#প্রলয়_পুতুল
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৩
(কপি করা নিষিদ্ধ 🚫❌)
জুবায়ের উল্টো হয়ে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিলো। তখনি রুমের দরজায় টোকা পড়লো। বিরক্ত হলো সে। গলা উঁচিয়ে বলল,
“কি হয়েছে?”
জিনিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,
“মহারাজ আসুন খেতে হবে না। নাকি না খেয়েই রাত কাটিয়ে দিবেন।”
ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই জিনিয়া আবারো বলতে লাগলো,
“অবশ্য এখন না গেলে আর খাওয়া পাবি কি না সন্দেহ!”
ঠাস করে দরজা খুলে দিলো জুবায়ের। জুবায়েরকে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসলো জিনিয়া।
“কি যেন বলছিলি তুই?”
জিনিয়া দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“কোথায় কি বললাম আমি আবার?”
জুবায়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই জিনিয়া দিলো এক ভোঁ দৌড় দিলো। আর বলতে লাগলো,
“ক্ষেপা ষাঁড় ক্ষেপছে রে ভাগ জিনু ভাগ।”
জুবায়েরের হাসি পেলেও হাসি চাপিয়ে সে নিচে নামলো। জিনিয়া মায়ের কাছে গিয়ে ভদ্র মেয়ের মতো বসেছে খেতে। জুবায়ের কিছু না বলে চুপচাপ বসলো খেতে। জাহানারা বেগম খাওয়ার সময় কথা বলা পছন্দ করেন না। জুবায়ের এর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি কঠোরতার সাথে ছেলে মেয়েকে বড় করেছেন। ছেলে মেয়েও ওনার কথার বাহিরে যায় না। একাহাতে মানুষ করেছেন তিনি।
খাবার শেষ করে জাহানারা বেগম জুবায়েরকে বললেন,
“কালকে আবার কিছু করোনা। কাল থেকে নবীনবরণের সব কার্যক্রম শুরু করা হবে। মেবি সাতদিন পর নবীনবরণের অনুষ্ঠান করা হবে।”
“এবার দেড়ি হলো যে অনুষ্ঠান করতে?”
“কতৃপক্ষ দেড়ি করেছে। ও হ্যাঁ মেয়েদের থেকে দূরে থাকবি।”
জুবায়ের মাথা নাড়িয়ে মায়ের কথায় সম্মতি দিলো। যদিও তার কোনো দোষ নেই। মেয়েগুলো যেন কেমন করে? সে এতো বেশ বিরক্ত।
জিনিয়া বিরক্তি নিয়ে বিরবিরালো,
“এই পাঠারে মেয়েরা এতো পছন্দ কেমনে করে বুঝি না। আহ কি চয়েজ!”
জুবায়ের জিনিয়াকে বিরবির করতে দেখে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
“কি বললি রে!”
জিনিয়া হাসার চেষ্টা করে বলল,
“কিছু বলিনি।”
জুবায়ের আর পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
—————
রোজ সকাল সকাল ঘুমু ঘুমু চোখে হাজির হলো ভার্সিটিতে। আজ সকাল আটটায় ক্লাস আছে। ঘড়িতে বাজে সাতটা পয়তাল্লিশ। রোজ কোনো মতে ক্লাসে গিয়ে বসলো। গুটি কয়েক লোকজন এসেছে। রোজ এতো তাড়াতাড়ি আসতো না। কিন্তু নেহাল বাইকে করে রেখে গেছে তাই বেশ তাড়াতাড়িই হয়েছে।
রোজ আরুশার পাশে ধুপ করে বসতেই আরুশা অবাক হয়ে গেলো। যে মেয়ে পাঁচ মিনিট আগে ক্লাসে আসে সে নাকি পনেরো মিনিট আগে ক্লাসে এসেছে। ভাবা যায়! সেই ক্লাস নাইন থেকে রোজকে দেখছে। এই মেয়ে জীবনেও আগে আসে না। আরুশা অবাক হয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই মালিহা এসে বসলো ওদের পাশে। ওকে দেখে রোজ আর আরুশা দুইজনই চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মালিহার দিকে।
কারণ মালিহা মিটমিট করে হাসছে আর গাইছে,
♪♪সে যে পথ চলে বুকে ঝড় তুলে জেগে ওঠে ঘুমোনো আশা♪♪
দুইজনই একসাথে বলে উঠলো,
“এর আবার কি হলো?”
মালিহা ওদের দিকে তাকিয়ে আবারো হাসলো। রোজ ওর দিকে হাত তুলে আরুশার দিকে তাকিয়ে বলল,
“পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি। ওরে পাবনায় দিয়ে আয় তো।”
মালিহা রোজের ঘাড়ে মাথা রেখে একহাত বুকে রেখে বলল,
“হ রে দোস্ত আমি পাগল হয়ে গেছি। কি লুক, কি হাসিরে ভাই! উফ আই এম ইমপ্রেস!”
আরুশা চোখ বড় বড় করে বলল,
“কি বলিস কাকে দেখে?”
রোজ বিরক্তি নিয়ে বলল,
“এই তো শুরু হলো প্রেম পিরিতের কথা। এই মাইয়া তুই না মহসিন ব্যাঙের ছাতাকে ভালোবাসিস।”
মালিহা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“ওর লগে কত আগে ব্রেকআপ করছি। ভাই ছেলেটা যে জোশ ছিলো। দেখেই মনে হলো গিয়ে ঠুস করে একখানা চুমু খেয়ে আসি।”
রোজ দুইহাত দিয়ে কান চেপে ধরে বলল,
“ছিহ কি মাইয়া রে বাবা? কি কি বলতেছে? আল্লাহ আমারে এই অ*শ্লীল দুনিয়া থেকে তুলে নেও।”
“আরে মালিবাগ ছেলেটা কে?”
মালিহা দুইহাত হাই ব্রেঞ্চে রেখে তাতে থুতনি ঠেকিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“জাহানারা ম্যামের ছেলে জুবায়ের।”
জুবায়েরের নাম শুনতেই রোজের আগের দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। কাদায় ফেলে দিয়ে কিভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসছিলো বেত্তুমিজটা। মুহুর্তেই রাগ হলো রোজের। খেকিয়ে উঠে বলল,
“এক থাপ্পড়ে মুখের নীলনকশা পাল্টে দিবো তোর। ওই গাধা পোলার ভিতরে কি আছে যে তোর মাথার পোকা গুলো কিলবিল করছে। ওই ব্যাটা একটা খাটাশ, বাটপার।”
রোজের কথায় মালিহা নির্বাক হয়ে গেল। হঠাৎ কি হলো রোজের।
“কি হয়েছে তোর রোজ? কালকেও ফোনে দেখলাম তোর মেজাজ খারাপ, এখনো দেখছি মেজাজ খারাপ।”
আরুশার কথার উত্তর দেওয়ার আগেই ক্লাসে টিচার আসলো। ওরা সবাই চুপ করে গেলো। ক্লাসে মনোযোগী হলো।
টানা তিনটা ক্লাস করে তিনজন মিলে রওনা হলো ক্যান্টিনের দিকে। ক্ষুধায় পেটটা চুইচুই করছে। সকালে কিছু না খেয়েই দৌড় দিয়েছে। রোজ সবার আগে গিয়ে একটা বাটার বন আর দুধ চা নিলো। বাটার বন রোজের বেশ ভালো লাগে। তাই প্রতিদিনই নিয়ম করে সে বাটার বন চিবোয়। আরুশা একটা স্যান্ডউইচ আর চা নিলো। মালিহাও তাই নিলো। রোজ বন চিবোতে চিবোতে বলল,
“বিয়ে করবি রে তোরা?”
আরুশা কপাল কুচকে বলল,
“কেন রে তুই বিয়ে করবি নাকি!”
রোজ নাক টেনে বলল,
“নারে বৎসা, আমি তো তোদের বিয়ে খাওয়ার জন্যই এই পাপিষ্ঠ দুনিয়ায় বেঁচে আছি।”
মালিহা মুখটাকে বেঁকিয়ে বলল,
“শখ কতো আগে তোর বিয়ে হবে।”
রোজ বাটার বনে বড় একখানা কামড় দিয়ে মুখ নাড়াতে নাড়াতে বলল,
“প্রেম পিরিতে তোরা এগিয়ে তাহলে বিয়ে কেন আগে আমি করবো!”
আরুশা দাঁত কেলিয়ে মালিহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাহলে তো এই মালিবাগের সবার আগে বিয়ে হবে ওই মহসিন গাধার সাথে।”
মালিহা কিছু বলার আগেই রোজ উঠে কোথায় যেন দৌড়ে গেলো।
অন্যদিকে জুবায়ের চুইগাম চাবাতে চাবাতে চারপাশে একবার দেখে নিলো। সুযোগ বুঝে যেই না সামনের চেয়ারে চুইগাম লাগতে যাবে তখনি রোজ চেয়ারটা সরিয়ে নিলো। সাথে সাথে ওদের মাঝবরাবর একটা ছেলে ধপাস করে পরলো। মূলত দূর থেকে জুবায়েরের মতিগতি দেখেই রোজ দৌড় দিয়েছিলো।
জুবায়ের সহ চারপাশের মানুষ অবাক হয়ে তাকালো রোজের দিকে। রোজ কপাল গুটিয়ে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই মিয়া আপনার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। মানুষের পিছনে এতো কাঠি করে বেড়ান কেন?”
পড়ে যাওয়া ছেলেটা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
জুবায়ের চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“এই মেয়ে কি বলছো তুমি এসব?”
রোজ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“চুইগাম কেন লাগাচ্ছিলেন চেয়ারে?”
পড়ে থাকা ছেলেটা হতভম্ব হয়ে জুবায়েরের দিকে তাকালো। জুবায়ের আর সে একই ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট। আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক দুইজনের মধ্যে। জুবায়ের ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে রোজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বেশি বুঝো তুমি। আমি কোথায় কি করলাম? তুমিই তো চেয়ার টান দিয়ে রেদোয়ানকে ফেলে দিলে।”
রোজ আঙুল তুলে বলল,
“নিজের অন্যায় করে খবরদার আমার সাথে তর্ক করতে আসবেন না। আমি কোথায় আপনার ওই রেদোয়ান ফেদোয়ানকে ফেলেছি । ওই ব্যাটার চোখ নাই। দেখে বসতে পারেনা।”
রেদোয়ান ঠাস করে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে বলল,
“ওয়েট ওয়েট তোমরা দুইজনই তো আমার পিছনে কাঠি করতে চাইছো।”
রোজ রেদোয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই ব্যাটা আমি আবার কখন কাঠি করলাম! আমি তোরে বাঁচাইলাম। এইজন্যেই বলে দুইপা জাতের ভালো করতে নাই। গাধা কোথাকার।”
জুবায়ের ও রেদোয়ানের দিকে তাকিয়ে নাক উঁচুতে তুলে বলল,
“গরুর মতো কথা বলিস কেন? তুই চেয়ারে দেখে বসবি না। নিজের দোষে নিজ পড়ছিস আমি কি জানি!”
বলেই জুবায়ের আর রোজ দুইজন দুইদিকে চলে গেলো। আর মাঝে রয়ে হতভাগা রেদোয়ান।
জুবায়ের ওর বন্ধুদের কাছে ফিরে রাগে গমগম করতে লাগলো। আবিদ আর নাফি একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাঁচালো। আবিদের পাশে জুবায়ের বসতেই নাফি বলল,
“কিরে কি হয়েছে? কাজ হয়নি তোর?”
জুবায়ের ফুসতে ফুসতে বলল,
“ওই মাইয়া আবারো অকাম করেছে? ওই মাইয়ারে আমি ছাড়বো?”
আবিদ আর নাফি দুইজন একসঙ্গে বলে উঠলো,
“মেয়ে?”
“হ মেয়ে, কালকে ওই মেয়ে আমাকে কাদায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। পরে আম্মুর কাছে এই নিয়ে বকা খাইছি। আর আজকে আমার এতো সুন্দর প্লানে চেয়ার টেনে ধরলো। ভাবছিস কত সাহস? আমার সাথে এই জুবায়ের ইব্রাহিম সায়েমের সাথে লাগতে এসেছে!”
আবিদ আর নাফি হঠাৎ করেই হাসতে লাগলো। যা দেখে জুবায়েরে মেজাজ আরো খারাপ হলো। কর্কশ কন্ঠে বলল,
“পাগলের মতো হাসিস কেন? কিছু কি গিলছিস?”
আবিদ কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল,
“কাদায় ধাক্কা দিছে তাও আবার তোরে! ক্রাশ বয় নাকি কাদা বয় হয়ে গেছে।”
নাফি হাসতে হাসতেই বলল,
“এতো বড় জোকস আমি জীবনেও শুনিনি রে পাগলা।”
জুবায়ের এবার উঠেই গেলো সেখান থেকে। জুবায়ের উঠে যেতেই আবিদ আর নাফিও ওর পিছু পিছু দৌড় দিলো।
———-
মালিহা আর আরুশা অবাক হয়ে দেখছিলো। রোজের হঠাৎ এমন আক্রমণ হজম করতে পারছেনা তারা। রোজ আসতেই মালিহা বলল,
“তুই জুবায়ের ভাইয়ের সাথে তর্ক করতে গেছিলি।”
রোজ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“তো কি হয়েছে? ওই ব্যাটা কি মানুষ না! নাকি কোনো চিড়িয়াখানার পশু।”
#চলবে