প্রতিশোধ প্রনয় পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
451

#প্রতিশোধ_প্রনয়
part : 30
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীলা আবারো হাসলো। হাসির জন্য আবারো শাস্তি পেলো।
☆ : যতোবার হাসবি ততোবার মার খাবি।
নীলা : যতোবার মারবে ততোবার হাসবো। মারলে না আমার বড্ড হাসি পায়। কি করবো বলো! হিহিহি…
লোহা গরম করে নীলার পায়ে আঘাত করা হলো। নীলা ছটফট করতে লাগলো।
☆ : এবার হেসে দেখা। দেখা হেসে…
যন্ত্রণায় নীলার চোখ দিয়ে পানি বের হলো। ছটফট করতে করতে জ্ঞান হারালো নীলা।

.

প্রান্তিক : আমি খাবোনা খাবোনা খাবোনা…
নীলিমা : নীড় অথবা মেরিনকে কল করতেই হবে।সকাল থেকে কিছু খায়নি।
প্রান্তিক : চাচ্চু-মামমাম এলেও খাবোনা। আমি সামার ক্যাম্পে যাবো। না যেতে দিলে আমি কিছু খাবোনা।
বলেই প্রান্তিক নিজের টেন্ট হাউজে গিয়ে বসে রইলো। নীলিমা নীড়কে কল করে সবটা বলল। নীড় মেরিনকে নিয়ে বাসায় ফিরলো। ওরা প্রান্তিককে খুব করে বোঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু লাভ হলোনা। নিজের সিদ্ধান্ত অটল ও। ও সামার ক্যাম্পে যাবেই। নীড়-মেরিন বাধ্য হয়ে রাজি হলো। নীড় পিটারকে এবং মেরিন জনকে পাঠাবে প্রান্তিকের নিরাপত্তার জন্য। ওরাও যাবে ওই এলাকাতেই। ক্যাম্পের পাশে কোথাও থাকবে। কিন্তু এটা হবে গোপনে। ওরা ছদ্মবেশে যাবো। যেই কথাটা ওরা দুজন ভিন্ন কেউ জানেনা। ওরা রাজি হওয়াতে প্রান্তিক রাজি হলো। খাবার খেলো। ২দিন পর ক্যাম্পের জন্য যাবে। ৫দিন থাকবে।

.

নীড় : তুমি সিওর যে লিও প্রানের কোনো ক্ষতি করবেনা?
মেরিন : মনেহচ্ছে। প্রানের ক্ষতি করার হলে বোম্বের কথা আমাকে ইনফর্ম করতোনা। যতোক্ষন আমরা সামনে না আসবো ততোক্ষন প্রান ওখানে সুরক্ষিত।
নীড় : সহমত। আমাদের অনুপস্থিতিতে লিও বা অন্য কেউ ওর কিডন্যাপ করতে চাইলে তুলনামূলক কম সাবধানতা অবলম্বন করবে। সেটার সুযোগে খপ করে ঘাড়টা ধরে ফেলবো।
মেরিন : তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি টোপ ফেলতে যাচ্ছো।
নীড় : তো তুমি কিসের জন্য যাচ্ছো?
মেরিন : প্রানের সুরক্ষার জন্য। থাকার কি ব্যবস্থা করেছো ওখানে?
নীড় : ক্যাম্প থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে একটি বাসা আই মিন রুম ভাড়া নেয়া হয়েছে। নিউলি ম্যারেড কাপল থাকবে। বউ বোরকা পরে এবং হাজবেন্ড মোল্লা সাহেব। দাড়িগোফ আছে। আমাদের মতো বেয়াদব নয়।দ্বীনদার স্বামী-স্ত্রী। বোরকাতে অ্যাডজাস্ট করতে পারবে তো জান?
মেরিন : আমি সব করতে পারি লুজার চৌধুরী।
নীড় : লুজার চৌধুরী… কবে কখন কোথায় আমাকে হারতে দেখেছো যে আমার নাম লুজার চৌধুরী দিয়ে দিলে? নাকি আমার জেন্টালম্যান টাইপ ব্যবহারকে আমার হার ভেবে লুজার চৌধুরী বলা হচ্ছে? আমার ইগো হার্ট করে আমাকে প্রভোক করার চেষ্টা হচ্ছে কি?
মেরিন : নিজেকে কি মনে করো বলো তো?
নীড় : তোমার হাজবেন্ড… তোমার লাভার।
মেরিন : তোমার মতো ব্যক্তিত্বহীন , অমানুষ টাইপ প্রত্যেকেই আমার কাছে লুজার।
নীড় : আমি ব্যক্তিত্বহীন! মেয়েরা পাগল আমার জন্য।
মেরিন : মেয়েদের পাগল করতে পারলেই কেউ ব্যক্তিত্বপূর্ন হয়ে ওঠেনা।
নীড় মেরিনের হাত ধরে ঘুরিয়ে ওকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ওর কাধে মাথা রাখলো।
নীড় : মেয়েদের সাথে রোম্যান্স করলে বুঝি ব্যক্তিত্বপূর্ন হওয়া যায়? হামম?
বলেই মেরিনের ঘাড়ে চুমু দিলো।
মেরিন : নীড়.. লিভ মি…
নীড় : তুমিই তো বললে ব্যক্তিত্বহীন… মেয়েদের সাথে রোম্যান্সের কথা জানিনা। তবে আমার দৃষ্টিতে কেবল বউয়ের সাথে রোম্যান্স করাকেই ব্যক্তিত্বপূর্ন মানুষ বলে।
মেরিন নীড়ের পেটে কনুই দিয়ে আঘাত করে সরিয়ে দিয়ে
বলল : মেয়েদেরকে যারা সম্মান করতে পারেনা তারা মানুষের কাতারেই পরেনা। আর তুমি নিজেকে বলছো ব্যক্তিত্বপূর্ন মানুষ…
নীড় : আমি আমার কথার জন্য অনেক অনেক সরি। আমার শব্দচয়ন জঘন্য ছিলো। জানি আমি সেটা ভুল ছিলো। কিন্তু কি করবো বলো? যাকে আমি ভালোবাসি তাকে অন্য কেউ স্পর্শ করেছে এটা যেমন মেনে নেয়া কষ্টকর ছিলো তেমন কষ্টকর এই ভাবনা ছিলো যে যাকে আমি ভালোবাসি সে অন্য কাউকে ভালোবেসেছে… খুব যন্ত্রণার ছিলো।
নীড়ের চোখে পানি ভাসছে।
মেরিন : আমাকে দুর্বল নারী ভেবোনা। তোমার মিষ্টিমিষ্টি কথায় গলে যাবো। তোমার ভালোবাসার ফাঁদে পা দিবো। আমি মেরিন বন্যা খান।
নীড় : জানি তুমি স্ট্রং। তোমার কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই। কিন্তু মানসিক প্রশান্তির জন্য আমার তোমাকে প্রয়োজন। তোমার নরম মনটাকে জাগরিত করার জন্য ভালোবাসার প্রয়োজন।
বলতে নীড় মেরিনের গালে হাত রাখলো।
নীড় : আমি জানিনা কে তোমার ভালোলাগাকে ধ্বংস করে তোমার মনটাকে চিরতরে শেষ করে দিয়েছে। আমি খুব খারাপ মানুষ জানি। কিন্তু ধোকাবাজ প্রেমিক নই… পরকীয়ায় লিপ্ত স্বামী নই। ভবিষ্যতেও হবোনা জানি। তবুও ৯৯% নিশ্চয়তা দিলাম আমার লয়্যালিটির। শতভাগ দিলে স্রষ্টা নারাজ হয়ে মন ঘুরিয়ে দিলে! সে তো সবই করতে পারে। তুমি আমাকে ভালো না বাসো একটু সুযোগও না দাও… কিন্তু একটু বন্ধু ভেবে দেখতে পারো। হাত বারিয়ে আছি। আকরে ধরে দেখতে পারো। কখনো ছারবোনা।
মেরিন নীড়ের কথায় এমন করে বিমোহিত হয়ে পরেছে যে উপলব্ধিই করতে পারেনি নীড় কখন ওর এতো কাছে এসে পরেছে। নীড় মেরিনের গলায় মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। মেরিন ও কাধ আকরে ধরে আছে। কিছুক্ষনের মধ্যে মেরিনের বোধ হলো। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো নীড়কে।
মেরিন : আমার থেকে দূরে থাকো। অসহ্যকর একটা লোক।
মেরিন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নীড় হাসলো।
নীড় : কঠোর মেরিনের আড়ালে কোথাও না কোথাও লজ্জাবতী মেরিনও আছে। পাজি মেরিনের পেছনে পাগলি মেরিনও আছে।

.

লিও : প্রান যাবে কিন্তু নীড় মেরিন যাবেনা সেটা কিভাবে হতে পারে?
টাইগার : জানিনা বস।
লিও : তুমি নিশ্চিত তো যে ওরা যাবেনা?
টাইগার : স্যার কোথাও কোনো তথ্য নেই ওদের যাওয়ার। না ওই ক্যাম্পে থাকার কোনো সম্ভাবনা আছে না কোনো হোটেলে।
লিও : এমনটা হলে তো সোনায় সোহাগা হবে। জনপিটারও যাবেনা?
টাইগার : ওরা যাবে।
লিও : ব্যাপর না। ওদের কে ম্যানেজ করা যাবে। এবার সময় চলে এসেছে প্রানকে কেড়ে নেয়ার। সবার প্রান একবারে উড়িয়ে দিবো। খানচৌধুরী সবাইকে। আমি ভালো থাকতে পারিনি এই দুই পরিবারের জন্য , এদের শত্রুতার জন্য। তাই এরাও ভালো থাকবেনা। বরবাদ হয়ে যাবে।
বলতে বলতে লিও হাতের গ্লাসটা এতো জোরে চেপে ধরলো যে সেটা ভেঙে গেলো। হাত থেকে রক্ত ঝরতে লাগলো।
টাইগার : স্যার আপনার হাত।
লিও : ঠিক আছি আমি।একদম ঠিক।

.

নীলা এখনো প্রায় অচেতন। নিভুনিভু চোখে সামনের দৃশ্য দেখছে। মাথার মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। চোখের সামনে ভাসছে অজস্র স্মৃতি। প্রনয়ের স্মৃতি ; ওর প্রতিশোএর স্মৃতি , ওর ঘৃণার স্মৃতি এবং ওর সীমাহীন ভালোবাসার স্মৃতি। কষ্টের কয়েকগুন বেশি ভালোবেসে ছিলো প্রনয় ওকে।

[ প্রনয় প্রতিশোধের নেশায় বিয়ে করেছিলো নীলাকে। প্রতিশোধের জন্য ভালোবাসা এবং একটি মেয়েকে ব্যবহার করার জন্য ওর মন সায় দিচ্ছিলোনা। পরে জামিল হুদা মানে নিহালের বন্ধুর বোঝানোতে রাজি হয়। চরম ঘৃণা নিয়ে ভালোবাসার নাটক করে নীলার সাথে। নীলা ওই মিথ্যা ভালোবাসাকে সত্যি মনে করে। খুব ভালোবেসে ফেলে ও প্রনয়কে। ভালো তো প্রনয়ও বেসে ফেলে নীলাকে। কিন্তু নিজের অসম্ভব ঘৃণার জন্য নিজের ভালোবাসা বুঝতে পারেনি।

.

কবির : কাকে ভালোবাসো তুমি?
নীলা : প্রনয় কে।
কবির : পুরো নাম কি?
নীলা : প্রনয় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন।
কবির : বাবার নাম কি?
নীলা : নিহাল আহমেদ চৌধুরী।
কবির সাথে সাথে নীলাকে থাপ্পর মারলো।
কবির : তুমি কোন সাহসে নিহালের ছেলেকে ভালোবেসেছো? কেনো ভালোবেসেছে?
নীলা : ভালো কি কেউ নিজের ইচ্ছায় বাসে বাবা? ভালোবাসা তো হয়ে যায়।
কবির : হয় গেলেও সেটাকে ভুলে যেতে হবে। ও আমাদের পরম শত্রুর ছেলে। ওর দাদু তোমার দাদুভাইয়ের শত্রু ছিলো। প্রনয় তোমাকে ভালোবাসেনা। নাটক করছে।
নীলা : না বাবা । বিশ্বাস করো… প্রনয় অমন নয়। ও খুব ভালো।
কবির : শাট আপ। তোমার বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ। সামনে সপ্তাহেই বিয়ের ব্যবস্থা করবো।
বলেই কবির নীলাকে ঘরে বন্দি করলো। কিন্তু প্রনয়ের সাহায্যে নীলা বাসা থেকে বের হতে সক্ষম হয়। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। নীলাকে বউ হিসেবে মেনে নিতে নিহাল রাজি না হলেও প্রনয় বোঝানো তে রাজি হয়। নীলিমা নীলাকে খুব ভালোবাসতো। তবে প্রনয় নীলাকে বিভিন্নভাবে মানসিক যন্ত্রণা দেয়া শুরু করে। কবিরের অমতে গিয়ে করে। তাই ওর সামনে গিয়ে দারানোর সাহস হয়নি। আর নীলার বের হওয়ারও তেমন উপায় ছিলানা…
]

নীলা : প্রনয়… কোথায় তুমি?তোমার কথা খুব করে মনে পরছে। কবে আসবে… প্রনয়… কে প্রনয়! আমি কে? আমি তো আমিই… হাহাহা।
নীলা হাসতে লাগলো।
নীলা : আমি হলাম একটা আমি। হাহাহা। আমার উড়তে পারি। নাচতে পারি।

.

মেরিন : মেহেদি! মেহেদি কেনো লাগাবো?
নীড় : কারন আমরা নিউলি ম্যারিড কাপল সেজে যাবো। তাই মেহেদি লাগাতে হবে। কারন বিয়ের অন্যরকম সৌন্দর্য্য হলো এই মেহেদি।
মেরিন : আমি মেহেদি লাগাবোনা।
নীড় মেরিনের হাত ধরলো।
নীড় : মেহেদি তুমিও পরবে আর আমিও পরবো।
নীড় নিজের হাতে মেহেদি দিয়ে বৃত্ত দিলো ।এরপর মেরিনের হাতে চাপ দিলো।
নীড় : দেখো মিলে গেলো আমাদের মেহেদি।
মেরিন : তোমার ন্যাকামি হয়ে গেলে হাতটা ছারো।
নীড় : হয়নি মেহেদি পরানো।
প্রান্তিক : ওয়াও… মেহেদি!
নীড় : হামম। মামমামকে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছি। তুমি দিবে?
প্রান্তিক : ছোট্ট একটা বৃত্ত দিবো চাচ্চু…
নীড় : ওয়েট…
নীড় প্রান্তিককে মেহেদি দিয়ে দিলো। মেরিনের দুই হাতে মেহেদি পরিয়ে দিলো।
প্রান্তিক : কি সুন্দর কি সুন্দর…
নীড় : তিনজনের হাতের ছবি তুলছি দারাও।
নীড় ছবি তুলে নিলো।
প্রান্তিক : মামমাম… আমরা কালকে সকালে একসাথে মেহেদি তুলবো। ওকে?
মেরিন : ওকে…
নীড় মুচকি হাসলো।

মেরিন : কি বিপদে পরলাম! এই দুই হাতে মেহেদি দিয়ে থাকা যায়? ডিজগাস্টিং…
নীড় : তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।
মেরিন : ক্ষুধা নেই আমার।
নীড় : চুপ থাকো তো। হা করো।
মেরিন : খাবোনা।
নীড় : প্রানকে ডাক দিবো কিন্তু।
মেরিন নীড়ের দিকে রেগে তাকালো।
নীড় : হা করো জান।
নীড় মেরিনকে খাইয়ে দিলো। পানি ঢেলে মেরিনের সামনে ধরলো। পানির দিকে তাকিয়ে দেখলো যে বাবলস দেখা যাচ্ছে। গ্লাস আরো একটু সামনে নিলো। গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছে।
মেরিন : পানি খাবো তো।
নীড় : রূপা…📢
নীড়ের গর্জনে যেনো পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলো।
মেরিন : কি হলো?
নীড় দৌড়ে নিচে নামলো। মেরিনও ওর পিছুপিছু নামলো।
নীলিমা : কি হয়েছে নীড়?
নীড় : রূপা কোথায়?
নীলিমা : হয়েছেটা কি?
নীড় : রূপা কোথায়?
মেরিন : কি হয়েছে?
নিহাল : বলো নীড়…
নীড় : মেরিনের পানির গ্লাসে বিষ মিশিয়েছে। খেয়াল করেছি বলে মেরিন বেঁচে গেলো। কোথায় রূপা?
মেরিন অবাক হয়ে গেলো।
নীড় : রূপা কোথায়?
নীলিমা : ও তো বাসায় নেই। ককোথায় যেনো গিয়েছে।
নীড় হাতের গ্লাসটা আছার মারলো। রেগে নীলিমার দিকে গেলো।
নীড় : কি লুকাচ্ছো মামনি?
নীলিমা : কি লুকাচ্ছি মানে?
নীড় : রূপার কথা লুকাচ্ছো। রূপাই খাবার রেখে নিয়ে গিয়েছিলো। রূপা… রূপা..
নীলিমা : রূপা নেই। একটু আগেই বের হলো।
নীড় : কোথায় গিয়েছে?
নীলিমা : জজানিনা।
নীড় : কেনো ওই রূপাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছো? তোমার হাত নেই তো?
নীলিমা : নীড়… ওই মেয়েটার জন্য তুমি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো? সন্দেহ করছো?
নীড় : শি ইজ মাই ওয়াইফ। ওর দিকে আসা বিপদকে আমার ওপর আগে যেতে হবে। জানিনা তোমার হাত এই ঘটনায় আছে কি নেই। থাকলে তো জেনেই যাবো। রূপাকেও পাতাল থেকে বের করবো। মেরিনের দিকে কালো হাত এগিয়ে এলে সেটা আমি গুড়িয়ে দিবো। হাতের মালিক যেই হোক আই ডোন্ট কেয়ার। কথাটা মাথায় রেখো।
নীড় চলে গেলো। নীলিমাও চোখে পানি নিয়ে ঘরে চলে গেলো। নিহাল গেলো নীলিমার পেছনে। মেরিন নীড়কেও দেখলো এবং নিহালকেও দেখলো।
মেরিন : ইন্টরেস্টিং তো… বিষটা মিশালো কে? এই নীলিমা চৌধুরী? এনার এতো সাহস হবে? নীড় সেদিন গাড়িতেও সাবধান করেছিলো। নজর রাখতে হবে।
মেরিন ঘরে গেলো।
নীড় : নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের একটা নীতি আছে। এই নীতিটা একবার অ্যাপ্লাই করেছো। এবারও কি সেটাই করলে?
মেরিন হাসলো।
মেরিন : তোমার ভাষ্যমতে তুমি আমাকে ভালোবাসো। তবুও বলছো এর আগে মিথ্যা বলেছি। ইভেন আজকের ঘটনাতেও আমাকে সন্দেহ করছো। কি চমৎকার ভালোবাসা!
নীড় : আজকের ঘটনাটা কেবল জিজ্ঞেস করলাম। আগেরটা নিয়ে আমি এখনো দ্বন্দে আছি। যাইহোক , আজকের ঘটনায় কি তোমার হাত ছিলো?
মেরিন : জানিনা গো সোয়ামি। আর জানলেও বলবো না। আমার গলা এখনো শুকিয়ে আছে। খাবার খেয়ে পানি খাওয়া হয়নি। হাত মেহেদিতে আটকে রেখেছো। পানি কি খাওয়াবে?
নীড় : পানিও খাওয়াবো আর…
মেরিন : আর?
নীড় পানি পান করালো।
নীড় : চুমুও খাবো।
মেরিন : তুম…
নীড় মেরিনের ঠোঁটজোরা দখল করে নিলো।
নীড় : আমার মিষ্টি বউটা…
মেরিন নীড়ের পায়ে পারা দিয়ে গিয়ে শুয়ে পরলো।
নীড় মনেমনে : কে হতে পারে এই ঘটনার পেছনে? মেরিন নাকি মামনি? রূপার নিজের এতো সাহস তো হবেনা। মেরিন করে মামনিকে ফাঁসাতে চাইছে ? নাকি অপছন্দ করার দরুন মামনি মেরিনকে মারতে চাইছে। মামনি তো এমন কাজ করার মানুষ নয়। এতো সাহস নেই। এতো বুদ্ধিও নেই। আর এই ঘটনা ঘটে গেলে যে আমরা সবাই ফেঁসে যাবো সেটাও মামনি জানে। তাহলে কেনো? কেবল রূপাকে ইনোসেন্ট ভেবে ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে? কিছু তো কাহিনি আছে। ফুটেজ দেখতে হবে।

.

আজকে প্রান্তিক সামার ক্যাম্পে যাবে। মেরিন ওকে রেডি করে দিলো। ওর ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছে। নীড় এসে প্রান্তিককে কোলে তুলে নিলো।
নীড় : মিস করবেনা আমাদের?
প্রান্তিক : করবো তো করবো।
মেরিন : আর মামমামকে করবেনা ?
প্রান্তিক : সবাইকে মিস করবো।
মেরিন : প্রতিদিন , প্রতিবার কিন্তু নিজের হাত দিয়েই খেতে হবে।
প্রান্তিক : এখন তো আমি হাত দিয়ে খেতে পারিই।
মেরিন : মানে সামার ক্যাম্পে যেতেই হবে।
প্রান্তিক : হিহিহি…
নীড়-মেরিন প্রান্তিককে নিয়ে স্কুলে গেলো। টিচারদের হাতে প্রান্তিককে তুলে দিলো।
নীড় : খেয়াল রাখবেন প্রানের। না হলে প্রানে সংকট চলে আসবে।
সামার ক্যাম্পের বাস ছেরে দিলো। নীড়-মেরিন পৌছালো শপিং মলে। কিছু কেনাকাটা করলো। এরপর ওয়াশরুমে ঢুকে নিজনিজ পোশাক পাল্টে এলো। মেরিন বোরকা পরেছে , চেহারা ঢেকেছে , হাতমোজা পামোজা পরেছে। নীড় সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা
আলাদা আলাদা ভাবে বের হয়ে পৌছালো হ্যালিপ্যাডে। এরপর হেলিকপ্টারে চরে পৌছালো নিজেদের মঞ্জিলের দিকে। সামার ক্যাম্প থেকে যথেষ্ট দূরে ওরা নামলো। কারন এতে ওদের ওপর সন্দেহ হতে পারে। রিকশাতে করে সেই বাসায় পৌছালো। বাড়িওয়ালার নাম হলো মনির হোসেন। তার তিনটি বউ। বড় বউ লিপি , মেজো বউ হেলেনা এবং ছোট বউ রোজিনা। নীড় নিজের নাম দিয়েছে বরকত এবং নিজের বেগমের নাম দিয়েছে সখিনা। মনির হোসেন দরজা খোলার পর নীড় লম্বা করে সালাম দিলো। মনির হোসেনও সালাম নিলো।
মনির : ২ঘন্টা দেরি হলো যে?
নীড় : হয়ে গেলো আর কি। নতুন নতুন বিয়ে তো সব কাজে দেরিই হয়ে যায়।
লিপি : এটা বুঝি তোমার বউ?
নীড় : জী জী। আমার বিবি সখিনা।
মেরিন মনেমনে : সখিনা! ইয়াক। আর কোনো নাম পেলোনা।
লিপি : বউয়ের চেহারা দেখি।
নীড় : চাচাজানের সামনে আমার বিবি কিভাবে মুখ দেখাবে চাচি?
লিপি : আচ্ছা যাও যাও। বউ নিয়ে ঘরে যাও।
নীড় : জী চাচিআম্মা।
নীড় মেরিনকে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগালো। মেরিন মুখোশ টুখোশ খুলে হাতমোজা , পা মোজা খুলে ফেলল।
মেরিন : হাউ ডেয়ার ইউ? ওই সখিনা নাম তুমি কিভাবে দিলে? ইয়াক…
নীড় হাসতে লাগলো।
মেরিন : একদম হাসবেনা।
নীড় : হাসবোনা তো কি করবো বিবি সখিনা…
বলেই নীড় মেরিনের চিবুকে হাত বুলিয়ে দিলো। মেরিন নীড়ের বাহুতে ঘুষি মারলো। নীড় হাসতে লাগলো।
মেরিন : এতোটুকু বেড কেনো?
নীড় : ম্যাডাম… এটা আমাদের বাসা নয়। আর এই বাড়িওয়ালাও কিপটে। এই কাবার্ড এবং বেড পেয়েছি সেটাকেই অনেক বলা চলে।
মেরিন : শাট আপ।
নীড় : ওকে।
তখন দরজায় নক করলো লিপি , হেলেনা এবং রোজিনা। মেরিন দ্রুত মুখটা আবারো ঢেকে নিলো। নীড় গিয়ে দরজা খুলল।
নীড় : চাচিআম্মা আপনি… এই খালারা আবার কে?
লিপি : এটা তোমার মেজো চাচি আম্মা হেলানা এবং ওটা ছোট চাচি আম্মা রোজিনা।
নীড় সালাম দিলো।
লিপি : তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে এলাম।
নীড় : কি দরকার ছিলো?
হেলেনা : অনেক দরকার ছিলো। নতুন নতুন বিয়ে করেই বউকে নিয়ে এখানে এসেছো। হাতের মেহেদিও ওঠেনি। আজকে বউটাকে কিভাব রান্না করতে দেই বলো তো?
রোজিনা : এখন তুমি যাও তো। আমরা তোমার বউয়ের চেহারা দেখবো।।
হেলেনা : আরে এই ছোট… এটা তো ওর বিবি। ওর সামনে মুখ কেনো আরো কিছু দেখালেও দোষের কি … হিহি।
মেরিন মনেমনে : কি ভালগার কথাবার্তা! ইয়াক।
নীড় : আমি বাহিরে যাচ্ছি চাচিআম্মা।
নীড় বাহিরে গেলো। দরজা লাগিয়ে গেলো।
লিপি : দেখি সখিনা বিবি তোমার মুখটা দেখি।
লিপি মেরিনের মুখটা খুলল।
হেলেনা : ও মা… এ দেখি পরীর মতো চেহারা।
লিপি : এমন চান্দের মতো মুখ ঢেকে রাখা ভালো। ডাগর ডাগর চোখ।
রোজিনা : ও বড় আপা। ও স্বামীও তো সুন্দর। মেহেদি রাঙা হাত দেখো। কি সুন্দর!
মেরিন মনেমনে : আল্লাহ… কোথায় এসে পরলাম!

.

চলবে…

#প্রতিশোধ_প্রনয়
part : 31
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন মনেমনে : কোথায় এসে পরলাম! কেনো পরলাম?
রোজিনা : মেহেদি কি লাল হয়েছে! তোমার জামাই তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
হেলেনা : বিয়ে হলো কতোদিন?
মেরিন : ৩দিন।
লিপি : ওহ।
হেলেনা : শোনো… জামাইকে একটু টাইট দিয়ে রাখবা। সুন্দর হওয়ার সুযোগ নিবেনা? একটু টাইট দিলেই দেখবে যে উঠতে বললে উঠবে আর বসতে বললে বসবে।
রোজিনা : কাছে আসতে চাইলে আগে যা যা চাওয়ার সব চেয়ে নিবা। গলার হার , হাতের বালা , পায়ের নূপুর। মোটকথা শাড়ি গয়না। না দিলে বলবা দূরে থাকতে।
বাহিরে থেকে এসব শুনে নীড় হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
নীড় মনেমনে : এরা গুলি না খেয়ে বসে। ওহ নো… আসলেই মাথার তার কেটে গেলে সমস্যাতো। সত্যিই গুলি করে দিবে।
মেরিন মনেমনে : আর নেয়া সম্ভবনা এদের ভালগার , থার্ডক্লাড কথা। এদেরকে তো…
তখন দরজায় নক করে নীড় ভেতরে ঢুকলো।
নীড় : চাচিআম্মারা… চাচাজান ডাকছে।
লিপি : হামম। খাবার খেয়ে নিও তোমরা। পানি কিন্তু তিনবেলা ছারা হয়। পানি ভরে রেখো।
তিনজন বেরিয়ে গেলো।
মেরিন : এমন চিপ লোকেদের ভীরে কেনো নিয়ে এসেছো। এদেরকে গুলি করে দিবো। এমন জঘন্য কথাবার্তা কিভাবে বলে? ছিঃ…
নীড় হাসছে।
মেরিন : এই… একদম হাসবেনা বলছি।
নীড় : হাসি এলে কি করবো বলো?
মেরিন এগিয়ে গেলো।
মেরিন : এই … খবরদার বলছি হাসবেনা।
নীড় এবার হাহা করে হেসে দিলো। মেরিন নীড়ের বাহুতে কিল দিতে লাগলো।
নীড় : লাগছে তো।
মেরিন : লাগুক। তুম…
নীড় মেরিনের ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রাখলো।
নীড় : শসস… মোল্লা বাড়ির মেয়ে-বউরা উচ্চস্বরে কথা বলেনা। তাদের কন্ঠ ঘরের বাহিরে যায়না। পরপুরুষেরা চেনেনা।
বলেই নীড় হাসতে লাগলো।
মেরিন : গুলিই করি দিবো তোমাকে আমি। আমার গানটা কোথায়?
মেরিন গিয়ে নিজের গানটা হাতে নিলো। নীড় পেছন থেকে এসে খপ করে নিয়ে নিলো।
মেরিন : আমার গান নিলে কেনো? দিয়ে দাও।
নীড় : না।
মেরিন নিজের গান নেয়ার জন্য নীড়ের পেছনে পেছনে ঘুরছে। নীড় হাতে গান নিয়ে হাত উচুতে তুলে দারিয়ে রইলো মেরিন লাফিয়ে লাফিয়ে সেটা নেয়ার চেষ্টা করছে। নীড় মেরিনকে দেখছে। মেরিন দেখলো যে নীড় অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে। ও দারিয়ে গেলো।
মেরিন : দাও গান…
নীড় তাকিয়ে আছে। মেরিন ওর পেটের মধ্যে ঘুষি মারলো।
নীড় : কি হলো সখিনা বিবি।
মেরিন : তুমি খুব খারাপ।
নীড় এক পা এগিয়ে গেলো। মেরিনের বোরকায় পা বেজে নীড় পরে যেতে নিলো। মেরিনকে সাথে নিয়ে বিছানার ওপর পরলো।
নীড় : পরে যাওয়াটাও কি রোম্যান্টিক…. ওয়াও…
মেরিন : তুম…
তখন দুজনই মুখ টিপে হাসার শব্দ পেলো। দুজন দরজার দিকে তাকালো। দেখে লিপিরা তিনজন দরজা সামনে দারিয়ে মুখ টিপে হাসছে।
লিপি : দরজা তো লাগিয়ে নাও।
বলেই হাসতে হাসতে তিনজন চলে গেলো। নীড়-মেরিন উঠে বসলো।
মেরিন : ইটস রিডিকিউলাস। কারো ঘরের দরজার সামনে এভাবে কিভাবে দারিয়ে থাকতে পারে? ম্যানারলেস পিপলস।
নীড় : ৫দিন এদের সাথেই থাকতে হবে সখিনা বিবি।
মেরিন : একদম ওই নামে ডাকবেনা। আর কোনো বাসা পাওনি? অসহ্যকর! এসির রিমোট কোথায়? এসি অন করো।
নীড় : এসি নেই বিবিজান…
মেরিন : কি? এই গরমে এসি ছারা কিভাবে থাকবো?
নীড় উঠে দরজা লাগাতে লাগাতে বলল : কিছু করার নেই হানি। থাকতে হবে। এই খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি খাবার নিয়ে আসবো। এই মোমেন্টে কাউকে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। তাই এই খাবার মুখে দেয়া রিস্কি। কোনো পথ শিশু বা ভিক্ষুককে দিয়ে দিবো।
মেরিন : যেনো বিষ থাকলে ওই মানুষগুলো মরে। তাইতো? বিষাক্ত হলে বা অন্যকোনো ক্ষতিকর পদার্থ তাদের শরীরে গিয়ে ক্ষতি করুক। নির্দোষ মানুষ ওরা।
নীড় : রাইট। থ্যাংকস। আমি তো ভেবেই দেখিনি।
মেরিন : তুমি ভাবতে শুরু করলে কেয়ামত না চল আসবে। ওই লোকটা এতোগুলো বিয়ে করেছে কেনো?
নীড় : ছেলের আশায়।
মেরিন : খুজে খুজে বাড়ি এবং বাড়িওয়ালা পেয়েছো বটে।
মেরিন বোরকাটা খুলে ফেলল।
নীড় : তুমি লং টপস পরে আসছো? তাও জিন্সের সাথে? শাড়ি বা থ্রীপিছ কেনো পরোনি? কেউ দেখে নিলে?
মেরিন : বোরকার নিচে কে দেখতে যাবে?
নীড় : ওই তিন মাথামেটা মহিলা যেকোনো সময় ঘরে ঢুকে যেতে পারে। তোমাকে ওয়েস্টার্ন ড্রেসে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। এখনই শাড়ি বা থ্রীপিছ পরে নাও।
মেরিন : আমি ওগুলো কিছু আনিনি।
নীড় : ওহ গড…

.

লিও : প্রানের বাস পৌছে গিয়েছে ক্যাম্পে?
টাইগার : ইয়েস বস।
লিও : নীড় মেরিন কোথায়?
টাইগার : বিকালে কক্সবাজার যাবে । জরুরী মিটিং আছে।
লিও : সন্দেহ হচ্ছে। ক্যাম্পের ওখানে পুরো এলাকায় খোঁজ করো। দেখো কোথাও নীড়মেরিনের দর্শন বা খোঁজ পাও কিনা?
টাইগার : ওকে স্যার।
লিও : নীড়মেরিনকে যদি কোনোভাবে পেয়ে যাও শ্যুট করে দিবে। কোনো সময় নষ্ট করবেনা। ওদের সাথে এখন কোনো গার্ড নেই। জনপিটার নেই। শ্যুট করা সহজ হবে। আর ওদের ফোম নাম্বার ট্রেস করার চেষ্টা করো।
টাইগার : ওদের ফোন ট্রেস করা সম্ভব নয় স্যার। স্পেশাল।
লিও : হামম। যাও খোঁজ করো।

.

■ : কি মনেহয় তোমার? প্রানকে কি নীড়-মেরিন একা ছারবে? বা ছেরেছে?
□ : অসম্ভব। এটা হতেই পারেনা।
■ : মেরিন নিজের দাদুভাইকে ইনফর্ম করে যেতো নিশ্চয়ই।
□ : হ্যা এটাও সত্যি।
■ : ওরা কক্সবাজার যাবে। বিজনেস মিটিং এ। জনপিটার গিয়েছে প্রানের সাথে।
□ : ভুল করলো ওরা দুজন। প্রানকে হারিয়ে না ফেলে। ও হারিয়ে গেলে সব শেষ।

.

☆ : মারতে পারলাম না তোর বোন মেরিনকে। বেঁচে গেলো। কেবলমাত্র নীড়ের জন্য বেঁচে গেলো। কি জাদু জানিস তোরা দুই বোন? বল কি কালোজাদু জানিস তোরা?
নীলা : জাদু! একটা গান শুনবে? জাদু… জাদু… জাদু… জা…
নীলাকে থাপ্পর মারা হলো।
☆ : চুপ… একদম চুপ করে থাকবি। ভুল হয়েছে আমার। তোর সাথে যা হয়েছে সেটা তোর বোনের সাথেও করা উচিত ছিলো। কিন্তু মেরিন জীবীত থাকা মানেি বিপজ্জনক। মানসিক ভারসাম্য থাকুক আর থাকুক ও বিপদ হয়ে ঠিক থাকবে। যে নীড়ের মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে সে উন্মাদ হলেও বিপজ্জনক। তাই ওকে শেষ করে দিবো। নীড়-মেরিন কক্সবাজার থেকে ফিরুক এরপর তোকে ফিল্ডে নামাবো। দুনিয়া জানে যে তই মরে গিয়েছিস। তোর বোনও জানে। তোকে দিয়ে ওকে ঘায়েল করবো।
নীলা : আচ্ছা। কিন্তু আমাকে মেরোনা… মারলে না আমার হাসি চলে আসে। হাহাহা।
নীলাকে থাপ্পর মেরে সে বেরিয়ে গেলো।
নীলা : হুহ… খালি মারে। প্রনয় আসুক॥ এলে বিচার দিবো।

.

মনির : ছোটবউ , ওই নতুন ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা হলো? দেখা হলো?
রোজিনা : জী হয়েছে।
মনির : সখিনা বিবিকে দেখেছো?
রোজিনা : জী দেখেছো। হুরপরী হুরপরী।
মনির : তোমার চেয়েও সুন্দর?
রোজিনা : অনেক বেশি সু্ন্দর।
মনির : তোমার চেয়ে সু্ন্দর কেউ হতে পারেনা।
রোজিনা : কি যে বলেন…
মনির মনেমনে : সুন্দরী… হুরপরী… চেহারাটা তো দেখতে হয়। লিপি , হেলেনার মতো এই রোজিনাও পুরোনাে হয়ে গিয়েছে। নতুন বিবি পেলে মন্দ হয়না। দেখবো কিভাবে? বোরকা পরে এসে ওই ঘরে ঢুকে দেখবো হুরপরীকে। দেখবো কেমন হুরপরী।
রোজিনা : কোথায় হারিয়ে গেলেন?
মনির : কোথাওনা। ওই বরকত মিয়ার কথা ভাবছি। বদলী হয়ে আসতে হলো এতোদূর। বেচারা। তা ঠিক।
রোজিনা : বউ নিয়েই তো আসছে। অতোও বেচারা না। সুন্দরী বউ তো।
মনির : তাও ঠিক। কাজে কখন যাবে বরকত মিয়া জানো?
রোজিনা : কালকে থেকেই যাবে।
মনির : তাহলে তো বেরসিক। তোমাকে পাওয়ার পর আমার তো কাজে যেতেই ইচ্ছা করতোনা।
রোজিনা : ইশ কি ঢং… সরেন।

.

মেরিন : হ্যালো জন…
জন : হ্যালো ম্যাম।
মেরিন : প্রান কোথায়?
জন : দিচ্ছি ম্যাম।
মেরিন : দিচ্ছি ম্যাম মানে কি? ও যদি জানে তুমি জন আংকেল তাহলে কিন্তু রেগে যাবে।
জন : চিন্তা নেই ম্যাম। আমি ওর টিচার হয়েই এসেছি। টিচার সেজে বলবো যে তোমার মামমাম কল করেছে।
মেরিন : ওকে।
মেরিন কথা বলল। ও কথা বলতেবলতে নীড় শপিং করে ফিরলো। নীড়ও কথা বলল। কথা বলে রাখলো।
নীড় : এখানে তোমার জন্য শাড়ি , থ্রীপিছ আছে। দেখো।
মেরিন বের করে দেখলো।
মেরিন : এগুলো কেমন ফ্যাব্রিক?
নীড় : এখন এই ছোট শহরে তোমার জন্য শিফনের শাড়ি কোথায় পাবো আর ডিজাইনার থ্রীপিছই বা কোথায় পাবো? আর স্ট্যাটাস অনুযায়ী পরতে হবে তো।
মেরিন : উফফ… কালকে থেকে পরবো। এখন বাহিরে যাও। চেইঞ্জ করবো।
নীড় : এই তো বললে যে কালকে থেকে পরবে।
মেরিন : নাইট স্যুট পরবো ইডিয়ট।
নীড় : কেনো? নাইট স্যুট কেনো পরবে?
মেরিন : রাতের বেলা অন্তত ঘরে ঢুকবেনা। যাও বাহিরে যাও।
নীড় : ওয়াশরুমে গিয়ে চেইঞ্জ করো।
মেরিন : এইটুকু একটা ওয়াশরুম। দারানোরও মনেহয় জায়গা নেই। গা ঘিনঘিন করে ওয়াশরুম দেখলে। যাও বাহিরে যাও।
নীড় : ওহ বেগম.. আমি তোমার বাদশা আমার সামনেই চেইঞ্জ করো না।
মেরিন : তোমার কি একটা বুলেটেই হবে নাকি আরো লাগবে?
নীড় বিছানার ওপর শুয়ে পরলো।
নীড় : এখন তো আমি উঠবোই না বেড থেকে।
মেরিন নাইটস্যুট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। নাইটস্যুট রাখতেই পরে গেলো। ভিজে গেলো। মেরিন রেগে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজায় লাথি মারলো।
নীড় : এই পাগল হলে নাকি? দরজা ভেঙে যাবে তো।
মেরিন : তোমার মাথা ভাঙবো আমি। আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য এখানে নিয়ে এসেছো।
ও দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।
নীড় : হলোটা কি?
মেরিন : জানিনা। বের হও ঘর থেকে।
নীড় : মিডিলক্লাস মেয়েদের মতো আচরণ করছো ইয়ার।
মেরিন : ওকে ফাইন। এখন আমি ওই উঠোনে গিয়ে চেইঞ্জ করবো।
নীড় : একটা থাপ্পর দিবো।
নীড় ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

খাওয়াদাওয়া করে ওরা দুজন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো।
মেরিন : এতোটুকু বেডে কিভাবে ঘুমাবো?
নীড় : আমার বুকের মধ্যিখানে। আমার কোনো আপত্তি নেই।
মেরিন জানে এখন নীড়ের সাথে যতো কথা বারাবে রাগ হবে। তাই চাদর গায়ে দিয়ে বা দিকে ঘুরে শুয়ে পরলো। নীড় ওকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো।
মেরিন : নীড়… আই অ্যাম স্লিপি।
নীড় : মি অলসো… তাই চুপচাপ ঘুমাও।
মেরিন মনেমনে : প্রানের জন্য এসব স্টুপিডিটি সহ্য করতে হচ্ছে । কবে যে এর হাত থেকে মুক্তি পাবো কে জানে?
নীড় মনেমনে : তুুমিই আমার স্বস্তি জান…

.

পরদিন…
মেরিন : হ্যা আরাফাত বলো…
আরাফাত : ম্যাম… সিমলা এবং নাবিলকে লিও গ্যাং এর সদস্যরা পাগলের মতো খুজছে।
মেরিন : ওদের দুজনকে কেনো খুজবে লিও?
আরাফাত : জানিনা ম্যাম।
মেরিন : আলি আব্বাসকে?
আরাফাত : না ওকে খুজছেনা। তবে নাবিলকে লিও অনেকদিন ধরেই খুজছিলো। পায়নি।
মেরিন: ওদের দুজনের খোঁজ যেনো না পায়।
আরাফাত : পাবেনা ম্যাম।
মেরিন : নিহাল খানের বিশেষ বন্ধু নজরুল ইসলামকে পেয়েছো?
আরাফাত : জন স্যার এবং আমি খোঁজ নিয়েছি।
মেরিন : আপডেট?
আরাফাত : দুই থেকে তিন বছর আগে খুন হয়েছে।
মেরিন : কে খুন করেছে?
আরাফাত : জানিনা।
মেরিন : ভালো মানুষ সেজে থাকতো। কেউ কেনো মারবে? তাকে? খুনীকে খুজে বের করো।
আরাফাত : ওকে ম্যাম।
মেরিন : রাখছি।
মেরিন রেখে দিলো।
মেরিন : নজরুল ইসলাম খুন হয়েছে। অতএব ৫জন থেকে ৪জনের খোঁজ পাওয়া শেষ। এই ৪জনের মধ্যে একজন কেবল মৃত। পঞ্চম ব্যক্তি বাকি।

.

পিটার : স্যার…
নীড় : প্রান ঠিক আছে?
পিটার : ইয়েস স্যার। অন্য কথা ছিলো।
নীড় : বলো।
পিটার : মেরিন ম্যাম নজরুল ইসলাম মানে নিহাল স্যারের বিশেষ বন্ধু নজরুল ইসলামের খোঁজ করছে।
নীড় : সে তো খুন হয়েছে। লিও গ্যাং এর হাতেই খুন হয়েছে।
পিটার : হামম। এখন ম্যাম এটা জানার চেষ্টা করছেন যে নজরুল ইসলামের খুন কে করেছে? হেল্প করবো?
নীড় : না। হেল্প করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ও নজরুল ইসলামের খোঁজ কেনো করছে সেটার খবর লাগাতে হবে।
পিটার : ওকে স্যার। আমি টগরকে বলে দিচ্ছি কাজ শুরু করতে।
নীড় : হামম। রাখছি।
নীড় রেখে দিলো।
নীড় : মেরিনের উদ্দেশ্যটা কি? কোন পথে যাচ্ছে ও? ও কি ভাইয়া এবং নীলা খানের সম্পর্ক নিয়ে ঘাটছে? কিন্তু কেনো? আমাকে মাত দেয়ার চেষ্টা? কিন্তু ওদের সম্পর্কে , ওদের গল্পে তো আমার কোনো ভূমিকা নেই।

.

নিহাল : কেনো এই জেদ ধরলে বলো তো?
নীলিমা : চিন্তা হচ্ছে আমার প্রানের জন্য।
নিহাল : নীড়-মেরিন প্রানের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে।
নীলিমা : কিন্তু ওরা তো নেই। যেখানে ওরা নেই সেখানে প্রানের নিরাপত্তা নিয়ে আমি চিন্তিত। চলো আমি তুমি যাই।
নিহাল : নীলি…
নীলিমা : আমি কিছু বুঝিনা। যাবো ব্যাস। আমার ভালো লাগছেনা। প্রানকে নিয়ে অনেক চিন্তা হচ্ছে । কালকে রাতটুকু যে কিভাবে কেটেছে আমার…
নিহাল : ওকে। ফাইন চলো।
নীলিমা খুশি হয়ে গেলো।

.

□ : প্রানের সামার ক্যাম্পে যেতে হবে।
■ : কেনো?
□ : প্রান আছে ওখানে তাই।
■ : তো?
□ : প্রান তো প্রান নয়। ও তো প্রান ভ্রোমরা…
■ : ওকে কিডন্যাপ করবে?
□ : চলো দেখি কি করা যায়। পৌছাই তো আগে। রেডি হয়ে নাও।
■ : আমাদের যাওয়াটা কিন্তু বেশ রিস্কি।
□ : ছদ্মবেশে যাবো।
■ : কোনো এক পক্ষ দেখে ফেললে কি হবে ভেবে দেখেছো?
□ : ভেবে ভেবে অনেক কাজ করেছি। এবার যা করবো হুট করেই করবো।

.

☆ : তোর বোন মেরিনকে শেষ করতে যাচ্ছি। যতোই নীড়-মেরিন বলুক না কেনো যে ওরা ক্যাম্পে যাবেনা বা যায়নি। কিন্তু আমি জানি যে ওরা ওখানেই গিয়েছে। আমিও যাবো। তোর মেরিনের মৃত্যুর সময় হয়ে গিয়েছে।
নীলা : মেরিন… কোথায় মেরিন? ওকে ধরে মাইর দিবো। তবে থেকে আসেনা। কিন্তু মেরিন কে? আসতে বলো তো। আসলে বুঝবো।
☆ : তোর বোনকে তুই আর কখনো দেখতেও পারবিনা। শেষ করে দিবো। একেবারে শেষ করে দিবো।
নীলা : আচ্ছা… হিহিহি। কিন্তু ও না অনেক রাগী। খালি ঝগড়া করে…

.

লিও : পেলে নীড়-মেরিনের খোঁজ?
টাইগার : কক্সবাজারে নীড়দের বাগান বাড়িতে উঠেছে।
লিও : সত্যি?
টাইগার : পেছন থেকে দেখা হয়েছে। ক্যাম্পের পুরো এলাকা জুরে কোথাও নীড়-মেরিন নেই। তুলে নিবো প্রানকে?
লিও : না। তারাহুরো করা ঠিক হবেনা। আর প্রানকে আমি তুলবো। আমি নিজে গিয়ে তুলে নিবো ওকে।
টাইগার : আপনি নিজে যাবেন?
লিও : হ্যা নিজে যাবো। তোমার কোনো সমস্যা?
টাইগার : না না বস। সরি বস।
লিও : নজর রাখো ক্যাম্পের দিকে। নীড়-মেরিনের দর্শন পেলেও পাওয়া যেতে পারে।

.

নীড় : এই তোয়ালে দাও।
মেরিন : পারবোনা। নিজে এসে নিয়ে যাও।
নীড় : আশ্চর্য্য তো…
মেরিন : তুমি দ্রুত করো। বের হতে হবে তো নাকি?
নীড় : তোয়ালে তো দাও।
মেরিন : পারবোনা বলেছিনা।
নীড় : কেমন বউ তুমি? তোয়ালে দিবে নাকি ভেজা শরীরে আসবো? ঘর কিন্ত ভিজে যাবে।
মেরিন : আই ডোন্ট কেয়ার। ৫মিনিটের মধ্যে বের না হলে আমি একাই বোরকা পরে বেরিয়ে যাবো বলে দিলাম।
নীড় পোশাক পাল্টে বেরিয়ে এলো।
নীড় : নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষনের সাথে কথা বলতে সকলের রুহ কাঁপে। আর তুমি তাকে নিয়ে খেলছো… বউ বলেও বাঁচতে না। ভালোবাসি বলে বেঁচে গেলে।
মেরিন : প্রানের জন্য তুমিও বেঁচে আছো। যাওয়া যাক।
দুজন ঘর থেকে বের হলো। নীড় দরজায় তালা দিচ্ছে।
মনির : কোথায় যাচ্ছো বউ নিয়ে?
নীড় : মাদরাসায়। ওর ক্লাস আছে তো।
মনির : বউ এখনো পড়ে তোমার?
নীড় : জী জী। চলো বিবি।
মনির গভীর ভাবে মেরিনকে দেখছে। নীড় মেরিনের হাত ধরে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
মেরিন মনেমনে : ওই লোকটা ওভাবে কেনো দেখছিলো?
নীড় : কি ভাবছো?
মেরিন : কিছুনা। আর দম আটকে আসছে। অস্থির লাগছে। প্রচন্ড রোদ উঠেছে।
নীড় : কোল্ড ড্রিংকস খাবে?
মেরিন : কিভাবে খাবো নিকাবের ভেতর দিয়ে?
নীড় : তাও ঠিক।
মেরিন : উফফ… ভালো লাগেনা। তোমার জন্য আমার লাইফটা হেল হয়ে গেলো।
নীড় : এখানে আমার দোষ কোথায়?
মেরিন : জিজ্ঞেস করতে লজ্জা করছেনা?
নীড় : না। আর একটু সামনেই ক্যাম্প।
মেরিন : দেখা যাবে ওকে?
নীড় : ডোন্ট নো। এই যে রিকশাভাই… এখানে কি?
রিকশাওয়ালা : ক্যাম্প না কি যেনো বলে।
নীড়: বাচ্চাদের দেখা যাচ্ছে। কতো বাচ্চা , কতো মানুষ। কয়েক নামাজ শিক্ষা বিক্রি করা যাবে। তুমি যাবে বিবি?
মেরিন : বাচ্চারা কি কিনবে?
নীড় : যদিই কিনে!
মেরিন : ঢুকতে দিবে!
নীড় : তাও ঠিক।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 32
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : তাও ঠিক… আচ্ছা রিকশামামা চলুন।
মনেমনে : আগেই আমরা গেলে লিও বা অন্য কোনো গ্যাং সন্দেহ করতে পারে। অন্যকোনো সেলসম্যানদেরকে দিয়ে শুরু করতে হবে। তাদেরকে ঢোকানোর পারমিশন নিতে হবে। কিন্তু এতেও তো রিস্ক থাকে। অন্যকেউ ঢুকে গেলে?
মেরিন মনেমনে : গাধার মতো কথা বলে। চাইলেই যেনো এই ক্যাম্পে ঢোকা যাবে।এর মাথায় একটুও বুদ্ধি নেই।
নীড় : মামা গাড়ি থামান। চলে এসেছি।
মেরিন মনেমনে : এই মাদারাসার সামনে কেনো থামালো? ভেতরে ঢুকবে নাকি?
ওরা নেমে গেলো। ভেতরে ঢুকলো। মেরিন দেখলো আশেপাশে কেউ আছে কিনা?
মেরিন : এখানে কেনো নিয়ে এলে?
নীড় : নাটকের অংশ। একটু কথা বলবো বেরিয়ে যাবো। অ্যাডমিট করাতে আনিনি। তবে ওপরে উঠতে হবে।
ওরা ভর্তি সম্পর্কে কথা বলে বেরিয়ে এলো।

.

লিও : নিহাল-নীলিমা পৌছে গিয়েছে?
টাইগার : ইয়েস বস।
লিও : আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করো। তবে সাধারন ভাবে। রবীন্দ্রনাথ টাইপ হিন্দু বুড়ো সেজে। তুমি সাজবে আমার পত্নী।। সেকেলের স্ত্রী সাজবে যারা নিজের স্বামী ছারা কাউকে মুখ দেখায় না।
টাইগার : ওকে স্যার। বাট বাসাটা ঠিক করতে সময় লাগবে।
লিও : বাসা ঠিক করা শেষ। মনির হোসেনের বাসায় উঠবো। তার তিনটি বউ। আমার নাম হবে রবীন্দ্র ঘোষ এবং তুমি হবে ধানসিরি ঘোষ।
টাইগার : ওকে স্যার।
লিও : তবে শোনো… ঘোমটার আড়ালেও বৃদ্ধা টাইপ মেকআপ করে রাখবে।
টাইগার : ওকে বস।
টাইগার বেরিয়ে গেলো।
লিও : প্রিয় নীড়-মেরিন… আমি তোমাদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়েই থাকবো। মনির হোসেনের বাড়িটা হলো তোমাদের ভাষায় ডাউন মার্কেট। তোমরা ওই জায়গার কথা ভাবতেও পারবেনা। অমন জায়গায় তোমরা পা রাখবেনা। নাক ছিটকাবে। আমি তো সব জায়গাই মানিয়ে নিতে পারি। লিও আমি…

.

সন্ধ্যার পর…
নীড়-মেরিন ফিরলো। দেখলো দুজন প্রবীনকে দেখতে পেলো। মনির হোসেনের সাথে কথা বলছে।আসলে ওরা হলো লিও এবং টাইগার।
মনির : বরকত মিয়া এখানে এসো।
নীড় এগিয়ে গেলো।
নীড় : সালাম চাচাজান।
মনির : হামম। এটা হলো রবীন্দ্র ঘোষ।
নীড় : আদাব কাকাবাবু।
লিও : আদাব।
নীড়-লিও একে অপরকে দেখছে।
মনির : ঘোষ বাবু… ও হলো বরকত মিয়া। ওই যে ওর বউ সখিনা।
নীড় : সখিনা বিবি। বরকতের বিবি সখিনা বিবি।
মনির : আচ্ছা আচ্ছা সখিনা বিবি।
নীড় : আমার বিবি।
মনির : হ্যা হ্যা তোমার বিবি। বরকত মিয়া … ইনি হলেন ঘোষ বাবুর স্ত্রী ধানসিরি ঘোষ।
নীড় : আদাব আদাব… বিবি… চলো ঘরে চলো।
নীড় মেরিনকে নিয়ে ঘরে চলে গেলো।
মনির : বুঝলেন ঘোষবাবু… নতুন নতুন বিয়ে করেছে। তাই বউকে অনেক ভালোবাসে।
লিও : বউ নতুন হোক অথবা পুরোনো ভালোবাসা উচিত।
মনির : তাও ঠিক।
লিও : আমাদের ঘরটা?
মনির : ওই তো ওই দিকে।
লিও টাইগারকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।

মেরিন : আমি যেটা ভাবছি তুমিও কি সেটা ভাবছো?
নীড় : ঘোষ এবং মিসেস ঘোষ সাধারন কেউ নয়।
মেরিন : হামম। প্রনয় আহমেদ চৌধুরী।
নীড় : ওহ শাট আপ। ওটা লিও বা অন্যকোনো গ্যাং তথা শত্রু হতে পারে।
মেরিন : ইয়াহ ইয়াহ…
নীড় : শোনো… ঘরেও একটু ভিন্ন চেহারা নিয়ে থাকবে। মেকআপ টেকআপ নিয়ে।
মেরিন : ঘোষ শত্রুর ভয়ে?
নীড় : আমি জানি আমার বউ কাউকে ভয় পায়না। কিন্তু এটা ইগোর লড়াই না। বুদ্ধির লড়াই। তাই ইগো বাদ দাও।
মেরিন : সরি আই কান্ট।
নীড় : এটা আমার সাথে লড়াই হচ্ছে না। ওরা কোনো শত্রুপক্ষ হলে ওরাও আমাদের দিকে নজর রাখার চেষ্টা করবে।
মেরিন : যাক বুদ্ধি আছে তাহলে।
নীড় : আমার তো কোনো বুদ্ধি নেই। সব তো তোমার একাই আছে। শোনো কালকে তুমি বাসাতেই থাকবে। আমি আশেপাশেই থাকবো। নজর রাখার চেষ্টা করবে। সাজ দিয়ে থাকবে কিন্তু ভিন্ন।
মেরিন : ওই মনিরের তিন বউ আমার আসল চেহারা দেখেছে। ভুলে গেলে কি?
নীড় : তোমার উচিত ছিলো বোরকার নিচেও মেকআপ করা।
মেরিন : তোমার উচিত ছিল ভালো জায়গায় বাসা নেয়া।
নীড় : দুনিয়ার সব ভুল আমার জন্যই হয়। শোনো… রাত ২টার দিকে ক্যাম্পে যাবো প্রানকে দেখতে। যাবে?
মেরিন : অবশ্যই। কিন্তু কিভাবে?
নীড় : পিটার একটি সুড়ঙ্গের ব্যবস্থা করেছে। সেখান দিয়েই।
মেরিন : এই একদিনেই সুড়ঙ্গ করে ফেলল!
নীড় : নো। ছিলো আগেই। কিন্তু মাটির নিচে চাপা ছিলো। পিটার খুজে বের করেছে।
মেরিন : ওকে।
নীড় : তবে…
মেরিন : তবে আবার কি?
নীড় : সাবধানে যেতে হবে।
মেরিন : এই… তুমি পিটারকে জানিয়েছো যে আমরা এখানে আছি?
নীড় : জানাতে হয়েছে। তবে এই এরিয়ার কথা বলেছি। এই বাসার কথা জানাই নি।
মেরিন : তুমি যখন পিটারকে জানিয়েছো তখন আমিও জনকে জানাবো।
নীড় : উফফ…
মেরিন : শাট আপ।

লিও : ওই দুই হাজবেন্ড-ওয়াইফের আসল চেহারা থাকলেও থাকতে পারে। বরকত না কি তারটাতো আমি ঠিক দেখে নিবো। কিন্তু ওই সখিনা বিবির চেহারা তোমাকে দেখতে হবে। দেখতে হবে মানে হবেই।
টাইগার : ইয়েস বস।
লিও : রাত ২টা অথবা ৩টার দিকে আমি ক্যাম্পে যাবো।
টাইগার : প্রানকে তুলতে?
লিও : নো। নীড়মেরিনকে ধরতে।
টাইগার : ওরা এসেছে?
লিও : আমার ধারনা তো বলেছে এসেছে।
টাইগার : কিন্তু বস যাবেন কিভাবে?
লিও : আমি তো চলেই যাবো। আমাকে আটকায় কার সাধ্য? তুমি এখানেই থাকবে।
টাইগার : ইয়েস বস।

.

রাত দেড়টা…
মেরিন ঘুমিয়ে আছে। নীড় উঠে বসলো।
নীড় : দেড়টা বাজে। যেতে হবে। মে…
মেরিন অস্বস্তি নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মুখে বিরক্তি স্বষ্ট। নীড় ঘরটাতে চোখ বুলালো। এরপর মেরিনের দিকে তাকালো।
নীড় মনেমন : এভাবে যদি তুমি পাশে থাকো , কাছে থাকো… তাহলে এই ঘর তো অনেক বড়। আরো ছোট স্থানেও থাকতে পারবো। কিন্তু তোমাকে কষ্টে দেখা বড্ড ভয়ংকর।
মেরিনের গালে চুমু দিয়ে জোরে একটা কামড় দিয়ে বসলো।
মেরিন : আআ…
নীড় মেরিনের মুখ চেপে ধরলো।
নীড় : আস্তে। চিৎকার করছো কেনো? ওই ঘোষ শত্রু হলেও হতে পারে।
মেরিন ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলল। ওর বুকের ওপর উঠে বসে ওর দুই হাত আটকে ধরলো।
মেরিন : থাকুক শত্রু। থাকুক লিও। কি করেছো আমার গালটাকে? এমন করে রাক্ষসের মতো কেউ কামড় মারে? নেকড়ে কোথাকার।
নীড় : জান… সরে যাও। এলোমেলো ভাবনা আসছে।
মেরিন নীড়ের মাথায় ধাক্কা মারলো।
মেরিন : মাথার মধ্যে একটা বারি মারবো। অসভ্য একটা…
নীড় : ২টা বাজে প্রানকে দেখতে যেতে হবে।
মেরিন : হুহ…
মেরিন সরে এলো। অন্য একটা বোরকা বের করলো।
নীড় : এটা আবার কোন বোরকা?
মেরিন : ৫-৭টা বোরকা এনেছিলাম। এখন এটা পরলাম যেনো কেউ না বুঝে আমিই সখিনা বিবি।
বলেই ওয়াশরুমে গেলো। পোশাক পাল্টে এলো।
নীড় : এসব কি পরে এলে? প্যান্ট কেনো?
মেরিন : টানেল দিয়ে কি আমি বোরকা পরে যাবো নাকি?
নীড় : যা ইচ্ছা করো।
মেরিন : না না বোরকা পরবোনা। জঙ্গি সাজবো।
নীড় : গুড আইডিয়া। একদল ভাববে অন্য দল।
দুজন নিজের সাথে নিজনিজ গান নিয়ে নিলো। খুব সাবধানে বের হয়ে গেলো। ঘরটা বাহিরে থেকে তালা মারলোনা। সন্দেহ হতে পারে। ওরা টানেলের মাথা পর্যন্ত পৌছালো। নীড় পিটারকে কল করলো। পিটার ম্যাসেজ করলো যে অল ওকে। ওর নামলো। নেমেই মেরিন বোরকা খুলতে নিলো।
নীড় : খুলোনা। লেট ইট বি।
মেরিন : শাট আপ। ভুলে গেলে জঙ্গী…
দুজন গান লোড করে রাখলো। ধীরেধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।
পিটার মনেমনে : কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কে হতে পারে? কি করবো? দেখবো নাকি প্রানের কাছে যাবো? প্রানের ওখানে জন আছে। ওই গাছটাতে উঠে পরি। প্রানের টেন্টও দেখা যাবে আবার টানেলও দেখা যাবে।
পিটার দ্রুত গাছে উঠে বসলো।

জন মনেমনে : পায়ের শব্দ… শুকনো পাতার। মাস্কটা পরে নেই। অজ্ঞান করানোর চেষ্টা হতে পারে। প্রানের বিছানার পেছনে অবস্থান নিতে হবে যেনো খপ করে ধরে ফেলা যায়।
জন তাই করলো।

মেরিন : আহ…
নীড় : ইশ… খুব জোরে বারি লেগেছে
মেরিন : চলো।
ওরা সুড়ঙ্গের অপর প্রান্ত পর্যন্ত পৌছালো।
নীড় : শসস… বাহিরে কেউ হাটছে। পিটারকে ম্যাসেজ করি।
নীড় পিটারকে ম্যাসেজ করলো। পিটার বুঝতে পারলো যে ম্যাসেজ এসেছে। কিন্তু ও উত্তর দিলোনা। কারন গাছে বসে দেখছে যে নিচে অনেকে হাটছে। ও মোবাইল বের করলে আলোটা চোখে পরতে পারে। এরা এখান থেকে চলে গেলে কল করবে।
পিটার মনেমনে : কি করবো? গুলি করে দিবো? কারা এরা? গার্ডস…
জন মনেমনে : বাহিরে মানুষজন। গুলি করে দিবো? ম্যাম তো যেকোনো সময় চলে আসবেন।
নীড় : পায়ের আওয়াজ হালকা হয়েছে। দেখতে দাও।
নীড় দেখলো যে চলে যাচ্ছে। গার্ডের পোশাক পরে থাকা লোকগুলো চলে যাচ্ছে। দুজন বেরিয়ে এলো।
পিটার : ওই তো স্যার।
পিটার নেমে এলো।
নীড় : কারা ছিলো?
পিটার : গার্ড… আসুন।
পিটার নীড়-মেরিনকে প্রান্তিকের তাবুতে নিয়ে গেলো। জন-পিটার বেরিয়ে গেলো । নীড়-মেরিন প্রান্তিকের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটালো। প্রান্তিকের তাবুতে ওরা কেউ কোনো শব্দ করলোনা। কারন হলেও হতে পারে এই তাবুতে কোনো মাইক্রোচিপ রাখা আছে। কোনো আওয়াজ করলোনা। প্রান্তিকের ঘড়িতে মাইক্রোচিপ লাগিয়ে দিলো নীড়-মেরিন।

লিও মনেমনে : জন-পিটার প্রানের তাবুর বাহিরে দারিয়ে আছে। তাবুর নিচ দিয়ে যাওয়ার যে পথ আছে সেটা দিয়ে ভেতরে ঢুকবো। প্রানকে নিয়ে বের হবো। আজকেই উদ্দেশ্য সফল।
লিও নিজের পথ অবলম্বন করলো। নীড়-মেরিন বেরিয়ে যেতে নিয়েও দারিয়ে গেলো। একে অপরের দিকে তাকালো। প্রান্তিককে কোলে নিয়ে তাবুর বাহিরে থাকা জনের হাতে দিয়ে ওরা দুজন ভেতরে লুকিয়ে পরলো। তবে প্রান্তিকের বিছানায় বালিশের ওপর চাদর দিয়ে রাখলো। লিও উঠে এলো। চাদরের দিকে হাত বারালো। তখন নীড়-মেরিন লিওর মাথা এবং পিঠে পিস্তল ধরলো। ওরা দুজন কোনো শব্দ করলোনা। লিও নিজেও কোনো শব্দ করলোনা। নীড় লিওর দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে নিলো। নীড় নিজের মার্শাল আর্ট ব্যবহার করে লিওকে আহত করলো। লিও তবুও কোনো শব্দ করলোনা। ওরা পিস্তল ধরে রেখে লিওকে তাবু থেকে বাহিরে নিয়ে এলো।
জন : কে এটা?
পিটার : এখানে কথা বলার প্রয়োজন নেই। আমরা দুজন এখানেই থাকি।
জন : ইউ টু… প্লিজ গো।
নীড়-মেরিন লিওকে নিয়ে যাচ্ছে।

☆ : ঠিক ধরেছিলাম যে মেরিন এখানে আসবে। নীলা ডার্লিং… তোমার আদরের ছোট বোনের জীবনের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।
সে স্নাইপার তাক করলো মেরিনের দিকে। নীড় স্নাইপারের মাথা দেখে নিলো।
নীড় মনেমনে : কাকে টার্গেট করেছে! ওহ নো মেরিন…
নীড় লিওকে ছেরে দিয়ে মেরিনের সামনে ওর ঢাল হয়ে দারালো। শ্যুটার দ্রুত নিজের নিশানা ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো। তবে ততোক্ষনে গুলি চলে গিয়েছে। গুলি নীড়কে ছুয়ে গিয়েছে। গুলিটা নীড়ের গায়েই লাগতো যদি না লিও ওকে ধাক্কা দিয়ে পালাতো। মেরিন নীড়কে ধরলো। ও কিছু বলতে নিলে নীড় ওর মুখ চেপে ধরলো। মাথা এপাশওপাশ করে চুপ থাকতে বলল। আশেপাশে দেখে টানেল দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

.

মেরিন নীড়ের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। দুজন ওয়াশরুমে দারিয়ে আছে। কারন ঘরের লাইট জ্বালিয়ে কাজটা করলে শত্রুপক্ষ সন্দেহ করতে পারে।
মেরিন : তুমি কি আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছো?
নীড় : তুমি আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছো। ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছো আমার হাতে।
মেরিন : এই এক মিনিট… তোমার রক্ত ওখানে পরেছে। দুশমন কে জানিনা। লিও অনেক ধূর্ত। ডিএনএ টেস্ট না করিয়ে ফেলো।
নীড় হাসলো।
নীড় : রক্ত পরিষ্কার হয়ে যাবে। এক জায়গায় থাকবে মুরগীর রক্ত।
মেরিন : ক্রিমিনাল মাইন্ডেড তুমি।
নীড় ওর কোমড়ে স্লাইড করতে করতে বলল : তাই তো তোমার বর তোমাকে হাসিল করতে পেরেছে…
মেরিন বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। শুয়ে পরলো। নীড় ওয়াশরুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরলো। মেরিনকে বুকে জরিয়ে ধরে।
মেরিন : ছা…
নীড় : কোনো কথা বলবেনা। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে তাই ঘুমাবো। বেশি ঢং করলে বারাবারির হয়ে যাবে বললাম।
মেরিন : নীড়… পাশের ওই ঘোষ যদি শ্যুটার বা কালকের কিডন্যাপার হয় তাহলে তোমার হাতে চেক করবে।
নীড় : চেক করতে এলে আমিও ধরে নিবো।

টাইগার : স্যার , ওদের রুমের আলো নেভানোই ছিলো। ওয়াশরুমেরটা জ্বলছিলো কেবল।
লিও : হামম।
টাইগার : স্যার… ওরা কি নীড়মেরিন ছিলো?
লিও : বুঝতে পারছিনা। নীড়-মেরিন হলে ওদের দিকে আবার কে শ্যুট করবে? আমাকে বাঁচানোর কে আছে?
টাইগার : হয়তো আপনাকে বাঁচানোর জন্য নয় ওদেরকে মারার চেষ্টা ছিলো।
লিও : হ্যা এটাও হতে পারে। আহত হয়েছে সে। ডিএনএ টেস্ট করতে হবে ব্লাডের। স্যাম্পল চলে গিয়েছে ল্যাবে।
টাইগার : কে কালেক্ট করে ল্যাবে নিলো স্যার?
লিও : তোমার কি মনেহয় যে কেবল তোমরাই আমার আন্ডারের কাজ করো?
টাইগার : সরি স্যার। স্যার… আহত ব্যাক্তি যদি ওই ছদ্মবেশী মোল্লা সাহেব হয় তাহলে ওর ডান হাতে আঘাত থাকবে।
লিও : যদি ওরা সত্যিই সেই জুটি হয় তবে সাবধানতা অবলম্বন করবে। অতো বোকা হবেনা।

.

পরদিন…
প্ল্যান অনুযায়ী নীড় বের হয়েছে। মেরিন ঘরে একা।মনির সেটা দেখেছে। বোরকা পরে দরজায় নক করছে।

.

চলবে…