লাইফে কবির সবসময় একটা কথাটা বলতো। বলতো যে শত্রুতা কখনো স্বস্তি দেয়না। অশান্তি দেয়। ও বহুবার বন্ধুত্বের হাত বারিয়েছে। আমি পারিবারিক শত্রুতায় এতো অন্ধ ছিলাম যে বারেবারে কবিরকে ফিরিয়ে দিয়েছি। আমরা বরবাদ হয়েছি। তোমরা হচ্ছো। হয়তো প্রানও এই শত্রুতার ভিক্টিম।
নীড় : প্রানের ভবিষ্যৎ , ওর জীবন আমি এবং মেরিন নষ্ট হতে দিবোনা।
নিহাল : তোমার এবং মেরিনের ভবিষ্যৎ?
নীড় : সেটাও ঠিক থাকবে। নীলা খানের বিষয় এবং চেহারা যেনো প্রানের সামনে না আসে। ও এখনো ছোট। এতো নোংরা খেলা ওর মস্তিষ্ককে বিকৃত করে দিবে। তাই সাবধান।
.
চলবে…
#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 43
writer : Mohona
(do not copy please)
.
নীড় : তাই সাবধান।
নিহাল : একমাত্র প্রানের ক্ষেত্রেই তো আমরা সকলেই একমত। ওর সামনে সত্যি আসবেনা।
নীড় : আর বর্ষার সামনেও যেনো কোনো কথা না হয়।
নিহাল : হামম।
নীড় বের হলো।
নিহাল : কে জানে আর কি কি সত্যি সামনে আসা বাকি আছে? উফফ…
নীড় : মেরিন কোন দিকে গিয়েছে পিটার?
পিটার : খাম বাড়িতে।
নীড় : ড্যাম ইট। মেরিন গিয়ে বিষয়টা শমসের খানকে জানাবে। কে জানে কোন ভাবে খবরটা কিবরিয়া পর্যন্ত যাবে। নীলা খান কোথায় আছে?
পিটার : সুরক্ষিত আছে। ডক্টর চেকআপ করেছে। ব্লাড নিয়ে গিয়েছে টেস্ট করাতে। সময়মতো এমআরআই করানোও হবে।
নীড় : হামম। নীলা খানের সুস্থ হওয়াটা খুব প্রয়োজন পিটার। নীলা খান যদি মেরিনকে না বলে যে সে ভাইয়াকে মেরেছে তাহলে কোনোদিনো মেরিন বিশ্বাস করবেনা। প্রতিশোধ নামক পাথরের নিচে ওর ভালোবাসা চাপা পরে থাকুক সেটা আমি চাইনা।
.
লিও : কি হলো প্যান্থার? কি বলছে ওই মেয়েটি?
প্যান্থার : স্যার… অনেক আতঙ্কে আছে। ভয়ে আছে। বাঁচাও বাঁচাও বলছে।
লিও : কোনো স্টেটমেন্ট নেয়া যায়নি?
প্যান্থার : মানসিকভাবে বিধ্বস্ত মেয়েটি। সম্ভবত আটক ছিলো।
লিও : সম্ভবত দিয়ে কিছু হয়না। আমি নিশ্চয়তা চাই।
প্যান্থার : স্যার সম্পুর্ন চেষ্টা করছি।
লিও : করো করো। দ্রুত করো। ও আসল না নকল জানা প্রয়োজন। নকল হলে কার প্ল্যান সেটা জানা প্রয়োজন। আসল হলে এতোদিন কোথায় ছিলো সেটা জানা প্রয়োজন।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
লিও : গুপ্তচর পাঠাও চৌধুরী বাড়িতে।
প্যান্থার: পাঠানো হয়ে গিয়েছে স্যার।
.
কিবরিয়া : নীলার মতো দেখতে মেয়েটিকে অথবা নীলাকে কি সত্যিসত্যি ওই লিও কিডন্যাপ করেছে? নাকি নীড়-মেরিনের প্ল্যান? লিওর কি শত্রুতা ওদের সাথে? কে এই লিও? শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়। তাই যদি কোনোভাবে লিওর সাথে বন্ধুত্ব করা যেতো… কিন্তু ওই লিও তো অদৃশ্য ব্যাক্তি।
.
শমসের : কি হয়েছে দিদিভাই?
মেরিন : মৃত মানুষ কি ফিরে আসতে পারে দাদুভাই?
শমসেরের কপালে ভাঁজ পরলো।
শমসের : ককি বলছো দাদুভাই? মৃত মানুষ কেনো ফফিরে আসবে?
মেরিন মনেমনে : দাদুভাই তোতলাচ্ছে কেনো?
শমসের : কি হলো দিদিভাই? কি দেখছো এভাবে?
মেরিন : কিছুনা। প্রচন্ড মাথাব্যথা করছে।
শমসের : এই রাহেলা… ম্যাডামের জন্য ব্ল্যাক কফি করে আনো।
রাহেলা : জী স্যার।
রাহেলা রান্নাঘরে চলে গেলো।
শমসের : বসো তো দিদিভাই। বসো।
শমসের খান মেরিনকে বসালো।
শমসের : বলো তো দিদিভাই কি হয়েছে?
মেরিন : এটাই তো কথা যে কি হয়েছে?
শমসের : মানে?
মেরিন : মানে… মানের যে শেষ নেই দাদুভাই। এমন একটা পয়েন্টে দারিয়ে আছি যে না বাঁচার ইচ্ছা আছে আর না মরের যাওয়ার উপায় আছে। প্রানকে এমন অসুস্থ পরিবেশে ফেলে আমি মরতেও পারবোনা।
শমসের : দিদিভাই… প্রানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে। নিজের জন্য ভাবো।
মেরিন : ভাবার কিছু নেই দাদুভাই। আমি আমার নিজের জন্যই সারাজীবন ভেবেছি। যতোদিন নিজের জন্য বেঁচেছি ততোদিন ভালোই ছিলাম। কিন্তু তোমার ছেলে… ওই কবির খান ছোট্ট প্রানকে হাতে তুলে দিয়ে অন্যায় করেছিলো। মায়ায় জরিয়ে গিয়েছি।
শমসের : দিদিভাই , প্রানকে যদি তুমি নিজের হাতে বড় নাও করতে তবুও ওর মায়ায় জরাতে। কেনো জানো? কারন… নীলার বোন তুমি। খালামনি ওর। আগের যুগের মানুষ একটা কথা বলতো। ‘খালা মার চেয়ে ভালা।’ কোনো বাচ্চাকে তার মাবাবার পর সবচেয়ে যে বেশি নিস্বার্থভাবে ভালোবাসে সে হলো খালামনি।
মেরিন : জানিনা দাদুভাই। পৃথিবীর নিয়মকানুন বড্ড অদ্ভুত দাদুভাই।
মনেমনে : দাদুভাইকে কিছু বলা যাবেনা। ভয়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি। দাদুভাইয়ের ভয় পাওয়ার তো কোনো কারন নেই। তাহলে ভয় কেনো পাচ্ছে?
শমসের : তুমি!
নীড় : এটা আমার শ্বশুরবাড়ি। আসতে পারিনা বুঝি? সেভাবে তো শ্বশুরবাড়ি আসাই হয়নি। শ্বাশুরি না থাকলে যা হয় আর কি। যাইহোক , আজকে বাজার করে এনেছি। বউ আমার খুব ভালো রান্না করে।
মেরিন : দাদুভাই , আমি আসছি।
নীড় : কোথাও যাবেনা। আজকে তিনজন মিলে একসাথে খাবো। তুমি জমিয়ে রান্না করো।
শমসের : আমার দিদিভাই কাজ করার নয় কাজ করানোর ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে। আর তাছারাও , বিয়ের পর বাপের বাড়িতে মেয়েরা এসে কাজ করবে সেটা বড্ড লজ্জাজনক।
নীড় : তা ঠিক। কিন্তু আমাদের বাসায়ও বউদেরকে কাজ করানো হয়না।
মেরিন : তোমাদের বাড়ির কথা আর নাই বা বললে। রাহেলা খালা… এগুলো কিচেনে নিয়ে যাও। দাদুভাই আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
মেরিন ওপরে চলে গেলো। নীড় চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।
শমসের : শরবত খেয়ে নাও। অনেক গরম পরেছে।
নীড় হাতে নিলো।
শমসের : নির্ভয়ে পান করো। বাসায় আসা অতিথিকে আমরা হত্যা করিনা। আর তুমি তো বাড়ির জামাই। পরম আত্মীয়।
নীড় শরবতের গ্লাসে চুমুক দিলো।
নীড় : আমাকে নাতজামাই হিসেবে মুখে মেনে নিতে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে সেটা আমি জানি।
শমসের নীড়ের কাধে হাত রাখলো।
শমসের : এটা তোমার ভুল ধারনা। আমার দুই নাতনিই আমার খুব আদরের। আমার কখনো কোনো আফসোস হয়নি আমার নাতি নেই বলে। ওদের সুখের জন্য আমি সব করতে পারি।
নীড় : ওদেরকে বেশি ভালোবাসো বলেই হয়তো আমার প্রতি এতো ঘৃণা।
শমসের : আমি কেনো তোমাকে ঘৃণা করবো?
নীড় : কারন আমি হয়তো নিজের অজান্তে মেরিনের ভালো লাগাকে এমনভাবে বিনষ্ট করে দিয়েছি যে ভালোবাসার সকল অনুভূতিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
শমসের : তুমি কি সব ভুলভাল বলছো নিজে জানো?
নীড় : আমি ঠিক বলছি। আর সেটা তুমিও জানো। তোমার চেহারা বলে দিচ্ছে।
শমসের : এমন ভিত্তিহীন কথা বললে যে কেউই অবাক হবে। হাতমুখ ধুয়ে এসো। জামাই আদর দেখো খানেদের।
.
মেরিন ওয়াশরুমে। নীড় মেরিনের ঘরে এলো।
নীড় মনেমনে : মেরিনের ঘর এটা। এই ঘরে ওর মনের চাবি থাকলেও থাকতে পারে। আমার মন বলছে যে আমিই ছিলাম ওর ভালোলাগা। তবুও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
নীড় খুজতে লাগলো।
মেরিন : কি খুজছো তুমি?
নীড় : আংটিটা কোথাও পরে গেলো। কোথাও খুজেই পাচ্ছিনা।
মেরিন : কি খুজছিলে বলো।
নীড় : এই আঙ্গুলে একটা আংটি থাকে সেটা তুমি জানো নিশ্চয়ই। সেটাই পরে গিয়েছে। খুজছি। প্লিজ হেল্প মি।
মেরিন : আমি তোমার সার্ভেন্ট নই।
নীড় নিজের আংটি খুজতে লাগলো। পেয়েও গেলো।
নীড় : সি…
মেরিন কোনো কথা বললনা। খাওয়াদাওয়া করে ওরা খানবাড়ি থেকে বের হলো। নীড় মেরিনকে নিয়ে সেখানে পৌছালো যেখানে নীলাকে রাখা হয়েছে।
মেরিন : এখানে কেনো নিয়ে এসেছো আমাকে?
নীড় : তোমার আপু আছে এখানে।
মেরিন : ওই মেয়েটা আমার আপু নয়।
নীড় : মেরিন… নিজের মায়ের পেটের ভাইবোনের প্রতি অদ্ভুত এক টান থাকে। ভালোবাসা থাকে। সেই ভালোবাসা সহজাতের আশেপাশে থাকলে অনুভব করা যায়। এসো।
মেরিন : আমাকে আর ইমোশনাল ফুল বানানো সম্ভব নয়।
নীড় : আচ্ছা ঠিক আছে। এসো তুমি।
নীড় মেরিনকে নিয়ে ভেতরে গেলো। নীলা কবিতা বলছে। মেরিন গভীরভাবে দেখছে নীলাকে।
নীড় : এটা তোমার আপু মেরিন।
মেরিন : শাট আপ।
নীড় : আমার পরিকল্পনা নয় এগুলো মেরিন। আমি কেনো আমার মামনিকে দোষী বানাবো?
মেরিন : সেটা তুমিই জানো।
নীড় : তুমিও না।
তখন পিটার এলো।
নীড় : মেডিকেল বোর্ড বসানোর কথা বলেছো ডক্টর বাসুকে?
পিটার : ইয়েস স্যার।
মেরিন : নিজের ভাইয়ার খুনীকে সু্স্থ করার জন্য মেডিকেল বোর্ড বসিয়েছো। এরপরেও বলবে এটা মেনে নিতে যে এটা আমার আপু। হ্যাহ…
নীড় : নীলা খানকে আমি নীড় সুস্থ করবো। এরপর শাস্তি দিবো। আমি নীড় অসুস্থ দুর্বলের ওপর হাত তুলিনা।
নীড় পিটারের সাথে কথা বলতে লাগলো।
মেরিন নীলাকে দেখছে আর ভাবছে : আমারও তো মনেহচ্ছে যে এটা আপু। আমার মনও বলছে যে এটা আপু। কিন্তু এই মুহূর্তে যে অবস্থায় আছি সেখানে দারিয়ে আবেগ-অনুভূতিকেও বিশ্বাস করা যাবেনা। এরাও ধোকা দিতে পারে। মাথার চুল নিতে হবে কৌশলে। টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ এলে বোঝা যাবে। কে বলতে পারে এটা কোনো ক্লোন নয়। ক্লোন হলে তো আপুর সাথে আমার বা প্রানের ডিএনএ মিলবে।
মেরিন নীলার ঘরে ঢুকলো। ও আবোল তাবোল কথা বলছে।
নীড় : পিটার… খান বাড়িতে নজর রেখো। বেশিতো পারিনি তবে ২টা স্পাই ক্যামেরা রেখে এসেছি। কারন ২টাই স্পাই ক্যামেরা ছিলো আমার কাছে। সামথিং ইজ ফিশি। কিছু তো একটা আছে বা ঘটছে ওই বাড়িতে। যেটা সম্পর্কে মেরিন অবগত নাও থাকতে পারে।
পিটার : স্যার… ম্যামের অগোচরে ওই বাড়ির একটা পাতাও পরেনা।
নীড় : হ্যা এটাও ঠিক। যাইহোক… ক্যামেরার ফুটেজ তো আমি দেখবোই। তুমিও তোমার মতো করে চেষ্টা করো।
পিটার : ইয়েস স্যার।
মেরিন নীলার মাথার চুল নিয়ে নিলো। নীড় মেরিনকে নিয়ে বাসায় ফিরলো। প্রান্তিক ছুটে এলো ওদের দিকে।
প্রান্তিক : মামমাম… দীদু না ঘর থেকে বের হচ্ছে না। কতো ডাকছি।
নীড় : দীদুর জ্বর এসেছে তো। তাই দূরে।
প্রান্তিক : ও…
বর্ষা : কিন্তু আন্টি তো…
নীড় চোখ গরম করে তাকালো বর্ষার দিকে। বর্ষা চুপ হয়ে গেলো।
মেরিন : যাই মামনির জন্য ঔষধ নিয়ে যাই।
নীড় : মেরিন… তুমি প্রানের কাছে থাকো। আমি যাচ্ছি।
মেরিন : আমিই যাবো। প্লিজ জান…
নীড় মনেমনে : কে জানে মেরিন কি ঘটাবে মেরিন? মামনির খবর আছে।
মেরিন : বাবা… মাস্টার কী প্লিজ।
নিহাল দিলো। মেরিন খাবার এবং ঔষধ নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো।
নীলিমা : তুমি? তুমি আমার রুমে কেনো এসেছো?
মেরিন : আমি যখন ইচ্ছা যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি। কে আটকাবে আমায়?
নীলিমা : তুমি সরে যাও। জানে মেরে ফেলবো তোমাকে।
মেরিন হাহা করে হাসতে লাগলো।
মেরিন : এখানে খাবার আছে। ঔষধ আছে।আমি জানিনা ওই মেয়েটা সত্যিই আমার আপু কিনা? আমি জানিনা সত্যিই ওটা আমার আপু হলে আপুকে তুমিই পাগল বানিয়েছো কিনা? কিন্তু যদি ২টাই তুমি করে থাকো দেন ট্রাস্ট মি বেবি… তোমার লাইফটা আমি হেল করে দিবো। জাস্ট হেল…
নীলিমা : দুই দুইবার আক্রমন করেছি । নিজেকে রক্ষা করতে পারোনি। রক্ষা করেছে আমার ছেলে। আমার ছেলের দাবানলের হাত রেখেও নিজেকে বাঁচাতে পারোনি। শুধু মুখেই বড়বড় বুলি।
মেরিন নীলিমার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো।
মেরিন : মুখ খোলাে।
নীলিমা মেরিনের হাত সরিয়ে দিলো। মেরিন প্লেটটা রেখে নীলিমার গাল চেপে ধরে মুখে খাবার ঢুকালো।
মেরিন : পেছন থেকে হামলা করা খুব সহজ। এটা হায়েনার কাজ। কিন্তু থাবা দেয়া সিংহের কাজ। আমি শিকার হয়েছি না করেছি সেটা আমিই জানি।সে চিন্তা তোমাকে করতে হবেনা। তুমি নিজের কথা ভাবো। প্রানের সামনে একটু স্বাভাবিক থাকো। কয়েকদিনের জন্যই তো পাবে প্রানকে কাছে।
নীলিমা : প্রান কেবল আমাদের হয়েই থাকবে।
মেরিন : কে জানে প্রান কার?
.
পরদিন…
জন : ম্যাম…
মেরিন : বলো।
জন : ম্যাম… ৩দিন… কেবলমাত্র ৩দিনের মধ্যে সব প্রমান হাতে চলে আসবে।
মেরিন : হামম। এখানে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
জন : কি ঘটনা?
মেরিন : আমাদের প্ল্যানে আমাদের মাত দেয়ার চেষ্টা। নীড় আমাদের ডুপ্লিকেট নীলার বিষয়ে সবটা জানতো। সেইম প্ল্যান নিজেও করেছে। দর্শন হয়েছে ওই মেয়েটির সাথে।
জন : নীলা ম্যামের মতো দেখতে?
মেরিন : ইয়েস জন।।ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে এসেছি।
জন : তাহলে টেস্ট করিয়ে ফেলুন।
মেরিন : নো নো জন। যদি এটা নীড়ের প্ল্যান হয়ে থাকে তাহলে ও অপেক্ষায় আছে ডিএনএ টেস্ট করানোর। পাল্টে দিতে পারে। তাই এখন করাবোনা।
জন : হ্যা ম্যাম এটাও ঠিক।
মেরিন : যেটা করবে সাবধানে করবে। কিবরিয়া কিন্তু অনেক ভয়ংকর। নিজের খেয়াল রাখবে।
জন : জী ম্যাম।
মেরিন : যথাসম্ভব ছদ্মবেশে থাকবে। মনে রেখো কঠিন কিছু সহজে পাওয়া গেলে সেটাতে ঝামেলা আছে।
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন রেখে দিলো।
.
নীড় : ওই দুটো মানুষ কে? এই অ্যাঙ্গেল থেকে তো দেখাও যাচ্ছেনা চেহারা। এতো তারাহুরা করে ক্যামেরা ২টা সেট করা হয়েছে যে ভাবনা চিন্তার সময় পায়নি। মেরিনের ক্যামেরাও হয়তো রয়েছে। আকৃতিতে লাগছে কবির ফয়সাল খান এবং কনিকা খান। ২টা ক্যামেরার একটাতে তো উঠবেই। একবার না একবার উঠবেই। এই পাজলগুলো সমাধান করা হলে মেরিনকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো। যেখানে কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু প্রান… না না না। প্রানকে একা ফেলে যাওয়া যাবেনা। উফফ… আমার জানের জন্য কি উপহার নিয়ে যাওয়া যায়? লাল রঙে বড্ড মানায়। সেদিনের সেই লুকটা মাথায় ঘুরছে। লাল শাড়িতে পিস্তল হাতে। কিলার লুক। আলতা… আলতা নিয়ে যাই। সাথে লালগোলাপ।
নীড়ের ফিরতে দেরি হলো। তবুও লালগোলাপ ও আলতা নিয়ে গেলো। মেরিন ঘুমিয়ে আছে। নীড় মুচকি হাসি দিলো। গোলাপটা মেরিনের কপালে ছুইয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিলো। ঘুমের ঘোরেই কাজটা হওয়াতে মেরিনের কপালে ভাঁজ পরলো। আবার মিলিয়েও গেলো। নীড় মেরিনের পায়ের কাছে গিয়ে বসলো। পা থেকে ব্ল্যাংকেট সরালো। পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে চুমু দিয়ে খুব সাবধানে আলতা পরাতে লাগলো। মেরিনের ঘুম ভেঙে গেলো। বালিশের নিচ থেকে পিস্তলটা হাতে নিয়ে দ্রুত উঠে বসলো। দেখে নীড়।
নীড় : রিল্যাক্স। ইটস মি।
মেরিন : কি করছো কি?
নীড় : আলতা পরাচ্ছি।
বলেই নিজের কপালে মেরিনের পা টা নিলো।
মেরিন : নীড়… এটা ঘুমের সময়।
নীড় : তুমি ঘুমাও। আমি খুব যত্নে আলতা পরিয়ে দিবো।
মেরিন পা টা সরিয়ে নিলো।
মেরিন : লুতুপুতু প্রেমে ইন্টারমিডিয়েটের কোনো কিশোরীর সাথে গিয়ে করো। আমি এখন ঘুমাবো।
নীড় মেরিনের পা ধরে টেনে ওকে নিজের কাছে টেনে নিলো।
মেরিন : ককি হচ্ছেটা ককি?
নীড় : সেটাই হচ্ছে যেকারনে তুমি তোতলাচ্ছো। আলতা পরাতে দাও। আলতে পায়ে নূপুর পরে রুমঝুম রুমঝুম শব্দে ছুটবে। আর আমি তোমাকে স্পর্শ করার জন্য ব্যকুল হবো। উফফ… কি অনুভূতি।
মেরিন : সেকেলের অনুভূতি বাস্তবে পরিনত করার জন্য খুবই ছোট্ট গ্রামের সাধারন একটি মেয়েকে বিবাহ করা গিয়ে।
নীড় : কেনো করবো? যেখানে আমার বউয়ের একই অঙ্গে অনেক রূপ সেখানে কোনো এক রূপের নারীকে কেনো বিয়ে করবো?
মেরিন : তুম…
নীড় : আর একবার যদি বিরক্ত করেছো তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা। এন্ড আই মিন ইট।
মেরিন ব্ল্যাংকেট গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলো। নীড় মুচকি হেসে কোলে মেরিনের পায়ে আলতা পরিয়ে দিতে লাগলো।
মেরিন মনেমনে : তোমার এই মনমতলবি আর বেশিদিন চলবেনা নীড় চৌধুরী। আমি তোমাকে বাজিমাত দিয়েই দিবো। আমাকে দুর্বল করতে পারবেনা। আমি তোমাকে এবং তোমার ভালোবাসায় বিশ্বাস করিনা।
নীড় : মেরিন… জানো তো ভালোবাসা অদৃশ্য হয়। অনুভব করা যায় কেবল। আমার কোনো না কোনো কাজে হয়তো তুমি ভালোবাসা খুজে পাবে অথবা অনুভব করবে।
মেরিন কোনো উত্তর দিলোনা।
নীড় : আমি জানি তুমি জেগে আছো।
মেরিন উঠে গেলো। গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
নীড় : আজকে তুমি আমাকে নিশ্চিত করলে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো…
.
পরদিন…
নীড় : কবির ফয়সাল খান , কনিকা খান! হ্যা এরা তো তাই। হ্যালো পিটার… খান বাড়ির ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা। করো।
পিটার : এটাতো অসম্ভব স্যার। মেরিন ম্যাম আমাকে অনুমতি দিবে কেনো?
নীড় : বাড়ির ভেতরে কবির ফয়সাল খান এবং কনিকা খান আছে।
পিটার : কি বলছেন কি স্যার?
নীড় : ইয়েস।
পিটার : স্যার… আগের মতো হলে?
নীড় : তাও ঠিক। রাখছি।
নীড় পৌছালো মেরিনের অফিসে।
মেরিন : তুমি হঠাৎ এখানে?
নীড় : কালকে তোমাদের বাসায় আমার একটা পেনড্রাইভ ফেলে এসেছি। তোমার অনুমতি ছারাতো ঢুকতে পারবোনা।
মেরিন : কি পরিকল্পনা আছে তোমার?
নীড় : তুমি চলো আমার সাথে। আমি একাতো যেতে চাইনি। চলো। জরুরী মিটিং আছে মেরিন। প্লিজ চলো।
মেরিন : চলো… দেখি কিসের পেনড্রাইভ আছে? আদৌ আছে কিনা।
নীড় : ইয়াহ। লেটস গো।
নীড়-মেরিন পৌছালো খান বাড়িতে। দুজনকে দেখে শমসের খান আতঙ্কে পরে গেলো। তার আতঙ্ক তার চেহারায় স্পষ্ট। শমসের খানের চেহারা দেখে মেরিনের খটকা লাগলো।
মেরিন : দাদুভাই… তোমার মুখ এমন লাগছে কেনো?
শমসের খান রান্নাঘরের দিকে বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে।
মেরিন : দাদুভাই… আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি। তোমার মুখ এমন লাগছে কেনো?
শমসের : ককেমন লাগছে?
মেরিন : আতঙ্কে পরে গেলে আমাকে দেখে।
মেরিন কোনো কথা না বলে রান্নাঘরের দিকে গেলো।
নীড় : দাদুভাই… এমন নিকৃষ্ট পরিকল্পনা কার দাদুভাই?
শমসের : কি বলছো তুমি?
নীড় : এখনো জিজ্ঞেস করবে এই কথা? চলো কিচেনে চলো।
নীড় শমসের খানকে টেনে কিচেনে নিয়ে যেতে যেতে
বলল : নিজের ছেলে , ছেলের বউ বেঁচে আছে আর তুমি পৃথিবীর সামনে মেরে দিয়েছো। কেমন মানুষ তুমি?
.
চলবে…
#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 44
writer : Mohona
(do not copy please)
.
নীড় : কেমন মানুষ তুমি?
মেরিন : কি সব পাগলের প্রলাপ বকছো তুমি?
নীড় মেরিনের পাশে দুজন ব্যাক্তিকে দেখতে পেলো।
শমসের : এ বলছে তোমার কবির-কনিকা বেঁচে আছে।
মেরিন : নীড়… তোমার সমস্যাটা কি?
নীড় : আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি। তোমার মাবাবা জীবীত। এই যে পোশাকে ছিলো? নিশ্চয়ই আমাদের আসার খবর পেয়েছিলো।
মেরিন : তোমার সাথে তো আমি পরে কথা বলে নিবো। দাদুভাই… ওরা এই বাসায় কেনো? আর কিভাবে এলো আমার অনুমতি ছারা?
শমসের : দিদিভাই…
মেরিন : ওরা চুরি করেছিলো। হাজবেন্ড কোম্পানিতে ওয়াইফ বাসায়। তোমার ছেলে নিজে বের করেছিলো। তাহলে ওরা এ বাড়িতে কেনো ?
শমসের : ওরা যথেষ্ট শাস্তি পায়। বড্ড অসহায় ওরা।
মেরিন : হোক। চোরের পরিনতি এমনই হয়। গার্ডস… দুজনকে এখন এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে বের করে দাও।
শমসের : দিদিভাই…
মেরিন : কোনো কথা নয়। বের করো দুজনকে।
দুজনকে বের করা হলো।
মেরিন : কাজটা ঠিক করোনি দাদুভাই।
শমসের : সরি দিদিভাই… আসলে।
মেরিন : আমি কোনো সাফাই চাইনা দাদুভাই। তুমিও কথা আড়াল করছো?
নীড় : তোমার মাবাবা বেঁচে আছে সেটাও আড়াল করছে।
শমসের : স্টপ ইট নীড়।। একটু তো মানুষের মতো কথা বলো।
নীড় : একদম নাটক করবেনা। তুম…
মেরিন কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেলো।
শমসের : দিদিভাই দারাও। দিদিভাই…
নীড় : আমার ওয়াইফ তো। আমি সামলে নিবো।
নীড় বেরিয়ে গেলো। মেরিন গাড়ি নিয়ে বাসায় পৌছালো। নীড়ও পৌছালো।
নীড় : মেরিন। তোমাকে আমার কথা শুনতেই হবে। আমি যেটা বলছিলাম সত্যিই বলছিলাম। এই পেনড্রাইভে সব আছে।
মেরিন পেনড্রাইভটা নিয়ে ফেলে দিলো।
মেরিন : গো টু হেল উইথ ইউর প্রুফ।এর আগে ল্যাটেক্স মাস্ক পরিয়ে এনেছিলে। আজকে আবার কি না কি এনেছো আমি দেখবো কেনো? বিশ্বাস করবো কেনো?
নীড় : অবিশ্বাস অবিশ্বাস অবিশ্বাস… আমার ওপর এতো অবিশ্বাস , এতো ঘৃণা নিয়ে আছো কিভাবে? মেরে ফেলতে পারোনা। আমার তো মনেহচ্ছে যে তুমিও এই পরিকল্পনা সম্পর্কে সব জানো। ইনফ্যাক্ট তোমারই প্ল্যান।
মেরিন : তোমার ভাবনায় আমার কিছু যায় আসেনা।
নীড় : ঠিক যেমন এসব বিষয়ে তোমার ভাবনাতে আমার কিছু যায় আসেনা। তুমি মনে করো ওই লিও আমার ভাইয়া সেটাতে আমিও পরোয়া করিনা। আর বিশ্বাসও করিনা।
মেরিন : সত্যি যখন সামনে আসবে সেদিন দেখতে পাবে। তোমাদের মতো আমরা নই।
নীড় : হ্যা নও। কারন তোমরা আমাদের মতো ভালোবাসতে জানোনা। তোমরা ঘৃণাকে সবার ওপরে রাখো। ভালোবাসারও ওপরে।
মেরিন : তোমাদের ভালোবাসার নমুনা তো দেখেছি। তোমার বাবা নিজেই বলেছে যে তোমার ভাইয়া আমার আপুকে বন্দি করে রেখেছিলো।
নীড় : মামনির ওপর অভিমানে বলেছিলো।
মেরিন : ওমনি অভিমানে বলা হয়ে গেলো।তোমার মামনি যে ওই মেয়েটিকে আপু ভেবে বন্দি বানিয়ে রেখেছে এতোবছর ধরে সেটার কি বলবে?
নীড় : তোমার মতো আমি নই যে অন্যায়কে অন্যায় বলবোনা। আমার মামনি অন্যায় করেছে আমি বলেছি। যদিও সে যা করেছে নিজের ছেলেকে ভালোবেসে করেছে। ওই নীলা খান আমার ভাইয়াকে খুন করেছে।
মেরিন : আমার আপু খুন করেনি প্রনয় চৌধুরীকে। বেঁচে আছে তোমার ভাইয়া। যে মরেছে সে অন্য কেউ।
নীড় : বিশ্বাস করিনা আমি।
মেরিন : আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু নিজের ওয়াদা মনে রেখো। প্রমান করে দিবো আমি।
নীড় : প্রমান করতে পারবেনা তুমি। সবটা ভোগাস। আর যদি তোমারটা সত্য হয় তাহলে আমারটাও সত্য।
মেরিন : নিজের সত্যের কথা বলতে এসোনা। সবরকমের খারাপ গুন তোমার মধ্যে আছে। মানব পাচার থেকে শুরু করে বিনা কারনে মানুষ হত্যা সব অপকর্ম তুমি করো। না তোমার চরিত্রের ঠিক আছে না জবানের। সদা সর্বদা মিথ্যা কথা বলো তুমি। পৃথিবীর সবথেকে খারাপ মানুষের কথা বিশ্বাস করা যায় কিন্তু তোমার নয়। তুমি আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ মানুষ। কেউ তোমার কাছে সুরক্ষিত নয়। তুম…
নীড় মেরিনের গাল চেপে ধরে কাছে টেনে আনলো।
নীড় : নিজের মুখে লাগাম দাও। এমন অনেক কিছু বলে ফেলেছো যেটার জন্য আফসোস করতে হবে। আর কিছু বলোনা যেটার জন্য সব হারাতে হয়। প্রমান তো হয়ে যাবে তোমার মাবাবা বেঁচে আছে। যদি তাদের বেঁচে থাকাটা তোমার প্ল্যান না হয় তুমি বড্ড আফসোস করবে। আর আমি চেষ্টা করবোনা তোমার মনে ভালোবাসা জাগানোর। ইটস ওভার। এখন চেষ্টা করার পালা তোমার। সম্ভবত তুমি সফল হবেনা। আমি যখন হইনি তখন তুমিও হবেনা।
বলেই নীড় মেরিনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
মেরিন : আমি কখনো চেষ্টাও করবোনা।
নীড় : ভাগ্য বলা যায়না। তোমার কথায় বুঝলাম আমার প্রতি ভালো লাগা কেনো শেষ হয়েছে। হোস্টেলে এসে জানতে পেরেছিলে যে আমি নারী পাচারের সাথে জরিত তাই ভালো লাগা নষ্ট হয়েছিলো। হ্যা আমি জরিত ছিলাম এবং আছি। কিন্তু খুটিয়ে দেখোনি কারনটা। তুমি জানতে চাওনা। তাই জানালাম না। তোমাকে জানানোর প্রয়োজনবোধও করছিনা। তোমার মতো আমিও আর পরোয়া করবোনা আমাকে নিয়ে তোমার ভাবনা নিয়ে।
বলেই নীড় বেরিয়ে গেলো। মেরিন বিছানায় একটা লাথি মারলো। মাথায় ঘুরছে ভার্সিটির প্রথম দিনের কথা।
[
সেদিন ছিলো ভার্সিটিতে মেরিনের প্রথম দিন। ক্লাসের জন্য যাচ্ছে। গাড়িতে বসে আছে। যেতেযেতে চোখে পরলো পাশের বাইকের ওপর। চমৎকার ওই বাইকটা। রেড সিগন্যাল হওয়াতে মেরিনের গাড়িও থেমে গেলো। বাইকটাও থেমে গেলো।
মেরিন : আইনকে সম্মান করা ব্যাক্তি। রুলস ব্রেকার নয়। হি ইজ নট মাই টাইপ।
ছেলেটা ঘড়ির দিকে তাকালো। পেছনে দেখলো। ছেলেটি পেছনে কি দেখলো সেটা দেখার জন্য মেরিনও পেছনের দিকে তাকালো।দেখছে ৩টা বাইক আসছে। ওর মতোই মডেল। ছেলেটি বাইক স্টার্ট দিলো। ট্রাফিক রুলস ব্রেক করে ছেলেটি বাইক নিয়ে প্রচন্ড বেগে চলে গেলো। ট্রাফিক পুলিশ পিছু নেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু যে বেগে বাইকটা গিয়েছে সেটাকে ধরা যে সম্ভব হবেনা এটা মেরিন বুঝতে পারলো। পেছনের বাইক ৩টা রুলস ব্রেক করতো কিনা মেরিন জানেনা । কারন ততোক্ষনে গ্রীন সিগন্যাল হয়ে গিয়েছে।
মেরিন : দিনের আলোতে বাইক রেস। মিস্টার রুলস ব্রেকার। উফফ… আই লাইক ইট। চেহারাটা দেখা হলোনা। ব্যাপার না। আমার ভালো লেগেছে তো। চোখ জোরা বাইকটাকে ঠিক খুজে নিবে। হলেও হতে পারে আমার টাইপ।
মেরিনের গাড়ি গিয়ে থামলো ভার্সিটিতে। গাড়ি পার্ক করে চলে যাওয়ার সময় সেই বাইকটা চোখে পরলো।
মেরিন : মাই গুডনেস। মিস্টার রুলস ব্রেকার তবে এখানেই আছে। নাইস।
মেরিন ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। তখন শুনতে পেলো ‘আমার সাথে লাগতে এসোনা ডিয়ার। জেতা আমার নেশা। হারতে আমি শিখিনি। বেট লেগেছিলে জয়ী হয়েছি। এই টাকার জন্য বেট লাগিনি। এই কটা টাকা আমার একদিনের খরচা। আকাশ… টাকা গুলো ভিক্ষুকদের বিলিয়ে দে।’
মেরিন দেখলো ছেলেটিকে। ছেলেটি নীড়। নীড় রাহুল নামের একটি ছেলে কলার এক হাত দিয়ে কলার ধরে কথাগুলো বলল।
নীড় : আমি যদি নিয়ম ভাঙি তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ নেই। আই অ্যাম অ্যা ব্যাড বয়। নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষনের সাথে পাঙ্গা নিও না।
মেরিন : ওহ মাই মাই। মিস্টার ব্যাড বয়। সেই জুতু , সেই জ্যাকেট , সেই ঘড়ি। এটাই তাহলে মিস্টার রুলস ব্রেকার। সিওর আমি। ভালো লাগলো। নাম নীড় এবং বর্ষন। আমি বন্যা সে বর্ষন। কুল। ওহ নো… আমার আইকার্ড তো গাড়িতেই রয়ে গিয়েছে।
মেরিন গাড়ির দিকে গেলো। নিজের আই কার্ড নিয়ে ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছে। শমসের খান কল দেয়াতে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। তখন নীড় ওকে দেখলো। প্রথম দেখাতে ওর মেরিনকে ভালো লাগলো।
নীড় : বিউটিফুল…
ভালো লাগার দিনগুলো শুরু হয়েছিলো। নীড় মেরিন সম্পর্কে এবং মেরিন নীড় সম্পর্কে তথ্য দেখছিলো। নীড় জেনে গিয়েছিলো যে মেরিন অনেক রাগী , একরোখা। নীড়ের রাগ সম্পর্কেও মেরিন জেনে যায়। বর্ষা নীড় , ইমান এবং আকাশের ভালো বন্ধু। ওরা ৪জন অনেকদিনের বন্ধু। কিন্তু নীড়ের চারপাশে বর্ষাকে ভালো লাগেনা মেরিনের। জানতে পারে বর্ষার অনুভূতির কথা। নীড় যে ওকে পছন্দ করেনা সেটা জেনে মেরিন খুশি হয়। সেদিন নিজের ক্লাসমেটের জন্মদিনে সেদিন রাতে মেরিন যেতোনা। কিন্তু মেরিন জানতে পারে যে নীড়ের এক ক্লাসমেটেরও বার্থডে। তাই ওরা ছেলে হয়েও চুপিচুপি ছদ্মবেশে যাবে। গিয়ে সেলিব্রেট করবে। এগুলো জেনে মেরিন গিয়েছিলো গার্লস হোস্টেলে। সেদিন রাতে গিয়েই জানতে পারে নীড় সম্পর্কে কথাটা। পরে খোঁজ নিয়ে দেখে যে ঘটনা সত্য। মুহূর্তেই চূর্নবিচুর্ন হয়ে যায় মেরিনের ভালো লাগা। শুরু হয় ঘৃণা। শমসের খানকে আগেই বলেছিলো নিজের ভালো লাগার কথা। এই বিষয়েও সব জানায়।
মেরিন : এমন লোককে আমি ছারবোনা দাদুভাই। একে তো আমি…
শমসের : দিদিভাই… তুমি কোনো ঝামেলা করবেনা। এই বিষয়ে তুমি জরাবেনা। তুমি আমাকে প্রমিস করেছিলে যে তুমি কোনো ঝামেলা করবেনা।
মেরিন : কিন্তু দাদুভাই…
শমসের : কোনো কিন্তু নয়। তুমি আমাকে প্রমিস করেছিলে। এখন কোনো ঝামেলা নয়।
মেরিন : ফাইন। অন্য কোথাও , অন্যকোনো দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।
শমসের : সেটার চেষ্টা তো চলছে।
মেরিন : যা করার দ্রুত করো।
সেই ক্ষোভ থেকে মেরিন নীড়কে ঘৃণা করতে শুরু করে। দিন কাটতে থাকে। ফিনল্যান্ডের ভিসা হয়ে যায় মেরিনের। নীড় যখন ওকে প্রপোজ করে তখন ও নীড়কে চরম অপমান করে। সবটা করে ঘৃণা থেকে। লুজার বলে। মেরিনের দৃষ্টিতে খারাপ কাজ করে এমন সবাই লুজার। প্রপোজ রিজেক্ট করার পর থেকে মেরিন ওকে বরাবর লুজার বলে ডাকে। এই ঘটনার প্রায় ১৫দিন পর মেরিন ফিনল্যান্ড চলে যায়। অপমানিত হওয়ার পর নীড়ও মেরিনকে ঘৃণা করতে শুরু করে।
]
মেরিন : আমি তোমাকে ঘৃণা করি। প্রচন্ড ঘৃণা করি। কখনো , কোনোদিনো তোমাকে ভালোবাসবোনা। নারী পাচার কোনো ভালো উদ্দেশ্যে তো করেনা। এমন ঘৃণ্য কাজ এখনো করছো। ওয়েট ওয়েট… এখনো করে। তাহলে এই মুখোশও তো খুলে দিতে হবে। আইনের আওতায় আনবো। শাস্তি পাবে তুমি। হ্যালো… আরাফাত…
.
সকালে…
মেরিনের ঘুম ভাঙলো। দেখে নীড় সোফায় ঘুমিয়ে আছে।
মেরিন মনেমনে : আহা… সোফায় ঘুমিয়ে আছে। যেনো আমি তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে যাবো। শাস্তি পাবে তুমি।
মেরিন ওয়াশরুমে গেলো। গোসল করে বের হলো। প্রান্তিকের স্কুল বন্ধ। গরমের ছুটি চলছে। মেরিন বের হতেই নীড় ওয়াশরুমে গেলো। নীড় ওর দিকে তাকালোনা। জরুরী মিটিং থাকাতে মেরিন দ্রুত অফিসে চলে গেলো। ব্রেকফাস্ট না করেই চলে গেলো। তবে প্রান্তিককে খাবারই খাইয়ে গিয়েছে। নীড় রেডি হয়ে নিচে গেলো। মেরিন নেই।
নীড় : প্রান… ব্রেকফাস্ট করবে এসো।
প্রান্তিক : মামমাম করিয়েছে তো।
নীড় : সত্যি?
প্রান্তিক : সত্যি সত্যি তিন সত্যি। আমি ব্রেকফাস্ট করেছি। কিন্তু মামমাম করেনি। কল এলো মিটিং এর। মামমাম ব্রেকফাস্ট না করেই চলে গেলো।
নীড় : হামম।
বর্ষা : তুইও কি এখন ব্রেকফাস্ট না করেই চলে যাবি? নাকি বউয়ের সাথে গিয়ে করবে বউয়ের অফিসে।
নীড় : বর্ষা… তুই এমন কেনো করছিস? আয় বস। একসাথে ব্রেকফাস্ট করি।
নীড় বর্ষাকে অন্যকথা বলতে নিয়েছিলো। কিন্তু দেখলো মেরিন দারিয়ে আছে দরজার ওখানে। আসলে মেরিন কেবিনেটের ওপর ফাইল রেখে গিয়েছিলো। সেটাই নিতে এসেছিলো। নিতে এসে নীড়ের বলা কথাগুলো শুনতে পেলো। রিয়্যাক্ট না করে চলে গেলো।
বর্ষা : কি খেলি? কেবল কফি আর একটা টোস্ট? এর থেকে তো না খেয়েই চলে যাওয়া ভালো ছিলো।
নীড় : বর্ষা… তুই আজকাল প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা বলিস এবং বাজে কথা বলিস।
বর্ষা : কি বাজে কথা বললাম?
নীড় : বাংলাদেশে ছুটি কাটাতে এসেছিস। অফুরন্ত সময় আছে। বসেবসে ভাবতে থাক।
বলেই নীড় অফিসে চলে গেলো।
বর্ষা : এই নিজে থেকে ব্রেকফাস্ট করতে চাইলো। আবার নামমাত্র খাবার খেয়ে চলে গেলো। ঘটনাটা কি? নীলিমা আন্টিও মুখ ভারী করে রেখেছে। হয়েছেটা কি?
.
রাত ১টা…
নীড় এখনো ফিরেনি। বর্ষা ঘরের দরজায় নক করলো। মেরিন ভেতরে ঢুকতে বলল।
বর্ষা : নীড় ফিরেনি?
মেরিন : ফিরলে তো দেখতেই পারতে। ও তো কোনো বস্তু নয় যে লুকিয়ে রাখবো।
বর্ষা : তোমার টেনশন হচ্ছে না ? ও এখনো ফিরেনি। ফোনটাও বন্ধ। কল করে খোঁজ তো নাও।
মেরিন : তুমিতো খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছো। পাওনি। সো গুড নাইট।
বর্ষা : তুমি যে… পিটারকেই কল করছি। হ্যালো পিটার…
পিটারের সাথে কথা বলতে বলতে বর্ষা বেরিয়ে গেলো।
মেরিন : অসহ্যকর। এমনিতে এতো সমস্যা তারওপর এই বর্ষা। কোথায় আছে নীড়? নারী পাচার টাইপ কোনো কাজে ব্যস্ত নয় তো? খোঁজ নিতে হবে।
মেরিন জানতে পারলো যে নীড় একটি পাবে আছে। মেরিন গাড়ি নিয়ে বের হলো। পৌছালো পাবে। যতোই নিজেকে বোঝাক যে নীড়ের অপকর্মের প্রমান আনতে গিয়েছে আসলে তো সেটা নয়। ও নীড়ের কেয়ার করে বলে গিয়েছে। গিয়ে দেখে নীড় ড্রিংক করছে। নীড়ের চোখ পরলো মেরিনের দিকে। মেরিনকে দেখে ও বোতলে চুমুক দিলো। একটা মেয়ের হাত ধরে নিয়ে ডান্স করতে লাগলো। ক্লোজ হয়ে ডান্স করছে। মেরিনের পক্ষে দেখা সম্ভব না। ও চলে গেলো ওখান থেকে। মেরিন যেতেই বর্ষা এলো।
বর্ষা : তুই এখানে এসে ড্রিংক করছিস?
নীড় : শাট আপ… তুই… এখানে কেনো এসেছিস? চলে যা…
নীড় বেসামাল হয়ে পরে যেতে নিলো। বর্ষা ধরে ফেলল।
নীড় : ডোন্ট টাচ মি। ছার আমাকে।
বর্ষা : ছেরে দিবো। চল এখন… চল এখান থেকে। পিটার হেল্প মি।
নীড় : লিভ মি…
নীড় জ্ঞান হারালো। বর্ষা-পিটার নীড়কে নিয়ে বাসায় ফিরলো। মেরিন জানালের সামনে দারিয়ে ছিলো। গাড়ি থামতে দেখলো। পিটার সামনে বসে ছিলো। বর্ষা এবং নীড় পেছনে। দুজন মিলে নীড়কে নামালো। পিটার এবং বর্ষার ঘাড়ে হাত রেখে দিয়ে নীড় আসছে। মেরিন গিয়ে দরজা খুলল।
পিটার : ম্যাম…
মেরিন দেখলো বর্ষার লিপস্টিক নষ্ট হয়ে আছে।
মেরিন : ওপরে নিয়ে এসো। বর্ষা… ছারো ওকে।
বর্ষা : পরে যাবে তো। ব্যথা পাবে।
মেরিন : পাক। বেসামাল হওয়াটাও অপরাধ । প্রান আছে বাসায়। বাই চান্স ঘুম ভেঙে গেলে এসব দৃশ্য দেখলে কি প্রভাব পরবে সেটা ভাবেনি? ছারো ওকে। পিটার নিয়ে আসো।
নীড়কে ওপরে নেয়া হলো।
মেরিন : ওয়াশরুমে নাও।
নীড় : ছারো… ছারো। আমি এখন ঘুমাবো। লিভ মি।
নীড় বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো।
পিটার: আসছি ম্যাম…
পিটার চলে গেলো। মেরিন দরজা লাগিয়ে দিলো। চোখের কোনের পানিটা মুছে নিলো।
মেরিন : আই হেইট ইউ…তুমি মানুষ নও। তুমি মানুষরূপী পশু।
ও গিয়ে বিছানায় বসলো।
মেরিন : ওই দিকে সরো। ঘুমাবো আমি। সরো।
মেরিন নীড়কে সরানোর চেষ্টা করলো।
নীড় : ডোন্ট টাচ মি।
মেরিন উঠে চলে গেলো প্রান্তিকের ঘরে। ওর জন্য নতুন ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রান্তিক কখনো নিজের ঘরে থাকে , কখনো দাদু-দীদুর কাছে থাকে , আবার কখনো নীড়-মেরিনের কাছে।
.
পরদিন…
মেরিন : জন… কবে ফিরবে তুমি প্রমান নিয়ে? এতোদিন লাগে? না পারলে বলে দাও যে পারবেনা।
জন বুঝতে পারছেনা যে মেরিন এতো রেগে কেনো আছে?
মেরিন : উত্তর দিচ্ছোনা কেনো?
জন : সসরি ম্যাম। ম্যাম তাহমিদের সার্জারির প্রমান আমার কাছে চলে এসেছে। তবে আমি আরো একটি তথ্য পেয়েছি। এখান থেকে এমন একটি ড্রাগ নেয়া হয়েছিলো যেটা ব্যবহার করলে ১২ঘন্টার মতো স্নায়ুতন্ত্র তেমন থাকে যেমনটা মানুষ কোমায় গেলে হয়। মনেহয় তাহমিদ কখনো কোমায় যায়নি। এটার প্রমানটা বাকি। পরশুর মধ্যে চলে আসবে আশা করি। সেটা পেয়েই চলে আসবো।
মেরিন : যা করার দ্রুত করো। কেয়ামত পর্যন্ত সময় নেই আমার কাছে।
মেরিন রেখে দিলো।
.
পিটার : স্যার… কিছু মনে না করলে একটি কথা জিজ্ঞেস করবো?
নীড় : করো।
পিটার : আপনার এবং ম্যামের মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
নীড় রেগে পিটারের দিকে তাকালো।
পিটার : সসরি স্যার। আসলে আপনি অন্যমনস্ক হয়ে আছেন। কালকে রাতে আপনাকে নিয়ে বাসায় ফেরার পর ম্যামের চোখমুখ ফুলে ছিলো। বোঝাই যাচ্ছিলো যে ম্যাম কাঁদছিলেন। স্যার আমি চাই আপনি সবসময় ভালো থাকুন।
.
৩দিনপর…
মেরিন প্রান্তিকের ঘরেই ঘুমায়। নীড়-মেরিন একে অপরের সাথে কথা বলেনা। প্রান্তিককে মেরিন ঘুম পারিয়েছে। নীড় এলো। ওকে টেনে নিজেদের ঘরে নিয়ে গেলো। মেরিন কোনো বাক্য ব্যয় না করে নিজের এক হাতের ফোন কোমড়ে গুজে রেখে ধরে রাখা হাত ছারানোর চেষ্টা করছে। নীড় ওকে জরিয়ে ধরলো।
নীড় : মেরিন… আমি তোমাকে ভালোবাসি। যাই হয়ে যাকনা কেনো আমি তোমাকে ছেরে থাকতে পারবোনা। আই লাভ ইউ। তুমি আমাকে অপ…
মেরিনের ফোনটা বেজে উঠলো। মেরিন সরে দারালো। হাতে নিলো মোবাইলটা।
নীড় : মেরিন আজকে তুম…
মেরিন : হ্যালো জন…
জন : চলে এসেছি ম্যাম। সব প্রমান নিয়ে।
মেরিন : তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। ডোরবেল বাজাও। সবাই আসবে। আমিও আসছি।
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন মোবাইল রাখলো। নীড়ের দিকে তাকালো।
মেরিন : নিচে চলো নীড়…
বলেই মেরিনের হাত ধরে নিচে নিয়ে যেতে লাগলো। রাতে ডোরবেলের শব্দ পেয়ে নিচে এলো। দরজা খোলা হলো। জন ভেতরে ঢুকলো।
.
চলবে…