প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-৪৮+৪৯+৫০

0
402

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 48
writer : Mohona
(do not copy please)

.

ডক্টর : ২৪ ঘন্টা।
মেরিন : হামম। ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনাকে কাজ করতে হবে কতোক্ষন?
ডক্টর : মানে?
মেরিন : এই প্রসেসে আপনাকে এবং আপনার টিমকে যতোক্ষন কাজ করতে হবে ততোক্ষন সময় বাদে আপনারা আমার হেফাজতে থাকবেন।
ডক্টর : আপনি কে?
মেরিন : এই লোগোটা দেখতে পারছেন না? এল… মানে লিও গ্যাং এর সদস্য। আমি গ্যাংস্টার লিওর পিএ। টাইগরেস। তথ্য যদি বাহিরে যায় বিশেষ করে ওই নীড় অথবা মেরিনের কাছে যদি যায় তাহলে বংশ নির্বংশ করে দিবো।
ডক্টর এবং তার টিম ভয়ে ঢোক গিলল।
মেরিন : ভয়… ভয় পেতে দেখে ভালো লাগলো। কিন্তু মুখে তো স্বীকার করলেননা যে বাহিরে যাবেনা এই তথ্য।
ডক্টর : বাহিরে তো বাহিরে আমি তো আমার বাসায়ও বলবোনা।
মেরিন : গুড। প্রত্যেক নিজনিজ বাসায় কল করে দাও যে আজকে বাসায় ফিরতে পারবেনা। জরুরী কাজ আছে।
ডক্টর : জী জী অবশ্যই।
সবাই নিজনিজ বাসায় কল করে বলল।
মেরিন : বলা শেষ?
ডক্টর : জী জী।
মেরিন : প্রত্যেকে ফোন দিয়ে দিন।
প্রত্যেকে দিলো।
মেরিন : এই যে কবুতর… কাছে তো আরো একটা মোবাইল আছে। সেটা কে দিবে?
ব্যাক্তিটা নিজের দ্বিতীয় মোবাইলও দিয়ে দিলো।
মেরিন : গুড বয়। সবাই একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো। রিপোর্ট নির্ভেজাল চাই। কোনো ঝামেলা যেনো না হয়।
ডক্টর : ওকে ম্যাম।
মেরিন : শুরু করা হোক।
ডক্টর : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন একটু সরে এলো দরজার দিকে। অল্প একটু কাঁচ দিয়ে দেখলো বাহিরে লিও গ্যাং এর পোশাকধারী।
মেরিন মনেমনে : এরা আরাফাতের টিম নাকি সত্যি সত্যি লিওর গ্যাং সেটা সিওর হতে হবে।
ও আরাফাতকে কল করলো।
আরাফাত : হ্যালো ম্যাম।
মেরিন : তোমরা এখনো যাওনি?
আরাফাত : আমরা তো পৌছে গিয়েছি।
মেরিন : পৌছে তো গিয়েছো। কিন্তু… আমার অ্যাসিস্টেন্ট বলল যে ল্যাবের ভেতরে ঢুকোনি।
আরাফাত : ম্যাম আপনার পারমিশনের অপেক্ষায় ছিলাম।
মেরিন : গুড। তবে ল্যাবে ঢোকার আগে আমি তোমাকে একটি কোড বলছি। তুমি আমার অ্যাসিস্টেন্ট কে বলে ল্যাবে প্রবেশ করবে।
আরাফাত : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : আর শোনো… ভুলেও কেউ নিজের মুখ বের করবেনা এবং ওদেরকে বিশ্বাস করাবে যে তোমরাও লিও গ্যাং এর সদস্য।
আরাফাত : সিওর ম্যাম।
মেরিন : নিজেদের নাম ভুলেও নিবেনা। বন্য প্রানীদের নামে নাম রেখেছো তো?
আরাফাত : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : গুড। কোডটা হলো হারকিউলাস।
আরাফাত : ওকে।
মেরিন রেখে দিলো। আরাফাত দরজা নক করলো। মেরিন খুলে দিলো।
আরাফাত : হারকিউলাস।
মেরিন মাথা নারলো। ওদেরকে ঢুকতে দিলো। ওরা ঢোকার পর বেরিয়ে গেলো মেরিন। গিয়ে গাড়িতে বসলো।
মেরিন : ডিয়ার লিও… সব জায়গায় তোমার গুপ্তচর আছে। কোনো না কোনো ভাবে তোমার কান পর্যন্ত পৌছে যাবে যে লিও গ্যাং এই ল্যাবে এসেছিলো। কিন্তু তুমি তো পাঠাও নি। খোঁজ করবে। এতেই আমার এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। ওই মেয়েটা আপু কিনা সেটাও জানা হবে এবং তোমাকে ট্র্যাপেও ফেলা হবে।
মেরিন পৌছালো মিরর ওয়ার্ল্ডে।

.

বর্ষা : তুমি কিসের মাস্টারমাইন্ড বাবা? মেরিনকে কেনো এখনো খুজে বের করতে পারলেনা?
কিবরিয়া : ওইটা মেরিন। নীলা নয় , প্রনয় নয় এমনকি কবিরও নয়। সাপের মতো নিঃশব্দে চলতে পারে ও।
বর্ষা : সাপের চলারও চিহ্ন থাকে বাবা।
কিবরিয়া : সব জায়গায় না। আর আমাকে যে এই কথাগুলো বলছো তুমি কি করেছো? নীলিমাকে কেনো নিহাল দোষী বলছে , নীড় কেনো মায়ের ওপর রেগে আছে সেটা কেনো বের করতে পারছোনা?
বর্ষা : চেষ্টা তো করছি। কতো করে ওই নীলিমার পেটের মধ্যে ঢোকার। বলছেই না।
কিবরিয়া : আরো একটু চাপ দাও। ঠিক সত্যি কথা বের করবে।
বর্ষা : হামম। নাবিলকে মেরিন বন্দি থেকে ছেরে কেনো দিলো?
কিবরিয়া : সঠিকভাবে বলতে পারছিনা।
বর্ষা : যোগাযোগ করেছো ওর সাথে?
কিবরিয়া : ওর সাথে যোগাযোগ করা মানে মেরিনের ফাঁদে পা দেয়া। হয়তো ও এই কারনেই নাবিলকে ছেরেছে যে নাবিলের সাথে কে বা কারা সংযুক্ত।
বর্ষা : কি চালাক এই মেরিন…
কিবরিয়া : ভয়ংকর বলো।
বর্ষা : হামম। নীড়ও সেটা বলছিলো।
কিবরিয়া : নীড়কে এমন ভাবে নিজের সাথে বন্দি করো যেনো ও চাইলেও তোমার থেকে আলাদা না হতে পারে।
বর্ষা : ওই মেরিনটা গায়েব না হলে এতোদিনে বিয়ে হয়ে যেতো।
কিবরিয়া : ৪টা বিয়ে করা যায়। অসহায় নারীদের বিয়ে করতে হয়। কিন্তু আজকাল কজন মানে এগুলো? যার অধিক বিয়ে করার ইচ্ছা তারা ধর্মকে ভুলভাবে ব্যবহার করে বিয়ে করছে লালসা মেটাতে। কেউ অসহায় সাহায্য করতে দ্বিতীয় বিয়ে করেনা। কামনা মেটাতে করে। নীড়কে বলো ডিভোর্সের অপেক্ষা না করে বিয়ে করতে। মেরিনের সাথে ওর বিয়েটা বিয়ে নয়। আর কবুল বলেও বিয়ে হয়নি। রেজিস্ট্রি করে বিয়ে। কবুল নেই , কালিমা নেই , কাবিন নেই , মালাবদল নেই , শাহনাজার নেই , মুখ দেখাই নেই । বিয়ের সময় তো পছন্দও ছিলোনা কেউ কারো । না পাত্রীর অনুমতি নেয়া হয়েছে। তাই বিয়ের কাতারে থোরিনা এটা পরে? কাগজের বিয়ে। তাই ডিভোর্সের কথা ভাবার প্রয়োজন নেই।
বর্ষা : ঠিক বলেছো বাবা। বিয়েতে দেরি করা যাবেনা। মেরিনের ভরসা নেই। কে জানে কখন কি ঘটনা ঘটায়।

.

পরদিন…
লিও : আমি লোক পাঠালে তুমি জানতেনা প্যান্থার?
প্যান্থার : সরি বস। কিন্তু আপনি তো মাঝেমধ্যে আমাদের না জানিয়েও কিছু কাজ করেন তাই ভাবলাম যে…
লিও : শাট আপ। আমি আলাদাভাবে কিছু করলে সেটা নিজে একা করি। টিম নিয়ে করিনা।
প্যান্থার : সরি বস।
লিও : গো টু হেল উইথ ইউর সরি। লেটস গো।
প্যান্থার : টিম রেডিই আছে।
লিও : তুমি আর আমি আগে যাবো ছদ্মবেশে। টিম যাবে হুট করে।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
লিও মনেমনে : তুমি কে জানিনা। কেনো আমার নাম নিয়ে খেলছো সেটাও জানিনা। কিন্তু যেটা করেছো ঠিক করোনি। এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে। আমার সাথে চালাকি? চালাকি… চালাকিতে মনে এলো… মেরিন করেনি তো এসব? হলেও হতে পারে। নীড় তো মেরিনকে খুজতে ব্যস্ত। মেরিন লুকিয়ে আছে। হয়তো অসুস্থ হয়েছে তাই গোপনে ডক্টরের কাছে এসেছে। চলো প্যান্থার।

.

মেরিন : হ্যালো আরাফাত…
আরাফাত : ম্যাম আপনি কোথায়? কাজ তো প্রায় শেষের দিকে। কখন আসবেন আপনি?
মেরিন : আমি আসতে পারবোনা আরাফাত। খান , চৌধুরী , কিবরিয়া , লিও সবাই মিলে আমাকে খুজছে। আমি কোনোক্রমেই আসতে পারবোনা। কালকে যে গিয়েছিলো আজকেও সে যাবে। ওর কোড রোমিও-জুলিয়েট। কোড বলতে পারলে ভেতরে ঢুকতে দিবে। ওই রিপোর্টটা হাতে নিবে।
আরাফাত : ওকে ম্যাম।
মেরিন : ও রিপোর্ট পাওয়ার সাথে সাথেই বেরিয়ে আসবে সকলে। আর বের হতেই মুখের মাস্ক খুলে ফেলবে এবং লিওর লোগো ওয়ালা ওপরের পোশাক খুলে ফেলবে। ডক্টর মাস্ক এবং কালো চশমা পরে ভিন্ন ওয়ার্ডে যাবে। সকলে আলাদা আলাদা হয়ে যাবে। লিও যেকোনো সময় উপস্থিত হতে পারে।
আরাফাত : জী ম্যাম।
মেরিন রেখে দিলো। ১০মিনিট পর ল্যাবের কাছে গেলো। আরাফাত কোড জানতে চাইলে ও বলল। দ্রুত ভেতরে ঢুকলো।
মেরিন : ভেজাল নেই তো?
ডক্টর : নো নাে।
মেরিন : গুড।
মেরিন ৩টা রিপোর্টই দেখলো। তিনটাই মিলেছে। মেরিন বেরিয়ে গেলো। আরাফাতও টিম নিয়ে বেরিয়ে গেলো। মেরিন নিচে নামলো। বয়স্ক মহিলা সেজে এসেছে। নকল চামরা লাগিয়ে। হসপিটালের প্রবেশপথের ওখানে বসে আছে। মনেহচ্ছে ডক্টর দেখাবে। নিজের সময়ের অপেক্ষা করছে। অনেকজনকে বের হতে এবং প্রবেশ করতে দেখছে। যারা দ্রুত বেগে ঢুকছে তারা জরুরী বিভাগে যাচ্ছে। তাছারা কারো তাড়াহুরো নেই। তখন লিও এবং প্যান্থার ঢুকলো। দ্রুত। ওরা ছদ্মবেশে আছে। বাহিরে ওদের গাড়ি পার্ক করতে দেখেছে মেরিন।
মেরিন মনেমনে : এতো তারাহুরো করে এরা কোথায় যাচ্ছে? এরাই নয় তো? গিয়ে দেখবো ল্যাবের দিকে যায় কিনা? কিন্তু এর মধ্যে আসল লিও ঢুকে গেলে?
কিছুক্ষনের মধ্যেই লিও গ্যাং এর সদস্যরা চলে এলো। পুরো হসপিটাল ঘিরে নিয়েছে। ভেতরেও ঢুকলো। ল্যাবে কোনো তথ্যা না পেয়ে লিও ও প্যান্থার নিচে নেমে এলো। লিওর গ্যাং সবাইকে নরতে চরতে না করেছে। আরাফাতরা সবাই বেরিয়ে গিয়েছে। লিও এবং প্যান্থার আসার আগ পর্যন্ত গ্যাং এর সদস্যরা মাস্ক খুলে খুলে দেখেছে। যাদের গোফদাড়ি আছে তাদের গোফদাড়ি টেনে দেখেছে আসল নাকি নকল। মেরিনকে চেক করে কিছু পায়নি। ওর রিপোর্ট দেখে ছিরে টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন ডাস্টবিনে বিভিন্ন টুকরো ফেলেছে।
মেরিন মনেমনে : লিও গ্যাং সকলের দাড়িগোফ টেনেটেনে দেখলো ওই দুজনেরটা দেখলোনা কেনো? তবে কি এরাই তারা? হ্যা হ্যা হ্যা… তাইতো মনেহচ্ছে।
বাহিরে নীড়ের গাড়ি এসে থামলো।
মেরিন মনেমনে : ওহ নো নীড়…
লিওর লোকেরা ওকেও ঘিরে ফেলল।এরপর ভেতরে নিয়ে এলো। নীড় চারদিকে চোখ বুলালে। মেরিনকে দেখলো।
নীড় মনেমনে : জান জান জান… ওটা তুমিই। যতোই বয়স্কদের মতো নকল স্কিন লাগাও না কেনো লাভ নেই। চোখের ওপরে নিচেও লাগিয়েছো। কিন্তু সিংহের দৃষ্টি রাখার ক্ষমতা নিয়ে হরিণের মতো সুন্দর চোখ তোমারই আছে। লিওর আগমনের খবর পেয়ে ঠিক বুঝেছি যে তুমি কিছু ঘটিয়েছো। হায় আমার জানটাকে তো বুড়ো হলেও সুন্দর লাগবে।

একজন সদস্য রাইনো বলে উঠলো : মিস্টার চৌধুরী আপনি এখানে কেনো?
নীড় : নীড় আহমেদ চৌধুরী কাউকে জবাব দেয়না। শত্রুদেরকে তো কোনোদিনো না।
রাইনো : শেষ করে দিবো উত্তর না দিলে।
নীড় : করবেনা জানি। তোমার বসের এতোদিনের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করে এটা অনুভব করেছি যে তোমাদের হাতে আমাকে মারবেনা। যাইহোক , আমার সময়ের দাম আছে। এই ক্ষতের জন্য ইনেজকশন নিয়ে বের হতে হবে। মিটিং আছে আমার।
রাইনো : যাদের চেকিং হয়েছে তাদের মধ্যে কারো যাওয়ার হলে যেতে পারে।
কেউ ভয়ে উঠছেও না। ২-৩জন উঠে দারালো। তাদের দেখে মেরিনও দারালো। যে সবার আগে দারিয়েছে তাকে আবার চেক করা হলো। মেরিনেরও চেকিং হলো। মেরিন ধীরেধীরে হেটেহেটে বেরিয়ে গেলো।
নীড় মনেমনে : লিও… একদিন তুমি নাকের নিচ থেকে পালিয়েছিলে। আজকে তোমার নাকের নিচ থেকে তোমার শত্রু পালালো। কে জানে মেরিন কেনো এখানে এসেছিলো।
মেরিন মনেমনে : ওই ব্লু ব্লেজার পরা লোকটার চোখের মধ্যে একটা তিল ছিলো। প্রনয় চৌধুরীরও তাই ছিলো। ব্লু ব্লেজার পরা লোকটা গাড়ির বাম দিক দিয়ে বেরিয়েছিলো। হাতে গ্লাভস নেই। নিজেই দরজা লাগিয়েছিলো।পেপার দিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া সম্ভব।
মেরিন লিওর গাড়ির সামনে গিয়ে হাতের মেডিকেল ফাইলগুলো ফেলে দিলো। বোঝালো যে পরে গিয়েছে। সেগুলো তোলার ছলে ফাইলের ওপরে কাগজটার মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নিলো।
রাইনো : এই কোবরা… দেখতো ওই বুড়িটা গাড়ির ওখানে কি করে?
কোবরা বেরিয়ে গেলো।
কোবরা : এই বুড়ি… কি করছিস?
মেরিন : কাগজগুলো পরে গিয়েছে বাবা। তাই তুলছি।
কোবরা : কিসের কাগজ?
মেরিন : ভেতরে না দেখলে বাবা…
কোবরা আবারও নিয়ে দেখলো।
কোবরা : চুপচাপ চলে যা বুড়ি।
মেরিন : আচ্ছা বাবা…
মেরিন ধীরেধীরে বেরিয়ে গেলো।
নীড় মনেমনে : ওই দুটি লোক এতো স্থির কেনো? একদিকে চোখ রেখে দিয়েছে। বাকি সকল সদস্য কিছুক্ষন পরপর তাকাচ্ছে ওই দুজনের দিকে। এদের মধ্যে থেকে যেকোনো একজন লিও নয়তো? হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো কিছুক্ষন অভিজান চালানোর পরে লিও গ্যাং সবাইকে মুক্ত করলো। চলে গেলো। লিও এবং প্যান্থারও সাধারন মানুষের মতো গাড়ি নিয়ে বের হলো। নীড় ওর গাড়িকে ফলো করছে।
প্যান্থার : বস… নীড় ফলো করছে আমাদেরকে।
লিও : বেগ বারাও। ট্রাফিক রুলস ভাঙো।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
কিছুটা পথ গিয়ে দেখে সামনে থেকে পিটার আসছে।
প্যান্থার : বস… পিটার সামনে।
লিও : বা দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে ব্রীজের দিকে যাও।
প্যান্থার সেটাই করলো। ওপর দিক দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ে এলো।
লিও : হেলিকপ্টার…
প্যান্থার : নীড়েরই হবে।
লিও : নো ওয়ারি। ব্রীজে ওঠো। সাতারে কেমন?
প্যান্থার : সাধ্যমতো চেষ্টা করি বস।
লিও : চলবে।
গাড়ি ব্রীজে উঠে গেলো।
লিও : দরজা খুলে রাখো। লাফাতে হবে মাঝ নদীতে।
প্যান্থার : ওকে বস।
লিও : ব্রীজের মাঝে গেলেই আড়াআড়িভাবে গাড়ি দার করাবে। জাস্ট বেরিয়েই লাফাবো।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
ব্রীজের মাঝামাঝিতে পৌছে গাড়ি আড়িআড়ি ভাবে দার করালো। এরপর দরজা খুলে পানিতে ঝাপ দিলো। নীড় নিজের গাড়ি থামালো। আর পিটারও। ছুটে এলো।
নীড় : ড্যাম ইট।
পিটার : স্যার… হেলিকপ্টার আছে তো। ওপর থেকে নজর রাখবে। আমি কমান্ড দিচ্ছি।
নীড় : হামম।
পিটার কমান্ড দিয়ে দিলো।
নীড় : ওরা ডুব সাতার দিবে। ওই যে দেখো ওখানে… লঞ্চ ঘাট। সাতরে চলে গিয়ে ভীরে মিশে যাবে। হেলিকপ্টার কিভাবে দেখবে? দেখে যদি নেয়ও কিছুই করার নেই। ওরা ছদ্মবেশে আছে। খুলে ফেলবে সবটা।
পিটার চুপ হয়ে গেলো।
নীড় : গাড়ি… গাড়িটাকে দেখতে হবে।
পিটার : চলুন স্যার।
ওরা এক পা বারালো।নীড় গাড়ি থেকে টিকটিক শব্দ শুনতে পেলো।
নীড় : ওহ নো পিটার জাম্প…
নীড় পিটারকে নিয়ে জাম্প করলো। সাথে সাথেই লিওর গাড়ি ব্লাস্ট হলো। নীড়-পিটার সাতরে তীরে গেলো।
পিটার : অত্যন্ত ধূর্ত এই লিও। পেরে ওঠা অসম্ভব।
নীড় : আ আ পিটার। কেউ একজন এই অসম্ভব কে সম্ভব করেছে।
পিটার : কে স্যার।
নীড় : তোমাদের ম্যাম।
পিটার : কি করেছে ম্যাম?
নীড় : কি করেছে জানিনা। তবে এই গাড়িটা লিওর দেখে মনেহচ্ছে যে মেরিন লিওর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েছে।
বলেই নীড় হাসলো।

প্যান্থার : বস… ঠিক আছেন আপনি?
লিও : ঠিক আছি আমি। কিন্তু এই নীড়কে আর ঠিক থাকতে দিবোনা। কেরে নেয়া শুরু করো চৌধুরীদের সম্পত্তি। তার আগে তুলে নিবে ওই পিটারকে।
প্যান্থার : ইয়েস বস।

.

জন : কি বলছেন কি ম্যাম?
মেরিন : ইয়েস জন। এই যে এটাতে আছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
জন : তাহলে তো এখনই ম্যাচ করানো প্রয়োজন। তাহলেই তো সবটা ক্লিয়ার হয়ে যায়।
মেরিন : লিও অনেক ধূর্ত জন। ও এখন জাল বিছিয়ে রাখবে। ল্যাবগুলোতে গুপ্তচর রাখবে। তাই এখন না। আমার বিশ্বাস আছে নিজের সন্দেহের ওপর। এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট টেস্ট তো কেবল একটি শান্ত্বনা। তাই ৪-৫দিন পর করাবো টেস্ট। তাও ছোটখাটো কোনো ল্যাবে।
জন : ওকে ম্যাম। আসছি।
মেরিন : চোখ নাক কান খুলে রেখো। হাতপা চালানোর প্রয়োজন যেকোনো সময় পরতে পারে। সবচেয়ে বড়কথা , সাবধানে থেকো।
জন : ইয়েস ম্যাম।
জন চলে গেলো। মেরিন গেলো প্রান্তিকের কাছে। ঘুমিয়ে আছে ও। মেরিন গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
মেরিন : তোমার মাবাবা দুজনই বেঁচে আছে বাচ্চা। অফিশিয়ালি ওরা তোমার অভিভাবক। ওদের অধিকার আছে তোমার ওপর। তোমারও অধিকার আছে নিজের মাবাবাকে কাছে পাওয়ার। আপু বেঁচে আছে এটাতে আনন্দিত আমি। আপুকে সুস্থ করা প্রয়োজন। কিন্তু তোমাকে আমি প্রনয় চৌধুরী এবং নীলা খানের হাতে কিভাবে তুলে দিবো? জানিনা তোমাকে ওদের কাছে না দিতে চাওয়ার মধ্যে কোনো স্বার্থপরতা আছে কিনা! হয়তো আছে তাই দিতে চাইছিনা। তুমি যে আমার খুব প্রিয়।

.

৫দিনপর…
প্যান্থার নাবিল এবং পিটার দুজনকেই কিডন্যাপ করেছে। আসলে পিটার নাবিলকে কিডন্যাপ করতে গিয়েছিলো। প্যান্থার পিটারের পিছু নিয়েছিলো ওকে কিডন্যাপ করতে। এমন ঘটনার জন্য দুজনকেই পেয়ে গিয়েছে।
প্যান্থার : বস… দারুন সংবাদ। নাবিলকেও পেয়েছি।
লিও : এতো দেখি সোনায় সোহাগা। ওকে বনে নিয়ে এসো।
প্যান্থার : বনে কেনো? জঙ্গলে কেনো নয়?
লিও : কে জানে কোনো চাল কিনা? আসল নাকি নকল সেটাও জানা নেই। তুমি নিজে নাবিলকে নিয়ে এসো।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
লিও রেখে দিলো।
প্যান্থার : কোবরা… পিটারকে তোমার দায়িত্বে রেখে গেলাম। যত্নে রেখো। ও নীড় চৌধুরীর বড্ড প্রিয়। ডানহাত বলতে পারো। অনেক তথ্য আছে। খুব যত্নে বের করবে।
কোবরা : ওকে।
প্যান্থার নাবিলকে নিয়ে চলে গেলো।
পিটার মনেমনে : ড্যাম ইট… এখন কি হবে? স্যারকে কিভাবে জানাবো যে আমার বিষয়ে? ভাব পিটার ভাব।

.

পরদিন…
নীড় : ২৪টা ঘন্টা হয়ে গেলো পিটারের কোনো খোঁজ নেই। কোথায় খুজবো ওকে? কেউ কিডন্যাপ করেনি তো? না না না… এমনটা হলেও হতে পারে। আমাকে যেভাবেই হোক ওকে বাঁচাতে হবে। ওর প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে। পিটারের কিছু হতে পারেনা।

.

কিবরিয়া : লাবিব , মেরিন পর্যন্ত পৌছানোর একটি পথ পেয়ে গিয়েছি ।
লাবিব : কি পথ বস?
কিবরিয়া : জন।
লাবিব : জন?
কিবরিয়া : হ্যা জন। মেরিনের খবর আর কারো কাছে থাকুক না থাকুক জনের কাছে আসবেই। তুলে নাও ওকে।
লাবিব : ইয়েস বস।

.

কোবরা : তো পিটার কেমন লাগছে বন্দি দশা?
পিটার : খুব মজাদার।
কোবরা : যোদ্ধারা বন্দি দশাকে মজাদার বলছে দেখে বড়ই অবাক হলাম। হার মেনেছো দেখে ভালো লাগলো।
পিটার : বন্দি হয়ে আছি কিন্তু হার মানিনি।
কোবরা : বন্দিও থাকতে হবেনা। তথ্যগুলো দিয়ে দাও।
পিটার : পিটার মরে যাবে তাও বেইমানি করবেনা।
কোবরা : তাহলে তোর মরে যাওয়াই উচিত।
জন : জীবন মৃত্যু কার হাতে থাকে?
ওরা পেছনে ঘুরলো। দেখে জন।
কোবরা : জন!
জন : ইয়েস।
জন পিটারের হাতের শেকলে গুলি করলো। পিটার মুক্ত হলো । দুই ভাই মিলে শত্রুকে শেষ করলো।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 49
writer : Mohona
(do not copy please)

.

দুই ভাই মিলে শত্রুকে শেষ করলো। বেরিয়ে এলো।
জন : বেশি আনন্দিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তোমার ধ্বংস আমার হাতেই হবে। তাই বাঁচিয়েছি বলে ভাই ভাই খেলার কোনো প্রয়োজন নেই।
পিটার : ভাই হয়ে যদি ভাইকে না চিনি তাহলে কিসের ভাই? রক্তই যে বৃথা। শত্রুতা আমিও ভুলিনা। উপকারের বদলে কোনোদিন উপকার করে নিবো।
জন : চলো নামিয়ে দিচ্ছি তোমায়।
পিটার : আলাদাই যেতে পারবো। একসাথে গেলে অনেকে অনেক কিছু ভেবে নিতে পারে। তাই আলাদা যাওয়াই ভালো।
জন : এটাও ঠিক। তবে তুমি উত্তরে যাও আর আমি দক্ষিনে যাচ্ছি।
দুজন বিপরীত দিকে যাচ্ছে।
লাবিব : ওই তো জন। বাইকে উঠছে। তুলে নাও ওকে।
জনের ওপর জাল ফেলা হলো। একটা না কয়েকটা।
জন : কি হচ্ছে টা কি? কারা তোরা?
জন পিস্তল বের করলো। কিন্তু ওকে বেধে ফেলা হলো। পিটার যেতে যেতে পথে থেমে থাকা এক বাইকের আয়নাতে পেছনের দৃশ্য দেখতে পেলো। পেছনে ঘুরলো।
পিটার : জন…
পিটার নিজের শার্ট দিয়ে মুখটা ঢেকে নিলো। কোবরার পিস্তল ২টা ও নিয়ে নিয়েছিলো। ২হাত দিয়ে গুলি করতে লাগলো। এমন হঠাৎ করে গুলি চলাতে লাবিব এবং ওর দল অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। পিটার দৌড়ে গেলো। লাবিবসহ সকলেই আহত হলো। কিন্তু লাবিব পালিয়ে গেলো। বাকিদেরকে জনপিটার ধরে ফেলল। বন্দি বানিয়ে ফেলল।
জন : এদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কথা বের করতে হবে যে এরা কার লোক।
পিটার : এরা কিবরিয়ার লোক জন। লিও শিকার করায় বাঘের মতো। কিন্তু কিবরিয়া কাপুরুষের মতো হামলা করে।
জন : তুমি নিশ্চিত?
পিটার : শতভাগ নিশ্চিত।
জন : তাহলে এদেরকে কি করবো?
পিটার : হসপিটালে নিয়ে যাবো। বাঁচলে বাঁচবো আর মরলে মরবো।
জন : তু…
পিটার : আমার নাম নিও না। এটাকে গোপন থাকতে দাও। এরা বাই চান্স বেঁচে গেলে , কিবরিয়ার কাছে পৌছে গেলে সমস্যা হবে।
জন : হামম।
পিটার : চলো যাওয়া যাক।

.

পরদিন…
প্রান্তিক : কি হয়েছে মামমাম? তোমাকে এমন লাগছে কেনো?
মেরিন : কেমন লাগছে বাচ্চা?
প্রান্তিক : মন খারাপ দেখাচ্ছে তোমার। তোমার কি মন খারাপ?
মেরিন : না।
প্রান্তিক : তাহলে কি অসুস্থ?
মেরিন : উহু…
প্রান্তিক : তাহলে খাবার খাচ্ছোনা কেনো?
মেরিন : খাচ্ছিতো।
প্রান্তিক : একটু একটু খাচ্ছো। অতোটুকু করে কি কেউ খায়?
মেরিন : আমার আব্বাজানটা একেবারে। একে বারে বুড়ো বাবাটা আমার। তো আব্বাজান কম খাবার খাওয়ার জন্য বকবেন না তো আমায়!
প্রান্তিক : খুব বকবো।
মেরিন : ওরে বাবা… তাহলে তো লুকিয়ে থাকতে হবে। এই আমি লুকালাম।
বলেই মেরিন দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো। প্রান্তিক হেসে দিলো। তখন মেরিনের ফোনটা বেজে উঠলো। জন কল করেছে। মেরিন রিসিভ করলো।
মেরিন : কি খবর জন?
জন : ম্যাম… আপনার ধারনা সঠিক। লিওই প্রনয় আহমেদ চৌধুরী। ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করেছে।
মেরিন হাহা করে হাসতে লাগলো।
মেরিন : প্রসন্ন আমি জন। ধন্যবাদ তোমাকে।
জন : ম্যাম আরো একটি খবর আছে।
মেরিন : কি?
জন : চৌধুরীদের একটি অফিস বন্ধ করিয়ে দিয়েছে লিও আই মিন প্রনয়। নিজের আন্ডারে করে নিয়েছে।
মেরিন : হামম। রাখছি।
মেরিন রেখে দিলো।
প্রান্তিক : মামমাম… তোমার মুখের হাসি দেখতে আমার ভীসন ভালো লাগে।
মেরিন : তোমার হাসি আমার জীবনটা।
মেরিন প্রান্তিককে বুকে জরিয়ে নিলো।
মেরিন মনেমনে : লিওই প্রনয় বলে ও আমার এবং নীড়ের ক্ষতি করতে চেয়েছে। খান-চৌধুরীদের ধ্বংস করতে চেয়েছে। প্রানকে সুরক্ষিতভাবে হাসিল করতে চেয়েছে। নিজের সন্তানকে হাসিল করতে চেয়েছে। খানদের ওপর রাগ আছে বুঝলাম চৌধুরীদের ওপর কিসের রাগ? তারচেয়েও বড় কথা বেঁচে যখন আছে তখন আত্মগোপন কেনো? জীবীতভাবে সামনে এসে প্রানকে নিয়ে যেতে পারতো। তাহলে কেনো এসব?

.

প্যান্থার : একটি অফিস চৌধুরীদের হাত ছারা। সেটা আজ থেকে আপনার।
প্রনয় : হামম।
প্যান্থার চলে গেলো।
প্রনয় : সরাসরি খেলা কেবল শুরু। আর নয় কুতকুত খেলা। যুদ্ধ হবে যুদ্ধ। ভেবেছিলাম কবির ফয়সাল খান মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু বেঁচে আছে। সবাইকে নিঃস্ব করে নিকৃষ্ট মৃত্যু দিবো। কবির ফয়সাল খান… আমাকে হারানোর জন্য , আমার পরিবারকে হারানোর জন্য আমার ডুপ্লিকেট আনিয়েছিলে। আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলে। ছার পাবেনা তুমি এবং তোমার পরিবার। নিহাল চৌধুরী… ছোটথেকে প্রতিশোধ নিতে হবে বলে বলে বড় করেছো। আমিও মূর্খ যে কিনা এইগুলো বুকে ধারন করেছিলাম। এতোটুকুতেই ক্লান্ত হওনি। আমার নীলাকে হত্যা করেছো। ছিঃ… কেমন মাবাবা তোমরা? তোমাদেরকেও শেষ হতে হবে। ধ্বংস হতে হবে। ছেলের খোঁজ পেলাম। কিন্তু আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে জরিয়ে পরার কারনে নিজে যাওয়ার সাহস পাইনি। কারন আমার এই জীবনে প্রতিপদে ঝুকি। ভাবলাম নীড় কাস্টডি পেলে আমার ছেলে সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু এই নীড় আমার নীলার নামে এতোবড় অপবাদ দিলো? ছিঃ… প্রান ওর সন্তান? মৃত ব্যাক্তির নামে অপবাদ দিতে লজ্জা করলোনা? চরিত্রে দাগ লাগাতে লজ্জা করলোনা? তোর জন্য কি না করেছি আমি? পরিশ্রম করে রাজকুমার বানিয়েছি। আর তুই? তুই আমার নীলাকে এভাবে অপমানিত করলি? তোকেও ধ্বংস হতে হবে। যে যে আমার এবং নীলা জীবনকে ধ্বংস করার পেছনে দায়ী তাদের কাউকে আমি ছারবোনা। সে পরিবারের ভেতরে এবং বাহিরের যেখানেরই হোক ধ্বংস করবো। শাস্তি দিবোই। কাউকে ছারবোনা। কিছুতেই ছারবোনা। কিছুতেই না…
প্রনয় সারাঘর তছনছ করে দিলো। শব্দ পেয়ে প্যান্থার , টাইগার ছুটে এলো।
টাইগার : বস… ঠিক আছেন আপনি?
প্রনয় : ঠিক আছি একদম ঠিক আছি।
প্রনয় বেরিয়ে গেলো।
টাইগার : লিও বস খান এবং চৌধুরীদের ওপর কেনো এতো রাগ?
প্যান্থার : সেটা তোমার জানার বিষয়না। নাবিলকে ওই রুমে পাঠাও। পাঠিয়ে বেরিয়ে আসবে। থাকবেনা।
টাইগার : হামম।
নাবিলকে রেখে আসা হলো। নাবিল সাপের অস্তিত্বের আভাস পাচ্ছে।
প্রনয় : তোমার হাতের বন্ধন তো নেই প্রিয় বন্ধু। তাহলে চোখের বাধন কেনো খুলছোনা?
নাবিল অনুভব করলো যে ওর হাতের বাধন নেই। দ্রুত চোখের বাধন খুলল। কিন্তু চোখ মেলে দেখে প্রনয় দারিয়ে আছে।
নাবিল : প্রনয়!
প্রনয় : না। প্রনয় নয়। প্রনয়তো সেই কবেই মরে গিয়েছে। আমি গ্যাংস্টার ডেভিল কিং লিও। যার নামে পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ড কাপে।
নাবিল : তুই বেঁচে আছিস দেখ কি ভালোই যে লাগছে বন্ধু!
প্রনয় ধা ধা করে ওর চারদিক দিয়ে গুলি চালালো।
প্রনয় : বন্ধু হলে এই মুহূর্তে মরবি তুই।
নাবিল : তুই..
লিও : চুপ… একদম চুপ। আমার মনে নীলার নামে বিষ ঢেলে , ওর নামের সাথে চরিত্রহীনার মিথ্যা শিরোনাম ব্যবহার ভুল করেছিস। এর যে কি কি শাস্তি পাবি বুঝে যাবি। খুব শীঘ্রই বুঝে যাবি। তোর জন্য আমি নীলাকে কতোকতো অপমান করেছি। নিজের পরিবারের সামনে , সমাজের সামনে আমি ওকে চরিত্রহীনা বানিয়েছি। তুই ওর চরিত্রে মিথ্যা দাগ লাগিয়েছিস। যেখানে ও পবিত্র ছিলো। মামনি ওকে ভালোবাসতো বলে , নীড় ওর সাপোর্ট করতো বলে ,আমিও বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম বলে তুই আমার চোখে নীলাকে কতোটা নিচে নামিয়েছিলি। আমার কাছে তো খারাপ করেছিস, আমার পরিবারের কাছেও ওকে খারাপ বানিয়েছিস। আমার মন বলছিলো নীলা আমার সন্তানের মা হতে চলেছে। তবুও তুই এমন চাল দিস যে আমি এটা প্রমান করার জন্য ডিএনএ টেস্ট করাই। ভালোবাসার আগে তো ওকে কষ্ট দিয়েছি। আমি তো ভালোবেসেও ওকে কষ্ট দিয়েছি। যেগুলো তোর মাধ্যমে করিয়েছে ওই কবির ফয়সাল খান। আমাকে ভালোবাসার অপরাধে নিজের মেয়ের সাথেও এতোবড় অন্যায় করেছে। তোদের কাউকে আমি ছারবোনা। সব শেষ করে দিবো। সব সব সব…
প্রনয় চাবুক দিয়ে নাবিলকে মারতে লাগলো। যতোক্ষন ওর জ্ঞান না হারালো ততোক্ষন ওকে মারতে লাগলো।

.

বর্ষা : আন্টি… তুমি এভাবে মন খারাপ করে থাকলে আমার যে একটুও ভালো লাগেনা। কি হয়েছে বলো তো? আংকেল তোমার সাথে এমন ব্যবহার করছে কেনো?
নীলিমা : তাদের দৃষ্টিতে আমি ভুল করেছি তাই। যদিও আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমি ভুল করিনি। আমি একজন মা। মা হয়ে যা করেছি ঠিক করেছি। আমার দুই সন্তানই আমার সব। তাই আমার মনেহয় যে যা করেছি ঠিক করেছি।
বর্ষা : অবশ্যই ঠিক করেছো। আমি জানিনা যে কি করেছো বা কি হয়েছে। কিন্তু আমার ভরসা আছে যে তুমি যা করেছো ঠিক করেছো। মায়েরা কখনো ভুল করেনা। আর সন্তানের জন্য তো খুন করাও জায়েজ।
নীলিমার চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো। বর্ষা ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলো।
নীলিমা : মায়েরা ভুল করে কিনা জানিনা। কিন্তু কারো জান নেয়া অন্যায় , কাউকে কষ্ট দেয়া অন্যায় , অসহায়কে কষ্ট দেয়া অন্যায়। আর যদি স্নেহের কাউকে কষ্ট দেয়া হয় তাহলে সেটা অন্যায়ের চেয়ে বেশি যন্ত্রণার। কিন্তু খুনীর তো শাস্তি হওয়া উচিত। সন্তানের খুনীকে শাস্তি মা দিতে পারে। অবশ্যই পারে।
বলেই নীলিমা ওপরে চলে গেলো।
বর্ষা : আন্টি…
মনেমনে : চলে গেলো। কি সব বলছিলো এই নীলিমা? সন্তানের খুনীকে শাস্তি। মানে প্রনয়ের খুনীকে। প্রনয়ের খুনীতো বাবা। সেটাতো এরা জানেনা। এরা জানে যে প্রনয়ের খুনী নীলা। এরমানে নীলিমা নীলার কথা বলছিলো। স্নেহের কাউকে কষ্ট দেয়া যন্ত্রণার। নীলিমা নীলাকে কিভাবে যন্ত্রণা দিতে পারে? নীলাতো মরে গিয়েছে। উফফ… মাথা কাজ করছেনা। নীলা কি তবে বেঁচে আছে? না না। কিসব ভাবছি আমি?
তখন বর্ষার ফোনটা বেজে উঠলো। কিবরিয়া কল করেছে।
বর্ষা : হ্যা বলো।
কিবরিয়া : কয়েকদিন ধরে নাবিলের কোনো খোঁজ খবর নেই। মনটা বড্ড কু ডাকছে। আবার কিডন্যাপ হয়নি তো?
বর্ষা : আবার কে করবে?
কিবরিয়া : নীড়…
বর্ষা : হ্যা হতে পারে। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে ও নিজে থেকে আড়াল হয়েছে।
কিবরিয়া : হতে পারে। কিন্তু কোথাও তো কিছু গন্ডগোল আছে। লাবিব দল নিয়ে গিয়েছিলো জনকে তুলে নিতে কিন্তু কেউ একজন এসে জনকে বাঁচিয়ে নেয়। লাবিব কোনোরকমে পালিয়ে এসেছে।
বর্ষা : আসলেই চিন্তার বিষয়।
কিবরিয়া : নীড় জড়িত নয়তো?
বর্ষা : জানিনা। আর ওকে দোষ দিওনা।
কিবরিয়া : দিবোনা কেনো? এখনো মেরিনকেই খুজে বের করতে পারলোনা।
বর্ষা : ও দিনরাত এক করে মেরিনকে খুজছে। আজকে জ্বরজ্বর লাগছিলো। তবুও বের হয়েছে।

.

২দিনপর…
মেরিন : হ্যালো জন… বলো।
জন : ম্যাম , নাবিলকে লিওই তুলে নিয়েছে।
মেরিন : সেটা তো পুরোনো খবর। নতুনটা বলো।
জন : কালকে নাবিলের লোকেশন এক জায়গায় ট্রেস হয়েছে আজকে অন্য জায়গায়।
মেরিন : করবেই তো। কিডন্যাপ করেছে লিও। ওর পর্যন্ত যেনো সহজে না পৌছাতে পারি তাই গুমরাহ করার চেষ্টা।
জন : তাহলে কিভাবে পৌছাবো ওর পর্যন্ত?
মেরিন : স্থির তো হবেই। এতোদিন ধরে অপেক্ষা করে যাচ্ছি আরো একটু করি। ধীরেধীরে কাজ করাতে সফলতা তো পাচ্ছি। এটাও পাবো।
জন : আচ্ছা ম্যাম।
মেরিন : তুমি সচরাচর বের হয়োনা জন। পিটারকে কিডন্যাপ করেছিলো লিও। তোমাকে কিডন্যাপ করতে এসেছিলো কিবরিয়ার লোক। আবারো চেষ্টা করবে ওরা। হয়তো লিও তোমাকে করবে এবং কিবরিয়া পিটারকে। তাই সাবধান।
জন : জী ম্যাম। ম্যাম একটা বলার ছিলো।
মেরিন : বলো।
জন : নীড় স্যারের জ্বর এসেছে।
মেরিন : তো আমি কি করবো? রাখছি।
মেরিন রেখে দিলো।

.

রাতে…
নীড়ের ধুম জ্বর। উঠে বসতে পারছেনা।
বর্ষা : নীড় কি করছে? জ্বর তো এসেছিলো। যাই গিয়ে দেখে আসি।
বর্ষা নীড়ের ঘরে গেলো। গিয়ে দেখে ও জ্বরে কাপছে।
বর্ষা : নীড়…
ও ছুটে গেলো।। নীড়ের কপালে , গালে হাত দিয়ে দেখে ওর ধুম জ্বর।
বর্ষা : নীড়… তোর দেখি অনেক জ্বর।
নীড় নিভুনিভু চোখে বর্ষাকে দেখলো।
নীড় : লিভ বর্ষা…
বর্ষা : চুপ থাক তুই। কোনো কথা বলবিনা। তোর মাথায় পানি দিতে হবে। এইদিকে মাথা দে।
নীড় নিজের জায়গায় স্থির রইলো।
বর্ষা : তুই না…
বর্ষা পানি নিয়ে এসে রুমাল ভিজিয়ে নীড়ের কপালে ধরলো।
বর্ষা : তোর শরীর , পাত-পা মুছে দিতে হবে। পোশাকটা পাল্টাতে হবে।
নীড় : বর্ষা… লিভ।
বর্ষা : চুপ থাক। রুমালটা আবার ভেজাতে হবে। তোয়ালে নিয়ে আসি। তোর শরীর মোছাতে হবে।
বর্ষা তোয়ালে নিয়ে এলো। নীড়ের শার্টের বোতামে হাত দিলো। নীড় ওর হাত ধরলো।
নীড় : যা করেছিস তার জন্য ধন্যবাদ।
বর্ষা : তুই…
নীড় : বললাম তো…
বর্ষা : দারা তোর জন্য স্যুপ নিয়ে আসছি। খেয়ে ঔষধ খাবি। ১০মিনিট দে আমাকে।
বর্ষা কিচেনে গেলো। কিবরিয়ার কথাটা মাথায় এলো।
বর্ষা : নীড় আমাক হবে। আজকে হবে। ও সারাজীবন আমার হয়ে থাকবে।
বর্ষা একটা ঔষধের মতো বের করলো।
বর্ষা : এটা যাবে স্যুপে। নীড় হবে বেসামাল। হয়ে যাবে আমার।
বর্ষা স্যুপ রান্না করলো। কিছুটা একটা বাটিতে তুলে নিলো। তখন কিছু একটার শব্দ হলো।
বর্ষা : কিসের শব্দ হলো?
বর্ষা শব্দের দিকে গেলো। দেখে জানালা খোলা।
বর্ষা : এই জানালাটা কেনো যে কেউ লাগায়নি?
বর্ষা খোলা জানালাটা লাগিয়ে দিলো। এরপর রান্নাঘরে পৌছালো।
বর্ষা : এই প্যান টা ঢাকা কেনো? আমি কি ঢেকে গিয়েছিলাম? আমি হয়তো ঢেকেছিলাম। যাই স্যুপটা নীড়ের জন্য নিয়ে যাই।
বর্ষা স্যুপ নিয়ে গেলো। ঔষধ খাইয়ে দিলো।
বর্ষা মনেমনে : ব্যস কিছুক্ষনের মধ্যেই মেডিসিন নিজের কাজ করে দিবে।
নীড় : তোকে ধন্যবাদ।
বর্ষা : জ্বরের পোশাক না ছারলে ভালো লাগবেনা।
বর্ষা নীড়ের শার্টে হাত দিলো। অনেকটা কাছে গেলো নীড়ের। শার্টের বোতামগুলো খুলতে লাগলো। নীড় বর্ষার দুই হাত ধরলো।
নীড় : বর্ষা… গুড নাইট।
বর্ষা নীড়ের গালে হাত রেখে স্লাইড করতে করতে
বলল : তোকে একা ফেলে যাবো কি করে? জ্বর তো কমেনি।
নীড় বর্ষার হাত সরিয়ে দিলো।
নীড় : ঔষধ খেয়েছি কমে যাবে জ্বর।
বর্ষা মনেমনে : মেডিসিন তো অনেক স্ট্রং। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কাজ হওয়ার কথা। ২০মিনিট হয়ে গেলো। নীড়ের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছেনা।
নীড় : বর্ষা… আমার ঘুম পাচ্ছে। তুইও গিয়ে ঘুম দে। ট্রাস্ট মি ঠিক আছি আমি। ঠিক হয়ে যাবো।
বর্ষা চলে যেতে বাধ্য হলো।
নীড় : ড্রেসটা চেঞ্জ করা আসলেই প্রয়োজন।
নীড় ওয়াশরুমে গিয়ে পোশাকটা পাল্টে এলো।মুখে হাসিও ফুটলো।

.

৩দিনপর…
শমসের : প্রায় একমাস হয়ে এলো মেরিনের কোনো সন্ধান নেই। খুজে বের করতে পারলেনা এখনো আমার নাতনিকে।
কবির : আমি আকাশপাতাল এক করে খুজছি ওকে। ও তোমার নাতনি। কিন্তু আমারও তো মেয়ে।
কনিকা : মেয়ে কথাটা তোমার মুখে সাজেনা কবির। আমার মুখেও না। জেদী বলে , রাগী বলে ওকে কেবল শাসনই করে গিয়েছি। নীলা নিজের নরম স্বভাবের জন্য অধিক স্নেহ পেয়েছে। কিন্তু যখন প্রয়োজন পরলো তখন সেই মেরিনকেই অস্ত্র বানালাম। ঘৃণা হচ্ছে আমার নিজের প্রতি।
কনিকা কান্না করতে লাগলো।
কবির : কান্না করোনা কনা। প্লিজ কান্না করোনা। তোমার চোখের পানি যে আমাকে দুর্বল করে দিবে।
শমসের : কান্না করোনা বউমা। কান্না তো আমার করা উচিত। আমি আমার দিদিভাইয়ের বিশ্বাস নিয়ে খেলেছি। আমার অপরাধ সবচেয়ে বেশি।
কবির : শান্ত হও তোমরা। শান্ত হও। সব ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হতেই হবে।

.

প্রান্তিক : ও মামমাম… তুমি সকাল থেকে তিনবার বমি করলে। তুমি তো অসুস্থ।
মেরিন : না বাচ্চা ঠিক আছি আমি।
প্রান্তিক : না তুমি ঠিক নেই। আমি কল করছি।
মেরিন : না বাচ্চা কোনো প্রয়োজন ন…
মেরিন আবার ছুটে ওয়াশরুমে গেলো। এসে বসলো। প্রান্তিক ওর পিঠে হাত বুলাতে লাগলো।
প্রান্তিক : কষ্ট হচ্ছে মামমাম?
মেরিন জোর করে মুখে হাসি টেনে বলল না বাচ্চা।
প্রান্তিক : আমি ছোটমানুষ বলে মিথ্যা কথা বলছো। তাইনা?
মেরিন : একদম না। কি খাবে বলো তো?
প্রান্তিক : কিছু খাবোনা। আমি রাগ করেছি।
মেরিন : চিকেন ডোনাটও খাবেনা? আমি তো ভেবেছি একসাথে বসে চিকেন ডোনাট খাবো।
প্রান্তিক : হুহ।
মেরিন : পাগলা বাচ্চা আমার। তুমি খেলা করো। আমি আসছি।
মেরিন রান্নাঘরে গেলো।
মেরিন : দুদিন ধরে শরীরটা কিভাবে যে খারাপ হলো? মাথাটাও ঘুরছে। উফফ… চাইলেই তো এখন আর হুট করে ডক্টরের কাছেও যাওয়া সম্ভব না। তেলটা কোথায়? আবার ওখানে তেলটা রেখেছে। ঢং করে রান্না করতে আসে।
মেরিন তেল নিতে গেলো। পা উচু করে নিতে গেলো। চোখে ঝাপসা দেখছে মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলো। নীড় এসে ধরে ফেলল। মেরিন নিভুনিভু চোখে নীড়কে দেখলো। নীড় ওকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেলো।
প্রান্তিক : চাচ্চু… তুমি এসেছো?
নীড় : ইয়েস লাভ।
প্রান্তিক : মামমামের কি হয়েছে?
নীড় : মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছিলো তোমার মামমাম।
প্রান্তিক : ব্যাথা পেয়েছো মামমাম?
নীড় : তোমার মামমামকে চাচ্চু ব্যাথা পেতে দেইনি। ধরে ফেলেছি।
প্রান্তিক : ভালো করেছো। কিন্তু আমি এখনো তোমার ওপর রাগ। আজকে মামমাম অসুস্থ আর আজকেই তুমি দেরি করে এলে।
নীড় : ভুল হয়ে গিয়েছে লাভ। প্লিজ রাগ করোনা।
প্রান্তিক : রাগ তো করতেই পারিনা। মামমাম বলে অসুস্থ মানুষের ওপর রাগ করতে নেই। তোমারও তো জ্বর এসেছে।
নীড় : এসেছেনা এসেছিলো। তুমি তোমার এই ম্যাজিকাল হাত দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে এসেছো পর সব জ্বর ভয়ে পালিয়েছে।
প্রান্তিক : হিহি।
নীড় : বসার ঘরে তোমার জন্য এতোগুলো গিফ্ট অপেক্ষা করছে। গিয়ে দেখো। আমিও আসছি। ততোক্ষন মামমাম রেস্ট করুক।
প্রান্তিক ছুটে বেরিয়ে গেলো।
নীড় : কালকে বারবার জিজ্ঞেস করলাম যে কি হয়েছে তুমি বললে কিছুনা। ২টা দিন ধরে মুখটা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো যে শরীরটা ভালোনা। কি হয়েছে? কেমন লাগছে?
মেরিন : ঠিক আছি আমি।
নীড় : লাস্ট মিশনটাতে আমরা পার্টনার। তাই এভাবে মুখ ঘুরিয়ে রাখলে হবে কেনো? বলতে হবে তো। চলো ডক্টরের কাছে চলো।
মেরিন : প্রয়োজন নেই।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 50
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : প্রয়োজন নেই।
নীড় মেরিনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।
নীড় : জান… জীবন আমাদেরকে শিখিয়েছে যে আমাদের নিজেদের খেয়াল নিজেদেরকেই রাখতে হবে।
মেরিন : তোমার খেয়াল রাখার জন্য বর্ষা আছে তো।
নীড় মুচকি হাসলো। নিজের হাসিটা থামানোর জন্য নিজের নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো।
নীড় : বউ অন্যকেউ হোক বা মেরিন বন্যা খান হাজবেন্ডকে টন্টতো মারবেই।
মেরিন : মিশনটা কমপ্লিট হওয়ার পর বিয়েটারও সমাপ্তি হবে। ডিভোর্স হবে।
নীড় : হামম। কিন্তু ততোদিনতো তুমি আমার বউ। এটা তো আর অস্বীকার করতে পারবেনা। ততোদিন না হয় আমাকে আমার বউকে ভালোবাসার সুযোগ দাও। চলো ডক্টরের কাছে চলো।
মেরিন : আমার এখন ছদ্মবেশ দেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।
নীড় : কিভাবে থাকবে? শরীরটা যে ভালো নেই। আসার পথে প্রান কল করেছিলো। বলল তুমি তিনবার বমি করেছো। আরো একবার গিয়েছো। তাই ডক্টর সাথে নিয়েই এসেছি।
মেরিন : তুমি ডক্টর কিভাবে নিয়ে আসতে পারো? তোমার এতোটুকু সেন্স নেই? পাগল তুমি? তোমার সাথে হাত মিলানোই ভুল ভয়েছে। তুম…
নীড় মেরিনের ঠোঁটজোর দখল করে নিলো।
নীড় : ভরসা করেছো আমাকে। আমি খারাপ , খুনী হতে পারি। কিন্তু ভরসা করতে পারো। পিটার ডক্টরের চোখ বেধে নিয়ে আসছে। পিটার নিজের মুখেও মাস্ক পরেছে যেনো ডক্টর ওকে না চিনে। আর এই যে মাস্ক দেখছো এটা আমি পরবো।
১০মিনিটের মধ্যে পিটার ডক্টরকে নিয়ে এলো।
ডক্টর : মেরিন বন্যা খান!
মেরিন : না অন্যকেউ।
ডক্টর ভয়ে ঢোক গিলল।
নীড় : আপনাকে মেরিন বন্যা খানের মুখ দেখার জন্য আনা হয়নি। চেকআপ করার জন্য আসতে বলা হয়েছে।
ডক্টর : হামম হামম। দদেখছি।
ডক্টর এগিয়ে গিয়ে বসলো। নীড় পিটারের দিকে তাকালো। পিটার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ডক্টর চেকআপ করলো।
ডক্টর : অস্বাস্থ্যকর কোনো খাবার খাননি। তবুও যখন এগুলো হচ্ছে তখন ২টা সম্ভাবনা রয়েছে। জন্ডিস হতে পারে। যদিও সেটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
মেরিন : আর অন্যটা কি?
ডক্টর : আপনি হয়তো কনসিভ করেছেন। প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আপনার পার্লস রেট তো সেই কথাই বলছে।
মেরিন অবাক চোখে ডক্টরের দিকে তাকালো। নীড়ের মুখে হাসি ফুটলো।
ডক্টর : তবুও প্রেগনেন্সি টেস্ট করিয়ে নিবেন। যেসব টেস্ট করাতে হবে সেগুলো লিখে দিয়ে গেলাম। আমার মতে টেস্টগুলো করে নিশ্চিত হওয়াই ভালো।
ডক্টর ভয়েভয়ে কথাগুলো বলল।
নীড় : এতো সংশয় কিসের?
ডক্টর : সংশয় না। ভয়।
নীড় : কিসের ভয়?
ডক্টর : মেরিন বন্যা খানের সামনে বসে আছি। তার লোকেরা মানে আপনারা ঘিরে রেখেছেন। চোখ বেধে রেখেছেন। বেঁচে ফিরবো না মরে সেটা জানিনা। অতএব ভয় তো করবেই।
নীড় : ভয়ের কোনো কারন নেই। কিছু হবেনা আপনার। তবে যদি আজকের এই কথাটা বাহিরে যায় অর্থাৎ আপনাকে যে কেউ চোখ বেধে এখানে নিয়ে এসেছে এটা যদি কেউ জানতে পারে তাহলে আপনার মুখ আর আপনার পরিবার দেখতে পারবেনা। কথাটা নিজের মধ্যে আমানত হিসেবে রাখবেন ততোদিন আপনাকে নিজের আমানত ভেবে সুরক্ষা দেবো। কারন আপনার জন্য আজকে দারুন একটি খবরের সংকেত পেলাম। চলুন।
ডক্টর বেরিয়ে গেলো।

.

মেরিন অবাক হয়ে আছে। ও কখনো ভাবতেই পারেনি যে এমন ঘটনার স্বাক্ষী ও কখনো হবে। ও কখনো কল্পনাই করেনি যে এমন অনুভূতির আন্দোলন ওর মধ্যে জাগ্রত হবে। দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো। ওয়াশরুমে গেলো। চোখেমুখে পানি দিলো। আয়নাতে নিজেকে দেখলো।
মেরিন : এটা কিভাবে হতে পারে? এটা হতে পারেনা। এটা অসম্ভব।
মেরিন ওয়াশরুম থেকে বের হতেই নীড় ওকে কোলে তুলে নাচতে লাগলো।
নীড় : থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ জান।আই জাস্ট লাভ ইউ।
মেরিন : তুমি এতো এক্সাইটেড কেনো হচ্ছো সেটা বুঝতে পারছিনা।
নীড় মেরিনকে বসালো।
নীড় : নিজের অনুভূতিকে আর কতো আড়াল করে রাখবে? এটা আনন্দের বিষয়। আমি জানি তুমিও আনন্দিত।
মেরিন : নই আমি আনন্দিত।
নীড়ের মুখের হাসিটা মলিন হয়ে গেলো।
মেরিন : অন্য কোনো কারনে হয়েছে শরীর খারাপ।
নীড় : এই টেস্টগুলো করানোর পর পজিটিভ এলে কি করবে তুমি? আমার সন্তান বলে অ্যাবোর্ট করে ফেলবে?
মেরিন : গল্প অতোদূর যাবেইনা। আমি কনসিভ করতেই পারিনা। কারন মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী আমি কখনো মা হতেই পারবোনা। বুঝেছো তুমি?
নীড় জানেনা কি বলবে ও এখন। দেখে মেরিনের চোখে পানি ভাসছে। কতোটা যন্ত্রণা নিয়ে কথাটা মেরিন বলল সেটা ও বেশ বুঝতে পারছে। নীড় লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে মেরিনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।
নীড় : ভবিষ্যৎ কে দেখেছে বলো তো? আর আমার জন্য তুমিই যথেষ্ট। প্রানতো আছেই। ও কি আমাদের সন্তান নয়? হামম? কেবল কি জন্ম দিলেই মাবাবা হওয়া যায়।
মেরিন : তুম…
মেরিন আবারো ছুটে ওয়াশরুমে গেলো। নীড়ও গেলো। মেরিনের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। এরপর ধরেধরে বাহিরে নিয়ে এলো।
নীড় : দেখি বসো এখানে। বসো।
মেরিন বসলো।
নীড় : তোমাকে হসপিটালে নেয়া প্রয়োজন। কি হয়েছে জানাটাও প্রয়োজন। টেস্টগুলো করাতে হবে। বিকালে যাবো। তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
মেরিন : আমি কিছু খাবোনা।
নীড় : খেতেই হবে।
মেরিন : খাওয়া সম্ভব না নীড়। খেলেই বমি হবে।
নীড় : হলে হবে। আমি আছি তো।
নীড় গিয়ে খাবার নিয়ে এলো। মেরিনকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
মেরিন : তুমি এক কাজ করো। প্রানকে নিয়ে চলে যাও।
নীড় : কেনো?
মেরিন : দেখো কি কারনে আমি অসুস্থ সেটাতো জানিনা। ভাইরাসজনিত কোনো রোগ হলে অথবা ছোয়াচে রোগ হলে ওরও হয়ে যাবে।
নীড় : কিচ্ছু হবেনা। রিল্যাক্স।
মেরিন : আবেগ দিয়ে ভেবোনা নীড়। ওর সুস্থ থাকা প্রয়োজন।
নীড় : অবশ্যই প্রয়োজন। তবে আমি বলছিতো তুমি ঠিক হয়ে যাবে। বিকালে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।
মেরিন খাওয়া শেষ হতে না হতেই আবার ওয়াশরুমে ছুটলো। এরপর এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। নীড় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মেরিন ঘুমিয়ে পরলো।
নীড় মনেমনে : যদি এমন করে সারাজীবন তোমার স্বস্তি হয়ে থাকা যেতো… কিন্তু মেরিনের কি হলো? ওর মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী ও কখনো কনসিভ করতে পারবেনা। তাহলে কি হলো ওর? না না না আর দেরি করা যাবেনা। আমার মেরিনের কিছু হতে পারেনা। এখনো তো ওর জীবনটা সাজানোর সুযোগই পেলাম না। আল্লাহ আমার মেরিনের যেনো কিছু না হয়। এই মিশন শেষ করে তো আমি আমার নতুন জীবন শুরু করতে চাই মেরিনের সাথে। মেরিনের কিছু হতে পারেনা।

[
যেদিন বর্ষার সাথে নীড়কে দেখে মেরিন নীড়কে থাপ্পর মারলো সেদিন মেরিন খান বাড়িতে গিয়েছিলো। শমসের খান ভয় পেয়ে গিয়েছিলো মেরিনকে দেখে।
মেরিন মনেমনে : দাদুভাই ভয় পেয়ে আছে কেনো? আমি আসাতে তো খুশি হওয়ার কথা। এক মিনিট… বাড়িতে সেদিন স্ট্যাচু এসেছে দুইটা। কি করি? এখন আমার মাথার ঠিক নেই। চলে যাওয়াই ভালো। ভয় যখন পাচ্ছে তখন ভয়টাকে বারতে দেয়া উচিত।
মেরিন সেদিন চলে যায়।

.

ধীরেধীরে শমসেরের ভয় বৃদ্ধি পেতে লাগলো। আবার যেনো কমেও গেলো। মেরিন ধরতে পারছিলোনা যে কাহিনি কি।
মেরিন : কিছু তো একটা ঘটছে খান বাড়িতে। কিন্তু কি?
মেরিনের ভাবনার মধ্যেই সেদিন নীড় ওর অফিসে আসে খান বাড়িতে যাওয়ার কথা বলতে। কারন ও সিসিটিভি ফুটেজে কবির-কনিকাকে দেখেছিলো। গিয়ে দেখে কেউ নেই। মেরিন বুঝেছিলো যে শমসের খান কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু কবির-কনিকা আছে বা থাকতে পারে সেটা ভাবতেও পারেনি। নীড়ের সাথে ঝগড়া করলেও ওর মনে আশঙ্কা রয়েই যায়। জনকে পাঠায়। পরদিনই গিয়ে জন স্পাই ক্যামেরা রেখে আসে। যেটাতে মেরিন কবির-কনিকাকে দেখতে পায়। বুঝতে পারে যে প্রান্তিকের কাস্টডি ফিরে পাওয়ার জন্যই এই মৃত্যুর মিথ্যা নাটক সাজানো হয়েছিলো। বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তারচেয়েও বেশি রেগে যায়। কিন্তু রাগটাকে নিয়ন্ত্রন করে রাখে।
মেরিন : আমাকে দেশে এনে , চৌধুরীদের হারিয়ে প্রানের কাস্টডি পাওয়ার জন্য এতো বড় খেলা তো? বেশ… প্রানের কাস্টডি আমি নিবো। কিন্তু প্রান খান বা চৌধুরী কারো হবে না। প্রানকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো। সকলের আড়ালে।

.

মেরিন নকল প্রনয়ের রহস্যভেদ করে দেয়। প্রান্তিকের কাস্টডি পেপার বানিয়ে নেয়। নীড়ও মেরিনের কাজের সত্যতা পায়। বর্ষা যে কিবরিয়ার মেয়ে সেটাও জানতে পারে। সাথে জানতে পারে আরো একটি বিস্ফোরক তথ্য। তবে বিস্ফোরক তথ্যটা জানতে পারে বর্ষাকে বিয়ের প্রপোজাল দেয়ার পর। রাতে বাসায় পৌছায়। বর্ষা রুম থেকে বের হবার পর মেরিনের সাথে কথা বলে।

নীড় : কিছু সময়ের জন্য আমার সাথে করা প্রতিযোগিতা পাশে রাখো। কথা শোনো।
মেরিন : আমি তোমার কোনো কথা শুনবোনা। অনেক হয়েছে। সিগনেচার করার হলে করো না করার হলে নেই। কথা আর নেই।
নীড় প্রান্তিকের কাস্টডি পেপারে সিগনেচার করে দিলো।
নীড় : খুশি? এবার শোনো।
মেরিন কোনো কথা বললনা।
নীড় : কালকে নিশ্চয়ই প্রানকে নিয়ে খান বাড়িতে যাবে। গিয়ে দেখবে ওই বাড়িতে শমসের খানের সাথে কবির ফয়সাল খান এবং কনিকা খানও আছে।
মেরিন কোনো রিয়্যাক্ট করলোনা। নীড় একটু অবাক হলো।
নীড় : তুমি আজকে রাগ করলেনা। তোমার এই স্থিরতা বলছে যে তুমি বিষয়টা জানতে পেরেছো।
মেরিন : ‘জানতে পেরেছি’ কথাটা কেনো বললে? তোমার তো বলা উচিত ছিলো যে এটা আমারই প্ল্যান।
নীড় : না এটা আমি বলতে পারিনা। কোনো ক্রমেই বলতে পারিনা। কারন এটা তোমার প্ল্যান হতেই পারেনা।
মেরিন : আমাকে কি খুশি করার চেষ্টা চলছে?
নীড় : না। মূল কথা বলতে চলেছি। এটা তোমার প্ল্যান হতে পারেনা কারন যে কবির ফয়সাল খান সেজে আছে সে আসলে আজমল কিবরিয়া।
মেরিন : তোমার মাথাটা কি পুরোটাই গিয়েছে? তুমি জানো কি বলছো?
নীড় : জানি আমি। বাবা বলতো যে তোমার বাবা মানে কবির ফয়সাল খান স্টুডেন্ট লাইফে সবসময় বাবাকে বোঝাতো যে শত্রুতা , প্রতিশোধ জীবনকে শেষ করে দেয়। বাবাই তার কথা শুনতোনা। এটা বাবার মুখের কথা। যে লোকটা এমন রকমের কথা বলে সে কি কখনো এমন নোংরা খেলা খেলতে পারে?
মেরিন : তুমি কবির ফয়সাল খানের তারিফ করছো?
নীড় : হ্যা করছি। চৌধুরী-খানেদের শত্রুতা আছে। কিন্তু কিবরিয়া দুই পরিবারের শত্রু। আমাদের শত্রুতার সুযোগ অন্যকেউ নিবে সেটাতো হবেনা। তোমার কাছ থেকে যে প্রানকে এনেছিলো সেও কবির ফয়সাল খান ছিলোনা। ছিলো আজমল কিবরিয়া।
মেরিন : এতোটা নিশ্চিত কিভাবে?
নীড় : নিশ্চিত না ধারনা। তাহমিদ হোসেনের যেমন প্লাস্টিক সার্জারি হয়েছিলো তেমন আজমল কিবরিয়ারও প্লাস্টিক সার্জারি হয়েছিলো। তাহমিদের সার্জারির সত্যতা যাচাই করতে আরো গভীরে যাওয়া হয়। আমি ধারনা করেছিলাম যে তুমি টাকা দিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট বানিয়েছো। তাই গভীরে যাওয়া হয়। গভীরে গিয়ে জানি এটা। এটা আরো গোপনে করা হয়েছিলো। তাই আমার ধারনা যে প্রানকে তোমার কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলো সেও কিবরিয়াই। আর এসব মিথ্যা মৃত্যুর নাটকও ওরই। প্রথমটা যদি নাও হয় দ্বিতীয়টা অবশ্যই কিবরিয়ার প্ল্যান।
মেরিন ধপ করে বসলো।
মেরিন : ও আমার বাবাকে মেরে দিয়েছে… আম্মু… আম্মুর সাথে কি করেছে?
নীড় : তোমার আম্মু আসলজনই। তিনি কিছুই জানেননা।
মেরিনের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো। নীড় পানিটা নিজের হাতে নিলো।
নীড় : কান্না করোনা প্লিজ… সহ্য করতে পারিনা আমি। তোমার বাবাকে আমি খুজে বের করবো। জীবীত থাকলে জীবীত।
মেরিন : আর যদি মরে গিয়ে থাকে? হামম…
মেরিনের চোখে পানি ভাসছে। নীড় হাটু গেড়ে বসলো। ওর দুই গালে হাত রাখলো।
নীড় : ভালো ভাবলে ভালো হবে। সম্ভবত বাঁচিয়ে রেখেছে। কিছু অফিশিয়াল কাজের জন্য।
মেরিন : আমি ওই কিবরিয়াকে এক্ষনি গিয়ে শ্যুট করে দিবো।
নীড় : শসস… চুপটি করে বসো। কিবরিয়া মরে গেলে আমরা কেউ জানতে পারবোনা যে কবির ফয়সাল খান কোথায় আছে। ট্রাস্ট মি… আমি খুজে বের করবোই করবো। তুমি কালকে ওই বাসায় যাচ্ছো।
মেরিন : অসম্ভব। আমি ওখানে যাবোনা।
নীড় : মাঝেমধ্যে শত্রুকে বুঝতে দেয়া জরুরী তারা জিতে গিয়েছে। তুমি প্রানকে নিয়ে যাবে। জনকে রেখে দিবে। পিটার কার কন্টেইনার নিয়ে তোমাদের গাড়ির অপেক্ষা করবে। তোমাদের গাড়ি সেখানে তুলে নিবে। এরপর বন্ধ করে দিবে।
মেরিন : আর প্রান…
নীড় : এই ঔষধটা দিবে। ও ঘুমিয়ে পরবে।
মেরিন : বাচ্চাটাকে ঘুমের ঔষধ দিবো?
নীড় : কোনো অসুবিধা হবেনা। সেই অনুযায়ীই এনেছি। তোমরা যাবে আমার মিরর ওয়ার্ল্ডে। অদৃশ্য হয়ে থাকবে সকলের থেকে।
মেরিন : আমাকে গুম করার চেষ্টা করছো না তো?
নীড় : প্রানের কস…
মেরিন নীড়ের মুখে হাত রাখলো।
মেরিন : বাচ্চাদের নিয়ে কসম কাটেনা। মানলাম গুম করবেনা। কিন্তু সে যে আসলেই আমার বাবা নয় , অথবা কনিকা খান যে আসল সেটার প্রমান আমি চাই।
নীড় : ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে আসবে।
মেরিন চুপ করে রইলো।
নীড় : বর্ষা কিবরিয়ার মেয়ে। বর্ষা একটি জমজ ভাইও আছে। ওই আমির কিবরিয়ার ছেলে নয়। পালিত।
মেরিন : বর্ষার জমজ ভাই আছে?
নীড় : হ্যা।
মেরিন : কোথায় ও?
নীড় : জানিনা। ওরই খোঁজ চলছে।
মেরিনের মাথায় নাবিলের খেয়াল এলো। ওর সাথে বর্ষার চেহারা অনেকটা মিলে। জমজদের মধ্যে চেহারার মিল তো থাকে। ও নীড়কে এই বিষয়ে কিছু বললনা। ডিএনএ টেস্ট করানোর প্রয়োজন।
নীড় : এটা আমাদের ফাইনাল মিশন। মিশনে পার্টনার হবে আমার?
নীড় হাত বারালো। মেরিন হাত মিলালো। পরদিন মেরিন খান বাড়িতে পৌছালো। তবে বর্ষার ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে যায়। খান বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে কবির-কনিকার ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে যায়।

নীড় প্রতিদিন মেরিন-প্রান্তিকের কাছে যেতো। জ্বরের জন্য নীড় সেদিন যায়নি। জনের কাছে নীড়ের জ্বরের কথা শুনে প্রান্তিক পাগল হয়ে যায় নীড়কে দেখতে যাওয়ার জন্য। মেরিনও ওকে নিয়ে যায় রাতে। কিচেনে বর্ষাকে দেখে এবং বর্ষার হাতের অ্যাম্পুলটা দেখে। একটা আওয়াজ করে বর্ষাকে সরিয়ে ফেলে। প্যানের স্যুপ অন্য একটা বাটিতে ঢেলে বাটিরটা প্যানে ঢেলে রাখে। নীড় ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মেরিন-প্রান্তিককে দেখতে পায়।
]

.

সকালে…
মেরিনের ঘুম ভাঙলো।
নীড় : গুড মর্নিং।
মেরিন : তুমি এতো সকালে এখানে?
নীড় : হামম।
মেরিন : যাওনি?
নীড় : অসুস্থ বউকে ফেলে যাই কিভাবে? হামম?
মেরিন কিছু না বলে ওয়াশরুমের দিকে পা বারালে মাথা চক্কর দিলো। নীড় ধরলো।
নীড় : আস্তে ধীরে চলাফেরা করো। আমি আছি তো।
মেরিন ওয়াশরুমে গেলো। মেরিনের অসুস্থতা নীড়কে চিন্তায় ফেলে দিলো। মেরিন বের হওয়ার পর ব্রেকফাস্ট করে নিলো। এরপর জনকে প্রান্তিকের কাছে রেখে মেরিনকে জোর করে হসপিটালে নিয়ে গেলো টেস্ট করাতে। মেরিন তো কিছুতেই যাবেনা। প্রান্তিকের কথায় অবশেষে রাজি হলো। তবে ছদ্মবেশ নিলো। কারন ছদ্মবেশ না নিলে ওকে তো চিনে ফেলবে। ডক্টর যেসব টেস্ট দিয়ে গিয়েছে সবগুলো করালো। সব রিপোর্ট দুদিন পর দিবে। টেস্ট করিয়ে নীড়-মেরিন ফিরে এলো।

.

প্রনয় নাবিলের চুল ধরে মাথা তুলল।
প্রনয় : আমার এবং নীলার জীবন বরবাদ করার প্ল্যান তোর ছিলো?
নাবিল চুপ করে রইলো।
প্রনয় : তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি । উত্তর দে।
নাবিল : ককিসের প্ল্যানের কথা বলছিস আমি বুঝতে পারছিনা।
প্রনয় নাবিলের মুখের মধ্যে গরম পানি ঢেলে দিলো। নাবিল ছটফট করতে লাগলো।
প্রনয় : একদম নাটক করবিনা আমার সাথে। না মানে না। কেনো আমার সাথে আর নীলার সাথে এমন করলি? বল… কেনো করলি? কি ক্ষতি করেছিলাম আমরা তোর?
নাবিল : আমি তোর কথা ববুঝতে পারছিনা।
প্রনয় : তোর এই জিহ্বাটা আমি কেটেই দিতাম। কিন্তু তোর পেট থেকে কথা বের করতে হবে।
প্রনয় নাবিলের গায়ে পানি ঢেলে দিলো। এরপর ওকে ইলেকট্রিক শক দিতে লাগলো। নাবিল ছটফট করতে লাগলো।
প্রনয় : এখনো সময় আছে বল… না হলে তুই ভাবতেও পারবিনা তোর সাথে কি কি হবে। বল… বল বলছি।
প্রনয় আবারো শক দিলো ওকে। নাবিল জ্ঞান হারালো। প্রনয় রেগে চেয়ারে লাথি মারলো।

.

পরদিন…
মেরিন : নীড় বাসায় যাও। সবাই সন্দেহ করবে।
নীড় : আই ডোন্ট কেয়ার।
মেরিন : নীড়… আমরা প্রায় শেষের দিকে আছি। এখন সবটা নষ্ট করোনা।
নীড় : নষ্ট হলে হবে।
মেরিন : কবির ফয়সাল খানের জীবন জরিয়ে আছে।
নীড় : বলেছি তো সে যদি জীবীত থাকে তাহলে খুজে বের করবোই। সবচেয়ে তুমি জরুরী।
মেরিন : আপু কেমন আছে?
নীড় আপু শুনে একটু অবাক হলো।
নীড় : বিশ্বাস করে নিয়েছো যে ওইটা তোমার আপু?
মেরিন : ডিএনএ টেস্ট করিয়েছি।
নীড় : সেদিন হসপিটালে ডিএনএ টেস্ট করাতে গিয়েছিলে?
মেরিন : হ্যা। তাও লিও গ্যাং এর সদস্য সেজে।
নীড় হাহা করে হেসে উঠলো। মেরিনের ভালো লাগছে নীড়ের এই হাসিটা।
নীড় : তুমিও না মেরিন…

.

কিবরিয়া : কবির ফয়সাল খান… কেমন লাগছে এই বন্দি দশা? হামম?
কবির : তোর হার অতি নিকটে কিবরিয়া। ধ্বংস হয়ে যাবি তুই।
কিবরিয়া : কে ধ্বংস করবে তুই?
কবির : আমার মেয়ে।
কিবরিয়া : তোর মেয়ে আমি পর্যন্ত পৌছাতেই পারবেনা।
কবির হাসলো।
কবির : তুই বলেছিলি যে নিহালের ছোট ছেলের সাথে মেরিনের বিয়ে হয়েছে।
কিবরিয়া : মেরিন প্রকাশ্যে এলেই ডিভোর্স।
কবির : ডিভোর্স হবে কিনা জানিনা। কিন্তু মহারানীর সাথে মহারাজা মিলে মহাশক্তিশালীই হয়। তোর ধ্বংস নিশ্চিত।

.

চলবে…